ঈশ্বরের সমার্থক শব্দরুপে “ভগবান” শব্দটি কেন যুক্তিযুক্ত?

IMG-20250224-WA0020(1)

বেদ সহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে ঈশ্বরকে সাকার বলা হয়েছে।ঈশ্বর সাকার,কেননা ঈশ্বরের আকার বা রুপ বা ইন্দ্রিয় রয়েছে।অথাৎ ঈশ্বরের মস্তক( মাথা),চক্ষু( চোখ),হস্ত( হাত),পদ( পা) ইত্যাদি সমস্ত ইন্দ্রিয় বা আকার বা রুপ রয়েছে।

“হিরন্ময়েন পাত্রেন সত্যস্যাহপিহিতং মুখম
তৎ ত্বং পুষন্নপাবৃনু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে।।”

              -ঈশোপনিষদঃ ৬(শুক্ল যজুর্বেদ)

অনুবাদঃ হে প্রভু,হে সর্বজীবপালক,আপনার উজ্জ্বল জ্যোতির দ্বারা আপনার মুখারবিন্দ আচ্ছাদিত।কৃপা করে সেই আচ্ছাদন দূর করুন এবং যাতে আমরা আপনাকে দেখতে পারি

সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে সেই এক ঈশ্বরকে ভগবান( ষড়ৈশ্বর্যময় প্রভু), পরমব্রহ্ম ( সর্বব্যাপ্ত প্রভু),পরমাত্মা( সর্ব জীবের হৃদয়ে অবস্থিত প্রভু),পরমেশ্বর( পরম ঈশ্বর) , মহেশ্বর ( মহান ঈশ্বর) ইত্যাদি নামে সম্বোধন করা হয়েছে।একইসাথে বেদসহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে সে ঈশ্বর বা পরমেশ্বর বা ভগবান হলেন শ্রীকৃষ্ণ

কিন্তু তারপরও আজকাল কিছু শাস্ত্র জ্ঞানহীন অন্ধ ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে শ্রীকৃষ্ণ হলেন ভগবান কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর বা পরমেশ্বর নন। তাদের দৃষ্টিতে ভগবান এবং ঈশ্বর নাকি ভিন্ন শব্দ। তারা অপপ্রচার করছে ঈশ্বর মানে সৃষ্টিকর্তা আর ভগবান মানে নাকি মহাত্মা।তাদের এ ধরনের উদ্ভট কথা সনাতনী শাস্ত্রে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।তাদের এ ধরনের কথা শুনলে আমাদের হাসি পায়।কারন সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে আমরা যখন ভগবান শব্দটিকে বিশ্লেষণ করি তখন দেখতে পায়,এই ভগবান শব্দটি ঈশ্বর বা পরমেশ্বরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ভগবানঃ

ভগ“শব্দের অর্থ হল ষড়ৈশ্বর্য, এবং দ্বিতীয় অংশ “বান” যার আভিধানিক অর্থ হল অধিকারী।সুতরাং সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর হলেন ষড়ৈশ্বর্যের পূর্ণ অধিকারী,আর তাই সে ঈশ্বর বা পরমেশ্বরকে ভগবান বলা হয়।বিষ্ণু পুরাণ শাস্ত্রে ভগবান শব্দটি সম্পর্কে বলা হয়েছে –

“ঐশ্বর্য্যস্য সমগ্রস্য বীর্যস্য যশসঃ শ্রিয়ঃ।
জ্ঞানবৈরাগ্যয়োশ্চৈব ষন্নৎ ভগ ইতিঙ্গনা।।”

-(বিষ্ণুপুরাণ ৬/৫/৭৪)
অনুবাদঃ “যার মধ্যে সমস্ত ঐশ্বর্য(সম্পদ), সমস্ত বীর্য (শক্তি), সমস্ত যশ(খ্যাতি), সমস্ত শ্রী (ধনসম্পদ), সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত বৈরাগ্য এই ছয়টি বিষয় পূর্ণ মাত্রায় বর্তমান তিনিই হচ্ছেন ভগবান।”

ঈশ্বরঃ

সংস্কৃতে “ঈশ্বর” শব্দের ধাতু মূল “ঈশ্”, যার অর্থ হল মালিক, শাসক,নিয়ন্ত্রক। দ্বিতীয় অংশ ‘বর’ যার আভিধানিক অর্থ হল “সর্বশ্রেষ্ঠ”।সুতারাং “ঈশ্বর” শব্দের অর্থ হলো– যিনি সমস্ত কিছুর মালিক/নিয়ন্ত্রক/ সৃষ্টিকর্তা।

সুতারাং যিনি ঈশ্বর বা পরমেশ্বর ( পরম ঈশ্বর)বা মহেশ্বর ( মহান ঈশ্বে) বা পরম ব্রহ্ম বা পরমাত্মা তাকে ভগবান বলা হয়। কারন “ভগ” শব্দে ষড়ৈশ্বর্যকে নির্দেশ করা হয়েছে। ষড়ৈশ্বর্যের প্রথমটি হল, “সমগ্র ঐশ্বর্য” ( সমগ্র সম্পদ)-এ জগতের সমস্ত সম্পদের মালিকানা একমাত্র ঈশ্বরই দাবী করতে পারেন।ঠিক তেমনই “সমগ্র বীর্য” বা সমস্ত শক্তি,” সমগ্র শ্রী” বা সমস্ত সৌন্দর্য, “সমগ্র জ্ঞান”, “সমগ্র যশ”(খ্যাতি),”সমগ্র বৈরাগ্য” শুধু মাত্র ঈশ্বরই দাবী করতে পারেন।তাই ঈশ্বরকে সনাতনী শাস্ত্রে ভগবান বলা হয়েছে। তাঁর প্রথম প্রমান হল কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ।যেখানে সর্বব্যাপী পরমব্রহ্ম এবং সমস্ত জীবের হৃদয়ে অবস্থানকারী পরমাত্মা পরম ঈশ্বরকে ভগবান বলা হয়েছে।

সর্বাননশিরোগ্রীবঃ সর্বভূতগুহাশয়ঃ।
সর্বব্যাপী স ভগবান্ তস্মাৎ সর্বগতঃ শিবঃ।।১১।।

– শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ৩/১১(কৃষ্ণ যজুর্বেদ)

শব্দার্থঃ সর্বাননশিরোগ্রীবঃ = সর্বদিকে মুখ, মস্তক ও গ্রীবা, সর্বভূতগুহাশয়ঃ =সকল প্রাণীর হৃদয় গুহায় অন্তর্যামী রূপে অবস্থান করেন। সর্বব্যাপী= সর্বব্যাপক, সঃ =তিনি, ভগবান= ভগবান, তস্মাৎ= এইজন্য, সর্বগতঃ= সর্বত্র অবস্থিত, শিবঃ= পরম মঙ্গলময়।

অনুবাদ:- ঈশ্বর সর্বানন শিরোগ্রীব,অথাৎ সর্বদিকে ঈশ্বরের মুখ, মস্তক ও গ্রীবা বর্তমান।তিনি সকলের হৃদয় গুহায় অন্তর্যামীরুপে অবস্থান করেন তাই তিনি সর্বভূত গুহাশয়। তিনি সর্বব্যাপক তাই তিনি ভগবান ও মঙ্গলময়।

সুতারাং সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে যিনি ঈশ্বর বা পরমেশ্বর তাঁর একটি সমার্থক শব্দ হল ভগবান।এর আরো প্রমান পাই বেদ/শ্রুতিসহ মহাভারত, গীতা, অষ্টাদশ পুরান এবং পঞ্চরাত্র ইত্যাদি শাস্ত্রে।এছাড়াও বেদসহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর। শ্রীকৃষ্ণকে বেদসহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে ঈশ্বর, পরমাত্মা,পরমব্রহ্ম শব্দে যেমন সম্বোধন করা হয়েছে ঠিক তেমনই তাকেই ভগবান শব্দে সম্বোধন করা হয়েছে।

তস্মাদ্ভারত সর্বাত্মা ভগবানীশ্বরো হরিঃ।
শ্রোতব্যঃ কীর্তিতব্যশ্চ স্মর্তব্যশ্চেচ্ছতাভয়ম্ ॥৫॥

-(শ্রীমদ্ভাগবত ২/১/৫)
শব্দার্থঃ-তস্মাৎ=এই কারণে; ভারত=হে ভরত বংশীয়, সর্বাত্মা=পরমাত্মা; ভগবান্ = ভগবান, ঈশ্বর=নিয়ন্তা, হরিঃ-শ্রীহরি(শ্রীকৃষ্ণ),শ্রোতব্য=শ্রবণীয়;
কীর্তিতব্য=কীর্তনীয়; চ=ও: স্মর্তব্যঃ=স্মরণীয়: চ= এবং; ইচ্ছতা=ইচ্ছুক; অভয়ম্= ভয় থেকে মুক্তি।

অনুবাদ “হে ভারত, এই কারনে সমস্ত ভয় থেকে যারা মুক্ত হতে ইচ্ছা করেন তাদের অবশ্যই পরম নিয়ন্তা(ঈশ্বর) পরমাত্মা(সর্বাত্মা) ভগবান (ষড়ৈশ্বর্যময় পরমপুরুষ) শ্রীহরির (শ্রীকৃষ্ণ) কথা শ্রবণ, কীর্তন এবং স্মরণ করতে হবে।”

অর্জুন উবাচ।”পরং ব্রহ্ম পরং ধাম পবিত্রং পরমং ভবান্।পুরুষং শাশ্বতং দিব্যমাদিদেবমজং বিভুম্।।আহুস্ত্বামৃষয়ঃ সর্বে দেবর্ষিনারদস্তথা।অসিতো দেবলো ব্যাসঃ স্বয়ং চৈব ব্রবীষি মে।।”

– (গীতা ১০/১২-১৩ঃ অর্জুন)
শব্দার্থঃ অর্জুন উবাচ =অর্জুন বললেন।পরম্ ব্রহ্ম=
পরমব্রহ্ম; পরম ধাম=পরম ধাম,পবিত্রম= পবিত্র; পরমম্=পরম; ভবান= তুমি; পুরুষম্=পুরুষ, শাশ্বতম্ =সনাতন; দিব্যম্ =দিব্য; আদি দেবম=আদি দেব; অজম্ =জন্মরহিত; বিভুম্=মহত্তম।আহুঃ=বলেন; ত্বাম্=তোমাকে; ঋষয়ঃ =ঋষিগণ; সর্বে=সমস্ত; দেবর্ষিঃ=দেবর্ষি; নারদ=নারদ,তথা=ও; অসিতঃ= অসিত; দেবলঃ=দেবল,ব্যাসঃ=ব্যাসদেব; স্বয়ম্= তুমি নিজে; চ=ও, এব=অবশ্যই; ব্রবীমি=বলছ; মে=আমাকে।

অনুবাদঃ” অর্জুন বললেন- তুমি (শ্রীকৃষ্ণ)পরমব্রহ্ম(পরমেশ্বর), পরম ধাম, পরম পবিত্র ও পরম পুরুষ। তুমি নিত্য, দিব্য, আদি দেব, অজ ও বিভু। দেবর্ষি নারদ, অসিত, দেবল, ব্যাস আদি ঋষিরা তোমাকে সেভাবেই বর্ণনা করেছেন এবং তুমি নিজেও এখন আমাকে তা বলছ।”

শ্রীভগবানুবাচ। বহুনি মে ব্যতীতানি জন্মানি তব চার্জুন। তান্যহং বেদ সর্বাণি ন ত্বং বেথ পরন্তপ ।। ৫।।অজোহপি সন্নব্যয়াত্মা ভূতানামীশ্বরোহপি সন্। প্রকৃতিং স্বামধিষ্ঠায় সম্ভবাম্যাত্মমায়য়া ।। ৬।।

শব্দার্থঃ গবান উবাচ = ভগবান বললেন; বহুনি=বহু, মে=আমার; ব্যতীতানি=অতিবাহিত হয়েছে; জন্মানি= জন্মসমূহ; তব= তোমার; চ=ও; অর্জুন=হে অর্জুন; তানি=সেই সমস্ত; অহম্=আমি; বেদ=জানি; সর্বাণি=সমস্ত; ন=না; ত্বম্=তুমি; বেথ= জান; পরন্তপ= হে শত্রুদমনকারী।অজ=জন্মরহিত; অপি=যদিও; সন্=হয়েও; অব্যয়=অক্ষয়; আত্মা=দেহ; ভূতানাম্=জীবসমূহের, ঈশ্বর=ঈশ্বর/পরমেশ্বর; অপি= যদিও; সন্=হয়েও; প্রকৃতিম্=চিন্ময় রূপে; স্বাম্=আমার; অধিষ্ঠায়=অধিষ্ঠিত হয়ে; সম্ভবামি=আবির্ভূত হই; আত্মমায়য়া=আমার অন্তরঙ্গা শক্তির দ্বারা।

অনুবাদ-“ভগবান বললেন(শ্রীকৃষ্ণ), হে পরন্তপ অর্জুন, আমার ও তোমার বহু জন্ম অতিবাহিত হয়েছে। আমি সেই সমস্ত জন্মের কথা স্মরণ করতে পারি, কিন্তু তুমি পার না।যদিও আমি জন্মরহিত( আমার জন্ম নাই), আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং যদিও আমি সর্বভূতের (সমস্ত জীবের) ঈশ্বর, তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আমি আমার আদি চিন্ময় রূপে যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।

 একো বশী সর্বগঃ কৃষ্ণ ঈড্যঃ”

-গোপালতাপনী উপনিষদ ১/২১(অথর্ববেদ)

অনুবাদঃ”সেই একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই পরম পুরুষোত্তম ভগবান,তিনিই আরাধ্য।”

ব্রহ্মন্যো দেবকীপুত্রঃ

নারায়ন উপনিষদ ৪( কৃষ্ণ যজুর্বেদ)

অনুবাদঃ “দেবকীপুত্র শ্রীকৃষ্ণই পরমব্রহ্ম (পরমেশ্বর)” 

“এষ বৈ ভগবান সাক্ষাদাদ্যো নারায়ন পুমান।

মোহয়ন্মায়য়া লোকং গূঢ়শ্চতি বৃষ্ণিষু।।”

-(শ্রীমদ্ভাগবত পুরানঃ১/৯/১৮,ভীষ্মদেব)

অনুবাদঃ”তোমাদের মাঝে দন্ডায়মান এই কৃষ্ণ সাক্ষাৎ ভগবান, তিনি আদি নারায়ন। কিন্তু তিনি তার নিজের সৃষ্ট মায়া শক্তির প্রভাবে আমাদের মুগ্ধ করে বৃষ্ণিকূলের একজনের মত হয়ে আমাদের মাঝে বিচরন করছেন।”

“ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ।
অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্ব্ব কারণকারণম্।।”

(ব্রহ্মসংহিতা ৫/১, ব্রহ্মা)

অনুবাদঃ”কৃষ্ণ পরম ঈশ্বর। তার দেহ সচ্চিদানন্দময়। তিনি অনাদি ও আদি। তিনিই সর্ব্ব কারণের কারণ, তিনিই গোবিন্দ।”

অনেকে প্রশ্ন করেন,এক সৃষ্টিকর্তাকে যদি ঈশ্বর এবং ভগবান বলা হয়, তাহলে সনাতনী শাস্ত্রে তো বিভিন্ন স্থানে ব্রহ্মা, শিব সহ অনেক মহান দেবদেবীদেরকেও ঈশ্বর বলা হয়েছে, তারা কি আদৌ ঈশ্বর ?

এর উত্তর হল সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে প্রকৃতির বিভিন্ন বিভাগের,যেমনঃব্রহ্মা- সৃষ্টি, শিব-ধ্বংস, ইন্দ্রদেব-স্বর্গ এবং বৃষ্টি ,বরুনদেব-জল,অগ্নিদেব- অগ্নি,সূর্যদেব- আলো, সরস্বতী-বিদ্যা, কার্তিক – দেবতাদের সেনাপতি,দুর্গা-শক্তি,লক্ষ্মী-ধনসম্পদ ইত্যাদি দেবদেবীগণ হলেন এক একটি গুণের অধিপতি বা ঈশ্বর বা ঈশ্বরী বা ক্ষমতাধর,কিন্তু তারা প্রকৃতির সমস্ত বিভাগের একক ক্ষমতাধর বা ঈশ্বর নন।তাই সনাতনী শাস্ত্রে তাদেরকে সন্মানসূচক ঈশ্বর শব্দে বিভিন্ন মুনি ঋষিরা সম্বোধন করেছেন।কিন্তু তাদেরকে কেউ পরম ঈশ্বর /পরমেশ্বর বলে সম্বোধন করে নি।পরমেশ্বর হলেন একজন, যার নাম শ্রীকৃষ্ণ, যিনি প্রকৃতির বিভিন্ন বিভাগের ঈশ্বরদেরও ঈশ্বর।পুনরায় সনাতনী শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ং প্রকাশ শ্রীবিষ্ণু, শ্রীরাম,শ্রীবলরাম,শ্রীনৃসিংহদেবকেও ভগবান, পরমেশ্বর শব্দে সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু ইন্দ্র, বরুন,কার্তিক,গনেশ, সূর্য ইত্যাদি দেবতাদের ক্ষেত্রে পরমেশ্বর শব্দটি ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয় । 

একই রকম ভগবান শব্দটি সনাতনী শাস্ত্রে ব্রহ্মা,শিবসহ বিভিন্ন মহান দেবতা এবং নারদ,ব্যাসদেব, মনুসহ বিভিন্ন মহাত্মাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।যদিও তারা কেউ ভগবান বা ষড়ৈশ্বর্যধারী নন।তারপরেও এসমস্ত মহান দেবতা বা মহাত্মাগণের ক্ষেত্রে শাস্ত্রে ভগবান শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য হল, এসমস্ত দেবতা এবং মহাত্নাগণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মতোই সন্মানিত, তাই তাদের ক্ষেত্রে সনাতনী শাস্ত্রে মুনি ঋষিরা ভগবান শব্দটি ব্যবহার করেছেন।এ বিষয়ে একটি উদাহরন দেয়া যায়, সন্ন্যাসীদের নামের সাথে মহারাজ শব্দটি ব্যবহার করা হয়(যেমন শ্রীমৎ ভক্তিবিনয় স্বামী মহারাজ)।মহারাজ শব্দের অর্থ হল মহান রাজা।কিন্তু একজন সন্ন্যাসী তো সর্বত্যাগী,তাহলে তিনি কিভাবে একটি দেশের সর্বোত্তম পরিচালক বা রাজা হবেন?বস্তুতপক্ষে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীকে মহারাজ বা মহান রাজা শব্দে সম্বোধন করার মূল উদ্দেশ্য হল তিনিও একটি দেশের রাজার মতোই গুরুত্বপূর্ণ বা সন্মানীয় ব্যক্তি,যদিও একজন সন্ন্যাসী কখনো রাজা নন।

পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনায় সমগ্র সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে, এক ঈশ্বরকে যেমন পরমেশ্বর, পরমব্রহ্ম বলা হয়, ঠিক তেমনই সেই এক ঈশ্বরের একটি সমার্থক শব্দ হল ভগবান।

হরে কৃষ্ণ। প্রনাম

 

Sadgun Madhav Dash

Writer & Admin

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments