শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যমহাপ্রভু রচিত শিবাষ্টকম্

SAVE 20241008 224009 Svadharmam

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যমহাপ্রভু রচিত শিবাষ্টকম্ নমো নমস্তে ত্রিদশেশ্বরায় ভূতাদিনাথায় মূড়ায় নিত্যম্। গঙ্গাতরঙ্গোত্থিতবালচন্দ্রচূড়ায় গৌরীনয়নোৎবায়।।১।। অনুবাদ হে ত্রিদশেশ্বর, হে ভূতবর্গাদির আদিনাথ, হে মূঢ়, তোমাকে আমি নিত্য প্রণাম করি। গঙ্গাতরঙ্গোত্থিত তরুণ চন্দ্র তোমার শিরোভূষণ, তুমি গৌরীর নেত্রানন্দদায়ী, তোমার চরণে নমস্কার। . সুতপ্তচামীকরচন্দ্রনীলপদ্ম প্রবালাম্বুদকান্তিবস্ত্রৈঃ। সুনৃত্যরঙ্গেষ্টবরপ্রদায় কৈবল্যনাথায় বৃষধ্বজায়।। ২।। অনুবাদ গলিত স্বর্ণ, চন্দ্র, নীল পদ্ম, প্রবাল ও মেঘশ্যামল বসনাদি ধারণ করে যিনি সুন্দর নৃত্যভঙ্গীসহকারে ভক্তগণের ইষ্টবর প্রদান করেন, সেই কৈবল্যনাথ, বৃষধ্বজ শিবকে প্রণাম করি। . সুধাংশুসূর্যাগ্নিবিলোচনেন তমোভিদে তে জগতঃ শিবায়। সহস্র শুভ্রাংশুসহস্ররশ্মি-সহস্রসংজিত্ত্বরতেজসে’স্তু।। ৩।। অনুবাদ যিনি চন্দ্রসূর্যাগ্নিরূপ ত্রিলোচন দ্বারা জগতের সকল অন্ধকার নাশ করেন, সহস্রচন্দ্রমা ও সহস্রসূর্যবিজয়ী তেজোমালাধারণকারী সেই শিবের চরণে নমস্কার। . নাগেশরত্নোজ্জ্বলবিগ্রহায় শার্দুলচৰ্ম্মাংশুকদিব্যতেজসে। সহস্রপত্রোপরি সংস্থিতায় বরাঙ্গদমুক্তভুজদ্বয়ায়।। ৪।। অনুবাদ যাঁর দিব্য বিগ্রহ নাগেশ অনন্তের রত্নপ্রভায় উজ্জ্বল, যিনি ব্যাঘ্রচর্মাম্বরধারী, দিব্যতেজোময়, যিনি সহস্রদল পদ্মের উপর বিরাজমান, যাঁর ভুজদ্বয় উত্তম অঙ্গদে ভূষিত, সেই শিবকে নমস্কার। . সুন্‌পুরারঞ্জিতপাদপদ্মক্ষরৎসুধাভৃত্যসুখপ্রদায়। বিচিত্ররত্নৌঘবিভূষিতায় প্রেমানমেবাদ্য হরৌ বিধেহি।। ৫।। অনুবাদ যিনি সুন্দর নূপুররঞ্জিত পাদপদ্ম থেকে ক্ষরিত সুধা দ্বারা তদীয় ভৃত্যগণ মহাসুখ প্রদান করেন, বিচিত্র রত্নমালায় যিনি বিভূষিত, সেই শিবকে নমস্কার। হে মহেশ্বর, অদ্য আমাকে শ্রীহরির প্রতি অনুপম প্রেম দান করো। . শ্রীরাম গোবিন্দ মুকুন্দ শৌরে শ্রীকৃষ্ণ নারায়ণ বাসুদেব। ইত্যাদিনামামৃতপানমত্ত-ভূঙ্গাধিপায়খিলদুঃখহন্ত্রে।। ৬।। অনুবাদ তুমি শ্রীরাম, গোবিন্দ, মুকুন্দ, শৌরে, শ্রীকৃষ্ণ, নারায়ণ, বাসুদেব প্রভৃতি নামামৃত পানে মত্ত ভূঙ্গরাজ, তুমি নিখিল-দুঃখনাশন, তোমাকে প্রণাম করি। . শ্রীনারদাদ্যৈঃ সততং সুগোপ্যজিজ্ঞাসিতায়াশু বরপ্রদায়।তেভ্যো হরের্ভক্তিসুখপ্রদায় শিবায় সর্ব্বগুরবে নমো নমঃ।।৭।। অনুবাদ শ্রীনারদাদি মহর্ষিগণ সর্বদাই বিভিন্ন সুগোপ্য বিষয় সম্বন্ধে তোমাকে পরিপ্রশ্ন করেন- তুমি আশুবরপ্রদ, তুমি তাঁদের (মহর্ষিদের) হরিভক্তি ও পরম আনন্দ প্রদান করো। হে সর্বগুরু শিব, তোমাকে পুনঃপুন: নমস্কার করি। . শ্রীগৌরীনেত্রোৎসবমঙ্গলায় তৎপ্রাণনাথায় রসপ্রদায়। সদাসমুৎকণ্ঠগোবিন্দলীলাগানপ্রবীণায় নমো’স্তু তুভ্যম্ ।। ৮৷৷ অনুবাদ তুমি শ্রীগৌরীর নেত্রোৎসবমঙ্গলপ্রদ, তুমি হিমাদ্রিনন্দিনীর প্রাণনাথ ও রসপ্রদাতা। সর্বদা সমুৎকণ্ঠিতচিত্তে গোবিন্দলীলাগানে তুমি প্রবীণ, তোমাকে নমস্কার করি। ————————————————- অথ শ্রুতিফল:।। এতৎ শিবস্যাষ্টকমদ্ভুতং মহৎ শৃণ্বন্ হরিপ্রেম লভেত শীঘ্রম্। জ্ঞানঞ্চ বিজ্ঞানমপূর্ব্ববৈভবং যো ভাবপূর্ণ: পরমং সমাদরম্।। অনুবাদ এই মহৎ ও অদ্ভুত শিবাষ্টক শ্রবণ করলে শীঘ্রই হরিপ্রেম লাভ করা যায়। যিনি ভাবপূর্ণচিত্তে এই মঙ্গলময় শ্লোকাবলী শ্রবণ করেন, তিনি জ্ঞান, বিজ্ঞান ও অপূর্ব বৈভব লাভ করেন। অনুবাদক- শ্রীপাদ অর্জুনসখা দাস ।। হরে কৃষ্ণ।। ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

দামোদর মাসে ব্রত পালনের বিধিসমূহ

20241003 184815 Svadharmam

দামোদর মাসে ব্রত পালনের বিধিসমূহ! দামোদর মাসের মাহাত্ম্য- ১. যে কোনও দেশে কার্তিকে স্নান ও দান বিশেষতঃ পূজাতে তা অগ্নিহোত্র সমফল। ২. কুরুক্ষেত্রে কোটিগুণ ফল, গঙ্গায়ও তৎসম ফল, তার থকে অধিক পুস্করে, হে ভার্গব! দ্বারকায়ও অধিক। কার্তিক মাসে স্নানও শ্রীভগবৎপূজন শ্রীকৃষ্ণসালোক্যপ্রদ। ৩. হে মুনিগণ! মথুরা ব্যতীত, অন্যপুরী সকল তার সমান, যেহেতু মথুরা-মণ্ডলেই শ্রীহরির দামোদর লীলা প্রকট হয়েছিল। ৪. অতএব কার্তিকে মথুরায় শ্রীগোবিন্দের প্রীতিবর্দ্ধন, কার্তিকে মথুরাতেই চরম ফল প্রাপ্তি হয়। ৫. যেমন মাঘে প্রয়াগতীর্থ, বৈশাখে জাহ্নবী, কার্তিকে মথুরা সেবা তা থেকে উৎকর্ষ আর নাই। ৬. কার্তিকে মথুরাতে মানবগণ স্নান করে দামোদরের পূজা করলে তারা কৃষ্ণসারূপ্য প্রাপ্ত জানবেন, এ বিষয়ে বিচার কর্তব্য নয়। ৭. হে বিপ্র! এই জগতে মানবগণের পক্ষে মথুরাতে কার্তিক মাস দুর্লভ। যেখানে পূজিত হয়ে দামোদর নিজরূপ ভক্তগণকে প্রদান করেন। ৮. শ্রীহরি অর্চিত হয়ে অন্যত্র সেবিত ভক্তগণকে ভুক্তি মুক্তি দান করেন, এই শ্রীহরি কিন্ত ভক্তি দান করেন না, যেহেতু শ্রীহরির বশ্যকারী। ৯. কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে একবারও শ্রীদামোদরের পূজা থেকে সেই ভক্তি কিন্তু অনায়াসে মানবগণ শ্রীহরি হতে লাভ করে। ১০. শ্রীদামোদরদেব কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে মন্ত্র-দ্রব-বিহীন পূজাকেও স্বীকার করেন। ১১. যে পাপের মরণান্তেই বিনিষ্কৃতি হয় তার শুদ্ধির জন্য কার্তিক মাসে মথুরাপুরীতে হরিপূজাই সুনিশ্চয়, এই প্রায়শ্চিত্ত শাস্ত্রে উক্ত হয়েছেন। ১২. বালক ধ্রুব কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে শ্রীদামোদরের পূজা ও ধ্যান দ্বারা যোগিগণ দুর্লভ শ্রীভগবানকে শীঘ্র দর্শন প্রাপ্ত হয়েছিলেন। পৃথিবীতে মথুরা সুলভা, সেই রকম প্রতিবছর কার্তিক মাস সুলভ, তথাপি এই জগতে মূঢ় মানবগণ ভবসমুদ্রে জন্ম-মৃত্যু প্রবাহে ভাসছে। ১৩. যজ্ঞসমূহের কি প্রয়োজন, তপস্যার কি প্রয়োজন, অন্য তীর্থসমূহের সেবাতে কি প্রয়োজন? যদি কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে শ্রীরাধিকা প্রিয় শ্রীদামোদরের অর্চিত হন। ১৪. সকল পবিত্র তীর্থ, নদ-নদী, সরোবর কার্তিক মাসে এই মথুরা-মণ্ডলে সকলেই বাস করেন। ১৫. কার্তিকে কেশবদেবের জন্মস্থানে যে মানবগণ একবার প্রবিষ্ট হয়, তারা পরম অব্যয় শ্রীকৃষ্ণকে প্রাপ্ত হন। ১৬. কার্তিক মাসে মথুরাতে হরিপূজাকের উপহার উদ্দেশ্যে হরিপূজা দ্বারা দুর্লভ পদ প্রাপ্ত হওয়া যায়, তখন ভক্তিমান হয়ে পূজা করলে যে কি ফল, তার আর কি বলব। কার্তিক মাসে ব্রত পালনের বর্জনীয় দ্রব্যসমূহ…!!! পদ্মপুরাণে ব্রহ্ম-নারদ সংবাদে বলা হচ্ছে- ১. কার্তিক মাসে রাজমাষ (বরবটি) ও শিমসমূহ ভক্ষণ করলে, হে মুনিবর কল্পকাল (১ হাজার চতুর্যুগ) নরকাবাসী হয়। ২. কার্তিক মাসে যে ব্যক্তি কলমী শাক, পটল, বেগুন, আচার (চাটনি) ত্যাগ না করে, তাকে কল্পকাল (১ হাজার চতুর্যুগ) নরকবাসী হতে হয়। ৩. ধর্মাত্মা ব্যক্তি কার্তিক মাসে মৎস্য ও মাংস ভক্ষণ করবেন না। ৪. পরান্ন, পরশয্যা, পরধন, পরস্ত্রী-কার্তিককে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি বিশেষভাবে বর্জন করবেন। ৫. কার্তিক মাসে তৈল মর্দন, শয্যা, পরান্ন ও কাসার পাত্রে ভোজন ত্যাগ করলে পরিপূর্ণ ব্রতী হওয়া যায়। ৬. কার্তিক মাস উপস্থিত হলে পরান্ন দর্শন করে যে মানব বর্জন করে, প্রতিদিন কৃচ্ছব্রতের ফল প্রাপ্ত হন। পদ্মপুরাণে শ্রীরুক্মাঙ্গদ-মোহিনী-সংবাদে বলা হচ্ছে- ৭. কার্তিকে তৈল, মধু, কাসার পাত্র ও পঁচা বাসি অম্ল দ্রব্য, আচার ইত্যাদি বর্জন করবে। ৮. হে সুভ্রু! মৎস্য, কচ্ছপ মাংস ঔষধ হিসেবেও অন্য মাংস ভক্ষণ করবে না। কার্তিকে মাংস ভক্ষণে চণ্ডাল হয়। কার্তিক-কৃত্য-বিধি- ১. আশ্বিন মাসের যে শুক্লা একাদশী হবে বা পূর্ণিমাতে, নিরলসভাবে কার্তিক মাসের ব্রতসমূহ ঐ দিন হতে আরম্ভ করবে। ২. নিত্য শ্রীভগবানকে জাগরণ করাবার জন্য রাত্রির শেষ প্রহরে উঠে শুচি হয়ে শ্রীভগবানকে জাগিয়ে অনন্তর স্তোত্র পাঠসহ প্রভুর আরতি করবে। ৩. বৈষ্ণববৃন্দসহ আনন্দে বৈষ্ণবধর্মসমূহ শ্রবণ করে গীতবাদ্যাদিসহ প্রাতঃকালে প্রভু দামোদরদেবকে আরতি করবে। ৪. নদী আদি জলাশয়ে গিয়ে আচমনপূর্বক সংকল্প করবে। প্রভুকে প্রার্থনা জানিয়ে পরে তাঁকে যথাবিধি অর্ঘ্যদান করবে। ৫. সংকল্পমন্ত্র- হে জনার্দন! হে দেবেশ! হে দামোদর! শ্রীরাধিকাসহ আপনার প্রীতির জন্য কার্তিকে আমি প্রাতঃস্নান করব। ৬. প্রার্থনা মন্ত্র- হে দেবেশ! তোমার ধ্যানসহ এই জলে আমি স্নান করতে উদ্যত, হে দামোদর! তোমার প্রসাদে আমার পাপ বিনাশ যাক। ৭. অর্ঘ্যমন্ত্র-আমি কার্তিক মাসে বিধিবৎ স্নানকারী, হে দামোদর! হে দনুজেন্দ্রনিসূদন আমার প্রদত্ত অর্ঘ্য গ্রহণ কর। ৮. নিজদেহকে তিলকদ্বারা লেপন করে শ্রীকৃষ্ণ নারায়াণাদি নাম উচ্চারণ পূর্বক স্নান করে নিজ বিধিমতে সন্ধ্যা উপাসনা করে গৃহে আগমন করবে। ৯. দেবমন্দির অগ্রে মার্জনা করে স্বস্তিকমণ্ডল রচনা করে প্রভুকে তুলসী, মালতী, পদ্ম, অগস্ত (বক) পষ্পাদি দ্বারা অর্চনা করবে। ১০. নিত্য বৈষ্ণব সঙ্গে ভগবৎ কথা সেবন, অহোরাত্র ঘৃত, দীপ বা তিল দ্বারা অর্চন করবে। ১১. কার্তিক মাসে বিশেষ বিশেষ নৈবেদ্য অর্পন করবে, সেই রকম অষ্টোত্তর শত প্রণাম, যথাশক্তি একবার আহারাদি ব্রত আচরণ করবেন। পদ্মপুরাণে কার্তিক মাস প্রসঙ্গে- ১২. প্রাতঃকালে উত্থান শৌচাদি করে পবিত্র জলাশয়ে গিয়ে বিধিবৎ স্নান, অতপর দামোদর অর্চন কর্তব্য। ১৩. কার্তিক ব্রতধারী মৌন অবলম্বনে ভোজন, ঘৃত দ্বারা বা তিল তৈল দ্বারা দীপাদান কর্তব্য। ১৪. বৈষ্ণববৃন্দসহ কৃষ্ণকথা আলাপ দ্বারা দিন যাপন, কার্তিক মাসে ব্রত সংকল্প পালন। ১৫. আশ্বিনে শুক্লপক্ষের হরিবাসরে আরম্ভ, অথবা পৌর্ণমাসি হতে অথবা তুলারাশি আগমে সংক্রান্তিতে আরম্ভ। ১৬. শ্রীবিষ্ণুর নিকট অখণ্ড দীপদান, দেবালয়ে, তুলসীতে, আকাশে উত্তম দীপ দান করবেন। ১৭. হে ভাবিনি! কার্তিকমাসে কার্তিকব্রত গৃহে করবে না, বিশেষতঃ তীর্থে কার্তিকব্রত সর্বপ্রযত্নে করবে। শ্রীরাধাদামোদর-পূজাবিধি- ১. শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তমা, পোপিকাগণ মধ্যে শ্রেষ্ঠা, কার্তিকে শ্রীদামোদর নিকটে শ্রীরাধিকার পূজা করা উচিত। ২. ব্রজবাসী ব্রাহ্মণ এবং তৎপত্নীকে বস্ত্র, অলঙ্কার ও ভোজনাদি দান দ্বারা পূজা করা কর্তব্য। ৩. হে বিপ্রগণ! কার্তিকে শ্রীরাধিকার সন্তোষের জন্য যিনি শ্রীরাধিকা প্রতিমাকে পূজা করে তার প্রতি শ্রীমান্ দামোদর হরি তুষ্ট হন। ৪. কার্তিকে প্রতিদিন ‘দামোদরাষ্টকম্’ নামক স্তোত্র (সত্যব্রত মুনি কথিত) পাঠ করবে, তা দামোদরের অর্চন স্বরূপ ও শ্রীদামোদরের আকর্ষণকারী। দীপদান’ এবং ‘আকাশ দীপ’ এর মহিমা! স্কন্দপুরাণে পূর্বকালে দ্রাবিড়দেশে বুদ্ধ নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিল খুবই দুষ্টা প্রকৃতির এবং দুরাচার সম্পন্না। ঐ স্ত্রীর সংসর্গে থাকার ফলে ব্রাহ্মণের আয়ু ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হলেন। পতির মৃত্যুর পরেও ঐ স্ত্রীলোকটি আরও বিশেষভাবে ব্যভিচারে লিপ্ত হলো। এমনকি লোকনিন্দার ভয় না করে সে নির্লজ্জের মতো ব্যবহার করতে লাগল। তার কোনো পুত্র বা ভাই ছিল না। সে সর্বদাই ভিক্ষার অন্ন ভোজন করত। নিজের হাতে প্রস্তুত না করে সর্বদাই ভিক্ষার অন্ন ভোজন করত। নিজের হাতে প্রস্তুত না করে সর্বদাই পরের বাড়ি থেকে ভিক্ষা করে বাসি অন্ন খেত এবং অনেক সময় অপরের বাড়িতে রান্না করতে যেত। তীর্থযাত্রা আদি থেকে সর্বদাই দুরে থাকত। সে কখনও কোনো ভালো কথায় কর্ণপাত করত না। একদিন এক বিদ্ধান তীর্থযাত্রী ব্রাহ্মণ তার গৃহে আগমন করল। যার নাম ছিল কুৎস। তাকে (ঐ স্ত্রীকে) ব্যভিচারে আসক্ত দেখে সেই ব্রহ্মর্ষি কুৎস বললেন- ওরে মুর্খ নারী! মনোযোগে সহকারে আমার কথা শ্রবণ কর। পৃথ্বি আদি পঞ্চভূত দ্বারা তৈরী এই রক্তমাংসের শরীর, যা কেবল দুঃখেরই কারণ, তুই তাকে যত্ন করছিস? এই দেহ জলের বুদবুদের মতো, একদিন যা অবশ্যই বিনষ্ট হবে। এই অনিত্য শরীরকে যদি তুই নিজ বলে মানিস্ তাহলে নিজের বিচার পূর্বক এই মোহ পরিত্যাগ কর। ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণ কর এবং তাঁর লীলাকাহিনী শ্রবণ কর। এখন কার্তিক মাস আগত হবে, তখন ভগবান দামোদরের প্রীতি বিধানের জন্য, স্নান, দান আদি কর্ম করে গৃহে বা মন্দিরে বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে দীপ নিবেদন করে শ্রীবিষ্ণুকে পরিক্রমা করবে

ভজ-গোবিন্দম্ (~শ্রীপাদ আদি শঙ্করাচার্য )

20241002 212156 Svadharmam

ভজ-গোবিন্দম্ ( সম্পূর্ণ ) ভজ গোবিন্দং ভজ গোবিন্দং গোবিন্দং ভজ মূঢমতে । সম্প্রাপ্তে সন্নিহিতে কালে নহি নহি রক্ষতি ডুকৃঙ্করণে ॥ ১॥ অর্থ- গোবিন্দের ভজনা করো , গোবিন্দের ভজনা করো, হে মূঢ়মতি ! গোবিন্দের ভজনা করো । মৃত্যুর সমীপ সন্নিকটে ‘ডুকৃঙ্ করণে’ আবৃত্তি তোমায় রক্ষা করতে পারবে না । ( জগৎ গুরু ভগবান আদি শঙ্করাচার্য যখন দেখলেন, অতীব বৃদ্ধ এক ব্রাহ্মণ মৃত্যু কালীন অবস্থায় বসেও, ব্যাকরণের জন্য ‘ডুকৃঙ্ করণে’ নামক একটি ধাতু বারবার আবৃত্তি করে যাচ্ছেন তখন এর অসারতা উপদেশ করে আচার্য তাকে গোবিন্দের ভজনা করতে বলেন । ) মূঢ় জহীহি ধনাগমতৃষ্ণাং কুরু সদ্বুদ্ধিং মনসি বিতৃষ্ণাম্। যল্লভসে নিজকর্মোপাত্তং বিত্তং তেন বিনোদয় চিত্তম্॥ ২॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ- হে মূঢ়জন! কেবলমাত্র অর্থ উপার্জনের তৃষ্ণা পরিত্যাগ করো । এই ধরনের চিন্তা তোমার মনকে কেবলমাত্র জাগতিক করে দেবে, সুতারং মনে এর জন্য বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করো । তোমার উত্তম কর্ম্মের দ্বারা উপার্জিত যে অর্থ, তোমাকে স্বচ্ছল রাখে তার দ্বারাই তোমার মনকে খুশী রাখো। ওহে মূর্খ! নিরন্তর, এই জাগতিক মৃত্যু-গ্রাস থেকে রক্ষাকারী গোবিন্দের ভজনা করো । নারীস্তনভরনাভিদেশং দৃষ্ট্বা মা গা মোহাবেশম্ । এতন্মাংসবসাদিবিকারং মনসি বিচিন্তয় বারং বারম্ ॥ ৩॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ- নারীদের স্তনমন্ডল ও নাভিদেশ মোহের আবেশে দেখে অভিভূত হয়ো না, এসব নিছক মাংস আর মেদ এর বিকার মাত্র। বারবার মনে এই বিচার করো। হে মূঢ়জন! গোবিন্দের ভজনা করো, গোবিন্দের ভজনা করো, সকল মোহ মুক্তির মূল গোবিন্দের ভজনা করো। নলিনীদলগতজলমতিতরলং তদ্বজ্জীবিতমতিশয় চপলম্ । বিদ্ধি ব্যাধ্যভিমানগ্রস্তং লোকং শোকহতং চ সমস্তম্ ॥ ৪॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – জলবিন্দু যেমন পদ্মপত্রের উপর ক্ষণিক সময়ও স্থীর থাকে না, ক্ষণস্থায়ী হয়, তেমনি এই জীবনও অতিশয় চঞ্চল এবং ক্ষণস্থায়ী , অনিশ্চিত । সবসময় জানবে, এই ব্যাধি ও অহংকারগ্রস্থ সমস্ত জগৎ সংসার কেবল এক শোকালয় মাত্র। সুতরাং হে মূঢ়মতি গোবিন্দের ভজনা করো । যাবদ্বিত্তোপার্জনসক্ত-স্তাবন্নিজপরিবারো রক্তঃ । পশ্চাজ্জীবতি জর্জরদেহে বার্তাং কোঽপি ন পৃচ্ছতি গেহে ॥ ৫॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ- ওহে, যতদিন তুমি অর্থ উপার্জন করে যাবে , ততদিন তোমার পরিবার পরিজন তোমার সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখবে ।  (ভালোবাসবে, মিথ্যা প্রশংসা করবে )। পরে যখন জর্জর দেহ নিয়ে বৃদ্ধ হবে তখন গৃহে তোমার সঙ্গে কেউ ভালো করে দুটো কথা অব্দি বলবে না। অতএব, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো । যাবৎপবনো নিবসতি দেহে তাবৎপৃচ্ছতি কুশলং গেহে । গতবতি বায়ৌ দেহাপায়ে ভার্যা বিভ্যতি তস্মিন্কায়ে ॥ ৬॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ-  যতক্ষণ দেহে প্রাণ বায়ুর নিবাস থাকে, ততক্ষণ-ই সবাই তার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে থাকে । প্রাণ বায়ু ত্যাগ হলে, শরীর ত্যাগ করলে ,  লোক তো দূর নিজের স্ত্রীও শবকে ভয় করে দূরে সরে থাকে । (মৃতে ভৌতিক ভয় – [ অথচ একসময় কতই না প্রিয় ছিল ]) সুতরাং, হে মূঢ়মতি (মূর্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো। কারণ মৃত্যুর সন্নিকটে তোমায় আর কেউ ই রক্ষা করতে সক্ষম নয়। (যারা উপর উপর তোমার শরীরের কুশল জিজ্ঞাসা করেছিল তাদের সাথে ঐ শরীর অব্দি ই সম্পর্ক , অথচ তাদের মোহের জন্য তুমি ঈশ্বরের সাধন ভজনের সময় পাচ্ছো না, কী ভয়ানক মোহ তোমায় গিলে রেখেছে ) । বালস্তাবৎ ক্রীড়াসক্তঃ তরুণস্তাবত্তরুণীসক্তঃ । বৃদ্ধস্তাবচ্চিন্তাসক্তঃ পরমে ব্রহ্মণি কোঽপি ন সক্তঃ ॥ ৭॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – বাল্যকাল যায় বালকদের খেলাধুলায় মত্ত থেকে, তারুণ্য যায় তরুণ-তরুণীর প্রতি আকর্ষণ, আসক্তিতে। বার্ধক্যে বৃদ্ধ মগ্ন থাকে নানারকম চিন্তা ভাবনায় । কিন্তু হায়! পরব্রহ্মে কারোর কোনো মন নেই । অতএব, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো । মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবেনা । কা তে কান্তা কস্তে পুত্রঃ সংসারোঽয়মতীব বিচিত্রঃ । কস্য ত্বং কঃ কুত আয়াত-স্তত্ত্বং চিন্তয় তদিহ ভ্রাতঃ ॥ ৮॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – কে তোমার স্ত্রী? কে-ই বা তোমার পুত্র? ওহে! এই সংসার অত্যন্ত বিচিত্র । তুমি-ই বা কে, কার ? কোথা থেকে এসেছ ? হে ভ্রাতা, এই তত্ত্ব বারবার চিন্তন ও বিচার করে দেখো। হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো, মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না । সৎসঙ্গত্বে নিস্সঙ্গত্বং নিস্সঙ্গত্বে নির্মোহত্বম্ । নির্মোহত্বে নিশ্চলতত্ত্বং নিশ্চলতত্ত্বে জীবন্মুক্তিঃ ॥ ৯॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – সৎসঙ্গ হতে নিঃসঙ্গত্ব প্রাপ্ত হয়, নিঃসঙ্গ হলে নির্মোহত্ত (মোহ বিহীন অবস্থা ) প্রাপ্ত হয়। নির্মোহ হলে নিশ্চলতত্ব (নিশ্চল অবস্থা ) প্রাপ্ত হয় । নিশ্চল হলে জীবন মুক্তি হয় ( জীবিত অবস্থায় মুক্ত ) । অতএব, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো, মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না । বয়সি গতে কঃ কামবিকারঃ শুষ্কে নীরে কঃ কাসারঃ । ক্ষীণে বিত্তে কঃ পরিবারঃ জ্ঞাতে তত্ত্বে কঃ সংসারঃ ॥ ১০॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – যৌবন কাল গত হয়ে বার্ধক্য প্রাপ্ত হলে আর কিসের কামানুরাগ? জল শুকিয়ে গেলে সরোবর আর সরোবর কোথায় ? ধনাভাব হলে স্বজন, পরিজন, পরিবার কোথায় যায়? ওহে, তেমনি তত্ত্ব জ্ঞান যখন হয় তখন কোথায় এই সংসার? কিছুই আর থাকে না । সুতরাং, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো, মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না। মা কুরু ধনজযৌবনগর্বং হরতি নিমেষাৎকালঃ সর্বম্ । মায়াময়মিদমখিলং বুধ্বা ব্রহ্মপদং ত্বং প্রবিশ বিদিত্বা ॥ ১১॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – ধন – জন – যৌবনের গর্ব কখনো করো না, সর্বগ্রাসী কাল এসকল কিছুই এক নিমিশে হরণ করে নেয়। এই অখিল ব্ৰহ্মাণ্ড বিশ্ব চরাচর সমস্তই মায়াময়, সুতরাং এই অনিত্য সংসারের প্রতি মায়া পরিত্যাগ করে শীঘ্রই জ্ঞানার্জন করে সত্য স্বরূপ ব্রহ্মপদে প্রবেশ করো। হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো, মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না। দিনয়ামিন্যৌ সায়ং প্রাতঃ শিশিরবসন্তৌ পুনরায়াতঃ । কালঃ ক্রীডতি গচ্ছত্যায়ু-স্তদপি ন মুঞ্চত্যাশাবায়ুঃ ॥ ১২॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – দিন-রাত্রি, সায়ং সন্ধ্যা ও প্রভাত, শীত-বসন্ত,  পুনঃ পুনঃ নিরন্তর আসাযাওয়া করে। (এইরূপে ) কাল এর গতি ক্রিয়া করে চলতে থাকে । আর ক্রমে (জীবের) আয়ু ক্ষয় হয়। কিন্তু তারপরও অভাগা জীব আশাবায়ুর পরিত্যাগ করতে পারে না । অতএব, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো । মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না। কা তে কান্তা ধনগতচিন্তা বাতুল কিং তব নাস্তি নিয়ন্তা । ত্রিজগতি সজ্জনসঙ্গতিরেকা ভবতি ভবার্ণবতরণে নৌকা ॥ ১৩॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – ওহে পাগল! কেনো ধন সম্পত্তির চিন্তায় শোকাকুল হচ্ছো? তোমার কী কোনো পথপ্রদর্শক বা নিয়ন্তা নেই? তোমাকে এই ত্রি-জাগতিক সংসার শোক সাগর হতে কেবলমাত্র একটি জিনিস ই রক্ষা করতে পারে তা হলো যত শীঘ্র সম্ভব সৎসঙ্গের (সজ্জন, জ্ঞানী গুণী সাধুদের সঙ্গ ) নৌকায় চড়ে বসা । সুতরাং, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো । মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না । জটিলো মুণ্ডী লুঞ্ছিতকেশঃ কাষায়াম্বরবহুকৃতবেষঃ । পশ্যন্নপি চ ন পশ্যতি মূঢো হ্যুদরনিমিত্তং বহুকৃতবেষঃ ॥

মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের সর্বোত্তম ‘হরে কৃষ্ণ’ নাম

20240927 153537 Svadharmam

মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের সর্বোত্তম °হরে কৃষ্ণ° নাম শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর রচিত ‘শ্রীকৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম’ হতে আমরা প্রায় সকলেই জানি, ভ্রাতা বলরাম শ্রীকৃষ্ণকে ‘হরে কৃষ্ণ’ নামে ডাকতেন। হরে কৃষ্ণ নাম রাখে প্রিয় বলরাম। ললিতা রাখিল নাম দূর্ব্বাদল শ্যাম। শ্রীকৃষ্ণের এ ‘হরে কৃষ্ণ’ নাম সমগ্র জগতে অতি সমাদৃত। মহাভারতে বহুবার এ নামে শ্রীকৃষ্ণকে স্তব স্তুতি করা হয়েছে। ভগবানের এ দিব্য নাম উচ্চারণে কলিকালে জীব মাত্রেরই উদ্ধার হয়। তাই কলিকালের তারকব্রহ্ম মহামন্ত্রও শুরু হয়েছে ‘হরে কৃষ্ণ’ নামোচ্চারণে। হরে কৃষ্ণ নাম মাহাত্ম্য পদ্মপুরাণাদি নানাবিধ শাস্ত্রে আছে, এগুলো আমরা পরবর্তী পর্বগুলোতে দেখবো। অনেকের ধারণা, ‘হরে কৃষ্ণ’ নামটি বৈষ্ণব কবিদের কল্পিত নাম, শাস্ত্রে উল্লেখ নেই। তাদের এ ধরনের ভ্রান্তির বিপরীতে আজ আমরা মহাভারত হতে দিব্য ‘হরে কৃষ্ণ’ নামের উল্লেখ আছে এমন কয়েকটি প্রমাণ নিবেদন করবো। মহাভারতের দ্রোণ-মহাপর্বে শ্রীকৃষ্ণকে নানাভাবে স্তব স্তুতি করা হয়েছে। সেখানে শ্রীকৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্রে তাকে ‘হরে কৃষ্ণ’ নামে সম্বোধন করা হয়েছে। নমস্তে দেবদেবেশ সনাতন বিশাতন। বিষ্ণো জিষ্ণো ‘হরে কৃষ্ণ’ বৈকুন্ঠ পুরুষোত্তম।। ( মহাভারত, দ্রোণপর্ব ৭৩।১৮ ) বঙ্গানুবাদ: “হে বিষ্ণু! হে জিষ্ণু! হে ‘হরে কৃষ্ণ’! হে বৈকুন্ঠ! হে পুরুষোত্তম! তুমি দেবদেবেশ অর্থাৎ দেবতাদের দেবতা শিবেরও ঈশ্বর, তুমিই সনাতন, তুমিই বিশাতন, তোমাকে নমস্কার।” . মহাভারতের খিলপর্বে পৌন্ড্রক যুদ্ধকালে ভগবানের ‘হরে কৃষ্ণ’ নামোচ্চারণ করে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন, সে যুদ্ধে ভগবান স্বয়ং তাকে সাযুজ্য মুক্তি প্রদান করেন। যদি শক্তো ‘হরে কৃষ্ণ’ দারয়েদং মহাস্পদম্ । ইত্যুক্ত্বা তচ্ছতগুণং ভ্রামযিত্বা মহাবলঃ।। ( মহাভারত, খিলপর্ব্ব-হরিবংশ, ভবিষ্যপর্ব, ১০১।১৫ ) বঙ্গানুবাদ: যদি শক্তি থাকে তবে, হে হরে কৃষ্ণ! এই মহাস্পদ অস্ত্র ছিন্ন করো।’ এ বলে পন্ড্রক মহাবলশালী অস্ত্রটি শতবার ঘুরিয়ে নিক্ষেপ করলেন। . মহাভারতের খিলপর্ব হরিবংশে ঘন্টাকর্ণ নামের এক পিশাচের উপাখ্যান আছে। জীবনের শুরুতে সে মুক্তি লাভের আকাঙ্ক্ষায় শিবের তপস্যা করেছিলেন। কিন্তু শিব উপস্থিত হয়ে তাকে বলেন, ‘মুক্তিদাতা কেবল মুকুন্দ। আমি তোমাকে মুক্তি দিতে পারবো না। অন্য যা কিছু চাও আমি তোমাকে দিবো, কিন্তু মুক্তি পেতে হলে তোমাকে মুকুন্দের নাম জপ করে তপস্যা করতে হবে হবে।’ তখন থেকে ঘন্টাকর্ণ সদা সর্বদা শ্রীকৃষ্ণের নামোচ্চারণ ও লীলামহিমা স্মরণ করে তপস্যা করতে থাকেন। তার দৃঢ়ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ উপস্থিত হলে তিনি ‘হরে কৃষ্ণ’ নামোচ্চারণে তাঁর সম্মুখে আনন্দে উদ্দাম নিত্য করেছিলেন। নমো নমো ‘হরে কৃষ্ণ’ যাদবেশ্বর কেশব । প্রত্যক্ষং চ হরেস্তত্র ননর্ত বিবিধং নৃপ ।। ( মহাভারত,হরিবংশ, ভবিষ্যপর্ব ৮২।৪৩ ) বঙ্গানুবাদ: “হে ‘হরে কৃষ্ণ’, হে যাদবেশ্বর, হে কেশব! আমি আপনাকে বারংবার প্রণাম জানাই।” হে রাজন! এ বলে বলে ঘন্টাকর্ণ ভগবান শ্রীহরির সম্মুখে বিবিধ নৃত্য করতে থাকলেন। . এভাবে মহাভারতের অসংখ্য স্থানে ভগবানের দিব্য ‘হরে কৃষ্ণ’ নামের উল্লেখ আছে, যা উচ্চারণে মানব জীবন সফল হয়, জন্ম সফল হয়, সকল উদ্দেশ্য সাধিত হয়, অন্তিমে শ্রীহরি প্রাপ্তি ঘটে। তাই মৃত্যুশয্যায় ভীষ্মদেব যুধিষ্ঠিরকে বৈষ্ণবধর্ম সম্পর্কিত জ্ঞান দানের পর উপদেশ দিয়েছিলেন, তিনি যেন সর্বোত্তম নাম- কৃষ্ণ নাম জপ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করেন। ভীষ্ম উবাচ- এতত্তে কথিতং রাজন্ ! বিষ্ণুতত্ত্বমনুত্তমম্ । ভজস্বৈনং বিশালাক্ষং জপন্‌ কৃষ্ণেতি সত্তম !।। ( মহাভারত, শান্তিপর্ব ২০৪।৭৭ ) বঙ্গানুবাদ: ভীষ্ম বলিলেন—’সাধুশ্রেষ্ঠ রাজা ! এই আমি তোমার নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ বিষ্ণুতত্ত্ব বলিলাম। তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ নাম- কৃষ্ণ নাম জপ করিতে থাকিয়া এই বিশালনয়ন কৃষ্ণের সেবা কর। . মহাভারতের ভীষ্মপর্বে শ্রীমদ্ভগবদগীতাতেও ভগবানের নাম কীর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- সততং কীর্তয়ন্তো মাং যতন্তশ্চ দৃঢ়ব্রতাঃ। নমস্যন্তশ্চ মাং ভক্ত্যা নিত্যযুক্তা উপাসতে।। ( মহাভারত, ভীষ্মপর্ব, ৩৩।১৪; শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৯।১৪ ) বঙ্গানুবাদ: যারা দৃঢ়ব্রতী ও যত্নশীল মহাত্মারা সর্বদা আমার কীর্তন করে এবং আমাকে প্রণাম করে নিরন্তর যুক্ত হয়ে ভক্তি সহকারে আমার(শ্রীকৃষ্ণের) উপাসনা করে। শাস্ত্রীয় রেফারেন্সগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে গীতাপ্রেস গোরক্ষপুর প্রকাশনী, বিশ্ববাণী প্রকাশনী ও নবভারত পাবলিশার্স এডিশান হতে। BORI CRITICAL EDITION এও একই শ্লোকগুলো বিদ্যমান। অন্যান্য এডিশানগুলোতে অধ্যায়ভেদে বিদ্যমান। সকল কৃতিত্ব মহাভারতের রচয়িতা শ্রীব্রহ্ম-মাধ্ব-গৌড়ীয় সম্প্রদায়ের পরমারাধ্য আচার্য্য শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস ও তার অনুগামী আচার্যবর্গের। হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °  

ইসকনে নারী পুরুষের মধ্যে কেমন সম্পর্কের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে?

20240926 164520 Svadharmam

এই জগতের কল্যাণের স্বার্থে কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এই স্বর্ন সংস্থা স্থাপন করছেন। প্রভুপাদের শিক্ষার একমাত্র আঁধার ছিল জীবনের সকল কার্যে জড় বিষয় পরিত্যাগ করে পারমার্থিক পথনির্দেশ অনুসরণ করা হবে। দেহের কোনো পার্থক্য থাকছে না, “হোক এই দেহটি কোনো নারী অথবা পুরুষের” আমরা সকলেই আত্মা যদি আমরা পারমার্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি। কিন্তু প্রকৃতির নির্দেশ অনুসারে শারীরিক ও মানসিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুরুষ এবং নারীকে ভিন্ন ভিন্নভাবে তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতির বিধি অনুসারে নারীরা সাধারণত বেশিরভাগ আবেগপ্রবণ হয়ে থাকেন, ভগবান তাদের এই বিশেষ গুণটি প্রদান করেছেন যে তারা নিজেদের স্বজন হোক পিতা-মাতা, স্বামী অথবা নিজের সন্তানদের অধিক ভালোবাসার সাথে স্বাচ্ছন্দে রাখতে পারেন। এবং পুরুষরা প্রাকৃতিকভাবে শারীরিক দিক থেকে অধিক শক্তিশালী, রক্ষক, উপার্জনকারী, তার শরণাগত থাকা সকলকে রক্ষা করা। প্রভুপাদ যখন আমেরিকায় গিয়েছেন তখন তিনি দেখছিলেন যে নারীরা পুরুষদের সাথে সমান অধিকার নিয়ে বেশি সচেতন, তারাও চাকরি করছে। তখন প্রভুপাদ সেইভাবেই প্রচার করেছেন তিনি কখনই তাদের বাধা দেননি চাকরি বা অন্যান্য বিষয়ে। তিনি তাদের চারটি বিধিনিষেধ দিয়েছিলেন। যা আমরা সকলেই জানি। এরমধ্যে একটি প্রধান হচ্ছে অবৈধ সঙ্গ বর্জন করা। এবার মূল বিষয়ে আসছি, শ্রীল প্রভুপাদ চেয়েছিলেন এমন একটি সংস্থা হবে যেখানে নারী পুরুষ উভয়ই সমানভাবে কৃষ্ণভাবনামৃতের আশ্রয় গ্রহণ করবে এবং জগতের কল্যাণের স্বার্থে সেই বৈদিক সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার করবে। কিন্তু এখনকার বর্তমান সমাজে কিছু ছেলেমেয়েরা এই প্রচার ও প্রসারের নাম দিয়ে অবাধে মেলামেশা করছে। অনেকে এটাকে কৃষ্ণভাবনাময় সম্পর্ক নামক আখ্যা দিয়ে থাকেন যা তথাকথিত বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড অথবা বেস্টফ্রেন্ড হিসেবেও পরিচিত। যা কখনোই প্রভুপাদের দৃষ্টিকোণ ছিল না। শ্রীল প্রভুপাদ তার ১৭ নভেম্বর, ১৯৭১, দিল্লিতে একটি প্রবচনে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন: – বিবাহ করা অপরিহার্য। আমাদের সংস্থার বিষয়ে বিবেচনা করা হলে, আমরা আমাদের সংস্থায় কাউকে বন্ধু, গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড হিসেবে থাকার স্বীকৃতি দেই না। না। তাদের অবশ্যই বিবাহিত হতে হবে এবং এই ছেলে-মেয়েরা, বিবাহিত হওয়ার পর, তারা সুন্দরভাবে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করছে। আমার সমস্ত শিষ্য যারা বিবাহিত, তারা সন্ন্যাসীর চেয়ে বেশি প্রচারকার্য করছে। অর্থাৎ এই কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘে দুজন সম্পর্ক বিহীন পুরুষ নারী কখনোই অবাধে মেলামেশা করতে পারবে না। তাদের অবশ্যই কোনো বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এটাই আমাদের বৈদিক সংস্কৃতি। কিন্তু আমরা যদি পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অনুসরণ করি এবং এই কৃষ্ণভাবনামৃতের নাম দিয়ে অবৈধ সঙ্গ করি তাহলে তা হচ্ছে প্রতারণার স্বরূপ। শ্রীল প্রভুপাদ প্রায়শই বৈদিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা করেছেন। প্রভুপাদ তখনকার সময় উল্লেখ করে বলছিলেন- “বৈদিক সংস্কৃতি এতই কঠোর ছিল যে তুমি তার (নারীর) দিকে তাকাতেও পারবে না, তার সাথে কথা বলার বা কিছু প্রস্তাব করার বিষয়ে প্রশ্নই আসে না।” এতেই বোঝা যায় পুরুষরা তাদের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা তাদের দিকে তাকাতে পারতোনা। তাহলে কৃষ্ণভাবনামৃতের এই প্রচার এত সহজ করে দেওয়ার পরেও কেনো এই অবৈধ সঙ্গে লিপ্ত হচ্ছি তাও নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য। শ্রীল প্রভুপাদ আরো উল্লেখ করেছেন যে, পতিব্রতা পত্নী হচ্ছেন তিনি, যাঁর বিবাহের পূর্বে কোন পুরুষের সঙ্গে কোন সম্পর্ক ছিল না। স্ত্রীদের যদি যৌবনে পুরুষদের সঙ্গে মেলামেশা করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়, তা হলে তার সতীত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়। সাধারণত তাদের সতীত্ব থাকে না। আগুনের সামনে মাখন আনলে তা গলবেই। স্ত্রী হচ্ছে আগুনের মতো এবং পুরুষ মাখনের মতো। ~শ্রীমদ্ভাগবত ৪.২৬.১৬ ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য। সাধারণত বিবাহিতা স্ত্রী ব্যতীত অন্য কারও সঙ্গে পুরুষের যৌনসঙ্গে লিপ্ত হওয়া উচিত নয় এবং শাস্ত্র বিরুদ্ধ। বৈদিক বিধান অনুসারে, অপরের স্ত্রীকে মাতৃবৎ দর্শন করা উচিত, এবং মাতা, ভগিনী ও কন্যার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কেউ যদি পরস্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়, তা হলে তা মায়ের সঙ্গে যৌনসঙ্গে লিপ্ত হওয়ার মতো বলে বিবেচনা করা হয়। সেই আচরণ অত্যন্ত পাপময়। স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রেও সেই নিয়ম বলবৎ রয়েছে, কোন স্ত্রী যদি তার পতি ব্যতীত অন্য কোন পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়, তা হলে সেই সম্পর্ক পিতা অথবা পুত্রের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার মতো। ~শ্রীমদ্ভাগবত ৫.২৬.২০ ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য। শ্রীল প্রভুপাদ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন ইন্দ্রিয়তর্পণ করার জন্যে এসব অবাধে মেলামেশা করা চলবে না। যদি কোনো পুরুষ বা নারী এভাবে অবাধে মেলামেশা করে তবে আগুনের ন্যায় নারীদের সম্মুখে পুরুষের ন্যায় ঘি অবশ্যই গলবে। এবং একসময় তারা অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হবে। তখন একজন নারীর সতীত্ব বজায় রাখা কঠিন হবে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কি প্রভুপাদ নারীদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছেন? না একদমই না। প্রথমত এসব অবাধে মেলামেশা কখনোই স্বাধীনতা হতে পরে না। কিন্তু প্রভুপাদ প্রচারে কঠোর নিয়ম অনেকটাই শিথিল করেছেন। যেমন আমি প্রথম দিকেই বলেছি প্রভুপাদ যখন তিনি আমেরিকায় প্রচারে যান তখন তিনি মাতাজীদের চাকরি করায় বাধা দেননি। তিনি বলেছেন এর মধ্যেই তোমরা কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করবে, কিছু সীমানা বজায় রেখে। তিনি অনেকটাই শিথিল করেছিলেন। তখনকার সময়ে তিনি মাতাজীদের অনেক মন্দিরের অধ্যক্ষের পদ দিয়ে গিয়েছিলেন। Some words on this topic – একটি ঘটনায় দেখা যায় প্রচারকালে প্রভুপাদ বিভিন্ন ভক্তদের মাঝে কথোপকথনে তিনি একটি ভূ-গোলক রেখে সেই নকশা থেকে তাদের মাঝে প্রচারের জন্য দেশের বিভক্তি করেছিলেন, এবং বলছিলেন তুমি এই দেশে যাবে, তুমি ওই দেশে যাবে ওখানে গিয়ে প্রচার করবে। পেছনে কিছু মাতাজী শিষ্যরাও ছিলেন। তারা প্রভুপাদ কে জিজ্ঞাসা করছিলেন, প্রভুপাদ আমরা কি কিছু পাবো না। তখন প্রভুপাদ বলছেন- না না তোমরা এই দেশটা নাও প্রচারের জন্য। যেনো তিনি দেশ স্বরূপ প্রসাদ বিতরণ করছেন। এবং আমরা দেখতে পাই যে প্রভুপাদের শিষ্যগণ ঠিক কিভাবে বিভিন্ন দেশে নগরে গ্রামে প্রচার করেছিলেন। এখন পুরো বিশ্বে সেই প্রচার প্রসিদ্ধ। এমনকি প্রভুপাদ তাঁর শিষ্যাদের নিজের পূত্রীস্বরূপ দেখতেন, তাই তাদের মধ্যে কোনো বিভাজন করেননি। আমি কিছুকাল পূর্বেই প্রভুপাদের একজন শিষ্যা শ্রীমতী মালতি মাতাজীর প্রভুপাদ স্মরণামৃত তে শুনছিলাম, তিনি কিছু ঘটনা উল্লেখ করছিলেন:- তৎকালীন মায়াপুর তখন মায়াপুরে ভক্তদের থাকার জায়গা অনেকটাই সংকীর্ণ ছিল মন্দির ছিল না বললেই চলে। তখন মালতি মাতাজী ভাবছিলেন “এমন স্থানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।” তিনি ভাবছিলেন আমি প্রভুপাদের সাথে কথা বলে এখন থেকে অন্যস্থানে চলে যাবেন প্রচারে। একদিন প্রভুপাদ ও তাঁর গুরু ভ্রাতারা প্রসাদ আস্বাদন করছিলেন। মালতি মাতাজী তাদের সকলকে পরিবেশন করছিলেন।যখন মাতাজী প্রসাদ নিয়ে যাচ্ছেন তখন হটাৎ প্রভুপাদ তার দিকে আঙুল দিয়ে তাঁর গুরুভ্রাতাদের দেখাচ্ছিলেন যে “এই দেখো ও আমার মেয়ে, তোমরা জানো সে আমাকে কতটা ভালোবাসে সে আমার জন্য নিজের জীবন দিতে পারবে এবং আমি ওর জন্য নিজের গলা কাটাতেও প্রস্তুত।” তখন মালতি মাতাজী হটাৎ আলাদা স্থানে গিয়ে কান্না শুরু করলেন- “প্রভুপাদ আমার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আর আমি এটা কি চিন্তা করছিলাম।” তখন তিনি ঠিক করলেন যা কিছুই হোক তিনি প্রভুপাদকে ছেড়ে এই মায়াপুর কে ছেড়ে কোথাও যাবেন না। এবং প্রভুপাদ পুরুষের কথাও উল্লেখ্য করছেন যে, শ্রীমদ্ভাগবতে উল্লেখ রয়েছে যদি কোনো পুরুষ কোনো নারীর দিকে কুদৃষ্টিতে তাকায় তাহলে তা ধর্ষনের সমতুল্য। প্রভুপাদ আরো বলেছেন, যদি কোনো পুরুষ চারটি বিধিনিষেধ