শিবলিঙ্গ কি?!

285540302_119688030752572_1683188882838570884_n

শিবলিঙ্গ বিষয়ে বিশদ আলোচনা প্রয়োজন। এ বিষয়ে তত্ত্বত কোনো জ্ঞান না থাকায় কতিপয় ব্যক্তি এর নিন্দা করে থাকে। কিন্তু কেউ তাঁর সম্পর্কে যথার্থ অবগত হলে তখন নিন্দার পরিবর্তে তাঁর স্তুতি করবে মূল সংস্কৃত लिङ्गं (লিঙ্গ) শব্দের অর্থ হলো “প্রতীক” বা চিহ্ন। বাংলা ব্যাকরণ অনুসারেও লিঙ্গ চার প্রকার, যথা- ১) পুংলিঙ্গ ২) স্ত্রীলিঙ্গ ৩) ক্লীবলিঙ্গ ৪) উভয়লিঙ্গ অতএব, খুব সহজেই বুঝা যায় ব্যাকরণের যে ব্যাখ্যার দ্বারা কোন মানুষকে তথা প্রাণীকে, পুরুষ বা স্ত্রী প্রজাতি হিসেবে, কিংবা কোন জড়বস্তুকে আলাদা আলাদাভাবে সনাক্ত করা হয় তাই লিঙ্গ। যারা লিঙ্গ বলতে কেবল জননেন্দ্রিয়কে বুঝেন তাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি সংস্কৃতে জননেন্দ্রিয়ের প্রতিশব্দ হল- শিশ্নম্। যদি শিবলিঙ্গম্ শব্দে জননেন্দ্রিয়কে বোঝানো হতো তাহলে লিঙ্গ শব্দের ব্যবহার না করে শিশ্নম্ শব্দটি ব্যবহার করা হতো। প্রকৃতপক্ষে “শিবলিঙ্গ” বলতে কোন জননেন্দ্রিয়কে বোঝায় না। “শিব” শব্দের অর্থ মঙ্গলময় এবং “লিঙ্গ” শব্দের অর্থ প্রতীক। এই কারণে শিবলিঙ্গ শব্দটির অর্থ “মঙ্গলময় প্রতীক”, যাঁর দ্বারা জগতের সৃষ্টি কার্য সাধিত হয়েছে। এই প্রতীকরূপেই শিব মনুষ্যগণ, ব্রহ্মাদি দেবগণ, মহর্ষিগণের দ্বারা বহু প্রাচীনকাল থেকেই পূজিত, বন্দিত। কিন্তু অধুনা মানুষের চেতনা কলুষিত হওয়ার ফলে মানুষ এই প্রতীকরূপে শিবের মাহাত্ম্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বহিরঙ্গা মায়াশক্তির দ্বারা জড়জগত সৃষ্টি করেন। কিন্তু মায়ার সাথে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাক্ষাৎ অর্থাৎ প্রত্যক্ষ কোনো সম্বন্ধ নেই। তাই শ্রীকৃষ্ণের পুরুষাবতাররূপে কারণোদকশায়ী বিষ্ণু মায়াদেবীর প্রতি ইক্ষণ বা দৃষ্টিপাত করেন। ভগবানের ইক্ষণের ফলে সৃষ্ট দিব্য জ্যোতির্ময় প্রকাশ প্রকৃতিরূপা মায়ার গর্ভে সমস্ত জীব ও ব্রহ্মাণ্ডসমূহের উপাদান সঞ্চার করেন এ জ্যোতির্ময় স্বরূপই শিবলিঙ্গরূপে পরিচিত। আবার, যদি লিঙ্গ শব্দে জননেন্দ্রিয়কে বোঝায়, তবুও তা নিন্দার্হ কি না তা একটি উদাহরণের সাহায্যে বিশ্লেষণ করা যাক- আমাদের জন্মের কথা ধরা যাক। পিতামাতার আনন্দঘন মূহুর্তের ফলেই আমাদের উৎপত্তি। কিন্তু যে কারণে আমাদের জন্ম হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা চর্চা করি না বা তাকে ঘৃণাও করি না। বরং, সেই কারণেই আমরা পিতাকে জন্মদাতা বলে সবচেয়ে মর্যাদা দান করে থাকি। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন বুদ্ধিমান ব্যক্তি তার নিন্দা করবে না। ঠিক তেমনি ভগবান শিবরূপী তাঁর লিঙ্গম্ বা জ্যোতির দ্বারা প্রকৃতিস্বরূপা মায়াদেবীর গর্ভে এ ব্রহ্মাণ্ডের গর্ভাধান করেন, যার মাধ্যমে এ ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকার্য সম্পন্ন হলো। তাই, আমাদের সৃষ্টির কারণস্বরূপা যে লিঙ্গ, তাঁকে কি আমাদের প্রাকৃত বা জড় দৃষ্টিতে দেখা উচিত, নাকি অপ্রাকৃত দৃষ্টিতে দর্শনপূর্বক এর অর্চন করা উচিত? তাই লিঙ্গ শব্দের অর্থ বিশ্লেষণ করেই দেখা গেল যে, শিবলিঙ্গ প্রাকৃত কোনো বিষয় নয়; বরং জগৎ সৃষ্টির কারণ। তাই তা পরম শ্রদ্ধাসহকারে গ্রহণ করার বিষয়। কিন্তু আমাদের দৃষ্টি প্রাকৃত বিধায় আমরা সবকিছুকে প্রাকৃত দৃষ্টিতে বিচার করি। অজ্ঞতাবশতও আমাদের এ ধরনের অপরাধ যেন না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা আবশ্যক এবং যেসকল মূঢ় শিবলিঙ্গের যথার্থ মর্ম না জেনে তাঁর নিন্দা করে, তাদের এ তত্ত্ব অবগত করানো উচিত। “যেসকল মূর্খ শিবলিঙ্গ বলতে জননেন্দ্রিয় মনে করে, তাদের জ্ঞান-বুদ্ধিও সেই ইন্দ্রিয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।” শিবলিঙ্গকে পুরুষাঙ্গ ভাবার শাস্তি!!! রাম চন্দ্রের পূর্বপুরুষ রাজা ইক্ষ্বাকু জীবনের শেষভাগে শিবের ভক্ত ছিলেন, কিন্তু পূর্বে তিনি শিবলিঙ্গকে পুরুষের শিশ্ন (পুরুষাঙ্গ) বলে নিন্দা করেছিলেন। ফলে মৃত্যুর পরে পূর্বকৃত পাপের কারণে তার জননাঙ্গের রোগ হয় এবং তিনি জিহ্বা ও নাক হীন হন। “মহেশ্বর ইক্ষ্বাকুর প্রতি কহিলেন, ” তুমি দিন দিন ক্ষীণ হইয়া অষ্টদিন মাত্র আমার পূজা করিয়াছ, কিন্তু পূর্বে শিবলিঙ্গকে ‘শিশ্নের অগ্রভাগ’ এই বলিয়া আমার নিন্দা করিয়াছ, সেই পাপযোগ দ্বারা তোমার শিশ্নের অগ্রভাগ চক্র ও বিবর হইবে এবং তোমার জিহ্বা ও নাসিকাদি থাকিবে না।” – (পদ্মপুরাণ: পাতালখন্ড/ ৬৬/১৬৮-১৮৬) তাই যারা শিবলিঙ্গকে পুরুষাঙ্গ ভাবেন, তারা সাবধান! সংস্কৃতে লিঙ্গ শব্দ দ্বারা পুরুষাঙ্গকে বুঝায় না। ব্যাকরণে পুলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ যে পড়ানো হয়, সেখানে কি জননাঙ্গকে বুঝানো হয়? সংস্কৃতে শিব শব্দের অর্থ ‘মঙ্গল’ এবং লিঙ্গ শব্দের অর্থ ‘প্রতীক’। ভগবান বিষ্ণুর যে মঙ্গলময় রূপ, তা-ই শিবলিঙ্গ।   – প্রবীর চৈতন্যচন্দ্র দাস

পুরাণসমূহের সংখ্যা এবং শ্রেণীবিভাগ?!

%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%a3-%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a7%82%e0%a6%b9%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be-%e0%a6%93-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a8

পদ্মপুরাণ উত্তর খন্ড/২৩৬/১৮-২১ নং শ্লোকে ভগবান শিব দেবী পার্বতীর নিকট পুরাণ সমূহের বর্ণনা দিচ্ছেন- “হে সুন্দরী (পার্বতী), জেনে রেখো বিষ্ণু, নারদ, ভাগবত, গরুড়, পদ্ম ও বরাহ পুরাণ সাত্ত্বিক; ব্রহ্মাণ্ড, ব্রহ্মবৈবর্ত, মার্কণ্ডেয়, ভবিষ্য, বামন ও ব্রহ্ম পুরাণ রাজসিক; এবং মৎস্য, কূর্ম, লিঙ্গ, শিব, স্কন্দ এবং অগ্নি পুরাণগুলি তামসিক।” সাত্বিক পুরাণ: ১। বিষ্ণুপুরাণ – ২৩,০০০ শ্লোক সমন্বিত২। নারদপুরাণ – ২৫,০০০ শ্লোক সমন্বিত৩। ভাগবতপুরাণ – ১৮,০০০ শ্লোক সমন্বিত৪। গরুড়পুরাণ – ১৯,০০০ শ্লোক সমন্বিত৫। পদ্মপুরাণ – ৫৫,০০০ শ্লোক সমন্বিত৬। বরাহপুরাণ – ২৪,০০০ শ্লোক সমন্বিতরাজসিক পুরাণ:১। ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ – ১২,০০০ শ্লোক সমন্বিত২। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ – ১৮,০০০ শ্লোক সমন্বিত৩। মার্কেন্ডেয় পুরাণ – ৯,০০০ শ্লোক সমন্বিত৪। ভবিষ্যপুরাণ – ১৪,৫০০ শ্লোক সমন্বিত৫। বামন পুরাণ – ১০,০০০ শ্লোক সমন্বিত৬। ব্রহ্মপুরাণ – ১০,০০০ শ্লোক সমন্বিততামসিক পুরাণ:১। মৎস্যপুরাণ – ১৪,০০০ শ্লোক সমন্বিত২। কূর্মপুরাণ – ১৭,০০০ শ্লোক সমন্বিত৩। লিঙ্গপুরাণ – ১১,০০০ শ্লোক সমন্বিত৪। শিবপুরাণ – ২৪,০০০ শ্লোক সমন্বিত৫। স্কন্ধপুরাণ – ৮১,১০০ শ্লোক সমন্বিত৬। অগ্নিপুরাণ – ১৫,৪০০ শ্লোক সমন্বিত   বিঃদ্রঃ – অষ্টাদশ মহাপুরাণের শ্লোক সংখ্যা ভাগবতপুরাণের ১২/১৩/৪-৯ নং শ্লোকে বর্ণিত হয়েছে। – প্রবীর চৈতন্যচন্দ্র দাস

পুরাণ সমূহ কি মনোধর্ম প্রসূত কাল্পনিক?!

