মুর্খের দৃষ্টিতে শ্রীকৃষ্ণ সাধারন মানুষ কিন্তু জ্ঞানীর দৃষ্টিতে শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবানঃ

IMG-20250619-WA0002

সমগ্র বিশ্বব্রহ্মান্ডের কে পরমেশ্বর ভগবান, তার বর্ণনা আমরা সনাতনী বেদ বা শ্রুতি,পুরাণ, মহাভারত আদি শাস্ত্র থেকে জানতে পারি।শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর ভগবান এ বিষয়টি যেমন বেদ বা শ্রুতিতে বর্ণিত আছে, তেমনই মহাভারত,অষ্টাদশ পুরাণ, গীতা আদি শাস্ত্রে বর্ণিত আছে। সমগ্র মহাভারত শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবিষ্ণু বলা হয়েছে।

অনুগ্রহার্থং লোকানাং বিষ্ণু লোক নমস্কৃতঃ।

 বসুদেবাত্তু দেবক্যাং প্রাদুর্ভূতো মহাযশাঃ।।

-(মহাভারত, আদিপর্ব ৫৮/১৩৮)

অনুবাদঃ ত্রিজগতের পূজনীয় মহাযশস্বী স্বয়ং বিষ্ণু লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য বসুদেব-দেবকীতে আবির্ভূত হইয়াছিলেন৷

শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩/৯-১০ শ্লোকে দেখানো হয়েছে, শ্রীকৃষ্ণ দেবকীর গর্ভ থেকে চতুর্ভুজ অদ্ভুত এক বালক রুপে আবির্ভুত হয়েছেন, এবং দেবকীর প্রার্থনায় শ্রীকৃষ্ণ পুনরায় তার আদি চিন্ময় দ্বিভুজ রুপে পরিনত হলেন।

তমদ্ভুতং বালকমম্বুজেক্ষণ চতুর্ভুজং শঙ্খগদাদ্যুদায়ুধম্।

– (শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩/৯)

অনুবাদঃ বসুদেব তখন দেখলেন যে,সেই নবজাত শিশুটির চার হাতে শঙ্খ,চক্র,গদা এবং পদ্ম

তাছাড়া ভগবদগীতা শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণ নিজের মুখে বর্ণনা করেন তিনি হলেন পরমেশ্বর ভগবান।তিনি আরো বর্ণনা করেন, ব্রহ্মা,নারদ,ব্যাসদেব ইত্যাদি জ্ঞানীগণ তাঁকে পরমেশ্বর ভগবান রুপে জেনে তাঁর ভজনা করেন।

অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বম প্রবতর্তে
ইতি মত্বা ভজন্তে মাং বুধা ভাব সমন্বিতা

-( গীতা ১০/৮)

অনুবাদঃ আমিই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা,সবকিছু আমার থেকে সৃষ্টি হয়েছে।এরুপ জেনে জ্ঞানীরা আমার ভজনা করেন।

মহান জ্ঞানীরুপে ব্রহ্মাজী ব্রহ্মসংহিতায় বর্ণনা করছেন,শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান।

ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ। অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্ব্বকারণকারণম্।।”

-(ব্রহ্মসংহিতা৫/১ঃ ব্রহ্মা)

অনুবাদঃকৃষ্ণ পরম ঈশ্বর। তিনি সচ্চিদানন্দবিগ্রহ। তিনি অনাদি ও আদি। কেননা তিনিই সর্ব্ব কারণের কারণ, তিনিই গোবিন্দ।

শ্রীমদ্ভাগবতে মহান জ্ঞানীরুপে মহাদেব শিব ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পরমব্রহ্ম অথাৎ পরমেশ্বর ভগবান শব্দে সম্বোধন করলেন।

 ত্বং হি ব্রহ্ম পরং জ্যোতিগূঢ়ং ব্রহ্মনি বাঙ্ময়ে।
যং পশ্যন্ত্যমলাত্মান আকাশমিব কেবলম।।

-(শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ১০/৬৩/৩৪)

অনুবাদঃ হে শ্রীকৃষ্ণ!আপনিই একমাত্র পরম ব্রহ্ম,পরম জ্যোতিস্বরুপ,শব্দব্রহ্মে গূঢ়ভাবে অবস্থিত পরম তত্ত্ব, যাদের হৃদয় নির্মল,তারাই আকাশের মতো শুদ্ধস্বরুপ আপনাকে দর্শন করতে পারে।

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শাস্ত্রে অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে পরমব্রহ্ম অথাৎ পরমেশ্বর ভগবান শব্দে সম্বোধন করলেন।সেইসাথে তিনি শ্রীকৃষ্ণকে আরো বললেন, দেবর্ষি নারদ, অসিত, দেবল, ব্যাস আদি মহান মুনি ঋষিরা বা জ্ঞানীগণ তোমাকে পরমেশ্বর ভগবানরুপে বর্ণনা করেছেন এবং তুমি নিজেও এখন আমাকে তা বলছ।

পরং ব্রহ্ম পরং ধাম পবিত্রং পরমং ভবান।

পুরুষং শাশ্বতং দিব্যমাদিদেবমজং বিভুম।।

আহুস্ত্বামৃষয়ঃ সর্বে দেবর্ষির্নারদস্তথা।

অসিতো দেবলো ব্যাসঃ স্বয়ং চৈব ব্রবীষি মে।।

-(গীতা ১০/১২-১৩)

অনুবাদঃ  তুমি(শ্রীকৃষ্ণ)  পরমব্রহ্ম অর্থাৎ পরমেশ্বর ভগবান, পরম আশ্রয়,পরম পবিত্র ও পরম পুরুষ। তুমি নিত্য, দিব্য,আদি দেব, অজ ও বিভু। দেবর্ষি নারদ, অসিত, দেবল, ব্যাস আদি মহান মুনি ঋষিরা তোমাকে পরমেশ্বর ভগবানরুপে বর্ণনা করেছেন এবং তুমি নিজেও এখন আমাকে তা বলছ।

শ্রীমদ্ভাগবতে মহান জ্ঞানীরুপে ভীষ্মদেব পঞ্চপান্ডবদের শিক্ষা দিচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ হলেন সাক্ষাৎ ভগবান। তিনি হলেন আদি নারায়ন।

এষ বৈ ভগবান সাক্ষাদাদ্যো নারায়ন পুমান।

মোহয়ন্মায়য়া লোকং গূঢ়শ্চতি বৃষ্ণিষু।।

-(শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ১/৯/১৮)

অনুবাদঃ তোমাদের সাথে দন্ডায়মান এই কৃষ্ণ সাক্ষাৎ ভগবান, তিনি আদি নারায়ন। কিন্তু তিনি তার নিজের সৃষ্ট মায়া শক্তির প্রভাবে আমাদের মুগ্ধ করে বৃষ্ণিকূলের একজনের মত হয়ে আমাদের মাঝে বিচরন করছেন।

কিন্তু তারপরও একদল মূর্খ, সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলা হলেও অথবা সনাতনী শাস্ত্রে পূ্র্বতন নারদ, ব্যাস, ভীষ্ম,শিব,ব্রহ্মা আদি মহাত্মা,মহাজন, ঋষি ইত্যাদি  জ্ঞানীদের উপদেশ শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান, পরমব্রহ্ম, পরমাত্মা, তা গ্রহণ না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে যে, শ্রীকৃষ্ণ হলেন তাদের মতোই একজন সাধারন মানুষ,তিনি কখনো পরমেশ্বর ভগবান হতে পারেন না।এদের সম্পর্কে পূর্ব থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জানতেন,তাই ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন-

 অবজানন্তি মাং মূঢ়া মানুষীং তনুমাশ্রিতম
পরং ভাবম অজানন্তো মম ভূত মহেশ্বরম।।

-(গীতা ৯/১১)

শব্দার্থঃ অবজানন্তি- অবজ্ঞা করে,মাম- আমাকে,মূঢ়া-মূর্খব্যাক্তিরা,মানুষীম-মনুষ্যরুপে,
তনুম-শরীর,আশ্রিতম- ধারন করি,পরম- পরম,ভাবম-তত্ত্ব,অজানন্ত- না জেনে,মম- আমার,ভূত- সব কিছুর/সমস্ত সৃষ্টির ,মহেশ্বরম- মহান ঈশ্বর।

অনুবাদঃ আমি যখন মনুষ্যরুপে অবতীর্ণ হই, তখন মূর্খেরা আমাকে অবজ্ঞা করে।তারা আমার পরম ভাব সমন্ধে অবগত নয়।তাই তারা আমাকে সমস্ত সৃষ্টির মহান ঈশ্বর রুপে জানে না।

 

হরে কৃষ্ণ।প্রনাম

 

Sadgun Madhav Dash

Writer & Admin

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments