সনাতন ধর্মের তৃতীয় স্তম্ভ ‘দয়া’ সম্পর্কে আলোচনা করুন।

FB IMG 1753093730132 1 Svadharmam

দয়াঃ সনাতন ধর্মের চারটি স্তম্ভের মধ্যে ‘দয়া’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।আমাদের চারপাশে মানব, পশু, পাখি আদি যত জীব আমরা দেখতে পাই, তাদের দুঃখকে দর্শন করে, তাদের সে দুঃখ থেকে পরিত্রাণ করাকে ‘দয়া’ বলা হয়। মানবের দয়া দুই প্রকার: ১. মানবের প্রতি মানবের দয়া এবং ২. পশু-পাখির প্রতি মানবের দয়া। ১. মানবের প্রতি মানবের দয়া: (মানুষের প্রতি মানুষের দয়া) মানবের প্রকৃত দুঃখের কারন হল কৃষ্ণবিস্মৃতি। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশকে পরিত্যাগ করে পাপপূর্ন জীবন যাপন করার ফলে মানুষ এ সংসারে দুঃখ পায়। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন-  मच्च‍ित्त: सर्वदुर्गाणि मत्प्रसादात्तरिष्यसि । अथ चेत्त्वमहङ्कारान्न श्रोष्यसि विनङ्‍क्ष्यसि ॥ মচ্চিত্তঃ সর্বদুর্গাণি #মৎপ্রসাদাত্তরিষ্যসি। অথ চেত্ত্বমহঙ্কারান্ন শ্রোষ্যসি বিনঙ্ক্ষ্যসি।। – (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৮/৫৮) অনুবাদঃ এভাবেই মদ্গতচিত্ত হলে তুমি আমার_প্রসাদে_সমস্ত_প্রতিবন্ধকতা_থেকে_উত্তীর্ণ হবে। কিন্তু তুমি যদি অহঙ্কারবশত আমার কথা না শোন, তা হলে বিনষ্ট হবে। এ সম্পর্কে শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত শাস্ত্রে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেন- কৃষ্ণ ভুলি যে জীব অনাদি বহির্মুখ। অতএব মায়া_তারে_দেয়_সংসার_দুঃখ।। – (শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতঃমধ্যলীলা ২০/১১৭) কিন্তু সে জীব যদি সাধু ও শাস্ত্রের কৃপায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শ্রীচরণকমলে শরণাগত হয়, অর্থাৎ তাঁর নির্দেশ অনুসারে জীবন-যাপন করে তাহলে সে মায়া থেকে মুক্তি লাভ করে, অর্থাৎ তার দুঃখের পরিসমাপ্তি হয়। এর ফলে জীব এই জীবনের পর এ জড় জগৎ থেকে মুক্ত হয়ে চিন্ময় ভগবদ্ধাম প্রাপ্ত হয়।  সাধু_শাস্ত্র_কৃপায়_যদি_কৃষ্ণোন্মুখ_হয়। সেই জীব নিস্তারে, মায়া তাহারে ছাড়য়।। – (শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত, মধ্যলীলা ২০/১২০)  दैवी ह्येषा गुणमयी मम माया दुरत्यया । मामेव ये प्रपद्यन्ते #मायामेतां_तरन्ति_ते ॥ দৈবী হ্যেষা গুণময়ী মম মায়া দুরত্যয়া। মামেব যে প্রপদ্যন্তে #মায়ামেতাং_তরন্তি_তে।। – (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ৭/১৪) অনুবাদঃ আমার এই দৈবী মায়া ত্রিগুণাত্মিকা এবং তা দুরতিক্রমণীয়া। কিন্তু যাঁরা আমাতে প্রপত্তি করেন (শরনাগত হন),তাঁরাই_এই_মায়া_উত্তীর্ণ_হতে_পারেন। তাই, মানবের প্রতি প্রকৃত দয়া হলো, জীবকে কৃষ্ণ বিমুখতা বা অজ্ঞানতা থেকে মুক্ত করে কৃষ্ণপথে নিয়ে আসার জন্য শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, শ্রীমদ্ভাগবত, বেদ আদি শাস্ত্র থেকে কৃষ্ণভক্তির শিক্ষা দান করা। তাই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেন-  ভারত ভূমিতে মনুষ্য জন্ম হৈল যার। জন্ম সার্থক করি কর #পরোপকার।। – (শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত, আদিলীলা ৯/৪১) অনুবাদঃ এই পৃথিবীতে যার জন্ম হল, সেই সমস্ত মনুষ্যের কর্তব্য হল কৃষ্ণভক্তির অনুশীলন করে তার নিজের জন্মকে সার্থক করা,এবং সাথে সাথে কৃষ্ণভক্তির অনুশীলন করার জন্য অপরকে উৎসাহিত করে তাদের উপকার সাধন করা। ২. অসহায় পশুপাখীদের প্রতি মানবের দয়া: মানবের কর্তব্য হল অসহায় পশু-পাখীদের খাবার, বাসস্থান, চিকিৎসা দ্বারা প্রতিপালন করা। নিজের জিহ্বা তৃপ্তির জন্য নির্মমভাবে পশুদের হত্যা করে তাদের মাংস ভোজন করা উচিত নয়। একে বলা হয় অসহায় পশুপাখীর প্রতি মানবের দয়া। অসহায় প্রানীদের হত্যা করে তাদের মাংস ভোজন করা সভ্য মানবের কর্ম নয়। ঈশ্বর মানবের আহার হিসেবে শাক-সবজি, ফল, দুধ আদি খাবারের বিধান রেখেছেন। কেননা শাক-সবজি আদি বৃক্ষের চেতনা আচ্ছাদিত। তাই ছাগল, ভেড়া আদি পশুদের হত্যা করলে তারা যেরূপ কষ্ট পায়, বৃক্ষাদি সেরূপ কষ্ট পায় না। তাই, শাস্ত্রে নির্দেশিত খাবার পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করে প্রসাদরূপে গ্রহণ করতে শাস্ত্রে উপদেশ দেয়া হয়েছে। বেদ, মনুস্মৃতি, শ্রীমদ্ভাগবত আদি অষ্টাদশ পুরাণ, মহাভারত ইত্যাদি শাস্ত্র অধ্যয়ন করলে আমরা বুঝতে পারবো যে পশু-পাখিদের হত্যা করে তাদের মাংস ভোজন করা মহাপাপ। এই মহাপাপের ফল হলো কুম্ভিপাক নরক। यस्त्विह वा उग्र: #पशून्_पक्षिणो_वा_प्राणत_उपरन्धयति तमपकरुणं पुरुषादैरपि विगर्हितममुत्र यमानुचरा: कुम्भीपाके तप्ततैले उपरन्धयन्ति ॥ যস্ত্বিহ বা উগ্রঃ পশূণ_পক্ষিণো_বা_প্রাণত_উপরন্ধয়তি তমপকরুনং পুরুষাদৈরপি বিগর্হিতমমুত্র যমানুচরা কুম্ভীপাকে তপ্ততৈলে উপরন্ধতি।। – (শ্রীমদ্ভাগবত ৫।২৬।১৩) অনুবাদঃ যে নিষ্ঠুর ব্যক্তি অসহায় পশু-পাখীদের হত্যা করে তাদের মাংস রন্ধন করে ভক্ষণ করে তারা রাক্ষসদের দ্বারাও নিন্দিত।সে নিষ্ঠুর ব্যাক্তিকে যমপুরুষগণ কুম্ভীপাক নরকে তপ্ততৈলে রন্ধন করেন। अनुमन्ता विशसिता निहन्ता क्रयविक्रयी । संस्कर्ता चोपहर्ता च खादकश्चेति #घातकाः ॥ অনুমন্তা বিশসিতা নিহন্তা ক্রয়বিক্রয়ী। সংস্কর্ত্তা চোপহর্ত্তা চ খাদকশ্চেতি ঘাতকাঃ।। – (মনুসংহিতা ৫/৫১) অনুবাদঃ পশু বধ করার জন্য যিনি আজ্ঞা করেন, যিনি মাংস কর্তন করেন, যিনি পশু বধ তথা হত্যা করেন, যিনি মাংস ক্রয় করেন এবং যিনি মাংস বিক্রয় করেন, যিনি মাংস রন্ধন করেন, যিনি মাংস পরিবেশন করেন এবং যিনি সে মাংস ভোজন করেন,তারা সকলে ঘাতক অর্থাৎ হত্যাকারী আর পাপী। सनादग्ने मृणसि यातुधानान्न त्वा रक्षांसि पृतनासु जिग्युः । अनु दह सहमूरान्क्रव्यादो मा ते हेत्या मुक्षत दैव्यायाः ॥ – (ঋগ্বেদ ১০/৮৭/১৯) পাষন্ড তারা যারা প্রানি-মাংস ভোজন করে। তারা যেন প্রকারান্তরে বিষপান করে। ঈশ্বর তাদের যেন উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করেন। इमं मा #हिसीरेकशफं_पशुं कनिक्रदं वाजिनं वाजिनेषु। गौरमारण्यमनु ते दिशामि तेन चिन्वानस्तन्वो निषी॑द। गौरं ते शुगृच्छतु यं द्विष्मस्तं ते शुगृच्छतु ॥ ইমং মা হিংসীরেকশফং_পশুং কনিক্রদং বাজিনং বাজিনেষু ।গৌরমারণ্যমনু তে দিশামি তেন চিন্বানস্তন্বো নি ষীদ ।গৌরং তে শুগৃচ্ছতু॒ যং দ্বিষ্মস্তং তে শুগৃচ্ছতু ॥ – (শুক্ল যজুর্বেদ ১৩/৪৮) অনুবাদঃ অশ্বাদি ক্ষুরবিশিষ্ট পশুদের কখনো হত্যা করো না, তাদের পালন করা কর্তব্য। উপকারী পশুদের সর্বদা সংরক্ষণ করবে। আপদকালে গৌরমৃগাদি ক্ষতিকর পশুদের হত্যা করা অনুচিত নয়। अनागोहत्या वै भीम कृत्य मा नो गमस्वाङ्ग पुरुषशंग बधि:। অনাগোহত্যা বৈ ভীমা কৃত্য মা নো গামশ্বং পুরুশং বধীঃ। – অথর্ববেদ ১০/১/২৯ অনুবাদঃ নিরীহের হত্যা অতি ভয়ংকর এক কর্ম, কখনো মানুষ বা গো-অশ্বাদি প্রাণীদের কে হত্যা করো না। यो यस्य मांसमश्नाति स तन्मांसाद उच्यते । मत्स्यादः सर्वमांसादस्तस्मान् मत्स्यान् #विवर्जयेत् ॥ যো যস্য মাংসমশ্নানি স তন্মাংসাদ উচ্যতে। মৎস্যাদঃ সর্বমাংসাদস্তস্মান্মৎস্যান বিবকর্জেয়ৎ।। -( মনুসংহিতা ৫/১৫) অনুবাদঃ যে যার মাংস খাই তাকে তার মাংসভোজী বলে।কিন্তু যে মৎস্যাদ অথাৎ মৎস্যভোজী তাকে সর্বমাংসভোজী বলা হয়। অতএব, মৎস্য ভোজন পরিত্যাগ করবে। হরে কৃষ্ণ।প্রনাম। ©️ স্বধর্মম্ ™️

সনাতন ধর্মের চতুর্থ স্তম্ভ ‘তপ’ সম্পর্কে আলোচনা করুন।

FB IMG 1753093749241 1 Svadharmam

তপঃ ধর্মের  চারটি স্তম্ভের মধ্যে ‘তপ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। পরমেশ্বর ভগবানকে চিন্তা, সেবা এবং সর্বোপরি এ দুঃখময় জন্ম-মৃত্যুর শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে চিন্ময় ভগবদ্ধামে ফিরে যাওয়ার প্রয়াসে শাস্ত্রীয় বিধি-বিধানগুলি গুরুত্ব সহকারে পালন করাকে ‘তপ’ বা তপস্যা বলে। তপস্যার জন্য প্রয়োজন শরীর, বাক( মুখ) এবং মন। এ তিনটির সমন্বয়ে তপস্যা পরিচালিত হয়। তাই, তপস্যাকে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-কায়িক,বাচিক এবং মানসিক।  देवद्विजगुरुप्राज्ञपूजनं शौचमार्जवम् । ब्रह्मचर्यमहिंसा च शारीरं तप उच्यते ॥ अनुद्वेगकरं वाक्यं सत्यं प्रियहितं च यत् । स्वाध्यायाभ्यसनं चैव वाङ्‍मयं तप उच्यते ॥ मन:प्रसाद: सौम्यत्वं मौनमात्मविनिग्रह: । भावसंश‍ुद्धिरित्येतत्तपो मानसमुच्यते ॥ দেবদ্বিজগুরুপ্রাজ্ঞপূজনং শৌচমার্জবম্। ব্রহ্মচর্যমহিংসা চ শারীরং তপ উচ্যতে।। অনুদ্বেগকরং বাক্যং সত্যং প্রিয়হিতং চ যৎ। স্বাধ্যায়াভ্যসনং চৈব বাঙ্ময়ং তপ উচ্যতে।। মনঃপ্রসাদঃ সৌম্যত্বং মৌনমাত্মবিনিগ্রহঃ। ভাবসংশুদ্ধিরিত্যেতৎ তপো মানসমুচ্যতে।। – (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৭/১৪-১৬) অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান, ব্রাহ্মণ, গুরু ও প্রাজ্ঞগণের পূজা এবং শৌচ, সরলতা, ব্রহ্মচর্য ও অহিংসা – এগুলিকে কায়িক তপস্যা বলা হয়।অনুদ্বেগকর, সত্য, প্রিয় অথচ হিতকর বাক্য এবং বৈদিক শাস্ত্র পাঠ করাকে বাচিক তপস্যা বলা হয়।চিত্তের প্রসন্নতা, সরলতা, মৌন, আত্মনিগ্রহ ও ব্যবহারে নিষ্কপটতা – এগুলিকে মানসিক তপস্যা বলা হয়। যদিও বৈদিক শাস্ত্র পাঠ করাকে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বাচিক তপস্যা বলছেন। কিন্তু সনাতনী বেদ, অষ্টাদশ পুরাণ, মহাভারত এবং রামায়ণ আদি শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবানের নাম জপ ও কীর্তন করাকেও বাচিক তপস্যা বলা হয়েছে। কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় কলির্সন্তরণ উপনিষদে সরাসরি কলিযুগের যুগধর্ম ও মুক্তির পথ হিসেবে হরে কৃষ্ণ মন্ত্রটি নির্দিষ্ট হয়েছে। এই মন্ত্রটি জপ ও কীর্তন করার প্রভাবে জীব সহজে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে চিন্ময় ভগবদ্ধামে ফিরে যেতে পারে।  नारदः पुनः पप्रच्छ तन्नाम किमिति । स होवाच हिरण्यगर्भः । हरे कृष्ण हरे कृष्ण कृष्ण कृष्ण हरे हरे । हरे राम हरे राम राम राम हरे हरे ॥ इति षोडशकं नाम्नां कलिकल्मषनाशनम् । नातः परतरोपायः सर्ववेदेषु दृश्यते ॥ षोडशकलावृतस्य जीवस्यावरणविनाशनम् । ततः प्रकाशते परं ब्रह्म मेघापाये रविरश्मिमण्डलीवेति ॥ নারদঃ পুনঃ পপ্রচ্ছ তন্নাম কিমিতি। সহোবাচ হিরণ্যগর্ভঃ। হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। ইতি ষোড়শকং নাম্নাং কলিকল্মষনাশনম। নাতঃ পরতরোপায় সর্ববেদেষু দৃশ্যতে।। ষোড়শকলাবৃতস্য জীবস্যাবরনবিনাশনম। ততঃ প্রকাশতে পরং ব্রহ্ম মেঘাপায়ে রবিরশ্মিমন্ডলীবেতি।। – কলির্সন্তরন উপনিষদ ২ ( কৃষ্ণ যজুর্বেদ) অনুবাদঃ তখন নারদজী পুনঃ প্রশ্ন করলেন সেই নাম কি?তখন হিরন্যগর্ভ ব্রহ্মা বললেন,হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।এই প্রকার ষোড়শ নাম কলিযুগে সমস্ত পাপ নাশ করে।সমগ্র বেদ শাস্ত্রে এর থেকে শ্রেষ্ঠ কোনো উপায় নেই।এই মন্ত্র উচ্চারণে জীবের ষোড়শকলা যুক্ত আবরন বিনষ্ঠ হয়।বৃষ্টির পর যেমন মেঘ কেটে গিয়ে সূর্যরশ্মি প্রকাশিত হয় তেমনই জীব পরমব্রহ্মকে জানতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য বহুবিধ সনাতনী শাস্ত্রে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ ও কীর্তন করাকে কলিযুগের যুগধর্ম বলা হয়েছে।  कृते यद्ध्यायतो विष्णुं त्रेतायां यजतो मखै: । द्वापरे परिचर्यायां कलौ तद्धरिकीर्तनात् ॥ কৃতে যদধ্যায়তো বিষ্ণুং ত্রেতায়াং যজতো মখৈঃ। দ্বাপরে পরিচর্যায়াং কলৌ তদ্ধরিকীর্তানাৎ।। – শ্রীমদ্ভাগবত ১২/৩/৫২  যুগধর্ম ও মুক্তির পথ হিসেবে সত্যযুগে শ্রীবিষ্ণুর ধ্যান,ত্রেতাতে যজ্ঞ,দ্বাপরে অর্চন,এবং কলিযুগে হরিনাম সংকীর্তন নিধার্রিত হয়েছে।  कलेर्दोषनिधे राजन्नस्ति ह्येको महान् गुण: । कीर्तनादेव कृष्णस्य मुक्तसङ्ग: परं व्रजेत् ॥ কলে দোষ নিধে রাজন অস্তি এক মহান গুন। কীর্তনাৎ এব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গ পরং ব্রজেৎ।। – (শ্রীমদ্ভাগবত ১২/৩/৫১)  কলিযুগ পাপের সমুদ্র। কিন্তু তার এক মহান গুন আছে। সেটি হচ্ছে, শ্রীকৃষ্ণের নামকীর্তন। যদি কেউ তা করে তাহলে অনায়াসে এই জড় জগৎ থেকে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের ধামে প্রবেশ করতে পারে।  हरे कृष्ण हरे कृष्ण कृष्ण कृष्ण हरे हरे । हरे राम हरे राम राम राम हरे हरे ॥ इति षोडशकं नाम्नां कलिकल्मषनाशनम् । नातः परतरोपायः सर्ववेदेषु दृश्यते ॥ হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। ইতি ষোড়শকং নাম্নাং কলির্কল্মষ নাশনং। নাতঃ পরতরোপায় সর্ব বেদেষু দৃষ্টতে।। – (ব্রহ্মান্ড পুরাণ: রাধাহৃদয় ৬/৫৫-৫৬) অনুবাদঃ  ষোলটি নাম সমন্বিত হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কলির সমস্ত পাপ বিনষ্ট করে।এর থেকে শ্রেষ্ঠ পথ বেদে আর কোথাও দেখা যাবে না। 🔗 মহামন্ত্র সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানুন: https://svadharmam.com/hare-krishna-mahamantra-in-the-vedas/ হরে কৃষ্ণ।প্রনাম ©️ স্বধর্মম্ ™️

সনাতন ধর্মের দ্বিতীয় স্তম্ভ ‘শৌচ’ সম্পর্কে আলোচনা করুন।

FB IMG 1753093710829 Svadharmam

শৌচ/শুচিতাঃ সনাতন ধর্মের  চারটি স্তম্ভের মধ্যে ‘শৌচ’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।শৌচ মানে ‘শুচিতা বা পবিত্রতা’। মানবের শুচিতা দুই প্রকার – বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ। দেহের বাহ্যিক শুচিতা হলো – নিয়মিত একবার বা দুইবার স্নান করা, মল ত্যাগের পর স্নান করা, প্রস্রাব করার পর হাত, পা, মুখ জল দ্বারা ধৌত করা এবং দ্বাদশ অঙ্গে হরিমন্দির বা ঊর্ধ্বপুন্ড্র তিলক ধারণ করা। আর দেহের অভ্যন্তরীণ শুচিতা অর্থ হলো মন ও বুদ্ধিকে পবিত্র রাখা। কারন মন ও বুদ্ধির পবিত্রতা হলো ভগবানের কাছে যাওয়ার খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি মাধ্যম। অভ্যন্তরীণ শুচিতা রক্ষা করা যায় অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করে নিয়মিত শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, শ্রীমদ্ভাগবত, ঈশোপনিষদ আদি বৈদিক শাস্ত্র অধ্যয়ন করা এবং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত দিব্যনাম সমন্বিত ‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্র জপ ও কীর্তন করার মাধ্যমে। সেই সাথে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিয়মিত মাথা নত করে প্রণাম করা, তাঁর শ্রীচরণকমলে পুষ্প ও তুলসী প্রদান করা এবং উপাদেয় ফল, জল, অন্নাদি দিয়ে তাঁকে ভোগ নিবেদন করে, তা প্রসাদরূপে আস্বাদন করার মাধ্যমে। অসৎ সঙ্গ ত্যাগ হলো শুচিতার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। অসৎসঙ্গ ত্যাগ না করলে মন ও বুদ্ধি অপবিত্র হয়ে যায়। আর মন ও বুদ্ধি অপবিত্র হলে আমাদের মন কখনো পারমার্থিক কার্যকলাপে অংশগ্রহন করতে চায় না। অসৎসঙ্গ তিন প্রকার: ১. বিবাহ-বর্হিভূত স্ত্রীলোকের সাথে যারা যৌনসঙ্গ করে অথবা এসব কর্মে লিপ্ত ব্যক্তিদের সঙ্গ করে (অবৈধ স্ত্রীসঙ্গী)। অবৈধ-সঙ্গের শাস্তি সম্পর্কে ( মহাভারত, অনুশাসন পর্ব ১০৪।২১, ২২) বলা হয়েছে-  ন হীদৃশমনাযুষ্যং লোকে কিংচন বিদ্যতে। যাদৃশং পুরুষস্যেহ #পরদারোপসেবনম্।। যাবন্তো রোমকুপাঃ স্যুঃ স্ত্রীণাং গত্রেষু নির্মিতাঃ। তাবদ্ বর্ষসহস্ত্রাণি নরকং পর্যুপাসতে।। অনুবাদঃ পরস্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের কারণে মানুষের আয়ু খুব শিগ্রই শেষ হয়ে যায়। এই পৃথিবীতে পরস্ত্রীর_সঙ্গে_অবৈধ_সম্পর্কের_ফলে যে আয়ু নষ্ট হয় এর সমান পুরুষের আয়ু নষ্ট করার দ্বিতীয় আর কোনো কার্য নেই। ( মৃত্যুর পরে ) সেই ব্যভিচারী স্ত্রীর শরীরে যত রোমকুপ থাকে, ঠিক তত হাজার বছর সেই ব্যভিচারি পুরুষকে নরকে থাকতে হয়। অবৈধ সম্পর্কের শাস্তি সম্পর্কে (গরুড়পুরাণ, উত্তরখণ্ড ৫।৪) বলা হয়েছে-  স্ত্রীঘাতো গর্ভপাতী চ পুলিন্দো রোগবান্ ভবেন্। অগম্যাগমনাত্ষণ্ঢ়ো দুশ্চর্মা গুরুতল্পগঃ।। অনুবাদঃ যে ব্যক্তি স্ত্রীকে হত্যা এবং গর্ভপাত বা গর্ভের বাচ্চা-নষ্ট করে ঐ পাপী পরবর্তী জন্মে নিম্নযোনীতে জন্মগ্রহণ করে। অগম্যাগমন করলে ( অর্থাৎ যে স্ত্রী বা নারীর সাথে সম্ভগ নিষিদ্ধ, তার সাথে যদি কেউ অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয় ) সেই পাপী পরবর্তী জন্মে নপুংসক হয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে এবং যে পাপী গুরুপর্ত্নী গমন করে সে পরবর্তী জন্মে কুষ্ঠ বা চর্ম রোগে পীড়িত হতে থাকে। অবৈধ সম্পর্কের শাস্তি সম্পর্কে ( শিবপুরাণ, উমাসংহিতা ১৬।১২ ) বলা হয়েছে-  অগম্যাগামী যশ্চান্তে যাতি সপ্তবলং দ্বীজ। অনুবাদঃ যে অধম পাপী অগম্যাগামী_স্ত্রীর ( অর্থাৎ যে স্ত্রী বা নারীর সাথে সম্ভগ নিষিদ্ধ, তার সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয় ) সেই পাপী, মৃত্যুর পরে সপ্তবল নামক নরকে নিমজ্জিত হবে। অবৈধ-সঙ্গের শাস্তি সম্পর্কে(শ্রীমদ্ভাগবত ৫।২৬।২০ ) বলা হয়েছে- यस्त्विह वा अगम्यां_स्त्रियमगम्यं_वा_पुरुषं_योषिदभिगच्छति तावमुत्र कशया ताडयन्तस्तिग्मया सूर्म्या लोहमय्या पुरुषमालिङ्गयन्ति स्त्रियं च पुरुषरूपया सूर्म्या ॥ যত্ত্বিহ বা  অগম্যাং_স্ত্রিয়মগম্যং_বা_পুরুষং_যোষিদভিগচ্ছতি তাবমুত্র কশয়া তাড়য়ন্তস্তিন্ময়া সূর্য্যা লোহময্যা পুরুষমালিঙ্গয়ন্তি স্ত্রিয়ং চ পুরুষরূপয়া সূর্য্যা ॥ অনুবাদঃ যে ব্যক্তি অগম্যা_স্ত্রীতে_এবং_যে_স্ত্রী_অগম্য পুরুষে_অভিগমন ( তথা অবৈধ সঙ্গ ) করে, পরলোকে যমদূতেরা তাদের তপ্তসূর্মি নামক নরকে নিয়ে গিয়ে চাবুক দিয়ে প্রহার করে এবং তারপর পুরুষকে তপ্ত লৌহময় স্ত্রীমূর্তি ও স্ত্রীকে সেই প্রকার পুরুষ-মূর্তির দ্বারা আলিঙ্গন করায়। এটিই অবৈধ যৌন সঙ্গের দণ্ড। অবৈধ সঙ্গের শাস্তি সম্পর্কে(বিষ্ণুপুরাণ ৩।১১।১২৫ ) বলা হয়েছে-  পরদারান্ন গচ্ছেচ্চ মনসাপি কথঞ্চন । কিমু বাচাঙ্গিবন্ধোঽপি নাস্তি তেষু ব্যবায়িনাম্।।  অনুবাদঃ পরস্ত্রীর সঙ্গে তো বাক্যেই নয়, মনে মনেও (অবৈধ যৌন) সঙ্গের অভিলাষ করবে না, কারণ তাতে মৈথুনকারীর অস্থিবন্ধনও হয় না (অর্থাৎ তাকে পরের জন্মে অস্থি-শূন্য কীট জন্ম নিতে হয়)।  যে রাজ্যে অবৈধ স্ত্রীসঙ্গী থাকে না, সে রাজ্য সম্বন্ধে বলা হয়েছে-  যস্য স্তেনঃ পুরে নাস্তি নান্যস্ত্রীগো ন দুষ্টবাক্‌। ন সাহসিকদণ্ডঘ্নৌ স রাজা শক্ৰলোকভাক্॥ – (মনুস্মৃতি ৮/৩৮৬) অনুবাদঃ যাঁর রাজ্যে চোর, পরদারগামী, বাক্‌পারুষ্যকারী, সাহসকারী ও দণ্ডপারুষ্যকারী নেই, তিনি (পরলোকে) ইন্দ্রলোকভাগী হন। ২. যারা শাস্ত্র অনুযায়ী জীবন যাপন না করে পাপপূর্ণ জীবনযাপন করে অথবা এমন জীবনযাপনে অভ্যস্ত ব্যক্তির সঙ্গ করে (অসাধু)। এমন ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে গীতায় বলা হয়েছে-  य: शास्त्रविधिमुत्सृज्य वर्तते कामकारत: । न स सिद्धिमवाप्‍नोति न सुखं न परां गतिम् ॥ যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ । ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্ ॥ – (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৬/২৩) অনুবাদঃ যে শাস্ত্রবিধি_পরিত্যাগ_করে_কামাচারে_বর্তমান থাকে, সে সিদ্ধি, সুখ অথবা পরাগতি লাভ করতে পারে না।  तस्माच्छास्त्रं प्रमाणं ते कार्याकार्यव्यवस्थितौ । ज्ञात्वा शास्त्रविधानोक्तं कर्म कर्तुमिहार्हसि ॥ তস্মাচ্ছাস্ত্রং প্রমাণং তে কার্যাকার্যব্যবস্থিতৌ । জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্ম কর্তুমিহার্হসি ॥ – (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৬/২৪) অনুবাদঃ অতএব, কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই তোমার প্রমাণ। অতএব শাস্ত্রীয়_বিধানে কথিত হয়েছে যে কর্ম, তা জেনে তুমি সেই কর্ম করতে যোগ্য হও। ৩.যারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি বিরুদ্ধ ভাবাপন্ন বা ঈর্ষা পরায়ণ। অর্থাৎ, যারা সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর রূপে মান্য না করে সাধারণ মানুষ মনে করে, সেসব ব্যক্তি অথবা তাদের সঙ্গকারী ব্যক্তি (ভগবৎ-বিদ্বেষী)।পরমেশ্বরের ঈশ্বরত্ব অস্বীকারকারী এমন মূর্খদের সম্বন্ধে গীতায় বলা হয়েছে-  अवजानन्ति मां #मूढा मानुषीं तनुमाश्रितम् । परं भावमजानन्तो मम भूतमहेश्वरम् ॥ অবজানন্তি মাং মূঢ়া মানুষীং তনুমাশ্রিতম্ । পরং ভাবমজানন্তো মম ভূতমহেশ্বরম্ ॥ – (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ৯/১১) অনুবাদঃ আমি যখন মনুষ্যরূপে অবতীর্ণ হই, #মূর্খেরা আমাকে অবজ্ঞা করে৷ তারা আমার পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত নয় এবং তারা আমাকে সর্বভূতের মহেশ্বর বলে জানে না।  অসৎসঙ্গত্যাগ, এই বৈষ্ণব-আচার। ‘স্ত্রীসঙ্গী’ এক ‘অসাধু, ‘কৃষ্ণাভক্ত’ আর।। – (শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত, মধ্যলীলা ২২/৮৭)  শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রে অবৈধ স্ত্রীসঙ্গকে অধর্ম বা পাপকর্ম বলা হয়েছে द्यूतं पानं स्त्रिय:_सूना यत्राधर्मश्चतुर्विध: ॥ দ্যূতং পানং স্ত্রীয়_সূনা যত্রাধর্মশ্চতুর্বিধ ॥। – (শ্রীমদ্ভাগবত ১/১৭/৩৮)  এই তিনশ্রেনীর অসৎসঙ্গীর মধ্যে কেউ যদি একটি শ্রেনীর সঙ্গ করে তাহলে তার মন ও বুদ্ধি অপবিত্র হয়ে যাবে। তাই সকল মুক্তিকামী ও সুখকামী ব্যাক্তির প্রয়োজন অসৎসঙ্গ থেকে সর্বদা নিজেকে বিরত রেখে কৃষ্ণভক্তের সঙ্গ করা। হরে কৃষ্ণ,প্রনাম। ©️ স্বধর্মম্ ™️

সনাতন ধর্মের চারটি স্তম্ভ কি কি? সত্য সম্পর্কে আলোচনা করুন।

FB IMG 1753093696226 Svadharmam

সনাতন ধর্মের স্তম্ভঃ বৈদিক শাস্ত্রে ধর্ম বলতে সনাতন ধর্মকে নির্দেশ করা হয়েছে। শ্রীমদ্ভাগবত ১/১৭/২৪ নং শ্লোক অনুসারে সনাতন ধর্ম বা ধর্মের চারটি স্তম্ভ হল- সত্য, শৌচ, দয়া এবং তপ (“তপঃ শৌচং দয়া সত্যমিতি পাদাঃ কৃতে কৃতা”)। ধর্মের এ চারটি স্তম্ভের মধ্যে প্রথম হলো ‘সত্য’। ‘সত্য’ শব্দের অর্থ হলো ‘সৎপথ বা শাস্ত্র নির্দেশিত পথ’। দ্বিতীয়টি হলো ‘শৌচ’, যার অর্থ হলো ‘শুচিতা বা পবিত্রতা’। তৃতীয়টি হলো ‘দয়া’, যার অর্থ হলো ‘করুণাপ্রবণ হওয়া’। এবং সর্বশেষ হলো ‘তপ’, যার অর্থ হলো ‘তপস্যা পরায়ণ হওয়া’। সনাতনী বিভিন্ন শাস্ত্রে উল্লেখিত ধর্মের এ চারটি স্তম্ভ যে ব্যক্তির হৃদয়ে সদা জাগ্রত থাকে, অর্থাৎ যিনি ধর্মের এ চারটি পথ নিজের জীবনে যথাযথ ভাবে মেনে চলেন, তিনিই ধার্মিক। আমরা এখন ধর্মের প্রথম স্তম্ভ সত্য সম্পর্কে আলোচনা করবো। ১. সত্য: সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে  সত্য  বলতে শাস্ত্র নির্দেশিত সৎ বা আদর্শ পথকে নির্দেশ করে।সুতারাং সত্য বা সৎপথ  হল শাস্ত্র নির্দেশিত পথ, যে পথে জীবন যাপন করলে আমাদের কল্যান সুনিশ্চিত হয়। तस्माच्छास्त्रं प्रमाणं ते कार्याकार्यव्यवस्थितौ । ज्ञात्वा शास्त्रविधानोक्तं कर्म कर्तुमिहार्हसि ॥ তস্মাচ্ছাস্ত্রং প্রমাণং তে কার্যাকার্যব্যবস্থিতৌ । জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্ম কর্তুমিহার্হসি ॥ ~ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৬/২৪  অনুবাদ: অতএব, কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই তোমার প্রমাণ। অতএব শাস্ত্রীয় বিধানে কথিত হয়েছে যে কর্ম, তা জেনে তুমি সেই কর্ম করতে যোগ্য হও। সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে, সত্য বা সৎ পথের বৈশিষ্ট্য এমনই, কাউকে কথা দিলে, তা অবশ্যই পালন করা উচিত। কখনো তা পরিত্যাগ করা উচিত নয়।তার উজ্বল উদাহরণ হলো শ্রীমদ্ভাগবতের অষ্টম স্কন্ধে বর্ণিত বলি মহারাজ। যিনি বামনরূপী পরমাত্মা বিষ্ণুর কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন। অসুরদের গুরু শুক্রাচার্য্য তাকে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে নিষেধ করলেও বলি মহারাজ সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন নি। আবার, শাস্ত্রে যাকে অধর্ম বা অসৎ পথ বলা হয়েছে, তা যদি সস্তা ও লোভনীয়ও হয় তথাপি তা কখনো গ্রহণ করা উচিত নয়। এমনকি সারা পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ যদি সে শাস্ত্রবিরুদ্ধ অধর্ম পথকে ধর্ম মনে করে তা সম্পাদনে যুক্ত থাকে, তথাপি ধার্মিক ব্যক্তির কখনো তাতে যুক্ত হওয়া উচিত নয়। এছাড়াও প্রাচীন ইতিহাস পাঠ করলে আমরা জানতে পারি, সাধারণত ক্ষত্রিয়দের প্রায়ই প্রতিপক্ষ আহ্বান করে। হয় যুদ্ধে আমাকে জয় কর, না হয় আমাকে পরাজিত কর। প্রতিপক্ষের সে আহ্বান ক্ষত্রিয় হিসেবে কেউ অস্বীকার করতে পারে না।তারপরও যদি আপনি ক্ষত্রিয় হন তখন অধার্মিক ব্যক্তি যদি আপনাকে শাস্ত্র বিরুদ্ধ অপকর্মে আহ্বানও করে, তথাপি তা কখনো স্বীকার করা উচিত নয়। কারণ, তার প্রভাবে আপনি দেবতাদের সমস্ত দান থেকে বঞ্চিত হবেন, যার দরুণ আপনি এই জগতে সন্মান এবং প্রতিপত্তিহীন হবেন। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো মহাভারত নামক ইতিহাস শাস্ত্র। মহাভারত শাস্ত্রে বর্ণিত আছে, যুধিষ্ঠির মহারাজ শকুনি মামার আহ্বানে পাশা খেলা বা জুয়া খেলাতে অংশগ্রহণ করেন। যার ফলে এ জুয়া খেলাতে যুধিষ্ঠির মহারাজসহ পঞ্চপান্ডব পরাজিত হন এবং বারো বছরের জন্য বনবাসে এবং এক বছরের জন্য অজ্ঞাতবাসে পর্যন্ত তাঁদের যেতে হয়। পরিশেষে বলা যায়, ধার্মিক ব্যক্তি সর্বদা তার কার্য সম্পাদনে শাস্ত্র নির্ধারিত সত্য বা সৎপথকে অনুসন্ধান করবেন এবং সে অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করবেন। হরে কৃষ্ণ,প্রনাম ©️ স্বধর্মম্ ™️

বেদে রয়েছে, একই বিষয়ে দুটি পরষ্পর বিপরীত বাক্য।এ ক্ষেত্রে দুটি বাক্য কি সঠিক?

FB IMG 1740334511830 Svadharmam

আমাদের সমাজে কিছু শাস্ত্রজ্ঞানহীন ব্যক্তি আছে যারা একই বিষয়ে বেদের পরষ্পর বিপরীত বাক্য দেখলে যেকোন একটিকে স্বীকার করে, অন্যটিকে বিকৃত মনে করে পরিত্যাগ করে।এটি ভূল সিদ্ধান্ত।কারন বেদ পরমেশ্বর থেকে আগত।তাই বেদে কখনো ভূল থাকতে পারে না।বেদের মূখ্য অর্থে ঈশ্বর সাকার, তিনি শরীরধারী, তাই তার সকল ইন্দ্রিয় আছে। দিবো বা বিষ্ণো উত বা পৃথিব্যা মহো বা বিষ্ণু উরোরন্তরিক্ষাৎ। উভো হি হস্তা বসুনা পূনস্বা প্রযচ্ছ দক্ষিণাদোত সব্যাদ্বিষ্ণবে দ্বা।। –(শুক্ল যজুর্বেদ ৫।১৯) অনুবাদঃ হে বিষ্ণু(ঈশ্বর),তুমি দ্যুলোক অথবা ভূলোক হতে কিংবা মহান বিস্তৃত অন্তরিক্ষলোক হতে, তোমার উভয় হস্ত ধনের দ্বারা পূর্ণ কর। এবং দক্ষিণ অথবা বাম হস্তে আমাদের দান কর। হিরন্ময়েন পাত্রেন সত্যস্যাহপিহিতং মুখম। তৎ ত্বং পুষন্নপাবৃনু  সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে।। – (ঈশোপনিষদ  ১৫,শুক্ল যজুর্বেদ) অনুবাদঃ হে প্রভু,হে সর্বজীবপালক,আপনার উজ্জ্বল  জ্যোতির দ্বারা আপনার শ্রীমুখ আচ্ছাদিত।কৃপা করে সেই আচ্ছাদন দূর করুন  এবং যাতে আমরা আপনাকে দেখতে পারি। পূষন্নেকর্ষে যম সূর্য প্রাজাপত্য বূহ্য রশ্মীন্ সমূহ তেজো। যৎ তে রূপং কল্যাণতমং তৎ তে পশ্যামি যোহসাবসৌ পুরুষঃ সোহহমস্মি॥     –  ঈশোপনিষদ  ১৬(শুক্ল যজুর্বেদ ) অনুবাদঃ হে প্রভু, হে আদি কবি ও বিশ্বপালক, হে যম, শুদ্ধ ভক্তদের পরমগতি এবং প্রজাপতিদের সুহৃদ, কৃপা করে আপনার অপ্রাকৃত রশ্মির জ্যোতি অপসারণ করুন যাতে আপনার আনন্দময় রূপ আমি দর্শন করতে পারি। আপনি সনাতন পুরুষোত্তম ভগবান। সূর্য ও সূর্যকিরণের সম্বন্ধের মতো আপনার সাথে আমি সম্বন্ধযুক্ত। আবার ঈশ্বরের যেহেতু মৃত্যু নেই তাই তার কোন বিনাশশীল দেহ নেই,তাই বেদ মূখ্য অর্থ অনুসারে, ঈশ্বর নিরাকার বা বিনাশশীল শরীরহীন। ঈশ্বর সাকার নাকি নিরাকার এ সম্পর্কে শুক্ল যজুর্বেদীয় বৃহদারণ্যক উপনিষদ এবং শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ শাস্ত্রে স্পষ্ট ধারনা প্রদান করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ঈশ্বর সাকার এবং নিরাকার উভয়ই।  দ্বে বাব ব্রহ্মণো রুপে মূর্তং চৈবামূতং। চ মর্ত্যং চামৃতং চ স্থিতং চ যচ্চ সচ্চ ত্যচ্চ।।       -বৃহদারণ্যক উপনিষদ ২/৩/১(শুক্ল যজুর্বেদ) অনুবাদঃ ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের দুটি রুপ-মূর্ত ( মূর্তিমান বা সাকার) এবং অমূর্ত(অমূর্তিমান বা নিরাকার)। তিনি মর্ত্য ও অমৃত।তিনি স্থিতিশীল, গতিশীল,সৎ(সত্তাশীল) এবং ত্যৎ(অব্যক্ত)। সর্বেন্দ্রিয় গুণাভাসং সর্বেন্দ্রিয়বিবর্জিতম। সর্বস্য প্রভুমীশানং সর্বস্য শরণং সুহৃৎ।। ১৭ -শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৩/১৭(কৃষ্ণ যজুর্বেদ),শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৩/১৫ অনুবাদঃ ঈশ্বর( পরমাত্মা) সমস্ত ইন্দ্রিয় ও ইন্দ্রিয়ের গুণের অর্থাৎ চক্ষুকর্ণাদি দ্বারা গ্রহণযোগ্য জ্ঞানের প্রকাশক কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি সমস্ত জড় ইন্দ্রিয়বিবর্জিত, তিনি সকলেরই প্রভু এবং নিয়ন্তা। তিনি সকলের শরণ বা রক্ষক ও সকলের সুহৃৎ। এক ঈশ্বর সম্পর্কে একই বিষয়ে বেদে এরুপ পরষ্পর বিপরীত মতামত দেখে কিছু মূর্খ ঈশ্বরের নিরাকার মতকে স্থাপন করে ঈশ্বরের সাকার মতকে তার কল্পনা দ্বারা গৌণ অর্থে প্রকাশ করেছেন।ঈশ্বরের হস্তকে সে সমস্ত মূর্খরা বর্ণনা করছেন কর্ম,মস্তককে জ্ঞান।ঈশ্বরের বাক্যে নিজের মতামত ডুকানোর অধিকার তাদের কে দিল? তারা যেহেতু ঈশ্বরকে নিরাকার মানে,তাই বেদে নিরাকারের বর্ণনায় ঠিক ঈশ্বরের হস্ত নেই এর অনুবাদ করছে হস্ত নেই,মস্তককে মস্তক বললেন।কিন্তু সাকারের বর্ণনায় ঈশ্বরের হস্তকে কর্ম,মস্তককে জ্ঞান বানিয়েে দিলেন।কেন এসমস্ত মূর্খরা এরুপ করলেন? ঈশ্বরের বর্ণনা যদি গৌন হয় তাহলে সাকার ঈশ্বরের বর্ননা গৌন বা কল্পনা করতে হল আর নিরাকারের বর্ণনা কেন মূখ্যই রাখা হল?নিরাকারের বর্ণনাকেও তো গৌন করা যেত।যাহোক মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে, একই বিষয়ে দুটি পরস্পর বিপরীত বাক্য থাকলে দুটিকে ধর্ম বা সত্য মনে করতে হবে।এ দুটি বাক্যের একটি সত্য আর অন্যটি মিথ্যা মনে করে মিথ্যাকে সত্য করতে কল্পনা বা গৌণ অনুবাদ করা উচিত নয়। শ্রুতিদ্বৈধং তু যত্র স্যাত্তত্র ধর্মাবুভৌ স্মতৌ। উভাবপি হি তৌ ধমৌ সম্যগুক্তৌ মনীষিভি।।  -মনুস্মৃতি ২/১৪ অনুবাদকঃ যেখানে দুটি শ্রুতি বা বেদ বচনের পরস্পর বিরুদ্ধ উপদেশ থাকলে সেখানে দুটিকেই ধর্ম বলে গ্রহণ করতে হবে ( যেমন- বেদে ঈশ্বরকে সাকার এবং নিরাকার উভয়ই বলা হয়েছে,ইত্যাদি)।কারন মনিষীগণ বলে গিয়েছেন, ঐ দুটি ধর্ম, ঐ দুটি দোষহীন। এই বিষয়ে আরো বলা যায়, বেদ এবং গীতার ভাষায় ঈশ্বর স্বয়ংসম্পূর্ণ, তিনি অজ, তথাপি তিনি দুষ্টের দমন শিষ্ঠের পালন এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য যুগে যুগে অবতীর্ণ হন বা আবির্ভূত হন।ঈশ্বরের এরুপ আবির্ভাবকে দিব্য জন্মও বলা হয়।পরমেশ্বর ভগবানের আবির্ভাবকে দিব্য বা অপ্রাকৃত বলার মূল কারন হল, প্রাকৃতজনের জন্ম হয় কর্মফলে, কিন্তু পরমেশ্বর ভগবানের জন্ম হয় স্ব ইচ্ছায়। প্রাকৃত জনের ন্যায় ভগবানের গর্ভাদি ক্লেশ নাই। কিন্তু মূর্খরা ঈশ্বর সম্পর্কে একই বিষয়ে বেদের এরুপ পরষ্পর বিপরীত বচন শ্রবণ করে মনে করে ঈশ্বর অজ বা জন্মহীন, এটি সঠিক কিন্তু দ্বিতীয়টিতে বলা হল তথাপি তিনি বহুরুপে জন্মগ্রহণ করেন,এটি মিথ্যা।তখন তারা ঈশ্বরের অকাট্য বাক্যে নিজের কল্পনাকে জুড়িয়ে দিয়ে মূখ্য বেদ বাক্যকে গৌণ বা কল্পিত অর্থে বিকৃতভাবে বেদের অনুবাদ করে,যা ঈশ্বরের চরনে চরম অপরাধ। নিম্নোক্ত বেদ ও গীতা বাক্যে ঈশ্বর অজ, তথাপি তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১/ “অজায়মানো বহুধা বিজায়তে” (শুক্ল যজুর্বেদ ৩১/১৯,তৈত্তিরীয় আরন্যক ৩/১৩/১) অনুবাদঃ সেই পরমেশ্বর যদিও জন্মরহিত(অজায়মান) তথাপিও তিনি বহুরুপে আবির্ভূত /জন্মগ্রহণ (বিজায়তে) করেন। ২/”তদৈক্ষত বহুস্যাং প্রজায়েয়তি” -ছান্দোগ্য উপনিষদ ৬/২/৩(সামবেদ) অনুবাদঃ পরমেশ্বর বহু রুপে নিজেকে বিস্তার করেন। ৩/“একো বশী সর্বভূতান্তরাত্মা একং রূপং বহুধা যঃ করোতি।” –কঠোপনিষৎ- ২/২/১২( কৃষ্ণ যজুর্বেদ) অনুবাদঃ একক বশকর্তা, সর্ব জীবের অন্তরাত্মা, সেই পরমেশ্বর এক তথাপি তিনি বহু রূপ ধারন করেন। ৪/রুপং রুপং প্রতিরুপো বভূব তদস্য রুপং প্রতিচক্ষণায়।ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরুপ ঈয়তে যুক্তা হ্যস্য হরয়ঃ শতা দশ।। – ঋগ্বেদ ৬/৪৭/১৮ অনুবাদঃ ঈশ্বর বিভিন্ন রুপ ধারন করেন। এবং সে রুপ ধারন করে তিনি পৃথকভাবে প্রকাশিত হন।তিনি তার অন্তারঙ্গা শক্তি দ্বারা বিবিধ রুপ ধারন করে যজমানগণের নিকট উপস্থিত হন।কারন তার রথ সহস্র অশ্ব সংযুক্ত(অনন্ত শক্তি), অথাৎ তিনি অসীম ক্ষমতার অধিকারী। ৫/অজোহপি সন্নব্যায়িত্মা ভূতানামীশ্বরোহপি সন। প্রকৃতিং স্বামহধিষ্ঠায় সম্ভবাম্যাত্মমায়য়া।। যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানি ভবতি ভারত।অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম।।পরিত্রানায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম।ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।জন্ম কর্ম চ মে দিব্যমেবং যো বেত্তি তত্ত্বতঃ।ত্যক্ত্বা দেহং পুনর্জন্ম নৈতি মামেতি সোহর্জুন।। -গীতা ৪/৬,৭,৮ ( ভগবান শ্রীকৃষ্ণ) অনুবাদঃ হে অর্জুন, যদিও আমি সমস্ত জীবের ঈশ্বর,যদিও আমার জন্ম নেই ( অজ)এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় ।তবুও আমি আমার অন্তরঙ্গ শক্তিকে আশ্রয় করে অবতীর্ণ হই।যখনই জগতে ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের পরিমান বেড়ে যায়,তখনই সাধুদের (ভক্ত) রক্ষা ও দুষ্কৃতিকারীদের বিনাশ এবং ধর্ম সংস্থাপন হেতু যুগে যুগে অবতীর্ন হই।হে অর্জুন! ‍যিনি আমার এই প্রকার দিব্য জন্ম ও কর্ম যথাযথভাবে জানেন, তাঁকে আর দেহত্যাগ করার পর পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে হয় না, তিনি আমার নিত্য ধাম ( চিন্ময় জগৎ) লাভ করেন।     হরে কৃষ্ণ। প্রনাম    

সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা সম্পর্কে আলোচনা করুন।

FB IMG 1751000925612 Svadharmam

মানব জীবনে পরমেশ্বর ভগবান জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মহোৎসব এক মহা সৌভাগ্যের নাম। জগন্নাথ শব্দের অর্থ হল জগতের নাথ।নাথ শব্দের অর্থ হল প্রভু বা ঈশ্বর।সমগ্র শাস্ত্রের ন্যায় শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১০/৮ শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে সমগ্র জগতের ঈশ্বররুপে অর্জুনকে শিক্ষা প্রদান করেন(“অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে। ইতি মত্বা ভজন্তে মাং বুধা ভাব-সমন্বিতাঃ॥”)।সে শ্রীকৃষ্ণই হলেন স্বয়ং জগন্নাথ। সাধারণত ঈশ্বররুপে জগন্নাথ মন্দিরে তার ভক্তদের দ্বারা সেবা গ্রহণ করেন।মন্দিরে কেউ তাঁর দর্শনাকাঙ্খী হলে তিনি তাঁকে দর্শন দান করে ভক্তের মনোভিলাষ পূর্ণ করেন।ভক্ত জগন্নাথকে দর্শন করে আনন্দ লাভ করেন।কিন্তু জগন্নাথদেবের রথযাত্রা হল সে এক আনন্দঘন দিন,যে সময় জগন্নাথ স্বয়ং সকলকে দর্শন দান করতে মহাশোভাযাত্রা সহকারে রাস্তায় নেমে আসেন।তখন যারা কখনো জগন্নাথকে দর্শন করতে মন্দিরে যান নি,তাঁরাও ভগবানের এই অসাধারন রুপ দর্শন করে ক্ষনিকের জন্য বিস্মিত হন।ইচ্ছা বিহীন এসমস্ত মানুষেরাও জগন্নাথের কৃপা লাভ করেন। আর সে সময় সৌভাগ্যবান ভক্তগণ তাঁকে দর্শন করে মৃদঙ্গ,করতাল,শঙ্খ ধ্বনির মাধ্যমে উচ্চস্বরে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করতে করতে নৃত্য করেন।এছাড়াও ভক্তরা তখন জগন্নাথ ভগবানকে রথের দঁড়ি দিয়ে টেনে গুন্ডিছা মন্দিরে নিয়ে যান। স্কন্দ পুরাণ,বিষ্ণুক্ষেত্র, পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য, ত্রয়ত্রিংশ (৩৩ তম) অধ্যায়ে পরমেশ্বর ভগবান জগন্নাথদেবের রথযাত্রার বিধান প্রদত্ত হয়েছে। স্কন্দ পুরাণ,বিষ্ণুক্ষেত্র, পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য,প্রথম অধ্যায় ৬-৮ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী, জৈমিনি ঋষি মন্দর পর্বতে কার্তিকের মুখপদ্ম থেকে এ বিষয়ে শ্রবণ করেন।এবং কার্তিক তার পিতা মহাদেব শিবের কাছে তা শ্রবণ করেছিলেন। মুদা পরময়া ভক্ত্যা যুত কুর্যাৎ মহোৎসব।।৩৪।। আষাঢ়স্য সিতে পক্ষে দ্বিতীয়া পুষ্যসংযুতা।৩৫।। (স্কন্দ পুরাণঃবিষ্ণুক্ষেত্র, পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য, ৩৩ /৩৪-৩৫) অনুবাদঃ জৈমিনি বললেন,হে মুনিগণ, আষাঢ়মাসের শুক্লপক্ষের পুষ্যানক্ষত্রযুক্ত দ্বিতীয়াতে পরম ভক্তিসহকারে সানন্দচিত্তে ভগবানের রথযাত্রা মহোৎসব পালন করবেন। সত্যং সত্যং পুনঃ সত্যং প্রতিজানে দ্বিজোত্তমাঃ। নাতঃ শ্রেয়ঃ পরো বিষ্ণোরুৎসবঃ শাস্ত্রসম্মতঃ। যথা রথবিহারোহয়ং মহাবেদী মহোৎসবঃ।। –স্কন্দ পুরাণঃবিষ্ণুক্ষেত্র,পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য,৩৩ /১-২ অনুবাদঃ ওহে সর্বোৎকৃষ্ট ব্রাহ্মণগণ,আমি সত্য বলছি, সত্য এবং পুনঃ সত্যরুপে ঘোষণা করছি, শাস্ত্রানুসারে ভগবান বিষ্ণুর যত উৎসব আছে, রথযাত্রার সাথে তাদের কোনো তুলনা করা যায় না। সেই উৎসব যেখানে ভগবান মহাবেদীতে গমনের উদ্দেশ্যে রথের ওপর আরোহণ করেন। যত্রাগত্য দিবো দেবাঃ স্বর্গং যান্ত্যাধিকারিণঃ। কিং বচমি তস্য মাহাত্ম্যমুৎসবস্য মুরদ্বিষঃ।।৫৭।। যস্য সঙ্কীর্তনাৎ পাপং নশ্যেজন্মশতোদভয়ং।।৫৮।। মহাবেদীং ব্রজন্তং তং রথস্থং পুরুষোত্তমম। বলভদ্রং সুভদ্রাঞ্চ জন্মকোটিশতোদ্ভবম। দৃষ্ট্বা পাপং নাশয়তি নাত্র কার্য্যা বিচারণা।।৫৯।। রথচ্ছায়াং সমাক্রম্য ব্রহ্মহত্যাং ব্যাপোহতি। তন্দ্রেনুসংসক্তবপুস্ত্রিবিধাং পাপসংহতিম। নাশয়েৎ স্বর্গগঙ্গায়াং স্নানজং ফলমাপ্লুয়াৎ।।৬০।। –স্কন্দ পুরাণঃবিষ্ণুক্ষেত্র, পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য, ৩৩ /৫৭-৬০ অনুবাদঃ ভগবান মুরারির (জগন্নাথদেবের) সেই উৎসব মাহাত্ম্য (রথযাত্রা) সম্পর্কে আর অধিক কি বলব,ঐ দিন দেবগণ স্বর্গ হতে ঐ উৎসবে আগমন করে স্বর্গবাসের অধিকারী হন এবং তার ফলে তারা পুনরায় স্বর্গে গমন করতে পারেন।ঐ উৎসবে নামসংকীর্তন করলে শতজন্মের পাপ বিনষ্ঠ হয়।মহাবেদীতে গমনের সময়, রথের উপর পুরুষোত্তম( জগন্নাথ), বলদেব এবং সুভদ্রাকে দর্শন করে মানবের যে কোটিশত জন্মার্জ্জিত পাপ বিনষ্ট হয়,তা বিচার করার নয়।ভগবানের রথচ্ছায়া স্পর্শ করলেই ব্রহ্মহত্যার পাপ বিদূরিত হয়।এবং শরীরে রথরেণু স্পর্শ হলে ত্রিবিধ পাপরাশি বিনষ্ঠ হয় এবং স্বর্গগঙ্গা স্নানের ফল লাভ হয়। ঘনাম্বুবৃষ্টিযোগেন রথমার্গে তু পঙ্কিলে। দিব্যদৃষ্ট্যা চ কৃষ্ণস্য সমস্তমলহারিনি।।৬১।। তত্র যে প্রণিপাতাংস্তু কুর্ব্বতে বৈষ্ণবোত্তমাঃ। অনাদিব্যুঢ়পঙ্কাংস্তে হিত্বা মোক্ষবাপ্লুয়ুঃ।।৬২।। গবাং কোটিপ্রদানস্য কন্যানামযুতস্য চ। বাজিমেধসহস্রস্য ফলং প্রাপ্নোত্যাসংশয়।।৬৩।। –স্কন্দ পুরাণঃবিষ্ণুক্ষেত্র, পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য, ৩৩ /৬১-৬৩ অনুবাদঃ ঘন বৃষ্টিপাতে রথযাত্রার পথ পঙ্কিল(কষ্ঠসাধ্য) হলে, সে পঙ্কিল পথ শ্রীকৃষ্ণের দিব্যদৃষ্টিপাতে সুগম হয়।সে সময় বৈষ্ণবগণ পথে মস্তক স্থাপনপূর্বক ভগবানকে প্রনাম নিবেদন করলে তাদের অসীম পাপরাশি বিনষ্ঠ হয়ে মোক্ষ প্রাপ্তি হয়।এবং তারা কোটি গো-দান,অযুত কন্যা দান,সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ করেন,এতে সংশয় নাই। অনুগচ্ছন্তি কৃষ্ণং যে যাত্রা কৌতুহলাদপি। অনুব্রজন্তি নিত্যং তান দেবা শত্রুপুরোগমাঃ।।৬৪।। -স্কন্দ পুরাণঃবিষ্ণুক্ষেত্র,পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য৩৩ /৬৪ অনুবাদঃ ভগবানে ভক্তি না থাকলেও যারা কৌতুকবশত জগন্নাথদেবের রথযাত্রায় ( কৃষ্ণং যে যাত্রা) গমন করেন, ইন্দ্রাদি দেবগণ সর্বদা তাদের পিছনে পিছনে গমন করেন।  জয় জগন্নাথ। হরে কৃষ্ণ। প্রণাম ©️ স্বধর্মম্ : Connect to the inner self

কিভাবে পুরীধামে জগন্নাথ প্রকটিত হয়েছিল ?( ৬ষ্ঠ পর্ব)

20250624 170243 Svadharmam

পুরীধামে পরমেশ্বর ভগবান জগন্নাথদেবের প্রকাশঃ ৫ম পর্বের পর- স্কন্দ পুরাণ,বিষ্ণুক্ষেত্র, পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য,ঊনবিংশ অধ্যায়ের ১-৩৭ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ জৈমিনি ঋষি বললেন, এরপর সেই ভূপতি প্রতিমা নির্মাণের গৃহদ্বার আবদ্ধ করে আকাশগামিনী বাগদেবী যেরূপ কর্তব্য উপদেশ দিয়েছিলেন সেইরূপ আচরণ করতে লাগলেন।ক্রমে ক্রমে পঞ্চদশ দিবস সমাগত হলে আমি যেই রূপ পূর্বে বলেছিলাম সেই রূপে জগন্নাথদেব স্বয়ংই স্বীয় মূর্তিতে অধিষ্ঠিত হলেন। আমি যেই প্রকারে তোমাদেরকে বর্ণনা করেছি এক্ষণে সে প্রকারে সেই জনার্দন (জগন্নাথ),বলরাম, সুভদ্রা ও চক্রের সাথে দিব্য সিংহাসনে আবির্ভূত হলেন। ভগবৎ রুপ এই চার প্রকারে সম্পাদিত হলে লোক দিকের উপকারার্থে সেই আকাশ বাণী পুনরায় ধ্বনিত হল, হে নরপতি, এই প্রতিমাগুলি পট্র বস্ত্রের (পাঠ বস্ত্রের) দ্বারা দৃঢ়ভাবে আবৃত করে চিত্রকর্মের দ্বারা স্ব স্ব বর্ণে রঞ্জিত কর। বিষ্ণুকে(জগন্নাথ) নীল মেঘবর্ণ শ্যামল, বলদেবকে শঙ্কপ্রতীম ধবল, সুদর্শন চক্রকে রক্ত ও সুভদ্রা দেবীকে কুমকুম সম অরুণ বর্ণে বিবিধ অলংকারী দ্বারা পরিশোভিত কর। নিবৃত্তে ভগবদ্রুপে চতুর্দ্ধা দিব্য রুপিনী। লোকানামুপকারায় পুনরাহান্তরীক্ষগা।।১৯।। পটেরাচ্ছাদ্য সুদৃঢ়ং নৃপতে প্রতিমান্ত্বিমাঃ। স্বং স্বং বণং প্রাপয়াশু বর্ণকৈশ্চিত্র কম্মর্ণা।।২০।। নীলাভ্রশ্যামলং বিষ্ণুং শঙ্খেন্দুধ্বলং বলম। রক্তং সুদর্শনং চক্রং সুভ্রদ্রাং কুঙ্কুমারুণাম। নানালঙ্কাররুচিয়াং নানাভঙ্গিবিভাগশ।।২১।। এরপর রাজা আকাশবাণী শ্রবণ করে মূর্তি চতুষ্টয়ের বেষ্টন উন্মোচন করেন।তখন সকলেই দেখলেন যে রত্ন সিংহাসনের উপরিভাগে বলরাম, জগন্নাথ, সুভদ্রা দেবী ও বাসুদেবের চক্র স্থিত আছেন। আকাশবাণীতে যেরূপ উপদেশ দিয়েছিলেন সেরুপ আকৃতি, যা অতি মনোহারিণী হয়েছে। তয়োপদিষ্টমাকর্ন্য প্রহৃষ্টেনান্তরাত্মনা।।৩৫।। বেষ্টনং মোচয়ামাস মহাবেদ্যাং নৃপোত্তমঃ। দদৃশুন্তে তদা সর্ব্বে রত্নসিংহাসনস্থিতম।।৩৬।। রামং কৃষ্ণং সুভাদ্রাঞ্চ বাসুদেবং সুদশনর্ম। যথাপদিষ্ট লেপাদিসংস্কারে রুচিরাকৃতিম।।৩৭।। এরপর বিংশ অধ্যায়ঃ ১-২ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী জৈমিনি বললেনঃ এ পৃথিবীর মহান জন নারদ কর্তৃক উপদেশ প্রাপ্ত হয়ে স্তুতিবাক্যের দ্বারা ইন্দ্রদ্যুম্ন করুণাময় জগন্নাথের স্তব করতে লাগলেন।ইন্দ্রদ্যুম্ন বললেন- ইন্দ্রদ্যুম্ন উবাচ। ত্বদঙ্ঘ্রি পাথোজযুগং মুরারে নোপাাসিতং জন্মসু পূর্ব্বজেষু। তৎকম্মর্ণা দারুণ দারুণপাকভীতং দীনং পবিত্রাহি কৃপাম্বুধে মাম।।২।। অনুবাদঃ হে মুরারি , আমি যে পূর্ব-পূর্ব আপনার ঐই চরণ যুগলের উপাসনা করি নি, এই ক্ষণে সেই কর্মফলে আমি দীন ও নিদারুণ দুর্বিপাকে ভীত হয়েছি। অতএব হে কৃপাম্বুধি, আমাকে পরিত্রাণ কর। এরপর একবিংশ অধ্যায়, ১-৮ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ জৈমিনি ঋষি বললেন,ইন্দ্রদ্যুম্ন নরপতি এই প্রকার স্তব করছেন, এমন সময় ঋগ্বেদ পরায়ন সাক্ষাৎ ব্রহ্মসাগর নারদ বলতে লাগলেন, আহা!আপনার এই বিপুল ভাগ্যরাশি অতি আশ্চর্যজনক, যেহেতু ভগবান পৃথিবীতে দারুমূর্তি পরিগ্রহপূর্বক আবির্ভূত হয়েছেন।এ কথা বেদেও বলা হয়েছে। স্পষ্টভাবে ঋগ্বেদ সংহিতায় দারুব্রহ্ম জগন্নাথের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। অদো যদ্ দারু প্লবতে সিন্ধোঃ পারে অপূরুষম্। তদা রভস্ব দুর্হণো তেন গচ্ছ পরস্তরম্।।       -(ঋগ্বেদ সংহিতাঃ শাকল শাখা ১০/১৫৫/৩) অনুবাদঃ ঐ দূরদেশে, সমুদ্রের পারে কোন প্রযত্ন ছাড়াই প্রকাশিত অপৌরুষেয় দারু ভাসছে– হে চিরঞ্জীবী স্তুতিকর্তা– তাঁর উপাসনা কর। সেই দারুময় বিগ্রহের উপাসনায় তুমি শ্রেষ্ঠতর দিব্যলোক প্রাপ্ত করবে। এরপর নারদ ঋষি আরো বলতে লাগলেন, এই ভগবান (দারুব্রহ্ম জগন্নাথ) বেদান্ত বাক্যে অজ্ঞান নন(অথাৎ জ্ঞাত) এবং বিষ্ণুর কার্য সকল বেদ বহির্ভূত হয় না। প্রভু যখন সৃষ্টি করেন অথবা স্বয়ং সৃষ্টি হন, তখনও তিনি বেদ প্রমাণের বশীভূত থাকেন। অতএব যিনি বেদের বিপরীত কার্যে প্রবর্তিত হন,কোন ব্যক্তি তাঁর প্রমানে বিশ্বাস করেন? তস্মাৎ শ্রুতিপ্রসিদ্ধোহয়মবতারোহত্র ভূপতে। বেদান্তবেদ্যং পুরুষং গীতং তং সামগীতিষু।।৬।। প্রতিমাং ন তু জানীহি নিঃশ্রেয়সকরীং নৃনাম। দর্শনাদেব নশ্যস্তীং সুদূরং তম উত্তমম।।৭।। সন্ত্যেব শ্রুতয়ঃ পূর্বমেতদচ্চাপ্রবালিকাঃ। এতদর্চ্চ প্রশস্তা বৈ যদর্থে বিনিযোজিতাঃ।।৮।। অনুবাদঃ অতএব হে ভূপতি, বেদে (শ্রুতি)এই জগন্নাথ অবতার প্রসিদ্ধ আছে। সামবেদে (সামগীতি) তিনি বেদবেদান্তবেদ্য পুরুষ বলে গীত হয়েছেন। তাঁকে সামান্য প্রতিমা বলে জানিও না, যেহেতু ইনি মনুষ্যদিগের মোক্ষ প্রদান করেন,যাকে দর্শন মাত্রই তমগুণ নষ্ট হয়ে যায়। এই জগন্নাথের প্রতিমূর্তি বিজ্ঞাপক শ্রুতি (বেদমন্ত্র) নিশ্চয়ই ইতিপূর্বে অবস্থিত ছিল, কিন্তু সেই প্রতিমাগুলি আমাদের প্রত্যক্ষভূত হওয়াতে এই আমাদের নিমিত্ত নিয়োজিত হল।   জয় জগন্নাথ।হরে কৃষ্ণ। প্রনাম।

কিভাবে পুরীধামে জগন্নাথ প্রকটিত হয়েছিল?( ৫ ম পর্ব)

