সনাতন ধর্মে কি হাঁস-মুরগী পালন করা নিষিদ্ধ ?

Svadharmam Q&A

সনাতন ধর্মে কি ছাগল,হাঁস মুরগী পালন করা নিষিদ্ধ ? বিষ্ণুপুরাণে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে- মার্জারকুক্কুটচ্ছাগশ্ববরাহবিহঙ্গমান্। পোষয়ন্নরকং যাতি তমেব দ্বিজসত্তম।। [ বিষ্ণুপুরাণ ২।৬। ২২ ] অনুবাদ: হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ! বিড়াল, হাঁস-মুরগী, ছাগল, অশ্ব, শূকর তথা পক্ষীপালন করে জীবিকাপালনকারী ব্যক্তিও ওই নরক তথা পূয়বহ নামক নরকে গমন করে। . এ সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে – যে ত্বিহ বা অনাগসোঽ রণ্যে গ্রামে বা বৈশ্রম্ভকৈরুপসৃতানুপবিশ্রস্তয্য জিজীবিষ্ণুন্ শূলসূত্রাদিযূপপ্রোতান্ ক্রীড়নকতয়া যাতয়ন্তি তেহপি চ প্রেত্য যমযাতনাসু শূলাদিষু প্রোতাত্মানঃ ক্ষুত্ত্ব ভ্যাংচাভিহতাঃ কঙ্কবটাদিভিশ্চেতস্ততস্তিগ্মতুণ্ডৈরাহন্যমানা আত্মশমলং স্মরস্তি।। [ শ্রীমদ্ভাগবতম ৫।২৬। ৩২ ] অনুবাদ: যে সমস্ত মানুষ ইহলোকে গ্রামে বা অরণ্যে জীবন রক্ষার্থে আগত পশু-পাখিদের আশ্রয় দান পূর্বক বিশ্বাস জন্মিয়ে শূল অথবা সূত্রের দ্বারা তাদের বিদ্ধ করে এবং তারপর ক্রীড়নকের মতো ক্রীড়া করে প্রবল যন্ত্রণা দেয়, তারা মৃত্যুর পর যমদূতদের দ্বারা শূলপ্রোত নামক নরকে নীত হয় এবং তাদের শরীর তীক্ষ্ণ শূল ইত্যাদির দ্বারা বিদ্ধ করা হয়। সেখানে তারা ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় পীড়িত হয়, এবং চতুর্দিক থেকে বক, শকুন প্রভৃতি তীক্ষ্ণ-চঞ্চু পক্ষী এসে তাদের দেহ ছিন্নভিন্ন করতে থাকে। এইভাবে যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে তারা তখন তাদের পূর্বকৃত পাপকর্মের কথা স্মরণ করতে থাকে। . অর্থাৎ জীবন রক্ষার্থে আগত পশু-পাখিদের (হাঁস, মুরগী, ছাগল ইত্যাদিকে..) আশ্রয় দান করে বিশ্বাস জন্মিয়ে হত্যা করে, তাদের মৃত্যুর পর যমদূত তাদের শূলপ্রোত নামক নরকে নিক্ষেপ করে। ।।হরে কৃষ্ণ।। . [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

ইসকনে নারী পুরুষের মধ্যে কেমন সম্পর্কের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে?

20240926 164520 Svadharmam

এই জগতের কল্যাণের স্বার্থে কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এই স্বর্ন সংস্থা স্থাপন করছেন। প্রভুপাদের শিক্ষার একমাত্র আঁধার ছিল জীবনের সকল কার্যে জড় বিষয় পরিত্যাগ করে পারমার্থিক পথনির্দেশ অনুসরণ করা হবে। দেহের কোনো পার্থক্য থাকছে না, “হোক এই দেহটি কোনো নারী অথবা পুরুষের” আমরা সকলেই আত্মা যদি আমরা পারমার্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি। কিন্তু প্রকৃতির নির্দেশ অনুসারে শারীরিক ও মানসিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুরুষ এবং নারীকে ভিন্ন ভিন্নভাবে তৈরি করা হয়েছে। প্রকৃতির বিধি অনুসারে নারীরা সাধারণত বেশিরভাগ আবেগপ্রবণ হয়ে থাকেন, ভগবান তাদের এই বিশেষ গুণটি প্রদান করেছেন যে তারা নিজেদের স্বজন হোক পিতা-মাতা, স্বামী অথবা নিজের সন্তানদের অধিক ভালোবাসার সাথে স্বাচ্ছন্দে রাখতে পারেন। এবং পুরুষরা প্রাকৃতিকভাবে শারীরিক দিক থেকে অধিক শক্তিশালী, রক্ষক, উপার্জনকারী, তার শরণাগত থাকা সকলকে রক্ষা করা। প্রভুপাদ যখন আমেরিকায় গিয়েছেন তখন তিনি দেখছিলেন যে নারীরা পুরুষদের সাথে সমান অধিকার নিয়ে বেশি সচেতন, তারাও চাকরি করছে। তখন প্রভুপাদ সেইভাবেই প্রচার করেছেন তিনি কখনই তাদের বাধা দেননি চাকরি বা অন্যান্য বিষয়ে। তিনি তাদের চারটি বিধিনিষেধ দিয়েছিলেন। যা আমরা সকলেই জানি। এরমধ্যে একটি প্রধান হচ্ছে অবৈধ সঙ্গ বর্জন করা। এবার মূল বিষয়ে আসছি, শ্রীল প্রভুপাদ চেয়েছিলেন এমন একটি সংস্থা হবে যেখানে নারী পুরুষ উভয়ই সমানভাবে কৃষ্ণভাবনামৃতের আশ্রয় গ্রহণ করবে এবং জগতের কল্যাণের স্বার্থে সেই বৈদিক সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার করবে। কিন্তু এখনকার বর্তমান সমাজে কিছু ছেলেমেয়েরা এই প্রচার ও প্রসারের নাম দিয়ে অবাধে মেলামেশা করছে। অনেকে এটাকে কৃষ্ণভাবনাময় সম্পর্ক নামক আখ্যা দিয়ে থাকেন যা তথাকথিত বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড অথবা বেস্টফ্রেন্ড হিসেবেও পরিচিত। যা কখনোই প্রভুপাদের দৃষ্টিকোণ ছিল না। শ্রীল প্রভুপাদ তার ১৭ নভেম্বর, ১৯৭১, দিল্লিতে একটি প্রবচনে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন: – বিবাহ করা অপরিহার্য। আমাদের সংস্থার বিষয়ে বিবেচনা করা হলে, আমরা আমাদের সংস্থায় কাউকে বন্ধু, গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড হিসেবে থাকার স্বীকৃতি দেই না। না। তাদের অবশ্যই বিবাহিত হতে হবে এবং এই ছেলে-মেয়েরা, বিবাহিত হওয়ার পর, তারা সুন্দরভাবে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করছে। আমার সমস্ত শিষ্য যারা বিবাহিত, তারা সন্ন্যাসীর চেয়ে বেশি প্রচারকার্য করছে। অর্থাৎ এই কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘে দুজন সম্পর্ক বিহীন পুরুষ নারী কখনোই অবাধে মেলামেশা করতে পারবে না। তাদের অবশ্যই কোনো বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এটাই আমাদের বৈদিক সংস্কৃতি। কিন্তু আমরা যদি পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অনুসরণ করি এবং এই কৃষ্ণভাবনামৃতের নাম দিয়ে অবৈধ সঙ্গ করি তাহলে তা হচ্ছে প্রতারণার স্বরূপ। শ্রীল প্রভুপাদ প্রায়শই বৈদিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা করেছেন। প্রভুপাদ তখনকার সময় উল্লেখ করে বলছিলেন- “বৈদিক সংস্কৃতি এতই কঠোর ছিল যে তুমি তার (নারীর) দিকে তাকাতেও পারবে না, তার সাথে কথা বলার বা কিছু প্রস্তাব করার বিষয়ে প্রশ্নই আসে না।” এতেই বোঝা যায় পুরুষরা তাদের সাথে কথা বলা তো দূরের কথা তাদের দিকে তাকাতে পারতোনা। তাহলে কৃষ্ণভাবনামৃতের এই প্রচার এত সহজ করে দেওয়ার পরেও কেনো এই অবৈধ সঙ্গে লিপ্ত হচ্ছি তাও নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য। শ্রীল প্রভুপাদ আরো উল্লেখ করেছেন যে, পতিব্রতা পত্নী হচ্ছেন তিনি, যাঁর বিবাহের পূর্বে কোন পুরুষের সঙ্গে কোন সম্পর্ক ছিল না। স্ত্রীদের যদি যৌবনে পুরুষদের সঙ্গে মেলামেশা করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়, তা হলে তার সতীত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়। সাধারণত তাদের সতীত্ব থাকে না। আগুনের সামনে মাখন আনলে তা গলবেই। স্ত্রী হচ্ছে আগুনের মতো এবং পুরুষ মাখনের মতো। ~শ্রীমদ্ভাগবত ৪.২৬.১৬ ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য। সাধারণত বিবাহিতা স্ত্রী ব্যতীত অন্য কারও সঙ্গে পুরুষের যৌনসঙ্গে লিপ্ত হওয়া উচিত নয় এবং শাস্ত্র বিরুদ্ধ। বৈদিক বিধান অনুসারে, অপরের স্ত্রীকে মাতৃবৎ দর্শন করা উচিত, এবং মাতা, ভগিনী ও কন্যার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কেউ যদি পরস্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়, তা হলে তা মায়ের সঙ্গে যৌনসঙ্গে লিপ্ত হওয়ার মতো বলে বিবেচনা করা হয়। সেই আচরণ অত্যন্ত পাপময়। স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রেও সেই নিয়ম বলবৎ রয়েছে, কোন স্ত্রী যদি তার পতি ব্যতীত অন্য কোন পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়, তা হলে সেই সম্পর্ক পিতা অথবা পুত্রের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার মতো। ~শ্রীমদ্ভাগবত ৫.২৬.২০ ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য। শ্রীল প্রভুপাদ স্পষ্ট বলে দিয়েছেন ইন্দ্রিয়তর্পণ করার জন্যে এসব অবাধে মেলামেশা করা চলবে না। যদি কোনো পুরুষ বা নারী এভাবে অবাধে মেলামেশা করে তবে আগুনের ন্যায় নারীদের সম্মুখে পুরুষের ন্যায় ঘি অবশ্যই গলবে। এবং একসময় তারা অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হবে। তখন একজন নারীর সতীত্ব বজায় রাখা কঠিন হবে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কি প্রভুপাদ নারীদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছেন? না একদমই না। প্রথমত এসব অবাধে মেলামেশা কখনোই স্বাধীনতা হতে পরে না। কিন্তু প্রভুপাদ প্রচারে কঠোর নিয়ম অনেকটাই শিথিল করেছেন। যেমন আমি প্রথম দিকেই বলেছি প্রভুপাদ যখন তিনি আমেরিকায় প্রচারে যান তখন তিনি মাতাজীদের চাকরি করায় বাধা দেননি। তিনি বলেছেন এর মধ্যেই তোমরা কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করবে, কিছু সীমানা বজায় রেখে। তিনি অনেকটাই শিথিল করেছিলেন। তখনকার সময়ে তিনি মাতাজীদের অনেক মন্দিরের অধ্যক্ষের পদ দিয়ে গিয়েছিলেন। Some words on this topic – একটি ঘটনায় দেখা যায় প্রচারকালে প্রভুপাদ বিভিন্ন ভক্তদের মাঝে কথোপকথনে তিনি একটি ভূ-গোলক রেখে সেই নকশা থেকে তাদের মাঝে প্রচারের জন্য দেশের বিভক্তি করেছিলেন, এবং বলছিলেন তুমি এই দেশে যাবে, তুমি ওই দেশে যাবে ওখানে গিয়ে প্রচার করবে। পেছনে কিছু মাতাজী শিষ্যরাও ছিলেন। তারা প্রভুপাদ কে জিজ্ঞাসা করছিলেন, প্রভুপাদ আমরা কি কিছু পাবো না। তখন প্রভুপাদ বলছেন- না না তোমরা এই দেশটা নাও প্রচারের জন্য। যেনো তিনি দেশ স্বরূপ প্রসাদ বিতরণ করছেন। এবং আমরা দেখতে পাই যে প্রভুপাদের শিষ্যগণ ঠিক কিভাবে বিভিন্ন দেশে নগরে গ্রামে প্রচার করেছিলেন। এখন পুরো বিশ্বে সেই প্রচার প্রসিদ্ধ। এমনকি প্রভুপাদ তাঁর শিষ্যাদের নিজের পূত্রীস্বরূপ দেখতেন, তাই তাদের মধ্যে কোনো বিভাজন করেননি। আমি কিছুকাল পূর্বেই প্রভুপাদের একজন শিষ্যা শ্রীমতী মালতি মাতাজীর প্রভুপাদ স্মরণামৃত তে শুনছিলাম, তিনি কিছু ঘটনা উল্লেখ করছিলেন:- তৎকালীন মায়াপুর তখন মায়াপুরে ভক্তদের থাকার জায়গা অনেকটাই সংকীর্ণ ছিল মন্দির ছিল না বললেই চলে। তখন মালতি মাতাজী ভাবছিলেন “এমন স্থানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।” তিনি ভাবছিলেন আমি প্রভুপাদের সাথে কথা বলে এখন থেকে অন্যস্থানে চলে যাবেন প্রচারে। একদিন প্রভুপাদ ও তাঁর গুরু ভ্রাতারা প্রসাদ আস্বাদন করছিলেন। মালতি মাতাজী তাদের সকলকে পরিবেশন করছিলেন।যখন মাতাজী প্রসাদ নিয়ে যাচ্ছেন তখন হটাৎ প্রভুপাদ তার দিকে আঙুল দিয়ে তাঁর গুরুভ্রাতাদের দেখাচ্ছিলেন যে “এই দেখো ও আমার মেয়ে, তোমরা জানো সে আমাকে কতটা ভালোবাসে সে আমার জন্য নিজের জীবন দিতে পারবে এবং আমি ওর জন্য নিজের গলা কাটাতেও প্রস্তুত।” তখন মালতি মাতাজী হটাৎ আলাদা স্থানে গিয়ে কান্না শুরু করলেন- “প্রভুপাদ আমার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আর আমি এটা কি চিন্তা করছিলাম।” তখন তিনি ঠিক করলেন যা কিছুই হোক তিনি প্রভুপাদকে ছেড়ে এই মায়াপুর কে ছেড়ে কোথাও যাবেন না। এবং প্রভুপাদ পুরুষের কথাও উল্লেখ্য করছেন যে, শ্রীমদ্ভাগবতে উল্লেখ রয়েছে যদি কোনো পুরুষ কোনো নারীর দিকে কুদৃষ্টিতে তাকায় তাহলে তা ধর্ষনের সমতুল্য। প্রভুপাদ আরো বলেছেন, যদি কোনো পুরুষ চারটি বিধিনিষেধ

সনাতন ধর্মে আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির শাস্তি কি?

Svadharmam Q&A

সনাতন ধর্মে আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির শাস্তি কি? মানব জীবন অত্যন্ত দূর্লভ, এই মানব জীবনের সৎ ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্যে পৌঁছাতে পারি। আবার অসৎ ব্যবহার করার ফলে আমাদের অধপতন হয়। স্কন্দপুরাণে আত্মহত্যাকারীর শাস্তি কি হয়, তা এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে– অন্ধং তমো বিশেযুস্তে যে চৈবাত্মহনোজনাঃ। ভুক্তা নিরয়সাাহস্রং তে চ স্যুর্গ্রামসূকরাঃ।। আত্মঘাতো ন কর্তব্যস্তস্মাৎ ক্বাপি বিপশ্চিতা। ইহাপি চ পরত্রাপি ন শুভান্যাত্মঘাতিনাম্।। [ স্কন্দপুরাণ, কাশীখণ্ড ১২।১২,১৩ ] বঙ্গানুবাদ: আত্মঘাতী লোকেরা ঘোর নরকে যায় এবং সহস্রাধিক নরক যন্ত্রণা ভোগ করে আবার গ্রামের শূকরের যোনিতে জন্মগ্রহণ করে। এজন্য বুদ্ধিমান মানুষদের ভুল করেও কখনো আত্মহত্যা করা উচিত নয়। আত্মঘাতীদের এই লোকে এবং পরলোকেও মঙ্গল হয় না। মহাভারতে বলা হয়েছে- অকার্য্যমিতি চৈবেমং নাত্মানং সংত্যজাম্যহম্‌। নাতঃ পাপীয়নীং যোনিঃ পতেয়মপরামিতি ॥ [ মহাভারত, শান্তিপর্ব ১৭৪।২১ ] বঙ্গানুবাদ: আত্মহত্যা কর্তব্য নহে, সুতরাং আত্মহত্যা করিয়া, ইহা অপেক্ষাও নিকৃষ্ট যোনিতে যাইয়া না পরি, ইহা ভাবিয়া আত্মহত্যা করিতেছি না। পরাশর স্মৃতিতে আত্মহত্যাকারীর শাস্তি কি হয়, তা এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে- অতিমানাাতিক্রোধাৎ স্নেহাবা যদি বা ভয়াৎ। উদ্বধ্নীয়াৎ স্ত্রী পুমান্ বা গতুরেষা বিধীয়তে।। পূযশোণিতসম্পূর্ণে অন্ধে তমসি মজ্জতি। ষষ্টিং বর্ষসহস্রাণি নরকং প্রতুপদ্যতে।। [ পরাশর স্মৃতি, ৪।১,২ ] বঙ্গানুবাদ: যদি কোনো স্ত্রী কিম্বা পুরুষ অতিশয় মান, ক্রোধ, স্নেহ ও ভয় নিবন্ধন উদ্ধবন্ধনে তথা ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রাণ পরিত্যাগ করে, তাহা হইলে তাহার কিরূপ গতি হয় তাহা বলিতেছি। সেই আত্মহত্যাকারী ব্যক্তি নরকে গমন করে ও ষাট হাজার বছর পর্যন্ত পূয শোণিতপূর্ণ অন্ধতমস নামক নরকে নিমজ্জিত থাকে। অর্থাৎ যদি কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যা করে তাহলে তাকে ষাট হাজার বছর পূয-শোণিতপূর্ণ অন্ধতমস নরকে নিমজ্জিত থাকতে হবে। ।।হরে কৃষ্ণ।। নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °  

কেন ইসকনের ভক্তেরা ও অন্যান্য বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ভক্তরা ছেলেদের প্রভু এবং মেয়েদের মাতাজী বলে সম্বোধন করেন?

Svadharmam Q&A

প্রভু শব্দটি শুধুমাত্র ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় এমনটি নয়। সংস্কৃত প্রভু শব্দের আরো বহু অর্থ বিদ্যমান। আমাদের সনাতনী শাস্ত্রে একই সংস্কৃত শব্দ স্থান, কাল এবং পাত্র অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে। আসুন জেনে নেই, অন্যান্য বৈষ্ণব সম্প্রদায় এবং ইসকনের ভক্তরা কোন অর্থে অপরকে প্রভু বলে সম্বোধন করে। প্রথমে বাংলা একাডেমী প্রনীত বাংলা শব্দের অভিধান থেকে জেনে নেই প্রভু শব্দের অর্থ কি? প্রভু = শিক্ষক (মাষ্টার),মনিব,স্বামী,কর্তা,রাজা,ঈশ্বর, ভগবান,মহামানব,অতিসম্মানিয় ব্যাক্তি,নেতা, পরিচালক ইত্যাদি। ঠিক তেমনই সংস্কৃত ভাষায় প্রভু শব্দটি উপরোক্ত সকল সমার্থক অর্থে ব্যবহৃত হয়। প্রভু শব্দটি উচ্চারন করে কাউকে অভিবাদন করা সনাতনী শাস্ত্র অনুমোদিত। শ্রীমদ্ভাগবত পুরানের ১।৫।৪ নং শ্লোকে নারদ মুনি তার শিষ্য শ্রীল ব্যাসদেবকে প্রভু বলে সম্বোধন করেছেন:- জিজ্ঞাসিতমধীতং চ ব্রহ্মযত্তৎ সনাতনম। তথাপি শোচস্যাত্মানমকৃতার্থ ইব প্রভো।। অনুবাদ: তুমি ব্রহ্মতত্ত্ব পূর্ণরূপে উপলব্ধি করেছ এবং তৎসংলগ্ন জ্ঞান-হৃদয়ঙ্গম করেছ। তথাপি হে প্রভু, তুমি কেন নিজেকে অকৃতার্থ বলে মনে করে বিষাদগ্রস্ত হয়েছ? শ্রীমদ্ভাগবত পুরানের ১।৯।১৭ নং শ্লোকে শ্রীভীষ্মদেব তার ভাইয়ের ছেলে যুধিষ্ঠির মহারাজকে প্রভু বলে সম্বোধন করলেন:- ” তস্যানুবিহিতোহনাথা নাথ পাহি প্রজাঃ প্রভো।। “ অনুবাদ: হে প্রভু, এখন যারা অনাথ হয়েছে,সেই সব প্রজাদের যত্ন এবার তোমাকে নিতে হবে। শ্রীমদ্ভাগবত পুরানের ১।১৩।১৯ নং শ্লোকে শ্রীবিদুর তার ভাই ধৃতরাষ্ট্রকে প্রভু বলে সম্বোধন করলেন:- ” প্রতিক্রিয়া ন যস্যেহ কুতশ্চিৎ কহির্চিৎ প্রভো। “ অনুবাদ: হে প্রভু, এ জড় জগতে কোন মানুষের দ্বারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রতিকার হতেই পারে না। এছাড়াও শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরান শাস্ত্রের ১।১৯।৩৮ নং শ্লোকে শ্রীপরীক্ষিত মহারাজ তার গুরুদেব শুকদেবকে, ৩।৪।২১ নং শ্লোকে শ্রীউদ্ধব বিদুরকে, ৩।১০।১০ নং শ্লোকে শ্রীবিদুর মৈত্রেয় মুনিকে প্রভু বলে সম্বোধন করেছিলেন। সুতারাং ইসকন ভক্তরা অন্য ব্যক্তিকে বা মানুষকে প্রভু বলে সম্বোধন করে যার অর্থ হল- আপনি মহান অথবা আপনি অতীব সন্মানিত। বৈষ্ণবগণকে প্রভু বলা স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যমহাপ্রভুর শিক্ষা যা চৈতন্যভাগবতে ৮।১৮৩ এভাবে উল্লেখ রয়েছে – অলৌকিক হঞা প্রভু বৈষ্ণব-আবেশে। যে বলিতে যোগ্য নহে, তাও প্রভু ভাষে ॥ অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু বৈষ্ণব বেশ ধারণ করে, যিনি যোগ্য নয় তাকেও প্রভু বলে সম্বোধন করতেন। পরিশেষে ইসকন এবং অন্যান্য বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ভক্তরা মানুষকে সৃষ্টিকর্তা ভেবে প্রভু বলে সম্বোধন করেন না, বরং ভক্তরা অন্য ব্যাক্তি বা মানুষকে প্রভু বলে সম্বোধন করেন, যার অর্থ হল ” আপনি সর্বদিক থেকে আমার থেকে মহান”, এরুপ দৃষ্টিকোণ থেকে। ইসকনের ভক্তেরা মেয়েদের কেনো মাতাজী সম্বোধন করেন? চাণক্য নীতি সূত্রে আচার্য্য চাণক্য বলেছেন:- মাতৃবৎ পরদারেষু পরদ্রব্যেষু লোষ্ট্রবৎ। আত্মবৎ সর্ব্বভূতেষু যঃ পশ্যতি স পণ্ডিতঃ।। অনুবাদ: যে ব্যক্তি পরস্ত্রীকে মাতৃজ্ঞানে দেখেন, পরের দ্রব্যকে মাটির ঢেলার মতো জ্ঞান করেন (অর্থ নির্লোভ থাকেন) এবং সকল জীবে আত্মজ্ঞান পোষণ করেন- তিনিই যথার্থ জ্ঞানী। অর্থাৎ আচার্য্য চাণক্য বলেছেন, প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত পরস্ত্রী তথা নিজের স্ত্রী ব্যতিত সকল নারীকে মাতৃজ্ঞান করতে। তাই ইসকনের ভক্তেরা প্রত্যেক মেয়েকে মাতাজী সম্বোধন করেন। ©শ্রীপাদ সদগুন মাধব দাস প্রভু ©স্বধর্মম্ টীম [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত। ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

অবৈধ যৌন সঙ্গের শাস্তি সম্পর্কে, সনাতন ধর্মে কি বলা হয়েছে?

20240826 174927 Svadharmam

সাধারণত বিবাহিত স্ত্রী ব্যতীত অন্য কারও সঙ্গে পুরুষের যৌনসঙ্গে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। স্ত্রীরও পরপুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। সনাতন ধর্মে অবৈধ সম্পর্কের কঠোর শাস্তির উল্লেখ রয়েছে। আসুন এ সম্পর্কে বিভিন্ন শাস্ত্র হতে সনাতন ধর্মে শাস্তির বিধান গুলো দেখি। অবৈধ-সঙ্গের শাস্তি সম্পর্কে ( মহাভারত, অনুশাসন পর্ব ১০৪।২১,২২)-এ বলা হয়েছে- ন হীদৃশমনাযুষ্যং লোকে কিংচন বিদ্যতে। যাদৃশং পুরুষস্যেহ পরদারোপসেবনম্।। যাবন্তো রোমকুপাঃ স্যুঃ স্ত্রীণাং গত্রেষু নির্মিতাঃ। তাবদ্ বর্ষসহস্ত্রাণি নরকং পর্যুপাসতে।। বঙ্গানুবাদ: পরস্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের কারণে মানুষের আয়ু খুব শিগ্রই শেষ হয়ে যায়। এই পৃথিবীতে পরস্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের ফলে যে আয়ু নষ্ট হয় এর সমান পুরুষের আয়ু নষ্ট করার দ্বিতীয় আর কোনো কার্য নেই। ( মৃত্যুর পরে ) সেই ব্যভিচারি স্ত্রীর শরীরে যত রোমকুপ থাকে, ঠিক তত হাজার বছর সেই ব্যভিচারি পুরুষকে নরকে থাকতে হয়। অবৈধ সম্পর্কের শাস্তি সম্পর্কে (গরুড়পুরাণ, উত্তরখণ্ড ৫।৪)-এ বলা হয়েছে- স্ত্রীঘাতো গর্ভপাতী চ পুলিন্দো রোগবান্ ভবেন্। অগম্যাগমনাত্ষণ্ঢ়ো দুশ্চর্মা গুরুতল্পগঃ।। বঙ্গানুবাদ: যে ব্যক্তি স্ত্রীকে হত্যা এবং গর্ভপাত বা গর্ভের বাচ্চা-নষ্ট করে ঐ পাপী পরবর্তী জন্মে নিম্নযোনীতে জন্মগ্রহণ করে। অগম্যাগমন করলে ( অর্থাৎ যে স্ত্রী বা নারীর সাথে সম্ভগ নিষিদ্ধ, তার সাথে যদি কেউ অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয় ) সেই পাপী পরবর্তী জন্মে নপুংসক হয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে এবং যে পাপী গুরুপর্ত্নী গমন করে সে পরবর্তী জন্মে কুষ্ঠ বা চর্ম রোগে পীড়িত হতে থাকে। অবৈধ সম্পর্কের শাস্তি সম্পর্কে ( শিবপুরাণ, উমাসংহিতা ১৬।১২ )-এ বলা হয়েছে- অগম্যাগামী যশ্চান্তে যাতি সপ্তবলং দ্বীজ। বঙ্গানুবাদ: যে অধম পাপী অগম্যাগামী স্ত্রীর ( অর্থাৎ যে স্ত্রী বা নারীর সাথে সম্ভগ নিষিদ্ধ, তার সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয় ) সেই পাপী, মৃত্যুর পরে সপ্তবল নামক নরকে নিমজ্জিত হবে। অবৈধ-সঙ্গের শাস্তি সম্পর্কে ( শ্রীমদ্ভাগবত ৫।২৬।২০ )-এ বলা হয়েছে- যত্ত্বিহ বা অগম্যাং স্ত্রিয়মগম্যং বা পুরুষং যোষিদভিগচ্ছতি তাবমুত্র কশয়া তাড়য়ন্তস্তিন্ময়া সূর্য্যা লোহময্যা পুরুষমালিঙ্গয়ন্তি স্ত্রিয়ং চ পুরুষরূপয়া সূর্য্যা ॥ বঙ্গানুবাদ: যে ব্যক্তি অগম্যা স্ত্রীতে এবং যে স্ত্রী অগম্য পুরুষে অভিগমন ( তথা অবৈধ সঙ্গ ) করে, পরলোকে যমদূতেরা তাদের তপ্তসূর্মি নামক নরকে নিয়ে গিয়ে চাবুক দিয়ে প্রহার করে এবং তারপর পুরুষকে তপ্ত লৌহময় স্ত্রীমূর্তি ও স্ত্রীকে সেই প্রকার পুরুষ-মূর্তির দ্বারা আলিঙ্গন করায়। এটিই অবৈধ যৌন সঙ্গের দণ্ড। শ্রীল এ,সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদকৃত তাৎপর্য: সাধারণত বিবাহিতা স্ত্রী ব্যতীত অন্য কারও সঙ্গে পুরুষের যৌনসঙ্গে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। বৈদিক বিধান অনুসারে, অপরের স্ত্রীকে মাতৃবৎ দর্শন করা উচিত, এবং মাতা, ভগিনী ও কন্যার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কেউ যদি পরস্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়, তা হলে তা মায়ের সঙ্গে যৌনসঙ্গে লিপ্ত হওয়ার মতো বলে বিবেচনা করা হয়। সেই আচরণ অত্যন্ত পাপময়। স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রেও সেই নিয়ম বলবৎ রয়েছে, কোন স্ত্রী যদি তার পতি ব্যতীত অন্য কোন পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়, তা হলে সেই সম্পর্ক পিতা অথবা পুত্রের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার মতো। অবৈধ যৌন সম্পর্ক সর্বদাই নিষিদ্ধ হয়েছে, এবং যে পুরুষ অথবা স্ত্রী সেই সম্পর্কে লিপ্ত হয়, তাকে এই শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে দণ্ডভোগ করতে হবে। অবৈধ সঙ্গের শাস্তি সম্পর্কে ( বিষ্ণুপুরাণ ৩।১১।১২৫ )-এ বলা হয়েছে- পরদারান্ন গচ্ছেচ্চ মনসাপি কথঞ্চন । কিমু বাচাঙ্গিবন্ধোঽপি নাস্তি তেষু ব্যবায়িনাম্।। বঙ্গানুবাদ: পরস্ত্রীর সঙ্গে তো বাক্যেই নয়, মনে মনেও (অবৈধ যৌন) সঙ্গের অভিলাষ করবে না, কারণ তাতে মৈথুনকারীর অস্থিবন্ধনও হয় না (অর্থাৎ তাকে পরের জন্মে অস্থি-শূন্য কীট জন্ম নিতে হয়)।   এছাড়াও আরো বিভিন্ন শাস্ত্রে অবৈধ সঙ্গের কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। তাই আমাদের কখনো অবৈধ-সঙ্গ করা তো দূরের কথা, চিন্তাও করা উচিত নয়। ।।হরে কৃষ্ণ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র সমন্ধে সনাতনী কোন কোন শাস্ত্রে বর্ণিত আছে???

20240715 230037 Svadharmam

শ্রুতি, স্মৃতি, ইতিহাস, পঞ্চরাত্র ও পুরাণাদি শাস্ত্র নিয়েই সনাতন ধর্ম। সনাতন ধর্মের আদি ধর্মগ্রন্থ বেদ। বেদের চারটি বিভাগ – সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ। বেদের এ চারটি বিভাগকে একত্রে বেদ বা শ্রুতি বলা হয়। সংহিতা চার প্রকার -ঋগ্বেদ সংহিতা, সামবেদ সংহিতা, যজুর্বেদ সংহিতা এবং অথর্ববেদ সংহিতা। সংহিতার পর বেদের আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো ব্রাহ্মণ এবং আরণ্যক। বেদের সর্বশেষ বিভাগ হলো উপনিষদ। সনাতন ধর্মের সমগ্র শাস্ত্রেই হরিনাম বা কৃষ্ণনাম বা হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। ঋগ্বেদ সংহিতায় ১ মন্ডল, ১৫৬ সূক্তের, ৩ নং মন্ত্রে উল্লেখ রয়েছে,“আস্য জানন্তো নাম চিদ্বিবক্তন মহস্তে বিষ্ণো সুমতিং ভজামহে।। অর্থাৎ বিষ্ণুর চিন্ময় নামসমূহ জেনে কীর্তন করণীয়। হে মহান বিষ্ণু, সুমেধাসম্পন্ন লোকে এভাবে তোমাকে ভজনা করে।” শাস্ত্রে কলিকালে যত হরি নাম কীর্তনের কথা বলছে সবগুলোই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রকে নির্দেশ করে। প্রথমত ‘হরে’ শব্দের আধিক্যজনিত কারণে এটি হরিনাম মন্ত্র। শাস্ত্রে যেখানে যেখানে ‘হরের্নাম হরের্নাম হরের্নাম’ কিংবা ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ’ কিংবা ‘রাম রাম রাম’ নাম জপ করতে বলছে সবগুলোই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রকে নির্দেশ করে ‘সর্ববেদান্ত প্রত্যয় ন্যায়’ বাক্যের আলোকে। সর্ববেদান্ত প্রত্যয় ন্যায় দ্বারা বুঝায় দুই স্থানে যদি ভিন্ন নামে একই পরিণাম বুঝায়, তবে বুঝতে হবে জিনিস দুইটা একই। যেমন শাস্ত্রে বলছে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করলে মুক্তি মিলবে। আবার বলছে হরের্নাম হরের্নাম হরের্নাম করলে মুক্তি মিলবে। তাই দুইটা দ্বারা একই মন্ত্রকে নির্দেশ করছে, যেটা শ্রুতিতে উল্লেখ আছে অর্থাৎ ১৬ নাম ৩২ অক্ষরী মন্ত্রকে। মহামন্ত্রের ৭,৮,৯ নং নাম ‘হরে হরে হরে’, ৪,৫,৬ নং নাম কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ এবং ১২,১৩,১৪ নং নাম রাম রাম রাম অতএব ‘হরের্নাম হরের্নাম হরের্নাম’, ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ’, ‘রাম রাম রাম’ এগুলো দ্বারা হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রকেই নির্দেশ করে।একইভাবে শাস্ত্রে যেখানে যেখানে ‘হরি হরি’, ‘রাম রাম’, ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ’ অর্থাৎ যুগল নামের মাহাত্ম্য বলছে ওগুলোতেও মহামন্ত্রকেই নির্দেশ করে। আসুন আমরা দেখি সমগ্র সনাতন শাস্ত্রে কোথায় কোথায় হরিনাম বা হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। শ্রুতি শাস্ত্র প্রমাণ: শুক্ল-যজুর্বেদীয় মুক্তিকোপনিষদে ১।২৭-৩৬ নং মন্ত্রে ঈশ,কেন, কঠ,কলির্সন্তরণ, মুক্তিকোপনিষদ ইত্যাদি ১০৮ টি উপনিষদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্তিকোপনিষদ ১।৫৩ নং মন্ত্র অনুসারে কলির্সন্তরণ উপনিষদ হলো কৃষ্ণ-যজুর্বেদের অন্তর্গত। কৃষ্ণ-যজুর্বেদীয় কলির্সন্তরণ উপনিষদ তথা শ্রুতিতে সরাসরি কলিযুগের একমাত্র মুক্তির পথ হিসেবে হরেকৃষ্ণ মন্ত্রটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ( কৃষ্ণ-যজুর্বেদীয় কলিসন্তরণ উপনিষদ মন্ত্র ২ )- নারদঃ পুনঃ পপ্রচ্ছ তন্নাম কিমিতি। সহোবাচ হিরণ্যগর্ভঃ। হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। ইতি ষোড়শকং নাম্নাং কলিকল্মষনাশনম্। নাতঃ পরতরোপায়ঃ সর্ববেদেষু দৃশ্যতে ষোড়শকলাবৃতস্য জীবস্যাবরণবিনাশনম। ততঃ প্রকাশতে পরং ব্রহ্ম মেঘাপায়ে রবিরশ্মিমণ্ডলীবেতি।।২।। বঙ্গানুবাদ: তখন নারদজী পুনঃ প্রশ্ন করলেন সেই নাম কি? তখন হিরণ্যগর্ভ ব্রহ্মাজী বললেন, হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। এই প্রকার ষোল নাম বত্রিশ অক্ষর মন্ত্র কলিযুগে সমস্ত দোষ নাশ করে। চারিবেদে এরচেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো উপায় নেই। এই ষোলো অক্ষর মন্ত্র উচ্চারনে জীবের ষোড়শকলা যুক্ত আবরণ বিনষ্ঠ হয়। বৃষ্টির পর যেমন মেঘ কেটে গিয়ে সূর্যরশ্মি প্রকাশিত হয় তেমন জীবও পরমব্রহ্মকে জানতে পারে।   ইতিহাস শাস্ত্র প্রমাণ: ছান্দোগ্য উপনিষদ ৭।১।২ মন্ত্রে, ইতিহাস শাস্ত্রকে পঞ্চম বেদ বলা হয়েছে, “ইতিহাসপুরাণং পঞ্চমং বেদানাং”। রামায়ণ এবং মহাভারত এ দুটি শাস্ত্রকে সনাতন ধর্মে ইতিহাস শাস্ত্র বলা হয়। মহাভারতে যুধিষ্ঠির মহারাজকে কৃষ্ণনাম জপ করার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ প্রদান করেন। ( মহাভারত, শান্তিপর্ব ২০৪।৭৭ )- ভীষ্ম উবাচ- এতত্তে কথিতং রাজন্ ! বিষ্ণুতত্ত্বমনুত্তমম্ । ভজস্বৈনং বিশালাক্ষং জপন্‌ কৃষ্ণেতি সত্তম !।। বঙ্গানুবাদ: ভীষ্ম বলিলেন—’সাধুশ্রেষ্ঠ রাজা ! এই আমি তোমার নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ বিষ্ণুতত্ত্ব বলিলাম। তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ নাম- কৃষ্ণ নাম জপ করিতে থাকিয়া এই বিশালনয়ন কৃষ্ণের সেবা কর ॥   ( মহাভারত, দ্রোণপর্ব ৮৩।১৮ )- নমস্তে দেবদেবেশ সনাতন বিশাতন। বিষ্ণো জিষ্ণো হরে কৃষ্ণ বৈকুন্ঠ পুরুষোত্তম।। ১৮ বঙ্গানুবাদ: হে বিষ্ণু! হে জিষ্ণু! হে হরে কৃষ্ণ! হে বৈকুন্ঠ! হে পুরুষোত্তম! তুমি দেবতাদের দেবতা শিবেরও ঈশ্বর, তুমিই সনাতন, তুমিই বিশাতন, তোমাকে নমস্কার। ( মহাভারত,হরিবংশপুরাণম্, পর্ব ৩ ( ভবিষ্যপর্ব ) ১০১।১৫ )- যদি শক্তো হরে কৃষ্ণ দারযেদং মহাস্পদম্ । ইত্যুক্ত্বা তচ্ছতগুণং ভ্রামযিত্বা মহাবলঃ।। বঙ্গানুবাদ: আপনি যদি পারেন, হে ভগবান হরে কৃষ্ণ, এই মহতী অস্ত্র ছিন্ন করুন। এ বলে মহাবলশালী পন্ড্রক তা শতবার ঘুরিয়ে নিক্ষেপ করলেন। ( মহাভারত,হরিবংশপুরাণম্, পর্ব ৩ ( ভবিষ্যপর্ব ) ৮২।৪৩ )- নমো নমো হরে কৃষ্ণ যাদবেশ্বর কেশব । প্রত্যক্ষং চ হরেস্তত্র ননর্ত বিবিধং নৃপ ।। বঙ্গানুবাদ: “হে হরে কৃষ্ণ! হে যাদবেশ্বর! হে কেশব! আমি আপনাকে বারংবার প্রণাম জানাই।” হে রাজন! এ বলে বলে তিনি ভগবান হরির সম্মুখে বিবিধ নৃত্য করতে থাকলেন। পুরাণ শাস্ত্র প্রমাণ: সনাতনী শাস্ত্রের মধ্যে পুরাণ শাস্ত্রকে খুব গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র বলা হয়েছে। ছান্দোগ্য উপনিষদ ৭।১।২ নং মন্ত্রে পুরাণ শাস্ত্রকে পঞ্চম বেদ বলা হয়েছে, “ইতিহাসপুরাণং পঞ্চমং বেদানাং”।অষ্টাদশ পুরাণ এবং উপপুরাণ শাস্ত্রের প্রায় পুরাণে কলিযুগের যুগধর্ম ও মুক্তিপথ হিসেবে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র বা হরিনাম বা কৃষ্ণনাম জপ ও কীর্তনের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। ( ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ, উত্তরখণ্ড, রাধাহৃদয়মাহাত্ম্য, ৬।৫৫,৫৬ )- হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। ইত্যষ্টশতকং নাম্নাং ত্রিকাল কল্মষাপহং। নাতঃ পরতরোপায়ঃ সর্ব্ববেদেষু বিদ্যতে।। বঙ্গানুবাদ: হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। -এই মহামন্ত্র হরিনাম একশত অষ্টবার ত্রিকাল জপে সর্ব্বপ্রকার পাপের অপহারক হন। অর্থাৎ প্রাতঃ মধ্যাহ্ন ও সায়াহ্ন একশত অষ্ট বার প্রত্যেক সময়ে জপ করাতল সকল পাতক ধংস হয়। ইহার পর ভবভীরু জনের ভব নিস্তারণ উপায় আর নাই, ইহা সর্ব্ববেদে কথিত আছে।   ( অগ্নিপুরাণ ৪০৯।৬ )- হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। রটন্তি হলয়া বাপি তে কৃতার্থা ন সংশযঃ।। বঙ্গানুবাদ: “হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে”– এই মন্ত্রটি কেউ যদি অবহেলা করেও জপ করে, সে কৃতার্থ হবে ( জীবনের পরম উদ্দেশ্য সাধন করবে) এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।     ( পদ্মপুরাণ, স্বর্গখন্ড ২৪।৬ )- হরিরেব সমারাধ্যঃ সর্ব্বদেবেশ্বরেশ্বরঃ । হরিনাম মহামন্ত্রৈনশ্যেৎ পাপপিশাচকঃ ॥ বঙ্গানুবাদ: সর্ব্বদেবেশ্বরেশ্বর হরিই সমারাধ্য। হরিনাম মহামন্ত্রে পাপ-পিশাচ বিনষ্ট হইয়া যায়।     ( পদ্মপুরাণ, পাতালখন্ড-৪৯।৩ )- হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম । হরে রাম হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণেতি মঙ্গলম । এবং বদস্তি যে নিত্যং ন হি তানু বাধতে কলিঃ।। বঙ্গানুবাদ: সদাশিব পার্বতীকে বললেন, কলিতে কেবলমাত্র হরিনামই বিধেয়, হরিনামই বিধেয় এবং হরিনামই বিধেয়। যে ব্যক্তি নিত্য মঙ্গলময় “হরে রাম হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ” ইত্যাদি উচ্চারণ করে, কলি তাকে ক্লেশ দিতে পারে না।   ( পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড ২০৯।৩৯ )- রাম রাম হরে কৃষ্ণ বিষ্ণো নামাবলীমিতি । পাঠয়োত্তিষ্ঠ নিপুণৌ দ্বাবেতৌ সারিকাশুকৌ।। বঙ্গানুবাদ: এই শুক সারিকা উভয়েই পাঠনিপুণ ; এদেরকে “রাম রাম হরে কৃষ্ণ” সম্বলিত ভগবান বিষ্ণুর নামাবলী পাঠ করাও।   ( পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড-২০৪।১০৮ )- উপভুজ্য স ধর্ম্মাত্মা স্বৈরং বিগতবিক্রিয়ঃ । হরে রাম হরে কৃষ্ণ জপন্নিতি জগামহি।। বঙ্গানুবাদ: বিকারশূণ্য ধৰ্ম্মাত্মা সাধু ভোজন করিয়া “হরে রাম হরে

শাস্ত্রে কোথায় মহাদেবকে বৈষ্ণব শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে?

20240927 210153 Svadharmam

আজকাল অনেকে বলে থাকেন প্রভু মহাদেব নাকি বৈষ্ণব শ্রেষ্ঠ নন। শাস্ত্রে নাকি কোথাও বলা নেই যে প্রভু শিব বৈষ্ণব শ্রেষ্ঠ। বৈষ্ণবেরা নাকি প্রভু শিবকে “পরম বৈষ্ণব” বলে অপপ্রচার করে থাকেন। অথচ সমগ্র শাস্ত্রে প্রভু মহাদেবকে পরম বৈষ্ণব বলা হয়েছে। আসুন আমরা বিভিন্ন শাস্ত্র হতে শাস্ত্র প্রমাণ সহ উক্ত কথা কতটা সত্য তা যাচাই করি। এ সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে- নিম্নগানাং যথা গঙ্গা দেবানামচ্যুতো যথা । বৈষ্ণবানাং যথা শম্ভুঃ পুরাণানামিদং তথা ।। [ শ্রীমদ্ভাগবত ১২।১৩।১৬ ] বঙ্গানুবাদ: ঠিক যেমন সমস্ত নদীর মধ্যে গঙ্গা শ্রেষ্ঠ, সমস্ত আরাধ্য বিগ্রহদের মধ্যে অচ্যুতই পরম, বৈষ্ণবগণের মধ্যে শম্ভু(শিব) যেরুপ শ্রেষ্ঠ, তেমনি শ্রীমদ্ভাগবত হচ্ছে পুরাণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। . [ অনেকে অপপ্রচার করে থাকেন, শ্রীমদ্ভাগবতে যে শম্ভুর কথা বলা হয়েছে, তিনি প্রভু মহাদেব নন। তারা আরো বলেন মহাদেব নাকি পরম-বৈষ্ণব নন এবং বৈষ্ণবেরাই নাকি অশাস্ত্রীয় ভাবে অপপ্রচার করে যে, মহাদেব পরম-বৈষ্ণব। অথচ স্কন্দ মহাপুরাণে বলা বলা হয়েছে, “বৈষ্ণবানাং যথা রুদ্র, অর্থাৎ বৈষ্ণব গনের মধ্যে রুদ্র (শিব) শ্রেষ্ঠ। শ্রীব্রহ্মবৈবর্ত মহাপুরাণে বলা হয়েছে, “বৈষ্ণবানাং যথা শিব, অর্থাৎ বৈষ্ণব গনের মধ্যে শিব শ্রেষ্ঠ”। এছাড়াও আরো বহু শাস্ত্রে প্রভু শিবকে পরম-বৈষ্ণব বা বৈষ্ণব শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে, তা আমরা নিচে বিস্তারিত দেখবো। ] প্রভু শিবেরই এক নাম শম্ভু! এ সম্পর্কে স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে – নমস্তে পার্ব্বতী-নাথ নীলকণ্ঠ মহেশ্বর। শিব রুদ্র মহাদেব নমস্তে শম্ভবে বিভো।। [ স্কন্দ পুরাণ, ব্রহ্মখণ্ড, সেতুমাহাত্ম্যম্ ১৩।২৫ ] বঙ্গানুবাদ: হে পার্ব্বতীনাথ, হে নীলকন্ঠ, হে শিব, হে রুদ্র, হে মহাদেব, হে শম্ভু আপনাকে নমস্কার। অর্থাৎ, পার্ব্বতীনাথ, নীলকন্ঠ, শিব, রুদ্র, মহাদেব, এবং শম্ভু প্রভু-শিবেরই নাম এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই যাঁরা বলে শম্ভু প্রভু শিবের নাম নন, তারাই অপপ্রচার করে থাকে, তাদের এসব অপযুক্তির শাস্ত্রীয় ভিত্তি নেই।  . প্রভু শিব যে বৈষ্ণব-শ্রেষ্ঠ, বৈষ্ণব-শিরোমণি সে সম্পর্কে স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে – আয়ুধানাং যথা বজ্রং লোহানাং কাঞ্চনং যথা। বৈষ্ণবানাং যথা রুদ্রো রত্নানাং কৌস্তুভো যথা।। [ স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখণ্ড, বেঙ্কটাচলমাহাত্ম্যম ১৭।১৫ ] বঙ্গানুবাদ: আয়ুধগণের মধ্যে বজ্র শ্রেষ্ঠ, ধাতুসমূহের মধ্যে স্বর্ণ শ্রেষ্ঠ, বৈষ্ণবগণের মধ্যে রুদ্র (শিব) শ্রেষ্ঠ, এবং রত্ননিচয় মধ্যে কৌস্তভ শ্রেষ্ঠ। . এ সম্পর্কে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে উল্লেখ রয়েছে – নাস্তি গঙ্গাসমং তীর্থং ন চ কৃষ্ণাৎ পরঃ স্মৃতঃ। ন শঙ্করাদ্বৈষ্ণবশ্চ ন সহিষ্ণুর্ধরাপরা ॥ [ ব্ৰহ্মবৈবৰ্ত পুরাণ, ব্ৰহ্মখণ্ড, ১১।১৬ ] বঙ্গানুবাদ: যেমন গঙ্গার সমান তীর্থ নাই, যেমন বিষ্ণু হইতে উৎকৃষ্ট দেবতা নাই, শঙ্কর (শিব) অপেক্ষা বৈষ্ণব যেমন আর কেহই নাই, ধরণীর তুল্য সহিঞ্চুতাগুণ যেমন কাহারও নাই। . এ সম্পর্কে পদ্মপুরাণে উল্লেখ রয়েছে  – বৈষ্ণবানাং পরঃ শ্রেষ্ঠঃ প্রাহ বাড়বসত্তমম্। কম্মাদিহ সমায়াতো বদ দেবর্ষিসত্তম।। [ পদ্মপুরাণ, উত্তরখণ্ড ৭১।৫১ ] বঙ্গানুবাদ: পরে সেই বৈষ্ণবশ্রেষ্ঠ দেবদেব (শিব) নারদকে কহিলেন,- হে দেবর্ষিবর! কিজন্য হেথায় (এখানে) আগমন করিয়াছেন! . এ সম্পর্কে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আরো উল্লেখ রয়েছে- আশ্রমাণাং যথা বিপ্রো বৈষ্ণবানাং যথা শিবঃ ॥ [ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, কৃষ্ণজন্মখণ্ড ২৬।৫ ] বঙ্গানুবাদ: আশ্রমবাসীদিগের মধ্যে যেরূপ বিপ্রো শ্রেষ্ঠ তেমনই বৈষ্ণবদিগের মধ্যে শিব শ্রেষ্ঠ। . এসম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতে আরো উল্লেখ রয়েছে – যং মামপৃচ্ছস্ত্বমুপেত্য যোগাৎ সমাসহস্রান্ত উপারতং বৈ । স এষ সাক্ষাৎ পুরুষ পুরাণো ন যত্র কালে বিশতে ন বেদ ।। [ শ্রীমদ্ভাগবত ৮।১২।৪৪ ] বঙ্গানুবাদ: মহাদেব বললেন, হে দেবী এক হাজার বছর যোগ অনুষ্ঠান করার পর আমি যখন নিবৃত্ত হয়েছিলাম, তখন তুমি আমায় জিজ্ঞাসা করেছিলে, আমি কার ধ্যান করছিলাম। ইনিই সেই পুরাণ পুরুষ (শ্রীরামচন্দ্র), যার মধ্যে কাল প্রবেশ করতে পারে না এবং যাকেঁ বেদ জানাতে পারে না। . এ সম্পর্কে পদ্মপুরাণে আরো উল্লেখ রয়েছে  – সদাশিবো যমারাধ্য পরমং স্থানমাগতঃ। স রামো মন্মনস্ত্যক্ত্বা ন ক্বাপি পরিগচ্ছতি।। [ পদ্মপুরাণ, পাতালখণ্ড ২৪।১৬১ ] বঙ্গানুবাদ: সদাশিব যাঁহাকে আরাধনা করিয়া পরম স্থান প্রাপ্ত হইয়াছেন, সেই রামচন্দ্র, মদীয় (আমার) হৃদয়ক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়া কদাচ কুত্রাপি গমন করেন না। অর্থাৎ প্রভু সদাশিব প্রভু শ্রীরামচন্দ্রের আরাধনা করে থাকেন। . এ সম্পর্কে পদ্মপুরাণে আরো উল্লেখ রয়েছে – ময়া শ্রুতং পুরা বেদ-ঋষিভির্ব্বহুধোদিতম্। রঘুনাথপদস্থায়ী নিত্যং রুদ্রঃ পিনাকভৃৎ।। [ পদ্মপুরাণ, পাতালখণ্ড ২৬।৩ ] বঙ্গানুবাদ: আমি পূর্ব্বে বহুবার দেবর্ষিগণকথিত এই কথা শুনিয়াছিলাম যে, পিনাকপাণি রুদ্রদেব (শিব) প্রতিনিয়তই শ্রীরামের পাদযুগল স্মরণ করিয়া থাকেন। অর্থাৎ প্রভু শিব শ্রীরামচন্দ্রের আরাধনা করে থাকেন। . এ সম্পর্কে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে আরো উল্লেখ রয়েছে – মোক্ষদানাং যথা কাশী বৈষ্ণবানাং যথা শিবঃ। ন পার্ব্বতীপরা সাধ্বী ন গণেশাৎ পরো বলী।। [ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, গণেশখণ্ড ৪৪।৭৫ ] বঙ্গানুবাদ: যেমন কাশী মোক্ষদাতৃগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, তেমনই শিব বৈষ্ণবগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। যেমন পার্ব্বতী অপেক্ষা সতী আর কেহ নেই, গণেশ অপেক্ষা বলবান আর কেহ নেই, তেমনই বিদ্যার সদৃশ বন্ধু আর কেহ নাই। . অর্থাৎ প্রভু শিব বৈষ্ণবগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। শাস্ত্রে এ সম্পর্কে বহু আরো উল্লেখ রয়েছে। সমগ্র সনাতন শাস্ত্রে প্রভু শিবকে বৈষ্ণব-শ্রেষ্ঠ, বৈষ্ণব-শিরোমণি বলা হয়েছে। তাই বৈষ্ণবেরা প্রভু শিবকে পরম বৈষ্ণব বলে থাকেন। পরিশেষে, যারা মহান বৈষ্ণবদের নিয়ে কটুক্তি এবং অপপ্রচার করে থাকেন, বৈষ্ণব শিরোমণি প্রভু শিব তাদের কৃপা করে সঠিক পথ দেখাবেন, এটাই প্রার্থনা। ।। বৈষ্ণব শিরোমণি প্রভু শিবের জয় ।। ।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

লব ও কুশ কি মাতা সীতার গর্ভজাত সন্তান নন?

image_2024-04-29_132827690

কুশকে কি মহর্ষি বাল্মীকি মুনি পরে সৃষ্টি করেছিলেন? ——————————————– রামায়ণ সম্পর্কে আমরা ছোট কাল থেকে অনেক লৌকিক কথাই শুনে এবং টিভি সিরিয়ালে দেখে এসেছি, যার অধিকাংশই মূল রামায়ণে নেই। মূল রামায়ণ এবং অন্যান্য শাস্ত্রে লব-কুশ সম্পর্কে কি বলা হয়েছে আসুন দেখে নিই। 👉মহর্ষি বাল্মীকি, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীরাম চন্দ্রকে বললেনঃ ইমৌ তু জানকীপুত্রাবুভৌ চ যমজাতকৌ । সুতৌ তবৈব দুর্ধর্ষৌ সত্যমেতদ ব্রবীমি তে ।। [ বাল্মীকি রামায়ণ ৭।৯৬।১৮ ] বঙ্গানুবাদ: কুশ ও লব এই দুই কুমার জানকীর ( সীতার ) গর্ভ থেকে যমজরূপে জন্ম নিয়েছেন। এঁরা আপনারই পুত্র এবং আপনার মতোই দুর্ধর্ষ বীর, আমি আপনাকে সত্য কথা জানাচ্ছি। 👉শ্রীল শুকদেব গোস্বামী বললেনঃ অন্তর্ব্যাগতে কালে যমৌ সা সুষুবে সুতৌ। কুশো লব ইতি খ্যাতৌ তয়োেশ্চক্রে ক্রিয়া মুনিঃ ৷৷ [ শ্রীমদ্ভাগবত ৯।১১।১১ ] বঙ্গানুবাদ: যথাসময়ে গর্ভবতী সীতাদেবী দুটি যমজপুত্র প্রসব করেন। তাঁরা লব এবং কুশ নামে বিখ্যাত হয়েছিলেন। বাল্মীকি মুনি তাঁদের জাতকর্ম সম্পাদন করেছিলেন। অর্থাৎ শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, লব এবং কুশ দু’জনই মাতা সীতার গর্ভজাত সন্তান। তাই যারা বলে যে, কুশ মাতা সীতার গর্ভজাত সন্তান নয়, বাল্মীকি মুনিই তাকে তৈরি করেছে এমন লৌকিক কথা সত্য নয়। 👉এছাড়াও স্পষ্ট ভাবে রামায়ণে উল্লেখ আছে, ( মুনিপুত্র মহর্ষি বাল্মীকি কে বললেন ) প্রভু ! শ্রীরামচন্দ্রের ধর্মপত্নী দুই পুত্রের জন্ম দিয়েছেন।- [ বাল্মীকি রামায়ণ ৭।৬৬।৩ ] আশাকরি আমরা টিভি সিরিয়াল, লৌকিক কথা দিয়ে ধর্ম বিচার করবো না এবং চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত মনে করবো না। টিভি সিরিয়ালে দর্শকের মনোরঞ্জন হেতু অনেক কিছু সংযোজন করা হয়, যা বাস্তবে আমাদের শাস্ত্র গ্রন্থে নেই। তাই সঠিক সিধান্ত জানার জন্য আমাদের উচিত মূল শাস্ত্র গ্রন্থ পাঠ করা অথবা শাস্ত্র গ্রন্থ পাঠ যারা করেন তাদের শরণাপন্ন হওয়া। ।।হরে কৃষ্ণ।।