নমস্কার শব্দের সংস্কৃত অর্থ হল নমস্তে। আর সংস্কৃত ভাষায় নমস্তে শব্দের সমার্থক শব্দ হল- নমঃ, প্রনাম।সনাতন ধর্ম শাস্ত্র অনুসারে বিনয় বা সন্মান প্রদর্শনের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হল নমস্কার বা প্রনাম।কারন বিনয় বা সন্মান প্রদর্শন না করে কখনো শিক্ষা বা পারষ্পরিক সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব নয়। সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে স্থান, কাল এবং পাত্র অনুসারে কায়, মন এবং বাক্য এই তিন-প্রকারে প্রনাম বা নমস্কার প্রদানের বিধান আছে।
১/ কায় দ্বারা নমস্কার প্রদানঃ
কায় শব্দের অর্থ হল শরীর বা দেহ। পরিচিত বা সন্মানীয় কারো সাথে দেখা হলে ভূমিতে মাথা নত করে বা সন্মানীয় ব্যক্তির দুই চরন ডানহস্ত দ্বারা স্পর্শ করে তা মাথায় স্পর্শ করা অথবা দুই হাত জোর করা। এ পদ্ধতিতে নমস্কার প্রদান হল নমস্কার প্রদানের সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি।
২/ মন দ্বারা নমস্কার প্রদানঃ
সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে গুরুদেব,পরমেশ্বর ভগবান অথবা পিতা মাতাকে মনে মনে স্মরন বা চিন্তা করে তাদের চরণে অবনত মস্তকে মনে মনে প্রনাম বা নমস্কার জানানো যায়।
৩/ বাক্য দ্বারা নমস্কার প্রদানঃ
বাক্য বলতে মুখ দ্বারা শব্দ উচ্চারণ করাকে বুঝানো হয়। সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে মুখ দিয়ে নমস্কার বা প্রনাম উচ্চারণ করলে তাকে নমস্কার বা প্রনাম রুপে গ্রহণ করা হয়।যেমন-গীতা১১/৪০
নমঃ পুরস্তাদধ পৃষ্ঠতস্তে
নমোহস্তু তে সর্বত এব সর্ব।
অনন্তবীর্যামিতবিক্রমস্ত্বং
সর্বং সমাপ্নোষি ততোহসি সর্বঃ।। ৪০।।
– (গীতা ১১/৪০,অর্জুন)
অনুবাদঃ হে সর্বাত্মা (শ্রীকৃষ্ণ) তোমাকে সম্মুখে পশ্চাতে ও সমস্ত দিক থেকেই নমস্কার করছি। হে অনন্তবীর্য! তুমি অসীম বিক্রমশালী। তুমি সমগ্র জগতে ব্যাপ্ত, অতএব তুমিই সর্ব-স্বরূপ।
এখন প্রশ্ন হল ইসকন ভক্তরা পরিচিত বা সন্মানীয় কারো সাথে দেখা হলে তাদের নমস্কার দেয়ার পদ্ধতি কিরুপ, তারা কি একে অপরের সাথে সাক্ষাতের সময় মুখ দিয়ে হরে কৃষ্ণ বলার পাশাপাশি ‘নমস্কার’ সম্বোধন করেন?
এর উত্তর হল, হ্যাঁ। পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে নমস্কার শব্দের সমার্থক শব্দ হল প্রনাম। সকল ইসকন ভক্তরা সাক্ষাৎ কারে কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় কলির্সন্তরণ উপনিষদ ২ মন্ত্র অনুসারে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পবিত্রনামরুপ হরে কৃষ্ণ উচ্চারন পূর্বক নমস্কার শব্দের সমার্থক শব্দ প্রনাম শব্দটি উচ্চারন করেন। সনাতনী ইসকন কৃষ্ণ ভক্তগণ সন্মানিত বা পরিচিত কারো সাথে সাক্ষাৎ বা দেখা হলে হাত জোর করে হরে কৃষ্ণ উচ্চারণ করে মুখ দিয়ে প্রনাম উচ্চারণ করেন অথবা মস্তককে ভূমিতে স্পর্শ করে নমস্কার প্রদান করে হরে কৃষ্ণ উচ্চারণ করেন।অথবা মোবাইল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলার সময় হরে কৃষ্ণ, দন্ডবৎ প্রনাম প্রভু অথবা হরে কৃষ্ণ, প্রনাম প্রভুজী এ পদ্ধতি অনুসরণ করেন।
➡️ নমুনা-১
মাধ্যম-মোবাইল বা সামাজিক যোগাযোগ
ভক্তঃ হরে কৃষ্ণ। প্রনাম প্রভু।
পরিচিতঃ প্রনাম প্রভু। হরে কৃষ্ণ।
ভক্তঃ কেমন আছেন সৌরভ প্রভু?
পরিচিতঃ ভালো আছি প্রভু।
ভক্তঃ প্রভুজী, নিয়মিত হরিনাম জপ করছেন?
পরিচিতঃ হ্যাঁ প্রভুজী, নিয়মিত জপ করছি।
➡️ নমুনা-২, মাধ্যম- রাস্তায় দেখা
ভক্ত -কঃ(দুই হাত জোর করে) হরে কৃষ্ণ প্রভু।প্রনাম
ভক্ত- খঃ(দুই হাত জোর করে) হরে কৃষ্ণ প্রভু।প্রনাম।
ভক্ত -কঃ অনেকদিন পর আপনার দেখা পেলাম। কেমন আছেন প্রভু?
ভক্ত- খঃ হ্যাঁ প্রভু। কৃষ্ণের কৃপায় ভালো আছি।
➡️ নমুনা-৩,মাধ্যম -রাস্তায় দেখা
ভক্তঃ (দুই হাত জোর করে) হরে কৃষ্ণ।প্রনাম পার্থ প্রভু।
স্টুডেন্টঃ (দুই হাত জোর করে) হরে কৃষ্ণ। প্রনাম প্রভু।
ভক্তঃ কেমন আছেন প্রভু? স্টাডি কেমন চলছে?
স্টুডেন্টঃ প্রভু ভালো আছি। স্টাডি ভালো হচ্ছে।
ভক্ত – নিয়মিত জপ করা হয়?
স্টুডেন্ট -হ্যাঁ প্রভু। প্রতিদিন ২ মালা জপ করি।
ভক্ত – হরিবোল। খুব খুশি হলাম। এভাবে নিয়মিত জপ করুন।
স্টুডেন্ট – হ্যাঁ প্রভু।
পরিশেষে আমরা যখন প্রনাম বা নমস্কার শব্দটি উচ্চারন করি, তার মাধ্যমে আমরা আমাদের সিনিয়র বা বয়সে বড়দের সন্মান প্রদর্শন করি, তাদের কাছে মাথা নত করি,তাদের আশির্বাদ প্রার্থনা করি। আর আমরা যখন আমাদের ছোটদের নমস্কার বা প্রনাম বলি, তখন তার মাধ্যমে তাদের হৃদয়ে অবস্থিত পরমাত্মাকে প্রনাম নিবেদন করি। তাই সকল সনাতনীর প্রয়োজন বড়, ছোট যার সাথে সাক্ষাৎ হয় তাকে হাত জোড় করে হরে কৃষ্ণ উচ্চারন করে প্রনাম বা নমস্কার উচ্চারন করা।
হরে কৃষ্ণ, প্রনাম
প্রচারে-©️ স্বধর্মম্
Views Today : 213
Total views : 118880
Who's Online : 0
Your IP Address : 216.73.216.136