শিবের আয়ু কত তা আমি জানি না।জগত পিতা পরমেশ্বর হওয়া সত্ত্বেও কেন শ্রীকৃষ্ণ এ কথা বললেন?

কিছু ভগবদ্বিদ্বেষী সাধারণ সনাতনীদের মাঝে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ,শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ড, অধ্যায় ৩৬, শ্লোক সংখ্যা১০৫ ব্যবহার করে(তাদের রেফারেন্স ১০৬ যেটা ভূল,সঠিক হবে ১০৫) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে।শ্লোকটি নিম্নরুপ- ব্রহ্মণঃ পতনে নাপি শূলপাণেঃ ক্ষয়ো ভবেৎ। তস্মাযুষঃ প্রমাণঞ্চ নাহং জনামি কা শ্রুতিঃ ॥ ১০৫ -ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণঃ শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ড ৩৬/ ১০৫ অনুবাদঃ ব্রহ্মার পতন হইলেও শিবের বিনাশ হয় না; তাঁহার আয়ু সংখ্যা আমি জানি না, শ্রুতি কি জানিবে?১০৫। এ শ্লোকটি রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে তারা অপপ্রচার করছে, শ্রীকৃষ্ণ কখনো পরমতত্ত্ব / পরমেশ্বর নন।যদি তিনি পরমেশ্বর হবেন,তবে তিনি কেন বললেন,শিবের আয়ু কত তা তিনি জানেন না।পরমেশ্বরের কি কখনো কোন কিছু অজ্ঞাত থাকে?সুতরাং শ্রীকৃষ্ণ কখনো পরমেশ্বর নন,পরমেশ্বর হল শিব। অথচ তাদের এ প্রশ্নের উত্তর উক্ত শ্লোকে এবং তার পরের শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্পষ্ট শব্দে বর্ণনা করেছেন।শ্লোকসমূহ নিম্নরুপ- দিব্যলোকে দিব্যতল্পে জনতায়াং ন তন্মনঃ। শ্মশানেহতীবরহসি ধ্যায়তে মামহর্নিশম্ ॥ ১০৩ আব্রহ্মতৃণপর্য্যন্তৎ স্বপ্নবন্মন্যতে শিবঃ। মমানির্বচনীয়েহত্র রূপে তন্মগ্নমানসম্ ॥ ১০৪ ব্রহ্মণঃ পতনে নাপি শূলপাণেঃ ক্ষয়ো ভবেৎ। তস্মায়ুষঃ প্রমাণঞ্চ নাহং জানামি কা শ্রুতিঃ ॥ ১০৫ জ্ঞানং মৃত্যুঞ্জয়ং শূলমদধাৎ তেজসা সমম। বিনা ময়ান কশ্চিৎ তৎ শঙ্করৎ জেতুমীশ্বরঃ ॥১০৬ -ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ-শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডঃ ৩৬/১০৩-১০৬ অনুবাদঃ শ্রীরাধিকাকে শ্রীকৃষ্ণ বলিলেন,তাঁহার(শিব) মন দিব্যশয্যায়, দিব্যলোকে ও জনতাপূর্ণ স্থানে আসক্ত হয় না। কেবল অতি নির্জন শশ্মানে দিবানিশি আমাকেই ধ্যান করিয়া থাকেন।১০৩। শিব, ব্রহ্মা অবধি তৃণ পর্যন্ত সমস্তই স্বপ্নের ন্যায় জ্ঞান করেন। কেবল অনির্বচনীয় আমার রূপে তাঁহার মন নিয়ত মগ্ন। ১০৪। ব্রহ্মার পতন হইলেও শিবের বিনাশ হয় না; তাঁহার আয়ু সংখ্যা আমি জানি না, শ্রুতি কি জানিবে?১০৫। শঙ্কর (শিব)মৃত্যুঞ্জয়-জ্ঞান ও আমার তুল্য, তেজঃশালী শূল ধারণ করেন।অতএব আমি ব্যতীত তাঁহাকে অন্য কেহই পরাজয় করিতে সক্ষম নহে।১০৬। শ্রোতাগণ, দেখুন ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ-শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডঃ ৩৬/১০৫ শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন,”ব্রহ্মণঃ পতনে নাপি শূলপাণেঃ ক্ষয়ো ভবেৎ” ব্রহ্মার পতন বা মৃত্যু হইলেও শিবের বিনাশ হয় না।সুতারাং শ্রীকৃষ্ণ এখানে শ্রীমতি রাধারাণীকে উপলক্ষ করে আমাদের বুঝাতে চাচ্ছেন, এ জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ জীবতত্ত্ব রুপে ব্রহ্মার আয়ু সমাপ্তি হলে ব্রহ্মা মৃত্যুবরণ করেন।কিন্তু শিব অবিনাশী অথাৎ জগৎ বিনাশের পরও তাঁর বিনাশ বা মৃত্যু নেই। শিবের যেহেতু মৃত্যু নাই তাই শ্রীকৃষ্ণ একই শ্লোকের পরের লাইনে বলছেন,”তস্মায়ুষঃ প্রমাণঞ্চ নাহং” তাঁহার(শিবের) আয়ু কত অথবা তিনি কতদিন এ জগতে জীবিত থাকবেন আমি তা জানি না। এ বিষয়টি আরো পরিষ্কার করা হয়েছে, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ,শ্রীকৃষ্ণ জন্মখণ্ডঃ ৩৬/১০৬ শ্লোকের প্রথম লাইনে ব্যবহৃত মৃত্যুঞ্জয় শব্দ দ্বারা( “জ্ঞানং মৃত্যুঞ্জয়ং শূলমদধাৎ তেজসা সমম।” শঙ্কর বা শিব মৃত্যুঞ্জয়,তাই তিনি জ্ঞান ও আমার তুল্য তেজঃশালী শূল ধারণ করেন)।মৃত্যুঞ্জয় শব্দের অর্থ হল শিব মৃত্যুকে জয় করেছেন।অথাৎ শিবের কখনো মৃত্যু হবে না। সুতরাং, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ,শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডঃ ৩৬/১০৫ নং শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্পষ্টই আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন শিবের যেহেতু বিনাশ বা মৃত্যু নেই (“ব্রহ্মণঃ পতনে নাপি শূলপাণেঃ ক্ষয়ো ভবেৎ”), সুতরাং এ জগতে শিব কতদিন বেঁচে থাকবেন বা তাঁর আয়ু কত তা কখনো প্রশ্ন হতে পারে না।তাই শ্রীকৃষ্ণ বললেন, তাঁহার(শিবের) আয়ু কত অথাৎ তিনি কতদিন এ জগতে জীবিত থাকবেন তা আমি জানি না। এ কথা থেকে মূর্খদের যে অপপ্রচার শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর নন,তা কখনো প্রমানিত হয় না।বরং পরমপ্রভু বা পরমেশ্বররুপে শ্রীকৃষ্ণের মহিমা /মাহাত্ম্য প্রচারিত হয়। পরিশেষে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ,শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডঃ ৩৬/১০৬ শ্লোকে বর্ণিত শ্রীকৃষ্ণের মহানতাসূচক কথাটি আকর্ষনীয়, যেখানে স্বয়ং পরমপ্রভু শ্রীকৃষ্ণ বলেন,”বিনা ময়ান কশ্চিৎ তৎ শঙ্করৎ জেতুমীশ্বরঃ।” -“আমি ব্যতীত তাঁহাকে(শিবকে) অন্য কেহই পরাজয় করিতে সক্ষম নহে।” সুতরাং শিব কখনো শ্রীকৃষ্ণের সমান বা পরমেশ্বর নন ,তিনি সর্বদা শ্রীকৃষ্ণের অধীন, শ্রীকৃষ্ণের পরমভক্ত।তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন, শিব এমনই আমার পরম ভক্ত যে দিবানিশি কেবল আমাকেই ধ্যান করেন (“ধ্যায়তে মামহর্নিশম্”-ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ,শ্রীকৃষ্ণজন্মখণ্ডঃ ৩৬/১০৩),শিব কেবল আমার কাছে পরাজিত হবে, অন্য কেউ তাঁকে পরাজিত করতে পারবে না। হরে কৃষ্ণ। প্রনাম। গ্রন্থ সহায়তা ১/ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুবাদকঃ শ্রীযুক্ত পঞ্চানন তর্করত্ন। প্রকাশনীঃ নবভারত পাবলিশার্স।
ইসকনের ভক্তরা কি সাক্ষাতে হরে কৃষ্ণ উচ্চারণ করার পাশাপাশি ‘নমস্কার’ শব্দে সম্বোধন করেন⁉️

নমস্কার শব্দের সংস্কৃত অর্থ হল নমস্তে। আর সংস্কৃত ভাষায় নমস্তে শব্দের সমার্থক শব্দ হল- নমঃ, প্রনাম।সনাতন ধর্ম শাস্ত্র অনুসারে বিনয় বা সন্মান প্রদর্শনের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হল নমস্কার বা প্রনাম।কারন বিনয় বা সন্মান প্রদর্শন না করে কখনো শিক্ষা বা পারষ্পরিক সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব নয়। সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে স্থান, কাল এবং পাত্র অনুসারে কায়, মন এবং বাক্য এই তিন-প্রকারে প্রনাম বা নমস্কার প্রদানের বিধান আছে। ১/ কায় দ্বারা নমস্কার প্রদানঃ কায় শব্দের অর্থ হল শরীর বা দেহ। পরিচিত বা সন্মানীয় কারো সাথে দেখা হলে ভূমিতে মাথা নত করে বা সন্মানীয় ব্যক্তির দুই চরন ডানহস্ত দ্বারা স্পর্শ করে তা মাথায় স্পর্শ করা অথবা দুই হাত জোর করা। এ পদ্ধতিতে নমস্কার প্রদান হল নমস্কার প্রদানের সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। ২/ মন দ্বারা নমস্কার প্রদানঃ সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে গুরুদেব,পরমেশ্বর ভগবান অথবা পিতা মাতাকে মনে মনে স্মরন বা চিন্তা করে তাদের চরণে অবনত মস্তকে মনে মনে প্রনাম বা নমস্কার জানানো যায়। ৩/ বাক্য দ্বারা নমস্কার প্রদানঃ বাক্য বলতে মুখ দ্বারা শব্দ উচ্চারণ করাকে বুঝানো হয়। সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে মুখ দিয়ে নমস্কার বা প্রনাম উচ্চারণ করলে তাকে নমস্কার বা প্রনাম রুপে গ্রহণ করা হয়।যেমন-গীতা১১/৪০ নমঃ পুরস্তাদধ পৃষ্ঠতস্তে নমোহস্তু তে সর্বত এব সর্ব। অনন্তবীর্যামিতবিক্রমস্ত্বং সর্বং সমাপ্নোষি ততোহসি সর্বঃ।। ৪০।। – (গীতা ১১/৪০,অর্জুন) অনুবাদঃ হে সর্বাত্মা (শ্রীকৃষ্ণ) তোমাকে সম্মুখে পশ্চাতে ও সমস্ত দিক থেকেই নমস্কার করছি। হে অনন্তবীর্য! তুমি অসীম বিক্রমশালী। তুমি সমগ্র জগতে ব্যাপ্ত, অতএব তুমিই সর্ব-স্বরূপ। এখন প্রশ্ন হল ইসকন ভক্তরা পরিচিত বা সন্মানীয় কারো সাথে দেখা হলে তাদের নমস্কার দেয়ার পদ্ধতি কিরুপ, তারা কি একে অপরের সাথে সাক্ষাতের সময় মুখ দিয়ে হরে কৃষ্ণ বলার পাশাপাশি ‘নমস্কার’ সম্বোধন করেন? এর উত্তর হল, হ্যাঁ। পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে নমস্কার শব্দের সমার্থক শব্দ হল প্রনাম। সকল ইসকন ভক্তরা সাক্ষাৎ কারে কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় কলির্সন্তরণ উপনিষদ ২ মন্ত্র অনুসারে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পবিত্রনামরুপ হরে কৃষ্ণ উচ্চারন পূর্বক নমস্কার শব্দের সমার্থক শব্দ প্রনাম শব্দটি উচ্চারন করেন। সনাতনী ইসকন কৃষ্ণ ভক্তগণ সন্মানিত বা পরিচিত কারো সাথে সাক্ষাৎ বা দেখা হলে হাত জোর করে হরে কৃষ্ণ উচ্চারণ করে মুখ দিয়ে প্রনাম উচ্চারণ করেন অথবা মস্তককে ভূমিতে স্পর্শ করে নমস্কার প্রদান করে হরে কৃষ্ণ উচ্চারণ করেন।অথবা মোবাইল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলার সময় হরে কৃষ্ণ, দন্ডবৎ প্রনাম প্রভু অথবা হরে কৃষ্ণ, প্রনাম প্রভুজী এ পদ্ধতি অনুসরণ করেন। ➡️ নমুনা-১ মাধ্যম-মোবাইল বা সামাজিক যোগাযোগ ভক্তঃ হরে কৃষ্ণ। প্রনাম প্রভু। পরিচিতঃ প্রনাম প্রভু। হরে কৃষ্ণ। ভক্তঃ কেমন আছেন সৌরভ প্রভু? পরিচিতঃ ভালো আছি প্রভু। ভক্তঃ প্রভুজী, নিয়মিত হরিনাম জপ করছেন? পরিচিতঃ হ্যাঁ প্রভুজী, নিয়মিত জপ করছি। ➡️ নমুনা-২, মাধ্যম- রাস্তায় দেখা ভক্ত -কঃ(দুই হাত জোর করে) হরে কৃষ্ণ প্রভু।প্রনাম ভক্ত- খঃ(দুই হাত জোর করে) হরে কৃষ্ণ প্রভু।প্রনাম। ভক্ত -কঃ অনেকদিন পর আপনার দেখা পেলাম। কেমন আছেন প্রভু? ভক্ত- খঃ হ্যাঁ প্রভু। কৃষ্ণের কৃপায় ভালো আছি। ➡️ নমুনা-৩,মাধ্যম -রাস্তায় দেখা ভক্তঃ (দুই হাত জোর করে) হরে কৃষ্ণ।প্রনাম পার্থ প্রভু। স্টুডেন্টঃ (দুই হাত জোর করে) হরে কৃষ্ণ। প্রনাম প্রভু। ভক্তঃ কেমন আছেন প্রভু? স্টাডি কেমন চলছে? স্টুডেন্টঃ প্রভু ভালো আছি। স্টাডি ভালো হচ্ছে। ভক্ত – নিয়মিত জপ করা হয়? স্টুডেন্ট -হ্যাঁ প্রভু। প্রতিদিন ২ মালা জপ করি। ভক্ত – হরিবোল। খুব খুশি হলাম। এভাবে নিয়মিত জপ করুন। স্টুডেন্ট – হ্যাঁ প্রভু। পরিশেষে আমরা যখন প্রনাম বা নমস্কার শব্দটি উচ্চারন করি, তার মাধ্যমে আমরা আমাদের সিনিয়র বা বয়সে বড়দের সন্মান প্রদর্শন করি, তাদের কাছে মাথা নত করি,তাদের আশির্বাদ প্রার্থনা করি। আর আমরা যখন আমাদের ছোটদের নমস্কার বা প্রনাম বলি, তখন তার মাধ্যমে তাদের হৃদয়ে অবস্থিত পরমাত্মাকে প্রনাম নিবেদন করি। তাই সকল সনাতনীর প্রয়োজন বড়, ছোট যার সাথে সাক্ষাৎ হয় তাকে হাত জোড় করে হরে কৃষ্ণ উচ্চারন করে প্রনাম বা নমস্কার উচ্চারন করা। হরে কৃষ্ণ, প্রনাম প্রচারে-©️ স্বধর্মম্
কিছু ভগবদ্বিদ্বেষীদের প্রচার অনুসারে, আদৌ কি শ্রীকৃষ্ণের বিবাহে পশুর মাংস খাওয়ানো হয়েছিল?!

অপপ্রচার খন্ডন ❌ কিছু ভগবদ্বিদ্বেষী ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ড, অধ্যায় ১০৫ এর ৬০-৬২ নং শ্লোকগুলোর ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে যে রুক্মিনীর সাথে শ্রীকৃষ্ণের বিবাহে নাকি পশুর মাংস খাওয়ানো হয়েছিল, তাই তাঁরা বৈষ্ণবদের দেখাচ্ছে যে পশুর মাংস আহার করা যদি পাপ হয়, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের বিবাহে কিভাবে শ্রীকৃষ্ণ এ পশুমাংস আহার করাকে বৈধতা দিল? এসমস্ত নাস্তিকরা অষ্টাদশ পুরাণকে স্বীকার করে।কিন্তু অষ্টাদশ পুরানের মধ্যে অন্যতম শ্রীমদ্ভাগবত ৫/২৬/১৩ শ্লোকে উল্লেখিত, যস্ত্বিহ বা উগ্রঃ পশুন পক্ষিণো বা প্রাণত উপরন্ধয়তি তমপকরুণং পুরুষাদৈরপি বিগর্হিতমমূত্র যমানুচরাঃ কুম্ভীপাকে তপ্ততৈলে উপরন্ধয়ন্তি ।। ১৩ ॥ অনুবাদঃ যে সমস্ত নিষ্ঠুর মানুষ তাদের দেহ ধারণের জন্য এবং জিহ্বার তৃপ্তি সাধনের জন্য নিরীহ পশু-পক্ষীকে হত্যা করে রন্ধন করে, সেই প্রকার ব্যক্তিরা নর- মাংসভোজী রাক্ষসদেরও ঘৃণিত। মৃত্যুর পর যমদূতেরা কুন্তীপাক নরকে ফুটন্ত তেলে তাদের পাক করে। …কথাকে তাঁরা সত্যরূপে স্বীকার করে না। কারণ তারা নিজেদের জিহ্বার তৃপ্তির জন্য অসহায় তৃণভোজী ছাগল, হাঁস, মুরগী, হরিণ ইত্যাদি প্রাণীদের নির্মমভাবে হত্যা করে তাঁর মাংস আহার করে শিবের আরাধনা করে। তাঁরা যেভাবে আরাধনা করে, তাতে আমাদের বিদ্বেষ নেই, কারণ সকলে সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ করতে পারবে না। তাই, বলে যারা সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ করে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত, তাদের সাত্ত্বিক আহারকে অবৈধ বলে প্রমাণ করার জন্য, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ডের ১০৫/৬০-৬২ শ্লোক কয়টি ব্যবহার করে রুক্মিনীর সাথে শ্রীকৃষ্ণের বিবাহে পশুর মাংস খাওয়ানো হয়েছিল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরণের মিথ্যা প্রচার করা কখনো কোন আর্দশ মনোভাবের পরিচয় হতে পারে না। বাস্তবে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ড ১০৫/৬০-৬২ শ্লোকে বিবাহে যে পশুর মাংস আহার করার কথা বলা হয়েছে, তা হলো শিশুপালের বিবাহে রান্না করার জন্য।বিবাহ কিন্তু তখনও হয় নি, শুধু পরিকল্পনা করে বলা হয়েছে শিশুপালের বিবাহে হরিণ, ছাগল, মেষ ইত্যাদি পশুর মাংস রান্না করার জন্য। বাস্তবে এই সমস্ত পশুমাংস রান্না করা হয়েছিলো কিনা তাও উক্ত অধ্যায়গুলিতে আলোচনা করা হয় নি। আসুন আমরা প্রকৃত সত্য ঘটনাটিতে আরো বিস্তারিত জানি, যার মাধ্যমে পাঠকগণ বুঝতে পারবেন এসমস্ত নিন্দুক নাস্তিকরা কতটুকু মিথ্যাবাদী। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ড, অধ্যায় ১০৫, ১- ৬২ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে, দ্বাপর যুগে বিদর্ভ দেশের ভীষ্মক নামে এক রাজা ছিলেন। সেই রাজার মহালক্ষ্মী স্বরূপিণী রুক্মিণী নাম্নী এক কন্যা ছিলেন। রুক্মিণীর যখন বিবাহ যোগ্যা হলেন তখন তাঁর পিতার রাজ পুরোহিত এবং ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞেস করলেন, বরণের যোগ্য প্রবর, মুনিপুত্র অথবা দেবপুত্র কিংবা অভীপ্সিত নরপতিবর-তনয় কাকে আমার কন্যার বররূপে বরণ করব? মনোহারিণী আমার কন্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি লাভ করছে ; অতএব তাঁর বিবাহ দেওয়া উচিত। শীঘ্র নবযৌবন- সম্পন্ন উপযুক্ত বর অন্বেষণ করুন। সেই বর ধর্মশীল, স্থিতপ্রতিজ্ঞ, নারায়ণ-পরায়ণ, বেদ-বেদাঙ্গবিৎ, পণ্ডিত, সুন্দর, কল্যাণী, শম-দম-ক্ষমা প্রভৃতি গুণশালী, দীর্ঘজীবী, সংকূলপ্রসূত সর্ব্বত্র লব্ধপ্রতিষ্ঠ হওয়া আবশ্যক। রাজার কথা শ্রবণ করে কুলপুরোহিত শতানন্দ বলতে লাগলেন, নৃপতিবর! তুমি ধার্মিক এবং সর্বশাস্ত্রে সুপণ্ডিত; তথাপি আমি বলিতেছি শ্রবণ কর। বিধাতারও বিধাতা ব্রহ্মা, শিব এবং অনন্ত কর্তৃক বন্দিত জ্যোতির্ময় সকল জীবগণের পরম পরমাত্মা প্রকৃতি হতে পৃথক্ নির্লিপ্ত নিরীহ সকল কর্মের সাক্ষীস্বরূপী ভক্তগণের প্রতি অনুগ্রহ প্রকাশের নিমিত্ত বিগ্রহধারী পরিপূর্ণতম প্রভু স্বয়ং নারায়ণ ভূভার হরণের নিমিত্তে বসুদেবের পুত্রতা স্বীকার করেছেন। নৃপবর, সেই পরিপূর্ণতম পরমাত্মা গোলোকনাথকে কন্যা সম্প্রদান করে শত পিতৃগণের সাথে গোলোকধামে গমন করবে। কন্যা সম্প্রদান করে পরলোকে গমন কর এবং ইহলোকে সকলের পূজ্য ও বিশ্বগুরুর গুরু হও। হে নরপতে! মহালক্ষ্মীস্বরূপিণী রুক্মিণী লক্ষ্মীনাথকে সমর্পণ করত সেই কন্যাদানের দক্ষিণা সর্ব্বস্ব প্রদান করে পুনর্জন্ম জয় কর। সেই শ্রীকৃষ্ণকে আনয়নের নিমিত্ত দ্বারকা- নগরে ব্রাহ্মণ প্রেরণ কর। সকলের সাথে পরামর্শ – পূর্ব্বক শুভক্ষণ নির্ধারণ করে সেই ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণকে আনয়ন কর। কুলপুরোহিত শতানন্দের কথা শ্রবণ করে বিদর্ভরাজ ভীষ্মক তাঁর কন্যাকে শ্রীকৃষ্ণের হস্তে সমর্পন করতে রাজী হলেন। কিন্তু তাঁর সন্তান রুক্মী এ সমন্ধে রাজী হন নি। এই ঘটনা দর্শন করে রুক্মী, পিতা এবং বিপ্রকে বলতে লাগলেন, মহারাজ! আমি সত্য কথা বলছি, শ্রবণ করুন। কি আশ্চর্য্য! ভিক্ষুক ব্রাহ্মণগণ কি লোভী, তাদের কথা কখনও বিশ্বাস করবেন না। নর্ত্তক, বেশ্যা, ভট্ট, যাচক, কায়স্থ এবং ভিক্ষুক তারা সর্বদা মিথ্যা কথা বলে মানুষকে প্রতারণা করে। মহারাজ! কৃষ্ণ নিকৃষ্টবুদ্ধি বলে অন্যকে দিয়ে কাল-যবনকে হত্যা করে তার ধন লাভ করেছে। কৃষ্ণ যবনের ধনে দ্বারকায় ধনী হয়েছে। ভাল, সে যদি এতই বীরপুরুষ হয়, তা হলে মহারাজ জরাসন্ধের ভয়ে সমুদ্রের মধ্যে কি নিমিত্তে সে গৃহ নির্মাণ করছে। আমি একাকী শত জরাসন্ধকে সহজে হত্যা করতে সক্ষম। অন্য রাজা কি আমার যুদ্ধে স্থির হতে পারে? রণশাস্ত্রে সুপণ্ডিত আমি দুর্ব্বাসার শিষ্য। নিশ্চয় আমি পাশুপত অস্ত্র দ্বারাই এই বিশ্ব সংহার করতে সমর্থ। আমার সমান বিক্রমী এক পরশুরাম এবং শিশুপাল। আমার প্রিয়সখা বলবান শিশুপাল স্বর্গ জয় করতে সক্ষম এবং আমিও খুব অল্প সময়ে ইন্দ্রকে জয় করতে সমর্থ। মহারাজ! আপনিও কি তা জানেন না? অহঙ্কারে মত্ত হয়ে সেই মুঢ় (শ্রীকৃষ্ণ) যদি অভিলাষিত বিবাহ মানসে আমার গ্রামে উপস্থিত হয়, তাহলে তাকে সেই ক্ষণেই যমভবনে পাঠিয়ে দিব। আহা! কি দুঃখের বিষয়! আপনি কিনা নন্দগোপের গো-রক্ষক, গোপনারীগণের সাক্ষাৎ উপপতি, গোপালক সমূহের উচ্ছিষ্টভোজী, সেই মুঢ়কে ভিক্ষুক ব্রাহ্মণের বাক্যে রুক্মিনীকে সম্প্রদানের ইচ্ছা করছেন। কোন গুণে কৃষ্ণকে আপনি রুক্মিণীর পাত্র স্থির করলেন? কৃষ্ণ কি রাজপুত্র, না বীর, না কুলীন, না শুচি, না দাতা, না ধনাঢ্য, না রুক্মিণীর সদৃশ অথবা জিতেন্দ্রিয়? কোন সদ্গুণ তার নেই। মহারাজ, বলে রুদ্রসদৃশ রাজপুত্র সুপাত্র শিশুপালকে কন্যা সম্প্রদান করুন। মহারাজ, নানা দেশীয় নরপতিমণ্ডল, বান্ধবগণ এবং মুনিবরগণকে শীঘ্র পত্রদ্বারা নিমন্ত্রণ করুন। অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, মগধ, সৌরাষ্ট্র, বগুল, গুরু, রাঢ়, বরারেন্দ্র, বঙ্গ, গুজরাটি, পেটর, মহারাষ্ট্র, বিরাট, মুদগল, সুবঙ্গ, ভল্লুক, ভল্লক, খর্স এবং দুর্গ প্রভৃতি দেশে ব্রাহ্মণ প্রেরণ করুন। ঘৃতকুল্যাসহস্রক মধুকুল্যা সহস্রকম্। দধিকুল্যা সহস্রঞ্চ দুগ্ধকুল্যা সহস্রকম্ ॥ ৫৭ ভেলকুল্যাপঞ্চশতং গুড়কুল্যাম্বিলক্ষকম্। শর্করাণাৎ রাশিশতং মিষ্টান্নানাং চতুর্গুণম্। ৫৮ যবগোধূমচূর্ণানাং পিষ্টরাশিশতং ততঃ। পৃথুকানাং রাশিসক্ষমন্নানাং তচ্চতুগু ণম্ ॥ ৫৯ – (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণঃ শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ড ১০৫/৫৭-৫৯) অনুবাদঃ সহস্র ঘৃতকুল্যা, সহস্র মধুকুল্যা, সহস্র দধিকুল্যা, সহস্র দুগ্ধকুল্যা, পঞ্চশত তৈলকুল্যা, দুইলক্ষ গুড়কুল্যা, শত শত রাশ শর্করা, তদপেক্ষা চতুর্গুণ মিষ্টান্ন, যব গোধূমচূর্ণ, শত শত রাশি পিষ্ট, লক্ষরাশি পৃথুক, তদপেক্ষা চতুর্গুণ অন্ন প্রস্তুত করান। আর রুক্মী এবং শিশুপাল যেহেতু মাংস, মদ আহারী আসুরিক প্রভৃতির ছিল, তাই তাদের মতো বন্ধু-বান্ধবদের বিবাহে আমন্ত্রণ জানাবে, তাই ক্রোধান্বিত রুক্মী শিশুপালের বিবাহে পশুমাংস রান্নার কথা স্পষ্ট ভাবে তার পিতা ভীষ্মককে জানিয়ে দিলেন। গবাং লক্ষং ছেদনঞ্চ হরিণানাং দ্বিলক্ষকম্। চতুর্লক্ষং শশানাক কুৰ্ম্মাণাক তথা কুরু।। ৬০।। দশলক্ষৎ ছাগলানামবীনাং তচ্চতুর্গুণম্। পর্ব্বণি গ্রামদেব্যৈ চ বলিং দেহি চ ভক্তিতঃ ॥ ৬১।। এতেষাং মাংসপকঞ্চ ভোজনার্থক কারয়। পরিপূর্ণৎ ব্যঞ্জনানাং সামগ্রীং কুরু ভূমিপ।। ৬২।। – (ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণঃ শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ড ১০৫/৬০-৬২) অনুবাদঃ লক্ষ গো (‘গো’ শব্দে গোসাপকে বুঝতে হবে। – পৌরানিক সংহিতা২/৫), দুই লক্ষ হরিণ, চারি লক্ষ শশক এবং কূৰ্ম্মচ্ছেদন করান। দশ লক্ষ ছাগল, তদপেক্ষা চতুর্গুণ মেষ পূর্ণিমা দিনে গ্রাম্যদেবীর নিকটে ভক্তিপূর্ব্বক বলি দান করুন। এই সকলের মাংস ভোজনার্থে পাক করান। হে ভূমি পতে, ব্যঞ্জনসামগ্রী পরিপূর্ণরূপে প্রস্তুত করান। পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনা অনুযায়ী, ভগবদ্বিদেষী যে অপপ্রচার করছে ৬০-৬২
শাস্ত্রে উল্লেখিত পুতনা,অঘাসুর,বকাসুর, তারকাসুুর, রাবন ইত্যাদি রাক্ষসের আদৌ কি পৃথিবীতে অস্তিত্ব ছিল?

আজকাল কিছু মূর্খ শ্রীমদ্ভাগবত,রামায়ন ইত্যাদি শাস্ত্রে উল্লেখিত পুতনা,অঘাসুর, বকাসুর,তারকাসুর,রাবন ইত্যাদি রাক্ষসের অস্তিত্বকে কুযুক্তির মাধ্যমে অস্বীকার করে সরল সনাতনীদের মাঝে সনাতনী শাস্ত্রের প্রতি অশ্রদ্ধা তৈরি করছে যা অত্যন্ত ভয়ংকর। যাহোক অন্ধকার মায়ার প্রতিনিধি নিসেবে তাঁরা নিজেদের যতই শক্তিশালী মনে করুক না কেন,কৃষ্ণরুপ আলোকিত সূর্যের উদয়ে তাদের অজ্ঞান অন্ধকাররুপ মায়া অদৃশ্যমান হবে , এ আশা করি। যাদের বর্তমান বয়স ৩০-৩৫ বছর চলছে,বাস্তবে একটু চিন্তা করে দেখুন আমরা একসময় তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণীতে কখনো মোবাইল চোখেও দেখিনি, বিনিময় প্রথা হিসেবে ডাকচিঠি ছিল।এখন আমাদের হাতে মোবাইল ফোন,সেটিই আমাদের যোগাযোগের মাধ্যম,এখন ডাকচিঠি কল্পনাতীত। পূর্বে আমরা রেডিও দেখছি, কিন্তু সে রেডিও এখন চোখেও দেখা যায় না।আমরা এ বয়সে অনেক কিছু দেখছি যা আমরা পূ্র্বে দেখি নি,পূর্বে আমরা অনেক কিছু দেখছি, যা এখন কল্পনাতীত ও হাস্যকর। ঠিক তেমনই আমরা এখন পুতনা, তারকা, অঘাসুর, বকাসুর এসমস্ত রাক্ষসদের দেখতে না পেলেও পূ্র্বে এদের অস্তিত্ব ছিল। এমনকি রামায়ণে রাবনের রাক্ষস বংশ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রকৃতি পরিবর্তনশীল।ভবিষ্যৎ পুরানে বলা হয়েছে, ব্রহ্মা তার সৃষ্টি প্রকৃিয়ায় যক্ষ,রাক্ষস, পিশাচ, সর্প, পক্ষী, মানুষ ইত্যাদি প্রাণীকূল সৃষ্টি করেছিলেন। পিশাচা মানুষা তাত রক্ষাংসি চ জরায়ুজাঃ। দ্বিজাস্ত্য অণ্ডজাঃ সৰ্পাণক্রা মৎস্যাঃ সকচ্ছপাঃ।।৭০ এবং বিধানি মানীহ স্থলজান্যৌদকানি চ। স্বেদজং দংশমংশকং কালিক্ষ কমৎকুণাঃ।।৭১ উষ্মণা চোপজায়ন্তে সচ্চান্যক্তিচিদীদশম্। উদ্ভিজ্জাঃ স্থাবরাঃ সর্বে বীজকাণ্ড প্ররোহিণঃ।।”৭২ -(ভবিষ্যপুরাণ: ব্রাহ্মপর্ব, সৃষ্টি, ৭০-৭২) অনুবাদঃ পশুবর্গ, পিশাচ, মানুষ, রাক্ষস সব কিছু জরায়ুজ। পক্ষী, সর্প, মৎস্য এবং কচ্ছপ হল অণ্ডজ। জরায়ুতে উৎপন্ন হলে জরায়ুজ এবং অণ্ড (ডিম) থেকে উৎপন্ন হলে সেই জীবকে বলা হয় অণ্ডজ।কিছু জীব আছে যারা স্থলভাগে জন্মায় এবং কিছু জীব আছে যারা জলে জন্মায়। দংশনকারী মশা, জোঁক, লিক্ষা এবং ছারপোকা এদের স্বেদজ বলা হয়। কারণ এরা স্বেদ থেকে উৎপন্ন হয় আর এক প্রকারের জীব আছে যাদের উদ্ভিজ্জ বলা হয় কারণ এরা ভূমিতে সৃষ্ট হয় এবং বীজ কাণ্ড পরিণত হয়।এইভাবে ব্রহ্মা থেকে জরায়ুজ(রাক্ষস,মানুষ, পশু,পিশাচ),অণ্ডজ, স্বেদজ এবং উদ্ভিজ্জ এই চারপ্রকার জীব সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু রাক্ষস জাতি যেহেতু ঋষিদের আক্রমন করত, এবং যজ্ঞ বিনষ্ট করার জন্য তারা পশুর রক্ত,হাড় ও মাংস নিক্ষেপ করত। তাই ঋষিদের অভিশাপে এ রাক্ষস বংশ ত্রেতা যুগে নির্মুল হয়।রামায়ন, মহাভারত,অষ্টাদশ পুরান আদি শাস্ত্র থেকে জানা যায় রাবন, পুতনা, অঘাসুর, বকাসুর,তারকাসুর আদি রাক্ষসেরা নানান রুপ ধারন অলৌকিক সব কার্যকলাপ সম্পাদন করতেন। যাই হোক ভগবান শ্রীরাম বা শ্রীকৃষ্ণের হাতে যেসমস্ত রাক্ষস বা অসুর নিহত হয়েছিল, পুরানাদি শাস্ত্রের বিবরন অনুসারে, তারা রাজা বা ঋষি বা দেবতা ছিল।কিন্তু কোন না কোন অপরাধের কারনে ঋষি বা দেবতা কতৃর্ক অভিশাপ প্রাপ্ত হলে তারা রাক্ষস শরীর লাভ করে।কিন্তু তারা ক্ষমা ভিক্ষা চাইলে ঋষিরা ভগবানের হাতে তাদের মৃত্যুর মাধ্যমে রাক্ষস দেহ থেকে মুক্তির আশির্বাদ পান। এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারে, কোটি কোটি বছর পূর্বে বিলুপ্ত ডাইনোসরের কঙ্কাল পাওয়া যায়,তাহলে এসমস্ত রাক্ষসদের কেন কঙ্কাল পাওয়া যাচ্ছে না? আসলে এর উত্তর হল লক্ষ লক্ষ বছর পূ্র্বে লক্ষ লক্ষ ডাইনোসরের বসবাস এ পৃথিবীতে ছিল, তাদের মৃত্যু হয়েছে।কিন্তু এখনও বিজ্ঞানীরা দুই একটি ডাইনোসরের কঙ্কালের সন্ধান পাচ্ছেন বলে তারা দাবী করছেন।তাহলে যে রাক্ষস জাতি অভিশপ্ত জাতি, আর তাদের বংশ বিস্তারও কম ছিল।কালের প্রভাবে, মুনি ঋষিদের অভিশাপে তাদের অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তাহলে তাদের কঙ্কাল এ জগতে থাকবে কিভাবে তা আশা করা যায়? হরে কৃষ্ণ। প্রনাম
যারা বেদে বর্ণিত সাকার/ শরীরধারী ঈশ্বরকে মানে না,তাদের শরীরহীন তথাকথিত নিরাকার ঈশ্বর ধারনা হল অবৈজ্ঞানিক এবং বেদবিরোধীঃ

সারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে লক্ষ লক্ষ সনাতনীরা যখন গভীর আনন্দ উল্লাসে মহাবতার নরসিংহ মুভি দেখতে সিনেমা হলে আসতেছে, বাইরে জুতা খুলে সিনেমা হলে প্রবেশ করতেছে,তখন বিধর্মীদের ধর্ম অনুসরনকারী ঘোর মূর্তিপূজা বিরোধী, বেদে বর্ণিত পরমেশ্বরের সাকার রুপের তীব্র বিরোধীতাকারী এক নামধারী সংগঠনের কতিপয় ব্যক্তির ঈর্ষায় তাদের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা সরল সনাতনীদের মাঝে অপপ্রচার করছে, অর্ধেক নর,অর্ধেক সিংহ এ ধরনের ঈশ্বর নাকি অবৈজ্ঞানিক। কিন্তু বেদ অনুসারে ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান হয়, তাহলে তার পক্ষে কি করে অর্ধেক নর, অর্ধেক সিংহ রুপ ধারণ করা অসম্ভব হয়,যেখানে বেদ অনুসারে ঈশ্বর শরীরধারী? আবার কেউ যদি ইন্টারনেটে জানতে চাই বানরের মতো দেখতে এমন মানুষের কি সন্ধান পাওয়া গেছে,তবে নেট আপনাকে তথ্য দিবে কিছু মানুষের মধ্যে এমন শারীরিক বৈশিষ্ট্য থাকতে দেখা গেছে যা বানরের মতো দেখতে, যেমন লম্বা হাত-পা, ছোট নাক, বা বড় চোয়াল।সুতরাং বানরের মতো এরুপ মানুষ যদি পৃথিবীতে দেখতে পাওয়া যায়,যাকে বিজ্ঞানীরা স্বচক্ষে দর্শন করে সত্য বলে গ্রহণ করছে, তাহলে যে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান তিনি কি করে অর্ধেক নর,অর্ধেক সিংহ রুপ ধারণ করতে অপারগ?একজন সাধারণ সনাতনী যার সামান্য সনাতনী শাস্ত্রের জ্ঞান আছে, সেও এ বিষয়টি বুঝতে পারে,অথচ এ সমস্ত বিধর্মীর ধর্ম অনুসরনকারী, বিধর্মীদের কাছে নিজের ধর্মবিশ্বাসকে বিক্রয়কারীদের কাছে এ বিষয়টি বোধগম্য হচ্ছে না। যারা ঈশ্বরের নৃসিংহ অবতার ধারণকে অবৈজ্ঞানিক বলছে,বাস্তবে তাদের ঈশ্বর সম্পর্কে ধারণাও সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক।কিভাবে?এর কারন হল তাদের গুরু তার নিজের চেষ্টায় বেদকে জানার চেষ্টা করছে।তাই তাদের মতে ঈশ্বর নাকি শুধুই নিরাকার বা শরীরহীন।অথচ বেদ অনুসারে ঈশ্বর সাকার এবং নিরাকার উভয়ই।এ সম্পর্কে বেদে বলা হয়েছে- দ্বে বাব ব্রহ্মণো রুপে মূর্তং চৈবামূতং। চ মর্ত্যং চামৃতং চ স্থিতং চ যচ্চ সচ্চ ত্যচ্চ।। –বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২/৩/১(শুক্ল যজুর্বেদ) অনুবাদঃ ব্রহ্মের (ঈশ্বর) দুটি রুপ-মূর্ত ( মূর্তিমান বা সাকার) এবং অমূর্ত(অমূর্তিমান বা নিরাকার)। তিনি মর্ত্য ও অমৃত।তিনি স্থিতিশীল, গতিশীল,সৎ(সত্তাশীল) এবং ত্যৎ(অব্যক্ত)। সর্বেন্দ্রিয় গুণাভাসং সর্বেন্দ্রিয়বিবর্জিতম। সর্বস্য প্রভুমীশানং সর্বস্য শরণং সুহৃৎ।। ১৭ -শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৩/১৭(কৃষ্ণ যজুর্বেদ)। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৩/১৫ অনুবাদঃ পরমাত্মা( ঈশ্বর) সমস্ত ইন্দ্রিয় ও ইন্দ্রিয়ের গুণের অর্থাৎ চক্ষুকর্ণাদি দ্বারা গ্রহণযোগ্য জ্ঞানের প্রকাশক কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি সমস্ত জড় ইন্দ্রিয়বিবর্জিত, তিনি সকলেরই প্রভু এবং নিয়ন্তা। তিনি সকলের শরণ বা রক্ষক ও সকলের সুহৃৎ। বেদ অনুসারে ঈশ্বর মৃত্যুহীন অথাৎ চিন্ময় শরীরধারী তাই ঈশ্বর সাকার।তাই বেদে বলা হয়েছে – দিবো বা বিষ্ণো উত বা পৃথিব্যা মহো বা বিষ্ণু উরোরন্তরিক্ষাৎ। উভো হি হস্তা বসুনা পূনস্বা প্রযচ্ছ দক্ষিণাদোত সব্যাদ্বিষ্ণবে দ্বা।। -(শুক্ল যজুর্বেদ সংহিতা ৫।১৯) অনুবাদঃ হে বিষ্ণু(ঈশ্বর),তুমি দ্যুলোক অথবা ভূলোক হতে কিংবা মহান বিস্তৃত অন্তরিক্ষলোক হতে, তোমার উভয় হস্ত ধনের দ্বারা পূর্ণ কর। এবং দক্ষিণ অথবা বাম হস্তে আমাদের দান কর। হিরন্ময়েন পাত্রেন সত্যস্যাহপিহিতং মুখম। তৎ ত্বং পুষন্নপাবৃনু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে।। -ঈশোপনিষদঃ ৬(শুক্ল যজুর্বেদ) অনুবাদঃ হে প্রভু,হে সর্বজীবপালক,আপনার উজ্জ্বল জ্যোতির দ্বারা আপনার শ্রীমুখ আচ্ছাদিত।কৃপা করে সেই আচ্ছাদন দূর করুন এবং যাতে আমরা আপনাকে দেখতে পারি। আবার বেদ অনুসারে ঈশ্বর নিরাকার কারন তার কোন বিনাশশীল শরীর নেই। তাদের মতে ঈশ্বর কখনো শরীরধারী হতে পারে না। অথচ কঠোপনিষদ ২/২/১৩ অনুযায়ী ঈশ্বর যদি চেতনাসম্পন্ন অথাৎ প্রাণযুক্ত হয় তাহলে এমন কোন চেতনাসম্পন্ন বা প্রাণযুক্ত জীব তারা দেখাক যাদের শরীর নেই,এমনকি সাধারণ চোখে দেখা যায় না যে ব্যাকটেরিয়া তাদেরও শরীর আছে।সুতরাং বৈজ্ঞানিকভাবে এবং স্বাভাবিক চিন্তাচেতনা থেকে প্রাণ বা চেতনাসম্পন্ন ঈশ্বর, অথচ তাঁর চক্ষু (চোখ)কর্ণ(কান),মুখ,মস্তক(মাথা),হস্ত(হাত),পদ(পা) ইত্যাদি ইন্দ্রিয় সমন্বিত শরীর বা দেহ নেই বলা হচ্ছে, যার অর্থ হল তাদের সে ঈশ্বর হল অস্তিত্বহীন,কাল্পনিক,অবৈজ্ঞানিক, যা সম্পূর্ণ হাস্যকর।আর সে ধরনের অবৈজ্ঞানিক, অস্তিত্বহীন বা কাল্পনিক ঈশ্বরকে তাঁরা উপাসনা করছে।এইভাবে তাঁরা শুধুু সময়ের অপচয় করছে। আবার সমস্ত জীবের সৃষ্টি হয়েছে ঈশ্বর থেকে, এইভাবে ঈশ্বর হল সমস্ত জীবের পরম পিতা ।পুত্ররুপে জীব যদি শরীরধারী হয়, আর সে শরীরে জীব যদি সুখ, আনন্দ পায়,আর এ জীবনের পরেও সে যদি তাঁর স্বরুপে চিন্ময় জগতে পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণের নিত্য সেবকরুপে পরম আনন্দে পরম সুখি হয়, তাহলে সে পরমপিতা কি করে শরীরহীন হয়ে জীবের মতো সে ধরনের পরম আনন্দ লাভ করতে পারে না ? তাহলে যে ঈশ্বর শরীরহীন হয়ে আনন্দ লাভ করতে পারে না, সে ঈশ্বর কিভাবে সর্বশক্তিমান হয়?এ হল তাদের ঈশ্বর সমন্ধে বেদবিরোধী ভ্রান্ত দর্শন।এইভাবে তাঁরা ভূল পথে অন্ধের মতো এগুচ্ছে এবং সরল সনাতনীদের সে পথে নিয়ে আসার দিবা স্বপ্ন দেখছে। এছাড়াও তারা যুক্তি দেখায় ঈশ্বর নিরাকার অথাৎ শরীরহীন, তাই ঈশ্বর সর্বব্যাপক ও সর্বশক্তিমান ।তিনি যদি সাকার বা শরীরধারী হতেন তাহলে সেটি অসম্ভব ছিল।অথচ বেদ মন্ত্রে ঈশ্বরকে সর্বব্যাপী/ সর্বব্যাপকরুপে সর্বশক্তিমান বলা হয়েছে। তিনি এক হওয়া সত্ত্বেও বহু শরীরে সহস্র বা অনন্ত মস্তক, অনন্ত চক্ষু, অনন্ত হস্ত(হাত),অনন্ত পদ(পদ) ইত্যাদি ইন্দ্রিয়াদি সহ সর্বত্র বিরাজমান।শরীর যদি না থাকে তাহলে সে ঈশ্বরের অস্তিত্বই নেই।সে ঈশ্বর কখনো সর্বব্যাপক সর্বশক্তিমান হতেই পারে না।