এই জগতের একজনই স্রষ্টা,তার নাম শ্রীকৃষ্ণ।তিনিই বিষ্ণু রাম,বলরাম,নৃসিংহ আদি বহুরুপে নিজেকে প্রকাশ করেন। ভগবদ্গীতা ১০/৮ শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন,”আমিই সমস্ত জগতের স্রষ্টা। সব কিছু আমার থেকে সৃষ্টি হয়েছে”(“অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে।”)। অথর্ববেদের অন্তর্গত গোপালতাপনী উপনিষদ১/২১ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে( “একো বশী সর্বগঃ কৃষ্ণ ঈড্যঃ”)সেই একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর ভগবান,তিনিই আরাধ্য।কৃষ্ণ যজুর্বেদের অন্তর্গত নারায়ন উপনিষদ ৪ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে “ব্রহ্মন্যো দেবকীপুত্রঃ”দেবকীপুত্র শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর ভগবান। শ্রীমদ্ভাগবতের ১/৩/২৮ শ্লোকে বলা হয়েছে,”কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং”শ্রীকৃষ্ণ হলেন স্বয়ং পরমেশ্বর।
এছাড়াও মহাভারত শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলা হয়েছে, স্বয়ং চতুর্ভুজ বিষ্ণু বলা হয়েছে (“অনুগ্রহার্থং লোকানাং বিষ্ণুলোক নমস্কৃতঃ।বসুদেবাত্তু দেবক্যাং প্রাদুর্ভূতো মহাযশাঃ।।”-“ত্রিজগতের পূজনীয় মহাযশস্বী স্বয়ং বিষ্ণু লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য বসুদেব-দেবকীতে আবির্ভূত হইয়া ছিলেন৷” -মহাভারত আদিপর্ব, ৫৮/১৩৮)।
সুতারাং বেদ বা শ্রুতি,স্মৃতি,অষ্টাদশ পুরান,মহাভারত ইত্যাদি অসংখ্য সনাতনী শাস্ত্র থেকে আমরা জানতে পারি, কৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান। আমার, আপনার সকলের সৃষ্টিকর্তা হলেন শ্রীকৃষ্ণ। তাই তিনি বৃন্দাবনের গোপীদেরও সৃষ্টির্কতা।তার কাছে স্ত্রী ও পুরুষ কোন বিভেদ নাই।কারন তিনি সকলের প্রভু।যে যে ভাব নিয়ে ভক্ত শ্রীকৃষ্ণের শরনাগত হতে চাই, শ্রীকৃষ্ণ তাকে সেভাবে কৃপা করেন( গীতা ৪/১১)।বৃন্দাবনের গোপীরা শ্রীকৃষ্ণকে শুধুই ভালোবাসতে চেয়েছিল,তার বিনিময়ে তারা আর কিছুই তার কাছে চান নি।তাই শ্রীকৃষ্ণ তাদের ভালোবাসাকে স্বীকার করেছিলেন।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা অনুসারে,যদিও ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অসংখ্য বৃন্দাবনের গৃহ বধুদের সাথে নৃত্য করেছিলেন, তথাপি তিনি সম্পূর্নরুপে কাম বা যৌন কামনা বাসনা থেকে মুক্ত( গীতা৭/১২)।কারন শ্রীকৃষ্ণ হলেন সমগ্র জগতের স্রষ্টা,পরম ঈশ্বর,পরম প্রভু, পরমেশ্বর ভগবান।
ভগবদ্গীতা ৩/৩৭ শ্লোক অনুসারে কাম বা যৌন কামনা বাসনা শুরু হয় রজোগুন থেকে (” কাম এষ ক্রোধ এষ রজোগুন সমুদ্ভব “)।এ রজোগুন থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মুক্ত।এমনকি জড় জগতের সত্ত্ব ও তমগুনও ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে স্পর্শ করতে পারে না (গীতা ৭/১২)।
শ্রীমদ্ভাগবত পুরান শাস্ত্রের দশম স্কন্দের বর্ননা থেকে আমরা জানতে পারি, কৃষ্ণ বৃন্দাবনের অসংখ্য ব্রজবধুদের জোর করে ঘর থেকে তুলে আনেন নি। তারা স্বইচ্ছায় কৃষ্ণের বংশীধ্বনিতে তার কাছে ছুটে এসেছিলেন।
শ্রীমদ্ভাগবত ১০/২৯/১৭-২৬ নং শ্লোক অনুযায়ীঃ
কৃষ্ণ গোপীদের বললেন,” হে গোপীগন,তোমরা বৃন্দাবনে চলে যাও।কেন তোমরা এখানে এসেছ?তোমাদের সংসার আছে,স্বামী আছে,সন্তান আছে।তারা তোমাদের অপেক্ষায় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হবেন।তোমাদের দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকতে দেখে লোকেরা তোমাদের নিন্দা করবে।এ ধরনের কার্য নারী জাতির জন্য উচিত নয়। বাড়িতে ফিরে যাও তোমরা।”
শ্রীমদ্ভাগবত ১০/২৯/৩১- ৪১ নং শ্লোক অনুযায়ীঃ
গোপীরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন,”হে প্রভু নারী জাতিরুপে আপনি যে উপদেশ আমাদের দিয়েছেন তা আমরা মান্য করি।কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আপনার প্রতি এই ধরনের সেবা করা উচিত।কারন আপনি সকল প্রাণীর পরম বন্ধুস্বরুপ,আপনি তাদের আত্মীয়,পতি এবং আত্মা।আপনি আমাদের স্রষ্টা।আপনি আমাদের স্বামী। হে প্রভু,এ জগতে মিথ্যা স্বামীর আমরা দাসত্ব করছি,যে কিছুকাল পরে মারা যাবে।প্রকৃত স্বামী আপনি।আপনি ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করেছেন,ব্রজভূমিকে পালন করছেন,আপনি ঈশ্বর।আপনার জন্য যদি আমাদের কলঙ্ক হয়,সেটি আমাদের পরম সৌভাগ্য।কৃপা করে ফিরিয়ে দিও না।কৃপা করে আপনি আমাদের আপনার চরনে স্থান দিবেন।”
শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩৩/৩ শ্লোক অনুযায়ীঃ
“ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পরমপ্রভুরুপে অসংখ্য সৌভাগ্যবতী ব্রজনারীদের মনোবিলাষ পূর্ন করার জন্য পূর্নিমার পূর্ণ আলোতে অসংখ্য কৃষ্ণ রুপে প্রতি দুইজন গোপীর মাঝে একজন কৃষ্ণরুপে তাদের হাত ধরে তাদের সাথে নৃত্য করেছিলেন।প্রত্যোকে ভেবেছিল কৃষ্ণ শুধু আমার সাথে রয়েছেন।আহা! আমি কত সৌভাগ্যবান।”
কৃষ্ণ যদি ভগবান না হতেন, তাহলে তার পক্ষে কিভাবে এক কৃষ্ণ থেকে অসংখ্য কৃষ্ণে পরিনত হওয়া কিভাবে সম্ভব হত? সুতারাং কৃষ্ণ পরমেশ্বর ভগবান,তাই তার পক্ষে সবকিছু সম্ভব, যা আমরা চিন্তাও করতে পারি না।
বৃন্দাবনের গোপীরা কৃষ্ণকে শুধু ভালোবাসতে চেয়েছিল। কৃষ্ণ তাদের সে আশা পূর্ণ করেছিলেন।কারন কৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান।তার কাছে স্ত্রী ও পুরুষ কোন বিভেদ নেই।যে তার শরনাগত তিনি তার প্রতি কৃপাপরায়ন( গীতা ৯/৩২)।
শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩৩/৩৭-৩৮ নং শ্লোক অনুযায়ীঃ
“রাসনৃত্য সমাপ্ত হলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোপীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন গৃহে ফিরে যাওয়ার জন্য।শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে গোপীগন গৃহে ফিরে গিয়েছিলেন।কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের মায়াশক্তির দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে গোপগন ভেবেছিল তাদের পত্নীরা তাদের পাশে আছে।তাই তারা তাদের স্ত্রীদের প্রতি কোনরুপ অসূয়া( হিংসা) প্রকাশ করেন নি।”
হরে কৃষ্ণ।প্রনাম।