সমগ্র বিশ্ববাসীর দুঃখের প্রকৃত কারণ
প্রকৃতির ব্যবস্থাপনায় জীবনের ক্রমবিকাশে নিম্নশ্রেণির জীব প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্রহণ বা সংগ্রহ করে না, তাই পশুসমাজে সাধারণত অর্থনৈতিক সমস্যা বা প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব নেই। যেমন, এক বস্তা চাল প্রকাশ্য স্থানে পড়ে থাকলে পাখিরা আসবে। তারা কয়েকটি করে দানা খেয়ে চলে যাবে। কিন্তু একজন মানুষ তা করবে না। সে আসবে এবং বস্তাভর্তি সমস্ত চাল নিয়ে যাবে। সেই লোকটি যথাসাধ্য উদরপূর্তি করবে আর বাকি চাল মজুত রেখে দেবে। শাস্ত্রানুসারে এইভাবে অতিরিক্ত সংগ্রহ করা নিষিদ্ধ। এটাই সমগ্র বিশ্ববাসীর দুঃখের কারণ। শ্রীঈশোপনিষদে বর্ণিত হয়েছে, ঈশাবাস্যমিদং সর্বং যৎকিঞ্চ জগত্যাং জগৎ। তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ ধনম্ ॥ এই বিশ্বচরাচরে যা কিছু আছে তার মালিক পরমেশ্বর ভগবান এবং তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন। তাই জীবন ধারণের জন্য তিনি যেটুকু বরাদ্দ করে দিয়েছেন, সেটুকুই গ্রহণ করা উচিত এবং সব কিছুই যে ভগবানের সম্পত্তি তা ভালভাবে জেনে, কখনই অন্যের জিনিস গ্রহণ করা উচিত নয়। তাই যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা সহকারে আমাদের জানতে হবে যে, ভগবান ছাড়া অন্য কেউই কোন কিছুর মালিক নন। ভগবান আমাদের জন্য যেটুকু বরাদ্দ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেইটুকু কেবল আমাদের গ্রহণ করা উচিত। যেমন, গরু দুধ দেয়, কিন্তু সেই দুধটি সে খায় না; সে ঘাস আর দানা খায় এবং তার দুধ হচ্ছে মানুষের খাদ্য। এমনই সুন্দরভাবে ভগবান সব কিছুর ব্যবস্থা করেছেন এবং তিনি কৃপা পরবশ হয়ে আমাদের জন্য যা আলাদা করে রেখেছেন, তা নিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত, এবং আমাদের সব সময় বিবেচনা করা উচিত, যে সমস্ত জিনিস আমরা গ্রহণ করছি, প্রকৃতপক্ষে সেগুলি কার। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, একটি বাড়ি তৈরি হয় মাটি, কাঠ, পাথর, লোহা, সিমেন্ট এবং এই ধরনের সমস্ত জড় পদার্থ দিয়ে, এখন আমরা যদি ঈশোপনিষদের পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করি, তা হলে আমরা জানতে পারব যে, এর কোনওটিই আমরা তৈরি করতে পারি না। আমরা কেবল আমাদের শ্রম দিয়ে সেগুলি জড়ো করে সেগুলিকে বিভিন্ন রূপ দান করতে পারি। কোনও শ্রমিক তার কঠোর শ্রম দিয়ে কোন কিছু তৈরি করার জন্য তার মালিকানা দাবি করতে পারে না। আধুনিক সমাজে শ্রমিক এবং মালিকদের মধ্যে সর্বদাই ভীষণ সংঘর্ষ হচ্ছে। এই সংঘর্ষ একটি আন্তর্জাতিক রূপ ধারণ করেছে এবং তার ফলে সমস্ত পৃথিবী বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। মানুষে মানুষে শত্রুতা হচ্ছে এবং তারা কুকুর- বেড়ালের মতো ঝগড়া করছে। শ্রীঈশোপনিষদের জ্ঞান কুকুর-বেড়ালকে উপদেশ দান করার জন্য নয়, তা সদ্গুরুর মাধ্যমে মানুষের প্রতি পরমেশ্বর ভগবানের বাণী প্রদান করছে। মানব-সমাজের কর্তব্য হচ্ছে ঈশোপনিষদের এই বৈদিক জ্ঞান গ্রহণ করা এবং জড় বস্তুর মালিকানা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ না করা। পরমেশ্বর ভগবান কৃপা করে আমাদের যতটুকু সুযোগ-সুবিধা দান করেছেন, তা নিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত। কমিউনিস্ট, ক্যাপিট্যালিস্ট অথবা অন্য সমস্ত দলগুলি যদি প্রকৃতির সম্পদের উপর মালিকানা দাবি করে, তা হলে মানব-সমাজে অশান্তির সৃষ্টি হয়, কেননা প্রকৃতির প্রতিটি বস্তুই হচ্ছে ভগবানের সম্পত্তি। ক্যাপিট্যালিস্টরা যেমন রাজনৈতিক কৌশলের দ্বারা কমিউনিস্টদের দমন করতে পারবে না, তেমনই কমিউনিস্টরা তাদের রুটির জন্য লড়াই করে ক্যাপিট্যালিস্টদের পরাস্ত করতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা পরমেশ্বর ভগবানের মালিকানা স্বীকার করছে, ততক্ষণ যে সম্পত্তি তারা তাদের নিজেদের বলে দাবি করছে, তা সবই হচ্ছে চুরি করা সম্পদ। সেই অপরাধের জন্য তাদের প্রকৃতির নিয়মে দণ্ডভোগ করতে হবে। পারমাণবিক বোমাগুলি কমিউনিস্ট আর ক্যাপিট্যালিস্ট উভয়ের হাতেই রয়েছে এবং তারা যদি পরমেশ্বর ভগবানের প্রভুত্ব স্বীকার না করে, তা হলে অন্তিমে সেই বোমাগুলি এই উভয় গোষ্ঠীকেই ধ্বংস করবে। তাই তাদের রক্ষা করার জন্য এবং জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য উভয় দলেরই কর্তব্য ঈশোপনিষদের উপদেশ অনুসরণ করা। কুকুর-বেড়ালের মতো ঝগড়া করা মানুষের উদ্দেশ্য নয়। যথেষ্ট বুদ্ধি সহকারে তাদের মানব-জীবনের গুরুত্ব এবং উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অবগত হওয়া কর্তব্য। বৈদিক শাস্ত্র রচিত হয়েছে মানুষদের জন্য, কুকুর-বেড়ালদের জন্য নয়। কুকুর-বেড়ালেরা অন্য প্রাণী হত্যা করে আহার করতে পারে এবং তার ফলে তাদের কোনও পাপ হয় না, কিন্তু কোনও মানুষ যখন তার অদম্য রসনা তৃপ্তির জন্য কোন পশুকে হত্যা করে, তখন প্রকৃতির নিয়ম ভঙ্গ করার জন্য তাকে সেই পাপের ভাগী হতে হয়। পরিণামে তাকে সেই জন্য দণ্ডভোগ করতে হয়। মানব-জীবনের বিধি-নিয়ম পশুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। একটি বাঘ চাল, গম খায় না অথবা গরুর দুধ পান করে না, কারণ তার আহার হচ্ছে পশুর মাংস। বহু পশু-পক্ষী রয়েছে যারা হয় মাংসাশী, নয় নিরামিষাশী, কিন্তু তারা কেউই ভগবানের ইচ্ছার অধীন প্রকৃতির নিয়ম লঙ্ঘন করে না। পশু, পক্ষী, সরীসৃপ এবং অন্যান্য সমস্ত নিম্ন স্তরের প্রাণীরা অবিচলিতভাবে প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলে; তাই তাদের ক্ষেত্রে কোন রকম পাপের প্রশ্ন ওঠে না, আবার বৈদিক নির্দেশগুলিও তাদের জন্য নয়। কেবল মনুষ্য-জীবনই হচ্ছে দায়িত্ব-সম্পন্ন জীবন। কেবল নিরামিষাশী হলেই যে প্রকৃতির নিয়মগুলির লঙ্ঘন পরিহার করা হয়, তা মনে করা ভুল। গাছেরও প্রাণ রয়েছে। প্রকৃতির নিয়ম হচ্ছে, একটি জীব আর একটি জীবের আহার। সুতরাং নিষ্ঠাবান নিরামিষাশী হওয়ার জন্য গর্ব করা উচিত নয়; আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানকে জানা। ভগবানকে জানার মতো উন্নত বুদ্ধিমত্তা পশুদের নেই, কিন্তু বৈদিক শাস্ত্রের শিক্ষা গ্রহণ করার মাধ্যমে এবং প্রকৃতির নিয়ম কিভাবে কার্য করে তা জেনে, এই জ্ঞানের যথার্থ সদ্ব্যবহার করার উপযুক্ত বুদ্ধি মানুষের রয়েছে। মানুষ যদি বৈদিক শাস্ত্রের নির্দেশ অবহেলা করে, তা হলে তার জীবন অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল হয়ে পড়ে। তাই মানুষের কর্তব্য হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানের প্রভুত্ব হৃদয়ঙ্গম করা। তার কর্তব্য হচ্ছে ভগবানের ভক্ত হওয়া, সব কিছু ভগবানের সেবায় উৎসর্গ করা এবং ভগবানকে নিবেদিত প্রসাদই কেবল গ্রহণ করা। তার ফলে তিনি তার কর্তব্য যথাযথভাবে সম্পাদন করতে পারেন। ভগবদ্গীতায় ভগবান সরাসরিভাবে বলেছেন যে, তিনি কেবল শুদ্ধ-ভক্তের প্রদত্ত নিরামিষ আহারই গ্রহণ করেন (ভগবদ্গীতা ৯/২৬)। তাই মানুষকে কেবল নিষ্ঠাবান নিরামিষাশী হলেই চলবে না, তাকে ভগবানের ভক্ত হতে হবে এবং তার সমস্ত আহার্য ভগবানকে নিবেদন করতে হবে। তারপর কেবল ভগবানের প্রসাদরূপে অথবা ভগবানের করুণারূপে তা গ্রহণ করতে হবে। যে ভক্ত এভাবেই সচেতন হয়ে আচরণ করেন, তিনিই যথাযথভাবে মানব-জীবনের কর্তব্য সম্পাদন করছেন। যে সমস্ত মানুষ ভগবানকে নিবেদন না করে আহার করে, তারা প্রকৃতপক্ষে তাদের পাপ ভক্ষণ করছে এবং পরিণামে এই পাপের ফলস্বরূপ তাদের নানারকম দুঃখকষ্ট ভোগ করতে হবে (ভগবদ্গীতা ৩/১৩)। সমস্ত পাপের মূল উৎস হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানের প্রভুত্ব অস্বীকার করে প্রকৃতির নিয়মের অবাধ্যতা করা। প্রকৃতির নিয়মের অবাধ্যতা অথবা ভগবানের আদেশ অমান্য করার ফলে মানুষের সর্বনাশ হয়। কেউ যদি যথার্থভাবে প্রকৃতিস্থ হন, প্রকৃতির নিয়ম সম্বন্ধে অবগত হন এবং অনর্থক আসক্তি অথবা বিরক্তির দ্বারা প্রভাবিত না হন, তা হলে ভগবান অবশ্যই তাকে কৃপা করেন, এবং তিনি তখন নিঃসন্দেহে তাঁর নিত্য আলয় ভগবানের কাছে ফিরে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। ~ কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ গ্রন্থসূত্র: শ্রীউপদেশামৃত (তাৎপর্য, শ্লোক ২) শ্রীঈশোপনিষদ (তাৎপর্য, মন্ত্র ১)
হিন্দুরা কেন গরুকে এতো সম্মান করে, কেন হিন্দুরা গোহত্যা করে না?!?
হিন্দুরা কেন গরুকে মা বলে? গরুর দুধ খেলেও, মাংস কেন খাও না? গরুর চামড়ার তৈরি পণ্য কেন ব্যবহার করেন? শাস্ত্রে কোথায় গোহত্যা নিষিদ্ধ? বিধর্মীদের দ্বারা কথিত এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হন না এমন কোনো হিন্দু মানুষ খুজে পাওয়া দুষ্কর। কেউ আবার এসব প্রশ্নের যথার্থ উত্তর না জানার ফলে হীনমন্যতায় ভুগেন ও স্বধর্মের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন। এভাবে ধীরে ধীরে কারও মানসিকতা ধর্মান্তরের দিকে এগোতে থাকে। কারণ বিধর্মীদের এমন সামান্য কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারায় বিধর্মীরা এই সুযোগে তাদের ধর্মের গুন গেয়ে বৈদিক ধর্ম সম্পর্কে অপব্যাখ্যা করে মগজ ধোলাই করে ধর্মান্তরিত করতে থাকে। তাই এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে, নিজ বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে ও নিন্দুকদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে পড়ুন . প্রশ্ন- হিন্দুরা কেন গরুকে মা বলে? গাভীকে কেন মা’’ ডাকা হয়; যেহেতু বিধর্মীরা সম্পূর্ণভাবে তমগুনাচ্ছন্ন হওয়ার ফলে এই দৃষ্টিভঙ্গির যথার্থতা বিশ্লেষণে সক্ষম নয়, তাই আদিযুগ থেকেই তাদের এমন প্রশ্ন ছিলো। চৈতন্য চরিতামৃত আদিলীলা/১৭/১৫৩ নং শ্লোকে মুসলমান চাঁদকাজির সাথে বিতর্কের মধ্যে উক্ত প্রশ্নের খুব সুন্দর যৌক্তিক উত্তর দেখা যায়। মহাপ্রভু তাকে বলেছেন- প্রভু কহে, গোদুগ্ধ খাও, গাভী তোমার মাতা। বৃষ অন্ন উপজায়, তাতে তেঁহো পিতা ॥১৫৩৷৷ সরলার্থ: মহাপ্রভু বললেন, “আপনি গরুর দুধ খান; সেই সূত্রে গাভী হচ্ছে আপনার মাতা। আর বৃষ (ষাড়) অন্ন উৎপাদন করে, যা খেয়ে আপনি জীবন ধারণ করেন; সেই সূত্রে সে আপনার পিতা। তাই গরু গাভী কিংবা ষাড়, বৈদিক সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বলা বাহুল্য কেবল (গোমাতা) গরুকেই মা ডাকা হয় বিষয়টি এমন নয়। পবিত্র “বেদ’’ আমাদেরকে মনুষ্যত্বের অধিকারী ও বিবেকবান হতে শেখায় তাই বেদ শাস্ত্রে ০৭ (সাত) ধরণের মায়ের উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। চাণক্য পণ্ডিত বলেন- “আদৌ-মাতা গুরুঃ পত্নী ব্রাহ্মণী রাজ-পত্নীকা।ধেনর ধাত্রী তথা পৃথ্বী সপ্তেতা মাতর স্মৃতা ॥” ১) জন্মদাত্রী ২) ধাত্রী ৩) ধরিত্রী ৪) গোমাতা ৫) বেদমাতা ৬) ব্রাহ্মণ পত্নী ৭) রাজমাতা তার মধ্যে গাভী বা গোমাতা অন্যতম। গরুকে মা’’ বলা হয়, বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে দেখা যায়- জন্মের পর থেকে আমরা মায়ের দুধ খাই ২-৩ বছর পর্যন্ত অতঃপর, আমাদের পুষ্টি নির্ভর করে গাভীর দুধের উপর। গরুর দুধের চেয়ে উৎকৃষ্ট দুধ আর নেই। বুদ্ধিমান মানুষ মাত্রই তা জানেন। যেহেতু, মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে গরুর দুধই আমাদের পুষ্টি যোগায় সেহেতু, এমন উপকারী গাভীকে মায়ের সম্মান প্রদর্শন করার বিষয়টি বৈদিক শাস্ত্রে দেখতে পাওয়া আশ্চর্যজনক কিছু নয়! বরং বিবেকবান ব্যক্তি মাত্রই গাভীকে মায়ের সম্মান প্রদর্শন করেন। প্রশ্ন- গরুর দুধ খেলেও, মাংস কেন খাও না? যেকেউ’ই মায়ের দুধ পান করে বড় হয়, কিন্তু তাই বলে কি সে মায়ের মাংস ভক্ষন করে?!? না, কখনই করে না। তো কিভাবে যাঁকে মা’’ বলে সম্মান প্রদর্শন করা হয় তাকে হত্যা করে তার মাংস ভক্ষণ করে কেউ? এটা পাশবিক ও বর্বরতা ছাড়া কিছুই হতে পারে না। এখন ভাবতে পারেন তাহলে ষাড় গরু হত্যা/ভক্ষণ করা যেতে পারে? এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু চাঁদকাজীকে আরও কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলেন– পিতা – মাতা মারি’ খাও এবা কোন্ ধর্ম। কোন্ বলে কর তুমি এমত বিকর্ম ॥১৫৪॥ সরলার্থ: যেহেতু বৃষ ও গাভী আপনার পিতা ও মাতা, তা হলে তাদের হত্যা করে তাদের মাংস খান কি করে? এটি কোন ধর্ম? কার বলে আপনি এই পাপকর্ম করছেন? (চৈতন্য চরিতামৃত: আদিলীলা/১৭/১৫৪) পূর্বোক্ত চৈতন্য চরিতামৃত বর্ণনায় আমরা দেখতে পেয়েছি বৃষকে কেন পিতার সাথে তুলনা করা হয়েছে। তো একটু গভীর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখুন বৈদিক সভ্যতায় জমি চাষাবাদের জন্য বৃষ (ষাড়) ব্যবহৃত হয়। গাভী যেমন মায়ের পরিপূরক হিসেবে আমাদের দুধ প্রদান করেন এবং তেমনিভাবে পরিবারে পিতা যেমন কঠোর পরিশ্রম করে খাদ্যের যোগান দেন সেভাবে একটি ষাড় জমি চাষবাসের দ্বারা খাদ্য উৎপাদনে সহযোগিতা করে, তাই বৃষকে পিতা বলা হয়। বেদে গোহত্যা ষাড় হউক বা গাভী অর্থাৎ, গরুকে হত্যা করা কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। যদি কোনো সংস্কৃতি এমন উপকারী প্রাণীকে হত্যা করে তার মাংস ভক্ষণ করতে শিখায়, সেটা কোনো সভ্য সংস্কৃতি হতেই পারে না। অতএব, বৈদিক শাস্ত্র আমাদের উপকারীর উপকার শিকার করতে শিখায়। যে গরু/গাভী আমাদের এহেন উপকার করে তাকে আমরা হত্যা করতে পারিনা। এজন্যই বৈদিক সংস্কৃতি, শিক্ষা মহান! প্রশ্ন- গরুর চামড়ার তৈরি পণ্য কেন ব্যবহার করেন? সোজা উত্তর- যারা ধর্ম জানেন, সাধুরা গরুর চামড়ার তৈরি পণ্য ব্যবহার করেন না। কোনো ব্যক্তি যদি করে থাকে তবে সেটা তার ব্যাক্তিগত অজ্ঞতার কারণে, বিশেষ কোনো পরিস্থিতির কারণে কিংবা নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য ব্যবহার করেন। তবে শাস্ত্রে গো থেকে প্রাপ্ত সমস্ত কিছুকেই পরম পবিত্র ঘোষণা করা হয়েছে। তেমনি গো চর্মকেও পবিত্র বলা হয়েছে। মৃদঙ্গে তা ব্যবহৃত হয়, যে মৃদঙ্গ ভগবদ্কীর্তনে ভগবানের প্রীতি বিধানে বাদিত হয়। এক্ষেত্রে, বোঝার বিষয় হচ্ছে- চামড়া সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গোহত্যা করা হয়না, কিংবা কারও ব্যক্তিগত ইন্দ্রিয় উপভোগের জন্য তা করা হয়না। প্রাকৃতিকভাবেই মৃত গরুর চর্ম মৃদঙ্গে ব্যবহৃত হয়। সুক্ষ্ম বিষয়টি হচ্ছে, সেই গরু যাঁর শরীরের চর্ম ভগবানের প্রীতি বিধানার্থে ব্যবহৃত মৃদঙ্গে যুক্ত হয়, সেটা তার জন্য পরম সৌভাগ্যজনক। প্রশ্ন- শাস্ত্রে কোথায় গোহত্যা নিষিদ্ধ? বেদ শাস্ত্রে গোহত্যা বিষয়ে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং গোহত্যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বটে। পাশাপাশি বৈদিক শাস্ত্রে যেকোনো পশুকে নির্বিচারে হত্যা কিংবা তার মাংস ভক্ষণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। নিম্নরূপ- গোমাতাকে কোন কারণে হত্যা করা যাবে না, তাদের জল, সবুজ তৃণ দিয়ে সমৃদ্ধ করতে হবে। (ঋগ্বেদ: ১/১৬৪/৪০) “যিনি রুদ্রগণের মাতা, বসুগণের দুহিতা, আদিত্যের ভগিনী, অমৃতের আবাস্থল, হে জলগণ! সেই নির্দোষ অদিতি গো’দেবীকে (গাভী) হিংসা (হত্যা) করিও না।” (ঋগ্বেদ: ৮/১০১/১৫) “হে অঘ্না (বধের অযোগ্য) গাভী! তুমি সর্বদা তৃণ ভক্ষণ পূর্বক বিচরণ করতে থাকো এবং শুদ্ধ জল পান করতে থাকো।” (অথর্ববেদ: ৭/৭৩/১১) “গাভীর মাংস ভক্ষণ অনুচিত” (অথর্ববেদ: ৯/৮/৯) “গাভী অবধ্য অর্থাৎ, হত্যার অযোগ্য” (অথর্ববেদ: ৬/৭০/১,২) “গাভীর অপর নাম অঘ্ন্যা, এরা অবধ্য অর্থাৎ হত্যার অযোগ্য। যে এই সকল গাভী ও বৃষকে হত্যা করে সে মহাপাপ করে।” (মহাভারত: শান্তিপর্ব/২৬২/৪৭) “যে মানুষ শাস্ত্রীয় নিষেধ অগ্রাহ্য করিয়া মাংস বিক্রয়ের জন্য গো’বধ করে কিংবা গো-মাংস ভক্ষণ করে অথবা যাহারা মাংসার্থী হইয়া গো’বধের জন্য গো’ঘাতককে অনুমতি করে; তাহাদের মধ্যে ঘাতক, খাদক ও অনুমতিদাতা সেই গরুর যতগুলি লোম থাকে, তত বৎসর নরকে নিমগ্ন থাকে॥” (মহাভারত: অনুশাসন পর্ব/৫৯/৬৫,৬৬) “গাভী ও ষাঁড় কদাপি ভক্ষণযোগ্য নয়।” (শতপথ ব্রাহ্মণ: ৩/১/২/২১) অথর্ববেদ ২য় কান্ড ২৬ নং সূক্তে গো তথা পশুদিগকে রক্ষার বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে এবং অথর্ববেদ: ৭ম কাণ্ড ৭৫ নং সূক্তে গাভীকে যত্ন করে পালন ও যেন কোনোভাবে কারো আক্রমনের শিকার যেন না হয় তার বর্ণনা দেখা যায়। এছাড়াও বৈদিক শাস্ত্রসমূহের অজস্র জায়গায় গোহত্যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে ও নিষেধাজ্ঞার যথার্থ কারণও বর্ণিত রয়েছে। এইতো সেদিন ৫’’শ বছর পূর্বে বেদ শাস্ত্রের অগাধ ও অপ্রতিরোধ্য পাণ্ডিত্যের অধিকারী শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নবাব চাঁদকাজীর সাথে বিতর্ককালে বলেছেন- “গো-অঙ্গে যতলোম, তত সহস্র বৎসর। গোবধী রৌরব মধ্যে পচে নিরন্তর।।” – (চৈ:চ: আদি: ১৭/১৬৬) সরলার্থ: “যে ব্যক্তি গো/গরু হত্যা করে, তাদের সকলকেই সেই নিহত গরুর লোম পরিমিত বৎসরকাল রৌরব নরকে নিমগ্ন থাকতে
মনসার পূজায় কি পশুবলি বৈধ !? “অপযুক্তি খন্ডন – ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ ও দেবীভাগবতম সমীক্ষা।”
মনসা দেবী সম্পর্কে সনাতন ধর্মের তিনটি প্রধান শাস্ত্র, যথা- মহাভারতের আদিপর্ব, শ্রীব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের প্রকৃতিখন্ড ও দেবীভাগবত উপপুরাণের ৯ম স্কন্ধে আলোকপাত করা হলেও এই তিন শাস্ত্রের কোথাও মনসা পূজায় পশুবলি ন্যূনতম উল্লেখ পাওয়া যায় না। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে কিছু অপপ্রচারক নিজেদের অন্ধবুদ্ধিতার পরিচয় দিয়ে হঠকারিতা করার নিমিত্তে এই সমস্ত শাস্ত্র হতে দাবি করেন মনসা পূজা নাকি পশুবলির বিধান আছে!! আসুন এ সমস্ত অপপ্রচারকগণের অপযুক্তিসমূহের খন্ডন দেখে নিই!! অপপ্রচারকগণের দাবিঃ শাস্ত্রের পূর্বাপর বাক্য গোপণ করে অপপ্রচারকগণ মূল শাস্ত্রের মাঝখান থেকে হুট করে যে সমস্ত শ্লোক তুলে এনে দাবী করে মনসা পূজায় পশুবলি প্রযোজ্য সে সমস্ত শ্লোক হলো- নত্বা ষোড়শোপচারং বলিঞ্চ তৎপ্রিয়ং তদা। প্রদদৌ পরিতুষ্টশ্চ ব্রহ্মাবিষ্ণুশিবাজ্ঞয়া।। [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ,প্রকৃতিখন্ড, ৪৬।১১৭; দেবীভাগবত ৯।৪৮।১১৪ ] অনুবাদঃ ব্রহ্মা বিষ্ণু ও শিবের আজ্ঞায় দেবেন্দ্র কর্তৃক মনসাদেবী ষোড়শোপচারে পূজিতা হইলে দেবরাজ তাহার প্রিয় বলি প্রদান করিলেন। পঞ্চম্যাং মনসাখ্যায়াং দেব্যৈ দদ্যাচ্চ যো বলিম্। ধনবান্ পুত্রবাংশ্চৈব কীর্তিমান্ স ভবেদ্ ধ্রুবম্।। [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ,প্রকৃতি খণ্ড,৪৬।৯ ; দেবীভাগবত ৯।৪৮।৯ ] অনুবাদঃ পঞ্চমী তিথিতে দেবী মনসাকে যে ব্যক্তি বলি প্রদান করে, সে ধনবান, কীর্তিমান এবং পুত্রবান হয়। অপযুক্তির খন্ডনঃ প্রথমত অপপ্রচারকগণের দাবীকৃত শ্লোক দুটিতে কেবল ‘বলি’ শব্দের উল্লেখ আছে, কিন্তু কোথাও ‘পশুবলি’ শব্দের উল্লেখ নেই। এ সমস্ত অন্ধবুদ্ধি সম্পন্ন অপপ্রচারকগণ ‘বলি’ শব্দটি দেখলেই ভেবে বসেন সেখানে ‘পশুবলি’-র কথা বলা হচ্ছে! কি হাস্যকর!! দাবীকৃত শ্লোক দুটিতে ‘বলি’ শব্দ দ্বারা আসলে পশুবলিকে নির্দেশ করা হয়েছে নাকি সাত্ত্বিকী বলি তথা বিষ্ণুপ্রসাদ নিবেদন করার কথা বলা হয়েছে তা নিয়ে নিম্নে ক্রমান্বয়ে আলোচনা করা হলো- বিশ্লেষণের সুবিধার্থে শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ ও দেবীভাগবত থেকে মনসা দেবী কি পরিচয় তা দেখে নেওয়া যাক- আত্মারামাচ সা দেবী বৈষ্ণবী সিদ্ধ যোগিনী। ত্রিযুগঞ্চ তপস্তপ্ত্বা কৃষ্ণস্য পরমাত্মনঃ ॥ [শ্রীব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ,প্রকৃতি খণ্ড, ৪৫/৪ ও দেবীভাগবত ৯/৪৭/৪] অনুবাদঃ মনসা দেবী আত্মারামা ও ‘বৈষ্ণবী’ নামে বিখ্যাত আছেন। তিনি যুগত্রয় পরমাত্মা কৃষ্ণের প্রীতিকামনায় তপস্যা করিয়া সিদ্ধযোগিনী হন। শুদ্ধসত্ত্বস্বরূপা ত্বং কোপহিংসাবিবর্জিতা। ন চ শপ্তো মুনিস্তেন ত্যক্তয়া চ ত্বয়া যতঃ ।। ত্বং ময়া পূজিতা সাধ্বি জননী চ যথাদিতিঃ । [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ,প্রকৃতি খণ্ড,৪৬।৩০ এবং দেবীভাগবত ৯।৪৮।৩০ ] অনুবাদঃ দেবরাজ ইন্দ্র স্তুতি করলেন, ” মনসা! তুমি শুদ্ধসত্ত্ব স্বরূপা ও হিংসা ক্রোধ বিবর্জিতা। যখন তুমি স্বীয় পতি জরৎকারু কর্তৃক পরিত্যক্ত হইয়াও সেই মুনিবকে শাপ প্রদান কর নাই, তখন তোমার ন্যায় শমগুণ সম্পন্না সাধ্বী আর কে আছে? হে দেবি ! আমার জননী অদিতির ন্যায় তুমি যে আমার পূজ্য হইয়াছ তাহার কিছুমাত্র সন্দেহ নাই।” এখানে স্পষ্টত মনসা দেবী একজন বৈষ্ণবী দেবী এবং তিনি শুদ্ধসত্ত্বস্বভাব এবং হিংসাবর্জিতা দেবী। একইভাবে শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের প্রকৃতিখন্ডের ১।৬৯, ৪৫।৯, ৪৫।১৫ ইত্যাদি শ্লোকে এবং দেবীভাগবতমের ৯।১।৭৪, ৯।৪৭।৯, ৯।৪৭।১৫ আদি শ্লোকেও মনসাদেবীকে বারংবার বৈষ্ণবীদেবী, বিষ্ণুভক্তা, বিষ্ণুপূজাপরায়না ইত্যাদি নামে স্তুতি করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই একজন শুদ্ধসত্ত্বস্বভাব হিংসাবর্জিতা বৈষ্ণবীদেবীর পূজায় রক্তরঞ্জিত পশুবলির কোন প্রকরণই থাকতে পারেনা। তাই আলোচিত শাস্ত্রে অর্থাৎ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে স্পষ্টভাবে বৈষ্ণবীদেবীর পূজা যে পশুবলি ব্যতীত হবে তা বলা আছে – উৎসর্গকৰ্ত্তা দাতা চ ছেত্তা পোষ্টা চ রক্ষকঃ। অগ্রপশ্চান্নিবদ্ধা চ সপ্তৈ তে বধভাগিনঃ ॥ যো যং হন্তি সতং হন্তি চেতি বেদোক্ত মেবচ। কুৰ্ব্বস্তি বৈষ্ণবী পূজাং বৈষ্ণবাস্তেন হেতুনা ॥ [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, ৬৫।১১,১২ ] অনুবাদঃ “উৎসর্গকর্তা, দাতা, ছেত্তা, পোষক, রক্ষক ও অগ্রপশ্চাৎ নিবন্ধা এই সপ্তজন পশুবলির বধভাগী বলিয়া নির্দিষ্ট আছে। বেদে নির্দিষ্ট আছে, যে যাহাকে বিনাশ করে সে তাহার হন্তা(হত্যাকারী) হয়। এইজন্য বৈষ্ণব মহাত্মারা বৈষ্ণবী দেবীর সাত্ত্বিকী পূজা করিয়া থাকেন।” এখন কেউ যদি এ শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করে বৈষ্ণবীদেবীর পূজায় পশু বলি দেয় তবে অবশ্যই ভীষণ পাপের ভাগী হতে হবে -একথাও উক্ত শাস্ত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে – “বলিদানেন.. হিংসাজন্যঞ্চ পাপঞ্চ লভতে নাত্রসংশয়ঃ॥” [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, ৬৫।১০ ] অনুবাদঃ পশুবলিতে হিংসার জন্য মানবগণের যে পাপসঞ্চার হয় তাহাতে আর সন্দেহ নাই ॥ উক্ত শাস্ত্রে তাই বৈষ্ণবীদেবীগণকে শুদ্ধসাত্ত্বিক রীতিতে পূজা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- “জীবহত্যা বিহীনায়া বরা পূজাচ বৈষ্ণবী ॥” [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, ৬৪।৪৭] অনুবাদঃ বৈষ্ণবীদেবীর পূজায় জীবহত্যা হয় না– তাই এটি শ্রেষ্ঠ পূজা। কিন্তু অপপ্রচারকগণ এ সমস্ত শ্লোক গোপন রাখে নিজেদের হীন স্বার্থসিদ্ধি তথা পশুবলির মৌসুমী ব্যবসা ও জিহ্বা লালসা মিটানোর লোভে মন্দিরের পবিত্র স্থানকে কসাইখানাতে পরিনত করেন। তাহলে এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, মনসা পূজায় ইন্দ্র কর্তৃক পূজা উপাচার সমেত যে ‘বলি’ দেওয়ার কথা শাস্ত্রে বলা হচ্ছে তা যদি ‘পশুবলি’ না হয়, তবে এখানে ‘বলি’ দ্বারা কি বুঝাচ্ছে? নারায়ণাবতার শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস প্রণীত পদ্মপুরাণ এর উত্তরখণ্ডের ২৫৩ নং অধ্যায়ে মনসা দেবীর গুরু ভগবান শ্রীশিব দেবতাদের উদ্দেশ্যে বিষ্ণুপ্রসাদ বা কৃষ্ণপ্রসাদকেই বলিরূপে নিবেদনের বিধান দিয়েছেন স্পষ্টভাবে এবং এও বলেছেন যারা উক্ত স্থানে পশুহিংসা করেন তারা নিশ্চিতরূপে নরকভাগী হয়- শ্রী শিব উবাচঃ হরের্ভুক্তাবশেষেণ বলিস্তেভ্যো বিনিক্ষিপেৎ। হোমঞ্চৈব প্ৰকুব্বীত তচ্ছেষেণৈব বৈষ্ণবঃ । হরের্নিবেদিতং সম্যগদেবেভ্যো জুহুয়াদ্ধবিঃ॥ পিতৃভ্যশ্চাপি তদ্দদ্যাৎ সর্ব্বমান্নত্যমাপ্নুয়াৎ। প্রাণিনাং পীড়নং যত্তদ্বিদুষাং নিরয়ায় বৈ ॥ অদত্তঞ্চৈব যৎকিঞ্চিৎ পরস্বং গৃহ্যতে নরৈঃ । স্তেয়ং তদ্বিদ্ধি গিরিজে নরকসৈব কারণম্ ॥ [ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ২৫৩। ১০৭-১০৯ ] অনুবাদঃ ভগবান শিব বললেন, “হরির ভুক্তাবশেষ (কৃষ্ণপ্রসাদ) দ্বারা দেবতাদের বলিপ্রদান করবে, হরির ভুক্তাবশিষ্ট(কৃষ্ণপ্রসাদ) হবি দ্বারা দেবতাদের হোম করবে । হরিকে সম্যক্রূপে নিবেদন করে পরে দেবগণকে হবি হোম করবে। পিতৃগণকেও তা-ই প্রদান করবে। এইরূপে কৃতকাৰ্য্য সমস্তই অনন্ত ফলপ্রদ হয়ে থাকে। প্রাণিগণের পীড়নকে বিজ্ঞগণ নরকভোগের কারণ হিসেবে ব্যাখা করে থাকেন। মনুষ্য নিজের জীবনে অন্যজীব কর্তৃক যে নিষ্ঠুর ব্যবহার আশা করে না, সে নিষ্ঠুর আচরণ যদি সে অন্য জীবের উপর করে,তবে হে গিরিজে! সে মনুষ্য অবশ্যই নরকভোগী হবে।” শুধু মনসাদেবীর গুরু ভগবান শিবই নয়, মনসাদেবীর আরাধ্য পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণও যজ্ঞে পশুবলির নিন্দা করেছেন- শ্রীকৃষ্ণ উবাচ- তে মে মতমবিজ্ঞায় পরোক্ষং বিষয়াত্মকাঃ। হিংসায়াং যদি রাগঃ স্যাদ্যজ্ঞ এব ন চোদনা। হিংসাবিহারা হ্যালব্ধৈঃ পশুভিঃ স্বসুখেচ্ছয়া। যজন্তে দেবতা যজ্ঞৈঃ পিতৃভূতপতীন্খলাঃ৷৷ [শ্রীমদ্ভাগবতম, স্কন্ধ-১১ অধ্যায়-২১, শ্লোক ২৯-৩০ (গীতপ্রেস )] অনুবাদঃ “পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বললেন- যদি পশু হিংসা এবং মাংসভক্ষণ কার্যে অনুরাগ হেতু তার ত্যাগ সম্ভব না হয় তাহলে যজ্ঞ সম্পাদনের মাধ্যমে সেটি গ্রহণ করো—এই বিধান কখনই উত্তম বলে স্বীকৃত হতে পারে না; তাকে কেবল স্বাভাবিক প্রবৃত্তির ভিন্ন রূপে স্বীকৃতি মাত্র বলা চলে। সন্ধ্যা বন্দনাদিসম অপূর্ব সুন্দর বিধি ওই সকল বিধির তুলনায় বহুলাংশে প্রকৃষ্ট। এইভাবে আমার অভিপ্রায় না জেনে বিষয়লোলুপ ব্যক্তিগণ পশুহিংসায় মত্ত হয়ে পড়ে। তারা কপটতা হেতু ইন্দ্রিয়তৃপ্তির অভিলাষে পশুহিংসা দ্বারা প্রাপ্ত মাংস দ্বারা যজ্ঞ সম্পাদন করে দেবতা, পিতৃপুরুষ ও ভূতপতি আদি যজনের অভিনয়-ক্রিয়া করে থাকে৷৷” এমনকি বেদও যজ্ঞে ছাগবলি,পশুবলিকে প্রশ্রয় দেয় না, বেদে বীজ দ্বারা যজ্ঞ করার নির্দেশ। মহাভারতের আদিপর্বে মনসাদেবীর উপাখ্যান পাওয়া যায়। সে মহাভারতের শান্তিমহাপর্বে যজ্ঞে ছাগবলি,পশুবলি যে বেদবিরুদ্ধ তার স্পষ্টত উল্লেখ আছে- ঋষয় উচুঃ বীজৈর্যজ্ঞেষু ষষ্টব্যমিতি বৈ বৈদিকী শ্ৰুতিঃ। অজসংজ্ঞানি বীজানি ছাগং নো হন্তমর্হথ।। নৈষ ধৰ্ম্মঃ সতাং দেবা যত্ৰ বধ্যেত বৈ পশুঃ । ইদং কৃতযুগং শ্রেষ্ঠং কথং বধ্যেত বৈ পশুঃ ॥ [ মহাভারত, শান্তিপর্ব, ৩২৩।৭-৮ ] অনুবাদঃ ঋষিগণ বলিলেন—‘বীজ দ্বারা যজ্ঞ করিবে’ ইহাই বেদে শুনা যায়। অতএব ‘অজ’ শব্দের অর্থ বীজ; সুতরাং আপনারা ছাগবধ করিতে পারেন না।। হে দেব! যজ্ঞে পশুবধ সজ্জনের ধর্ম্ম নহে। এটা
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রের অর্থ
১. ✿ হরে — সর্বচেতহরঃ কৃষ্ণস্ তস্য চিত্তং হরত্য্ অসৌ । বৈদগ্ধীসারবিস্তারৈর্ অতো রাধা হরা মতা ॥ ~ শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রের মহামনোহর সৌন্দর্য সকলকে বিমুগ্ধ করে। কিন্তু শ্রীমতী রাধিকা তাঁর অনুপম বিমোহিনী চাতুর্থ-সৌন্দর্য-গুণরাশি দ্বারা এমনকি শ্যামচিত্তকেও বিমোহিত করেন। এইজন্য তিনি “হরা” নামে খ্যাত হন, সম্বোধনে “হরে”। ২. ✿ কৃষ্ণ — কর্ষতি স্বীয়লাবণ্যমুরলীকলনিঃস্বনৈঃ । শ্রীরাধাং মোহনগুণালঙ্কৃতঃ কৃষ্ণ ঈর্যতে ॥ ~ সর্বচমৎকারকারী গুণরাশিতে বিভূষিত শ্রীকৃষ্ণ তাঁর যৌবনললিত রূপসুষমা ও সর্বচিত্তহারী বেণুমধুরিমা দ্বারা শ্রীমতী রাধিকাকেও আকৃষ্ট করেন। সেইজন্য তিনি “কৃষ্ণ” নামে খ্যাত। ৩. ✿ হরে — শ্রূয়তে নীয়তে রাসে হরিণা হরিণেক্ষণা একাকিনী। রহঃকুঞ্জে হরেয়ং তেন কথ্যতে॥ ~উন্নত সুবিজ্ঞ ভক্তগণ বলেন যে রাসবিলাসী শ্রীকৃষ্ণ রাসস্থলি হতে মৃগনয়না রাধিকাকে হরণ করেন এবং রাসমণ্ডলবর্তী এক নিভৃত নিকুঞ্জে নিয়ে যান। সেই জন্য রাধিকাকে বলা হয় “হরা”, সম্বোধনে “হরে”। ৪. ✿ কৃষ্ণ— অঙ্গশ্যামলিমস্তোমৈঃ শ্যামলীকৃতকাঞ্চনঃ । রমতে রাধযা সার্ধং কৃষ্ণো নিগদ্যতে॥ ~কৃষ্ণ যখন রাধিকার সঙ্গে কেলিবিলাস করেন, তখন তাঁর শ্রীঅঙ্গ নিঃসৃত অপূর্ব ঘননীল প্রভা অত্যুজ্জ্বল স্বর্ণকেও নীলকান্ত মণির ন্যায় প্রতিভাত করায়। সেইজন্য তিনি ‘কৃষ্ণ’ নামে প্রসিদ্ধ হন। ৫. ✿ কৃষ্ণ — কৃত্বারণ্যে সরঃশ্রেষ্ঠং কান্তযানুমতস্ তযা । আকৃষ্য সর্বতীর্থানি তজ্জ্ঞানাৎ কৃষ্ণ ঈর্যতে॥ ~রাধিকার অভিলাষ অনুসারে লীলারঙ্গকুশল শ্রীহরি শ্যামকুন্ড প্রকটিত করেন, এবং সর্বতীর্থকে সেখানে আকর্ষণ করেন। যে সমস্ত ভজনবিজ্ঞগন এই রহস্য জানেন, তাঁরা তাঁকে “কৃষ্ণ” নামে অভিহিত করে থাকেন। ৬.✿ কৃষ্ণ— কৃষ্যতে রাধয়া প্রেম্ণা যমুনাতটকাননম্ । লীলয়া ললিতশ্চাপি ধীরৈঃ কৃষ্ণ উদাহৃতঃ॥ ~শ্রীহরি যদিও যমুনাপুলিনবর্তী মঞ্জুল কেলিকুঞ্জসমূহে বিবিধ লীলাকেলি বিলাস করেন, তিনি শ্রীরাধিকার উপমারহিত প্রেমের প্রভাবে সম্পূর্ণরূপে বিমোহিত হয়ে যান। এইজন্য বিজ্ঞগণ তাঁকে “কৃষ্ণ” বলে অভিহিত করে থাকেন। ৭. ✿ হরে— হৃতবান্ গোকুলে তিষ্ঠন্ন্ অরিষ্টং পুষ্টপুঙ্গবম্ । শ্রীহরিস্তং রসাদ্ উচ্চৈ রাযতীতি হরা মতা ॥ ~ কৃষ্ণ যখন অরিষ্টাসুরকে বধ করেন, তখন শ্রীরাধা উচ্চস্বরে কীৰ্ত্তন করেছিলেন, “হরি! হরি!” ফলে শ্রীরাধা “হরে” বলে আখ্যায়িত হন (সম্বোধনে “হরে”)। ৮. ✿ হরে— হ্যস্ফুটং রায়তি প্রীতিভরেণ হরিচেষ্টিতম্ । গায়তীতি মতা ধীরৈর্ হরা রসবিচক্ষণৈঃ॥ ~ প্রেমাতিশয্যবশতঃ শ্রীরাধিকা কখনো কখনো উচ্চস্বরে শ্রীকৃষ্ণ – লীলাসমূহ গান করতে থাকেন এবং অন্যান্য সময়ে তিনি মৃদু, অস্পষ্ট সুরে কৃষ্ণলীলা গান করেন। সেজন্য রসভিজ্ঞ ভক্তগণ তাঁকে “হরা” (সম্বোধনে “হরে”) বলে অভিহিত করেন। ৯. ✿ হরে— রসাবেশপরিস্রস্তাং জহার মুরলীং হরেঃ । হরেতি কীর্তিতা দেবী বিপিনে কেলিলম্পটা॥ ~যখন তীব্র প্রেমবিহ্বলতা সম্ভাত দিব্যানন্দ শ্রীকৃষ্ণকে অভিভূত করে, তখন কখনো কখনো তিনি বৃন্দাবনের বনে তাঁর বাঁশিটি হারিয়ে ফেলেন। সেই অবসরে রাধিকা তাঁর বাঁশিটি হরণ করেন, এবং সেজন্য তিনি “হরা” নামে অভিহিত হন। (সম্বোধনে “হরে”) ১০. ✿ রাম — গোবর্ধনদরীকুঞ্জে পরিরম্ভবিচক্ষণঃ । শ্রীরাধাং রময়ামাস রামস্ তেন মতো হরিঃ॥ শ্রীকৃষ্ণ গোবর্দ্ধনের কুঞ্জসমূহে রাধিকার সঙ্গ আনন্দবিলাস বা রমন করেন এইজন্য তিনি “রাম” নামে অভিহিত হন। ১১. ✿ হরে— হন্তি দুঃখানি ভক্তানাং রাতি সৌখ্যানি চান্বহম্ । হরা দেবী নিগদিতা মহাকারুণ্যশালিনী॥ ~ পরম করুণাময়ী শ্রীরাধা ভক্তগণের ক্লেশ হরণ করেন (হরি) এবং প্রত্যহ তাদের অন্তরে আনন্দ আস্বাদন করান (রতি)। এইভাবে তিনি “হরা” নামে অভিহিত হন (সাম্বোধনে “হরে”)। ১২. ✿ রাম— রমতে ভজতো চেতঃ পরমানন্দবারিধৌ । অত্রেতি কথিতো রামঃ শ্যামসুন্দরবিগ্রহঃ॥ ~যে সমস্ত ভক্তগণ শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করেন, তাদের মন অনুক্ষণ দিব্যানন্দের সর্বোন্নত মহাবারিধিতে সম্ভারণ করতে থাকে। এভাবে সেই ঘনশ্যামকান্তি কৃষ্ণ “রাম” নামে আখ্যাত হন। ১৩. ✿ রাম— রময়তি অচ্যুতং প্রেম্ণা নিকুঞ্জবনমন্দিরে । রামা নিগদিতা রাধা রামো যুতস্ তয়া পুনঃ॥ ~পুষ্পবিথীকাময় কুঞ্জে শ্রীরাধা তাঁর সর্বাতিশায়ী অনন্যা প্রেমের দ্বারা শ্রীহরির প্রীতিবিধান করেন। এই সময় তাদের নিভৃত নিকুঞ্জবিলাস কালে আনন্দঘন শ্যাম শ্রীরাধাকে অসীম আনন্দ প্রদান করে থাকেন। সেজন্য তাকে বলা হয় “রাম”। ১৪. ✿ রাম— রোদনৈর্গোকুলে দাবানলম্শযতি হ্যসৌ । বিশোষয়তি তেনোক্তো রামো ভক্তসুখাবহঃ॥ ~ দাবানল ভয়ে ত্রস্ত ব্রজবাসীগণকে আতঙ্কিতভাবে চিৎকার করতে দেখে শ্রীকৃষ্ণ অনায়াসে ঐ দাবাগ্নি গ্রাস করে নেন। এইজন্য শ্রীকৃষ্ণকে বলা হয় রাম, কেননা তিনি অনলগ্রাস থেকে উদ্ধার করার মাধ্যমে ব্রজবাসীগনের আনন্দবিধান করেন এবং তিনি সর্বদাই তাঁর ভক্তগনকে তাঁর সঙ্গে আনন্দ করার জন্য আয়োজন করে থাকেন। ১৫. ✿ হরে— নিহন্তুম্ অসুরান্ যাতো মথুরাপুরম্ ইত্য্ অসৌ । তদাগমদ্ রহঃকামো যস্যাঃ সাঽসৌ হরেতি চ॥ ~কংস ও অন্যান্য দুরাচারীদের বধ করার জন্য শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় গমন করেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে অন্তরঙ্গ লীলাসুখ সম্ভোগের জন্য শ্রীরাধিকা কৃষ্ণকে বৃন্দাবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। সেজন্য রাধিকা “হরা” নামে অভিহিত হন। ১৬. ✿ হরে— আগত্য দুঃখহর্তা যো সর্বেষাং ব্রজবাসিনাম্ । শ্রীরাধাহারিচরিতো হরিঃ শ্রীনন্দনন্দনঃ ॥ ~ কৃষ্ণ যখন বৃন্দাবনে প্রত্যাগমন করেন, তখন তিনি সকল ব্রজবাসীদের ক্লেশ অপনয়ন করেন। তিনি “হরি” নামে প্রসিদ্ধ (সম্বাধনে “হরে”) কেননা তিনি তার অপূর্ব লীলাবিলাস দ্বারা রাধিকার চিত্ত হরণ করেন। — শ্রীল জীব গোস্বামী প্রভুপাদ (স্বধর্মম্ কর্তৃক সংগ্রহীত ও অনুবাদিত। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যসহকারে শেয়ার করার জন্য অনুমোদিত।)
শ্রীল প্রভুপাদ কেন যিশু খ্রিস্টকে ভাগবত ধর্মের প্রচারক বলেছেন?!!
শ্রীল প্রভুপাদ কোন মনগড়া কথা বলেন না। পাশ্চাত্যে গিয়ে ১০ হাজার খ্রিস্টানকে সনাতন ধর্মে প্রত্যাবর্তন করানো কোন মনগড়া কথা বলে সম্ভব নয়, অবশ্যই যথেষ্ট এভিডেন্স আছে এ ব্যাপারে। বাইবেলে যিশুর জীবনের ১২ হতে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত ঘটনাবলির কোন বর্ণনা নেই। খ্রিস্টানদের অন্যান্য একাধিক গ্রন্থগুলো হতে আমরা জানতে পারি, যিশু এ সময় ভারতভূমিতে এসেছিলেন এবং ভারতের উড়িষ্যার শ্রী জগন্নাথপুরী ধামে তিনি ব্রহ্মচারী শিষ্যরূপে বেদ ও বৈদিক শাস্ত্রসমূহ অধ্যয়ন করেছিলেন। জগন্নাথপুরীর বর্তমান শঙ্কর মঠের মঠাধীশ নিশ্চলানন্দ সরস্বতী এ বিষয়টি নিজে নিশ্চিত করেছেন এবং এ সংক্রান্ত তার প্রবচনটি ইউটিউবে আছে, কেউ চাইলে দেখতে পারেন। क्या ईसा मसीह कभी भारत आए थे ?: https://youtu.be/ElXen2q1G4M?si=DaxT_3ZcE4HmVJty উল্লেখ্য, জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান দেবতার হলেন ভগবান জগন্নাথদেব যিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ, তিনি তার বোন সুভদ্রা ও ভ্রাতা বলদেব সহ জগন্নাথপুরীতে নিত্য নিবাস করেন। ৩০ বছর বয়সে তিনি নিজ মাতৃভূমিতে ফেরত যান এবং সেখানে তিনি ভারতীয় ধর্মদর্শন প্রচার করতে শুরু করেন। পাশ্চাত্যের লোকেরা সে সময় এতোই বর্বর ছিলো যে, তারা জগতে যত রকমের পাপ হতে পারে তার সবগুলোতেই লিপ্ত ছিলো, ফলে ভারতীয় আধ্যাত্মিক দর্শন বুঝার মতো তাদের সামর্থ ছিলো না। তাই যিশু তাদের পরমধর্মের জ্ঞান দান না করে, নীতি-নৈতিকতামূলক সামান্য-ধর্মের জ্ঞান দান করেছিলেন। এ সম্পর্কে একাধিক খ্রিস্টীয় গ্রন্থে উল্লেখ আছে। এ লিখনিতে খ্রিস্টানদের The AQUARIAN GOSPEL গ্রন্থ হতে যিশুর ‘শ্রী জগন্নাথপুরী’ ধামে শিক্ষাগ্রহণের ইতিহাস তুলে ধরা হলো- “And Jesus was accepted as a pupil in the temple Jagannath; and here he learned the Vedas and the Manic laws(19). The Brahmic masters won- dered at the clear conceptions of the child, and often were amazed when he explained to them the meaning of the laws (20). [ Reference Book: The AQUARIAN GOSPEL, Section VI, Chapter 21, Verse 19-20 ] “এবং যীশুকে জগন্নাথ মন্দিরে একজন শিষ্য হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছিল; এবং এখানে যিশু বেদ এবং স্মৃতিশাস্ত্রের জ্ঞান লাভ করেছিলেন। শাস্ত্রের উপর এ শিশুটির স্পষ্ট ধারণা দেখে ব্রাহ্মণ পুরোহিতগণ বিস্মিত হতেন এবং শিশুটি যখন নীতিশাস্ত্রের ব্যাখা করতো তখন প্রায়ই তারা অবাক হয়ে তা শুনতেন।” [রেফারেন্স: The AQUARIAN GOSPEL, Section VI, Chapter 21, Verse 19-20] এ বিষয়ে একটি ইউটিউব ভিডিওতে বিস্তারিত ব্যাখা করা হয়েছে, চাইলে দেখে নিতে পারেন। Aquarian Gospel: Missing 18 Years of Jesus’ Life: https://youtu.be/__p1CYWt8MI?si=DfnY8rZoxKpOQ1Mp Extra clip from a podcast: https://youtube.com/shorts/q1VbSa0bcc4?si=t0lHBEan3nIe-9iH বাস্তবে, কৃষ্ণ নামটিই অপভ্রংশ হয়ে পাশ্চাত্যে খ্রিস্ট হয়েছে। ভারতভূমিতেই কৃষ্ণ নামটির বহু অপভ্রংশ উচ্চারণ দেখা যায়, যেমন কৃষ্ণ>কৃষ্ণা>কৃষ্ণান>কেষ্ট। শ্রীল প্রভুপাদ বর্ণনা করেছেন, কেষ্ট নামটিই পাশ্চাত্যবাসীদের উচ্চারণে বিকৃত হয়ে খ্রিস্ট হিসেবে উচ্চারিত হয়েছে। বাল্মীকি মুনির উপাখ্যানেও দেখা যায়, তিনি রাম উচ্চারণ করতে পারতেন না, ‘মরা’ উচ্চারণ করতেন, কিন্তু নামাভাসের প্রভাবে তিনি এক সময় শুদ্ধ নাম উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন। এভাবে শ্রীল প্রভুপাদ খ্রিস্টানদের ‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্র জপে উতসাহিত করেছিলেন এবং প্রায় ১০ হাজার খ্রিস্টানকে সনাতন ধর্মে পরিণত করেছিলেন। উল্লেখ্য, সনাতন ধর্ম হতেই অন্যান্য সকল মতের সৃষ্টি। বুদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান সব মত হলো small dictionary এর মতো, যা সনাতমধর্মরূপী Big ডিকশেনারীর অংশ। ছোট অভিধানে যা আছে তার সবই বড় ডিকশেনারীতে আছে, কিন্তু বড় ডিকশেনারীতে এমন প্রচুর জিনিস আছে যা ছোট ডিকশেনারীতে নেই। এখন, অনেকে প্রশ্ন করে, “যিশু তো মাংসাহার করতেন, তবে তিনি কি করে ভগবানের সন্তান হতে পারেন?!?” এর উত্তর হলো, না, যিশু মাংসাহার করতেন না। যিশুর অন্তিম ১০ নির্দেশের ১টি হলো ‘Thou shalt not kill’- তুমি কাউকে হত্যা করবে না। আরও একটা প্রশ্ন খুবই জনপ্রিয়, “মুসলিমরা নাকি যিশুকে নবী হিসেবে গণ্য করেন?!?” এর উত্তর হলো, হ্যাঁ মানেন, যিশুকে তারা ঈসা নবী(ঈশ্বরের বার্তাবাহক) হিসেবে গণ্য করেন। তাছাড়া যিশুর পিতামাতারা পূর্বে ছিলেন ইহুদী, যিশুই ভারতে এসে ভারতীয় ধর্মশিক্ষা করে পাশ্চাত্যে প্রচার করেছেন, পরবর্তীতে তা আলাদা মত(ইজম) হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। তাই শ্রীল প্রভুপাদ যখন খ্রিস্টানদের মাঝে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করছিলেন, তখন তিনি তাদের এ বিষয়টি বুঝিয়েছিলেন। তিনি তাদের বুঝিয়েছিলেন, ঈশ্বরপুত্র যিশু তোমাদের পূর্ণ ভগবদজ্ঞান দান করতে পারেন নি, কারণ তখনকার সময়ে লোকেরা এতোই পাষণ্ড ছিলো যে তারা নিজেদের পরিত্রাণ কর্তা যিশুকেও কয়েকটি মুদ্রার লোভে ধরিয়ে দিয়েছিলেন বর্বর শাসকদের কাছে এবং নিজেদের পরিত্রাণ কর্তাকে নিজেরাই হত্যা করতে চেয়েছেন। যিশু যে ভগবদজ্ঞান পূর্ণরূপে ব্যাখা করেন নি, সে জ্ঞান আমি তোমাদের দিতে এসেছি সুদূর ভারত থেকে। এভাবে শ্রীল প্রভুপাদ তার জীবিত অবস্থায় প্রায় ১০ হাজার খ্রিস্টানকে কৃষ্ণভক্ত বৈষ্ণবে পরিণত করেছিলেন।
বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ; তিঁনিই হচ্ছেন সর্বব্যাপী এক এবং অদ্বিতীয় পরম ব্রহ্ম পরমেশ্বর ভগবান।
💗 বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ 💗 তিঁনিই হচ্ছেন এক এবং অদ্বিতীয় পরমেশ্বর ভগবান। যাঁকে পৃথিবীর সমস্ত পরমার্থবাদীরা বিভিন্ন উপায়ে লাভ করার চেষ্টা করছেন। অনেকে তাঁকে কোনোরূপেই জানতে পারছেন না এবং নাস্তিকে পরিণত হচ্ছেন। কেউ কেউ তাঁর দিব্য অঙ্গজ্যোঁতি দর্শন করে তাঁকে নিরাকার রূপহীন মনে করে থেমে গিয়ে তাঁর দ্বিভুজ শ্যামসুন্দর মুরলীধর রূপকে জানতে পারছেন না। কেউবা আবার এই পরম পুরুষের সর্বব্যাপী বিরাট বিশ্বরূপের বিস্তৃতিকেই সর্বস্ব ভাবছেন। সেই পরমেশ্বর ভগবান কর্তৃক পরিচালিত হয়ে ভগবদ্তত্ত্বজ্ঞান প্রচারের জন্য এই পৃথিবীর সমস্ত অঞ্চলে কোনো না কোনো #বার্তাবাহক এসেছেন এবং সেই সেই অঞ্চলের অধিবাসীদের জ্ঞানের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী বোধগম্য উপায়ে ভগবদ্ সম্বন্ধীয় জ্ঞান প্রদান করেছেন। পৃথিবীর মধ্যভাগ ও পশ্চিমীয় অঞ্চল মানুষ বসবাসের জন্য প্রতিকূল। সেখানে যথেষ্ট স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকে না, হয়তো প্রচুর উত্তাপ, নয়তো হিমবাহ। পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদির উপর ভিত্তি করেই বেড়ে উঠা মানুষের চেতনা বিকশিত হয়। বিশেষত সেইসব অঞ্চলের মানুষের অবৈদিক খাদ্যাভ্যাসের প্রাধান্যতার কারণেই আদিকাল হতে তাদের চেতনা আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ জ্ঞান ধারণের জন্য পর্যাপ্ত হয়না। অতএব, সেই অঞ্চলের মানুষদের ভগবদ্ বিষয়ক অতি সাধারণ জ্ঞান প্রদান করা হয়। যেমন: ভগবান একজন, তিঁনি সর্বশক্তিমান এবং তাঁকে মান্য করা উচিত, ইত্যাদি। ভগবান সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব তাদের প্রদান করা হয় না। কারণ, পৃথিবীর সমস্ত অঞ্চলে একইরকম পরিবেশ থাকে না। পরিবেশের উপর ভিত্তি করে উৎপাদন হয় ফলে সেইমতন খাদ্যাভ্যাস তৈরি হয়। ভগবদ্তত্ত্বজ্ঞান উপলব্ধির পথে খাদ্যগ্রহনের প্রক্রিয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। যেরকম খাদ্য আমরা গ্রহণ করি সেরকম চেতনা ও আচরণ তৈরি হয়। তাই আমরা সেইভাবেই নূন্যতম ও উচ্চতর জ্ঞান আহরণ করতে পারি। অপরপক্ষে পৃথিবীর প্রাচ্যদেশীয় অঞ্চলের পরিবেশ মনুষ্যজাতির জন্য সর্বাধিক অনুকূল। তাই, এই প্রাচ্যের মনুষ্যজাতিকে দেওয়া হয়েছে ভগবদ্তত্ত্ব বিজ্ঞানের চরম সিদ্ধান্ত- “বেদ-বেদান্তাদি সমস্ত শাস্ত্র” তাতে বর্ণিত হয়েছে ভগবান সম্বন্ধীয় পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব। জড় ও চেতন বস্তু কি? আত্মা কি? পরমাত্মা কি? প্রকৃতি কি? কাল ও কর্ম কি? তাই সমস্ত বেদের সারস্বরূপ ভগবদ্গীতা’তে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই ঘোষণা দিচ্ছেন- “আমিই সমস্ত বেদের জ্ঞাতব্য বিষয়, আমি সমস্ত বেদান্ত কর্তা ও বেদবেত্তা।” (ভ:গী : ১৫/১৫) বৈদিক শাস্ত্রে (অথর্বেদান্তর্গত, গোপালতাপনী উপনিষদ: ১/১) উল্লেখ আছে- সচ্চিদানন্দরূপায় কৃষ্ণায়ক্লিষ্টকারিণে। নমো বেদান্তবেদ্যায় গুরবে বুদ্ধিসাক্ষিণে ॥ “আমি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি জ্ঞাপন করছি, যাঁর অপ্রাকৃত রূপ হচ্ছে সৎ, চিৎ ও আনন্দময়। আমি তাঁকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি, কারণ তাঁকে জানার অর্থ সমগ্র বেদকে জানা এবং সেই কারণেই তিনি হচ্ছেন পরম গুরু।” অথর্বেদান্তর্গত, গোপালতাপনী উপনিষদে আরও বলা হয়েছে, “কৃষ্ণো বৈ পরমং দৈবতম্ ; শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরম পুরুষোত্তম ভগবান।” (গোপালতাপনী উপনিষদ: ১/৩) “একো বশী সর্বগঃ কৃষ্ণ ঈড্য; পরব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণ এক অর্থাৎ সজাতীয় বিজাতীয় স্বগত ভেদ রহিত, এ নিমিত্ত সকলই ইহাঁর বশীভূত একোঅপি সন্ বহুধা হো বিভাতি। শ্রীকৃষ্ণ এক, কিন্তু তিনি অনন্ত রূপ ও অবতারের মাধ্যমে প্রকাশিত হন।” (গোপালতাপনী উপনিষদ: ১/২১) সমস্ত বৈদিক শাস্ত্রাদিতে তাহলে কি বর্ণিত হয়েছে দেখা যাক- শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সগুণ ব্রহ্ম। (মহাভারত: আদি/১/৭২) অসিত ও দেবল ঋষি উল্লেখ করছেন- “ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ই প্রজা সৃষ্টিকারী প্রজাপতি এবং সকল লোকের একমাত্র রচয়িতা।” (মহাভারত: বনপর্ব/১২/৫০) দেবর্ষি নারদ উল্লেখ করছেন- “ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সকল লোকের স্রষ্টা ও সমস্ত ভাবের প্রকাশক। ইনি সাধ্যগণ এবং দেবগণেরও প্রভু, দেবদেব ব্রহ্মা এবং শিবেরও অধীশ্বর” (মহাভারত: ভীষ্মপর্ব/৬৭/২) মার্কণ্ডেয় ঋষি বলছেন- “শ্রীকৃষ্ণ যাজ্ঞিকগণের যজ্ঞ ও তপস্বীগণের তপস্যা। (মহাভারত: ভীষ্মপর্ব/৬৭/৩) ভৃগু ঋষি উল্লেখ করছেন: “আপনি দেবগণেরও দেবতা এবং বিষ্ণুরূপী আপনার রূপটি আদি ও সুন্দর।” (মহাভারত: ভীষ্মপর্ব/৬৭/৪) মহর্ষি বেদব্যাসও বর্ণন করছেন- শ্রীকৃষ্ণই বসুগণের বাসুদেব, ইন্দ্রকে স্বর্গ রাজ্য প্রদানকারী এবং দেবগণেরও পরম দেবতা। (মহাভারত: ভীষ্মপর্ব/৬৭/৫) ঋষি অঙ্গিরা উল্লেখ করছেন- “শ্রীকৃষ্ণ সর্বভূতের সৃষ্টিকর্তা” (মহাভারত: ভীষ্মপর্ব/৬৭/৬) অসিতদেবল বলেছেন- শ্রীকৃষ্ণই সমস্ত জগতে ব্যাপ্ত সনাতন পুরুষ (মহাভারত: ভীষ্মপর্ব/৬৭/৮) তাই ভগবদ্গীতাতে আমরা এটি দেখতে পাই যে, মহাত্মা অর্জুনও উপরিল্লিখিত ঋষি-মহর্ষি গণের উদ্ধৃতি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে উদ্দেশ্য করে আমাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন যে, শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন বেদের সেই পরম জ্ঞাতব্য বিষয় পরম ঈশ্বর। “ অর্জুন বললেন- তুমি পরম ব্রহ্ম, পরম ধাম, পরম পবিত্র ও পরম পুরুষ৷ তুমি নিত্য, দিব্য, আদি দেব, অজ ও বিভু। দেবর্ষি নারদ, অসিত, দেবল, ব্যাস আদি ঋষিরা তোমাকে সেভাবেই বর্ণনা করেছেন এবং তুমি এখন আমাকে তা বলছ।” (ভ:গী: ১০/১২-১৩) শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে বর্ণিত রয়েছে- “কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং” শ্রীকৃষ্ণ’ই হচ্ছেন স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান। (শ্রীমদ্ভাগবত:১/৩/২৮) শ্রীমদ্ভাগবত তথা সমস্ত বেদে’ই প্রতীয়মান হয় যে বাসুদেব-শ্রীকৃষ্ণ’ই হলেন পরাৎপর পরমব্রহ্ম পরমেশ্বর ভগবান। এতোসব প্রমাণাদি থাকার পরও “মায়া অপহৃতজ্ঞানা” (ভ:গী:৭/১৫) ব্যক্তিদের চেতনা আচ্ছাদিত, কলুষিত, তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাদের কাছে সাধারণ মনুষ্যরূপে প্রতীত হন। এজন্য স্বয়ং ভগবান বলেছেন- “আমি সকলের কাছে প্রকাশিত হই না। আমি আমার অন্তরঙ্গা শক্তি যোগমায়ার দ্বারা আবৃত থাকি” (ভ:গী : ৭/২৫) শ্রীবিষ্ণুপুরাণ: ৬ষ্ট অংশ ৫ম অধ্যায় ৭৬ নং শ্লোকে শ্রীল পরাশর মুনি বর্ণনা দিচ্ছেন- “হে মৈত্রেয়! এইভাবে এই মহান ‘ভগবান’ শব্দ পরব্রহ্মস্বরূপ শ্রীবাসুদেবেরই বাচক, আর কারোর নয়।।৭৬।। ঋগ্বেদ: ১ম মন্ডল/১৬৪ নং সূক্তম্/৪৬ নংঋক্ বর্ণনা করছেন- “একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি” সেই এক পরমেশ্বরকে বহু নামে অবিহিত করা হয়।” আর বলা বাহুল্য তাঁর সেই নাম তাঁর বিভিন্ন অপ্রাকৃত রূপ-লীলা’র উপর প্রতিষ্ঠিত। বেদ-এ সেই পরমপুরুষ পরমাত্মাকে কোথাও ডাকা হচ্ছে গোবিন্দ নামে, কোথাও তাঁকে বলা হচ্ছে বাসুদেব, কোথাওবা শ্রীবিষ্ণু। এসবই হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত দিব্য নাম। এমনকি আদি শঙ্করাচার্য বিবেক চূড়ামণিতে সেই গোবিন্দের নিকট প্রণতি নিবেদন করে তিঁনি বলছেন- “সমস্ত বেদান্তশাস্ত্রের সিদ্ধান্তে যার কথা বলা হয়েছে, যিনি বাক্যমনাতীত পরমানন্দসরূপ সদ্গুরু, সেই পরমাত্মা গোবিন্দকে আমি প্রণাম করি।” (বিবেকচূড়ামণি-১) “পৃথিবীতে থেকে যিনি পৃথিবী পরিচালনা করেন কিন্তু পৃথিবী যাঁকে জানতে পারে না, শ্রুতির দ্বারা বেদ যে অমলস্বরূপ জগতের স্বামী, নিয়ামক, ধ্যেয় এবং দেবতা, মনুষ্য ও মুনি ঋষিগণের মোক্ষ প্রদানকারী বলে জানিয়েছেন, সেই শরণাগত পালক, নিখিল ভুবনেশ্বর শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র আমার নয়নগোচর হোন। (আদি শংকরাচার্য- কৃষ্ণাষ্টকম্/৪) বেদে বারবার সেই পরমাত্মার স্তুতি বন্দনার কথা বলা হয়েছে, তাঁকে জানার জন্য বলা হয়েছে তবুও কিছু বেদাধ্যয়নকারী সেই পরমাত্মার প্রকৃত স্বরূপকে জানতে পারেন না। অথচ ভক্তিযোগ অনুশীলনের দ্বারা এটা খুব সহজেই বুঝতে পারা যায় যে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন সেই “একং এবং অদ্বিতীয়ম্ পরম পুরুষঃ”। वेदाहमेतं पुरुषं महान्त- मादित्यवर्ण तमसः परस्तात् । तमेव विदित्वाऽतिमृत्युमेति नान्यः पन्था विद्यतेऽयनाय ।। “পরমেশ্বর ভগবানকে জানবার ফলেই জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া যায়। এছাড়া আর কোনই পথ নেই।” (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ: ৩/৮) ভগবদ্গীতা পড়লে আমরা দেখতে পাই স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেটি নিশ্চিত করছেন যে, প্রকৃতপক্ষে তিঁনিই সেই পরম তত্ত্ব- “ভক্তির দ্বারা কেবল স্বরূপত আমি যে রকম হই, সেরূপে আমাকে কেউ তত্ত্বত জানতে পারেন। এই প্রকার ভক্তির দ্বারা আমাকে তত্ত্বত জেনে, তার পরে তিনি আমার ধামে প্রবেশ করতে পারেন।”(ভ:গী : ১৮/৫৫) “হে অর্জুন যিনি আমার এই প্রকার দিব্য জন্ম এবং কর্ম যথাযথ ভাবে জানেন, তাঁকে আর দেহ ত্যাগ করার পর পুনরায় জন্ম গ্রহন করতে হয় না তিনি আমার নিত্য ধাম লাভ করে।”(ভ:গী: ৪/৯) “হে অর্জুন এই ভুবন থেকে ব্রহ্মলোক পর্যন্ত সমস্ত লোকই পুনরাবর্তনশীল অর্থাৎ, পুনর্জন্ম হয়। কিন্তু হে কৌন্তেয়! আমাকে প্রাপ্ত হলে আর পুনর্জন্ম হয় না।”(ভ:গী: ৮.১৬) “বহু জন্মের
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র সমন্ধে সনাতনী কোন কোন শাস্ত্রে বর্ণিত আছে???
শ্রুতি, স্মৃতি, ইতিহাস, পঞ্চরাত্র ও পুরাণাদি শাস্ত্র নিয়েই সনাতন ধর্ম। সনাতন ধর্মের আদি ধর্মগ্রন্থ বেদ। বেদের চারটি বিভাগ – সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ। বেদের এ চারটি বিভাগকে একত্রে বেদ বা শ্রুতি বলা হয়। সংহিতা চার প্রকার -ঋগ্বেদ সংহিতা, সামবেদ সংহিতা, যজুর্বেদ সংহিতা এবং অথর্ববেদ সংহিতা। সংহিতার পর বেদের আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো ব্রাহ্মণ এবং আরণ্যক। বেদের সর্বশেষ বিভাগ হলো উপনিষদ। সনাতন ধর্মের সমগ্র শাস্ত্রেই হরিনাম বা কৃষ্ণনাম বা হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। ঋগ্বেদ সংহিতায় ১ মন্ডল, ১৫৬ সূক্তের, ৩ নং মন্ত্রে উল্লেখ রয়েছে,“আস্য জানন্তো নাম চিদ্বিবক্তন মহস্তে বিষ্ণো সুমতিং ভজামহে।। অর্থাৎ বিষ্ণুর চিন্ময় নামসমূহ জেনে কীর্তন করণীয়। হে মহান বিষ্ণু, সুমেধাসম্পন্ন লোকে এভাবে তোমাকে ভজনা করে।” শাস্ত্রে কলিকালে যত হরি নাম কীর্তনের কথা বলছে সবগুলোই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রকে নির্দেশ করে। প্রথমত ‘হরে’ শব্দের আধিক্যজনিত কারণে এটি হরিনাম মন্ত্র। শাস্ত্রে যেখানে যেখানে ‘হরের্নাম হরের্নাম হরের্নাম’ কিংবা ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ’ কিংবা ‘রাম রাম রাম’ নাম জপ করতে বলছে সবগুলোই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রকে নির্দেশ করে ‘সর্ববেদান্ত প্রত্যয় ন্যায়’ বাক্যের আলোকে। সর্ববেদান্ত প্রত্যয় ন্যায় দ্বারা বুঝায় দুই স্থানে যদি ভিন্ন নামে একই পরিণাম বুঝায়, তবে বুঝতে হবে জিনিস দুইটা একই। যেমন শাস্ত্রে বলছে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করলে মুক্তি মিলবে। আবার বলছে হরের্নাম হরের্নাম হরের্নাম করলে মুক্তি মিলবে। তাই দুইটা দ্বারা একই মন্ত্রকে নির্দেশ করছে, যেটা শ্রুতিতে উল্লেখ আছে অর্থাৎ ১৬ নাম ৩২ অক্ষরী মন্ত্রকে। মহামন্ত্রের ৭,৮,৯ নং নাম ‘হরে হরে হরে’, ৪,৫,৬ নং নাম কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ এবং ১২,১৩,১৪ নং নাম রাম রাম রাম অতএব ‘হরের্নাম হরের্নাম হরের্নাম’, ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ’, ‘রাম রাম রাম’ এগুলো দ্বারা হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রকেই নির্দেশ করে।একইভাবে শাস্ত্রে যেখানে যেখানে ‘হরি হরি’, ‘রাম রাম’, ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ’ অর্থাৎ যুগল নামের মাহাত্ম্য বলছে ওগুলোতেও মহামন্ত্রকেই নির্দেশ করে। আসুন আমরা দেখি সমগ্র সনাতন শাস্ত্রে কোথায় কোথায় হরিনাম বা হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। শ্রুতি শাস্ত্র প্রমাণ: শুক্ল-যজুর্বেদীয় মুক্তিকোপনিষদে ১।২৭-৩৬ নং মন্ত্রে ঈশ,কেন, কঠ,কলির্সন্তরণ, মুক্তিকোপনিষদ ইত্যাদি ১০৮ টি উপনিষদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্তিকোপনিষদ ১।৫৩ নং মন্ত্র অনুসারে কলির্সন্তরণ উপনিষদ হলো কৃষ্ণ-যজুর্বেদের অন্তর্গত। কৃষ্ণ-যজুর্বেদীয় কলির্সন্তরণ উপনিষদ তথা শ্রুতিতে সরাসরি কলিযুগের একমাত্র মুক্তির পথ হিসেবে হরেকৃষ্ণ মন্ত্রটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ( কৃষ্ণ-যজুর্বেদীয় কলিসন্তরণ উপনিষদ মন্ত্র ২ )- নারদঃ পুনঃ পপ্রচ্ছ তন্নাম কিমিতি। সহোবাচ হিরণ্যগর্ভঃ। হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। ইতি ষোড়শকং নাম্নাং কলিকল্মষনাশনম্। নাতঃ পরতরোপায়ঃ সর্ববেদেষু দৃশ্যতে ষোড়শকলাবৃতস্য জীবস্যাবরণবিনাশনম। ততঃ প্রকাশতে পরং ব্রহ্ম মেঘাপায়ে রবিরশ্মিমণ্ডলীবেতি।।২।। বঙ্গানুবাদ: তখন নারদজী পুনঃ প্রশ্ন করলেন সেই নাম কি? তখন হিরণ্যগর্ভ ব্রহ্মাজী বললেন, হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। এই প্রকার ষোল নাম বত্রিশ অক্ষর মন্ত্র কলিযুগে সমস্ত দোষ নাশ করে। চারিবেদে এরচেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো উপায় নেই। এই ষোলো অক্ষর মন্ত্র উচ্চারনে জীবের ষোড়শকলা যুক্ত আবরণ বিনষ্ঠ হয়। বৃষ্টির পর যেমন মেঘ কেটে গিয়ে সূর্যরশ্মি প্রকাশিত হয় তেমন জীবও পরমব্রহ্মকে জানতে পারে। ইতিহাস শাস্ত্র প্রমাণ: ছান্দোগ্য উপনিষদ ৭।১।২ মন্ত্রে, ইতিহাস শাস্ত্রকে পঞ্চম বেদ বলা হয়েছে, “ইতিহাসপুরাণং পঞ্চমং বেদানাং”। রামায়ণ এবং মহাভারত এ দুটি শাস্ত্রকে সনাতন ধর্মে ইতিহাস শাস্ত্র বলা হয়। মহাভারতে যুধিষ্ঠির মহারাজকে কৃষ্ণনাম জপ করার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ প্রদান করেন। ( মহাভারত, শান্তিপর্ব ২০৪।৭৭ )- ভীষ্ম উবাচ- এতত্তে কথিতং রাজন্ ! বিষ্ণুতত্ত্বমনুত্তমম্ । ভজস্বৈনং বিশালাক্ষং জপন্ কৃষ্ণেতি সত্তম !।। বঙ্গানুবাদ: ভীষ্ম বলিলেন—’সাধুশ্রেষ্ঠ রাজা ! এই আমি তোমার নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ বিষ্ণুতত্ত্ব বলিলাম। তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ নাম- কৃষ্ণ নাম জপ করিতে থাকিয়া এই বিশালনয়ন কৃষ্ণের সেবা কর ॥ ( মহাভারত, দ্রোণপর্ব ৮৩।১৮ )- নমস্তে দেবদেবেশ সনাতন বিশাতন। বিষ্ণো জিষ্ণো হরে কৃষ্ণ বৈকুন্ঠ পুরুষোত্তম।। ১৮ বঙ্গানুবাদ: হে বিষ্ণু! হে জিষ্ণু! হে হরে কৃষ্ণ! হে বৈকুন্ঠ! হে পুরুষোত্তম! তুমি দেবতাদের দেবতা শিবেরও ঈশ্বর, তুমিই সনাতন, তুমিই বিশাতন, তোমাকে নমস্কার। ( মহাভারত,হরিবংশপুরাণম্, পর্ব ৩ ( ভবিষ্যপর্ব ) ১০১।১৫ )- যদি শক্তো হরে কৃষ্ণ দারযেদং মহাস্পদম্ । ইত্যুক্ত্বা তচ্ছতগুণং ভ্রামযিত্বা মহাবলঃ।। বঙ্গানুবাদ: আপনি যদি পারেন, হে ভগবান হরে কৃষ্ণ, এই মহতী অস্ত্র ছিন্ন করুন। এ বলে মহাবলশালী পন্ড্রক তা শতবার ঘুরিয়ে নিক্ষেপ করলেন। ( মহাভারত,হরিবংশপুরাণম্, পর্ব ৩ ( ভবিষ্যপর্ব ) ৮২।৪৩ )- নমো নমো হরে কৃষ্ণ যাদবেশ্বর কেশব । প্রত্যক্ষং চ হরেস্তত্র ননর্ত বিবিধং নৃপ ।। বঙ্গানুবাদ: “হে হরে কৃষ্ণ! হে যাদবেশ্বর! হে কেশব! আমি আপনাকে বারংবার প্রণাম জানাই।” হে রাজন! এ বলে বলে তিনি ভগবান হরির সম্মুখে বিবিধ নৃত্য করতে থাকলেন। পুরাণ শাস্ত্র প্রমাণ: সনাতনী শাস্ত্রের মধ্যে পুরাণ শাস্ত্রকে খুব গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র বলা হয়েছে। ছান্দোগ্য উপনিষদ ৭।১।২ নং মন্ত্রে পুরাণ শাস্ত্রকে পঞ্চম বেদ বলা হয়েছে, “ইতিহাসপুরাণং পঞ্চমং বেদানাং”।অষ্টাদশ পুরাণ এবং উপপুরাণ শাস্ত্রের প্রায় পুরাণে কলিযুগের যুগধর্ম ও মুক্তিপথ হিসেবে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র বা হরিনাম বা কৃষ্ণনাম জপ ও কীর্তনের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। ( ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ, উত্তরখণ্ড, রাধাহৃদয়মাহাত্ম্য, ৬।৫৫,৫৬ )- হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। ইত্যষ্টশতকং নাম্নাং ত্রিকাল কল্মষাপহং। নাতঃ পরতরোপায়ঃ সর্ব্ববেদেষু বিদ্যতে।। বঙ্গানুবাদ: হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। -এই মহামন্ত্র হরিনাম একশত অষ্টবার ত্রিকাল জপে সর্ব্বপ্রকার পাপের অপহারক হন। অর্থাৎ প্রাতঃ মধ্যাহ্ন ও সায়াহ্ন একশত অষ্ট বার প্রত্যেক সময়ে জপ করাতল সকল পাতক ধংস হয়। ইহার পর ভবভীরু জনের ভব নিস্তারণ উপায় আর নাই, ইহা সর্ব্ববেদে কথিত আছে। ( অগ্নিপুরাণ ৪০৯।৬ )- হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। রটন্তি হলয়া বাপি তে কৃতার্থা ন সংশযঃ।। বঙ্গানুবাদ: “হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে”– এই মন্ত্রটি কেউ যদি অবহেলা করেও জপ করে, সে কৃতার্থ হবে ( জীবনের পরম উদ্দেশ্য সাধন করবে) এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ( পদ্মপুরাণ, স্বর্গখন্ড ২৪।৬ )- হরিরেব সমারাধ্যঃ সর্ব্বদেবেশ্বরেশ্বরঃ । হরিনাম মহামন্ত্রৈনশ্যেৎ পাপপিশাচকঃ ॥ বঙ্গানুবাদ: সর্ব্বদেবেশ্বরেশ্বর হরিই সমারাধ্য। হরিনাম মহামন্ত্রে পাপ-পিশাচ বিনষ্ট হইয়া যায়। ( পদ্মপুরাণ, পাতালখন্ড-৪৯।৩ )- হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম । হরে রাম হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণেতি মঙ্গলম । এবং বদস্তি যে নিত্যং ন হি তানু বাধতে কলিঃ।। বঙ্গানুবাদ: সদাশিব পার্বতীকে বললেন, কলিতে কেবলমাত্র হরিনামই বিধেয়, হরিনামই বিধেয় এবং হরিনামই বিধেয়। যে ব্যক্তি নিত্য মঙ্গলময় “হরে রাম হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ” ইত্যাদি উচ্চারণ করে, কলি তাকে ক্লেশ দিতে পারে না। ( পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড ২০৯।৩৯ )- রাম রাম হরে কৃষ্ণ বিষ্ণো নামাবলীমিতি । পাঠয়োত্তিষ্ঠ নিপুণৌ দ্বাবেতৌ সারিকাশুকৌ।। বঙ্গানুবাদ: এই শুক সারিকা উভয়েই পাঠনিপুণ ; এদেরকে “রাম রাম হরে কৃষ্ণ” সম্বলিত ভগবান বিষ্ণুর নামাবলী পাঠ করাও। ( পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড-২০৪।১০৮ )- উপভুজ্য স ধর্ম্মাত্মা স্বৈরং বিগতবিক্রিয়ঃ । হরে রাম হরে কৃষ্ণ জপন্নিতি জগামহি।। বঙ্গানুবাদ: বিকারশূণ্য ধৰ্ম্মাত্মা সাধু ভোজন করিয়া “হরে রাম হরে
মহাভারতের দৃষ্টিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ!
🟠 মহাভারতের দৃষ্টিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ! শ্রীকৃষ্ণ যে স্বয়ং পরমেশ্বর তা সম্বন্ধে দুয়েকটা উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু করা যাক- ‘পাপকর্ষণ জন্য সচ্চিদানন্দরূপী কৃষ্ণই পরমদেবতা। গোশব্দ নানার্থপ্রযুক্ত ভূমি এবং বেদ, ইহাতে যিনি বিখ্যাত ও দ্রষ্টা, তিনি গোবিন্দ, মৃত্যু ইহাকে গোশব্দের অধিষ্ঠানরূপে জ্ঞাত হইয়া ভয়প্রাপ্ত হয়।” (অথর্ববেদান্তর্গত, গোপালতাপনী উপনিষদ: ৮) “ঈশ্বর পরম কৃষ্ণ সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ।।” (ব্রহ্মসংহিতা: ৫/১) “এতে চাংশকলাঃ পুংসঃ কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ং।।” (শ্রীমদ্ভাগবত:১/৩/২৮) “সর্বে চাংশকলাঃ পুংসঃ কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ং।।” (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ: শ্রীকৃষ্ণজন্মখন্ড/১১৭/১২) “একেলা ঈশ্বর কৃষ্ণ আর সব ভৃত্য” (শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত: আদিলীলা ৫/১৪২)। 🌿 এবার আসি সর্বজনীন প্রামাণিক শাস্ত্র মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণকে আসলে কেমন রূপে আমরা দেখতে পাই, তা আজকের আলোচনায় স্পষ্ট করা হবে। মহাভারত: ভীষ্মপর্ব/৬৪ নং অধ্যায়ে দেখা যায় যখন কৌরবশ্রেষ্ঠ ধৃতরাষ্ট্র তার সারথি সঞ্জয়ের নিকট যুদ্ধের বর্ণনা শুনছিলেন, তার এককালে তিনি সঞ্জয়ের নিকট যুদ্ধের পরিস্থিতি জানার জন্য এভাবে প্রশ্ন করেন- “ধৃতরাষ্ট্র বলিলেন, সঞ্জয়! পান্ডবগণের কার্য্য দেবগণের পক্ষেও অতিদুষ্কর। ইহা শুনিয়া আমার গুরুতর ভয় ও বিস্ময় জন্মিয়াছে।।১।। 👉 এরকমভাবে ধৃতরাষ্ট্র তার আরও ভয় ও আশংকার কারণ ব্যক্ত করে সঞ্জয়কে পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন যে, কিরুপে পান্ডবগণ অজেয় হয়ে উঠছে, কিভাবেই’বা তারা কৌরবপক্ষীয় সমস্ত বড় বড় রথি-মহারথি যোদ্ধাদের পরাজিত-নিহত করে দিচ্ছে, তাদের জয়ের পিছনে কোন শক্তি কাজ করছে, ইত্যাদি। ধৃতরাষ্ট্রের দ্বারা জিজ্ঞাসিত হলে সঞ্জয় তার উত্তর প্রদান করেন যে, পান্ডুপুত্রগণ তথা পান্ডবরা কোনো অধর্ম করছেন না, ধর্মের পথে থেকেই যুদ্ধ করছেন এজন্য তারা জয়ী হচ্ছেন, সর্বোপরি শ্রীকৃষ্ণ তাদের সঙ্গে রয়েছেন। আর অন্যদিকে দুর্যোধনাদি কৌরবেরা পাপাচারে লিপ্ত অধর্মপরায়ণ তাই যুদ্ধে তাদের ক্ষয় হচ্ছে। সঞ্জয় ধৃতরাষ্ট্রকে পূর্বের বিষয়ে স্মরণ করে আরও কিছু কথা বললেন যে- আপনার পুত্রদের অবৈধ কার্যের বিষয়ে আপনাকে তখন বারবার অবগত, সতর্ক করা হলেও যেহেতু তখন আপনি কোনোকিছুই শোনেননি তাই এখন আপনি তার ফল ভোগ করুন। এভাবে বলে সঞ্জয় ধৃতরাষ্ট্রের করা প্রশ্নের উত্তরে তারই কর্মফলকে স্মরণ করিয়ে দিলেন। অতঃপর সঞ্জয় পুনরায় ধৃতরাষ্ট্রের নিকট কুরুক্ষেত্রের পরিস্থিতি সম্বন্ধে বর্ণনা দিয়ে বলতে লাগলেন। দুর্যোধন যুদ্ধে নিজেদের পক্ষে মহারথী ভীষ্ম, দ্রোণ, শল্য, কৃপ, অশ্বত্থামাসহ আরও অনেকে যারা ত্রিভূবন জয় করতেও সমর্থ তারা থাকা সত্ত্বেও পান্ডবরা কিভাবে বারবার জয়ী হচ্ছিল তা সম্বন্ধে সন্দিহান হয়ে ভীষ্মদেবের নিকট বিনম্রভাবে তার রহস্য জানতে চাইলে ভীষ্মদেব উত্তরে তাকে পান্ডবদের সাথে সন্ধি করার জন্য বললেন এবং মুনিগনের উদ্ধৃতি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের পরমেশ্বরত্ব ও সর্বশক্তিমত্ত্বা স্থাপন করে বললেন- “ত্রিভুবনে এমন প্রাণী ছিলো না, বর্তমানে নাই, ভবিষ্যতে হইবে না, যে প্রাণী কৃষ্ণকর্তৃক রক্ষিত পান্ডবগণকে জয় করিতে পারে।।৪০।।” 👉 তো উক্ত শ্লোকে স্পষ্টতই পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের সর্বশক্তিমত্তা প্রকাশিত হচ্ছে। এটা সামান্যতম দূরদর্শী হলেই বুঝতে পারা যায়। তো এরপর ভীষ্মদেব শ্রীকৃষ্ণ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনার জন্য পূর্বকালে গন্ধমাদন পর্বতে ঋষি, দেবতাদিগণ সম্মিলিত হয়ে তন্মধ্যে উপবিষ্ট ব্রহ্মাজির সাথে একটি আলোচনার বর্ণনা দিলেন- “তাহাদের মধ্যে উপবিষ্ট ব্রহ্মা দর্শন করিলেন- তেজে উজ্জ্বল ও উৎকৃষ্ট একখানা বিমান আকাশে অবস্থান করিতেছে।।৪৩।। তখন ব্রহ্মা ধ্যানে তাহার বিষয় জানিয়া, সংযত ও হৃষ্ট চিত্ত হইয়া এবং অঞ্জলি বন্ধন করিয়া আদিপুরুষ পরমেশ্বরকে নমস্কার করিলেন ॥৪৪॥ তাহার পর দেবতারা ও ঋষিরা ব্রহ্মাকে দণ্ডায়মান দেখিয়া এবং আকাশে অত্যাশ্চর্য্য বস্তু দেখিতে থাকিয়া সকলেই কৃতাঞ্জলি হইয়া দাঁড়াইলেন॥৪৫॥ পরে বেদজ্ঞশ্রেষ্ঠ, জগতের সৃষ্টিকর্তা ও পরমধৰ্ম্মবিৎ ব্রহ্মা যথানিয়মে সেই পরমদেবতাকে নমস্কার করিয়া বলিতে লাগিলেন-॥৪৬॥ ‘ভগবান্। যে হেতু আপনি বিশ্বাবসু, বিশ্বব্যাপী, বিশ্বমূর্তি, বিষক্-সেন, বিশ্বকর্মা, স্বাধীন, বিশ্বেশ্বর, বাসুদেব, মায়াশালী এবং নানাবিধ ক্রীড়াযুক্ত, সেই হেতু আমি আপনার শরণাপন্ন হইতেছি ॥৪৭।। 🌿 এভাবেই ব্রহ্মা সেই পরম ব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণের নিকট প্রপত্তি স্বীকার করে, তাঁর স্তুতি করে বিশদ বর্ণনা দিলেন। কিভাবে পরম-ঈশ্বর, পরম-ব্রহ্ম সৃষ্টিকার্য্য সম্পাদন করেন কিভাবেই’বা তিঁনি ব্রহ্মাজিরও উৎপত্তির কারণ। যা উক্ত অধ্যায়ের পরবর্তী শ্লোকগুলোতে বিদ্যমান। সেই অত্যাশ্চর্য বিমানসহ ব্যক্তি যখন অন্তর্হিত হলেন তখন পরবর্তীতে ঋষি, দেবতাদিগণ জানতে চেয়ে প্রশ্ন করলেন সেই দিব্য পুরুষ কে। তাদের প্রত্যুত্তরে ব্রহ্মা বললেন- (মহাভারত ভীষ্মপর্বের পরবর্তী ৬৫ নং অধ্যায়ে বর্ণিত) “দেবশ্রেষ্ঠগণ। সেই যিনি পরম বস্তু এবং যে পরম বস্তু অতীতকালে ছিলেন, বর্তমানে আছেন, ভবিষ্যতেও থাকিবেন, আর যে পরম বস্তু ত্রিভুবনের প্রভু ও ‘ব্রহ্ম’ নামে অভিহিত, তিনি প্রসন্ন হইয়া আমার সহিত আলাপ করিলেন। আমিও জগতের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য সেই জগৎপতির নিকট প্রার্থনা করিলাম ॥৬-৭॥ “সমগ্র জগতের প্রভু আমিও সেই নারায়ণেরই জ্যেষ্ঠপুত্র; অতএব দেব-গণ। জগতের মহেশ্বর সেই বাসুদেব তোমাদের পুজনীয়ই হইবেন ॥১৩।। সুতরাং দেবশ্রেষ্ঠগণ! ‘ইনি মানুষ’ এইরূপ মনে করিয়া কখনও তোমরা, মহাশক্তিশালী ও শঙ্খ-চক্র-গদাধারী সেই নারায়ণকে অবজ্ঞা করিও না ॥১৪৷। ইনি পরমগোপনীয়, ইনি পরম বস্তু, ইনি পরম ব্রহ্ম এবং ইনি পরম যশ ॥১৫৷৷ ইনি নিত্য, ইনি অব্যক্ত, ইনি চিরস্থায়ী তেজ এবং ঋষিরা যাঁহাকে পুরুষ বলেন, ইনি সেই পদার্থ; কিন্তু ইহাকে জানা যায় না ॥১৬৷৷ ইনি পরম তেজ, ইনি পরম সুখ এবং ইনি পরম সত্য-ইহা বেদ বলিয়াছেন।।১৭।। অতএব অমিতবিক্রমশালী ও জগদীশ্বর এই বাসুদেবকে মানুষ মনে করিয়া ইন্দ্রপ্রভৃতি দেবতারা কিংবা অন্যান্য লোকেরা যেন ইহাকে অবজ্ঞা করেন না॥১৮।। যে লোক অজ্ঞানবশতঃ এই হৃষীকেশকে কেবল মানুষ বলিবে, সে লোক মূঢ়বুদ্ধি এবং তাহাকে সকলে পুরুষাধম বলিবে॥১৯।। মনুষ্যদেহধারী, মহাযোগী ও মহাত্মা বাসুদেবকে যে লোক অবজ্ঞা করিবে, লোকে তাহাকে তমসাচ্ছন্ন বলিবে ॥২০॥ এই অধ্যায়ে আরও দেখা যায় ভীষ্মদেব বলছেন এইসমস্তই তিঁনি মুনিগনদের নিকট তো শুনেছেনই আবার শাস্ত্রবিশারদ! জমদগ্নীনন্দন রাম, জ্ঞানী মার্কন্ডেয়, ব্যাস এবং নারদের নিকটেও শুনেছেন। তাহলে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে সমস্ত মহান মহান ব্যক্তিগণ শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান হিসেবেই জানতেন, এমনকি এভাবে ভীষ্মদেব দুর্যোধনের নিকট শ্রীকৃষ্ণের পরমেশ্বরত্ব বর্ণনা করার দরুন দুর্যোধনও সেই বিষয়ে অবগত ছিলেন, কিন্তু দারুনভাবে মোহগ্রস্ত থাকার ফলে এসব তোয়াক্কা করেননি। তাই আজকালও দেখা যায় শিশুপাল, দুর্যোধনাদির মতো কিছু লোকজন শ্রীকৃষ্ণকে কেবল মনুষ্যরূপে জেনে থাকে। অথবা জেনে-বুঝেই মোহগ্রস্ত হওয়ায় শ্রীকৃষ্ণের পরমেশ্বরত্ব স্বীকার না করার মতো মারাত্মক দুষ্কর্ম্মে লিপ্ত হয়। অতএব, সেই সমস্ত অবাঞ্চিতদের দ্বারা বিভ্রান্ত না হয়ে ভীষ্ম আদি মহাজনদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে কৃষ্ণভক্তিতে যুক্ত থাকুন।। হরেকৃষ্ণ।। উপস্থাপনে প্রবীর চৈতন্যচন্দ্র দাস Join with us 👇 Web: https://svadharmam.com/ Facebook Page:- স্বধর্মম্ : Connect to the inner self Facebook Group :- ° স্বধর্মম্ : প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
পৌত্তলিকতা! মূর্তিপূজকরাই কি পৌত্তলিক?!
প্রশ্ন: পৌত্তলিকতা! মূর্তিপূজকরাই কি পৌত্তলিক? উত্তর: ঈশ্বরোপাসনার বিপরীত হিসেবে পৌত্তলিকতার বিষয়টি জড়িত। সহজ ভাষায় পৌত্তলিকতা হচ্ছে- বেদে বর্ণিত ঈশ্বর ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর উপাসনা করা। এসম্বন্ধে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় কেবলমাত্র নিম্নোক্ত দুইদলের ব্যক্তিরা মূর্তিতে পূজা করাকেই পৌত্তলিকতা মনে করে। ১) যারা বেদের সিদ্ধান্ত জানেনা। ২) যারা বেদের অপব্যাখ্যাকারী। তারা বলে থাকে মূর্তিপূজক মানেই হচ্ছে পৌত্তলিক। অথচ শাস্ত্র অনুমোদিত পন্থায় মূর্তিতে পূজা তথা সাকার উপাসনাকারীরা কখনোই পৌত্তলিক নন, তা নিচের আলোচনায় স্পষ্টীকরণ হবে। তবে অননুমোদিত (অনুমোদন ব্যতীত) পন্থায় উপাসনা করাটা সমীচীন নয় এবং মনগড়া কাল্পনিকভাবে কোনো কাল্পনিক স্বরূপের উপাসনা করা নিঃসন্দেহে পৌত্তলিকতা। অথচ, সেইসব দলের লোকজন 🔸পৌত্তলিকতা কি 🔸এর সংজ্ঞা কি? তা ভালোভাবে না জেনে এবং এর বাস্তবিক বৈশিষ্ট্য বুঝতে না পেরে সর্বজনীনভাবে সকল সবিশেষবাদীদের তথা সাকার উপাসকদের পৌত্তলিক বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। এ সংক্রান্তে শ্রীকেদারনাথ দত্ত কর্তৃক প্রকাশিত “শ্রী শ্রীচৈতন্য_শিক্ষামৃত” গ্রন্থে (৫ম বৃষ্টি, পৃষ্ঠা নং-১১২) খুব সুন্দরভাবে পৌত্তলিক ও পৌত্তলিকতার বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পড়ুন নিম্নরূপ: “ভক্তদিগের ভগবৎ স্বরূপ প্রতিভূ যে যথাযথ তাহা ভক্তগণ বিশুদ্ধ ভক্তি বৃদ্ধিরূপ ফল দ্বারা অনুক্ষণ পরীক্ষা করিতেছেন। বিদ্যুৎ পদার্থের সহিত বিদ্যুৎ যন্ত্রের যে প্রকৃত সম্বন্ধ তাহা কেবল বিদ্যুৎ ফলকোৎপতি রূপ ফল দ্বারাই লক্ষিত হয়। তদ্বিষয়ে যাহারা অনভিজ্ঞ তাহারা বিদ্যুৎযন্ত্র দেখিলে কি বুঝিবে? যাহাদের হৃদয়ে ভক্তি নাই, তাহারা শ্রীবিগ্রহকে পুত্তলিকা বৈ আর কি বলিতে পারে! ভক্তদিগের সিদ্ধান্ত এই যে শ্রীবিগ্রহ সেবকেরা “পৌত্তলিক নন। তবে পৌত্তলিক কে, ইহার সংক্ষেপ বিচার করা যাউক। ভগবৎ স্বরূপের সহিত সম্বন্ধহীন বস্তুকে যাহারা উপাসনা করে তাহারা পৌত্তলিক। তাহারা পঞ্চ (০৫) প্রকার- ১। বস্তুজ্ঞানাভাবে যাহারা জড়কে ঈশ্বর বলিয়া পূজা করে। ২। জড়কে তুচ্ছ জ্ঞান করিয়া জড়-বিপরীত ভাবকে ঈশ্বর বলিয়া যাহারা পূজা করে। ৩। ঈশ্বরের স্বরূপ নাই স্থির করিয়াছে, কিন্তু স্বরূপ ব্যতীত চিন্তার বিষয় পাওয়া যায় না, তজ্জন্য যাহারা উপাসনা সুলভ করিবার জন্য ঈশ্বরের জড়ীয় রূপ কল্পনা করে। ৪। যাহারা চিত্ত বৃত্তির শুদ্ধতা ও উন্নতির জন্য ঈশ্বর কল্পনা করত তাহার একটী কল্পিত মূর্তির ধ্যান করে। ৫। জীবকে যাহারা ঈশ্বর বলিয়া পূজা করে। 🔴 অসভ্য বন্য জাতিগণ, অগ্নি পূজকগণ ও জোভ সেটার্ণ প্রভৃতি গ্রহপূজক গ্রীক দেশীয় ব্যক্তিগণ প্রথম শ্রেণীর পৌত্তলিক। যে সময়ে ঈশ্বরের স্বরূপ উদয় হয় নাই অথচ জীবের ঈশ্বর বিশ্বাস স্বভাবতঃ থাকে, সেই সময় পান বশতঃ যে চাকচিক্য বিশিষ্ট বস্তুতে ঈশ্বর পূজা দেখা যায় তাহাই ঐ শ্রেণীর পৌত্তলিকতা। অধিকার বিচারে ঐ রূপ পৌত্তলিকতার নিন্দা নাই। 🔴 জড়ীয় জ্ঞানের অত্যন্ত আলোচনা ক্রমে যুক্তিদ্বারা সমস্ত জড়ীয় গুণের বিপরীত একটা নির্বিশেষ ভাবকে যখন ঈশ্বর বলিয়া বিশ্বাস হয়, তখন দ্বিতীয় শ্রেণীর পৌত্তলিকতা উপস্থিত হয়। নিরাকার বাদী মাত্রই ঐ শ্রেণীর পৌত্তলিক। নির্বিশেষ ভাব কখনই ঈশ্বরের স্বরূপ বা স্বরূপ সম্বন্ধীয় ভাব হইতে পারেনা। ঈশ্বরের অনন্ত বিশেষের মধ্যে নির্বিশেষতাকে একটা বিশেষ বলিলে স্বরূপ সম্বন্ধীয় ভাব হইতে পারে। ঈশ্বরের স্বরূপ জড়-বিলক্ষণ বটে, কিন্তু জড়-বিপরীত নয়। 🔴 চরমে নির্বাণকে যাঁহারা লক্ষ্য করিয়া বিষ্ণু, শিব, প্রকৃতি, গণেশ ও সূর্য্যের সগুণমূর্তি সকলকে সাধনের উপায় বলিয়া কল্পনা করেন, তাঁহারা ঈশ্বরের নিত্য স্বরূপ মানেন না, অতএব কল্পিত মূর্তি সেবা করত তৃতীয় শ্রেণীর পৌত্তলিক মধ্যে পরিগণিত হন। আজকাল যাহাকে পঞ্চ উপাসনা বলিয়া বলা যায় তাহা এই শ্রেণীর পৌত্তলিকতা। 🔴 কোন গুণকে অবলম্বন করত তদ্বিপরীত ধর্ম যে গুণশূন্যতা তাহা কিরূপে লভ্য হইতে পারে তাহা বোধ গম্য হয় না। যোগীদিগের কল্পিত বিষ্ণু মূর্তি ধ্যানই চতুর্থ শ্রেণীর পৌত্তলিকতা। তদ্দ্বারা অন্য কোন লাভ হইতে পারে, কিন্তু ভগবানের নিত্য স্বরূপ সাক্ষাৎকার রূপ পরম লাভ হয়না। 🔴 যাঁহারা জীবকে ঈশ্বর বলিয়া পূজা করেন তাঁহারা পঞ্চম শ্রেণীর পৌত্তলিক। শ্রীশ্রীমহাপ্রভুর শিক্ষা মতে ইহা অপেক্ষা আর বৃহৎ অপরাধ নাই। যে সকল জীব পূজার্হ তাঁহাদিগকে ভগবদ্ভক্ত বলিয়া পুজা করিলে, আর জীবে ঈশ্বর বুদ্ধিরূপ অপরাধ করিতে হয়না। (শ্রীরাম নৃসিংহাদির স্বরূপ ভজন যে পৌত্তলিক ব্যাপার নয় তাহা মৎকৃত শ্রীকৃষ্ণ সংহিতা পাঠ করিলে বুঝিতে পারিবেন।) উক্ত পাঁচ প্রকার পৌত্তলিকেরা যে কেবল ভগবৎ স্বরূপের নিন্দা করিয়া থাকে তাহা নয়, তাহারা অকারণ পরস্পরের নিন্দা করে। প্রথম শ্রেণীর পৌত্তলিক জড়ীয় আকাশের সর্ব্বব্যাপিত্ব গুণকেই ঈশ্বরের প্রধান গুণ মনে করিয়া ভগবৎ স্বরূপের অবহেলা করে এবং কল্পিত ও পরিমিত দেবাকার সকলের নিন্দা করিতে থাকে। ইহার মূল তাৎপর্য্য এই যে সমান অধিকারেই সাপত্ন্য ভাবও তজ্জনিত কলহ অনিবার্য্য হইয়া পড়ে। পৌত্তলিক মাত্রেই পৌত্ত-লিকের নিন্দা করেন। অপৌত্তলিক, স্বরূপলব্ধ, ভগবদ্ভক্তের কোন পৌত্তলিকের প্রতি বিদ্বেষ নাই। তিনি এই মাত্র মনে করেন যে যে পর্যন্ত স্বরূপ লাভ হয় নাই, সে পর্যন্ত কল্পনা বৈ আর কি করিবে? কল্পনা করিতে করিতে সাধু সঙ্গ ক্রমে কল্পনাকে হেয় জ্ঞান করিয়া স্বরূপ জ্ঞান হইবে। তখন আর বিবাদ করিবে না।” তথ্য উপস্থাপনে প্রবীর চৈতন্যচন্দ্র দাস Join with us 👇 Web: https://svadharmam.com/ Facebook Page:- স্বধর্মম্ : Connect to the inner self Facebook Group :- ° স্বধর্মম্ : প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
ভারতবর্ষের প্রাচীন ও বিখ্যাত সব ‘ধাতব রথ’ (পর্ব -১)
‘ধাতব রথ’ (পর্ব -১) পুরীর জগন্নাথদেবের রথ কাষ্ঠ নির্মিত হলেও সমগ্র ভারতভূমিতে বিখ্যাত অগণিত মন্দিরে ধাতু নির্মিত রথ সেই প্রাচীনকাল হতে চলে আসছে, যা অনেকেরই অজানা। এককালে এদেশের বহু স্থানে স্বর্ণের রথে ভগবানের রথযাত্রা হতো। কালক্রমে বিধর্মী শাসকেরা সে সব লুট করে নিয়ে যায়। আজও তিরুপতির ভেঙ্কটেশ্বরের স্বর্ণরথের দেখা মিলে। শুধু স্বর্ণই নয়, রূপা, পিতল, লোহা, কাঁসা, তামার তৈরি রথও ভারতের বিখ্যাত সব মন্দিরগুলোতে দেখা যায়। এককালে গোটা বঙ্গ অঞ্চলে বিখ্যাত ৬৪টি পিতলের রথ দেখা যেত, যা বিভিন্ন রাজবাড়ি কিংবা জমিদার বাড়ির রথযাত্রায় আজও দেখা যায়। বাল্মীকি রামায়ণে দেখা যায়, রামচন্দ্র রাবণবধের পর স্বর্ণনির্মিত পুষ্পরথে আরোহন করে ভ্রমণ করতেন। পদ্মপুরাণে জানা যায়, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের অন্তে দন্তবক্রকে বধ করার পর শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামকে স্বর্ণরথে চড়িয়ে বৃন্দাবনে নিয়ে এসেছিলেন ব্রজবাসীগণ। আজ আমরা আপনাদের সামনে ভারতভূমির প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ ১৪টি ‘ধাতব রথ’ এর পরিচয় তুলে ধরছি। ১) শ্রীরামপুরে মাহেশের লোহার রথ : পুরীর রথের পর ভারতের ২য় প্রাচীনতম ও বৃহৎ কোন রথের নাম করতে হলে সবার আগে আসবে “মাহেশের রথ” এর কথা। এটি বাংলার প্রাচীনতম রথযাত্রা উৎসব। ৭০০ বছরের এই উৎসব ১৩৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর শহরের মাহেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। রথযাত্রাকালে কাষ্ঠরথে বারংবার অগ্নিকান্ডের দুর্ঘটনা ঘটার সম্মুখীন হয়। সর্বশেষ ১৮৮৪ সালে রথযাত্রার দিন বল্লভপুরে গুন্ডিচাবাটিতে মাহেশের রথটি ভয়াবহ আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। তখন শ্রী রামকৃষ্ণের বিখ্যাত শিষ্য বলরাম বসুর পরিবারের কর্তা কৃষ্ণচন্দ্রবাবু বর্তমান লোহার রথটি তৈরি করিয়ে দেন। মার্টিন বার্ন কোম্পানি রথটি তৈরি করে। সেই সময়েই এর দাম পড়েছিল ২০ লক্ষ টাকা। ১৮৮৫ সাল থেকে ওই রথে টান শুরু হয়। পুরীর রথের সর্বোচ্চ উচ্চতা যেখানে ৩৪ ফুট, সেখানে মাহেশের লোহার রথটি ৫০ ফুট লম্বা। এ রথে ১২ টা লোহার চাকা, গায়ে কাঠের পাটাতন টিন দিয়ে মোড়া। এ রথটি ঐতিহ্যগত বাংলা নবরত্ন শৈলী, এতে ৯ টি চূড়া রয়েছে যদিও কিছু বছর পূর্বে চূড়া ছিল ১৩ টি। ২) তিরুপতি ভেঙ্কটেশ্বরের কনক ধাতুর স্বর্ণরথ : ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুমালাতে ভগবান ভেঙ্কটেশ্বর ৮৪ কেজি কনক ধাতু দিয়ে নির্মিত স্বর্ণরথে আরোহণ করে ভগক্তদের কৃপা করেন। কনক হলো বিশুদ্ধ সোনা, সবচেয়ে অধিক বিদ্যুৎ সুপরিবাহী পদার্থ হওয়ায় এর উজ্জ্বলতা ও চাকচিক্য চোখ ধাঁধালো। এটি ভারতের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রথ। রথটির উচ্চতা ৩২ ফুট। সোনায় নির্মিত এ রথটি সমস্ত বিশ্বের নিকট ভারতের ধনৈশ্বর্য্যের প্রতীক। ৩) দক্ষিণেশ্বরে রানী রাসমনির রূপার রথ : ১৮৩৮ সালে জগন্নাথদেবের স্নান যাত্রার পুণ্য তিথিতে রাণী রাসমণি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীর মন্দির এবং রাণী রাসমণি এক লক্ষেরও বেশি টাকা খরচ করে রুপোর রথ বানিয়েছিলেন। তাঁর গৃহদেবতা রঘুবীরকে নিয়ে কলকাতার রাস্তায় শোভাযাত্রা বের করেছিলেন। রাণী রাসমণি প্রচলিত সেই রথযাত্রা আজও রথের দিনে দক্ষিণেশ্বরে মহাসমারোহে পালন করা হয়। রথে আরোহণ করার জগন্নাথ পুরো দক্ষিণেশ্বর প্রদক্ষিণ করেন। ৪) বীরভূমে বৈষ্ণবকবি জয়দেবের পিতলের রথ : স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল হওয়ায় ভারতে সুপ্রাচীনকাল থেকে পিতলের রথ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গীতগোবিন্দমের রচয়িতা বৈষ্ণব কবি জয়দেবের কেন্দুলীর পিতলের রথা ৭০০ বছরের প্রাচীন। এ রথটি শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবেরও আগের। ১২৯৬-৯৮ এর মাঝামাঝি সময়ে এখানে প্রথম রথ নির্মাণ করা হয়েছিল। ৫) চন্দননগরের লোহার রথ : চন্দননগর লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী যদুবেন্দ্র ঘোষ ১৭৭৬ সালে এই রথযাত্রা শুরু করেছিলেন। প্রায় আড়াইশো বছর ধরে সেই রীতি চলছে। চন্দননগরের বর্তমান রথটি ৬০ টন ওজনের লোহা দিয়ে নির্মিত। ৬) গোপীনাথের পিতলের রথ : পশ্চিম বর্ধমান জেলার উখরার জমিদার বাড়ির ১৭৯ বছরের পুরান ‘গোপীনাথ জিউর’ ২০ ফুট উঁচু পিতলের রথ। এটি উখড়ার পূর্বতন জমিদার লাল সিংহ হান্ডা পরিবারের প্রায় ১৭৭ বছরের প্রাচীন রথ। ৭) মুখার্জি পরিবারের তামা-পিতলের রথ : বীরনগরে নদিয়ার সিংহ দুয়ার মুখার্জি পরিবারের রথ ৭০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন! ধাতুর তৈরি রথে আরোহন করেন আরাধ্য দেবতা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা (Rath Yatra)। রথটি ৭০০ বছর আগে ঢাকা থেকে নদিয়ার ফুলিয়াতে আনা হয়। সেখানে ২০০ বছর অবস্থান করার পর নিয়ে যাওয়া হয় মুখার্জি পরিবারে। রথটি তৈরি তামা ও পিতল দিয়ে। রথের চাকাও তৈরি মিশ্রিত ধাতু দিয়ে। ৮) সিয়ারশোল রাজবাড়ির পিতলের রথ : ১০০ বছরের পুরাতন ত্রিতলবিশিষ্ট এই পিতলের রথটি নবরত্ন মন্দিরের আদলে তৈরি করানো হয়েছে বলেই জানা যায়। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় রথযাত্রার আকর্ষণ এ রথটি সারা বছর রাখা থাকে রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে। ৩০ ফুটের এই পিতলের রথের ওজন ৮-১০ টন। ৯) নসিপুর আখড়ার রূপার রথ : ১১৬৮ বঙ্গাব্দে স্বামী রামানুজ আচার্য্যের শিষ্য লক্ষণ দাস ও মনসরাম দাস ধর্ম প্রচারের জন্য মুর্শিদাবাদে এসে নসিপুরে এক আখড়া স্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে এখানে রথযাত্রার সূচনা করে। রাজস্থান থেকে কারিগর নিয়ে এসে রুপোর রথ তৈরি করান ভগবানদাস আচার্য্য। হাতির উপরে উপবিষ্ট মাহুত রথটিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। রথের বাহন হাতি ও হাতির উপরে উপবিষ্ট মাহুত সোনার জলে পালিশ রুপো দিয়ে তৈরি। সেই প্রথা মেনে আজও আয়োজিত হচ্ছে প্রায় ২৫৫ বছরের প্রাচীন নসিপুর আখড়ার রথযাত্রা। ১০) সীমলার প্রামাণিক বাড়ির কাঁসা-পিতলের রথ : উত্তর কলকাতার তারক প্রামাণিক রোডের প্রামাণিক বাড়ির পিতলের রথটি আনুমানিক ২৫০ বছরের পুরোনো৷ তারক প্রামাণিকের বাবা গুরুচরণ প্রামাণিকের আমলে হুগলির ব্যান্ডেলে পারিবারিক কাঁসা-পিতলের কারখানাতে তৈরি হয়েছিল ১৪ ফুট উচ্চতার পিতলের এই রথ, যার ওজন প্রায় ২২ টন৷ ১১) হেতমপুর রাজবাড়ির পিতলের রথ : রাজপরিবারের ইতিহাস বলছে, বাংলা ১২৫০ সালের আশপাশে হেতমপুরের রাজা রামরঞ্জন চক্রবর্তী ইংল্যাণ্ডের স্টুয়ার্ট কোম্পানিকে দিয়ে রথটি বানিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডে তৈরি হেতমপুর রাজবাড়ির পিতলের রথ দেখে মনে হয় যেন সোনার তৈরি। রথটি তৈরি হয়েছিল রাজপরিবারের গৌরাঙ্গ মন্দিরের গৌরাঙ্গ-নিত্যানন্দের জন্যই। প্রথা অনুযায়ী গৌরাঙ্গ নিত্যানন্দের বিগ্রহ তোলা হতো রথের দিন। বর্তমানে মন্দিরটির সেবাভার গ্রহণ করেছে গৌড়ীয় মঠ। ১২) বাঁকুরার রানি শিরোমণির পিতলের রথ : ইতিহাস বলে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে প্রাচীন রথ উৎসব প্রায় ৩৫০ বছরের বেশি প্রাচীন। ১৬৬৫ খ্রীঃ বিষ্ণুপুরের মল্লরাজা শহরের মাধবগঞ্জে রানি শিরোমণি দেবীর ইচ্ছা অনুযায়ী পাথরের পাঁচ চূড়া মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরের বিগ্রহ রাধা মদন গোপাল জিউ। এই মন্দিরের অনুকরণের তৈরি করা হয় পিতলের রথ। মল্লরাজাদের সময় থেকেই এই রথ উৎসবের সূচনা হয়। ১৩) লালগড় রাজবাড়ির লোহার রথ : ১৭১০ সালে লালগড়ের রাজবাড়িতে রথযাত্রার সূচনা হয়। রথযাত্রার দিনে ৮ চাকার লোহার তৈরি ২০ ফুট উঁচু রথে চড়েন লালগড় রাজপরিবারের কুলদেবতারা। ৩১৫ বছরের প্রাচীন এ রথযাত্রায় লালগড়ের বাবুপাড়ার মন্দির থেকে রাধামোহন ও শ্রীমতীর পাশাপাশি গোপীনাথ, গোবিন্দ, আরও দু’টি শ্রীমতী, সাক্ষীগোপাল, কৃষ্ণ-বলরাম, ধাম গৌরাঙ্গ ও জগন্নাথের বিগ্রহ নিয়ে আসা হয় রথতলায়। কেবলমাত্র এ দিনই রাধামোহন ও শ্রীমতীকে সোনার অলঙ্কারে সাজানো হয়। রথযাত্রার দিন বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে, অমৃতযোগে রথের রশি টানা শুরু হয়। স্থানীয় হাটচালায় মাসির বাড়িতে পৌঁছে যাত্রা শেষ হয়। ১৪) বনকাঠির পিতলের রথ : বনকাঠির পিতলের রথটি মুখোপাধ্যায় পরিবারের গোপালেশ্বর মন্দিরের আদলে তৈরি করা হয় পিতলের রথ। ১৭৫৪ বঙ্গাব্দে গোপালেশ্বর মন্দির তৈরি হয় আর তার দুই – তিন বছরের পরেই পিতলের রথ তৈরি হয়। সময় লাগে ছয় থেকে আট মাস। বনকাটির পিতলের রথটি ১৫ ফুট উচ্চতার এবং