‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্রের অর্থ -শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরকৃত
‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্রের অর্থ -শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরকৃত হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রের গূঢ় তত্ত্ব। মহামন্ত্রের অষ্টশ্লোকে সম্মন্ধ, অভিধেয়, প্রয়োজন তত্ত্ব।। হরেকৃষ্ণ ষোলনাম অষ্টযুগ হয়। অষ্টযুগ অর্থে অষ্টশ্লোক প্রভু কয়।। আদি হরেকৃষ্ণ অর্থে অবিদ্যাদমন। শ্রদ্ধার সহিত কৃষ্ণনামসংকীর্তন।। -[হরে কৃষ্ণ] আর হরেকৃষ্ণ নাম কৃষ্ণ সর্বশক্তি। সাধুসঙ্গে নামাশ্রয়ে ভজনানুরক্তি।। সেইত ভজনক্রমে সর্ব্বনর্থনাশ। অনর্থাপগমে নামে নিষ্ঠার বিকাশ।। – [হরে কৃষ্ণ] তৃতীয়ে বিশুদ্ধতক্ত চরিত্রের সহ। কৃষ্ণ কৃষ্ণ নামে নিষ্ঠা করে অহরহ।। -[কৃষ্ণ কৃষ্ণ] চতুর্থেতে অহৈতুকী ভক্তি উদ্দীপন। রুচি সহ হরে হরে নামসংকীর্তন।। -[হরে হরে] পঞ্চমেতে শুদ্ধ দাস্য রুচির সহিত। হরেরাম সংকীর্তন স্মরণবিহিত।। -[হরে রাম] ষষ্ঠে ভাবাঙ্কুরে হরে রামেতি কীর্তন। সংসারে অরুচি কৃষ্ণে রুচি সমর্পণ।। -[হরে রাম] সপ্তমে মধুরাসক্তি রাধাপদাশ্রয়। বিপ্রলম্ভে রামরাম নামের উদয়।। -[রাম রাম] অষ্টমে ব্রজেতে অষ্টকাল গোপীভাব। রাধাকৃষ্ণ প্রেম সেবা প্রয়োজন লাভ।। -[হরে হরে] -শ্রীভজন রহস্যম্। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর
‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্রের অর্থ -শ্রীল গোপালগুরু গোস্বামী প্রভুপাদ কৃত।
‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্রের অর্থ -শ্রীল গোপালগুরু গোস্বামী প্রভুপাদ কৃত। বক্রেশ্বর পণ্ডিতের শিষ্য এবং ধ্যানানন্দ গোস্বামীর গুরুদেব গোপালগুরু গোস্বামী পাঁচশো বছর পূর্বে জগন্নাথ পুরীতে থাকতেন এবং নিয়মিত মহাপ্রভুর সঙ্গ করতেন। তাঁর প্রদত্ত মহামন্ত্রের অর্থ শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর তার ভজনরহস্য গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং পয়ার ছন্দে তার অর্থ ব্যাখা করেছেন। শ্রীল গোপালগুরু গোস্বামী প্রভুপাদ কৃত অর্থ: বিজ্ঞাপ্য ভগবত্তত্ত্বং চিদ্ঘনানন্দবিগ্রহম্। হরত্যবিদ্যাং তৎকার্যমতো হরিরিতি স্মৃতঃ হরতি শ্রীকৃষ্ণমনঃ কৃষ্ণাহ্লাদস্বরূপিণী। অতো হরেত্যনেনৈব শ্রীরাধা পরিকীর্তিতা।। অনুবাদ: ভগবত্তত্ত্ব অর্থাৎ শ্রীভগবান্ চিদ্ঘনানন্দবিগ্রহ জানিতে হইবে। তিনি অবিদ্যা হরণ করেন বলিয়া ‘হরি’-নামে স্মরণীয়। শ্রীকৃষ্ণাহ্লাদ-স্বরূপিণী শ্রীরাধা শ্রীকৃষ্ণমন হরণ করেন বলিয়া ‘হরা’ নামে পরিকীর্তিতা। . আনন্দৈকসুখস্বামী শ্যামঃ কমললোচনঃ। গোকুলানন্দনো নন্দনন্দনঃ কৃষ্ণ ঈর্যতে॥ অনুবাদ: আনন্দৈক-সুখস্বামী অর্থাৎ (শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তি) আনন্দস্বরূপা শ্রীমতী রাধিকার একমাত্র সুখস্বরূপ স্বামী কমললোচন শ্যাম গোকুলের আনন্দজনক নন্দনন্দন ‘কৃষ্ণ’-সংজ্ঞায় সংজ্ঞিত। . বৈদগ্ধ্য-সারসর্বস্বং মূর্তিলীলাধিদৈবতম্। রাধিকাং রময়ন্নিত্যং রাম ইত্যভিধীয়তে॥ অনুবাদ: শ্রীকৃষ্ণ বৈদগ্ধ্যসার-সর্বস্ব এবং মূর্ত-লীলার অধিদেবতা। শ্রীরাধিকার নিত্য রমন অর্থাৎ প্রীতিবর্ধনের জন্য তিনি ‘রাম’- নামে অভিহিত। . শ্রীল গোপালগুরু গোস্বামীকৃত নামার্থের শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর কৃত ভাষ্য (‘ভজনরহস্য’ গ্রন্থে) চিদ্ঘন আনন্দরূপ শ্রীভগবান্। নামরূপে অবতার এইত’ প্ৰমাণ।। অবিদ্যাহরণ কার্য হৈতে নাম হরি। অতএব হরে কৃষ্ণ নামে যায় তরি’॥ কৃষ্ণাহ্লাদস্বরূপিণী শ্রীরাধা আমার। কৃষ্ণমন হরে তাই হরা নাম তাঁর॥ রাধাকৃষ্ণ-শব্দে শ্রীসচ্চিদানন্দ রূপ। হরে কৃষ্ণ শব্দে রাধাকৃষ্ণের স্বরূপ॥ আনন্দ-স্বরূপ-রাধা তাঁর নিত্য স্বামী। কমললোচন শ্যাম রাধানন্দকামী॥ গোকুল-আনন্দ নন্দনন্দন শ্ৰীকৃষ্ণ। রাধাসঙ্গে সুখাস্বাদে সর্বদা সতৃষ্ণ॥ বৈদগ্ধ্য-সার-সর্বস্ব মূর্ত-লীলেশ্বর। শ্রীরাধারমণ রাম নাম অতঃপর॥ হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র শ্রীযুগল-নাম। যুগল লীলার চিন্তা কর অবিরাম॥ ।।হরে কৃষ্ণ।। স্বধর্মম্
শ্রীরামচন্দ্র কি স্বৈরাচারী শাসক ছিলেন?
প্রভু শ্রীরামচন্দ্র কি স্বৈরাচারী শাসক ছিলেন? না। রামায়ণে এ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে, প্রভু শ্রীরামচন্দ্রের শাসন চলাকালীন একদা একসময় রাজ্যের প্রজারা কেমন আছেন বর্ণনা করতে, শ্রীভরত করজোড়ে প্রভু শ্রীরামচন্দ্রকে বললেন- জীর্ণানামপি সত্ত্বানাং মৃত্যুর্নায়াতি রাঘব। অরোগপ্রসবা নার্যো বওুষ্মস্তো হি মানব।।১৯।। হর্ষশ্চাভ্যধিকো রাজঞ্জনস্য পরবাসিনঃ। কালে বর্ষতি পর্জন্যঃ পাতয়ান্নমৃতং পরঃ।।২০।। বাতাশ্চাপি প্রবাস্ত্যেতে স্পর্শযুক্তাঃ সুখাঃ শিবাঃ। ঈদৃশো নশ্চিরং রাজা ভবেদিতি নরেশ্বরঃ।।২১।। কথয়ন্তি পরে রাজন্ পৌরজানপদস্তেথা। [ শ্রীমদবাল্মীকি রামায়ণ, উত্তরকাণ্ড ৪১।১৯-২২] বঙ্গানুবাদ: হে রাঘব, নারীগণ বিনা কষ্টেই প্রসব করছেন। সকল মানুষকেই হৃষ্টপুষ্ট দেখা যাচ্ছে। হে রাজন্ ! পুরবাসীদের মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে রয়েছে। মেঘ ঠিক সময়মতো অমৃত সমান জলবর্ষণ করছে। বায়ু এমনভাবে বইছে যে, তার স্পর্শ শীতল ও সুখদায়ক মনে হচ্ছে। রাজন্ ! নগর ও জনপদের লোকে বলা-বলি করছে যে, পুরীতে চিরকাল ধরে এমনই প্রভাবশালী রাজা যেনো থাকে। . শ্রীমদ্ভাগবতে প্রভু শ্রীরামচন্দ্রের রাজত্ব সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে- নাধিব্যাধিজরাগ্লানিদুঃখশোকভয়ক্লমাঃ। মৃত্যুশ্চানিচ্ছতাং নাসীদ্ রামে রাজন্যধোক্ষজে।। [ শ্রীমদ্ভাগবত ৯।১০।৫৩ ] বঙ্গানুবাদ: ভগবান শ্রীরামচন্দ্র যখন এই পৃথিবীতে রাজত্ব করেছিলেন, তখন (প্রজাদের) সমস্ত দৈনিক এবং মানসিক ক্লেশ, ব্যাধি, জড়া, সন্তাপ, দুঃখ, শোক, ভয় ও ক্লান্তি সম্পূর্ণরুপে অনুপস্থিত ছিল। এমনকি ইচ্ছা না করলে মৃত্যুও কারো কাছে উপস্থিত হতো না। . রামায়ণে যুদ্ধকাণ্ডে এ সম্পর্কে আরো উল্লেখ রয়েছে- ন পর্যদেবন্ বিধবা ন চ ব্যালকৃতং ভয়ম্। জনন ব্যাধিজং ভয়ং চাসীদ্ রামে রাজ্যং প্রশাসতি৷৷ নির্দস্যুরভবল্লোকো নানর্থং কশ্চিদস্পৃশৎ। নচস্ম বৃদ্ধা বালানাং প্রেতকার্যাণি কুর্বতে।। সর্বং মুদিতমেবাসীৎ সর্বো ধর্মপরোহভবৎ। রামমেবানুপশ্যন্তো নাভ্যহিংসন্ পরস্পরম্।। [ শ্রীমদবাল্মীকি রামায়ণ, যুদ্ধকাণ্ড ১২৮।৯৮-১০০] বঙ্গানুবাদ: প্রভু শ্রীরামচন্দ্রের রাজত্বকালে কোনদিন বিধবাদের বিরহ-বিলাপ শোনা যায়নি। সর্পাদি শ্বাপদের ভয় অথবা রোগভয় কখনও প্রাদুর্ভূত হয়নি। সমগ্র রাজ্যের কোথাও চোর-ডাকাতের নাম পর্যন্ত শোনা যেত না। রাজ্যে কেউ অনর্থকারী কার্যে লিপ্ত হোত না কিংবা বৃদ্ধগণের কদাপি নবীনদের জন্য অন্ত্যেষ্টি সৎকার করার প্রয়োজন পড়ত না। সকলে সদা আনন্দে থাকত এবং ধর্মাচরণ করত। প্রভু শ্রীরামচন্দ্রের শাসনে একে অন্যকে হিংসা করত না। অর্থাৎ প্রভু শ্রীরামচন্দ্রের রাজত্বকালে প্রজাদের সুখের কোনো অভাব ছিলো না। প্রজারাও চাচ্ছিলেন পুরীতে চিরকাল ধরে এমনই প্রভাবশালী রাজা যেনো থাকে। ।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
ছাগল-মহিষ বলি নয়! কালীসাধক রামপ্রসাদ ৬ রিপুকে বলি দিতে বলেছেন !!
ছাগল-মহিষ বলি নয়! কালীসাধক রামপ্রসাদ ৬ রিপুকে বলি দিতে বলেছেন !! হিন্দু সমাজের অন্যতম সংস্কারক কালীসাধক রামপ্রসাদ সেন পশুবলি কুপ্রথা বিরুদ্ধে ছিলেন সরব। ধর্মের মিথ্যা দোহাই দিয়ে পশুহত্যা করে মন্দিরকে কসাইখানায় পরিনত করাকে নিন্দার দৃষ্টিতে দেখতেন শুদ্ধ সরল হৃদয় মাতৃসাধক রামপ্রসাদ সেন। নিজের ভিতরে থাকা কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য নামক ষড় রিপুরূপী অসুরকে বলি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মায়ের আশীর্বাদপুষ্ট এ কালীসাধক, রচনা করেন কালবিজয়ী একাধিক রামপ্রসাদী শ্যামাসঙ্গীত। “মেষ ছাগল মহিষাদি, কাজ কী রে তোর বলিদানে । তুমি জয় কালী জয় কালী বলে, বলি দেও ষড় রিপুগণে ॥ তুমি জয় কালী বলি দেও করতালি, মন রাখো সেই শ্রীচরণে ॥” তামসিক পুজারীরা কামনা বাসনা চরিতার্থে অবলা জীবের রক্ত কালীর নিকট মানত করে। কালীসাধক রামপ্রসাদ তাদের সর্তক করে বলেছেন অবলা জীবের জীবন নিয়ে মা কালীর সাথে ঘুষের ব্যবসা চলবে না। কারণ, মা কখনো সন্তানের রক্ত চান না। “মেষ-মহিষ আর ছাগলছানা। জানিস মুক্তকেশী কালী আমার। কারো কাছে ঘুষ খাবেনা।।” যুগে যুগে হিন্দু সমাজে মহান কিছু সমাজ সংস্কারকের মুহুর্মুহু প্রচেষ্টায় হিন্দু সমাজ হতে যেরূপে সতীদাহ কিংবা নরবলির মতো কুপ্রথার বিলুপ্তি ঘটেছে, ঠিক তেমনিভাবে বর্তমানে জাগ্রত সচেতন হিন্দু সমাজের অবারিত প্রচেষ্টায় তামসিক পূজা বহুলাংশে কমে গেছে, ধীরে ধীরে পূজায় পশুবলি, মদ-মাদক সেবন কিংবা ডিজে বাজানোর মতো কুপ্রথা অনেক কমেছে। আশা করা যায়, অতি অল্প সময়ের মধ্যে এ সমস্ত কুপ্রথা থেকে সনাতনী সমাজ মুক্ত হবে, সমুন্নত হবে সাত্ত্বিক চেতনা। ।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
বৈদিক শাস্ত্রে কোথায় শ্রীমতি রাধারাণীর উল্লেখ রয়েছে?
বৈদিক শাস্ত্রে কোথায় শ্রীমতি রাধারাণীর উল্লেখ রয়েছে? বেদ সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। বেদ বা শ্রুতি শাস্ত্র প্রধানত চার প্রকার- ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ববেদ। প্রত্যেক বেদ-এর চারটি করে অংশ থাকে। যথা- সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ। সনাতন শাস্ত্রে শ্রীমতি রাধারাণীকে ‘বৃষভানুনন্দিনী’, ‘বার্ষভানবী’ ‘গান্ধর্ব্বী’ ইত্যাদি নামে সম্বোধন করা হয়েছে। শ্রুতি বা বেদ শাস্ত্রে বিশেষ করে ঋগ্বেদ, সামবেদ এবং অথর্ববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদে শ্রীমতি রাধারাণীর বহু উল্লেখ দেখা যায়। এছাড়াও নারদীয় মহাপুরাণ, পদ্ম মহাপুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত মহাপুরাণ, বরাহপুরাণ, স্কন্দ পুরাণ, মৎস্য পুরাণ, ব্রহ্মান্ড পুরাণ, গর্গ-সংহিতা, সনৎকুমার সংহিতা ও নারদ-পঞ্চরাত্র ইত্যাদি শাস্ত্রেও বিশেষভাবে শ্রীমতি রাধারাণীর মহিমা বর্ণিত রয়েছে। শ্রুতি বা বেদ শাস্ত্রে শ্রীমতি রাধারাণী – স্তোত্রং রাধানাং পতে গির্বাহো বীর যস্য তে। বিভূতিরস্তু সূনৃতা ॥ [ ঋগ্বেদ সংহিতা ১।৩০।৫; সামবেদ সংহিতা, উত্তরার্চিক ১৬।৩।৮ ; সামবেদ-১৬০০ ] বঙ্গানুবাদ: হে রাধাপতি (ঐশ্বর্যের পতি), হে বীর! প্রশস্তি দ্বারা স্তুত, যে তোমার স্তুতি করে সে সমৃদ্ধি ও আনন্দ লাভ করে। অর্থাৎ তাঁর সত্য রূপা প্রিয় সমৃদ্ধি লাভ হয়। ইদং হ্যন্বোজসা সুতং রাধানাং পতে। পিবা ত্বাস্য গিৰ্বণঃ ॥ [ ঋগ্বেদ সংহিতা ৩।৫১।১০; সামবেদ সংহিতা, উত্তরার্চিক ২।৩।১ ; সামবেদ-৭৩৭ ] বঙ্গানুবাদ: হে রাধাপতি (ঐশ্বর্যের পতি), হে স্তুতিপ্রিয়! তেজ দ্বারা সম্পন্ন এই মধুর সোমরস তোমার পানের জন্য। তুমি এসে পান কর। তস্য মধ্যে হি শ্রেষ্ঠা গান্ধর্ব্বীত্যুবাচ। তং হি বৈ তাভিরেরং বিচার্য্য।। [ অথর্ববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদ, উত্তরবিভাগ, মন্ত্র ৯ ] বঙ্গানুবাদ: গোপীদিগের মধ্যে গান্ধর্ব্বী ( রাধারাণীর একটি নাম) নামে এক প্রধানা গোপী তাঁদের সাথে বিচার করে জিজ্ঞাসা করলেন। দ্বে পার্শ্বে চন্দ্রাবলী রাধিকা চেতি যস্যাংশেন লক্ষ্মীদুর্গাদিকা শক্তিরিতি। [ অথর্ববেদ, পুরুষবোধিনী উপনিষদ, ১ম প্রপাঠক ] বঙ্গানুবাদ: “তাঁর(শ্রীকৃষ্ণের) দুই পাশে চন্দ্রাবলী ও রাধিকা। এই রাধিকা হলেন কৃষ্ণের স্বরূপশক্তি যার অংশে লক্ষ্মী দুর্গাদি শক্তি।” এ শ্রুতি মন্ত্রে লক্ষ্মী,দূর্গা প্রাকৃত দেবী নন। ইনারা চিন্ময়ধামস্থিত মহালক্ষ্মী, মহাদূর্গাদি দেবী। তস্যাদ্যা প্রকৃতী রাধিকা নিত্যা নির্গুণা সর্বালঙ্কারশোভিতা প্রসন্নাশেষলাবণ্যসুন্দরী । অস্মদাদীনাং জন্ম তদধীনং অস্যাংশাদ বহুবো বিষ্ণুরুদ্রাদয়ো ভবন্তি । [ অথর্ববেদ, পুরুষবোধিনী শ্রুতি, ৩য় প্রপাঠক ] বঙ্গানুবাদ: সেই পরমপুরুষের আদ্যা প্রকৃতি রাধিকা। তিনিও শ্রীকৃষ্ণের নিত্যা অর্থাৎ কেবল দ্বাপরে কুব্জাদির ন্যায় কৃষ্ণ লীলা সঙ্গিনী নন। শ্রীকৃ্ষ্ণের ন্যায় তিনিও নির্গুণা অর্থাৎ গুণাতীত। সর্ব অলঙ্কারে সুশোভিতা, প্রসন্না অশেষলাবণ্যবতী আমাদের সকলের আদি, তাঁর অংশে কোটি বিষ্ণুরুদ্রাদির জন্ম হয়। . পুরাণ শাস্ত্রে শ্রীমতি রাধারাণী: অথর্ববেদীয় ছান্দোগ্য উপনিষদ-৭।১।২ মন্ত্রে, পুরাণ ও ইতিহাস শাস্ত্রকে পঞ্চম বেদ বলা হয়েছে, “ইতিহাসপুরাণং পঞ্চমং বেদানাং”। দেবী কৃষ্ণময়ী প্রোক্তা রাধিকা পরদেবতা। সর্বলক্ষ্মীস্বরূপা সা কৃষ্ণাহ্লাদস্বরূপিণী।। [ পদ্মপুরাণ, পাতালখন্ড, ৫০।৫৩ ] বঙ্গানুবাদ: দেবী রাধিকা কৃষ্ণময়ী। তাই তিনি পরদেবতা রূপে কথিতা হন। তিনি সর্বলক্ষ্মীরূপিণী এবং কৃষ্ণের হ্লাদিনী স্বরূপা। . পদ্মপুরাণে আরো উল্লেখ রয়েছে – কথিতুং তৎফলং পুণ্যং ন শক্নোত্যপি নারদ । কোটিজন্মাৰ্জ্জিতং পাপং ব্রহ্মহত্যাদিকং মহৎ। কুৰ্ব্বন্তি যে সকৃদ্ভক্ত্যা তেষাং নশ্যতি তৎক্ষনাৎ।। [ পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মখণ্ড ৭।৭] বঙ্গানুবাদ: যে সকল মানুষ ভক্তিভরে একবার মাত্র এই মহাপবিত্র শ্রীরাধাষ্টমী ব্রত পালন করে থাকেন, সেই সকল মানুষের কোটি জন্মের ব্রহ্মহত্যাদি সমস্ত মহাপাপ তৎক্ষনাৎ বিনাশ হয়ে যায়। . পদ্মপুরাণে আরো উল্লেখ হয়েছে – বামপার্শ্বে স্থিতাং তস্য রাধিকাঞ্চ স্মরেত্ততঃ। নীলচোলকসংবীতাং তপ্তহেমসমপ্রভাম্।। পট্টাঞ্চলেনাবৃতার্দ্ধ-সুস্মেরাননপঙ্কজাম্। কান্তবক্তে ন্যস্তনেত্রাং চকোরীর চলেক্ষণাম।। [ পদ্মপুরাণ, পাতালখন্ড, অধ্যায় ৫০, শ্লোক ৪৪,৪৫ ] বঙ্গানুবাদ: ভক্ত স্মরণ করবে- পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের বামভাগে রাধিকা বিরাজমান রয়েছেন, তাঁর পরিধান-নীলবসন, উত্তপ্ত স্বর্ণের ন্যায় তাঁর দেহপ্রভা; তাঁর ঈষৎ হাসিযুক্ত মুখপদ্ম আঁচলে অর্ধাবৃত। চকোরী পাখি যেমন চন্দ্রের অমৃত কিরণ পান করেন, তেমনি শ্রীমতি রাধিকা তার চঞ্চল নেত্রযুগল দ্বারা নিজ কান্ত(স্বামী) কৃষ্ণের মুখচন্দ্রের দিকে তাকিয়ে তার রূপমাধুর্য্যসুধা আস্বাদন করছেন। . পদ্মপুরাণে আরও বলা হয়েছে- ততঃ সারিশুকানাঞ্চ শ্রুত্বা বাগাহবং মিথঃ। নির্গচ্ছতস্ততঃ স্থানাদগন্তুকামৌ গৃহং প্রতি ॥ কৃষ্ণঃ কান্তামনুজ্ঞাপ্য গবামভিমুখং ব্রজেৎ। সা তু সূর্যাগৃহৎ গচ্ছেৎ সখীমণ্ডলসংযুতা ॥ [ পদ্মপুরাণ, পাতালখন্ড, অধ্যায় ৫২, শ্লোক ৭৬,৭৭ ] বঙ্গানুবাদ: রাধার ভ্রূভঙ্গী দর্শন ও কৃষ্ণের প্রতি তিরস্কার বাক্য শ্রবণ করার নিমিত্ত শুক-সারিকা- পক্ষিগণ সেখানে উপস্থিত হয়ে নিজেরাই আবার বাগ্যুদ্ধ বাধিয়ে দিলো। রাধা- কৃষ্ণ তাদের বাগযুদ্ধ শ্রবণ করে গৃহগমনাভিলাষে সেখান হতে বহির্গত হন। কৃষ্ণ তার কান্তা(পত্নী) শ্রীমতি রাধিকার অনুমতি নিয়ে গাভীবৃন্দের অভিমুখে গমন করেন। শ্রীমতি রাধা সখীগণসমভিব্যাহারে সূর্য্য পূজা করার জন্য সূর্য্য-গৃহে গমন করেন। . নারদীয় মহাপুরাণে উল্লেখ রয়েছে – কদাচিৎ তয়া সার্দ্ধ স্থিতস্য মুনিসত্তম কৃষ্ণস্য। বামভাগাৎ জাতো নারায়ণঃ স্বয়ম্।। রাধিকায়াশ্চ বামাংগান্মহালক্ষ্মীভূব হ। ততঃ কৃষ্ণো মহালক্ষ্মীং দত্ত্বা নারায়ণায় চ।। বৈকুন্ঠ স্থাপযামাস শশ্বত্পালনকর্মণি।। [ নারদীয় মহাপুরাণ, পূর্বভাগ, ৩।৮৩।১২-১৪ ] বঙ্গানুবাদ: হে মুনিসত্তম, কোনো এক সময় অর্ধাঙ্গিনী রাধা সহিত অবস্থানকালে কৃষ্ণের বামাঙ্গ থেকে নারায়ণ জাত হলো আর শ্রীমতি রাধিকার বামাঙ্গ হতে মহালক্ষ্মীর আবির্ভাব হলো। কৃষ্ণ তখন মহালক্ষ্মী নারায়ণকে প্রদান করলেন এবং বৈকুণ্ঠে স্থিতি প্রদান করে নিত্য পালনকার্যে নিযুক্ত করলেন। . স্কন্দপুরাণে উল্লেখ রয়েছে – বৃষভানুসুতাকান্তবিহারে কীর্ত্তনশ্রিয়া। সাক্ষাদিব সমাবৃত্তে সর্ব্বেহনন্যদৃশোহভবন।। [ স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখন্ড, শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম, অধ্যায় ২ ৩১ ] বঙ্গানুবাদ: বৃষভানুর কণ্যা শ্রীমতি রাধিকার কান্ত(পতি) সাক্ষাৎ কৃষ্ণের বিহারভূমি কীর্ত্তনসমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ হলো এবং সকলেই যেন অনন্য নয়ন হয়ে সেই উৎসব দর্শন করিতে লাগিলেন। শিব পুরাণে বলা হয়েছে- কালবতীসুতা রাধা সাক্ষাদগোলোকবাসিনী। গুপ্তস্নেহানিবদ্ধা সা কৃষ্ণপত্নী ভবিষ্যতি।। [ শিব মহাপুরাণ, রুদ্রসংহিতা, পার্বতীখন্ড, অধ্যায় ২ শ্লোক ৪০; সনদকুমার উক্তি] বঙ্গানুবাদ: সাক্ষাৎ গোলকনিবাসিনী রাধা কলাবতীর কণ্যা হয়ে শ্রীকৃষ্ণের সহিত গোপণে স্নেহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ভবিষ্যতে কৃষ্ণপত্নী হবেন। . ব্রহ্মবৈবর্ত মহাপুরাণে উল্লেখ রয়েছে – স্বয়ং রাধা কৃষ্ণপত্নী কৃষ্ণবক্ষঃস্থলস্থিতা । প্রাণাধিষ্ঠাতৃদেবী চ তস্যৈব পরমাত্মনঃ।। [ ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, অধ্যায় ৪৮, শ্লোক ৪৭ ] বঙ্গানুবাদ: শ্রীমতী রাধিকা স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের পত্নীরূপে অবস্থিতা। নিরন্তর তিনি পরমব্রহ্ম কৃষ্ণের বক্ষঃস্থলে স্থিতি করেন, ফলতঃ সেই রাধা পরাৎপর কৃষ্ণের প্রাণাধিষ্ঠাত্রী দেবীরূপে নির্দিষ্টা আছেন। . ব্রহ্মবৈবর্ত মহাপুরাণে আরো উল্লেখ রয়েছে – তদা ব্রহ্মা তয়োর্মধ্যে প্রজ্বাল্য চ হুতাশনম্ । হরিং সংস্মৃত্য হবনং চকার বিধিনা বিধিঃ ॥উত্থায় শয়নাৎ কৃষ্ণ উবাস বহ্নিসন্নিধৌ । ব্ৰহ্মণোক্তেন বিধিনা চকার হবনং স্বয়ম্ ॥প্রণম্য চ হরিং রাধাং দেবানাং জনকঃ স্বয়ম্। [ ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কৃষ্ণজন্মখণ্ড ১৫।১২৪-১২৬ ] বঙ্গানুবাদ: ব্রহ্মা ভক্তিপূর্ব্বক রাধাকৃষ্ণকে প্রণাম করলেন এবং তাঁদের মধ্যে অগ্নি প্রজ্বলিত করে শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করে বিবিধক্রমে হোম করতে লাগলেন । তখন কৃষ্ণ শয্যা হতে উত্থান করে অগ্নি সমীপে উপবেশনপূর্ব্বক ব্রহ্মোক্ত বিধিক্রমে স্বয়ং হোম করতে আরম্ভ করলেন। এরপর বেদকর্ত্তা ব্রহ্মা শ্রীকৃষ্ণ ও রাধিকাকে প্রণাম করলেন। . ব্রহ্মবৈবর্ত মহাপুরাণে আরো উল্লেখ রয়েছে – মূঢ়া রায়াণপত্নী ত্বাং বক্ষ্যন্তি জগতীতলে’ [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কৃষ্ণজন্মখন্ড, অধ্যায় ৩, শ্লোক ১০৩ ] বঙ্গানুবাদ: ভূতলে যারা মূঢ় (মূর্খ), তারাই শ্রীমতি রাধিকাকে রায়াণ(আয়ান) এর পত্নী বলে মনে করে। . ব্রহ্মাণ্ড পুরাণে উল্লেখ রয়েছে – রাধাকৃষ্ণেতি দ্বেনাম সুস্মৃতোগোপ নন্দিনী। মহাপাপোপ পাপৌঘ কোটিশো যাস্তি সংক্ষয়ং। মৎসাযুজ্য পদমিতো মোদতে দেববৎ সদা।। [ ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ, উত্তরখণ্ড, রাধাহৃদয় ১৩।৭৪ ] বঙ্গানুবাদ: শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে গোপনন্দিনী রাধে, রাধা-কৃষ্ণ এই দুুই নাম যে ব্যাক্তি স্মরণ করেন,মহাপাপ ও উপপাপ প্রভৃতি কোটিপাপ তাঁর বিনষ্ট হবে। মৃত্যুর পর ইহলোক ত্যাগ করে তিনি আমার ধাম (চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবন ধাম) প্রাপ্ত হয়ে দেবতার মতো পরমানন্দে দিন যাপন করবেন। শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে উল্লেখ রয়েছে – অনয়ারাধিতো নূনং ভগবান হরিরীশ্বরঃ। যন্ নো বিহায় গোবিন্দঃ প্রীতো যামনয়দ্রহঃ।। [ শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ১০।৩০।২৮] বঙ্গানুবাদ: এই বিশেষ গোপী নিশ্চয়ই
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু যে “স্বয়ং শ্রীহরি” শাস্ত্রে কোথায় বলা হয়েছে?
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু যে স্বয়ং শ্রীহরি, তার ৩২ টি প্রামাণিক শাস্ত্রীয় প্রমাণ: কি পন্ডিত, কি তপস্বী, কিবা গৃহী, যতি। চৈতন্য-বিমুখ যেই, তার নাই গতি।। [ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, আদিলীলা ১২।৭২ ] কৃষ্ণভক্তিবিহীনানাং পাপ্মনা গ্রসিতাত্মনাম্ ॥ ৬০ ॥ কলৌ নষ্ট দৃশাং নৈব জনানাং কুত্রচিদ্ গতিঃ । ইতি মত্বা কৃপাসিন্ধুরংশেন কৃপযা হরিঃ ॥ ৬১ ॥ প্রচ্ছন্নো ভক্তরূপেণ কলাববতরিষ্যতি । ভুবং প্রাপ্তে তু গোবিন্দশ্চৈতন্যাখ্যো ভবিষ্যতি ॥ ৬২ ॥ তস্য কর্মাণি মনুজাঃ কীর্তযিষ্যন্তি কেচন । বহির্মুখা নমংস্যন্তে প্রচ্ছন্নং পরমেশ্বরম্ ॥ ৬৩।। গৌরাঙ্গো নাদগম্ভীরঃ স্বনামামৃতলালসঃ । দয়ালুঃ কীর্তনগ্রাহী ভবিষ্যতি সচীসুতঃ ॥ ৬৪ ॥ [ কৃষ্ণযামল তন্ত্র, অধ্যায় ২৮, শ্লোক ৬০-৬৪] অনুবাদ: কলিযুগ কৃষ্ণভক্তিবিহীন এবং লোকেদের পাপ দ্বারা গ্রস্থ, তাই কলিহত জীবের দুর্গতির কথা চিন্তা করে কৃপাসিন্ধু ভগবান স্বয়ং অবতীর্ণ হয়ে ভক্তরূপে নিজেকে প্রচ্ছন্নভাবে লীলা করবেন। পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে তিনি ‘চৈতন্য’ নামে বিখ্যাত হবেন এবং তাঁর কর্মাদি বিভিন্ন লোকেরা কীর্তন করবে। বহির্মুখ লোকেরাও সে প্রচ্ছন্ন পরমেশ্বরকে নমস্কার করবে। সে ভগবান ‘গৌরাঙ্গ‘ নিজ নামের অমৃত আস্বাদনের লালসায় সংকীর্তন ধর্ম প্রচারের জন্য ভবিষ্যতে শচীমাতার পুত্ররূপে আবির্ভূত হবেন। কৃষ্ণ নাহি মানে, তাতে দৈত্য করি মানি । চৈতন্য না মানিলে তৈছে দৈত্য তারে জানি।। [ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, আদিলীলা, ৮।৯ ] শ্লোকার্থ: যদি কেউ শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলে না মানে, তবে সে একটি দৈত্য। তেমনই, যে শ্রীচৈতন্যদেবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলে মানতে না চায়, তাকেও একটি দৈত্য বলেই জানতে হবে। ৩২ টি প্রামাণিক শাস্ত্রীয় প্রমাণ: প্রমাণ-(১) দিবিজা ভুবি জায়ধ্বং জায়ধ্বং ভক্তরূপিণঃ। কলৌ সঙ্কীর্তনারম্ভে ভবিষ্যামি শচীসুতঃ।। কৃতে জপৈ মংম প্রীতি স্ত্রেতায়াং হোম-কর্মভিঃ । দ্বাপরে পরিচর্য্যাভিঃ কলৌ সংকীর্ত্তনৈরপি ॥ ২৬॥ [ বায়ুপুরাণ,শেষখন্ড ১৪।২৮ ] [বারানশি চুম্বিকা এডিশান] অনুবাদ: হে দেবগণ, তোমরা সকলে ভক্তরূপ ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে হরিনাম সঙ্কীর্তন আরম্ভ করো। তোমাদের সঙ্কীর্তনে আমি শচীগর্ভ হতে জন্মগ্রহণ করবো। সত্যযুগে জপ-ধ্যান, ত্রেতাযুগে হোম, দ্বাপর যুগে পূজাদি এবং কলিযুগে সংকীর্তনের দ্বারাই আমি প্রীত হই। . প্রমাণ-(২) তদাপ্যহং ভবিষ্যামি গঙ্গাদ্বারে কলের্ধুরি।। [ বায়ুপুরাণ ২৩।৫১] [নবভারত] অনুবাদ: তখন কলির প্রথমে আমি (ভগবান) গঙ্গাধারে আবির্ভূত হইব। . প্রমাণ-(৩) মহেন্দ্র তব যা পত্নী শচী নাম্না মহোত্তমা। দদৌ তস্যৈ বরং বিষ্ণুভবিতাস্মি সুতঃ কলৌ।। তদাজ্ঞয়া চ সা দেবীং পুরীং শান্তিময়ীং শুভাম্। গৌড়দেশে চ গঙ্গায়া কূলে লোকনিবাসিনীম্।। [ ভবিষ্যপুরাণ, দ্বিতীয়খণ্ড, ১৭।৬০,৬১ ] অনুবাদ: জীব বললেন- হে মহেন্দ্র, ভগবান বিষ্ণু আপনাকে বর দান স্বরূপ উত্তম শচী দিয়েছিলেন, আপনার আদেশে তিনি গৌড়দেশে গঙ্গাতীরে জন্ম লাভ করবে এবং আমি পুত্ররূপে কলিযুগে তোমার কাছে আবির্ভূত হব। . প্রমাণ-(৪) ভবিষ্যামি শচীপুত্রঃ কলৌ সংকীর্ত্তনাগমে। হরিনাম প্রদানেন লোকান্ সংতারয়াম্যহম।। [ ব্রহ্মযামলঃ তন্ত্র, ১।২১ ] অনুবাদ: কলিতে সংকীর্তন যজ্ঞের প্রারম্ভে শচীপুত্র রূপে আবির্ভূত হইয়া আমি হরিনাম প্রদান করত জনসমূহকে নিস্তার করিয়া থাকি। . প্রমাণ-(৫) অহমেব দ্বিজশ্রেষ্ঠ নিত্যং প্রচ্ছন্নবিগ্রহঃ। ভগবদ্ভক্তরূপেণ লোকান্ রক্ষামি সর্ব্বদা।।৩৫। [ বৃহন্নারদীয়পুরাণ ৫।৩৫ ] অনুবাদ: ভগবান বলিলেন,”হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ! আমিই ভগবানের ভক্তরূপে (ভক্তাবতার শ্রীচৈতন্য) দেহ গোপনপূর্ব্বক সর্ব্বদাই লোকসমূহের রক্ষা করি।” . প্রমাণ-(৬) কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাকৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্রপার্ষদম্। যজ্ঞৈঃ সংকীৰ্তনপ্রায়ৈজন্তি হি সুমেধসঃ ৷৷ [ শ্রীমদ্ভাগবত ১১।৫।৩২ ] অনুবাদ: যে পরমেশ্বর ভগবান ‘কৃষ’ ও ‘ণ’ শব্দাংশ দুটি নিরন্তর উচ্চারণ করেন, কলিযুগের বুদ্ধিমান মানুষেরা তাঁর উপাসনার নিমিত্ত সমবেতভাবে নাম-সংকীর্তন করে থাকেন। যদিও তাঁর গাত্রবর্ণ অ-কৃষ্ণ, তবুও তিনি স্বয়ং কৃষ্ণ। তিনি সর্বদা তাঁর পার্ষদ, সেবক, সংকীর্তনরূপ অস্ত্র ও ঘনিষ্ঠ সহচর পরিবৃত থাকেন। . প্রমাণ-(৭) উর্দ্ধাম্নায় তন্ত্রে গৌর মন্ত্র ও গৌর উপাসনা বিধি বর্ণিত আছে- শ্রী নারদ উবাচ। কৃষ্ণরূপেন ভগবান্ কলৌ পাপপ্রণাশকৃৎ। গৌররূপেন ভগবান্ ভাবিতঃ পূজিতস্তথা।। ওঁ গৌরায় নম ইত্যেষ মন্ত্রো লোকেষু পূজিতঃ। [ উর্দ্ধাম্নায় সংহিতা, ৩য় অধ্যায় ] অনুবাদ: শ্রী নারদ বললেন! শ্রীকৃষ্ণ নামের দ্বারা ভগবান পাপ সমূহ নাশ করেন, ও গৌর রূপে ভগবান পূজিত হন। ‘ওঁ গৌরায় নমঃ’– এই মন্ত্র দ্বারা তিনি সর্বলোক দ্বারা পূজিত হন। . প্রমাণ-(৮) পূণ্য ক্ষেত্রে নবদ্বীপে ভবিষ্যামি শচীসূতঃ। [ কৃষ্ণযামল তন্ত্র, ২৮।৬২,৬৩,৬৪,৬৫,৬৬ ] অনুবাদ: পূন্যক্ষেত্রে নবদ্বীপে আমি শচীদেবীর পুত্ররূপে আবির্ভূত হব। . প্রমাণ-(৯) শ্যামঞ্চ গৌরং বিদিতং দ্বিধা মহস্তবৈ সাক্ষাৎ পুরুষোত্তমোত্তম৷ গোলকধামাধিপতিং পরেশং পরাৎপরং ত্বাং শরণং ব্রজাম্যহম্।। [ গর্গসংহিতা,গোলকখণ্ড ১৬।২৭ ] অনুবাদ: হে সাক্ষাৎ পুরুষোত্তম! শ্যাম ও গৌর তোমার দ্বিবিধ তেজ, তুমি গোলোকধামপতি পরেশ পরাৎপর; আমি তোমার শরণ লইলাম। . প্রমাণ-(১০) গঙ্গায়া দক্ষিণেভাগে নবদ্বীপে মনোরমে। কলিপাপ বিনাশায় শচীগর্ভে সনাতনি।। জনিষ্যতি প্রিয়ে! মিশ্রপুরন্দরগৃহে স্বয়ম্। ফাল্গুনে পৌণমাস্যাঞ্চনিশায়াংগৌরবিগ্রহঃ।। [ বিশ্বসার তন্ত্র, উত্তরাখন্ড, ১১ পটল ] অনুবাদ: দেব দেবী পার্ব্বতীকে বলেছেন- হে প্রিয়ে! কলিকলুষ বিনাশের নিমিত্ত গঙ্গা দক্ষিণ তীরবর্ত্তী অতি মনোরম নবদ্বীপ গ্রামে ফাল্গুনী পূর্ণিমা নিশিতে মিশ্র পুরন্দর গৃহে শচীদেবীর গর্ভে স্বয়ং ভগবান গৌররূপে অবতীর্ণ হবেন। . (প্রমাণ-১১) সতত পরম দেবো, শ্রী শচীদেবী নন্দন,দ্বিনেত্র দ্বিভুজ গৌর, তপ্ত জাম্বুনদ প্রভা।। [ সতাভাতাতন্ত্র, ৫।৪১ ] অনুবাদ: তখন সেই পরম দেব, যিনি শচীদেবীর পুত্র, যার দুই চক্ষু, দুই হাত, যার প্রভা তপ্ত জাম্বুনদের ন্যায়। . শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিলো ‘বিশ্বম্ভর’। তাঁর মাতার নাম শচীদেবী, তাই তাকে ‘শচীসূত’ নামেও ডাকা হয়। তাঁর গাত্রবর্ণ তপ্ত স্বর্ণের ন্যায় গৌরবর্ণ হওয়ায় তাঁকে ‘গৌর’, ‘হেমাঙ্গ’, ‘গৌরাঙ্গ’ ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। প্রমাণ-(১২) বিশ্বম্ভর বিশ্বেন মা ভরসা পাহি স্বাহা। [ অথর্ববেদ, ২য় কাণ্ড, ৩য় অনুবাক, ৬ সূক্ত, ৫ মন্ত্ৰ ] অনুবাদ: হে বিশ্বম্ভর,সকল পোষণ শক্তির দ্বারা আমাকে মৃত্যু থেকে রক্ষা কর। স্বাহা মন্ত্রে তোমাকে আহুতি দিচ্ছি। . প্রমাণ-(১৩-১৫) ঋগ্বেদ সংহিতা,(১।১৬।৫), (৮।৪।৩), (৪।৫৮।২)- এই সকল মন্ত্রে স্পষ্ট ভাবে পরমব্রহ্মের “গৌর” নাম রয়েছে। . প্রমাণ-(১৬) চৈতন্যরূপশ্চৈতন্যশ্চেতনাগুণবর্জ্জিতঃ। অদ্বৈতাচারনিপুণোহদ্বৈতঃ পরমনায়কঃ।। [ নারদপঞ্চরাত্র,চতুর্থরাত্র, ৮।১৫৪ ] অনুবাদ: চৈতন্যরূপ, চৈতন্য, চেতনাগুণবর্জ্জিত, অদ্বৈতাচারনিপুণ, অদ্বৈত, পরমনায়ক। . প্রমাণ-(১৭) মহাপ্রলয়কারী চ শচীসূতজয়প্রদঃ।। [ নারদপঞ্চরাত্র,চতুর্থরাত্র, ৮।১৫৪ ] অনুবাদ: মহাপ্রলয়কারী, শচীসূত, জয়প্রদ। . প্রমাণ-(১৮) শচীসুতঃ জয়প্রদঃ।। [ গৌতমীয় তন্ত্র,গোপালসহস্রনাম স্ত্রোত্র ] অনুবাদ: শচীপুত্র জয় যুক্ত হোন। . প্রমাণ-(১৯) নমো ভুম্যাদিরূপায় নমশ্চৈতন্যরূপিণে।৫৯। [ বৃহন্নারদীয়পুরাণ ৪।৫৯ ] অনুবাদ: পৃথিবী প্রভৃতি সমস্ত তোমার রূপ, তুমি চৈতন্য স্বরূপ, তোমাকে নমস্কার। . পদ্মপুরাণের উত্তরখন্ডে শ্রীহরিকে ‘চৈতন্য’, ‘বিশ্বম্ভর’ ইত্যাদি নামে সম্বোধন করা হয়েছে যা চৈতন্য মহাপ্রভুকেই নির্দেশ করে। যথা- প্রমাণ-(২০) পুরাণপুরুষঃ প্রত্যকচৈতন্যঃ পুরুষোত্তমঃ।। [ পদ্মপুরাণ,উত্তরখণ্ড ৭১।১৩১] অনুবাদ: পুরাণপুরুষ, প্রত্যকচৈতন্য, পুরুষোত্তম। . প্রমাণ-(২১) বিশ্বম্ভরস্তীর্থপাদঃ পুণ্যশ্রবণকীৰ্ত্তনঃ। [ পদ্মপুরাণ,উত্তরখণ্ড ৭১।১৫৬ ] অনুবাদ: বিশ্বম্ভর, তীর্থপাদ, পুণ্যশ্রবণকীৰ্ত্তন। . প্রমাণ-(২২) মহাভারত-উক্ত প্রমাণ- (ইতিহাস) আনুশাসনিক-পৰ্বনি (৬নং)দানধর্মে-ভীষ্ম-যুধিষ্ঠির সংবাদে বিষ্ণুসহস্রনাম প্রসঙ্গে- সুবর্ণবর্ণো হেমাঙ্গো বরাঙ্গশ্চন্দনাঙ্গদী। ৯২।। সন্ন্যাসকৃচ্ছমঃ শান্তো নিষ্ঠাশান্তি-পরায়ণঃ।।৭৫।। [ মহাভারত, অনুশাসন পর্ব, দানধর্ম, অধ্যায় ১৪৯।৯২,৭৫ ] অনুবাদ : হরিনাম প্রচার উপলক্ষে “কৃষ্ণ” এই উত্তম বর্ণদ্বয় সর্বদা বর্ণন করেন বলিয়া তাঁহার একটি নাম সুবর্ণবর্ণ; তাঁহার অঙ্গ স্বর্ণের ন্যায় উজ্জ্বল বলিয়া তাঁহার একটি নাম হেমাঙ্গ; সাধারণ লোক অপেক্ষা তাঁহার অঙ্গ শ্রেষ্ঠ বলিয়া তাঁহার একটি নাম বরাঙ্গ; চন্দনের অঙ্গদ (কেয়ূর) পরিধান করেন বলিয়া তাঁহার নাম চন্দনাঙ্গদী; সন্ন্যাসগ্রহণ করেন বলিয়া তাঁহার নাম সন্ন্যাসকৃৎ; ভগবন্নিষ্ঠ-বুদ্ধি বলিয়া তাঁহার নাম শম; অচঞ্চল-চিত্ত বলিয়া তাঁহার নাম শান্ত; কৃষ্ণভক্তিতে নিষ্ঠা ও নিবৃত্তিপরায়ণ বলিয়া তাঁহার নাম নিষ্ঠাশান্তি-পরায়ণ। এই সকল নামে অভিহিত হওয়ায় কলিতে গৌরাঙ্গাবতার সূচিত হইয়াছে। . প্রমাণ-(২৩) স হোবাচ । রহস্যং তে বদিষ্যামি – জাহ্নবীতীরে নবদ্বীপে গোলোকাথ্যে ধাম্নি গোবিন্দো দ্বিভুজো গৌরঃ সর্বাত্মা মহাপুরুষো মহাত্মা মহাযোগী
তুলসীকাষ্ঠের প্রদীপ নিবেদনের মহিমা
তুলসীকাষ্ঠের প্রদীপ নিবেদনের মহিমা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রদীপ নিবেদনের অনন্ত মহিমা অসংখ্য শাস্ত্রে উল্লিখিত রয়েছে। তুলা, ঘি, তিল, সরিষা বা কুসুম্ভ তেল, কর্পূর দ্বারা প্রদীপ নিবেদন ভগবানের অত্যন্ত প্রিয়। কিন্তু তুলসীকাষ্ঠ দ্বারা নিবেদিত প্রদীপ ভগবানের অত্যন্ত প্রিয়, কেননা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সব থেকে প্রিয় উপকরণ হচ্ছেন কৃষ্ণপ্রিয়া তুলসী। শাস্ত্রে কি নির্দেশনা রয়েছে? পদ্মপুরাণে বর্ণনা করা হয়েছে, যদি কেউ শুষ্ক তুলসী কাষ্ঠের মাধ্যমে ভগবানকে শ্রীকৃষ্ণকে প্রদীপ নিবেদন করে, তাহলে সাধারণ প্রদীপ নিবেদনের চেয়ে ভগবান এক্ষেত্রে লক্ষগুণ বেশি সন্তুষ্ট হন। প্রহ্লাদসংহিতায় উল্লেখ আছে, তুলসীপাবকেনৈব দীপং যঃ কুরুতে হরেঃ। দীপলক্ষসহস্রাণাং পুণ্যং স্তবতি দৈত্যজ॥ অনুবাদ: হে দৈত্যকুমার প্রহ্লাদ, যিনি তুলসীকাষ্ঠের প্রদীপ দ্বারা শ্রীহরিকে আরতি নিবেদন করেন, তার একটি দীপ দানেই শ্রী হরি এক সহস্র লক্ষ (১০ কোটি) প্রদীপ নিবেদনের সমান সন্তুষ্ট হন। অর্থাৎ সহস্র লক্ষ দীপ নিবেদন করলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যতটা সন্তুষ্ট হন, একটি তুলসীকাঠের প্রদীপ নিবেদন করলে তার থেকেও অধিক সন্তুষ্ট হন। কেন করা উচিত? শ্রীমদ্ভাগবত (২।৩।১০)-এ বলা হয়েছে, সকাম, নিষ্কাশন, মোক্ষকামী সকলেরই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা উচিত। অতএব কোনো ফল লাভের আশায় হোক, অথবা নিষ্কামভাবে কেবল কৃষ্ণের সন্তুষ্টির জন্য হোক, কৃষ্ণের আদেশে সকলেরই তুলসীকাষ্ঠ দ্বারা প্রদীপ নিবেদন করা উচিত। কে বা কারা করতে পারে? তুলসীকাঠের প্রদীপ নিবেদন করা ভগবানকে তুলসী নিবেদনেরই মতো। অগস্ত্য সংহিতায় বলা হয়েছে- ন তস্য নরকক্লেশো যোঽর্চ্চয়েত্তুলসীদলৈঃ। পাপিষ্ঠো বা অপাপিষ্ঠঃ সত্যং সত্যং না সংশয়॥ অনুবাদ: মহা পাপাত্মা ব্যক্তিও শ্রীহরিকে তুলসী নিবেদন করলে তাঁকে আর নরকযাতনা লাভ করতে হয় না। শ্রীহরির কৃপায় সে ধীরে ধীরে ধর্মাত্মায় পরিণত হয়। অতএব, যেকোনো ব্যক্তি, সে আমিষাহারী, অশৌচ হোক, অস্নাত হোক, যবন হোক বা অন্যান্য পাপাচারে রত থাকুক, সেও ভগবানকে তুলসী নিবেদনের অধিকারী। তাই সকলেই তুলসীপত্র, তুলসী মঞ্জরী, তুলসীকাঠের প্রদীপ নিবেদন করার অধিকারী। সারাবছরই প্রদীপ নিবেদন মঙ্গলময়। দামোদর মাস, পুরুষোত্তম মাস, বৈশাখ মাস, মাঘ মাসে অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আর বিশেষত এই সব মাসে সকলেরই বেশি বেশি কৃষ্ণ সেবা করা উচিত। তাই সকলেই এই মাসে তুলসী কাঠের প্রদীপ নিবেদন করতে পারবেন। কীভাবে তৈরী করবেন তুলসীকাঠের প্রদীপ? ১. প্রথমে শুকনো তুলসীবৃক্ষ খোঁজ করতে হবে। অনেকেরই অভিজ্ঞতা রয়েছে অনেকসময় তুলসীবৃক্ষ শুষ্ক হয়ে যায়, সব পাতা ঝরে যায়, তুলসী দেহত্যাগ করেন, সেই শুষ্ক বৃক্ষ জলে ভাসিয়ে বা মাটিতে পুতে দেয়া হয়। প্রদীপের জন্য এরকম শুষ্ক তুলসী সংগ্রহ করতে হবে। যদি তাজা বৃক্ষ থেকে কাঠ সংগ্রহ করা হয়, সেটাতে অপরাধ হয়ে হিতে বিপরীত হবে! তাই এখন থেকে শুকনো তুলসী বৃক্ষ যত্ন করে সংরক্ষণ করবেন। ২. শুকনো তুলসীর ডাল ধুয়ে শুঁকিয়ে নিতে পারেন। ৩. শুকনো ডাল গুলো ৬ বা ৭ ইঞ্চি করে কেটে নিতে হবে। (আরো বড় কাটা যেতে পারে, কিন্তু বেশি ছোট কাটা হলে প্রদীপের আগুনের আঁচ হাতে লাগতে পারে) ৪. এবার তুলা নিয়ে একেকটি ডালে সমানভাবে পেচাতে হবে। সবগুলো ডালে তুলো পেচিয়ে এভাবে সলতে বানিয়ে রেখে দিতে পারেন। ৫. প্রদীপ নিবেদনের আগে তুলা পেচানো তুলসীর ডালের সলিতাগুলো ঘিয়ে ডুবিয়ে তারপর অতিরিক্ত ঘি সরিয়ে দিয়ে সলিতাগুলোর মাথায় কর্পূর লাগাতে হবে। ৬. এরপর কর্পূরে আগুন জ্বালালে আস্তে আস্তে পুরো সলিতাটিয় জ্বলে উঠবে, সেক্ষেত্রে আগুন জ্বালানোর শুরু থেকেই প্রদীপ নিবেদন শুরু করা উচিত। ৭. নতুনদের জন্য সতর্কতা হিসেবে দামোদর-প্রদীপ-নিবেদনের আগেই একদিন সলিতা তৈরি করে প্রদীপ নিবেদন করে চেষ্টা করে দেখতে পারেন, সলিতার জন্য তুলসী কাঠ আরো বড় করে কাটা লাগবে কীনা, বা তুলা আরো বেশি পেচাতে হবে কীনা, ঘি আরো অধিক লাগবে কীনা ইত্যাদি। প্রয়োজনে প্রদীপের মধ্যেও তুলসীকাঠের সলিতাগুলো নিয়ে নিবেদন করতে পারেন। ৮. আরতি নিবেদনের জন্য, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীনিতাইগৌর, শ্রীনৃসিংহদেব, শ্রীবিষ্ণুকে চরণে চারবার, উদরে দুইবার, মস্তকে তিনবার এবং সর্বাঙ্গে সাতবার প্রদীপ নিবেদন করতে হয়। আর, শ্রীমতী রাধারাণী, শ্রীলক্ষ্মীদেবী, শ্রীতুলসীদেবীকে সর্বাঙ্গে সাতবার প্রদীপ নিবেদন করা উচিত। শ্রীরাধাকৃষ্ণের পর শ্রীজগন্নাথ-বলদেব-সুভদ্রাকে (প্রত্যেককে সাতবার করে), এরপর শ্রীনৃসিংহদেব ও তারপর শ্রীনিতাইগৌরকে প্রদীপ নিবেদন করতে হয়। এরপর তুলসীদেবীকে নিবেদনের পর শ্রীগুরুপরম্পরাকে ভগবৎপ্রসাদরূপে মুখমণ্ডলে সাতবার বা পাঁচবার নিবেদন করতে হবে। নিজে তুলসীকাঠের সলিতার প্রদীপ নিবেদনের মহিমা জেনে ভগবানকে নিবেদন করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রীতিবিধান করুন, অন্যের নিকট এই বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে উৎসাহিত করে তার ও আপনার নিজের ভগবানকে আরো অধিক সন্তুষ্ট করার জগৎমঙ্গলময় সুযোগ গ্রহণ করুন। ।। হরেকৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যমহাপ্রভু রচিত শিবাষ্টকম্
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যমহাপ্রভু রচিত শিবাষ্টকম্ নমো নমস্তে ত্রিদশেশ্বরায় ভূতাদিনাথায় মূড়ায় নিত্যম্। গঙ্গাতরঙ্গোত্থিতবালচন্দ্রচূড়ায় গৌরীনয়নোৎবায়।।১।। অনুবাদ হে ত্রিদশেশ্বর, হে ভূতবর্গাদির আদিনাথ, হে মূঢ়, তোমাকে আমি নিত্য প্রণাম করি। গঙ্গাতরঙ্গোত্থিত তরুণ চন্দ্র তোমার শিরোভূষণ, তুমি গৌরীর নেত্রানন্দদায়ী, তোমার চরণে নমস্কার। . সুতপ্তচামীকরচন্দ্রনীলপদ্ম প্রবালাম্বুদকান্তিবস্ত্রৈঃ। সুনৃত্যরঙ্গেষ্টবরপ্রদায় কৈবল্যনাথায় বৃষধ্বজায়।। ২।। অনুবাদ গলিত স্বর্ণ, চন্দ্র, নীল পদ্ম, প্রবাল ও মেঘশ্যামল বসনাদি ধারণ করে যিনি সুন্দর নৃত্যভঙ্গীসহকারে ভক্তগণের ইষ্টবর প্রদান করেন, সেই কৈবল্যনাথ, বৃষধ্বজ শিবকে প্রণাম করি। . সুধাংশুসূর্যাগ্নিবিলোচনেন তমোভিদে তে জগতঃ শিবায়। সহস্র শুভ্রাংশুসহস্ররশ্মি-সহস্রসংজিত্ত্বরতেজসে’স্তু।। ৩।। অনুবাদ যিনি চন্দ্রসূর্যাগ্নিরূপ ত্রিলোচন দ্বারা জগতের সকল অন্ধকার নাশ করেন, সহস্রচন্দ্রমা ও সহস্রসূর্যবিজয়ী তেজোমালাধারণকারী সেই শিবের চরণে নমস্কার। . নাগেশরত্নোজ্জ্বলবিগ্রহায় শার্দুলচৰ্ম্মাংশুকদিব্যতেজসে। সহস্রপত্রোপরি সংস্থিতায় বরাঙ্গদমুক্তভুজদ্বয়ায়।। ৪।। অনুবাদ যাঁর দিব্য বিগ্রহ নাগেশ অনন্তের রত্নপ্রভায় উজ্জ্বল, যিনি ব্যাঘ্রচর্মাম্বরধারী, দিব্যতেজোময়, যিনি সহস্রদল পদ্মের উপর বিরাজমান, যাঁর ভুজদ্বয় উত্তম অঙ্গদে ভূষিত, সেই শিবকে নমস্কার। . সুন্পুরারঞ্জিতপাদপদ্মক্ষরৎসুধাভৃত্যসুখপ্রদায়। বিচিত্ররত্নৌঘবিভূষিতায় প্রেমানমেবাদ্য হরৌ বিধেহি।। ৫।। অনুবাদ যিনি সুন্দর নূপুররঞ্জিত পাদপদ্ম থেকে ক্ষরিত সুধা দ্বারা তদীয় ভৃত্যগণ মহাসুখ প্রদান করেন, বিচিত্র রত্নমালায় যিনি বিভূষিত, সেই শিবকে নমস্কার। হে মহেশ্বর, অদ্য আমাকে শ্রীহরির প্রতি অনুপম প্রেম দান করো। . শ্রীরাম গোবিন্দ মুকুন্দ শৌরে শ্রীকৃষ্ণ নারায়ণ বাসুদেব। ইত্যাদিনামামৃতপানমত্ত-ভূঙ্গাধিপায়খিলদুঃখহন্ত্রে।। ৬।। অনুবাদ তুমি শ্রীরাম, গোবিন্দ, মুকুন্দ, শৌরে, শ্রীকৃষ্ণ, নারায়ণ, বাসুদেব প্রভৃতি নামামৃত পানে মত্ত ভূঙ্গরাজ, তুমি নিখিল-দুঃখনাশন, তোমাকে প্রণাম করি। . শ্রীনারদাদ্যৈঃ সততং সুগোপ্যজিজ্ঞাসিতায়াশু বরপ্রদায়।তেভ্যো হরের্ভক্তিসুখপ্রদায় শিবায় সর্ব্বগুরবে নমো নমঃ।।৭।। অনুবাদ শ্রীনারদাদি মহর্ষিগণ সর্বদাই বিভিন্ন সুগোপ্য বিষয় সম্বন্ধে তোমাকে পরিপ্রশ্ন করেন- তুমি আশুবরপ্রদ, তুমি তাঁদের (মহর্ষিদের) হরিভক্তি ও পরম আনন্দ প্রদান করো। হে সর্বগুরু শিব, তোমাকে পুনঃপুন: নমস্কার করি। . শ্রীগৌরীনেত্রোৎসবমঙ্গলায় তৎপ্রাণনাথায় রসপ্রদায়। সদাসমুৎকণ্ঠগোবিন্দলীলাগানপ্রবীণায় নমো’স্তু তুভ্যম্ ।। ৮৷৷ অনুবাদ তুমি শ্রীগৌরীর নেত্রোৎসবমঙ্গলপ্রদ, তুমি হিমাদ্রিনন্দিনীর প্রাণনাথ ও রসপ্রদাতা। সর্বদা সমুৎকণ্ঠিতচিত্তে গোবিন্দলীলাগানে তুমি প্রবীণ, তোমাকে নমস্কার করি। ————————————————- অথ শ্রুতিফল:।। এতৎ শিবস্যাষ্টকমদ্ভুতং মহৎ শৃণ্বন্ হরিপ্রেম লভেত শীঘ্রম্। জ্ঞানঞ্চ বিজ্ঞানমপূর্ব্ববৈভবং যো ভাবপূর্ণ: পরমং সমাদরম্।। অনুবাদ এই মহৎ ও অদ্ভুত শিবাষ্টক শ্রবণ করলে শীঘ্রই হরিপ্রেম লাভ করা যায়। যিনি ভাবপূর্ণচিত্তে এই মঙ্গলময় শ্লোকাবলী শ্রবণ করেন, তিনি জ্ঞান, বিজ্ঞান ও অপূর্ব বৈভব লাভ করেন। অনুবাদক- শ্রীপাদ অর্জুনসখা দাস ।। হরে কৃষ্ণ।। ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
দামোদর মাসে ব্রত পালনের বিধিসমূহ
দামোদর মাসে ব্রত পালনের বিধিসমূহ! দামোদর মাসের মাহাত্ম্য- ১. যে কোনও দেশে কার্তিকে স্নান ও দান বিশেষতঃ পূজাতে তা অগ্নিহোত্র সমফল। ২. কুরুক্ষেত্রে কোটিগুণ ফল, গঙ্গায়ও তৎসম ফল, তার থকে অধিক পুস্করে, হে ভার্গব! দ্বারকায়ও অধিক। কার্তিক মাসে স্নানও শ্রীভগবৎপূজন শ্রীকৃষ্ণসালোক্যপ্রদ। ৩. হে মুনিগণ! মথুরা ব্যতীত, অন্যপুরী সকল তার সমান, যেহেতু মথুরা-মণ্ডলেই শ্রীহরির দামোদর লীলা প্রকট হয়েছিল। ৪. অতএব কার্তিকে মথুরায় শ্রীগোবিন্দের প্রীতিবর্দ্ধন, কার্তিকে মথুরাতেই চরম ফল প্রাপ্তি হয়। ৫. যেমন মাঘে প্রয়াগতীর্থ, বৈশাখে জাহ্নবী, কার্তিকে মথুরা সেবা তা থেকে উৎকর্ষ আর নাই। ৬. কার্তিকে মথুরাতে মানবগণ স্নান করে দামোদরের পূজা করলে তারা কৃষ্ণসারূপ্য প্রাপ্ত জানবেন, এ বিষয়ে বিচার কর্তব্য নয়। ৭. হে বিপ্র! এই জগতে মানবগণের পক্ষে মথুরাতে কার্তিক মাস দুর্লভ। যেখানে পূজিত হয়ে দামোদর নিজরূপ ভক্তগণকে প্রদান করেন। ৮. শ্রীহরি অর্চিত হয়ে অন্যত্র সেবিত ভক্তগণকে ভুক্তি মুক্তি দান করেন, এই শ্রীহরি কিন্ত ভক্তি দান করেন না, যেহেতু শ্রীহরির বশ্যকারী। ৯. কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে একবারও শ্রীদামোদরের পূজা থেকে সেই ভক্তি কিন্তু অনায়াসে মানবগণ শ্রীহরি হতে লাভ করে। ১০. শ্রীদামোদরদেব কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে মন্ত্র-দ্রব-বিহীন পূজাকেও স্বীকার করেন। ১১. যে পাপের মরণান্তেই বিনিষ্কৃতি হয় তার শুদ্ধির জন্য কার্তিক মাসে মথুরাপুরীতে হরিপূজাই সুনিশ্চয়, এই প্রায়শ্চিত্ত শাস্ত্রে উক্ত হয়েছেন। ১২. বালক ধ্রুব কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে শ্রীদামোদরের পূজা ও ধ্যান দ্বারা যোগিগণ দুর্লভ শ্রীভগবানকে শীঘ্র দর্শন প্রাপ্ত হয়েছিলেন। পৃথিবীতে মথুরা সুলভা, সেই রকম প্রতিবছর কার্তিক মাস সুলভ, তথাপি এই জগতে মূঢ় মানবগণ ভবসমুদ্রে জন্ম-মৃত্যু প্রবাহে ভাসছে। ১৩. যজ্ঞসমূহের কি প্রয়োজন, তপস্যার কি প্রয়োজন, অন্য তীর্থসমূহের সেবাতে কি প্রয়োজন? যদি কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে শ্রীরাধিকা প্রিয় শ্রীদামোদরের অর্চিত হন। ১৪. সকল পবিত্র তীর্থ, নদ-নদী, সরোবর কার্তিক মাসে এই মথুরা-মণ্ডলে সকলেই বাস করেন। ১৫. কার্তিকে কেশবদেবের জন্মস্থানে যে মানবগণ একবার প্রবিষ্ট হয়, তারা পরম অব্যয় শ্রীকৃষ্ণকে প্রাপ্ত হন। ১৬. কার্তিক মাসে মথুরাতে হরিপূজাকের উপহার উদ্দেশ্যে হরিপূজা দ্বারা দুর্লভ পদ প্রাপ্ত হওয়া যায়, তখন ভক্তিমান হয়ে পূজা করলে যে কি ফল, তার আর কি বলব। কার্তিক মাসে ব্রত পালনের বর্জনীয় দ্রব্যসমূহ…!!! পদ্মপুরাণে ব্রহ্ম-নারদ সংবাদে বলা হচ্ছে- ১. কার্তিক মাসে রাজমাষ (বরবটি) ও শিমসমূহ ভক্ষণ করলে, হে মুনিবর কল্পকাল (১ হাজার চতুর্যুগ) নরকাবাসী হয়। ২. কার্তিক মাসে যে ব্যক্তি কলমী শাক, পটল, বেগুন, আচার (চাটনি) ত্যাগ না করে, তাকে কল্পকাল (১ হাজার চতুর্যুগ) নরকবাসী হতে হয়। ৩. ধর্মাত্মা ব্যক্তি কার্তিক মাসে মৎস্য ও মাংস ভক্ষণ করবেন না। ৪. পরান্ন, পরশয্যা, পরধন, পরস্ত্রী-কার্তিককে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি বিশেষভাবে বর্জন করবেন। ৫. কার্তিক মাসে তৈল মর্দন, শয্যা, পরান্ন ও কাসার পাত্রে ভোজন ত্যাগ করলে পরিপূর্ণ ব্রতী হওয়া যায়। ৬. কার্তিক মাস উপস্থিত হলে পরান্ন দর্শন করে যে মানব বর্জন করে, প্রতিদিন কৃচ্ছব্রতের ফল প্রাপ্ত হন। পদ্মপুরাণে শ্রীরুক্মাঙ্গদ-মোহিনী-সংবাদে বলা হচ্ছে- ৭. কার্তিকে তৈল, মধু, কাসার পাত্র ও পঁচা বাসি অম্ল দ্রব্য, আচার ইত্যাদি বর্জন করবে। ৮. হে সুভ্রু! মৎস্য, কচ্ছপ মাংস ঔষধ হিসেবেও অন্য মাংস ভক্ষণ করবে না। কার্তিকে মাংস ভক্ষণে চণ্ডাল হয়। কার্তিক-কৃত্য-বিধি- ১. আশ্বিন মাসের যে শুক্লা একাদশী হবে বা পূর্ণিমাতে, নিরলসভাবে কার্তিক মাসের ব্রতসমূহ ঐ দিন হতে আরম্ভ করবে। ২. নিত্য শ্রীভগবানকে জাগরণ করাবার জন্য রাত্রির শেষ প্রহরে উঠে শুচি হয়ে শ্রীভগবানকে জাগিয়ে অনন্তর স্তোত্র পাঠসহ প্রভুর আরতি করবে। ৩. বৈষ্ণববৃন্দসহ আনন্দে বৈষ্ণবধর্মসমূহ শ্রবণ করে গীতবাদ্যাদিসহ প্রাতঃকালে প্রভু দামোদরদেবকে আরতি করবে। ৪. নদী আদি জলাশয়ে গিয়ে আচমনপূর্বক সংকল্প করবে। প্রভুকে প্রার্থনা জানিয়ে পরে তাঁকে যথাবিধি অর্ঘ্যদান করবে। ৫. সংকল্পমন্ত্র- হে জনার্দন! হে দেবেশ! হে দামোদর! শ্রীরাধিকাসহ আপনার প্রীতির জন্য কার্তিকে আমি প্রাতঃস্নান করব। ৬. প্রার্থনা মন্ত্র- হে দেবেশ! তোমার ধ্যানসহ এই জলে আমি স্নান করতে উদ্যত, হে দামোদর! তোমার প্রসাদে আমার পাপ বিনাশ যাক। ৭. অর্ঘ্যমন্ত্র-আমি কার্তিক মাসে বিধিবৎ স্নানকারী, হে দামোদর! হে দনুজেন্দ্রনিসূদন আমার প্রদত্ত অর্ঘ্য গ্রহণ কর। ৮. নিজদেহকে তিলকদ্বারা লেপন করে শ্রীকৃষ্ণ নারায়াণাদি নাম উচ্চারণ পূর্বক স্নান করে নিজ বিধিমতে সন্ধ্যা উপাসনা করে গৃহে আগমন করবে। ৯. দেবমন্দির অগ্রে মার্জনা করে স্বস্তিকমণ্ডল রচনা করে প্রভুকে তুলসী, মালতী, পদ্ম, অগস্ত (বক) পষ্পাদি দ্বারা অর্চনা করবে। ১০. নিত্য বৈষ্ণব সঙ্গে ভগবৎ কথা সেবন, অহোরাত্র ঘৃত, দীপ বা তিল দ্বারা অর্চন করবে। ১১. কার্তিক মাসে বিশেষ বিশেষ নৈবেদ্য অর্পন করবে, সেই রকম অষ্টোত্তর শত প্রণাম, যথাশক্তি একবার আহারাদি ব্রত আচরণ করবেন। পদ্মপুরাণে কার্তিক মাস প্রসঙ্গে- ১২. প্রাতঃকালে উত্থান শৌচাদি করে পবিত্র জলাশয়ে গিয়ে বিধিবৎ স্নান, অতপর দামোদর অর্চন কর্তব্য। ১৩. কার্তিক ব্রতধারী মৌন অবলম্বনে ভোজন, ঘৃত দ্বারা বা তিল তৈল দ্বারা দীপাদান কর্তব্য। ১৪. বৈষ্ণববৃন্দসহ কৃষ্ণকথা আলাপ দ্বারা দিন যাপন, কার্তিক মাসে ব্রত সংকল্প পালন। ১৫. আশ্বিনে শুক্লপক্ষের হরিবাসরে আরম্ভ, অথবা পৌর্ণমাসি হতে অথবা তুলারাশি আগমে সংক্রান্তিতে আরম্ভ। ১৬. শ্রীবিষ্ণুর নিকট অখণ্ড দীপদান, দেবালয়ে, তুলসীতে, আকাশে উত্তম দীপ দান করবেন। ১৭. হে ভাবিনি! কার্তিকমাসে কার্তিকব্রত গৃহে করবে না, বিশেষতঃ তীর্থে কার্তিকব্রত সর্বপ্রযত্নে করবে। শ্রীরাধাদামোদর-পূজাবিধি- ১. শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তমা, পোপিকাগণ মধ্যে শ্রেষ্ঠা, কার্তিকে শ্রীদামোদর নিকটে শ্রীরাধিকার পূজা করা উচিত। ২. ব্রজবাসী ব্রাহ্মণ এবং তৎপত্নীকে বস্ত্র, অলঙ্কার ও ভোজনাদি দান দ্বারা পূজা করা কর্তব্য। ৩. হে বিপ্রগণ! কার্তিকে শ্রীরাধিকার সন্তোষের জন্য যিনি শ্রীরাধিকা প্রতিমাকে পূজা করে তার প্রতি শ্রীমান্ দামোদর হরি তুষ্ট হন। ৪. কার্তিকে প্রতিদিন ‘দামোদরাষ্টকম্’ নামক স্তোত্র (সত্যব্রত মুনি কথিত) পাঠ করবে, তা দামোদরের অর্চন স্বরূপ ও শ্রীদামোদরের আকর্ষণকারী। দীপদান’ এবং ‘আকাশ দীপ’ এর মহিমা! স্কন্দপুরাণে পূর্বকালে দ্রাবিড়দেশে বুদ্ধ নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিল খুবই দুষ্টা প্রকৃতির এবং দুরাচার সম্পন্না। ঐ স্ত্রীর সংসর্গে থাকার ফলে ব্রাহ্মণের আয়ু ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হলেন। পতির মৃত্যুর পরেও ঐ স্ত্রীলোকটি আরও বিশেষভাবে ব্যভিচারে লিপ্ত হলো। এমনকি লোকনিন্দার ভয় না করে সে নির্লজ্জের মতো ব্যবহার করতে লাগল। তার কোনো পুত্র বা ভাই ছিল না। সে সর্বদাই ভিক্ষার অন্ন ভোজন করত। নিজের হাতে প্রস্তুত না করে সর্বদাই ভিক্ষার অন্ন ভোজন করত। নিজের হাতে প্রস্তুত না করে সর্বদাই পরের বাড়ি থেকে ভিক্ষা করে বাসি অন্ন খেত এবং অনেক সময় অপরের বাড়িতে রান্না করতে যেত। তীর্থযাত্রা আদি থেকে সর্বদাই দুরে থাকত। সে কখনও কোনো ভালো কথায় কর্ণপাত করত না। একদিন এক বিদ্ধান তীর্থযাত্রী ব্রাহ্মণ তার গৃহে আগমন করল। যার নাম ছিল কুৎস। তাকে (ঐ স্ত্রীকে) ব্যভিচারে আসক্ত দেখে সেই ব্রহ্মর্ষি কুৎস বললেন- ওরে মুর্খ নারী! মনোযোগে সহকারে আমার কথা শ্রবণ কর। পৃথ্বি আদি পঞ্চভূত দ্বারা তৈরী এই রক্তমাংসের শরীর, যা কেবল দুঃখেরই কারণ, তুই তাকে যত্ন করছিস? এই দেহ জলের বুদবুদের মতো, একদিন যা অবশ্যই বিনষ্ট হবে। এই অনিত্য শরীরকে যদি তুই নিজ বলে মানিস্ তাহলে নিজের বিচার পূর্বক এই মোহ পরিত্যাগ কর। ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণ কর এবং তাঁর লীলাকাহিনী শ্রবণ কর। এখন কার্তিক মাস আগত হবে, তখন ভগবান দামোদরের প্রীতি বিধানের জন্য, স্নান, দান আদি কর্ম করে গৃহে বা মন্দিরে বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে দীপ নিবেদন করে শ্রীবিষ্ণুকে পরিক্রমা করবে
ভজ-গোবিন্দম্ (~শ্রীপাদ আদি শঙ্করাচার্য )
ভজ-গোবিন্দম্ ( সম্পূর্ণ ) ভজ গোবিন্দং ভজ গোবিন্দং গোবিন্দং ভজ মূঢমতে । সম্প্রাপ্তে সন্নিহিতে কালে নহি নহি রক্ষতি ডুকৃঙ্করণে ॥ ১॥ অর্থ- গোবিন্দের ভজনা করো , গোবিন্দের ভজনা করো, হে মূঢ়মতি ! গোবিন্দের ভজনা করো । মৃত্যুর সমীপ সন্নিকটে ‘ডুকৃঙ্ করণে’ আবৃত্তি তোমায় রক্ষা করতে পারবে না । ( জগৎ গুরু ভগবান আদি শঙ্করাচার্য যখন দেখলেন, অতীব বৃদ্ধ এক ব্রাহ্মণ মৃত্যু কালীন অবস্থায় বসেও, ব্যাকরণের জন্য ‘ডুকৃঙ্ করণে’ নামক একটি ধাতু বারবার আবৃত্তি করে যাচ্ছেন তখন এর অসারতা উপদেশ করে আচার্য তাকে গোবিন্দের ভজনা করতে বলেন । ) মূঢ় জহীহি ধনাগমতৃষ্ণাং কুরু সদ্বুদ্ধিং মনসি বিতৃষ্ণাম্। যল্লভসে নিজকর্মোপাত্তং বিত্তং তেন বিনোদয় চিত্তম্॥ ২॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ- হে মূঢ়জন! কেবলমাত্র অর্থ উপার্জনের তৃষ্ণা পরিত্যাগ করো । এই ধরনের চিন্তা তোমার মনকে কেবলমাত্র জাগতিক করে দেবে, সুতারং মনে এর জন্য বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করো । তোমার উত্তম কর্ম্মের দ্বারা উপার্জিত যে অর্থ, তোমাকে স্বচ্ছল রাখে তার দ্বারাই তোমার মনকে খুশী রাখো। ওহে মূর্খ! নিরন্তর, এই জাগতিক মৃত্যু-গ্রাস থেকে রক্ষাকারী গোবিন্দের ভজনা করো । নারীস্তনভরনাভিদেশং দৃষ্ট্বা মা গা মোহাবেশম্ । এতন্মাংসবসাদিবিকারং মনসি বিচিন্তয় বারং বারম্ ॥ ৩॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ- নারীদের স্তনমন্ডল ও নাভিদেশ মোহের আবেশে দেখে অভিভূত হয়ো না, এসব নিছক মাংস আর মেদ এর বিকার মাত্র। বারবার মনে এই বিচার করো। হে মূঢ়জন! গোবিন্দের ভজনা করো, গোবিন্দের ভজনা করো, সকল মোহ মুক্তির মূল গোবিন্দের ভজনা করো। নলিনীদলগতজলমতিতরলং তদ্বজ্জীবিতমতিশয় চপলম্ । বিদ্ধি ব্যাধ্যভিমানগ্রস্তং লোকং শোকহতং চ সমস্তম্ ॥ ৪॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – জলবিন্দু যেমন পদ্মপত্রের উপর ক্ষণিক সময়ও স্থীর থাকে না, ক্ষণস্থায়ী হয়, তেমনি এই জীবনও অতিশয় চঞ্চল এবং ক্ষণস্থায়ী , অনিশ্চিত । সবসময় জানবে, এই ব্যাধি ও অহংকারগ্রস্থ সমস্ত জগৎ সংসার কেবল এক শোকালয় মাত্র। সুতরাং হে মূঢ়মতি গোবিন্দের ভজনা করো । যাবদ্বিত্তোপার্জনসক্ত-স্তাবন্নিজপরিবারো রক্তঃ । পশ্চাজ্জীবতি জর্জরদেহে বার্তাং কোঽপি ন পৃচ্ছতি গেহে ॥ ৫॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ- ওহে, যতদিন তুমি অর্থ উপার্জন করে যাবে , ততদিন তোমার পরিবার পরিজন তোমার সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখবে । (ভালোবাসবে, মিথ্যা প্রশংসা করবে )। পরে যখন জর্জর দেহ নিয়ে বৃদ্ধ হবে তখন গৃহে তোমার সঙ্গে কেউ ভালো করে দুটো কথা অব্দি বলবে না। অতএব, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো । যাবৎপবনো নিবসতি দেহে তাবৎপৃচ্ছতি কুশলং গেহে । গতবতি বায়ৌ দেহাপায়ে ভার্যা বিভ্যতি তস্মিন্কায়ে ॥ ৬॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ- যতক্ষণ দেহে প্রাণ বায়ুর নিবাস থাকে, ততক্ষণ-ই সবাই তার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে থাকে । প্রাণ বায়ু ত্যাগ হলে, শরীর ত্যাগ করলে , লোক তো দূর নিজের স্ত্রীও শবকে ভয় করে দূরে সরে থাকে । (মৃতে ভৌতিক ভয় – [ অথচ একসময় কতই না প্রিয় ছিল ]) সুতরাং, হে মূঢ়মতি (মূর্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো। কারণ মৃত্যুর সন্নিকটে তোমায় আর কেউ ই রক্ষা করতে সক্ষম নয়। (যারা উপর উপর তোমার শরীরের কুশল জিজ্ঞাসা করেছিল তাদের সাথে ঐ শরীর অব্দি ই সম্পর্ক , অথচ তাদের মোহের জন্য তুমি ঈশ্বরের সাধন ভজনের সময় পাচ্ছো না, কী ভয়ানক মোহ তোমায় গিলে রেখেছে ) । বালস্তাবৎ ক্রীড়াসক্তঃ তরুণস্তাবত্তরুণীসক্তঃ । বৃদ্ধস্তাবচ্চিন্তাসক্তঃ পরমে ব্রহ্মণি কোঽপি ন সক্তঃ ॥ ৭॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – বাল্যকাল যায় বালকদের খেলাধুলায় মত্ত থেকে, তারুণ্য যায় তরুণ-তরুণীর প্রতি আকর্ষণ, আসক্তিতে। বার্ধক্যে বৃদ্ধ মগ্ন থাকে নানারকম চিন্তা ভাবনায় । কিন্তু হায়! পরব্রহ্মে কারোর কোনো মন নেই । অতএব, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো । মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবেনা । কা তে কান্তা কস্তে পুত্রঃ সংসারোঽয়মতীব বিচিত্রঃ । কস্য ত্বং কঃ কুত আয়াত-স্তত্ত্বং চিন্তয় তদিহ ভ্রাতঃ ॥ ৮॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – কে তোমার স্ত্রী? কে-ই বা তোমার পুত্র? ওহে! এই সংসার অত্যন্ত বিচিত্র । তুমি-ই বা কে, কার ? কোথা থেকে এসেছ ? হে ভ্রাতা, এই তত্ত্ব বারবার চিন্তন ও বিচার করে দেখো। হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো, মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না । সৎসঙ্গত্বে নিস্সঙ্গত্বং নিস্সঙ্গত্বে নির্মোহত্বম্ । নির্মোহত্বে নিশ্চলতত্ত্বং নিশ্চলতত্ত্বে জীবন্মুক্তিঃ ॥ ৯॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – সৎসঙ্গ হতে নিঃসঙ্গত্ব প্রাপ্ত হয়, নিঃসঙ্গ হলে নির্মোহত্ত (মোহ বিহীন অবস্থা ) প্রাপ্ত হয়। নির্মোহ হলে নিশ্চলতত্ব (নিশ্চল অবস্থা ) প্রাপ্ত হয় । নিশ্চল হলে জীবন মুক্তি হয় ( জীবিত অবস্থায় মুক্ত ) । অতএব, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো, মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না । বয়সি গতে কঃ কামবিকারঃ শুষ্কে নীরে কঃ কাসারঃ । ক্ষীণে বিত্তে কঃ পরিবারঃ জ্ঞাতে তত্ত্বে কঃ সংসারঃ ॥ ১০॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – যৌবন কাল গত হয়ে বার্ধক্য প্রাপ্ত হলে আর কিসের কামানুরাগ? জল শুকিয়ে গেলে সরোবর আর সরোবর কোথায় ? ধনাভাব হলে স্বজন, পরিজন, পরিবার কোথায় যায়? ওহে, তেমনি তত্ত্ব জ্ঞান যখন হয় তখন কোথায় এই সংসার? কিছুই আর থাকে না । সুতরাং, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো, মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না। মা কুরু ধনজযৌবনগর্বং হরতি নিমেষাৎকালঃ সর্বম্ । মায়াময়মিদমখিলং বুধ্বা ব্রহ্মপদং ত্বং প্রবিশ বিদিত্বা ॥ ১১॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – ধন – জন – যৌবনের গর্ব কখনো করো না, সর্বগ্রাসী কাল এসকল কিছুই এক নিমিশে হরণ করে নেয়। এই অখিল ব্ৰহ্মাণ্ড বিশ্ব চরাচর সমস্তই মায়াময়, সুতরাং এই অনিত্য সংসারের প্রতি মায়া পরিত্যাগ করে শীঘ্রই জ্ঞানার্জন করে সত্য স্বরূপ ব্রহ্মপদে প্রবেশ করো। হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো, মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না। দিনয়ামিন্যৌ সায়ং প্রাতঃ শিশিরবসন্তৌ পুনরায়াতঃ । কালঃ ক্রীডতি গচ্ছত্যায়ু-স্তদপি ন মুঞ্চত্যাশাবায়ুঃ ॥ ১২॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – দিন-রাত্রি, সায়ং সন্ধ্যা ও প্রভাত, শীত-বসন্ত, পুনঃ পুনঃ নিরন্তর আসাযাওয়া করে। (এইরূপে ) কাল এর গতি ক্রিয়া করে চলতে থাকে । আর ক্রমে (জীবের) আয়ু ক্ষয় হয়। কিন্তু তারপরও অভাগা জীব আশাবায়ুর পরিত্যাগ করতে পারে না । অতএব, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো । মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না। কা তে কান্তা ধনগতচিন্তা বাতুল কিং তব নাস্তি নিয়ন্তা । ত্রিজগতি সজ্জনসঙ্গতিরেকা ভবতি ভবার্ণবতরণে নৌকা ॥ ১৩॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – ওহে পাগল! কেনো ধন সম্পত্তির চিন্তায় শোকাকুল হচ্ছো? তোমার কী কোনো পথপ্রদর্শক বা নিয়ন্তা নেই? তোমাকে এই ত্রি-জাগতিক সংসার শোক সাগর হতে কেবলমাত্র একটি জিনিস ই রক্ষা করতে পারে তা হলো যত শীঘ্র সম্ভব সৎসঙ্গের (সজ্জন, জ্ঞানী গুণী সাধুদের সঙ্গ ) নৌকায় চড়ে বসা । সুতরাং, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো । মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না । জটিলো মুণ্ডী লুঞ্ছিতকেশঃ কাষায়াম্বরবহুকৃতবেষঃ । পশ্যন্নপি চ ন পশ্যতি মূঢো হ্যুদরনিমিত্তং বহুকৃতবেষঃ ॥