মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের সর্বোত্তম ‘হরে কৃষ্ণ’ নাম

20240927_153537

মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের সর্বোত্তম °হরে কৃষ্ণ° নাম

শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর রচিত ‘শ্রীকৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম’ হতে আমরা প্রায় সকলেই জানি, ভ্রাতা বলরাম শ্রীকৃষ্ণকে ‘হরে কৃষ্ণ’ নামে ডাকতেন।

হরে কৃষ্ণ নাম রাখে প্রিয় বলরাম।

ললিতা রাখিল নাম দূর্ব্বাদল শ্যাম।

শ্রীকৃষ্ণের এ ‘হরে কৃষ্ণ’ নাম সমগ্র জগতে অতি সমাদৃত। মহাভারতে বহুবার এ নামে শ্রীকৃষ্ণকে স্তব স্তুতি করা হয়েছে। ভগবানের এ দিব্য নাম উচ্চারণে কলিকালে জীব মাত্রেরই উদ্ধার হয়। তাই কলিকালের তারকব্রহ্ম মহামন্ত্রও শুরু হয়েছে ‘হরে কৃষ্ণ’ নামোচ্চারণে। হরে কৃষ্ণ নাম মাহাত্ম্য পদ্মপুরাণাদি নানাবিধ শাস্ত্রে আছে, এগুলো আমরা পরবর্তী পর্বগুলোতে দেখবো।

অনেকের ধারণা, ‘হরে কৃষ্ণ’ নামটি বৈষ্ণব কবিদের কল্পিত নাম, শাস্ত্রে উল্লেখ নেই। তাদের এ ধরনের ভ্রান্তির বিপরীতে আজ আমরা মহাভারত হতে দিব্য ‘হরে কৃষ্ণ’ নামের উল্লেখ আছে এমন কয়েকটি প্রমাণ নিবেদন করবো।

মহাভারতের দ্রোণ-মহাপর্বে শ্রীকৃষ্ণকে নানাভাবে স্তব স্তুতি করা হয়েছে। সেখানে শ্রীকৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্রে তাকে ‘হরে কৃষ্ণ’ নামে সম্বোধন করা হয়েছে।

নমস্তে দেবদেবেশ সনাতন বিশাতন।

বিষ্ণো জিষ্ণো ‘হরে কৃষ্ণ’ বৈকুন্ঠ পুরুষোত্তম।।

( মহাভারত, দ্রোণপর্ব ৭৩।১৮ )

বঙ্গানুবাদ:
“হে বিষ্ণু! হে জিষ্ণু! হে ‘হরে কৃষ্ণ’! হে বৈকুন্ঠ! হে পুরুষোত্তম! তুমি দেবদেবেশ অর্থাৎ দেবতাদের দেবতা শিবেরও ঈশ্বর, তুমিই সনাতন, তুমিই বিশাতন, তোমাকে নমস্কার।”

FB IMG 17274394188468531 Svadharmam

.

মহাভারতের খিলপর্বে পৌন্ড্রক যুদ্ধকালে ভগবানের ‘হরে কৃষ্ণ’ নামোচ্চারণ করে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন, সে যুদ্ধে ভগবান স্বয়ং তাকে সাযুজ্য মুক্তি প্রদান করেন।

যদি শক্তো ‘হরে কৃষ্ণ’ দারয়েদং মহাস্পদম্ ।

ইত্যুক্ত্বা তচ্ছতগুণং ভ্রামযিত্বা মহাবলঃ।।

( মহাভারত, খিলপর্ব্ব-হরিবংশ, ভবিষ্যপর্ব, ১০১।১৫ )

বঙ্গানুবাদ:
যদি শক্তি থাকে তবে, হে হরে কৃষ্ণ! এই মহাস্পদ অস্ত্র ছিন্ন করো।’ এ বলে পন্ড্রক মহাবলশালী অস্ত্রটি শতবার ঘুরিয়ে নিক্ষেপ করলেন।

FB IMG 17274394242723556 Svadharmam

.

মহাভারতের খিলপর্ব হরিবংশে ঘন্টাকর্ণ নামের এক পিশাচের উপাখ্যান আছে। জীবনের শুরুতে সে মুক্তি লাভের আকাঙ্ক্ষায় শিবের তপস্যা করেছিলেন। কিন্তু শিব উপস্থিত হয়ে তাকে বলেন, ‘মুক্তিদাতা কেবল মুকুন্দ। আমি তোমাকে মুক্তি দিতে পারবো না। অন্য যা কিছু চাও আমি তোমাকে দিবো, কিন্তু মুক্তি পেতে হলে তোমাকে মুকুন্দের নাম জপ করে তপস্যা করতে হবে হবে।’ তখন থেকে ঘন্টাকর্ণ সদা সর্বদা শ্রীকৃষ্ণের নামোচ্চারণ ও লীলামহিমা স্মরণ করে তপস্যা করতে থাকেন। তার দৃঢ়ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ উপস্থিত হলে তিনি ‘হরে কৃষ্ণ’ নামোচ্চারণে তাঁর সম্মুখে আনন্দে উদ্দাম নিত্য করেছিলেন।

নমো নমো ‘হরে কৃষ্ণ’ যাদবেশ্বর কেশব ।

প্রত্যক্ষং চ হরেস্তত্র ননর্ত বিবিধং নৃপ ।।

( মহাভারত,হরিবংশ, ভবিষ্যপর্ব ৮২।৪৩ )

বঙ্গানুবাদ:
“হে ‘হরে কৃষ্ণ’, হে যাদবেশ্বর, হে কেশব! আমি আপনাকে বারংবার প্রণাম জানাই।” হে রাজন! এ বলে বলে ঘন্টাকর্ণ ভগবান শ্রীহরির সম্মুখে বিবিধ নৃত্য করতে থাকলেন।

FB IMG 17274394220504107 Svadharmam

.

এভাবে মহাভারতের অসংখ্য স্থানে ভগবানের দিব্য ‘হরে কৃষ্ণ’ নামের উল্লেখ আছে, যা উচ্চারণে মানব জীবন সফল হয়, জন্ম সফল হয়, সকল উদ্দেশ্য সাধিত হয়, অন্তিমে শ্রীহরি প্রাপ্তি ঘটে।
তাই মৃত্যুশয্যায় ভীষ্মদেব যুধিষ্ঠিরকে বৈষ্ণবধর্ম সম্পর্কিত জ্ঞান দানের পর উপদেশ দিয়েছিলেন, তিনি যেন সর্বোত্তম নাম- কৃষ্ণ নাম জপ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করেন।

ভীষ্ম উবাচ-

এতত্তে কথিতং রাজন্ ! বিষ্ণুতত্ত্বমনুত্তমম্ ।

ভজস্বৈনং বিশালাক্ষং জপন্‌ কৃষ্ণেতি সত্তম !।।

( মহাভারত, শান্তিপর্ব ২০৪।৭৭ )

বঙ্গানুবাদ:
ভীষ্ম বলিলেন—’সাধুশ্রেষ্ঠ রাজা ! এই আমি তোমার নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ বিষ্ণুতত্ত্ব বলিলাম। তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ নাম- কৃষ্ণ নাম জপ করিতে থাকিয়া এই বিশালনয়ন কৃষ্ণের সেবা কর

FB IMG 17274394286579098 Svadharmam

.

মহাভারতের ভীষ্মপর্বে শ্রীমদ্ভগবদগীতাতেও ভগবানের নাম কীর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে-

সততং কীর্তয়ন্তো মাং যতন্তশ্চ দৃঢ়ব্রতাঃ।

নমস্যন্তশ্চ মাং ভক্ত্যা নিত্যযুক্তা উপাসতে।।

( মহাভারত, ভীষ্মপর্ব, ৩৩।১৪; শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৯।১৪ )

বঙ্গানুবাদ:
যারা দৃঢ়ব্রতী ও যত্নশীল মহাত্মারা সর্বদা আমার কীর্তন করে এবং আমাকে প্রণাম করে নিরন্তর যুক্ত হয়ে ভক্তি সহকারে আমার(শ্রীকৃষ্ণের) উপাসনা করে।

শাস্ত্রীয় রেফারেন্সগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে গীতাপ্রেস গোরক্ষপুর প্রকাশনী, বিশ্ববাণী প্রকাশনী ও নবভারত পাবলিশার্স এডিশান হতে। BORI CRITICAL EDITION এও একই শ্লোকগুলো বিদ্যমান। অন্যান্য এডিশানগুলোতে অধ্যায়ভেদে বিদ্যমান।

সকল কৃতিত্ব মহাভারতের রচয়িতা শ্রীব্রহ্ম-মাধ্ব-গৌড়ীয় সম্প্রদায়ের পরমারাধ্য আচার্য্য শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস ও তার অনুগামী আচার্যবর্গের।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

[ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ]

নিবেদক-
° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

 

Avatar of Brajasakha Das

Brajasakha Das

Writer & Admin