ভারতের উত্তর প্রদেশে মথুরা জেলার বৃন্দাবন গ্রামের ভান্ডীর বনে ‘শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ বিবাহস্থলী’ নামক বিখ্যাত মন্দির আছে। এ মন্দিরের বিশেষত্ব হলো- এখানে শ্রী রাধাকৃষ্ণকে স্বকীয়া ভাবে বর-বধূরূপে পূজা করা হয়। মথুরামন্ডলে বৃন্দাবনে ‘বেণু-কূপ’ নামক এক প্রসিদ্ধ কুয়ো রয়েছে যা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজের বেণু দ্বারা প্রকট করেছিলেন। এ বেণু-কূপের নিকটে একজোড়া বিরাট ভান্ডীর বটবৃক্ষ হয়েছে। এ বটবক্ষের নিচে শ্রীরাধাকৃষ্ণের ‘গান্ধর্ব” বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিলো এবং এ বিবাহের পৌরহিত্য করেছিলেন স্বয়ং লোকপিতা ব্রহ্মা। বর্তমানে সে বটবৃক্ষদ্বয়ের নিচে ‘রাধাকৃষ্ণ বিবাহস্থলী’ নামক মন্দিরটি রয়েছে। প্রতি বছর ‘ব্যাহুলা উৎসব’ এর সময় এ মন্দিরে শ্রীরাধাকৃষ্ণের বিবাহ মহাধূমধামে উৎযাপন করা হয় এবং এ স্থানটি বৃন্দাবনে তীর্থযাত্রীগণের আকর্ষণের অন্যতম কারণ। এ মন্দির ছাড়াও বৃন্দাবনে ‘শ্রী রাধাবল্লভ লাল মন্দির’ সহ বেশ কয়েকটি মন্দিরে এবং বৃন্দাবন ছাড়াও দক্ষিণভারতের ‘কাঞ্চি কামকোটি পীঠ’ প্রভৃতিতে রাধাকৃষ্ণের গান্ধর্ব বিবাহ উৎসবটি পালিত হয়। সমস্ত ভারতজুড়ে রাধাকৃষ্ণ মন্দির সমূহে বছর বিশেষ বিশেষ সময়গুলোতে বৈবাহিক শৃঙ্গার করা হয়।
রাধাকৃষ্ণের এ গান্ধর্ব্ব বিবাহের বর্ণনা একাধিক প্রামাণিক শাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে এবং বৈষ্ণব আচার্যগণও তাঁদের নানা লেখনিতেও এর বর্ণনা করেছেন। নিম্নে ‘শ্রীব্রহ্মবৈবর্ত মহাপুরাণ’ ও ‘গর্গসংহিতা’-এর আলোকে এ বিবাহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরা হলো-
শ্বেত বরাহকল্পের ২৮ তম চতুর্যুগে ব্রজেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র নন্দব্রজে আবির্ভূত হন এবং বসুদেবের কূলগুরু শ্রীগর্গাচার্য্য গোকূলে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণের নামকরণ করেন। শ্রীকৃষ্ণের নামকরণ শেষে গর্গমুনি মথুরা নগরে ফিরার সময় তার সাথে বৃষভানু রাজের সাক্ষাৎ হয় এবং গর্গাচার্য্যকে তিনি শ্রীমতি রাধিকার বিবাহের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরুষের সন্ধান দিতে বললে মুনি গর্গাচার্য্য ভবিষ্যতবাণী করেন, ভবিষ্যতে লোকপিতা ব্রহ্মা রাধাকৃষ্ণের বিবাহ করাবেন। এরপর একদিন নন্দ মহারাজ ছোটশিশু কৃষ্ণকে সঙ্গে নিয়ে নন্দগ্রামের অনতিদূরে গোচারণে যান। শ্রীকৃষ্ণ তখন এক অদ্ভূত লীলা প্রদর্শনের মনস্থির করলেন। হঠাৎ প্রবল ঝড় ও বজ্র-বিদ্যুৎ সম্পাত শুরু হলো। নন্দ মহারাজ চিন্তিত হলেন – পুত্রকে সামলাবেন নাকি গাভীদের রক্ষা করবেন। কৃষ্ণও ভীত হওয়ার ভান করে পিতা নন্দের গলা জড়িয়ে ধরলেন। এ সময় নন্দ শ্রীমতি রাধিকাকে নিকটে আসতে দেখে বিস্মৃত হলেন। কৃষ্ণের নামকরণের সময় গর্গাচার্য্য নন্দ মহারাজকে শ্রীমতি রাধিকার গুণমহিমা কীর্তন করেছিলেন এবং রাধাকৃ্ষ্ণের নিত্য সম্পর্ক অবগত করিয়েছিলেন। নন্দ সজল নয়নে শ্রীমতি রাধিকার স্তব-স্তুতি করলেন এবং বালক শ্রীকৃষ্ণকে শ্রীমতি রাধিকার হাতে অর্পণ করে অনুরোধ করলেন, তিনি যেন কৃষ্ণকে যশোদার নিকট পৌঁছে দেন যাতে করে নন্দ মহারাজ গরুদের গোয়ালে নিয়ে যেতে পারেন নির্বিঘ্নে।
রাধিকা নন্দের এ অনুরোধে সম্মত হয়ে কৃষ্ণকে তুলে নিয়ে গোকূলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন এবং পথিমধ্যে যমুনা তীরে একটি মনোজ্ঞ কুঞ্জবিথীকায় পৌঁছালেন। হঠাৎ তিনি লক্ষ্য করলেন, শ্রীকৃষ্ণ অন্তর্নিহিত হয়েছেন এবং তখন তিনি কৃ্ষ্ণকে খুঁজতে আরম্ভ করেন। অকস্মাৎ তাঁর সামনে শ্রীকৃষ্ণ প্রকট হলেন নবযৌবনধর ষোল বছরের কিশোর রূপে এবং তিনি মিষ্টিবাক্যে রাধিকার চিত্তহরণ করতে লাগলেন। কিন্তু শ্রীমতি রাধিকা শ্রীকৃষ্ণের সাথে আসন্ন বিচ্ছেদের কথা স্মরণ করে দুঃখিত ছিলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ মনে মনে ব্রহ্মাকে স্মরণ করলেন।
শ্রীকৃষ্ণ স্মরণ মাত্র ব্রহ্মা সত্যলোক হতে সেখানে উপস্থিত হয়ে শ্রীমতি রাধিকাকে অগ্রে অর্চন করে শ্রীকৃষ্ণের চরণবন্দনা করলেন। পূর্বে ব্রহ্মা পুষ্করতীর্থে ৬০ হাজার বছর তপস্যার ফলস্বরূপ এক্ষণে শ্রীমতি রাধিকার চরণযুগল দর্শনের সৌভাগ্য লাভ করেন। তিনি মুহুর্মুহু শ্রীমতি রাধিকার স্তব স্তুতি করলে শ্রীমতি রাধিকা তুষ্ট হয়ে তাকে নিজ অহৈতুকী ভক্তি প্রদান করলেন। যদিও রাধা-কৃষ্ণ পরাৎপর ও প্রীতিযুক্ত দম্পতি এবং পরস্পর অনুরূপ, তথাপি লোকব্যবহার রক্ষার জন্য ব্রহ্মা শ্রীরাধাকৃষ্ণের গান্ধর্ব বিবাহের আয়োজন করলেন এবং নিজে সে বিবাহের পুরোহিত হলেন।গগনমার্গে সমস্ত দেবদেবীগণ এ গান্ধর্ব বিবাহের সাক্ষী হলেন।
শ্রীব্রহ্মবৈবর্ত মহাপুরাণে নারায়ণ ঋষি রাধাকৃষ্ণের বিবাহের বর্ণনা এরূপে করেন-
তদা ব্রহ্মা তয়োর্মধ্যে প্রজ্বাল্য চ হুতাশনম্ ।হরিং সংস্মৃত্য হবনং চকার বিধিনা বিধিঃ॥উত্থায় শয়নাৎ কৃষ্ণ উবাস বহ্নিসন্নিধৌ।ব্ৰহ্মণোক্তেন বিধিনা চকার হবনং স্বয়ম্॥প্রণম্য চ হরিং রাধাং দেবানাং জনকঃ স্বয়ম্।
তাঞ্চ তং কারয়ামাস সপ্তধা চ প্রদক্ষিণম্॥পুনঃ প্রদক্ষিণং রাধাং কারয়িত্বা হুতাশনম্।প্রণম্য চ পুনঃ কৃষ্ণং বাসয়ামাস তাং বিধিঃ।।তস্যা হস্তঞ্চ শ্রীকৃষ্ণং গ্রাহয়ামাস তদ্বিধিঃ।বেদোক্তসপ্তমন্ত্রাংশ্চ পাঠয়ামাস মাধবম্॥সংস্থাপ্য রাধিকাহস্তং হরের্বক্ষসি বেদবিৎ।শ্রীকৃষ্ণহস্তৎ রাধায়াঃ পৃষ্ঠদেশে প্রজাপতিঃ।স্থাপয়িত্বা চ মন্ত্রাংশ্চ পাঠয়ামাস রাধিকা॥পারিজাতপ্রসূনানাং মালামাজানুলম্বিতাম্।শ্রীকৃষ্ণস্য গলে ব্রহ্মা রাধাদ্বারা দদৌ মুদা॥প্ৰণময্য পুনঃ কৃষ্ণং রাধাঞ্চ কমলোদ্ভবঃ।রাধাগলে হরিদ্বারা দদৌ মালাং মনোরমাম্॥পুনশ্চ বাসয়ামাস শ্রীকৃষ্ণং কমলোদ্ভবঃ।তদ্বামপার্শ্বে রাধাঞ্চ সম্মিতাং কৃষ্ণচেতসম্॥পুটাঞ্জলিং কারয়িত্বা মাধবং রাধিকাং বিধিঃ।
পাঠয়ামাস বেদোক্তান্ পঞ্চ মন্ত্রাংশ নারদ॥প্ৰণময্য পুনঃ কৃষ্ণং সমর্প্য রাধিকাং বিধিঃ।কন্যকাঞ্চ যথা তাতো ভক্ত্যা তস্থৌ হরেঃ পুরঃ।।
[ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কৃষ্ণজন্মখন্ড, অধ্যায় ১৫, শ্লোক- ১২৩-১৩৩ ]
বঙ্গানুবাদ: বিধাতা ভক্তিপূর্ব্বক রাধাকৃষ্ণকে প্রণাম করিলেন এবং তাঁহাদের মধ্যে অগ্নি প্রজ্বলিত করে শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করে বিবিধক্রমে হোম করতে লাগলেন । তখন কৃষ্ণ শয্যা হতে উত্থান করে অগ্নি সমীপে উপবেশনপূর্ব্বক ব্রহ্মোক্ত বিধিক্রমে স্বয়ং হোম করতে আরম্ভ করলেন। বেদকর্ত্তা ব্রহ্মা শ্রীকৃষ্ণ ও রাধিকাকে প্রণাম করে তাঁদেরকে সপ্তবার প্রদক্ষিণ করালেন। পুনর্ব্বার রাধিকাকে অগ্নি প্রদক্ষিণ করিয়ে তাঁকে এবং কৃষ্ণকে প্রণাম করে দেবীকে উপবেশন করালেন। এরপরে ব্রহ্মা রাধিকার হস্ত কৃষ্ণকে ধরতে বললেন, ভগবান্ সেই হস্ত ধারণ করলে তাঁকে বেদোক্ত সপ্ত মন্ত্র পাঠ করালেন। ব্রহ্মা রাধিকার হস্ত কৃষ্ণের বক্ষঃস্থলে ও কৃষ্ণের হস্ত রাধিকার পৃষ্ঠদেশে স্থাপন করে রাধিকাকে মন্ত্রসমূহ পাঠ করালেন, এবং আজানুলম্বিত পারিজাতকুসুমের মালা রাধাদ্বারা কৃষ্ণগলে অর্পণ করালেন। এরপরে কমলোদ্ভব , কৃষ্ণ ও রাধিকাকে প্রণাম করে কৃষ্ণদ্বারা রাধিকা গলেও মনোহর মালা প্রদান করলেন। কমলোদ্ভব কৃষ্ণকে বসিয়ে তাঁর বামপার্শ্বে কৃষ্ণের চিত্তস্বরূপা সস্মিতা রাধিকাকে উপবেশন করালেন এবং হে নারদ! রাধা-কৃষ্ণকে হস্তজোড় করিয়ে, বেদোক্ত পঞ্চম মন্ত্র পাঠ করালেন । অনন্তর কৃষ্ণকে রাধিকা দ্বারা প্রণাম করালেন। পিতা যেরূপ কণ্যাকে প্রদান করে, সেইরূপ বিধাতা ব্রহ্মাও রাধিকাকে কৃষ্ণের হাতে সমর্পণ করে তাঁদের পুরোভাগে অবস্থান করিতে লাগলেন।
গর্গসংহিতায় দেবর্ষি নারদ এ গান্ধর্ব বিবাহের বর্ণনা করেছেন এভাবে-
তদা স উত্থায় বিধির্হুতাশনং প্রজাল্য কুণ্ডে স্থিতয়োন্তয়োঃ পুরঃ।শ্ৰুতেঃ করগ্রাহবিধিং বিধানতো বিধায় ধাতা সমবন্বিতোঽভবৎ।।স বাহয়ামাস হরিঞ্চ রাধিকাং প্রদক্ষিণং সপ্ত হিরণ্যরেতসঃ।ততশ্চ তৌ তে প্ৰণময্য বেদবিত্তৌ পাঠয়ামাস চ সপ্তমন্ত্রকম্।।ততো হরের্ব্বক্ষসি রাধিকায়াঃ করঞ্চ সংস্থাপ্য হরেঃ করং পুনঃ।শ্রীরাধিকায়াঃ কিল পৃষ্ঠদেশকে সংস্থাপ্য মন্ত্রাংশ্চ বিধিঃ প্ৰপাঠয়ন্॥রাধাকরাভ্যাং প্রদদৌ চ মালিকাং কিঞ্জল্কিনীং কৃষ্ণগলেহলিনাদিনীম্।হরেঃ করাভ্যাং বৃষভানুজাগলে ততশ্চ বহ্নিং প্রণময্য বেদবিৎ।।সংবাসয়ামাস সুপীঠয়োশ্চ তৌরুতাঞ্জলী মৌনযুতৌ পিতামহঃ।তৌ পাঠয়ামাস তু পঞ্চমন্ত্রকং সমর্প্য রাধাঞ্চ পিতেব কণ্যাকাম্।।
