দুর্গা দেবী-
দেবী দুর্গা হলেন চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক গোলক বৃন্দাবনে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বুদ্ধি থেকে আবির্ভূত এক মহান দেবী।তিনি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞা অনুসারে জড় জগৎরুপী দুর্গের দেখাশুনা করেন,তাই এ মহান দেবীর নাম দুর্গা।দুর্গা দেবী জড় জগতে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের বহিঃরঙ্গা শক্তিরুপে কার্য সম্পাদন করেন,কিন্তু চিন্ময় জগতে তিনি শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গা শক্তিরুপে কার্য সম্পাদন করেন।
দেবী দুর্গার আবির্ভাবঃ
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান শাস্ত্রের ব্রহ্মখন্ডের ৩য় অধ্যায়ে জগৎ পুজিতা দুর্গা দেবীর আবির্ভাবের কথা সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে।কিন্তু এর পূর্বের ব্রহ্মখন্ডের ২য় এবং ৩য় অধ্যায়ের ১-৬৮ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে-
“চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক হল গোলক বৃন্দাবন ধাম। তার পরিধি তিনকোটি যোজন।সে গোলক বৃন্দাবনের নিম্নে দক্ষিন দিকে পঞ্চাশ কোটি যোজন দূরে বৈকুন্ঠলোক। সে বৈকুন্ঠের বিস্তার ১ কোটি যোজন। বৈকুন্ঠের নিম্নদিকে বামে শিবলোক অবস্থিত।এ গোলক বৃন্দাবন, বৈকুন্ঠ এবং শিবলোককে একত্রে চিন্ময় জগৎ বলা হয়।যাহোক চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক গোলক বৃন্দাবনের রত্নসিংহাসনে প্রবিষ্ট আছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তিনি দ্বিভুজ, মুরলীধর এবং শ্যামসুন্দর(গায়ের রং শ্যামবর্ণ)।তার মস্তকে উজ্জ্বল মুকুট, গলায় বনমালা,রত্ন অলংকারে শোভিত।
সেই পরম প্রভু পরমব্রহ্ম,পরমাত্মা, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দক্ষিণ অঙ্গ থেকে আবির্ভূত হন চতুর্ভুজ নারায়ন।এরপর শ্রীকৃষ্ণের বাম অঙ্গ থেকে আবির্ভূত হন শিব।এরপর শ্রীকৃষ্ণের নাভিপদ্ম থেকে আবির্ভূত হন ব্রহ্মার।এরপর শ্রীকৃষ্ণের বক্ষ থেকে আবির্ভূত হন মুর্তিমান ধর্মের।এরপর শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকে আবির্ভূত হন স্বরস্বতী দেবীর।এরপর শ্রীকৃষ্ণের মন থেকে আবির্ভূত হন লক্ষ্মী দেবীর।”
এরপর ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান শাস্ত্রের ব্রহ্মখন্ডের ৩/৬৯-৭৩ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বুদ্ধি থেকে আবির্ভূত হন জগৎ পূজিতা মাতা ভগবতী দুর্গা।সে দুর্গা মাতা শতভুজা,ভয়ংঙ্করী এবং দুর্গতি নাশিনী।
আর্বিবভূব তৎপশ্চাদবুদ্ধেশ্চ পরমাত্মন।
সর্ব্বাধিষ্ঠাতৃদেবী সা মূলপ্রকৃতিরীশ্বরী।।
নিন্দ্রাতৃষ্ণাক্ষুৎপিপাাসাদয়াশ্রদ্ধাক্ষমাদিকাঃ।
তাসাঞ্চ সর্ব্বশক্তীনামীশাধিষ্টাতৃদেবতা।।
ভয়ঙ্করী শতভুজা দুর্গা দুর্গার্ত্তিনাশিনী।
আত্মনঃ শক্তিরুপ সা জগতাং জননীপরা।।
ত্রিশূলশক্তিশাঙ্গঞ্চ ধনুঃখড়গশরাণি চ।
শঙ্খচক্রগদাপদ্মমক্ষমালাকমন্ডলু।।
বজ্রমঙ্কুশপাশঞ্চ ভূষন্ডীদন্ডতোমরম।
নারায়ণাস্ত্রং ব্রহ্মাস্ত্রং রৌদ্রং পাশুপতং তথা।।
-(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানঃ ব্রহ্মখন্ড ৩/৬৯-৭৩)
অনুবাদঃ পরমাত্মা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বুদ্ধি থেকে আর্বিভূত হন দেবী দুর্গা।তিনি সর্ব অধিষ্ঠাত্রী দেবী,আবার তিনিই আদি প্রকৃতি ঈশ্বরী।তিনি জগতের মধ্যে নিদ্রা,তৃষ্ণা,ক্ষুধা,দয়া,শ্রদ্ধা আদি যত বিষয় রয়েছে তার শক্তিদেবী হিসেবে তিনি অধিষ্ঠাত্রী দেবতা।তিনি ভয়ঙ্করী, শতভুজা,দুর্গতি বিনাশকারীনি তাই তিনি দেবী দুর্গা।তিনি পরমাত্মার শক্তিরুপা,আবার তিনিই সমস্ত জগতের জননী। তিনি ত্রিশূল,শাঙ্গ,ধনু,খড়গ,শর,শঙ্খ,চক্র,গদা,পদ্ম, অক্ষমালা এবং কমুন্ডলশোভিতা।তিনি বজ্র,অঙ্কুশ,পাশা,দন্ড,নারায়ন অস্ত্র,ব্রহ্মাস্ত্র,এবং রুদ্রের পাশুপত অস্ত্র শোভিত।
হরে কৃষ্ণ।জয় মা দূর্গা। প্রনাম।