শিবঃ
শিব হলেন চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক গোলক বৃন্দাবনে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাম পার্শ্ব থেকে আবির্ভূত এক মহান দেবতা অথাৎ মহাদেব।পুনরায় ভগবান মহাবিষ্ণু থেকে যখন এই ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি হয় তখন ব্রহ্মার ভ্রুযুগল থেকে আবির্ভূত হন।পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞা অনুসারে তিনি জড় জগতের সমস্ত জীবের মঙ্গল বিধান করে অমঙ্গল বা অশুভকে বিনাশ করেন,তাই তাঁর নাম শিব।
শিব পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞা অনুসারে জড় জগতে সদা বিরাজমান তমোগুণের অধিষ্ঠাত্রী দেবতারুপে তাঁর কার্য সম্পাদন করেন।শিব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞা অনুসারে, জড় জগতে ভোগবিলাসে প্রমত্ত জীবকে শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মে শরণাগত হওয়ার শিক্ষা প্রদান করেন এবং তিনি নিজেও সর্বদা সে শিক্ষা অনুসারে পঞ্চমুখে হরিনাম কীর্তন করেন এবং শ্রীবিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীরামচন্দ্রের ধ্যানে মগ্ন থাকেন,তাই তাঁকে সনাতনী শাস্ত্রে পরম বৈষ্ণব নামে শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে।
১/ চিন্ময় জগতের গোলক ধামে মহাদেব শিবের আবির্ভাবঃ
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান শাস্ত্রের ব্রহ্মখন্ডের ৩য় অধ্যায়ে মহাদেব শিবের আবির্ভাবের কথা সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে।কিন্তু এর পূর্বের ব্রহ্মখন্ডের ২য় এবং ৩য় অধ্যায়ের ১-২২ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে-
“চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক হল গোলক বৃন্দাবন ধাম। তার পরিধি তিনকোটি যোজন।সে গোলক বৃন্দাবনের নিম্নে দক্ষিন দিকে পঞ্চাশ কোটি যোজন দূরে বৈকুন্ঠলোক। সে বৈকুন্ঠের বিস্তার ১ কোটি যোজন। বৈকুন্ঠের নিম্নদিকে বামে শিবলোক অবস্থিত।এ গোলক বৃন্দাবন, বৈকুন্ঠ এবং শিবলোককে একত্রে চিন্ময় জগৎ বলা হয়।যাহোক চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক গোলক বৃন্দাবনের রত্নসিংহাসনে প্রবিষ্ট আছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তিনি দ্বিভুজ, মুরলীধর এবং শ্যামসুন্দর(গায়ের রং শ্যামবর্ণ)।তার মস্তকে উজ্জ্বল মুকুট, গলায় বনমালা,রত্ন অলংকারে শোভিত।
সেই পরম প্রভু পরমব্রহ্ম,পরমাত্মা, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দক্ষিণ অঙ্গ থেকে আবির্ভূত হন চতুর্ভুজ নারায়ন।এরপর শ্রীকৃষ্ণের বাম অঙ্গ থেকে আবির্ভূত হন শিব।
এরপর ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান শাস্ত্রের ব্রহ্মখন্ডের ৩/১৮-২২ শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে পরমাত্মা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাম পার্শ্ব থেকে আবির্ভূত হন মহাদেব শিব।তিনি পঞ্চমুখধারী,জপমালায় সর্বদা হরিনামকীর্তনকারী পরম বৈষ্ণব।
আবির্বভূব তৎপশ্চাদাত্মনো বামপার্শ্বতঃ। শুদ্ধস্ফটিকসঙ্কাশঃ পঞ্চবক্রো দিগম্বরঃ ॥ ১৮।।
তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভজটাভারধরো বরঃ।
ঈষদ্ধাস্য প্রসন্নাস্যন্ত্রিনেত্রশ্চন্দ্রশেখরঃ ॥ ১৯।।
ত্রিশূলপট্রিশধরো জপমালাকরঃ পরঃ।
জ্ঞানানন্দো মহাজ্ঞানী মহাজ্ঞানপ্রদঃ পরঃ ॥ ২০।।
চন্দ্রবৃন্দপ্রভমুষ্টমুখদৃষ্টা মনোহরঃ।
বৈষ্ণবানাঞ্চ প্রবরঃ প্রজ্জ্বলন্ ব্রহ্মতেজসা ॥ ২১।।
শ্রীকৃষ্ণপুরতঃ স্থিত্বা তুষ্টব তৎ পুটাঞ্জলিঃ। পুলকাঙ্কিতসর্ব্বাঙ্গং সাশ্রুনেত্রঃ সগদগদঃ ॥ ২২।।
-(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানঃ ব্রহ্মখন্ড ৩/১৮-২২)
অনুবাদঃ পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণের বাম পার্শ্ব হতে শুদ্ধ স্ফটিকের ন্যায় শুক্লবর্ণ, পঞ্চবদন, দিগম্বর শিব আবির্ভূত হলেন। তাঁর কান্তি তপ্তকাঞ্চনতুল্য উজ্জ্বল,মস্তকে জটাভার। সুপ্রসন্ন বদনকমলে ঈষৎ হাস্য, প্রত্যেক বদনে তিন তিন নয়ন, ললাটদেশে চন্দ্র বিরাজমান।তিনি যোগিগণের গুরুর গুরু, সর্ব্ব- সিদ্ধেশ্বর সিদ্ধপুরুষ, করকমলনিকরে ত্রিশূল, পট্টিশ ও জপমালা ধারণ করিতেছেন। তিনি মৃত্যুস্বরূপ, এবং মহাজ্ঞানী। তিনি জ্ঞানে সদা আনন্দময় মহাজ্ঞানী এবং মহাজ্ঞানদাতা । তাঁর মনোহর রূপ পূর্ণচন্দ্রকেও নিন্দা করে । তিনি সুখদৃশ্য, বৈষ্ণবগণের শ্রেষ্ঠ এবং ব্রহ্মতেজে প্রজ্বলিত। তিনি (শ্রীকৃষ্ণ থেকে আবির্ভূত হয়ে) শ্রীকৃষ্ণপ্রেমহেতু পুলকাঙ্কিতগাত্র ও সাশ্রুনেত্র হয়ে কৃতাঞ্জলিপুটে গদগদস্বরে সম্মুখে অবস্থানপূর্ব্বক শ্রীকৃষ্ণকে স্তব করতে আরম্ভ করলেন।
হরে কৃষ্ণ। প্রনাম।।