সনাতন ধর্মের স্তম্ভঃ
বৈদিক শাস্ত্রে ধর্ম বলতে সনাতন ধর্মকে নির্দেশ করা হয়েছে। শ্রীমদ্ভাগবত ১/১৭/২৪ নং শ্লোক অনুসারে সনাতন ধর্ম বা ধর্মের চারটি স্তম্ভ হল- সত্য, শৌচ, দয়া এবং তপ (“তপঃ শৌচং দয়া সত্যমিতি পাদাঃ কৃতে কৃতা”)। ধর্মের এ চারটি স্তম্ভের মধ্যে প্রথম হলো ‘সত্য’। ‘সত্য’ শব্দের অর্থ হলো ‘সৎপথ বা শাস্ত্র নির্দেশিত পথ’। দ্বিতীয়টি হলো ‘শৌচ’, যার অর্থ হলো ‘শুচিতা বা পবিত্রতা’। তৃতীয়টি হলো ‘দয়া’, যার অর্থ হলো ‘করুণাপ্রবণ হওয়া’। এবং সর্বশেষ হলো ‘তপ’, যার অর্থ হলো ‘তপস্যা পরায়ণ হওয়া’। সনাতনী বিভিন্ন শাস্ত্রে উল্লেখিত ধর্মের এ চারটি স্তম্ভ যে ব্যক্তির হৃদয়ে সদা জাগ্রত থাকে, অর্থাৎ যিনি ধর্মের এ চারটি পথ নিজের জীবনে যথাযথ ভাবে মেনে চলেন, তিনিই ধার্মিক। আমরা এখন ধর্মের প্রথম স্তম্ভ সত্য সম্পর্কে আলোচনা করবো।
১. সত্য:
সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে সত্য বলতে শাস্ত্র নির্দেশিত সৎ বা আদর্শ পথকে নির্দেশ করে।সুতারাং সত্য বা সৎপথ হল শাস্ত্র নির্দেশিত পথ, যে পথে জীবন যাপন করলে আমাদের কল্যান সুনিশ্চিত হয়।
तस्माच्छास्त्रं प्रमाणं ते कार्याकार्यव्यवस्थितौ ।
ज्ञात्वा शास्त्रविधानोक्तं कर्म कर्तुमिहार्हसि ॥
তস্মাচ্ছাস্ত্রং প্রমাণং তে কার্যাকার্যব্যবস্থিতৌ ।
জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্ম কর্তুমিহার্হসি ॥
~ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৬/২৪
অনুবাদ: অতএব, কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই তোমার প্রমাণ। অতএব শাস্ত্রীয় বিধানে কথিত হয়েছে যে কর্ম, তা জেনে তুমি সেই কর্ম করতে যোগ্য হও।
সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে, সত্য বা সৎ পথের বৈশিষ্ট্য এমনই, কাউকে কথা দিলে, তা অবশ্যই পালন করা উচিত। কখনো তা পরিত্যাগ করা উচিত নয়।তার উজ্বল উদাহরণ হলো শ্রীমদ্ভাগবতের অষ্টম স্কন্ধে বর্ণিত বলি মহারাজ। যিনি বামনরূপী পরমাত্মা বিষ্ণুর কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন। অসুরদের গুরু শুক্রাচার্য্য তাকে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে নিষেধ করলেও বলি মহারাজ সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন নি।
আবার, শাস্ত্রে যাকে অধর্ম বা অসৎ পথ বলা হয়েছে, তা যদি সস্তা ও লোভনীয়ও হয় তথাপি তা কখনো গ্রহণ করা উচিত নয়। এমনকি সারা পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ যদি সে শাস্ত্রবিরুদ্ধ অধর্ম পথকে ধর্ম মনে করে তা সম্পাদনে যুক্ত থাকে, তথাপি ধার্মিক ব্যক্তির কখনো তাতে যুক্ত হওয়া উচিত নয়।
এছাড়াও প্রাচীন ইতিহাস পাঠ করলে আমরা জানতে পারি, সাধারণত ক্ষত্রিয়দের প্রায়ই প্রতিপক্ষ আহ্বান করে। হয় যুদ্ধে আমাকে জয় কর, না হয় আমাকে পরাজিত কর। প্রতিপক্ষের সে আহ্বান ক্ষত্রিয় হিসেবে কেউ অস্বীকার করতে পারে না।তারপরও যদি আপনি ক্ষত্রিয় হন তখন অধার্মিক ব্যক্তি যদি আপনাকে শাস্ত্র বিরুদ্ধ অপকর্মে আহ্বানও করে, তথাপি তা কখনো স্বীকার করা উচিত নয়। কারণ, তার প্রভাবে আপনি দেবতাদের সমস্ত দান থেকে বঞ্চিত হবেন, যার দরুণ আপনি এই জগতে সন্মান এবং প্রতিপত্তিহীন হবেন। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো মহাভারত নামক ইতিহাস শাস্ত্র। মহাভারত শাস্ত্রে বর্ণিত আছে, যুধিষ্ঠির মহারাজ শকুনি মামার আহ্বানে পাশা খেলা বা জুয়া খেলাতে অংশগ্রহণ করেন। যার ফলে এ জুয়া খেলাতে যুধিষ্ঠির মহারাজসহ পঞ্চপান্ডব পরাজিত হন এবং বারো বছরের জন্য বনবাসে এবং এক বছরের জন্য অজ্ঞাতবাসে পর্যন্ত তাঁদের যেতে হয়।
পরিশেষে বলা যায়, ধার্মিক ব্যক্তি সর্বদা তার কার্য সম্পাদনে শাস্ত্র নির্ধারিত সত্য বা সৎপথকে অনুসন্ধান করবেন এবং সে অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করবেন।
হরে কৃষ্ণ,প্রনাম
©️ স্বধর্মম্ ™️