বৈষ্ণবগণ কি বেদবিহিত ধর্ম পালন করেন না?

‘বৈষ্ণব’ হচ্ছেন তাঁরাই, যারা শ্রীবিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত। বেদে শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীবিষ্ণুকে পরমেশ্বর বলা হয়েছে এবং তার সেবা করাকেই ধর্ম বলে নির্দেশ করা হয়েছে। একইসাথে বেদশাস্ত্রে সমগ্র মানবজাতিকেই বিষ্ণুভক্ত বা বৈষ্ণব হওয়ার জন্য উপদেশ প্রদান করা হয়েছে— “বৈষ্ণবমসি বিষ্ণবে ত্বা॥”: -(শুক্লযজুর্বেদ ৫।২১) অনুবাদঃ বৈষ্ণব হও, বিষ্ণুর প্রীতির জন্য তোমাকে নিযুক্ত করছি।” (শুক্লযজুর্বেদ ৫।২১)। সুতরাং যারা বৈষ্ণব, তাঁরা শ্রীবিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণের সেবক, তাই তাঁরা শতভাগ বেদ মান্য করেন এবং বেদবিহিত ধর্ম পালন করেন। এখন প্রথমে আমরা বেদ সম্পর্কে আলোচনা করব। বেদ আমাদের মূল ধর্মগ্রন্থ। বেদ শব্দের অর্থ হল জ্ঞান। যে শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবানের মহিমাগাথা আলোচনা করা হয়েছে, জীবের সুখ এবং শান্তির পথ নির্দেশ রয়েছে তাঁকে বেদ বলা হয়। বেদের অপর নাম শ্রুতি। বেদ চার ভাগে বিভক্ত— ঋগ্বেদ, যর্জুবেদ (শুক্ল ও কৃষ্ণ), সামবেদ এবং অথর্ববেদ। প্রতিটি বেদেরইচারটি অংশ রয়েছে— সংহিতাভাগ, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ। সামবেদীয় ছান্দোগ্য উপনিষদে (৭।১।২) মহাভারত ও রামায়ণ নামক ইতিহাস এবং অষ্টাদশ পুরাণশাস্ত্রকে পঞ্চম বেদ হিসেবে সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়েছে— “সহোবাচর্গ্বেদং ভগবোধ্যেমি যজুর্বেদং সামবেদমাথর্বণং চতুর্থমিতিহাসপুরাণং পঞ্চমং বেদানাং“ অনুবাদঃনারদ বললেন, “হে ভগবান, আমি অবগত আছি, ঋক্ ,সাম, যজুঃ ও অর্থব— চারটি বেদ। আর বেদের পঞ্চমটি হল অষ্টাদশ পুরাণ এবং ইতিহাস (মহাভারত ও রামায়ণ)।” এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট করা হয়েছে অমলপুরাণ শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রে (৩।১২।৩৯)। সেখানে বলা হয়েছে- পুরাণসমূহই পঞ্চম বেদ “পুরাণাণি পঞ্চমং বেদম্।” আজকাল কিছু ব্যক্তি অল্পবিদ্যার ফলে নিজেরা তত্ত্ব সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হয়ে অন্যদেরও বিভ্রান্ত করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরল সনাতনীর মাঝে প্রচার করছে বৈষ্ণবগণ নাকি বেদবিহিত ধর্ম পালন করেন না। এইভাবে তাঁরা সনাতনীদের বোঝাতে চাচ্ছে বৈষ্ণবগণ বেদ মানে না বা বেদের ধর্ম পালন করে না। তাই তাঁরা সনাতনী নন। অথচ বৈষ্ণবগণ বেদের প্রকৃত অনুসারী। বেদ অখিল শাস্ত্রের মূল এবং তাই বৈষ্ণবগণ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর “বেদ না মানিলে হয় তো নাস্তিক “— এই বাক্যের দৃঢ় অনুসারী।উদাহরণস্বরূপ ব্রহ্ম-মাধ্ব-গৌড়ীয় বৈষ্ণব পরম্পরাগত আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন) এর ভক্তদের দেখা যাক। বৈষ্ণব হিসেবে প্রতিটি ইস্কন ভক্ত প্রতিদিন ভোর চারটায় ব্রাহ্মমুহূর্তে শয্যা ত্যাগ করার পর রাত্র ১০টায় শয়ন করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বেদবিহিত ধর্ম আচরণ করেন। বেদ নিষেধ করে এমন কোন কর্ম বৈষ্ণবগণ বা ইস্কন ভক্তগণ পালন করেন না। ইস্কনের বৈষ্ণবগণ প্রতিদিন ভোর চারটায় শয্যা ত্যাগ করে স্নান করে— প্রথমে দ্বাদশ অঙ্গে তিলক ধারণ করেন, যা বেদবিহিত। এরপর গুরুদেব এবং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীবিষ্ণুর উদ্দেশ্য প্রণতি নিবেদন করে বিনীত প্রার্থনা এবং স্তবস্তুতি পাঠ করেন, যা বেদে নির্দেশিত। এরপর প্রতিটি ইস্কন ভক্ত বেদোক্ত হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন এবং জপ করেন। এরপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতার শ্রীনৃসিংহদেবের উদ্দেশ্যে পূজা এবং স্তব পাঠ করা হয়, যা বেদবিহিত। এছাড়াও গায়ত্রী সংস্কারপ্রাপ্ত ভক্তগণ গায়ত্রী মন্ত্র এবং প্রণব জপ করেন, যা বেদ বিহিত। এরপর তুলসীবৃক্ষের আরাধনা করা হয়, এটিই বেদবিহিত। ভক্তগণ প্রতিদিন শ্রীমদ্ভাগবত, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, ঈশোপনিষদ প্রভৃতি বৈদিক শাস্ত্র পাঠ করেন, যা বেদবিহিত। এরপর বৈষ্ণবগণ বেদের বর্ণিত পদ্ধতিতে নিরামিষ খাদ্যসামগ্রী দ্বারা যজ্ঞরূপী বিষ্ণু বা কৃষ্ণের আরাধনাপূর্বক সেই নিবেদিত আহার্য প্রসাদরূ পে গ্রহণ করেন। এছাড়াও ইস্কন বৈষ্ণবগণের দশবিধ সংস্কার অনুষ্ঠানে অগ্নিহোত্র যজ্ঞাদি অনুষ্ঠিত হয়, যা নিঃসন্দেহে বেদবিহিত কেননা সেসব যজ্ঞে বেদমন্ত্র পাঠ করা হয়। এছাড়াও প্রতিটি বৈষ্ণবগণ প্রতি মাসে দুইটি একাদশী ব্রত পালন করেন, যা বেদে নির্দেশিত হয়েছে। এখন আমরা উপর্যুক্ত আলোচ্য বিষয়ের সংক্ষিপ্ত বেদপ্রমাণ তুলে ধরবো – ১। দ্বাদশ অঙ্গে তিলক ধারণঃ সামবেদীয় বাসুদেব উপনিষদে গোপীচন্দন দ্বারা উদ্ধপুণ্ড্র তিলক ধারনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে – ওঁ নমস্কৃত্য ভগবান্নারদঃ সর্ব্বেশ্বরং বাসুদেবং পপ্রচ্ছ অধীহি ভগবন্নূপূণ্ড্র বিধিং দ্রব্যমন্ত্রস্নানাদিসহিতং মে ব্রিহীতি। তংহোবাচ ভগবান বাসুদেবো বৈকুন্ঠস্থানাদুৎপন্নং মম প্রীতিকরং মদ্ভক্তৈর্ব্রহ্মাদিভিধারিতং বিষ্ণুচন্দনং মমঙ্গে প্রতিনিমালিপ্তং গোপীভিঃ প্রক্ষালনাদে গোপীচন্দনমাখ্যাতং মদঙ্গলেপনং পুণ্যাং চক্রতীর্থান্তস্থিতং চক্রসমাযুক্তং পীতবর্ণং মুক্তিসাধনং ভবতি॥ অথ গোপীচন্দনং নমস্কৃত্বোদ্ধৃত্য। গোপীচন্দন পাপঘ্ন বিষ্ণুদেহসমুদ্ভব॥ অনুবাদ: শ্রীনারদ সর্বেশ্বর ভগবান বাসুদেবকে প্রণাম নিবেদন করে জিজ্ঞাসা করলেন, হে ভগবান, আপনি আমাকে দ্রব্য, মন্ত্র ও স্নানাদির সহিত উর্দ্ধপুণ্ড্রর তিলক ধারণ বিধি সম্বন্ধে উপদেশ প্রদান করুন।ভগবান বাসুদেব তখন বললেন, বিষ্ণুচন্দন নামক দ্রব্য বৈকুণ্ঠস্থান হতে উৎপন্ন হয়েছে, তাই তা আমার অতিশয় প্রিয়। ব্রহ্মা প্রভৃতি আমার ভক্তগণ তা ধারণ করেন। গোপরমণীগণ তা আমার শরীরে লেপন করতেন, এইজন্য তা গোপীচন্দন নামে বিখ্যাত। এ গোপীচন্দন আমার পবিত্র অঙ্গলেপন, তা চক্রতীর্থে অবস্থিত, চক্রচিহ্নযুক্ত এবং পীতবর্ণ, তাই তা মুক্তির সাধন। অতএব গোপীচন্দনকে নমস্কার করে উত্তোলন করবে, কেননা গোপীচন্দন পাপবিনাশকারী এবং বিষ্ণুর দেহ থেকে উদ্ভুত। উল্লেখ্য, মুক্তিকোপনিষদের ১।২৭-৩৬ মন্ত্রসমূহে ১০৮টি উপনিষদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে ১।৩২ মন্ত্র অনুসারে বাসুদেব উপনিষদ হচ্ছে ৫৬ তম উপনিষদ এবং ১।৫৪ মন্ত্র অনুসারে বাসুদেব উপনিষদ সামবেদের অন্তর্গত। ২। পরমেশ্বর ভগবানরূপে শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীবিষ্ণুর আরাধনাঃ শ্রীকৃষ্ণের প্রকাশ শ্রীবিষ্ণু। শ্রীবিষ্ণু এবং শ্রীকৃষ্ণ একই পরমেশ্বর ভগবান। সমগ্র বেদে শ্রীকৃষ্ণকে বিষ্ণু, কৃষ্ণ,গোপাল, দেবকীপুত্র ইত্যাদি নামে সম্বোধন করা হয়েছে। ঋগ্বেদীয় পুরুষসুক্তের বর্ণনা অনুসারে বিষ্ণু সমগ্র জগতে ব্যাপৃত। পুরুষসূক্তে বিষ্ণুর বিরাটরূপ বা বিশ্বরূপের বর্ণনা করা হয়েছে যা শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে দর্শন প্রদান করেছিলেন (গীতা ১১।৫-৪৪)। পরে অর্জুনের প্রার্থনায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে চতুর্ভূজ বিষ্ণুরূপ প্রদর্শন করেছিলেন (গীতা ১১।৪৬-৫০)। বৈষ্ণবগণ বেদোক্ত পরমাত্মা পরমেশ্বর ভগবানরুপে শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীবিষ্ণুর আরাধনা করেন। ঋগ্বেদপ্রমাণে শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীবিষ্ণু হলেন পরমেশ্বর ভগবান – “কালিকো নাম সৰ্পো নবনাগসহস্রবলঃ। যমুনহ্রদে হ সো জাতো অসৌ নারায়ণবাহনঃ॥ যদি কালিকদূতস্য যদি কাঃকালিকাদ্ ভয়ম্। জন্মভূমিং পরিক্রান্তো নির্বিষো যাতি কালিকঃ॥” ~ (ঋগ্বেদ, আশ্বলায়ন শাখা, ০৭।৫৬।৪-৫) অনুবাদ: “যমুনার হ্রদে আগত সহস্র হস্তির ন্যায় বলশালী সেই কালিক নামক সর্প নারায়ণের বাহন (নারায়ণ বা কৃষ্ণ, তিনি তাঁর চরণযুগল স্থাপন করে কালিয় সর্পের উপর নৃত্য করেছিল, তাই কালিয় সর্পকে এখানে নারায়ণের বাহন বলা হয়েছে)।কালিক সর্প কাঃকালিক যার দূত, তাঁর দ্বারা ভীত হয়েছিল। জন্মভূমি ত্যাগ করে সে নির্বিষ হয়েছিল।(গরুড়কে এখানে কাঃকালিক বলা হয়েছে, গরুড়ের ভয়ে কালিয় যমুনা নদী সংলগ্ন একটি হ্রদে আশ্রয় নিয়েছিল। পরবর্তীতে যমুনার হ্রদে বসবাসকারী কালিয় কৃষ্ণের পাদস্পর্শে বিষহীন হয়েছিল) এছাড়াও বিভিন্ন উপনিষদে বর্ণিত হয়েছে, “ব্রহ্মন্যো দেবকীপুত্রঃ” (কৃষ্ণযজুর্বেদোক্ত নারায়ণ উপনিষদ, মন্ত্র ৪) অনুবাদঃ দেবকীপুত্র শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর ভগবান। “নারায়ণায় বিদ্মহে বাসুদেবায় ধীমহি। তন্নো বিষ্ণুঃ প্রচোদয়াৎ॥ (তৈত্তিরীয় আরণ্যক, ১০।১; নারায়ণ উপনিষদ: ১০।১।২৯) অনুবাদ: “আমরা নারায়ণকে জানব। তাই বসুদেবতনয় বাসুদেবের ধ্যান করি। সেই ধ্যানে তিনি আমাদের প্রেরণ করুন।” “যো ব্রহ্মানং বিদধাতি পূর্বং যো বৈ বেদাংশ্চ স্ম কৃষ্ণঃ” (অথর্ববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদ ১।২৪) অনুবাদ: ব্রহ্মা যিনি পূর্বকালে বৈদিক জ্ঞান প্রদান করেন, তিনি সেই জ্ঞান সৃষ্টির আদিতে শ্রীকৃষ্ণের থেকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। “একো বশী সর্বগঃ কৃষ্ণ ঈড্যঃ” (গোপালতাপনী উপনিষদ ১।২১) অনুবাদ: সেই একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই পরম পুরুষোত্তম ভগবান,তিনিই আরাধ্য। সচ্চিদানন্দরূপায় কৃষ্ণায়াক্লিষ্টকারিনে। নমো বেদান্তবেদ্যায় গুরুবে বুদ্ধিসাক্ষিনে॥ (গোপালতাপনী উপনিষদ ১।১) অনুবাদ: আমি শ্রী কৃষ্ণের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম জ্ঞাপন করছি যার আপ্রাকৃত রূপ সৎ,চিৎ ও আনন্দময়। তাকে জানার অর্থ সমগ্র বেদকে জানা। তদ্ধৈতদ্ ঘোর আঙ্গিরসঃ কৃষ্ণায় দেবকীপুত্ৰায়োক্ত্বোবাচাপিপাস এব স বভূব সোঽস্তবেলায়ামেতত্রয়ং প্রতিপদ্যেতাক্ষিতমস্যচ্যুতমসি প্রাণসংশিতমসীতি তত্রৈতে দ্বে ঋচৌ ভবতঃ॥ আদিৎ প্রত্নস্য রেতসঃ উদ্বয়ং তমসম্পরি জ্যোতিঃ পশ্যন্ত উত্তরং স্বঃ পশ্যন্ত উত্তরং দেবং দেবত্রা সূর্যমগন্ম জ্যোতিরুত্তমমিতি জ্যোতিরুত্তমমিতি॥ ~ (ছান্দোগ্য উপনিষদ ৩।১৭।৬-৭) অনুবাদ: আঙ্গিরস ঘোর পূর্বোক্ত এই যজ্ঞবিজ্ঞান দেবকীপুত্র কৃষ্ণকে উপদেশ দিয়ে
শ্রীকৃষ্ণের জন্মের পূ্র্বে যদি বেদ সৃষ্টি হয়,তাহলে কিভাবে বেদে শ্রীকৃষ্ণের নাম উল্লেখ করা হয়েছে?

বেদ হল সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ।বেদের অপর নাম শ্রুতি।বেদ বা শ্রুতি চারপ্রকার –ঋগ্,যর্জু, সাম,অর্থব।প্রতিটি বেদ বা শ্রুতি আবার চারপ্রকার-সংহিতা(উপাসনা কান্ড), ব্রাহ্মণ( কর্মকান্ড),আরন্যক এবং উপনিষদ(জ্ঞানকান্ড)।অথাৎ প্রতিটি বেদ বা শ্রুতি শাস্ত্রের প্রথম ভাগ হল সংহিতা।দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ভাগ হল বহুবিধ ব্রাহ্মণ ও আরন্যক ।এরপর চতুর্থ ভাগ হল উপনিষদসমূহ।উপনিষদ যেহেতু প্রতিটি বেদের সর্বশেষ ভাগ তাই উপনিষদকে বেদান্ত বা বেদ শাস্ত্রের অন্তভাগও বলা হয়। এখন আপনার প্রশ্ন হল,শ্রীকৃষ্ণের জন্মের পূর্বে তো বেদ সৃষ্টি হয়েছে,তাহলে বেদে কিভাবে শ্রীকৃষ্ণের নাম উল্লেখ করা হয়েছে?এর উত্তর হল- ব্রহ্মসংহিতা,মহাভারত, স্কন্দ পুরান, পদ্মপুরান,ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান আদি অষ্টাদশ পুরান, গোপালতাপনী উপনিষদ ইত্যাদি শাস্ত্রের বর্ণনা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ তার স্বধাম চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবনে নিত্য বিরাজমান (ব্রহ্মসংহিতা৫/৩৭)। গোলোক এব নিবসত্যখিলাত্মভূতো গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।।৩৭।। -(ব্রহ্মসংহিতা৫/৩৭) অনুবাদঃ গোলকধামে( চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক) অখিলাত্মভূত শ্রীগোবিন্দ(শ্রীকৃষ্ণ) নিত্য অবস্থান করেন, সেই আদিপুরুষকে আমি ভজনা করি।।৩৭।। অথর্ববেদের অন্তর্গত গোপালতাপনী উপনিষদ,কৃষ্ণ উপনিষদ, সামবেদের অন্তর্গত ছান্দোগ্য উপনিষদ,কৃষ্ণ যজুর্বেদের অন্তর্গত নারায়ন উপনিষদ ইত্যাদি শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলা হয়েছে। “ব্রহ্মন্যো দেবকীপুত্র”–দেবকীপুত্র শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর ভগবান। -নারায়ন উপনিষদ ৪( কৃষ্ণ যজুর্বেদ) “একো বশী সর্বগঃ কৃষ্ণ ঈড্যঃ”–সেই একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই পরম পুরুষোত্তম ভগবান,তিনিই আরাধ্য। – গোপালতাপনী উপনিষদ ১/২১(অথর্ববেদ) মৎস্যপুরাণ৬৯/৬-৮,স্কন্দপুরাণ- প্রভাসখণ্ড ১৯/৭১-৭৮, চৈ. চঃ আদি.৩/৫-১০ অনুসারে,” প্রতি দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণ এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হন না,শুধুমাত্র ব্রহ্মার একদিনে( “সহস্রযুগপর্যন্তমর্যদ বিদু” ব্রহ্মার ১ দিন সমান মনুষ্যজীবের ১০০০ চতুর্যুগ”- গীতা ৮/১৭) মাত্র একবার অথাৎ অষ্টাবিংশ দ্বাপর যুগের শেষভাগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এ পৃথিবীতে আবির্ভুত হন”। বৈবস্বতাখ্যে সঞ্জাতে সপ্তমে সপ্তলোক-কৃৎ। দ্বাপরাখ্যং যুগং তদ্বদষ্টাবিংশতিমং জগুঃ।। তস্যান্তে স মহাদেবো বাসুদেবো জনার্দ্দনঃ। ভারাবতরণার্থায় ত্রিধা বিষ্ণুর্ভবিষ্যতি।। দ্বৈপায়নঋষিন্তব্বদ্রৌহিণেয়োঽথ কেশবঃ। কংসাদি-দর্পমত্থনং কেশবঃ ক্লেশনাশনঃ।। –মৎস্যপুরাণেঃ৬৯/৬-৮ অনুবাদঃ বৈবস্বতাখ্য সপ্তম মন্বন্তর উপস্থিত হলে তাহার যে অষ্টাবিংশতিতম দ্বাপর যুগ, সেই যুগের শেষভাগে সপ্তলোককর্তা মহাদেব বাসুদেব জনার্দ্দন ভূভার-হরণের জন্য দ্বৈপায়ন, রৌহিণেয় ও কেশব এই ত্রিধা মূর্তিতে আবির্ভূত হইবেন। সেই কেশব কংসাদি দর্প দলন করে সকলকে ক্লেশাপনয়ন করবেন। বৈবস্বতেঽস্তরে প্রাপ্তে যশ্চায়ং বর্ত্ততেঽনা। দ্বাপরে বিষ্ণুরষ্টাবিংশে পরাশরাৎ বেদব্যাসস্ততো জজ্ঞো। তত্রৈব দেবক্যাং বসুদেবাত্তু ব্রহ্মগর্গ-পুরঃসরঃ। একবিংশতমস্যাস্য দ্বাপরস্যাংশসঙ্ক্ষয়ে। নষ্টে ধর্মে তদা জজ্ঞে বিষ্ণুর্বৃষ্ণিকুলে স্বয়ং।। –(স্কন্দপুরাণঃপ্রভাসখণ্ড ১৯।৭১-৭৮) অনুবাদঃ এখন যে বৈবস্বত মন্বন্তর চলছে, সেই মন্বন্তরে অষ্টাবিংশচতুর্যুগীয় দ্বাপরে পরাশর হতে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন জন্মগ্রহণ করেন। সেই দ্বাপরেই ব্রহ্মর্ষি গর্গমুনিকে অগ্রে করে বসুদেব হতে দেবকীতে ভগবান জন্মগ্রহণ করেন। এই দ্বাপরের একবিংশতিতম সন্ধ্যাংশের সম্যক ক্ষয়ে (দ্বাপরের শেষভাগে) ধর্মহানি হলে যদুকূলে স্বয়ং বিষ্ণু (স্বয়ংরূপ কৃষ্ণ) জন্মলীলা করেন। পূর্ন ভগবান কৃষ্ণ ব্রজেন্দ্রকুমার। গোলোকে ব্রজের সহ নিত্য বিহার।। ব্রহ্মার এক দিনে তিহোঁ অবতার। অবতীর্ণ হঞা করেন প্রকট বিহার। সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি,চারিযুগ জানি। সেই চারিযুগ দিব্য একযুগ মানি।। একাত্তর চতুর্যুগে এক মন্বন্তর। চৌদ্ধ মন্বন্তর ব্রহ্মার দিবস ভিতর।। ” বৈবস্বত” – নাম এই সপ্তম মন্বন্তর। সাতাইশ চতুর্যুগ তাহার ভিতর।। অষ্টাবিংশ চতুর্যুগে দ্বাপরের শেষে। ব্রজের সহিতে হয় কৃষ্ণের প্রকাশে।।” – শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতঃ আদি.৩/৫-১০ অনুবাদঃ ব্রজরাজের পুত্র শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান। তিনি ব্রজধাম সহ তার নিত্য আলয় গোলক বৃন্দাবনে নিত্য লীলাবিলাস করছেন।ব্রহ্মার একদিনে একবার তিনি তার অপ্রাকৃত লীলা প্রকট করার জন্য এই জড়জগতে অবতীর্ণ হন। আমরা জানি যে সত্য, দ্বাপর ও কলি এই চারটি যুগ রয়েছে। এই চারটি যুগকে একত্রে এক দিব্যযুগ বলা হয়। একাত্তরটি দিব্যযুগে এক মন্বন্তর হয়। ব্রহ্মার এক দিনে চৌদ্ধটি মন্বন্তর রয়েছে। বর্তমান সপ্তম মন্বন্তরে মনু হচ্ছেন বৈবস্বত।তার আয়ুষ্কালের সাতাশ দিব্যযুগ গত হয়েছে। অষ্টাবিংশতি দিব্য যুগের দ্বাপর যুগের শেষভাগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার নিত্য ব্রজধামের সমস্ত উপকরণসহ এই জড় জগতে আবির্ভূত হন। – শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতঃ আদি.৩/৫-১০ এইভাবে ব্রহ্মার শতবছরে শ্রীকৃষ্ণ বহুবার এই মত্যলোকে আবির্ভূত হন, দুষ্টের দমন, সৃষ্টের পালন, এবং ধর্ম সংস্থাপন করেন।আজ থেকে ৫২৪৯বছর (২০২৩ ইংরেজী অনুযায়ী) পূর্বে দ্বাপর যুগের শেষভাগে বর্তমান ভারতের মথুরা প্রদেশে কংসের কারাগারে বসুদেব এবং দেবকী মাতার অষ্টম পুত্ররুপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এ জড় জগতে আবির্ভূত হন। অথর্ববেদের অন্তগর্ত গোপালতাপনী উপনিষদ অনুসারে এই জড় ব্রহ্মান্ড সৃষ্টির পর প্রথম ব্রহ্মাকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বেদ জ্ঞান প্রদান করেন। যো ব্রহ্মাণং বিদধাতি পূর্বং যো বিদ্যাতস্মৈ গোপয়তিস্ম কৃষ্ণ। –গোপালতাপনী উপনিষদ১/২৪ (অথর্ববেদ) অনুবাদঃশ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মাকে প্রথমে বেদবিদ্যা প্রদান করেন।এবং তিনিই সেই জ্ঞান আদিকালে ( সৃষ্টির শুরুতে) প্রদান করেছিলেন। কৃষ্ণ যর্জুবেদের অন্তর্গত শ্বেতাশ্বেতর উপনিষদেও একই কথা বলা হয়েছে।সেখানে বলা হয়েছে, পরমেশ্বর ভগবান প্রথম ব্রহ্মাকে বেদজ্ঞান প্রদান করেন। যো ব্রহ্মাণং বিদধাতি পূর্বং যো বৈ বেদাংশ্চ প্রহিনোতি তমৈ।তং হ দেবমাত্মবুদ্ধি প্রকাশং মুমুক্ষুবৈ শরণমহং প্রপদ্যে।। –শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৬/১৮ (কৃষ্ণ যজুর্বেদ) অনুবাদঃ যিনি সৃষ্টির প্রারম্ভে ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করেছেন,তিনি তার উদ্দেশ্যে বেদ বিদ্যা প্রেরণ করেছেন, আত্মবিষয়ক বুদ্ধির প্রকাশক সেই পরমেশ্বরের(শ্রীকৃষ্ণের) নিকট আমি শরণাপন্ন হই। পরিশেষে,উপরোক্ত আলোচনায় স্পষ্টভাবে বুঝা যায়,আজ থেকে ৫ হাজার বছর পূর্বে শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপরযুগে আবির্ভূত হলেও বেদ বা শ্রুতি প্রমান অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান,তিনি এ জগৎ সৃষ্টির সূচনা লগ্নে ব্রহ্মাকে বেদজ্ঞান প্রদান করেন।ব্রহ্মার প্রতিদিবসে একবার শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হন,এইভাবে শ্রীকৃষ্ণ অসংখ্যবার এই জড় জগতে আবির্ভূত হন।অথর্ববেদের গোপালতাপনী উপনিষদ অনুসারে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রথমে বেদজ্ঞান ব্রহ্মাকে দান করেন।এরপর ঋষিগন সে বেদজ্ঞান ধ্যানের মাধ্যমে ব্রহ্মা থেকে প্রাপ্ত হন। অনেকে মনে করেন বেদের জ্ঞান হল সত্যযুগের, কিন্তু তা ঠিক নয়।তবে বেদের জ্ঞান সত্যযুগ থেকে দ্বাপর যুগ পর্যন্ত গুরু থেকে শিষ্য পরম্পরার ধারায় ঋষিদের মাঝে শ্রৌতপন্থায় প্রবাহিত হয়েছিল। দ্বাপর যুগের শেষের দিকে ভগবানের শক্ত্যাবেশ অবতার ( শক্তির আবেশ অবতার) শ্রীল ব্যাসদেব বেদ লিপিবদ্ধ করেন,যেখানে পরমেশ্বর ভগবানরুপে শ্রীকৃষ্ণের নাম এবং মহিমা উল্লেখ করা হয়েছে । হরে কৃষ্ণ।প্রনাম
বেদে কি শ্রীকৃষ্ণের কথা বলা হয়েছে? বেদ অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ কি পরমেশ্বর ?

আজকাল কিছু শাস্ত্রজ্ঞানহীন ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে যে, শ্রীকৃষ্ণ নাকি কখনো স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান নন,তাঁর কথা নাকি বেদে কোথাও উল্লেখ করা হয় নি।তিনি নাকি শুধুই একজন মহাত্মা। অথচ বেদ, রামায়ন,মহাভারত, অষ্টাদশ পুরান, পঞ্চরাত্র ইত্যাদি সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলা হয়েছে,তাকে চতুর্ভূজ ভগবান শ্রীবিষ্ণু বলা হয়েছে। নিমোক্ত আলোচনায় তাদের অপপ্রচারের খন্ডন পরিবেশিত হল। আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হল বেদ।বেদের অপর নাম -শ্রুতি।তাই বেদকে শ্রুতি শাস্ত্রও বলা হয়। বেদ চার প্রকার- ঋগ্,সাম,যজু(শুক্ল,কৃষ্ণ) এবং অথর্ব। আবার প্রতিটি বেদ চারটি অংশে বিভক্ত -সংহিতা,ব্রাহ্মন, আরন্যক এবং উপনিষদ।বেদের এ চারটি অংশকে একত্রে বেদ বা শ্রুতি বলা হয়।বেদের সর্বশেষ ভাগ যেহেতু উপনিষদ,তাই উপনিষদকে বেদান্ত বা বেদের অন্তভাগও বলা হয়। বেদসহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর। তিনি হলেন সমগ্র সৃষ্টির মূল কারন।পবিত্র বেদে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা বলা হয়েছে। ভগবদগীতা শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন- আমি সমস্ত জীবের হৃদয়ে অবস্থিত পরমাত্মা(“সর্বস্য চাহং হৃদি সন্নিবিষ্টো”- গীতা১৫/১৫),আমার থেকে সমগ্র জগৎ সৃষ্টি হয়েছে (“অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে।” গীতা ১০/৮),আমি সমগ্র বেদে আলোচনার বিষয় (“বেদৈশ্চ সর্বৈরহমেব বেদ্যো- গীতা ১৫/১৫)।বেদে বিষ্ণু, কৃষ্ণ,গোপাল, দেবকীপুত্র,শিব,রুদ্র,ইন্দ্র ইত্যাদি বহু নামে সম্বোধন করা হয়েছে। এ বিষয়ে মহাভারত, শান্তিপর্ব, মোক্ষধর্ম ৩২৭ অধ্যায়ে অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন, ঋষিরা পরমেশ্বরের যেসমস্ত নাম( ইন্দ্র, অগ্নি, রুদ্র, বিষ্ণু আদি..)উল্লেখ করেন সেগুলি প্রকৃতপক্ষে কার নাম?এর উত্তরে পরমাত্মা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন– শ্রীকৃষ্ণ উবাচঃ ঋগ্বেদে সযজুর্বেদে তথৈবথর্বসামসু পুরাণে। সোপনিষদে তথৈব জ্যোতিষে অর্জুন।। ৮।। সাংখ্যে চ যোগশাস্ত্রে চ আয়ুর্বেদে তথৈব চ। বহুনি মম নামানি কীর্তিতানি মহার্ষিভিঃ।। ৯।। গৌণানি তত্র নামানি কর্মজানি চ কানি চিত। নিরুক্তম কর্মজ্ঞম চ শৃণুস্ব প্রয়াতো অনঘ।। ১০।। –(মহাভারতঃ শান্তিপর্ব,মোক্ষধর্ম ৩২৭/৮-১০) অনুবাদঃ শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে অর্জুন! ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ, সামবেদ, পুরাণ, উপনিষদ, জ্যোতিষ, সাংখ্য শাস্ত্র, যোগশাস্ত্রে, আয়ুর্বেদে ঋষিরা অসংখ্য যেসব নাম উল্লেখ করেছেন, কিছু নাম আমার স্বরূপ সম্পর্কিত কিছু আমার কার্য্য সম্পর্কিত।হে পাপরহিত অর্জুন ! আমি তোমার কাছে সেই সব নাম ও তাদের মাহাত্ম্য বর্ণনা করছি, তুমি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর। নরাণাময়নং খ্যাতমঽমেকঃ সনাতনঃ। আপো নারা ইতি প্রোক্তা আপো বৈ নরসূনবঃ। অয়নং মম তৎপূর্বমতো নারায়ণো হ্যহম্।।৩৭।। –(মহাভারতঃ শান্তিপর্ব,মোক্ষধর্ম ৩২৭/৩৭) অনুবাদঃ মুক্তিকালে প্রাণিগণের জীবাত্মার আমিই আশ্রয়স্থান ; এইজন্য এক সনাতন আমিই নারায়ণ। অথবা, নার শব্দের অর্থ জল। যেহেতু জল নরের অর্থাৎ ব্রহ্মের পুত্র। সৃষ্টির পূর্বে সেই নার অর্থাৎ জল আমার আশ্রয় ছিল, এইজন্য আমি নারায়ণ। ছাদয়ামি জগদ্বিশ্বং ভূত্বা সূর্য্য ইবাংশুভিঃ। সর্বভূতাধিবাসশ্চ বাসুদেবস্ততো হ্যহম্।। ৩৮।। গতিশ্চ সর্বভূতানাং প্রজনশ্চাপি ভারত!। ব্যাপ্তা মে রোদসী পার্থ ! কান্তিশ্চাভ্যধিকা মম।। ৩৯। অধিভূতানি চান্তেষু তদিচ্ছংশ্চাস্মি ভারত। ক্রমণাচ্চাপ্যহং পার্থ!বিষ্ণুরিত্যভিসংজ্ঞিতঃ।। ৪০।। –(মহাভারতঃ শান্তিপর্ব,মোক্ষধর্ম ৩২৭/৩৮-৪০) অনুবাদঃ আমি সূর্যের ন্যায় হয়ে কিরণ দ্বারা সমগ্র জগৎ আচ্ছাদন করি, এই জন্য আমি বাসুদেব। অথবা আমি সর্বভূতের বাসস্থান বলে “বাসুদেব”। হে ভরতবংশীয় পৃথানন্দন ! আমি সর্বভূতের গতি বলে ” বিষ্ণু” ; কিংবা আমা হতেই সর্বভূত উৎপন্ন হয় বলে আমি “বিষ্ণু” ; অথবা আমি স্বর্গ ও মর্ত্য ব্যাপিয়া রয়েছি বলে “বিষ্ণু” কিংবা প্রলয়কালে আমি নিজদেহে সমস্ত ভূত প্রবেশ করাতে ইচ্ছা করি বলে আমি “বিষ্ণু” ; অথবা আমি বামন রূপে সমগ্র জগৎ আক্রমণ করেছিলাম বলে আমি বিষ্ণু নামে অভিহিত হয়ে থাকি। ঋগ্বেদীয় পুরুষসুক্তের বর্ণনা অনুসারে বিষ্ণু সমগ্র জগৎ ব্যাপী ব্যাপৃত।অথাৎ ঋগ্বেদের পুরুষসুক্তে বিষ্ণুর বিরাটরুপ বা বিশ্বরুপের বর্ণনা করা হয়েছে,যেরুপটি গীতার বর্ণনা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে দর্শন দান করেন( গীতা ১১/৫-৪৪)।এবং অর্জুনের ইচ্ছা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে চতুর্ভূজ বিষ্ণুরুপ প্রদর্শন করেন(গীতা ১১/৪৬,৫০)। সংহিতাবেদে স্পষ্টভাবে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাল্যকালীন কালীয় দমন লীলা উপস্থাপন করে শ্রীকৃষ্ণকে বিষ্ণু বলে সম্বোধন করা হয়েছে – কালিকো নাম সৰ্পো নবনাগসহস্রবলঃ। যমুনহ্রদে হ সো জাতো অসৌ নারায়ণবাহনঃ॥ যদি কালিকদূতস্য যদি কাঃকালিকাদ্ ভয়ম্। জন্মভূমিং পরিক্রান্তো নির্বিষো যাতি কালিকঃ।। (ঋগ্বেদ সংহিতাঃ আশ্বলায়ন শাখা, ০৭.৫৬.০৪-০৫) অনুবাদঃ যমুনার হ্রদে জন্মলাভ করা সহস্রহাতির ন্যায় বলশালী সেই কালিক নামক সর্প( নাগ) নারায়ণের বাহন( নারায়ন, যিনি হলেন কৃষ্ণ, তিনি তার চরনের মাধ্যমে কালিয় সর্পের উপর নৃত্য করেছিল,তাই কালিয় সর্পকে নারায়নের বাহন বলা হয়েছে)।যদি ঐ কালিক সর্পের দূত কাঃকালিক নামক সর্পের থেকে ভয় পায়( নারায়নের বাহন হল গরুড়,গরুড়কে এখানে কাঃকালিক বলা হয়েছে, গরুড়ের ভয়ে কালিয় যমুনা নদী সংলগ্ন একটি হ্রদে আশ্রয় নিয়েছিল), তাহলে জন্মভূমি অতিক্রম করে সেই কালিক সর্প বিষহীন হয়ে যায় ( যমুনার হ্রদে বসবাসকারী কালিয় কৃষ্ণের পাদস্পর্শে বিষহীন হয়েছিল)। উপরোক্ত ঋগ্বেদোক্ত যমুনা নদীতে বসবাস করত যে কালিয়,যাকে এখানে কালিক বলা হয়েছে, তিনি গরুড়ের ভয়ে যমুনার একটি হ্রদে বসবাস করত। সে যমুনার হ্রদের বসবাস করেছিল এ কারনে যে সে কাঃকালিক বা গরুড় থেকে ভয় প্রাপ্ত হয়েছিল,এ বিষয়টি শ্রীমদ্ভাগবত পুরান শাস্ত্রে খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সুপর্ণপক্ষাভিহতঃ কালিয়োহতীব বিহ্বলঃ হ্রদং বিবেশ কালিন্দ্যাস্তদগম্যং দুরাসদম্।। -( শ্রীমদ্ভাগবত পুরান ১০/১৭/৮) অনুবাদঃ গরুড়ের পক্ষাঘাতে কালিয় অত্যন্ত বিহবল হয়ে যমুনা নদী ( কালিন্দ্যা) সংলগ্ন একটি হ্রদে আশ্রয় গ্রহণ করল। গড়ুর সেই হ্রদে প্রবেশ করতে পারত না। বস্তুতপক্ষে সেই দিকে অগ্রসর হতেও সে পারত না। গরুড় কেন যমুনা নদী সংলগ্ন সে হ্রদে প্রবেশ করতে পারত না,এ বিষয়ে শ্রীমদ্ভাগবত পুরান ১০/১৭/১০ নং শ্লোকের বর্ণনা করা হয়েছে, গরুড় সৌভরি মুনি কতৃর্ক অভিশাপ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। বিস্তারিত শ্রীমদ্ভাগবত পুরান ১০/১৭/৯-১১) বেদের উপনিষদ বিভাগেও স্পষ্টই শ্রীকৃষ্ণের কথা বর্ণিত আছে। শুক্ল যজুর্বেদীয় মুক্তিকোপনিষদে ১০৮ টি উপনিষদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই ১০৮ টি উপনিষদের মধ্যে প্রথম ১১ টি উপনিষদ হল-ঈশ,কেন,কঠ,প্রশ্ন,মুন্ডক,মান্ডুক্য,তৈত্তিরীয়, ঐতরেয়,ছান্দোগ্য,বৃহদ্যরন্যক ও শ্বেতাশ্বতর। সামবেদীয় ছান্দোগ্য উপনিষদে সরাসরি দেবকীনন্দন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।আঙ্গিরস গোত্রীয় “ঘোর” নামক ঋষি দেবকীনন্দন শ্রীকৃষ্ণের প্রীতি বিধানার্থে একটি যজ্ঞানুষ্ঠান করেছিলেন। তদ্ধৈতদ্ ঘোর আঙ্গিরসঃ কৃষ্ণায় দেবকীপুত্রায় উক্ত্বা উবাচ। অপিপাস এব স বভূব। সোহন্তবেলায়ামেতত্রয়ং প্রতিপদ্যেত। অক্ষিতমস্যচ্যুতমসি প্রাণসংশিতমসীতি। তত্রৈতে দ্বে ঋচৌ ভবতঃ।।৬।। – (ছান্দোগ্য উপনিষদে ৩।১৭।৬) অনুবাদঃ পুরুষযজ্ঞদ্রষ্টা অঙ্গিরস গোত্রীয় ঘোর নামক ঋষি দেবকীনন্দন শ্রীকৃষ্ণের প্রীতির জন্য এই ব্রহ্মবিদ্যা অনুসন্ধান করে সেই পুরুষ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেছিলেন। সেই ঘোর নামক ঋষি ভগবানের শ্রেষত্ব অনুসন্ধান করে পুরুষ যজ্ঞোপাসনা দ্বারা নিশ্চই নিবৃত্ততর্ষ বা জড়তৃষ্ণামুক্ত হয়েছিলেন। অন্তিমকালে যিনি এই মন্ত্রত্রয়ের স্মরণ নেয় তিনি মুক্ত হন। প্রয়াণকালে এই তিন মন্ত্র জপ করা কর্তব্য, হে পরব্রহ্ম তুমি অক্ষয়, তুমি অচ্যুত, তুমি প্রাণের থেকেও প্রিয়তম। এই বিষয়ে দুটি ঋক রয়েছে। শ্রীরঙ্গরামানুজাচার্য্য উপরোক্ত ছান্দোগ্য উপনিষদ৩।১৭।৬ মন্ত্রের ভাষ্য প্রদানে একটি সুসঙ্গত ব্যাখ্যা করেছেন, তা হলো “স ঘোরনামা ভগবচ্ছেষত্বানুসন্ধানপূর্বক পুরুষ যজ্ঞোপাসনানুষ্ঠানেন ব্রহ্মবিদ্যাং প্রাপ্যাপিপাসো মুক্তো বভূবেত্যর্থঃ। ততশ্চ ষোড়শাধিকবর্ষশতজীবন ফলকস্যাপি পুরুষযজ্ঞদর্শনস্য ভগবচ্ছেষত্বানুসন্ধান পূর্বকমনুষ্ঠিতস্য ব্রহ্মবিদ্যোপযোগীত্বমপ্যস্তীতি ভাবঃ। স বভূবেত্যস্য স ভবতীত্যর্থঃ। সোহন্তবেলায়ামিত্যত্র স ইত্যস্য য ইত্যর্থঃ। ততশ্চ যোহন্ত বেলায়ামেতত্রয়ং প্রতিপদ্যেত সোহপিপাসো ভবতীত্যুবাচেত্যুত্তরত্রাণ্বয়ঃ। স ভগবচ্ছেষত্বানুসন্ধান পূর্বকপুরুষবিদ্যাসাধিত চিরায়ুষ্ট্বানুগৃহীত ব্রহ্মবিদ্যানিষ্ঠ পুরুষঃ। মরণকাল এতন্মন্ত্রত্রয়ং জপেদিত্যর্থঃ। তত্র পরব্রহ্মবিষয় এতাবৃঙ্মন্ত্রৌ ভবতঃ।” এছাড়াও শুক্ল যজুর্বেদীয় মুক্তিকোপনিষদে ১০৮ টি উপনিষদের তালিকায় নারায়ন উপনিষদ,গোপালতাপনী উপনিষদ,কৃষ্ণোপনিষদ এবং কলির্সন্তরন উপনিষদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। স্পষ্টভাবে সেখানে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলা হয়েছে। ১/ “ব্রহ্মন্যো দেবকীপুত্রঃ” –নারায়ন উপনিষদ ৪( কৃষ্ণ যজুর্বেদ) অনুবাদঃদেবকীপুত্র শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর ভগবান। ২/
বেদের জ্ঞান সত্যযুগের, রাম হল ত্রেতাযুগের, তাহলে কিভাবে রামের নাম বেদ শাস্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে??

বেদের জ্ঞানকে বলা হয় অপৌরুষেয়।অথাৎ এই জ্ঞান পরমেশ্বর ভগবান থেকে ব্রহ্মার মাধ্যমে ঋষিগণ প্রাপ্ত হয়েছেন।যে ঋষিরা এই জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছিলেন তাদের বেদদ্রষ্টা ঋষি বলা হয়।বেদের জ্ঞান সত্যযুগের এই কথা কোন শাস্ত্রে বলা হয় নি।তবে সনাতনী শাস্ত্র থেকে জানা যায় সৃষ্টির সময় থেকে অথাৎ বেদদ্রষ্টা ঋষিগন ব্রহ্মা থেকে ধ্যানযোগে এই বেদ জ্ঞান সত্য,ত্রেতা, দ্বাপর যুগের বিভিন্ন সময় প্রাপ্ত হন।দ্বাপরযুগে শেষের দিকে ভগবানের শক্ত্যাবেশ অবতার ব্যাসদেব সমগ্র বেদ লিপিবদ্ধ করেন। বেদ চার প্রকার- ঋগ্,সাম,যজু(শুক্ল,কৃষ্ণ) এবং অথর্ব।আবার প্রতিটি বেদের চারটি অংশ -সংহিতা,ব্রাহ্মন, আরন্যক এবং উপনিষদ।বেদের এ চারটি অংশকে একত্রে বেদ বা শ্রুতি বলা হয়। বেদের সর্বশেষ অংশ হল উপনিষদ।তাই উপনিষদকে বেদান্ত বলা হয়। মুক্তিকোপনিষদে ১/২৭-৩৬ নং মন্ত্রে ঈশোপনিষদ, কেন উপনিষদ, কঠোপনিষদ,রামতাপনী উপনিষদ ,গোপালতাপনী উপনিষদ ইত্যাদি ১০৮ টি উপনিষদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।১০৮ টি উপনিষদের তালিকায় মুক্তিকোপনিষদ১/ ৩২,৩৬ নং মন্ত্রে রামতাপনী উপনিষদ এবং মুক্তিকোপনিষদের উল্লেখ পাওয়া যায়। মুক্তিকোপনিষদ ১/৫২ নং মন্ত্র অনুসারে মুক্তিকোপনিষদ হল শুক্ল যজুর্বেদের অন্তর্গত,এবং মুক্তিকোপনিষদ ১/৫৫ নং মন্ত্র অনুসারে রামতাপনী উপনিষদ হল অর্থববেদের অন্তর্গত। শুক্ল যজুর্বেদীয় মুক্তিকোপনিষদ এবং অথর্ববেদীয় রামতাপনী উপনিষদে ভগবান রামচন্দ্রের মহানতা সম্পর্কে সামান্য পরিমাণে বর্ণনা করা হয়েছে,তবে বিস্তারিত ইতিহাস বর্নিত হয় নি।রামচন্দ্রের অপ্রাকৃত লীলাবিলাসের বিস্তিত বিবরন প্রদত্ত হয়েছে রামায়ন নামক ইতিহাস শাস্ত্রে।রামচন্দ্র হলেন বেদে বর্নিত স্বয়ং বিষ্ণু।ধ্যানযোগে বেদদ্রষ্টা ঋষি শ্রীরামচন্দ্র ভগবানের অপ্রাকৃত বাণী ব্রহ্মা থেকে প্রাপ্ত হন,যার বর্ণনা শুক্লযজুর্বেদীয় মুক্তিকোপনিষদ এবং অথর্ববেদীয় রামতাপনী উপনিষদে বর্ণিত আছে। আবার কেউ যদি কোন শাস্ত্র প্রমান ছাড়া কেবল তর্ক করে বলে বেদের জ্ঞান শুধু সত্যযুগের তবে বলতে হয়, গীতা ৮/১৭ নং শ্লোক অনুসারে ব্রহ্মার ১ দিন=মনুষ্য জীবের ১ হাজার চতুর্যুগ।১ চতুর্যুগ= সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি।পুরাণ শাস্ত্র থেকে জানা যায়,ব্রহ্মার প্রতি দিনে যে ১ হাজার চতুর্যুগ আবর্তিত হয়, তার প্রতিটি চতুর্যুগের ত্রেতা যুগে ভগবান বিষ্ণু শ্রীরামচন্দ্ররুপে আবির্ভূত হন।সেসময় তাঁর লীলাসমূহ প্রায় এক থাকে,তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা কিছুটা ভিন্ন হয়।এ পৃথিবীতে যখন দুষ্কৃতিকারী দ্বারা পূর্ণ হয় তখন তিনি শুধুমাত্র তার শক্তি দ্বারা অথবা তাঁর প্রকৃতি দ্বারা তাদের দন্ড দিতে পারেন।কিন্তু প্রতিটি ত্রেতা যুগে তার আগমনের মূল কারন জীবদের তাঁর স্বধাম চিন্ময় জগতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য হিত উপদেশ দান করা। এইভাবে শ্রীরামচন্দ্রের লীলাবিলাস যদিও ত্রেতাযুগের কিন্তু এই পৃথিবীতে শুধু ব্রহ্মার ১ দিনে অসংখ্যবার ত্রেতাযুগ আবর্তিত হয়,সেসমস্ত ত্রেতাযুগে ভগবান রামরুপে আবির্ভূত হন।এভাবে ত্রেতার পর দ্বাপরযুগ তারপর কলি হয়ে চতুর্যুগ সম্পন্ন হয়।এরপর শুরু হয় সত্য যুগ।সত্যযুগে ধ্যানযোগে বেদদ্রষ্টা ঋষি শ্রীরামচন্দ্র ভগবানের অপ্রাকৃত বাণী ব্রহ্মা থেকে প্রাপ্ত হন,যার বর্ণনা শুক্লযজুর্বেদীয় মুক্তিকোপনিষদ এবং অথর্ববেদীয় রামতাপনী উপনিষদে বর্ণিত আছে। হরে কৃষ্ণ। প্রনাম।
শ্রীরামচন্দ্র কি স্বয়ং পরমেশ্বর? বেদে কি শ্রীরামচন্দ্রের কথা বলা হয়েছে ???

আজকাল কিছু শাস্ত্রজ্ঞানহীন ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে যে, শ্রীরামচন্দ্র নাকি কখনো স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান নন ,তিনি নাকি একজন রাজনীতিজ্ঞ আর মহাত্মা। অথচ বেদ, রামায়ন,মহাভারত, অষ্টাদশ পুরান, পঞ্চরাত্র ইত্যাদি সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে শ্রীরামচন্দ্রকে পরমেশ্বর ভগবান বলা হয়েছে।তাকে ভগবান শ্রীবিষ্ণু অথবা শ্রীবিষ্ণুর অংশ অবতার মর্যাদা পুরুষোত্তম ভগবান বলা হয়েছে। আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হল বেদ।বেদকে শ্রুতি বলা হয়। বেদ চার প্রকার – ঋগ্,যজু (শুক্ল,কৃষ্ণ) সাম এবং অথর্ব।আবার প্রতিটি বেদের চারটি অংশ রয়েছে।যথা-সংহিতা,ব্রাহ্মন, আরন্যক এবং উপনিষদ।বেদের এ চারটি অংশকে একত্রে বেদ বা শ্রুতি বলা হয়। উপনিষদ হল বেদের সর্বশেষ অংশ, তাই উপনিষদের অপর নাম বেদান্ত। মুক্তিকোপনিষদ ১/৫১-৫৫ নং মন্ত্রে ১০৮ টি উপনিষদের বর্ননা করা হয়েছে ।শুক্লযজুর্বেদীয় মুক্তিকোপনিষদে শ্রীরামচন্দ্রকে পরমেশ্বর ভগবান বলা হয়েছে। তাকে শ্রীবিষ্ণু বা শ্রীহরি বলা হয়েছে। ওঁ অযোধ্যানগরে রম্যে রত্নমন্ডপমধ্যমে। সীতাভরতসৌমিত্রিশত্রুঘ্নাদ্যৈঃ সমন্বিতম।। সনকাদ্যৈমুর্নিগনৈব্বশিষ্ঠাদ্যৈঃ শুকাদিভি। অন্যৈর্ভাগবতৈশ্চাপি স্তুয়মানমহনির্শম।। ধীবিক্রিয়াসহস্রানাং সাক্ষিনং নির্ব্বিকারিণম। স্বরুপধ্যাননিরতং সমাধিবিরমে হরিম।।” ভক্ত্যা শুশ্রুষয়া রামং স্তুবনং প্রপচ্ছ মারুতি। রাম! ত্বং পরমাত্মাসি সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ।। – মুক্তিকোপনিষদ ১/১-৪ ( শুক্ল যজুর্বেদ) অনুবাদঃ একদা কুলাদিপতি রামচন্দ্র অযোধ্যা নগরের রমনীয় রত্নসিংহাসনে রাম, লক্ষণ, ভরত এবং শত্রুঘ্ন প্রভৃতি ভাতৃগন, অমাত্যগণ পরিবৃত হয়ে রত্মসিংহাসনে বসে আছেন। সনক,সনাতন,বশিষ্ট,জাবালি,কশ্যপ,শুক প্রভৃতি ভক্তগন পরমব্রহ্ম জ্ঞানে তাঁকে স্তব করছেন। পবনতনয় হনুমান, সর্ব্বান্তর্যামী নির্ব্বিকার, নিরঞ্জন, স্বরুপধ্যানেনিরত রামচন্দ্র শ্রীহরিকে ধ্যানবিরামে অবসর জেনে প্রগাঢ় ভক্তি এবং বিবিধ শ্রুশ্রুষা দ্বারা স্তব করে জিজ্ঞাসা করলেন,হে রাম! তুমি ভৌতিক দেহশূণ্য অথাৎ চিন্ময়দেহধারী(সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ) পরমাত্মা। ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের সুমহান বর্ণনা প্রদত্ত হয়েছে সমগ্র পৃথিবীর আদি কাব্যগ্রন্থ শ্রীরামায়ন শাস্ত্রে।সেখানে বলা হয়েছে, রাবনের অত্যাচারে পৃথিবী যখন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল,তখন দেবতারা ব্রহ্মাকে সাথে নিয়ে এ ব্রহ্মান্ডের অন্তর্গত ক্ষীরোধ সমুদ্রে ভগবান বিষ্ণুর শরনাগত হয়েছিলেন।ভগবান বিষ্ণু তাদের আশ্বাস দেন যে,তিনি অযোধ্যায় সূর্যবংশে দশরথের পুত্র হয়ে চারঅংশে জন্মগ্রহণ করে রাবন আদি অসুরদের বিনাশ করার জন্য শীঘ্রই আবির্ভূত হবেন।সে অনুসারে ভগবান বিষ্ণু অযোধ্যায় রাম,লক্ষ্মন, ভরত এবং শত্রুঘ্ন এ চাররুপে আবির্ভূত হন। রামায়ন শাস্ত্রে বর্ণিত আছে, ব্রহ্মাজী ভগবান শ্রীরামচন্দ্রকে স্তুতি দ্বারা বলছেন- সিদ্ধানামপি সাধ্যানামাশ্রয়শ্চাসি পূর্বজঃ। ত্বং যজ্ঞস্ত্বং বষটকারস্ত্বমোঙ্কারঃ পরাৎপর।।১৯।। মহেন্দ্রশ্চ কৃতো রাজা বলিং বদ্ধা সুদারুণম্। সীতা লক্ষ্মীর্ভবান্ বিষ্ণুর্দেবঃ কৃষ্ণঃ প্রজাপতিঃ।।”২৭।। -বাল্মীকি রামায়ণ ৬।১১৭।১৯,২৭ অনুবাদঃ আপনি সিদ্ধ ও সাধ্যগণের আশ্রয়ভূত এবং পূর্বজ। যজ্ঞ, বষটকার এবং ওম্ কার আপনিই। আপনি শ্রেষ্ঠ অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ পরমাত্মা। আপনি অত্যন্ত পরাক্রমী দৈত্যরাজ বলিকে বন্দি করে, দেবরাজ ইন্দ্রকে ত্রিভুবনের রাজা করেছিলেন। সীতা সাক্ষাৎ লক্ষ্মী এবং আপনি মূর্তিমান বিষ্ণু (নারায়ণ),আপনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। ত্রীল্লোকান্ ধারয়ন্ রাম দেবগন্ধর্বদানবান্। অহং তে হৃদয়ং রাম জিহ্বা দেবী সরস্বতী।। – রামায়ণঃ যুদ্ধ কাণ্ড, সর্গ ১১৭, শ্লোক ২৩। অনুবাদ: শ্রীরাম ! আপনি ত্রিভুবনের তথা দেবতা-দানব-গন্ধর্বদের ধারক বিরাট পুরুষ নারায়ণ, সকলের হৃদয়স্থ পরমাত্মা। আমি প্রজাপতি ব্রহ্মা আপনার হৃদয় এবং দেবী সরস্বতী আপনার জিহ্বা।” শ্রীমদ্ভাগবতেও বর্ণনা করা হয়েছে ভগবান বিষ্ণু / হরি ভগবান শ্রীরাম,লক্ষ্মন,ভরত এবং শত্রুঘ্নরুপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তস্যাপি ভগবানেষ সাক্ষাদ্ ব্রহ্মময়ো হরিঃ। অংশাংশেন চতুর্ধাগাৎ পুত্রর্ধাগাৎ পুত্রত্বং প্রার্থিতঃ সুরৈঃ।রামলক্ষ্মণভরতশত্রুঘ্না ইতি সংজ্ঞয়া।। –(শ্রীমদ্ভাগবত ৯/১০/২) অনুবাদঃ দেবতাদের দ্বারা প্রার্থিত হয়ে সাক্ষাৎ ব্রহ্মময় ভগবান শ্রীহরি ( বিষ্ণু) তার অংশ এবং অংশের অংশসহ আবির্ভূত হয়েছিলেন।তাঁদের নাম রাম, লক্ষ্মন, ভরত এবং শত্রুঘ্ন। এভাবেই ভগবান চার মূর্তিতে মহারাজ দশরথের পুত্ররুপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। হরে কৃষ্ণ || প্রনাম
বিষ্ণু সংহিতা,অত্রিসংহিতায় কি আদৌ একাদশীতে সধবা নারীদের উপবাস পালনে নিষেধ করা হয়েছে?

একশ্রেণীর নামধারী পুরোহিত তারা তো একাদশী ব্রত উপবাস পালন করে না,কিন্তু যারা একাদশী পালন করে তাদের মধ্যে যারা সধবা তাদের একাদশী পালন করতে বাঁধা প্রদান করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষ্ণুসংহিতা(বিষ্ণুস্মৃতি) এবং অত্রিসংহিতা(অত্রিস্মৃতি) থেকে প্রমান দেখাচ্ছে। “পত্যৌ জীবতি যা যোষিদুপবাসব্রতং চরেৎ। আয়ুঃ সা হরতে ভর্ত্তুর্নরকঞ্চৈব গচ্ছতি।।” ( বিষ্ণু সংহিতা ২৫/১৬) অনুবাদঃ যে স্ত্রী স্বামী জীবিত থাকতে উপবাস ব্রতের আচরন করে, সে স্বামীর আয়ু হরণ ও নরক গমন করে। তাই স্বামী জীবিত থাকতে উপবাস বাঞ্ছনীয় নয়। জীবদ্ভর্ত্তরি যা নারী উপোষ্য ব্রতচারিণী। আয়ুষ্যং হরতে ভর্ত্তুঃ সা নারী নরকং ব্রজেৎ।। (অত্রিসংহিতা ১৩৬নং শ্লোক।) অনুবাদঃ যে নারী স্বামী জীবিত থাকিতে উপবাস করিয়া ব্রত করে,সে নারী স্বামীর আয়ু হরণ করে ও নরকে গমন করেন। পাঠকগণ কৃপা করে উপরোক্ত বিষ্ণু সংহিতা ২৫/১৬,এবং অত্রিসংহিতা ১৩৬নং শ্লোক পর্যবেক্ষণ করে দেখুন উক্ত শ্লোক দুইটিতে কোথাও স্পষ্ট করে একাদশীতে উপবাস পালনে নিষেধ করা হয় নি,বরং উপবাস মাত্রেই সধবাদের পালনে নিষেধ করা হয়েছে। অথচ আমরা দেখি এই সমস্ত পুরোহিতরা সনাতনী সধবাদেরকে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার সময় লক্ষ্মীপূজার উপবাস, দুর্গা পূজার অষ্টমী দিনে দূর্গাষ্টমী উপবাস,শিব চতুর্দশী সময় শিব রাত্রীর উপবাস, সন্তোষী মাতার পূজার সময় সন্তোষীর উপবাস,কালীর পূজার সময় কালীর উপবাস,লোকনাথ বাবার পূজার সময় লোকনাথ উপবাস,কার্তিক পূজার সময় কার্তিকের উপবাস,সূর্য পূজার সময় সূর্যের উপবাস,অশ্বিনীকুমারের ব্রত অন্ন রান্নার সময় উপবাসের বিধান দেয়। আর কোন সধবা যদি উপবাস ছাড়া এসমস্ত দেবদেবীর পূজা করতে চাই,তাদের নামে কোন সংকল্প করা হয় না।যদি সধবা নারীরা এসমস্ত দেবদেবীর পূজার সময় উপবাস পালন করতে পারে,তাহলে একাদশী উপবাস পালন করার সময় তাদের কেন এ নিষেধাজ্ঞা? আমরা বুঝতে পারি এসবের মূলে আছে বৈষ্ণবদের প্রতি ঘৃনা,কারন বৈষ্ণবরা বিশেষভাবে একাদশী ব্রত পালন করেন।আর একাদশী পালনে জীবের ভগবান শ্রীবিষ্ণুতে প্রেমভক্তি লাভ হয়, তাই এসমস্ত নামধারী পুরোহিতগণ তা সহ্য করতে পারে না। পদ্মপুরাণে স্পষ্টভাবে ৮-৮০ বছর বয়সী সকল নারী পুরুষের জন্য একাদশীতে উপবাস পালনকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ঈশ্বরের প্রীতির জন্য উপবাস পালন করা হয় তাহলে সেখানে কিভাবে পাপ হবে,এটির তো কোন যুক্তি থাকতে পারে না।আর তাছাড়া বেদ শাস্ত্রে নারী, পুরুষ, সধবা,বিধবা সহ সকল মানব জাতিকে ঈশ্বরের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য উপবাস পালন করার নির্দেশ করা হয়েছে । এ বিষয়ে নিমোক্ত লিংকে পাঠ করুন। বেদে কি একাদশী উপবাসের কথা বলা হয়েছে? বেদে কি একাদশী উপবাসের কথা বলা হয়েছে? এছাড়াও মহাভারত,শান্তিপর্ব,৩৬ অধ্যায়ে মনুজী ভগবদ্ধামে প্রত্যাবর্তন করার প্রথম শর্ত হিসেবে নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে মানব জীবনের পবিত্রতা লাভের জন্য ইষ্টমন্ত্র জপ, হোম (যজ্ঞ) ইত্যাদির পাশাপাশি উপবাস পালন করার উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। অনাদেশে জপো হোম উপবাসস্তথৈব চ। আত্মজ্ঞানং পুণ্যনদ্যো যত্র প্রাযশ্চ তৎপরাঃ ॥৬॥ অনাদিষ্টং তথৈতানি পুণ্যানি ধবণীভৃতঃ। সুবর্ণপ্রাশনমপি বত্নাদিস্নানমেব চ ॥৭॥ দেবস্থানাভিগমনমাজ্যপ্রাশনমেব চ। এতানি মেধ্যং পুরুষং কুর্ব্বন্ত্যাশু ন সংশয়ঃ ॥৮॥ -( মহাভারতঃ শান্তিপর্ব ৩৬/৬-৮) অনুবাদঃ যে ক্ষেত্রে বিশেষভাবে পবিত্রতা লাভের কারণ উক্ত না থাকে, সেই ক্ষেত্রে যে দেশে পবিত্র নদী সকল প্রবাহিত হইতে থাকে এবং অধিক সংখ্যকই ধৰ্ম্মপরায়ণ লোক বাস করে, সেই দেশে ইষ্টমন্ত্র জপ, হোম, উপবাস, ব্রহ্মচিন্তা ও বিশেষভাবে অনুক্ত বিষ্ণুপূজা প্রভৃতি পুণ্য কার্য্য এবং পুণ্য পর্ব্বতে গমন, স্বর্ণস্পৃষ্ট জল পান, রত্ন ও সর্ব্বৌষধিযুক্ত জলে স্নান, দেবতাযতনে গমন ও ঘৃত ভোজন-এই সকল কৰ্ম্ম মানুষকে পবিত্র করে, এবিষযে কোন সন্দেহ নাই ॥৬-৮ সুতারাং মহাভারত এবং বেদ শাস্ত্রে মানব জীবনের পবিত্রতা লাভের জন্য, ঈশ্বরের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য সকল মানব জাতিকে উপবাস পালন করার কথা বলা হয়েছে।বেদ এবং মহাভারত শাস্ত্রে কোন ভেদাভেদ ব্যতীত সধবা, বিধবা সহ সকল মানবজাতিকে ঈশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য, জীবনের পবিত্রতা লাভের জন্য উপবাস পালন করার কথা বলা হয়েছে।আর ভক্তরা বেদ এবং মহাভারতের বর্ণনা অনুযায়ী, একাদশী তিথিতে পরমেশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য এবং জীবনের পবিত্রতা লাভের জন্য উপবাস পালন করেন। এছাড়াও শ্রীমদ্ভাগবত, পদ্মপুরাণসহ ১৪ টি শাস্ত্র প্রমানে সধবাদের একাদশী ব্রত পালন করতে উপদেশ করা হয়েছে। সুতারাং এতগুলি শাস্ত্রে একযোগে ভূল তথ্য থাকতে কখনো পারে না। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত হল সর্বোচ্চ শাস্ত্র প্রমান বেদ, মহাভারত এবং বিবিধ পুরাণ শাস্ত্রে কোন ভেদাভেদ ব্যতীত সধবা, বিধবা সহ সকল মানবজাতিকে ঈশ্বরের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য, জীবনের পবিত্রতা লাভের জন্য উপবাস পালন করার কথা বলা হয়েছে,আর সে স্থানে বিষ্ণুসংহিতা (বিষ্ণুস্মৃতি) এবং অত্রিসংহিতায় (অত্রিস্মৃতি) সধবাদের উপবাস পালন করতে বাঁধা প্রদান হয়েছে,ভয় দেখানো হয়েছে।তাই সহজে বলা যায়, বিষ্ণুসংহিতা (বিষ্ণুস্মৃতি) এবং অত্রিসংহিতা(অত্রিস্মৃতি) নামধারী পুরোহিত দ্বারা কলুষিত হয়েছে বা ভেজাল ডুকানো হয়েছে।তাই এসমস্ত স্মৃতিগুলি পাঠকালে পাঠকদের এসমস্ত বিষয় সম্পর্কে জানা থাকা আবশ্যক। এখন আমরা নিমোক্ত শাস্ত্র প্রমানে সধবা নারীদের যে একাদশীতে উপবাস পালন করতে উপদেশ করা হয়েছে, এ বিষয়ে পাঠ করব- ১)ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রণাঞ্চৈব যোষিতাম্। মোক্ষদং কূর্ব্বতাং ভক্ত্যা বিষ্ণো:প্রিয়তরং দ্বিজাঃ।। [ বৃহন্নারদীয় পুরাণ, অধ্যায়-২১ শ্লোক-২ ] বঙ্গানুবাদঃ ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়, বৈশ্য,শুদ্র এবং বিবাহিত স্ত্রীলোক – ইহাদিগের মধ্যে যে কোন ব্যক্তি হউক, ভক্তি পূর্ব্বক একাদশী ব্রত পালন করে মুক্তি লাভ করতে পারে। (২)পতিসহিতা যা যোষিৎ করোতি হরিবাসরম্ । সুপুত্ৰা স্বামিসুভগা যাতি প্রেত্য হরের্গৃহম॥ ৭৬ যো যচ্ছতি হরেরগ্রে প্রদীপং ভক্তিভাবতঃ। হরের্দিনে দ্বিজশ্রেষ্ঠ পুণ্যসঙ্গ্যা ন বিদ্যতে ॥৭৭ যাঙ্গনা ভর্ত্তৃসহিতা কুরুতে জাগরং হরেঃ। হরের্নিকেতনে তিষ্ঠেচ্চিরং পত্যা সহ দ্বিজ ॥৭৮ [ পদ্মপুরাণ, স্বর্গখন্ড, অধ্যায় ৪৪, শ্লোক- ৭৬-৭৮ ] বঙ্গানুবাদঃ যে স্ত্রী পতি সহ একাদশীব্রত করে, সে সুপুত্রা স্বামি-সুভাগা হয়, মরণান্তে হরিগৃহ বৈকুন্ঠে যায়। দ্বিজ শ্রেষ্ঠ! একাদশীতে ভক্তিভাবে যে জন হরির অগ্রে প্রদীপ দান করে, তাহার পুণ্যের সংখ্যা নাই অর্থাৎ অগণিত পুণ্য লাভ করে । আর যে স্ত্রী স্বামীর সহিত একাদশীতে রাত্রি জাগরণ করে, সে চিত্রকাল পতি সহ হরির নিকেতনে বাস করে। ৩)যা নারী স্বামীসহিতা কুর্য্যাচ্চ হরিবাসরম। সুপুত্রা ভর্ত্তসুভগা ভবেৎ সা প্রতিজন্মানি।। [ পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মখন্ড, ৫।১৯ ] বঙ্গানুবাদঃ যে নারী স্বামীর সাথে একাদশীব্রত করে, সে জন্মে জন্মে সপুত্রা ও স্বামীসুভগা হয়। (৪)যে নারী ভর্ত্তৃসহিতা করোত্যেকাদশীব্রতম্। সুপ্ৰজা স্বামিসুভগা সা ভবেৎ প্রতিজন্মনি। স্বামিনা সহ যা নারী কুরুতে জাগরং হরেঃ। সা তিষ্ঠেদ্বিষ্ণুভবনে চিরং ভর্ত্রা সহ দ্বিজ ।। [ পদ্মপুরাণ, ত্রিয়াযোগসারঃ অধ্যায়-২২ শ্লোক- ১০৫ ] বঙ্গানুবাদঃ যে নারী স্বামীর সাথে একাদশীব্রত করে, সে জন্মে জন্মে সুপুত্রা ও স্বামীসুভগা হয়। আর যে নারী স্বামীর সঙ্গে জাগরানুষ্ঠান করে, সে স্বামীর সাথে সুচিরকাল বৈকুন্ঠধামে অবস্থান করে।” ৫)দুর্ভাগা যা করোত্যেনাং সা স্ত্রী সৌভাগ্যমাপ্নুয়াৎ। লোকানাঞ্চৈব সর্ব্বোষাং ভুক্তিমুক্তিপ্রদায়িনী।। [ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ৪৮।৪ ] বঙ্গানুবাদঃ কোন দুর্ভাগা স্ত্রী যদি একাদশী ব্রত আচরণ করেন, তিনি সৌভাগ্য লাভ করেন। এই একাদশী ব্রত সর্বলোকের ভুক্তিমুক্তিপ্রদায়িনী, সর্ব্বপাপহারিণী ও গর্ভবাসনিবারিণী।” (৬)সপুত্রশ্চ সভাৰ্য্যশ্চ স্বজনৈৰ্ভক্তিসংযুতঃ। একাদশ্যামুপবসেৎ পক্ষয়োরভয়োরপি ॥ [ বিষ্ণুধর্মোত্তর, হ.ভ.বি., ১২।৪৭ ] বঙ্গানুবাদঃ পুত্র, ভার্যা (পত্নী) ও স্বজনবর্গের সহিত ভক্তিযুক্ত হয়ে উভয়পক্ষের একাদশীতে উপবাস কর্তব্য। ৭)আরিরাধয়িষুঃ কৃষ্ণং মহিষ্যা তুল্যশীলয়া । যুক্তঃ সংবৎসরং বীরো দধার দ্বাদশীব্রতম্ ॥ [ শ্রীমদ্ভাগবতম ৯।৪।২৯ ] অনুবাদঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করার জন্য অম্বরীষ মহারাজ তারই মতো গুণবতী স্ত্রী সহ এক বৎসর কাল যাবৎ একাদশী এবং দ্বাদশীব্রত পালন করেছিলেন। দেবশর্ম্মার শিষ্য চন্দ্রের পত্নী গুণবতী আজীবন অর্থাৎ বিবাহের পূর্বে ও পরে সর্বদাই একাদশীব্রত ও কার্তিকমাস ব্রত করেছিলেন। যার পুণ্যপ্রভাবে তিনি মৃত্যুর পর বিষ্ণুলোকে গমন করেন এবং
ঈশ্বর পুরুষ নাকি নারী?

বেদের বর্ণনায় ঈশ্বর হল সাকার। তার সুন্দর রুপ বা দেহ বা শরীর বা ইন্দ্রিয় বিদ্যমান। “দিবো বা বিষ্ণো উত বা পৃথিব্যা মহো বা বিষ্ণু উরোরন্তরিক্ষাৎ।উভো হি হস্তা বসুনা পূনস্বা প্রযচ্ছ দক্ষিণাদোত সব্যাদ্বিষ্ণবে দ্বা।।” -শুক্ল যজুর্বেদ ৫।১৯ অনুবাদ:- হে ঈশ্বর ( বিষ্ণু),আপনি দ্যুলোক হইতে কি ভূলোক হইতে কিংবা অনন্ত প্রসারী অন্তরিক্ষলোক হইতে পরমধন লইয়া উভয় হস্তকে পূর্ণ করুন। আর দক্ষিণ ও বাম হস্ত দ্বারা অবাধে অবিচারে সেই পরমধন প্রদান করুন,আপনাকে প্রাপ্তির নিমিত্তে উপাসনা করি। উপরোক্ত শুক্ল যজুর্বেদের মন্ত্রের মতোই সমগ্র বেদে অসংখ্যবার পরমেশ্বর ভগবানের সাকার রুপের বর্ণনা করা হয়েছে। এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে সে ঈশ্বর কি পুরুষ নাকি নারী,তিনি কি মানুষের মতোই রুপবিশিষ্ট? উত্তর হল মহাভারত – শান্তিপর্ব – ২১৮/৯০, এবং গীতা১৩/১৮নং শ্লোক অনুযায়ী ঈশ্বর কখনো বিনাশহীন পুরুষ বা নারী কোনটি নয়, তিনি হলেন জ্ঞানস্বরুপ।বেদ শব্দের অর্থ হল জ্ঞান। বেদ শাস্ত্রে ঈশ্বর হলেন সাকার।আর বেদ শাস্ত্র অনুসারে সে ঈশ্বর হলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীবিষ্ণু। পরম ঈশ্বর রুপে শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীবিষ্ণু মূলত একজনই।শ্রীকৃষ্ণ জড় জগত সৃষ্টি এবং সৃষ্ট জীবদের পালনের জন্য শ্রীবিষ্ণুর রুপ ধারণ করেন। পরমেশ্বর ভগবানরুপে শ্রীকৃষ্ণ চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবনে নিত্য বিরাজমান। গীতা ১১/৫১ শ্লোক অনুসারে তিনি দেখতে ঠিক মানুষের মতো। গীতা ১১/৪৬-৪৭ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী পরমেশ্বর ভগবানরুপে শ্রীবিষ্ণু দেখতে মানুষের মতো কিন্তু তাঁর চারটি হস্ত।শ্রীকৃষ্ণ সমন্ধে আরো জানতে নিমোক্ত লিংকে পাঠ করুন-বেদে কি শ্রীকৃষ্ণের কথা বলা হয়েছে? বেদ অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ কি পরমেশ্বর ভগবান? https://svadharmam.com/is-the-vedas-mentioned-sri-krishna-according-to-the-vedas-shri-krishna-is-godhead/ ঈশ্বর পুরুষ নাকি নারী এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট করা হয়েছে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শাস্ত্রে।গীতা শাস্ত্র অনুসারে সে ঈশ্বর কখনো বিনাশশীল পুরুষ বা স্ত্রী কিছুই নয়।তিনি হলেন পরম পুরুষ অথাৎ অবিনাশশীল সচ্চিদানন্দ(চিন্ময়) পুরুষোত্তম। ভগবদগীতা ১৩/২০ শ্লোক অনুসারে পুরুষ শব্দে জীবকে নির্দেশ করা হয়েছে। তাই ঈশ্বর সমস্ত জীবের ( পুরুষের) নিয়ন্ত্রক।তাই গীতা ১৩/২৩ শ্লোক এবং গীতা ১৫/১৮ শ্লোকে ঈশ্বরকে পরম পুরুষ বা পুরুষোত্তম রুপে বর্ননা করা হয়েছে।সেই ঈশ্বরের নামটি হল শ্রীকৃষ্ণ( গীতা ১৫/১৮)। ব্রহ্মসংহিতা ৫/১, অথর্ববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদ ১/১ এবং সমগ্র সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে শ্রীকৃষ্ণের দেহ বা শরীর হল সচ্চিদানন্দ অথাৎ চিন্ময়(যা কখনো বিনাশহীন নয়)। উপদ্রষ্টানুমন্তা চ ভর্তা ভোক্তা মহেশ্বরঃ। পরমাত্মেতি চাপ্যুক্তো দেহেহস্মিন্ পুরুষঃ পরঃ।। – গীতা ১৩/২৩ঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অনুবাদঃ এই শরীরে আর একজন পরম পুরুষ রয়েছেন,যিনি হচ্ছেন উপদ্রষ্টা, অনুমন্তা, ভর্তা, ভোক্তা, মহেশ্বর এবং তাকে পরমাত্মাও বলা হয়। যো মামেবমসংমূঢ়ো জানাতি পুরুষোত্তমম্। স সর্ববিদ্ ভজতি মাং সর্বভাবেন ভারত।। -গীতা ১৫/১৮ঃভগবান শ্রীকৃষ্ণ অনুবাদঃ হে ভারত! যিনি নিঃসন্দেহে আমাকে পুরুষোত্তম বলে জানেন, তিনি সর্বজ্ঞ এবং তিনি সর্বতোভাবে আমাকে ভজনা করেন। অহং সর্ব্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্ব্বং প্রবর্ত্ততে। ইতি মত্বা ভজন্তে মাং বুধা ভাবসমন্বিতাঃ।। -গীতা ১০/৮ঃভগবান শ্রীকৃষ্ণ অনুবাদ- আমি সমস্ত জগতের সৃষ্টির কারণ। আমার থেকে সমস্ত জগৎ সৃষ্টি হয়েছে। জ্ঞানীরা এরুপ জেনে আমার ভজনা করেন। ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ। অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্বকারণকারণম্ ।। -(ব্রহ্মসংহিতা ৫/১) অনুবাদঃ শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর (পরম ঈশ্বর) এবং তাঁর দেহ বা শরীর সচ্চিদানন্দময় অথাৎ চিন্ময় ( সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ)। তিনি অনাদির আদিপুরুষ গোবিন্দ এবং তিনিই সর্ব কারণের কারণ।” সচ্চিদানন্দরুপায় কৃষ্ণায়াক্লিষ্টকারিনে। নমো বেদান্তবেদ্যায় গুরুবে বুদ্ধিসাক্ষিনে।। – গোপালতাপনী উপনিষদ ১/১ (অথর্ববেদ) অনুবাদঃ আমি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম জ্ঞাপন করছি, যার আপ্রাকৃত রূপ/দেহ /শরীর হল সচ্চিদানন্দময় (অথাৎ চিন্ময় /অবিনাশী সত্তা)। তাকে জানার অর্থ সমগ্র বেদকে জানা। হরে কৃষ্ণ।প্রনাম
শ্রীকৃষ্ণের কি মৃত্যু হয়েছিল, নাকি তিনি স্বশরীরে বৈকুন্ঠে গমন করেছিলেন ?

আমাদের সমাজে কিছু শাস্ত্রজ্ঞানহীন ভগবৎ-বিদ্বেষী ব্যক্তি আছে, যারা শ্রীকৃষ্ণকে তাদের মতোই সাধারণ মানুষ মনে করে। অথচ মহাভারত শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলা হয়েছে, স্বয়ং চতুর্ভুজ বিষ্ণু বলা হয়েছে। অনুগ্রহার্থং লোকানাং বিষ্ণুলোক নমস্কৃতঃ। বসুদেবাত্তু দেবক্যাং প্রাদুর্ভূতো মহাযশাঃ।। ( মহাভারত, আদিপর্ব, ৫৮/১৩৮ ) অনুবাদঃ ত্রিজগতের পূজনীয় মহাযশস্বী স্বয়ং বিষ্ণু লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য বসুদেব-দেবকীতে আবির্ভূত হইয়া ছিলেন। কিন্তু তার পরেও এ সমস্ত অজ্ঞানী মানুষেরা তাদের আসুরিক মতকে প্রচার করতে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধান লীলা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করতেছে, যা অশাস্ত্রীয়, ঘৃন্য এবং আসুরিক। অথচ মহাভারত শাস্ত্রের মৌষলপর্ব পাঠ করে আমরা সহজে জানতে পারি, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে তার অন্তর্ধানের সময় নির্ধারন করেছিলেন। তখন তিনি একটি বৃক্ষের উপর চতুর্ভূজ বিষ্ণুরুপে অবস্থান করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছার প্রভাবে তিনি স্বশরীরে প্রথমে স্বর্গে এবং পরে বৈকুন্ঠ জগতে প্রবেশ করেন। অসুরেরা যেহেতু মহাভারত শাস্ত্র উক্ত শ্রীকৃষ্ণকে বিষ্ণুরুপে মানে না, পরমেশ্বর ভগবানরুপে মানে না, তাই তারা মহাভারত শাস্ত্রের এসমস্ত জ্ঞান সাধারন মানুষের মাঝে প্রচার না করে এর বিপরীতে অশাস্ত্রীয় ভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধান লীলা নিয়ে অপপ্রচার করছে। নিম্নে মহাভারতের মৌষল পর্ব অবলম্বনে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধান লীলা রহস্যের সত্য ইতিহাস পরিবেশিত হল…. ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধান লীলাঃ বৃষ্ণিবংশ বা যদুবংশ ধ্বংস হওয়ার পর- ততো গত্বা কেশবস্তুং দদর্শ রামং বনে স্থিতমেকং বিবিক্তে ॥১২৷৷ অথাপশ্যযোগযুক্তস্য তস্য নাগং মুখানিঃসরন্তং মহান্তম্। শ্বেতং যযৌ সততঃ প্রেক্ষ্যমাণে। মহার্ণবে যেন মহানুভাবঃ ॥১৩৷৷ সহস্রশীর্ষঃ পর্ব্বতাভোগবর্ষ্ম। রক্তাননঃ স্বাং তনুং তাং বিমুচ্য। সম্যক্ চ তং সাগরঃ প্রত্যগৃহ্লান্নাগা দিব্যাঃ সরিতশ্চৈব পুণ্যাঃ ॥১৪।। ( মহাভারত, মৌষলপর্ব ৪/১২-১৪ ) অনুবাদঃ তাহার পর কৃষ্ণ যাইয়া নির্জন বনস্থিত একাকী বলরামকে দেখিলেন। ১২।। আরও দেখিলেন যে, যোগপ্রবৃত্ত বলরামের মুখ হইতে একটা শ্বেতবর্ণ বিশাল নাগ নির্গত হইতেছে। সেই নাগ নির্গত হইয়া মহাসমুদ্রে প্রবেশ করিল। যেহেতু, সে মহাপ্রভাবশালী ছিল। ১৩।।সহস্র মস্তক পর্ব্বতের ন্যায় বিশাল দেহ ও রক্তমুখ সেই নাগ নিজ বলরাম- দেহ পরিত্যাগ করিয়া সাগরজলে প্রবেশ করিলেন। তখন সাগরও আদরের সহিত তাঁহাকে গ্রহণ করিল এবং দিব্য নাগসমূহ ও পুণ্য নদীসকলও তাঁহাকে গ্রহণ করিল।” ১৪।। ভগবান বলরামের এরুপ অন্তর্ধানের পর:- ততো গতে ভ্রাতরি বাসুদেবো জানন্ সর্বা গতয়ো দিব্যদৃষ্টিঃ ॥১৭৷ বনে শূন্যে বিচরংশ্চিন্তয়ানো ভূমৌ চাথ সংবিবেশাগ্র্যতেজাঃ। সর্বং তেন প্রাক্ তদা চিন্ত্যমাসীদ্গান্ধাৰ্য্যা যদ্বাক্যমুক্তঃ স পূর্ব্বম ॥১৮৷৷ ( মহাভারত, মৌষলপর্ব ৪/১৭-১৮) অনুবাদঃ এইভাবে ভ্রাতা বলরাম মর্ত্যলোক হইতে প্রস্থান করিলে দিব্যজ্ঞানশালী কৃষ্ণ সকলেরই সমস্ত অবস্থা জানিতে পারিয়া চিন্তাকুল চিত্তে শূন্য বনে বিচরণ করিতে করিতে ভূতলে শয়ন করিলেন এবং পূর্ব্বে গান্ধারী যে বাক্য বলিয়াছিলেন, মহাতেজা কৃষ্ণ তখন সেই সমস্তই চিন্তা করিতে লাগিলেন। ১৭-১৮৷৷ দুর্বাসসা পায়সোচ্ছিষ্টলিপ্তে যচ্চাপ্যুক্তং তচ্চ সম্মার কৃষ্ণঃ। সঞ্চিন্তয়ন্নন্ধকবৃষ্ণিনাশং কুরুক্ষয়ঞ্চৈব মহানুভাবঃ ॥১৯৷৷ যেনে ততঃ সংক্রমণস্য কালং ততশ্চকারেন্দ্রিযসংনিরোধম্। যথা চ লোকত্রয়পালনার্থং দুর্বাসবাক্যপ্রতিপালনায় ॥২০॥ দেবোহপি সন্দেহবিমোক্ষহেতোনির্ণীত মৈচ্ছৎ সকলার্থতত্ত্ববিৎ। স সংনিরুদ্ধেন্দ্রিয়বাঙ্মনাস্ত শিশ্যে মহাযোগমুপেত্য কৃষ্ণঃ ॥২১৷ জরোহথ তং দেশমুপাজগাম লুব্ধস্তদানীং মৃগলিপ্স রুগ্রঃ। স কেশবং যোগযুক্তং শযানং মৃগাশঙ্কী লুব্ধকঃ সাযকেন ॥২২॥ জরোহবিধাৎ পাদতলে ত্বরাবাংস্তং চাভিতস্তজ্জিবৃক্ষুর্জগাম। অথাপশ্যৎ পুরুষং যোগযুক্তং পীতাম্বরং লুব্ধকোহনেকবাহুম্ ॥২৩৷৷ (মহাভারত, মৌষলপর্ব ৪/১৯-২৩) অনুবাদঃ মহানুভাব কৃষ্ণ যদুবংশ ধ্বংস ও কুরুবংশ বিনাশ ভাবিতে থাকিয়া দুর্ব্বাসার উচ্ছিষ্ট পায়স দ্বারা ভূমি লিপ্ত করিয়া যাহা বলিয়াছিলেন, দুর্ব্বাসার সেই বাক্য স্মরণ করিলেন।১৯।।তাহার পর কৃষ্ণ সেই সময়টাই নিজের প্রস্থানের সময় মনে করিলেন। পরে তিনি ত্রিভুবন পালন করিবার জন্য এবং দুর্ব্বাসার বাক্য রক্ষা করিবার নিমিত্ত ইন্দ্রিয়গণকে নিরুদ্ধ করিলেন।২০॥ সকলার্থতত্ত্বজ্ঞ কৃষ্ণও সন্দেহ দূর করিবার জন্য নিশ্চিত বিষয় কামনা করিলেন। তখন কৃষ্ণ মহাযোগ অবলম্বন করিয়া ইন্দ্রিয়, বাক্য ও মনকে নিরুদ্ধ রাখিয়া ভূতলে শয়ন করিলেন।২১॥তাহার পর উগ্রমূর্ত্তি ও হরিণলিপ্সু জরানামক এক ব্যাধ সেই সময়ে সেই স্থানে আগমন করিল এবং মৃগ মনে করিয়া বাণদ্বারা যোগযুক্ত অবস্থায় শায়িত কৃষ্ণের পদতলে বিদ্ধ করিল, পরে ত্বরান্বিত হইয়া সেই বিদ্ধ মৃগকে গ্রহণ করিতে ইচ্ছা কবিয়া তাহার নিকট গমন করিল। তদনন্তর সে দেখিল-অনেক বাহু, পীতাম্বরপরিধায়ী ও যোগযুক্ত একটা পুরুষ শায়িত রহিয়াছেন।২২-২৩॥ বিশ্লেষণঃ উপরোক্ত বর্ণনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন দর্শন করলেন বলরাম সমুদ্রে লীন হলেন তখন তিনি সেই সময়টিকেই নিজের প্রস্থানের সময় মনে করেছিলেন। অর্থাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই জড় জগত ত্যাগ করার সময় নিজেই নির্ধারণ করেছিলেন। সুতারাং যারা শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবানরুপে স্বীকার করতে চায় না, তাদের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা, শ্রীকৃষ্ণ যদি পরমেশ্বর ভগবান না হন, তাহলে তিনি কিভাবে জড় জগত ত্যাগের সময় নিজেই নির্ধারণ করতে পারেন? এরপর দেখা যাক, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধান লীলার পরবর্তী অংশ। মহাত্মানং ত্বপরাদ্ধং স তস্য পাদৌ জরো জগৃহে শঙ্কিতাত্মা।আশ্বাসিতঃ পুণ্যফলেন ভক্ত্যা তথানুতাপাৎ কৰ্ম্মণো জন্মনশ্চ।।২৪।। (মহাভারত, মৌষলপর্ব ৪/২৪) অনুবাদঃ সেই জরা নামক ব্যাধ নিজেকে অপরাধী মনে করিয়া উদ্বিগ্ন চিত্ত হইয়া শ্রীকৃষ্ণের চরণযুগল ধারণ করিল। তখন তাহার পুণ্য, ভক্তি এবং নিজের দুষ্কর্ম ও জন্ম বিষয়ে অনুতাপ করায় কৃষ্ণ তাহাকে আশ্বস্ত করিলেন। বিশ্লেষণঃ উপরোক্ত শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধান লীলার এ অংশে আমরা বুঝতে পারি যে, জরা নামক ব্যাধ শ্রীকৃষ্ণকে মৃগ বা হরিণ মনে করে বাণ নিক্ষেপ করেছিলেন এবং ব্যাধ যখন তীরবিদ্ধ মৃগকে নিতে আসলেন তখন তিনি দেখলেন সেখানে কোন মৃগ নেই বরং সেখানে অসংখ্য হস্তধারী স্বয়ং বিষ্ণু শায়িত আছেন। এখান থেকে স্পষ্ট প্রমানিত হয় যে, শ্রীকৃষ্ণ কখনো কোন সাধারন মানুষ নন, তিনি হলেন স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবিষ্ণু। সুতারাং অসুরেরা যে প্রচার করছেন যে, শ্রীকৃষ্ণ জরা নামক ব্যাধের তীরে মারা গেছেন, প্রকৃতপক্ষে তা হল মিথ্যা প্রচার, কারণ শ্রীবিষ্ণু, যিনি স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান, তার কখনো মৃত্যু হতে পারে না।এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে। যাহোক ব্যাধ অনেকবাহু শ্রীবিষ্ণুকে ( শ্রীকৃষ্ণ) দর্শন করা মাত্রই নিজের কর্মকে দূষ্কর্ম ও জন্ম বিষয়ে অনুতাপ করলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন। এরপর দৃষ্টা তথা দেবমন্তবীর্য্যং দেবৈঃ স্বর্গং প্রাপিতস্ত্যক্তদেহ।গণৈমুনীণাং পূজিতস্তত্র কৃষ্ণো গচ্ছন্নদ্ধং ব্যাপ্য লোকান স লক্ষ্যা।। ২৫।।দিব্যং প্রাপ্তয় বাসবোহথাশ্বণৌ চ রুদ্রাদিত্যা বসবশ্চাথ বিশ্বে।প্রত্যু্যদৃযষুমুর্নয়শ্চাপি সিদ্ধা গন্ধর্বমুখ্যাশ্চ সহাপ্সরোভব।।২৬।। ততো রাজন! ভগবানুগ্রতেজা নারায়নঃ প্রভবশ্চাব্যয়শ্চ।যোগাচার্য্যো রোদসী ব্যাপ্য লক্ষ্যা স্থাং প্রাপ স্বং মহাত্মহপ্রমেয়ম।।২৭।। ( মহাভারত, মৌষলপর্ব ৪/২৫-২৭ ) অনুবাদঃ দেবগণ অনন্তবীর্য নারায়ণকে (শ্রীকৃষ্ণ) দর্শন করিয়া ব্যাধের দেহকে রাখিয়া ব্যাধকে স্বর্গে লইয়া গিয়াছিলেন এবং শ্রীকৃষ্ণ আপন কান্তিদ্বারা জগৎ ব্যাপ্ত করে উর্দ্ধদিকে গমন করিতে লাগিলেন তখন মুনিগণ শ্রীকৃষ্ণের পূজা করিতে লাগিলেন।২৫।। শ্রীকৃষ্ণ স্বর্গে উপস্থিত হইলে ইন্দ্র,অশ্বিনীকুমারদ্বয়,একাদশ রুদ্র,দ্বাদশ আদিত্য,অষ্টবসু, বিশ্বদেবগণ,সিগ্ধ মুনিগণ এবং অপ্সরাদের সাথে গন্ধর্বশ্রেষ্টগণ তাহার (কৃষ্ণের) প্রত্যুদ্গমন (আরাধনা) করিয়াছিলেন।২৬।। তাহার পর ভীষণতেজা, জগতের উৎপাদক, অবিনশ্বর, যোগ শিক্ষক, মহাত্মা ভগবান নারায়ন ( শ্রীকৃষ্ণ) আপন কান্তিদ্বারা স্বর্গ,মর্ত্ত্য ব্যাপ্ত করিয়া সাধারণের অর্জ্ঞেয় স্বকীয় বৈকুণ্ঠধাম গমন করিয়াছিলেন।২৭।। বিশ্লেষণ: উপরোক্ত মহাভারতের আলোচনায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অনেকবাহু ধারন করে স্বশরীরে প্রথমে স্বর্গ এরপর তার স্বীয় চিন্ময় বৈকুন্ঠ জগতে প্রবেশ করেছিলেন। এ সম্পর্কে ভাগবতেও একই তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে.. লোকাভিরামাং স্বতনুং ধারানাধ্যানমঙ্গলম। যোগধারনয়াগ্নেয়্যাদগ্ধা ধামাবিশ্য স্বকর্ম।। ( শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ১১/৩১/০৬) অনুবাদঃ সর্বজগতের সর্বাকর্ষক বিশ্রামস্থল, এবং সর্বপ্রকারের ধ্যান ও মননের বিষয়,ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার দিব্য শরীরে আগ্নেয় নামক অলৌকিক ধ্যানের প্রয়োগে দগ্ধ না করিয়া তার স্বীয় ধামে গমন করিয়াছিলেন। পরিশেষে উপরোক্ত মহাভারত এবং শ্রীমদ্ভাগবতের বর্ণনায় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়,পরমেশ্বর ভগবানরুপে শ্রীকৃষ্ণের কখনো মৃত্যু হয় নি,কারন পরমেশ্বর ভগবান
ঈশ্বরের সমার্থক শব্দরুপে “ভগবান” শব্দটি কেন যুক্তিযুক্ত?

বেদ সহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে ঈশ্বরকে সাকার বলা হয়েছে।ঈশ্বর সাকার,কেননা ঈশ্বরের আকার বা রুপ বা ইন্দ্রিয় রয়েছে।অথাৎ ঈশ্বরের মস্তক( মাথা),চক্ষু( চোখ),হস্ত( হাত),পদ( পা) ইত্যাদি সমস্ত ইন্দ্রিয় বা আকার বা রুপ রয়েছে। “হিরন্ময়েন পাত্রেন সত্যস্যাহপিহিতং মুখম। তৎ ত্বং পুষন্নপাবৃনু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে।।” -ঈশোপনিষদঃ ৬(শুক্ল যজুর্বেদ) অনুবাদঃ হে প্রভু,হে সর্বজীবপালক,আপনার উজ্জ্বল জ্যোতির দ্বারা আপনার মুখারবিন্দ আচ্ছাদিত।কৃপা করে সেই আচ্ছাদন দূর করুন এবং যাতে আমরা আপনাকে দেখতে পারি। সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে সেই এক ঈশ্বরকে ভগবান( ষড়ৈশ্বর্যময় প্রভু), পরমব্রহ্ম ( সর্বব্যাপ্ত প্রভু),পরমাত্মা( সর্ব জীবের হৃদয়ে অবস্থিত প্রভু),পরমেশ্বর( পরম ঈশ্বর) , মহেশ্বর ( মহান ঈশ্বর) ইত্যাদি নামে সম্বোধন করা হয়েছে।একইসাথে বেদসহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে সে ঈশ্বর বা পরমেশ্বর বা ভগবান হলেন শ্রীকৃষ্ণ। কিন্তু তারপরও আজকাল কিছু শাস্ত্র জ্ঞানহীন অন্ধ ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে শ্রীকৃষ্ণ হলেন ভগবান কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর বা পরমেশ্বর নন। তাদের দৃষ্টিতে ভগবান এবং ঈশ্বর নাকি ভিন্ন শব্দ। তারা অপপ্রচার করছে ঈশ্বর মানে সৃষ্টিকর্তা আর ভগবান মানে নাকি মহাত্মা।তাদের এ ধরনের উদ্ভট কথা সনাতনী শাস্ত্রে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।তাদের এ ধরনের কথা শুনলে আমাদের হাসি পায়।কারন সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে আমরা যখন ভগবান শব্দটিকে বিশ্লেষণ করি তখন দেখতে পায়,এই ভগবান শব্দটি ঈশ্বর বা পরমেশ্বরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ভগবানঃ ভগ“শব্দের অর্থ হল ষড়ৈশ্বর্য, এবং দ্বিতীয় অংশ “বান” যার আভিধানিক অর্থ হল অধিকারী।সুতরাং সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর হলেন ষড়ৈশ্বর্যের পূর্ণ অধিকারী,আর তাই সে ঈশ্বর বা পরমেশ্বরকে ভগবান বলা হয়।বিষ্ণু পুরাণ শাস্ত্রে ভগবান শব্দটি সম্পর্কে বলা হয়েছে – “ঐশ্বর্য্যস্য সমগ্রস্য বীর্যস্য যশসঃ শ্রিয়ঃ। জ্ঞানবৈরাগ্যয়োশ্চৈব ষন্নৎ ভগ ইতিঙ্গনা।।” -(বিষ্ণুপুরাণ ৬/৫/৭৪) অনুবাদঃ “যার মধ্যে সমস্ত ঐশ্বর্য(সম্পদ), সমস্ত বীর্য (শক্তি), সমস্ত যশ(খ্যাতি), সমস্ত শ্রী (ধনসম্পদ), সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত বৈরাগ্য এই ছয়টি বিষয় পূর্ণ মাত্রায় বর্তমান তিনিই হচ্ছেন ভগবান।” ঈশ্বরঃ সংস্কৃতে “ঈশ্বর” শব্দের ধাতু মূল “ঈশ্”, যার অর্থ হল মালিক, শাসক,নিয়ন্ত্রক। দ্বিতীয় অংশ ‘বর’ যার আভিধানিক অর্থ হল “সর্বশ্রেষ্ঠ”।সুতারাং “ঈশ্বর” শব্দের অর্থ হলো– যিনি সমস্ত কিছুর মালিক/নিয়ন্ত্রক/ সৃষ্টিকর্তা। সুতারাং যিনি ঈশ্বর বা পরমেশ্বর ( পরম ঈশ্বর)বা মহেশ্বর ( মহান ঈশ্বে) বা পরম ব্রহ্ম বা পরমাত্মা তাকে ভগবান বলা হয়। কারন “ভগ” শব্দে ষড়ৈশ্বর্যকে নির্দেশ করা হয়েছে। ষড়ৈশ্বর্যের প্রথমটি হল, “সমগ্র ঐশ্বর্য” ( সমগ্র সম্পদ)-এ জগতের সমস্ত সম্পদের মালিকানা একমাত্র ঈশ্বরই দাবী করতে পারেন।ঠিক তেমনই “সমগ্র বীর্য” বা সমস্ত শক্তি,” সমগ্র শ্রী” বা সমস্ত সৌন্দর্য, “সমগ্র জ্ঞান”, “সমগ্র যশ”(খ্যাতি),”সমগ্র বৈরাগ্য” শুধু মাত্র ঈশ্বরই দাবী করতে পারেন।তাই ঈশ্বরকে সনাতনী শাস্ত্রে ভগবান বলা হয়েছে। তাঁর প্রথম প্রমান হল কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ।যেখানে সর্বব্যাপী পরমব্রহ্ম এবং সমস্ত জীবের হৃদয়ে অবস্থানকারী পরমাত্মা পরম ঈশ্বরকে ভগবান বলা হয়েছে। সর্বাননশিরোগ্রীবঃ সর্বভূতগুহাশয়ঃ। সর্বব্যাপী স ভগবান্ তস্মাৎ সর্বগতঃ শিবঃ।।১১।। – শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ৩/১১(কৃষ্ণ যজুর্বেদ) শব্দার্থঃ সর্বাননশিরোগ্রীবঃ = সর্বদিকে মুখ, মস্তক ও গ্রীবা, সর্বভূতগুহাশয়ঃ =সকল প্রাণীর হৃদয় গুহায় অন্তর্যামী রূপে অবস্থান করেন। সর্বব্যাপী= সর্বব্যাপক, সঃ =তিনি, ভগবান= ভগবান, তস্মাৎ= এইজন্য, সর্বগতঃ= সর্বত্র অবস্থিত, শিবঃ= পরম মঙ্গলময়। অনুবাদ:- ঈশ্বর সর্বানন শিরোগ্রীব,অথাৎ সর্বদিকে ঈশ্বরের মুখ, মস্তক ও গ্রীবা বর্তমান।তিনি সকলের হৃদয় গুহায় অন্তর্যামীরুপে অবস্থান করেন তাই তিনি সর্বভূত গুহাশয়। তিনি সর্বব্যাপক তাই তিনি ভগবান ও মঙ্গলময়। সুতারাং সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে যিনি ঈশ্বর বা পরমেশ্বর তাঁর একটি সমার্থক শব্দ হল ভগবান।এর আরো প্রমান পাই বেদ/শ্রুতিসহ মহাভারত, গীতা, অষ্টাদশ পুরান এবং পঞ্চরাত্র ইত্যাদি শাস্ত্রে।এছাড়াও বেদসহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর। শ্রীকৃষ্ণকে বেদসহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে ঈশ্বর, পরমাত্মা,পরমব্রহ্ম শব্দে যেমন সম্বোধন করা হয়েছে ঠিক তেমনই তাকেই ভগবান শব্দে সম্বোধন করা হয়েছে। তস্মাদ্ভারত সর্বাত্মা ভগবানীশ্বরো হরিঃ। শ্রোতব্যঃ কীর্তিতব্যশ্চ স্মর্তব্যশ্চেচ্ছতাভয়ম্ ॥৫॥ -(শ্রীমদ্ভাগবত ২/১/৫) শব্দার্থঃ-তস্মাৎ=এই কারণে; ভারত=হে ভরত বংশীয়, সর্বাত্মা=পরমাত্মা; ভগবান্ = ভগবান, ঈশ্বর=নিয়ন্তা, হরিঃ-শ্রীহরি(শ্রীকৃষ্ণ),শ্রোতব্য=শ্রবণীয়; কীর্তিতব্য=কীর্তনীয়; চ=ও: স্মর্তব্যঃ=স্মরণীয়: চ= এবং; ইচ্ছতা=ইচ্ছুক; অভয়ম্= ভয় থেকে মুক্তি। অনুবাদ “হে ভারত, এই কারনে সমস্ত ভয় থেকে যারা মুক্ত হতে ইচ্ছা করেন তাদের অবশ্যই পরম নিয়ন্তা(ঈশ্বর) পরমাত্মা(সর্বাত্মা) ভগবান (ষড়ৈশ্বর্যময় পরমপুরুষ) শ্রীহরির (শ্রীকৃষ্ণ) কথা শ্রবণ, কীর্তন এবং স্মরণ করতে হবে।” অর্জুন উবাচ।”পরং ব্রহ্ম পরং ধাম পবিত্রং পরমং ভবান্।পুরুষং শাশ্বতং দিব্যমাদিদেবমজং বিভুম্।।আহুস্ত্বামৃষয়ঃ সর্বে দেবর্ষিনারদস্তথা।অসিতো দেবলো ব্যাসঃ স্বয়ং চৈব ব্রবীষি মে।।” – (গীতা ১০/১২-১৩ঃ অর্জুন) শব্দার্থঃ অর্জুন উবাচ =অর্জুন বললেন।পরম্ ব্রহ্ম= পরমব্রহ্ম; পরম ধাম=পরম ধাম,পবিত্রম= পবিত্র; পরমম্=পরম; ভবান= তুমি; পুরুষম্=পুরুষ, শাশ্বতম্ =সনাতন; দিব্যম্ =দিব্য; আদি দেবম=আদি দেব; অজম্ =জন্মরহিত; বিভুম্=মহত্তম।আহুঃ=বলেন; ত্বাম্=তোমাকে; ঋষয়ঃ =ঋষিগণ; সর্বে=সমস্ত; দেবর্ষিঃ=দেবর্ষি; নারদ=নারদ,তথা=ও; অসিতঃ= অসিত; দেবলঃ=দেবল,ব্যাসঃ=ব্যাসদেব; স্বয়ম্= তুমি নিজে; চ=ও, এব=অবশ্যই; ব্রবীমি=বলছ; মে=আমাকে। অনুবাদঃ” অর্জুন বললেন- তুমি (শ্রীকৃষ্ণ)পরমব্রহ্ম(পরমেশ্বর), পরম ধাম, পরম পবিত্র ও পরম পুরুষ। তুমি নিত্য, দিব্য, আদি দেব, অজ ও বিভু। দেবর্ষি নারদ, অসিত, দেবল, ব্যাস আদি ঋষিরা তোমাকে সেভাবেই বর্ণনা করেছেন এবং তুমি নিজেও এখন আমাকে তা বলছ।” শ্রীভগবানুবাচ। বহুনি মে ব্যতীতানি জন্মানি তব চার্জুন। তান্যহং বেদ সর্বাণি ন ত্বং বেথ পরন্তপ ।। ৫।।অজোহপি সন্নব্যয়াত্মা ভূতানামীশ্বরোহপি সন্। প্রকৃতিং স্বামধিষ্ঠায় সম্ভবাম্যাত্মমায়য়া ।। ৬।। শব্দার্থঃ গবান উবাচ = ভগবান বললেন; বহুনি=বহু, মে=আমার; ব্যতীতানি=অতিবাহিত হয়েছে; জন্মানি= জন্মসমূহ; তব= তোমার; চ=ও; অর্জুন=হে অর্জুন; তানি=সেই সমস্ত; অহম্=আমি; বেদ=জানি; সর্বাণি=সমস্ত; ন=না; ত্বম্=তুমি; বেথ= জান; পরন্তপ= হে শত্রুদমনকারী।অজ=জন্মরহিত; অপি=যদিও; সন্=হয়েও; অব্যয়=অক্ষয়; আত্মা=দেহ; ভূতানাম্=জীবসমূহের, ঈশ্বর=ঈশ্বর/পরমেশ্বর; অপি= যদিও; সন্=হয়েও; প্রকৃতিম্=চিন্ময় রূপে; স্বাম্=আমার; অধিষ্ঠায়=অধিষ্ঠিত হয়ে; সম্ভবামি=আবির্ভূত হই; আত্মমায়য়া=আমার অন্তরঙ্গা শক্তির দ্বারা। অনুবাদ-“ভগবান বললেন(শ্রীকৃষ্ণ), হে পরন্তপ অর্জুন, আমার ও তোমার বহু জন্ম অতিবাহিত হয়েছে। আমি সেই সমস্ত জন্মের কথা স্মরণ করতে পারি, কিন্তু তুমি পার না।যদিও আমি জন্মরহিত( আমার জন্ম নাই), আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং যদিও আমি সর্বভূতের (সমস্ত জীবের) ঈশ্বর, তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আমি আমার আদি চিন্ময় রূপে যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।” একো বশী সর্বগঃ কৃষ্ণ ঈড্যঃ” -গোপালতাপনী উপনিষদ ১/২১(অথর্ববেদ) অনুবাদঃ”সেই একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই পরম পুরুষোত্তম ভগবান,তিনিই আরাধ্য।” “ব্রহ্মন্যো দেবকীপুত্রঃ“ –নারায়ন উপনিষদ ৪( কৃষ্ণ যজুর্বেদ) অনুবাদঃ “দেবকীপুত্র শ্রীকৃষ্ণই পরমব্রহ্ম (পরমেশ্বর)” “এষ বৈ ভগবান সাক্ষাদাদ্যো নারায়ন পুমান। মোহয়ন্মায়য়া লোকং গূঢ়শ্চতি বৃষ্ণিষু।।” -(শ্রীমদ্ভাগবত পুরানঃ১/৯/১৮,ভীষ্মদেব) অনুবাদঃ”তোমাদের মাঝে দন্ডায়মান এই কৃষ্ণ সাক্ষাৎ ভগবান, তিনি আদি নারায়ন। কিন্তু তিনি তার নিজের সৃষ্ট মায়া শক্তির প্রভাবে আমাদের মুগ্ধ করে বৃষ্ণিকূলের একজনের মত হয়ে আমাদের মাঝে বিচরন করছেন।” “ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ। অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্ব্ব কারণকারণম্।।” –(ব্রহ্মসংহিতা ৫/১, ব্রহ্মা) অনুবাদঃ”কৃষ্ণ পরম ঈশ্বর। তার দেহ সচ্চিদানন্দময়। তিনি অনাদি ও আদি। তিনিই সর্ব্ব কারণের কারণ, তিনিই গোবিন্দ।” অনেকে প্রশ্ন করেন,এক সৃষ্টিকর্তাকে যদি ঈশ্বর এবং ভগবান বলা হয়, তাহলে সনাতনী শাস্ত্রে তো বিভিন্ন স্থানে ব্রহ্মা, শিব সহ অনেক মহান দেবদেবীদেরকেও ঈশ্বর বলা হয়েছে, তারা কি আদৌ ঈশ্বর ? এর উত্তর হল সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে প্রকৃতির বিভিন্ন বিভাগের,যেমনঃব্রহ্মা- সৃষ্টি, শিব-ধ্বংস, ইন্দ্রদেব-স্বর্গ এবং বৃষ্টি ,বরুনদেব-জল,অগ্নিদেব- অগ্নি,সূর্যদেব- আলো, সরস্বতী-বিদ্যা, কার্তিক – দেবতাদের সেনাপতি,দুর্গা-শক্তি,লক্ষ্মী-ধনসম্পদ ইত্যাদি দেবদেবীগণ হলেন এক একটি গুণের অধিপতি বা ঈশ্বর বা ঈশ্বরী বা ক্ষমতাধর,কিন্তু তারা প্রকৃতির সমস্ত বিভাগের একক ক্ষমতাধর বা ঈশ্বর নন।তাই সনাতনী শাস্ত্রে তাদেরকে সন্মানসূচক ঈশ্বর শব্দে বিভিন্ন মুনি ঋষিরা সম্বোধন করেছেন।কিন্তু তাদেরকে কেউ পরম ঈশ্বর /পরমেশ্বর বলে সম্বোধন করে নি।পরমেশ্বর হলেন একজন, যার নাম শ্রীকৃষ্ণ, যিনি
ঈশ্বর এক (একজন)নাকি বহু?

ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। তিনি অনাদির আদি।তিনি সর্বব্যাপী। তিনি এই সমগ্র জগৎ সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আবার এই জগৎকে পালন করছেন,পুনরায় তিনিই আবার এই জগৎকে ধ্বংস করবেন। তাকে সনাতনী শাস্ত্রে ভগবান,পরমব্রহ্ম,পরমাত্মা, পরমেশ্বর বলা হয়েছে। বেদসহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে সেই ঈশ্বর হলেন সাকার।অথাৎ ঈশ্বরের মস্তক(মাথা),চক্ষু (চোখ),হস্ত(হাত),পদ(পদ) ইত্যাদি সমস্ত ইন্দ্রিয় বিদ্যমান। দিবো বা বিষ্ণো উত বা পৃথিব্যা মহো বা বিষ্ণু উরোরন্তরিক্ষাৎ। উভো হি হস্তা বসুনা পূনস্বা প্রযচ্ছ দক্ষিণাদোত সব্যাদ্বিষ্ণবে দ্বা।। – (শুক্ল যজুর্বেদ ৫।১৯) অনুবাদঃ হে বিষ্ণু(ঈশ্বর),তুমি দ্যুলোক অথবা ভূলোক হতে কিংবা মহান বিস্তৃত অন্তরিক্ষলোক হতে, তোমার উভয় হস্ত ধনের দ্বারা পূর্ণ কর। এবং দক্ষিণ অথবা বাম হস্তে আমাদের তা দান কর। বেদ,রামায়ন,মহাভারত, অষ্টাদশ পুরান, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ইত্যাদি শাস্ত্র অনুসারে ঈশ্বর একজন।তথাপি তিনি তার অনন্ত শক্তির প্রভাবে বহুরুপে এবং বহুনামে নিজেকে প্রকাশ করেন। সমগ্র সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে সে এক পরমেশ্বর হলেন শ্রীকৃষ্ণ। তিনি বিষ্ণু, রাম,বলরাম,বামন,নৃসিংহ, বরাহ,কূর্ম ইত্যাদি বহুরুপে নিজেকে প্রকাশ করেন।একটি মাটির প্রদীপের অগ্নি থেকে বহু বহু মাটির প্রদীপে অগ্নি প্রজ্বলিত করা হলেও, সমস্ত প্রদীপকে দেখতে যেমন ভিন্ন ভিন্ন মনে হয়,কিন্তু তারপরেও প্রতিটি প্রদীপই যেমন এক অগ্নি,ঠিক তেমনই এক পরমেশ্বর ভগবান হলেন শ্রীকৃষ্ণ, তিনি তার অনন্ত শক্তির প্রভাবে বিষ্ণু,রাম, বলরাম,নৃসিংহ ইত্যাদি বহুরুপে প্রকাশিত বা আবির্ভূত হলেও মূলত তারা এক পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। ১/একো বশী সর্বভূতান্তরাত্মা একং রূপং বহুধা যঃ করোতি। তমাত্মস্থং যেহনুপশ্যন্তি ধীরাস্তেষাং সুখং শাশ্বতং নেতরেষাম্’।। ১২ ৷। -কঠোপনিষৎঃ ২/২/১২ ( কৃষ্ণ যজুর্বেদ) শব্দার্থঃ একঃ=এক, বশী= নিয়ন্ত্রক/নিয়ন্তা, সর্বভূতান্তরাত্মা=সর্ব জীবের অন্তরাত্মা,একম রুপম বহুধা=এক /অদ্বিতীয় স্বরুপ / রুপ থেকে বহু রুপ,য= যিনি/তিনি, করোতি=করেন।তম্ আত্মস্থম্=তাঁকে অন্তরস্থিতরূপে;যে=যে,অনুপশ্যন্তি=নিরন্তর দর্শন করেন,ধীরাঃ = জ্ঞানী পুরুষেরা,তেষাম্ =তাঁদের; সুখম শাশ্বতম্ = শাশ্বত সুখ (পরমানন্দস্বরূপ বাস্তবিক সুখ প্রাপ্তি হয়),ন= নয়,ইতরেষাম্ =অপরের । ১২॥ অনুবাদঃ যিনি একক নিয়ন্তা, সর্ব জীবের অন্তরাত্মা, যিনি এক /অদ্বিতীয় স্বরুপ / রুপ থেকে বহু রুপ ধারন করেন,তাঁকে অন্তরস্থিতরূপে জ্ঞানী পুরুষেরা নিরন্তর দর্শন করে শাশ্বত সুখ লাভ করেন।কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে তা লাভ করা সম্ভবপর নয়। ২/”সহস্রং স একমুখো” ঈশ্বরের সহস্র রূপ তথাপি তিনি এক। –অথর্ববেদ ৯/৪/৯ ৩/”সহস্রস্য প্রতিমা বিশ্বরুপম।।”এক পরম ঈশ্বরের অসংখ্য রুপের প্রতিমা বা মূর্তি বা রুপ রয়েছে। – শুক্ল যজুর্বেদঃ ১৩/৪১ ৪/”তদৈক্ষত বহুস্যাং প্রজায়েয়তি” -পরমেশ্বর বহু রুপে নিজেকে বিস্তার করেন। -ছান্দোগ্য উপনিষদ ৬/২/৩( সামবেদ) ৫/”অজায়মানো বহুধা বিজায়তে“ -সেই পরমেশ্বর যদিও জন্মরহিত তথাপিও তিনি বহুরুপে জন্মগ্রহণ করেন। -শুক্ল যজুর্বেদ -৩১/১৯,তৈত্তিরীয় আরন্যক ৩/১৩/১ ৬/যে ত্রিষপ্তাঃ পরিয়ন্তি বিশ্বরুপানি বিভ্রতঃ। বাচষ্পতির্বলা তেষা তন্বো অদ্য দধাতু মে।। – অথর্ববেদ ১/১/১ অনুবাদঃ”যিনি (যে) স্বর্গ, মত্য এবং পাতাল এই তিন লোক (ত্রিষপ্তা) জুড়ে পরিব্যাপ্ত ( পরিয়ন্তি),সেই ঈশ্বর বহুরূপ (বিশ্বরুপানি) ধারী ( বিভ্রত)। সে ঈশ্বর (বাচষ্পতি) তাহার শক্তি ( বলা তেষা) আমার শরীরে ( তন্বো) তিনি আমাকে দান করুন ( অদ্য দধাতু মে)।” ৭/রুপং রুপং প্রতিরুপো বভূব তদস্য রুপং প্রতিচক্ষণায়। ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরুপ ঈয়তে যুক্তা হ্যস্য হরয়ঃ শতা দশ।। -ঋগ্বেদ ৬/৪৭/১৮ অনুবাদঃ ঈশ্বর (ইন্দ্র), বিভিন্ন রুপ বা দেহ ধারন করেন। এবং সে রুপ ধারন করে তিনি পৃথকভাবে প্রকাশিত হন।তিনি তার অন্তরঙ্গা শক্তি দ্বারা বিবিধ রুপ ধারন করে যজমানগণের নিকট উপস্থিত হন।কারন তার রথ সহস্র অশ্ব সংযুক্ত(অনন্ত শক্তি), অথাৎ তিনি অসীম ক্ষমতার অধিকারী। ৮/”একো দেবো নিত্যলীলানুরক্তো ভক্তব্যাপী হৃদ্যন্তরাত্মা” -(পুরুষবোধিনী উপনিষদ) অনুবাদঃ –এক ও অদ্বিতীয় পরমেশ্বর ভগবান নানা দিব্যরুপে তার শুদ্ধ ভক্তদের সঙ্গে লীলা সম্পাদনে নিত্য অনুরক্ত। একই কথা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবদগীতার ৪/৬,৭,৮ নং শ্লোকে বর্ণনা করেন.. ৯/অজোহপি সন্নব্যায়িত্মা ভূতানামীশ্বরোহপি সন। প্রকৃতিং স্বামহধিষ্ঠায় সম্ভবাম্যাত্মমায়য়া।। যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানি ভবতি ভারত।অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম।।পরিত্রানায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম।ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।জন্ম কর্ম চ মে দিব্যমেবং যো বেত্তি তত্ত্বতঃ।ত্যক্ত্বা দেহং পুনর্জন্ম নৈতি মামেতি সোহর্জুন।। – (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ৪/৬,৭,৮,৯) অনুবাদঃ হে অর্জুন, যদিও আমি সমস্ত জীবের ঈশ্বর,যদিও আমার জন্ম নেই ( অজ)এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় ।তবুও আমি আমার অন্তরঙ্গ শক্তিকে আশ্রয় করে অবতীর্ণ হই।যখনই জগতে ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের পরিমান বেড়ে যায়,তখনই সাধুদের (ভক্ত) রক্ষা ও দুষ্কৃতিকারীদের বিনাশ এবং ধর্ম সংস্থাপন হেতু যুগে যুগে অবতীর্ন হই।হে অর্জুন! যিনি আমার এই প্রকার দিব্য জন্ম ও কর্ম যথাযথভাবে জানেন, তাঁকে আর দেহত্যাগ করার পর পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে হয় না, তিনি আমার নিত্য ধাম ( চিন্ময় জগৎ) লাভ করেন। এছাড়াও এ সম্পর্কে অথর্ববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদে বলা হয়েছে – ১০/একো বশী সর্বগঃ কৃষ্ণ ঈড্য একোহপি সন্ বহুধা হো বিভাতি। -গোপালতাপনী উপনিষদ ১/২১ (অথর্ববেদ) অনুবাদঃ একমাত্র শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরম পুরুষোত্তম ভগবান এবং তিনিই আরাধ্য।তিনি এক,কিন্তু তিনি অনন্ত রুপের মাধ্যমে প্রকাশিত হন। ব্রহ্মসংহিতা শাস্ত্রেও এ সম্পর্কে বলা হয়েছে – ১১/দীপার্চ্চিরেব হি দশান্তরমভ্যুপেত্য দীপায়তে বিবৃতহেতুসমানধৰ্ম্মা। যস্তাদৃগেব হি চরিষ্ণুতয়া বিভাতি গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।।৪৬।। -(ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৬) অনুবাদঃ এক মূল প্রদীপের জ্যোতিঃ(অগ্নি) যেমন অন্য বর্তি বা বাতি-গত হয়ে বিস্তার (বিবৃত) হেতু সমান ধর্মের সাথে পৃথক প্রজ্বলিত হয়, সেইরূপ যিনি বিষ্ণুরুপে( রিষ্ণু) প্রকাশ পান, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে (শ্রীকৃষ্ণ) আমি ভজনা করি ।” ১২/যস্যৈকনিশ্বসিতকালমথাবলম্ব্য জীবন্তি লোমবিলোজা জগদগুনাথাঃ। বিষ্ণুর্মহান্ স ইহ যস্য কলাবিশেষো গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।।৪৮ -(ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৮) অনুবাদঃ মহাবিষ্ণুর একটি নিশ্বাস বের হয়ে যে কাল পর্যন্ত অবস্থান করে, তাঁর রোমকূপজাত ব্রহ্মাণ্ডপতি ব্রহ্মাদি সেই-কালমাত্র জীবিত থাকেন। সেই মহাবিষ্ণু-যাঁর কলাবিশেষ অর্থাৎ অংশের অংশ, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে (শ্রীকৃষ্ণ)আমি ভজনা করি।।৪৮।। ১৩/রামাদিমূর্তিষু কলানিয়মেন তিষ্ঠন নানাবতারমকরোদ্ভূবনেষু কিন্তু। কৃষ্ণ স্বয়ং সমভবৎ পরমঃ পুমান্ যো গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ॥ ৩৯ ॥ -(ব্রহ্মসংহিতা৫/৩৯) অনুবাদঃ যে পরমপুরুষ স্বাংশ কলাদি নিয়মে রাম, নৃসিংহ ইত্যাদি মূর্তিতে স্থিত হয়ে ভুবনে নানাবতার প্রকাশ করেছিলেন এবং স্বয়ং কৃষ্ণরূপে প্রকট হয়েছিলেন, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে (শ্রীকৃষ্ণ) আমি ভজনা করি। হরে কৃষ্ণ। প্রনাম সদগুন মাধব দাস। স্বধর্মম্ : Connect to the inner self.