হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র সমন্ধে সনাতনী কোন কোন শাস্ত্রে বর্ণিত আছে???

20240715_230037

শ্রুতি, স্মৃতি, ইতিহাস, পঞ্চরাত্র ও পুরাণাদি শাস্ত্র নিয়েই সনাতন ধর্ম। সনাতন ধর্মের আদি ধর্মগ্রন্থ বেদ। বেদের চারটি বিভাগ – সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ। বেদের এ চারটি বিভাগকে একত্রে বেদ বা শ্রুতি বলা হয়। সংহিতা চার প্রকার -ঋগ্বেদ সংহিতা, সামবেদ সংহিতা, যজুর্বেদ সংহিতা এবং অথর্ববেদ সংহিতা। সংহিতার পর বেদের আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো ব্রাহ্মণ এবং আরণ্যক। বেদের সর্বশেষ বিভাগ হলো উপনিষদ।

সনাতন ধর্মের সমগ্র শাস্ত্রেই হরিনাম বা কৃষ্ণনাম বা হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। ঋগ্বেদ সংহিতায় ১ মন্ডল, ১৫৬ সূক্তের, ৩ নং মন্ত্রে উল্লেখ রয়েছে,“আস্য জানন্তো নাম চিদ্বিবক্তন মহস্তে বিষ্ণো সুমতিং ভজামহে।। অর্থাৎ বিষ্ণুর চিন্ময় নামসমূহ জেনে কীর্তন করণীয়। হে মহান বিষ্ণু, সুমেধাসম্পন্ন লোকে এভাবে তোমাকে ভজনা করে।”

শাস্ত্রে কলিকালে যত হরি নাম কীর্তনের কথা বলছে সবগুলোই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রকে নির্দেশ করে। প্রথমত ‘হরে’ শব্দের আধিক্যজনিত কারণে এটি হরিনাম মন্ত্র। শাস্ত্রে যেখানে যেখানে ‘হরের্নাম হরের্নাম হরের্নাম’ কিংবা ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ’ কিংবা ‘রাম রাম রাম’ নাম জপ করতে বলছে সবগুলোই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রকে নির্দেশ করে ‘সর্ববেদান্ত প্রত্যয় ন্যায়’ বাক্যের আলোকে। সর্ববেদান্ত প্রত্যয় ন্যায় দ্বারা বুঝায় দুই স্থানে যদি ভিন্ন নামে একই পরিণাম বুঝায়, তবে বুঝতে হবে জিনিস দুইটা একই। যেমন শাস্ত্রে বলছে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করলে মুক্তি মিলবে। আবার বলছে হরের্নাম হরের্নাম হরের্নাম করলে মুক্তি মিলবে। তাই দুইটা দ্বারা একই মন্ত্রকে নির্দেশ করছে, যেটা শ্রুতিতে উল্লেখ আছে অর্থাৎ ১৬ নাম ৩২ অক্ষরী মন্ত্রকে। মহামন্ত্রের ৭,৮,৯ নং নাম ‘হরে হরে হরে’, ৪,৫,৬ নং নাম কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ এবং ১২,১৩,১৪ নং নাম রাম রাম রাম অতএব ‘হরের্নাম হরের্নাম হরের্নাম’, ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ’, ‘রাম রাম রাম’ এগুলো দ্বারা হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রকেই নির্দেশ করে।একইভাবে শাস্ত্রে যেখানে যেখানে ‘হরি হরি’, ‘রাম রাম’, ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ’ অর্থাৎ যুগল নামের মাহাত্ম্য বলছে ওগুলোতেও মহামন্ত্রকেই নির্দেশ করে।

আসুন আমরা দেখি সমগ্র সনাতন শাস্ত্রে কোথায় কোথায় হরিনাম বা হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে।

  • শ্রুতি শাস্ত্র প্রমাণ:

শুক্ল-যজুর্বেদীয় মুক্তিকোপনিষদে ১।২৭-৩৬ নং মন্ত্রে ঈশ,কেন, কঠ,কলির্সন্তরণ, মুক্তিকোপনিষদ ইত্যাদি ১০৮ টি উপনিষদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্তিকোপনিষদ ১।৫৩ নং মন্ত্র অনুসারে কলির্সন্তরণ উপনিষদ হলো কৃষ্ণ-যজুর্বেদের অন্তর্গত। কৃষ্ণ-যজুর্বেদীয় কলির্সন্তরণ উপনিষদ তথা শ্রুতিতে সরাসরি কলিযুগের একমাত্র মুক্তির পথ হিসেবে হরেকৃষ্ণ মন্ত্রটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

( কৃষ্ণ-যজুর্বেদীয় কলিসন্তরণ উপনিষদ মন্ত্র ২ )-

নারদঃ পুনঃ পপ্রচ্ছ তন্নাম কিমিতি। সহোবাচ হিরণ্যগর্ভঃ। হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। ইতি ষোড়শকং নাম্নাং কলিকল্মষনাশনম্। নাতঃ পরতরোপায়ঃ সর্ববেদেষু দৃশ্যতে ষোড়শকলাবৃতস্য জীবস্যাবরণবিনাশনম। ততঃ প্রকাশতে পরং ব্রহ্ম মেঘাপায়ে রবিরশ্মিমণ্ডলীবেতি।।২।।

বঙ্গানুবাদ:
তখন নারদজী পুনঃ প্রশ্ন করলেন সেই নাম কি? তখন হিরণ্যগর্ভ ব্রহ্মাজী বললেন, হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। এই প্রকার ষোল নাম বত্রিশ অক্ষর মন্ত্র কলিযুগে সমস্ত দোষ নাশ করে। চারিবেদে এরচেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো উপায় নেই। এই ষোলো অক্ষর মন্ত্র উচ্চারনে জীবের ষোড়শকলা যুক্ত আবরণ বিনষ্ঠ হয়। বৃষ্টির পর যেমন মেঘ কেটে গিয়ে সূর্যরশ্মি প্রকাশিত হয় তেমন জীবও পরমব্রহ্মকে জানতে পারে।

Shuvo 20240802 033043 Svadharmam

 

  • ইতিহাস শাস্ত্র প্রমাণ:

ছান্দোগ্য উপনিষদ ৭।১।২ মন্ত্রে, ইতিহাস শাস্ত্রকে পঞ্চম বেদ বলা হয়েছে, “ইতিহাসপুরাণং পঞ্চমং বেদানাং”। রামায়ণ এবং মহাভারত এ দুটি শাস্ত্রকে সনাতন ধর্মে ইতিহাস শাস্ত্র বলা হয়। মহাভারতে যুধিষ্ঠির মহারাজকে কৃষ্ণনাম জপ করার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ প্রদান করেন

( মহাভারত, শান্তিপর্ব ২০৪।৭৭ )-

ভীষ্ম উবাচ-
এতত্তে কথিতং রাজন্ ! বিষ্ণুতত্ত্বমনুত্তমম্ ।
ভজস্বৈনং বিশালাক্ষং জপন্‌ কৃষ্ণেতি সত্তম !।।

বঙ্গানুবাদ:
ভীষ্ম বলিলেন—’সাধুশ্রেষ্ঠ রাজা ! এই আমি তোমার নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ বিষ্ণুতত্ত্ব বলিলাম। তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ নাম- কৃষ্ণ নাম জপ করিতে থাকিয়া এই বিশালনয়ন কৃষ্ণের সেবা কর

Shuvo 20240802 010845 Svadharmam

 

( মহাভারত, দ্রোণপর্ব ৮৩।১৮ )-

নমস্তে দেবদেবেশ সনাতন বিশাতন।
বিষ্ণো জিষ্ণো হরে কৃষ্ণ বৈকুন্ঠ পুরুষোত্তম।। ১৮

বঙ্গানুবাদ:
হে বিষ্ণু! হে জিষ্ণু! হে হরে কৃষ্ণ! হে বৈকুন্ঠ! হে পুরুষোত্তম! তুমি দেবতাদের দেবতা শিবেরও ঈশ্বর, তুমিই সনাতন, তুমিই বিশাতন, তোমাকে নমস্কার।

Shuvo 20240802 140230 Svadharmam

( মহাভারত,হরিবংশপুরাণম্, পর্ব ৩ ( ভবিষ্যপর্ব ) ১০১।১৫ )-

যদি শক্তো হরে কৃষ্ণ দারযেদং মহাস্পদম্ ।
ইত্যুক্ত্বা তচ্ছতগুণং ভ্রামযিত্বা মহাবলঃ।।

বঙ্গানুবাদ:
আপনি যদি পারেন, হে ভগবান হরে কৃষ্ণ, এই মহতী অস্ত্র ছিন্ন করুন। এ বলে মহাবলশালী পন্ড্রক তা শতবার ঘুরিয়ে নিক্ষেপ করলেন।

Shuvo 20240802 140948 Svadharmam

( মহাভারত,হরিবংশপুরাণম্, পর্ব ৩ ( ভবিষ্যপর্ব ) ৮২।৪৩ )-

নমো নমো হরে কৃষ্ণ যাদবেশ্বর কেশব ।
প্রত্যক্ষং চ হরেস্তত্র ননর্ত বিবিধং নৃপ ।।

বঙ্গানুবাদ:
“হে হরে কৃষ্ণ! হে যাদবেশ্বর! হে কেশব! আমি আপনাকে বারংবার প্রণাম জানাই।” হে রাজন! এ বলে বলে তিনি ভগবান হরির সম্মুখে বিবিধ নৃত্য করতে থাকলেন।

Shuvo 20240802 140857 Svadharmam

  • পুরাণ শাস্ত্র প্রমাণ:

সনাতনী শাস্ত্রের মধ্যে পুরাণ শাস্ত্রকে খুব গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র বলা হয়েছে। ছান্দোগ্য উপনিষদ ৭।১।২ নং মন্ত্রে পুরাণ শাস্ত্রকে পঞ্চম বেদ বলা হয়েছে, “ইতিহাসপুরাণং পঞ্চমং বেদানাং”।অষ্টাদশ পুরাণ এবং উপপুরাণ শাস্ত্রের প্রায় পুরাণে কলিযুগের যুগধর্ম ও মুক্তিপথ হিসেবে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র বা হরিনাম বা কৃষ্ণনাম জপ ও কীর্তনের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।

( ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ, উত্তরখণ্ড, রাধাহৃদয়মাহাত্ম্য, ৬।৫৫,৫৬ )-

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
ইত্যষ্টশতকং নাম্নাং ত্রিকাল কল্মষাপহং।
নাতঃ পরতরোপায়ঃ সর্ব্ববেদেষু বিদ্যতে।।

বঙ্গানুবাদ:
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। -এই মহামন্ত্র হরিনাম একশত অষ্টবার ত্রিকাল জপে সর্ব্বপ্রকার পাপের অপহারক হন। অর্থাৎ প্রাতঃ মধ্যাহ্ন ও সায়াহ্ন একশত অষ্ট বার প্রত্যেক সময়ে জপ করাতল সকল পাতক ধংস হয়। ইহার পর ভবভীরু জনের ভব নিস্তারণ উপায় আর নাই, ইহা সর্ব্ববেদে কথিত আছে।

Shuvo 20240802 012403 Svadharmam

 

( অগ্নিপুরাণ ৪০৯।৬ )-

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
রটন্তি হলয়া বাপি তে কৃতার্থা ন সংশযঃ।।

বঙ্গানুবাদ:
“হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে”– এই মন্ত্রটি কেউ যদি অবহেলা করেও জপ করে, সে কৃতার্থ হবে ( জীবনের পরম উদ্দেশ্য সাধন করবে) এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

 

Shuvo 20240802 033120 Svadharmam

 

( পদ্মপুরাণ, স্বর্গখন্ড ২৪।৬ )-

হরিরেব সমারাধ্যঃ সর্ব্বদেবেশ্বরেশ্বরঃ ।
হরিনাম মহামন্ত্রৈনশ্যেৎ পাপপিশাচকঃ ॥

বঙ্গানুবাদ:
সর্ব্বদেবেশ্বরেশ্বর হরিই সমারাধ্য। হরিনাম মহামন্ত্রে পাপ-পিশাচ বিনষ্ট হইয়া যায়।

Shuvo 20240802 033210 Svadharmam

 

 

( পদ্মপুরাণ, পাতালখন্ড-৪৯।৩ )-

হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম ।
হরে রাম হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণেতি মঙ্গলম ।
এবং বদস্তি যে নিত্যং ন হি তানু বাধতে কলিঃ।।

বঙ্গানুবাদ:
সদাশিব পার্বতীকে বললেন, কলিতে কেবলমাত্র হরিনামই বিধেয়, হরিনামই বিধেয় এবং হরিনামই বিধেয়। যে ব্যক্তি নিত্য মঙ্গলময় “হরে রাম হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ” ইত্যাদি উচ্চারণ করে, কলি তাকে ক্লেশ দিতে পারে না।

 

Shuvo 20240802 022224 Svadharmam

( পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড ২০৯।৩৯ )-

রাম রাম হরে কৃষ্ণ বিষ্ণো নামাবলীমিতি ।
পাঠয়োত্তিষ্ঠ নিপুণৌ দ্বাবেতৌ সারিকাশুকৌ।।

বঙ্গানুবাদ:
এই শুক সারিকা উভয়েই পাঠনিপুণ ; এদেরকে “রাম রাম হরে কৃষ্ণ” সম্বলিত ভগবান বিষ্ণুর নামাবলী পাঠ করাও।

 

Shuvo 20240802 023013 Svadharmam

( পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড-২০৪।১০৮ )-

উপভুজ্য স ধর্ম্মাত্মা স্বৈরং বিগতবিক্রিয়ঃ ।
হরে রাম হরে কৃষ্ণ জপন্নিতি জগামহি।।

বঙ্গানুবাদ:
বিকারশূণ্য ধৰ্ম্মাত্মা সাধু ভোজন করিয়া “হরে রাম হরে কৃষ্ণ” জপ করিতে করিতে যথেচ্ছ স্থানে প্রস্থান করিলেন।

 

Shuvo 20240802 022707 Svadharmam

( পদ্মপুরাণ, পাতালখণ্ড ১০।২৫ )-

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ ভক্তবৎসল গোপতে।
শরণ্য ভগবনবিষ্ণো মাং পাহি বহুসংসৃতে।।

বঙ্গানুবাদ:
‘হরে কৃষ্ণ! হরে কৃষ্ণ!’ হে, ভক্তবৎসল জগতপতে ভগবান বিষ্ণু আমাকে এই বিভীষিকাময় বিশাল সংসার হতে রক্ষা কর।

20240802 024032 Svadharmam

( পদ্মপুরাণ, ত্রিয়াযোগসার ২৩।৪৩,৪৪ )-

নারায়ণ হরে কৃষ্ণ রক্ষ মামিতি জল্পতা।
মুহুর্মুহুরনেনাপি কৃতং জাগরণং নিশি।।
উপবাসপ্রভাবেন কেশবোচ্চারণেন চ।
আবয়োঃ সকলং পাপং বিনিষ্টমভবদ্দ্বিজ।।

বঙ্গানুবাদ:
‘হে নারায়ণ! হে হরে কৃষ্ণ! আমাকে রক্ষা করুন।’ এভাবে মুহুর্মুহু প্রার্থনা করতে করতে রাত্রিজাগরণ করতে লাগলাম। হে দ্বিজ! উপবাসপ্রভাবে এবং কেশবের নামোচ্চারণে আমাদের সমস্ত পাপ বিনষ্ট হলো।

Shuvo 20240803 143738 Svadharmam

( বৃহন্নারদীয় পুরাণ ৩৮।১২৬ )-

হরের্নাম হর্রেনাম হরের্নামৈব কেবলম্।
কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা।।

বঙ্গানুবাদ:
এই কলিযুগে হরিনাম ব্যতীত অন্য কোন গতি নেই, গতি নেই, গতি নেই।

 

Shuvo 20240802 015503 Svadharmam

( শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ-১২।৩।৫১ )-

কলে দোষ নিধে রাজন অস্তি এক মহান গুন।
কীর্তনাৎ এব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গ পরং ব্রজেৎ।।

বঙ্গানুবাদ:
কলি যুগ পাপের সমুদ্র। কিন্তু তার এক মহান গুন আছে। সেটি হচ্ছে, শ্রীকৃষ্ণের নামকীর্তন। যদি কেউ তা করে তাহলে অনায়াসে এই জড় জগৎ থেকে মুক্ত হয়ে চিন্ময় জগৎ গোলক বৃন্দাবনে প্রবেশ করতে পারে।

 

Shuvo 20240802 013428 Svadharmam

( শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ-১২।৩।৫২ )-

কৃতে যদধ্যায়তো বিষ্ণুং ত্রেতায়াং যজতো মখৈঃ।।
দ্বাপরে পরিচর্যায়াং কলৌ তদ্ধরিকীর্তানাৎ।।

বঙ্গানুবাদ:
যুগধর্ম ও মুক্তির পথ হিসেবে সত্যযুগে শ্রীবিষ্ণুর ধ্যান, ত্রেতাতে যজ্ঞ, দ্বাপরে অর্চন এবং কলিযুগে হরিনাম সংকীর্তন নিধার্রিত হয়েছে

 

Shuvo 20240802 014141 Svadharmam

 

  • পঞ্চরাত্র শাস্ত্র প্রমাণ:

( অনন্ত সংহিতা ৪।১০,১১ )-

হরে কৃষ্ণে হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরেরাম রাম রাম হরে হরে।।
ষোড়ষৈতানি নামানি দ্বাত্রিদ্বর্ণকাণি চ ।
কলৌ যুগে মহামন্ত্র সম্মত জীবতারণে।।

বঙ্গানুবাদ:
হরে কৃষ্ণে হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরেরাম রাম রাম হরে হরে।।“- এই ষোল নাম বত্রিশ অক্ষর কলিযুগে মহামন্ত্র এবং জীবতারণে অভিমত।

Shuvo 20240802 025557 Svadharmam

( ব্রহ্মযামল ৪।১৯-২৩ )-

হরিং বিনা নাস্তি কিঞ্চিৎ পাপ নিস্তারকং কলৌ ।
তস্মালোকোদ্ধারণার্থং হরিনাম প্রকাশয়েৎ ।।
বৈষ্ণবস্য প্রিয়শ্চৈব গৌরচন্দ্রঃ ন সংশয়ঃ ।
বৈষ্ণবৈঃ স্মৰ্য্যতে ষশ্চ গৌরচন্দ্রস্য বৈষ্ণবাৎ ।।
সৰ্ব্বত্ৰ মুচ্যতে লোকো মহা পাপাৎ কলৌ যুগে।
হরেকৃষ্ণ পদদ্বন্দ্বং কৃষ্ণেতি চ পদদ্বয়ং ।।
যুগ্মং হরিপদদ্বন্দ্বং হরেরাম ইতি দ্বয়ং ।
তদন্তে চ মহাদেবি রাম রামো বদেন্নরঃ ।।
হরে হরে ততো ব্রূয়াৎ হরিনাম মুদাহৃতম।
মহামন্ত্রঞ্চ কৃষ্ণস্য সৰ্ব্বপাপ প্রণাশকং ।।

বঙ্গানুবাদ:
ভগবান শিব তাঁর স্ত্রী পার্বতী-দেবীকে বলেন: “হে মহাদেবী! দেখো! কলিযুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামের চেয়ে পাপ মোচনের অন্য সহজ উপায় আর নেই। তাই সাধারণ জনগণের মধ্যে ‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্রের জপ প্রচার করা অপরিহার্য। এই ‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্রের সংকীর্তন করে কলিযুগে মানুষ সহজেই মহানরক থেকে মুক্তি পেতে পারে। মহামন্ত্র জপ করতে, প্রথমে ‘হরে কৃষ্ণ’ দুবার, তারপর ‘কৃষ্ণ’ দুবার, তারপর ‘হরে’ দুবার। এরপর দুবার ‘হরে রাম’, দুবার ‘রাম’ ও দুবার ‘হরে’ জপ কর। এইভাবে মহামন্ত্র: হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম রাম রাম রাম রাম রাম হরে হরে। এই ‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্রের জপ কর, মনন কর এবং সংকীর্তন ইত্যাদি কর, যা সমস্ত পাপ ধ্বংস করে।”

Shuvo 20240802 030055 Svadharmam

( সনৎকুমার সংহিতা )-

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
ষোড়শৈতানি নামানি দ্বাত্রিংশদ বর্ণকানি হি।
কলৌযুগে মহামন্ত্রঃ সম্মতো জীবতারণে।।

বঙ্গানুবাদ:
“হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।” এই ষোলনাম বত্রিশ অক্ষর কলিযুগের মহামন্ত্র এবং জীব উদ্ধারের অভিমত।
[ শ্রী ধ্যানচন্দ্র গোস্বামী তাঁর ‘গৌরগোবিন্দ চরন স্মরণপদ্ধতি’ গ্রন্থের ১৩২-১৩৩ নং শ্লোকে ‘সনৎ-কুমার সংহিতা’ হতে উদ্ধৃতি করেছেন ]

Shuvo 20240802 025234 Svadharmam

  • তন্ত্র শাস্ত্র প্রমাণ:

( রাধাতন্ত্র ২।২৯-৩১ )-

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ।।
দ্বাত্রিংশ দক্ষরাণ্যেব কলৌ নামানি সর্বদা ।
শৃণুচ্ছন্দঃ সুত শ্রেষ্ঠ হরিনামঃ সদৈবহি ।।
ছন্দোহি পরমং গুহ্যং মহুৎপদ মনব্যয়ং।
সর্বশক্তিময়ং মন্ত্রং হরিনাম তপোধন।।

বঙ্গানুবাদ:
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। এই দ্বাত্রিংশদক্ষর হরিনামই কলিযুগে ত্রাণ করে । হে সুতশ্রেষ্ঠ ! এই মন্ত্রের ছন্দ অতি সুগোপ্য। হে তপোধন ! এই হরিনামাত্মক মন্ত্র সৰ্ব্ব শক্তিময়।

20240802 020347 Svadharmam

.

কৃষ্ণনাম–মহামন্ত্রের এই ত’ স্বভাব ।

যেই জপে, তার কৃষ্ণে উপজয়ে ভাব ॥

(শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, আদিলীলা, ৭।৮৩)

.

সে কহে — “বাণীনাথ নির্ভয়ে লয় কৃষ্ণনাম।

‘হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ’ কহে অবিশ্রাম।।”

(শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, অন্ত্যলীলা, ৯।৫৬)

.

“হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।

হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ॥”

এই শ্লোক নাম বলি’ লয় মহা-মন্ত্র।

ষোল-নাম বত্রিশ-অক্ষর এই তন্ত্র ॥

সাধিতে সাধিতে যবে প্রেমাঙ্কুর হবে।

সাধ্য-সাধন-তত্ত্ব জানিবা সে তবে ॥

(শ্রীচৈতন্য ভাগবত, আদিলীলা ১৪।১৪৫-১৪৭)

.

জয় জয় ‘হরে-কৃষ্ণ’-মন্ত্রের প্রকাশ।

জয় জয় নিজ-ভক্তি-গ্রহণ-বিলাস ॥

( শ্রীচৈতন্য ভাগবত, মধ্যলীলা, ৬।১১৭)

এছাড়াও সনাতন ধর্মের আরো বিভিন্ন শাস্ত্রে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে উল্লেখ রয়েছে। যারা বলে যে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রের উল্লেখ বৈদিক শাস্ত্রে কোথাও নেই, তারা অপপ্রচার করেন মাত্র। তাদের অপপ্রচারে আমাদের বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

.

সংকলনে: ব্রজসখা দাস

[ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ]

নিবেদক-
° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

Shuvo Debnath

Writer & Admin

4 5 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments