নিরাকারবাদীরা পরম ব্রহ্মের সচ্চিদানন্দ স্বরূপকে জানতে পারে না কেন?
🔴👉 নির্বিশেষবাদীরা (নিরাকারবাদী) বেদ-বেদান্তে পারদর্শী হয়েও ভগবানের স্বরূপ উপলব্ধি করতে না পারায় (কেবল নিরাকার মনে করায়) অন্তিমে মূ*র্খ হিসেবেই পরিগনিত হয়! ⚠️🔴 এই প্রসঙ্গে শ্রীল প্রভুপাদ তার ভগবদগীতার বিজ্ঞান যোগের ২৪ নং শ্লোকের ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্যে নিরাকারবাদীদের অবস্থা সম্পর্কে যা আলোকপাত করেছেন সেটার অংশবিশেষ নিম্নে তুলে ধরা হলো। 👇 [{ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর স্বরূপে অর্জুনের সঙ্গে এখানে কথা বলছেন, অথচ নির্বিশেষবাদীরা এতই মূর্খ যে, অন্তিমে ভগবানের কোন রূপ নেই বলে তারা তর্ক করে। শ্রীরামানুজাচার্যের পরম্পরায় মহিমাময় ভগবদ্ভক্ত শ্রীযামুনাচার্য এই সম্পর্কে একটি অতি সমীচীন শ্লোক রচনা করেছেন। তিনি বলেছেন- “ত্বাং শীলরূপচরিতৈঃ পরমপ্রকৃষ্টৈঃ সত্ত্বেন সাত্ত্বিকতয়া প্রবলৈশ শাস্ত্রৈঃ। প্রখ্যাতদৈব পরমার্থবিদাং মতৈশ্চ নৈবাসুরপ্রকৃতয়ঃ প্রভবন্তি বোদ্ধুম্ ॥” “হে ভগবান! মহামুনি ব্যাসদেব, নারদ আদি ভক্তেরা তোমাকে পরমেশ্বর ভগবান বলে জানেন। বিভিন্ন বৈদিক শাস্ত্র উপলব্ধির মাধ্যমে তোমার গুণ, রূপ, লীলা আদি সম্বন্ধে অবগত হওয়া যায় এবং জানতে পারা যায় যে, তুমিই পরমেশ্বর ভগবান। কিন্তু রজ ও তমোগুণের দ্বারা আচ্ছাদিত অভক্ত অসুরেরা কখনই তোমাকে জানতে পারে না, কারণ তোমার তত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করতে তারা সম্পূর্ণ অসমর্থ। এই ধরনের অভক্তেরা বেদান্ত, উপনিষদ আদি বৈদিক শাস্ত্রে অত্যন্ত পারদর্শী হতে পারে, কিন্তু তাদের পক্ষে পুরুষোত্তম ভগবানকে জানতে পারা সম্ভব নয়।” (স্তোত্ররত্ন: ১২)] ব্রহ্মসংহিতাতে বলা হয়েছে যে, কেবল বেদান্ত শাস্ত্র অধ্যয়ন করার মাধ্যমে পরমেশ্বর ভগবানকে জানতে পারা যায় না। ভগবানের কৃপার ফলেই কেবল তিনি যে পরম পুরুষোত্তম, সেই সম্বন্ধে অবগত হওয়া যায়।} {যে সমস্ত অভক্ত বেদান্ত ও বৈদিক শাস্ত্র সম্বন্ধে তাদের কল্পনাপ্রসূত মতবাদ পোষণ করে এবং যাদের অন্তরে কৃষ্ণভাবনামৃতের লেশমাত্র নেই, তারাও অল্প-বুদ্ধিসম্পন্ন এবং তাদের পক্ষে ভগবানের সবিশেষ রূপ অবগত হওয়া অসম্ভব। যারা মনে করে যে, পরমেশ্বর ভগবান নিরাকার, তাদের অবুদ্ধয়ঃ (ভ:গী: ৭/২৪) বলা হয়েছে অর্থাৎ এরা পরম-তত্ত্বের পরম রূপকে জানে না। শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে যে, অদ্বয়-জ্ঞানের সূচনা হয় নির্বিশেষ ব্রহ্ম থেকে, তারপর তা পরমাত্মার স্তরে উন্নীত হয়, কিন্তু পরম-তত্ত্বের শেষ কথা হচ্ছে পরম পুরুষোত্তম ভগবান।} {নির্বিশেষবাদীরা তাই পরমতত্ত্ব সম্পর্কে অবগত না হয়ে মনে করে যে, শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন দেবকী ও বসুদেবের সন্তান মাত্র, অথবা একজন রাজকুমার, অথবা একজন অত্যন্ত শক্তিশালী জীব মাত্র। ভগবদ্গীতায় (৯/১১) ভগবান এই ভ্রান্ত ধারণার নিন্দা করে বলেছেন, “অবজানন্তি মাং মূঢ়া মানুষীং তনুমাশ্রিতম্…।” অনুবাদ: “অত্যন্ত মুঢ় লোকগুলিই কেবল আমাকে একজন সাধারণ মানুষ বলে মনে করে আমাকে অবজ্ঞা করে।” প্রকৃতপক্ষে, ভক্তি সহকারে ভগবানের সেবা করে কৃষ্ণভাবনা অর্জন না করলে এখনই শ্রীকৃষ্ণকে উপলব্ধি করতে পারা যায় না। শ্রীমদ্ভাগবতে (১০/১৪/২৯) এই কথা প্রতিপন্ন করে বলা হয়েছে- “অথাপি তে দেব পদাম্বুজদ্বয় প্রসাদলেশানুগৃহীত এব হি। জানাতি তত্ত্বং ভগবন্মহিম্নো ন চান্য একোহপি চিরং বিচিন্বন।।” অনুবাদ: “হে ভগবান! আপনার শ্রীচরণ-কমলের কণামাত্রও কৃপা যে লাভ করতে পারে, সে আপনার মহান পুরুষত্বের উপলব্ধি অর্জন করতে পারে। কিন্তু যারা পরম পুরুষোত্তম ভগবানকে উপলব্ধির উদ্দেশ্যে কেবলই জল্পনা-কল্পনা করে, তারা বহু বছর ধরে বেদ অধ্যয়ন করতে থাকলেও আপনাকে জানতে সক্ষম হয় না।” কেবলমাত্র জল্পনা-কল্পনা আর বৈদিক শাস্ত্রের আলোচনার মাধ্যমে পরম পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের নাম-রূপ-লীলা আদি জানতে পারা যায় না। তাঁকে জানতে হলে অবশ্যই ভক্তিযোগের পন্থা অবলম্বন করতে হয়। কেউ যখন “হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে” -এই মহামন্ত্র কীর্তন করার মাধ্যমে ভক্তিযোগ অনুশীলন শুরু করে সম্পূর্ণভাবে কৃষ্ণভাবনামৃতে মগ্ন হয়, তখনই কেবল পরম পুরুষোত্তম ভগবানকে জানা যায়।}] উপস্থাপনায়: প্রবীর চৈতন্য চন্দ্র দাস [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
আমাদের শাস্ত্র কি হস্তরেখায় ভবিষ্যৎ বিচার (Palmistry) কে সমর্থন করে?
আমাদের শাস্ত্র কি হস্তরেখায় ভবিষ্যৎ বিচার (Palmistry) কে সমর্থন করে? সনাতন ধর্ম হস্তরেখা সমর্থন করে, কেননা হস্তরেখা আমাদের আগের জীবনের কর্মফল প্রদর্শন করে। এমন নয় রেখা আছে বলে সেটা হবে, বরং এটা হবে সেটা বোঝাতে হাতের রেখার বিভিন্নতা। কিন্তু হস্তরেখা সঠিকভাবে বিচার করতে পারে এমন বিশারদ পাওয়া দুষ্কর বর্তমান সময়ে। পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে কেউ যদি নিয়মিত হাতে তালি দিয়ে হরিনাম কীর্তন করে, তবে তার হাতের রেখায় লিপিকৃত দুর্ভাগ্য দূরীভূত হয়। প্রশ্ন তাহলে যাদের হাত নেই তাদের কি সৌভাগ্য নেই? সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য হাতের ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে পূর্ব জীবনের কর্মের ওপর। হাতের রেখা হলো ডায়েরির মতো, যেখানে আগের জীবনের কর্মফল লেখা থাকে। হাত না থাকলেও কর্ম ও কর্মফল রয়েছে, তাই সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য হাতের ওপর নির্ভর করে না। হাতের রেখা কেবল এই বিষয়ে জানার একটি অস্পষ্ট মাধ্যম। ।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
কৃষ্ণভক্তিকে বেদে দূর্লভ বলা হয়েছে কেন?
কৃষ্ণভক্তিকে বেদে দূর্লভ বলা হয়েছে কেন? এ সম্পর্কে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলেছেন- ত্রৈগুণ্যবিষয়া বেদা নিস্ত্রৈগুণ্যো ভবার্জুন । নির্দ্বন্দ্বো নিত্যসত্ত্বস্থো নির্যোগক্ষেম আত্মবান্ ॥ [ শ্রীমদ্ভগবদগীতা ২।৪৫ ] বঙ্গানুবাদ: বেদে প্রধানত জড়া প্রকৃতির তিনটি গুণ সম্বন্ধেই আলোচনা করা হয়েছে। হে অর্জুন ! তুমি সেই গুণগুলিকে অতিক্রম করে নির্গুণস্তরে অধিষ্ঠিত হও। সমস্ত দন্দ্ব থেকে মুক্ত হও এবং লাভ-ক্ষতি ও আত্মরক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে অধ্যাত্ম চেতনায় অধিষ্ঠিত হও। শ্রীমদ্ভাগবত (১১।৩।৪৪)-এ বলা হয়েছে, “পরোক্ষবাদ বেদোঽয়ং, অর্থাৎ পরোক্ষবাদ ( একপ্রকারে স্থিত বস্তুর যথার্থতত্ত্ব গোপন করার জন্য অন্য প্রকারে তার বর্ণন ) বেদের একটি স্বভাব। পিতা যেমন পুত্রের রোগনিবারণের জন্য কুসুমিতবাক্যে মধুরদ্রব্যের আশা দেখিয়ে পরে বঞ্চণাপূর্ব্বক পুত্রের মঙ্গল-কামনায় মঙ্গলকর ঔষধাদি দান করেন, কুপথের প্রলোভন দিয়ে পুত্রকে ঔষধ গ্রহণে কৌতূহলাক্রান্ত করেন, তেমনই কর্মকাণ্ডে ফলের আশা ভরসায় উৎসাহিত করে বেদসমূহ ইন্দ্রিয় পরায়ণ অদূরদর্শী কর্মীকে কর্মকাণ্ডের লোভ দেখিয়ে কর্মফল ভোগ থেকে অবসর দেন। তাহলে প্রকৃতির সমস্ত গুণকে কিভাবে অতিক্রম করা যায়? এ সম্পর্কে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- মা চ যোঽব্যভিচারেণ ভক্তিযোগেন সেবতে। স গুণান্ সমতীত্যৈতান্ ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে ॥ [ শ্রীমদ্ভগবদগীতা ১৪।২৬ ] বঙ্গানুবাদ: যিনি ঐকান্তিক ভক্তিযোগ সহকারে আমার সেবা করেন, তিনি প্রকৃতির সমস্ত গুণকে অতিক্রম করে ব্রহ্মভূত স্তরে উন্নীত হন। অর্থাৎ, কেউ যদি ঐকান্তিক ভক্তিযোগের মাধ্যমে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করেন, তাহলে তিনি প্রকৃতির সমস্ত গুণকে অতিক্রম করতে পারেন । ।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
কার্তিক মাসে আমিষ আহার বর্জন করতে হয় কেন?
কার্তিক মাসে আমিষ আহার বর্জন করতে হয় কেন? এ সম্পর্কে মহাভারতে ভীষ্মদেব যুধিষ্ঠিরকে বলছেন- চতুয়ো বাষিকান্মাসান যাে মাংসং পরিবজ্জয়েৎ। চত্বারি ভদ্রাণ্যাপ্নোতি কীর্তিমায়ুর্যশাে বলম॥ [ মহাভারত অনুশাসন পর্ব, অধ্যায় ১০০, শ্লোক-৯৩ ] বঙ্গানুবাদ: যিনি বর্ষার চার মাস অর্থাৎ শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক মাসে মাংস বর্জন করেন, তিনি কীর্তি, আয়ু,যশ ও বল এই চারি প্রকার মঙ্গল লাভ করিয়া থাকেন। এ সম্পর্কে মহাভারতে ভীষ্মদেব যুধিষ্ঠিরকে আরো বলছেন- অথবা মাসমেকং বৈ সর্বমাংসান্যভক্ষয়ন। অতীত্য সর্বদুঃখানি সুখং জীবেন্নিরাময়ঃ ॥ বর্জ্জয়ন্তি হি মাংসানি মাসশঃ পক্ষশােহপি বা। তেষাং হিংসানিবৃত্তানাং ব্ৰহ্মলােকো বিধীয়তে ॥ [ মহাভারত অনুশাসন পর্ব, অধ্যায় ১০০, শ্লোক-৯৪,৯৫ ] বঙ্গানুবাদ: যে সমস্ত মানুষ কার্তিক, মাঘ ও বৈশাখের এক মাস সমস্ত মাংস পরিত্যাগ করেন, তারা সকল দুঃখ অতিক্রমপূৰ্ব্বক নিরাময় হয়ে সুখে জীবনযাপন করেন। আর যারা প্রতিটি মাসে ও প্রতিটি পক্ষে মাংস বর্জন করে চলেন, হিংসা হতে নিবৃত্ত সেই সজ্জনদের জন্য ব্ৰহ্মলােক নির্দিষ্ট থাকে। এ সম্পর্কে স্কন্দপুরাণে উল্লেখ রয়েছে- কার্ত্তিকে বর্জ্জয়েন্মাংসং সন্ধানঞ্চ বিশেষতঃ। রাক্ষসীং যোনীমাপ্নোতি সকৃন্মাংসস্য ভক্ষণাৎ।। [ স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখন্ডম-কার্ত্তিকমাসমাহাত্ম্যম, ২।১৮] বঙ্গানুবাদ: অন্য কিছু বর্জন করো বা না করো, কার্তিক মাসে বিশেষভাবে মাংস (আমিষ) ও মদ্য (মাদক) পরিহার করবে। কার্ত্তিকমাসে একবার মাত্র মাংস ভোজন করলে রাক্ষসযোনী প্রাপ্তি ঘটে। তাই যাদের এখনো নিয়মিত ভগবানের প্রসাদ পাওয়ার সৌভাগ্য হয় নি, তাদের বিশেষ ভাবে অবশ্যই কার্তিক মাসে আমিষ বর্জন করা উচিত। ।।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
দামোদর মাসে আমলকী ফল নিবেদনের মাহাত্ম্য
দামোদর মাসে আমলকী ফল নিবেদনের মাধ্যমে অশেষ সুফল লাভ করুন! পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন করুণাসাগর। সাধু ও শাস্ত্র সিদ্ধান্ত আমাদের জানিয়েছেন, আমরা ভগবানের কৃপা পেতে যত না উৎসুক, ভগবান আমাদের কৃপা করতে সহস্রগুণ বেশি উৎসুক। তবে, ভগবান ভক্তদের যশস্বী করতে চান বলেই কিছু নিয়মাদি দিয়েছেন,আবার অল্পের জন্য বিশাল প্রতিদানের কথা দিয়েছেন, যাতে আমরা সহজেই সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভগবানের প্রিয় হতে পারি। তাছাড়া কৃপা মানেই হলো, ‘নির্দিষ্ট কৃত্য করার ফলে যা লাভ হয়।’ দামোদর মাস এমনই একটি সুযোগ, যার মাধ্যমে আমরা যেকোনো ভক্তিমূলক সেবায় সহস্র গুণে বেশী কৃপা লাভ করতে পারি। দামোদর মাসে দীপদান, তুলসীকাষ্ঠের প্রদীপ নিবেদনের পাশাপাশি আরেকটি সুযোগ হলো ভগবানের সেবায় আমলকী নিয়োজন। অতি ক্ষুদ্র, মধুরতাবিহীন এই ফলটিকেই বৈদিক শাস্ত্রে বিশদ ভাবে মহিমান্বিত করা হয়েছে। পুরাণে বলা হয়েছে, কোনো এক কল্পে দেবী লক্ষ্মী ও পার্বতী একত্রে হরিকথা আলোচনার সময় ভক্তিপূর্ণ অশ্রু বিসর্জন করায় সেই প্রেমাশ্রু থেকে আমলকীর উৎপত্তি। এর পরবর্তী কোনো কল্পে জড়জগতে আদিবৃক্ষরূপে আমলকীর আবির্ভাব। আমলকী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এত প্রিয় যে বলা হয়েছে, আমলকী বৃক্ষের তলে বসে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা, জপ প্রভৃতি করলে প্রতি ক্ষণে মহাযজ্ঞের ফল লাভ হয়। (স্কন্দপুরাণ) উক্ত পুরাণে আরো বর্ণিত হয়েছে, ভগবানের চরণে নিবেদিত আমলকী ফল আর তুলসীপত্র গ্রহণ করা হলে কোটি কোটি তীর্থদর্শনের ফল লাভ হয়। এছাড়া তুলসীপত্রের পর অন্য পত্র সমূহের মধ্যে আমলকীর পত্রও ভগবানের প্রিয়। তুলসী যেমন ভগবানের সবকিছুর মধ্যে সবথেকে বেশী প্রিয় ফলের মধ্যে আমলকীও তেমনি প্রিয়। তুলসীর ন্যায় তাই ভগবানের চরণে আমলকীফল, ভোগে আমলকী আবার এমনকি আমলকী ফল দিয়ে মালা গেঁথে দিলেও কৃষ্ণ সেবকের প্রতি কোটিগুণ সন্তুষ্ট হন। প্রত্যহ কৃষ্ণের প্রসাদী আমলকী ও তুলসী ভক্ষণের মাধ্যমে নিখিল পাতক ও দুর্ভাগ্য দূর হয়, জীব ভগবানের ন্যায় নির্মল হয়ে নিজ প্রকৃত শুদ্ধসত্ত্বময় স্বরূপ লাভ করে,পরিশেষে বিশুদ্ধ ভগবদ্ভক্তি লাভ করে থাকে। এই দামোদর মাসে ভগবানের ইচ্ছায় প্রতি বছর আমলকীফল পরিপুষ্ট হয়। তাই ভগবৎপ্রদত্ত এই সুযোগ গ্রহণ করুন, তুলসীকাষ্ঠের প্রদীপ, তুলসী মঞ্জরীর সাথে সাথে আমলকী ফল ভগবানের সেবায় প্রদান করে পরম ভক্তিসহকারে তা গ্রহণ করে কৃতার্থ হোন। হরেকৃষ্ণ! ।।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
দামোদর মাসে ব্রত পালনের বিধিসমূহ
দামোদর মাসে ব্রত পালনের বিধিসমূহ! দামোদর মাসের মাহাত্ম্য- ১. যে কোনও দেশে কার্তিকে স্নান ও দান বিশেষতঃ পূজাতে তা অগ্নিহোত্র সমফল। ২. কুরুক্ষেত্রে কোটিগুণ ফল, গঙ্গায়ও তৎসম ফল, তার থকে অধিক পুস্করে, হে ভার্গব! দ্বারকায়ও অধিক। কার্তিক মাসে স্নানও শ্রীভগবৎপূজন শ্রীকৃষ্ণসালোক্যপ্রদ। ৩. হে মুনিগণ! মথুরা ব্যতীত, অন্যপুরী সকল তার সমান, যেহেতু মথুরা-মণ্ডলেই শ্রীহরির দামোদর লীলা প্রকট হয়েছিল। ৪. অতএব কার্তিকে মথুরায় শ্রীগোবিন্দের প্রীতিবর্দ্ধন, কার্তিকে মথুরাতেই চরম ফল প্রাপ্তি হয়। ৫. যেমন মাঘে প্রয়াগতীর্থ, বৈশাখে জাহ্নবী, কার্তিকে মথুরা সেবা তা থেকে উৎকর্ষ আর নাই। ৬. কার্তিকে মথুরাতে মানবগণ স্নান করে দামোদরের পূজা করলে তারা কৃষ্ণসারূপ্য প্রাপ্ত জানবেন, এ বিষয়ে বিচার কর্তব্য নয়। ৭. হে বিপ্র! এই জগতে মানবগণের পক্ষে মথুরাতে কার্তিক মাস দুর্লভ। যেখানে পূজিত হয়ে দামোদর নিজরূপ ভক্তগণকে প্রদান করেন। ৮. শ্রীহরি অর্চিত হয়ে অন্যত্র সেবিত ভক্তগণকে ভুক্তি মুক্তি দান করেন, এই শ্রীহরি কিন্ত ভক্তি দান করেন না, যেহেতু শ্রীহরির বশ্যকারী। ৯. কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে একবারও শ্রীদামোদরের পূজা থেকে সেই ভক্তি কিন্তু অনায়াসে মানবগণ শ্রীহরি হতে লাভ করে। ১০. শ্রীদামোদরদেব কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে মন্ত্র-দ্রব-বিহীন পূজাকেও স্বীকার করেন। ১১. যে পাপের মরণান্তেই বিনিষ্কৃতি হয় তার শুদ্ধির জন্য কার্তিক মাসে মথুরাপুরীতে হরিপূজাই সুনিশ্চয়, এই প্রায়শ্চিত্ত শাস্ত্রে উক্ত হয়েছেন। ১২. বালক ধ্রুব কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে শ্রীদামোদরের পূজা ও ধ্যান দ্বারা যোগিগণ দুর্লভ শ্রীভগবানকে শীঘ্র দর্শন প্রাপ্ত হয়েছিলেন। পৃথিবীতে মথুরা সুলভা, সেই রকম প্রতিবছর কার্তিক মাস সুলভ, তথাপি এই জগতে মূঢ় মানবগণ ভবসমুদ্রে জন্ম-মৃত্যু প্রবাহে ভাসছে। ১৩. যজ্ঞসমূহের কি প্রয়োজন, তপস্যার কি প্রয়োজন, অন্য তীর্থসমূহের সেবাতে কি প্রয়োজন? যদি কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে শ্রীরাধিকা প্রিয় শ্রীদামোদরের অর্চিত হন। ১৪. সকল পবিত্র তীর্থ, নদ-নদী, সরোবর কার্তিক মাসে এই মথুরা-মণ্ডলে সকলেই বাস করেন। ১৫. কার্তিকে কেশবদেবের জন্মস্থানে যে মানবগণ একবার প্রবিষ্ট হয়, তারা পরম অব্যয় শ্রীকৃষ্ণকে প্রাপ্ত হন। ১৬. কার্তিক মাসে মথুরাতে হরিপূজাকের উপহার উদ্দেশ্যে হরিপূজা দ্বারা দুর্লভ পদ প্রাপ্ত হওয়া যায়, তখন ভক্তিমান হয়ে পূজা করলে যে কি ফল, তার আর কি বলব। কার্তিক মাসে ব্রত পালনের বর্জনীয় দ্রব্যসমূহ…!!! পদ্মপুরাণে ব্রহ্ম-নারদ সংবাদে বলা হচ্ছে- ১. কার্তিক মাসে রাজমাষ (বরবটি) ও শিমসমূহ ভক্ষণ করলে, হে মুনিবর কল্পকাল (১ হাজার চতুর্যুগ) নরকাবাসী হয়। ২. কার্তিক মাসে যে ব্যক্তি কলমী শাক, পটল, বেগুন, আচার (চাটনি) ত্যাগ না করে, তাকে কল্পকাল (১ হাজার চতুর্যুগ) নরকবাসী হতে হয়। ৩. ধর্মাত্মা ব্যক্তি কার্তিক মাসে মৎস্য ও মাংস ভক্ষণ করবেন না। ৪. পরান্ন, পরশয্যা, পরধন, পরস্ত্রী-কার্তিককে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি বিশেষভাবে বর্জন করবেন। ৫. কার্তিক মাসে তৈল মর্দন, শয্যা, পরান্ন ও কাসার পাত্রে ভোজন ত্যাগ করলে পরিপূর্ণ ব্রতী হওয়া যায়। ৬. কার্তিক মাস উপস্থিত হলে পরান্ন দর্শন করে যে মানব বর্জন করে, প্রতিদিন কৃচ্ছব্রতের ফল প্রাপ্ত হন। পদ্মপুরাণে শ্রীরুক্মাঙ্গদ-মোহিনী-সংবাদে বলা হচ্ছে- ৭. কার্তিকে তৈল, মধু, কাসার পাত্র ও পঁচা বাসি অম্ল দ্রব্য, আচার ইত্যাদি বর্জন করবে। ৮. হে সুভ্রু! মৎস্য, কচ্ছপ মাংস ঔষধ হিসেবেও অন্য মাংস ভক্ষণ করবে না। কার্তিকে মাংস ভক্ষণে চণ্ডাল হয়। কার্তিক-কৃত্য-বিধি- ১. আশ্বিন মাসের যে শুক্লা একাদশী হবে বা পূর্ণিমাতে, নিরলসভাবে কার্তিক মাসের ব্রতসমূহ ঐ দিন হতে আরম্ভ করবে। ২. নিত্য শ্রীভগবানকে জাগরণ করাবার জন্য রাত্রির শেষ প্রহরে উঠে শুচি হয়ে শ্রীভগবানকে জাগিয়ে অনন্তর স্তোত্র পাঠসহ প্রভুর আরতি করবে। ৩. বৈষ্ণববৃন্দসহ আনন্দে বৈষ্ণবধর্মসমূহ শ্রবণ করে গীতবাদ্যাদিসহ প্রাতঃকালে প্রভু দামোদরদেবকে আরতি করবে। ৪. নদী আদি জলাশয়ে গিয়ে আচমনপূর্বক সংকল্প করবে। প্রভুকে প্রার্থনা জানিয়ে পরে তাঁকে যথাবিধি অর্ঘ্যদান করবে। ৫. সংকল্পমন্ত্র- হে জনার্দন! হে দেবেশ! হে দামোদর! শ্রীরাধিকাসহ আপনার প্রীতির জন্য কার্তিকে আমি প্রাতঃস্নান করব। ৬. প্রার্থনা মন্ত্র- হে দেবেশ! তোমার ধ্যানসহ এই জলে আমি স্নান করতে উদ্যত, হে দামোদর! তোমার প্রসাদে আমার পাপ বিনাশ যাক। ৭. অর্ঘ্যমন্ত্র-আমি কার্তিক মাসে বিধিবৎ স্নানকারী, হে দামোদর! হে দনুজেন্দ্রনিসূদন আমার প্রদত্ত অর্ঘ্য গ্রহণ কর। ৮. নিজদেহকে তিলকদ্বারা লেপন করে শ্রীকৃষ্ণ নারায়াণাদি নাম উচ্চারণ পূর্বক স্নান করে নিজ বিধিমতে সন্ধ্যা উপাসনা করে গৃহে আগমন করবে। ৯. দেবমন্দির অগ্রে মার্জনা করে স্বস্তিকমণ্ডল রচনা করে প্রভুকে তুলসী, মালতী, পদ্ম, অগস্ত (বক) পষ্পাদি দ্বারা অর্চনা করবে। ১০. নিত্য বৈষ্ণব সঙ্গে ভগবৎ কথা সেবন, অহোরাত্র ঘৃত, দীপ বা তিল দ্বারা অর্চন করবে। ১১. কার্তিক মাসে বিশেষ বিশেষ নৈবেদ্য অর্পন করবে, সেই রকম অষ্টোত্তর শত প্রণাম, যথাশক্তি একবার আহারাদি ব্রত আচরণ করবেন। পদ্মপুরাণে কার্তিক মাস প্রসঙ্গে- ১২. প্রাতঃকালে উত্থান শৌচাদি করে পবিত্র জলাশয়ে গিয়ে বিধিবৎ স্নান, অতপর দামোদর অর্চন কর্তব্য। ১৩. কার্তিক ব্রতধারী মৌন অবলম্বনে ভোজন, ঘৃত দ্বারা বা তিল তৈল দ্বারা দীপাদান কর্তব্য। ১৪. বৈষ্ণববৃন্দসহ কৃষ্ণকথা আলাপ দ্বারা দিন যাপন, কার্তিক মাসে ব্রত সংকল্প পালন। ১৫. আশ্বিনে শুক্লপক্ষের হরিবাসরে আরম্ভ, অথবা পৌর্ণমাসি হতে অথবা তুলারাশি আগমে সংক্রান্তিতে আরম্ভ। ১৬. শ্রীবিষ্ণুর নিকট অখণ্ড দীপদান, দেবালয়ে, তুলসীতে, আকাশে উত্তম দীপ দান করবেন। ১৭. হে ভাবিনি! কার্তিকমাসে কার্তিকব্রত গৃহে করবে না, বিশেষতঃ তীর্থে কার্তিকব্রত সর্বপ্রযত্নে করবে। শ্রীরাধাদামোদর-পূজাবিধি- ১. শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তমা, পোপিকাগণ মধ্যে শ্রেষ্ঠা, কার্তিকে শ্রীদামোদর নিকটে শ্রীরাধিকার পূজা করা উচিত। ২. ব্রজবাসী ব্রাহ্মণ এবং তৎপত্নীকে বস্ত্র, অলঙ্কার ও ভোজনাদি দান দ্বারা পূজা করা কর্তব্য। ৩. হে বিপ্রগণ! কার্তিকে শ্রীরাধিকার সন্তোষের জন্য যিনি শ্রীরাধিকা প্রতিমাকে পূজা করে তার প্রতি শ্রীমান্ দামোদর হরি তুষ্ট হন। ৪. কার্তিকে প্রতিদিন ‘দামোদরাষ্টকম্’ নামক স্তোত্র (সত্যব্রত মুনি কথিত) পাঠ করবে, তা দামোদরের অর্চন স্বরূপ ও শ্রীদামোদরের আকর্ষণকারী। দীপদান’ এবং ‘আকাশ দীপ’ এর মহিমা! স্কন্দপুরাণে পূর্বকালে দ্রাবিড়দেশে বুদ্ধ নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিল খুবই দুষ্টা প্রকৃতির এবং দুরাচার সম্পন্না। ঐ স্ত্রীর সংসর্গে থাকার ফলে ব্রাহ্মণের আয়ু ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হলেন। পতির মৃত্যুর পরেও ঐ স্ত্রীলোকটি আরও বিশেষভাবে ব্যভিচারে লিপ্ত হলো। এমনকি লোকনিন্দার ভয় না করে সে নির্লজ্জের মতো ব্যবহার করতে লাগল। তার কোনো পুত্র বা ভাই ছিল না। সে সর্বদাই ভিক্ষার অন্ন ভোজন করত। নিজের হাতে প্রস্তুত না করে সর্বদাই ভিক্ষার অন্ন ভোজন করত। নিজের হাতে প্রস্তুত না করে সর্বদাই পরের বাড়ি থেকে ভিক্ষা করে বাসি অন্ন খেত এবং অনেক সময় অপরের বাড়িতে রান্না করতে যেত। তীর্থযাত্রা আদি থেকে সর্বদাই দুরে থাকত। সে কখনও কোনো ভালো কথায় কর্ণপাত করত না। একদিন এক বিদ্ধান তীর্থযাত্রী ব্রাহ্মণ তার গৃহে আগমন করল। যার নাম ছিল কুৎস। তাকে (ঐ স্ত্রীকে) ব্যভিচারে আসক্ত দেখে সেই ব্রহ্মর্ষি কুৎস বললেন- ওরে মুর্খ নারী! মনোযোগে সহকারে আমার কথা শ্রবণ কর। পৃথ্বি আদি পঞ্চভূত দ্বারা তৈরী এই রক্তমাংসের শরীর, যা কেবল দুঃখেরই কারণ, তুই তাকে যত্ন করছিস? এই দেহ জলের বুদবুদের মতো, একদিন যা অবশ্যই বিনষ্ট হবে। এই অনিত্য শরীরকে যদি তুই নিজ বলে মানিস্ তাহলে নিজের বিচার পূর্বক এই মোহ পরিত্যাগ কর। ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণ কর এবং তাঁর লীলাকাহিনী শ্রবণ কর। এখন কার্তিক মাস আগত হবে, তখন ভগবান দামোদরের প্রীতি বিধানের জন্য, স্নান, দান আদি কর্ম করে গৃহে বা মন্দিরে বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে দীপ নিবেদন করে শ্রীবিষ্ণুকে পরিক্রমা করবে
দেবী দুর্গাকে কেন বৈষ্ণবী, বিষ্ণুমায়া, নারায়ণী নামে ডাকা হয়?
দেবী দুর্গাকে কেন বৈষ্ণবী, বিষ্ণুমায়া, নারায়ণী নামে ডাকা হয়? শ্রী শ্রী চন্ডীতে দেবীর স্তুতিকালে ক্ষণে ক্ষণে দেবীকে বৈষ্ণবী, বিষ্ণুমায়া, নারায়ণী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়েছে। যেমন: শঙ্খ-চক্র-গদা-শার্ঙ্গ-গৃহীত-পরম-আয়ুধে। প্রসীদ বৈষ্ণবী-রূপে নারায়ণি নমঃ অস্তু তে।। ( শ্রী চন্ডী, ১১।১৬ -মার্কেন্ড পুরাণস্থ ) অনুবাদ: হে শঙ্খ চক্র গদা শার্ঙ্গাদি শ্রেষ্ঠ আয়ুধ-ধারিণি, তুমি বৈষ্ণবী রূপে বিখ্যাত, হে নারায়ণী, তোমাকে নমস্কার। . শ্রীমদ্ভাগবতে উল্লেখ রয়েছে – নামধেয়ানি কুর্বন্তি স্থানানি চ নরা ভুবি। দুর্গেতি ভদ্রকালীতি বিজয়া বৈষ্ণবীতি চ ৷। কুমুদা চণ্ডিকা কৃষ্ণা মাধবী কন্যকেতি চ। মায়া নারায়ণীশানী শারদেত্যম্বিকেতি চ।। ( শ্রীমদ্ভাগবত ১০।২।১১,১২ ) অনুবাদ: ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মায়াদেবীকে এই বলে আশীর্বাদ করেছিলেন– পৃথিবীতে মানুষেরা বিভিন্ন স্থানে তোমার দুর্গা, ভদ্রকালী, বিজয়া, বৈষ্ণবী, কুমুদা, চণ্ডিকা, কৃষ্ণা, মাধবী, কন্যকা, মায়া, নারায়ণী, ঈশানী, শারদা, অম্বিকা প্রভৃতি নামকরণ করবে। . দেবীকে কেন এ সকল বৈষ্ণবীয় সম্বোধনে সম্বোধিত করা হয় তার ব্যাখা দেবী স্বয়ং-ই দিয়েছেন- বিষ্ণুভক্তিরহং তেন বিষ্ণুমায়া চ বৈষ্ণবী। নারায়ণস্য মায়াহং তেন নারায়ণী স্মৃতা।। ( শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কৃষ্ণজন্মখন্ড, ১২৯।৯৩ ) অনুবাদ: দেবী বললেন, ” আমি বিষ্ণুভক্তা, তাই আমাকে ‘বিষ্ণুমায়া’ ও ‘বৈষ্ণবী’ নামে ডাকা হয়। আমি নারায়ণের মায়া, তাই আমাকে ‘নারায়ণী‘ বলা হয়। . ।।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
একাদশীতে শ্রাদ্ধ নিষেধ কেন?
একাদশীতে শ্রাদ্ধ নিষেধ কেন? এ বিষয়ে পদ্মপুরাণে স্বয়ং মহাদেব পার্বতীকে বলেছেন- একাদশ্যপবাসস্ত কর্তব্যো নাত্র সংশয়ঃ। একাদশ্যাঞ্চ প্রাপ্তায়াং মাতাপিত্রোমৃতেহহনি।। ১৩।। দ্বাদশ্যান্ত প্রদাতব্যং নোপবাসদিনে ক্বচিৎ। গর্হিতান্নং নবাশ্বন্তি পিতরশ্চ দিবৌকসঃ।।১৪।। [ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ২৩৪। ১৩-১৪ ] বঙ্গানুবাদ: একাদশীতে উপবাস অবশ্য কর্তব্য, এ বিষয়ে সংশয় নেই একাদশীর দিনে পিতা-মাতার মৃততিথি উপস্থিত হলে দ্বাদশীতে তাদের শ্রাদ্ধ করবে, কদাচিৎ উপবাসদিনে করবে না। কেননা, একাদশীতে অন্ন গ্রহণ নিন্দনীয়, দেব ও পিতৃগণ নিন্দাতান্ন ভোজন করেন না। এজন্যই একাদশীতে শ্রাদ্ধ নিষিদ্ধ। ।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
সদ্গুরুদেব কি আমিষ-আহারীদের দীক্ষা দেন?
সদ্গুরুদেব কি আমিষ-আহারীদের দীক্ষা দেন? এ সম্পর্কে স্কন্দ পুরাণে উল্লেখ রয়েছে – এবমাদিগুণৈর্ধূক্তং শিষ্যং নৈব পরিগ্রহেৎ। গৃহ্ণীয়াদ্যদি তদ্দোষঃ প্রায়ো গুরুম্ পস্পৃশেৎ।। অমাত্যদেষো রাজানং জায়াদোষঃ পতিং যথা। তথা শিষ্যকৃতো দোষো গুরুং প্রাপ্নোত্যসংশয়ম্।। তন্মাচ্ছিষ্যৎ গুরু-নিত্যং পরীক্ষ্যৈব পরিগ্রহেৎ। [ স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখণ্ড, মার্গশীর্ষ্যমাস মাহাত্ম্য ১৬। ১৬-১৮ ] বঙ্গানুবাদ: এই সকল গুণ (দোষ) যুক্ত মানবকে শিষ্য বলিয়া গ্রহণ করিবে না; আর এই সকল দোষের অনেকগুলি যদি গুরুকে স্পর্শ করে, তবে তাদৃশ গুরুকেও গুরু বলিয়া গ্রহণ করা কর্তব্য নহে। দেখ, যেমন অমাত্যদোষ নৃপকে এবং পত্নীদোষ পতিকে আশ্রয় করে, তদ্রূপ শিষ্যকৃত দোষও গুরুকে আশ্রয় করিয়া থাকে, সন্দেহ নাই; অতএব গুরু শিষ্যকে নিত্য পরীক্ষা করিয়া গ্রহণ করিবেন। বিশ্লেষণ: শ্রীমদ্ভাগবতে (৫/২৬/১৩)-তে উল্লেখ রয়েছে-, “যে সমস্ত নিষ্ঠুর মানুষ তাদের দেহ ধারণের জন্য এবং জিহ্বার তৃপ্তি সাধনের জন্য নিরীহ পশু-পক্ষীকে হত্যা করে রন্ধন করে, মৃত্যুর পর যমদূতেরা কুন্তীপাক নরকে ফুটন্ত তেলে তাদের পাক করে।” এই রকম পশু-পক্ষী হত্যাকারী শিষ্যকে গুরুদেব কখনো দীক্ষা দিবেন না। যদি গুরুদেব এমন শিষ্যকে দীক্ষা দেন তাহলে রাজার প্রজারা যদি অধার্মিক হয়, যেভাবে রাজাকে নরকে যেতে হয়। স্ত্রী যদি অধার্মিক হয়, চরিত্রহীন হয় সেই দোষে যেভাবে স্বামী কে নরকে যেতে হয়। ঠিক সেই রকম যথার্থ গুরু এবং যথার্থ শিষ্য না হয়, গুরুর কারণে শিষ্য নরকে যাবে এবং শিষ্যের কারণে গুরুকে নরকগামী হতে হবে। তাই যিনি সদ্গুরুদেব তিনি কখনোই আমিষ আহারী ব্যক্তিকে দীক্ষা দিবেন না, দীক্ষার আগে তিনি শিষ্যকে পরিক্ষা করে দেখবেন তিনি আমিষাশী, নেশা এবং অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত কিনা। যদি কোনো গুরুদেব এমন পাপীকে দীক্ষা দেন, বুঝতে হবে তিনি সদ্গুরুদেব নন। এমন গুরুর থেকে দীক্ষা নিলে অবশ্যই সেই গুরু সহ শিষ্য নরকে নিমজ্জিত হতে হবে। অতএব সদ্গুরুদেব কখনো আমিষাশীকে দীক্ষা দিবেন না। ।।হরে কৃষ্ণ।। . [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
গুরুদেব কে? সদ্গুরুদেব চেনার উপায় কি? গুরুদেব কি পরিত্যাগ করা যায়?
গুরুদেব কে? যিনি অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলো প্রদান করে আমাদের চক্ষু উন্মোচিত করেন তিনিই গুরুদেব। গুরুদেব পরমতত্ত্ব পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি। গুরুদেব ভগবানের মতোই পূজনীয় কিন্তু তিনি ভগবান নন। গুরুদেব নির্বাচন প্রত্যেক মনুষ্য জীবের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মনুষ্য জীবন অত্যান্ত দূর্লভ। জীবাত্মা অনেক ভাগ্যের ফলে মানুষ্য শরীর প্রাপ্ত হয়। এ সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে – নৃদেহমাদ্যং সুলভং সুদুর্লভং প্লবং সুকল্পং গুরুকর্ণধারম্। ময়ানুকূলেন নভস্বতেরিতং পুমান্ ভবান্ধিং ন তরেৎ স আত্মহা।। [ শ্রীমদ্ভাগবত ১১।২০।১৭ ] বঙ্গানুবাদ: জীবনের সর্ব কল্যাণপ্রদ অত্যন্ত দুর্লভ মনুষ্য দেহ, প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে আপনা থেকেই লাভ হয়ে থাকে। এই মনুষ্যদেহকে অত্যন্ত সুষ্ঠুরূপে নির্মিত একখানি নৌকার সঙ্গে তুলনা করা যায়, যেখানে শ্রীগুরুদেব রয়েছেন কাণ্ডারীরূপে এবং পরমেশ্বর ভগবানের উপদেশাবলীরূপ বায়ু তাকে চলতে সহায়তা করছে, এই সমস্ত সুবিধা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি তার মনুষ্য জীবনকে ভবসমুদ্র থেকে উত্তীর্ণ হতে উপযোগ না করে, তাকে অবশ্যই আত্মঘাতী বলে মনে করতে হবে। অর্থাৎ এই দূর্লভ মনুষ্য দেহ নৌকা স্বরুপ আর গুরুদেব সেই নৌকার কাণ্ডারী। জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্যে সফল হতে হলে, প্রত্যেক মনুষ্য জীবের অবশ্যই সদ্গুরুদেবের শরণাপন্ন হতে হবে। তাই সদ্গুরুদেব নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। . সদ্গুরুদেবের লক্ষণ কি? সদ্গুরুদেবের লক্ষণ সমন্ধে অথর্ববেদীয় মুণ্ডক উপনিষদে বলা হয়েছে- তদ্বিজ্ঞানার্থং স গুরুম্ এবাভিগচ্ছেৎ। সমিত পাণিঃ শ্রোত্রিয়ম্ ব্রহ্মনিষ্ঠম্।। [ মুণ্ডক উপনিষদ ১।২।১২ ] বঙ্গানুবাদ: গুরুদেব হবেন বৈদিক জ্ঞান সম্পন্ন এবং ব্রহ্মনিষ্ঠম্ অর্থাৎ পরম-পুরুষোত্তম ভগবানের সেবায় নিষ্ঠাবান, পরম সত্যের প্রতি সুদৃঢ় ভক্তিযুক্ত। বিশ্লেষণ: শ্রীকৃষ্ণই পরমব্রহ্ম যে কথা অর্জুন গীতায় (১০/১২) তে বলেছেন,“পরং ব্রহ্ম অর্থাৎ তুমিই পরমব্রহ্ম” এবং শ্রীমদ্ভাগবতে (১/২/১১) তে বলা হয়েছে, “ব্রহ্মেতি পরমাত্মেতি ভগবানিতি শব্দতে, অর্থাৎ সেই পরমতত্ত্ব শ্রীকৃষ্ণকেই মানুষ ব্রহ্ম, পরমাত্মা ও ভগবান বলে থাকে”। তাই এই মন্ত্রে ব্রহ্মনিষ্ঠম্ বলতে যিনি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবায় অনুরক্ত তাকেই বুঝতে হবে। . এ সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতে আরো বলা হয়েছে- তস্মাদ্ গুরুং প্রপদ্যেত জিজ্ঞাসুঃ শ্রেয় উত্তমম্ । শাব্দে পরে চ নিষ্ণাতং ব্রহ্মণ্যুপশমাশ্রয়ম্ ।। [ শ্রীমদ্ভাগবত ১১।৩।২১ ] বঙ্গানুবাদ: যথার্থ সুখশান্তি এবং কল্যাণ আহরণে পরম আগ্রহী যেকোনো ব্যক্তিকে সদগুরুর আশ্রয় গ্রহণ এবং দীক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর কাছে আত্মনিবেদন করতেই হবে। সদগুরুর যোগ্যতা হলো এই যে, গভীরভাবে অনুধ্যানের মাধ্যমে তিনি শাস্ত্রাদির সিদ্ধান্ত উপলব্ধি করেছেন এবং অন্য সকলকেও সেসব সিদ্ধান্ত সম্পর্কে দৃঢ়বিশ্বাসী করে তুলতে সক্ষম। এ ধরনের মহাপুরুষ, যিনি পরমেশ্বর ভগবানের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন এবং সকল জাগতিক বিচার-বিবেচনা বর্জন করেছেন, তাকেই যথার্থ পারমার্থিক সদগুরুরূপে বিবেচনা করা উচিত। . এ সম্পর্কে পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে – ষটকর্ম নিপুণ বিপ্র মন্ত্র তন্ত্র বিশারদঃ। অবৈষ্ণবঃ গুরু ন স্যাৎ বৈষ্ণবঃ শ্বপচঃ গুরু।। বঙ্গানুবাদ: কোন ব্রাহ্মণ যদি ব্রাহ্মণের ছয়টি কর্মে নিপুন হয় এবং মন্ত্রতন্ত্রে বিশারদও হয়, কিন্তু সে যদি কৃষ্ণভক্ত না হয়, তাহলে সে গুরু হতে পারে না। পক্ষান্তরে চন্ডাল কুলে উদ্ভুত ব্যক্তিও যদি শুদ্ধ কৃষ্ণ ভক্ত হয় তাহলে সেই গুরু হতে পারে। . সদ্গুরু-কে এ সম্পর্কে পদ্মপুরাণে প্রভু সদাশিব বলেছেন- বিমৎসরঃ কৃষ্ণে ভক্তোহনন্য প্রয়োজনঃ। অনন্যসাধনঃ শ্রীমান্ ক্রোধলোভবিবর্জিতঃ।। শ্রীকৃষ্ণরসতত্ত্বজ্ঞঃ কৃষ্ণমন্ত্রবিদাংবরঃ। কৃষ্ণমন্তাশ্রয়ো নিত্যং মন্ত্রতক্তঃ সদা শুচিঃ॥ সদ্ধৰ্ম্মশাসকো নিত্যং সদাচারনিয়োজকঃ। সম্প্রদায়ী কৃপাপূর্ণো বিরাগী গুরুরুচ্যতে ॥ [ পদ্মপুরাণ, পাতালখণ্ড, ৫১।৬-৮ ] বঙ্গানুবাদ: যিনি শান্ত, মাৎসর্য্য-বিহীন, ও কৃষ্ণভক্ত, কৃষ্ণোপাসনা ভিন্ন যাঁহার অন্য প্রয়োজন নাই, কৃষ্ণের অনুগ্রহ ভিন্ন যাঁহার দিন অন্য প্রয়োজন নাই অর্থাৎ কৃষ্ণের অনুগ্রহকেই যিনি সংসার-মুক্তির একমাত্র উপায় স্থির করিয়াছেন, যাঁহাতে ক্রোধ বা লোভের লেশমাত্র নাই, যিনি শ্রীকৃষ্ণরসতত্ত্বজ্ঞ এবং কৃষ্ণমন্ত্রজ্ঞদিগের অগ্রগণ্য, যিনি কৃষ্ণমন্ত্র আশ্রয় করিয়া সর্বদা সেই মন্ত্রে ভক্তিমান্ হইয়া পবিত্রভাবে কালযাপন করেন, সদ্ধর্ম্মের উপদেশ প্রদান করেন, সর্বদা সদাচারে নিযুক্ত থাকেন, যিনি তা এইরূপে বৈষ্ণবসম্প্রদায়ভুক্ত দয়ালু ও সংসার-বিরাগী, তিনিই গুরুপদবাচ্য। . সেই একই সিদ্ধান্ত শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে উল্লেখ রয়েছে- কিবা বিপ্র, কিবা ন্যাসী, শূদ্র কেনে নয় । যেই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা, সেই ‘গুরু’ হয় ।। [ চৈতন্যচরিতামৃত, মধ্য ৮।১২৮ ] বঙ্গানুবাদ: যিনি কৃষ্ণ-তত্ত্ববেত্তা তিনিই গুরু, তা তিনি ব্রাহ্মণ হোন, কিংবা সন্ন্যাসীই হোন অথবা শূদ্রই হোন, তাতে কিছুই যায় আসে না। . শ্রীল রূপগোস্বামী উপদেশামৃতে এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন – বাচোবেগং মনসঃ ক্রোধবেগং জিহ্বাবেগমুদরোপস্থবেগম্। এতান বেগান যো বিষহেত ধীর সর্বামপীমাং পৃথিবীং সশিষ্যাৎ।। বঙ্গানুবাদ: যে ব্যক্তি বাক্যের বেগ, ক্রোধের বেগ, জিহ্বার বেগ, মনের বেগ, উদর এবং উপস্থের বেগ, এই ছয়টি বেগ দমন করতে সমর্থ হন তিনি পৃথিবী শাসন করতে পারেন। অর্থাৎ তিনিই গোস্বামী বা গুরুপদবাচ্য। অর্থাৎ সদ্গুরুদের অবশ্যই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা হবেন এবং সদগুরুদেবের প্রধান লক্ষণ তিনি অবশ্যই কৃষ্ণ ভক্ত হবেন। . সদ্গুরুদেব কি আমিষ-আহারীদের দীক্ষা দেন? এ সম্পর্কে স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে- এবমাদিগুণৈর্ধূক্তং শিষ্যং নৈব পরিগ্রহেৎ। গৃহ্ণীয়াদ্যদি তদ্দোষঃ প্রায়ো গুরুম্ পস্পৃশেৎ।। অমাত্যদেষো রাজানং জায়াদোষঃ পতিং যথা। তথা শিষ্যকৃতো দোষো গুরুং প্রাপ্নোত্যসংশয়ম্।। তন্মাচ্ছিষ্যৎ গুরু-নিত্যং পরীক্ষ্যৈব পরিগ্রহেৎ। [ স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখণ্ড, মার্গশীর্ষ্যমাস মাহাত্ম্য ১৬। ১৬-১৮ ] বঙ্গানুবাদ: এই সকল গুণ (দোষ) যুক্ত মানবকে শিষ্য বলিয়া গ্রহণ করিবে না; আর এই সকল দোষের অনেকগুলি যদি গুরুকে স্পর্শ করে, তবে তাদৃশ গুরুকেও গুরু বলিয়া গ্রহণ করা কর্তব্য নহে। দেখ, যেমন অমাত্যদোষ নৃপকে এবং পত্নীদোষ পতিকে আশ্রয় করে, তদ্রূপ শিষ্যকৃত দোষও গুরুকে আশ্রয় করিয়া থাকে, সন্দেহ নাই; অতএব গুরু শিষ্যকে নিত্য পরীক্ষা করিয়া গ্রহণ করিবেন। বিশ্লেষণ: শ্রীমদ্ভাগবতে (৫/২৬/১৩)-তে উল্লেখ রয়েছে-, “যে সমস্ত নিষ্ঠুর মানুষ তাদের দেহ ধারণের জন্য এবং জিহ্বার তৃপ্তি সাধনের জন্য নিরীহ পশু-পক্ষীকে হত্যা করে রন্ধন করে, মৃত্যুর পর যমদূতেরা কুন্তীপাক নরকে ফুটন্ত তেলে তাদের পাক করে।” এই রকম পশু-পক্ষী হত্যাকারীকে গুরুদেব কখনো দীক্ষা দিবেন না। যদি গুরুদেব এমন শিষ্যকে দীক্ষা দেন তাহলে রাজার প্রজারা যদি অধার্মিক হয়, যেভাবে রাজাকে নরকে যেতে হয়। স্ত্রী যদি অধার্মিক হয়, চরিত্রহীন হয় সেই দোষে যেভাবে স্বামী কে নরকে যেতে হয়। ঠিক সেই রকম যথার্থ গুরু এবং যথার্থ শিষ্য না হয়, গুরুর কারণে শিষ্য নরকে যাবে এবং শিষ্যের কারণে গুরুকে নরকগামী হতে হবে। তাই যিনি সদ্গুরুদেব তিনি কখনোই আমিষ আহারী ব্যক্তিকে দীক্ষা দিবেন না, দীক্ষার আগে তিনি শিষ্যকে পরিক্ষা করে দেখবেন তিনি আমিষাশী, নেশা এবং অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত কিনা। যদি কোনো গুরুদেব এমন পাপীকে দীক্ষা দেন, বুঝতে হবে তিনি সদ্গুরুদেব নন। এমন গুরুর থেকে দীক্ষা নিলে অবশ্যই সেই গুরু সহ শিষ্য নরকে নিমজ্জিত হতে হবে। . অসদ্গুরু কি ত্যাগ করা যায়? এ সম্পর্কে মহাভারতে উল্লেখ রয়েছে- গুরোরপ্যবলিপ্তস্য কার্যাকার্যমজানতঃ। উৎপথপ্রতিপন্নস্য পরিত্যাগো বিধীয়তে ॥ [ মহাভারত, উদ্যোগপর্ব, ১৬৭।২৫ ] বঙ্গানুবাদ: কার্য ও অকার্যে অনভিজ্ঞ কৃষ্ণভক্তিবিরুদ্ধগামী গর্বিত আত্মশ্লাঘী গুরুকে পরিত্যাগ করাই বিধি। যদি গুরুদেব ইন্দ্রিয় তর্পণের প্রতি আসক্ত হয় এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়ে ভক্তিযুক্ত ভগবৎসেবার পথ পরিত্যাগ করে পতনমুখী পথের দিকে ধাবিত হয়, তাহলে তাকে ত্যাগ করা উচিত। [ অর্থাৎ অসদ্গুরুকে অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। এই একই সিদ্ধান্ত স্কন্দপুরাণ, কূর্মপুরাণ, নারদ পঞ্চরাত্র শাস্ত্রেও উল্লেখ রয়েছে ] . এ সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতে বলা রয়েছে – গুরুর্ন স স্যাৎ স্বজনো ন স স্যাৎ পিতা ন স স্যাজ্জননী ন সা স্যাৎ। দৈবং ন তৎস্যান্ন পতিশ্চ স স্যা-ন্ন মোচয়েদ্ যঃস মুপেতমৃত্যুম্।। [ শ্রীমদ্ভাগবত ৫।৫।১৮ ] বঙ্গানুবাদ: যিনি তাঁর আশ্রিত জনকে সমুপস্থিত মৃত্যুরূপ সংসার মার্গ থেকে উদ্ধার করতে না পারেন, তাঁর