সোমবারে একাদশী: হরি-হরের অনন্ত কৃপা

20241028_211954

সোমবারে একাদশী: হরি-হরের অনন্ত কৃপা

চারটি কারণে একাদশী একটি নিত্য ব্রত। যথা,
১. শ্রী হরির সন্তোষ
২. শাস্ত্রের নির্দেশ
৩. নিষিদ্ধ আহার ত্যাগ
৪. ব্রত না করলে অপরাধ
এই চারটি কারণে একাদশী সকলেরই কর্তব্য। সমস্ত শাস্ত্রে এই সিদ্ধান্ত রয়েছে যে, কেবল বৈষ্ণব নয়, সমস্ত নারী-পুরুষ তথা শৈব, শাক্ত, গাণপত্য, সৌর সকলেরই একাদশী যত্নসহকারে পালনীয়‌ উদাহরণস্বরূপ, বিষ্ণু ভক্ত কুন্তীদেবী ও শিবভক্ত গান্ধারী উভয়েরই যত্নসহকারে একাদশী পালনের উল্লেখ বিদ্যমান। এমনকি একাদশী বৈকুণ্ঠেও পালন করতে হয়। এই একাদশী তিথি মহাদেব শিবের অত্যন্ত প্রিয়। তিনি শাস্ত্রে বহু স্থানে একাদশীর মহিমা ব্যক্ত করেছেন।

.

নারদীয় পুরাণে, ও পদ্মপুরাণে মহাদেব শিবের একই উক্তিতে একাদশীতে উপবাসের নির্দেশ রয়েছে-

রটন্তীহ পুরাণানি ভূয়ো ভূয়ো বরাননে।

না ভোক্তব্যং না ভোক্তব্যং সম্প্রাপ্তে হরিবাসরে॥

[ হরিভক্তিবিলাস ১২।১২, পদ্মপুরাণ উক্তি]

অনুবাদ:
হে পার্বতী, সমস্ত শাস্ত্রে বার বার একাদশীতে অন্নভোজন না করার নির্দেশ রয়েছে।

.

স্কন্দপুরাণে উমা দেবীকে মহাদেব বলছেন-

মাতৃহা পিতৃহা চৈব ভ্রাতৃহা গুরুহা তথা।

একাদশ্যাস্তু যো ভূঙ্ক্তে বিষ্ণুলঝচ্চ্যুতো ভবের॥

[ হরিভক্তিবিলাস ১২।২১, স্কন্দপুরাণ উক্তি]

অনুবাদ:
যারা একাদশী পালন করে না, তারা মাতা, পিতা, গুরু, ভ্রাতা সকলের হত্যার পাপ লাভ করে। এমনকি অচ্যুতধাম বৈকুণ্ঠেও একাদশীতে অন্নভোজন করলে পতন ঘটে।

এই নির্দেশ হল মানুষের জন্য। তাই সকলেরই যত্নসহকারে একাদশী পালন করা উচিত।

একাদশী ও সোমবার মহাদেবের উভয়ই প্রিয় তাই যদি কখনো একাদশী ও সোমবার একই দিবসে ঘটে, তবে তা শ্রী শিবের অত্যন্ত প্রীতিকর। তাই যারা মহাদেবের উপাসক, তাদের উচিত এই দিন আরো যত্নসহকারে একাদশী পালন করা। এবং কখনো একাদশী বর্জন করা উচিত নয়। কেননা প্রভু শিব বলেছেন, ” আমার ভক্ত হয়ে যে একাদশী তিথিতে ভোজন করে, সেই পাপ বুদ্ধি যেন আমার লিঙ্গ পূজা না করে। কারণ- যে তিথি বিষ্ণুপ্রিয়া, তাহা নিশ্চিতভাবে আমার প্রিয়, সে তিথিতে যে উপবাস না করে, সে মহাপাপী।”

[ স্কন্দপুরাণ,প্রভাসখণ্ডে প্রভাসক্ষেত্রমাহাত্ম্যম্, ৩৫২।২৮-২৯ ]

মদ্ভক্তোহপি হি যো ভূত্বা ভুঙক্ত একাদশীদিনে।

মল্লিঙ্গস্যার্চ্চনং কার্য্যং ন তেন পাপবুদ্ধিনা।।

যা তিথির্দয়িতা বিষ্ণোঃ সা তিথির্ম্মম বল্লভা।

ন তাং চোপীষয়েদযস্তু স পাপিষ্ঠতারাধিকা।।

এমনকি একাধিক ব্রত উপস্থিত হলে সর্বাগ্রে একাদশী ব্রত কে প্রাধান্য দিতে হয়।  যিনি একাদশী বাদ দিয়ে অন্য ব্রত পালন করেন, তিনি যেন অমৃত ছেড়ে বিষ গ্রহণ করলেন, এভাবে কড়াভাবে বলা আছে শাস্ত্রে। তাই একাদশী অবশ্যই পালন করতে হবে।
.
এ সম্পর্কে পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে-

একাদশীসমং কিঞ্চিৎ পাপত্রাণং ন বিদ্যতে।

একাদশীসমং কিঞ্চিদ্ ব্রতং নাস্তি শুভেক্ষণে ॥৮

একাদশীং পরিত্যজ্য যো হ্যন্যদ্ ব্রতমাচরেৎ।

স করস্থং মহারাজ্যং ত্যক্ত্বা ভৈক্ষ্যন্ত্ত যাচতে ॥৯

[পদ্মপুরাণ, উত্তরখণ্ড, ২৩৪।৮-৯]

অনুবাদ:
শিব বললেন, “একাদশীর তুল্য উত্তমব্রতও আর কোনো নেই; যে মানব একাদশী পরিত্যাগ করে অন্য ব্রতাচরণ করে, হে শুভেক্ষণে! সে যেন হাতের কাছে মহারাজ্য পরিত্যাগ করে ভিক্ষাযাচ্ঞা করে।”

স্কন্দপুরাণে মহাদেব আরো বলেছেন, যদি কোনো বর্ণাশ্রম পালনকারী, তীর্থভ্রমণকারী, শৈব, সৌর বা অন্যদেবোপাসক প্রমাদবশত একাদশী পালন না করে, তার বর্ণাশ্রম নিষ্ফল, তীর্থ নিষ্ফল, শিবাজি দেবতার পূজাও নিষ্ফল‌। কেননা তাকে আর ঐসব বলে গণ্য করা যায় না।

অতএব সকলেরই কর্তব্য পরম ভক্তি সহকারে প্রতিটি একাদশী পালন করা‌। এর মধ্যে শিবের উপাসকগণের সোমবারে একাদশী আরো যত্নসহকারে পালন করা উচিত, শিবব্রতের কারণে সোমবারে একাদশী পরিত্যাগ করা উচিত নয়।

।। হরে কৃষ্ণ ।।

[ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ]

নিবেদক-
° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

Avatar of Madhura Gaurakiśora Dās

Madhura Gaurakiśora Dās

Writer & Admin

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments