জগন্নাথদেব কে? বেদে কি পরমেশ্বর দারুব্রহ্ম জগন্নাথদেবের কথা বর্ণিত আছে?

IMG 20250620 WA0001 Svadharmam

জগন্নাথঃ ঋগ্বেদের আশ্বলায়ন শাখা ০৭.৫৬.০৪-০৫, সামবেদীয় ছান্দোগ্য উপনিষদ৩.১৭.৬-৭,কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় নারায়ন উপনিষদ ৪,অথর্ববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদ ১/২১,১/২৪,কৃষ্ণ উপনিষদ এবং কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় কলির্সন্তরন উপনিষদ ২ ইত্যাদি বেদ বা শ্রুতি শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবান গোলকপতি শ্রীকৃষ্ণের মহিমা বর্ণিত আছে।অথর্ববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদে বলা হয়েছে, “একো বশী সর্বগঃ কৃষ্ণ ঈড্যঃ” সেই একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই পরম পুরুষোত্তম ভগবান,তিনিই আরাধ্য।- গোপালতাপনী উপনিষদ ১/২১(অথর্ববেদ) বেদসহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রের শিক্ষা অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান। সমগ্র বেদ শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণের মহিমা আলোচিত হয়েছে।এ বিষয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতা১৫/১৫ বলেন, “বেদৈশ্চ সবৈররহমেব বেদ্যো” আমি সমগ্র বেদে জ্ঞাতব্য।শ্রীকৃষ্ণকে বেদে বিষ্ণু, কৃষ্ণ,গোপাল ( চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবনে তিনি গোচারন করেন, তাই শ্রীকৃষ্ণের এক নাম গোপাল), দেবকীপুত্র ইত্যাদি নামে সম্বোধন করা হয়েছে। ঋগ্বেদীয় পুরুষসুক্ত,বিষ্ণু সুক্ত,এবং কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় নারায়ন সুক্তে সমগ্র জগৎব্যাপী বিষ্ণুর বিরাটরুপ বা বিশ্বরুপের বর্ণনা করা হয়েছে,যে বিশ্বরুপটি গীতার বর্ণনা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে দর্শন দান করেন( গীতা ১১/৫-৪৪)।এবং একই গীতা শাস্ত্রে অর্জুনের ইচ্ছা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে চতুর্ভূজ বিষ্ণুরুপ প্রদর্শন করেন(গীতা ১১/৪৬,৫০)।তাই মহাভারতে বহুবার শ্রীকৃষ্ণকে শ্রীবিষ্ণু নামে সম্বোধন করা হয়েছে (“অনুগ্রহার্থং লোকানাং বিষ্ণুলোক নমস্কৃতঃ।বসুদেবাত্তু দেবক্যাং প্রাদুর্ভূতো মহাযশাঃ।।”- “ত্রিজগতের পূজনীয় মহাযশস্বী স্বয়ং বিষ্ণু লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য বসুদেব-দেবকীতে আবির্ভূত হইয়া ছিলেন৷” -মহাভারত আদিপর্ব, ৫৮/১৩৮)। সে শ্রীকৃষ্ণ বা বিষ্ণু হলেন স্বয়ং দারুব্রহ্ম জগন্নাথ।দারুব্রহ্ম জগন্নাথ রুপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উৎকল বা উড়িষ্যায় সমুদ্রের তীরবর্তী শ্রীক্ষেত্র পুরুষোত্তম ধাম জগন্নাথ পুরীতে নিত্য বিরাজমান। বেদের বর্ণনায় জগন্নাথঃ স্কন্দ পুরাণ শাস্ত্রের বিষ্ণু খন্ড,পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য,১-২১ তম অধ্যায়ের বর্ণনা অনুযায়ী, বিষ্ণুভক্ত ইন্দ্রদ্যুম্নের প্রার্থনায় স্বয়ং বিষ্ণু দারুরুপে উড়িষ্যার দক্ষিণ সাগরের তটে অবস্থান করেন। পরে ইন্দ্রদ্যুম্ন সেবকগন কতৃর্ক সেই দারুকে মহাবেদীতে স্থাপন করেন।ইন্দ্রদ্যুম্নের প্রার্থনায় ভগবান বিষ্ণু যিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তিনি দারু থেকে জগন্নাথ( শ্রীকৃষ্ণ), বলদেব (বলরাম), সুভদ্রা এবং সুদর্শনরুপে প্রকাশিত হয়েছিলেন। বেদ শাস্ত্রে সমুদ্রের তীরবর্তী দারুব্রহ্ম জগন্নাথের কথা বর্ণিত আছে। অদো যদ্ দারু প্লবতে সিন্ধোঃ পারে অপূরুষম্। তদা রভস্ব দুর্হণো তেন গচ্ছ পরস্তরম্।। –(ঋগ্বেদ সংহিতাঃ শাকল শাখা ১০/১৫৫/৩) অনুবাদঃ ঐ দূরদেশে, সমুদ্রের পারে কোন প্রযত্ন ছাড়াই প্রকাশিত অপৌরুষেয় দারু ভাসছে– হে চিরঞ্জীবী স্তুতিকর্তা– তাঁর উপাসনা কর। সেই দারুময় বিগ্রহের উপাসনায় তুমি শ্রেষ্ঠতর দিব্যলোক প্রাপ্ত করবে। জয় জগন্নাথ। হরে কৃষ্ণ।প্রনাম   

মুর্খের দৃষ্টিতে শ্রীকৃষ্ণ সাধারন মানুষ কিন্তু জ্ঞানীর দৃষ্টিতে শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবানঃ

IMG 20250619 WA0002 Svadharmam

সমগ্র বিশ্বব্রহ্মান্ডের কে পরমেশ্বর ভগবান, তার বর্ণনা আমরা সনাতনী বেদ বা শ্রুতি,পুরাণ, মহাভারত আদি শাস্ত্র থেকে জানতে পারি।শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর ভগবান এ বিষয়টি যেমন বেদ বা শ্রুতিতে বর্ণিত আছে, তেমনই মহাভারত,অষ্টাদশ পুরাণ, গীতা আদি শাস্ত্রে বর্ণিত আছে। সমগ্র মহাভারত শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবিষ্ণু বলা হয়েছে। অনুগ্রহার্থং লোকানাং বিষ্ণু লোক নমস্কৃতঃ।  বসুদেবাত্তু দেবক্যাং প্রাদুর্ভূতো মহাযশাঃ।। -(মহাভারত, আদিপর্ব ৫৮/১৩৮) অনুবাদঃ ত্রিজগতের পূজনীয় মহাযশস্বী স্বয়ং বিষ্ণু লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য বসুদেব-দেবকীতে আবির্ভূত হইয়াছিলেন৷ শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩/৯-১০ শ্লোকে দেখানো হয়েছে, শ্রীকৃষ্ণ দেবকীর গর্ভ থেকে চতুর্ভুজ অদ্ভুত এক বালক রুপে আবির্ভুত হয়েছেন, এবং দেবকীর প্রার্থনায় শ্রীকৃষ্ণ পুনরায় তার আদি চিন্ময় দ্বিভুজ রুপে পরিনত হলেন। তমদ্ভুতং বালকমম্বুজেক্ষণ চতুর্ভুজং শঙ্খগদাদ্যুদায়ুধম্। – (শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩/৯) অনুবাদঃ বসুদেব তখন দেখলেন যে,সেই নবজাত শিশুটির চার হাতে শঙ্খ,চক্র,গদা এবং পদ্ম। তাছাড়া ভগবদগীতা শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণ নিজের মুখে বর্ণনা করেন তিনি হলেন পরমেশ্বর ভগবান।তিনি আরো বর্ণনা করেন, ব্রহ্মা,নারদ,ব্যাসদেব ইত্যাদি জ্ঞানীগণ তাঁকে পরমেশ্বর ভগবান রুপে জেনে তাঁর ভজনা করেন। অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বম প্রবতর্তে। ইতি মত্বা ভজন্তে মাং বুধা ভাব সমন্বিতা -( গীতা ১০/৮) অনুবাদঃ আমিই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা,সবকিছু আমার থেকে সৃষ্টি হয়েছে।এরুপ জেনে জ্ঞানীরা আমার ভজনা করেন। মহান জ্ঞানীরুপে ব্রহ্মাজী ব্রহ্মসংহিতায় বর্ণনা করছেন,শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান। ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ। অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্ব্বকারণকারণম্।।” -(ব্রহ্মসংহিতা৫/১ঃ ব্রহ্মা) অনুবাদঃকৃষ্ণ পরম ঈশ্বর। তিনি সচ্চিদানন্দবিগ্রহ। তিনি অনাদি ও আদি। কেননা তিনিই সর্ব্ব কারণের কারণ, তিনিই গোবিন্দ। শ্রীমদ্ভাগবতে মহান জ্ঞানীরুপে মহাদেব শিব ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পরমব্রহ্ম অথাৎ পরমেশ্বর ভগবান শব্দে সম্বোধন করলেন।  ত্বং হি ব্রহ্ম পরং জ্যোতিগূঢ়ং ব্রহ্মনি বাঙ্ময়ে। যং পশ্যন্ত্যমলাত্মান আকাশমিব কেবলম।। -(শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ১০/৬৩/৩৪) অনুবাদঃ হে শ্রীকৃষ্ণ!আপনিই একমাত্র পরম ব্রহ্ম,পরম জ্যোতিস্বরুপ,শব্দব্রহ্মে গূঢ়ভাবে অবস্থিত পরম তত্ত্ব, যাদের হৃদয় নির্মল,তারাই আকাশের মতো শুদ্ধস্বরুপ আপনাকে দর্শন করতে পারে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শাস্ত্রে অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে পরমব্রহ্ম অথাৎ পরমেশ্বর ভগবান শব্দে সম্বোধন করলেন।সেইসাথে তিনি শ্রীকৃষ্ণকে আরো বললেন, দেবর্ষি নারদ, অসিত, দেবল, ব্যাস আদি মহান মুনি ঋষিরা বা জ্ঞানীগণ তোমাকে পরমেশ্বর ভগবানরুপে বর্ণনা করেছেন এবং তুমি নিজেও এখন আমাকে তা বলছ। পরং ব্রহ্ম পরং ধাম পবিত্রং পরমং ভবান। পুরুষং শাশ্বতং দিব্যমাদিদেবমজং বিভুম।। আহুস্ত্বামৃষয়ঃ সর্বে দেবর্ষির্নারদস্তথা। অসিতো দেবলো ব্যাসঃ স্বয়ং চৈব ব্রবীষি মে।। -(গীতা ১০/১২-১৩) অনুবাদঃ  তুমি(শ্রীকৃষ্ণ)  পরমব্রহ্ম অর্থাৎ পরমেশ্বর ভগবান, পরম আশ্রয়,পরম পবিত্র ও পরম পুরুষ। তুমি নিত্য, দিব্য,আদি দেব, অজ ও বিভু। দেবর্ষি নারদ, অসিত, দেবল, ব্যাস আদি মহান মুনি ঋষিরা তোমাকে পরমেশ্বর ভগবানরুপে বর্ণনা করেছেন এবং তুমি নিজেও এখন আমাকে তা বলছ। শ্রীমদ্ভাগবতে মহান জ্ঞানীরুপে ভীষ্মদেব পঞ্চপান্ডবদের শিক্ষা দিচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ হলেন সাক্ষাৎ ভগবান। তিনি হলেন আদি নারায়ন। এষ বৈ ভগবান সাক্ষাদাদ্যো নারায়ন পুমান। মোহয়ন্মায়য়া লোকং গূঢ়শ্চতি বৃষ্ণিষু।। -(শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ১/৯/১৮) অনুবাদঃ তোমাদের সাথে দন্ডায়মান এই কৃষ্ণ সাক্ষাৎ ভগবান, তিনি আদি নারায়ন। কিন্তু তিনি তার নিজের সৃষ্ট মায়া শক্তির প্রভাবে আমাদের মুগ্ধ করে বৃষ্ণিকূলের একজনের মত হয়ে আমাদের মাঝে বিচরন করছেন। কিন্তু তারপরও একদল মূর্খ, সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলা হলেও অথবা সনাতনী শাস্ত্রে পূ্র্বতন নারদ, ব্যাস, ভীষ্ম,শিব,ব্রহ্মা আদি মহাত্মা,মহাজন, ঋষি ইত্যাদি  জ্ঞানীদের উপদেশ শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান, পরমব্রহ্ম, পরমাত্মা, তা গ্রহণ না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে যে, শ্রীকৃষ্ণ হলেন তাদের মতোই একজন সাধারন মানুষ,তিনি কখনো পরমেশ্বর ভগবান হতে পারেন না।এদের সম্পর্কে পূর্ব থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জানতেন,তাই ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন-  অবজানন্তি মাং মূঢ়া মানুষীং তনুমাশ্রিতম। পরং ভাবম অজানন্তো মম ভূত মহেশ্বরম।। -(গীতা ৯/১১) শব্দার্থঃ অবজানন্তি- অবজ্ঞা করে,মাম- আমাকে,মূঢ়া-মূর্খব্যাক্তিরা,মানুষীম-মনুষ্যরুপে, তনুম-শরীর,আশ্রিতম- ধারন করি,পরম- পরম,ভাবম-তত্ত্ব,অজানন্ত- না জেনে,মম- আমার,ভূত- সব কিছুর/সমস্ত সৃষ্টির ,মহেশ্বরম- মহান ঈশ্বর। অনুবাদঃ আমি যখন মনুষ্যরুপে অবতীর্ণ হই, তখন মূর্খেরা আমাকে অবজ্ঞা করে।তারা আমার পরম ভাব সমন্ধে অবগত নয়।তাই তারা আমাকে সমস্ত সৃষ্টির মহান ঈশ্বর রুপে জানে না।   হরে কৃষ্ণ।প্রনাম  

শ্রীকৃষ্ণের জন্মের পূ্র্বে যদি বেদ সৃষ্টি হয়,তাহলে কিভাবে তাঁর থেকে বেদ শাস্ত্রের সৃষ্টি হতে পারে?

IMG 20250620 WA0000 Svadharmam

বেদ হল সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ।বেদের অপর নাম শ্রুতি।বেদ বা শ্রুতি চারপ্রকার –ঋগ্,যর্জু, সাম,অর্থব।প্রতিটি বেদ বা শ্রুতি আবার চারপ্রকার-সংহিতা ( উপাসনা কান্ড), ব্রাহ্মণ( কর্মকান্ড),আরন্যক এবং উপনিষদ(জ্ঞানকান্ড)।অথাৎ প্রতিটি বেদ বা শ্রুতি শাস্ত্রের প্রথম ভাগ হল সংহিতা।দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ভাগ হল বহুবিধ ব্রাহ্মণ ও আরন্যক ।এরপর চতুর্থ ভাগ হল উপনিষদসমূহ।উপনিষদ যেহেতু প্রতিটি বেদের সর্বশেষ ভাগ তাই উপনিষদকে বেদান্ত বা বেদ শাস্ত্রের অন্তভাগও বলা হয়। এখন আপনার প্রশ্ন হল,শ্রীকৃষ্ণের জন্মের পূর্বে তো বেদ শাস্ত্রের সৃষ্টি হয়েছে। তাহলে বেদশাস্ত্রে কিভাবে শ্রীকৃষ্ণ থেকে সৃষ্টি হতে পারে?এর উত্তর হল.. ব্রহ্মসংহিতা,মহাভারত, স্কন্দ পুরান, পদ্মপুরান,ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান আদি অষ্টাদশ পুরান, গোপালতাপনী উপনিষদ ইত্যাদি শাস্ত্রের বর্ণনা অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ তার স্বধাম চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবনে নিত্য বিরাজমান (ব্রহ্মসংহিতা৫/৪৩)। অথর্ববেদের অন্তর্গত গোপালতাপনী উপনিষদ,কৃষ্ণ উপনিষদ, সামবেদের অন্তর্গত ছান্দোগ্য উপনিষদ,কৃষ্ণ যজুর্বেদের অন্তর্গত নারায়ন উপনিষদ ইত্যাদি শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলা হয়েছে।  “ব্রহ্মন্যো দেবকীপুত্রঃ” –নারায়ন উপনিষদ ৪( কৃষ্ণ যজুর্বেদ) অনুবাদঃ -দেবকীপুত্র শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর ভগবান। “একো বশী সর্বগঃ কৃষ্ণ ঈড্যঃ” – গোপালতাপনী উপনিষদ ১/২১(অথর্ববেদ) অনুবাদঃ -সেই একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই পরম পুরুষোত্তম ভগবান,তিনিই আরাধ্য। মৎস্যপুরাণ৬৯/৬-৮,স্কন্দপুরাণ- প্রভাসখণ্ড ১৯/৭১-৭৮, চৈ. চঃ আদি.৩/৫-১০ অনুসারে,” প্রতি দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণ এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হন না,শুধুমাত্র ব্রহ্মার একদিনে( “সহস্রযুগপর্যন্তমর্যদ বিদু” ব্রহ্মার ১ দিন সমান মনুষ্যজীবের ১০০০ চতুর্যুগ”- গীতা ৮/১৭) মাত্র একবার অথাৎ অষ্টাবিংশ দ্বাপর যুগের শেষভাগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এ পৃথিবীতে আবির্ভুত হন। বৈবস্বতাখ্যে সঞ্জাতে সপ্তমে সপ্তলোক-কৃৎ। দ্বাপরাখ্যং যুগং তদ্বদষ্টাবিংশতিমং জগুঃ।। তস্যান্তে স মহাদেবো বাসুদেবো জনার্দ্দনঃ। ভারাবতরণার্থায় ত্রিধা বিষ্ণুর্ভবিষ্যতি।। দ্বৈপায়নঋষিন্তব্বদ্রৌহিণেয়োঽথ কেশবঃ। কংসাদি-দর্পমত্থনং কেশবঃ ক্লেশনাশনঃ।। -মৎস্যপুরাণেঃ৬৯/৬-৮ অনুবাদঃ বৈবস্বতাখ্য সপ্তম মন্বন্তর উপস্থিত হলে তাহার যে অষ্টাবিংশতিতম দ্বাপর যুগ, সেই যুগের শেষভাগে সপ্তলোককর্তা মহাদেব বাসুদেব জনার্দ্দন ভূভার-হরণের জন্য দ্বৈপায়ন, রৌহিণেয় ও কেশব এই ত্রিধা মূর্তিতে আবির্ভূত হইবেন। সেই কেশব কংসাদি দর্প দলন করে সকলকে ক্লেশাপনয়ন করবেন। বৈবস্বতেঽস্তরে প্রাপ্তে যশ্চায়ং বর্ত্ততেঽনা। দ্বাপরে বিষ্ণুরষ্টাবিংশে পরাশরাৎ বেদব্যাসস্ততো জজ্ঞো। তত্রৈব দেবক্যাং বসুদেবাত্তু ব্রহ্মগর্গ-পুরঃসরঃ। একবিংশতমস্যাস্য দ্বাপরস্যাংশসঙ্ক্ষয়ে। নষ্টে ধর্মে তদা জজ্ঞে বিষ্ণুর্বৃষ্ণিকুলে স্বয়ং। -(স্কন্দপুরাণঃপ্রভাসখণ্ড ১৯।৭১-৭৮) অনুবাদঃ এখন যে বৈবস্বত মন্বন্তর চলছে, সেই মন্বন্তরে অষ্টাবিংশচতুর্যুগীয় দ্বাপরে পরাশর হতে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন জন্মগ্রহণ করেন। সেই দ্বাপরেই ব্রহ্মর্ষি গর্গমুনিকে অগ্রে করে বসুদেব হতে দেবকীতে ভগবান জন্মগ্রহণ করেন। এই দ্বাপরের একবিংশতিতম সন্ধ্যাংশের সম্যক ক্ষয়ে (দ্বাপরের শেষভাগে) ধর্মহানি হলে যদুকূলে স্বয়ং বিষ্ণু (স্বয়ংরূপ কৃষ্ণ) জন্মলীলা করেন। পূর্ন ভগবান কৃষ্ণ ব্রজেন্দ্রকুমার। গোলোকে ব্রজের সহ নিত্য বিহার।। ব্রহ্মার এক দিনে তিহোঁ অবতার। অবতীর্ণ হঞা করেন প্রকট বিহার। সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি,চারিযুগ জানি। সেই চারিযুগ দিব্য একযুগ মানি।। একাত্তর চতুর্যুগে এক মন্বন্তর। চৌদ্ধ মন্বন্তর ব্রহ্মার দিবস ভিতর।। ” বৈবস্বত” – নাম এই সপ্তম মন্বন্তর। সাতাইশ চতুর্যুগ তাহার ভিতর।। অষ্টাবিংশ চতুর্যুগে দ্বাপরের শেষে। ব্রজের সহিতে হয় কৃষ্ণের প্রকাশে।। -( শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতঃ আদি.৩/৫-১০) অনুবাদঃ ব্রজরাজের পুত্র শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান। তিনি ব্রজধাম সহ তার নিত্য আলয় গোলক বৃন্দাবনে নিত্য লীলাবিলাস করছেন।ব্রহ্মার একদিনে একবার তিনি তার অপ্রাকৃত লীলা প্রকট করার জন্য এই জড়জগতে অবতীর্ণ হন। আমরা জানি যে সত্য, দ্বাপর ও কলি এই চারটি যুগ রয়েছে। এই চারটি যুগকে একত্রে এক দিব্যযুগ বলা হয়। একাত্তরটি দিব্যযুগে এক মন্বন্তর হয়। ব্রহ্মার এক দিনে চৌদ্ধটি মন্বন্তর রয়েছে। বর্তমান সপ্তম মন্বন্তরে মনু হচ্ছেন বৈবস্বত।তার আয়ুষ্কালের সাতাশ দিব্যযুগ গত হয়েছে। অষ্টাবিংশতি দিব্য যুগের দ্বাপর যুগের শেষভাগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার নিত্য ব্রজধামের সমস্ত উপকরণসহ এই জড় জগতে আবির্ভূত হন। এইভাবে ব্রহ্মার শতবছরে শ্রীকৃষ্ণ বহুবার এই মত্যলোকে আবির্ভূত হন, দুষ্টের দমন, সৃষ্টের পালন, এবং ধর্ম সংস্থাপন করেন।আজ থেকে ৫২৪৯বছর (২০২৩ ইংরেজী অনুযায়ী) পূর্বে দ্বাপর যুগের শেষভাগে বর্তমান ভারতের মথুরা প্রদেশে কংসের কারাগারে বসুদেব এবং দেবকী মাতার অষ্টম পুত্ররুপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এ জড় জগতে আবির্ভূত হন। অথর্ববেদের অন্তগর্ত গোপালতাপনী উপনিষদ অনুসারে এই জড় ব্রহ্মান্ড সৃষ্টির পর প্রথম ব্রহ্মাকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বেদ জ্ঞান প্রদান করেন। যো ব্রহ্মাণং বিদধাতি পূর্বং যো বিদ্যাতস্মৈ গোপয়তিস্ম কৃষ্ণ। -গোপালতাপনী উপনিষদ১/২৪ (অথর্ববেদ) অনুবাদঃ শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মাকে প্রথমে বেদবিদ্যা প্রদান করেন।এবং তিনিই সেই জ্ঞান আদিকালে ( সৃষ্টির শুরুতে) প্রদান করেছিলেন। কৃষ্ণ যর্জুবেদের অন্তর্গত শ্বেতাশ্বেতর উপনিষদেও একই কথা বলা হয়েছে।সেখানে বলা হয়েছে, পরমেশ্বর ভগবান প্রথম ব্রহ্মাকে বেদজ্ঞান প্রদান করেন। যো ব্রহ্মাণং বিদধাতি পূর্বং যো বৈ বেদাংশ্চ প্রহিনোতি তমৈ।তং হ দেবমাত্মবুদ্ধি প্রকাশং মুমুক্ষুবৈ শরণমহং প্রপদ্যে।। -শ্বেতাশ্বেতর উপনিষদ ৬/১৮ (কৃষ্ণ যজুর্বেদ) অনুবাদঃ  যিনি সৃষ্টির প্রারম্ভে ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করেছেন,তিনি তার উদ্দেশ্যে বেদ বিদ্যা প্রেরণ করেছেন, আত্মবিষয়ক বুদ্ধির প্রকাশক সেই পরমেশ্বরের(শ্রীকৃষ্ণের) নিকট আমি শরণাপন্ন হই। পরিশেষে,উপরোক্ত আলোচনায় স্পষ্টভাবে বুঝা যায়,আজ থেকে ৫ হাজার বছর পূর্বে শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপরযুগে আবির্ভূত হলেও বেদ বা শ্রুতি প্রমান অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান,তিনি এ জগৎ সৃষ্টির সূচনা লগ্নে ব্রহ্মাকে বেদজ্ঞান প্রদান করেন।ব্রহ্মার প্রতিদিবসে একবার শ্রীকৃষ্ণ আবির্ভূত হন,এইভাবে শ্রীকৃষ্ণ অসংখ্যবার এই জড় জগতে আবির্ভূত হন।অথর্ববেদের গোপালতাপনী উপনিষদ অনুসারে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রথমে বেদজ্ঞান ব্রহ্মাকে দান করেন।এরপর ঋষিগন সে বেদজ্ঞান ধ্যানের মাধ্যমে ব্রহ্মা থেকে প্রাপ্ত হন।এভাবে গুরু শিষ্য পরম্পরায় বেদ জ্ঞান সত্য থেকে দ্বাপর যুগ পর্যন্ত প্রবাহিত হয়।দ্বাপর যুগের শেষে দিকে ভগবানের শক্ত্যাবেশ অবতার ( শক্তির আবেশ অবতার) শ্রীল ব্যাসদেব বেদ লিপিবদ্ধ করেন। হরে কৃষ্ণ।প্রনাম ©️ স্বধর্মম্ : Connect to the inner self

বেদ কার থেকে এসেছে বা প্রকাশিত হয়েছে?

IMG 20250619 WA0017 Svadharmam

অথর্ববেদের গোপালতাপনী উপনিষদ এবং কৃষ্ণ যজুর্বেদের নারায়ন উপনিষদ অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান। “একো বশী সর্বগঃ কৃষ্ণ ঈড্যঃ”-সেই একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই পরম পুরুষোত্তম ভগবান,তিনিই আরাধ্য। – (গোপালতাপনী উপনিষদ ১/২১)। “ব্রহ্মন্যো দেবকীপুত্রঃ”-দেবকীপুত্র শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর ভগবান। (নারায়ন উপনিষদ ৪)।” অথর্ববেদের গোপালতাপনী উপনিষদ অনুসারে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ থেকে বেদের সৃষ্টি হয়।তিনিই প্রথম বেদজ্ঞান ব্রহ্মাকে দান করেন। যো ব্রহ্মাণং বিদধাতি পূর্বং যো বিদ্যাতস্মৈ গোপয়তিস্ম কৃষ্ণ। -গোপালতাপনী উপনিষদ১/২৪ (অথর্ববেদ) অনুবাদঃ শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মাকে প্রথমে বেদবিদ্যা প্রদান করেন।এবং তিনিই সেই জ্ঞান আদিকালে ( সৃষ্টির শুরুতে) প্রদান করেছিলেন। কৃষ্ণ যর্জুবেদের অন্তর্গত শ্বেতাশ্বেতর উপনিষদেও একই কথা বলা হয়েছে।সেখানে বলা হয়েছে, পরমেশ্বর ভগবান প্রথম ব্রহ্মাকে বেদজ্ঞান প্রদান করেন। যো ব্রহ্মাণং বিদধাতি পূর্বং যো বৈ বেদাংশ্চ প্রহিনোতি তমৈ।তং হ দেবমাত্মবুদ্ধি প্রকাশং মুমুক্ষুবৈ শরণমহং প্রপদ্যে।। -শ্বেতাশ্বেতর উপনিষদ ৬/১৮ (কৃষ্ণ যজুর্বেদ) অনুবাদঃ যিনি সৃষ্টির প্রারম্ভে ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করেছেন,তিনি তার উদ্দেশ্যে বেদ বিদ্যা প্রেরণ করেছেন, আত্মবিষয়ক বুদ্ধির প্রকাশক সেই পরমেশ্বরের(শ্রীকৃষ্ণের) নিকট আমি শরণাপন্ন হই। এরপর ব্রহ্মার মুখ থেকে বেদজ্ঞান প্রকাশিত হয়। ঋষিগন সে বেদজ্ঞান ধ্যানের মাধ্যমে ব্রহ্মা থেকে প্রাপ্ত হন।ঋষিগন তাদের শিষ্যদের মাঝে বেদজ্ঞান শিক্ষা প্রদান করেন।এভাবে গুরু থেকে শিষ্যক্রমে বেদজ্ঞান প্রচারিত হয়েছে।শ্রীমদ্ভাগবত১/৪/২৪ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে,দ্বাপর যুগে শেষভাগে ভগবানের শক্ত্যাবেশ অবতার ব্যাসদেব বেদকে লিপিবদ্ধ করেন। হরে কৃষ্ণ।প্রনাম প্রচারে-©️ স্বধর্মম্ : Connect to the inner self.

বেদে কি নৃসিংহ অবতারের কথা বর্ণনা করা হয়েছে?

FB IMG 1750248364558 Svadharmam

বেদে শ্রীনৃসিংহ অবতার শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের সপ্তম স্কন্দে নৃসিংহ অবতার এবং ভক্ত প্রহ্লাদের কাহিনী খুব সুন্দরভাবে শ্রীল শুকদেব গোস্বামী রাজা পরীক্ষিৎ মহারাজকে বর্ণনা করেন। এছাড়াও মহাভারত, অগ্নিপুরাণ, ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ, বায়ুপুরাণ, ব্রহ্মপুরাণ, বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণ, কূর্মপুরাণ, মৎস্যপুরাণ, পদ্মপুরাণ (উত্তরখণ্ড), স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ সহ বিবিধ শাস্ত্রে নৃসিংহ অবতারের কথা বর্নিত আছে। নৃসিংহদেব হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ/ শ্রীবিষ্ণুর করুণাঘন অবতার। ভক্ত প্রহ্লাদের কাছে তিনি করুণাঘন মূর্তি এবং বিপরীতে দূরাচারীর হিরণ্যকশিপুর কাছে তিনি উগ্র ভয়ংকর মূর্তিতে আবির্ভূত। ভক্ত প্রহ্লাদের কথাকে সত্য করতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি স্বয়ং শ্রীবিষ্ণু তিনি একটি স্পটিক স্তম্ভ থেকে অর্ধেক নর, অর্ধেক সিংহ বা নৃসিংহ অবতাররূপে আবির্ভুত হয়েছিলেন। শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ,পদ্মপুরাণসহ আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ শাস্ত্রেও নৃসিংহ অবতারের কথা বর্ণিত আছে। বেদ প্রধানত চার প্রকার -ঋগ্, যর্জু (শুক্ল, কৃষ্ণ), সাম, অথর্ব। আবার প্রতিটি বেদের চারটি অংশ – সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ। বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যকের দশম প্রপাঠকে নৃসিংহদেবের নামে একটি নৃসিংহ গায়ত্রী মন্ত্র রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে – বজ্রনখায় বিদ্মহে তীক্ষ্ণদংষ্ট্ৰায় ধীমহি। তন্নো নারসিংহঃ প্রচোদয়াৎ ।। ~ তৈত্তিরীয় আরণ্যক, দশম প্রপাঠক অনুবাদঃ আমরা বজ্রনখকে জানব। তাই আমরা তীক্ষ্ণদন্তের ধ্যান করি। সেই ধ্যানে নরসিংহ আমাদেরকে প্রেরিত করুন। কৃষ্ণ যজুর্বেদের মহানারায়ণ উপনিষদেও এই নৃসিংহ গায়ত্রী মন্ত্রটি পাওয়া যায়। এ মন্ত্রটিতে নৃসিংহদেবকে ‘বজ্রনখা’ এবং ‘তীক্ষ্ণদংষ্ট্ৰা’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, তাঁর নখ বজ্রের মত কঠোর ভয়ংকর এবং দাঁত তীক্ষ্ণ ধারালো।  বজ্রনখায় বিদ্মহে তীক্ষ্ণদংষ্ট্ৰায় ধীমহি। তন্নো নারসিংহঃ প্রচোদয়াৎ ।। ~ মহানারায়ণ উপনিষদ ৩/১৭ (কৃষ্ণ যজুর্বেদ) অনুবাদঃ আমরা বজ্রনখকে জানব। তাই আমরা তীক্ষ্ণদন্তের ধ্যান করি। সেই ধ্যানে নরসিংহ আমাদেরকে প্রেরিত করুন। ঋগ্বেদ সংহিতায় ১ম মণ্ডলের ১৫৪ সূক্তে ভগবান বিষ্ণুর এই উগ্র অবতারের কথা বর্নিত আছে –  प्र तद्विष्णुः स्तवते वीर्येण मृगो न भीमः कुचरो गिरिष्ठाः । यस्योरुषु त्रिषु विक्रमणेष्वधिक्षियन्ति भुवनानि विश्वा ॥ प्र विष्णवे शूषमेतु मन्म गिरिक्षित उरुगायाय वृष्णे । य इदं दीर्घं प्रयतं सधस्थमेको विममे त्रिभिरित्पदेभिः ॥ প্র তদ্‌ বিষ্ণু স্তবতে বীর্যেণ মৃগো ন ভীমঃ কুচরো গিরিষ্ঠাঃ । যস্যোরুষু ত্রিষু বিক্রমণেষধি ক্ষিয়ন্তি ভুবনানি বিশ্বা ॥প্র বিষ্ণবে শূষমেতু মন্ম গিরিক্ষিত উরুগায়ায় বৃষ্ণে। য ইদং দীর্ঘং প্রযতং সধস্থমেকো বিমমে ত্রিভিরিৎ পদেভিঃ॥ ~ ঋগ্বেদ সংহিতা: ১/১৫৪/২-৩  অনুবাদঃ সেই বিষ্ণু বীরত্ব বীর্যসূচক কর্মহেতু জগতে স্তুত হয়ে থাকেন। বিষ্ণুর তিন পদক্ষেপে সমস্ত ভুবনে অবস্থান করে আছেন; এতেই সকল প্রাণী জীবিত থাকে।আবার তিনি ভয়ঙ্কর, হিংস্র, গিরিশায়ী দুর্গম স্থানে বিচরণশীল। অর্থাৎ বিষ্ণুর শান্ত এবং উগ্র উভয়রূপ বিরাজমান। লোকপ্রশংসিত মহাবল বিষ্ণু এ স্তোত্রসমূহ গ্রহণ করুক। তিনি ফলবর্ষণকারী বৃষভ, তিনি পর্বতবাসী, তিনি সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হয়ে ভ্রমণকারী। সেই বিষ্ণু তিনটিমাত্র পদক্ষেপ দ্বারা এই দীর্ঘ, অতিবিস্তৃত সকলের বাসস্থান পরিমাপ করেছেন। পরিশেষে শ্রীশঙ্করাচার্য সঙ্কটনাশন নৃসিংহদেবকে নিয়ে ‘শ্রীলক্ষ্মীনৃসিংহ স্তোত্রম্’ রচনা করেছিলেন। সেখানে শ্রীশঙ্করাচার্য নৃসিংহদেবের কৃপাময় শ্রীহস্ত তাঁর মাথায় রাখতে বলে; নৃসিংহদেবের করকমলে আশ্রয় চেয়েছেন। লক্ষ্মীপতে কমলনাভ সুরেশ বিষ্ণো বৈকুণ্ঠ কৃষ্ণ মধুসূদন পুষ্করাক্ষ। ব্রহ্মণ্য কেশব জনার্দন বাসুদেব দেবেশ দেহি কৃপণস্য করাবলম্বম।। ~ শ্রীলক্ষ্মীনৃসিংহ স্তোত্রম্ ১২  অনুবাদঃ হে লক্ষ্মীপতি,হে কমলনাভ,হে সুরেশ, হে বিষ্ণু,হে বৈকুণ্ঠ,হে কৃষ্ণ,হে মধুসূদন,হে পদ্মলোচন, হে ব্রহ্মণ্য, হে কেশব, হে জনার্দন, হে বাসুদেব, হে দেবেশ,তুমি দীন-পতিত আমার মস্তকে কৃপাময় তোমার শ্রীহস্ত স্থাপন করে তোমার করকমলে আমায় আশ্রয় দাও। ©️ স্বধর্মম্ ™️

অবতার কি? অবতার কত প্রকার ও কি কি?

FB IMG 1750247201837 Svadharmam

 অবতারঃ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চিন্ময় জগত গোলক বৃন্দাবনে নিত্য বিরাজমান (গোপালতাপনী উপনিষদঃ পূর্ব ২/৩৫)।তিনি যখন বিভিন্ন রুপ ধারন করে অথবা বিভিন্ন ব্যক্তির মাঝে তাঁর শক্তি প্রকট পূর্বক দুষ্টের দমন, শিষ্ঠের পালন এবং ধর্মের সংস্থাপনের জন্য যুগে যুগে অবতরণ করেন তখন তাঁকে অবতার বলা হয়। এ বিষয়ে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শাস্ত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন-  অজোহপি সন্নব্যয়াত্মা ভূতানামীশ্বরোহপি সন্ । প্রকৃতিং স্বামধিষ্ঠায় সম্ভবাম্যাত্মমায়য়া ।।৬।। যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত । অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্ ।।৭।। পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্। ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।৮।। – (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ৪.৬-৮) অনুবাদঃ যদিও আমি জন্মরহিত(জন্ম নাই) এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং যদিও আমি সর্বভূতের (সমস্ত জীবের) ঈশ্বর, তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আমি আমার আদি চিন্ময় রূপে অবতীর্ণ হই।হে ভারত! যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখন আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই।সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য এবং দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই। অবতারের শ্রেণীবিভাগঃ শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত,মধ্য.২০/২৪৫-২৪৬ শ্লোক অনুযায়ী, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সনাতন গোস্বামীকে ৬ প্রকার অবতার সম্পর্কে ধারনা প্রদান করেন।  অবতার হয় কৃষ্ণের ষড়বিধ প্রকার । পুরুষাবতার এক, লীলাবতার আর ৷ ২৪৫ ॥ গুণাবতার, আর মন্বন্তরাবতার । যুগাবতার, আর শক্ত্যাবেশাবতার ॥ ২৪৬ ॥ – (শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত,মধ্য.২০/২৪৫-২৪৬) অনুবাদঃ শ্রীকৃষ্ণের ছয় প্রকার অবতার রয়েছে। তাঁরা হচ্ছেন পুরুষাবতার, লীলাবতার, গুণাবতার, মন্বন্তরাবতার, যুগাবতার এবং শক্ত্যাবেশাবতার। ১/পুরুষাবতারঃ প্রথম পুরুষোবতার কারণোদকশায়ী বিষ্ণু (মহা বিষ্ণু), দ্বিতীয় পুরুষোবতার গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু, তৃতীয় পুরুষোবতার ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু-এই তিন বিষ্ণুকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুরুষাবতার বলা হয়। প্রথম পুরুষোবতার কারনোদকশায়ী বিষ্ণু সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবত ২/৫/২২-৩৫ এবং ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৮ শ্লোক সহ ইত্যাদি বিভিন্ন শাস্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে। সেসমস্ত শাস্ত্রের বর্ণনা অনুযায়ী কারণোদকশায়ী বিষ্ণুরুপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কারন সমুদ্রে শায়িত থাকেন,তার থেকে অগিত ব্রহ্মান্ড প্রকাশ হয়। দ্বিতীয় পুরুষোবতার গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবত ১/৩/২-২৭ এবং শ্রীমদ্ভাগবত ২/৫/৩৫-৪২ শ্লোকে বিস্তৃত বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে ।সেখানে বলা হয়েছে, ব্রহ্মান্ড যখন প্রকাশ হয় তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি স্বয়ং কারণোদকশায়ী বিষ্ণু তিনি ব্রহ্মান্ডের গর্ভ সমুদ্রে গভোদর্কশায়ী বিষ্ণুরুপে প্রবিষ্ট হন। সে গভোদর্কশায়ী বিষ্ণুর অসংখ্য হস্ত,পদ,মুখ,মস্তক,কর্ণ,চক্ষু এবং নাসিকা রয়েছে।তাঁর নাভীপদ্ম থেকে জন্ম হয় ব্রহ্মার।এরপর ব্রহ্মা ভগবান শ্রীবিষ্ণুর আজ্ঞা অনুসারে মনুষ্য, পশু,দেবতা ইত্যাদি জীব সৃষ্টি করে। তৃতীয় পুরুষোবতার ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৫/১৫ শ্লোকে।ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি স্বয়ং গভোদর্কশায়ী বিষ্ণু তিনি ব্রহ্মা কতৃর্ক সৃষ্ট সমস্ত জীবের হৃদয়ে ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু পরমাত্মারুপে (পরম আত্মা অথবা জীবাত্মার আত্মারুপে) প্রবিষ্ট হন। ২/গুণাবতারঃ শ্রীমদ্ভাগবত ১/২/২৩ শ্লোকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের তিন গুণাবতার -ব্রহ্মা,বিষ্ণু,শিব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।সেখানে বলা হয়েছে, এই জড় জগত সত্ত্ব,রজ এবং তম- এই ত্রিগুণ দ্বারা পরিচালিত হয়।এ তিনটি গুণের অধিষ্ঠাতা হলে- সত্ত্বগুণ বিষ্ণু,রজোগুণ ব্রহ্মা,তমোগুণ শিব। ৩/লীলাবতারঃ শ্রীমদ্ভাগবত ১/৩/৫ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী, দুষ্টের দমন, সাধুর রক্ষা এবং ধর্ম সংস্থাপন হেতু পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি স্বয়ং গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু তিনি মৎস্য,কূর্ম,বরাহ,রাম,বামন,নৃসিংহ ইত্যাদি বিভিন্ন লীলাবতার রুপ ধারন করেন। এছাড়াও লীলাবতার সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে শ্রীমদ্ভাগবত ১/৩/১৫-২৩, ২৫ শ্লোকে। ৪/ মন্বন্তর অবতারঃ শ্রীমদ্ভাগবতে ৮/১, ৫, ১৩ অধ্যায়ে চৌদ্দজন মন্বন্তরাবতারের বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁরা হলেন-(১) যজ্ঞ, (২) বিভু, (৩) সত্যসেন, (৪) হরি, (৫) বৈকুণ্ঠ, (৬) অজিত, (৭) বামন, (৮) সার্বভৌম, (৯) ঋষভ, (১০) বিষ্বকসেন, (১১) ধর্মসেতু, (১২) সুধামা, (১৩) যোগেশ্বর এবং (১৪) বৃহদ্ভানু। ব্রহ্মার একদিনে(মনুষ্য জীবের ১ হাজার চতুর্যুগ) বা এক কল্পে চৌদ্ধজন মনুর প্রকাশ হয়।প্রথম মনু- স্বায়ম্ভুব(ব্রহ্মার পুত্র),এরপর যথাক্রমে-স্বারোচিষ(অগ্নিদেবের পুত্র),উত্তম,তামস,রৈরত,চাক্ষুষ, বৈবস্বত(সূর্যদেবের পুত্র),সার্বণি,রুদ্র,সাবর্ণি,ধর্ম সাবর্ণি,দেব সাবর্ণি এবং ইন্দ্র সাবর্ণি।বর্তমান সময়কে বৈবস্বত মন্বন্তর বলা হয়। প্রতি মনুর শাসন কালকে মন্বন্তর বলা হয়। ৫/ যুগাবতারঃ শ্রীমদ্ভাগবতে ১০/৮/১৩ বর্ণনা অনুযায়ী, সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর, কলি এই চার যুগ।প্রতি যুগে ভগবান কৃষ্ণচন্দ্র যুগানুসারে বিভিন্ন বর্ণে আবির্ভূত হন। সত্যযুগে ভগবান ব্রজেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ শুক্লবর্ণ, ত্রেতাযুগে রক্তবর্ণ, দ্বাপরযুগে কৃষ্ণবর্ণ, কলিযুগে তিনি পীতবর্ণরুপ (শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু) ধারণ করেন । নন্দমহারাজের গৃহে জ্যোতিষী গর্গমুনি কৃষ্ণের কোষ্ঠী বিচারের সময় এই তথ্য প্রকাশ করেন। ৬/শক্ত্যাবেশ অবতারঃ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন কোন বিশেষ ব্যক্তির উপর তাঁর শক্তি প্রকাশ করে কার্য সিদ্ধি করেন তখন সে ধরনের মহান ব্যক্তিদের শক্ত্যাবেশ অবতার বলা হয়।যেমন-নারদ মুনি,শ্রীল ব্যাসদেব,পৃথু মহারাজ প্রমুখ।  হরে কৃষ্ণ। প্রনাম। সদগুণ মাধব দাস। প্রচারে-©️ স্বধর্মম্ : Connect to the inner self And, ° স্বধর্মম্ : প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন।

কেন ১০৮ টি উপনিষদ বৈদিক বা প্রামানিক?

বৈদিক জ্ঞানে কিছু মূর্খ  আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে বৈষ্ণরা নাকি নিজেদের সম্প্রদায়কে টিকিয়ে রাখতে নিজেদের সুবিধামত মুক্তিকোপনিষদে বর্ণিত ১০৮ টি উপনিষদের মধ্যে প্রথম ১১ টি উপনিষদ ছাড়া আর অন্যগুলির মধ্যে গোপালতাপনী উপনিষদ,কৃষ্ণ উপনিষদ,কলির্সন্তরণ উপনিষদ,নারায়ণ উপনিষদ, মুক্তিকোপনিষদ ইত্যাদি উপনিষদগুলি নাকি নিজেরা লিখছে। নিম্নে তাদের অপপ্রচারের শাস্ত্রসম্মত জবাব প্রদান করা হল। বাস্তবিক অর্থে উপনিষদ বিষয়ক বৈষ্ণব সম্প্রদায় সম্পর্কে অনার্য মুর্খদের অপপ্রচার সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।কারন সমগ্র বেদে শ্রীবিষ্ণু,শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলা হয়েছে । বেদে মানব জাতিকে বৈষ্ণব বা বিষ্ণুভক্ত বা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবিষ্ণুর ভক্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।সুতারাং বৈষ্ণব সম্প্রদায় বেদবিহিত সম্প্রদায়। শুক্ল যজুর্বেদে বলা হয়েছে, “বৈষ্ণবমসি বৈষ্ণবা স্থ।।”~তোমরা বৈষ্ণব হও, তােমরা ভগবান বিষ্ণুর প্রীতিসাধক হও।।-শুক্লযজুর্বেদ ৫/২৫। বৈষ্ণবগণ নাস্তিক নয়,আস্তিক। তারা ধর্ম পালন করছে ঈশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য।সুতারাং উপনিষদ লিখে বৈষ্ণবদের ধর্ম পালন করতে হবে না।প্রকৃতই শুক্ল যজুর্বেদীয় মুক্তিকোপনিষদ ১/২৭-৩৬ নং অনুসারে ঈশ,কেন,কঠ,কলির্সন্তরণ,গোপালতাপনী, রামতাপনী ইত্যাদি ১০৮ টি উপনিষদ সরাসরি পরমেশ্বর ভগবান থেকে আগত। মুক্তিকোপনিষদ ১/৫১-৫৫ নং অনুসারে ১০৮ টি উপনিষদকে চারটি সংহিতা বেদ অনুসারে বিভক্ত করা হয়েছে।ঋগ্বেদীয় উপনিষদ : ১০ (দশ) টি,শুক্ল যজুর্ব্বেদীয় : ১৯ (উনিশ) টি, কৃষ্ণ যজুর্ব্বেদীয় : ৩২ (বত্রিশ) টি, সামবেদীয় :১৬ (ষোল) টি, অথর্ব্ববেদীয় : ৩১ (একত্রিশ) টি। সুতারাং মুক্তিকোপনিষদে বর্ণিত ১০৮ টি উপনিষদের মধ্যে প্রথম ১১ টি উপনিষদ বৈদিক আর বাকী ৯৭ টি উপনিষদ অবৈদিক, মুর্খ গোষ্ঠীদের দ্বারা এসমস্ত অপপ্রচার সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।শ্রুতি বা বেদ,স্মৃতি,পুরাণ,তন্ত্র, রামায়ন ও মহাভারত ইত্যাদি কোন সনাতনী শাস্ত্রে মুক্তিকোপনিষদে বর্ণিত ১০৮ টি উপনিষদের মধ্যে প্রথম ১১ টি উপনিষদ বৈদিক আর ৯৭ টি উপনিষদ অবৈদিক এ ধরনের কোন কথা শাস্ত্রে উল্লেখ করা হয় নি। আমাদের পূর্বতন সকল আচার্য যেমন শ্রীপাদ শঙ্করাচার্য, শ্রীরামানুচার্য,শ্রীমধ্বাচার্য, শ্রীবিষ্ণুস্বামী, শ্রীনিম্বাকাচার্য,শ্রীধর স্বামী,শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু,শ্রীল রুপ গোস্বামী, শ্রীল সনাতন গোস্বামী,শ্রীল গোপালভট্র গোস্বামী, বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর প্রমুখ বিদগ্ধ সংস্কৃত পন্ডিতগণ কৃষ্ণ যজুর্বেদ বেদ নয়,গীতার ৬৩০ টি শ্লোক বিকৃত, ১০৮ টি উপনিষদের ৯৭ টি উপনিষদ বিকৃত বা অবৈদিক, এ ধরনের কোন মতামত প্রদর্শন করেন নি।বরং তারা ভারতবর্ষে সবর্ত্র বিভিন্ন মঠ, মন্দির প্রতিষ্ঠা করে বেদ,গীতা,অষ্টাদশ পুরাণ এবং ১০৮ টি উপনিষদের বাণী প্রচার করেছেন। হরে কৃষ্ণ। প্রনাম সদগুন মাধব দাস।

মহাভারতের শ্লোকসংখ্যা ১ লক্ষ নাকি ২৪ হাজার ?

শাস্ত্রজ্ঞানহীন কিছু মূর্খ সাধারন সনাতনীদের মহাভারতের শ্লোক সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্ত করছে।তাদের মতে মহাভারতে  শ্লোক সংখ্যা নাকি শুধুই ২৪ হাজার,১ লক্ষ নয়। তাদের প্রশ্ন মহাভারত যদি অবিকৃত থাকে তাহলে মহাভারতে মহাভারতের শ্লোক সংখ্যার রেফারেন্স দেয়া হয়েছে ২৪ হাজার শ্লোকের, তাহলে কিভাবে তা ১ লক্ষ শ্লোকে পরিণত হল ?তাদের মতে এ লক্ষ শ্লোকের নাকি কোন রেফারেন্স  মহাভারতে কোথাও বর্ণনা করা হয় নি। এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে তারা মহাভারত শাস্ত্র সম্পর্কে অনভিজ্ঞ সরল সনাতনীদের বুঝাচ্ছে মহাভারতে প্রকৃতপক্ষে ২৪ হাজার শ্লোকের রেফারেন্সই প্রমান করে  বর্তমানে লক্ষ শ্লোকের মহাভারত সঠিক নয়।তাদের মতে মহাভারতের ২৪ হাজার শ্লোক ছাড়া আর বাকী বাড়তি ৭৬ হাজার শ্লোক নাকি পাপীদের সৃষ্টি করা শ্রীকৃষ্ণ এবং পঞ্চপান্ডব সমন্ধে ভূলবার্তা।  তারা মহাভারতের মতো মহান শাস্ত্র বাক্যে সন্দিহান।শুধু তাই নয়,তারা নিজেদের বেদ ও গীতার প্রচারকারী বলে প্রচার করে অথচ কৃষ্ণ  যজুর্বেদকেও তারা বেদ বলে অস্বীকার করে,তারা গীতার বহু শ্লোককে ভূল মনে করে। আমাদের কথা হল মহাভারত যেহেতু বহু পূর্বে লেখা, তাই হয়ত দুই একটি শ্লোক পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু ৭৬ হাজার বাড়তি শ্লোক পাপীরা(বৈষ্ণব) মহাভারতে যোগ করেছেন, এ ধরনের মন্তব্য কখনো যুক্তিযুক্ত নয়। হিন্দি, বাংলা,তামিল,মারাঠি, উড়িয়া,ইংরেজি সহ সমস্ত মহাভারতের অনুবাদেই ১ লক্ষ শ্লোক রয়েছে,২৪ হাজার শ্লোকের কোন মহাভারত কোথাও দেখা যায় না। মহাভারতের শ্লোকসংখ্য ২৪ হাজার হত,তাহলে কোন না কোন ভাষায় মহাভারতের অনুবাদের তা আমরা দেখতে পেতাম।কিন্তু আমরা কোথাও এ  ধরনের ২৪ হাজার শ্লোকের মহাভারত দেখতে পাচ্ছি না।সুতরাং মূর্খদের অপপ্রচার মহাভারতের শ্লোকসংখ্যা শুধু ২৪ হাজার,এ ধরনের মন্তব্য যুক্তিসংগত ও প্রামানিক নয়।  সাধারন সনাতনীরা মহাভারত শাস্ত্র সম্পর্কে অজ্ঞ।তাই তারা এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে সনাতনীদের বিভ্রান্ত করছে যে, মহাভারত বিকৃত। অথচ মহাভারত শাস্ত্রে তাদের অপপ্রচারের উত্তর বর্ণিত আছে।মহাভারত শাস্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে, মহাভারতের শ্লোক সংখ্যা হল ১ লক্ষ।অথচ এ সমস্ত শ্লোক নাকি কখনো সরল সনাতনীদের মাঝে প্রদর্শন করে না।এ হল এসমস্ত মূর্খদের কার্যকলাপ। মূর্খ এ জগতের সকলকে মূর্খ আর পাপী মনে করে,আর নিজেকে পন্ডিত এবং পূণ্যত্মা মনে করে,এসমস্ত মূর্খদের অবস্থাও তাই।এখন আমরা এ বিষয়টি আরো বিস্তৃতভাবে জানার চেষ্ঠা করব… ব্যাসদেব প্রথমে ৮ হাজার শ্লোকের মহাভারত রচনা করেন, তার নাম দেন জয়।এরপর পুনরায় ব্যাসদেব ২৪ হাজার শ্লোকে মহাভারত রচনা করেন। চতুবিংশতিসাহস্রীং চক্রে ভারতসংহিতাম। উপাখ্যাননৈবির্না তাবদ্ভারতং প্রোচ্যতে বুধৈঃ।। -(মহাভারতঃআদিপর্ব/৫/৬৪) অনুবাদঃ বেদব্যাস উপাখ্যানভাগ ব্যতীত চব্বিশ হাজার শ্লোকে মহাভারত রচনা করিয়াছিলেন।এ বিষয়ে পন্ডিতগণ জ্ঞাত আছেন। এরপর ব্যাসদেব তা বৈশ্যাম্পায়ন ঋষিকে দান করেন।এরপর বৈশম্পায়ন ঋষি উপাখ্যান ভাগ সহকারে ঋষিদের সভায় জনমেজয়ের প্রশ্নের উত্তরে ১ লক্ষ শ্লোকে মহাভারত বর্ণনা করেন।সেখানে উপস্থিত হলেন উগ্রশ্রবা সৌতি। ইদং শতসহস্রস্তু শ্লোকানাং পূণ্যকর্ম্মানাম। উপাখ্যানৈঃ সহ জ্ঞেয়ং শ্রাব্যং ভারতমুত্তমম।। – মহাভারতঃ আদিপর্ব ৫/৬৩ অনুবাদঃ এই মহাভারত উপাখ্যানভাগের সহিত পবিত্র লক্ষ শ্লোক বলে জানিবে।তাহাই উৎকৃষ্ট এবং তাহাই শ্রবণ করিবে। পুনরায় উগ্রশ্রবা সৌতি নৈমিষারণ্য নামক স্থানে ঋষিদের মাঝে বৈশ্যাম্পায়ন কৃত ১ লক্ষ শ্লোকের মহাভারত হুবহু বর্ণনা করেন। শিষ্যো ব্যাসস্য ধর্মাত্মা সর্ববেদো বিদ্যাংবর। এক শতসহস্রস্তু ময়োক্তং বৈ নিবোদত।। মহাভারতঃআদি পর্ব ১/ ৭০ (উগ্রশ্রবা সৌতি) অনুবাদঃ বেদব্যাসের শিষ্য ধর্মাত্মা, সমস্ত বেদের বিষারদ বৈশম্পায়ন ঋষি, এই মনুষ্য লোকে একলক্ষ শ্লোক বলিয়াছেন।আমি আপনাদের নিকট তাহাই বলিয়াছি, শ্রবণ করুন। পরবর্তীতে ভগবানের শক্ত্যাবেশ অবতার( ভগবানের শক্তির আবেশ অবতার) শ্রীল ব্যাসদেব সেই মহাভারত গনেশকে বর্ণনা করেন, আর গনেশ তার সুন্দর লেখনীর মাধ্যমে মহাভারত লিপিবদ্ধ করেন। সুতারাং যে সমস্ত পাষন্ডিরা মহাভারতের ১ লক্ষ শ্লোকসংখ্যা নিয়ে সাধারন সনাতনীদের বিভ্রান্ত করছে, তাদের জেনে রাখা প্রয়োজন, লক্ষ শ্লোকের মহাভারতের রেফারেন্স মহাভারত শাস্ত্রে উগ্রশ্রবা সৌতি কতৃর্ক মহাভারত শাস্ত্রে বর্ণিত আছে। সুতারাং ১ লক্ষের শ্লোকের এ মহাভারত স্বয়ং ব্যাসদেবই বর্ণনা,এতে কোন বেজাল নাই(মহাভারতঃ আদিপর্ব ৫/৬৩)। তথ্য সংগ্রহঃ শ্রীহরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশকৃত মহাভার‍ত,বিশ্ববাণী প্রকাশনী। হরে কৃষ্ণ, প্রনাম তথ্য সহযোগী-বিজয় দাস।

শ্রীকৃষ্ণ কে? মত্যলোকে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব বা দিব্য জন্মলীলা সম্পর্কে আলোচনা করুন। (২য় পর্ব)

১ম পর্বের পর- তারপর শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩/১- ৫৩ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী ” ভগবানের আবির্ভাবের শুভক্ষণে সমগ্র ব্রহ্মান্ড সত্ত্বগুন,সৌন্দর্য এবং শান্তিতে পূর্ন হয়েছিল।তখন রোহিনী,অশ্বিনী আদি নক্ষত্রগণ আবির্ভূত হয়েছিল।সূর্য,চন্দ্র এবং অন্যান্য সমস্ত গ্রহ ও তারকাগণ শান্তভাব ধারন করেছিল।সেসময় সাধু ও ব্রাহ্মণেরা অন্তরে প্রসন্নতা অনুভব করেছিলেন এবং স্বর্গলোকে যুগপৎ দুন্দুভি বাজতে লাগল।কিন্নর এবং গন্ধর্বরা মঙ্গলগীত গাইতে লাগলেন,সিদ্ধ এবং চারণেরা স্তব নিবেদন করেছিলেন, এবং অপ্সরাগণ সহ বিদ্যাধরেরা আনন্দে নৃত্য করতে শুরু করেছিলেন।সেসময় দেবতা এবং ঋষিরা আনন্দে পুষ্পবৃষ্টি করতে লাগলেন,এবং আকাশে মেঘেরা সমুদ্রের তরঙ্গের ধ্বনির অনুকরনে মন্দ মন্দ গর্জন করতে লাগল।তখন-  নিশীথে তমউদ্ভূতে জায়মানে জনাদর্নে। দেবক্যাং দেবরুপিণ্যাং বিষ্ণুঃ সর্বগুহাশয়। আবিরাসীদ্ যথা প্রাচ্যাং দিশীন্দুরিব পুষ্কলঃ।। -(শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩/৮) অনুবাদঃ অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত্রে সচ্চিদানন্দ স্বরুপিনী দেবকীর গর্ভ থেকে সমস্ত জীবের হৃদয়ে বসবাসকারী সেই ভগবান শ্রীবিষ্ণু পূর্বদিকে উদিত পূর্ণচন্দ্রের মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন। তখন বসুদেব সে শিশুটিকে চতুর্ভুজ বালক রুপে দর্শন করেছিলেন- তমদ্ভুতং বালকমম্বুজেক্ষণং চতুর্ভুজং শঙ্খগদাদ্যুদায়ুধম্। শ্রীবৎসলক্ষ্মং গলশোভিকৌস্তুভং পীতাম্বরং সান্দ্রপয়োদসৌভগম্।। মহাহর্বৈদূর্যকিরীটকুন্ডল ত্বিষা পরিষ্বক্তসহসস্রকুন্তলম। উদ্দামকাঞ্চ্যঙ্গণাদদিভির্বিরোচনমানং বসুদেব ঐক্ষত।। (শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩/৯-১০) অনুবাদঃ বসুদেব তখন দেখলেন যে,সেই নবজাত শিশুটির নয়নযুগল পদ্মের মতো।তার চার হাতে শঙ্খ,চক্র,গদা এবং পদ্ম।তার বক্ষে শ্রীবৎস চিহ্ন এবং গলদেশে কৌস্তুভ মনি বিরাজমান।তাঁর পরণে পীত বসন,তাঁর অঙ্গকান্তি নিবিড় মেঘের মতো শ্যামল,তারঁ কেশদাম উজ্বল এবং তাঁর মুকুট ও কর্নকুন্ডল বৈদূর্য – মনিচ্ছটায় অস্বাভাবিকভাবে উজ্বল। সেই শিশুটি অত্যন্ত দীপ্তিশালী মেখলা,কেয়ূর,বলয় প্রভৃতি অলঙ্কারে শোভিত। বসুদেব তাঁর এই অসাধারণ পুত্রকে দর্শন করে নয়নযুগল বিস্ময়ান্বিত হয়েছিল।চিন্ময় আনন্দে মগ্ন হয়ে তিনি মনে মনে ব্রাহ্মণদের দশ হাজার গাভী দান করেছিলেন।তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এই শিশুটি কোন প্রাকৃত শিশু নয়,এই শিশুটি হলেন স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবিষ্ণু। বসুদেব সেই শিশুটির উদ্দেশ্য প্রণতি নিবেদন করে করজোড়ে স্তব করতে লাগলেন।এরপর দেবকীও ভগবানকে প্রণতি নিবেদন করে স্তব করতে লাগলেন।সে স্তবের শেষের দিকে দেবকী ভগবানকে বলেন যে, হে ভগবান আমি আপনার আবির্ভাবের ফলে কংসের ভয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছি।তাই কংস যাতে বুঝতে না পারে যে,আপনি আমার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছেন,কৃপাপূর্বক আপনি তার উপায় করুন।এরপর দেবকী ভগবানকে তাঁর চতুর্ভুজ শিশুরুপ সংবরন করে মনুষ্যাকার রুপ ধারন করতে অনুরোধ করেন।এর কারন হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন,এরুপ চতুর্ভুজ অদ্ভুত বালক রুপ দর্শন করে লোকেরা বিশ্বাস করতে চাইবে না যে, আপনি আমার গর্ভে আবির্ভুত হয়েছেন। এর ফলে তারা আমাকে উপহাস করবে। তখন ভগবান দেবকী মাতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, হে সতী,স্বায়ম্ভুব মন্বন্তরে তোমার পূর্বজন্মে তুমি পৃশ্নি নামে জন্মগ্রহণ করেছিলে,এবং বসুদেব ছিল অতি পুণ্যবান প্রজাপতি সুতপা।তোমরা ব্রহ্মার নির্দেশে প্রজা সৃষ্টির জন্য ইন্দ্রিয় সমূহ সংযত করে ১২ হাজার দিব্য বৎসর কঠোর তপস্যা করেছিলে( শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩/৩৬)।তোমাদের কঠোর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে আমি তোমাদের সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে, তোমাদেরকে আমার কাছ থেকে বর প্রার্থনা করতে বলেছিলাম।তোমরা তখন আমার মতো পুত্র লাভের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলে।তখন আমি তোমাদের বাসনা পূর্ণ করার জন্য তোমাদের পুত্র পৃশ্নিগর্ভ নামে জন্মগ্রহণ করেছিলাম। পরবর্তী যুগে তোমরা যখন পুনরায় অদিতি এবং কশ্যপরুপে আবির্ভূত হয়েছিলে,তখন আমি তোমাদের পুত্র উপেন্দ্র এবং বামন নামে বিখ্যাত হয়েছিলাম।হে সতী!সেই আমিই এখন তৃতীয়বার তোমাদের পুত্ররুপে জন্মগ্রহণ করেছি।আমার এই বাক্য সত্য বলে জানবে। আমার পূর্ব জন্মের কথা স্মরন করানোর জন্যই আমি তোমাদের এই বিষ্ণুরুপ প্রদর্শন করিয়েছি।তা না হলে,আমি যদি একটি নরশিশুরুপে আবির্ভূত হতাম,তবে তোমরা বিশ্বাস করতে না যে,বিষ্ণুরুপে আমি তোমাদের পুত্ররুপে আবির্ভূত হয়েছি। যুবাং মাং পুত্রভাবেন ব্রহ্মভাবেন চাসকৃৎ। চিন্তয়ন্তৌ কৃতস্নেহৌ যাস্যেথে মদগতিং পরাম্।। – শ্রীমদ্ভাগবতঃ১০/৩/৪৫ অনুবাদঃ তোমরা উভয়েই তোমাদের পুত্ররুপে নিরন্তর আমার কথা চিন্তা কর,কিন্তু তোমরা জান যে,আমি ভগবান।এইভাবে স্নেহপূর্বক নিরন্তর আমার চিন্তা করে পরম সিদ্ধি লাভ করবে,অথাৎ ভগবদ্ধাম প্রাপ্ত হবে। এরপর শ্রীল শুকদেব গৌস্বামী পরীক্ষিৎ মহারাজকে বলতে লাগলেন- ইত্যুক্ত্বাাসীদ্ধরিস্তূষ্ণীং ভগবানাত্মমায়য়া। পিত্রোঃ সম্পশ্যতোঃ সদ্যো বভূব প্রাকৃতঃ শিশুঃ।। -(শ্রীমদ্ভাগবতঃ১০/৩/৪৬) অনুবাদঃ এইভাবে ভগবান তার পিতা মাতাকে উপদেশ দিয়ে নীরব হয়েছিলেন।তাঁদের সম্মুুখে তিনি তাঁর অন্তরঙ্গা শক্তির দ্বারা নিজেকে একটি প্রাকৃত শিশুতে রুপান্তরিত করেছিলেন।( অথাৎ,তিনি নিজেকে তাঁর আদি স্বরুপে রুপান্তরিত করেছিলেন – কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ম্) তারপর শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩/৪৭-৫২ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে,”ভগবানের অনুপ্রেরণায় বসুদেব যখন নবজাত শিশুটিকে কোলে নিয়ে কারা সূতিকাগৃহ থেকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছিলেন,ঠিক সেই সময় ভগবানের চিন্ময়ী শক্তি যোগমায়া মাতা দুর্গা নন্দ মহারাজের পত্নীর কন্যারুপে জন্মগ্রহণ করেন। যোগমায়ার প্রভাবে সমস্ত দ্বাররক্ষীগন গভীর নিদ্রায় মগ্ন হয়েছিল।সূর্যের উদয়ে যেমন অন্ধকার আপনা থেকেই দূর হয়ে যায়,তেমনই শ্রীকৃষ্ণকে কোলে নিয়ে বসুদেব সমাগত হওয়া মাত্রই লৌহ খিলকযুক্ত শৃঙ্খলের দ্বারা আবদ্ধ বিশাল কপাটগুলি আপনা থেকেই উন্মুক্ত হয়েছিল।তখন মেঘ মন্দ মন্দ গর্জন সহকারে বারি বর্ষণ করেছিল বলে ভগবানের অংশ অনন্তশেষনাগ দরজা থেকেই বসুদেব এবং তাঁর চিন্ময় শিশুটিকে সেই বৃষ্টিপাত থেকে রক্ষা করার জন্য তাঁর ফণা বিস্তার করে বসুদেবের অনুগমন করেছিল। নিরন্তর বর্ষণে যমুনা নদী ভয়ানক হয়ে উঠেছিল।কিন্তু সমুদ্র যেভাবে ভগবান শ্রীরামচন্দ্রকে সেতুবন্ধন করতে দিয়ে পথ প্রদান করেছিল,যমুনা নদীও সেইভাবে বসুদেবকে নদী পার হওয়ার পথ প্রদান করেছিল। নন্দ মহারাজের গৃহে পৌঁছে বসুদেব দেখলেন যে,সমস্ত গোপেরা গভীর নিন্দ্রায় নিদ্রিত।তিনি তখন তাঁর পুত্রটিকে যশোদার শয্যায় স্থাপন করে যোগমায়া রুপিনী তাঁর কন্যাকে গ্রহণপূর্বক পুনরায় কংসের কারাগারে ফিরে এসেছিলেন। বসুদেব সেই কন্যাটিকে দেবকীর শয্যায় স্থাপন পূর্বক তাঁর পায়ে লৌহশৃঙ্খল বন্ধন করে পূর্বের মতো আবদ্ধভাবে অবস্থান করলেন। এদিকে পরিশ্রান্তা যশোদাদেবী গভীর নিন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়েছিলেন এবং তাই তিনি বুঝতে পারেননি যে তাঁর পুত্র হয়েছিল,না কন্যা হয়েছিল।”- ভাগবত১০/৩/৫৩ শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৪/২ – ১৪ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী, “এদিকে প্রহরীরা নবজাত শিশুর ক্রন্দন শুনতে পেয়ে জেগে উঠেছিল।সাথে সাথে দেবকীর সন্তান জন্মদানের সংবাদ প্রহরীগণ কংসকে জানান।কংস তখন অতি শীঘ্র তার শয্যা থেকে উক্তিত হয়ে চিন্তা করেছিল,”এটি হচ্ছে কাল যে আমাকে বধ করার জন্য জন্মগ্রহণ করেছে, এভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে কংস সুতিকা গৃহে উপস্থিত হয়েছিল। অসহায় দেবকী কাতর ভাবে কংসের কাছে আবেদন করেছিল, হে ভ্রাতাঃ তোমার কল্যাণ হোক, এই কন্যাটিকে হত্যা করো না,স্ত্রী হত্যা করা তোমার উচিত নয়। এভাবে প্রার্থনা করলেও কংসের মনের পরিবর্তন হয় নি।পরন্তু কংস দেবকীকে ভর্ষণা করে তার হাত থেকে কন্যাটিকে বলপূর্বক ছিনিয়ে নিয়েছিল। সেই তখন সদ্যোজাতা ভগিনীকে যুগলে তার পায়ের তলায় ধারণ করে সবলে শিলাপৃষ্টে নিক্ষেপ করেছিল। সেই কন্যাটি অর্থাৎ ভগবান শ্রীবিষ্ণুর কনিষ্ঠ ভগ্নি যোগমায়া দেবী দুর্গা কংসের হাত থেকে উর্ধ্বে উৎক্ষিপ্ত হয়ে আকাশে অস্ত্র যুক্ত অষ্ট মহাভুজা দুর্গা দেবীরুপে প্রকাশিত হয়েছিল। তখন দুর্গা দেবী কংসকে বলেছিল,ওরে মূর্খ কংস!আমাকে বধ করে তোর কি লাভ হবে? তোর চিরশত্রু ভগবান যিনি অবশ্যই তোকে বধ করবেন তিনি ইতিমধ্যেই অন্যত্র জন্মগ্রহণ করেছেন। অতএব নিরর্থক দীন শিশুদের হত্যা করিস না। কংসকে এই কথা বলে,মাতা দুর্গা বা যোগ মায়া বারাণসী প্রভৃতি বিভিন্ন স্থানে অন্নপূর্ণা, দুর্গা, কালী,ভদ্রা আদি বিবিধ নামে বিখ্যাত হয়েছিলেন। মাতা দুর্গা দেবীর সে বাণী শ্রবণ করে কংস অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছিল। সে তখন তার ভগ্নি, ভগ্নিপতি বসুদেবকে বন্ধন মুক্ত করে দিয়েছিল।” পরিশেষে ভগবদগীতা ৪/৬-৯ নং শ্লোক অনুযায়ী, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যদিও অজ বা জন্মহীন, তথাপি দুষ্টের দমন, সাধুর রক্ষা এবং ধর্ম সংস্থাপন করার জন্য তিনি যুগে যুগে কূর্ম,বরাহ,নৃসিংহ,রাম, বলরাম ইত্যাদি নানা অবতার রুপে আবির্ভুত হন।সে সে অবতারে ভগবানের জন্ম ও তার কর্ম দিব্য বা অপ্রাকৃত বা চিন্ময়। যিনি তা

শ্রীকৃষ্ণ কে ? মত্যলোকে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব বা দিব্য জন্মলীলা সম্পর্কে আলোচনা করুন।(১ম পর্ব)

শ্রীকৃষ্ণঃ বেদ/শ্রুতি, স্মৃতি,মহাভারত,শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, ব্রহ্মসংহিতা,শ্রীমদ্ভাগবত সহ অষ্টাদশ পুরান ইত্যাদি সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান।তার নিত্য নিবাস চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবন ধাম।তিনি নিজেকে বিষ্ণুরুপে প্রকাশ করেন।            গোলোক এব নিবসত্যখিলাত্মভূতো গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।।৩৭।। -( ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৭, ব্রহ্মা) অনুবাদঃ অখিলাত্মভূত শ্রীগোবিন্দ নিত্য স্বীয় গোলোকধামে বাস করেন, সেই আদিপুরুষকে আমি ভজনা করি।।৩৭।। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ৪/৬-৯ নং শ্লোকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন, “পরমেশ্বর ভগবানরুপে যদিও আমি অজ বা জন্মহীন, তথাপি দুষ্টের দমন, সাধুর রক্ষা এবং ধর্ম সংস্থাপন করার জন্য আমি যুগে যুগে আবির্ভুত হই(সম্ভবামি)।” ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এরুপ আবির্ভাবকে দিব্য জন্ম বলা হয়(গীতা৪/৯)।শ্রী জগদীশ চন্দ্র ঘোষ কৃত শ্রীগীতা গ্রন্থে ” দিব্য” বা চিন্ময় বা অপ্রাকৃত শব্দের  অর্থ করা হয়েছে, ” প্রাকৃতজনের জন্ম হয় কর্মফলে, কিন্তু ভগবানের জন্ম হয় স্ব ইচ্ছায়। প্রাকৃত জনের ন্যায় ভগবানের গর্ভাদি ক্লেশ নাই।” অথাৎ এরুপ জন্ম এ পৃথিবীতে কোন দেহধারী জীবের পক্ষে সম্ভব নয়।কেননা  কোন দেহধারী জীব তাঁর স্বইচ্ছায় কোন মাতৃজঠরে প্রবেশ এবং সেখান থেকে বের হতে পারেন না।কিন্তু পরমেশ্বর ভগবানরুপে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর স্বইচ্ছার প্রভাবে কোন মাতৃগর্ভে প্রবেশ করে যথাসময়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারেন।ভগবানের এরুপ আবির্ভাবে দেহধারী জীবের মতো মাতৃগর্ভে কোনপ্রকার ক্লেশ বা যন্ত্রনা পেতে হয় না। অজোহপি সন্নব্যয়াত্মা ভূতানামীশ্বরোহপি সন্ । প্রকৃতিং স্বামধিষ্ঠায় সম্ভবাম্যাত্মমায়য়া ।।৬।। যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত । অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্ ।।৭।। পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্। ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।৮।। জন্ম কর্ম চ মে দিব্যমেবং যো বেত্তি তত্ত্বতঃ। ত্যক্ত্বা দেহং পুনর্জন্ম নৈতি মামেতি সোহর্জুন।।৯।। -(ভগবান শ্রীকৃষ্ণঃগীতা৪/৬-৯) অনুবাদঃ যদিও আমি(শ্রীকৃষ্ণ) জন্মরহিত এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং যদিও আমি সর্বভূতের ঈশ্বর, তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আমি আমার আদি চিন্ময় রূপে যুগে যুগে অবতীর্ণ হই। হে ভারত ! যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যূত্থান হয়, তখন আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই।সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য এবং দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।হে অর্জুন! ‍আমার জন্ম ও কর্ম দিব্য (চিন্ময়/অপ্রাকৃত)।যিনি যথাযথভাবে তা জানেন, তাঁকে আর দেহত্যাগ করার পর পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে হয় না, তিনি আমাকে অথাৎ আমার নিত্য ধাম গোলক বৃন্দাবন লাভ করেন। গীতা ৪/৯ নং শ্লোকে বর্ণিত” দিব্য” বা চিন্ময় বা অপ্রাকৃত শব্দটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যার অর্থ হল প্রাকৃতজনের জন্ম হয় কর্মফলে, কিন্তু ভগবানের জন্ম হয় স্ব ইচ্ছায়। প্রাকৃত জনের ন্যায় ভগবানের গর্ভাদি ক্লেশ নাই।  মত্যলোকে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব  বা দিব্য জন্মলীলাঃ শ্রীমদ্ভাগবত পুরান শাস্ত্রের দশম স্কন্দের ১ম -৪র্থ অধ্যায় পর্যন্ত পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত আবির্ভাব বা জন্মলীলা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। শ্রীমদ্ভাগবত ১০/১/১৭-৬৬ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে,”পরীক্ষিৎ মহারাজ যদুবংশে জন্মগ্রহণ কারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত মহিমা শ্রবণ করতে ইচ্ছা করলে ভগবানের শক্ত্যাবেশ অবতার ব্যাসদেব তনয় শ্রীল শুকদেব গৌস্বামী বলেন যে, “দ্বাপর যুগের শেষ ভাগে মাতা বসুন্ধরা পাপীর পাপের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে ব্রহ্মার শরণাপন্ন হয়েছিলেন। মাতা বসুন্ধরা তখন গো- রূপ ধারণ করে ক্রন্দন করতে করতে ব্রহ্মার সম্মুখীন হয়ে তার দুর্ভাগ্যের কথা নিবেদন করেন। তারপর মাতা ধরিত্রীর দুঃখের কথা শ্রবণ করে ব্রহ্মা ও অন্যান্য দেবতাগণ সহ মাতা ধরিত্রীকে নিয়ে ক্ষীর সমুদ্রের তীরে গমন করেছিলেন । সেখানে দেবতারা ক্ষীরোধকশায়ী বিষ্ণুকে পুরুষ সুক্তের মাধ্যমে উপাসনা করেছিলেন। সে সময় ব্রহ্মা সমাধি মগ্ন অবস্থায় আকাশে ধ্বনিত ভগবান শ্রীবিষ্ণুর বাণী শ্রবন করে দেবতাদের বলেছিলেন, “হে দেবগন,আমরা ভগবানকে নিবেদন করার পূর্বেই ভগবান পৃথিবীর কষ্ট অবগত ছিলেন। তাই ভগবান যতদিন তার কাল শক্তির দ্বারা পৃথিবীর ভার হরণ করার জন্য পৃথিবীতে বিচরণ করবেন ততদিন তোমরা তার পুত্র ও পৌত্ররুপে যদু বংশে অবতীর্ণ হও। সর্বশক্তিমান পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং বসুদেবের পুত্ররুপে আবির্ভূত হবেন।অতএব হে দেবপত্নিগন ভগবানের প্রসন্নতা বিধানের জন্য সেখানে জন্মগ্রহণ করুন।ভগবানের অংশ সঙ্কর্ষণ,তিনি ভগবানের আবির্ভাবের পূ্র্বে আবির্ভূত হবেন।এইভাবে দেবতাদের উপদেশ প্রদান করে এবং বসুন্ধরা মাতাকে আশ্বস্ত করে ব্রহ্মা ব্রহ্মলোকে প্রত্যাবর্তন করেন। কিছুকাল পর,দেববংশীয় ( অথবা শূরবংশীয়) বসুদেব দেবকীকে বিবাহ করে তার নববিবাহিত পত্নীসহ গৃহে প্রত্যাবর্তন করার জন্য রথে আরোহন করেছিলেন। কংস তখন সে রথের সারথি( চালক) হয়েছিলেন। পথি প্রগ্রহিণং কংসমাভাষ্যাহাশরীরবাক। অস্যাস্ত্বামষ্টমো গর্ভো হন্তা যাং বহসেহবুধ।। – শ্রীমদ্ভাগবত ১০/১/৩৪ অনুবাদঃ কংস যখন অশ্বের রজ্জু( দঁড়ি) গ্রহণ করে রথ চালনা করছিল,তখন পথের মধ্যে তাকে সম্বোধন করে একটি দৈববাণী হয়েছিল,”ওরে মূর্খ! তুই যাকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছিস, তার অষ্টম সন্তান তোকে হত্যা করবে। সে দৈব বাণী শ্রবন করে তৎক্ষনাৎ কংস বাম হাত দ্বারা দেবকীর কেশ ধারন করে খড়গ উত্তোলন করে তার মস্তক ছেদন করতে উদ্যত হয়েছিল।কংসের এরুপ উগ্র কর্ম দর্শন করে বসুদেব কংসকে বলেছিলেন,আপনি ভোজবংশের গৌরব।আপনার মতো একজন গুনবান ব্যাক্তি কিভাবে বিবাহ উৎসবে তার ভগ্নি এক অবলা স্ত্রীকে হত্যা করতে পারে? বসুদেব যখন দেখলেন,কংস তার ভগ্নীকে হত্যা করতে বদ্ধপরিকর,তখন বসুদেব কংসের কাছে প্রতিজ্ঞা করেন, আপনার ভয়ের কোন কারন নাই,দেবকীর যত সন্তান জন্ম হবে, জন্ম হওয়ার সাথে সাথে আপনাকে তা দিয়ে দিব।বসুদেবের মুখে এরুপ কথা শ্রবণ করে,বসুদেব ভগ্নিবধ থেকে নিবৃত্ত হন।এরপর বসুদেব ও দেবকীসহ নিজ গৃহে ফিরে আসেন। এরপর বসুদেব তার প্রথম পুত্রটি জন্ম হওয়ার পর প্রতিজ্ঞা অনুসারে কংসের কাছে প্রদান করেন।বসুদেবের এরুপ আচরনে কংস খুশি হন,বসুদেবকে বলেন যে তোমার অষ্টম পুত্রের দ্বারা আমার মৃত্যু নির্দিষ্ট রয়েছে। সুতারাং তোমার এই শিশুটিকে নিয়ে তুমি ঘরে ফিরে যাও। কংসের এরূপ কথা শুনে বসুদেব ঘরে ফিরে গেলেন। একসময় ভক্ত প্রবর নারদ কংসের কাছে গিয়ে বলেছিলেন কিভাবে পৃথিবীর ভারস্বরূপ অসুররা নিহত হবে। তার ফলে কংস অত্যন্ত ভীত এবং সংশয়াচ্ছন্ন হয়েছিল। নারদ চলে যাওয়ার পর কংস দেবকীর গর্ভসম্ভূত সন্তানদের তার মৃত্যুর কারণ বিষ্ণু বলে মনে করে দেবকী এবং বসুদেবকে বন্দী করে শৃঙ্খলাবন্ধ করেছিল। বিষ্ণু তাকে হত্যা করবেন সেই ভবিষ্যদ্বাণী শুনে, কংস দেবকীর একের পর এক ছয়টি পুত্রকে বিষ্ণু বলে মনে করে হত্যা করেছিল।” শ্রীমদ্ভাগবত ১০/২/৮- ৪২ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে, “এদিকে ভগবান বিষ্ণু যোগমায়া দূর্গাকে নির্দেশ দেন,  দেবক্যা জঠরে গর্ভং শেষাখ্যং ধাম মামকম্। তৎ সন্নিকৃষ্য রোহিণ্যাং৷ উদরে সন্নিবেশয়।। অথাহমংশভাগেন দেবক্যাঃ পুত্রতাং শুভে। প্রাপ্স্যামি ত্বং যশোদায়াং নন্দপত্ন্যাং ভবিষ্যসি।। শ্রীমদ্ভাগবত ১০/২/৮-৯ অনুবাদঃ দেবকীর গর্ভে সঙ্কর্ষণ বা শেষ নামক আমার অংশ বিরাজ করছেন, অক্লেশে তাকে রোহিনীর গর্ভে স্থানান্তরিত করো। এই সর্বমঙ্গল যোগমায়া!তখন আমি আমার পূর্ণ ষড়ৈশ্বর্য সহ দেবকীর পুত্ররুপে আবির্ভূত হব এবং তুমি নন্দ মহারাজের মহারানী মা যশোদার কন্যা রুপে আবির্ভূত হবে। ভগবানের দ্বারা এইভাবে আদিষ্ট হয়ে, যোগমায়া মাতা দূর্গা সে অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করেছিলেন। এরপর- ভগবানপি বিশ্বাত্মা ভক্তানামভয়ঙ্করঃ। আবিবেশাংশভাগেন মন আনকদুন্দুভে।। -শ্রীমদ্ভাগবতঃ১০/২/১৬ অনুবাদঃ সমস্ত জীবের পরমাত্মা এবং ভক্তদের সমস্ত ভয় বিনাশকারী ভগবান তাঁর সমস্ত ঐশ্বর্য সহ বসুদেবের চিত্তে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ততো জগন্মঙ্গলমচ্যুতাংশং সমাহিতং শূরসুতেন দেবী। শ্রীমদ্ভাগবতঃ১০/২/১৮ অনুবাদঃ সমস্ত জগতের মঙ্গল বিধানকারী ভগবান তাঁর অংশ সহ বসুদেবের চিত্ত থেকে দেবকীর চিত্তে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন। এরপর দেবকীর অন্তরে ভগবান বিরাজমান থাকায় দেবকীকে আনন্দময়, শুদ্ধ এবং হাস্যোজ্বল দর্শন করে কংস মনে মনে বিচার করলেন আমার প্রাণনাশক প্রবেশ করেছেন। কারণ পূর্বে দেবকী কখনো এরকম আনন্দময়ী এবং প্রভাবতী ছিল