দেবী দুর্গাকে কেন বৈষ্ণবী, বিষ্ণুমায়া, নারায়ণী নামে ডাকা হয়?

20241002 121312 Svadharmam

দেবী দুর্গাকে কেন বৈষ্ণবী, বিষ্ণুমায়া, নারায়ণী নামে ডাকা হয়? শ্রী শ্রী চন্ডীতে দেবীর স্তুতিকালে ক্ষণে ক্ষণে দেবীকে বৈষ্ণবী, বিষ্ণুমায়া, নারায়ণী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়েছে। যেমন: শঙ্খ-চক্র-গদা-শার্ঙ্গ-গৃহীত-পরম-আয়ুধে। প্রসীদ বৈষ্ণবী-রূপে নারায়ণি নমঃ অস্তু তে।। ( শ্রী চন্ডী, ১১।১৬ -মার্কেন্ড পুরাণস্থ ) অনুবাদ: হে শঙ্খ চক্র গদা শার্ঙ্গাদি শ্রেষ্ঠ আয়ুধ-ধারিণি, তুমি বৈষ্ণবী রূপে বিখ্যাত, হে নারায়ণী, তোমাকে নমস্কার। . শ্রীমদ্ভাগবতে উল্লেখ রয়েছে – নামধেয়ানি কুর্বন্তি স্থানানি চ নরা ভুবি। দুর্গেতি ভদ্রকালীতি বিজয়া বৈষ্ণবীতি চ ৷। কুমুদা চণ্ডিকা কৃষ্ণা মাধবী কন্যকেতি চ। মায়া নারায়ণীশানী শারদেত্যম্বিকেতি চ।। ( শ্রীমদ্ভাগবত ১০।২।১১,১২ ) অনুবাদ: ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মায়াদেবীকে এই বলে আশীর্বাদ করেছিলেন– পৃথিবীতে মানুষেরা বিভিন্ন স্থানে তোমার দুর্গা, ভদ্রকালী, বিজয়া, বৈষ্ণবী, কুমুদা, চণ্ডিকা, কৃষ্ণা, মাধবী, কন্যকা, মায়া, নারায়ণী, ঈশানী, শারদা, অম্বিকা প্রভৃতি নামকরণ করবে। . দেবীকে কেন এ সকল বৈষ্ণবীয় সম্বোধনে সম্বোধিত করা হয় তার ব্যাখা দেবী স্বয়ং-ই দিয়েছেন- বিষ্ণুভক্তিরহং তেন বিষ্ণুমায়া চ বৈষ্ণবী। নারায়ণস্য মায়াহং তেন নারায়ণী স্মৃতা।। ( শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কৃষ্ণজন্মখন্ড, ১২৯।৯৩ ) অনুবাদ: দেবী বললেন, ” আমি বিষ্ণুভক্তা, তাই আমাকে ‘বিষ্ণুমায়া’ ও ‘বৈষ্ণবী’ নামে ডাকা হয়। আমি নারায়ণের মায়া, তাই আমাকে ‘নারায়ণী‘ বলা হয়। . ।।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

গুরুদেব কে? সদ্গুরুদেব চেনার উপায় কি? গুরুদেব কি পরিত্যাগ করা যায়?

20240929 093942 Svadharmam

গুরুদেব কে? যিনি অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলো প্রদান করে আমাদের চক্ষু উন্মোচিত করেন তিনিই গুরুদেব। গুরুদেব পরমতত্ত্ব পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি। গুরুদেব ভগবানের মতোই পূজনীয় কিন্তু তিনি ভগবান নন। গুরুদেব নির্বাচন প্রত্যেক মনুষ্য জীবের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মনুষ্য জীবন অত্যান্ত দূর্লভ। জীবাত্মা অনেক ভাগ্যের ফলে মানুষ্য শরীর প্রাপ্ত হয়। এ সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে – নৃদেহমাদ্যং সুলভং সুদুর্লভং প্লবং সুকল্পং গুরুকর্ণধারম্। ময়ানুকূলেন নভস্বতেরিতং পুমান্ ভবান্ধিং ন তরেৎ স আত্মহা।। [ শ্রীমদ্ভাগবত ১১।২০।১৭ ] বঙ্গানুবাদ: জীবনের সর্ব কল্যাণপ্রদ অত্যন্ত দুর্লভ মনুষ্য দেহ, প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে আপনা থেকেই লাভ হয়ে থাকে। এই মনুষ্যদেহকে অত্যন্ত সুষ্ঠুরূপে নির্মিত একখানি নৌকার সঙ্গে তুলনা করা যায়, যেখানে শ্রীগুরুদেব রয়েছেন কাণ্ডারীরূপে এবং পরমেশ্বর ভগবানের উপদেশাবলীরূপ বায়ু তাকে চলতে সহায়তা করছে, এই সমস্ত সুবিধা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি তার মনুষ্য জীবনকে ভবসমুদ্র থেকে উত্তীর্ণ হতে উপযোগ না করে, তাকে অবশ্যই আত্মঘাতী বলে মনে করতে হবে। অর্থাৎ এই দূর্লভ মনুষ্য দেহ নৌকা স্বরুপ আর গুরুদেব সেই নৌকার কাণ্ডারী। জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্যে সফল হতে হলে, প্রত্যেক মনুষ্য জীবের অবশ্যই সদ্গুরুদেবের শরণাপন্ন হতে হবে। তাই সদ্গুরুদেব নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। . সদ্গুরুদেবের লক্ষণ কি? সদ্গুরুদেবের লক্ষণ সমন্ধে অথর্ববেদীয় মুণ্ডক উপনিষদে বলা হয়েছে- তদ্বিজ্ঞানার্থং স গুরুম্ এবাভিগচ্ছেৎ। সমিত পাণিঃ শ্রোত্রিয়ম্ ব্রহ্মনিষ্ঠম্।। [ মুণ্ডক উপনিষদ ১।২।১২ ] বঙ্গানুবাদ: গুরুদেব হবেন বৈদিক জ্ঞান সম্পন্ন এবং ব্রহ্মনিষ্ঠম্ অর্থাৎ পরম-পুরুষোত্তম ভগবানের সেবায় নিষ্ঠাবান, পরম সত্যের প্রতি সুদৃঢ় ভক্তিযুক্ত। বিশ্লেষণ: শ্রীকৃষ্ণই পরমব্রহ্ম যে কথা অর্জুন গীতায় (১০/১২) তে বলেছেন,“পরং ব্রহ্ম অর্থাৎ তুমিই পরমব্রহ্ম” এবং শ্রীমদ্ভাগবতে (১/২/১১) তে বলা হয়েছে, “ব্রহ্মেতি পরমাত্মেতি ভগবানিতি শব্দতে, অর্থাৎ সেই পরমতত্ত্ব শ্রীকৃষ্ণকেই মানুষ ব্রহ্ম, পরমাত্মা ও ভগবান বলে থাকে”। তাই এই মন্ত্রে ব্রহ্মনিষ্ঠম্ বলতে যিনি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবায় অনুরক্ত তাকেই বুঝতে হবে। . এ সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতে আরো বলা হয়েছে- তস্মাদ্ গুরুং প্রপদ্যেত জিজ্ঞাসুঃ শ্রেয় উত্তমম্ । শাব্দে পরে চ নিষ্ণাতং ব্রহ্মণ্যুপশমাশ্রয়ম্ ।। [ শ্রীমদ্ভাগবত ১১।৩।২১ ] বঙ্গানুবাদ: যথার্থ সুখশান্তি এবং কল্যাণ আহরণে পরম আগ্রহী যেকোনো ব্যক্তিকে সদগুরুর আশ্রয় গ্রহণ এবং দীক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে তাঁর কাছে আত্মনিবেদন করতেই হবে। সদগুরুর যোগ্যতা হলো এই যে, গভীরভাবে অনুধ্যানের মাধ্যমে তিনি শাস্ত্রাদির সিদ্ধান্ত উপলব্ধি করেছেন এবং অন্য সকলকেও সেসব সিদ্ধান্ত সম্পর্কে দৃঢ়বিশ্বাসী করে তুলতে সক্ষম। এ ধরনের মহাপুরুষ, যিনি পরমেশ্বর ভগবানের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন এবং সকল জাগতিক বিচার-বিবেচনা বর্জন করেছেন, তাকেই যথার্থ পারমার্থিক সদগুরুরূপে বিবেচনা করা উচিত। . এ সম্পর্কে পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে – ষটকর্ম নিপুণ বিপ্র মন্ত্র তন্ত্র বিশারদঃ। অবৈষ্ণবঃ গুরু ন স্যাৎ বৈষ্ণবঃ শ্বপচঃ গুরু।। বঙ্গানুবাদ: কোন ব্রাহ্মণ যদি ব্রাহ্মণের ছয়টি কর্মে নিপুন হয় এবং মন্ত্রতন্ত্রে বিশারদও হয়, কিন্তু সে যদি কৃষ্ণভক্ত না হয়, তাহলে সে গুরু হতে পারে না। পক্ষান্তরে চন্ডাল কুলে উদ্ভুত ব্যক্তিও যদি শুদ্ধ কৃষ্ণ ভক্ত হয় তাহলে সেই গুরু হতে পারে। . সদ্গুরু-কে এ সম্পর্কে পদ্মপুরাণে প্রভু সদাশিব বলেছেন- বিমৎসরঃ কৃষ্ণে ভক্তোহনন্য প্রয়োজনঃ। অনন্যসাধনঃ শ্রীমান্ ক্রোধলোভবিবর্জিতঃ।। শ্রীকৃষ্ণরসতত্ত্বজ্ঞঃ কৃষ্ণমন্ত্রবিদাংবরঃ। কৃষ্ণমন্তাশ্রয়ো নিত্যং মন্ত্রতক্তঃ সদা শুচিঃ॥ সদ্ধৰ্ম্মশাসকো নিত্যং সদাচারনিয়োজকঃ। সম্প্রদায়ী কৃপাপূর্ণো বিরাগী গুরুরুচ্যতে ॥ [ পদ্মপুরাণ, পাতালখণ্ড, ৫১।৬-৮ ] বঙ্গানুবাদ: যিনি শান্ত, মাৎসর্য্য-বিহীন, ও কৃষ্ণভক্ত, কৃষ্ণোপাসনা ভিন্ন যাঁহার অন্য প্রয়োজন নাই, কৃষ্ণের অনুগ্রহ ভিন্ন যাঁহার দিন অন্য প্রয়োজন নাই অর্থাৎ কৃষ্ণের অনুগ্রহকেই যিনি সংসার-মুক্তির একমাত্র উপায় স্থির করিয়াছেন, যাঁহাতে ক্রোধ বা লোভের লেশমাত্র নাই, যিনি শ্রীকৃষ্ণরসতত্ত্বজ্ঞ এবং কৃষ্ণমন্ত্রজ্ঞদিগের অগ্রগণ্য, যিনি কৃষ্ণমন্ত্র আশ্রয় করিয়া সর্বদা সেই মন্ত্রে ভক্তিমান্ হইয়া পবিত্রভাবে কালযাপন করেন, সদ্ধর্ম্মের উপদেশ প্রদান করেন, সর্বদা সদাচারে নিযুক্ত থাকেন, যিনি তা এইরূপে বৈষ্ণবসম্প্রদায়ভুক্ত দয়ালু ও সংসার-বিরাগী, তিনিই গুরুপদবাচ্য। . সেই একই সিদ্ধান্ত শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে উল্লেখ রয়েছে- কিবা বিপ্র, কিবা ন্যাসী, শূদ্র কেনে নয় । যেই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা, সেই ‘গুরু’ হয় ।। [ চৈতন্যচরিতামৃত, মধ্য ৮।১২৮ ] বঙ্গানুবাদ: যিনি কৃষ্ণ-তত্ত্ববেত্তা তিনিই গুরু, তা তিনি ব্রাহ্মণ হোন, কিংবা সন্ন্যাসীই হোন অথবা শূদ্রই হোন, তাতে কিছুই যায় আসে না। . শ্রীল রূপগোস্বামী উপদেশামৃতে এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন – বাচোবেগং মনসঃ ক্রোধবেগং জিহ্বাবেগমুদরোপস্থবেগম্। এতান বেগান যো বিষহেত ধীর সর্বামপীমাং পৃথিবীং সশিষ্যাৎ।। বঙ্গানুবাদ: যে ব্যক্তি বাক্যের বেগ, ক্রোধের বেগ, জিহ্বার বেগ, মনের বেগ, উদর এবং  উপস্থের বেগ, এই ছয়টি বেগ দমন করতে সমর্থ হন তিনি পৃথিবী শাসন করতে পারেন। অর্থাৎ তিনিই গোস্বামী বা গুরুপদবাচ্য। অর্থাৎ সদ্গুরুদের অবশ্যই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা হবেন এবং সদগুরুদেবের প্রধান লক্ষণ তিনি অবশ্যই  কৃষ্ণ ভক্ত হবেন। . সদ্গুরুদেব কি আমিষ-আহারীদের দীক্ষা দেন? এ সম্পর্কে স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে- এবমাদিগুণৈর্ধূক্তং শিষ্যং নৈব পরিগ্রহেৎ। গৃহ্ণীয়াদ্যদি তদ্দোষঃ প্রায়ো গুরুম্ পস্পৃশেৎ।। অমাত্যদেষো রাজানং জায়াদোষঃ পতিং যথা। তথা শিষ্যকৃতো দোষো গুরুং প্রাপ্নোত্যসংশয়ম্।। তন্মাচ্ছিষ্যৎ গুরু-নিত্যং পরীক্ষ্যৈব পরিগ্রহেৎ। [ স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখণ্ড, মার্গশীর্ষ্যমাস মাহাত্ম্য ১৬। ১৬-১৮ ] বঙ্গানুবাদ: এই সকল গুণ (দোষ) যুক্ত মানবকে শিষ্য বলিয়া গ্রহণ করিবে না; আর এই সকল দোষের অনেকগুলি যদি গুরুকে স্পর্শ করে, তবে তাদৃশ গুরুকেও গুরু বলিয়া গ্রহণ করা কর্তব্য নহে। দেখ, যেমন অমাত্যদোষ নৃপকে এবং পত্নীদোষ পতিকে আশ্রয় করে, তদ্রূপ শিষ্যকৃত দোষও গুরুকে আশ্রয় করিয়া থাকে, সন্দেহ নাই; অতএব গুরু শিষ্যকে নিত্য পরীক্ষা করিয়া গ্রহণ করিবেন। বিশ্লেষণ: শ্রীমদ্ভাগবতে (৫/২৬/১৩)-তে উল্লেখ রয়েছে-, “যে সমস্ত নিষ্ঠুর মানুষ তাদের দেহ ধারণের জন্য এবং জিহ্বার তৃপ্তি সাধনের জন্য নিরীহ পশু-পক্ষীকে হত্যা করে রন্ধন করে, মৃত্যুর পর যমদূতেরা কুন্তীপাক নরকে ফুটন্ত তেলে তাদের পাক করে।” এই রকম পশু-পক্ষী হত্যাকারীকে গুরুদেব কখনো দীক্ষা দিবেন না। যদি গুরুদেব এমন শিষ্যকে দীক্ষা দেন তাহলে রাজার প্রজারা যদি অধার্মিক হয়, যেভাবে রাজাকে নরকে যেতে হয়। স্ত্রী যদি অধার্মিক হয়, চরিত্রহীন হয় সেই দোষে যেভাবে স্বামী কে নরকে যেতে হয়। ঠিক সেই রকম যথার্থ গুরু এবং যথার্থ শিষ্য না হয়, গুরুর কারণে শিষ্য নরকে যাবে এবং শিষ্যের কারণে গুরুকে নরকগামী হতে হবে। তাই যিনি সদ্গুরুদেব তিনি কখনোই আমিষ আহারী ব্যক্তিকে দীক্ষা দিবেন না, দীক্ষার আগে তিনি শিষ্যকে পরিক্ষা করে দেখবেন তিনি আমিষাশী, নেশা এবং অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত কিনা। যদি কোনো গুরুদেব এমন পাপীকে  দীক্ষা দেন, বুঝতে হবে তিনি সদ্গুরুদেব নন। এমন গুরুর থেকে দীক্ষা নিলে অবশ্যই সেই  গুরু সহ শিষ্য নরকে নিমজ্জিত হতে হবে। . অসদ্গুরু কি ত্যাগ করা যায়? এ সম্পর্কে মহাভারতে উল্লেখ রয়েছে- গুরোরপ্যবলিপ্তস্য কার্যাকার্যমজানতঃ। উৎপথপ্রতিপন্নস্য পরিত্যাগো বিধীয়তে ॥ [ মহাভারত, উদ্যোগপর্ব, ১৬৭।২৫ ] বঙ্গানুবাদ: কার্য ও অকার্যে অনভিজ্ঞ কৃষ্ণভক্তিবিরুদ্ধগামী গর্বিত আত্মশ্লাঘী গুরুকে পরিত্যাগ করাই বিধি। যদি গুরুদেব ইন্দ্রিয় তর্পণের প্রতি আসক্ত হয় এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়ে ভক্তিযুক্ত ভগবৎসেবার পথ পরিত্যাগ করে পতনমুখী পথের দিকে ধাবিত হয়, তাহলে তাকে ত্যাগ করা উচিত। [ অর্থাৎ অসদ্গুরুকে অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। এই একই সিদ্ধান্ত স্কন্দপুরাণ, কূর্মপুরাণ, নারদ পঞ্চরাত্র শাস্ত্রেও উল্লেখ রয়েছে ] . এ সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতে বলা রয়েছে – গুরুর্ন স স্যাৎ স্বজনো ন স স্যাৎ পিতা ন স স্যাজ্জননী ন সা স্যাৎ। দৈবং ন তৎস্যান্ন পতিশ্চ স স্যা-ন্ন মোচয়েদ্ যঃস মুপেতমৃত্যুম্।। [ শ্রীমদ্ভাগবত ৫।৫।১৮ ] বঙ্গানুবাদ: যিনি তাঁর আশ্রিত জনকে সমুপস্থিত মৃত্যুরূপ সংসার মার্গ থেকে উদ্ধার করতে না পারেন, তাঁর

ইসকনে নারী পুরুষের মধ্যে কেমন সম্পর্কের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে?

20240926 164520 Svadharmam

এই জগতের কল্যাণের স্বার্থে কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এই স্বর্ন সংস্থা স্থাপন করছেন। প্রভুপাদের শিক্ষার একমাত্র আঁধার ছিল জীবনের সকল কার্যে জড় বিষয় পরিত্যাগ করে পারমার্থিক পথনির্দেশ অনুসরণ করা হবে। দেহের কোনো পার্থক্য থাকছে না, “হোক এই দেহটি কোনো নারী অথবা পুরুষের” আমরা সকলেই আত্মা যদি আমরা পারমার্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি। কিন্তু প্রকৃতির নির্দেশ অনুসারে শারীরিক ও মানসিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুরুষ এবং নারীকে ভিন্ন ভিন্নভাবে তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতির বিধি অনুসারে নারীরা সাধারণত বেশিরভাগ আবেগপ্রবণ হয়ে থাকেন, ভগবান তাদের এই বিশেষ গুণটি প্রদান করেছেন যে তারা নিজেদের স্বজন হোক পিতা-মাতা, স্বামী অথবা নিজের সন্তানদের অধিক ভালোবাসার সাথে স্বাচ্ছন্দে রাখতে পারেন। এবং পুরুষরা প্রাকৃতিকভাবে শারীরিক দিক থেকে অধিক শক্তিশালী, রক্ষক, উপার্জনকারী, তার শরণাগত থাকা সকলকে রক্ষা করা। প্রভুপাদ যখন আমেরিকায় গিয়েছেন তখন তিনি দেখছিলেন যে নারীরা পুরুষদের সাথে সমান অধিকার নিয়ে বেশি সচেতন, তারাও চাকরি করছে। তখন প্রভুপাদ সেইভাবেই প্রচার করেছেন তিনি কখনই তাদের বাধা দেননি চাকরি বা অন্যান্য বিষয়ে। তিনি তাদের চারটি বিধিনিষেধ দিয়েছিলেন। যা আমরা সকলেই জানি। এরমধ্যে একটি প্রধান হচ্ছে অবৈধ সঙ্গ বর্জন করা। এবার মূল বিষয়ে আসছি, শ্রীল প্রভুপাদ চেয়েছিলেন এমন একটি সংস্থা হবে যেখানে নারী পুরুষ উভয়ই সমানভাবে কৃষ্ণভাবনামৃতের আশ্রয় গ্রহণ করবে এবং জগতের কল্যাণের স্বার্থে সেই বৈদিক সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার করবে। কিন্তু এখনকার বর্তমান সমাজে কিছু ছেলেমেয়েরা এই প্রচার ও প্রসারের নাম দিয়ে অবাধে মেলামেশা করছে। অনেকে এটাকে কৃষ্ণভাবনাময় সম্পর্ক নামক আখ্যা দিয়ে থাকেন যা তথাকথিত বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড অথবা বেস্টফ্রেন্ড হিসেবেও পরিচিত। যা কখনোই প্রভুপাদের দৃষ্টিকোণ ছিল না। শ্রীল প্রভুপাদ তার ১৭ নভেম্বর, ১৯৭১, দিল্লিতে একটি প্রবচনে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন: – বিবাহ করা অপরিহার্য। আমাদের সংস্থার বিষয়ে বিবেচনা করা হলে, আমরা আমাদের সংস্থায় কাউকে বন্ধু, গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড হিসেবে থাকার স্বীকৃতি দেই না। না। তাদের অবশ্যই বিবাহিত হতে হবে এবং এই ছেলে-মেয়েরা, বিবাহিত হওয়ার পর, তারা সুন্দরভাবে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করছে। আমার সমস্ত শিষ্য যারা বিবাহিত, তারা সন্ন্যাসীর চেয়ে বেশি প্রচারকার্য করছে। অর্থাৎ এই কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘে দুজন সম্পর্ক বিহীন পুরুষ নারী কখনোই অবাধে মেলামেশা করতে পারবে না। তাদের অবশ্যই কোনো বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এটাই আমাদের বৈদিক সংস্কৃতি। কিন্তু আমরা যদি পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অনুসরণ করি এবং এই কৃষ্ণভাবনামৃতের নাম দিয়ে অবৈধ সঙ্গ করি তাহলে তা হচ্ছে প্রতারণার স্বরূপ। শ্রীল প্রভুপাদ প্রায়শই বৈদিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা করেছেন। প্রভুপাদ তখনকার সময় উল্লেখ করে বলছিলেন- “বৈদিক সংস্কৃতি এতই কঠোর ছিল যে তুমি তার (নারীর) দিকে তাকাতেও পারবে না, তার সাথে কথা বলার বা কিছু প্রস্তাব করার বিষয়ে প্রশ্নই আসে না।” এতেই বোঝা যায় পুরুষরা তাদের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা তাদের দিকে তাকাতে পারতোনা। তাহলে কৃষ্ণভাবনামৃতের এই প্রচার এত সহজ করে দেওয়ার পরেও কেনো এই অবৈধ সঙ্গে লিপ্ত হচ্ছি তাও নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য। শ্রীল প্রভুপাদ আরো উল্লেখ করেছেন যে, পতিব্রতা পত্নী হচ্ছেন তিনি, যাঁর বিবাহের পূর্বে কোন পুরুষের সঙ্গে কোন সম্পর্ক ছিল না। স্ত্রীদের যদি যৌবনে পুরুষদের সঙ্গে মেলামেশা করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়, তা হলে তার সতীত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়। সাধারণত তাদের সতীত্ব থাকে না। আগুনের সামনে মাখন আনলে তা গলবেই। স্ত্রী হচ্ছে আগুনের মতো এবং পুরুষ মাখনের মতো। ~শ্রীমদ্ভাগবত ৪.২৬.১৬ ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য। সাধারণত বিবাহিতা স্ত্রী ব্যতীত অন্য কারও সঙ্গে পুরুষের যৌনসঙ্গে লিপ্ত হওয়া উচিত নয় এবং শাস্ত্র বিরুদ্ধ। বৈদিক বিধান অনুসারে, অপরের স্ত্রীকে মাতৃবৎ দর্শন করা উচিত, এবং মাতা, ভগিনী ও কন্যার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কেউ যদি পরস্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়, তা হলে তা মায়ের সঙ্গে যৌনসঙ্গে লিপ্ত হওয়ার মতো বলে বিবেচনা করা হয়। সেই আচরণ অত্যন্ত পাপময়। স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রেও সেই নিয়ম বলবৎ রয়েছে, কোন স্ত্রী যদি তার পতি ব্যতীত অন্য কোন পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়, তা হলে সেই সম্পর্ক পিতা অথবা পুত্রের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার মতো। ~শ্রীমদ্ভাগবত ৫.২৬.২০ ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য। শ্রীল প্রভুপাদ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন ইন্দ্রিয়তর্পণ করার জন্যে এসব অবাধে মেলামেশা করা চলবে না। যদি কোনো পুরুষ বা নারী এভাবে অবাধে মেলামেশা করে তবে আগুনের ন্যায় নারীদের সম্মুখে পুরুষের ন্যায় ঘি অবশ্যই গলবে। এবং একসময় তারা অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হবে। তখন একজন নারীর সতীত্ব বজায় রাখা কঠিন হবে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কি প্রভুপাদ নারীদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছেন? না একদমই না। প্রথমত এসব অবাধে মেলামেশা কখনোই স্বাধীনতা হতে পরে না। কিন্তু প্রভুপাদ প্রচারে কঠোর নিয়ম অনেকটাই শিথিল করেছেন। যেমন আমি প্রথম দিকেই বলেছি প্রভুপাদ যখন তিনি আমেরিকায় প্রচারে যান তখন তিনি মাতাজীদের চাকরি করায় বাধা দেননি। তিনি বলেছেন এর মধ্যেই তোমরা কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করবে, কিছু সীমানা বজায় রেখে। তিনি অনেকটাই শিথিল করেছিলেন। তখনকার সময়ে তিনি মাতাজীদের অনেক মন্দিরের অধ্যক্ষের পদ দিয়ে গিয়েছিলেন। Some words on this topic – একটি ঘটনায় দেখা যায় প্রচারকালে প্রভুপাদ বিভিন্ন ভক্তদের মাঝে কথোপকথনে তিনি একটি ভূ-গোলক রেখে সেই নকশা থেকে তাদের মাঝে প্রচারের জন্য দেশের বিভক্তি করেছিলেন, এবং বলছিলেন তুমি এই দেশে যাবে, তুমি ওই দেশে যাবে ওখানে গিয়ে প্রচার করবে। পেছনে কিছু মাতাজী শিষ্যরাও ছিলেন। তারা প্রভুপাদ কে জিজ্ঞাসা করছিলেন, প্রভুপাদ আমরা কি কিছু পাবো না। তখন প্রভুপাদ বলছেন- না না তোমরা এই দেশটা নাও প্রচারের জন্য। যেনো তিনি দেশ স্বরূপ প্রসাদ বিতরণ করছেন। এবং আমরা দেখতে পাই যে প্রভুপাদের শিষ্যগণ ঠিক কিভাবে বিভিন্ন দেশে নগরে গ্রামে প্রচার করেছিলেন। এখন পুরো বিশ্বে সেই প্রচার প্রসিদ্ধ। এমনকি প্রভুপাদ তাঁর শিষ্যাদের নিজের পূত্রীস্বরূপ দেখতেন, তাই তাদের মধ্যে কোনো বিভাজন করেননি। আমি কিছুকাল পূর্বেই প্রভুপাদের একজন শিষ্যা শ্রীমতী মালতি মাতাজীর প্রভুপাদ স্মরণামৃত তে শুনছিলাম, তিনি কিছু ঘটনা উল্লেখ করছিলেন:- তৎকালীন মায়াপুর তখন মায়াপুরে ভক্তদের থাকার জায়গা অনেকটাই সংকীর্ণ ছিল মন্দির ছিল না বললেই চলে। তখন মালতি মাতাজী ভাবছিলেন “এমন স্থানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।” তিনি ভাবছিলেন আমি প্রভুপাদের সাথে কথা বলে এখন থেকে অন্যস্থানে চলে যাবেন প্রচারে। একদিন প্রভুপাদ ও তাঁর গুরু ভ্রাতারা প্রসাদ আস্বাদন করছিলেন। মালতি মাতাজী তাদের সকলকে পরিবেশন করছিলেন।যখন মাতাজী প্রসাদ নিয়ে যাচ্ছেন তখন হটাৎ প্রভুপাদ তার দিকে আঙুল দিয়ে তাঁর গুরুভ্রাতাদের দেখাচ্ছিলেন যে “এই দেখো ও আমার মেয়ে, তোমরা জানো সে আমাকে কতটা ভালোবাসে সে আমার জন্য নিজের জীবন দিতে পারবে এবং আমি ওর জন্য নিজের গলা কাটাতেও প্রস্তুত।” তখন মালতি মাতাজী হটাৎ আলাদা স্থানে গিয়ে কান্না শুরু করলেন- “প্রভুপাদ আমার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আর আমি এটা কি চিন্তা করছিলাম।” তখন তিনি ঠিক করলেন যা কিছুই হোক তিনি প্রভুপাদকে ছেড়ে এই মায়াপুর কে ছেড়ে কোথাও যাবেন না। এবং প্রভুপাদ পুরুষের কথাও উল্লেখ্য করছেন যে, শ্রীমদ্ভাগবতে উল্লেখ রয়েছে যদি কোনো পুরুষ কোনো নারীর দিকে কুদৃষ্টিতে তাকায় তাহলে তা ধর্ষনের সমতুল্য। প্রভুপাদ আরো বলেছেন, যদি কোনো পুরুষ চারটি বিধিনিষেধ

শ্রীকৃষ্ণের কি মৃত্যু হয়েছিল, নাকি তিনি স্বশরীরে বৈকুন্ঠে গমন করেছিলেন ?

IMG 20240924 WA0004 Svadharmam

আমাদের সমাজে কিছু শাস্ত্রজ্ঞানহীন ভগবৎ-বিদ্বেষী ব্যাক্তি আছে, যারা শ্রীকৃষ্ণকে তাদের মতোই সাধারণ মানুষ মনে করে। অথচ মহাভারত শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলা হয়েছে, স্বয়ং চতুর্ভুজ বিষ্ণু বলা হয়েছে। অনুগ্রহার্থং লোকানাং বিষ্ণুলোক নমস্কৃতঃ। বসুদেবাত্তু দেবক্যাং প্রাদুর্ভূতো মহাযশাঃ।। ( মহাভারত, আদিপর্ব, ৫৮/১৩৮ ) অনুবাদ: ত্রিজগতের পূজনীয় মহাযশস্বী স্বয়ং বিষ্ণু লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য বসুদেব-দেবকীতে আবির্ভূত হইয়া ছিলেন। কিন্তু তার পরেও এ সমস্ত অজ্ঞানী মানুষেরা তাদের আসুরিক মতকে প্রচার করতে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধান লীলা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করতেছে, যা অশাস্ত্রীয়, ঘৃন্য এবং আসুরিক। অথচ মহাভারত শাস্ত্রের মৌষলপর্ব পাঠ করে আমরা সহজে জানতে পারি, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে তার অন্তর্ধানের সময় নির্ধারন করেছিলেন। তখন তিনি একটি বৃক্ষের উপর চতুর্ভূজ বিষ্ণুরুপে অবস্থান করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছার প্রভাবে শ্রীকৃষ্ণ স্বশরীরে প্রথমে স্বর্গে এবং পরে বৈকুন্ঠ জগতে প্রবেশ করেন। অসুরেরা যেহেতু মহাভারত শাস্ত্র উক্ত শ্রীকৃষ্ণকে বিষ্ণুরুপে মানে না, পরমেশ্বর ভগবানরুপে মানে না, তাই তারা মহাভারত শাস্ত্রের এসমস্ত জ্ঞান সাধারন মানুষের মাঝে প্রচার না করে এর বিপরীতে অশাস্ত্রীয় ভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অন্তর্ধান লীলা নিয়ে অপপ্রচার করছে। নিম্নে মহাভারতের মৌষল পর্ব অবলম্বনে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধান লীলা রহস্যের সত্য ইতিহাস পরিবেশিত হল…. ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধান লীলা: বৃষ্ণিবংশ বা যদুবংশ ধ্বংস হওয়ার পর- অথাপশ্যদৃযোগযুক্তস্য তস্য নাগং মুখানিঃসরন্তং মহান্তম।শ্বেতং যযৌ সততঃ প্রক্ষ্যমাণো মহাণর্বে যেন মহানুভাব।। ( মহাভারত, মৌষলপর্ব ৪/১৩ ) অনুবাদ: ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দর্শন করলেন যে, যোগপ্রবৃত্ত মহা প্রভাবশালী বলরামের মুখ থেকে একটা শ্বেতবর্ণ বিশাল নাগ( সর্প) নির্গত হচ্ছে। সেই নাগ নিগর্ত (বের) হয়ে মহাসমুদ্রে প্রবেশ করল। ভগবান বলরামের এরুপ অন্তর্ধানের পর:- সেনে ততঃ সংত্রয়মনস্য কালং ততশ্চকারেন্দ্রিয়ং নিরোধম। যথা চ লোকত্রয়পালনার্থং দূর্বাসাবাক্য প্রতিপালনায়।। ( মহাভারত, মৌষলপর্ব ৪/২০ ) অনুবাদ: ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেই সময়টিকেই নিজের প্রস্থানের সময় মনে করেছিলেন।পরে তিনি ত্রিভুবন পালন করবার জন্য এবং দূর্বাসা মুনির বাক্য রক্ষা করার নিমিত্তে ইন্দ্রিয়সমূহকে নিরুদ্ধ করেছিলেন। বিশ্লেষণ: উপরোক্ত বর্ণনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন দর্শন করলেন বলরাম সমুদ্রে লীন হলেন তখন তিনি সেই সময়টিকেই নিজের প্রস্থানের সময় মনে করেছিলেন। অর্থাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই জড় জগত ত্যাগ করার সময় তিনি নিজেই নির্ধারণ করেছিলেন। সুতারাং যারা শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবানরুপে স্বীকার করতে চায় না, তাদের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা, শ্রীকৃষ্ণ যদি পরমেশ্বর ভগবান না হন, তাহলে তিনি কিভাবে জড় জগত ত্যাগের সময় নিজেই নির্ধারণ করতে পারেন? এরপর দেখা যাক, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধান লীলার পরবর্তী অংশ। দেবোহপি সন্দেহবিমোক্ষহেতোনির্ণীত মৈচ্ছৎ সকলার্থতত্ববিৎ। স সং নিরুদ্ধেন্দ্রিয়বাঙ মনাস্তু শিশ্যে মহাযোগমু পেত্য কৃষ্ণঃ।। জরোহথতং দেশমুপাজগাম লুব্ধস্তদানীং মৃগলিপ্সুরুগ্রঃ।স কেশবং যোগযুক্তং শযানং মৃগশঙ্কী লুব্ধুকঃ সাযকেন।।জরাহবিধ্যৎ পাদতলে ত্বরাবাংস্তৎ চাভিতাস্তজ্জিঘৃক্ষুর্জগাম অথাপশ্যৎ পুরুষং যোগযুক্তং পীতাম্বরধরং লুব্ধকোহনেকবাহুম।। ( মহাভারত, মৌষলপর্ব-৪/২১-২৩ ) অনুবাদ: সকলার্থতত্ত্বজ্ঞ শ্রীকৃষ্ণ সন্দেহ দূর করবার জন্য নিশ্চিত বিষয় কামনা করলেন। তখন কৃষ্ণ মহাযোগ অবলম্বন করে ইন্দ্রিয়,বাক্য ও মনকে নিরুদ্ধ করে ভূতলে শয়ন করলেন।তারপর উগ্রমূর্তি ও হরিণলিপ্সু জরা নামক এক ব্যাধ সেই সময়ে সেই স্থানে আগমন করে এবং মৃগ মনে করে বাণদ্বারা যোগযুক্ত অবস্থায় শায়িত কৃষ্ণের পদতলে বিদ্ধ করে। পরে ত্বরান্বিত হয়ে সেই বিদ্ধ মৃগকে গ্রহণ করতে ইচ্ছা করে তার নিকট গমন করলেন এবং তারপর সে (জরা ব্যাধ) দেখল- অনেক বাহু পীতাম্বরূপ বিধায়ী ও যোগযুক্ত একটি পুরুষ শায়িত রয়েছেন। অর্থাৎ চতুর্ভুজরুপধারী শ্রীকৃষ্ণকে দর্শন করে…। মত্বত্মানং ত্বটরাদ্ধং সতস্য পাদৌ জরো জগৃহেশঙ্কিতাত্মা। আশ্বাসিতং পুণ্যফলেন ভক্তা তথানুতাপাৎ কর্ম্মেনো জন্মনশ্চ।। ( মহাভারত,মৌষলপর্ব-৪/২৪ ) অনুবাদ: সেই জরা নামক ব্যাধ নিজেকে অপরাধী মনে করে উদ্বিগ্ন হয়ে শ্রীকৃষ্ণের চরণ যুগল ধারণ করলেন,তখন তার (ব্যাধ) পূণ্য ভক্তি,নিজের দূষ্কর্ম ও জন্ম বিষয়ে অনুতাপ করায় শ্রীকৃষ্ণ তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন। বিশ্লেষণ: ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধান লীলার এ অংশে আমরা বুঝতে পারি যে, জরা নামক ব্যাধ শ্রীকৃষ্ণকে মৃগ বা হরিণ মনে করে বাণ নিক্ষেপ করেছিলেন এবং ব্যাধ যখন তীরবিদ্ধ মৃগকে নিতে আসলেন তখন তিনি দেখলেন সেখানে কোন মৃগ নেই বরং সেখানে চর্তুভূজ রূপ ধারী স্বয়ং বিষ্ণু শায়িত আছেন। এখান থেকে স্পষ্ট প্রমানিত হয় যে, শ্রীকৃষ্ণ কখনো কোন সাধারন মানুষ নন, তিনি হলেন স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবিষ্ণু। সুতারাং অসুরেরা যে প্রচার করছেন যে শ্রীকৃষ্ণ জরা নামক ব্যাধের তীরে মারা গেছেন, প্রকৃতপক্ষে তা হল মিথ্যা প্রচার, কারণ চতুর্ভুজ শ্রীবিষ্ণু, যিনি স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান, তার কখনো মৃত্যু হতে পারে? এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে। যাহোক ব্যাধ চতুর্ভুজ শ্রীবিষ্ণুকে ( শ্রীকৃষ্ণ) দর্শন করা মাত্রই নিজের কর্মকে দূষ্কর্ম ও জন্ম বিষয়ে অনুতাপ করলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন। এরপর, দৃষ্টা তথা দেবমন্তবীর্য্যং দেবৈঃ স্বর্গং প্রাপিতস্ত্যক্তদেহ।গণৈমুনীণাং পূজিতস্তত্র কৃষ্ণো গচ্ছন্নদ্ধং ব্যাপ্য লোকান স লক্ষ্যা।। দিব্যং প্রাপ্তয় বাসবোহথাশ্বণৌ চ রুদ্রাদিত্যা বসবশ্চাথ বিশ্বে।প্রত্যু্যদৃযষুমুর্নয়শ্চাপি সিদ্ধা গন্ধর্বমুখ্যাশ্চ সহাপ্সরোভব।। ততো রাজন! ভগবানুগ্রতেজা নারায়নঃ প্রভবশ্চাব্যয়শ্চ।যোগাচার্য্যো রোদসী ব্যাপ্য লক্ষ্যা স্থাং প্রাপ স্বং মহাত্মহপ্রমেয়ম।। ( মহাভারত, মৌষলপর্ব ৪/২৫-২৭ ) অনুবাদ: দেবগণ অনন্তবীর্য নারায়ণকে দর্শন করে ব্যাধের দেহকে রেখে ব্যাধকে স্বর্গে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং শ্রীকৃষ্ণ আপন কান্তিদ্বারা জগদব্যাপ্ত করে উর্দ্ধদিকে গমন করতে লাগলেন তখন মুনিগণ শ্রীকৃষ্ণের পূজা করতে লাগলেন। শ্রীকৃষ্ণ স্বর্গে উপস্থিত হলে ইন্দ্র,অশ্বিনীকুমারদ্বয়,একাদশ রুদ্র,দ্বাদশ আদিত্য,অষ্টবসু, বিশ্বদেবগণ,সিগ্ধ মুনিগণ এবং অপ্সরাদের সাথে গন্ধর্বশ্রেষ্ট গণ তার (কৃষ্ণের) প্রত্যুদ্গমন (আরাধনা) করেছিলেন। তার পর ভীষণতেজা, জগতের, উৎপাদক, অবিনশ্বর, যোগ শিক্ষক, মহাত্মা ভগবান নারায়ন ( শ্রীকৃষ্ণ) আপন কান্তিদ্বারা স্বর্গ,মর্ত্ত্য ব্যাপ্ত করে সাধারণের অর্জ্ঞেয় স্বকীয় বৈকুণ্ঠধাম গমন করেছিলেন। বিশ্লেষণ: উপরোক্ত মহাভারতের আলোচনায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চতুর্ভুজরুপ ধারন করে স্বশরীরে প্রথমে স্বর্গ এরপর তার স্বীয় চিন্ময় বৈকুন্ঠ জগতে প্রবেশ করেছিলেন। এ সম্পর্কে ভাগবতেও একই তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে.. লোকাভিরামাং স্বতনুং ধারানাধ্যানমঙ্গলম। যোগধারনয়াগ্নেয়্যাদগ্ধা ধামাবিশ্য স্বকর্ম।। ( শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ১১/৩১/০৬ ) অনুবাদ: সর্বজগতের সর্বাকর্ষক বিশ্রামস্থল, এবং সর্বপ্রকারের ধ্যান ও মননের বিষয়,ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার দিব্য শরীরে আগ্নেয় নামক অলৌকিক ধ্যানের প্রয়োগে দগ্ধ না করে তার স্বীয় ধামে গমন করেছিলেন। পরিশেষে উপরোক্ত মহাভারত এবং শ্রীমদ্ভাগবতের বর্ণনায় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়,পরমেশ্বর ভগবানরুপে শ্রীকৃষ্ণের কখনো মৃত্যু হয় নি,কারন পরমেশ্বর ভগবান রুপে তার দেহ চিন্ময়।তাই তিনি তার অন্তর্ধানের সময় নিজেই নির্ধারন করেছিলেন,এবং মনুষ্যলোক পরিত্যাগ করে স্বশরীরে প্রথমে স্বর্গ এবং এরপর বৈকুন্ঠ জগতে প্রবেশ করেছিলেন।শ্রীকৃষ্ণ হলেন স্বয়ং বিষ্ণু। যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ তার অন্তর্ধানের সময় চতুর্ভূজ রুপ ধারন করেছিলেন তাই তিনি এই চতুর্ভূজ রুপে স্বশরীরে বৈকুন্ঠে ফিরে গিয়েছিলেন। ।। হরে কৃষ্ণ।। সংকলনে: সদগুণ মাধব দাস [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

448799885 2502931756537158 2049554223633710221 n Svadharmam

হিন্দুদের ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনা সমূহ বিশ্লেষণ করে প্রধান কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ পরিলক্ষিত হয়ঃ বৈদিক শিক্ষার অভাব। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (গুরুকুল) অভাব। বেদোক্ত বিভিন্ন দর্শনের মর্মার্থ না বোঝা। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি চর্চার অভাব অত্যধিক ইন্দ্রিয়তৃপ্তি পরায়ণ হওয়া। পারিবারিক, সামাজিক ধর্মীয় কুসংস্কার। বিধর্মীদের সাথে অত্যধিক মেলামেশা। বিধর্মীদের মিথ্যা তথ্যে বিশ্বাস স্থাপন। লোভ, কিংবা বিভিন্ন কামনার বশবর্তী হয়ে বিভিন্নরকম রিলেশনশিপে জড়ানো। উক্ত কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় হিন্দু সমাজে যেমন ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিষ্ঠান তো নাই বললেই চলে এজন্য ধর্মীয় শিক্ষার অভাব রয়েছে তেমনিভাবে একটা অপসংস্কৃতির প্রচারও রয়েছে, যে ধর্মকর্ম এসব বুড়ো বয়সের কার্যক্রম। মুরব্বিদের বলতে শোনা যায়- এখন সময় হয়নি, সময় এলে ধর্ম করবে এখন না। কিন্তু কেউ তাদের বলে না “সময় গেলে সাধন হবে না” অপরপক্ষে কোনো সাধু ব্যক্তি যদি সেই সম্পর্কে পারমার্থিক জ্ঞান দিতে আসে তখন বরং তাকে একপ্রকার অপদস্তই হতে হয়।সমাজে বা পরিবারে আরেক প্রকার লোক মনগড়াভাবে শাস্ত্রের বিষয়বস্তুকে পালন করেন, এবং প্রকৃতই ধর্ম সম্পর্কে জানতে উৎসুক কোনো কোনো ব্যক্তির মনে, তার মনোধর্ম জল্পনা কল্পনার কুসংস্কারাচ্ছন্ন আচরণ দ্বারা বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে ফেলেন। ফলে অনিসন্ধিৎসু ব্যক্তি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তারপর এই সমস্ত সামাজিক পারিবারিক কুসংস্কার দেখতে দেখতে নিজের ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বাস হারাতে থাকে এবং ধীরে ধীরে অন্য ধর্মের লোকেদের সাথে কালচার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে। এভাবেই ধর্মান্তরের সূত্রপাত ঘটে।বিধর্মীদের সাথে অত্যধিক মেলামেশার ফলে তাদের সংস্কৃতি সুক্ষ্মভাবে প্রভাবিত করে ফেলে এবং যারা নিজেদের ধর্মীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি সম্পর্কে অনভিজ্ঞ তারা বিধর্মীদের অপব্যাখ্যার দ্বারা সহজেই প্রভাবিত হয়ে পড়ে।অন্য একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেমন- বেদ শাস্ত্রে ঈশ্বর উপলব্ধির বিভিন্ন পন্থা বর্ণিত হয়েছে, বিভিন্ন দার্শনিক বিশ্লেষণও রয়েছে। এই সমস্ত বেদমার্গের কিছু লোক একে অপরকে ভুল প্রমাণ করতে ব্যস্ত। শাস্ত্রকে নিগূঢ়ভাবে উপলব্ধি না করার ফলে একে অন্যের দার্শনিকতা খন্ডন করতেই ব্যস্ত। তারা জানেন না চেতনার উপর ভিত্তি করেই অনুধাবন, উপলব্ধির স্তর বিন্যস্ত হয়ে থাকে। যার চেতনা যত উন্নত, তার শাস্ত্র সম্পর্কে অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি তত উন্নত। কিন্তু, অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী এসব লোকেদের বিবাদ দেখে সাধারণ হিন্দুরা বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং ধর্মান্তরের পথে পা বাড়ায়।মানুষ অত্যধিক ইন্দ্রিয়তৃপ্তি পরায়ণ হওয়ার ফলে মনে জাগতিক কিংবা পারলৌকিক ভোগ বাসনা জন্মে। বিভিন্নরকম লোভ লালসা রিলেশনশিপ, বিধর্মীদের তথাকথিত প্রেম ভালোবাসার ফাঁদে পড়ে সেই ভালোবাসার টানে বাকিসব কিছুকেই ভুলে যায়, সেই ভালোবাসা প্রাপ্তির জন্য নিজের ধর্মকেও জলাঞ্জলি দিতে পিছপা হয়না।এইসমস্ত ধর্মান্তরের কারণ বিশ্লেষণ করে কিছু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারেঃ বৈদিক শাস্ত্র ভগবদ্গীতা ভাগবতাদি শাস্ত্রসমূহ অধ্যয়নের দিকে মনোযোগী হওয়া। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ধর্মীয় বিশুদ্ধ শিক্ষা-সংস্কৃতির সুস্থ চর্চা করতে হবে। ধর্মীয় আচার স্থলে অপসংস্কৃতি চর্চাকে বন্ধ করতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন থাকা, যেমন- ধর্মীয় শিক্ষা তার কাছে থেকে গ্রহণ করা উচিত যে তা সঠিকভাবে পালন করে। বিধর্মীদের অপব্যাখ্যা ও মিথ্যা তথ্যে বিশ্বাস না করা। যাচাই-বাছাই করা। বিশেষকরে কমবয়সী ছেলেমেয়েদের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বিধর্মীদের সাথে ধর্মীয় বিষয়ে সতর্ক অবস্থান বজায় রাখা। কাউকে ধর্মান্তরিত হতে দেখলে নিজ ধর্মীয় বৈদিক উন্নত জ্ঞানের সন্ধানে দিতে হবে, তত্ত্বদ্রষ্টা অর্থাৎ, যারা বৈদিক জ্ঞান সম্পর্কে জানেন ও নিজের জীবনে পালন করেন সেই সমস্ত ব্যক্তিদের কাছে থেকে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। সর্বোপরি নিজে সচেতন হই অন্যকে সচেতন করি।। নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

যত মত তত পথ!? কতটা গ্রহনযোগ্য এই কথাটা?

@reallygreatsite Svadharmam

বর্তমানে ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের বাণী “যত মত তত পথ” কথাটি ব্যবহার করে যুবসমাজ ধর্মান্তরণের নতুন পথ খুজে পেয়েছে। তাই, এ বিষয়ে আলোকপাতের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই “যত মত তত পথ” কথাটি শাস্ত্র সিদ্ধান্তের সাথে কতটা সাদৃশ্যপূর্ণ?!? পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন- ये यथा मां प्रपद्यन्ते तांस्तथैव भजाम्यहम् । मम वर्त्मानुवर्तन्ते मनुष्याः पार्थ सर्वशः ॥ যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্। মম বর্ত্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ।। [ গীতা ৪।১১ ] অনুবাদ: যারা যেভাবে আমার প্রতি আত্মসমর্পণ করে, আমি তাদেরকে সেভাবেই পুরস্কৃত করি। হে পার্থ! সকলেই সর্বতোভাবে আমার পথ অনুসরণ করে। [অর্থাৎ শ্রীভগবান বলছেন,যারা যেভাবে আমার প্রতি আত্মসমর্পণ করে, আমি তাদেরকে সেভাবেই পুরস্কৃত করি।যেমন,যশোদা মা তিনি পূর্ব জন্মে কঠোর তপস্যা করেছিলেন ব্রহ্মাজীর নিকট।পরাৎপর-পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি সর্ব কারণের পরম কারণ,তাকে সন্তান রুপে পাওয়া জন্য।ভগবান ভক্তের সেই মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার জন্য বালক রুপে লীলাবিলাস করেছেন। ভগবানের জন্ম আমাদের মতো না।ভগবান গীতাতে ৪র্থ অধ্যায়ে ৬নাম্বার শ্লোকে বলেছেন। তিনি “অজ” অর্থাৎ তিনি জন্মরহিত,তার জন্ম নেই তবুও তিনি ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার জন্য জন্মের অভিনয় করেন।ভগবান যখন প্রহল্লাদ মহারাজ কে রক্ষা করার জন্য “নৃসিংহ”রুপে অবতীর্ণ হন তখন তিনি একটা স্তম্ভ/পিলারের ভিতর থেকে আভির্ভূত হন।ভগবানের মাতা পিতা নেই।যাদের আমরা পিতা মাতা বলি তারা ভগবানের বাৎসল্য রসের ভক্ত। ভগবান কে সন্তান রুপে আরাধনা করা যায়-(বাৎসল্য রস)।(মা যশোদা,মা দেবকী ভগবান কে পুত্র রুপে কামনা করেছিল, সেই মনোবাঞ্ছা ভগবান পূর্ন করেছিলেন) ভগবান কে পতি/স্বামী রুপে আরাধনা করা যায়-(মাধুর্য রস)।(গোপীরা ভগবান কে পতি রুপে কামনা করেছিলেন তাদেরও মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেছেন ভগবান) ভগবান কে বন্ধু রুপে আরাধনা করা যায়-(সখ্য রস)।(অর্জুন) ভগবান কে প্রভু রুপে আরাধনা করা যায়-(দাস্য রস)।(হনুমান) ভক্ত ভগবানের আইন লঙ্ঘনের শাস্তির ভয়ে,শাস্তির ভয় মনোভাব নিয়ে ভগবানের আরাধনা করতে পারে-(শান্ত রস)। আমরা দেখলাম ভগবান কে যে, যেভাবে আরাধনা করেন ভগবান তাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেছেন। “সকলেই সবর্তোভাবে আমার পথ অনুসরণ করেন” এই কথাটার অর্থ বিকৃত করা উচিৎ নয়। কোন সকলের কথা বলছেন ভগবান? সেই সকল যারা ভগবান কে পতি,সন্তান,বন্ধু,প্রভু,ভগবান রুপে আরাধনা করছেন অর্থাৎ মাধুর্য,বাৎসল্য,সখ্য,দাস্য,শান্ত রসে যে যেভাবেই আরাধনা করছেন তারা সকলেই সবর্তোভাবে ভগবানের পথ অনুসরণ করছেন।] শ্রীভগবান বলছেন – येऽप्यन्यदेवताभक्ता यजन्ते श्रद्धयान्विता: । तेऽपि मामेव कौन्तेय यजन्त्यविधिपूर्वकम् ॥ যেহপ্যন্যদেবতাভক্তা যজন্তে শ্রদ্ধয়ান্বিতাঃ। তেহপি মামেব কৌন্তেয় যজন্ত্যবিধিপূর্বকম্।। [ গীতা ৯।২৩] অনুবাদ: হে কৌন্তেয়! যারা অন্য দেবতাদের ভক্ত এবং শ্রদ্ধা সহকারে তাঁদের পূজা করে, প্রকৃতপক্ষে তারা অবিধি পূর্বক আমারই পূজা করে। [অর্থাৎ শ্রীভগবান বলেছেন দেব-দেবীরা আমার থেকে আলাদা নয়,তারা আলাদা আলাদা ভগবান নয়,আমি বিহীন তাদের অস্তিত্ব নেই,“মামৈবাংশ”তারা আমারি বিভিনাংশ।কিন্তু যারা বিভিন্ন দেবদেবীর উপাসনা করছেন, সেই অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিরা পরোক্ষ ভাবে তারা আমারি পূজা করছেন,”অবিধি পূর্বক” যদিও বিধি নেই।।গাছকে পুষ্ট করতে হলে,কেউ যদি গাছের গোড়াতে জল না দিয়ে গাছের পাতায় জল দেয়, তাহলে সেই ব্যাক্তির বুদ্ধির অভাব আছে বলে বুঝতে হবে।গাছের গোড়াতে জল দিলে যেমন সমস্ত গাছ পুষ্ট হয়,উদরে খাদ্য দিলে যেমন সমস্ত শরীর পুষ্ট হয়।তেমনি সমস্ত কিছুর উৎস শ্রীভগবান কে আমাদের সন্তুষ্ট করতে হবে, আলাদা করে কারো পূজা করার দরকার নেই।(যস্মিন তুষ্টে জগৎ তুষ্ট)] আরো স্পষ্ট করে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেনঃ यान्ति देवव्रता देवान्पितॄन्यान्ति पितृव्रता: । भूतानि यान्ति भूतेज्या यान्ति मद्याजिनोऽपि माम् ॥ যান্তি দেবব্রতা দেবান্ পিতৃন্ যান্তি পিতৃব্রতাঃ। ভূতানি যান্তি ভুতেজ্যা যান্তি মদযাজিনোহপি মাম্।। [ গীতা ৯।২৫ ] অনুবাদ: দেবতাদের উপাসকেরা দেবলোক প্রাপ্ত হবেন; পিতৃপুরুষদের উপাসকেরা পিতৃলোক লাভ করেন; ভুত- প্রেত আদির উপাসকেরা ভূতলোক লাভ করেন; এবং আমার উপাসকেরা আমাকেই লাভ করেন। [অর্থাৎ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এখানে আমাদের স্পষ্ট ভাবে বলে দিলেন,যে ব্যক্তি আমার আরাধনা না করে বিভিন্ন দেবদেবীর আরাধনা করে,সে কিন্তু আমার কাছে আসবে না,সে দেবলোক বা স্বর্গে যাবেন।স্বর্গে গেলে পূন্য শেষ হলে,আবার চলে আসতে হবে।কিন্তু ভগবানের কাছে একবার গেলে ফিরে আসতে হয় না। সেই কথা ভগবান বলছেন- मामुपेत्य तु कौन्तेय पुनर्जन्म न विद्यते ॥ १६ ॥ মামুপেত্য তু কৌন্তেয় পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে।।১৬।। অনুবাদঃ হে কৌন্তেয়! আমাকে প্রাপ্ত হলে আর পুনর্জন্ম হয় না।-[গীতা ৮।১৬] তারপরও, যে ব্যক্তিরা মনে করবে আমার পিতাই ভগবান।আর যারা পিতাকেই শুধু আরাধনা করবে তারাও আমার কাছে আসবে না,তারা পিতৃলোক লাভ প্রাপ্ত হবেন। শ্রীমদ্ভাগবতে-[৩/১০/৮] বলা হয়েছে ১৪ টি ভূবণ নিয়ে আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড তথা পাতাল,রসাতল,মহাতল,তলাতল,সুতল,বিতল,অতল,ভূলোক,ভুবর্লোক,স্বর্গলোক,মহর্লোক,জনলোক,তপলোকসত্যলোক বা ব্রহ্মলোক। শ্রীভগবান গীতাতে বলছেন–आब्रह्मभुवनाल्ल‍ोका: पुनरावर्तिनोऽर्जुन । আব্রহ্মভুবনাল্লোকাঃ পুনরাবর্তিনোহর্জুন। অনুবাদঃ হে অর্জুন! এই ভুবন থেকে ব্রহ্মলোক পর্যন্ত সমস্ত লোকই পুনরাবর্তনশীল অর্থাৎ পুনর্জন্ম হয়।-[গীতা ৮।১৬] তাই আমরা যদি এই ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ লোক ব্রহ্মলোক প্রাপ্ত হই আমাদের এই জগতে আবার আসতে হবে।কিন্তু ভগবানের কাছে গেলে আর ফিরে আসতে হবে না,এই দুঃখের জগতে।যে ব্যক্তি ভূত প্রেত কে ভগবান ভেবে আরাধনা করছেন তারাও আমাকে না ভূত লোক প্রাপ্ত হবেন।কিন্তু যারা আমার আরাধনা করছেন শুধু তারাই আমার কাছে আসবে।ভগবান এই শ্লোকে স্পষ্ট ভাবে বলেছেন,যে শুধু আমার উপাসকেরাই আমার কাছে আসবেন। এই কথা তিনি ৭ম অধ্যায়েও বলেছেন- देवान्देवयजो यान्ति मद्भ‍क्ता यान्ति मामपि ॥ २३ ॥ দেবান্ দেবযজো যান্তি মদ্ভক্তা যান্তি মামপি।।২৩।। অনুবাদঃ দেবোপাসকগণ দেবলোক প্রাপ্ত হন, কিন্তু আমার ভক্তেরা আমার পরম ধাম প্রাপ্ত হন।-(গীতা ৭।২৩)] একই কথা ভগবান ২বার বলেছেন-আমার উপাসকেরাই আমার ধাম প্রাপ্ত হবেন [৯/২৫,৭/২৩] কারণ এই কথাটি ভগবান বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বুঝতে বলেছেন আমাদের। যেখানে দেবদেবীর আরাধনা করে আমরা ভগবানের কাছে যেতে পারবো না,শুধু মাত্র ভগবানের উপাসনা করেই ভগবানের কাছে যেতে হবে।সেখানে সাধারণ মানুষের উপাসনা করলে আমরা ভগবানের কাছে যেতে পারবো?!? তাহলে সব পথ দিয়ে; যে কারো আরাধনা করে পরমেশ্বরের কাছে যাওয়া যাবে..? যত মত তত পথ নয়…⁉️ না, পথ একটাই, সেইটা কোন পথ? মহারাজ যুধিষ্ঠির উত্তরে বলেছেনঃ “মহাজনো যেন গতঃ স পন্থাঃ” অর্থাৎ, মহাজনদের নির্দেশিত পন্থাই প্রকৃত পথ। শ্রীমদ্ভাগবতেও তাই বলা হয়েছে, द्वादशैते विजानीमो धर्मं भागवतं भटा: । गुह्यं विशुद्धं दुर्बोधं यं ज्ञात्वामृतमश्नुते ॥ দ্বাদশৈতে বিজানীমো ধর্মংভাগবতং ভটাঃ। গুহ্যং বিশুদ্ধং দুর্বোধং যং জ্ঞাত্বামৃতমশ্নুতে॥ [শ্রীমদ্ভাগবত ৬।৩।২১] অনুবাদ: শ্রীযমরাজ তাঁর দূতদের বলছেন “আমরা এই বারো জন প্রকৃত ধর্মের তত্ত্ব জানি। হে ভৃত্যগণ, এই দিব্য ধর্ম যা ভাগবত-ধর্ম বা ভগবৎ প্রেম ধর্ম নামে পরিচিত, তা জড়া প্রকৃতির গুণের দ্বারা কলুষিত নয়। তা অত্যন্ত গোপনীয় এবং সাধারণ মানুষের পক্ষে দুর্বোধ্য, কিন্তু কেউ যদি ভাগ্যক্রমে তা হৃদয়ঙ্গম করার সুযোগ পায়, তা হলে সে তৎক্ষতাৎ মুক্ত হয়ে পরমেশ্বর ভগবানের আনন্দময় ধামে ফিরে যায়। কারা সেই দ্বাদশ মহাজন? स्वयम्भूर्नारद: शम्भु: कुमार: कपिलो मनु: । प्रह्लादो जनको भीष्मो बलिर्वैयासकिर्वयम् ॥ স্বয়ম্ভূর্নারদঃ শম্ভুঃ কুমারঃ কপিলো মনুঃ। প্রহ্লাদো জনকো ভীষ্মো বলির্বৈয়াসকির্বয়ম্॥ [শ্রীমদ্ভাগবত ৬।৩।২০] অনুবাদ: স্বয়ম্ভূ,নারদ মুনি,শম্ভু,কুমার,কপিলদেব,মহর্ষি মনু,প্রহ্লাদ,রাজর্ষি জনক,ভীষ্মদেব,বলিমহারাজ,বৈয়াসকি (শুকদেব গোস্বামী),যমরাজ। তাই, বিচার করুন,সিদ্ধান্ত নিন। বিচার আপনার,সিদ্ধান্ত আপনার।। তাই মহাজনদের নির্দেশিত পন্থাই প্রকৃত পথ,আসুন আমরা কৃষ্ণ/বিষ্ণুর শুদ্ধ ভক্তের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত শাস্ত্র অধ্যায়ন করি। এই দূর্লভ মনুষ্য জন্ম সার্থক করি। ॥হরে কৃষ্ণ॥ সংকলনে: শুভ দেবনাথ [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্:

শ্রীমতি রাধারাণী কে? শ্রীমতি রাধারাণীর আবির্ভাব সম্পর্কে বর্ণনা করুন।

Grey And White Simple Hotel Promo Instagram Post Square 20240912 121055 0000 Svadharmam

শ্রীমতি রাধারাণী: সনাতন শাস্ত্র অনুসারে শ্রীমতি রাধারাণী হলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং। পরমাত্মা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীমতি রাধারাণী মূলত একজনই, তাদের মধ্যে কোন ভেদ বা পার্থক্য নেই। কিন্তু চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক গোলক বৃন্দাবন ধামে শ্রীকৃষ্ণ যখন তার অপ্রাকৃত লীলাকে লোকশিক্ষার নিমিত্তে বিস্তার করতে ইচ্ছে করেন, তখন শ্রীকৃষ্ণ থেকে শ্রীমতি রাধারাণী আবির্ভূত হন। পদ্মপুরাণ শাস্ত্রে শ্রীমতি রাধা ঠাকুরাণী দেবর্ষি নারদকে বলছেন- অহঞ্চ ললিতা দেবী পুংরূপা কৃষ্ণবিগ্রহা। আবয়োরন্তরং নাস্তি সত্যং সত্যং হি নারদ।। [ পদ্মপুরাণ, পাতালখণ্ড, ৪৪।৪৬ ] অনুবাদ: শ্রীমতি রাধিকা বললেন, আমিই ললিতা দেবী, আমিই পুংরূপে কৃষ্ণবিগ্রহ। হে নারদ, সত্য বলছি, সত্য বলছি, আমাদের মধ্যে কোনও ভেদ নেই। শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থেও গ্রন্থকার খুব সুন্দরভাবে শ্রীমতি রাধারাণীর সমন্ধে আমাদের শিক্ষা প্রদান করছেন। রাধাকৃষ্ণ ঐছে সদা একই স্বরুপ। লীলারস আস্বাদিতে ধরে দুইরুপ।। [ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, আদিলীলা, ৪।৯৮] অনুবাদ: শ্রীমতি রাধারাণী এবং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সর্বদাই একজন,তবুও লীলারস আস্বাদন করার জন্য তাঁরা ভিন্নরুপ ধারণ করেছেন। চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবনে শ্রীমতি রাধারাণী আবির্ভাব- ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ,প্রকৃতিখন্ড ৪৮/২৬-৩২,৩৭ নং শ্লোকে মহাদেব শিব মাতা দুর্গা দেবীকে চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবনে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ থেকে কিভাবে শ্রীমতি রাধারাণী আবির্ভূত হন, এ বিষয়ে বর্ণনা করেন,নিম্নে তা আলোচনা করা হল। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বলা হয়েছে – পুরা বৃন্দাবনে রম্যে গোলকে রাসমন্ডলে। শতশৃঙ্গৈক দেশে চ মালতী মল্লিকাবনে।।২৬।। রত্মসিংহাসনে রম্যে তস্থৌ তত্র জগৎপতিঃ। স্বেচ্ছাময়শ্চ ভগবান বভূব রমনোৎসুক।।২৭।। রমনং কত্তুর্মিচ্ছংশ্চ তদ্বভূব সুরেশ্বরী। ইচ্ছয়া চ ভবেৎ সর্ব্বং তস্য স্বেচ্ছাময়স্য চ।।২৮।। এতস্মিন্নন্তরে দুর্গে দ্বিধারুপৌ বভূব সঃ। দক্ষিণাঙ্গঞ্চ শ্রীকৃষ্ণঃ বামাঙ্গং সা চ রাধিকা।।২৯।। বভূব রমনী রম্যা রামেসা রমণোৎসুকা। অমূল্য রত্নাভরণা রত্মসিংহাসনস্থিতা।।৩০।। বহ্নিশুদ্ধাং সুকাধানা কোটিপূর্ণশশী প্রভা। তপ্তাকাঞ্চনবর্ণাভা রাজিতা চ স্বতেজসা।।৩১।। সস্মিতা সুদতী শুদ্ধা শরৎপদ্মা নিভাননা। বিভ্রতী কবরী রম্যাং মালতীমাল্য মন্ডিতাং।।৩২।। দৃষ্ট্বাচৈবং সুকান্তঞ্চ সা দধার হরেঃ পুরঃ। তেন রাধা সমাখ্যাতা পুরা বিদ্ভিম্মহেশ্বরী।।৩৭।। [ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ,প্রকৃতিখন্ড ৪৮।২৬-৩২,৩৭ ] অনুবাদ: মহাদেব শিব, মাতা দুর্গা দেবীকে বললেন, “পূর্বে গোলক বৃন্দাবনের মনোরম রাসমন্ডলের শতশৃঙ্গ পর্বতের একপ্রান্তে মালতী এবং মল্লিকাবন বেষ্ঠিত মনোরম রত্নসিংহাসনে স্বেচ্ছাময় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অবস্থিত ছিলেন। সে সময় পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের পরমানন্দ লাভের প্রয়াস জাগে। পরাৎপর পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণ স্বেচ্ছাময়,তাই তার ইচ্ছা মাত্রই তা কার্যে পরিণত হয়। তাই তিনি যখন পরমানন্দ লাভে প্রয়াসী হলেন, তখন সুরেশ্বরী ( সমস্ত দেবগণের ঈশ্বরী) রাধারাণী আবির্ভূত হন। হে দুর্গে,সেই সময়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেখানে দুইরুপে অবস্থান করতে লাগলেন। তাঁর দক্ষিণ অঙ্গ শ্রীকৃষ্ণরুপে এবং তার বাম অঙ্গ শ্রীমতি রাধারাণীরুপে প্রকাশমান হয়েছিলেন। এইরুপে শ্রীমতি রাধারাণী রাসমন্ডলের মধ্যে অমূল্য রত্নাভরণে বিভূষিতা পরমানন্দ লাভে উৎসুক হয়ে রত্নসিংহাসনে অবস্থান করতে লাগলেন। তার গায়ের বর্ণ তপ্তকাঞ্চনের ন্যায় এবং তাঁর প্রভা কোটি চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল্যমান।তিনি অগ্নিশুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে স্বীয় তেজে পরিপূর্ণ হয়ে জগৎ আলোকিত করেন।সেই পরিশুদ্ধ নারীর শরৎকালীন পদ্মের ন্যায় মুখমন্ডলে সুন্দর দর্শন জ্যোতি এবং মধুর হাস্য বিকশিত হল। এবং তাঁর মস্তকে মনোহর কবরী সংবদ্ধ ও তাতে মালতীমালা শোভিত হতে লাগল। হে মহেশ্বরী (দুর্গা), এরপর শ্রীমতি রাধারাণী পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে দর্শন করে হৃদয়ে তাঁকে ধারণ করেন। তাই পুরাবিদপন্ডিতগণ তাঁকে রাধা নামে কীর্তন করেছেন। মৎস্যপুরাণ ৬৯/৬-৮, স্কন্দপুরাণ– প্রভাসখণ্ড ১৯/৭১-৭৮, চৈ. চঃ আদি.৩/৫-১০ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী, “শ্রীকৃষ্ণ যদিও তার স্বীয়ধাম চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবনে নিত্য বিরাজমান, কিন্তু জড় জগতের বদ্ধ জীবকে শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে তার স্বীয় ধামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিলাষে প্রতিটি জড় ব্রহ্মান্ডে ব্রহ্মার প্রতিদিনে অথাৎ মনুষ্যজীবের ১ হাজার চতুর্যুগের (সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলি= ১ চতুর্যুগ) মধ্যে অষ্টাবিংশ চতুর্যুগের দ্বাপর যুগের শেষভাগে একবার মাত্র এ পৃথিবীতে আবির্ভুত হন। ব্রহ্মার এই এক দিনকে ১ কল্প বলা হয়। ব্রহ্মার প্রতি কল্পে চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবন থেকে শ্রীমতি রাধারাণী পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাবের পূর্বে এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হন।তখন প্রতি কল্পে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মতো শ্রীমতি রাধারাণীর অন্যান্য লীলার মতো তার আবির্ভাবলীলাও প্রায় একই থাকে অথবা কিছুটা ব্যতীক্রম দেখা যায়।পুরাণাদি শাস্ত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীমতি রাধারাণীর এরুপ বিবিধ অপ্রাকৃত লীলার কিছুটা ব্যতীক্রম পরিলক্ষণ করে পুরাণাদি শাস্ত্রে অনভিজ্ঞ বা মূর্খেরা পুরাণাদি শাস্ত্রের নামে সাধারণ সনাতনীদের বিভ্রান্ত করছে। আসুন আমরা এখন  পদ্মপুরাণ,ব্রহ্মখন্ড ৭/৩৪-৪২ নং শ্লোক অনুযায়ী  বর্তমান বরাহ কল্পে সংঘটিত মর্ত্যলোক বা পৃথিবীতে দ্বাপর যুগের শেষভাগে শ্রীমতি রাধারাণীর আবির্ভাব সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। পৃথিবীতে শ্রীমতি রাধা রানীর আবির্ভাব: পদ্মপুরাণ,ব্রহ্মখন্ড ৭/৩৪-৪২ নং শ্লোক অনুযায়ী, ব্রহ্মা নারদ মুনিকে শ্রীমতি রাধারাণীর কিভাবে এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হন তা বর্ণনা করেন। ব্রহ্মাজী বললেন- একদা পৃথিবী বৎস দুষ্টসঙ্গশ্চ তাড়িতা। গৌভূর্ত্বা চ ভূশং দীনা চ যত্রৌ সা মমান্তিকম।।৩৪।। নিবেদয়ামাস দুঃখং রুদন্তী চ পুনঃপুনঃ। তদ্বাক্যঞ্চ সমাকণ্য গতোহহং বিষ্ণুসন্নিধিম।।৩৫।। কৃষ্ণে নিবেদিতশ্চাশু পৃথিব্যা দুঃখসঞ্চয়ঃ। তেনোক্তং গচ্ছ ভো ব্রহ্মণ দেবৈ সার্দ্ধঞ্চ ভূতলে।।৩৬।। অহং তত্রাপি গচ্ছামি পশ্চাত্মম গণৈ সহ।।৩৭।। তচ্ছ্রত্বা সহিতো দেবৈরাগতঃ পৃথিবীতলম। ততঃ কৃষ্ণ সমাহূয় রাধাং প্রাণগরীয়সীম।।৩৮।। উবাচ বচনং দেবি গচ্ছেহহং পৃথিবীতলম। পৃথিবীভারনাশায় গচ্ছ ত্বং মর্ত্ত্যমন্ডলম।।৩৯।। ইতি শ্রুত্বাপি সা রাধাপ্যাগতা পৃথিবীং ততঃ। ভাদ্রে মাসি সিতেপক্ষে অষ্টমীসংজ্ঞিকে তিথৌ।।৪০।। বৃষভানোযজ্ঞভূমৌ জাতা সা রাধিকা দিবা। যজ্ঞাথং শোধিতায়াঞ্চ দৃষ্টা  সা দিব্যরুপিনী।।৪১।। রাজানন্দমনা ভূত্বা তাং প্রাপ্য নিজমন্দিরম। দত্তবান মহিষীং বীত্বা সা চ ত্বাং পয্যপালয়ৎ।।”৪২।। [ পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মখণ্ড ৭।৩৪-৪২ ] অনুবাদ: বৎস (নারদ), একদা পৃথিবী দুঃজনের দ্বারা পীড়িত হওয়ায় গোরুপ ধারণপূর্বক অত্যন্ত দীন অবস্থায় পুনঃপুনঃ ক্রন্দন করতে করতে আমার নিকট এসে স্বীয় দুঃখ নিবেদন করেছিলেন। পৃথিবীর (পৃথিবীর অধিষ্ঠাত্রী দেবীকে ভূমিদেবী বা পৃথিবী মাতা বলা হয় ) বাক্য শ্রবণ করে আমি বিষ্ণুর সন্নিকটে গমন পূর্বক তার নিকট পৃথিবীর দুঃখরাশি নিবেদন করলাম। তিনি বললেন, হে ব্রাহ্মণ,তুমি দেবগণসহ ভূতলে গমন কর।আমি পরে আমার নিজজন সহ সেখানে গমন করব। আমি সেই কথা শ্রবণ করে দেবগণসহ ভূতলে আগমন করলাম। এরপর শ্রীকৃষ্ণ প্রাণপ্রিয়া শ্রীরাধিকাকে আহবান করে বললেন,দেবী, আমি পৃথিবীতে গমন করব। পৃথিবীর ভার নাশের নিমিত্তে  তুমিও মর্ত্যমন্ডলে (পৃথিবী) গমন কর।শ্রীরাধিকা এই কথা শ্রবণ করে পৃথিবীতলে আগমন করেন।ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রীরাধিকা দেবী বৃষভানুর যজ্ঞস্থলে আবির্ভূত হন। যজ্ঞার্থ শোধিত ভূতলে সেই দিব্যরুপিনী শ্রীরাধা পরিদৃষ্ট হলেন। রাজা তাঁকে পেয়ে আনন্দিত মনে নিজ গৃহে গেলেন এবং মহিষীর নিকট অর্পন করলেন। রাজমহিষী তাঁকে পালন করতে লাগলেন। সংকলনে: শ্রীপাদ সদগুণ মাধব দাস [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত। ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

শ্রীরাধাষ্টমীর উপবাস পূর্ণদিবস নাকি অর্ধদিবস?

20240905 100014 Svadharmam

———————————————————— রাধাষ্টমীর উপবাস পূর্ণদিবস নাকি অর্ধদিবস? (শাস্ত্র প্রমাণ) ———————————————————– রাধাষ্টমীতে উপবাস ব্রত পূর্ণদিবস নাকি অর্ধদিবস এ নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। কেউ দাবি করেন, উপবাস মাত্রেই পূর্ণদিবস উপবাস থাকতে হবে, আবার কেউ প্রবাদ বাক্য বলেন ‘রাধার উপবাস আধা'(অর্ধদিবস)। মজার ব্যাপার হলো, বৈষ্ণব স্মৃতিপ্রমাণ ‘হরিভক্তিবিলাস’ এ রাধাষ্টমীর উপবাস বিধি উল্লেখ নেই। তাই আরেক দল যুক্তি দেখান, শ্রীমতি রাধা হলেন জগতের সকল জীবের জননী; মা কখনো নিজ সন্তানকে উপবাস রাখতে পারেন না, তাই রাধাষ্টমীতে উপবাসেরই প্রয়োজন নেই! বোধের বিষয়, ধর্মাচরণ কখনো ব্যক্তির মনগড়া বিধানে চলে না। বিশেষ করে ব্রহ্ম সম্প্রদায়, যাতে ব্যাস-নারদের মতো স্বয়ং ভগবানাবতারগণ গুরুরূপে অধিষ্ঠীত, সেখানে অজ্ঞতার অন্ধকার থাকতে পারে না। তাই আজ আমরা ব্যাস শাস্ত্র হতে পর্যালোচনা করে দেখবো, কোন শাস্ত্রে কিভাবে রাধাষ্টমীর ব্রত পালন করতে বলেছে। ————————————————- সর্বজনীন উপবাস বিধি (অর্ধদিবস উপবাস) ————————————————- ভাদ্রমাস, শুক্লপক্ষ, অষ্টমী তিথি, বিশাখা নক্ষত্র, মধ্যাহ্নে, অভিজিৎ যোগে, শুভক্ষণে বৃষভানু মহারাজের যজ্ঞমন্দিরে শ্রীমতি ব্রজেশ্বরী রাধিকার আবির্ভাব হয়। তাঁর আবির্ভাব মধ্যাহ্নকালে। তাই মধ্যাহ্নে অভিষেক উৎসব ও পূজার বিশেষ বিধান আছে। উৎসবান্তে পূজোর প্রসাদ দিয়ে পারণ করার বিধান। এটি হলো সার্বজনীন বিধান। সকলের জন্য সার্বজনীন বিধি পালন করা আবশ্যক। এ সার্বজনীন বিধিটি শ্রী নারদীয় মহাপুরাণে চার বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ভক্তিরক্ষক আচার্য্য শ্রী নারদজী মহারাজ উল্লেখ করেছিলেন এবং শ্রী নারায়ণাবতার বেদব্যাস তা নারদীয় পুরাণে সংকলন করেছিলেন। নারদীয় পুরাণে নারদ বলেছেন- শুক্লাষ্টম্যাং নমস্যস্য কুর্যাৎ রাধাব্রতং নরঃ। পূর্ববৎ রাধিকাং হৈমীং কলশস্থাং প্রপূজয়েত্। মধ্যাহ্নে পূজয়িত্বৈনামেকভক্তং সমাচরেৎ। [ শ্রীনারদীয় মহাপুরাণ, পূর্বভাগ, ৪।৯৪।৪১-৪২ (গীতাপ্রেস গোরক্ষপুর); ৪।১১৭।৪১-৪২ (Banarasidass Publishers)] অনুবাদ: ভাদ্রমাসের শুক্লাষ্টমীতে সকল মনুষ্যের ভক্তিপূর্বক শ্রীমতি রাধারাণীর মহিমান্বিত ব্রত করণীয়। পূর্ববৎ স্বর্ণময় শ্রীবিগ্রহে পূজা করতে হবে। মধ্যাহ্নকালে শ্রীমতি রাধিকার পূজার পর একভক্ত করবে অর্থাৎ একবার ভাত(অন্ন) আহার করবে।  আবার, বিশ্লেষণ: এ শ্লোকে স্পষ্টত মধ্যাহ্নকালে পূজোৎসব পালন করতে বলেছে। কেন মধ্যাহ্নকালে? কারণ, মধ্যাহ্নকালেই ব্রজভূমিতে বৃষভানু রাজের যজ্ঞ মন্দিরে শ্রীমতি রাধিকা নিজেকে আবির্ভূত করেছিলেন। ভগবান দিনের যে সময়ে আবির্ভূত হন, সে সময়ে উৎসব পালন করা হয়। কৃষ্ণ মধ্যরাত্রিতে, নৃসিংহদেব সন্ধ্যাকালে, রামচন্দ্র মধ্যাহ্নকালে আবির্ভূত হন, তাই সে সে সময়ে বিশেষ অভিষেক, বিশেষ পূজা, ভোগ-নৃত্য-কীর্তনাদির আয়োজনে ভক্তগণ উৎসব পালন করেন। ঠিক একইভাবে মধ্যাহ্নকালে শ্রীমতি রাধিকার আবির্ভাব হওয়ায় মধ্যাহ্নকালে বিশেষ পূজার আয়োজন করতে বলা হয়েছে। মধ্যাহ্নে পূজোৎসবের শেষে ‘ভক্ত’ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। সংস্কৃত ‘ভক্ত’ শব্দের অর্থ ‘ভাত’। ভক্ত (সংস্কৃত)> ভত্ত (প্রাকৃত) > ভাত (বাংলা)। এখানে স্পষ্টত, অন্নপ্রসাদ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে, অনুকল্প নয়। প্রসঙ্গত এখানে বিবেচনা আবশ্যক, এটি কোন অসমর্থ বিধান নয়, বরং এটি সর্বজনীন বিধন। অসমর্থ বিধান হলে ভাত গ্রহণের কথা না বলে ফল-জলাদি গ্রহণের বিধান বলা হতো। সর্বজনীন বিধান সহজ, ন্যূনতম বিধি-নিষেধ, তাই তা সহজেই সকলে পালন করতে পারেন। তাই শুরুতেই সার্বজনীন বিধান বলেছেন শ্রীনারদ। ভগবানের আবির্ভাবকালে উৎসবান্তে পারণার বিধান বহু শাস্ত্রেই পরিলক্ষিত হয়। যথা, হরিভক্তিবিলাসে বলা হয়েছে- বায়ুপুরাণে চ— যদীচ্ছে‍ সৰ্ব্বপাপানি হস্তং নিরবশেষতঃ । উৎসবান্তে সদা বিপ্র জগন্নাথান্নমাশয়ে‍ ৷৷  ইতি ৷৷ ৪০৭ ॥ অনুবাদ– বায়ুপুরাণে বলেছে “নিঃশেষে যদি সৰ্ব্ববিধ পাপ ধ্বংস করিতে ইচ্ছা কর, হে বিপ্র! উৎসবান্তে সৰ্ব্বদা জগন্নাথদেবের অন্নপ্রসাদ ভোজন করাইবে । কেচিচ্চ ভগবজ্জন্ম মহোৎসব দিনে শুভে । ভক্ত্যোৎসবাস্তে কুৰ্ব্বস্তি বৈষ্ণবা ব্রতপারণম্ ॥৪০৫॥ অনুবাদ: কেহ কেহ পবিত্র পরম উত্তম ভগবানের জন্ম(আবির্ভাব) মহোৎসব দিনে বৈষ্ণবগণ দাস্য ভক্তিসহ উৎসবান্তে ব্রত পারণ করিয়া থাকেন । তথা চোক্তং গারুড়ে— তিথ্যন্তে চোসবাস্তে বা ব্রতী কুব্বীদ্ধ পারণম্ ৷৷৪০৬ অনুবাদ: ঐরূপ গরুড়পুরাণে উক্ত আছে – ব্ৰতাচরণকারী পরদিন তিথির অন্তে, অথবা ঐ দিন উৎসবান্তে পারণ করিবেন। পদ্মপুরানে বলা হয়েছে- গুরোরুৎক্রান্তিদিবসে জন্মর্ক্ষেষু তথা হরেঃ। ইষ্টিঞ্চ বৈষ্ণবীং কুর্য্যাচ্ছক্ত্যা বৈ দ্বিজসত্তমঃ।। দদ্যাৎ পুষ্পাঞ্জলিং তত্র প্রত্যৃচং বেদস্মমিতম। পারণঞ্চাপি কুর্ব্বীত চরুণা পায়সেন বা।। [ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ডম, অধ্যায় ২৫৩, শ্লোক ১৬৪-১৬৫] অনুবাদ: ‘হরে’ অর্থাৎ শ্রীহরি/শ্রীমতির আবির্ভাব নক্ষত্রে ও গুরুবর্গের আবির্ভাব ও তিরোভাব নক্ষত্রে দ্বিজবর যথাশক্তি বৈষ্ণবী ইষ্টি করিবেন। প্রত্যেক বৈদিক মন্ত্র পাঠ করে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করে চরু বা পায়েস দ্বারা পারণ কার্য্য করবেন। সিদ্ধান্ত: শ্রীমতি রাধিকার আবির্ভাব কাল অর্থাৎ মধ্যাহ্ন পর্যন্ত উপবাস সকলের জন্যই আবশ্যক। এটি সর্বজনীন বিধি। ————————————————- পূর্ণদিবস উপবাসের বিধি ————————————————- সর্বজনীন বিধি বর্ণন শেষে নারদজী মহারাজ পূর্ণ উপবাস বিধির উল্লেখ করেছেন। যাদের পূর্ণদিবস নির্জলা উপবাসের মতো যথেষ্ট শারীরিক ও মানসিক শক্তি আছে, তারা শ্রীমতি রাধিকার প্রীতার্থে পূর্ণদিবস নির্জলা উপবাস করতে পারেন এবং সাড়ম্বরে বৈষ্ণবী ভোজন করিয়ে গুরুকে প্রতিমা দান করে পারণা করবেন। শক্তো ভক্তশ্চোপবাসং পরেঽহ্নি বিধিনা ততঃ। সুবাসিনীর্ভোজয়িত্বা গুরবে প্রতিমার্পণম্ কৃত্বা। স্বয়ং চ ভুংজীত ব্রতমেবং সমাপয়েৎ।। [ শ্রীনারদীয় মহাপুরাণ, পূর্বভাগ, ৪।৯৪।৪২-৪৩(গীতাপ্রেস গোরক্ষপুর); ৪।১১৭।৪২-৪৩ (Banarasidass Publishers)] অনুবাদ: শক্ত ভক্ত সম্পূর্ণ উপবাসপূর্বক পরদিন বিধিপূর্বক সুবাসিনী অর্থাৎ সুলক্ষণা সতী নারী তথা ব্রতচারিণী বৈষ্ণবীদের ভোজন করাবেন, অতঃপর শ্রীগুরুদেবকে শ্রীবিগ্রহটি দান করে ব্রত সমাপনপূর্বক আহার করা উচিত। বিশ্লেষণ: অর্ধদিবস উপবাস পালন সহজ, তাই শুরুতেই সার্বজনীন অর্ধ উপবাসের বিধান বলে এরপর নারদজী পূর্ণদিবস উপবাসের বর্ণনা করছেন। ‘শক্ত ভক্ত’ শব্দে শারীরিক-মানসিকভাবে শক্তিমান ভক্তদের বুঝানো হয়েছে, যাদের পূর্ণোপবাস ব্রত পালনে স্বাস্থ্যক্ষয় হয় না। কারণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে বলেছে-  ‘নষ্টে শরীরে স ভবেদন্যথা চাত্মঘাতকঃ’- উপবাসে শরীর নষ্ট হলে আত্মহত্যার পাপ হয়। উপবাসের পরদিনে প্রাতে বৈষ্ণবী ভোজন করিয়ে আশীর্বাদ নেওয়ার কথা বলেছে। সাধারণত দেবীগণের ব্রতে সুলক্ষ্মণা সতী নারী তথা বৈষ্ণবী ভোজন করিয়ে তাদের আশীর্বাদ চাওয়া হয়। ব্রত সমাপনের পূর্বে গুরুদেবকে বিগ্রহ দান করে এরপর যথাসময়ে পারণা করতে হবে। লক্ষ্যণীয়: উপরোক্ত শাস্ত্র প্রমাণের সাপেক্ষে এটি দৃশ্যমান, রাধাষ্টমীতে শাস্ত্রে অর্ধদিবস ও পূর্ণদিবস উভয় প্রকার বিধান আছে। তাই নিজ নিজ গুরুপরম্পরাতে যেভাবে উপবাসের পালিত হয়, সেভাবে উপবাস পালন করা মঙ্গলকর। এ নিয়ে বিবাদ নিষ্প্রয়োজন, কারণ উভয় বিধানই ভগবানাবতার কর্তৃক নির্দেশিত। অনেক হীনমন্য ব্যক্তি আছেন, যারা পূর্ণদিবস উপবাস করে সে অহংকারে অর্ধদিবস ব্রতধারীদের পরিহাস করেন, এটি মারাত্মক বৈষ্ণব অপরাধ। যারা তা করেন, তারা নরকের কীট, তাদের ব্রত পালনই বৃথা। ‘অহংকার পতনের মূল।’ —————————————————————— ইস্‌কনে কিভাবে রাধাষ্টমী ব্রত পালন করা হয়? —————————————————————— আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সঙ্গ তথা ইস্কন সকল শাস্ত্রীয় সুসিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ইস্‌কন পূর্বতন গুরুপরম্পরা অনুসারে অর্ধদিবস ও পূর্ণদিবস উভয় প্রকার ব্রতই অনুসরণ করে। রাধাষ্টমীতে মধ্যাহ্নকালে বিশেষ পূজোৎসব ও ভোগরাগের পর বিশেষ প্রসাদ বিতরণ হয়। তবে যারা পূর্ণদিবস উপবাস করেন, তারা পরের দিন পারণা করেন। উল্লেখ্য, ইস্কনের পূর্বতন গুরুপরম্পরা তথা শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের প্রতিষ্ঠিত গৌড়ীয় মঠ ও মিশনগুলোতেও একই নিয়মে রাধাষ্টমী ব্রত পালিত হয়। ————————————————- রাধাষ্টমী ব্রতের ফল ————————————————- কথিতুং তৎফলং পুণ্যং ন শক্নোত্যপি নারদ । কোটিজন্মাৰ্জ্জিতং পাপং ব্রহ্মহত্যাদিকং মহৎ। কুৰ্ব্বন্তি যে সকৃদ্ভক্ত্যা তেষাং নশ্যতি তৎক্ষনাৎ।। (পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মখণ্ড, ৭/৭) অনুবাদ: যে সকল মানুষ ভক্তিভরে একবার মাত্র এই মহাপবিত্র শ্রীরাধাষ্টমী ব্রত পালন করে থাকেন, সেই সকল মানুষের কোটি জন্মের ব্রহ্মহত্যাদি সমস্ত মহাপাপ তৎক্ষনাৎ বিনাশ হয়ে যায়। একাদশ্যাঃ সহস্রেন যৎফলং লভতে নরঃ। রাধাজন্মাষ্টমীপুণ্যং তস্মাচ্ছতগুনাধিকম॥ (পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মখণ্ড,৭/৮) অনুবাদ: মনুষ্যগন এক হাজার একাদশী পালনে যেই ফল লাভ করে থাকেন, শ্রীরাধাজন্মাষ্টমী ব্রতের পুন্য তার থেকেও শতগুন অধিক হয়ে থাকে। মেরুতুল্যসুবর্ণানি দত্বা যৎ ফলমাপ্যতে । সকৃদাধাষ্টমী’ ক্বত্বা তস্মাচ্ছতগুণাধিকম্ ।। (পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মখণ্ড,৭/৯) অনুবাদ: মেরুপ্রমাণ সুবর্ণ দান করিয়া মানব

শ্রীমদ্ভাগবতে, বিষ্ণুপুরাণে, মহাভারতে ও হরিবংশে শ্রীমতি রাধারানীর নাম নেই কেন?!

Add a heading Svadharmam

***মহাভারত*** মহাভারত হচ্ছে ভারতীয় মহাবংশ চরিত ও কুরু-পান্ডবদের যুদ্ধ বর্ণনাত্মক কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস কৃত মহাকাব্য ও প্রসিদ্ধ ইতিহাস গ্রন্থ। এটি ১৮টি পর্বে বিভক্ত- আদি, সভা, বন, বিরাট, উদ্যোগ, ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, শল্য, সৌপ্তিক, স্ত্রী, শান্তি, অনুশাসন, অশ্বমেধিক, আশ্রমবাসিক, মৌষল, মহাপ্রস্থানিক ও স্বর্গারোহন পর্ব। এতে লক্ষাধিক শ্লোক রয়েছে। এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মহাকাব্য। বেদব্যাস বদরিকা আশ্রমে তিন বছরে এটি রচনা করেন।   মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ যে নন্দ গোপকুমার, তার কথা রয়েছে সভাপর্ব ৪০ অধ্যায় ৬ নং শ্লোকে বলা হয়েছে- যত্র কুৎসা প্রযোক্তব্যা বালতবৈর্নরৈঃ৷ তমিমং জ্ঞানবৃদ্ধঃ সন গোপং সংস্তোতুমিচ্ছসি।। অনুবাদঃ ভীষ্ম! অতিবালকেরাও যাকে নিন্দা করে, তুমি জ্ঞানবৃদ্ধ হয়েও সেই গোয়ালাটার স্তব করছো!   ৬ নং শ্লোকের নীলকণ্ঠকৃত টীকাঃ ইত্য ব্রহ্মাত্বে কুৎসা প্রযোক্তব্যা। তমিমং গোপাযতীতি গোপঃ, তং গোপং ব্যাধিকরনে দ্বিতীয়……………।   সভাপর্বে ৪১ অধ্যায়ে ১ম থেকে ৮ম শ্লোকে শিশুপাল বলেছে, “হে ভীষ্ম, দাস জাতির ছেলের সাথে যুদ্ধ করতে চাইনি বলেই জরাসন্ধ তার কাছে হেরে গেছে। তুমি কী জানো, যখন ঐ গোয়ালার ছেলে স্নাতক ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে জরাসন্ধের হাতে পা ধোয়াতে গেলে, ঐ গোয়ালার ছেলে ব্রাহ্মণ জরাসন্ধের হাতে পা ধোয়াতে সাহস পায়নি। আর ক্ষত্রিয় কূলে জন্মগ্রহণ করে তুমি তার প্রশংসা করছো?!”   এইসব স্থানে কৃষ্ণের জন্ম যে গোপকূলে তা বলা হয়েছে। আর গোপরা থাকলে গোপীরা কেন মিথ্যা হবে?! গোপীদের কথা ও পাওয়া যায় দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের সময় দ্রৌপদীকৃত কৃষ্ণস্তবে। মহাভারত, সভাপর্ব, ৬৫ অধ্যায্‌ ৪১-৪২ শ্লোকে বলা হয়েছে- আকৃষ্যমাণে বসনে দ্রৌপদ্যা চিন্তিতো হরিঃ। গোবিন্দ দ্বারকাবাসিন কৃষ্ণ গোপীজনপ্রিয়ঃ।। কৌরবৈঃ পরিভূতাং মাং কিং ন জানাসি কেশব। হে নাথ রমানাথ ব্রজনাথার্ত্তিনাশন।। অনুবাদঃ দুঃশাসন যখন দ্রৌপদীর বসন আকর্ষণ করে টানছিলেন, তখন দ্রৌপদী ভগবান শ্রীহরির চিন্তা করে আর্তি সহকারে বলেছিলেন, “হে গোবিন্দ! দ্বারকাবাসিন! হে কৃষ্ণ! গোপীজনপ্রিয়! কৌরবেরা যে আমাকে পরাভূত করছে, তা কি তুমি জানো না? হে নাথ, রমানাথ, ব্রজজনদের আর্তিনাশন, জনার্দন, কৌরব সাগরে মগ্ন আমাকে উদ্ধার করো।”   কেউ বলতে পারে যে, এই শ্লোকগুলো প্রক্ষিপ্ত। কিন্তু তা সত্য নয়। কারণ মহাভারতের একমাত্র টিকাকার মহাশয় এই শ্লোকের টীকাতেও ‘গোপীজনপ্রিয়’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন। “…………………ননু সন্নিহিতঃ শত্রুশ্চ কিমিতি দুষ্টাননুগৃহ্নীয়াদত আহ কৃষ্ণ। স্মৃতমাত্র এব সর্ব্বদেষকর্ষণ। ননু তথাপি অনৃতং সাহসং মায়া মূর্খত্বমতিলোভতা। অশৌচং নির্দ্দযত্বঞ্চ স্ত্রীনাং দোষার স্বভাবজা। ইত্যুক্তেঃ স্বাভাবিক স্ত্রীদোষা নাপনেতুং শক্যো ন হ্যাশীবষদ্রংষ্টা অমৃতপ্রবা কর্ত্তুং শক্যেত্যেত আহ গোপীজনপ্রিয়।”   মহাভারতকার কৃষ্ণ জীবনী লেখেন নি। প্রসঙ্গক্রমে কৃষ্ণকথার উল্লেখ করেছেন। মহাভারত কুরু-পাণ্ডবের জীবনী। কুরুপান্ডবের সঙ্গে যেখানে কৃষ্ণ, সেখানে কৃষ্ণকথা আছে। সেখানে কৃষ্ণের বাল্যজীবন ধারাবাহিকরূপে লিখিত হয়নি। যারা কৃষ্ণকে মানুষ বলে মনে করে, তারা কৃষ্ণের আনন্দময় ভাব ধারণ করতে পারে না। এই ধরনের লোকেরা হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতি রাধার ধারণা মাত্রও করতে পারে না। মানুষ নিত্য জীবদেরকে মৃত্যুমুখে পতিত হতে দেখেও নিজের চিরজীবিত্ব কল্পনা করে, তারা জীবিতকালে জড় সংসার ত্যাগ করতে পারে না। এর কারণ হচ্ছে মায়া। মায়া জীবদেরকে সমাচ্ছন্ন করে ভুলিয়ে রেখেছেন। সেই রূপে মহামায়া রাধা-কৃষ্ণ লীলাকে ইতর-জনের ধারণা থেকে দূরে রেখেছেন। সাধনা দ্বারা যোগমায়ার প্র কৃপা লাভ করতে পারলে, তখন শ্রীমতি রাধারানীকে বুঝতে পারা যায়। কৃষ্ণকে অবগত হওয়া যায়। রাধা-কৃষ্ণের লীলা জানতে পারা যায়। শুক্ত্যাবৃত মুক্তার সন্ধান কয়জন পায়?!?   ***হরিবংশ*** মহাভারতের পরিশিষ্ট অংশ হরিবংশ। বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন কল্পের কথা বা রাজবংশের কথা থাকে। মহাভারতে করু-পান্ডব বংশের বর্ণনা করে শ্রীকৃষ্ণের কথা বর্ণনা প্রসঙ্গে ব্যাসদেব এই হরিবংশ রচনা করেছেন। হরিবংশে বিষ্ণুপর্বে গোবর্ধন ধারণ ও ইন্দ্রমান-ভঞ্জনের পর রাসলীলার কথা এসেছে। তবে সেখানে রাসের কথা অত্যন্ত সংক্ষেপে আছে। ভাগবতে যা একটি অধ্যায়, হরিবংশে তা শুধু কয়েকটি শ্লোকে বর্ণিত হয়েছে। যুবতীগোপকন্যাশ্চ রাত্রৌ সংকাল্য কালবিত । কৈশোরকং মানয়ন বৈ সহ তাভির্মুমোদ হ ।। ১৮ ।। অনুবাদ: সর্বকাল সম্পর্ক জ্ঞাতা শ্রীহরি নিজ কৈশোর বয়সোচিত গোপকন্যাদের সাথে বনবিহার লীলা করলেন। তাস্তু পংক্তিকৃতাঃ সর্বা রময়ন্তি মনোরমম । গায়ন্তং কৃষ্ণচরিতং দ্বন্দশো গোপকন্যকাঃ ।। ২৫ ।। অনুবাদ: ঐ সমস্ত গোপকিশোরীরা মন্ডলাকারে পংক্তি বানিয়েছিল, প্রত্যেক গোপীর দুদিকে শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমান হয়ে গোপী-কৃষ্ণের যুগল জোড়া তৈরী করলেন। কৃষ্ণ চরিত্রের গান করতে করতে তারা নৃত্য করতে থাকলেন। এরপর ৯টি শ্লোকে কৃষ্ণের সাথে গোপীদের রাসলীলার বর্ণনা আছে। হরিবংশের প্রধান উদ্দেশ্য কৃষ্ণের বংশ তথা বৃষ্ণি বংশের বর্ণনা। অন্যান্য অংশ শ্রীমদ্ভাগবতের ন্যায় কেবল সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। শ্রীমতি রাধা শ্রীমদ্ভাগবতের মতো লুকায়িত, কিন্তু ভক্তের চোখে নয়। যেখানে রাস আছে, সেইখানেই রাসেশ্বরী শ্রীমতি রাধারাণী আছেন।   ***বিষ্ণুপুরাণ*** বিষ্ণুপুরাণ হচ্ছে ১৮টি মহাপুরাণের অন্তর্গত একটি সাত্ত্বিক পুরাণ। এতে ২৩ হাজার শ্লোক আছে। এই পুরান ছয় ভাগে বিভক্ত। যথা- (১) বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর উৎপত্তি, ধ্রুব চরিত, প্রহ্লাদ চরিত ইত্যাদি; (২) পৃথিবী, সপ্তদ্বীপ, সপ্তসমুদ্র; (৩) ব্যাস কর্তৃক বেদবিভাগ, আশ্রম ধর্ম ইত্যাদি; (৪) সূর্য ও চন্দ্র বংশ প্রভৃতি রাজবংশের বিবরণ; (৫) কৃষ্ণচরিত, বৃন্দাবনলীলা ইত্যাদি; (৬) বিষ্ণুভক্তি, যোগ ও মুক্তির কথা। বিষ্ণুপুরাণের ৫ম খণ্ডে, ১৩ অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলার বর্ণনা আছে। রাসলীলার একপর্যায়ে হটাৎ শ্রীকৃষ্ণ অন্তর্ধান হলেন। গোপীরা কৃষ্ণকে খুঁজতে খুঁজতে বৃন্দাবনে বিচরণ করতে লাগলেন। তাঁরা কৃষ্ণের প্রতি আসক্তিচিত্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন লীলার অনুকরণ করতে লাগলেন। তখন হঠাৎ কোনো এক গোপী মাটিতে কৃষ্ণপদচিহ্ন দর্শন করে আনন্দে সর্বাঙ্গে পুলকিত হল। তখন সে সবাইকে ডেকে সেদিকে দেখিয়ে বলতে লাগলো, “হে সখী! এই দেখো লীলালংকৃতগামী কৃষ্ণের ধ্বজ-বজ্র-অঙ্কুশ চিহ্নিত এই সকল পদচিহ্ন দেখা যাচ্ছে। আর ওই দেখো! কৃষ্ণের সাথে কোন পুণ্যবতী রমণী মদালসভাবে গমন করেছে। কৃষ্ণ চরণচিহ্নের পাশে পাশে তাঁরও ছোট ছোট পদচিহ্ন দেখা যাচ্ছে।……………………………… পূর্বজন্মে এই ভাগ্যবতী রমণী (শ্রীমতি রাধা) ফুল দিয়ে সর্বাত্মা বিষ্ণুর অর্চনা করেছিলেন। তাই ভগবান কৃষ্ণ এখানে বসিয়ে তাঁকে ফুল দিয়ে সাজিয়েছেন। এই তাঁর চিহ্ন দেখো। এই দেখো! এই পথ অবলম্বন করে নন্দগোপসুত শ্রীকৃষ্ণ সেই মানময়ী রমণীকে মাথায় পুষ্পবন্ধন করে দিয়ে তাঁকে নিয়ে প্রস্থান করেছেন। ………………… আহা! এখানে হয়তো ওই রমণীকে ধূর্তের করস্পর্শ মাত্র পরিত্যাগ করেছেন। কারণ নিরাশায় মন্দগামীনী সেই রমণীর পদচিহ্ন এই স্থানের পর আর নেই। এই স্থলে কৃষ্ণ সেই গোপীকে, “তুমি এখানে অবস্থান কর, এখানে এক অসুর বাস করে। আমি তাকে হত্যা করে শীঘ্র তোমার কাছে আসছি—” এইরকম কোন কথা বলে চলে গেছেন। কৃষ্ণের শীঘ্র ও নিম্নপদপংক্তি দেখে এরকম মনে হচ্ছে কৃষ্ণ এইস্থান হতে গহীন বনে হয়তো প্রবেশ করেছেন। তাঁর পদচিহ্ন তো আর দেখা যাচ্ছে না। তোমরা নিবৃত্ত হও। এখানে আর চন্দ্রকিরণ প্রবেশ করছে না।” তখন এভাবে গোপীরা কৃষ্ণ দর্শনে নিরাশ হয়ে যমুনা তীরে এসে কৃষ্ণচরিত গান করতে আরম্ভ করল। এরপর কৃষ্ণ তাঁদের দর্শন দেন ও পুনরায় রাসক্রীড়া আরম্ভ করেন।   ***শ্রীমদ্ভাগবত*** ১৮ টি মহাপুরাণের মধ্যে ভাগবত পুরাণ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ, যা স্কন্দপুরাণে, গরুড়পুরাণে ও পদ্মপুরাণে স্বীকার করা হয়েছে। এতে ১৮ হাজার শ্লোক রয়েছে এবং এটি ১২টি স্কন্ধে বিভক্ত। একে বেদান্ত-সূত্রের স্বাভাবিক ভাষ্য বলা হয় যা স্বয়ং ব্যাসদেব লিখেছেন (অর্থোহয়ং ব্রহ্মসুত্রানাম-গরুড় পুরাণ)। এই পুরাণের ১০ম স্কন্ধে কৃষ্ণলীলা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।   শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণনা আছে যে, রাসস্থলী থেকে মাধব হঠাৎ অন্তর্ধান হলে গোপীরা তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে এক জায়গায় মাধবের চরণ চিহ্ন পান ও দেখেন তার পাশে পাশে অন্য এক গোপীর পদচিহ্ন রয়েছে। গোপীরা তখন আলোচনা

সাম্প্রতিক বন্যা এবং সংখ্যালঘু নির্যাতিত দরিদ্র পরিবারের আর্থিক সহায়তার জন্য দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে অনুদান পাঠানোর মাধ্যম

image 2024 08 25 014414931 Svadharmam

‘স্বধর্মম্ ফাউন্ডেশন’ বিভাগে আপনাকে স্বাগতম। সাম্প্রতিক বন্যা এবং সংখ্যালঘু নির্যাতিত দরিদ্র পরিবারের আর্থিক সহায়তার জন্য দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে অনুদান পাঠানোর মাধ্যম: বিকাশ/নগদ– 01970018651 (personal) ব্যাংক একাউন্ট : Account number: 2303481712001 Name : Ovi Chowdhury Branch : Agrabad, Chittagong Bank: City Bank Routing number – 225150135 Swift code – CIBLBDDH ভিসা কার্ড: Visa card no: 4105201020578787 Name: Ovi Chowdhury India থেকে পাঠানোর উপায়: Phone Pay/ Gpay : 7029412654 (After send from india pls confirm me in Whatsapp: +88 01714975347)