লক্ষ্মী দেবীঃ
সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে, লক্ষ্মীদেবী হলেন পরমাত্মা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রকাশ ভগবান শ্রীবিষ্ণুর (নারায়ন) নিত্য পত্মী।এই লক্ষ্মী শ্রীমতি রাধারাণীর বাম অংশ থেকে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞায় নারায়নের প্রিয়তমা পত্নি রুপে বৈকুন্ঠে মহালক্ষ্মীরুপে ভগবান বিষ্ণুর প্রেমময়ী সেবায় সর্বদা যুক্ত থাকেন।পুনরায় সে মহালক্ষ্মী জড় জগতের মহা মনোরম স্বর্গলোকে (ইন্দ্রলোক)স্বর্গলক্ষ্মী, মত্যলোকের (পৃথিবী) গৃহে গৃহে গৃহলক্ষ্মী রুপে পূজিত হন।
যেখানে যেখানে নারায়ন (বিষ্ণু)থাকেন সেখানে সেখানে সর্বদা লক্ষ্মীদেবী অবস্থিত থাকেন।যেখানে নারায়ন নেই সেখানে কখনো লক্ষ্মীদেবী থাকতে পারে না।নারায়ন ভিন্ন লক্ষ্মীদেবীকে কখনো আলাদাভাবে পূজা করা উচিত নয়।তাই প্রত্যোক সনাতনীর পরম কর্তব্য প্রতিদিন গৃহে শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ অথবা শ্রীশ্রী লক্ষ্মী নারায়নের যুগপৎ চিত্রপটে পুষ্প,চন্দন, তুলসী,নৈবেদ্য,ধূপ,দীপ ইত্যাদি সহকারে পূজা করা।অথবা সদাচারী ব্রাহ্মণ দ্বারা যুগপৎ লক্ষ্মী নারায়নের চিত্রপটে ঘট স্থাপন পূর্বক পূজা করা।তুলসী পত্র শ্রীবিষ্ণুর চরণ এবং নৈবেদ্যে বা ভোগসামগ্রীতে নিবেদন করা যাবে। কিন্তু কখনো লক্ষ্মীদেবীর চরণে প্রদান করা যাবে না।নিম্নে সনাতনী বিভিন্ন শাস্ত্রের আলোকে নারায়ন পত্মী লক্ষ্মীদেবীর আবির্ভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
রাধাবামাংশভাগেন মহালক্ষ্মীবর্ভূব সা।
চতুর্ভূজস্য সা পত্নী দেবী বৈকুন্ঠবাসিনী।
তদংশো রাজলক্ষ্মীশ্চ রাজসম্পৎপ্রদায়িনী।
তদংশো মত্ত্যলক্ষ্মীশ্চ গৃহহিণাঞ্চ গৃহে গৃহে।।
-(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণঃ প্রকৃতিখন্ড,৪৮/৪৪-৪৫)
অনুবাদঃ ত্রিলোক প্রসিদ্ধ মহালক্ষ্মী দেবী শ্রীরাধার বাম ভাগ হতে উৎপন্ন হন এবং তিনি চতুর্ভুজ বিষ্ণুর পত্নী।তিনি সর্বদা বৈকুন্ঠে অবস্থান করেন(বৈকুন্ঠবাসিনী)। মহা লক্ষ্মীর অংশস্বরূপিনী রাজলক্ষ্মী রাজগণের সম্পদ বৃদ্ধি করেন। রাজলক্ষ্মীর অংশ স্বরুপিনী মর্ত্যলক্ষ্মী। তিনি মনুষ্যের গৃহে বাস করেন।
কদাচিৎ তয়া সার্দ্ধ স্থুতস্য মুনিসত্তম কৃষ্ণস্য।
বামভাগাৎ জাতে নারায়ণঃ স্বয়ম্।। ১২।।
রাধিকায়াশ্চ বামাংগান্মহালক্ষ্মীভূব হ।
ততঃ কৃষ্ণে মহালক্ষ্মীং দত্ত্বা নারায়ণায় চ।।১৩।।
বৈকুন্ঠ স্থাপিয়ামাস শশ্বতপালনকর্মণি।।১৪।।
-( নারদীয় পুরাণঃ পূর্বভাগ ৩/৮৩/১২-১৪)
অনুবাদঃ হে মুনিসত্তম,কোন এক সময় শ্রীমতি রাধারাণীর সাথে পরমাত্মা কৃষ্ণ অবস্থান কালে তার বামঙ্গ থেকে নারায়ণের ( বিষ্ণু) জাত হয়েছিল।আর শ্রীমতি রাধিকার বামাঙ্গ থেকে মহা লক্ষ্মীর আবির্ভাব হয়।শ্রীকৃষ্ণ তখন মহালক্ষীকে নারায়ণের নিকট প্রদান করলেন। এবং বৈকুন্ঠে স্থিতি প্রদান করে নিত্য পালনকার্যে নিযুক্ত করলেন।
রাধাবামাংশসম্ভূতা মহালক্ষ্মীঃ প্রকীর্তা।
ঐশ্বর্য্যাধিষ্ঠাত্রী দেবীশ্বরস্যেব হি নারদ।।৬০।।
তদংশো সিন্ধুকন্যা চ ক্ষীরোধমথনোদ্ভবাঃ।।৬১।।
তদংশো স্বর্গলক্ষ্মীশ্চ শত্রুাদীনাং গৃহে গৃহে।
বয়ং দেবী মহালক্ষ্মীঃ পত্নী বৈকুন্ঠশায়িনঃ।।৬২
–(নারদ পঞ্চরাত্রঃ ২ য় রাত্র,অধ্যায় ৩,শ্লোক ৬০-৬২)
অনুরোধঃ রাধার বামাংশ সম্ভুতা নারী মহালক্ষ্মী নাম গ্রহণ করেন। হে নারদ! তিনি ঈশ্বরীদেবী রাধিকার ন্যায় ঐশ্বর্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হন। তাঁর অংশ সম্ভুতা কন্যা ক্ষীরোদ সাগর মন্থন থেকে জাত লক্ষ্মী নাম গ্রহণ পূর্বক ক্ষীরোদশায়ী বিষ্ণুর পত্নী হয়েছেন। তার অংশসম্ভূতা স্বর্গলক্ষ্মী হয়েছেন,তিনি শত্রু আদির (অসুরদের গৃহে অলক্ষ্মীরুপে) গৃহে গৃহে অবস্থান করেন ।এবং স্বয়ং মহালক্ষ্মী নাম গ্রহণ পূর্বক বৈকুণ্ঠশায়ী নারায়ণের পত্নী হয়েছেন।
দেবী কৃষ্ণময়ী প্রোক্তা রাধিকা পরদেবতা।
সর্বলক্ষ্মীস্বরুপা সা কৃষ্ণহ্লোদস্বরুপিনী।।
-(পদ্মপুরাণঃ পাতালখন্ড ৫০/৫৩,গৌতমীয় তন্ত্র)
অনুবাদঃ দেবী রাধিকা কৃষ্ণময়ী।তাই তিনি পরদেবতা নামে কথিতা হন।তিনি সর্বলক্ষ্মীরুপিনী এবং কৃষ্ণের হ্লাদিনী স্বরুপ।
হরে কৃষ্ণ।প্রনাম।
প্রচারে- স্বধর্মম্।