কিভাবে জগন্নাথদেব পুরীধামে প্রকটিত হয়েছিল? (পর্ব ২)

FB_IMG_1750850865293

পুরীধামে পরমেশ্বর ভগবান জগন্নাথদেবের প্রকাশঃ

১ম পর্বের পর-
স্কন্দ পুরাণ,বিষ্ণুক্ষেত্র, পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য, সপ্তম অধ্যায়ের ৭৯-৯৮ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ
“ক্রমে বিদ্যাপতি পর্বতের সন্নিকট ভূমিতে আরোহন করলেন( নামলেন),কিন্তু সেই মুকুন্দদেব দর্শনোৎসুক বিপ্র চারিদিকে অনুসন্ধান করেও পথ প্রাপ্ত হলেন না।এরপর কুশপত্র বিছিয়ে মুকুন্দদেবের( বিষ্ণু) দর্শন আকাঙ্ক্ষায় তার শরনাগত হলেন।বিদ্যাপতি পর্বতের পঞ্চিমভাগ থেকে পরষ্পর ভগবদ্ভক্তি বিষয়ক আলাপ করছিলেন,তাদের সেই অলৌকিক বাক্য শ্রবণ করেন।এরপর বিদ্যাপতি আনন্দিত হয়ে সেই বাক্য অনুসরন করে গমন করেন।সে স্থান শবরজাতির বাসগৃহসমূহে চতুর্দিকে বেষ্টিত,তা তিনি দর্শন করেন।তিনি ক্রমে সেই স্থানে বিনীতভাবে প্রবেশ করে, সে স্থানের বৈষ্ণবদের দর্শন করেন।পরে বিশ্বাবসু নামে একজন বৃদ্ধ শবর হরিপূজা সমাপন করে পূজাবশিষ্ঠ চন্দনাদি দ্বারা শোভিত হয়ে গিরি মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন,তাকে বিদ্যাপতির নয়নগোচর হল।বিশ্বাবসু সে ব্রাহ্মণ বিদ্যাপতিকে জিজ্ঞেস করেন,হে বিপ্র আপনি কোথা থেকে এই দুর্গম কাননে এসেছেন? আপনি ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর ও শ্রান্ত।অতত্রব কিছু সময় এই স্থানে সুখে অবস্থান করুন।বিশ্বাবসু দ্বিজকে পাদ্য,আসন,
অর্ঘ্য অর্পন করে বিনয় বাক্যে বললেন,হে বিপ্র আপনি ফল দ্বারা, না পাক করে আহার করবেন? আপনার যা অভিরুচি তাই প্রস্তুত করে দিব।শবর এই কথা বললে বিদ্যাপতি বললেন, আমার ফল ও পাকে কোন প্রয়োজন নাই।হে সাধো!যে কারনে দূর থেকে এসেছি তা সফল করুন।আমি অবন্তী পুরবাসী ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজার পুরোহিত।বিষ্ণুর দর্শন মানসে এসেছি।রাজসন্নিধানে তীর্থপর্য্যটকদিগের সমাজে তীর্থক্ষেত্রপ্রসঙ্গে এই তীর্থের একটি প্রস্তাব করেন।রাজা উৎকন্ঠিত হয়ে আমাকে এই স্থানে অবস্থিত নীলমাধব হরিকে দর্শন করতে প্রেরণ করেন। আমি তাকে দর্শন করে সংবাদ নিয়ে যতক্ষণ তার কাছে যাচ্ছি না,ততক্ষণ অনাহারে থাকব।এই কারনে আমাকে সেই বিষ্ণুর দর্শন করাও।”
অষ্টম অধ্যায় ১-৭৮ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ
জৈমিনি বললেন,বিদ্যাপতি এই কথা বললে শবর চিন্তিত হলেন যে,আহা! আমাদের দুর্দিন উপস্থিত হল।ব্রাহ্মণ যদি নীলমাধবকে দর্শন করে তাহলে সকলেই জানতে পারবে, যদি না দেখায় ব্রাহ্মণ আমাকে অভিশাপ দিয়ে চলে যাবে।সকল জাতির মধ্যে ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ, বিশেষত ইনি অতিথি, এনার অভিলাষ পূর্ণ না হলে আমার উভয় লোকই বিফল হবে।বিশ্বাবসু এই বিবেচনা করে ব্রাহ্মণকে বললেন,ইন্দ্রদ্যুম্ন নামে নরপতি এই ক্ষেত্রে বাস করবেন, এই বৃত্তান্ত আমরা পূর্বেই শুনেছি।আপনি যেহেতু তার পূর্বে নীলমাধবকে দর্শন করলেন তখন আপনি তার থেকেও অধিক ভাগ্যবান।অতত্রব হে ব্রাহ্মণ,আসুন আমরা পর্বতের উপরিভাগে গমন করি।এই কথা বলে শবরপতি বিদ্যাপতির হাত ধরে অতি সঙ্কীর্ণ একটি মাত্র পথ দিয়ে পাথর ও কাটাতে আবৃত দুর্গম ও প্রায় অন্ধকারময় পথে চলতে লাগলেন।এই পথে যেতে যেতে শবর কুন্ডের তটে উপস্থিত হলেন।কুন্ড দর্শন করে ব্রাহ্মণকে ( বিদ্যাপতি) বললেন, হে দ্বিজোত্তম, এই মহাতীর্থের নাম রৌহিন।তার পূর্বে এক মহৎ অক্ষয় বৃক্ষ আছে।তার ছায়া প্রাপ্ত হলে ব্রহ্মহত্যার পাপ ক্ষয় হয়।নিকুঞ্জের(পুষ্পবাগানে শোভিত) ভিতরে ঐ দেখ সাক্ষাৎ জগন্নাথ( বিষ্ণু)।তাকে দর্শন করে সঞ্চিত পাপ হতে মুক্ত হও।
জৈমিনি বললেন, অত্যন্ত বুদ্ধিমান বিদ্যাপতি শ্রীহরিকে দর্শন করে নত মস্তকে প্রনাম করে একাগ্রমনে ও অত্যন্ত আনন্দিত চিত্তে হরিকে স্তব করলেন।এরপর শবর বিশ্বাবসুকে বললেন, হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ, প্রভুকে দর্শন করে আপনি কৃতার্থ হয়েছেন,এক্ষণে আমরা গৃহে গমন করি।বনমধ্যে হিংস্র জন্তুর বসবাস,তাই এখানে থাকা আমাদের উচিত হবে না।সূর্যাস্থ হওয়ার পূর্বে গৃহে গমন করি।
হে দ্বিজগণ,বিশ্বাবসু এই বলে ব্রাহ্মণের হস্ত ধারন ধরে গৃহে গমন করলেন।ব্রাহ্মণ অতিথিকে প্রাপ্ত হয়ে বিবিধ ভোজ্যদ্রব্য দ্বারা ভোজন করালেন।এরপর বিদ্যাপতি ( ব্রাহ্মণ) বিশ্বাবসুকে বললেন,আমি এখান থেকে গমন করলে ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজা এখানে এসে বাস করবেন।তিনি ভগবানের প্রীতিবিধানের নিমিত্তে এখানে বৃহৎ প্রাসাদ নির্মাণ করবেন।এরপর শবর বললেন,হে সখে, আপনি ইন্দ্রদ্যুম্ন নৃপতির আগমন বিষয়ে যা বললেন তা এ ক্ষেত্রে বহু পূর্ব থেকে জনশ্রুতি আছে।কিন্তু মাধবকে এই নৃপতি( ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজা) দর্শন করতে পারবেন না,যেহেতু কিছুদিনের মধ্যে ভগবান স্বর্ণবালুকা দ্বারা আবৃত হবেন।ভগবান অন্তর্হিত হবেন, যমের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেন।কিন্তু আপনি মহাভাগ্যবান,তাই আপনি ভগবানকে দর্শন করলেন।হে মিত্র, ইন্দ্রদ্যুম্ন নৃপতির আগমনের পূর্বে তিনি যে অন্তর্হিত হবেন,রাজার নিকট এ বিষয়ে কখনো বলবেন না।সেই রাজা এখানে আগমন করে পরমেশ্বরকে দর্শন করতে না পেয়ে প্রয়োগপবেশন ব্রতে ব্রতী হয়ে গদাধরকে(বিষ্ণু)স্বপ্নে দর্শন করবেন।তিনি তার আদেশক্রমে ব্রহ্মার দ্বারা প্রভুর চারটি রুপ প্রতিষ্ঠিত করে ভক্তিসহকারে পূজা করবেন।এরপর বিদ্যাপতি ও বিশ্বাবসু শয্যায় গমন করলেন।প্রভাত( সকাল) হলে বিদ্যাপতি মাধবকে দর্শন করে ইন্দ্রদ্যুম্নের প্রাসাদ অভিমুখে যাত্রা করলেন।” চলবে…
জয় জগন্নাথ। হরে কৃষ্ণ। প্রণাম

Sadgun Madhav Dash

Writer & Admin

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments