শাস্ত্রে উল্লেখিত পুতনা,অঘাসুর,বকাসুর, তারকাসুুর, রাবন ইত্যাদি রাক্ষসের আদৌ কি পৃথিবীতে অস্তিত্ব ছিল?

20250816_132715
 আজকাল কিছু মূর্খ শ্রীমদ্ভাগবত,রামায়ন ইত্যাদি শাস্ত্রে উল্লেখিত পুতনা,অঘাসুর,
বকাসুর,তারকাসুর,রাবন ইত্যাদি রাক্ষসের অস্তিত্বকে কুযুক্তির মাধ্যমে অস্বীকার করে   সরল  সনাতনীদের মাঝে সনাতনী শাস্ত্রের প্রতি অশ্রদ্ধা তৈরি করছে যা অত্যন্ত ভয়ংকর।

যাহোক অন্ধকার  মায়ার প্রতিনিধি নিসেবে তাঁরা নিজেদের যতই শক্তিশালী মনে করুক না কেন,কৃষ্ণরুপ আলোকিত সূর্যের উদয়ে তাদের অজ্ঞান অন্ধকাররুপ মায়া অদৃশ্যমান হবে , এ আশা করি।

যাদের বর্তমান বয়স ৩০-৩৫ বছর চলছে,বাস্তবে একটু চিন্তা করে দেখুন আমরা একসময় তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণীতে কখনো মোবাইল চোখেও দেখিনি, বিনিময় প্রথা হিসেবে ডাকচিঠি ছিল।এখন আমাদের হাতে মোবাইল ফোন,সেটিই আমাদের যোগাযোগের মাধ্যম,এখন ডাকচিঠি কল্পনাতীত। পূর্বে আমরা রেডিও দেখছি, কিন্তু সে রেডিও এখন চোখেও দেখা যায় না।আমরা এ বয়সে অনেক কিছু দেখছি যা আমরা পূ্র্বে দেখি নি,পূর্বে আমরা অনেক কিছু দেখছি, যা এখন কল্পনাতীত ও হাস্যকর।

ঠিক তেমনই আমরা এখন পুতনা, তারকা, অঘাসুর, বকাসুর এসমস্ত রাক্ষসদের দেখতে না পেলেও পূ্র্বে এদের অস্তিত্ব ছিল। এমনকি রামায়ণে রাবনের রাক্ষস বংশ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রকৃতি পরিবর্তনশীল।ভবিষ্যৎ পুরানে বলা হয়েছে, ব্রহ্মা তার সৃষ্টি প্রকৃিয়ায় যক্ষ,রাক্ষস, পিশাচ, সর্প, পক্ষী, মানুষ ইত্যাদি প্রাণীকূল সৃষ্টি করেছিলেন।

পিশাচা মানুষা তাত রক্ষাংসি চ জরায়ুজাঃ।
দ্বিজাস্ত্য অণ্ডজাঃ সৰ্পাণক্রা মৎস্যাঃ সকচ্ছপাঃ।।৭০
এবং বিধানি মানীহ স্থলজান্যৌদকানি চ।
স্বেদজং দংশমংশকং কালিক্ষ কমৎকুণাঃ।।৭১
উষ্মণা চোপজায়ন্তে সচ্চান্যক্তিচিদীদশম্।
উদ্ভিজ্জাঃ স্থাবরাঃ সর্বে বীজকাণ্ড প্ররোহিণঃ।।”৭২

          -(ভবিষ্যপুরাণ: ব্রাহ্মপর্ব, সৃষ্টি, ৭০-৭২)

অনুবাদঃ পশুবর্গ, পিশাচ, মানুষ, রাক্ষস সব কিছু জরায়ুজ। পক্ষী, সর্প, মৎস্য এবং কচ্ছপ হল অণ্ডজ। জরায়ুতে উৎপন্ন হলে জরায়ুজ এবং অণ্ড (ডিম) থেকে উৎপন্ন হলে সেই জীবকে বলা হয় অণ্ডজ।কিছু জীব আছে যারা স্থলভাগে জন্মায় এবং কিছু জীব আছে যারা জলে জন্মায়। দংশনকারী মশা, জোঁক, লিক্ষা এবং ছারপোকা এদের স্বেদজ বলা হয়। কারণ এরা স্বেদ থেকে উৎপন্ন হয় আর এক প্রকারের জীব আছে যাদের উদ্ভিজ্জ বলা হয় কারণ এরা ভূমিতে সৃষ্ট হয় এবং বীজ কাণ্ড পরিণত হয়।এইভাবে ব্রহ্মা থেকে জরায়ুজ(রাক্ষস,মানুষ, পশু,পিশাচ),অণ্ডজ, স্বেদজ এবং উদ্ভিজ্জ এই চারপ্রকার জীব সৃষ্টি হয়েছে।

কিন্তু রাক্ষস জাতি যেহেতু ঋষিদের আক্রমন করত, এবং যজ্ঞ বিনষ্ট করার জন্য তারা পশুর রক্ত,হাড় ও মাংস নিক্ষেপ করত। তাই ঋষিদের অভিশাপে এ রাক্ষস বংশ   ত্রেতা যুগে নির্মুল হয়।রামায়ন, মহাভারত,অষ্টাদশ পুরান আদি শাস্ত্র থেকে জানা যায় রাবন, পুতনা, অঘাসুর, বকাসুর,তারকাসুর আদি রাক্ষসেরা নানান রুপ ধারন অলৌকিক সব কার্যকলাপ সম্পাদন করতেন।

যাই হোক ভগবান শ্রীরাম বা শ্রীকৃষ্ণের হাতে যেসমস্ত রাক্ষস বা অসুর নিহত হয়েছিল, পুরানাদি শাস্ত্রের বিবরন অনুসারে, তারা রাজা বা ঋষি বা দেবতা ছিল।কিন্তু কোন না কোন অপরাধের কারনে ঋষি বা দেবতা কতৃর্ক অভিশাপ প্রাপ্ত হলে তারা রাক্ষস শরীর লাভ করে।কিন্তু তারা ক্ষমা ভিক্ষা চাইলে ঋষিরা ভগবানের হাতে তাদের মৃত্যুর মাধ্যমে রাক্ষস দেহ থেকে মুক্তির আশির্বাদ পান

এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারে, কোটি কোটি বছর পূর্বে বিলুপ্ত ডাইনোসরের কঙ্কাল পাওয়া যায়,তাহলে এসমস্ত রাক্ষসদের কেন কঙ্কাল পাওয়া যাচ্ছে না?

আসলে এর উত্তর হল লক্ষ লক্ষ বছর পূ্র্বে লক্ষ লক্ষ ডাইনোসরের বসবাস এ পৃথিবীতে ছিল, তাদের মৃত্যু হয়েছে।কিন্তু এখনও বিজ্ঞানীরা দুই একটি ডাইনোসরের কঙ্কালের সন্ধান পাচ্ছেন বলে তারা দাবী করছেন।তাহলে যে রাক্ষস জাতি অভিশপ্ত জাতি, আর তাদের বংশ বিস্তারও কম ছিল।কালের প্রভাবে, মুনি ঋষিদের অভিশাপে তাদের অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তাহলে তাদের কঙ্কাল এ জগতে থাকবে কিভাবে তা আশা করা যায়?

 হরে কৃষ্ণ। প্রনাম 

 

Sadgun Madhav Dash

Writer & Admin

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments