অনেকেই কুব্জার সঙ্গে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্পর্ককে সন্দেহভাজন দৃষ্টিতে দেখেন। কিন্তু আসলে শাস্ত্রের মর্মার্থ না জেনেই আমরা এমনটা ধারণা করি কেবল। তাই এর উত্তর প্রদান করেছেন আচার্য শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর মহাশয়।
শ্রীমদ্ভাগবতঃ ১০/৪২/০১
শ্রীশুক উবাচ
অথ ব্রজন্ রাজপথেন মাধবঃ
স্ত্রিয়ং গৃহীতাঙ্গবিলেপভাজনাম্।
বিলোক্য কুব্জাং যুবতীং বরাননাং
পপ্রচ্ছ যান্তীং প্রহসন্ রসপ্রদঃ ॥
অন্বয়ঃ শ্রীশুকঃ উৰাচ-শুকদেব গোস্বামী বললেন, অথ-অতঃপর, ব্রজল্-হাঁটতে হাঁটতে, রাজপথেন রাজপথে, মাধবঃ-কৃষ্ণ, প্রিয়ম্ এক রমণী, গৃহীত-ধারণ করে; অঙ্গ-দেহের, বিলেপ-বিলেপন, ভাজনাম্-পাত্র; বিলোক্য দর্শন করে; কুঞ্জাম্-কুজা। মুৰতীম্-যুবতী। বর-আননাম্-সুমুখশ্রীযুক্ত, পপ্রচ্ছ-তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, যাস্তীম্ যাচ্ছিল; প্রহসন্-হাসতে হাসতে, রস-প্রেমানন্দ, প্রদঃ প্রদাতা।
অনুবাদঃ শুকদেব গোস্বামী বললেন রাজপথে হাঁটতে হাঁটতে তিনি দেখলেন যে, সুপ্রীমুখ এক কুব্জা যুবতী রমণী সুগন্ধি অঙ্গবিলেপন দ্রব্যের পাত্র বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রেমানন্দ প্রদাতা সহাস্যে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন।
তাৎপর্য
শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুরের মতানুসারে, যুবতী কুজা কন্যাটি প্রকৃতপক্ষে ভগবানের পত্নী সত্যভামার অংশপ্রকাশ। সত্যভামা ভগবানের ভু-শক্তি নামক অন্তরঙ্গ্য শক্তি এবং তাঁর এই প্রকাশ পৃথ্বী নামে পরিচিত, যা অসংখ্য খল শাসকের মহাভারে অবনত হয়ে পৃথিবীরূপে বিরাজ করছে। শ্রীকৃষ্ণ এইসকল দুষ্ট রাজাদের দমন করার জন্যই অবতরণ করেছেন আর তাই এই শ্লোকসমূহে যেমন বর্ণনা করা হয়েছে তাঁর ত্রিবক্রা কুজাকে সমুন্নত করার যে লীলা, সেটি তাঁর ভূভার সংশোধনেরই প্রতিকস্বরূপ। একই সঙ্গে ত্রিবক্রাকে ভগবান তাঁর সঙ্গে প্রণয় সম্পর্কও প্রদান করেছিলেন।
প্রদত্ত ব্যাখ্যার সংযোজনরূপে রস-প্রদ শব্দের দ্বারা নির্দেশ করা হয়েছে যে, যুবতী কুজার সঙ্গে তাঁর আচরণের মাধ্যমে ভগবান তাঁর গোপবালক সখাদের মুগ্ধ করেছিলেন।