পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি কংস, শিশুপাল, শকুনি, দুর্যোধনাদি অসুরদের মতো পূর্বজন্মের ঈর্ষাপরায়ণ, বিষ্ণুবিদ্বেষী কতিপয় ব্যক্তি ইহজন্মেও অবচেতন মনের সেই প্রবৃত্তির জন্য তাঁকে (শ্রীকৃষ্ণ) সাধারণ মনুষ্য বানাতে ব্যতিব্যস্ত। তারা নানা ফন্দি আঁটে তাঁর ভগবত্তাকে নস্যাৎ করার জন্য। এই নির্বোধদের এমনই এক দাবি, “শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর নন। তিনি যোগযুক্ত হয়ে অর্থাৎ যোগের দ্বারা পরমেশ্বরের সাথে যুক্ত হয়ে ভগবদ্গীতার জ্ঞান প্রদান করেছিলেন”।
অথচ পুরো ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ যে ঠিক কখন যোগযুক্ত হলেন আর কখন তার স্বাভাবিক স্বরূপ(মনুষ্য~অর্বাচীনদের ভাষ্যমতে)-এ ফিরে এলেন তার কোন ইয়ত্তা আমরা খুঁজে পাই না। এই নির্বোধরাও এই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারে না।
সমগ্র গীতায় শ্রীকৃষ্ণ অসংখ্যবার নিজেকে পরমেশ্বর, জীবের অন্তরাত্মা, পরমব্রহ্ম দাবি করেছেন। আবার গুটিকয়েক জায়গায় তিনি পরোক্ষভাবে পরমাত্মা’র শরণ গ্রহণ করার কথাও বলেছেন(গীতাঃ ১৮/৬১-৬২)। এবং এই দুটি শ্লোকের ব্যাখ্যাও আমরা ১ম পর্বে করেছি।
১ম পর্বঃ https://svadharmam.com/krishna-is-the-supreme-personality-of-godhead/
⚫ মূর্খদের দাবি অনুযায়ী যদি ধরেও নেই যে, “শ্রীকৃষ্ণ পরমাত্মার সঙ্গে যোগের দ্বারা যুক্ত হয়ে গীতার জ্ঞান প্রদান করেছিলেন” তবে সেই দাবী অনুযায়ী ১৮/৬১-৬২ শ্লোক বিবেচনা করলে দেখা যায় উক্ত শ্লোক দুটি শ্রীকৃষ্ণ পরমাত্মার সহিত যোগবিযুক্ত অবস্থায় বলেছেন। সেজন্য নিজেকে শুধুই শ্রীকৃষ্ণ ভেবেছেন ও অর্জুনকে পরমাত্মার শরণ গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন ।
কিন্তু পরক্ষণেই আবার ১৮/৬৬ শ্লোকে পরমাত্মার সহিত যোগযুক্ত হয়ে পরমাত্মায় একাত্ম হয়ে গিয়ে (মূর্খমতে) নিজের (পরমেশ্বরের) শরণ গ্রহণ করার কথা বলেছেন।
⚫ তবে কি শ্রীকৃষ্ণ মুহুর্তেই যোগযুক্ত ও বিযুক্ত(যোগমুক্ত) হয়ে যান???
এইসব হাস্যকর, রম্য দাবি শুনে মনে হয় যেন “ইসব হাস্যকর, রম্য দাবি শুনে মনে হয় যেন “শ্রীকৃষ্ণ পরমাত্মার সঙ্গে যোগযুক্ত হওয়ার জন্য যে Internet Connection Providers/Device ব্যবহার করতেন তার সিগন্যাল খুবই দুর্বল ছিল!। তা নাহলে তিনি কখন যে যোগযুক্ত হচ্ছেন (Connected) আর কখন যোগমুক্ত (Disconnected) হচ্ছেন তা বুঝা খুব মুশকিল।”
যদিও ভগবদ্গীতায় কয়েক জায়গায়(১১/৮-৯; ১৮/৭৮) ভগবানকে “যোগেশ্বর” বলা হয়েছে। তা এই পর্বে আলোচনা করা হবে যে, শ্রীকৃষ্ণকে কেন “যোগেশ্বর বলা হয়েছে?”।
দ্রঃ আমরা শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান জ্ঞানে এবং ভগবদ্গীতা’র “ভগবান উবাচ” বলে যত শ্লোক আছে তা স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণেরই মুখনিঃসৃত বিবেচনা করেই মূর্খদের দাবি খণ্ডণ করবো।
————————————————————————————————————————————————
শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত যোগ শক্তির অধীশ্বরঃ
যেহেতু পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অণিমা-মহিমাদি অষ্টসিদ্ধি ও সমস্ত শক্তির প্রবর্তক –
♦মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে; গীতা ১০/৮
~ আমার থেকেই সমস্ত কিছু প্রবর্তিত হয়েছে
তাই শ্রীকৃষ্ণই সমস্ত যোগ শক্তির অধীশ্বর অর্থাৎ যোগেশ্বর।
যেমন শ্রীমদ্ভাগবতের বহু জায়গায় শ্রীকৃষ্ণকে ‘যোগেশ্বর’(১০/১৪/২১, ১/৮/১৪, ১/৮/৪৩), ‘যোগাধীশ’(১০/১৯/১২), ‘যোগবীর্যং’(১০/১৯/১৪) সম্বোধন করা হয়েছে।
————————————————————————————————————————————————
শ্রীকৃষ্ণই সকল জীবের হৃদ্যন্তস্থ পরমাত্মাঃ
যারা অণিমা, মহিমা আদি বিভিন্ন যোগশক্তি লাভের আশায় যম, নিয়ম প্রাণায়াম আদি অষ্টাঙ্গ যোগ অনুশীলন করেন তাঁদেরও অন্তিম লক্ষ্য বিষয়ে উপদেশ প্রদান করে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন–
♦যোগীনামাপি সর্বেষাম মদ্গতেন অন্তরাত্মনা
গীতা ৬/৪৭
~যোগীদের মধ্যে যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধা সহকারে আমার(শ্রীকৃষ্ণের) ভজনা করেন।
♦সর্বস্য চাহং হৃদি সন্নিবিষ্টো
গীতা ১৫/১৫
আমি(শ্রীকৃষ্ণ) সকলের হৃদয়ে অবস্থান করি
তাই সেইসব যোগীদের তথা সকল জীবের হৃদয়ে অবস্থিত অন্তরাত্মা শ্রীকৃষ্ণই।
————————————————————————————————————————————————
শ্রীকৃষ্ণই যোগেশ্বরেশ্বরঃ
অনেক সময় সিদ্ধ যোগী(কর্দম মুনি, শুকদেব গোস্বামী) বা পরমেশ্বর ভগবানের শক্ত্যাবেশ অবতার(নারদ, ব্যসদেব, পরশুরাম) অথবা ভগবানের শুদ্ধভক্ত(যাঁরা ইতিমধ্যেই ব্রহ্মভূত স্তর প্রাপ্ত হয়েছেন) তাঁদের ক্ষেত্রেও (ভক্তিযোগেন, সেবতে…..ব্রহ্মভূয়ায়, কল্পতে; গীতাঃ১৪/২৬) “যোগেশ্বর” সম্বোধন ব্যবহৃত হয়। কারণ তাঁরা বিশেষ কার্যসিদ্ধির জন্য পরমেশ্বরের দ্বারা কৃপাপ্রাপ্ত।
তাই তাঁরাও পরমেশ্বরের অনন্ত যোগশক্তির ক্ষীয়োদংশ প্রতিফলিত করেন। যেমন শ্রীমদ্ভাগবতের তৃতীয় স্কন্ধে বর্ণিত আছে যে, কর্দম মুনি নিজেকে নয়টি রূপে বিভক্ত করেছিলেন।
আবার কখনও শিব, ব্রহ্মা আদি মহান দেবতাদেরকেও মহান যোগী, পরম যোগী, যোগেশ্বর বলা হয়। কেননা তাঁরাও নিরন্তর শ্রীহরির ধ্যানে মগ্ন থাকেন।
কপর্দ্দী জটীলো মুণ্ডঃ শ্মশানগৃহসেবকঃ॥
উগ্রব্রতধরো রুদ্রো যোগী পরমদারুণঃ।
দক্ষক্রতুহরশ্চৈব ভগনেত্রহরস্তথা॥
নারায়ণাত্মকো জ্ঞেয়ঃ পাণ্ডবেয় যুগে যুগে॥
মহাভারত, শান্তিপর্ব ৩২৭।১৮-২১
অনুবাদ: যিনি বিশাল জটাজুটযুক্ত, শ্মশানবাসী, কঠোরব্রতপরায়ণ, পরমযোগী রুদ্র যিনি দক্ষযজ্ঞ নাশ করেছিলেন, ভগের চোখ উৎপাটন করেছিলেন তিনি নারায়ণের অংশস্বরূপ।
দিষ্ট্যা জনার্দন ভবানিহ নঃ প্রতীতো
যোগেশ্বরৈরপি দুরাপগতিঃ সুরেশৈঃ।
শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৪৮/২৭
অনুবাদঃ হে জনার্দন, আমাদের মহা সৌভাগ্যের দ্বারা এখন আপনি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছেন, কারণ যোগেশ্বরগণ এবং দেবেন্দ্রগণও অতি কষ্টের দ্বারা কেবল এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন।
তাই পরমেশ্বর ভগবান এই সমস্ত যোগেশ্বরগণেরও ঈশ্বর। যেমনটা বলা হচ্ছে শ্রীমদ্ভাগবতমে—
ন চৈবং বিস্ময়ঃ কার্যো ভবতা ভগবত্যজে।
যোগেশ্বরেশ্বরে কৃষ্ণে যত এতদ্বিমুচ্যতে ॥
শ্রীমদ্ভাগবত ১০/২৯/১৬
অনুবাদঃ জন্মরহিত যোগেশ্বরেশ্বর পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধে তোমার বিস্মিত হওয়া উচিত নয়। শেষ পর্যন্ত এই ভগবানই জগতকে মুক্তি প্রদান করেন।
বীক্ষ্য তান্ বৈ তথাভূতান্ কৃষ্ণো যোগেশ্বরেশ্বরঃ।
ঈক্ষয়ামৃতবর্ষিণ্যা স্বনাথান্ সমজীবয়ৎ ॥
শ্রীমদ্ভাগবত ১০/১৫/৫০
অনুবাদঃ সেই যোগেশ্বরগণেরও ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণ সেই সমস্ত ভক্তদের প্রতি অনুকম্পা অনুভব করেছিলেন। এভাবেই তিনি তাঁদের প্রতি তাঁর অমৃতবৎ কৃপাদৃষ্টি বর্ষণের দ্বারা তৎক্ষণাৎ তাঁদের পুনর্জীবিত করেছিলেন।
নাসাং দ্বিজাতিসংস্কারো ন নিবাসো গুরাবপি।
ন তপো নাত্মমীমাংসা ন শৌচং ন ক্রিয়াঃ শুভাঃ ।
তথাপি হু্যত্তমঃশ্লোকে কৃষ্ণে যোগেশ্বরেশ্বরে।
ভক্তির্দৃঢ়া ন চাম্মাকং সংস্কারাদিমতামপি ॥
শ্রীমদ্ভাগবত ১০/২৩/৪৩-৪৪
অনুবাদঃ এই নারীগণের কখনও উপনয়নাদি সংস্কার হয়নি, তারা ব্রহ্মচারীরূপে গুরুর আশ্রমে বাস করেনি, তারা কোনও তপশ্চর্যার অনুষ্ঠান করেনি, তারা আত্মার বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে বিচার-বিশ্লেষণ করেনি, শৌচাচার অথবা পুণ্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেও যুক্ত নয়, তবুও উত্তমশ্লোক ও যোগেশ্বরেরও ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তাদের দৃঢ় ভক্তি রয়েছে। পক্ষান্তরে, এই সমস্ত প্রক্রিয়ার অনুষ্ঠান করেও ভগবানের প্রতি আমাদের এরূপ ভক্তি নেই।
যুধিষ্ঠির উবাচ
কিং ন আচরিতং শ্রেয়ো ন বেদাহমধীশ্বর।
যোগেশ্বরাণাং দুর্দর্শো যন্নো দৃষ্টঃ কুমেধসাম্ ॥
শ্রীমদ্ভাগবত: ১০/৫৮/১১
অনুবাদঃ
রাজা যুধিষ্ঠির বললেন-হে অধীশ্বর, আমি জানি না, আমরা মূর্খেরা কোন্ পুণ্যকর্ম করেছি যার ফলে যোগেশ্বরগণেরও দুর্লভদর্শন আপনাকে আমরা দর্শন করতে পারছি।
নৃগ রাজার প্রার্থনা
সত্বং কথং মম বিভোেহক্ষিপথঃ পরাত্মা
যোগেশ্বরৌঃ শ্রুতিদৃশামলহৃদ্বিভাব্যঃ ।
সাক্ষাদধোক্ষজ উরুব্যসনান্ধবুদ্ধেঃ
স্যান্মেহনুদৃশ্য ইহ যস্য ভবাপবর্গঃ ৷৷
শ্রীমদ্ভাগবত: ১০/৬৪/২৬
অনুবাদঃ
হে সর্বশক্তিমান, এখানে আমার সামনে আমার দু’নয়ন আপনাকে দর্শন করছে, এটা কিভাবে সম্ভব হল? আপনি পরমাত্মা, যাকে মহা-যোগেশ্বরগণ তাঁদের শুদ্ধ-অন্তরে কেবলমাত্র চিন্ময় বেদনয়নের মাধ্যমেই ধ্যান করেন। তা হলে, হে অধোক্ষজ, জাগতিক জীবনের দুঃসহ দুর্বিপাকে আমার বুদ্ধি অক্ষম হয়ে পড়লেও কিভাবে আপনি প্রত্যক্ষরূপে আমার দৃষ্টি গোচর হলেন? যিনি এই পৃথিবীতে তাঁর জড় জাগতিক বন্ধন ছিন্ন করেছেন, কেবলমাত্র তিনিই তো আপনাকে দর্শনে সমর্থ হন।
———————————————————————————————————————————————–
অনেকেই আবার মনে করেন “শ্রীকৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর গীতার জ্ঞান ভুলে গিয়েছিলেন। তাই তিনি পুনরায় যোগযুক্ত হয়ে “অনুগীতা” প্রদান করেছিলেন।”
এর খণ্ডন/উওর দেওয়া হয়েছে
লিংকঃ https://svadharmam.com/does-krishna-forgot-the-transendental-knowledge/
————————————————————————————————————————————————
শ্রীকৃষ্ণের চেয়ে উত্তম যোগী কেউ নেইঃ
যেহেতু পরম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ এই জগতে ধর্ম সংস্থাপনের জন্য যুগে যুগে অবতরণ করেন তাই তিনি লোকশিক্ষার জন্য (যদ্ যদাচরতি শ্রেষ্ঠ, গীতাঃ৩/২১) বহুবিধ যাগ-যজ্ঞ, তপস্যা, বিদ্যানুশীলন, গুরুগ্রহণ ও নানা সামাজিক অনুষ্ঠান করেন। এবং যেহেতু তাঁর আরেক নাম অসমোর্ধ তাই তিনি যে আচরণই করেন না কেন তা নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ।
তাই তিনি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ বন্ধু, শ্রেষ্ঠ সন্তান, শ্রেষ্ঠ শিষ্য এবং শ্রেষ্ঠ যোগীও।
কৃষ্ণ কৃষ্ণ মহাযোগিন্ বিশ্বাত্মন্ বিশ্বভাবন।
প্রপন্নাং পাহি গোবিন্দ শিশুভিশ্চাবসীদতীম্ ৷৷
শ্রীমদ্ভাগবত ১০।৪৯।১১
অনুবাদঃ কৃষ্ণ, কৃষ্ণ। হে পরম যোগী! হে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পরমাত্মা ও রক্ষক। হে গোবিন্দ! দয়া করে আপনার শরণাগত আমাকে রক্ষা করুন।
সর্বং নরবরশ্রেষ্ঠৌ সর্ববিদ্যাপ্রবর্তকৌ।
সকৃন্নিগদমাত্রেণ তৌ সঞ্জগৃহতুনূপ ॥
শ্রীমদ্ভাগবত ১০।৪৫।৩৫
অনুবাদঃ হে রাজন, সেই পুরুষ শ্রেষ্ঠ কৃষ্ণ ও বলরাম, তাঁরা স্বয়ং সকল প্রকার জ্ঞানের আদি উদ্দ্গাতা হওয়ায় প্রতিটি বিষয়ের ব্যাখ্যা একবার মাত্র শ্রবণ করেই তৎক্ষণাৎ সেই বিষয়সমূহ আয়ত্ত করছিলেন।
নমঃ কৃষ্ণায় শুদ্ধায় ব্রহ্মণে পরমাত্মনে ।
যোগেশ্বরায় যোগায় ত্বামহং শরণং গতা ॥
শ্রীমদ্ভাগবত ১০।৪৯।১৩
অনুবাদঃ পরম শুদ্ধ, পরম ব্রহ্ম ও পরমাত্মা, যোগেশ্বর ও সকল জ্ঞানের উৎস স্বরূপ হে কৃষ্ণ, আমি আপনাকে প্রণাম নিবেদন করি। আপনার কাছে আশ্রয়ের জন্য আমি উপস্থিত হয়েছি
————————————————————————————————————————————————
তবে যেহেতু তাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ আর কোন বস্তু নেই এবং সাধারণ জীবের মতো তাঁর অন্তরে অন্য কোন পরমাত্মা নেই তাই তিনি নিজেরই ধ্যান করেন।
(বসুদেব কর্তৃক শ্রীকৃষ্ণের স্তব)
অনাবৃতত্বাদ বহিরন্তরং ন তে
সর্বস্য সর্বাত্মন আত্মবস্তুনঃ।।
শ্রীমদ্ভাগবতঃ ১০/৩/১৭
অনুবাদঃ আপনি বাহ্য ও অন্তরশূন্য। আপনি কখনও দেবকীর গর্ভে প্রবেশ করেননি; পক্ষান্তরে, আপনি পূর্বেই সেখানে বিদ্যমান ছিলেন।
দেহদেহিবিভাগােহয়ং নেশ্বরে বিদ্যতে ক্বচিৎ
কূৰ্ম্মপুরাণ ৫/৩/৪২
অনুবাদঃ পরমেশ্বরের দেহ ও দেহী(আত্মা) তে কখনও কোন পার্থক্য নেই। অর্থাৎ, তাঁর দেহ জড় নয়। দেহ ও আত্মা উভয়ই জড়াতীত বিশুদ্ধ চিন্ময় তত্ত্ব(সচ্চিদানন্দ)।
————————————————————————————————————————————————
পরিশেষে যোগেশ্বরেশ্বর পরম পূর্ণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সাধারণ যোগী বানানোতে ব্যস্থ যেসকল অর্বাচীন মূর্খ অনলাইনে এসব মনগড়া তত্ত্ব প্রচার করে তাদের কথায় কান না দিয়ে জগতের হিতকারী বিশ্বগুরু, প্রামাণিক আচার্যরা “যোগেশ্বর” শব্দের কি অর্থ করেছেন তা-ই দেখব।
শ্রীমধ্বাচার্য – সর্বযজ্ঞভাগহারিত্বাৎ(সমস্ত যজ্ঞভাগ হরণকারী অথবা অধিকারী)~গীতা ১১/৯
শ্রীরামানুজাচার্য – সর্বেষাম যোগানাম্ ঈশ্বর(সমস্ত যোগ সমূহের ঈশ্বর)~গীতা ১৮/৭৮
শ্রীশঙ্করাচার্য – সর্ব যোগানাম্ ঈশ্বর(সকল যোগের ঈশ্বর)~গীতা ১৮/৭৮
————————————————————————————————————————————————
তাই আসুন, সেই পরমাত্মা, পরমব্রহ্ম, যোগেশ্বর, যোগেশ্বরেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তত্ত্বত জানি, যাঁকে জানলে সমস্ত কিছুকেই হৃদয়ঙ্গম করা যায়।
কস্মিন্ ভগবোবিজ্ঞাতে সর্বম্ ইদং বিজ্ঞাতং ভবতি
মুণ্ডক উপনিষদ(১/৩)
————-
নমস্তে সর্বভাবায় ব্রহ্মণেহনন্তশক্তয়ে।
কৃষ্ণায় বাসুদেবায় যোগানাং পতয়ে নমঃ ॥
শ্রীমদ্ভাগবত ১০।৬৪।২৯
অনুবাদঃ
বসুদেব পুত্র শ্রীকৃষ্ণ, আপনাকে আমি বারম্বার আমার প্রণতি নিবেদন করি। আপনি সকল জীবের উৎস, পরম ব্রহ্ম, অনন্ত শক্তিরাশির অধিকারী, যোগের সকল পন্থার অধীশ্বর।
হরে কৃষ্ণ।
Hare Krishna🙏🙏🙏
Horibol