বেদে কি পরমেশ্বর দারুব্রহ্ম জগন্নাথদেবের কথা বর্ণিত আছে?!

fb396541-cd74-40df-8f43-d82b94c901c4

ঋগ্বেদের আশ্বলায়ন শাখা ০৭.৫৬.০৪-০৫, সামবেদীয় ছান্দোগ্য উপনিষদ৩.১৭.৬-৭, কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় নারায়ন উপনিষদ ৪, অথর্ববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদ ১/২১,১/২৪, কৃষ্ণ উপনিষদ এবং কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় কলির্সন্তরন উপনিষদ ২ ইত্যাদি বেদ বা শ্রুতি শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবান গোলকপতি শ্রীকৃষ্ণের মহিমা বর্ণিত আছে। অথর্ববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদে বলা হয়েছে, “একো বশী সর্বগঃ কৃষ্ণ ঈড্যঃ” অর্থাৎ, সেই একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই পরম পুরুষোত্তম ভগবান,তিনিই আরাধ্য। – গোপালতাপনী উপনিষদ ১/২১(অথর্ববেদ) বেদসহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রের শিক্ষা অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান। সমগ্র বেদ শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণের মহিমা আলোচিত হয়েছে।এ বিষয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় (১৫/১৫) বলেন, वेदैश्च सर्वैरहमेव वेद्यो “বেদৈশ্চ সবৈররহমেব বেদ্যো” অর্থাৎ, আমি সমগ্র বেদে জ্ঞাতব্য। শ্রীকৃষ্ণকে বেদে বিষ্ণু, কৃষ্ণ,গোপাল ( চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবনে তিনি গোচারন করেন, তাই শ্রীকৃষ্ণের এক নাম গোপাল), দেবকীপুত্র ইত্যাদি নামে সম্বোধন করা হয়েছে। ঋগ্বেদীয় পুরুষসুক্ত,বিষ্ণু সুক্ত, এবং কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় নারায়ন সুক্তে সমগ্র জগৎব্যাপী বিষ্ণুর বিরাটরূপ বা বিশ্বরূপের বর্ণনা করা হয়েছে,যে বিশ্বরূপটি গীতার বর্ণনা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে দর্শন দান করেন (গীতা ১১/৫-৪৪)। এবং একই গীতা শাস্ত্রে অর্জুনের ইচ্ছা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে চতুর্ভূজ বিষ্ণুরুপ প্রদর্শন করেন (গীতা ১১/৪৬,৫০)।তাই মহাভারতে বহুবার শ্রীকৃষ্ণকে শ্রীবিষ্ণু নামে সম্বোধন করা হয়েছে, (“অনুগ্রহার্থং লোকানাং বিষ্ণুলোক নমস্কৃতঃ।বসুদেবাত্তু দেবক্যাং প্রাদুর্ভূতো মহাযশাঃ।।” – “ত্রিজগতের পূজনীয় মহাযশস্বী স্বয়ং বিষ্ণু লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য বসুদেব-দেবকীতে আবির্ভূত হইয়া ছিলেন৷” – মহাভারত আদিপর্ব, ৫৮/১৩৮)। সে শ্রীকৃষ্ণ বা বিষ্ণু হলেন স্বয়ং দারুব্রহ্ম জগন্নাথ।দারুব্রহ্ম জগন্নাথ রুপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উৎকল বা উড়িষ্যায় সমুদ্রের তীরবর্তী শ্রীক্ষেত্র পুরুষোত্তম ধাম জগন্নাথ পুরীতে নিত্য বিরাজমান।স্কন্দ পুরাণ শাস্ত্রের বিষ্ণু খন্ড,পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য,১-২১ তম অধ্যায়ের বর্ণনা অনুযায়ী, বিষ্ণুভক্ত ইন্দ্রদ্যুম্নের প্রার্থনায় স্বয়ং বিষ্ণু দারুরুপে উড়িষ্যার দক্ষিণ সাগরের তটে অবস্থান করেন। পরে ইন্দ্রদ্যুম্ন সেবকগন কতৃর্ক সেই দারুকে মহাবেদীতে স্থাপন করেন।ইন্দ্রদ্যুম্নের প্রার্থনায় ভগবান বিষ্ণু যিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তিনি দারু থেকে জগন্নাথ( শ্রীকৃষ্ণ), বলদেব (বলরাম), সুভদ্রা এবং সুদর্শনরুপে প্রকাশিত হয়েছিলেন। বেদ শাস্ত্রে সমুদ্রের তীরবর্তী দারুব্রহ্ম জগন্নাথের কথা বর্ণিত আছে। यद्दारु॒ प्लव॑ते॒ सिन्धो॑: पा॒रे अ॑पूरु॒षम्। तदा र॑भस्व दुर्हणो॒ तेन॑ गच्छ परस्त॒रम्॥ “যদ্ দারু প্লবতে সিন্ধোঃ পারে অপূরুষম্। তদা রভস্ব দুর্হণো তেন গচ্ছ পরস্তরম্।। অনুবাদঃ ঐ দূরদেশে, সমুদ্রের পারে কোন প্রযত্ন ছাড়াই প্রকাশিত অপৌরুষেয় দারু ভাসছে– হে চিরঞ্জীবী স্তুতিকর্তা– তাঁর উপাসনা কর। সেই দারুময় বিগ্রহের উপাসনায় তুমি শ্রেষ্ঠতর দিব্যলোক প্রাপ্ত করবে। – ঋগ্বেদ সংহিতাঃ ১০/১৫৫/৩ ।।জয় জগন্নাথ।। ।।হরে কৃষ্ণ।। ।।প্রনাম।। – সদগুন মাধব দাস

চন্ডীতে কি দূর্গা বা কালীপূজায় পশুবলির কথা আছে?

398558377_362174873046272_7374750911678333198_n

অনেকে প্রশ্ন করছিলেন- চন্ডীতে কি দূর্গা বা কালীপূজায় পশুবলির কথা আছে? রাজা সুরথ কি দূর্গাপূজায় পশুবলি দিয়েছিলেন? ( চণ্ডী, মার্কেন্ডপুরাণ, কালীকাপুরাণদি শাস্ত্র বিশ্লেষণ) ====================================== সপ্তশতশ্লোকী শ্রীশ্রীচণ্ডী হলো রাজসিক মার্কেন্ডপুরাণের অন্তর্গত একটি অত্যন্ত চমৎকার শাস্ত্র, যেখানে বৈষ্ণবী মাতা দূর্গার বিস্তৃত স্তুতি রয়েছে। এ জড় জগতে সর্বপ্রথম দেবী দূর্গার আনুষ্ঠানিক পূজা করেছিলেন রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য। তাই সুরথ রাজার দূর্গাপূজার কথা এখনো লোকের মুখে মুখে। সে সুরথ রাজা কিভাবে দেবীদূর্গার পূজা করেছিলেন তা মার্কেন্ড ঋষি বর্ণনা করেছেন চণ্ডীতে। কিছু কপট ধর্মব্যবসায়ী চণ্ডীর মাঝখান থেকে দুই একটি শ্লোক তুলে এনে, শুদ্ধ শাস্ত্র সিদ্ধান্ত গোপণ করে- দাবী করেন চণ্ডীতে নাকি পশুবলির বিধান আছে, এবং এ যুক্তিতে তারা সরল ধর্মপ্রাণ সনাতনীদের পথভ্রষ্ট করে নিজেদের মৌসুমী ব্যবসা হাসিল করে। তাদের দাবীকৃত অপপ্রচার সমূহের খন্ডন নিমিত্তে আজকের লিখনি- ——————– অপযুক্তি- ১: ——————— তথাকথিত ধর্মব্যবসায়ী জাতবামুনগণ চন্ডী হতে নিম্নোক্ত শ্লোক উদ্ধৃতি করে দাবী করেন, চন্ডীতে পশুবলির নির্দেশিকা আছে! বলি-প্রদানে পূজায়াম্, অগ্নি-কাৰ্য্যে মহোৎসবে। সৰ্ব্বং মম-এতৎ-চরিতম্, উচ্চার্য্যং শ্রাব্যমেব চ ॥ জানতা-অজানতা বাপি, বলি-পূজাং তথা কৃতাম্ । প্রতীচ্ছিষ্যামি-অহং প্রীত্যা, বহ্নি-হোমং তথা কৃতম্ ॥ [ #চন্ডী ১২।১০-১১; #মার্কেন্ডপুরাণ ৯২।৯-১০] বঙ্গানুবাদঃ বলিদানে, পূজায়, অগ্নি-কার্য্যে (যজ্ঞ ও হোমাদিতে) এবং মহোৎসবে আমার এই মাহাত্ম্য পাঠ ও শ্রবণ করবে। পূজা জেনে বা না জেনেও যদি এই মাহাত্ম্য পাঠপূর্ব্বক বলিদান, পূজা এবং হোমাদি করে তা অতি প্রীতিসহকারে আমি গ্রহণ করি । অপযুক্তি_খন্ডনঃ যাদের চেতনা দূষিত, তাদের চিন্তাধারা দূষিত হবে- এতে আর অবাক হওয়ার কি আছে?! দাবীকৃত উক্ত শ্লোকে ‘বলি’ শব্দ দেখেই মাংসলোলুপগণ লাফিয়ে পড়েন, অথচ তারা ‘বলি’ শব্দের অর্থ কি সেটাই জানে না। ‘বলি’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো উপহার। এ উপহার সাত্ত্বিকী, রাজসিক ও তামসিক – তিন প্রকার। তাহলে প্রশ্ন, চন্ডীতে কোন প্রকার বলির কথা আছে? চন্ডীতে ‘বলি’ শব্দের দ্বারা যে পশুবলিকে বুঝানো হচ্ছে? চলুন, চন্ডী থেকেই দেখে নিই- নিরাহারৌ যত-আহারৌ, তন্মনস্কৌ সমাহিতৌ । দদতুঃ তৌ #বলিং চৈব, #নিজ_গাত্র_অসৃগ_উক্ষিতম ॥ এবং সম-আরাধয়তোঃ, ত্রিভিঃ বর্ষৈ যত-আত্মনোঃ । পরিতুষ্টা জগদ্ধাত্রী, প্রত্যক্ষং প্ৰাহ চণ্ডিকা ॥ [ #চন্ডী ১৩।১১-১২; #মার্কেন্ডপুরাণ ৯৩।৮ ] বঙ্গানুবাদঃ সুরথ রাজা ও সমাধি বৈশ্য নিরাহারে, অল্প আহারে, সমাহিত চিত্তে #নিজ_গাত্র_সিক্ত #রক্ত_বলিরূপে প্রদান করেন। এরূপ সংযতচিত্তে তিন বৎসর আরাধনা করলে পরিতুষ্টা জগদ্ধাত্রী প্রত্যক্ষ রূপে আবির্ভূতা হয়ে বললেন। #সিদ্ধান্তঃ উক্ত শ্লোকে ‘ বলিং চৈব নিজ গাত্র অসৃগ উক্ষিতম’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে #পূজারীর_শরীরের_রক্ত-ই দেবীকে #বলিরূপে নিবেদন করতে হবে। এতে দেবী পরিতুষ্ট হয়ে দর্শন দিবেন! কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, চন্ডীর মধ্যে উল্লেখিত এ শ্লোক লুকিয়ে তথাকথিত মাংসলোলুপ রাক্ষসগণ ভন্ডামী করে। এরা নিজের রক্ত দিয়ে পূজা দিতে ভয়ে ভীরু, এরা নাকি আবার শক্তির উপাসক!! নিজের রক্ত দিয়ে পূজা করার সাহস হয় না এদের, তাই অবলা পশুর উপর ছুরী চালিয়ে নিজের মিথ্যা বীরত্ব প্রকাশ করে! ছি! —————— অপযুক্তি ২: ——————- নিজেদের অপকর্মের সাফাই গাইতে তথাকথিত এ সকল ধর্মব্যবসায়ী মাংসলোলুপগণ চন্ডী হতে আরেকটি অপযুক্তি দেখায়- পশু-পুষ্প-অর্ঘ্য-ধূপৈঃ চ, গন্ধ-দীপৈঃ তথা-উত্তমৈঃ। বিপ্ৰাণাং ভোজনৈঃ হোমৈঃ, প্রোক্ষণীয়ৈঃ অহর্নিশম্ ॥ অন্যৈঃ চ বিবিধৈঃ ভোগৈঃ, প্রদানৈঃ বংসরেণ যা। প্রীতিঃ মে ক্রিয়তে সাম্মিন্, সকৃৎ সুচরিতে শ্রুতে ॥ [ চন্ডী ১২।২১-২২; মার্কেন্ডপুরাণ ১৯-২১ ] বঙ্গানুবাদঃ উত্তম পশু, পুষ্প, অর্ঘ্য, ধূপ, দীপ, গন্ধ, ব্রাহ্মণ ভোজন, দিবা-রাত্রি প্রোক্ষণীয় দ্রব্যাদি দিয়ে বিধিপূর্ব্বক অগ্নিতে হোম, অন্যান্য নানাবিধ উপচার প্রদান করতঃ একবৎসর পূজাতে যেরূপ প্রসন্ন হই একবার মাত্র এই মাহাত্ম্য শ্রবণে সেরূপ প্রীতিলাভ করি। অপপ্রচারকগণের দাবী এ শ্লোকে ‘পশু’ শব্দ দ্বারা পশুবলির কথা বলা হচ্ছে! অপযুক্তি_খন্ডন: প্রথমত উক্ত শ্লোকে ‘বলি’ শব্দের উল্লেখ নেই। যাদের চেতনা অখাদ্য-কুখাদ্যে নিমজ্জিত, সে সকল মাংসলোভীগণই ‘পশু’ শব্দ দেখলেই, তাদের চোখে ‘মাংস’ এর দৃশ্য ভাসমান হয়! কিন্তু আদৌ উক্ত শ্লোকে পশুবলি কিংবা পশুমাংসের কথা বলাই হয় নি। চন্ডীর উক্ত শ্লোকে ‘পশু’ শব্দ দ্বারা যজ্ঞে পশু ব্যবহারকে বুঝানো হয়েছে। যজ্ঞকালে যজ্ঞাহুতি শেষে যজমান ভগবানের প্রতিনিধি তথা যাজ্ঞিক ব্রাহ্মণকে পশুদান করে যজ্ঞকালে জ্ঞাতে অজ্ঞাতে হয়ে যাওয়া পাপ হতে মুক্ত হয়। দূর্গাপূজায় অষ্টমী ও দশমী তিথিতে অগ্নিহোম যজ্ঞ শেষে ব্রাহ্মণকে গো-দান, অশ্ব-দান, হস্তি-দান প্রভৃতি পশুদানের বিধান আছে এবং একেক দানে একেক ফল লাভ হয়। যজ্ঞ প্রারম্ভে যেমন যজমান চুল, নখ কর্তন করে স্নানান্তে শুচি হয়, তেমনি যজ্ঞের পূর্বে যজ্ঞে ব্যবহৃত সকল সামগ্রীকে শুচি করে নিতে হয়। যজ্ঞে ব্যবহৃত পশুভেদে তাদের নখ, খুর, পশম, চুল ইত্যাদি অঙ্গ (বিজ্ঞানের ভাষায় বহিঃকঙ্কালতন্ত্র) চ্ছেদন করে তাদের স্নান করিয়ে যজ্ঞের জন্য শুচি করা হয়। শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর যজ্ঞে পশুব্যবহার সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন- ‘পশোরালভন কিঞ্চিদঙ্গচ্ছেদনমের ন তু হিংসা বধঃ।’ অর্থাৎ, পশুর কিঞ্চিৎ অঙ্গচ্ছেদনই যজ্ঞে দেবতার উদ্দেশ্য বিধান, একে বারে বধ নহে। (#সারার্থদর্শিন্যাখা-টীকয়া, ভা.১১।৫।১৩) এভাবে অশ্ব,গর্দভ,মহিষাদি পশুর খুর/নখ ও লম্বা কেশ চ্ছেদন, ভেড়া, মেষাদি পশুর পশম চ্ছেদন দ্বারা এ সমস্ত পশুকে যজ্ঞের জন্য সংস্কার করা হয়, তখন এ সকল পশুকে শাস্ত্রীয় ভাষায় বলে ‘প্রোক্ষিপ্ত পশু’। যেহেতু বেদমন্ত্র দ্বারা এ সকল পশুকে প্রক্ষেপণ করা হয়, তাই এ সকল পশুর উপর যজ্ঞপতি বিষ্ণুর অধিকার থাকে, যজমান যজ্ঞ শেষে এ সকল পশুকে বিষ্ণুর প্রতিনিধি যাজ্ঞিক ব্রাহ্মণ/ বৈষ্ণবকে দান করেন। বেদমন্ত্র দ্বারা প্রোক্ষিপ্ত এ সকল পশু স্বয়ং ব্রহ্মতুল্য ( অর্থাৎ, বিষ্ণুর ন্যায় জ্ঞাত)। তাই, যদি কেউ যজ্ঞে সংস্কৃত পশুকে হত্যা করে, তবে তিনি ব্রহ্মহত্যা মহাপাপে জর্জরিত হয় এবং ইহলোক ও পরলোকে অতিশয় দুঃখ-যাতনা ভোগ করতে থাকে। কালিকা উপপুরাণে বলা হয়েছে- হস্তেন ছেদয়েদ যস্তু প্রোক্ষিতং সাধকঃ পশুম। পক্ষিণং বা ব্রহ্মবধ্যামবাপ্লোতি সুদঃসহাম। [ #কালিকাপুরাণ, ৬৭ অধ্যায়, শ্লোক ২৮] অনুবাদ- যে সাধক প্রোক্ষিপ্ত(যজ্ঞের জন্য সংস্কারকৃত) পশু বা পক্ষীকে স্বহস্তে ছেদ করেন, তিনি ব্রহ্মহত্যা পাপে আক্রান্ত হন প্রাপ্ত হয়ে অতিশয় দুঃখ ভোগ করেন। তাই কেউ যদি এরূপ পাপকর্ম হতে বাঁচতে চায় তবে সে মায়ের উদ্দেশ্য কোন প্রকার পশুবলি দিবে না। কিন্তু বলি ব্যতীত মায়ের পূজা হয় না। তাই উক্ত কালিকাপুরাণে বিধান দেওয়া হয়েছে, যারা পশুবলির পাপ হতে বাঁচতে চায় এবং একই সাথে কালীকে প্রসন্ন করতে চান তারা #কুমড়া_ও_ইক্ষু(আখ)-কেই_সাত্ত্বিকী_বলি হিসেবে দেবীকে নিবেদন করবেন। দেখুন কি বলা আছে কালিকা উপপুরাণে কুষ্মান্ডমিক্ষুদগুঞ্চ মদ্যমাসব‌মেবচ। এ‌তে ব‌লি সমাঃ প্রোক্তাস্তৃ‌প্তৌ ছাগসমাঃ সদা।। [#কা‌লিকাপুরাণ-৬৭ অধ্যায়, শ্লোক ২৫] অনুবাদঃ কুষ্মান্ড(কুমড়া) ও ইক্ষুদন্ড, মদ্য(পুষ্পমধু) ও আসব(পুষ্প আসব) ইহারাও ব‌লি এবং ছাগসমা তৃ‌প্তিকারক।। কালীকাপুরাণে আরো বলা হয়েছে- “হে ভৈরব! ঘৃতময় পিষ্টক(পীঠা) বা যবচুর্ণ দিয়ে ব্যাঘ্র, মনুষ্য অথবা সিংহাদি পশুর প্রতিমূর্তি নিৰ্মাণ করে তাহাকে পূর্বোক্ত মন্ত্র দ্বারা সংস্কৃত করবে এবং চন্দ্রহাস অস্ত্র দ্বারা তাহার ছেদ করিবে। “ [#কা‌লিকাপুরাণ-৬৭ অধ্যায়, শ্লোক ৫৫] কালীকাপুরাণে ‘পশুবলি’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে উক্ত শ্লোকগুলো উদ্ধৃত হলেও ধর্মব্যবসায়ীগণ সুকৌশলে উক্ত শ্লোকগুলো গোপণ করে কপটচারীটা করে!!! চন্ডী তথা রাজসিক মার্কেন্ড পুরাণে সুরথ রাজার দূর্গাপূজার যে উপাখ্যানটি বর্ণিত আছে, সে একই উপাখ্যান সবিস্তারে আরেক রাজসিক পুরাণ- শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে উল্লেখ আছে। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ হলো রাজসিক পুরাণসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। সেখানে সুরথ রাজার দূর্গাপূজা সম্পর্কে বলতে গিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে- বলিদানেন বিপ্রেন্দ্র দূর্গাপ্রীতির্ভবেন্নৃণাং হিংসাজন্যঞ্চ পাপঞ্চ লভতে নাত্রসংশয়ঃ।।১০ উৎসর্গকৰ্ত্তা দাতা চ ছেত্তা পোষ্টা চ রক্ষকঃ। অগ্রপশ্চান্নিবদ্ধা চ সপ্তৈ তে বধভাগিনঃ ॥১১ যো যং হন্তি সতং

কৃষ্ণপত্নী রাধিকার সন্ধানে (পর্ব-২) : রাধারাণী, কৃষ্ণের মামী নাকি পত্নী?

received_10082430340065393651368679291815341-jpeg

In Search of Krishna’s Wife Radhika (Part-2): ‘Radharani, Krishna’s aunt or wife?’ গ্রাম্য সাহিত্য শ্রবণে যাদের আগ্রহ, তাদের কেউ কেউ ধারণা করে থাকেন- শ্রীমতি রাধিকা রায়ান(আয়ান) নামক এক গোপের পত্নী। আরেক পক্ষ দেখা যায়, শ্রীমতি রাধিকাকে কৃষ্ণের মামী বলে সম্বোধন করে ভগবান কৃষ্ণচরিতকে উপহাস করতে চান। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলো- যারা ভগবান প্রণীত শাস্ত্র না পড়ে গ্রাম্য রসালো সাহিত্যকে প্রামাণিক বলে গ্রহণ করেন, তারা যে প্রকৃত সত্য হতে বঞ্চিত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই শাস্ত্রে এরূপ ব্যক্তিদের ‘মূঢ়’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। ‘মূঢ়া রায়াণপত্নী ত্বাং বক্ষ্যন্তি জগতীতলে’ [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কৃষ্ণজন্মখন্ড, অধ্যায় ৩, শ্লোক ১০৩ ] বঙ্গানুবাদ: ভূতলে যারা মূঢ় (মূর্খ), তারাই শ্রীমতি রাধিকাকে রায়াণ(আয়ান) এর পত্নী বলে মনে করে।   বাস্তবে রায়াণ বা অন্য কোন গোপের পক্ষে শ্রীমতি রাধিকাকে বিবাহ করা দূরে থাক, তাকে স্পর্শ বা দর্শন করাও সম্ভব নয়। শ্রীমতি রাধিকা নিত্যকৃষ্ণ পত্নী। রায়ান নামক গোপ যাকে বিবাহ করেছিলেন, তিনি হলেন রাধিকার অংশ ‘ছায়া-রাধা’। শাস্ত্রে উল্লেখ আছে- অতীতে দ্বাদশাব্দে তু দৃষ্টা তাং নবযৌবনাম ।। সার্দ্ধং রায়াণ বৈশ্যেন তৎসম্বন্ধং চকার সঃ। ছায়াৎ সংস্থাপ্য তদ্দেহে সান্তর্দ্ধানং চকার হ।। বভূব তস্য বৈশ্যস্য বিবাহশ্ছায়য়া সহ । [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, অধ্যায় ৪৯, শ্লোক ৩৭-৩৯ ] বঙ্গানুবাদ: শ্রীমতি রাধিকার আবির্ভাবের দ্বাদশবর্ষ অতীত হলে বৃষভানু স্বীয় কন্যা রাধিকাকে নবনৌবনা দেখে রায়াণ বৈশ্যের সাথে তাঁর বিবাহ সম্বন্ধ স্থির করলেন। সম্বন্ধ স্থির হলে শ্রীমতী স্বীয় দেহে ছায়া মাত্র সংস্থাপন করে অর্থাৎ তিনি ছায়া-রাধা প্রকট করে স্বয়ং অন্তর্হিতা হলেন । অতঃপর সেই ছায়ারূপিণী রাধিকার সাথে রায়াণের বিবাহ হলো।    বৃষভানু আঙ্গিনায় সংগঠিত এ বিবাহের সবিস্তার বর্ণনা ব্রহ্মান্ড মহাপুরাণের উত্তরখন্ডের (উত্তমাখন্ডে) রাধাহৃদয়াখ্যান ভাগে বর্ণিত হয়েছে, যা সংক্ষেপে নিম্নে বর্ণিত হলো- ৭ম মন্বন্তরের ২৮ তম দ্বাপর যুগে শ্রীমতি রাধারাণীর বয়স যখন ১২ বছর হয়, তখন রাজা বৃষভানু আয়ান নামক এক গোপের সাথে রাধিকার বিবাহ ঠিক করেন। কিন্তু শ্রীমতি রাধারাণীর সে বিবাহে মত ছিলো না, তাই তিনি সহস্র গোপীদের সাথে নিয়ে কূলদেবী কাত্যায়নীর ব্রতের ছল করে শ্রীহরির তপস্যা করতে থাকেন, যেন শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে লাভ করেন। কখনো দিনে ১ বেলা আহার করে, কখনী বা রাত্রিতে একাহার করে, কখনো বা ফল কিংবা দুগ্ধমাত্র গ্রহণ করে, কখনো বা কেবল জল বা পত্ররস গ্রহণ করে তিনি বহু দিবস কঠোর তপস্যা করতে লাগলেন৷ তাঁর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে স্বয়ং শ্রীহরি প্রকট হয়ে রাধিকার সম্মুখে আসলে শ্রীমতি রাধিকা কৃষ্ণকে পতিরূপে বর চান। কৃষ্ণ তখন তাকে বলেন, ‘আয়ান নামক গোপ প্রকৃতপক্ষে শ্রীকৃষ্ণেরই অংশাবতার যে কিনা পূর্বজন্মে অভিমুন্ন্য নামক যোগীরূপে নারায়ণের তপস্যা করে লক্ষ্মীকে পত্নীরূপে চেয়েছিলেন। তখন ভক্তবৎসল ভগবান তাকে বর দিয়েছিলেন, পরজন্মে লক্ষ্মী ঠিকই তার গৃহে বধূরূপে থাকবে, কিন্তু নপুংসকতা প্রাপ্তি হেতু সে লক্ষ্মীর সাথে কোনরূপ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না।’ তাই শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে বললেন, তিনি যেন আয়ানকে বিবাহ করেন।  আয়ান যে শ্রীকৃষ্ণের অংশাবতার ছিলো, সে সম্পর্কে শাস্ত্রীয় প্রমাণ হলো- কৃষ্ণস্তু কলয়া যজ্ঞে জটিলায়াং প্রভাসতঃ । তিলকো দুর্ম্মদশ্চাপি আয়ানাবরজৌ সুতৌ ॥ [ ব্রহ্মান্ডপুরাণ, উত্তরভাগ, রাধাহৃদয়াখ্যান, অধ্যায় ০৮, শ্লোক ১১৮ ] বঙ্গানুবাদ: শ্রীকৃষ্ণ নিজের অংশকলাতে জটিলাগর্ভে জন্মগ্রহণ করেন, তাহার নাম আয়ান। আয়ানের জ্যৈষ্ঠ তিলক ও দুর্ম্ম নামে জটিলা অপর দুই পুত্র প্রসব করেন। সে যাই হোক, কৃষ্ণের কথা শুণে পূর্ণশক্তি রাধিকা বললেন, আয়ান শ্রীকৃষ্ণের অংশ হতে পারে, কিন্তু পূর্ণশক্তিমান কৃষ্ণ ব্যতীত অনয় কেউ তাকে বিবাহ করার যোগ্যতা রাখে না। তাই তিনি অন্য কাউকে বিবাহ করবেন না, প্রয়োজনে তিনি গলায় দড়ি দিবেন। তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এক উপায় করলেন, যেন শ্রীমতি রাধিকার ইচ্ছাও পূর্ণ হয় এবং অভিমুন্ন্য যোগীকে দেওয়া বরের মান রক্ষিত হয়। তিনি রাধিকাকে বর দিলেন-  শ্রীভগবানুবাচ— উপায়ন্তে প্রবক্ষ্যামি মানসোত্তাপনাশনং। তদুদ্বাহোৎসব প্রেক্ষা সিদ্ধার্থং মাতুলগৃহং।। মাত্রা গমিষ্যেঁ তদনু মাতুলাঙ্ক গতোস্ম্যহং।।৬৪।। আয়াস্যে ত্বৎ পিতুর্গেহং ক্রোড়গো মাতুলস্যহং। তং দ্রংশয়িত্বা দায়ানং পুং স্ত্বাৎ কৈতব মাতুলং।।৬৫।। [ ব্রহ্মান্ডপুরাণ, উত্তরভাগ, রাধাহৃদয়াখ্যান, অধ্যায় ১৩, শ্লোক ৬৪,৬৫ ] বঙ্গানুবাদ: ভগবান্ শ্রীরাধাকে এই কথা কহিলেন- হে রাধে! পূৰ্ব্ব বাক্য কদাচ মিথ্যা হইবে না। এক্ষণে তোমার মনের উত্তাপনাশনে যে উপায় আমি বলি তাহা তুমি শ্রবণ কর। আমার মাতুল আয়ান, তাহার বিবাহ মহোৎসব দেখিবার নিমিত্ত মাতা যশোদার সহিত আমি মাতুলগৃহে গমন করিব, তখন মাতার ক্রোড় হইতে মাতুলের অদ্ধগত হইব। হে রাধে! আমি বিবাহকালে তোমার পিতা বৃষভানুর ভবনে আগমন করিয়া মাতুল আয়ানের ক্রোড়স্থিত হয়ে আয়ানকে পুরুষত্ব হইতে নিবন্ধ করত নপুংসক করিব (এবং তোমাকে বিবাহ করিব)। শ্রীকৃষ্ণ হতে বরপ্রাপ্ত হয়ে রাধিকা পিতৃগৃহে ফিরে গেলেন। এরপর শ্রীমতি রাধিকার বয়স যখন ১৪ বছর হলো তখন ব্রজেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ নন্দগৃহে আবির্ভূত হন এবং একদা নন্দমহারাজের সাথে বৃন্দাবনে ভান্ডীরবনে গোচারণে গেলে সেখানে ব্রহ্মার পৌরহিত্যে সমস্ত দেবতার উপস্থিতিতে রাধাকৃষ্ণের গান্ধর্ব্ব বিবাহ সম্পন্ন হয় (পূর্ববর্তী লিখনিতে উক্ত গান্ধর্ব্ব বিবাহের বর্ণনা আছে, আগ্রহীগণ তা পড়ে নিবেন)। এরপর কোন এক সময় বৃষভানু মহারাজ বর্ষাণায় নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় নিজ কণ্যার বিবাহের আয়োজন করলেন এবং পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ মাতা যশোদার সাথে আপন মামা আয়ানের বিবাহে উপস্থিত হলেন। সে মনোহর বিবাহ আয়োজনে শ্রীকৃষ্ণ হঠাৎ কন্দন আরম্ভ করে বিবাহে উপবেশনরত মামা আয়ানের ক্রোড়ে উঠে গেলেন৷ ছোট শিশু হওয়ায় কেউ তাকে বাঁধা দেয় নি। এরপর বালক শ্রীকৃষ্ণ নিয়তির বিধান অনুসারে আয়ানকে নপুংসত্ব দান করলেন।    ততস্তাংচারু সৰ্ব্বাঙ্গীং বৃষোদিৎ সুস্তমীক্ষ্য সঃ। ধাঙক্ষায়ৈব পুরোডাশ মধ্বরে মাধবো রুষা ॥ আয়ানাঙ্কগ কৃষ্ণস্ত পুংস্তাদপনয়ং স্তদা ॥ ৩৩ দ্বিতীয়ং প্রকৃতিং তস্মা দায়ানায়া দদৎ ক্ষণাৎ যস‍্যেঙ্গিতৈ লয়ং যান্তি ব্ৰহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরাঃ ॥  তস্যা ৰিৰিৎসিতং কৰ্ম্ম কোবা বারায়তুং ক্ষমঃ॥৩৪ প্রিয়ায়া লিপ্সিতং যত্তু বিধায়োরুক্রমস্তদা। প্রসারিত করো বাঢ় মুবাচ তদনন্তরম্ ॥ ৩৫ সত্যস্তে দদত্তামু দক্ষিণা রত্নসঞ্চয়ম্ । নাজ্ঞানীত্তস্য তদ্বৃত্তং কিঞ্চিদ্ৰাত্মা তদানে ॥ ৩৬ [ ব্রহ্মান্ডপুরাণ, উত্তরখন্ড, রাধাহৃদয়্যাখানভাগ, ১৫।৩৩-৩৬ ] বঙ্গানুবাদ: যজ্ঞীয় ঘৃত কাককে প্রদান করার ন‍্যায় বৃষভানু সর্বাঙ্গসুন্দরী মনোহারিণী কন‍্যা, আয়ানকে দান করিতে ইচ্ছুক হলেন। যেহেতু আয়ান রাধারাণীর অযোগ্য তাই আয়ান ক্রোড়স্থিত শ্রীকৃষ্ণ তার পুরুষার্থহরণ করলেন অর্থাৎ আয়ানকে নপুংসকত্ব প্রদান করিলেন । কৃষ্ণের স্পর্শ মাত্র আয়ান যে নপুংসত্ব প্রাপ্ত হলো, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, কারণ সে কৰ্ম্ম ভগবত সম্বন্ধে বিচিত্র নয়, যেহেতু যে শ্রীকৃষ্ণের ইঙ্গিত মাত্রে সৃষ্টি স্থিতি লয়কর্ত্তা ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরেরও লয় হয়, সে শ্রীকৃষ্ণের অকরণীয় কার্য্য জগতে কি আছে ? সেই অচিন্ত্য অব্যয় পরম পুরুষের বিবেচনা সিদ্ধবিধেয় কর্ম্ম নিবারণ করতে কে সমর্থ হয়?  উরুক্রম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বপ্রিয়া শ্রীমতী রাধিকার মনোভিলষিত যে প্রার্থনা তাহা সম্পূর্ণ করে আয়ানকে পশ্চাতে রেখে আপনার দক্ষিণহস্ত প্রসারিত করে কন‍্যারত্নের পাণিগ্রহণ পূর্বক ‘তদনন্তর বাঢ়ং ইতি’ প্রতিগ্রহ সূচক বাক্য বললেন।। হে মুনে! অঙ্গিরা! বৃষভানু রাজা কন্যাদান করে দক্ষিণা স্বরূপ বহু রত্ন সঞ্চর শ্রীকৃষ্ণ হস্তে প্রদান করলেন। শ্রীকৃষ্ণও স্বস্তি বলে তা নিলেন, কিন্তু এতোকিছু হওয়া সত্ত্বেও রাজা বৃষভানু কিঞ্চিৎ মাত্রও উপলব্ধি করিতে পারিলেন না যে আয়ানের পরিবর্তে শ্রীকৃষ্ণের সাথে রাধিকার বিধিবৎ বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে।  ব্যাখানঃ এখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, শ্রীকৃষ্ণ আয়ানকে নপুংসকত্ব দান করেন এবং বৃষভানু রাজা রাধিকাকে আয়ানের নিকট সম্প্রদান করতে গেলে শ্রীকৃষ্ণ দক্ষিণ হাত বাড়িয়ে রাধিকার হস্ত গ্রহণ

বৈদিক শাস্ত্রে কোথায় ঈশ্বরের সাকারত্ব এবং মূর্তিপূজার উল্লেখ আছে?

মূর্তিপূজা Svadharmam

[বি:দ্রঃ- কতিপয় দল ঈশ্বরের সাকারত্ব ও মূর্তি পুজা অস্বীকার করার জন্যে বিভিন্ন ভাবগম্ভী দেখাবে। যেমন এই ভাষ্য বিকৃত আমাদের ভাষ্যই স্বীকৃত। তাদের জানিয়ে রাখি এই আর্টিকেলটিতে সম্পূর্ণ ৬০+ উপরে শাস্ত্রীয় প্রমাণ সহ দেওয়া হয়েছে সেও একটি শাস্ত্র থেকে নয়, একাধিক শাস্ত্র থেকে (ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ, উপনিষদ, ব্রাহ্মণ, সংহিতা, ইতিহাস, নীতিশাস্ত্র, অন্যান্য অনুগামী শাস্ত্র)।]  বেদে ঈশ্বরকে সাকার বলা হয়েছে। আর আমরা তো জানি, দেবতারা সাকার। সুতারাং বেদ শাস্ত্রে যে ঈশ্বর এবং দেবতাদের শ্রীমূর্তি বা শ্রীবিগ্রহকে আরাধনা বা পূজা করার বিধান প্রদত্ত আছে, এটিই স্বাভাবিক। যদিও বেদ এবং অন্যন্যা সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে পরমেশ্বর ভগবানের সুন্দর অপ্রাকৃত দেহ বিদ্যমান, কিন্তু আমরা সে অপ্রাকৃত দেহ প্রাকৃত চক্ষু দিয়ে দেখতে পাব না।তার জন্য চিন্ময় বা অপ্রাকৃত চক্ষু প্রয়োজন।তাই বেদে পরমেশ্বর ভগবান এবং দেবতাদের শ্রীমূর্তি/ শ্রীবিগ্রহ নির্মান করে, উপযুক্ত মন্ত্রের মাধ্যমে অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে, সে মুর্তিতে ভগবান ও দেবতা অধিষ্ঠান হয়েছেন,এরুপ চিন্তা করে তাদের পূজা ও বন্দনা করার নির্দেশ প্রদত্ত হয়েছে। ১। ঋগ্বেদ থেকে প্রমাণ~ इ॒दं विष्णु॒र्वि च॑क्रमे त्रे॒धा नि द॑धे प॒दम्। समू॑ळ्हमस्य पांसु॒रे ॥ ইদং বিষ্ণুর্বি চক্রমে ত্রেধা নিদধে পদং। সমূলহমস্য পাংসুওে॥ – [ঋগ্বেদ ১/ ২২/ ১৭] অর্থাৎ, “বিষ্ণু এ জগৎ পরিক্রমা করেছিলেন, তিন প্রকার পদবিক্ষেপ করেছিলেন, তাঁর ধুলিযুক্ত পদে জগৎ আবৃত হয়েছিল।” त्रीणि॑ प॒दा वि च॑क्रमे॒ विष्णु॑र्गो॒पा अदा॑भ्यः। अतो॒ धर्मा॑णि धा॒रय॑न् ॥ ত্রীণি পদা বি চক্রমে বিষ্ণু র্গোপা অদাভ্যাঃ। অতো ধর্মাণি ধারয়ন্॥ – [ঋগ্বেদ ১/ ২২/১৮] অর্থাৎ, “বিষ্ণু রক্ষক, তাঁকে কেহ আঘাত করতে পারে না, তিনি ধর্ম সমুদয় ধারণ করে তিন পদ পরিক্রমা করেছিলেন।” तद्विष्णो॑: पर॒मं प॒दं सदा॑ पश्यन्ति सू॒रय॑:। दि॒वी॑व॒ चक्षु॒रात॑तम् ॥ তদ্বিষ্ণো পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ। দিবীব চক্ষুরাততম্॥ – [ঋগ্বেদ ১/২২/২০] অর্থাৎ, “আকাশে সর্বতো বিচারী যে চক্ষু যেরূপ দৃষ্টি করে, বিদ্বানেরা বিষ্ণুর পরমপদ সেরূপ দৃষ্টি করেন।” तद्विप्रा॑सो विप॒न्यवो॑ जागृ॒वांस॒: समि॑न्धते। विष्णो॒र्यत्प॑र॒मं प॒दम् ॥ তদ্বিপ্রাসো বিপন্যবো জাগৃবাংসঃ সমিন্ধতে। বিষ্ণো র্যৎ পরমং পদম॥ – [ঋগ্বেদ ১/২২/২১] অর্থাৎ, “স্তুতিবাদক ও সদাজাগরূক মেধাবী লোকেরা যে বিষ্ণুর পরমপদ প্রদীপ্ত করেন।” दि॒वश्चि॑दस्य वरि॒मा वि प॑प्रथ॒ इन्द्रं॒ न म॒ह्ना पृ॑थि॒वी च॒न प्रति॑ । भी॒मस्तुवि॑ष्माञ्चर्ष॒णिभ्य॑ आत॒पः शिशी॑ते॒ वज्रं॒ तेज॑से॒ न वंस॑गः ॥ divaś cid asya varimā vi papratha indraṃ na mahnā pṛthivī cana prati | bhīmas tuviṣmāñ carṣaṇibhya ātapaḥ śiśīte vajraṃ tejase na vaṃsagaḥ || – [ঋগবেদ:- ১/৫৫/১] অর্থাৎ, হে অধ্বর্যুগণ! তোমরা স্তুতিপ্রিয় মহাবীর ইন্দ্রের নিমিত্ত এবং বিষ্ণুর জন্য পানীয় সোমরস যত্নপূর্বক প্রস্তুত কর। তাঁর উভয়ে দুর্ধর্ষ ও মহীয়ান। তাঁরা মেঘের উপর ভ্রমণ করেন, যেন সুশিক্ষিত অশ্বের উপর আরোহণ করে ভ্রমণ করছেন। च॒तुर्भि॑: सा॒कं न॑व॒तिं च॒ नाम॑भिश्च॒क्रं न वृ॒त्तं व्यतीँ॑रवीविपत् । बृ॒हच्छ॑रीरो वि॒मिमा॑न॒ ऋक्व॑भि॒र्युवाकु॑मार॒: प्रत्ये॑त्याह॒वम् ॥ caturbhiḥ sākaṃ navatiṃ ca nāmabhiś cakraṃ na vṛttaṃ vyatīm̐r avīvipat | bṛhaccharīro vimimāna ṛkvabhir yuvākumāraḥ praty ety āhavam || – [ঋগ্বেদ:- ১/১৫৫/৬] অর্থাৎ, ঈশ্বরের বৃহৎ শরীর (बृहत्शरीरः । bṛhat-śarīraḥ |) আছে। यः पूर्व्याय वेधसे नवीयसे सुमज्जानये विष्णवे ददाशति । यो जातमस्य महतो महि ब्रवत्सेदु श्रवोभिर्युज्यं चिदभ्यसत् ॥ যঃ পূর্ব্যায় বেধসে নবীয়সে সুমজ্জানয়ে বিষ্ণবে দদাশতি। যঃ জাতমস্য মহতো মহি ব্রবৎ সেদূ শ্রবোভির্যূজ্যং চিদভ্যসৎ॥ yaḥ pūrvyāya vedhase navīyase sumajjānaye viṣṇave dadāśati | yo jātam asya mahato mahi bravat sed u śravobhir yujyaṃ cid abhy asat || – [ঋগ্বেদ :- ১/১৫৬/২] “যে মনুষ্য প্রাচীন, মেধাবী, নিত্য নতুন ও সূমজ্জানি বিষ্ণুকে হব্য প্রদান করেন; যিনি মহানুভব বিষ্ণুর পূজনীয় জন্ম (কথা) কীর্তন করেন, তিনিই যুজ্য (ভগবানের ধাম) প্রাপ্ত হন। অর্থাৎ, তিনি জন্ম নেন (यः । जातम् । अस्य । yaḥ | jātam | asya |)। प॒रो मात्र॑या त॒न्वा॑ वृधान॒ न ते॑ महि॒त्वमन्व॑श्नुवन्ति । उ॒भे ते॑ विद्म॒ रज॑सी पृथि॒व्या विष्णो॑ देव॒ त्वं प॑र॒मस्य॑ वित्से ॥ পরো মাত্রয়া তন্বা বৃধান ন তে মহিত্বমন্বশ্নুবন্তি। উভে তে বিদ্ম রজসী পৃথিব্যা বিষ্ণো দেব ত্বং পরমস্য বিৎসে॥ – [ঋগ্বেদ ৭/৯৯/১] অর্থাৎ, “হে বিষ্ণু, তুমি মাত্রার অতীত শরীরে বর্ধমান হলে তোমার মহিমা কেউ অনুব্যাপ্ত করতে পারে না, পৃথিবী হতে আরম্ভ করে উভয় লোক আমরা জানি, কিন্তু তুমিই কেবল হে দেব, পরমলোক অবগত আছ।” नू मर्तो॑ दयते सनि॒ष्यन्यो विष्ण॑व उरुगा॒याय॒ दाश॑त् । प्र यः स॒त्राचा॒ मन॑सा॒ यजा॑त ए॒ताव॑न्तं॒ नर्य॑मा॒विवा॑सात् ॥ নূ মর্তো দয়তে সনিষ্যন্যো বিষ্ণব উরুগায়ায় দাশ। প্র যঃ সত্রাচা মনসা যজাত এতাবন্তং নর্যমাবিবাসাৎ।। nū marto dayate saniṣyan yo viṣṇava urugāyāya dāśat | pra yaḥ satrācā manasā yajāta etāvantaṃ naryam āvivāsāt || – [ঋগবেদ:-৭/১০০/১] অর্থাৎ, যিনি বহুলোকের কীর্তনীয় বিষ্ণুকে হব্য দান করেন, যিনি যুগপৎ উচ্চারিত স্তোত্রের দ্বারা পূজা করেন এবং মনুষ্যগণের হিতকর বিষ্ণুর পরিচর্যা করেন সে মর্ত্যধন ইচ্ছা করে শীঘ্র প্রাপ্ত হন। বিশ্লেষণ: যদি বিগ্রহ বা শ্রীমূর্তি পূজা বেদবিহিত না হত,তাহলে এ মন্ত্রে পূজা,পরিচর্যার প্রসঙ্গই আসতো না। अर्च॑त॒ प्रार्च॑त॒ प्रिय॑मेधासो॒ अर्च॑त । अर्च॑न्तु पुत्र॒का उ॒त पुरं॒ न धृ॒ष्ण्व॑र्चत ॥ অচর্ত প্রার্চত প্রিয়মেধসো অচর্ত। অচন্তু পুত্রকা উত পুরং ন ধৃঞ্চবচর্ত।। arcata prārcata priyamedhāso arcata | arcantu putrakā uta puraṃ na dhṛṣṇv arcata || – [ঋগবেদ:- ৮/৬৯/৮] অর্থাৎ, হে প্রিয়মেধগণ! তোমরা ইন্দ্রক অর্চনা কর। বিশেষরূপে অর্চনা কর, পুত্রগণ পুরবিদারীকে যেরূপ অর্চনা করে, সেরূপ ইন্দ্রের অর্চনা করুক। বিশ্লেষণ: বেদে ঈশ্বরকে ইন্দ্র বলা হয়েছে। বিগ্রহ আরাধনা বা শ্রীমুর্তি পূজা বেদবিহিত না হতো তবে উক্ত মন্ত্রে ইন্দ্রকে বিশেষ রূপে অর্চনা বা পূজা করার প্রসঙ্গ আসতো না। কারন নিরাকার ঈশ্বরকে কখনো পূজা করার কথা শাস্ত্রে বলা হয় না। সুতারাং মুর্তি পূজা বেদবিহিত। विश्वतश्चक्षुरुत विश्वतोमुखो विश्वतोबाहुरुत विश्वतस्पात् । सं बाहुभ्यां धमति सं पतत्रैर्द्यावाभूमी जनयन्देव एकः ॥ viśvataścakṣur uta viśvatomukho viśvatobāhur uta viśvataspāt | sam bāhubhyāṃ dhamati sam patatrair dyāvābhūmī janayan deva ekaḥ || – [ঋগ্বেদ:- ১০/৮১/৩] অর্থাৎ, সর্বত্র তার হাত, পা, মূখ, চোখ (वि॒श्वत॑श्चक्षुरु॒त वि॒श्वतो॑मुखो वि॒श्वतो॑बाहुरु॒त वि॒श्वत॑स्पात् ।)। स॒हस्र॑शीर्षा॒ पुरु॑षः सहस्रा॒क्षः स॒हस्र॑पात्। स भूमिं॑ वि॒श्वतो॑ वृ॒त्वात्य॑तिष्ठद्दशाङ्गु॒लम् ॥ সহস্রাশীর্ষা পুরুষাঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রাপাৎ। স ভূমিং বিশ্বতো বৃহাত্যতিষ্ঠদ্দশাঙ্গুলম্ ॥ – [ঋগ্বেদ১০/৯০/১] অর্থাৎ, “পুরুষের সহস্র মস্তক, সহস্র চক্ষু ও সহস্র চরণ।…” कासी॑त्प्र॒मा प्र॑ति॒मा किं नि॒दान॒माज्यं॒ किमा॑सीत्परि॒धिः क आ॑सीत् । छन्द॒: किमा॑सी॒त्प्रउ॑गं॒ किमु॒क्थं यद्दे॒वा दे॒वमय॑जन्त॒ विश्वे॑ ॥ কাসীৎপ্রমা প্রতিমা কিং নিদানমাজ্যং কিমাসীৎপরিধিঃ ক আসীৎ। ছন্দঃ কিমাসীৎ প্রউগং কিমুকথং যদ্দেবা দেবমযজন্ত বিশ্বে।। kāsīt pramā pratimā kiṃ nidānam ājyaṃ kim āsīt paridhiḥ ka āsīt | chandaḥ kim āsīt praügaṃ kim ukthaṃ yad devā devam ayajanta viśve || – [ ঋগ্বেদ ১০/১৩০/৩ ] অর্থাৎ, যে কালে সকল দেবতা দেবপূজা করলেন তখন তাদের অনুষ্ঠিত যজ্ঞের পরিমাণ কি ছিল? দেব মূর্তি বা কি ছিল? সংকল্প কি ছিল? ঘৃত কি ছিল? পরিধি অর্থাৎ যজ্ঞস্থানের চতুর্দিকের বৃত্তি স্বরূপ সীমা বন্ধনই বা কি ছিল? ছন্দ প্রয়োগই বা কি ছিল? বিশ্লেষণ: উক্ত মন্ত্রে মন্ত্র দ্রষ্টা ঋষি বর্তমানের কথা অনুধাবন করে পূর্বের অবস্থা বুঝার জন্য প্রশ্ন করেছেন। এই মন্ত্রে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষির সময় দেব মূর্তি বিদ্যমান ছিল এবং তাহার পূজাও করা হতো।এ বেদ মন্ত্র থেকে বুঝা যায় দেবতাদের শ্রীমূর্তির পূজা বেদবিহিত। ক্ষীরেণ স্নাপিতা দুর্গা চন্দনেনানুলেপিতা।

আমরা কেন সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ করব? 

20240627_071023

♦অসাবি দেবং গোঋজীকমন্ধো ন্যস্মিন্নিন্দ্রো জনুষেমুবোচ। বোধামসি ত্বা হয়র্শ্ব য়জ্ঞৈবোধা ন স্তোমমন্ধসো মদেষু॥ (সামবেদ ৩১৩) অথবা (সামবেদ ৯/৩/১) 🍎সরলার্থঃ আহার সেটিই উত্তম যা কিনা উৎপাদন করা হয়েছে। আহার ভূমিমাতা থেকে উৎপন্ন শস্যাদিরই করা উচিত, সাথে গোদুগ্ধ। এই আহারই সাত্ত্বিক ও দৈবী সম্পত্তির জন্মদাতা। এই সাত্ত্বিক ভোজনে নিশ্চিতভাবেই, স্বভাবতই ইন্দ্রিয়সমূহের শাসক হওয়া যায়, দাস নয়। অর্থাৎ সাত্ত্বিক ভোজন দ্বারা ইন্দ্রিয়সমূহকে বশীভূত করা যায়। পক্ষান্তরে রাজসিক ও তামসিক আহার ইন্দ্রিয়ের দাসত্বের কারণ। প্রভু উপদেশ দিচ্ছেন শীঘ্রতাযুক্ত ইন্দ্রিয়রূপ অশ্বযুক্ত মানব ! তোমাকে যজ্ঞসমূহ দ্বারা জ্ঞানযুক্ত করি। ভক্ত বলছেন, সাত্ত্বিক আহারের আনন্দে বিহ্বলিত আমাদের স্তুতি সমূহকেও জ্ঞাত হও। অর্থাৎ, সাত্ত্বিক আহারী মানব প্রভুকে বিস্মৃত হয় না। বরং সর্বদা স্মরণ করে। ★ব্রীহিমন্নং যবমত্তমথো মাষমথো তিলম । এষ বাং ভাগো নিহিতো রত্নেধেয়ায় দন্তৌ মা হিংসিষ্ট পিতরং মাতরং চ।। (অথর্ববেদ ৬।১৪০।২) — হে দন্ত! অন্ন খাও যব খাও মাষ কালাই এবং তিল খাও তোমার এই ভাগ উত্তম পদার্থ ধারনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে হে দন্ত! পিতা ও মাতাকে হিংসিত করো না [মাংসাহার থেকে দূরে থাকো] এবং বেদ মন্ত্রে সেই পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে যে, আমাদের দন্ত যেন ব্যাঘের ন্যায় না হয়। কারন বাঘের দন্ত সর্বদা মাংসাহার করে থাকে। সে জন্য আমাদের দন্ত কে ব্যাঘের ন্যায় না করে কল্যাণকারী করো। ★যৌ ব্যাঘ্রাববরূঢৌ জিঘত্সতঃ পিতরং মাতরং চ। তৌ দন্ত ব্রহ্মণস্পতে শিবৌ কৃণু জাতবেদঃ।। (অথর্ববেদ ৬।১৪০।১) — যে দন্ত ব্যাঘ্রের ন্যায় পিতা ও মাতাকে খাওয়ার জন্য চেষ্টা করে সেই দাঁত কে হে সর্বব্যাপক জ্ঞানের পরিপালক কল্যাণকারী করো। অর্থাৎ বেদ আমাদের সর্বদাই কল্যাণকারী হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। যাতে করে আমাদের কাছ থেকে কেউ যেন কষ্ট না পায়। আমরা যেন নিরীহ প্রাণীদের হিংসা না করি। কারন, “অহিংসা পরম ধর্ম ” (মহাঃ আদিঃ অঃ ১১, শ্লোঃ ১৩) এবং “হিংসা অধর্মস্তথহিত” (মহাঃ শান্তিঃ ২৭২, শ্লোক ১৮) হিংসা অধর্ম এবং অহিতকর। “প্রাণিনামবধস্তাত সর্বজায়ান্” (মহাঃ কর্ণ পর্ব, অঃ ২৬৯, শ্লোক ২৩) অর্থাৎ প্রাণীদের বধ না করাই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। ★জীবিতুং যঃ স্বযং চেচ্ছেত্ কথং সোন্যং প্রঘাতয়েত। যদ যদাৎমসি চেচ্ছেত তত পরস্যাপি চিন্তয়েত।। (মহাঃ শান্তি পর্ব, অঃ ২৫৯, শ্লোক ২২) উপরিউক্ত মন্ত্রগুলি দ্বারা এটা স্পষ্ট যে, বেদ কোন নির্দোষ পশু কে হত্যার উপদেশ করে নি।বরং উপদেশ করেছে, পশুস্ত্রাঁয়েথাঙ (যজুর্বেদ ৭/৬/১১) অর্থাৎ পশুদের রক্ষা করো এবং তাদের বর্ধিত করো।কারন বেদ সর্বদাই কল্যাণময়। ♦মহাভারতের_অনুশাসন_পর্বের, ১০০তম অধ্যায়ের, ৩৭, ৪১, ৪৩, ৪৭, ৪৮, ৪৯ নং শ্লোকে #পিতামহ_ভীষ্ম শরশয্যায় শায়িত অবস্থায় #যুধিষ্ঠিরকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন- “যারা সৌন্দর্য, সাস্থ্য, বল, আয়ু, বুদ্ধি, স্মরণ শক্তি চান তারা মাংস আহার ত্যাগ করেন। মনু বলেছেন, যিনি মাংস আহার ও পশু হত্যা করেন না তিনি সর্বজীবের মিত্র ও বিশ্বাসের পাত্র। নারদ বলেছেন, যে পরের মাংস খেয়ে নিজের পেশী বৃদ্ধি করেন সে অশেষ কষ্ট ভোগ করে। মাংসাশী লোক যদি মাংসাহার ত্যাগ করে তবে সে যে ফল পায় বেদ অধ্যায়ন ও সকল যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেও কেউ সেই ফল পায় না। মাংস ভোজনে আসক্তি জম্মালে তা ত্যাগ করা অতীব কঠিন। মাংস বর্জন ব্রত পালন করলে সকল প্রাণী অভয় লাভ করে। যদি মাংসভোজী না থাকে তবে কেউ পশুহনন করে না, মাংসখাদকের জন্যই পশুঘাতক হয়। যে পরমাংস দ্বারা নিজ মাংস বৃদ্ধি করতে চায় তার চেয়ে ক্ষুদ্র আর নৃশংস কেউ নেই!” মনুসংহিতায় মাছ-মাংস ভক্ষণে কি ভয়ংকর পাপ ও শাস্তি এবং আমিষাহার বর্জনে কি পুন্য লাভ হয় তার সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে- মনুসংহিতায় মাছ ভক্ষণ নিষিদ্ধঃ ★যো যস্য মাংসমশ্লানি স তন্মাংসাদ উচ্যতে।  মৎস্যাদঃ সর্বমাংসাদস্তম্মান্মত্‍স্যান্ বিবর্জয়েৎ।।  🔴[ মনুসংহিতা ৫/১৫ ]🔴 ~ যে যার মাংস খায় তাকে ‘তন্মাংসাদ’ অর্থাৎ তার মাংসভোজী বলে (যেমন, বিড়াল ইঁদুরের মাংস খায়, তাই বিড়াল ‘মূষিকাদ’, নকুল অর্থাৎ বেজী ‘সর্পাদ’); কিন্তু যে ‘মৎস্যাদ’ অর্থাৎ মাছ-ভোজী, তাকে সর্বমাংসভোজী বলা চলে। (এমন কি তাকে ‘গো-মাংসদ’ও বলা যায়)। অতএব মৎস্য-ভোজনে যেহেতু সমস্ত প্রকার মাংস ভক্ষণের সমান বিষম পাপ হয়, তাই সর্বতভাবে মৎস্যভক্ষণ করা থেকে বিরত থাকবে ।। মনুসংহিতায় মাংস ভক্ষণে পাপ ও ভয়ংকর শাস্তি ★মাংসভোজীরা মৃত্যুর পর যাদৃশ্য দুঃখসহ দুঃখরাশি ভোগ করে।(মনু সংহিতা ৫/৩৪) ★যে ব্যক্তি হিংসাদিশূণ্য হরিণ এবং হরিণের ন্যায় হিংসাশূণ্য অন্যান্য পশুকে আপন সুখের জন্য হত্যা করে সে কি জীবিত অবস্থায়, কি পরলোকে উভয়েই সুখ পায় না।(মনুসংহিতা ৫/৪৫) ★যিনি প্রাণীদিগকে বন্ধন-ধাদি দ্বারা কষ্ট দিতে ইচ্ছা করেন না ও যিনি সকলের হিতকামী, তিনি অত্যন্ত সুখভোগ করেন। (মনুসংহিতা৫/৪৬) ★যিনি কাহাকেও হিংসা করেন না, তিনি যা ধ্যান করেন, যে কিছু ধর্মের অনুষ্ঠান করেন,এবং যে বিষয়ে মনােনিবেশ করেন—সেই সমুদয়ই অনায়াসে লাভ করিয়া থাকেন। (মনুসংহিতা ৫/ ৪৭) ★প্রাণি হিংসা না করিলে মাংস উতপন্ন হয় ,প্রাণিবধও নরকের কারণ,অতএব মাংস ভক্ষন করবে না(মনুসংহিতা ৫/৪৮) ★শুক্রশোশিত দ্বারা মাংসের উতপত্তি।অতএব ইহা ঘৃণিত; বধ ও বন্ধন নিষ্ঠুর হৃদয়ের কর্ম;ইহা নিশ্চিত করিয়া সাধুরা বিহিত মাংস ভক্ষনেও হইতেও নিবৃত্ত হয়;অবৈধ মাংস ভক্ষনের কথা আর কিই বা বলিব?(মনুসংহিতা ৫/৪৯) ★যিনি পশুবধ করতে অনুমতি দেন, যিনি অস্ত্রাদির দ্বারা পশুর অঙ্গপ্রতঙ্গ খন্ড খন্ড করেন, যিনি পশু বধ করেন, যিনি সেই প্রাণীর মাংস ক্রয় করে, যিনি তা বিক্রয় করেন, যিনি মাংস পাক করেন, যিনি পরিবেশন করেন এবং যিনি মাংস ভক্ষণ করেন তারা সকলেই সেই পশুর ঘাতক রূপে অভিহিত হন ৷ (মনুসংহিতা ৫/৫১) ★যে ব্যক্তি শতবর্ষ ব্যাপিয়া বৎসর বৎসর অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন এবং যে ব্যক্তি যাবজ্জীবন মাংস ভোজন না করেন,এই উভয়েরই পূর্ণফল সমান। (মনুসংহিতা ৫/৫৩) ★ইহলোকে আমি যার মাংস ভক্ষন করিতেছি,পরলোকে সে আমাকে ভক্ষন করবে।পন্ডিতেরা মাংস (মাং-আমায়,সঃ-ভক্ষন করিবে) শব্দের এইরূপ ব্যাখা করেছেন।(মনুসংহিতা ৫/৫৫) শ্রী বিষ্ণুপুরাণে জীবহত্যা ও  মাংসাহারের শাস্তির বর্ণনা:  ১) ভ্রুণহত‍্যাকারী, গো-বধকারী শ্বাসরুদ্ধকর রোধ নরকে যায়। ♦[বিষ্ণুপুরাণ ২য় খন্ড, ৬ষ্ঠ অধ্যায়, শ্লোক ৭]🏵 ২) পশুপাখি পালন করে তার মাংস ভক্ষণ করে জীবনধারণকারী, মাংস বিক্রেতা পূয়বহ নরকে মলভক্ষণ করে। ♦[বিষ্ণুপুরাণ ২য় খন্ড, ৬ষ্ঠ অধ্যায়, শ্লোক ২০-২১]🏵 ৩) ধীবর বা জেলেরা রুধিরান্ধ নরকে যায়। ♦[বিষ্ণুপুরাণ ২য় খন্ড, ৬ষ্ঠ অধ্যায়, শ্লোক ২২]🏵 ৪) মেষ (ভেড়া )পালন করে ভক্ষণকারী, পশুপাখি শিকারীরা বহ্নিজাল নরকে অগ্নিদগ্ধ হয়। ♦[বিষ্ণুপুরাণ ২য় খন্ড, ৬ষ্ঠ অধ্যায়, শ্লোক ২৬]🏵 ৫)”যদি যজ্ঞে বলিদান করলে পশুর স্বর্গপ্রাপ্তি হয়, তাহলে যজমান তাঁর পিতাকে কেন মেরে ফেলেন না?” ♦[বিষ্ণুপুরাণ, ৩/১৮/২৮]🔴 ৬)স্বর্গার্থং যদি বো বাঞ্ছা নির্বাণার্থমথাসুরা।   তদলং পশুঘাতাদিদুষ্টধর্মৈৰ্নিবোধত৷৷  ♦( বিষ্ণুপুরাণ ৩।১৮।১৭)🔴 অনুবাদ:  হে অসুরগণ ! যদি তোমাদের স্বর্গ বা মোক্ষের আকাঙ্ক্ষা থাকে, তাহলে পশুহিংসা ইত্যাদি দুষ্কর্ম ত্যাগ করে বোধ প্রাপ্ত করো৷৷ এবার আপনারাই বিবেচনা করুন যে কোন অবস্থাতেই বলি বা পশু হত্যা করা বা তাদের মাংসাহার করা উচিত কি না?

কেন ‘ব্রহ্মসংহিতা’কে  প্রামানিক বৈদিক শাস্ত্র বলা হয়??

maxresdefault

আজকাল কিছু শাস্ত্রজ্ঞানহীন ব্যাক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে যে ব্রহ্মসংহিতা  নাকি কোন প্রামাণিক  শাস্ত্র নয়।প্রকৃত অর্থে তাদের এ ধরনের মন্তব্য সনাতনী শাস্ত্র সমন্ধে তাদের মুর্খতার পরিচায়ক।আসুন আমরা শ্রীল ব্যাসদেবকৃত  অষ্টাদশ পুরানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান শাস্ত্র থেকে ব্রহ্মসংহিতার প্রামানিকতা জানার চেষ্ঠা করি। “এবং পুরানসংখ্যানাং চতুর্লক্ষমুদাহৃতম।  অষ্টাদশ পুরানানাং নাম চৈতদ্বিদুবুর্ধাঃ।।২১।।  এবঞ্চোপপুরাণামাষ্টাদশ প্রকীর্ত্তিতা। ইতিহাসো ভারতনঞ্চ বাল্মীকিকাব্যমেব চ।।২২।। পঞ্চকং পঞ্চরাত্রাণাং কৃষ্ণমাহাত্ম্যপূর্ব্বকম্। বশিষ্টং নারদীয়ঞ্চ কপিলং গৌতমীয়কম্।।২৩।। পরং সনৎকুমারীয়ৎ পঞ্চরাত্রঞ্চ পঞ্চকম্। পঞ্চমী সংহিতান্যঞ্চ কৃষ্ণভক্তিসমন্বিতা।।২৪।।    ব্রহ্মণশ্চ শিবস্যাপি প্রহ্লাদস্য তথৈব চ। গৌতমস্য কুমারস্য সংহিতাঃ পরিকীত্তির্তা।।” ২৫।। অনুবাদঃ পূর্বোক্ত ক্রমে অষ্টাদশ পুরানের নাম পন্ডিতগন বলেছেন।পুরানের ন্যায় অষ্টাদশ উপপুরান,ভারত,বাল্মিকী প্রণীত কাব্য ইতিহাস প্রকীর্তিত হয়েছে।শ্রীকৃষ্ণ মাহাত্ম্যপূ্র্ণ পাঁচটি পঞ্চরাত্র হল-বশিষ্ট,নারদ,কপিল,গৌতম এবং সনৎকুমার বিরচিত।ব্রহ্ম, শিব, প্রহ্লাদ, গৌতম এবং সনৎকুমার কর্তৃক কৃষ্ণভক্তি সমন্বিত পাঁচটি সংহিতা পরিকীর্তিত হয়েছে।  – ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানঃ শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ড, ১৩০/২১-২৫ উপরোক্ত ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানের শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ডের,১৩০ তম অধ্যায়ের ২১-২৪ নং শ্লোকে শ্রীল সূত গোস্বামী শৌনক ঋষিকে  অষ্টাদশ পুরান, অষ্টাদশ উপপুরান, ইতিহাস শাস্ত্র -মহাভারত, রামায়ন, বশিষ্ট,নারদ,কপিল,গৌতম এবং সনৎকুমারকৃত শ্রীকৃষ্ণ মাহাত্ম্যপূ্র্ণ পঞ্চরাত্র শাস্ত্রের কথা বর্ণনা করেন।  এবং পরিশেষে  ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান শাস্ত্রের শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ডের ১৩০ তম অধ্যায়ের ২৫ নং শ্লোকে স্পষ্টভাবে  ব্রহ্ম,শিব,প্রহ্লাদ,গৌতম এবং সনৎকুমারকৃত কৃষ্ণভক্তি সমন্বিত সংহিতা শাস্ত্রের কথা বর্ণনা করেন।সুতারাং শ্রীল সূত গৌস্বামী ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান শাস্ত্রের সংহিতা শাস্ত্রের মধ্যে কৃষ্ণভক্তি বিষয়ক শিবসংহিতা,প্রহ্রাদ সংহিতা,গৌতম সংহিতা,সনৎকুমার সংহিতার সাথে  ব্রহ্মসংহিতা শাস্ত্রের নাম উল্লেখ করেছেন।    সিদ্ধান্তশাস্ত্র নাহি ব্রহ্মাসংহিতার সম | গোবিন্দমহিমা জ্ঞানের পরম কারণ ॥ ২৩৯ ।। অল্পাক্ষরে কহে সিদ্ধান্ত অপার সকল। বৈষ্ণবশাস্ত্রমধ্যে অতি সার ॥ ২৪০ ।। দক্ষিণ ভারত পরিক্রমাকালে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ত্রিবাঙ্কুর জেলায় তিরুবত্তর গ্রামে অবস্থিত আদিকেশব মন্দির দর্শনে এসে সেখানে ভক্তদের সাথে ইষ্টগোষ্ঠী করছিলেন। তখন সেখানকার ভক্তরা তাকে জানায় ঠিক এই(গৌড়ীয়) সিদ্ধান্তই একটি গ্রন্থে লেখা আছে। এই বলে তারা ব্রহ্মসংহিতা গ্রন্থ দেখান। ব্রহ্মসংহিতার প্রতিটি শ্লোকে অল্প অক্ষরে অনেক সিদ্ধান্ত বর্ণনা রয়েছে দেখে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এই গ্রন্থটি লিখিয়ে নেন। সেই দিন চলি’ আইলা পয়স্বিনীতীরে। স্নান করি’ গেল আদিকেশব মন্দিরে ॥ ২৩৪ মহাভক্তগণসহ তাহা গোষ্ঠী কৈল। ব্রহ্মসংহিতাধ্যায়পুথি তাহা পাইল ॥ ২৩৭ পুঁথি পাঞা প্রভুর হৈল আনন্দ অপার । কম্পাশ্রু স্বেদ স্তম্ভ পুলক বিকার ॥ ২৩৮ (মধ্যলীলা ৯/২৩৪-২৩৮) এই ব্রহ্মসংহিতা গ্রন্থকে অনেকে কাল্পনিক গ্রন্থ বলে থাকেন। কিন্তু শ্রীমধবাচার্য্য তার ভাগবৎ তাৎপর্ধ্য নির্ণয় ও ব্রহ্মসূত্রভাষ্যে ব্রহ্মসংহিতা থেকে উদ্ধৃত করেছেন। তাই ব্রহ্মসংহিতা নামে একটি গ্রন্থ ছিল তা প্রমাণিত হয়। যা থেকে শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভু ৫ম অধ্যায়টি লিখে আনেন।   ভাঃ১১/১১/৫ শ্লোকের টীকায় শ্রীআনন্দতীর্থ মধ্বাচার্য্যপাদ শ্রীব্রহ্মসংহিতা থেকে উদ্ধৃত করেছেন। বদ্ধজীব সম্পর্কে ব্ৰহ্ম সংহিতায় বলা হয়েছে বদ্ধা জীবা ইমে সর্বে পূর্ববন্ধসমন্বয়াৎ। নিত্যমুক্তত্বতো বিষ্ণুমুক্তনামা সদোদিতঃ। অবদ্ধত্বাদমোক্ষোঽপি দীপ্যতেঽসৌ রবিথা।। ইতি ব্রহ্মসংহিতায়াম্‌।। (ভাগবত তাৎপৰ্য্য নির্ণয় গোবিন্দাচার্য্য সংস্করণ পৃঃ ৬৬৯) যত্রানবসরোঽন্যত্র পদং তত্র প্রতিষ্ঠিতম্। বাক্যঞ্চেতি সতাং নীতিঃ সাবকাশে ন তদ্ভবেৎ।। ইতি ব্রহ্মসংহিতায়াম।। অনুবাদ: যেখানে যে পদ এর অর্থ বাক্যের অভীষ্ট লক্ষ্য যে তাৎপর্য্যে সেই তাৎপর্য্যেই মানতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তবে অন্য অর্থ কল্পনা করতে হবে। ব্রহ্মসংহিতায় বলা হয়েছে। (ব্রহ্মসূত্রভাষ্য ১.১.১, গোবিন্দাচার্য্য সংস্করণ পৃঃ৫)   বৈশেষ্যা তদ্বাদস্তদ্বাদঃ ভাষ্য পার্থিবানাং শরীরাণামর্দ্ধেন পৃথিবী স্মৃতা। ইতরেঽর্দ্ধত্রিভাগিন্য আপস্তেজস্তু ভাগতঃ। ইতি সামান্যতো জ্ঞেয়ো ভেদশ্চ প্রতিপুরুষম্। স্বর্গাস্থানাং শরীরাণামর্দ্ধং তেজ উদাহৃতমিতি।। ইতি চ ব্রহ্মসংহিতায়াম।। অনুবাদ: পার্থিব শরীরে পৃথিবীর অর্দ্ধাংশ, অবশিষ্ট অর্দ্ধাংশের তিনভাগ জল, এবং এক ভাগ তেজ। এভাবে প্রতিপুরুষেই সামান্যতঃ ভুতবিভাগ জানতে হবে। স্বর্গস্থ শরীরে তেজ এর অর্দ্ধভাগ কথিত হয়। (ব্রহ্মসূত্রভাষ্য ২/৪/২২, গোবিন্দাচার্য্য সংস্করণ পৃঃ১১৬) সুতরাং, উপরোক্ত আলোচনায় ব্রহ্মসংহিতা একটি প্রামানিক সনাতনী বৈদিক শাস্ত্র। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানের উক্ত শ্লোকে ব্রহ্মসংহিতাকে কৃষ্ণভক্তি বিষয়ক শাস্ত্র বলা হয়েছে। আমরা যখন ব্রহ্মসংহিতা পড়ি তখন আমরা দেখতে পায়,ব্রহ্মসংহিতার প্রতিটি শ্লোক ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে গভীর ভাবে সম্পর্কযুক্ত। ईश्वर: परम: कृष्ण: सच्चिदानन्दविग्रह:     अनादिरादिर्गोविन्द: सर्वकारणकारणम्। “ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ।     অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্বকারণকারণম্।” – ব্রহ্মসংহিতা ৫/১ঃ ব্রহ্মা বিঃদ্রঃ – বৃহৎব্রহ্মসংহিতা বলে একটি গ্রন্থ পাওয়া যায় সেটি নারদপঞ্চরাত্রের অংশ। তাতে দশটি অধ্যায় আছে। এই গ্রন্থটি শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভূ সংগৃহীত ব্ৰহ্মসংহিতা নয়। মধ্বাচার্য্য উদ্ধৃত শ্লোকগুলি সেই গ্রন্থে পাওয়া যায়না। মধ্ব সম্প্রদায়ের প্রখ্যাত পন্ডিত গোবিন্দাচাৰ্য্য এই শ্লোকগুলিকে untraceable reference বলেছেন তাই শ্রীমধ্বাচার্য্য উদ্ধৃত শ্লোক গুলি সেই লুপ্ত গ্রন্থের ই অংশ যা থেকে শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভু ৫ম অধ্যায়টি লিখে আনেন। ।।হরে কৃষ্ণ।। ।।প্রনাম।। – অর্জুন সখা দাস – সদ্গুন মাধব দাস

অযোধ্যায় শ্রীরাম বিগ্রহ নাকি ভাষ্কর্য?!?

20240123_202849

মর্যাদা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীরামের বিগ্রহকে ভাষ্কর্য বলার দুঃসাহস করছে একদল তথাকথিত বেদবাদী পণ্ডিত!!! যারা দীর্ঘদিন থেকেই বেদের নাম করে কিছু মনগড়া ভাষ্যে দেখিয়ে সহজ সরলমনা সনাতনীদের মাথায় নিরাকারবাদ, নাস্তিক্যবাদ ঢুকিয়ে তাদের ধর্মবিমুখ করার পায়তারা করছে। যদিও এরা প্রকাশ্যে শ্রীরামবিগ্রহের ছবি পোস্ট করে, দূর্গা পূজায় শুভেচ্ছামূলক পোস্ট দিয়ে, জন্মাষ্টমীতে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে জনসমর্থন কুঁড়ায় কিন্তু আড়ালে সুকৌশলে ঠিকই তাদের নাস্তিক্য দর্শন প্রচার করে। এরই ধারাবাহিকতায় অযোধ্যায় ভগবান শ্রীরামের বিগ্রহকে সাধারণ ভাষ্কর্যের সঙ্গে তুলনা করে তাচ্ছিল্যভরে নানা ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট করতেও দ্বিধাবোধ করেনি তারা। অথচ বেদাদি শাস্ত্রে শ্রীবিগ্রহ আরাধনার যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এরা কিভাবে যে সাধারণ জনগণের চোখে ধুলা দেয় বোধগম্য নয়।   “আমি দেবলোকের উদ্দেশ্যে প্রতিমা তৈরি কারী শিল্পীকে নিযুক্ত করছি।“ (যজুর্বেদ: ৩০/১২) তাঁর মূর্তি কিভাবে সম্পন্ন বা নির্মান হবে, তার নির্দেশনা- “পাষাণ, মৃত্তিকা,  পাহাড়-পর্বত বালুক বনস্পতি, স্বর্ণ, রৌপ্য লৌহ, তামা সীসা দ্বারা আমার যজ্ঞ সম্পন্ন হউক ।“ (যজুর্বেদ: ১৮/১৩) সেই স্থানে তিঁনি অবস্থানও করেন- হে শুদ্ধসত্ত্ব, তুমি অনন্তস্বরূপ, ভগবানের শরীর সদৃশ, ভগবত সম্বন্ধযুক্ত স্থানে উপবেশন করো ।’’ (যজুর্বেদ: ৫/৩০)   रू॒पंरू॑पं॒ प्रति॑रूपो बभूव॒ तद॑स्य रू॒पं प्र॑ति॒चक्ष॑णाय। इन्द्रो॑ मा॒याभि॑: पुरु॒रूप॑ ईयते यु॒क्ता ह्य॑स्य॒ हर॑यः श॒ता दश॑॥ “রুপং রুপং প্রতিরুপো বভূব তদস্য রুপং প্রতিচক্ষণায়। ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরুপ ঈয়তে যুক্তা হ্যস্য হরয়ঃ শতা দশ।।” অনুবাদঃ ঈশ্বর (ইন্দ্র), বিভিন্ন রুপ বা দেহ ধারন করেন। এবং সে রুপ ধারন করে তিনি পৃথকভাবে প্রকাশিত হন।তিনি তার মায়া দ্বারা বিবিধ রুপ ধারন করে যজমানগণের নিকট উপস্থিত হন।কারন তার রথ  সহস্র অশ্ব সংযুক্ত(অনন্ত শক্তি), অথাৎ তিনি অসীম ক্ষমতার অধিকারী।  – ঋগ্বেদ  ৬/৪৭/১৮ नू मर्तो॑ दयते सनि॒ष्यन्यो विष्ण॑व उरुगा॒याय॒ दाश॑त्। प्र यः स॒त्राचा॒ मन॑सा॒ यजा॑त ए॒ताव॑न्तं॒ नर्य॑मा॒विवा॑सात्॥ nū marto dayate saniṣyan yo viṣṇava urugāyāya dāśat| pra yaḥ satrācā manasā yajāta etāvantaṃ naryam āvivāsāt|| “যিনি বহু লোকের কীর্তনীয় বিষ্ণুকে হব্য দান করেন,যিনি যুগপৎ উচ্চারিত স্তোত্রের দ্বারা তাকে পূজা করেন এবং মনুষ্যের হিতকর বিষ্ণুর পরিচর্যা করেন সে মর্ত্যধন  ইচ্ছা করে শীঘ্রই  প্রাপ্ত হন।” – (ঋকবেদঃ ৭/১০০/১)  अर्च॑त॒ प्रार्च॑त॒ प्रिय॑मेधासो॒ अर्च॑त। अर्च॑न्तु पुत्र॒का उ॒त पुरं॒ न धृ॒ष्ण्व॑र्चत॥ arcata prārcata priyamedhāso arcata| arcantu putrakā uta puraṃ na dhṛṣṇv arcata|| “হে প্রিয়মেধগণ! তোমরা ইন্দ্রক অর্চনা কর। বিশেষরূপে অর্চনা কর, পুত্রগণ পুরবিদারীকে যেরূপ অর্চনা করে, সেরূপ ইন্দ্রের অর্চনা করুক।” – [ঋগবেদ:- ৮/৬৯/৮] যদি বিগ্রহ বা শ্রীমূর্তি পূজা বেদবিহিত না হত,তাহলে এ মন্ত্রে পূজা,পরিচর্যার প্রসঙ্গই আসতো না।   যজুর্বেদের ১৩/৪১ নং মন্ত্রে বলা আছে, “সহসস্র প্রতিমাং বিশ্বরূপম।’’ অর্থাৎ, ঈশ্বর সহস্র রূপে বিশ্বজুড়ে আছেন । “তং যজ্ঞম্বর্হিষিপ্রৌক্ষংন্ন…..সাধ্যাঋষ্যশ্চ য়ে (যজুর্বেদ৩১/৯) এর নিরুক্ত শতপথ ১১/১/৩ দেখলে তার অর্থ এমন দাঁড়াবে যে- “সাধ্য দেবগণ এবং সনকাদি ঋষিগণ সৃষ্টির পূর্বে উৎপন্ন সেই যজ্ঞসাধনভূত বিরাট পুরুষের মানস যজ্ঞের সম্পন্নতার নিমিত্তে প্রোক্ষণ করেন এবং সেই বিরাট পুরুষের অবয়বেই যজ্ঞ সম্পাদন করেন।”  

মৃগয়ার উদ্দেশ্য কি? মাংসাহার নাকি লোক কল্যাণ?

448993340_494286626501762_9171595380647725788_n

আমাদের মধ্যে অনেকে ভেবে থাকেন, ক্ষত্রিয় রাজারা বুঝি পশুমাংস ভক্ষণের উদ্দেশ্যে মৃগয়া করতেন। এমনকি কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তিও পাওয়া যায় মাঝে মাঝে, যারা রামায়ণ/মহাভারত থেকে শ্রীরামচন্দ্র বা পান্ডবদের মৃগয়ার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে দাবী করে বসেন, তারাও নাকি মাংসভোজী ছিলেন! যারা এরূপ ভাবেন, তারা ‘ক্ষত্রিয়’ ও ‘ব্যাধ’ জাতির মধ্যকার পার্থক্য বুঝেন না। পশুশিকার করে পশুমাংস ভক্ষণ ও বিক্রি করা ব্যাধ(কসাই) জাতির কর্ম। এটি গর্হিত কর্ম, এ ধরনের নিন্দিত কর্মকারীদের অস্পৃশ্য গণ্য করা হতো। তাই এ সমস্ত ব্যাধ জাতিদের নগরীর মধ্যেও বসবাস করতে দেওয়া হতো না। নগরীর বাইরে বনের মধ্যে তাদের বাস করতে হতো। অপরদিকে ক্ষত্রিয়ের কর্ম উদ্দেশ্য মহৎ। সমস্ত মনুষ্য এবং জীবকূলের রক্ষা ক্ষত্রিয়ের ধর্ম। ধর্মার্থে মৃগয়া ক্ষত্রিয়ের কর্তব্য, কিন্তু মাংসাহারের জন্য মৃগয়ার বৈধতা নেই ক্ষত্রিয়ের। ভগবান শ্রীরামচন্দ্র স্বয়ং ক্ষত্রিয়ের মৃগয়া ধর্ম বর্ণনাকালে তা উল্লেখ করেছেন- রাজ্ঞাঞ্চ মৃগয়া ধর্ম্মে বিনা আমিষভোজনম্ ॥ [পদ্মপুরাণ:পাতালখন্ড/৭০।১৯৬ (নবভারত)] বঙ্গানুবাদঃ শ্রীরাম বললেন, ‘ধর্মার্থে রাজা কর্তৃক মৃগয়ার বিধান থাকলেও আমিষভক্ষণের জন্য মৃগয়ার বিধান নেই।’ Raghava said, “Hunting without eating the flesh (of the animal killed) is the rule in the hunting done by a king.” [Padma Purana, Patal Khand, 116/199, Motilal Banarasidass Press] প্রশ্ন-১: তাহলে প্রশ্ন উঠে, রাজারা যদি পশুমাংস আহারই না করবেন, তবে কিরূপ ধর্ম পালনের জন্য তারা মৃগয়া করতেন? উত্তরঃ মূলত লোক কল্যাণার্থে ৪টি কারণে ক্ষত্রিয়রা মৃগয়া করতেন- ১) রাজা কেবল কোন রাজ্যের বসবাসরত মানুষের অধিপতি নয়, সে রাজ্যের অন্যান্য জীব জন্তুদেরও অধিপতি। মানুষের মতো পশুপাখিদের মধ্যেও অন্তঃ ও আন্তঃ বিরোধ প্রায়ই দেখা যায়, যা প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্টের জন্য দায়ী হয়ে পড়ে। তাই রাজা মৃগয়া করে জীবজন্তদের মধ্যকার এরূপ দ্বন্দ্বের নিরশন করেন। দৃষ্টান্ত: বাল্মীকি রামায়ণের কিষ্কিন্ধাকান্ডের ১৮ নং সর্গে বর্ণিত আছে, বানর সাম্রাজ্য নিয়ে বালী ও সুগ্রীব নামক দুই বানরের মধ্যে যুদ্ধ হলে রামচন্দ্র মৃগয়া দ্বারা বালীকে বধ করে বানরকূলের অন্তঃদ্বন্দ্বের নিরশন করেন। ২) পূর্ব যুগসমূহে অসুরেরা বিভিন্ন জন্তুর (যেমন: মৃগ,অজ,খরগোশ ইত্যাদি) রূপ ধারণ করে বনে বিচরণ করতো এবং সুযোগ পেলে মুনি ঋষিদের বধ করতো। ক্ষত্রিয় রাজারা এ সমস্ত পশুরূপী অসুরদের বধ করে মুনি ঋষিদের সুরক্ষা দান করতেন। দৃষ্টান্ত: বাল্মীকি রামায়ণের অরণ্যকাণ্ডের ১০ম সর্গে আমরা দেখতে পাই, দন্ডকারণ্যে মুনি ঋষিরা রামচন্দ্রের নিকট প্রার্থনা করেন, মৃগরূপী অসুরদের নাশ করে তাদের রক্ষা করতে। রামচন্দ্র তাদের অভয়দান করেন এবং সমস্ত দন্ডকারণ্য অসুরমুক্ত করেন। এছাড়াও মারীচাদি অসুরদের মৃগরূপ ধারণ করে রাম-লক্ষ্মণের উপর আক্রমণের একাধিক উপাখ্যান বর্ণিত আছে। রামচন্দ্র এসব অসুরদের বধ করতেন। ৩) ‘কস্তুরী মৃগ’ নামক এক বিশেষ প্রকারের মৃগ আছে, যার নাভীতে এক বিশেষ প্রকার গ্রন্থী থাকে। পরিণত বয়সে এ গ্রন্থ থেকে অতীব সুগন্ধ ছড়ায়। এ সুগন্ধ এতোই মনোহর যে তা সমস্ত জীব জন্তুদের আকৃষ্ট করে। কিন্তু কস্তুরী মৃগ নিজে বুঝে না যে এ গন্ধ তার নাভী থেকে আসছে। সে পাগলের মতো খানা-পিনা ছেড়ে ছাটাছুটি করতে থাকে। এভাবে দুর্বল হয়ে এক সময় মারা যায়। মারা গেলে মহামূল্যবান কস্তুরী নষ্ট হয়ে যায়। এ কস্তুরী ওষুধ ও পারফিউম তৈরিতে ব্যবহৃত হতো। বনের মধ্যে পাগলা কস্তুরী মৃগের সামনে কোন মনুষ্য পড়লে এর আক্রমণে অকালমৃত্যু বরণ করতে হতো। তাই তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ অতীব জরুরি হয়ে পড়ে। সেজন্য নির্দিষ্ট মৌসুমে রাজাদের মৃগয়ায় গিয়ে এ কস্তুরী মৃগদের বধ করতে হতো। ৪) এছাড়া নরমাংসভোজী বাঘ্র, সিংহ, ভাল্লুকাদি হিংস্র জীবের উৎপাত শুরু হলেও তাদের বধের জন্য ক্ষত্রিয় রাজারা মৃগয়া করতেন। দৃষ্টান্ত: শ্রীমদ্ভাগবতমের ১০ম স্কন্ধের ৫৬-৫৭ অধ্যায় হতে আমরা জানতে পারি, সত্রাজিৎ এর ভাইকে বনমধ্যে সিংহ বধ করলে শ্রীকৃষ্ণ মৃগয়ায় গিয়ে সিংহকে বধ করে এবং জাম্বুবান নামক ভাল্লুকরাজকে যুদ্ধে পরাজিত করে সত্রাজিতের হারানো সামন্তক মণি উদ্ধার করেন। প্রশ্ন-২: মৃগয়ায় শিকার করা জন্তুদের কি করা হতো? উত্তর: ১) মৃগয়ায় বধ হওয়া জন্তুদের চামড়া বিশেষ করে হরিণ ও বাঘের চামড়া মুনি ঋষিদের দান করা হতো। এর উপর বসে তারা যখন তপস্যা করতেন। এছাড়া মৃগচর্ম, ব্যাঘ্রচর্ম মুনি ঋষিরা পরিধান করতেন। এমনকি মহাদেব শিবও ব্যাঘ্র চর্ম পরিধান করে তপস্যা করেন। গীতাতেও মৃগচর্মের উপর বসে তপস্যার বিধান আছে। এভাবে মুনি ঋষি তপস্বীগণ যখন এসমস্ত বধ্য জীবের চর্মের উপর তপস্যা করতো, সে পুণ্য প্রভাবে এ সমস্ত জীবেরা উত্তম গতি প্রাপ্ত হতো। ২) মৃগয়ায় বধ হওয়া পশুর দেহের উপর নানাবিধ গবেষণা করা হতো। প্রাণীর অভ্যন্তরীন গঠন, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যাবলি ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য মৃত জন্তু ঋষিকূলে পাঠানো হতো। সেখানে তারা যজ্ঞে বসে এ সমস্ত মৃত পশুদের শুদ্ধি করে নানা প্রকার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পর্যবেক্ষণ করতো এবং নানা গ্রন্থি হতে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করে নানা রোগের ওষুধি প্রস্তুত করা হতো। ৩) মৃগয়ায় যে পশুমাংস পাওয়া যেত তা যজ্ঞের পর রাজ-কুকুর, রাজ-শকুন, রাজ-চিল ইত্যাদি মাংসাশী পশুপাখিদের খাওয়ানো হতো। একে শাস্ত্রের ভাষায় ‘ভূতযজ্ঞ’ বলা হয়। এভাবে বিধিবৎ মৃগয়া দ্বারা প্রভূত লোক-কল্যাণ সাধিত হতো। প্রশ্ন-৩ মৃগয়ায় যে পশুবধ হচ্ছে তাতে কি সত্যিই পাপ হয় না? মৃগয়াকালে তো নির্দোষ জীবেরও বধ হতে পারে। উত্তর: লোক কল্যাণার্থে মৃগয়া উদ্দেশ্য হলেও মৃগয়াকালে অনেক সময় নির্দোষ জীবেরও বধ হয়ে যায়। রামায়ণে দেখা যায় রাজা দশরথ কিংবা মহাভারতে দেখতে পাই রাজা পান্ডুর দ্বারাও মৃগয়াকালে ভুলে ঋষিহত্যা পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিলো। তাই মৃগয়াকালে কম বেশি পাপ হয়েই থাকে। এ পাপ হতে বাঁচতে ক্ষত্রিয়কে শেষ বয়সে সংসার ত্যাগ করে ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য তপস্যায় নিজেকে নিয়োজিত করতে হয়। শ্রীকৃষ্ণ উবাচ- ক্ষাত্রধর্মস্থিতাে জন্তুন্যবধীরমগয়াদিভিঃ। সমাহিতস্তত্তপসা জহঘং মদুপাশিতঃ ॥ [শ্রীমদ্ভাগবতম ১০/৫১/৬২] অনুবাদঃ পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ রাজা মুচুকুন্দকে বললেন, “যেহেতু তুমি ক্ষত্রিয়ের নীতি অনুসরণ করেছিলে, তাই মৃগয়া ও অন্যান্য কর্তব্য সম্পাদনের সময় তুমি প্রাণী হত্যা করেছ। আমাতে শরণাগত হয়ে থেকে যত্ন সহকারে তপস্যা পালনের দ্বারা তোমার সঞ্চিত পাপরাশি পরাভূত করা উচিত।” প্রশ্ন-৪: কোন ক্ষত্রিয় যদি লোককল্যাণার্থ মৃগয়া না করে ইন্দ্রিয় তৃপ্তির কোন মৃগয়া করে তবে তার পরিণতি কি হবে? উত্তরঃ এর উত্তরে মনুস্মৃতিতে বর্ণিত আছে, “যে লোক নিজের সুখের জন্য হিংসারহিত হরিণ প্রভৃতি নিরীহ পশুদের হত্যা করেন, সে লোক জীবিত কিংবা মৃত্যুর পর কোন অবস্থাতেই সুখী হতে পারেন না।” [ মনুসংহিতা, অধ্যায় ৫, শ্লোক ৪৫ ] মনুসংহিতায় ক্ষত্রিয়দের পক্ষে পাপের সম্ভাবনা আছে এরূপ দশটি পাপের কথা বলা হয়েছে, যেখানে বলা হচ্ছে মৃগয়া যেহেতু বধকার্য্য, এর মাধ্যমে ক্ষত্রিয় খুব সহজেই দূষিত হয়ে যেতে পারে এবং পাপভাগী হতে পারে- পানমক্ষাঃ স্ত্রিয়শ্চৈব মৃগয়া চ যথাক্ৰমম্। এতৎ কষ্টতমং বিদ্যাচ্চতুষ্কং কামজে গণে৷৷ [মনুস্মৃতি ৭।৫০] অনুবাদ: ক্ষত্রিয়ের দশটি কামজ দোষের মধ্যে মদ্যপান, পাশাখেলা, স্ত্রীসম্ভোগ (ব্যভিচার অর্থে) এবং মৃগয়া—এই চারটিকে যথাক্রমে অত্যন্ত দূষ্য এবং কষ্টতম বলে বুঝতে হবে।। তাই, মহাভারতে ক্ষত্রিয় রাজের প্রতি মহামন্ত্রী বিদূরের উপদেশ তারা যেন লোকরক্ষা ব্যতীত আসক্তি বশত মৃগয়া না করেন। সপ্ত দোষাঃ সদা রাজ্ঞা হাতব্যা ব্যসনোদয়াঃ। প্রায়ণো যৈবিনশ্যন্তি কৃতমূলা অপীশ্বরাঃ ॥ স্ত্রিয়োহ’ক্ষা মৃগয়া পানং বাকপারুষ্যাঞ্চ পঞ্চমম্। মহচ্ছ দণ্ডপারুষ্যমর্থদূষণমেব চ ॥ [মহাভারত, উদযোগপর্ব, ৩৩।৯৭-৯৮] অনুবাদ: সপ্তবিধ দোষ যথা- স্ত্রীসঙ্গ, দ্যূতক্রীড়া, মৃগয়া, মদ্যপান, কটু কথা বলা, নিষ্ঠুরভাবে গুরুতর দণ্ড করা এবং ঘুষ প্রভৃতি গ্রহণ করা ॥ সুপ্রতিষ্ঠিত প্রভুরাও যেগুলি

ভারত ভূমির প্রকৃত ধর্ম কি? হিন্দুধর্ম নাকি সনাতন বৈষ্ণব ধর্ম?

277755653_135112489081556_5005084771574902321_n

ভারত ভূমির প্রকৃত ধর্ম কি?! হিন্দুধর্ম নাকি সনাতন বৈষ্ণব ধর্ম?! বর্তমানে বহুল আলোচিত বিতর্ক- আমাদের ধর্মের প্রকৃত নাম কি?! আমাদের ধর্ম হিন্দু না সনাতন?! আবার অনেকে কেন বলছেন আমাদের ধর্ম বৈষ্ণব?! শাস্ত্রে আমাদের ধর্মের নাম কি বলেছে?! শুনতে হয়তো অদ্ভূত লাগতে পারে, আমাদের ধর্মের কোন শাস্ত্রেই ‘হিন্দু’ শব্দের কোন উল্লেখ নেই। বেদেও নেই, স্মৃতিতেও নেই, পুরাণ কিংবা ভারতের আদি ইতিহাস- মহাভারতেও নেই। আরো অদ্ভুত তথ্য হলো- সতের শতকের আগে পর্যন্ত ‘হিন্দু’ শব্দটির কোন অস্তিত্বই ছিলো না। উনিশ শতকের আগে অভিধানে হিন্দু বলে কোন শব্দই ছিলো না। ‘হিন্দু’ শব্দটি অতি আধুনিক শব্দ, অথচ ভারতভূমিতে বসবাসকারী জনগনের বৈদিক সংস্কৃতি এতোই সুপ্রাচীন যে কালের হিসেবে গণনা করা যায় না। আমাদের ধর্মের নাম সনাতন, আরো বিশেষভাবে বললে- সনাতন বৈষ্ণব ধর্ম। আমাদের ধর্ম শাস্ত্রগুলোতে সরাসরিভাবেই এর নামকরণ করা হয়েছে। হিন্দু শব্দটি কেবল জাতি বিশেষকে বুঝায়, ধর্মকে নয়। ধর্ম হিসেবে ব্যবহারের জন্য ‘হিন্দু’ শব্দের ব্যুৎপত্তিই হয় নি, এ শব্দের উৎপত্তি হয়েছিলো বিশেষ জাতিকে বুঝাতে। দীর্ঘ কয়েক শতাব্দী ধরে বিদেশী শাসকদের অধীনে দাস্যত্ব করতে করতে আমরা নিজেদের প্রকৃত পরিচয় ভুলে নিজেদেরকে বিদেশীদের দেওয়া নামে পরিচয় দিতে অধিক গর্ববোধ করি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। [ পোস্টের শেষাংশে আমাদের ধর্ম কেন ‘হিন্দু’ নয় তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখা করা হয়েছে ] মহাভারতের যুদ্ধের অন্তে যুধিষ্ঠীরের অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পন্ন হলে যুধিষ্ঠীর মহারাজ শ্রীকৃষ্ণকে এ ভারতভূমির পরম ও সর্বোত্তম শ্রেষ্ঠ ধর্ম – সনাতন বৈষ্ণব ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- ভগবন্! বৈষ্ণবাধর্ম্মাঃ কিংফলাঃ কিংপরাষণাঃ। কিংধর্ম্মসধিকৃত্যাথ ভবতোৎপাদিতাঃ পুবা ॥৩॥ পবিত্রাঃ কিল তে ধর্ম্মাঃ সর্বপাপপ্রণাশনাঃ। সর্বধর্ম্মোত্তমাঃ পুণ্যা ভগবংস্ত্বন্মুখোদ্‌গতাঃ ॥৫॥ [মহাভারত: আশ্বমেধিক পর্ব/১১৭/৩,৫ ] অনুবাদ: যুধিষ্ঠির বললেন, ” হে ভগবান কৃষ্ণ! বৈষ্ণবধর্মের ফল কি? তাহার আশ্রয় কি? এবং তুমি কোন আচার অবলম্বন করে এই ধর্ম উৎপাদন করেছো? ভগবান! তোমার মুখনির্গত এই বৈষ্ণবধর্ম পবিত্র, সর্বপাপনাশক ও দানধর্ম, অহিংসাধর্ম, পিতৃধর্ম, পতিধর্ম, বর্ণাশ্রম ধর্ম ইত্যাদি যত প্রকার পুন্যধর্ম আছে তা সে ধর্মেরই জাত, তাই এ বৈষ্ণবধর্ম সর্বশ্রেষ্ঠ।” দ্রষ্টব্য: এ শ্লোকে ‘সর্বোধর্ম্মোত্তমাঃ’ শব্দ দ্বারা বৈষ্ণব ধর্মকে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম বলে আক্ষ্যা দেওয়া হয়েছে। ‘ভগবংস্ত্বন্মুখোদগতা’ শব্দের দ্বারা বুঝানো হয়েছে এ ধর্ম স্বয়ং ভগবানের শ্রীমুখ হতে নিঃসৃত। অর্থাৎ এ সনাতন বৈষ্ণবধর্ম মানুষের সৃষ্টি নয়, এটি ভারতভূমীর সন্তানদের জন্য স্বয়ং ভগবান নিজে তৈরি করেছেন। বৈশম্পায়ন উবাচ। ইত্যেবং কথিতে দেবে ধর্ম্মপুত্রেণ সংসদি। বসিষ্ঠাদ্যাস্তপোযুক্তা মুনয়স্তত্ত্বদর্শিনঃ।। শ্রোতুকামাঃ পরং গুহ্যং বৈষ্ণবং ধর্ম্মমুত্তমম। তথা ভাগবতাশ্চৈব ততস্তং পর্য্যবারয়ন। যুধিষ্ঠির উবাচ । তত্ত্বতস্তব ভাবেন পাদমূলমুপাগতম্ । যদি জানাসি মাং ভক্তং স্নিগ্ধং বা ভক্তবৎসল ! ॥১৩॥ ধৰ্ম্মগুহ্যানি সর্বাণি বেত্তুমিচ্ছাসি তত্ত্বতঃ । ধৰ্ম্মান্ কথয় মে দেব ! য্দ্যনুগ্রহভাগহম্ ॥১৪৷ বৈশম্পায়ন উবাচ । এবং পৃষ্টস্তু ধর্ম্মজ্ঞো ধৰ্ম্মপুত্রেণ কেশবঃ। উবাচ ধৰ্ম্মান্ সূক্ষ্মার্থান্ ধৰ্ম্মপুত্ৰষ্স্য হৰ্ষিতঃ ॥১৫॥ [মহাভারত, আশ্বমেধিক পর্ব, ১১৭। ১১-১২ ] অনুবাদ: বৈশম্পায়ন বলিলেন—সভায় যুধিষ্ঠির কৃষ্ণকে এইরূপ বলিলে, তপস্বী ও তত্ত্বদর্শী বসিষ্ঠপ্রভৃতি মুনিগণ এবং ভগবদ্ভক্ত সাধুগণ পরম গোপনীয় উত্তম বৈষ্ণবধর্ম্ম শুনিবার ইচ্ছা করিয়া আসিয়া কৃষ্ণকে পরিবেষ্টন করিলেন ॥ যুধিষ্ঠির বলিলেন—‘ভক্তবৎসল ! যথার্থই আমি তোমার প্রতি ভক্তিবশতঃ তোমার পাদমূলে আসিয়াছি, তুমি যদি আমাকে ভক্ত ও স্নেহযুক্ত বলিয়া জান এবং আমি যদি তোমার অনুগ্রহভাগী হই, তাহা হইলে আমার নিকট বৈষ্ণবধৰ্ম্ম বল। আমি যথার্থভাবে গুপ্ত সমস্ত বৈষ্ণবধৰ্ম্ম জানিতে ইচ্ছা করি’ ॥ বৈশম্পায়ন বলিলেন—যুধিষ্ঠির এইরূপ প্রশ্ন করিলে, ধর্ম্মত কৃষ্ণ আনন্দিত হইয়া তাঁহার নিকটে এ সূক্ষ্ম ধৰ্ম্ম বলিতে আরম্ভ করিলেন॥ উল্লেখ্য, এ শ্লোকে ‘পরং গুহ্যং বৈষ্ণবং ধর্ম্মমুত্তমম’ শব্দ দ্বারা বৈষ্ণব ধর্মকে সর্বাধিক গোপনীয় ধর্ম আক্ষ্যা দেওয়া হয়েছে। তাই এ বৈষ্ণব ধর্মকে আমরা সাধারণত ‘সনাতন ধর্ম’ বলেই অধিক ডাকি। স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণই এ বৈষ্ণব ধর্মকে সনাতন ধর্ম আক্ষ্যা দিয়েছেন মহাভারতে। আমাদের বৈদিক শাস্ত্রের অন্য কোনরূপ মত বা -ism কে সনাতন ধর্ম বলে স্বীকৃতি দেওয়া নেই। ভগবানুবাচ। শৃণু পার্থিব ! তৎ সৰ্ব্বং ধৰ্ম্মসূক্ষ্মং সনাতনম্ । দুর্বিজ্ঞেয়তমং নিত্যং যজ্ঞ যত্র মহাজনাঃ ॥ [ মহাভারত আশ্বমেধিক পর্ব, ১২০।২ ] -ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, “রাজা! অভিজ্ঞ লোকেরাও যে বিষয়ে সর্বদা মুগ্ধ হয়ে থাকেন, অত্যন্ত দুর্জ্ঞেয় সেই সূক্ষ্ম সনাতনধর্ম আপনি শ্রবণ করুন।” বৈশম্পায়ন উবাচ। এবং শ্ৰুত্বা বচঃ পুণ্যং সত্যং কেশবভাষিতম । এহৃষ্টমনসো ভূত্বা চিন্তযস্ন্তোহদ্ভূতং পরম্ ॥৫॥ দেবব্রহ্মর্ষণঃ সর্বে গন্ধৰ্বপ্পবসস্তথা। ভূতা যক্ষগ্রহাশ্চৈব গুহ্যকা ভুজগাস্তথা ॥৬॥ বালখিল্যা মহাত্মানো যোগিনস্তত্ত্বদৰ্শিনঃ। তথা ভাগবতাশ্চাপি পঞ্চকলিমুপসিকাঃ ॥৭॥ কৌতূহলসমাবিষ্টাঃ প্রহৃষ্টেদ্ৰিয্যানসাঃ। শ্রোতুকানাঃ পরং ধর্ম্মং বৈষ্ণবংধর্মশাসনস্। হৃদি কর্তৃক তদ্বাক্যং প্রণেমুঃ শিরসা নতাঃ।। [মহাভারত: আশ্বমেধিক পর্ব/১১৮/৫-৮ ] অনুবাদঃ বৈশম্পায়ন বলিলেন—কৃষ্ণোক্ত এইরূপ সত্য ও পুণ্যজনক বাক্য শুনে অত্যন্ত অদ্ভুক্ত হবে এমন ভেবে প্রফুল্ল হয়ে সকল দেবর্ষি, ব্রহ্মর্ষি, গন্ধৰ্ব্ব, অপসরা, ভূত, যক্ষ, গ্রহ, গুহক, নাগ, মহাত্মা যোগী ও তত্ত্বদর্শী বালখিল্য ও দিনের মধ্যে পাঁচটী সময়ে ভগবানের উপাসক সাধুগণ কৌতুকযুক্ত হয়ে উত্তম বৈষ্ণবধৰ্ম্ম শুনার ইচ্ছা করে মস্তক অবনত করে কৃষ্ণকে নমস্কার করলেন॥ ভগবান শুধু আমাদের ভারতভূমীর জন্য ধর্ম সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হন নি, তিনি স্বয়ং এ শাশ্বত সনাতন ধর্মের রক্ষা করছেন। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় সে কথাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে- ত্বমক্ষরং পরমং বেদিতব্যং ত্বমস্য বিশ্বস্য পরং নিধানম্। ত্বমব্যয়ঃ শাশ্বতধর্মগোপ্তা সনাতনস্ত্বং পুরুষো মতো মে।। [ গীতা ১১।১৮ ] অনুবাদ: তুমি পরম ব্রহ্ম এবং একমাত্র জ্ঞাতব্য। তুমি বিশ্বের পরম আশ্রয়। তুমি অব্যয়, সনাতন ধর্মের রক্ষক এবং সনাতন পরম পুরুষ। এই আমার অভিমত। কেউ হয়তো দাবী করতে পারে, বৈষ্ণব যদি ধর্ম হয়, তবে শৈব, শাক্ত, গাণপত্য কিংবা সৌরাদি অন্যান্য মতও এক একটা ধর্ম। কিন্তু তাদের এ দাবী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। শৈব ধর্ম, শাক্তধর্ম, গাণপত্য ধর্ম কিংবা সৌর ধর্ম বলে কোন টার্ম সনাতন ধর্মের কোন প্রামাণ্য ধর্মগ্রন্থে নেই। বাস্তবে বৈষ্ণবমত, শৈবমত, শাক্তমত, গাণপত্যমত ও সৌর মত- এ প্রধান পাঁচটি মত ও অন্যান্য বেদানুগামী মত হলো সনাতন বৈষ্ণবধর্মের শাখা, এগুলো স্বতন্ত্র কোন ধর্ম নয়। তাই এগুলোকে আমরা পঞ্চমত বলি, পঞ্চধর্ম বলি না। এগুলোর সমন্বয়েই সনাতন বৈষ্ণব ধর্ম। পরমেশ্বর ভগবান বিষ্ণু স্বয়ং ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, প্রকৃতিমাতা দূর্গাদি দেবতাদের নিজের দেহ হতে প্রকাশ করে এদের দ্বারা সমগ্র সৃষ্টি সৃজন-পালন-লয়-বিনির্মান প্রভৃতি কার্য চালনা করেন। এ সমস্ত দেবতা ভেদে একেক মত, একেক পথ। মহাভারতে বৈষ্ণবধর্ম ব্যাখা করতে গিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তারও ব্যাখা দিয়েছেন- “আমি দেবগণের আদি, আমি ব্ৰহ্মাদি দেবগণকে সৃষ্টি করিয়াছি এবং আমি নিজের প্রকৃতিকে অবলম্বন করিয়া সমগ্র জগৎ সৃষ্টি করিয়া থাকি। আমি ব্রহ্মচর্য্যপ্রভৃতি চারিটী আশ্রমের ধর্ম্মস্বরূপ, চাতুর্হোত্রযজ্ঞের ফল ভোগ করি, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ও প্রজাপতি এই চারিটী আমার মূর্তি এবং ব্রহ্মচর্য্য, গার্হস্থ্য, বানগ্রস্থ ও ভিক্ষু—এই চারিটী আশ্রম আমিই সৃষ্টি করিয়াছি ॥ দেবতা, অসুর, মানুষের সহিত সমগ্র জগৎ এইভাবে আমার থেকে উৎপন্ন হয় এবং আমাতেই লয় পায়।” – [ মহাভারত, আশ্বমেধিক পর্ব, ১১৭।৩৮,৫০,৫৯ ] অতএব স্পষ্টতই, ভারতভূমীর বেদানুগামী সভ্য মনুষ্যের ধর্ম যে সনাতন-বৈষ্ণব ধর্ম, সে কথা ভারতের ইতিহাস মহাভারতে উল্লেখ আছে, গীতাতে উল্লেখ আছে, সর্বোপরি পবিত্র বেদেও আমাদের বৈষ্ণব হওয়ারই নির্দেশ দিয়েছে। পবিত্র বেদে বলছে- বৈষ্ণবমসি বিষ্ণবে ত্বা। – [ শুক্ল যজুর্বেদ ৫।২১ ] -(হে মনুষ্য), তোমার পরিচয় তুমি বৈষ্ণব, বিষ্ণুর প্রীতির জন্য তোমাকে নিযুক্ত করছি। বিষ্ণোনুকং বীর্যাণি প্র বোচং যঃ পার্থিবানি বিমমে রজাংসি যো অস্কভায়দুত্তরং সধস্থং বিচক্রমাণস্ত্রেধোরগায়ো বিষ্ণবে ত্বা৷৷ – [ শুক্ল যজুর্বেদ ৫।১৮]

কল্কি অবতার কি আবির্ভূত হয়েছেন?!

whatsapp-image-2024-06-15-at-03-55-51_d96932a2

কল্কি অবতার: বেশিরভাগ হিন্দুরা নিজ ধর্ম সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। না নিজে শিখে, না পরিবার থেকে কেউ শিখায় বরং, কেউ নিজে শিখতে চাইলে অথবা কেউ শিখাতে চাইলে অন্যরা নানাভাবে নিরুৎসাহিত করে। আর এতে করে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে প্রাসঙ্গিক, বৈজ্ঞানিক ও যৌক্তিক সুস্পষ্ট ধারণা লাভের সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত হই। এরই সুযোগে বিভিন্ন প্রসঙ্গে যেমন- কল্কি অবতার নিয়ে বিধর্মীরা সুকৌশলে সহজ সরল হিন্দুদের ভুলিয়ে ভালিয়ে ধর্মান্তরের চেষ্টা চালায়। দু’চারটা ভবিষ্যদ্বাণীকে জোরপূর্বক গোজামিল দিয়ে মিলিয়ে নিয়ে নিজেদের মত-পথের প্রবর্তনকারীকে কল্কি অবতার হিসেবে বর্ণনা দিয়ে প্রচার করে বলতে থাকে- “আসো এই সত্যের পথে, আর ইনিই সেই সত্য আনয়নকারী যার কথা ‘হিন্দু ধর্মগ্রন্থে’ বলা হয়েছে।” অতঃপর এই ফাঁদে পা দিয়ে সহজ সরল হিন্দুরা লক্ষণীয়ভাবে যুবক/যুবতীরা বৈদিক সত্য সনাতন ধর্মের আলোর পথকে বিস্মৃত হতে থাকে। এখন পর্যন্ত ভগবান কল্কি অবতার সম্পর্কিত সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণীর কিয়দংশেরও মিল কারো সাথে পাওয়া যায়নি। আপনি নিজেও একটু মিলিয়ে দেখবেন এই সমস্ত গুটিকয়েক বৈশিষ্ট্যই কি তাদের দাবীকৃত ব্যক্তির সাথে মিলে যায় নাকি?! অথচ, ভগবান কল্কিদেব’র সমস্ত লীলাবিলাসের ভবিষ্যদ্বাণী কল্কিপুরাণে বিস্তারিতভাবে বর্ননা রয়েছে। ভন্ডরা গোজামিল করে সত্যকে ঢাকা দিয়ে অসত্য প্রচারে সফল হয়ে যায় বারবার কিন্তু, হিন্দু সমাজ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হিন্দু সমাজ তাদের সন্তানাদিকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, জর্জ, ব্যারিস্টার ইত্যাদি বানাতে কলেজ, ভার্সিটিতে পাঠায় অতঃপর অনেকেই অতিশিক্ষার ঠেলায় ভন্ডদের পাল্লায় পড়ে ধর্মান্তরিত হয়ে যায়। ছেড়ে যায় পরিবার পরিজন। অনেক সুকৃতির/সৌভাগ্যের ফলে জন্ম থেকে প্রাপ্ত ধর্ম-সংস্কৃতিকে ঘৃণাও করতে শুরু করে। অথচ দোষটা আমাদের এই পরম পবিত্র সংস্কৃতির নয়, দোষটা ঐসব পিতামাতার যারা নিজ বৈদিক ধর্ম ও সংস্কৃতির সাথে কখনোই পরিচয় করাননি, বরং নিজেরা করেছেন বৈদিক সংস্কৃতির নামে অবৈদিক অপসংস্কৃতির চর্চা, যা দেখে দেখে সন্তানদের মনে সুক্ষ্মভাবে তৈরি হয় নিজের ধর্মের প্রতি অবিশ্বাস। অপরপক্ষে, বেদাদি শাস্ত্র সমূহ সম্পূর্ণরূপে অভ্রান্ত। যা কেবল সত্য নয়, পরম সত্যেরও সন্ধান দেয়। শাস্ত্রের ভূত-ভবিষ্যৎ বর্ণনায় যা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। যেসমস্ত বিষয় তথাকথিত জাগতিক বিজ্ঞানেরও কল্পনাতীত, তা সম্পর্কে পূঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দেয়। বিজ্ঞান যেখানে জড় বস্তু, জড় পদার্থ জড় জগত নিয়ে বিশ্লেষণ করছে সেখানে বৈদিক শাস্ত্র আমাদের চিন্ময় পদার্থ, চিন্ময় জগতের সুস্পষ্ট ধারণা দেয়।আসুন খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নিই বৈদিক শাস্ত্রাদিতে ভগবানের কল্কি অবতার সম্পর্কে কী কী বলা হয়েছে- বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে, কল্কি অবতার অবতীর্ণ হবেন কলিযুগের অন্তে এবং তাঁর বিভিন্ন লীলা বিলাস সম্পাদনার মাধ্যমে (দুষ্টের দমন/নিধন, শিষ্টের পালন ও ধর্ম সংস্থাপন) পুনরায় সত্যযুগের স্থাপনা করবেন। শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে, “পূর্বোল্লিখিত এ সমস্ত অবতারেরা হচ্ছেন ভগবানের অংশ বা কলা অবতার। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং। যখন নাস্তিকদের অত্যাচার বেড়ে যায়, তখন আস্তিকদের রক্ষা করার জন্য ভগবান এ ধরাধামে অবতীর্ণ হন।” – (শ্রীমদ্ভাগবত: ১/৩/২৮)   ভগবান কল্কিদেবের আগমন সম্পর্কে শাস্ত্রের বিশেষ কিছু ভবিষৎ বাণী: “যিনি কলিযুগের অন্তে অশুদ্ধ পাপীদের তীক্ষ্ণ খড়গ দ্বারা ছেদন করে সত্যযুগের ধর্ম সংস্থাপন করেন, সেই কল্কি অবতারকে নমস্কার করি।” – (বৃহন্নারদীয় পুরাণ: ২/৪০) “শ্রৌত ও স্মার্ত ধর্ম অত্যন্ত বিপ্লবপ্রাপ্ত ও কলি ক্ষীণপ্রায় হলে, যিনি চরাচরের গুরু ও আদিভূত, যিনি অন্তময়, সর্বময়, ব্রহ্মময় ও পরমাত্মাস্বরূপ, সেই ভগবান বাসুদেব স্বাংশরূপে শম্ভল গ্রামের প্রধান ব্রাহ্মণ বিষ্ণুযশার গৃহে অষ্টৈশ্বর্যসম্পন্ন, অসীমশক্তি ও মাহাত্ম্যশালী কল্কিরূপে অবতীর্ণ হয়ে ম্লেচ্ছ, দস্যু ও দুরাত্মাদিগের ক্ষয় করবেন।” – (বিষ্ণুপুরাণ: ৪/২৪/২৬) “কলিযুগের অন্তে আমি কল্কি অবতার রূপে অবতীর্ণ হব। ” – (ভবিষ্যপুরাণ: ২য় খণ্ড/প্রতিসর্গ পর্ব/১৬/২৮) “তারপর যুগসন্ধিকালে, অর্থাৎ কলিযুগের অন্তে নৃপতিরা যখন দস্যুপ্রায় হয়ে যাবে, তখন ভগবান কল্কি অবতার নামে বিষ্ণুযশ নামক ব্রাহ্মণের পুত্ররূপে অবতরণ করবেন।” – (শ্রীমদ্ভাগবত: ১/৩/২৫) “মহাবীর্য ও মহানুভব কল্কির মননমাত্রই সমুদয় বাহন, কবচ, বিবিধ আয়ুধ ও ভুরিভুরি যোদ্ধা উপস্থিত হবে। তিনি ধর্ম বিজয়ী সম্রাট হয়ে পর্যায়কুল লোক সকলের প্রতি প্রসন্ন হবেন। ক্ষয়কারী ও যুগপরিবর্তক সেই দীপ্তপুরুষ উত্থিত ও ব্রাহ্মণগণ পরিবৃত হয়ে সর্বত্রগত ম্লেচ্ছগণকে উৎসারিত করবেন।” – (মহাভারত: বনপর্ব/১৬১/৯৩-৯৭) “যখন অনার্যরা রাজ্যপদ অধিকার করে নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের শোষণ করতে শুরু করবে, তখন ভগবান কল্কি বিষ্ণুযশার পুত্র এবং যাজ্ঞ্যবন্ধের শিষ্য হিসেবে সেসকল অনার্যদের তাঁর অস্ত্র দ্বারা বিনাশ করবেন। তিনি চার বর্ণ ও আশ্রম সমন্বিত নীতি প্রতিষ্ঠা করবেন। তারপর আবার জনগণ সত্য ও ন্যায়ের পথে ফিরে আসবে।” – (অগ্নিপুরাণ:১৬/৭-৯) “ভগবান কল্কি ম্লেচ্ছদের বিনাশ করে সকল দুরাবস্থা অপসারণ করে কলিযুগের অবসান ঘটাবেন। তিনি সকল ব্রাহ্মণদের একত্রিত করে পরম সত্য প্রতিস্থাপন করবেন। তিনি ধ্বংসপ্রাপ্ত সকল প্রকার জীবনধারা সম্বন্ধে অবগত থাকবেন এবং ব্রাহ্মণ তথা ধার্মিক ব্যক্তিদের ক্ষুধা অপসারণ করবেন। তিনি হবেন জগতের একমাত্র নিয়ন্ত্রক। তাঁকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং তিনিই হবেন বিশ্বের বিজয়পতাকা।” – (পদ্মপুরাণ:৬/৭১/২৭৩-২৮২) “তখন পৃথিবীতে অরাজকতা বিরাজ করবে। সর্বত্র অযাচিত কার্যসকল- যেমন, চৌর্যবৃত্তি ও লুটতরাজ বৃদ্ধি পাবে। সেসময় বিষ্ণুযশা নামে এক ব্রাহ্মণের পরিবারে ভগবান নারায়ণ আবির্ভূত হবেন। তিনি এক সুবৃহৎ অশ্বে সওয়ার হয়ে হাতে তরবারি ধারণপূর্বক পৃথিবীতে ম্লেচ্ছদের বিনাশ করবেন। এভাবে পৃথিবী শ্লেচ্ছদের থেকে মুক্ত হবে।” – (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ: প্রকৃতি খণ্ড ৭/৫৮-৫৯)   আবির্ভাব কালের বর্ণনা: “মাধব মাসের শুক্লপক্ষের দ্বাদশী তিথিতে ভগবান কল্কি এজগতে আবির্ভূত হবেন।” – (কল্কি পুরাণ: ১/২/১৫)   কল্কিদেবের রূপলাবণ্য: “তাঁর অভয় কান্তি নীল মেঘের ন্যায়। তাঁর বাহুদ্বয় সুদীর্ঘ (অর্থাৎ আজানুলম্বিত) ও সমুন্নত। শিরোদেশে স্থিরবিদ্যুৎতুল্য সূর্যসম দীপ্ত কিরীট বিরাজিত। তাঁর মুখমণ্ডল সূর্যের ন্যায় দীপ্তিমান কুণ্ডল দ্বারা শোভিত। সেই বদনকমল আনন্দালাপে বিকশিত ও মৃদু মৃদু হাসিতে শোভিত। তাঁর করুণ কটাক্ষপাতে বিপক্ষকুল অনুগ্রহ লাভ করে। তাঁর বক্ষস্থলের মনোরম চন্দ্রকান্তমণিযুক্ত হার দ্বারা শতদলের আনন্দ বর্ধন করে। তাঁর বস্ত্র ইন্দ্রধনুর ন্যায় সৌন্দর্য বিস্তার করে। তাঁর দেহ সর্বদা নানাবিধ মণির জ্যোতিতে সমুদ্ভাসিত। তাঁর বক্ষস্থলে বিরাজিত কৌস্তুভমণির শোভা যেন শ্যামলকান্তি মেঘের মধ্যে পূর্ণচন্দ্র। দেবগণ, গন্ধর্বগণ ও জনগণ কল্কিকে এইরূপে দর্শন করেন।” – (কল্কিপুরাণ:৩/১৯/৪-১১) “তাঁর তেজপুঞ্জ অদিত্যতেজকেও পরাভূত করে। তাঁর সর্বাঙ্গ মহামণিসমূহে বিভূষিত। সেই প্রভু কমলাপতি (কল্কি) তমালসদৃশ নীলবর্ণ, পীতবসন (হলুদবস্ত্র), রমণীয় পদ্মপলাশলোচন, আজানুলম্বিত বাহু, প্রসারিত ও উন্নত বক্ষবিশিষ্ট, শ্রীবৎসচিহ্নে চিহ্নিত ও কৌস্তুভমণির কান্তিদ্বারা শোভিত।” – (কল্কিপুরাণ: ২/২/২১)   পারিবারিক পরিচয়: “ভগবান কল্কি স্বয়ং বলেছেন- “চার ভ্রাতা মিলে কলিকে বিনাশ করব।” – (কল্কিপুরাণ ১/২/৫) “কল্কির পূর্বে তাঁর জ্যেষ্ঠ তিন ভ্রাতা জন্মগ্রহণ করবেন। তাঁদের নাম কবি, প্রাজ্ঞ ও সুমন্ত্র।” – (কল্কিপুরাণ ১/২/৩১) “কল্কিদেবের দুই পত্নী” – (কল্কিপুরাণ ৩/১৬/৫) “কল্কিদেবের চার সন্তান” – (কল্কিপুরাণ ২/৬/৩৬ এবং ৩/১৭/৪৪)   ভগবান কল্কিদেব’র অপ্রাকৃত কার্যাদি: “বিশ্বের অধীশ্বর ভগবান কল্কিদেব তাঁর দেবদত্ত নামক শ্বেত অশ্ব চালিয়ে ও এক হাতে তরবারি নিয়ে তাঁর ভগবত্তার আটটি ঐশ্বরিক শক্তি প্রদর্শনপূর্বক সমগ্র পৃথিবী ভ্রমণ করবেন। তাঁর অসীম জ্যোতি প্রদর্শন করে এবং অত্যন্ত দ্রুতবেগে অশ্ব চালিয়ে তিঁনি রাজার বেশধারী লক্ষ লক্ষ চোরদের নিধন করবেন।” – (ভা: ১২/২/১৯-২০)   লীলাবিলাসের সময়সীমা: “কল্কি ভ্রাতা, পুত্র, জ্ঞাতি, সম্বন্ধী ও আত্মীয়বর্গসহ সহস্রবর্ষ (এক হাজার বছর) শম্ভলে অবস্থান করবেন।” – (কল্কিপুরাণ ৩.১৮.২)   অতএব, কল্কি অবতার সম্পর্কিত উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনাসমূহ পড়ে খুব সহজেই বুঝতে পারা যায় কল্কি অবতার কি আবির্ভূত হয়েছেন নাকি নয়। বৈদিক শাস্ত্রের বর্ণনায় চতুর্যুগের বর্তমান কলিযুগের শেষ প্রান্তে ভগবান স্বয়ং কল্কি অবতারে অবতীর্ণ হবেন,