কেন ইসকনের ভক্তেরা ও অন্যান্য বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ভক্তরা ছেলেদের প্রভু এবং মেয়েদের মাতাজী বলে সম্বোধন করেন?

Svadharmam Q&A

প্রভু শব্দটি শুধুমাত্র ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় এমনটি নয়। সংস্কৃত প্রভু শব্দের আরো বহু অর্থ বিদ্যমান। আমাদের সনাতনী শাস্ত্রে একই সংস্কৃত শব্দ স্থান, কাল এবং পাত্র অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে।

আসুন জেনে নেই, অন্যান্য বৈষ্ণব সম্প্রদায় এবং ইসকনের ভক্তরা কোন অর্থে অপরকে প্রভু বলে সম্বোধন করে। প্রথমে বাংলা একাডেমী প্রনীত বাংলা শব্দের অভিধান থেকে জেনে নেই প্রভু শব্দের অর্থ কি?

প্রভু = শিক্ষক (মাষ্টার),মনিব,স্বামী,কর্তা,রাজা,ঈশ্বর,
ভগবান,মহামানব,অতিসম্মানিয় ব্যাক্তি,নেতা,
পরিচালক ইত্যাদি।

ঠিক তেমনই সংস্কৃত ভাষায় প্রভু শব্দটি উপরোক্ত সকল সমার্থক অর্থে ব্যবহৃত হয়। প্রভু শব্দটি উচ্চারন করে কাউকে অভিবাদন করা সনাতনী শাস্ত্র অনুমোদিত।

শ্রীমদ্ভাগবত পুরানের ১।৫।৪ নং শ্লোকে নারদ মুনি তার শিষ্য শ্রীল ব্যাসদেবকে প্রভু বলে সম্বোধন করেছেন:-

জিজ্ঞাসিতমধীতং চ ব্রহ্মযত্তৎ সনাতনম।

তথাপি শোচস্যাত্মানমকৃতার্থ ইব প্রভো।।

অনুবাদ: তুমি ব্রহ্মতত্ত্ব পূর্ণরূপে উপলব্ধি করেছ এবং তৎসংলগ্ন জ্ঞান-হৃদয়ঙ্গম করেছ। তথাপি হে প্রভু, তুমি কেন নিজেকে অকৃতার্থ বলে মনে করে বিষাদগ্রস্ত হয়েছ?

শ্রীমদ্ভাগবত পুরানের ১।৯।১৭ নং শ্লোকে শ্রীভীষ্মদেব তার ভাইয়ের ছেলে যুধিষ্ঠির মহারাজকে প্রভু বলে সম্বোধন করলেন:-

” তস্যানুবিহিতোহনাথা নাথ পাহি প্রজাঃ প্রভো।। “

অনুবাদ: হে প্রভু, এখন যারা অনাথ হয়েছে,সেই সব প্রজাদের যত্ন এবার তোমাকে নিতে হবে।

শ্রীমদ্ভাগবত পুরানের ১।১৩।১৯ নং শ্লোকে শ্রীবিদুর তার ভাই ধৃতরাষ্ট্রকে প্রভু বলে সম্বোধন করলেন:-

” প্রতিক্রিয়া ন যস্যেহ কুতশ্চিৎ কহির্চিৎ প্রভো। “

অনুবাদ: হে প্রভু, এ জড় জগতে কোন মানুষের দ্বারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রতিকার হতেই পারে না।

এছাড়াও শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরান শাস্ত্রের ১।১৯।৩৮ নং শ্লোকে শ্রীপরীক্ষিত মহারাজ তার গুরুদেব শুকদেবকে, ৩।৪।২১ নং শ্লোকে শ্রীউদ্ধব বিদুরকে, ৩।১০।১০ নং শ্লোকে শ্রীবিদুর মৈত্রেয় মুনিকে প্রভু বলে সম্বোধন করেছিলেন।

সুতারাং ইসকন ভক্তরা অন্য ব্যক্তিকে বা মানুষকে প্রভু বলে সম্বোধন করে যার অর্থ হল- আপনি মহান অথবা আপনি অতীব সন্মানিত।

বৈষ্ণবগণকে প্রভু বলা স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যমহাপ্রভুর শিক্ষা যা চৈতন্যভাগবতে ৮।১৮৩ এভাবে উল্লেখ রয়েছে –

অলৌকিক হঞা প্রভু বৈষ্ণব-আবেশে।
যে বলিতে যোগ্য নহে, তাও প্রভু ভাষে

অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু বৈষ্ণব বেশ ধারণ করে, যিনি যোগ্য নয় তাকেও প্রভু বলে সম্বোধন করতেন।

পরিশেষে ইসকন এবং অন্যান্য বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ভক্তরা মানুষকে সৃষ্টিকর্তা ভেবে প্রভু বলে সম্বোধন করেন না, বরং ভক্তরা অন্য ব্যাক্তি বা মানুষকে প্রভু বলে সম্বোধন করেন, যার অর্থ হল ” আপনি সর্বদিক থেকে আমার থেকে মহান”, এরুপ দৃষ্টিকোণ থেকে।

ইসকনের ভক্তেরা মেয়েদের কেনো মাতাজী সম্বোধন করেন?

চাণক্য নীতি সূত্রে আচার্য্য চাণক্য বলেছেন:-

মাতৃবৎ পরদারেষু পরদ্রব্যেষু লোষ্ট্রবৎ।

আত্মবৎ সর্ব্বভূতেষু যঃ পশ্যতি স পণ্ডিতঃ।।

অনুবাদ: যে ব্যক্তি পরস্ত্রীকে মাতৃজ্ঞানে দেখেন, পরের দ্রব্যকে মাটির ঢেলার মতো জ্ঞান করেন (অর্থ নির্লোভ থাকেন) এবং সকল জীবে আত্মজ্ঞান পোষণ করেন- তিনিই যথার্থ জ্ঞানী।

অর্থাৎ আচার্য্য চাণক্য বলেছেন, প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত পরস্ত্রী তথা নিজের স্ত্রী ব্যতিত সকল নারীকে মাতৃজ্ঞান করতে। তাই ইসকনের ভক্তেরা প্রত্যেক মেয়েকে মাতাজী সম্বোধন করেন।

©শ্রীপাদ সদগুন মাধব দাস প্রভু
©স্বধর্মম্ টীম

[ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত। ]

নিবেদক-
° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

Shuvo Debnath

Writer & Admin

4 3 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments