বেদে কি অবতারের কথা বলা হয়েছে ?

20250824_115317

আজকাল কিছু শাস্ত্রজ্ঞানহীন ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে যে বেদে নাকি ঈশ্বরের বিভিন্ন রুপ বা অবতারের উল্লেখ নাই।

তাদের বালক সুলভ এসমস্ত কথা শুনলে আমাদের হাসি পায়।কারন বেদের বিভিন্ন বিভাগের বহু বহু মন্ত্রে ঈশ্বরকে একজন দেহ বা শরীরধারী ব্যক্তি রুপে বর্ণনা করা হয়েছে। বেদে বলা হয়েছে ঈশ্বর সাকার,তার সুন্দর রুপ রয়েছে।তার মস্তক, চোখ,হাত, পা  ইত্যাদি সবকিছু রয়েছে।বেদে তার সাকার রুপের বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

দিবো বা বিষ্ণো উত বা পৃথিব্যা

মহো বা বিষ্ণু উরোরন্তরিক্ষাৎ।

উভো হি হস্তা বসুনা পূনস্বা

প্রযচ্ছ দক্ষিণাদোত সব্যাদ্বিষ্ণবে দ্বা॥

               —(শুক্ল যজুর্বেদ সংহিতা ৫.১৯)

অনুবাদঃ  হে বিষ্ণু(ঈশ্বর),আপনি দ্যুলোক হতে কি ভূলোক হতে কিংবা অনন্ত প্রসারী অন্তরিক্ষলোক হতে পরমধন নিয়ে উভয় হস্তকে পূর্ণ করুন। আর দক্ষিণ ও বাম হস্ত (উভয় হস্ত) দ্বারা অবাধে অবিচারে আপনি সেই পরমধন প্রদান করুন,আপনাকে প্রাপ্তি নিমিত্তে উপাসনা করি।

হিরন্ময়েন পাত্রেন সত্যস্যাহপিহিতং মুখম।
তৎ ত্বং পুষন্নপাবৃনু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে।।

        — ঈশোপনিষদের মন্ত্র ৬ (শুক্ল যজুর্বেদ)

অনুবাদঃ হে প্রভু,হে সর্বজীবপালক,আপনার উজ্জ্বল জ্যোতির দ্বারা আপনার শ্রীমুখ আচ্ছাদিত।কৃপা করে সেই আচ্ছাদন দূর করুন এবং যাতে আমরা আপনাকে দেখতে পারি।

সে সাথে বেদে আরো বলা হয়েছে, ঈশ্বর হলেন একজন।তথাপি তিনি তার শক্তির প্রভাবে বিভিন্ন রুপে এ জগতে প্রকাশিত বা আবির্ভূত হন।অষ্টাদশ পুরান,রামায়ন, মহাভারতের ভাষায় সে ঈশ্বরকে অবতার বলা হয় (শ্রীমদ্ভাগবত ১.৩২৬)।ঈশ্বর যুগে যুগে বিভিন্ন রুপ ধারন করে এই জগতে আবির্ভূত বা অবতরন করেন, তাই তাকে অবতার বলা হয়।

একো বশী সর্বভূতান্তরাত্মা

একং রূপং বহুধা যঃ করোতি।

কঠোপনিষৎ- ২.২.১২ (কৃষ্ণ যজুর্বেদ)

 অনুবাদঃ সেই ঈশ্বর এক তথাপি তিনি বহু রূপ ধারন করেছেন। 

রূপং রূপং প্রতিরূপো বভূব

তদস্য রুপং প্রতিচক্ষণায়

ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরুপ ঈয়তে
যুক্তা হ্যস্য হরয়ঃ শতা দশ॥

—(ঋগ্বেদ সংহিতা ৬.৪৭.১৮)

অনুবাদঃ ঈশ্বর বিভিন্ন রুপ বা দেহ ধারন করেন। এবং সে রুপ ধারন করে তিনি পৃথকভাবে প্রকাশিত হন।তিনি তার মায়া দ্বারা বিবিধ রুপ ধারন করে যজমানগণের নিকট উপস্থিত হন।কারন তার রথ সহস্র অশ্ব সংযুক্ত(অনন্ত শক্তি), অথাৎ তিনি অসীম ক্ষমতার অধিকারী।

“সহস্রং স একমুখো”

—(অথর্ববেদ সংহিতা ৯.৪.৯)

 অনুবাদঃ ঈশ্বরের সহস্র রূপ তথাপি তিনি এক।

একই কথা সমস্ত সনাতনী শাস্ত্রের সার গ্রন্থ ভগবদগীতায়ও বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ঈশ্বররুপে শ্রীকৃষ্ণ যুগে যুগে বিভিন্ন রুপে আবির্ভুত হন।

অজোঽপি সন্নব্যয়াত্মা ভূতানীমীশ্বরোহষঽপি সন্।
প্রকৃতিং স্বামধিষ্ঠায় সম্ভবাম্যাত্মমায়য়া॥
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মনং সৃজামহ্যম্॥
পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।

ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে॥

-গীতা( ৪/৬-৮)

অনুবাদঃ যদিও আমি জন্মরহিত এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং যদিও আমি সর্বভূতের ঈশ্বর, তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আমি আমার আদি চিন্ময় রূপে অবতীর্ণ হই।হে ভারত! যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখন আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই।সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য এবং দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।

হরে কৃষ্ণ।প্রনাম

© স্বধর্মম্ ™

Sadgun Madhav Dash

Writer & Admin

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments