বেদের জ্ঞানকে বলা হয় অপৌরুষেয়।অথাৎ এই জ্ঞান পরমেশ্বর ভগবান থেকে ব্রহ্মার মাধ্যমে ঋষিগণ প্রাপ্ত হয়েছেন।যে ঋষিরা এই জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছিলেন তাদের বেদদ্রষ্টা ঋষি বলা হয়।বেদের জ্ঞান সত্যযুগের এই কথা কোন শাস্ত্রে বলা হয় নি।তবে সনাতনী শাস্ত্র থেকে জানা যায় সৃষ্টির সময় থেকে অথাৎ বেদদ্রষ্টা ঋষিগন ব্রহ্মা থেকে ধ্যানযোগে এই বেদ জ্ঞান সত্য,ত্রেতা, দ্বাপর যুগের বিভিন্ন সময় প্রাপ্ত হন।দ্বাপরযুগে শেষের দিকে ভগবানের শক্ত্যাবেশ অবতার ব্যাসদেব সমগ্র বেদ লিপিবদ্ধ করেন।
বেদ চার প্রকার- ঋগ্,সাম,যজু(শুক্ল,কৃষ্ণ) এবং অথর্ব।আবার প্রতিটি বেদের চারটি অংশ -সংহিতা,ব্রাহ্মন, আরন্যক এবং উপনিষদ।বেদের এ চারটি অংশকে একত্রে বেদ বা শ্রুতি বলা হয়। বেদের সর্বশেষ অংশ হল উপনিষদ।তাই উপনিষদকে বেদান্ত বলা হয়।
মুক্তিকোপনিষদে ১/২৭-৩৬ নং মন্ত্রে ঈশোপনিষদ, কেন উপনিষদ, কঠোপনিষদ,রামতাপনী উপনিষদ ,গোপালতাপনী উপনিষদ ইত্যাদি ১০৮ টি উপনিষদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।১০৮ টি উপনিষদের তালিকায় মুক্তিকোপনিষদ১/ ৩২,৩৬ নং মন্ত্রে রামতাপনী উপনিষদ এবং মুক্তিকোপনিষদের
উল্লেখ পাওয়া যায়। মুক্তিকোপনিষদ ১/৫২ নং মন্ত্র অনুসারে মুক্তিকোপনিষদ হল শুক্ল যজুর্বেদের অন্তর্গত,এবং মুক্তিকোপনিষদ ১/৫৫ নং মন্ত্র অনুসারে রামতাপনী উপনিষদ হল অর্থববেদের অন্তর্গত।
শুক্ল যজুর্বেদীয় মুক্তিকোপনিষদ এবং অথর্ববেদীয় রামতাপনী উপনিষদে ভগবান রামচন্দ্রের মহানতা সম্পর্কে সামান্য পরিমাণে বর্ণনা করা হয়েছে,তবে বিস্তারিত ইতিহাস বর্নিত হয় নি।রামচন্দ্রের অপ্রাকৃত লীলাবিলাসের বিস্তিত বিবরন প্রদত্ত হয়েছে রামায়ন নামক ইতিহাস শাস্ত্রে।রামচন্দ্র হলেন বেদে বর্নিত স্বয়ং বিষ্ণু।ধ্যানযোগে বেদদ্রষ্টা ঋষি শ্রীরামচন্দ্র ভগবানের অপ্রাকৃত বাণী ব্রহ্মা থেকে প্রাপ্ত হন,যার বর্ণনা শুক্লযজুর্বেদীয় মুক্তিকোপনিষদ এবং অথর্ববেদীয় রামতাপনী উপনিষদে বর্ণিত আছে।
আবার কেউ যদি কোন শাস্ত্র প্রমান ছাড়া কেবল তর্ক করে বলে বেদের জ্ঞান শুধু সত্যযুগের তবে বলতে হয়, গীতা ৮/১৭ নং শ্লোক অনুসারে ব্রহ্মার ১ দিন=মনুষ্য জীবের ১ হাজার চতুর্যুগ। ১ চতুর্যুগ=
সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি।পুরাণ শাস্ত্র থেকে জানা যায়,ব্রহ্মার প্রতি দিনে যে ১ হাজার চতুর্যুগ আবর্তিত হয়, তার প্রতিটি চতুর্যুগের ত্রেতা যুগে ভগবান বিষ্ণু শ্রীরামচন্দ্ররুপে আবির্ভূত হন।
সেসময় তাঁর লীলাসমূহ প্রায় এক থাকে,তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা কিছুটা ভিন্ন হয়।এ পৃথিবীতে যখন দুষ্কৃতিকারী দ্বারা পূর্ণ হয় তখন তিনি শুধুমাত্র তার শক্তি দ্বারা অথবা তাঁর প্রকৃতি দ্বারা তাদের দন্ড দিতে পারেন।কিন্তু প্রতিটি ত্রেতা যুগে তার আগমনের মূল কারন জীবদের তাঁর স্বধাম চিন্ময় জগতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য হিত উপদেশ দান করা।
এইভাবে শ্রীরামচন্দ্রের লীলাবিলাস যদিও ত্রেতাযুগের কিন্তু এই পৃথিবীতে শুধু ব্রহ্মার ১ দিনে অসংখ্যবার ত্রেতাযুগ আবর্তিত হয়,সেসমস্ত ত্রেতাযুগে ভগবান রামরুপে আবির্ভূত হন।এভাবে ত্রেতার পর দ্বাপরযুগ তারপর কলি হয়ে চতুর্যুগ সম্পন্ন হয়।এরপর শুরু হয় সত্য যুগ।সত্যযুগে ধ্যানযোগে বেদদ্রষ্টা ঋষি শ্রীরামচন্দ্র ভগবানের অপ্রাকৃত বাণী ব্রহ্মা থেকে প্রাপ্ত হন,যার বর্ণনা শুক্লযজুর্বেদীয় মুক্তিকোপনিষদ এবং অথর্ববেদীয় রামতাপনী উপনিষদে বর্ণিত আছে।