শ্রাদ্ধে বিষ্ণুপ্রসাদই নিবেদন কর্তব্য, আমিষ নয়‼️‼️ শ্রাদ্ধে জীবহিংসায় নরকবাস‼️

Svadharmam Q&A

শ্রাদ্ধে বিষ্ণুপ্রসাদই নিবেদন কর্তব্য, আমিষ নয়‼️‼️ শ্রাদ্ধে জীবহিংসায় নরকবাস‼️

যো ন দদ্যাদ্ধরের্ভুক্তং পিতৃণাং শ্রাদ্ধকৰ্ম্মণি ।

অশ্নন্মুন্তি পিতরস্ত্স্য বিত্ৰং সততং দ্বিজাঃ ॥

[পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ২৫৫।৯৭]

অনুবাদঃ
“হে দ্বিজগণ ! যে ব্যক্তি পিতৃগণের শ্রাদ্ধকৰ্ম্মে হরির ভুক্ত বস্তু (বিষ্ণুপ্রসাদ) দান না করে, তাহার পিতৃ-গণ সতত বিষ্ঠা-মূত্র ভক্ষণ করিয়া থাকেন।”

ন দতাতীহ যে বিপ্ৰঃ পিতৃণাং শ্রাদ্ধকৰ্ম্মণি ।

অদ্ভুক্তমম্লং তীর্থ তৎসবং নিষ্ফলং ভবেৎ।

কল্পকোটিসহস্রাণি কল্পকোটিশভানি চ ।

পতস্তি পিতরস্তষশ্য নরকে পুয়শোণিতে ॥

নিবেদিতং তব বিভো যো জুহৌতি দদদ্গতি বা

দেবতানাং পিতৃণাঞ্চ তৃপ্তিরানস্ত্যমতে ॥

[ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ২৫৫।৬৬-৬৮ ]

অনুবাদ:
“যে বিপ্র শ্রাদ্ধকৰ্ম্মে তোমার ভুক্তান্ন (বিষ্ণুপ্রসাদ) বা তীর্থভুত জল প্রদান না করে, তাহার কৃত সেই সৰ্ব্ব কৰ্ম্মই নিষ্ফল হইয়া থাকে। কল্পকোটিসহস্র— কল্পকোটিশত কাল তাহার পিতৃগণ পুঁজ শোণিত নরকে নিমগ্ন হয় ৷ হে বিভো! অগ্রে তোমাকে(বিষ্ণুকে) নিবেদন করিয়া পরে যে ব্যক্তি তাহা হোম বা দান করে, দেব ও পিতৃগণের তাহাতে অনন্ত তৃপ্তি হইয়া থাকে।।”

ত্বৎপাদসলিলং সেব্যং পিতৃণাঞ্চ দিবৌকসাম।

সর্ব্বেষাং ভূসুরাণাঞ্চ মুক্তিদং কল্মষাপহম্ ॥

ত্বদভুক্তোঽচ্ছিষ্টশেষং বৈ পিতৃণাঞ্চ দিবৌকসাম্।

ভুসুরাণাঞ্চ সেব্যং স্যাম্নান্যেষান্ত কদাচন ॥

[পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ২৫৫।৬১-৬২ ]

অনুবাদ:
“তোমার পাদোদক (ভগবান বিষ্ণুর চরণামৃত)-ই পিতৃগণ, দেবগণ ও সমস্ত ব্রাহ্মণের সেব্য, মুক্তিপ্রদ এবং পাপাপহ। তোমার ভুক্তোচ্ছিষ্ট শেষ (বিষ্ণুপ্রসাদ)-ই পিতৃগণ, দেবগণ ও সমস্ত ব্রাহ্মণের সেব্য, অন্যের উচ্ছিষ্ট কদাচ সেব্য নহে।”

বিষ্ণোর্নিবেদিতং নিত্যংদেবেভ্যো জুহুয়াদ্ধবিঃ

পিতৃভ্যশ্চৈব তদ্দদ্যাৎসর্ব্বমানন্ত্যমশ্নুতে ॥

[পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ২৫৫।৯৬ ]

অনুবাদ:
“বিষ্ণুকে অগ্রে হবি নিবেদন করিয়া পরে তাহাই (বিষ্ণুপ্রসাদ দ্বারাই) নিত্য দেবগণকে হোম করিবে । পিতৃগণকেও উহা দান করিবে। এইরূপ করিলে উক্ত সৰ্ব্বকৰ্ম্ম অনস্ত ফলপ্রদ হইয়া থাকে।”

শ্রী শিব উবাচঃ

হরের্ভুক্তাবশেষেণ বলিস্তেভ্যো বিনিক্ষিপেৎ।

হোমঞ্চৈব প্ৰকুব্বীত তচ্ছেষেণৈব বৈষ্ণবঃ ।

হরের্নিবেদিতং সম্যগদেবেভ্যো জুহুয়াদ্ধবিঃ॥

পিতৃভ্যশ্চাপি তদ্দদ্যাৎ সর্ব্বমান্নত্যমাপ্নুয়াৎ।

প্রাণিনাং পীড়নং যত্তদ্বিদুষাং নিরয়ায় বৈ ॥

অদত্তঞ্চৈব যৎকিঞ্চিৎ পরস্বং গৃহ্যতে নরৈঃ ।

স্তেয়ং তদ্বিদ্ধি গিরিজে নরকসৈব কারণম্ ॥

[ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ২৫৩। ১০৭-১০৯ ]

অনুবাদ:
ভগবান শিব বললেন, “হরির ভুক্তাবশেষ (কৃষ্ণপ্রসাদ) দ্বারা দেবতাদের বলিপ্রদান(উপহার প্রদান) করবে, ভুক্তাবশিষ্ট(কৃষ্ণপ্রসাদ) হবি দ্বারা দেবতাদের হোম করবে । হরিকে সম্যক্‌রূপে নিবেদন করে পরে দেবগণকে হবি হোম করবে। পিতৃগণকেও তা-ই প্রদান করবে। এইরূপে কৃতকাৰ্য্য সমস্তই অনন্ত ফলপ্রদ হয়ে থাকে। প্রাণিগণের পীড়নকে বিজ্ঞগণ নরকভোগের কারণ হিসেবে ব্যাখা করে থাকেন। মনুষ্য নিজের জীবনে অন্যজীব কর্তৃক যে নিষ্ঠুর ব্যবহার আশা করে না, সে নিষ্ঠুর আচরণ যদি সে অন্য জীবের উপর করে,তবে হে গিরিজে! সে মনুষ্য অবশ্যই নরকভোগী হবে।”

ন দদ্যাদামিষং শ্রাদ্ধে ন চাদ্যাদ ধর্মতত্ত্ববিৎ ।

মুন্যন্নৈঃ স্যাৎ পরা প্রীতির্যথা ন পশুহিংসয়া ॥

নৈতাদৃশঃ পরো ধর্মো নৃণাং সদ্ধর্মমিচ্ছতাম্ ।

ন্যাসো দণ্ডস্য ভূতেষু মনোবাক্কায়জস্য যঃ ॥

[ শ্রীমদ্ভাগবতম ৭/১৫/৭-৮ ]

বঙ্গানুবাদ:
ধর্মতত্ত্বজ্ঞ ব্যক্তি শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে কখনও মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি আমিষ নিবেদন করবেন না, এবং তিনি যদি ক্ষত্রিয়ও হন, তা হলেও স্বয়ং আমিষ আহার করবেন না। যখন ঘি দিয়ে তৈরি উপযুক্ত খাদ্য সাধুদের নিবেদন করা হয়, তখন পিতৃপুরুষ এবং ভগবান অত্যন্ত প্রসন্ন হন। যজ্ঞের নামে পশুহিংসা করা হলে তাঁরা কখনও প্রসন্ন হন না। যাঁরা শ্রেষ্ঠ ধর্মের মাধ্যমে উন্নতি সাধন করতে চান, তাঁদের অন্য সমস্ত জীবদের প্রতি কায়, মন, এবং বাক্যের দ্বারা হিংসা না করতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে। তার থেকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম আর নেই।

অন্যতম প্রধান স্মৃতিশাস্ত্র ‘কাত্যায়ন স্মৃতিতে’ নিরামিষ দিয়ে অর্থাৎ বিনা আমিষে পিতৃ শ্রাদ্ধ করার নির্দেশ আছে!

মহাভারতের অনুশাসন ও আশ্বমেধিক পর্বেও উল্লেখ আছে, পিতৃপুরুষগণ অন্ন দ্বারাই সন্তুষ্ট হন।

পদ্মপুরাণের পাতালখন্ডের ৭২ নং অধ্যায়ে উল্লেখ আছে, রামচন্দ্র কর্তৃক মাতা কৌশল্যার শ্রাদ্ধে নিরামিষ দ্রব্যই নিবেদন করা হয়েছিলো, আমিষ নয়।

শ্রাদ্ধে জীবহিংসা যেহেতু নরকবাসের কারণ, তাই কলিকালে পিতৃশ্রাদ্ধে মাংস নিবেদন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে শাস্ত্রসমূহ-

দেবরেণ সুতোৎপত্তির্মধুপর্কে পশোর্বধঃ।

মাংসদানং তথা শ্রাদ্ধে বানপ্রস্থাশ্রমস্তথা।। ১৪

দত্তাক্ষতায়াঃ কণ্যায়াঃ পুনর্দানং পরস্য চ।

দীর্ঘকালং ব্রহ্মচর্য্যং নরমেধাশ্বমেধকৌ।। ১৫

মহাপ্রস্থানগমনং গোমেধঞ্চ তথা যথম।

ইমান ধর্ম্মান কলিযুগে বর্জ্জ্যানাহুর্মনীষিণঃ।। ১৬

[ বৃহন্নারদীয় পুরাণ, অধ্যায় ২২, শ্লোক ১৪-১৬ ]

বঙ্গানুবাদ:
কলিযুগে দেবরের দ্বারা পুত্রোৎপাদন, মধুপর্কের জন্য_পশুবধ, শ্রাদ্ধে মাংসদান, বানপ্রস্থাশ্রম, দত্তা অক্ষতযোনী বিধবা কণ্যার পুনরায় অন্যকে প্রদান, দীর্ঘকাল ব্রহ্মচর্য্য, নরমেধ, অশ্বমেধ, গোমেধ ও মহাপ্রস্থান- এই সকল ধর্ম্মকে বর্জন করতে বলেছেন ঋষিগণ।

অশ্বমেধৎ গবাংলম্ভং সন্ন্যাসং পলপৈতৃকং ।

দেবরেণ সুতোৎপত্তিং কলৌ পঞ্চ বিবৰ্জ্জয়ে ॥ ১০৯

[ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কৃষ্ণজন্মখন্ড, ১১৫।১০৯ ]

বঙ্গানুবাদ:
কলিতে অশ্বমেধ, গোমেধ, কর্মসন্ন্যাস, পলপৈতৃক—অর্থাৎ পিতৃলোকের উদ্দেশে মাংসাষ্টকা শ্রাদ্ধ ও নিয়োগ এই পাচ নিষিদ্ধ।

 

[ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত। ]

নিবেদক-
° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

Avatar of Brajasakha Das

Brajasakha Das

Writer & Admin

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments