শাস্ত্রজ্ঞানহীন কিছু মূর্খ সাধারন সনাতনীদের মহাভারতের শ্লোক সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্ত করছে।তাদের মতে মহাভারতে শ্লোক সংখ্যা নাকি শুধুই ২৪ হাজার,১ লক্ষ নয়।
তাদের প্রশ্ন মহাভারত যদি অবিকৃত থাকে তাহলে মহাভারতে মহাভারতের শ্লোক সংখ্যার রেফারেন্স দেয়া হয়েছে ২৪ হাজার শ্লোকের, তাহলে কিভাবে তা ১ লক্ষ শ্লোকে পরিণত হল ?তাদের মতে এ লক্ষ শ্লোকের নাকি কোন রেফারেন্স মহাভারতে কোথাও বর্ণনা করা হয় নি।
এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে তারা মহাভারত শাস্ত্র সম্পর্কে অনভিজ্ঞ সরল সনাতনীদের বুঝাচ্ছে মহাভারতে প্রকৃতপক্ষে ২৪ হাজার শ্লোকের রেফারেন্সই প্রমান করে বর্তমানে লক্ষ শ্লোকের মহাভারত সঠিক নয়।তাদের মতে মহাভারতের ২৪ হাজার শ্লোক ছাড়া আর বাকী বাড়তি ৭৬ হাজার শ্লোক নাকি পাপীদের সৃষ্টি করা শ্রীকৃষ্ণ এবং পঞ্চপান্ডব সমন্ধে ভূলবার্তা।
তারা মহাভারতের মতো মহান শাস্ত্র বাক্যে সন্দিহান।শুধু তাই নয়,তারা নিজেদের বেদ ও গীতার প্রচারকারী বলে প্রচার করে অথচ কৃষ্ণ যজুর্বেদকেও তারা বেদ বলে অস্বীকার করে,তারা গীতার বহু শ্লোককে ভূল মনে করে। আমাদের কথা হল মহাভারত যেহেতু বহু পূর্বে লেখা, তাই হয়ত দুই একটি শ্লোক পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু ৭৬ হাজার বাড়তি শ্লোক পাপীরা(বৈষ্ণব) মহাভারতে যোগ করেছেন, এ ধরনের মন্তব্য কখনো যুক্তিযুক্ত নয়। হিন্দি, বাংলা,তামিল,মারাঠি, উড়িয়া,ইংরেজি সহ সমস্ত মহাভারতের অনুবাদেই ১ লক্ষ শ্লোক রয়েছে,২৪ হাজার শ্লোকের কোন মহাভারত কোথাও দেখা যায় না। মহাভারতের শ্লোকসংখ্য ২৪ হাজার হত,তাহলে কোন না কোন ভাষায় মহাভারতের অনুবাদের তা আমরা দেখতে পেতাম।কিন্তু আমরা কোথাও এ ধরনের ২৪ হাজার শ্লোকের মহাভারত দেখতে পাচ্ছি না।সুতরাং মূর্খদের অপপ্রচার মহাভারতের শ্লোকসংখ্যা শুধু ২৪ হাজার,এ ধরনের মন্তব্য যুক্তিসংগত ও প্রামানিক নয়।
সাধারন সনাতনীরা মহাভারত শাস্ত্র সম্পর্কে অজ্ঞ।তাই তারা এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সনাতনীদের বিভ্রান্ত করছে যে, মহাভারত বিকৃত।
অথচ মহাভারত শাস্ত্রে তাদের অপপ্রচারের উত্তর বর্ণিত আছে।মহাভারত শাস্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে, মহাভারতের শ্লোক সংখ্যা হল ১ লক্ষ।অথচ এ সমস্ত শ্লোক নাকি কখনো সরল সনাতনীদের মাঝে প্রদর্শন করে না।এ হল এসমস্ত মূর্খদের কার্যকলাপ। মূর্খ এ জগতের সকলকে মূর্খ আর পাপী মনে করে,আর নিজেকে পন্ডিত এবং পূণ্যত্মা মনে করে,এসমস্ত মূর্খদের অবস্থাও তাই।এখন আমরা এ বিষয়টি আরো বিস্তৃতভাবে জানার চেষ্ঠা করব…
ব্যাসদেব প্রথমে ৮ হাজার শ্লোকের মহাভারত রচনা করেন, তার নাম দেন জয়।এরপর পুনরায় ব্যাসদেব ২৪ হাজার শ্লোকে মহাভারত রচনা করেন।
চতুবিংশতিসাহস্রীং চক্রে ভারতসংহিতাম।
উপাখ্যাননৈবির্না তাবদ্ভারতং প্রোচ্যতে বুধৈঃ।।
-(মহাভারতঃআদিপর্ব/৫/৬৪)
অনুবাদঃ বেদব্যাস উপাখ্যানভাগ ব্যতীত চব্বিশ হাজার শ্লোকে মহাভারত রচনা করিয়াছিলেন।এ বিষয়ে পন্ডিতগণ জ্ঞাত আছেন।
এরপর ব্যাসদেব তা বৈশ্যাম্পায়ন ঋষিকে দান করেন।এরপর বৈশম্পায়ন ঋষি উপাখ্যান ভাগ সহকারে ঋষিদের সভায় জনমেজয়ের প্রশ্নের উত্তরে ১ লক্ষ শ্লোকে মহাভারত বর্ণনা করেন।সেখানে উপস্থিত হলেন উগ্রশ্রবা সৌতি।
ইদং শতসহস্রস্তু শ্লোকানাং পূণ্যকর্ম্মানাম।
উপাখ্যানৈঃ সহ জ্ঞেয়ং শ্রাব্যং ভারতমুত্তমম।।
– মহাভারতঃ আদিপর্ব ৫/৬৩
অনুবাদঃ এই মহাভারত উপাখ্যানভাগের সহিত পবিত্র লক্ষ শ্লোক বলে জানিবে।তাহাই উৎকৃষ্ট এবং তাহাই শ্রবণ করিবে।
পুনরায় উগ্রশ্রবা সৌতি নৈমিষারণ্য নামক স্থানে ঋষিদের মাঝে বৈশ্যাম্পায়ন কৃত ১ লক্ষ শ্লোকের মহাভারত হুবহু বর্ণনা করেন।
শিষ্যো ব্যাসস্য ধর্মাত্মা সর্ববেদো বিদ্যাংবর।
এক শতসহস্রস্তু ময়োক্তং বৈ নিবোদত।।
মহাভারতঃআদি পর্ব ১/ ৭০ (উগ্রশ্রবা সৌতি)
অনুবাদঃ বেদব্যাসের শিষ্য ধর্মাত্মা, সমস্ত বেদের বিষারদ বৈশম্পায়ন ঋষি, এই মনুষ্য লোকে একলক্ষ শ্লোক বলিয়াছেন।আমি আপনাদের নিকট তাহাই বলিয়াছি, শ্রবণ করুন।
পরবর্তীতে ভগবানের শক্ত্যাবেশ অবতার( ভগবানের শক্তির আবেশ অবতার) শ্রীল ব্যাসদেব সেই মহাভারত গনেশকে বর্ণনা করেন, আর গনেশ তার সুন্দর লেখনীর মাধ্যমে মহাভারত লিপিবদ্ধ করেন।
সুতারাং যে সমস্ত পাষন্ডিরা মহাভারতের ১ লক্ষ শ্লোকসংখ্যা নিয়ে সাধারন সনাতনীদের বিভ্রান্ত করছে, তাদের জেনে রাখা প্রয়োজন, লক্ষ শ্লোকের মহাভারতের রেফারেন্স মহাভারত শাস্ত্রে উগ্রশ্রবা সৌতি কতৃর্ক মহাভারত শাস্ত্রে বর্ণিত আছে। সুতারাং ১ লক্ষের শ্লোকের এ মহাভারত স্বয়ং ব্যাসদেবই বর্ণনা,এতে কোন বেজাল নাই(মহাভারতঃ আদিপর্ব ৫/৬৩)।
তথ্য সংগ্রহঃ শ্রীহরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশকৃত মহাভারত,বিশ্ববাণী প্রকাশনী।
হরে কৃষ্ণ, প্রনাম
তথ্য সহযোগী-বিজয় দাস।