১. ✿ হরে —
সর্বচেতহরঃ কৃষ্ণস্ তস্য চিত্তং হরত্য্ অসৌ ।
বৈদগ্ধীসারবিস্তারৈর্ অতো রাধা হরা মতা ॥
~ শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রের মহামনোহর সৌন্দর্য সকলকে বিমুগ্ধ করে। কিন্তু শ্রীমতী রাধিকা তাঁর অনুপম বিমোহিনী চাতুর্থ-সৌন্দর্য-গুণরাশি দ্বারা এমনকি শ্যামচিত্তকেও বিমোহিত করেন। এইজন্য তিনি “হরা” নামে খ্যাত হন, সম্বোধনে “হরে”।
২. ✿ কৃষ্ণ —
কর্ষতি স্বীয়লাবণ্যমুরলীকলনিঃস্বনৈঃ ।
শ্রীরাধাং মোহনগুণালঙ্কৃতঃ কৃষ্ণ ঈর্যতে ॥
~ সর্বচমৎকারকারী গুণরাশিতে বিভূষিত শ্রীকৃষ্ণ তাঁর যৌবনললিত রূপসুষমা ও সর্বচিত্তহারী বেণুমধুরিমা দ্বারা শ্রীমতী রাধিকাকেও আকৃষ্ট করেন। সেইজন্য তিনি “কৃষ্ণ” নামে খ্যাত।
৩. ✿ হরে —
শ্রূয়তে নীয়তে রাসে হরিণা হরিণেক্ষণা একাকিনী।
রহঃকুঞ্জে হরেয়ং তেন কথ্যতে॥
~উন্নত সুবিজ্ঞ ভক্তগণ বলেন যে রাসবিলাসী শ্রীকৃষ্ণ রাসস্থলি হতে মৃগনয়না রাধিকাকে হরণ করেন এবং রাসমণ্ডলবর্তী এক নিভৃত নিকুঞ্জে নিয়ে যান। সেই জন্য রাধিকাকে বলা হয় “হরা”, সম্বোধনে “হরে”।
৪. ✿ কৃষ্ণ—
অঙ্গশ্যামলিমস্তোমৈঃ শ্যামলীকৃতকাঞ্চনঃ ।
রমতে রাধযা সার্ধং কৃষ্ণো নিগদ্যতে॥
~কৃষ্ণ যখন রাধিকার সঙ্গে কেলিবিলাস করেন, তখন তাঁর শ্রীঅঙ্গ নিঃসৃত অপূর্ব ঘননীল প্রভা অত্যুজ্জ্বল স্বর্ণকেও নীলকান্ত মণির ন্যায় প্রতিভাত করায়। সেইজন্য তিনি ‘কৃষ্ণ’ নামে প্রসিদ্ধ হন।
৫. ✿ কৃষ্ণ —
কৃত্বারণ্যে সরঃশ্রেষ্ঠং কান্তযানুমতস্ তযা ।
আকৃষ্য সর্বতীর্থানি তজ্জ্ঞানাৎ কৃষ্ণ ঈর্যতে॥
~রাধিকার অভিলাষ অনুসারে লীলারঙ্গকুশল শ্রীহরি শ্যামকুন্ড প্রকটিত করেন, এবং সর্বতীর্থকে সেখানে আকর্ষণ করেন। যে সমস্ত ভজনবিজ্ঞগন এই রহস্য জানেন, তাঁরা তাঁকে “কৃষ্ণ” নামে অভিহিত করে থাকেন।
৬.✿ কৃষ্ণ—
কৃষ্যতে রাধয়া প্রেম্ণা যমুনাতটকাননম্ ।
লীলয়া ললিতশ্চাপি ধীরৈঃ কৃষ্ণ উদাহৃতঃ॥
~শ্রীহরি যদিও যমুনাপুলিনবর্তী মঞ্জুল কেলিকুঞ্জসমূহে বিবিধ লীলাকেলি বিলাস করেন, তিনি শ্রীরাধিকার উপমারহিত প্রেমের প্রভাবে সম্পূর্ণরূপে বিমোহিত হয়ে যান। এইজন্য বিজ্ঞগণ তাঁকে “কৃষ্ণ” বলে অভিহিত করে থাকেন।
৭. ✿ হরে—
হৃতবান্ গোকুলে তিষ্ঠন্ন্ অরিষ্টং পুষ্টপুঙ্গবম্ ।
শ্রীহরিস্তং রসাদ্ উচ্চৈ রাযতীতি হরা মতা ॥
~ কৃষ্ণ যখন অরিষ্টাসুরকে বধ করেন, তখন শ্রীরাধা উচ্চস্বরে কীৰ্ত্তন করেছিলেন, “হরি! হরি!” ফলে শ্রীরাধা “হরে” বলে আখ্যায়িত হন (সম্বোধনে “হরে”)।
৮. ✿ হরে—
হ্যস্ফুটং রায়তি প্রীতিভরেণ হরিচেষ্টিতম্ ।
গায়তীতি মতা ধীরৈর্ হরা রসবিচক্ষণৈঃ॥
~ প্রেমাতিশয্যবশতঃ শ্রীরাধিকা কখনো কখনো উচ্চস্বরে শ্রীকৃষ্ণ – লীলাসমূহ গান করতে থাকেন এবং অন্যান্য সময়ে তিনি মৃদু, অস্পষ্ট সুরে কৃষ্ণলীলা গান করেন। সেজন্য রসভিজ্ঞ ভক্তগণ তাঁকে “হরা” (সম্বোধনে “হরে”) বলে অভিহিত করেন।
৯. ✿ হরে—
রসাবেশপরিস্রস্তাং জহার মুরলীং হরেঃ ।
হরেতি কীর্তিতা দেবী বিপিনে কেলিলম্পটা॥
~যখন তীব্র প্রেমবিহ্বলতা সম্ভাত দিব্যানন্দ শ্রীকৃষ্ণকে অভিভূত করে, তখন কখনো কখনো তিনি বৃন্দাবনের বনে তাঁর বাঁশিটি হারিয়ে ফেলেন। সেই অবসরে রাধিকা তাঁর বাঁশিটি হরণ করেন, এবং সেজন্য তিনি “হরা” নামে অভিহিত হন। (সম্বোধনে “হরে”)
১০. ✿ রাম —
গোবর্ধনদরীকুঞ্জে পরিরম্ভবিচক্ষণঃ ।
শ্রীরাধাং রময়ামাস রামস্ তেন মতো হরিঃ॥
শ্রীকৃষ্ণ গোবর্দ্ধনের কুঞ্জসমূহে রাধিকার সঙ্গ আনন্দবিলাস বা রমন করেন এইজন্য তিনি “রাম” নামে অভিহিত হন।
১১. ✿ হরে—
হন্তি দুঃখানি ভক্তানাং রাতি সৌখ্যানি চান্বহম্ ।
হরা দেবী নিগদিতা মহাকারুণ্যশালিনী॥
~ পরম করুণাময়ী শ্রীরাধা ভক্তগণের ক্লেশ হরণ করেন (হরি) এবং প্রত্যহ তাদের অন্তরে আনন্দ আস্বাদন করান (রতি)। এইভাবে তিনি “হরা” নামে অভিহিত হন (সাম্বোধনে “হরে”)।
১২. ✿ রাম—
রমতে ভজতো চেতঃ পরমানন্দবারিধৌ ।
অত্রেতি কথিতো রামঃ শ্যামসুন্দরবিগ্রহঃ॥
~যে সমস্ত ভক্তগণ শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করেন, তাদের মন অনুক্ষণ দিব্যানন্দের সর্বোন্নত মহাবারিধিতে সম্ভারণ করতে থাকে। এভাবে সেই ঘনশ্যামকান্তি কৃষ্ণ “রাম” নামে আখ্যাত হন।
১৩. ✿ রাম—
রময়তি অচ্যুতং প্রেম্ণা নিকুঞ্জবনমন্দিরে ।
রামা নিগদিতা রাধা রামো যুতস্ তয়া পুনঃ॥
~পুষ্পবিথীকাময় কুঞ্জে শ্রীরাধা তাঁর সর্বাতিশায়ী অনন্যা প্রেমের দ্বারা শ্রীহরির প্রীতিবিধান করেন। এই সময় তাদের নিভৃত নিকুঞ্জবিলাস কালে আনন্দঘন শ্যাম শ্রীরাধাকে অসীম আনন্দ প্রদান করে থাকেন। সেজন্য তাকে বলা হয় “রাম”।
১৪. ✿ রাম—
রোদনৈর্গোকুলে দাবানলম্শযতি হ্যসৌ ।
বিশোষয়তি তেনোক্তো রামো ভক্তসুখাবহঃ॥
~ দাবানল ভয়ে ত্রস্ত ব্রজবাসীগণকে আতঙ্কিতভাবে চিৎকার করতে দেখে শ্রীকৃষ্ণ অনায়াসে ঐ দাবাগ্নি গ্রাস করে নেন। এইজন্য শ্রীকৃষ্ণকে বলা হয় রাম, কেননা তিনি অনলগ্রাস থেকে উদ্ধার করার মাধ্যমে ব্রজবাসীগনের আনন্দবিধান করেন এবং তিনি সর্বদাই তাঁর ভক্তগনকে তাঁর সঙ্গে আনন্দ করার জন্য আয়োজন করে থাকেন।
১৫. ✿ হরে—
নিহন্তুম্ অসুরান্ যাতো মথুরাপুরম্ ইত্য্ অসৌ ।
তদাগমদ্ রহঃকামো যস্যাঃ সাঽসৌ হরেতি চ॥
~কংস ও অন্যান্য দুরাচারীদের বধ করার জন্য শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় গমন করেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে অন্তরঙ্গ লীলাসুখ সম্ভোগের জন্য শ্রীরাধিকা কৃষ্ণকে বৃন্দাবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। সেজন্য রাধিকা “হরা” নামে অভিহিত হন।
১৬. ✿ হরে—
আগত্য দুঃখহর্তা যো সর্বেষাং ব্রজবাসিনাম্ ।
শ্রীরাধাহারিচরিতো হরিঃ শ্রীনন্দনন্দনঃ ॥
~ কৃষ্ণ যখন বৃন্দাবনে প্রত্যাগমন করেন, তখন তিনি সকল ব্রজবাসীদের ক্লেশ অপনয়ন করেন। তিনি “হরি” নামে প্রসিদ্ধ (সম্বাধনে “হরে”) কেননা তিনি তার অপূর্ব লীলাবিলাস দ্বারা রাধিকার চিত্ত হরণ করেন।
— শ্রীল জীব গোস্বামী প্রভুপাদ
(স্বধর্মম্ কর্তৃক সংগ্রহীত ও অনুবাদিত। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যসহকারে শেয়ার করার জন্য অনুমোদিত।)