শরীরধারী সাকার ঈশ্বরই যে একমাত্র সর্বব্যাপক সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, সেটির প্রমান করা হয়েছে শ্রীমদ্ভবগবদ্গীতা শাস্ত্রে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১১/৪-৪৫ শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর / পরমেশ্বররুপে প্রমান করেছেন,ঈশ্বররুপে তিনি হলেন সর্বব্যাপক এবং সর্বশক্তিমান।নিমোক্ত বেদ মন্ত্রে ঈশ্বরকে শরীরধারী সাকাররুপে সর্বশক্তিমান দেখানো হয়েছে। সহস্রশীর্ষা পুরুষাঃ সহস্রাক্ষঃ সহস্রাপাৎ। স ভূমিং বিশ্বতো বৃত্বাত্যতিষ্ঠদ্দশাঙ্গুলম্ ॥ – (ঋগ্বেদ সংহিতা ১০/৯০/১,শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৩/১৪) অনুবাদঃ এই পুরুষ( ঈশ্বর) সহস্র মস্তক, সহস্র চক্ষু এবং সহস্র সহস্র পদযুক্ত, তিনি এই বিশ্ব জগৎ এ পরিব্যাপ্ত হয়ে এই পঞ্চভূত, পক্ষতন্মাত্র রুপী দশ অবয়ব দ্বারা নির্মিত ব্রহ্মান্ড কে অতিক্রম করে পরমপদে স্থিত আছেন। সর্বতঃ পাণিপাদন্তৎ সর্বতোহক্ষিশিরোমুখম্। সর্বতঃ শ্রুতিমল্লোকে সর্বমাবৃত্য তিষ্ঠতি।। -শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৩/১৬(কৃষ্ণ যজুর্বেদ ), শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৩/১৪ অনুবাদঃ তাঁর (ঈশ্বর) হস্ত, পদ, চক্ষু, মস্তক ও মুখ সর্বত্রই এবং তিনি সর্বত্রই কর্ণযুক্ত। জগতে সব কিছুকেই পরিব্যাপ্ত করে তিনি বিরাজমান। তাদের গুরু এবং তাদের তথাকথিত আচার্যরা বেদমন্ত্রে বর্ণিত সাকার ঈশ্বরকে গৌণ বা কল্পিত অর্থে অনুবাদ করেছে অথচ যেসব মন্ত্রে ঈশ্বরের জড় শরীর নেই বলা হয়েছে, সে সে স্থানে ঠিকই তারা মূখ্য অর্থে অনুবাদ করছে।এ হল এদের ভন্ডামি।এ ধরনের ভন্ডামি শ্রীশঙ্করাচার্য, শ্রীরামানুচার্য, শ্রীমাধবাচার্য,শ্রীরঙ্গরামানুচার্য ইত্যাদি কোন আচার্যের ক্ষেত্রে দেখা যায় নি।বেদ অনুসারে ঈশ্বর যে সাকার বা শরীরধারী,এ বিষয়ে নিমোক্ত লিংকে আলোচনা করা হল-সৃষ্টিকর্তা /ঈশ্বর সাকার নাকি নিরাকার? https://svadharmam.com/ls-godhead-impersonal-or-non-impersonal/ পুনরায় তারা আবার পুরাণ শাস্ত্রকে মানে না।কেন? তার কারন হল বেদে যেহেতু ঈশ্বরকে সাকার বা শরীরধারী বলা হয়েছে, তিনি এক হওয়া সত্ত্বেও বহু অবতার রুপধারণ করার মহিমা বর্ণিত হয়েছে,ঠিক তেমনই পুরাণ শাস্ত্রেও ঈশ্বরকে সাকার বা শরীরধারী সর্বশক্তিমান বলা হয়েছে।একইসাথে তাঁর বিবিধ অবতার রুপে মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে নিমোক্ত লিংকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে – ঈশ্বর এক নাকি বহু? https://svadharmam.com/is-godhead-one-or-many/ বেদে কি নৃসিংহ অবতারের কথা বলা হয়েছে? https://svadharmam.com/in-the-veda-disscuss-about-nissimha-abatara/ কিন্তু তাদের গুরুর মতে যেহেতু ঈশ্বর সাকার বা শরীর থাকতে
ঈশ্বরের ইচ্ছা মাত্রই শতশত অসুর মৃত্যুবরণ করে,তাহলে হিরণ্যাকশিপুর মতো নগগ্য অসুরকে হত্যা করতে কেন নৃসিংহরুপে ঈশ্বরকে নিজে আসতে হল?এবং বোঝাতে হল আমি সৃষ্টিকর্তা ⁉️

এর উত্তরে শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ- ৭/১/৩৬-৪৭,৭/৩/১-৩৮,৭/৪/১-২০,৭/৫/১-৫৭,৭/৮/১-৩৫ শ্লোকের সারসংক্ষেপ হল , ঈশ্বরের ইচ্ছা মাত্রই এই জগতের লক্ষ, কোটি অসুর মুহূর্তে বিনাশ প্রাপ্ত হয়।কিন্তু হিরণ্যাকশিপু এবং তাঁর ভ্রাতা হিরণ্যাক কোন সাধারণ অসুর ছিল না।এরা জয় এবং বিজয় নামে চিন্ময় জগতের বৈকুন্ঠের দুইজন প্রধান দ্বারপাল ছিল।তাঁরা মহান জ্ঞানী এবং মুক্ত পুরুষ ব্রহ্মার চারপুত্র সংক্ষেপে চতুঃষ্কুমার দ্বারা ঘটনাচক্রে তিনবার অসুর হয়ে জন্মগ্রহণের অভিশাপ প্রাপ্ত হয়েছিল।এরপর তাঁরা সে অভিশাপ অনুযায়ী পূর্বে বৈকুন্ঠের দ্বারপালরুপে তাদের যে অবস্থান ছিল, সে স্থিতি তাঁরা সম্পূর্ণরুপে ভূলে গিয়ে এই জড় জগতে শক্তিশালী অসুর রুপে তিনবার জন্মগ্রহণ করেন।প্রথম জন্মরুপে জয় ও বিজয় কশ্যপ মুনি ও দিতির গর্ভে হিরন্যাক এবং হিরণ্যাকশিপু অসুররুপে দৈত্যকুলে জন্মগ্রহণ করেন। শ্রীনারদ উবাচ। একদা ব্রহ্মণঃ পুত্রা বিষ্ণুলোকং যদৃচ্ছয়া। সনন্দনাদয়ো জন্মশ্চরস্তো ভুবনত্রয়ম্ ॥ ৩৬ পঞ্চষড়চায়নার্ভাভাঃ পূর্বেষামপি পূর্বজাঃ। দিগ্বাসসঃ শিশূন মত্বা দ্বাঃস্থৌ তান্ প্রত্যষেধতাম্।। ৩৭ অশপন কুপিতা এবং যুবাং বাসং ন চার্হথঃ। রজস্তমোভ্যাং রহিতে পাদমূলে মধুদ্বিষঃ। পাপিষ্ঠামাসুরীং যোনিং বালিশৌ যাতমাশ্বতঃ।। ৩৮ এবং শপ্তৌ স্বভবনাৎ পতন্তৌ তৌ কৃপালুভিঃ। প্রোক্তৌ পুনর্জন্মভির্বাং ত্রিভির্লোকায় কল্পতাম্ ॥৩৯ জজ্ঞাতে তৌ দিতেঃ পুত্রৌ দৈত্যদানববন্দিতৌ। হিরণ্যকশিপুর্জ্যেষ্ঠো হিরণ্যাক্ষোহনুজস্ততঃ ॥ ৪০ -(শ্রীমদ্ভাগবত ৭/১/৩৬-৪০) অনুবাদঃ যুধিষ্ঠির মহারাজের প্রতি দেবর্ষি নারদ বললেন-এক সময় ব্রহ্মার চার পুত্র সনক, সনন্দন, সনাতন এবং সনৎকুমার ত্রিভূবন পরিভ্রমণ করতে করতে ঘটনাক্রমে বিষ্ণুলোকে(চিন্ময় জগৎ) উপস্থিত হয়েছিলেন।৩৬। যদিও সেই চারজন মহর্ষি মরীচি আদি ব্রহ্মার অন্যান্য পুত্রদের থেকেও জ্যেষ্ঠ ছিলেন, তবুও তাঁরা ছিলেন উলঙ্গ ও দেখতে যেন পাঁচ বা ছয় বছরের বালকের মতো। জয় এবং বিজয় নামক বৈকুণ্ঠের দুই দ্বারপাল যখন দেখলেন যে, তাঁরা বৈকুন্ঠলোকে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন, তখন তাঁদের সাধারণ বালক বলে মনে করে, তাঁরা তাঁদের প্রবেশ করতে নিষেধ করলেন।৩৭। এইভাবে জয় এবং বিজয় নামক দ্বারপালদের দ্বারা প্রতিহত হয়ে, সনন্দন আদি মহর্ষিগণ অত্যন্ত ক্রোধের সঙ্গে তাঁদের অভিশাপ দিলেন- “হে মূর্খ দ্বারপালদ্বয়, তোমরা রজ এবং তমোগুণের দ্বারা প্রভাবিত, তাই তোমরা নির্গুণ ভগবানের শ্রীপাদপদ্মের আশ্রয়ে থাকার অযোগ্য। তোমরা এক্ষুণি জড় জগতে পাপিষ্ঠা আসুরী যোনিতে জন্মগ্রহণ কর।৩৮। মহর্ষিদের দ্বারা অভিশপ্ত হয়ে জয় এবং বিজয় যখন জড় জগতে পতিত হচ্ছিলেন, তখন তাঁদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ঋষিরা বলেছিলেন-“হে দ্বারপালগণ, তিন জন্মের পর তোমরা আবার বৈকুণ্ঠলোকে তোমাদের পদে ফিরে আসবে। তখন তোমাদের শাপের কাল সমাপ্ত হবে।৩৯। ভগবানের এই দুই পার্ষদ জয় এবং বিজয় দিতির পুত্ররূপে এই জড় জগতে জন্মগ্রহণ করেছিল। তাদের মধ্যে হিরণ্যকশিপু জ্যেষ্ঠ এবং হিরণ্যাক্ষ কনিষ্ঠ ছিল। তারা দৈত্য এবং দানবদের দ্বারা অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে পূজিত ছিল। ৪০। হিরণ্যকশিপু তাঁর শক্তিকে বৃদ্ধি করার জন্য তপস্যায় মগ্ন হয়ে ব্রহ্মার কাছ থেকে এমন বর লাভ করে যা প্রায় অমর বরের সমতুল্য। সে পিতামহ ব্রহ্মার কাছে বর প্রার্থনা করেছিল- যদি দাস্যস্যভিমতান্ বরান্মে বরদোত্তম। ভূতেভ্যস্তুদ্বিসৃষ্টেভ্যো মৃত্যুর্মা ভূন্মম প্রভো ৷ ৩৫ ॥ নান্তর্বহির্দিবা নক্তমন্যস্মাদপি চায়ুধৈঃ। ন ভূমৌ নাম্বরে মৃত্যুর্ন নরৈন মৃগৈরপি ॥ ৩৬ ॥ ব্যসুভির্বাসুমদ্ভিবা সুরাসুরমহোরগৈঃ। অপ্রতিদ্বন্দ্বতাং যুদ্ধে ঐকপত্যং চ দেহিনাম্ ॥ ৩৭ ॥ সর্বেষাং লোকপালানাং মহিমানং যথাত্মনঃ । তপোযোগপ্রভাবাণাং যন্ন রিষ্যতি কর্হিচিৎ ॥ ৩৮ -(শ্রীমদ্ভাগবত ৭/৩/৩৫-৩৮) অনুবাদঃ হে প্রভু, হে শ্রেষ্ঠ বরদাতা, আপনি যদি আমার অভীষ্ট বরই দান করেন, তা হলে যেন আপনার সৃষ্ট কোন প্রাণী থেকে আমার মৃত্যু না হয়।৩৫।আপনি আমাকে বর দিন যেন গৃহের অভ্যন্তরে অথবা বাইরে, দিনের বেলা অথবা রাত্রে, ভূমিতে অথবা আকাশে যেন আমার মৃত্যু না হয়।আপনি আমাকে বর দিন যাতে আপনার সৃষ্ট জীব ছাড়াও অন্য কারোর দ্বারা, কোন অস্ত্রের দ্বারা, কোন মানুষের দ্বারা অথবা পশুর দ্বারা যেন আমার মৃত্যু না হয়।৩৬। আপনি আমাকে বর দান করুন যাতে প্রাণী, অপ্রাণী কারও থেকে যেন আমার মৃত্যু না হয়। দেবতা, দৈত্য, অধঃলোকবাসী (নিম্নলোক) মহাসর্প থেকে যেন আমার মৃত্যু না হয়। যেহেতু কেউই আপনাকে যুদ্ধে হত্যা করতে পারে না, তাই আপনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আপনি আমাকে বর দিন যাতে আমারও কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকে। আপনি আমাকে সমস্ত জীবদের ও লোকপালদের একাধিপত্য প্রদান করুন এবং সেই পদের সমস্ত মহিমা প্রদান করুন। অধিকন্তু, আমাকে তপস্যা এবং যোগ অভ্যাসের ফলে লব্ধ সমস্ত যোগসিদ্ধি প্রদান করুন, যা কখনও বিনষ্ট হয় না।৩৭-৩৮। হিরণ্যাকশিপুর মুখে এসমস্ত বর শ্রবণ করে ব্রহ্মা হিরণ্যাকশিপুকে বলেছিল- শ্রীব্রহ্মোবাচ- তাতেমে দুর্লভাঃ পুংসাং যান বৃণীষে বরান্ মম। তথাপি বিতরাম্যঙ্গ বরান্ যদ্যপি দুর্লভান্ ॥ ২০ -(শ্রীমদ্ভাগবত ৭/৪/২) অনুবাদঃ হে হিরণ্যকশিপু, তুমি যে সমস্ত বর আমার কাছে প্রার্থনা করেছ, তা অধিকাংশ মানুষের পক্ষে দুর্লভ। কিন্তু তা সত্ত্বেও হে বৎস, আমি তোমাকে তা দান করব। ব্রহ্মা থেকে এইভাবে বর প্রাপ্ত হয়ে হিরণ্যাকশিপু নিজেকে সর্বশক্তিমান ও অমর মনে করে শক্তির অহংকারে বিভ্রান্ত হয়ে ধর্মপরায়ন মানুষ এবং দেবতার উপর অহেতুক অন্যায় আচরণ করতে শুরু করে। তার পুত্র প্রহ্লাদ এমনকি অসুরকুলে জন্মগ্রহণ করলেও সে ছিল পরম বিষ্ণুভক্ত। প্রহ্লাদ তাঁর বিষ্ণুভক্তির জন্য তাঁর পিতার চরম শত্রুতে পরিণত হয়েছিল।প্রহ্লাদ যখন পিতার নির্দেশ অনুসারে বিষ্ণুভক্তি পরিত্যাগ করছে না,তখন তাঁর পিতা তাঁর অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ও ভয়ঙ্কর দন্ত ও বদন-বিশিষ্ট এবং তাম্রবর্ণ শ্মশ্রু ও কেশ সমন্বিত ভয়ঙ্কর রাক্ষস অনুচরদের নির্দেশ দিলেন, প্রহ্লাদ মহারাজকে টুকরা টুকরা হত্যা করার জন্য।এরপর- পরে ব্রহ্মণ্যনির্দেশ্যে ভগবত্যখিলাত্মনি। যুক্তাত্মন্যফলা আসন্নপুণ্যস্যেব সৎক্রিয়াঃ ॥ ৪১ ॥ -(শ্রীমদ্ভাগবত ৭/৫/৪১) অনুবাদঃ পুণ্যহীন ব্যক্তি সৎকর্ম করলেও যেমন তা নিষ্ফল হয়, তেমনই রাক্ষসদের অস্ত্রশস্ত্র প্রহ্লাদ মহারাজের উপর কোন রকম প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি, কারণ তিনি নির্বিকার, অনির্দেশ্য, জগতাত্মা পরমেশ্বর ভগবানের সেবার ধ্যানে সম্পূর্ণরূপে মগ্ন ঐকান্তিক ভক্ত। প্রহ্লাদ মহারাজকে বধ করতে রাক্ষসদের সমস্ত প্রয়াস যখন ব্যর্থ হয়েছিল, তখন হিরণ্যকশিপু অত্যন্ত ভীত হয়ে তাঁকে বধ করার অন্যান্য বিবিধ উপায় উদ্ভাবন করতে শুরু করেছিল। দিগ্নজৈর্দন্দশূকেন্দ্রৈরভিচারাবপাতনৈঃ । মায়াভিঃ সন্নিরোধৈশ্চ গরদানৈরভোজনৈঃ ॥ ৪৩ ॥ হিমবায়ুগ্নিসলিলৈঃ পর্বতাক্রমণৈরপি। ন শশাক যদা হন্তুমপাপমসুরঃ সুতম্ । চিন্তাং দীর্ঘতমাং প্রাপ্তস্তৎকর্তৃং নাভ্যপদ্যত ॥ 88 ॥ -(শ্রীমদ্ভাগবত ৭/৫/৪৩-৪৪) অনুবাদঃ হিরণ্যকশিপু তার পুত্রকে বিশাল হস্তীর পায়ের নিচে ফেলে, বিশালকায় ভয়ঙ্কর সর্পদের মধ্যে নিক্ষেপ করে, ধ্বংসাত্মক যাদু প্রয়োগ করে, পর্বতশৃঙ্গ থেকে নিক্ষেপ করে, মায়াগর্তে নিরোধ করে, বিষ প্রদান করে, উপবাস করিয়ে, প্রচণ্ড হিম, বায়ু, অগ্নি এবং জলের দ্বারা অথবা বিশাল পাথরের নিচে তাঁকে পেষণ করেও বধ করতে পারেনি। হিরণ্যকশিপু যখন দেখল যে সে কোন মতেই নিষ্পাপ প্রহ্লাদের অনিষ্ট করতে পারছে না, তখন সে অত্যন্ত চিন্তাগ্রস্ত হয়ে ভাবতে লাগল তারপর সে কি করবে। একদিন হিরণ্যাকশিপু ভক্ত প্রহ্লাদকে বললেন- যস্ত্বয়া মন্দভাগ্যোক্তো মদন্যো জগদীশ্বরঃ। ক্বাসৌ যদি স সর্বত্র কস্মাৎ স্তম্ভে ন দৃশ্যতে ॥ ১২ ৷ সোহহং বিকথমানস্য শিরঃ কায়াদ্ধরামি তে। গোপায়েত হরিস্ত্বাদ্য যস্তে শরণমীপ্সিতম্ ॥ ১৩ ॥ –(শ্রীমদ্ভাগবত ৭/৮/১২-১৩) অনুবাদঃ ওরে হতভাগা প্রহ্লাদ, তুই সব সময় বলিস যে আমি ছাড়া অন্য কোন জগদীশ্বর রয়েছেন, যিনি সকলের ঊর্ধ্বে, যিনি সকলের নিয়ন্তা এবং যিনি সর্বব্যাপ্ত। কিন্তু তিনি কোথায়? তিনি যদি সর্বত্রই থাকেন, তা হলে কেন তিনি আমার সম্মুখস্থ এই স্তম্ভে উপস্থিত নন?তোর এই অকথ্য কথনের
গীতা শাস্ত্রে কি মূর্তি পূজার কথা বর্ণনা করা হয়েছে?

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শাস্ত্রে শ্রীমূর্তি পূজার নির্দেশঃ আজকাল কিছু শাস্ত্রজ্ঞানহীন ব্যাক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে যে, গীতা শাস্ত্রে নাকি ঈশ্বর বা দেবতাদের শ্রীমুর্তি পূজার কোন বিধান নাই।আসলে তাদের এসমস্ত উদ্ভট কথা শুনলে আমাদের হাসি পায়।তাদের এসমস্ত উদ্ভট কথা গীতা শাস্ত্র অনুসারে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।নিম্নে গীতা শাস্ত্র অনুসারে পরমেশ্বর ভগবান ও দেবতাদের শ্রীমূর্তির পূজার বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হল.. আমরা প্রাকৃত চক্ষু দিয়ে পরমেশ্বর ভগবান ও দেবদেবীদের দর্শন করতে পারব না।তার জন্য চিন্ময় চক্ষু প্রয়োজন।তাই সনাতনী শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবান এবং দেবতাদের শ্রীমূর্তি/ শ্রীবিগ্রহ নির্মান করে উপযুক্ত মন্ত্রের মাধ্যমে অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে তাদের পূজা ও বন্দনা করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। শ্রীবিগ্রহ থেকে দেবদেবী ও পরমেশ্বর শ্রীভগবান অভিন্ন।শ্রীবিগ্রহকে সেবা, পূজা ও বন্দনা করলে, তা সরাসরি শ্রীভগবান ও দেবদেবীর কাছে পৌছায়। গীতা শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই তার শ্রীমূর্তি বা শ্রীবিগ্রহ পুজার বিধান দান করেছেন। গীতা ১২/১ নং শ্লোকে, যেখানে অর্জুন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন,যারা তোমার সাকার শ্রীমুর্তির উপাসনা করেন এবং যারা তোমার নিরাকার বা অব্যক্ত ব্রহ্মের উপাসনা করেন তাদের মধ্যে কারা সর্বশ্রেষ্ঠ? ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সরাসরি এর পরের শ্লোকে উত্তর দিয়েছিলেন…. ময্যাবেশ্য মনো যে মাং নিত্যযুুক্তা উপাসতে। শ্রদ্ধয়া পরয়োপেতাস্তে মে যুক্ততমা মতাঃ।। অনুবাদঃ যাঁরা তাঁদের মনকে আমার সাকার রূপে অথাৎ আমার শ্রীমুর্তিররুপে নিবিষ্ট করেন এবং যারা অপ্রাকৃত শ্রদ্ধা সহকারে নিরন্তর আমার উপাসনা করেন, আমার মতে তাঁরাই সর্বশ্রেষ্ঠ যোগী। -ভগবান শ্রীকৃষ্ণঃগীতা ১২/২ শ্রীমূর্তি পূজা সম্পর্কে গীতা শাস্ত্রের ৯ম অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আরো বলেন… যান্তি দেবব্রতা দেবান্ পিতৃন্ যান্তি পিতৃব্রতাঃ। ভূতানি যান্তি ভুতেজ্যা যান্তি মদযাজিনোহপি মাম্।। অনুবাদঃ দেবতাদের উপাসকেরা অথাৎ দেবতার শ্রীমূর্তির পূজাকারীগণ দেবলোক প্রাপ্ত হবেন; পিতৃপুরুষদের উপাসকেরা পিতৃলোক লাভ করেন; ভুত- প্রেত আদির উপাসকেরা ভূতলোক লাভ করেন; এবং আমার উপাসেকরা অথাৎ আমার শ্রীমূর্তির পূজাকারীগন আমাকেই লাভ করেন। –ভগবান শ্রীকৃষ্ণঃগীতা ৯/২৫ হরে কৃষ্ণ।প্রনাম।
শ্রীমূর্তি /শ্রীবিগ্রহ কি? সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে, দেবতা এবং পরমেশ্বরের শ্রীমূর্তি পূজার প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করুন।

শ্রীমূর্তি/ শ্রীবিগ্রহঃ শ্রীমূর্তি/শ্রীবিগ্রহ হল পরমেশ্বর ভগবানের প্রতিনিধি। প্রাপকের নাম এবং ঠিকানা যথাযথভাবে লিখে কেউ যখন তা সরকারী ডাক পোস্টে রাখেন তখন তা সরাসরি প্রাপকের কাছে গিয়ে পৌঁছায়। ঠিক তেমনই কেউ যখন দেবতা এবং পরমেশ্বরের শ্রীমূর্তির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা এবং নৈবেদ্য প্রদান করেন তখন তা সরাসরি ভাবে দেবতা এবং পরমেশ্বরের এর কাছে। দেবতা এবং পরমেশ্বরের শ্রীমূর্তির পূজার প্রয়োজনীয়তাঃ ইন্দ্র,চন্দ্র,বরুন,সূর্য,কার্তিক,গনেশ,মনসা ইত্যাদিকে দেবতা বলা হয়।এবং শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর বা ভগবান বলা হয়।এছাড়াও শ্রীকৃষ্ণের অভিন্ন প্রকাশ শ্রীবিষ্ণু, এবং তাঁরই বিবিধ অবতার শ্রীরাম,শ্রীবলরাম,শ্রীনৃসিংহ, শ্রীবামনকে পরমেশ্বর বলা হয়। বেদ,পুরাণ, মহাভারত, রামায়ন,পঞ্চরাত্র, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা,ব্রহ্মসংহিতা ইত্যাদি শাস্ত্রে বিভিন্ন দেবতাদের রুপের বর্ণনা করা হয়েছে এবং সেসাথে পরমেশ্বররুপে শ্রীকৃষ্ণ,শ্রীরাম,শ্রীবিষ্ণু, শ্রীনৃসিংহ,শ্রীবলরামের অপ্রাকৃত/চিন্ময় দেহের সুন্দর বর্ণনা প্রদত্ত হয়েছে। ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ। অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্বকারণকারণম্ ॥ ১ ৷৷ বেণুং ক্বণন্তমরবিন্দদলায়তাক্ষং বহাবতংসমসিতাম্বুদসুন্দরাঙ্গম্। কন্দর্পকোটিকমনীয়বিশেষশোভং গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ॥ ৩০ -(ব্রহ্মসংহিতাঃ ৫/১,৩০) অনুবাদঃ শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর।তাঁর শরীর সচ্চিদানন্দ/চিন্ময়/ অপ্রাকৃত। তিনি-অনাদি, সকলেরই আদি এবং সকল কারণের কারণ শ্রীগোবিন্দ ॥ ১।। মুরলীগান-তৎপর, কমলদলের ন্যায় প্রফুল্লচক্ষু, ময়ূর-পুচ্ছ শিরোভূষণ, নীলমেঘবর্ণ সুন্দর-শরীর, কোটি-কন্দর্পমোহন বিশেষ-শোভা-বিশিষ্ট সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজন করি । ৩০ ॥ কিরীটিনং গদিনং চক্রহস্তম্ ইচ্ছামি ত্বাং দ্রষ্টুমহং তথৈব। তেনৈব রূপেণ চতুর্ভুজেন সহস্রবাহো ভব বিশ্বমূর্তে ৷৷ ৪৬ ৷৷ -(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১১/৪৬) অনুবাদঃ হে বিশ্বমূর্তি! হে সহস্রবাহো! আমি তোমাকে পূর্ববৎ সেই কিরীট, গদা ও চক্রধারীরূপে দেখতে ইচ্ছা করি। এখন তুমি তোমার সেই চতুর্ভুজ রূপ ধারণ কর। স্নিগ্ধপ্রাবৃড়ঘনশ্যামং সর্বসৌন্দর্যসংগ্রহম্। চার্বায়তচতুর্বাহু সুজাতরুচিরাননম্ ॥ ৪৫ ॥ পদ্মকোশপলাশাক্ষং সুন্দরভু সুনাসিকম্। সুদ্ধিজং সুকপোলাস্যং সমকৰ্ণবিভূষণম্ ৷৷ ৪৬ ৷৷ প্রীতিপ্রহসিতাপাঙ্গমলকৈ রূপশোভিতম্। লসৎপঙ্কজকিঞ্জল্কদুকূলং মৃষ্টকুণ্ডলম্ ॥ ৪৭ ॥ স্ফুরৎকিরীটবলয়হারনূপুরমেখলম্। শঙ্খচক্রগদাপদ্মমালামণ্যত্তমর্দ্ধিমৎ ॥ ৪৮ ॥ -(শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ৪/২৪/৪৫-৪৮) অনুবাদঃ ভগবানের (শ্রীবিষ্ণু) রূপ বর্ষার সুস্নিগ্ধ মেঘের মতো শ্যামবর্ণ। বর্ষার ধারা যেমন স্নিগ্ধ, তাঁর দেহের সৌন্দর্যও তেমন স্নিগ্ধ। নিঃসন্দেহে তিনি হচ্ছেন সমস্ত সৌন্দর্যের সমষ্টি। ভগবানের চতুর্ভুজ ও পদ্ম-পলাশের মতো নেত্রসমন্বিত তাঁর মুখমণ্ডল অপূর্ব সুন্দর। তাঁর নাসিকা উন্নত, তাঁর হাসি অত্যন্ত মনোহর, তাঁর কপোল অত্যন্ত সুন্দর এবং সম্পূর্ণরূপে বিভূষিত তাঁর কর্ণযুগল সমানভাবে সুন্দর। তাঁর উদার ও প্রীতিপূর্ণ হাস্য এবং তাঁর ভক্তদের প্রতি নেত্রান্ত থেকে তির্যকভাবে দৃষ্টিপাতের ফলে, ভগবান অপূর্ব সুন্দর। তাঁর কৃষ্ণ কেশদাম কুঞ্চিত, এবং পদ্মফুলের কেশরের মতো তাঁর পীতবর্ণ বসন বায়ুর মধ্যে উড়ছে। তাঁর উজ্জ্বল কর্ণকুণ্ডল, মুকুট, বলয়, হার, নূপুর, মেখলা এবং শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম সহ অন্যান্য অলংকারসমূহ তাঁর বক্ষের কৌস্তুভ-মণির স্বাভাবিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে।৪৭-৪৮। আমরা পরমেশ্বরের সচ্চিদানন্দ / চিন্ময়/ অপ্রাকৃত দেহ প্রাকৃত চক্ষু দিয়ে দর্শন করতে পারব না।তার জন্য চিন্ময় বা অপ্রাকৃত চক্ষু প্রয়োজন।এবং দেবতাগণ স্বর্গ ইত্যাদি উচ্চতর লোকে অবস্থান করেন।তাঁরা পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞায় প্রকৃতির বিভিন্ন বিভাগের অধ্যক্ষ বা সর্বোচ্চ পরিচালক হিসেবে মনুষ্যজীবের কল্যান সাধনে সর্বদা যুক্ত। বেদসহ বিভিন্ন শাস্ত্রে পরমেশ্বর এবং দেবতাদের শ্রীমূর্তি/ শ্রীবিগ্রহ নির্মান করে, উপযুক্ত মন্ত্রের মাধ্যমে অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে, সে মুর্তিতে পরমেশ্বর ও দেবতা অধিষ্ঠান হয়েছেন,এরুপ চিন্তা করে তাদের পূজা ও বন্দনা করার নির্দেশ প্রদত্ত হয়েছে। দ্রব্যৈঃ প্রসিদ্ধৈর্মদযাগঃ প্রতিমাদিঘুমায়িনঃ । ভক্তস্য চ যথালব্ধৈহৃদি ভাবেন চৈব হি ৷ ১৫ ॥ –(শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ১১/২৭/১৫) অনুবাদঃ ভক্তের উচিত সর্বশ্রেষ্ঠ উপচার অর্পণের মাধ্যমে আমার(শ্রীকৃষ্ণ) শ্রীবিগ্রহের অর্চনা করা। কিন্তু সর্ব প্রকার জাগতিক বাসনা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ভক্ত, সহজে যা কিছু পায়, তা দিয়ে আমার অর্চনা করে, এবং এমনকি মানসিকভাবেও বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে তার হৃদয়াভ্যন্তরে আমার অর্চন করতে পারে। “তস্যামধিষ্ঠতঃ কৃষ্ণরূপী পূজ্যস্ত্বয়া সদা।” -গোপালতাপনী উপনিষদঃ উত্তরবিভাগ ৪৮ (অথর্ববেদ) অনুবাদঃ– হে ব্রহ্মা, আমি (শ্রীকৃষ্ণ) মথূরায় কৃষ্ণরূপে অধিষ্ঠিত হয়ে সর্বদা তোমার পূজা গ্রহন করছি। হরে কৃষ্ণ। প্রনাম।
বেদে কি মূর্তি পূজার কথা বর্ণনা করা হয়েছে?

বেদে পরমেশ্বরের শ্রীমূর্তি পূজার বিধানঃ আজকাল কিছু শাস্ত্রজ্ঞানহীন ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে যে, বেদে নাকি ঈশ্বর বা দেবতাদের শ্রীমুর্তি পূজার কোন বিধান নাই।আসলে এ ধরনের উদ্ভট কথা বেদ শাস্ত্র অনুসারে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।নিম্নে বেদ শাস্ত্র অনুসারে পরমেশ্বর ভগবান ও দেবতাদের শ্রীমূর্তির পূজার বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হল.. প্রথমে আমরা জানব বেদ সম্পর্কে। আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হল বেদ।বেদের চারটি বিভাগ – ঋগ,যজু, সাম এবং অথর্ব।আবার প্রতিটি বেদ -সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরন্যক এবং উপনিষদ এ চারটি ভাগে বিভক্ত।বেদের সর্বশেষ ভাগ হল উপনিষদ। তাই উপনিষদকে বেদান্ত বা বেদের অন্তভাগ বা শেষভাগ বলা হয়। মুক্তিকোপনিষদে ১০৮ টি উপনিষদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।১০৮ টি উপনিষদের মধ্যে রয়েছে ঈশোপনিষদ, কেনোপনিষদ,কঠোপনিষদ, গোপালতাপনী উপনিষদ, কলির্সন্তরন উপনিষদ,নারায়ন উপনিষদ ইত্যাদি। বেদ শাস্ত্র অনুসারে পরমেশ্বর ভগবান হলেন সাকার /শরীরধারী।তার মস্তক,চক্ষু,কর্ন,হস্ত, পদ আদি অঙ্গ সমন্বিত চিন্ময় দেহ বিদ্যমান।সুতরাং বেদ অনুসারে পরমেশ্বর যদি সাকার হন,তাহলে তার শ্রীমূর্তি পূজার বিধান যে বেদ শাস্ত্রে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।বেদে বলা হয়েছে.. দিবো বা বিষ্ণো উত বা পৃথিব্যা মহো বা বিষ্ণু উরোরন্তরিক্ষাৎ।উভো হি হস্তা বসুনা পূনস্বা প্রযচ্ছ দক্ষিণাদোত সব্যাদ্বিষ্ণবে দ্বা।। –(শুক্ল যজুর্বেদ ৫/১৯) অনুবাদঃ হে বিষ্ণু (ঈশ্বর) আপনি দ্যুলোক হতে কি ভূলোক হতে কিংবা অনন্ত প্রসারী অন্তরিক্ষলোক হতে পরমধন নিয়ে উভয় হস্তকে (“উভো হি হস্তা”)পূর্ণ করুন। আর দক্ষিণ ও বাম হস্ত দ্বারা অবাধে অবিচারে আপনি সেই পরমধন প্রদান করুন,আপনাকে প্রাপ্তির নিমিত্তে উপাসনা করি। যদিও পরমেশ্বর ভগবানের সুন্দর অপ্রাকৃত দেহ বিদ্যমান, কিন্তু আমরা সে অপ্রাকৃত দেহ প্রাকৃত চক্ষু দিয়ে দেখতে পাব না।তার জন্য চিন্ময় বা অপ্রাকৃত চক্ষু প্রয়োজন।তাই বেদে পরমেশ্বর ভগবান এবং দেবতাদের শ্রীমূর্তি/ শ্রীবিগ্রহ নির্মান করে, উপযুক্ত মন্ত্রের মাধ্যমে অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে, সে মুর্তিতে ভগবান ও দেবতা অধিষ্ঠান হয়েছেন,এরুপ চিন্তা করে তাদের পূজা ও বন্দনা করার নির্দেশ প্রদত্ত হয়েছে। বেদ শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবানের শ্রীমূর্তি বা শ্রীবিগ্রহ পুজার শাস্ত্রীয় প্রমান- কাসীৎপ্রমা প্রতিমা কিং নিদানমাজ্যং কিমাসীৎপরিধিঃ ক আসীৎ।ছন্দঃ কিমাসীৎ প্রউগং কিমুকথং যদ্দেবা দেবমযজন্ত বিশ্বে।। – (ঋগ্বেদঃমন্ডল ১০/ সুক্ত১৩০/ মন্ত্র ৩) অনুবাদঃ যে কালে সকল দেবতা দেবপূজা করলেন তখন তাদের অনুষ্ঠিত যজ্ঞের পরিমাণ কি ছিল? দেব মূর্তি বা কি ছিল? সংকল্প কি ছিল? ঘৃত কি ছিল? পরিধি অর্থাৎ যজ্ঞস্থানের চতুর্দিকের বৃত্তি স্বরূপ সীমা বন্ধনই বা কি ছিল? ছন্দ প্রয়োগই বা কি ছিল? বিশ্লেষণঃ উক্ত মন্ত্রে মন্ত্র দ্রষ্টা ঋষি বর্তমানের কথা অনুধাবন করে পূর্বের অবস্থা বুঝার জন্য প্রশ্ন করেছেন। এই মন্ত্রে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষির সময় দেব মূর্তি বিদ্যমান ছিল এবং তাহার পূজাও করা হতো।এ বেদ মন্ত্র থেকে বুঝা যায় দেবতাদের শ্রীমূর্তির পূজা বেদবিহিত। অচর্ত প্রার্চত প্রিয়মেধাসো অচর্ত।অচন্তু পুত্রকা উত পুরং ন ধৃঞ্চবচর্ত।। – ঋগ্বেদঃ মন্ডল ৮/সুক্ত ৬৯/মন্ত্র ৮ অনুবাদঃ প্রিয়মেধগণ! তোমরা ইন্দ্রকে( ঈশ্বর) অর্চনা (পূজা) কর।বিশেষরুপে অচর্না কর। পুত্রগণ, পুরবিদারীকে যেরুপ অচর্না করে, সেরুপ ইন্দ্রের অর্চনা কর। – ঋগ্বেদঃ মন্ডল ৮/সুক্ত ৬৯/মন্ত্র ৮ বিশ্লেষণঃ বেদে ঈশ্বরকে ইন্দ্র বলা হয়েছে। বিগ্রহ আরাধনা বা শ্রীমুর্তি পূজা বেদবিহিত না হতো তবে উক্ত মন্ত্রে ইন্দ্রকে বিশেষ রূপে অর্চনা বা পূজা করার প্রসঙ্গ আসতো না। কারন নিরাকার ঈশ্বরকে কখনো পূজা করার কথা শাস্ত্রে বলা হয় না।সুতারাং মুর্তি পূজা বেদবিহিত। নূ মর্তো দয়তে সনিষ্যন্যো বিষ্ণব উরুগায়ায় দাশ।প্র যঃ সত্রাচা মনসা যজাত এতাবন্তং নর্যমাবিবাসাৎ।। -(ঋগ্বেদঃ মন্ডল ৭/ সুক্ত ১০০/ মন্ত্র ১) অনুবাদঃ যিনি বহু লোকের কীর্তনীয় বিষ্ণুকে হব্য দান করেন,যিনি যুগপৎ উচ্চারিত স্তোত্রের দ্বারা তাকে পূজা করেন এবং মনুষ্যের হিতকর বিষ্ণুর পরিচর্যা করেন সে মর্ত্যধন ইচ্ছা করে শীঘ্রই প্রাপ্ত হন। পর্যবেক্ষণঃ যদি বিগ্রহ বা শ্রীমূর্তি পূজা বেদবিহিত না হত,তাহলে এ মন্ত্রে পূজা,পরিচর্যার প্রসঙ্গই আসতো না। নমস্তে রুদ্র মন্যব উতো ত ইষবে নমঃ।বাহুভ্যামুত নমঃ।।১।।যা তে রুদ্র শিবা তনুরঘোরাহপাপকাশিনী।তয়া নস্তন্বা শন্তময়া গিরিশন্তাভি চাকশীহি।।২।। অনুবাদঃ হে দুঃখনাশক জ্ঞানপ্রদ রুদ্র, তোমার ক্রোধের উদ্দেশ্যে নমস্কার, তোমার বাণ ও বাহু যুগলকে নমস্কার করি।হে রুদ্র, তোমার শরীর মঙ্গলময় সৌম্য, এবং পুন্যপ্রদ। হে গিরিশ, সেই সুখতম শরীরের দ্বারা আমাদের দিকে তাকাও। -শুক্ল যজুর্বেদঃ অধ্যায় ১৬/ মন্ত্র ১-২ পর্যবেক্ষণঃ উক্ত মন্ত্রে শ্রীবিষ্ণুকে রুদ্র নামে বর্ণনা করা হয়েছে। তার বাণ, বাহু এবং সৌম্য দেহের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এবং সেসাথে তাকে নমস্কার জানানো হয়েছে।এখান থেকে বুঝা যায়, এ মন্ত্রে শ্রীবিষ্ণুর শ্রীমুর্তিকে পূজার করার কথা বলা হচ্ছে। মুক্তিকোপনিষদে বর্ণিত ১০৮ টি উপনিষদের অন্তর্গত গোপালতাপনী উপনিষদ শ্রুতিতে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই সমগ্র মানব জাতিকে তার শ্রীমূর্তির মাধ্যমে তাকে পূজার করার উপদেশ প্রদান করেছেন।এ সম্পর্কে গোপালতাপনী উপনিষদ শ্রুতিতে বর্ণিত আছে… মথুরামন্ডলে যস্তু জম্বুদ্বীপে স্থিস্তোহপি বা। যোহর্চ্চয়েৎ প্রতিমাং মাঞ্চ সে ম প্রিয় ভরো ভূবি।। – গোপালতাপনী উপনিষদঃ উত্তরবিভাগ ৪৭(অথর্ববেদ) অনুবাদঃ– হে ব্রহ্মা,মথুরামন্ডলে তথা পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে – যে ব্যাক্তি আমার (শ্রীকৃষ্ণ) প্রতিমারুপে উপাসনা করে, সে আমার অত্যন্ত প্রিয়। “তস্যামধিষ্ঠতঃ কৃষ্ণরূপী পূজ্যস্ত্বয়া সদা।” – গোপালতাপনী উপনিষদঃ উত্তরবিভাগ ৪৮ (অথর্ববেদ) অনুবাদঃ– হে ব্রহ্মা, আমি মথূরায় কৃষ্ণরূপে অধিষ্ঠিত হয়ে সর্বদা তোমার পূজা গ্রহন করছি। হরে কৃষ্ণ।প্রনাম
ব্রহ্মা কে? ব্রহ্মার আবির্ভাব সম্পর্কে আলোচনা করুন।

ব্রহ্মাঃ ব্রহ্মা হলেন চিন্ময় জগতের গোলকধামে পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণ এবং জড় জগতে পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণের স্বপ্রকাশ গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুর নাভীপদ্ম হতে আবির্ভূত এক মহাতপস্বী এবং গুরু।তিনি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞা অনুসারে জড় জগতের অসংখ্য জীবের জড়দেহ সৃষ্টি করেন।তাঁকে রজোগুণের অধিষ্ঠাত্রী দেবতাও বলা হয়। ১/চিন্ময় জগতে ব্রহ্মার আবির্ভাবঃ চিন্ময় জগতের গোলক ধামে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের নাভীপদ্ম থেকে ব্রহ্মার আবির্ভাব। এ সম্পর্কে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ শাস্ত্রে বলা হয়েছে – আবির্ব্বভূব তৎপশ্চাৎ কৃষ্ণস্য নাভিপঙ্কজাৎ। মহাতপস্বী বৃদ্ধশ্চ কমণ্ডলুধরো বরঃ ॥ ৩০ শুক্লবাসাঃ শুক্লদন্তঃ শুক্লকেশশ্চতুর্ভুজঃ। যোগীশং শিল্পিনামীশং সর্ব্বেষাং জনকো গুরুঃ।৩১ তপসাং ফলদাতা চ প্রদাতা সর্ব্বসম্পদাম্। স্রষ্টা বিধাতা কর্তা চ হর্তা চ সর্ব্বকৰ্ম্মণঃ ॥ ৩২ ধাতা চতুর্থাং বেদানাং জ্ঞাতা বেদপ্রসূঃ পতিঃ। শান্তঃ সরস্বতীকান্তঃ সুশীলশ কৃপানিধিঃ ॥ ৩৩ শ্রীকৃষ্ণপুরতঃ স্থিত্বা তুষ্টাব তং পুটাঞ্জলিঃ। পুলকাঙ্কিতসর্ব্বাঙ্গো ভক্তিনম্রাত্মকন্ধরঃ ॥ ৩৪ -(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণঃ ব্রহ্মখন্ড ৩/৩০-৩৪) অনুবাদঃ তারপর পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণের নাভিকমল হতে মহাতপস্বী, কমণ্ডলু-হস্ত বৃদ্ধ ব্রহ্মা আবির্ভূত হলেন। সেই যোগীও শিল্পীগণের ঈশ্বর,চতুর্মুখ,সকলের জনক এবং গুরু। তাঁর পরিধান শুক্ল বসন, দন্ত এবং কেশ- কলাপ শুক্লবর্ণ। তিনি সর্ব্বসম্পদ প্রদানকারী , তপস্যার ফলদাতা এবং সমুদয় কর্ম্মের স্রষ্টা,বিধাতা, কর্তা ও হর্তা। এই কৃপানিধি ব্রহ্মা বেদের বিধানকর্তা ও জ্ঞাতা। তিনি শান্ত, সরস্বতীকান্ত,সুশীল এবং কৃপানিধি। ব্রহ্মা সর্বাঙ্গে পুলকাঙ্কিত কৃতাঞ্জলি হয়ে ভক্তিবিনত-মস্তকে সম্মুখে অবস্থানপূর্ব্বক শ্রীকৃষ্ণকে স্তব করতে লাগলেন। ২/জড় জগতে ব্রহ্মার আবির্ভাবঃ জড় জগতে গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুর নাভীপদ্ম থেকে মহাগুরু, মহাতপস্বী ব্রহ্মার আবির্ভাব। এ সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে – তস্যার্থসূক্ষ্মাভিনিবিষ্টদৃষ্টে- রন্তর্গতোহর্থো রজসা তনীয়ান। গুণেন কালানুগতেন বিদ্ধঃ সৃষ্যংস্তদাভিদ্যত নাভিদেশাৎ ॥ ১৩॥ স পদ্মকোশঃ সহসোদতিষ্ঠৎ কালেন কর্মপ্রতিবোধনেন। স্বরোচিষা তৎসলিলং বিশালং বিদ্যোতয়ন্নক ইবাত্মযোনিঃ ॥ ১৪ তল্লোকপদ্মং স উ এব বিষ্ণুঃ প্রাবীবিশৎসর্বগুণাবভাসম্ । তস্মিন্ স্বয়ং বেদময়ো বিধাতা স্বয়ম্ভবং যং স্ম বদন্তি সোহভূৎ ॥ ১৫ ॥ তস্যাং স চান্তোরুহকর্ণিকায়া- মবস্থিতো লোকমপশ্যমানঃ । পরিক্রমন ব্যোম্নি বিবৃত্তনেত্র- শ্চত্বারি লেভেহনুদিশং মুখানি ॥ ১৬ ॥ -(শ্রীমদ্ভাগবত ৩/৮/১৩-১৬) অনুবাদঃ সৃষ্টির সূক্ষ্ম বিষয়ে ভগবানের মনোযোগ অভিনিবিষ্ট ছিল, যা রজোগুণের দ্বারা ক্ষোভিত হয়, এবং তার ফলে সৃষ্টির সূক্ষ্মরূপ তাঁর নাভিদেশ ভেদ করে উদ্ভুত হয়।১৩। জীবের সকাম কর্মের এই সমগ্র স্বরূপ ভগবান শ্রীবিষ্ণুর নাভি ভেদ করে একটি পদ্মের কলির মতো আকার ধারণ করল, এবং ভগবানের ইচ্ছায় তা একটি সূর্যের মতো সব কিছুকে উদ্ভাসিত করে বিশাল প্রলয় বারি শুকিয়ে দিল।১৪। সেই সর্বলোকময় পদ্মফুলে ভগবান বিষ্ণু স্বয়ং পরমাত্মারূপে প্রবেশ করেন, এবং এইভাবে যখন তা প্রকৃতির সমস্ত গুণের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়, তখন বৈদিক জ্ঞানের মূর্ত বিগ্রহ, যাঁকে স্বয়ম্ভ বলা হয়, তিনি উৎপন্ন হয়েছিলেন।১৫। ব্রহ্মা পদ্মফুল থেকে আবির্ভূত হন, এবং পদ্মের কর্ণিকায় অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি এই জগৎকে দর্শন করতে পারলেন না। তাই, তিনি সর্বত্র ভ্রমণ করে চতুর্দিকে দৃষ্টিপাত করলেন, এবং তার ফলে তিনি চারটি মুখ লাভ করলেন।১৬। হরে কৃষ্ণ। প্রনাম। ©️ স্বধর্মম্ ™️
Views Today : 213
Total views : 118880
Who's Online : 0
Your IP Address : 216.73.216.136