445449927_2491471067683227_848295333638046616_n

বেদ অপৌরুষেয়। স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান হতে প্রকাশিত হয়েছেন। বেদ বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত, বেদই সংস্কৃত সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন এবং হিন্দু তথা সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। “বেদ” এর অপর নাম “শ্রুতি” এর কারণ হিসেবে বলা যায় “বেদ” লিপিবদ্ধ হওয়ার পূর্বে বেদের বাণী সমূহ গুরুশিষ্য পরম্পরায় শ্রবণের মাধ্যমে সংরক্ষিত হতো। যারা সেই বাণী শ্রবণের দ্বারা হৃদয়ে ধারণ করতেন তাঁদের বলা হতো শ্রুতিধর। পরবর্তীতে দ্বাপরযুগের শেষে আসন্ন কলিযুগের প্রয়োজন বিবেচনায় এই সমস্ত বেদকে লিপিবদ্ধ করেন মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন, যিঁনি ব্যাসদেব নামে সমাদৃত। কিন্তু, আজকালের তথাকথিত মহর্ষি ও নামধারী আর্যরা দাবী করেন বেদ’ সমূহের কিছু বিভাগ কোনো বেদ’ই নয়, কি আশ্চর্যজনক কথা! যেমন- কৃষ্ণ-যজুর্বেদ এবং অষ্টাদশ পুরাণ সমূহকে তারা স্বীকারই করেন না। এগুলা নাকি মনুষ্যসৃষ্ট এবং অষ্টাদশ পুরাণ সমূহ নাকি অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ ঘটনায় ভর্তি! যদিও এমন নগণ্য কিছু ঘটনার সঠিক ব্যাখ্যা রয়েছে এবং এর থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার যথেষ্ট উপযোগিতাও রয়েছে, কিন্তু সেই সকল অনার্যদের যেহেতু তা উপলব্ধির জন্য বিশুদ্ধ চেতনা নেই তাই তারা আসলে এগুলোকে বাদ দিয়ে স্ব-মতাদর্শের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ও প্রায়োগিক এমন কিছু বিভাগকেই কেবল মান্য করেন। আজকে আমরা দেখবো তাদের নির্দিষ্ট মান্য শাস্ত্র সমূহেই’বা পুরাণ শাস্ত্র সম্পর্কে কি নির্দেশ রয়েছে। স্মৃতিশাস্ত্র (ধর্মশাস্ত্র) তথা অষ্টাদশ পুরাণ সমূহকে নিয়ে যাদের দ্বিধা রয়েছে তাদের নিমিত্তে স্মৃতিশাস্ত্রের প্রাধাণ্যতা ও প্রামাণিকতা সম্পর্কিত কিছু তথ্য বর্ণিত হলো: “চারটি বেদ ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত, ঠিক তেমনই পুরাণ, ইতিহাস, গাথা, তার থেকে সৃষ্ট।” – (অথর্ববেদ ১৫/৬/১১-১২) “যেমন আর্দ্র ইন্ধন দ্বারা প্রজ্বলিত অগ্নি হইতে নানা রকম ধূম নির্গত হয়, তেমনি ঋগ্বেদ যজুর্বেদ সামবেদ অথর্ববেদ, ইতিহাস, পুরাণ, বিদ্যা (সঙ্গীত বা কলাবিদ্যা), উপনিষদ, শ্লোক, সূত্র, অনুব্যাখ্যান, ব্যাখ্যান এই সমস্ত সেই মহাভূত হইতে নির্গত ; এইসকল ইহারই নিঃশ্বাস।” – (বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২/৪/১০) “ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ, ইতিহাস, পুরাণ, বিদ্যা (সঙ্গীত বা কলাবিদ্যা), উপনিষদ, শ্লোক, সূত্র, অনুব্যাখ্যান, ব্যাখ্যান ইষ্ট, হোম, অশন, পানীয়, ইহলোকে, পরলোক, সর্বভূত – এই সমস্ত বাক্ দ্বারাই জানা যায়। বাক্ই পরমব্রহ্ম। যিনি ইহা জানিয়া বাকে্র উপাসনা করেন, বাক্ তাকে পরিত্যাগ করে না। – (বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৪/১/২) “তাহার পর আদিত্যের উত্তরদিকের যে রশ্মিগুসমূহ, তাহারাই ইহার উত্তর মধুনাড়ী; অথর্বাঙ্গিরস মন্ত্রসমূহ মধুকর; ইতিহাস পুরাণই পুষ্প। সেই যজ্ঞীয় জলই পুষ্পের অমৃত।” – (ছান্দোগ্য উপনিষদ ৩/৪/১) “সেই অথর্বাঙ্গিরস মন্ত্রসমূহ ইতিহাস ও পুরাণকে উত্তপ্ত করিয়াছিলেন। অভিতপ্ত সেই ইতিহাস ও পুরাণ হইতে যশ, তেজ, ইন্দ্রিয়সামর্থ্য, বীর্য ও অন্নরূপ রস উৎপন্ন হইয়াছিলো।” – (ছান্দোগ্য উপনিষদ ৩/৪/২) “ইতিহাস ও পুরাণ পঞ্চম বেদ” – (ছান্দোগ্য উপনিষদ: ৭/১/২; ৭/১/৪; ৭/২/১; ৭/৭/১) “ইতিহাস ও পুরাণ দ্বারা বেদকে বন্ধিত করিবে; না হইলে ‘এ আমাকে প্রহার করিবে’ ইহা ভাবিয়া বেদ অল্পজ্ঞ লোক হইতে ভয় পাইয়া থাকেন।” – (মহাভারত: আদি/০১/২২৯) “বেদকে শ্রুতি ও ধর্মশাস্ত্রকে স্মৃতি বলা হয়, ঐ শ্রুতি ও স্মৃতি বিরুদ্ধ তর্কের দ্বারা মীমাংসা করিবে না। যেহেতু, শ্রুতি ও স্মৃতি হইতেই ধর্ম স্বয়ং প্রকাশ প্রাপ্ত হইয়াছে।। – (মনুসংহিতা: ২/১০) যে ব্যক্তি প্রতিকূল তর্ক দ্বারা মূলস্বরূপ শ্রুতি ও স্মৃতিশাস্ত্রকে অবমাননা করে, সাধু লোকেরা সেই বেদনিন্দক নাস্তিককে দ্বিজের কর্তব্য কর্ম্ম অধ্যয়নাদি সকল অনুষ্ঠান হইতে বহিস্কৃত করিবেন। – (মনুসংহিতায়: ২/১১) শতপথ ব্রাহ্মণেও (১১/৫/৬/৮) পুরাণের কথা উল্লেখ রয়েছে। পুরাণ, ন্যায়, মীমাংসা,ধর্মশাস্ত্র, বেদাঙ্গ (শিক্ষা,কল্প,ব্যাকরণ, নিরুক্ত,জ্যোতিষ, ছন্দ-৬প্রকার), এবং চারি বেদ (সাম,ঋক, যজু,অথর্ব)। – এই ১৪টি(শাস্ত্র) পুরুষার্থ- সাধন জ্ঞান এবং ধর্ম প্রবৃত্তির কারণ। – (যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতা ১/৩) “ঋক্, যজুঃ, সাম, অথর্ব – এই চতুর্বেদ এবং ইতিহাস তথা রামায়ণ ও মহাভারত এবং পঞ্চরাত্র—এই সকল ‘শাস্ত্র’ বলিয়া কথিত হইয়াছে ৷ ইহাদের অনুকূল যে সকল গ্রন্থ (পুরাণ, তন্ত্র আদি), তাহা ‘শাস্ত্র’-মধ্যে পরিগণিত৷ এতদ্ব্যতীত যে সকল গ্রন্থ, তাহা শাস্ত্র তো নহে-ই বরং তাহাকে ‘কুবর্ত্ম’ বলা যায়৷” – (মধ্বভাষ্যধৃত স্কন্দবচন)   অতএব, দেখাই যাচ্ছে যে সর্বজনীন শাস্ত্রসমূহতেও পুরাণের প্রামাণিকতা বর্ণিত রয়েছে। বৈদিকশাস্ত্রে ইতিহাস ও পুরাণকে বেদ তথা পঞ্চম বেদ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও কিছু কিছু নব্য পণ্ডিতরা পুরাণের বিরোধিতা করে মনগড়া ব্যাখ্যা দাড় করিয়ে ঘোষণা দেয় পুরান (অষ্টাদশ পুরাণ) আর ইতিহাস (রামায়ণ+মহাভারত) বলতে এটা বোঝানো হয়নি, ঐটা বোঝানো হয়েছে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। অথচ, তাদের এই সমস্ত মনগড়া তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই। তাহলে কোন সিদ্ধান্ত মানা উচিৎ শাস্ত্র সিদ্ধান্ত নাকি তথাকথিত ব্যক্তিবর্গের মনগড়া ব্যাখ্যা?!?

উপনিষদের সংখ্যা ও বিন্যাস।

442496176_2483936598436674_2464679835477858473_n

উপনিষদের সংখ্যা বিন্যাস ও মান্যতা নিয়ে অল্পবিদ্যা ভয়ংকরীরা প্রতিনিয়তই প্রপাগাণ্ডা ছড়াতে ব্যস্ত। তারা তাদের নিজস্ব মতাদর্শ প্রচারের স্বার্থে যেসমস্ত উপনিষদাদির তথ্য অনুকূল সেটাকে স্বীকার করে এবং অন্যগুলোকে অপ্রামাণিক ঘোষণা করতে উঠেপড়ে লেগে যায়। এই ধরনের ধৃষ্টতা তারা কেবল উপনিষদের বেলায় দেখায় তা নয়, বৈদিক শাস্ত্র সমূহের মধ্যে যেসমস্ত তথ্য তাদের নির্দিষ্ট আদর্শের সাথে অমিল মনে করে সেই সবগুলোকেই অস্বীকার করে। এমনসব নিন্দিত কার্যের মধ্যে একটি হচ্ছে অষ্টাদশ পুরাণসমুহকে তথা ধর্মশাস্ত্রকে অস্বীকার করা। তাই বেদ’ জ্ঞানের তত্ত্বদর্শী মহাপুরুষ মহর্ষি মনু পূর্ব হতেই এসব বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। মনুসংহিতায় (২/১০,১১) উল্লেখ রয়েছে- “বেদকে শ্রুতি ও ধর্মশাস্ত্রকে স্মৃতি বলা হয়, ঐ শ্রুতি ও স্মৃতি বিরুদ্ধ তর্কের দ্বারা মীমাংসা করিবে না। যেহেতু, শ্রুতি ও স্মৃতি হইতেই ধর্ম স্বয়ং প্রকাশ প্রাপ্ত হইয়াছে।।১০।। যে ব্যক্তি প্রতিকূল তর্ক দ্বারা মূলস্বরূপ শ্রুতি ও স্মৃতিশাস্ত্রকে অবমাননা করে, সাধু লোকেরা সেই বেদনিন্দক নাস্তিককে দ্বিজের কর্তব্য কর্ম্ম অধ্যয়নাদি সকল অনুষ্ঠান হইতে বহিস্কৃত করিবেন।। ১১।।” এখানে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, যারা সমস্ত ১০৮ উপনিষদ সমূহকে, ১৮ পুরাণকে অস্বীকার করে তারা বেদনিন্দক আর বেদনিন্দক ব্যক্তি মাত্রই নাস্তিক। তাই বিদ্বান ব্যক্তি মাত্রের উচিত এইরকম নাস্তিকদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দ্বারা প্রতারিত না হয়ে সত্যানুসন্ধান করা। অতএব, উপনিষদ সমূহের সংখ্যা, নাম ও বিন্যাস নিয়ে শুক্লযজুর্বেদীয় মুক্তিকোপনিষদেই (১/২৬-৫৫) সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। “মুক্তিক উপনিষদ” অনুযায়ী আমরা ১০৮টি উপনিষদের সুনির্দিষ্ট বর্ণনা দেখতে পাই। এই ১০৮ উপনিষদের মধ্যে মুক্তিকোপনিষদ বলেন যে- ঋগ্বেদীয় উপনিষদ : ১০ (দশ) টি শুক্ল যজুর্ব্বেদীয় : ১৯ (উনিশ) টি কৃষ্ণযজুর্ব্বেদীয় : ৩২ (বত্রিশ) টি সামবেদীয় :১৬ (ষোল) টি অথর্ব্ববেদীয় : ৩১ (একত্রিশ) টি ঋগবেদ অন্তর্গত ১০টি উপনিষদ: ১) ঐতরেয়, ২) কৌষীতকী, ৩) নাদবিন্দু, ৪) আত্মপ্রবোধ, ৫) নির্ব্বাণ, ৬) মুদগলা, ৭) অক্ষমালিকা, ৮) ত্রিপুরা, ৯) সৌভাগ্য ও ১০) বহ্বৃচ শুক্ল যজুর্ব্বেদান্তর্গত ১৯টি উপনিষদ : ১) ঈশ, ২) বৃহদারণ্যক, ৩) জাবাল, ৪) হংস, ৫) পরমহংস, ৬) সুবাল, ৭) মন্ত্রিকা, ৮) নিরালম্ব, ৯) ত্রিশিখী, ১০) ব্রাহ্মণমণ্ডল, ১১) ব্রাহ্মণদ্বয়তারক, ১২) পৈঙ্গল, ১৩) ভিক্ষু, ১৪) তুরীয়, ১৫) অতীতাধ্যাত্ম, ১৬) তারসার, ১৭) যাজ্ঞবল্ক্য, ১৮) শাট্যায়নী ও ১৯) মুক্তিকা কৃষ্ণ যজুর্ব্বেদ এর অন্তর্গত ৩২টি উপনিষদ : ১) কঠবল্লী, ২) তৈত্তিরীয়, ৩) ব্রহ্ম, ৪)কৈবল্য, ৫) শ্বেতাশ্বতর, ৬) গর্ভ, ৭) নারায়ণ, ৮) অমৃতবিন্দু, ৯) অমৃতনাদ, ১০) কালাগ্নিরুদ্র, ১১) ক্ষুরিকা, ১২) সর্ব্বসার, ১৩) শুকরহস্য, ১৪) তেজোবিন্দু, ১৫) ধ্যানবিন্দু, ১৬) ব্রহ্মবিদ্যা, ১৭) যোগতত্ত্ব, ১৮) দক্ষিণামূর্তি, ১৯) স্কন্দ, ২০) শারীরক, ২১) যোগশিখা, ২২) একাক্ষর, ২৩) অক্ষি, ২৪) অবধূত, ২৫) কঠরুদ্র, ২৬) হৃদয়, ২৭) যোগকুগুলিনী, ২৮) পঞ্চব্রহ্ম, ২৯) প্রাণাগ্নিহোত্র, ৩০) বরাহ, ৩১) কলিসন্তরণ ও ৩২) সরস্বতীরহস্য সামবেদ এর অন্তর্গত ১৬টি উপনিষদ : ০১) কেন, ০২) ছান্দোগ্য, ০৩) আরুণি, ০৪) মৈত্রায়ণী, ০৫) মৈত্রেয়ী, ০৬) বজ্রসূচিক, ০৭) যোগচুড়ামণি, ০৮) বাসুদেব, ০৯) মহৎ, ১০) সংন্যাস, ১১) অব্যক্ত, ১২) কুণ্ডিকা, ১৩) সাবিত্রী, ১৪) রুদ্রাক্ষ, ১৫) জাবালদর্শন ও ১৬) জাবালী অথর্ব্ববেদ এর অন্তর্গত ৩১টি উপনিষদ : ০১) প্রশ্ন, ০২) মুণ্ডক, ০৩) মাণ্ডুক্য, ০৪) অথর্ব্বশিরঃ, ০৫) অথর্ব্বশিখা, ০৬) বৃহজ্জাবাল, ০৭) নৃসিংহ তাপনী, ০৮) নারদ পরিব্রাজক, ০৯) সীতা, ১০) সরভ, ১১) মহানারারণ, ১২) রামরহস্য, ১৩) রামতাপনী, ১৪) শাণ্ডিল্য, ১৫) পরমহংস পরিব্রাজক, ১৬) অন্নপূর্ণা, ১৭) সূর্য্যাত্ম, ১৮) পাশুপত, ১৯) পরব্রহ্ম, ২০) ত্রিপুরাতপন, ২১) দেবী, ২২) ভাবনা, ২৩) ভস্ম, ২৪) জাবাল, ২৫) গণপতি, ২৬) মহাবাক্য, ২৭) গোপালতাপন, ২৮) কৃষ্ণ, ২৯) হয়গ্রীব, ৩০) দত্তাত্রেয় ও ৩১) গারুড় আরও দুটি কথা এখানে না বললেই নয় যে, কালান্তরের মানুষের চর্চার অভাবে এসব শাস্ত্র আজ বিলুপ্তির পথে। আবার এখনও যেগুলো পাওয়া যায় তার অনেক মন্ত্র/শ্লোক আজ হারিয়ে গিয়েছে। যেমন- কলিসন্তরণ উপনিষদ, বজ্রসূচিকোপনিষদে বর্তমানে কয়েকটি মন্ত্রসংখ্যা পাওয়া যায়। কিন্তু তার মানেই এই নয় যে এগুলো মানবসৃষ্ট বা অগ্রহণযোগ্য। আমাদের শাস্ত্রবিমুখতার কারণেই চর্চার অভাবে দিন দিন এগুলো আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই পাঠক মহলের কাছে অনুরোধ থাকবে যেন আমরা আমাদের বৈদিক শাস্ত্রসমূহ অধ্যয়ন করি এবং নিজ দায়িত্বে তা সংরক্ষণ করি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। – প্রবীর চৈতন্যচন্দ্র দাস

বেদ শাস্ত্রে গরু/গোহত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে কি?!

406119800_367063552484147_3326967240415787974_n

আজকাল কিছু অসনাতনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে যে বেদে নাকি গরু বা গো হত্যার করার বিধান দেয়া হয়েছে। তাদের কথা শুনলে আমাদের হাসি পাই।কারন তারা কখনো বেদ অধ্যয়ন না করে বেদ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করে সাধারন সনাতনীদের বিভ্রান্ত করছে। প্রকৃতপক্ষে বেদে বহুবার গো পালন করতে উপদেশ দেয়া হয়েছে, এবং সাথে সাথে গোহত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে।তাই সনাতনী সমাজে পন্ডিতগন দ্বারা অনাদিকাল থেকে গোহত্যা এবং গোমাংস ভোজনকে মহাপাপ রুপে সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করা হয়েছে। গোহত্যা যে মহাপাপ এ সম্পর্কে ব্রহ্ম-মধ্ব-গৌড়িয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের একজন মহান আচার্য শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেন, “গো অঙ্গে যত লোম,তত সহস্র বৎসর। গোবধী রৌরব মধ্যে পচে নিরন্তর।।” – (চৈ. চঃ আদি.১৭/১৬৬) অনুবাদ: গরুর দেহে যত লোম আছে তত হাজার বছর গোহত্যাকারী রৌরব নামক নরকে অকল্পনীয় দুঃখ যন্ত্রণা ভোগ করবে। আসুন আমরা বেদ শাস্ত্র থেকে গোহত্যা করার নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে জানার চেষ্ঠা করি: বেদের বর্ণনায় গরু /গোহত্যা নিষেধ: “অনাগো হত্যা বৈ ভীমা কৃতো মা নো গাম অশ্বম পুরুষং বধী” অনুবাদ: নির্দোষের হত্যা অবশ্যই ভয়ানক।গরু, অশ্ব এবং মনুষ্যকে হত্যা করো না। – (অথর্ববেদ ১০/১/২৯) “গোঘাতম ক্ষেত্রে যঃ গাম বিকৃন্তন্তম” অনুবাদ: গো ঘাতক অথাৎ গো হত্যাকারী, যিনি ক্ষুধার জন্য গরুকে হত্যা করে,তাকে ছেদন করো। – (শুক্ল যজুর্বেদ ৩০/১৮) आ॒रे ते॑ गो॒घ्नमु॒त पू॑रुष॒घ्नं “আরে তে গোদনমুত পুরুষঘ্নম।” অনুবাদ: গরু বা গো হত্যাকারী ও নরহত্যাকারী দূর হও। – (ঋকবেদ ১/১১৪/১০) “গাং মা হিংসীরদিতিং বিরাজম” অনুবাদ: গরু অদিতি, তা বধের অযোগ্য, তাকে হিংসা কর না। – (শুক্ল যজুর্বেদ ১৩/৪৩) “ঘৃত দুহ্যনামদিতিং জনায়াগ্নে মা হিংসীঃ পর মে ব্যোমন।” অনুবাদ: মানুষকে যে ঘৃত দান করে তার নাম অদিতি,সে কারনে তাকে ( গাভী) হত্যা করো না। – (শুক্ল যজুর্বেদ ১৩/৪৬) प्र नु वो॑चं चिकि॒तुषे॒ जना॑य॒ मा गामना॑गा॒मदि॑तिं वधिष्ट ॥ “প্র নু বোচং চিকিতুষে জনায় মা গামনাগামমদিতিং মা বধিষ্ট।।” অনুবাদ: আমি বিবেকবান মনুষ্যের প্রতি এই উপদেশ দিই যে, নিরাপরাধ গরু এবং ( অনাগমং) অসীম গুনে সমৃদ্ধ গাভীকে হত্যা করো না (অদিতিং মা )। – (ঋকবেদ ৮/১০১/১৫) ।।হরে কৃষ্ণ।। ।।প্রনাম।। – সদগুন মাধব দাস

শ্রীমদ্ভাগবতে কেন “স্ত্রী, শুদ্রের বেদের তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম করার ক্ষমতা নেই” বলা হয়েছে?!

20240612_133311

ইদানীং কিছু আর্য নামধারী পাষণ্ডী অমল পুরাণ শ্রীমদ্ভাগবতসহ অষ্টাদশ পুরাণের অমল ভাষ্য হৃদয়ঙ্গম করতে না পেরে জনসমাজে এর নিন্দা ও মিথ্যাচার করছে। এ পর্বে আমরা এই পাষণ্ডীদের মিথ্যাচারের জবাব দেব। প্রতিপক্ষের দাবিঃ শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের ১/৪/২৫ শ্লোকে বলা হয়েছে —   স্ত্রী, শূদ্র এবং দ্বিজোচিত গুণাবলীবিহীন ব্রাহ্মণ কুলোদ্ভূত মানুষদের বেদের তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম( বুঝার) করার ক্ষমতা নেই, তাই তাদের প্রতি কৃপাপরাবশ হয়ে মহর্ষি বেদব্যাস মহাভারত নামক ইতিহাস রচনা করলেন, যাতে তারা তাদের জীবনের পরম উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পারে। তাই, এখানে নারী ও শুদ্রের প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন হয়ে শ্রীমদ্ভাগবত তাদের বেদাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। খণ্ডণঃ উক্ত দাবি খণ্ডণে আমরা এই লেখণীকে দুইভাগে বিভক্ত করবো। প্রথম ভাগে নারীদের বেদাধিকার প্রসঙ্গে এবং দ্বিতীয়ভাগে শুদ্রের বেদাধিকার প্রসঙ্গে আলোচনা করা হবে। স্ত্রীজাতির বেদাধিকারঃ  ♦ জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী।। – (রামায়ণ- ৬/১২৪/১৭) মমতাময়ী মাতৃমণ্ডলী কোমলতায়, ভালোবাসায়, স্নেহে, যত্নে, ধৈর্যে, আত্মত্যাগে বরাবরই অতুলনীয়। আমাদের সকলেরই প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় মায়ের কাছ থেকে। তাই তাঁদের চরণে প্রণাম রেখেই এই আলোচনা শুরু করছি। প্রথমেই উক্ত শ্লোকের শব্দের অন্বয় ও শব্দার্থ দেখে নিব।   ♦ “স্ত্রীশূদ্রদ্বিজবন্ধূনাং ত্রয়ী ন শ্রুতিগোচরা। কর্মশ্রেয়সি মূঢ়ানাং শ্রেয় এবং ভবেদিহ। ইতি ভারতমাখ্যানং কৃপয়া মুনিনা কৃতম্।।” শব্দার্থ: স্ত্রী– স্ত্রী জাতি, শূদ্র– শ্রমিক শ্রেণী, দ্বিজ বন্ধূনাম– দ্বিজোচিত গুণাবলীবিহীন দ্বিজকুলোদ্ভূত মানুষ, ত্রয়ী– তিন, ন– না, শ্রুতিগোচরা– বোধগম্য, কর্ম– কার্যকলাপে, শ্রেয়সি-কল্যান সাধনে, মূঢ়ানাম-মূর্খদের, শ্রেয়ঃ-পরম কল্যাণ, এবম-এইভাবে, ভবেৎ– প্রাপ্ত হয়, ইহ– এটির দ্বারা, ইতি– এইভাবে বিবেচনা করে, ভারতম– মহাভারত, আখ্যানম– ঐতিহাসিক তথ্য, কৃপয়াঃ– কৃপাপূর্বক, মুনিনা– মুনির দ্বারা, কৃতম– রচিত হয়েছিল। অনুবাদ: স্ত্রী, শূদ্র এবং দ্বিজোচিত গুণাবলীবিহীন ব্রাহ্মণ কুলোদ্ভূত মানুষদের বেদের তাৎপর্য হৃদয়ঙ্গম( বুঝার) করার ক্ষমতা নেই,তাই তাদের প্রতি কৃপাপরাবশ হয়ে মহর্ষি বেদব্যাস মহাভারত নামক ইতিহাস রচনা করলেন,যাতে তারা তাদের জীবনের পরম উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পারে। শ্রীমদ্ভাগবতের এই শ্লোকে ‘স্ত্রী’ অর্থে একজন সাধারণ স্ত্রী ‘র বৈশিষ্ঠ্যই গ্রহণ করতে হবে। কেননা শ্রীমদ্ভাগবতাদি অষ্টাদশ পুরাণে, মহাভারতে এমন অনেক উত্তমা স্ত্রীদের কথা উল্লেখ পাওয়া যায় যারা বেদাদি শাস্ত্র অধ্যয়ন এবং অধ্যাপনা করতেন।   অষ্টাদশ পুরাণ ও ইতিহাস গ্রন্থে নারীদের বেদাদি শাস্ত্র অধ্যয়নের প্রমাণঃ শ্রীমদ্ভাগতে ৪/১/৬৪ শ্লোকে ব্রহ্মবাদিনী কন্যা’র উল্লেখ করা হয়েছে   ♦ “তেভ্যো দধার কন্যে দ্বে বয়ুনাং ধারিনীং স্বধা। উভে তে ব্রহ্মবাদিন্যৌ জ্ঞানবিজ্ঞানপারগে।।” – [শ্রীমদ্ভাগবত ৪/১/৬৪] অনুবাদ: স্বধা, তারঁ বয়ুনা এবং ধারিনী নামক দুটি কন্যা হয়।তারাঁ উভয়েই ছিলেন ব্রহ্মবাদিনী এবং জ্ঞান ও বিজ্ঞানে পারদর্শী। ♦ “তেভ্যঃস্বধা সুতে জজ্ঞে মেনাং বৈ ধারিনীং তথা। তে উভে ব্রহ্মবাদিনৌ যোগিন্যাবপ্যুভে দ্বিজ।।”  – বিষ্ণুপুরান ১/১০/১৯ অনুবাদ: তাদের দ্বারা মেনা এবং ধারিনী নামক দুই কন্যা উৎপন্ন করেন। তাঁরা দুই জনেই উত্তম জ্ঞান এবং সর্বগুণসম্পন্না,ব্রহ্মবাদিনী ও যোগিনী ছিলেন।              বিষ্ণপুরানের এ শ্লোকে ব্রহ্মবাদিনী শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে,যার অর্থ হল বেদ সম্পর্কে যারা আলোচনা করেন।ব্রহ্মা থেকে জাত প্রজাপতি দক্ষের কন্যা হল স্বধা। এই স্বধার কন্যা হল মেনা বা বয়ুনা এবং ধারিণী।তারা উভয়ই বেদ জ্ঞানে অভিজ্ঞ ছিল, যার কারনে তারা বেদ নিয়ে আলোচনা করতেন। ♦ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে এক নারীর কথা বলা হয়েছে, যিনি ছিলেন কুশধ্বজ এবং মালাবতীর কন্যা। তিনি অনর্গল বেদমন্ত্র পাঠ করতে পারতেন। ♦ “সততং মীর্তিমন্তশ্চ বেদাশ্চত্বার এব চ। সন্তি যস্যাশ্চ জিহ্বাগ্রে সা চ বেদবতী স্মৃতা।।” – [ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, ১৪/৬৫] অনুবাদ: এই পূণ্য পাপনাশক পবিত্র আখ্যান তোমাকে বলিলাম।মূর্ত্তিমান বেদচতুষ্টয় তাঁহার জিহ্বাগ্রে সতত স্ফুরিত হওয়ায়, তিনি বেদবতী বলিয়া উক্ত হইয়াছে। ♦ মহাভারতের উদ্যোগ পর্বে ১২৪তম অধ্যায়ে (হরিসিদ্ধান্তবাগীশকৃত) ‘বিদুলা’ নামে এক নারীর উল্লেখ পাওয়া যায় যিনি বেদাদি বহু শাস্ত্রে পারঙ্গত ছিলেন। গৌড়ীয় বৈষ্ণব ইতিহাসে নারীদের অবদানঃ অধ্যাপিকা ঊমা বন্দোপাধ্যার রচিত “গোড়ীয় বৈষ্ণব নারী” নাম্নী একটি বই রয়েছে যেখানে তিনি ১০০ জনেরও বেশি নারীদের উল্লেখ করেছেন যারা গৌড়ীয় ইতিহাসে অসামান্য অবদান রেখেছেন। এখানে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের নাম দেওয়া হলো- জাহ্নবা দেবী(শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর পত্নী) সীতাদেবী(শ্রীঅদ্বৈত আচার্যের পত্নী ) চৈতন্য মহাপ্রভুর বরিষ্ঠ পার্ষদরা অপ্রকটের পর এই দুজন বৈষ্ণবী গৌড়ীয় ধারার প্রচার ও প্রসারে নেতৃত্ব প্রদান করেন। গৌরাঙ্গপ্রিয়া দেবী(শ্রীনিবাস আচার্য্যের পত্নী) হেমলতা /কৃষ্ণপ্রিয়া ঠাকুরাণী(শ্রীনিবাস আচার্য্যের কন্যা) তিনি একজন সহজিয়া ভাগবত পাঠক “রূপ কবিরাজ”-কে শাস্ত্রার্থ করে পরাজিত করে তার সহজিয়া সিদ্ধান্ত প্রচার বন্ধ করেন। এছাড়াও হেমলতা ঠাকুরাণী একজন আচার্যানীর ভূমিকা পালন করেন ও বহু শিষ্য গ্রহণ করেন। জাহ্ণবাদেবীর পুত্রবধু সুভদ্রা দেবী (অনঙ্গকদম্বাবলী নামে শতক কাব্য রচনা করেন)  ইসকনে নারীদের গায়ত্রী দীক্ষা ও আচার্যানীর ভূমিকাঃ *আপনারা নিশ্চয় সকলে অবগত আছেন যে, ইসকনে নারীদের গায়ত্রী দীক্ষা দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ১৯৬৮ সালের ১১ই অগাস্ট মন্ট্রিলে দেওয়া দীক্ষানুষ্ঠানে শ্রীল প্রভুপাদের দেওয়া প্রবচন থেকে প্রাসঙ্গিক অংশটুকু আপনাদের সামনে তুলে ধরছি– So then this is the beginning of initiation, and those who have chanted at least for one year, then the next initiation is to offer him Gāyatrī mantra. Some of the students, boys and girls, will be offered this Gāyatrī mantra. And when the Gāyatrī mantra is offered men, they are offered also sacred thread, and girls, they are not offered sacred thread. If their husband is a brāhmaṇa, she automatically becomes brāhmaṇa, because wife is considered to be the half, better half. She is the better portion. So she automatically becomes better brāhmaṇa. [laughter] So better brāhmaṇa does not require any thread. Reference: Initiations and Gāyatrī of Devotees এছাড়া কিছুদিন আগে একজন নারী আচার্যপদে অভিষিক্ত হয়েছেন এবং শিষ্য গ্রহণ করা শুরু করেছেন। ২০২২সালের ১৯শে অগাস্ট জন্মাষ্ঠমী তিথিতে শ্রীমত্যা নারায়ণী দেবী দাসী দীক্ষাগুরুরুপে প্রথম শিষ্যা গ্রহণ করেন। এবার প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে শ্রীল প্রভুপাদ কেন শ্রীমদ্ভাগবতের উক্ত শ্লোকের তাৎপর্যে নারীদের বেদপাঠ নিষেধ বা তাদের অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন বললেন?! মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাঃ শুনতে অপ্রিয় হলেও সত্য যে, সাধারণত স্ত্রীজাতি শৃঙ্গার, কৌতুক, সাংসারিক গল্প ইত্যাদিতেই মেতে থাকতে পছন্দ করেন। এবং এটা যে নতুন কোন তথ্য নয় তা আপনারা সবাই জানেন। আধ্যাত্মিকথার কথা নাই বা বললাম, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও নারীদের নিয়ে বিভিন্ন জনপ্রিয় কৌতুক ভিডিও রয়েছে। যেমন বর্তমানে জনপ্রিয় ট্রেন্ডিং ফানি ভিডিও “Women” দেখেন নাই এমন নেটিজেন কমই খুঁজে পাওয়া যাবে।  তাই এই বিষয়টি একটি “Open Secret” ও বলা যেতে পারে। আজকে নারীরা একাডেমিক পড়াশুনা, চাকরী এমনকি কোন কোন দেশ পরিচালনা করছেন। এক্ষেত্রে তাদের সম্বন্ধে এমন মন্তব্য করা যদিও বেমানান মনে হতে পারে কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীরা কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বুদ্ধির চেয়ে আবেগের দ্বারা তাড়িত হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। শ্রীল প্রভুপাদ তাই শ্রীমদ্ভাগবতের উক্ত শ্লোকের তাৎপর্যে এমন সাধারণ বৈশিষ্ঠ্য সম্পন্ন ‘স্ত্রী’জাতির কথাই বলেছেন, উত্তমা স্ত্রীদের কথা নয়। এবং স্বাভাবিকভাবেই এরা উন্নততর দর্শন আলোচনার চাইতে গল্প/উপাখ্যান শ্রবণ/অধ্যয়ন করতে বেশি উৎসাহী। এখানে আলোচ্য শ্লোকে “ন শ্রুতিগোচরা” মানে এই নয় যে, তাদের কানে বেদের বাণী প্রবেশ করে না। বরং তারা শুনলেও তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে না এমনটাই বুঝিয়েছে। আর তাই শ্রীল ব্যাসদেবও তাদের সেই স্বাভাবিক আচরণের কথা মাথায় রেখেই রামায়ণ, মহাভারত আদি ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেছেন, যাতে তারা তা শ্রবণে এবং অধ্যয়নে আগ্রহী হয়। এবং পরবর্তীতে কোন তত্ত্বদ্রষ্টা

গৌড়ীয় সম্প্রদায়ের মন্ত্র পরম্পরা

119066931_169585244724599_8881038910414135153_n

গৌড়ীয় সম্প্রদায়ের মন্ত্র পরম্পরা রূপানুগ গৌড়ীয় বৈষ্ণবের শ্রীগুরুপরম্পরাতে একসাথে রয়েছে মন্ত্রদীক্ষা পরম্পরা এবং ভাগবত শিক্ষাপরম্পরা। সম্পূর্ণ গৌড়ীয় সম্প্রদায়ের প্রধান প্রধান আচার্যগণকে একটি ক্রমবদ্ধ ধারায় প্রকাশ এবং বংশানুক্রমিক গুরুপারম্পর্য খণ্ডন করে এই ভাগবত পরম্পরা অনবদ্যভাবে একটি আদর্শ গুরুপ্রণালী উপস্থাপন করছে। প্রতিটি প্রাচীন পরম্পরাই ভাগবত পরম্পরা। পূর্বে আচার্য শংকর কর্তৃক প্রদর্শিত পরম্পরা, শ্রীসম্প্রদায়ে আলোয়াড় পরম্পরা, ব্যাস-মধ্ব পরম্পরা প্রভৃতির কোনটিই সম্পূর্ণ মন্ত্রপরম্পরা নয়। মন্ত্র গুরু ও শিক্ষাগুরু ভিন্ন হতেই পারেন। গৌড়ীয় সম্প্রদায়ে সখ্যরসভুক্ত শ্রীল হৃদয়চৈতন্য প্রভুর মন্ত্রশিষ্য শ্রীল শ্যামানন্দ প্রভু মাধুর্যরসে শ্রীরূপমঞ্জরীর অনুগত। যাই হোক এই প্রবন্ধে সংক্ষেপে ভাগবত পরম্পরার আচার্যবর্গের মন্ত্রদীক্ষা ও শিক্ষা বর্ণনা করা হল। এই শিক্ষা পরম্পরা আলোচনা করলে খুব স্পষ্টভাবে বোঝা যায়- ভাগবত পরম্পরা সর্বৈব সঠিক ও যুক্তিযুক্ত। শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ যুক্তিগ্রাহ্য ভাবে এই ভাগবত পরম্পরা প্রকাশ করেছিলেন। গৌড়ীয় পরম্পরা ১) স্বয়ং ভগবান শ্রীগৌরসুন্দর মহাপ্রভু: • মন্ত্রদীক্ষা ও শিক্ষা অভিনয় : শ্রীল ঈশ্বরপুরী (মাধবেন্দ্রপুরীর শিষ্য) • মন্ত্র : দশাক্ষরী মন্ত্র • সন্ন্যাস সংস্কার : শ্রীল কেশব ভারতী • সন্ন্যাস নাম : শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য ২) শ্রীল স্বরূপ দামোদর গোস্বামী : • পূর্বনাম : শ্রীপুরুষোত্তম আচার্য • মন্ত্রদীক্ষা : অজ্ঞাত • শিক্ষা : শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু। • বেশ : বারাণসীতে চৈতন্যানন্দের কাছ থেকে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। কিন্তু যোগপট্ট ধারণ করেননি। মহাপণ্ডিত, রসাচার্য এই স্বরূপ দামোদরের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ছাড়া কোন রচনা মহাপ্রভুকে নিবেদন করা হত না। ৩) শ্রীল রূপ গোস্বামী এবং শ্রীল সনাতন গোস্বামী : • দীক্ষা : সনাতন গোস্বামীর গুরু বিদ্যাবাচস্পতি । রূপ গোস্বামী সনাতনের শিষ্য ছিলেন। • শিক্ষা : শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু • মহাপ্রভুর প্রদত্ত নাম : “রূপ” ও “সনাতন” • বেশ : শ্রীরূপ সনাতন প্রমুখ গোস্বামীগণ মহাপ্রভুর অনুমোদনেই শ্বেত বহির্বাস ধারণ করেন। এই বেশ পরবর্তীতে “বাবাজী” বেশ বলে পরিচিত হয়। আসলে এটি প্রচ্ছন্ন সন্ন্যাস বেশ। “গোস্বামী” উপাধিটিও সন্ন্যাস উপাধি। শ্রীরূপ গোস্বামী হলেন সর্বপ্রধান গৌড়ীয় রসাচার্য। জগতে তিনিই প্রচার করে চৈতন্যমনোভিষ্ট পূরণ করেন। শ্রীরূপ স্বরূপের প্রত্যক্ষ কৃপাপ্রাপ্ত। ৪। শ্রীল রঘুনাথ দাস গোস্বামী • মন্ত্রদীক্ষা : শ্রীঅদ্বৈত প্রভুর শিষ্য শ্রীল যদুনন্দন আচার্য। • শিক্ষা : শ্রীল স্বরূপ দামোদর গোস্বামী এবং শ্রীরূপ-সনাতন। ৫। শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী : • দীক্ষা : জানা যায় না। • শিক্ষা : শ্রীরূপাদি ষড় গোস্বামী। • বেশ : জানা যায় না। • নিত্য ব্রজলীলায় তিনি শ্রীললিতার যূথে শ্রীরূপমঞ্জরীর অনুগতা কস্তুরিকা মঞ্জরী। তিনি অষ্টমঞ্জরীর অন্যতমা। কবিরাজ গোস্বামী শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতের প্রায় প্রতিটি পরিচ্ছেদের ভণিতায় “রূপ-রঘুনাথ”-এর শ্রীচরণে কৃপা প্রার্থনা করেছেন। তাঁর ভাই যখন শ্রীল মীনকেতন রামদাসের চরণে অপরাধ করেন, তখন শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি গৃহত্যাগ করে ব্রজে গমন করেন। ৬৷ শ্রীল নরোত্তম ঠাকুর মহাশয় : • মন্ত্র দীক্ষা : শ্রীল লোকনাথ গোস্বামী • মন্ত্রপরম্পরা : শ্রী অদ্বৈত আচার্য প্রভু > শ্রীল লোকনাথ গোস্বামী > শ্রীল নরোত্তম ঠাকুর। • ভাগবত শিক্ষা : শ্রীল জীব গোস্বামী প্রভু • বেশ : অজ্ঞাত • শ্রীল রূপ গোস্বামীই তাঁর গুরুরূপা সখী। এ সম্পর্কে বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি তাঁর পদে বারবার শ্রীরূপের চরণাব্জে সমর্পিত হতে চেয়েছেন। ৭)শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর : • মন্ত্রদীক্ষা : শ্রীল রাধারমণ চক্রবর্তী • মন্ত্রপরম্পরা : শ্রীল নরোত্তম > শ্রীল গঙ্গানারায়ণ চক্রবর্তী > শ্রীল কৃষ্ণচরণ চক্রবর্তী > শ্রীল রাধারমণ চক্রবর্তী > শ্রীল চক্রবর্তীপাদ। • শিক্ষা : শ্রীল নরোত্তম ঠাকুরের পরম্পরাসূত্রে শ্রীল কৃষ্ণচরণ চক্রবর্তীর কাছে। • বেশ : শ্রীহরিবল্লভ দাস নামে ইনি বিরক্তবেশ গ্রহণ করেন। ৮। শ্রীল বলদেব বিদ্যাভূষণ : • মন্ত্রদীক্ষা : শ্রীল রাধাদামোদর দেব গোস্বামী • মন্ত্রপরম্পরা : শ্রীল গৌরসুন্দর, নিত্যানন্দ প্রভু > শ্রীল হৃদয়চৈতন্য প্রভু > শ্রীল শ্যামানন্দ প্রভু > শ্রীল রসিকানন্দ প্রভু > শ্রীল রসিকানন্দের প্রশিষ্য শ্রীল রাধাদামোদর দেব > শ্রীল বলদেব বিদ্যাভূষণ। • ভাগবত শিক্ষা : কিছুকাল রাধাদামোদর দেবের কাছে শিক্ষা করেন। পরবর্তীতে শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুরের নিকটে ভাগবত শিক্ষা নেন। • বেশ : বিদ্যাভূষণ প্রভু বেশ নিয়ে “একান্তী গোবিন্দ দাস” নামে পরিচিত হন। তিনি বেদান্তসূত্রের “গোবিন্দ ভাষ্য” রচনা করেন। ইহা গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের বেদান্তভাষ্য। ৯। শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজি : • মন্ত্রদীক্ষা : অনেকে বলেন বৃন্দাবনের শৃঙ্গারবটের জগদানন্দ গোস্বামী। জগদানন্দ গোস্বামীর বেশগুরু ছিলেন গোবর্ধনের কৃষ্ণদাস বাবাজি। কিন্তু দৈনিক নদীয়া প্রকাশ, ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৪২ অনুসারে নিতাইবংশের রাসবিহারী গোস্বামী ছিলেন তাঁর পাঞ্চরাত্রিকী গুরু। • বেশ : গোবর্ধনের সূর্যকুণ্ড নিবাসী শ্রীল মধুসূদন দাস বাবাজি ছিলেন এনার বেশগুরু। • বেশ পরম্পরা : শ্রীল বলদেব বিদ্যাভূষণ > শ্রীল উদ্ধবদাস বাবাজি > শ্রীল মধুসূদন দাস বাবাজি > শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজি • ভজন : বাবাজি মহারাজ দীর্ঘকাল সূর্যকুণ্ডে নিজ বেশগুরুর শিক্ষায় ভজন করেছেন। পরবর্তীতে কোলদ্বীপ (বর্তমান শহর নবদ্বীপে) এসে অবস্থান করেন। সেখানে তাঁর সমাধি আছে। ১০৷ শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর : • মন্ত্রদীক্ষা : শ্রীবংশীবদনানন্দের পুত্র রামাই পণ্ডিতের বংশের বিপিনবিহারী গোস্বামী। এনার পাট বাঘনাপাড়ায়। • মন্ত্রপরম্পরা : ঈশ্বরী জাহ্ণবী > রামচন্দ্র > রাজবল্লভ > কেশবচন্দ্র > রুদ্রেশ্বর > দয়ারাম > মহেশ্বরী গোস্বামিনী > গুণমঞ্জরী গোস্বামিনী > যজ্ঞেশ্বর > বিপিনবিহারী গোস্বামী > ঠাকুর ভক্তিবিনোদ • ভজনশিক্ষা : শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজি। • বেশ : অপ্রকটের কিছু পূর্বে শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজির কাছে বেশ প্রার্থনা করেন। বাবাজি মহারাজের নির্দেশে শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজির প্রসাদী ডোর কৌপীন গ্রহণ করেন। ১১৷ শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজি : • মন্ত্রদীক্ষা : অদ্বৈত বংশীয় নিমাইচাঁদ গোস্বামী। • মন্ত্রপরম্পরা : মাধবেন্দ্রপুরী > অদ্বৈত প্রভু > শ্রীকৃষ্ণমিশ্র > দোলগোবিন্দ (শ্রীপাট উথলী) > গোপীনাথ > রাধাগোবিন্দ > কেশব > শুকদেব > রাধারমণ > নিমাইচাঁদ গোস্বামী > গৌরকিশোর বাবাজি > প্রভুপাদ ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী। • বেশ : শ্রীল ভাগবত দাস বাবাজি • বেশ পরম্পরা : শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজি> শ্রীল ভাগবত দাস বাবাজি > শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজি। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর এবং সিদ্ধ গৌরকিশোর বাবা পরস্পর পরস্পরকে অত্যন্ত সম্মান করতেন। ঠাকুর মহাশয় ছিলেন বাবাজি মহারাজের বেশগুরুর সতীর্থ। ১২৷ শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদ : • মন্ত্রদীক্ষা : শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজি। • মন্ত্রপরম্পরা : গৌরকিশোর বাবার পরম্পরা • বেশ : ত্রিদন্ড বৈষ্ণব সন্ন্যাস • বেশ পরম্পরা : “ভক্তিসিদ্ধান্ত বৈভব” গ্রন্থ মতে উপযুক্ত সন্ন্যাস গুরুর অভাবে নিজ মন্ত্রগুরুর আলেখ্য সমীপে শ্রীগান্ধর্বিকা গিরিধারীকে সাক্ষী রেখে কাষায় বস্ত্র ধারণ করেন। শ্রীরামানুজাচার্যও বরদবিষ্ণুকে সাক্ষী রেখে ত্রিদন্ড ও যতিবেশ ধারণ করেন। এই বিষয়ে বিস্তারিত কথা এই পেজে যথাসময়ে প্রকাশিত হবে।

সৃষ্টিকর্তা সাকার নাকি নিরাকার?!

image_2024-05-08_163732813

সৃষ্টিকর্তা সাকার নাকি নিরাকার?! এক যুক্তিপূর্ণ, বিজ্ঞানভিত্তিক ও শাস্ত্রীয় বিশ্লেষণ…!!! সৃষ্টিকর্তা- তাঁকে ঈশ্বর, ভগবান, আল্লাহ্, জিওভা, GOD ইত্যাদি বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। লক্ষ করলে দেখা যাবে প্রত্যেকটি নামই বিশেষণকেন্দ্রিক এবং সবগুলো বিশেষণই কোনো ব্যক্তিকে নির্দেশ করছে, তিনি হলেন সৃষ্টিকর্তা। ঠিক যেমন জলকে কেউ বলে Water, কেউ বলে পানি, কোথাও বলে উজি, কোথাও অ্যাকুয়া। এভাবে বিভিন্ন নামে জল শব্দটি প্রচলিত। কিন্তু যে ভাষাতেই ডাকা হোক না কেন, জলের ধর্মে বা বৈশিষ্ট্যে কোনো পার্থক্য হবে না। আবার সূর্যকেও বিভিন্ন ভাষায় ডাকা যেতে পারে, সূর্যের অনেক বৈশিষ্ট্যসূচক নামও আছে। এমনকি বাংলাতেও এর সমার্থক শব্দগুলোর একেকটি নাম একেকটি বৈশিষ্ট্যের ওপর আধারিত- যেমন, দিবাকর, প্রভাকর ইত্যাদি। নাম যাই হোক, বস্তু কিন্তু একটাই। তাই তা নিয়ে বিবাদ করার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু সৃষ্টিকর্তাকে সম্বোধন নিয়ে এত বিড়ম্বনা কেন? নামগুলো নিয়ে যেন প্রতিযোগিতার অন্ত নেই। সবাই তার ভাষার নামটাকেই জগৎজুড়ে প্রচার করতে চাইছে। মনে হয় যেন তারা ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্ব। তাহলে পার্থক্যটা কোথায়?! এ সকল নামধারী ব্যক্তি কি ভিন্ন ভিন্ন, না একেরই বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসূচক বা গুণবাচক নাম?! জল, সূর্য বা অন্য বস্তুর ক্ষেত্রে যদি কোনো সমস্যা না থাকে, তবে সৃষ্টিকর্তার বেলায় এমন কেন?! জল সম্বন্ধে বললে যে ভাষাভাষীই হোক না কেন, কেউ কি বলবে জল কঠিন পদার্থ, তার নির্দিষ্ট আকার আছে, জল উর্ধ্বগামী; নাকি সবাই বলবে তা তরল, নির্দিষ্ট কোনো আকার নেই, জল নিম্নগামী। তবে জলের একটি রূপ বরফ, তা কঠিন, আরেকটি রূপ বায়বীয় যা নিরাকার। কিন্তু স্বাভাবিক তাপমাত্রায় জল তার নিজস্ব ধর্ম বজায় রাখবে। এটাই তার মূল রূপ। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার বেলায়- কেউ বলে সাকার!! কেউ বলে নিরাকার, তাঁর কোনো আকার নেই!! তিনি নির্বিশেষ ব্রহ্মস্বরূপে ব্যাপ্ত!! কেউ বলছে জীবই ভগবান!! জীবের মধ্যেই সৃষ্টিকর্তা বিরাজ করেন!!কেউ বলছে তাঁর রূপ আছে, কিন্তু তা আমাদের অদৃশ্য!! কেউ বলছে পরমাত্মাই ভগবান!! এরকম বিভিন্ন প্রশ্ন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে আছে। তবে কোনটি সত্য?! কেন সকলেই সৃষ্টিকর্তা বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না?! কোনটি সঠিক?! তিনি সাকার, নাকি নিরাকার?! যদি সাকারই হন, তবে আমরা তাঁকে দেখতে পাই না কেন?! নানা প্রশ্ন একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে। প্রকৃতপক্ষে ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্তের মধ্যে পার্থক্যের কারণ হলো, জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। যেমন, একটি শিশু জানে যে, জল তরল পদার্থ, কিন্তু সে জানে না যে, জলের আরো দুটি রূপ রয়েছে- কঠিন ও বায়বীয়। তারা জলকে স্বীকার করবে, কিন্তু অন্য দুটি রূপকে স্বীকার করবে না, এটাই স্বাভাবিক। এটা তাদের দোষ নয়, অপূর্ণতা। আবার, যদি কেউ একটিকে স্বীকার করে অন্যটিকে অস্বীকার করে, তবে সেটাও অযৌক্তিক। কারণ, একই পদার্থের তিনটি রূপ। এ প্রবন্ধে এই বিভ্রান্তির সমাধান বিভিন্ন যুক্তি ও শাস্ত্রীয় প্রমাণের ভিত্তিতে আলোচনা করা হলো। প্রসঙ্গ-১: সৃষ্টিকর্তা সাকার হতে পারেন কি?! সৃষ্টিকর্তার কথা বলতে গেলেই প্রথম যে কথাটি বলতে হয় তা হলো- তিনি সর্বতোভাবে পূর্ণ। ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে। পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে ॥ (ঈশোপনিষদ, আবাহন মন্ত্র) তাঁর মধ্যে কোনো অপূর্ণতা থাকবে না। তাই, যদি বলা হয় সৃষ্টিকর্তা কখনোই সাকার হতে পারেন না। তবে সেটা তার অপূর্ণতারই পরিচায়ক। আবার তিনি সর্বশক্তিমান। সৃষ্টি স্থিতি প্রলয় সবকিছুর তিনিই নিয়ন্তা। তাই যদি তাঁর কোনো রূপই না থাকে, তবে কি তাতে তাঁর সর্বশক্তিমত্তা খর্ব হয় না? আবার, আরেক দিক থেকে, আমরা সকলেই সাকার, আমাদের রূপ রয়েছে, আমাদের পিতাদেরও রূপ রয়েছে, তার পিতাদেরও রপ ছিল, এটাই স্বাভাবিক। তবে যিনি সকলের আদি পিতা, তিনি কী করে রূপহীন হবেন? অবশ্যই তাঁরও রূপ রয়েছে। আবার, সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই তাঁর সৃষ্টি অপেক্ষা কম গুণসম্পন্ন হবেন না। তাই ঈশ্বর, ভগবান, সর্বশক্তিমান, সৃষ্টিকর্তা যাই বলি না কেন, তিনি হবেন সর্বতোভাবে পূর্ণ তাঁর মধ্যে কোনো কমতি বা অভাব থাকবে না। সেজন্য পূর্ণতা হেতু অবশ্যই তাঁর রূপ থাকবে। প্রসঙ্গ-২: তিনি সাকার নিরাকার উভয়ই তাহলে প্রশ্ন হয়- তিনি কি নিরাকার নন?! যদি তিনি নিরাকার না হন, তবে তিনি কীভাবে এ জগতের সর্বত্র বিরাজ করতে পারেন?! আর যদি তিনি সাকারই হন, তবে কেন আমরা তাঁকে দেখতে পাই না?! এ প্রসঙ্গে বলে রাখা প্রয়োজন, যারা ভগবানকে কেবল নিরাকার নির্বিশেষ বলে দাবি করে, তাদের ধারণা ভুল নয়, কিন্তু অপূর্ণ। কারণ, তারা এটাকেই মূল স্বরূপ বলে মনে করে। যেমন, কোনো ব্যক্তি (যিনি কখনো ট্রেন দেখেননি) দূর থেকে ট্রেনের আলো দেখে মনে করতে পারে যে, ট্রেন এক প্রকার আলো। কিন্তু ব্যক্তিটি যখন প্লাটফর্মে ট্রেনটির কাছাকাছি যাবেন তিনি দেখতে পাবেন ট্রেন হচ্ছে কতগুলো কামড়ার সমষ্টি ও সর্পিলাকার একটি বৃহৎ যানবিশেষ। আবার যখন ভেতরে প্রবেশ করবেন বা ট্রেনে চড়বেন, তখন তার বাস্তব উপলব্ধি হবে যে, ট্রেন প্রকৃতপক্ষে কী বস্তু। একইভাবে নির্বিশেষবাদী বা নিরাকারবাদীরা মনে করে যে, ভগবানের নির্বিশেষ রূপই সবকিছু। এটা ঠিক দূর থেকে ট্রেনের আলোক দর্শনের মতো। ভগবানের তিনটি রূপ: তবে তাঁর নিরাকার স্বরপ কেমন?! সাকার স্বরূপই বা কেমন?! এ ব্যাপারে বেদান্তসূত্রের সম্প্রসারিত ভাষ্য শ্রীমদ্ভাগবতে (১.২.১১) ব্যাসদেব নিজেই প্রমাণ দেখিয়েছেন- বদন্তি তত্তবিদস্তত্ত্বং যজ্জ্ঞঅনমদ্বয়ং। ব্রহ্মেতি পরমাত্মেতি ভগবানিতি শব্দ্যতে ॥ “যা অদ্বয় জ্ঞান, এক অদ্বিতীয় বাস্তব বস্তু, তত্ত্বজ্ঞ পণ্ডিতেরা তাঁকেই পরমার্থ বলেন। এই তত্ত্ববস্তু ব্রহ্ম, পরমাত্মা ও ভাগবান – এ তিন নামে অভিহিত হন।” এখানে বলা হচ্ছে তিনি অদ্বয়, মানে তিনি দুই নন, এক। একমেব অদ্বিতীয়ম্। এই অদ্বিতীয় বস্তু তিনটি ভিন্ন ভিন্ন নামে অভিহিত হন- ব্রহ্ম, পরমাত্মা ও ভগবান। এখন প্রশ্ন হলো ব্রহ্ম কী?! ব্রহ্ম: ব্রহ্ম ভগবানের অঙ্গনিঃসৃত জ্যোতি এবং তা ভগবানের জ্যোতির্ময় স্বরূপ। যাকে আমরা নিরাকার বলে আখ্যায়িত করে থাকি। যে স্বরূপে তিনি সর্বব্যাপ্ত। যস্য প্রভা প্রভবতো জগদ-কোটি- কোটিষ্বশেষবসুধাদিবিভূতিভিন্নম্ । তদ্ ব্রহ্ম নিষ্কলমনন্তমশেষভূতং গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ॥ – (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪০) “যাঁহার প্রভা হইতে উৎপত্তি-নিবন্ধন উপনিষদুক্ত নির্বিশেষব্রহ্ম কোটিব্রহ্মা-গত বসুধাদি বিভূতি হইতে পৃথক হইয়া নিষ্কল অনন্ত অশেষ-তত্ত্বরূপে প্রতীত হন, সেই আদি পুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজন করি।” পরমাত্মা: যে স্বরূপে ভগবান প্রত্যেকটি জীবের হৃদয়ে বিরাজ করেন, তাঁকে বলা হয় পরমাত্মা। পরমাত্মা প্রসঙ্গে ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে- उपद्रष्टानुमन्ता च भर्ता भोक्ता महेश्वर: । परमात्मेति चाप्युक्तो देहेऽस्मिन्पुरुष: पर: ॥ উপদ্রষ্টানুমন্তা চ ভর্তা ভোক্তা মহেশ্বরঃ। পরমাত্মেতি চাপ্যুক্তো দেহেহস্মিন্ পুরুষঃ পরঃ॥ – (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৩/২৩) “এই শরীরে আরেকজন পরম পুরুষ রয়েছেন, যিনি হচ্ছেন উপদ্রষ্টা, অনুমন্তা, ভর্তা, ভোক্তা, মহেশ্বর এবং তাঁকে পরমাত্মাও বলা হয়।” দ্বা সুপর্ণা সযুজা সখায়া সমানং বৃক্ষং পরিষস্বজাতে। তয়োরণ্যঃ পিপ্পলাং স্বাদ্বত্ত্য অনশ্নন্ন অন্যোহভিচাকশীতি॥ – (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৪/৬) “একটি গাছে দুটি পাখি আছে। তাদের মধ্যে একটি পাখি গাছে ফলগুলো খাচ্ছে, আর অন্যটি সেই কাজ লক্ষ্য করছে। লক্ষ্যকারী ভগবান এবং ফল ভক্ষণকারী জীবসত্তা।” ভগবান: যে স্বরূপে তিনি তাঁর নিত্য ধামে নিত্যস্বরূপে সর্বদা বিরাজ করেন, সেটা ভগবান স্বরূপ। গোলোক এব নিবসত্যখিলাত্মভূতো গোবিন্দমাদিপুরুষং ত্বমহং ভজামি॥ – (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৭) “যে অখিলাত্মভূত (সকল জীবের হৃদয়ে অবস্থানকারী) গোবিন্দ নিত্য স্বীয় গোলোকধামে বাস করেন। সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।” ভগবদ্গীতায় ভগবান তাঁর ধাম অর্থাৎ তাঁর আবাসস্থল সম্পর্কে বলছেন- अव्यक्तोऽक्षर इत्युक्तस्तमाहु: परमां गतिम् । यं प्राप्य न निवर्तन्ते तद्धाम परमं मम ॥ অব্যক্তেহক্ষর ইত্যুক্তস্তমাহুঃ পরমাং

একাদশী করা কি শাস্ত্রসম্মত নয়?!

image_2024-05-05_143412643

একাদশী করা কি শাস্ত্রসম্মত নয়?! গীতার ৬/১৬ শ্লোকে কি বলেছে নাকি একাদশী ব্রত থাকা নিষেধ?! একাদশী ব্রত কি অতি অনাহারের মধ্যে পড়ে?! একাদশী ব্রতের নিয়ম জানেন তো?! উপবাসের প্রসঙ্গে কৃষ্ণযজুর্বেদের ১/৬/৭ নং মন্ত্রে বলেছে যারা সামর্থবান তারা নির্জলা উপবাস করবে। এতে অসমর্থ হলে জল পান করবে। শাস্ত্রে আরো বলছে, যারা তাতেও অসমর্থ তারা সাচ্ছন্দে ফল-মূল-কন্দ সবজী গ্রহণ করতে পারবে। শাস্ত্রে একাদশী থাকার থেকে সমস্ত প্রকারের দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। যে যার সামর্থ অনুসারে একাদশী পালন করতে পারবে। “উপবাসে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষুধাগ্নি জীবের ক্ষতি সাধন করে । যদি ক্ষুধা অসহনীয় হয় তবে #জলপান করবে। জলপানে ভোজন হয়, আবার হয়না। যজ্ঞ বজ্রসদৃশ, ক্ষুধা মানুষের শত্রু। না খেয়ে উপবাস করলে যজ্ঞরূপ বজ্র তার ক্ষুধারূপ শত্রুকে বিনাশ করে।” [কৃষ্ণযজুর্বেদ, ১/৬/৭] উপবাসাসমৰ্থশ্চ ফলমূলজলং পিবেৎ। নষ্টে শরীরে স ভবেদন্যথা চাত্মঘাতকঃ ॥ ১২ – [শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, ব্রহ্মখন্ড, ২৭।১২] অনুবাদ: উপবাস জন্য শরীর নষ্ট হইলে, আত্মহত্যার পাপ হয়, তাই (নির্জলা) উপবাসে অসমর্থ হইলে, ফলমূল ভোজন ও জল পান করিবেন। কই শাস্ত্রে তো একাদশীতে অতি অনাহার থাকতে বলা হয় নি!!! একাদশী হলো নিয়মিত উপবাস৷ কোন যন্ত্রকে সঠিকভাবে কার্যক্রম রাখতে নির্দিষ্ট সময় পর পর বিরতি দিতে হয়। আমাদের দেহের পাকস্থলী সারা দিনরাত খাদ্য পরিপাকে ব্যস্ত থাকে। তাই মাসে ২ দিন তাকে বিশ্রাম দেওয়া হয়, যাকে আমরা একাদশী বলে চিনি। একাদশী ব্রত থাকলে শরীরের অপ্রয়োজনীয় চর্বি ঝরে যায়, শরীর সতেজ হয়, হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। অতএব, ফেসবুক কেন্দ্রিক ধর্মচর্চা না করে একটু শাস্ত্র অধ্যয়ন করুন, মন্দিরে যান। যতই ফেসবুক নানা গ্রুপে ঘুরে ঘুরে অনলাইন কেন্দ্রিক ধর্মচর্চা করবেন, তত নিজে বিভ্রান্ত হবেন, সমাজটাকেও পঁচাবেন।   পরিশেষে, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন –   যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ। ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম ॥   যে শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করে কামাচারে বর্তমান থাকে, সে সিদ্ধি, সুখ অথবা পরাগতি লাভ করতে পারে না।   শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৬।২৩   তস্মাচ্ছাস্ত্রং প্রমাণং তে কার্যাকার্যব্যবস্থিতৌ। জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্ম কর্তুমিহাইসি॥   অতএব, কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই তোমার প্রমাণ। অতএব শাস্ত্রীয় বিধানে কথিত হয়েছে যে কর্ম, তা জেনে তুমি সেই কর্ম করতে যোগ্য হও।   শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৬।২৪   অগণিত শাস্ত্রে বিষ্ণুব্রত একাদশী পালনের নির্দেশ রয়েছে। এই নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। ।।হরে কৃষ্ণ।। সংকলন: নবনীল ঘনশ্যাম দাস লেখার স্বত্ব স্বধর্মম্ কর্তৃক সংরক্ষিত। কেবল স্বধর্মম্ এর স্বত্ব উল্লেখ পূর্বক হুবহু কপি ও লিংক শেয়ারের জন্য অনুমোদিত