***মহাভারত***
মহাভারত হচ্ছে ভারতীয় মহাবংশ চরিত ও কুরু-পান্ডবদের যুদ্ধ বর্ণনাত্মক কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস কৃত মহাকাব্য ও প্রসিদ্ধ ইতিহাস গ্রন্থ। এটি ১৮টি পর্বে বিভক্ত- আদি, সভা, বন, বিরাট, উদ্যোগ, ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, শল্য, সৌপ্তিক, স্ত্রী, শান্তি, অনুশাসন, অশ্বমেধিক, আশ্রমবাসিক, মৌষল, মহাপ্রস্থানিক ও স্বর্গারোহন পর্ব। এতে লক্ষাধিক শ্লোক রয়েছে। এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মহাকাব্য। বেদব্যাস বদরিকা আশ্রমে তিন বছরে এটি রচনা করেন।
মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ যে নন্দ গোপকুমার, তার কথা রয়েছে সভাপর্ব ৪০ অধ্যায় ৬ নং শ্লোকে বলা হয়েছে-
যত্র কুৎসা প্রযোক্তব্যা বালতবৈর্নরৈঃ৷
তমিমং জ্ঞানবৃদ্ধঃ সন গোপং সংস্তোতুমিচ্ছসি।।
অনুবাদঃ ভীষ্ম! অতিবালকেরাও যাকে নিন্দা করে, তুমি জ্ঞানবৃদ্ধ হয়েও সেই গোয়ালাটার স্তব করছো!
৬ নং শ্লোকের নীলকণ্ঠকৃত টীকাঃ ইত্য ব্রহ্মাত্বে কুৎসা প্রযোক্তব্যা। তমিমং গোপাযতীতি গোপঃ, তং গোপং ব্যাধিকরনে দ্বিতীয়……………।
সভাপর্বে ৪১ অধ্যায়ে ১ম থেকে ৮ম শ্লোকে শিশুপাল বলেছে, “হে ভীষ্ম, দাস জাতির ছেলের সাথে যুদ্ধ করতে চাইনি বলেই জরাসন্ধ তার কাছে হেরে গেছে। তুমি কী জানো, যখন ঐ গোয়ালার ছেলে স্নাতক ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে জরাসন্ধের হাতে পা ধোয়াতে গেলে, ঐ গোয়ালার ছেলে ব্রাহ্মণ জরাসন্ধের হাতে পা ধোয়াতে সাহস পায়নি। আর ক্ষত্রিয় কূলে জন্মগ্রহণ করে তুমি তার প্রশংসা করছো?!”
এইসব স্থানে কৃষ্ণের জন্ম যে গোপকূলে তা বলা হয়েছে। আর গোপরা থাকলে গোপীরা কেন মিথ্যা হবে?! গোপীদের কথা ও পাওয়া যায় দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় দ্রৌপদীকৃত কৃষ্ণস্তবে। মহাভারত, সভাপর্ব, ৬৫ অধ্যায্ ৪১-৪২ শ্লোকে বলা হয়েছে-
আকৃষ্যমাণে বসনে দ্রৌপদ্যা চিন্তিতো হরিঃ।
গোবিন্দ দ্বারকাবাসিন কৃষ্ণ গোপীজনপ্রিয়ঃ।।
কৌরবৈঃ পরিভূতাং মাং কিং ন জানাসি কেশব।
হে নাথ রমানাথ ব্রজনাথার্ত্তিনাশন।।
অনুবাদঃ দুঃশাসন যখন দ্রৌপদীর বসন আকর্ষণ করে টানছিলেন, তখন দ্রৌপদী ভগবান শ্রীহরির চিন্তা করে আর্তি সহকারে বলেছিলেন, “হে গোবিন্দ! দ্বারকাবাসিন! হে কৃষ্ণ! গোপীজনপ্রিয়! কৌরবেরা যে আমাকে পরাভূত করছে, তা কি তুমি জানো না? হে নাথ, রমানাথ, ব্রজজনদের আর্তিনাশন, জনার্দন, কৌরব সাগরে মগ্ন আমাকে উদ্ধার করো।”
কেউ বলতে পারে যে, এই শ্লোকগুলো প্রক্ষিপ্ত। কিন্তু তা সত্য নয়। কারণ মহাভারতের একমাত্র টিকাকার মহাশয় এই শ্লোকের টীকাতেও ‘গোপীজনপ্রিয়’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন।
“…………………ননু সন্নিহিতঃ শত্রুশ্চ কিমিতি দুষ্টাননুগৃহ্নীয়াদত আহ কৃষ্ণ। স্মৃতমাত্র এব সর্ব্বদেষকর্ষণ। ননু তথাপি অনৃতং সাহসং মায়া মূর্খত্বমতিলোভতা। অশৌচং নির্দ্দযত্বঞ্চ স্ত্রীনাং দোষার স্বভাবজা। ইত্যুক্তেঃ স্বাভাবিক স্ত্রীদোষা নাপনেতুং শক্যো ন হ্যাশীবষদ্রংষ্টা অমৃতপ্রবা কর্ত্তুং শক্যেত্যেত আহ গোপীজনপ্রিয়।”
মহাভারতকার কৃষ্ণ জীবনী লেখেন নি। প্রসঙ্গক্রমে কৃষ্ণকথার উল্লেখ করেছেন। মহাভারত কুরু-পাণ্ডবের জীবনী। কুরুপান্ডবের সঙ্গে যেখানে কৃষ্ণ, সেখানে কৃষ্ণকথা আছে। সেখানে কৃষ্ণের বাল্যজীবন ধারাবাহিকরূপে লিখিত হয়নি। যারা কৃষ্ণকে মানুষ বলে মনে করে, তারা কৃষ্ণের আনন্দময় ভাব ধারণ করতে পারে না। এই ধরনের লোকেরা হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতি রাধার ধারণা মাত্রও করতে পারে না। মানুষ নিত্য জীবদেরকে মৃত্যুমুখে পতিত হতে দেখেও নিজের চিরজীবিত্ব কল্পনা করে, তারা জীবিতকালে জড় সংসার ত্যাগ করতে পারে না। এর কারণ হচ্ছে মায়া। মায়া জীবদেরকে সমাচ্ছন্ন করে ভুলিয়ে রেখেছেন। সেই রূপে মহামায়া রাধা-কৃষ্ণ লীলাকে ইতর-জনের ধারণা থেকে দূরে রেখেছেন। সাধনা দ্বারা যোগমায়ার প্র কৃপা লাভ করতে পারলে, তখন শ্রীমতি রাধারানীকে বুঝতে পারা যায়। কৃষ্ণকে অবগত হওয়া যায়। রাধা-কৃষ্ণের লীলা জানতে পারা যায়। শুক্ত্যাবৃত মুক্তার সন্ধান কয়জন পায়?!?
***হরিবংশ***
মহাভারতের পরিশিষ্ট অংশ হরিবংশ। বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন কল্পের কথা বা রাজবংশের কথা থাকে। মহাভারতে করু-পান্ডব বংশের বর্ণনা করে শ্রীকৃষ্ণের কথা বর্ণনা প্রসঙ্গে ব্যাসদেব এই হরিবংশ রচনা করেছেন। হরিবংশে বিষ্ণুপর্বে গোবর্ধন ধারণ ও ইন্দ্রমান-ভঞ্জনের পর রাসলীলার কথা এসেছে। তবে সেখানে রাসের কথা অত্যন্ত সংক্ষেপে আছে। ভাগবতে যা একটি অধ্যায়, হরিবংশে তা শুধু কয়েকটি শ্লোকে বর্ণিত হয়েছে।
যুবতীগোপকন্যাশ্চ রাত্রৌ সংকাল্য কালবিত ।
কৈশোরকং মানয়ন বৈ সহ তাভির্মুমোদ হ ।। ১৮ ।।
অনুবাদ: সর্বকাল সম্পর্ক জ্ঞাতা শ্রীহরি নিজ কৈশোর বয়সোচিত গোপকন্যাদের সাথে বনবিহার লীলা করলেন।
তাস্তু পংক্তিকৃতাঃ সর্বা রময়ন্তি মনোরমম ।
গায়ন্তং কৃষ্ণচরিতং দ্বন্দশো গোপকন্যকাঃ ।। ২৫ ।।
অনুবাদ: ঐ সমস্ত গোপকিশোরীরা মন্ডলাকারে পংক্তি বানিয়েছিল, প্রত্যেক গোপীর দুদিকে শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমান হয়ে গোপী-কৃষ্ণের যুগল জোড়া তৈরী করলেন। কৃষ্ণ চরিত্রের গান করতে করতে তারা নৃত্য করতে থাকলেন।
এরপর ৯টি শ্লোকে কৃষ্ণের সাথে গোপীদের রাসলীলার বর্ণনা আছে। হরিবংশের প্রধান উদ্দেশ্য কৃষ্ণের বংশ তথা বৃষ্ণি বংশের বর্ণনা। অন্যান্য অংশ শ্রীমদ্ভাগবতের ন্যায় কেবল সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। শ্রীমতি রাধা শ্রীমদ্ভাগবতের মতো লুকায়িত, কিন্তু ভক্তের চোখে নয়। যেখানে রাস আছে, সেইখানেই রাসেশ্বরী শ্রীমতি রাধারাণী আছেন।
***বিষ্ণুপুরাণ***
বিষ্ণুপুরাণ হচ্ছে ১৮টি মহাপুরাণের অন্তর্গত একটি সাত্ত্বিক পুরাণ। এতে ২৩ হাজার শ্লোক আছে। এই পুরান ছয় ভাগে বিভক্ত। যথা- (১) বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর উৎপত্তি, ধ্রুব চরিত, প্রহ্লাদ চরিত ইত্যাদি; (২) পৃথিবী, সপ্তদ্বীপ, সপ্তসমুদ্র; (৩) ব্যাস কর্তৃক বেদবিভাগ, আশ্রম ধর্ম ইত্যাদি; (৪) সূর্য ও চন্দ্র বংশ প্রভৃতি রাজবংশের বিবরণ; (৫) কৃষ্ণচরিত, বৃন্দাবনলীলা ইত্যাদি; (৬) বিষ্ণুভক্তি, যোগ ও মুক্তির কথা। বিষ্ণুপুরাণের ৫ম খণ্ডে, ১৩ অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলার বর্ণনা আছে।
রাসলীলার একপর্যায়ে হটাৎ শ্রীকৃষ্ণ অন্তর্ধান হলেন। গোপীরা কৃষ্ণকে খুঁজতে খুঁজতে বৃন্দাবনে বিচরণ করতে লাগলেন। তাঁরা কৃষ্ণের প্রতি আসক্তিচিত্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন লীলার অনুকরণ করতে লাগলেন। তখন হঠাৎ কোনো এক গোপী মাটিতে কৃষ্ণপদচিহ্ন দর্শন করে আনন্দে সর্বাঙ্গে পুলকিত হল। তখন সে সবাইকে ডেকে সেদিকে দেখিয়ে বলতে লাগলো, “হে সখী! এই দেখো লীলালংকৃতগামী কৃষ্ণের ধ্বজ-বজ্র-অঙ্কুশ চিহ্নিত এই সকল পদচিহ্ন দেখা যাচ্ছে। আর ওই দেখো! কৃষ্ণের সাথে কোন পুণ্যবতী রমণী মদালসভাবে গমন করেছে। কৃষ্ণ চরণচিহ্নের পাশে পাশে তাঁরও ছোট ছোট পদচিহ্ন দেখা যাচ্ছে।……………………………… পূর্বজন্মে এই ভাগ্যবতী রমণী (শ্রীমতি রাধা) ফুল দিয়ে সর্বাত্মা বিষ্ণুর অর্চনা করেছিলেন। তাই ভগবান কৃষ্ণ এখানে বসিয়ে তাঁকে ফুল দিয়ে সাজিয়েছেন। এই তাঁর চিহ্ন দেখো।
এই দেখো! এই পথ অবলম্বন করে নন্দগোপসুত শ্রীকৃষ্ণ সেই মানময়ী রমণীকে মাথায় পুষ্পবন্ধন করে দিয়ে তাঁকে নিয়ে প্রস্থান করেছেন। ………………… আহা! এখানে হয়তো ওই রমণীকে ধূর্তের করস্পর্শ মাত্র পরিত্যাগ করেছেন। কারণ নিরাশায় মন্দগামীনী সেই রমণীর পদচিহ্ন এই স্থানের পর আর নেই। এই স্থলে কৃষ্ণ সেই গোপীকে, “তুমি এখানে অবস্থান কর, এখানে এক অসুর বাস করে। আমি তাকে হত্যা করে শীঘ্র তোমার কাছে আসছি—” এইরকম কোন কথা বলে চলে গেছেন। কৃষ্ণের শীঘ্র ও নিম্নপদপংক্তি দেখে এরকম মনে হচ্ছে কৃষ্ণ এইস্থান হতে গহীন বনে হয়তো প্রবেশ করেছেন। তাঁর পদচিহ্ন তো আর দেখা যাচ্ছে না। তোমরা নিবৃত্ত হও। এখানে আর চন্দ্রকিরণ প্রবেশ করছে না।”
তখন এভাবে গোপীরা কৃষ্ণ দর্শনে নিরাশ হয়ে যমুনা তীরে এসে কৃষ্ণচরিত গান করতে আরম্ভ করল। এরপর কৃষ্ণ তাঁদের দর্শন দেন ও পুনরায় রাসক্রীড়া আরম্ভ করেন।
***শ্রীমদ্ভাগবত***
১৮ টি মহাপুরাণের মধ্যে ভাগবত পুরাণ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ, যা স্কন্দপুরাণে, গরুড়পুরাণে ও পদ্মপুরাণে স্বীকার করা হয়েছে। এতে ১৮ হাজার শ্লোক রয়েছে এবং এটি ১২টি স্কন্ধে বিভক্ত। একে বেদান্ত-সূত্রের স্বাভাবিক ভাষ্য বলা হয় যা স্বয়ং ব্যাসদেব লিখেছেন (অর্থোহয়ং ব্রহ্মসুত্রানাম-গরুড় পুরাণ)। এই পুরাণের ১০ম স্কন্ধে কৃষ্ণলীলা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।
শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণনা আছে যে, রাসস্থলী থেকে মাধব হঠাৎ অন্তর্ধান হলে গোপীরা তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে এক জায়গায় মাধবের চরণ চিহ্ন পান ও দেখেন তার পাশে পাশে অন্য এক গোপীর পদচিহ্ন রয়েছে। গোপীরা তখন আলোচনা করছিলেন কে এই গোপী। তাঁর চরণচিহ্ন দেখে তাঁরা বুঝতে পারেন তিনিই শ্রীকৃষ্ণের সবচেয়ে প্রিয়তমা, শ্রীহরির সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত এবং তিনি কৃষ্ণ ভিন্ন অন্যকিছু জানেন না। অর্থাৎ, শ্রীমতি রাধা। তাই, “অনায়ারাধিতো নূনং ভগবান হরিরীশ্বরঃ” এইভাবে শ্রীমতি রাধারানীর নাম বলেছেন। শ্রীহরির সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত একমাত্র শ্রীমতি রাধারানী আবার ‘আরাধিত’ শব্দে ‘রাধা’ নাম আছে। তাই, এই শব্দালঙ্কার প্রয়োগ করেছেন ব্যাসদেব। ভারতীয় সংস্কৃতিতে অলংকার ছাড়া যে কাব্য হয় না তা না জেনে কেউ মন্তব্য করতে পারেন যে শ্রীমদ্ভাগবতে রাধা নাম নেই। কিন্তু তা সত্য নয়।
তৈস্তৈঃ পদৈ তৎ পদবীম অন্বিচ্ছন্ত্যা অগ্রত অবলাঃ।
বধ্বা পদৈ সুপৃক্তানি বিলোক্যার্তাঃ সমব্রুবন।।
– শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩০/২৬
অনুবাদঃ সেই সেই পদচিহ্ন ধরে কৃষ্ণের পথ অনুসরণ করে যেতে যেতে গোপীরা যখন দেখলেন কৃষ্ণের পদচিহ্নের পাশে পাশে তাঁর অন্যতম প্রিয়তমার পদচিহ্ন রয়েছে, তখন তাঁরা আকুল হয়ে বলতে লাগলেন।
কস্যাঃ পদানি চৈতানি যাতায়া নন্দসূনূনা।
অংসন্যস্তপ্রকোষ্ঠায়াঃ করেণে করিণা যথা।।
– শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩০/২৭
অনুবাদঃ এখানে এক গোপীর পদচিহ্ন রয়েছে যিনি নন্দ মহারাজের পুত্রের সাথে সাথে গেছেন। এক হস্তী যেমন তার হস্তিনী কাঁধে তার শুঁড় স্থাপন করে যায়, কৃষ্ণও তাঁর বাহু তাঁর স্কন্দে স্থাপন করে গিয়েছেন।
কে এই গোপী? কার পায়ের ছাপ? তা বিচার করতে গিয়ে অন্য গোপীরা বলছেন,
অনায়ারাধিতো নূনং ভগবান হরিরীশ্বরঃ।
যন্নো বিহায় গোবিন্দঃ প্রীতো যামনয়দ্রহ।।
– শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩০/২৮
অনুবাদঃ এই বিশেষ গোপী নিশ্চয়ই যথার্থভাবে সর্বশক্তিমান ভগবান গোবিন্দের আরাধনা করেছিলেন, তাই তাঁর প্রতি অত্যন্ত প্রীত হয়ে তিনি অবশিষ্ট আমাদের পরিত্যাগ করে তাঁকে নিয়ে অন্যত্র গমন করেছেন।
এখন কেউ তাঁর নাম শ্রীমতি রাধারানী মানুক বা না মানুক শ্রীকৃষ্ণ যে গোপীজনবল্লভ, গোপীদের সাথে রাসলীলা করেছেন, তাঁদের মধ্যেও যে একজন গোপী তাঁর অন্যতম প্রিয়তমা, যাঁকে নিয়ে রাস ত্যাগ করে শ্রীহরি অন্যত্র চলে যান ও গাছ থেকে ফুল তুলে তাঁর কেশ শৃঙ্গার করে দেন, তা মহাভারত, হরিবংশ, বিষ্ণুপুরাণ ও শ্রীমদ্ভাগবতের শ্লোকে প্রমাণিত। তাঁর নাম ‘অনায়ারাধিত’ শ্লোকে শুকমুনি শ্রীমতি রাধা বলে ইঙ্গিতে জানিয়েছেন।
শুকদেব কেন শ্রীমতি রাধারানীর নাম উচ্চারণ করেন নি, সেই প্রসঙ্গে সনাতন গোস্বামী ব্যাখ্যা করে বলেছেন,
গোপীনাং বিততাদ্ভুতস্ফুটতর নাম প্রেমানলার্চিশ্চটাদগ্ধানাং কিল নামকীর্তনকৃ্তাত্তাসাং স্পর্শেন সদ্যো মহাবৈকল্যং স ভজন কদাপি ণ মুখে নামানি কর্তুং প্রভুঃ।।
– বৃহৎভাগবতামৃতম্ ১/৭/১৩৪
অনুবাদঃ শুকদেব শ্রীমদ্ভাগবত কথা কীর্তন করার সময় গোপীদের কারোর নাম উচ্চারণ করতে সমর্থ হন নি। তার কারণ, গোপীদের নাম উচ্চারণ করলে বিশেষ স্মৃতিতে তাঁর চিত্ত বিষম জ্বালাময় প্রেমানলে মহাবিহ্বল হয়ে পড়তো, যার ফলে তিনি আর শ্রীমদ্ভাগবত কথা বলতে পারতেন না।
– শ্রীমান মূর্তিমান মাধব দাস
(স্বধর্মম্ কর্তৃক সংগ্রহীত ও অনুবাদিত। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যসহকারে শেয়ার করার জন্য অনুমোদিত।)