[ গর্গসংহিতা, গোলকখন্ডম, অধ্যায় ১৬, শ্লোক ৩০-৩৪ ]
বঙ্গানুবাদ: নারদ বলিলেন–তখন ব্রহ্মা উত্থিত হইয়া উপবিষ্ট রাধাকৃষ্ণের সম্মুখে কুণ্ডমধ্যে যথাবিধি অগ্নি প্রজ্জলন করিলেন এবং বৈদিক বিধি অনুসারে পাণিগ্রহণ ক্রিয়া সম্পাদন করাইয়া উপবিষ্ট হইলেন। বেদ-বিধিজ্ঞ ব্রহ্মা রাধাকৃষ্ণের সপ্তবার অগ্নি প্রদক্ষিণ ও তাঁহাদিগের দ্বারা প্রণাম করাইলেন এবং তারপর সপ্তমন্ত্র পাঠ করাইয়া বিবাহ বিধি সম্পন্ন করিলেন।
অনন্তর ব্রহ্মা রাধিকার হস্ত কৃষ্ণের বক্ষঃস্থলে এবং কৃষ্ণের হস্ত রাধিকার পৃষ্ঠদেশে সংস্থাপনপূর্ব্বক মন্ত্র পাঠ করাইলেন। বেদজ্ঞ ব্রহ্মা রাধা-করদ্বয় দ্বারা কৃষ্ণের কণ্ঠে ও কৃষ্ণ-করদ্বয় দ্বারা রাধার গলে কেশরযুক্ত কমল-মাল্য প্রদান করাইয়া তাঁহাদের উভয়কেই অগ্নি প্রণাম করাইলেন;তখন তাঁহাদের গললগ্ন মালায় মধুকরগণ লগ্ন হইয়া সুমধুর রব করিয়াছিল। অনন্তর পিতামহ কৃতাঞ্জলি মৌনযুক্ত রাধা কৃষ্ণকে উত্তম আসনে উপবেশন করাইয়া পঞ্চ মন্ত্র পাঠ করাইলেন। পিতা যেমন বরকরে কন্যার্পণ করেন,পিতামহও তদ্রূপ করিয়া রাধাকে কৃষ্ণকরে অর্পণ করিলেন।
সে বিবাহে দেবগণ পুষ্পবর্ষণ ও অমরনারীরা বিদ্যাধরীগণের সাথে নৃত্য করলেন; গন্ধৰ্ব্ব, বিদ্যাধর, চারণ ও কিন্নরগণ সুমধুর কৃষ্ণমঙ্গল গান করল। মৃদঙ্গ,বীণা,তানপুরা, বংশী,শঙ্খ,ঢক্কা ও দুন্দুভি বাদ্য তাললয়ে মুহুর্মুহু বাদিত হল; স্বর্গবাসী দেববরগণ উচ্চরবে মঙ্গলময় জয় শব্দ করলেন। বিবাহান্তে শ্রীকৃষ্ণ খুশি হয়ে ব্রহ্মাকে নিজ পাদপদ্মে অহৈতুকী ভক্তি প্রদান করেন। দেবতাগণ প্রস্থান করলে শ্রীরাধা-কৃষ্ণ রাসমন্ডলে মহারাসে মেতে উঠলেন। রাসান্তে নবযৌবনরূপধর শ্রীকৃষ্ণ পুনরায় বালকরূপ ধারণ করলে শ্রীমতি রাধিকা নিরাশ হলেন। তখন আকাশবাণী শ্রীমতি রাধিকাকে আস্বস্ত করলো, প্রতিদিনই শ্রীকৃষ্ণের সাথে শ্রীমতি রাধিকা রাসলীলার সুযোগ পাবেন। এতে আস্বস্ত হয়ে শ্রীমতি রাধিকা বালক কৃষ্ণকে নিয়ে যশোদা ভবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন এবং যশোদার নিকট শ্রীকৃষ্ণকে পৌঁছে দেন।
গ্রাম্য সাহিত্য শুনে অভ্যস্ত অনেকের ধারণা, শ্রীমতি রাধিকা বুঝি রায়ান(আয়ান) নামক গোপের পত্নী। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভুল৷ রাবণ যেমন ছায়া-সীতাকে হরণ করেছিলেন, প্রকৃত সীতা অগ্নিদেবের নিকট সুরক্ষিত ছিলো, ঠিক সেরূপে বাস্তবে আয়ান নামক গোপের সাথে রাধিকার অংশ ‘ছায়া-রাধা’ এর বিবাহ হয়েছিলো।
শাস্ত্রে এ বিষয়টি স্পষ্ট বাক্য বর্ণিত হয়েছে-
কৃষ্ণেন সহ রাধায়াঃ পুণ্যে বৃন্দাবনে বনে।
বিবাহং কারয়ামাস বিধিনা জগতং বিধিঃ ।।
স্বপ্নে রাধাপদাম্ভোজং ন হি পশ্যন্তি বল্লবাঃ ।
স্বয়ং রাধা হরেঃ ক্রোড়েচ্ছায়ারায়াণ মন্দিরে।।
[ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, অধ্যায় ৪৯, শ্লোক- ৪১,৪২ ]
বঙ্গানুবাদ: ব্রহ্মা পবিত্র বৃন্দাবন বনমধ্যে শ্রীকৃষ্ণের সহিত রাধিকার বিবাহ বিধি সম্পাদন করিয়াছিলেন। রায়ানাদি গোপগণ স্বপ্নে পর্যন্ত শ্রীমতী রাধিকার চরণকমল দর্শন করতে সমর্থ হয় নাই, কারণ রাধিকা স্বয়ং কৃষ্ণক্রোড়ে বিরাজমানা, কেবল তার ছায়া রায়াণ গৃহে বাস করেছিলো।
শ্রীমতি রাধিকা নিজেও নন্দ মহারাজকে একই কথা ব্যক্ত করেছিলেন-
অহমেন স্বয়ং রাধা ছায়ারায়াণকামিনী।
রায়াণঃ শ্রীহরেরংশঃ পার্ষদপ্রবরোমহান্॥
[ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কৃষ্ণজন্মখন্ড, অধ্যায় ১১১, শ্লোক ৬৮ ]
বঙ্গানুবাদ: আমিই স্বয়ং রাধা। রায়ানের যে পত্নী সে আমার ছায়ামাত্র। রায়াণ শ্রীহরির একজন প্রধান পার্ষদ, তিনি শ্রীহরির অংশ।
বৃষভানু আঙ্গিনায় কিভাবে বৃষভানু নিজ কণ্যা রাধাকে শ্রীকৃষ্ণের সাথে প্রজাপত্য বিবাহ দিয়েছিলেন এবং আয়ান মূল রাধিকার পরিবর্তে ছায়ারাধাকে পত্নী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, সে বৃত্তান্ত ব্রহ্মান্ডপুরাণে বর্ণিত আছে, এর বর্ণনা পরবর্তী লিখনিতে করা হবে।
- মহর্ষি গর্গাচার্য্য প্রণীত ‘গর্গসংহিতা’- শ্রীযুক্ত পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত
- ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণম- শ্রীযুক্ত মথুরানাথ তর্করত্ন সম্পাদিত
- ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণম- শ্রীযুক্ত পঞ্চানন তর্করত্ন সম্পাদিত (নবভারত প্রকাশনি)
- শ্রীশ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ- শ্রীযুক্ত বেণীমাধবশীল সম্পাদিত (অক্ষয় লাইব্রেরী প্রকাশনি)
- শ্রীমতি রাধারাণীর লীলা মহিমা(১ম খন্ড)- ভক্তি পুরুষোত্তম স্বামী (প্রকাশনি- ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট, ইস্কন, মায়াপুর)
- Wikipedia : article – ‘Radha Krishna Vivah Sthali, Bhandirvan’
।। বন্দে গুরু পরম্পরা।।
।।মধ্ব-গৌড়ীয় পরম্পরা।।
।।জয় বৈষ্ণব পরম্পরা ।।
সংকলনে: ব্রজসখা দাস
[ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত। ]
নিবেদক-
° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °