সাম্প্রতিক সময়ে শূদ্রকুলে জন্মগ্রহণ করা ব্যক্তি দীক্ষাগুরু হতে পারে না, এমন বিষয় নিয়ে প্রচুর চর্চা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু শাস্ত্রে এর ভূরিভূরি দৃষ্টান্ত আছে, যেখানে বৈষ্ণবগণ শূদ্র কুলে আবির্ভূত হয়েও ব্রাহ্মণের দীক্ষাগুরু হয়েছিলেন। পর্যায়ক্রমে আমরা তাদের বিষয়ে প্রকাশ করব। গৌড়ীয় পরম্পরায় শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর মহাশয় একজন বিখ্যাত আচার্য যিনি শূদ্র কায়স্থকুলে আবির্ভূত হলেও কৃষ্ণভক্তির প্রভাবে ব্রাহ্মণত্ব অর্জন করে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের একজন মহান দীক্ষাগুরুতে পরিণত হয়েছিলেন। নরোত্তম দাস ঠাকুর বহু স্মার্ত ব্রাহ্মণকে শিষ্যরূপে গ্রহণ করেছিলেন।
ঠাকুর মহাশয়ের দীক্ষা ও শিক্ষা লাভ, প্রচার ও বিগ্রহসেবা:
শ্রী নরোত্তম দাস বৃন্দাবনে মহাপ্রভুর পার্ষদ শ্রীল লোকনাথ গোস্বামীর নিকট দীক্ষা ও শ্রীল জীব গোস্বামীর নিকট শিক্ষা লাভ করে গৌড়ীয় শাস্ত্রে পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি ‘ঠাকুর মহাশয়’ উপাধি লাভ করেন। এরপর গুরুবর্গের নির্দেশে তিনি কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচারের জন্য পুনরায় পূর্ববঙ্গে ফিরে আসেন। ঠাকুর মহাশয় তাঁর আবির্ভাব স্থান খেতুরী অঞ্চলে ছয়টি মন্দির স্থাপন করেছিলেন। এই উপলক্ষে তৎকালীন সময়ের সমস্ত বৈষ্ণব খেতু্রীগ্রামে নিয়ন্ত্রিত হয়েছিলেন। সেখানে গৌর পূর্ণিমায় এত বিশাল মহোৎসব হয়েছিল যে তা এখনও ইতিহাসে বিখ্যাত এবং শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু ও তাঁর প্রধান পার্ষদগণ তখন প্রকট না থাকলেও আকাশপথে আবির্ভূত হয়ে সেই উৎসবে ঠাকুর মহাশয়ের কীর্তনে নৃত্য করেছিলেন যা উপস্থিত বহু ভক্ত দর্শন করেছিলেন।
যদিও ঠাকুর মহাশয় বাহ্যত শূদ্রকুলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু তিনি তাঁর গুরুদেবের আদেশে এভাবে শ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া-গৌরাঙ্গ, শ্রীবল্লবীকান্ত, শ্রীরাধারমণ, শ্রীব্রজমোহন, শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধাকান্ত — এই ছয় বিগ্রহ স্থাপন করেছিলেন এবং এভাবে বৈষ্ণবদীক্ষায় দীক্ষিত ব্যক্তি যেকোনো কুলে জন্মগ্রহণ করেও বিগ্রহসেবার অধিকারী হয় এই শাস্ত্রীয় বাক্যের উপযুক্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। শূদ্রগৃহে জন্ম নিয়ে ব্রাহ্মণ সন্তানদের দীক্ষা দেওয়ায় তিনি জাতি ব্রাহ্মণদের প্রবল বিরোধের সম্মুখীন হন। কিন্তু খেতুরী মহোৎসবে শ্রী নিত্যানন্দ প্রভুর পুত্র শ্রীবীরচন্দ্র প্রভু স্বয়ং বহু শাস্ত্র প্রমাণাদি সহযোগে বলেন কৃষ্ণ দীক্ষা গ্রহণ করলে দ্বিজত্ব প্রাপ্তি হয় এবং নরোত্তম দাস ঠাকুর যদিও শূদ্র কুলোদ্ভব কিন্তু বীরচন্দ্র প্রভু তাকে ব্রাহ্মণ বলে ঘোষণা করেন ও তার বক্ষে জ্যোতির্ময় যজ্ঞোপবীত সকলকে দর্শন করান।
শ্রীপ্রেমবিলাসে (১৯ বিলাসে) উল্লেখ আছে—
এই নরোত্তম কায়স্থ কুলোদ্ভব হয়।
শূদ্র বলি কেহ কেহ অবজ্ঞা করয়॥
কৃষ্ণভক্ত জন হয় ব্রাহ্মণ হৈতে বড়।
যিঁহো শাস্ত্র জানে তিঁহো মানে করি দৃঢ়॥
কৃষ্ণ দীক্ষায় দ্বিজত্ব লাভ শাস্ত্রের বচন।
ইথে অবিশ্বাস যায় নরক ভবন॥
কুষ্ঠরোগী ব্রাহ্মণকে কৃপা:
শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর নাম প্রচার এবং দীক্ষামন্ত্র দান করে গুরুরূপে সেবা করছিলেন, যা স্বভাবতই বহু লোকের মনঃপুত হয়নি। এখনকার দিনেও এরকম ব্যক্তি রয়েছে, অতএব সেই সময়ের আর কি কথা। একদিন এক কুষ্ঠরোগী ব্রাহ্মণ নরোত্তম দাস ঠাকুরের ভজনতলীতে আগমন করে হাত জোড় করে বিনীতভাবে বলতে লাগলেন, “ঠাকুর, আমি এক অহংকারী ব্রাহ্মণ, আমি আপনার সমালোচনা ও বিদ্রূপ করেছি এবং এই অপরাধের ফলে এইরকম যন্ত্রণাদায়ক রোগ লাভ হয়েছে আমি যতই ঔষধ গ্রহণ করি না কেন, এই রোগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি প্রাপ্ত হচ্ছে। তাই আমি মনোকষ্টে পদ্মায় আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেই রাতে আমার আরাধ্যা ভগবতী দেবী স্বপ্নে আমাকে রোগের কারণ অবগত করে আপনার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করতে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমি মহাপাপী, ক্ষমার অযোগ্য। আপনি আমাকে উদ্ধার করুন।” ব্রাহ্মণের এই আর্তনাদ দেখে ঠাকুরের হৃদয় বিগলিত হয়ে গেল। ঠাকুর মহাশয় তাকে ভূমি থেকে তুলে হরে কৃষ্ণ কীর্তন করতে করতে আলিঙ্গন করলেন। তখন সেই ব্রাহ্মণও কৃষ্ণপ্রেম লাভ করে কীর্তন করতে করতে হাত তুলে নৃত্য করতে লাগলেন। যখন ব্রাহ্মণের বাহ্যজ্ঞান ফিরে এলো, তিনি দেখলেন তার দেহ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে। তখন সেই ব্রাহ্মণ ঠাকুর মহাশয়ের নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলেন এবং অহংকারশূন্য হয়ে কৃষ্ণভক্তি করতে লাগলেন। সেই অঞ্চলের লোকজন এই ঘটনা শুনতে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং সকলেই নরোত্তম দাস ঠাকুরের মহিমা উপলব্ধি করতে পারলেন। তাঁরা বলতে লাগলেন—
কেহ কার প্রতি কহে, হও সাবধান।
শ্রীনরোত্তমেরে না করিহ শূদ্রজ্ঞান॥
কেহ কহে মত্ত হৈয়া বিপ্র অহংকারে।
নরোত্তম হেন রত্ন নারি চিনিবারে ॥
(নরোত্তম বিলাস, নবম বিলাস)
হরিরাম, রামকৃষ্ণ ও শিবানন্দ উদ্ধার:
শ্রীল নরোত্তম ঠাকুর মহাশয়ের কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচারের ফলে কালক্রমে এই অঞ্চলের বহু লোক নিতাই-গৌরের প্রেমভক্তি গ্রহণ করতে লাগল। ঠাকুর মহাশয় তাদের দীক্ষা দিয়ে উদ্ধার করলেন। বহু ব্রাহ্মণসন্তানও ঠাকুর মহাশয়ের নিকট দীক্ষা নিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে হরিরাম আচার্য, রামকৃষ্ণ আচার্য, গঙ্গানারায়ণ চক্রবর্তী বিখ্যাত। এছাড়াও জগন্নাথ আচার্য, শিবানন্দ আচার্য, রূপ নারায়ণ প্রভৃতি পণ্ডিতগণও অগ্রগণ্য।
হরিরাম ও রামকৃষ্ণ ঠাকুর আশ্রয়ে কৃষ্ণভক্তি ও শাস্ত্রশিক্ষা করতে থাকলে তাদের পিতা শিবানন্দ আচার্য অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। তিনি তাদের ভর্ৎসনা করতে লাগলেন, “ব্রাহ্মণ হয়ে কায়স্থের পায়ে ধরতে তোদের লজ্জা করল না? আর সে কোথাকার কোন বৈষ্ণব, যে কিনা ব্রাহ্মণকে শিষ্য করার দুঃসাহস করেছে?” তখন দুই ভাই পিতাকে বললেন, “পিতা, আপনি দয়া করে শান্ত হোন, আপনি পণ্ডিতগণসহ শাস্ত্রবিচার আয়োজন করুন, আমরা শাস্ত্রের বিচারে এর উত্তর দেবো। সেই বিচারে যদি আপনার মত শ্রেষ্ঠ হয়, তাহলে আমরা প্রায়শ্চিত্তও করব।” শিবানন্দ তখন আরো দুইজন পণ্ডিতকে আমন্ত্রণ করে শাস্ত্রবিচার আয়োজন করেন এবং পরাজিত হন। তখন তিনি মিথিলা থেকে এক বিখ্যাত পণ্ডিত মুরারি মহাশয়কে আমন্ত্রণ করেন, কিন্তু শ্রীগুরুদেবের আশির্বাদে হরিরাম ও রামকৃষ্ণ তাঁকেও ভাগবতের সিদ্ধান্ত দ্বারা পরাজিত করেন। মুরারি মহাশয় তখন লজ্জায় স্থান ত্যাগ করেন। সেদিন রাতে শিবানন্দ আচার্যের পূজিতা দুর্গাদেবী তাকে স্বপ্নে বললেন, “যারা শ্রীহরির প্রিয় ভক্ত, তাঁরাই আমার প্রিয়। তুই যদি রক্ষা পেতে চাস, তাহলে শ্রী নরোত্তমের নিকট ক্ষমা ভিক্ষা কর।” পরদিন পরিবারের বাকি সকলকে নিয়ে শিবানন্দ আচার্য শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুরের চরণাশ্রয় গ্রহণ করলেন।
গঙ্গানারায়ণ চক্রবর্তী ও মণিপুরী বৈষ্ণব
হরিরাম ও রামকৃষ্ণের প্রচারের ফলে গঙ্গানারায়ণ চক্রবর্তী ঠাকুর মহাশয়ের চরণাশ্রয় করেন এবং অল্পসময়ে ভক্তিশাস্ত্রে মহাপণ্ডিত হন। তিনি পরবর্তী সময়ে মণিপুরী সম্প্রদায়ে কৃষ্ণভক্তি প্রচার করেছিলেন, যার ফলে আজও সেখানে কৃষ্ণভক্তির প্রবাহ দেখা যায়।
রূপ নারায়ণ ও রাজা নরসিংহ
ক্রমে ক্রমে নরোত্তম দাস ঠাকুরের ব্রাহ্মণ শিষ্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগলো। অনেক প্রধান ব্রাহ্মণ নরোত্তম দাস ঠাকুরের প্রেমভক্তির বন্যায় নিজেকে ভাসিয়ে দিলেন। এতে স্মার্ত ব্রাহ্মণ সমাজ ঠাকুর মহাশয়ের প্রতি কুপিত হতে লাগলেন। কারণ ঠাকুর মহাশয়ের শিষ্য সংখ্যা এতোই বেড়েছে যে, তাকে আর একঘরে করে দিলেও কোনো লাভ হবে না।
শ্রীনরোত্তম দাস ঠাকুর মহাশয়ের মহিমা দেখে স্মার্ত ব্রাহ্মণ সমাজ ঈর্ষায় দগ্ধ হতে লাগল। তাই সকলেই রাজা নরসিংহের কাছে গিয়ে নালিশ করল, “মহারাজ, আপনি যদি ব্রাহ্মণ সমাজকে না বাঁচান, তবে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। রাজা কৃষ্ণানন্দ দত্তের পুত্র নরোত্তম শুদ্র হয়ে ব্রাহ্মণদের শিষ্য করছে এবং জাদু-মন্ত্র দিয়ে সকলকে মুগ্ধ করছে।” রাজা নরসিংহ বললেন, “আমি আপনাদের রক্ষা করব। আমায় কী করতে হবে বলুন?” ব্রাহ্মণগণ বললেন, “মহাদিগবিজয়ী পণ্ডিত শ্রীরূপনারায়ণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা খেতুরিতে গিয়ে নরোত্তমকে পরাস্ত করব। এ কাজে আপনি আমাদের সাহায্য করুন।” রাজা নরসিংহ বললেন, “আমিও আপনাদের সাথে যাবো।” রাজা তার সভাসদ ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণ ও সভাপণ্ডিত রূপনারায়ণ সহ বিষয়টি আলোচনা করলেন এবং স্থির করলেন সবাইকে নিয়ে খেতুরি অভিমুখে যাত্রা করবেন।
স্মার্ত ব্রাহ্মণগণ দিগ্বিজয়ী রূপনারায়ণকে সঙ্গে নিয়ে খেতুরি গ্রামের দিকে যাত্রা করলেন। একজন লোক এসে তা শ্রীনরোত্তম ও শ্রীরামচন্দ্র কবিরাজ আদি সকল ভক্তকে জানালেন। এদিকে এ খবর খেতুরিতে ছড়িয়ে পড়লো এবং নরোত্তম ঠাকুর মহাশয়ের নিকট সংবাদ পৌঁছালে তিনি ব্যথিত হলেন। ঠাকুর মহাশয় ভাবলেন কৃষ্ণভজন বাদ দিয়ে এখন স্মার্ত পণ্ডিতদের সাথে তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হতে হবে। রামচন্দ্র ও গঙ্গানারায়ণ নরোত্তম ঠাকুরের চিন্তা দেখে ব্যথিত হলেন। তাই তাঁরা খেতুরী আসার পূর্বে পথিমধ্যেই ছদ্মবেশে সেই রাজার শতাধিক ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের দলকে পরাস্ত করলেন। যাঁর শিষ্যেরাই এত পণ্ডিত, তিনি স্বয়ং কি মহান্— এই বিবেচনা করে পরদিন সকলেই খেতুরী আগমন করে ঠাকুর মহাশয়ের চরণাশ্রয় করে কৃষ্ণনামে দীক্ষা গ্রহণ করলেন।
দেহত্যাগ করেও পুনরায় জীবনলাভ
একবার শ্রী নরোত্তম দাস ঠাকুর সকলকে মহাপ্রভুর সেবার নির্দেশ দিয়ে বুধরি থেকে গাম্ভীলায় গঙ্গানারায়ণ চক্রবর্তীর গৃহে আগমন করেন। ক্রমে শ্রীগৌরকৃষ্ণে বিরহানল বর্ধিত হতে লাগল। গাম্ভীলাতে আসার পর তিনি হঠাৎ একদিন জ্বর লীলা প্রকাশ করে চিতা সাজানোর নির্দেশ দিয়ে সমাধিস্থ হন। তিন দিন অতিবাহিত হলেও ঠাকুর মহাশয়ের বাহ্যচেতনার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। তখন ভক্তগণ নিদারুণ কষ্টে তাঁর দেহ গঙ্গাস্নান করিয়ে চিতার উপর রাখলেন। তা দেখে ঈর্ষান্বিত ব্রাহ্মণেরা তাঁর নিন্দা করে বলতে লাগল যে, কায়স্থ হয়েও ব্রাহ্মণদের শিষ্য বানানোর ফলে ঠাকুরের এ দশা হলো। ব্রাহ্মণগণ গঙ্গানারায়ণ চক্রবর্তীকে শুনিয়ে এমন নানা কথা বলে নিজেরা উল্লাস করতে লাগলেন। এ বিষয়ে নরোত্তম বিলাসের একাদশ বিলাসে বর্ণিত আছে-
পরস্পর কহে সুখে ব্রাহ্মণ সকল।
বিপ্র শিষ্য কৈল যৈছে তার এই ফল ॥
গঙ্গানারায়ণ ব্রহ্ম কিছু না কহিল।
বাক্যেরোধ হৈয়া নরোত্তমদাস মৈল॥
এ সমস্ত পাষণ্ডীদের উদ্ধার করার জন্যই গঙ্গানারায়ণ শ্রীনরোত্তম দাস ঠাকুরের কাছে গিয়ে করজোড়ে তাঁর স্তব করতে লাগলেন, “হে প্রভু, আপনি এ জগতের কত অধম পতিতকে উদ্ধার করেছেন, অথচ এ পাষণ্ডীদের ত্রাণ না করেই চলে যাচ্ছেন। আপনি এদের ত্রাণ করুন প্রভু। এরা আপনার অলৌকিক মহিমা বুঝতে পারেনি। আপনি এদের পরিত্রাণ করে আমার মনের দুঃখ দূর করুন।” তখন শ্রীনরোত্তম দাস ঠাকুরের চিত্তে কৃপার উদয় হলো। তিনি রাধাকৃষ্ণচৈতন্য বলতে বলতে সূর্যের ন্যায় তেজ ছড়িয়ে চিতা থেকে উত্থিত হলেন। সকলে আনন্দে হরিধ্বনি করতে লাগল আকাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টি হতে লাগল। তখন সকল নিন্দুকেরা মহাভয় পেয়ে কাতরভাবে ঠাকুর মহাশয়ের চরণাশ্রয় করে উদ্ধার লাভ করল। তিনি ব্রাহ্মণদের কৃপা বিতরণ করে তাদের গঙ্গানারায়ণ চক্রবর্তীর নিকট ভক্তিগ্রন্থ অধ্যয়নের ও কিছুকাল পর খেতুরি গমনের নির্দেশ দিয়ে গঙ্গানারায়ণ চক্রবর্তীর বাড়িতে গেলেন এবং আরো বহুকাল রাজশাহী, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি অঞ্চলে কৃষ্ণভক্তি প্রচার করার পর অলৌকিকভাবে নিজের দেহকে তরল দুধে পরিণত করে গঙ্গায় স্নানকালে অপ্রকট হলেন।
মহাপ্রভু যার আবির্ভাবের ২০ বছর পূর্বেই যার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, সেই শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর মহাশয়ের জীবনলীলাতেই এত দৃষ্টান্ত রয়েছে, যা শূদ্রকুলে জন্মগ্রহণ করলে গুরু হতে পারে না এইরকম মিথ্যা অপপ্রচারের খণ্ডন করতে যথেষ্ট। গৌড়ীয় পরম্পরায় এবং অন্যান্য বৈষ্ণব পরম্পরায় এর আরো বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। আমরা ঠাকুর মহাশয়ের নিকট প্রার্থনা করি, যেন এইসব লীলা ও শাস্ত্রে উপস্থিত হাজার হাজার সিদ্ধান্ত তাদের চক্ষু উন্মোচিত করুক। যারা দেখেও দেখেনা, সেইসব উল্লুকতুল্য ব্যক্তিদেরও সুমতি হোক, এই প্রার্থনা নিবেদন করি।
হরে কৃষ্ণ
~ মধুর গৌরকিশোর দাস
© স্বধর্মম্ ™
জয় নরোত্তম দাস ঠাকুর মহাশয় কি জয়!