20250624 164251 Svadharmam

পুরীধামে পরমেশ্বর ভগবান  জগন্নাথের প্রকাশঃ ৪র্থ পর্বের পর – স্কন্দ পুরাণ,বিষ্ণুক্ষেত্র, পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য, পঞ্চদশ অধ্যায়ের ১-৫১ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ “জৈমিনি বললেন, যে দ্বিজগণ। এরপর তারা সেই নীলকন্ঠের নিকট গমন করলেন এবং মহাদেব ও দুর্গাকে পূজা ও প্রণিপাত করে রাজপথ পরিত্যাগপূর্বক অনুচরগণের সাথে নীলপর্বতের উপরে আরোহন করার নিমিত্তে পায়ে হেঁটে গমন করতে লাগলেন। সেই পথ অতি দুর্গম ও ভয়ানক। রাজা বহু কষ্ট করেও সে স্থানে যেতে সমর্থ হলেন না। তখন নারদ ঋষি তাদের সঙ্গে নিয়ে দিব্য গতি দ্বারা সেই গিরির শিরোদেশে গমন করলেন। সেই স্থানে একটি বৃক্ষের নিচে ভগবান নৃসিংহ মূর্তি ধারণ করে অবস্থান করছেন। শিব কখনো ক্ষণকালের জন্যও এই ক্ষেত্র দ্বারা পরিত্যাগ করেন না। মহাত্মা নারদ এই বলে ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজাকে ক্ষেত্রধাম দেখালেন। ষোড়শ অধ্যায়ঃ ১-৫৩ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী, নারদ ঋষি বললেন, এস রাজন তুমি নরসিংহদেবের সম্মুখে অশ্বমেধ যজ্ঞ কর। আমি এই স্থানে ৫ দিন থাকব। এরপর ইন্দ্রদ্যুম্ন নৃসিংহদেবকে পদক্ষিণ পূর্বক ভূমিপতিত মস্তকে প্রণাম করলেন। সপ্তদশ অধ্যায়ঃ ১-৮৩ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী,মুনিগণ প্রশ্ন করলেন,হে মুনে এ ক্ষেত্র ইন্দ্রদ্যুম্ন তারপর কি করলেন। জৈমিনি বললেন, হে বিপ্রগণ সেই নৃপবর প্রথমে ইন্দ্রাদি দেবগনকে নিমন্ত্রণ করলেন । এরপর বৈষ্ণবগণকে নিমন্ত্রণ করলেন। এরপর জগদীশ্বরের প্রসন্নতা জন্য ব্রহ্মা নির্দেশক্রমে একশত একটি অশ্বমেধ যজ্ঞ সমাপন করল। যজ্ঞ সমাপনের সপ্তম দিনে রাত্রি শেষ প্রহরে নরপতি স্বপ্নে বিষ্ণু মূর্তি প্রত্যক্ষ করলেন। এরপর স্বপ্নবৃত্তান্ত রাজা নারদকে খুলে বললেন ।নারদ তা শ্রবণ করে বললেন হে নৃপ! এই অবধি তোমার সেই শোক বিদূরিত হল যখন অরুণোদয় কালে ভগবানকে দর্শন পেয়েছ। তখন সেই সময়ের ১০ দিনের মধ্যেই ফল দান করবে। অষ্টাদশ অধ্যায়ঃ ১-৪৫ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী, হে দ্বিজগণ সেই যজ্ঞে অসংখ্য লোকের সমাবেশ হয়েছিল। দক্ষিণ সাগরের তটে বিশ্বেশ্বর শিবের সমীপে অবভৃতস্নানের নিমিত্তে যে সকল সেবক নিযুক্ত হয়েছিল, তারা কৃতাঞ্জলিপুটে রাজার কাছে উপস্থিত হয়ে নিবেদন করলেন, হে দেব! মহাসমুদ্রের তটভূমিতে একটি মহা বৃক্ষ দেখা গিয়েছে। তার অগ্রভাগ সমুদ্র মধ্যে প্রবিষ্ট ও মূল দেশ জল কল্লোলে প্লাবিত হয়ে ভাসতে ভাসতে আমাদের স্নানসমীপে উপস্থিত হয়েছে। তার সর্ব অবয়ব রক্তবর্ণ শঙ্খ, চক্র চিহ্নে চিহ্নিত। আমরা এ বিষয়কে এক অতি অদ্ভুত দর্শন বলে বিবেচনা করি। এই বৃক্ষ- সক্রিয় সুগন্ধ দ্বারা আমোদিত। দেব বৃক্ষ বলে লক্ষ্য হচ্ছে অথবা কোন দেবতা নিশ্চয়ই তরুরূপ ধারণ করে সমাগত হয়েছে। নরপতি নিযুক্ত ভৃত্যগণের এরূপ বাক্য শ্রবণ করে নারদকে জিজ্ঞাসা করলেন, এরা যাকে তরুশ্রেষ্ঠ বলে বর্ণনা করল তার দর্শনের কারণ কি ? নারদ হাসতে হাসতে নৃপবরকে বললেন, আপনি এই ক্ষণে পূর্ণাহুতি শেষ করুন, যাতে এই যজ্ঞ সফল হয়। আপনার সৌভাগ্য উপস্থিত হয়েছে। আপনি ইতিমধ্যে স্বপ্ন অবস্থায় যে শ্বেতদ্বীপবাসী অব্যয় বিশ্বমূর্তি বিষ্ণুকে দর্শন করেছিলেন তারই অঙ্গসমুদ্ভূত লোম স্থলিত হয়ে তরুরুপ ধারণ করেছে। হে নৃপ! আপনি সবিৎপতির তটসমীপে অবভৃতস্নান সমাপনান্তে মহতী বেদী নির্মাণ করে তার উপরিভাগে ঐই তরুরুপী যজ্ঞেশ্বরকে সুসমৃদ্ধ উৎসব সহকারী স্থাপন করুন। সেই সময় নারদ ও রাজা এরূপ পরস্পর বাক্যালাপ করতে করতে অত্যন্ত আনন্ আনন্দিত হয় সে তরুরূপী ভগবানের নিকট গমন করলেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে সে তরুরুপী ব্রহ্ম দর্শন করে ইন্দ্রদ্যুম্ন আনন্দসাগরে নিমগ্ন হলেন।সে সময় শঙ্খ ইত্যাদি বাদ্য বাজতে লাগল, গায়কেরা হরিনাম করতে লাগল, বন্দিগণ বন্দনা করতে লাগলেন, ব্রাহ্মণগঞ্জ স্তব করতে লাগলে।এরপর তারা ইন্দ্রদ্যুম্নের অনুমতিক্রমে বৃক্ষটিকে সুগন্ধাদি দ্বারা অলংকিত করে স্থাপন করলেন। এরপর নরপতি নারদের উপদেশে তাকে পূজা করলেন। রাজা মনিবর কে জিজ্ঞাসা করলেন এই সময়ে বিষ্ণুর প্রতিমা কি প্রকারের নির্মিত হবে, কোন ব্যক্তি বা তা গঠনকার্যে সম্পন্ন করবেন, কোন ব্যক্তি দ্বারা কি প্রকারে প্রতিমা নির্মিত হলে ভগবানের সন্তোষ হবে? নারদ ও রাজা এরূপ আলোচনা করছেন এমন সময় অন্তরীক্ষ হতে অশরীরী বাণী শ্রবণ করে সকলেই বিস্ময়াপন্ন হল। এরূপ আকাশ বাণী হলো যে, সেই অপৌরুষেয় ভগবান স্বয়ংই স্বীয় প্রতিমূর্তির বিষয় বিচার করত আবরনতে গুপ্ত মহাবেদীতে অবতীর্ণ হলেন।তোমরা পঞ্চদশ দিবস পর্যন্ত বেদীগৃহ উত্তমরুপে আচ্ছাদিত করে রেখ। এই যে সশস্ত্র বৃদ্ধ পুরুষ উপস্থিত দেখিতেছ, উহাকে এই গৃহের মধ্যে প্রবেশিত করে যত্নপূর্বক দরজা বন্ধ করবে, যতক্ষণ এই কার্য শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার বাহিরে নানাবিধ বাদ্য বাজাতে থাক। অতএব কখনো ঘটনা গৃহের ভিতর প্রবেশ করবে না এবং ঘটনার ক্রিয়া দেখবে না। যদি এই কার্যে নিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেহ তা দর্শন করেন তাহলে কি রাজা, কি রাষ্ট্র সকলেরই মহাভয় উপস্থিত হবে। অতএব যতক্ষণ এই প্রতিমূর্তি নির্মাণ না হবে ততকাল কোনক্রমে তা পর্যবেক্ষণ করবে না। হে নরপতি, স্বয়ং সনাতনদেবই তোমাকে যে যে কর্তব্য উপদেশ করবে তুমি সর্বপ্রযত্ন, সর্বলোকসুখকর সেই কার্য সম্পাদন করবে। নারদ প্রভৃতি তা শ্রবণ করে স্বয়ং বিষ্ণু যা উপদেশ করেছিলেন, তা করতে ইচ্ছা করেছিলেন। এমন সময় সেই বৃদ্ধ পুরুষরূপধারী সূত্রধর তথায় উপস্থিত হয়ে নরপতিকে বললেন, হে রাজন, আপনি স্বপ্নযোগে যে সকল মূর্তি দর্শন করেছিলেন, দিব্যরুপ দারু দ্বারা আমি তাই প্রস্তুত করে দিব। জয় জগন্নাথ। হরে কৃষ্ণ। প্রণাম  ©️ স্বধর্মম্ : Connect to the inner self

কিভাবে পুরীধামে জগন্নাথদেব প্রকটিত হয়েছিল?( ৪র্থ পর্ব)

FB IMG 1750865787602 Svadharmam

পুরীধামে পরমেশ্বর ভগবান জগন্নাথদেবঃ ৩য় পর্বের পর- স্কন্দ পুরাণ,বিষ্ণুক্ষেত্র, পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য, দ্বাদশ অধ্যায়ের ১-১২৭নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ জৈমিনি বলতে লাগলেন, ইন্দ্রদ্যুম্ন ব্রহ্মনন্দন নারদের মুখ থেকে এরুপ বাক্য শ্রবণ করে বলতে লাগলেন,আহা! আমার কি সৌভাগ্য,বহুজন্মে কতই না জানি পূণ্য করেছি,সর্বলোকপিতামহ ব্রহ্মা আজ আমার কার্যে সাহায্য করছেন।তিনি তার নিজ পুত্রকে আমার সহায় করে পাঠিয়েছেন।দ্বিজগণ, রাজা এইরুপ চিন্তা করে মুনিকে হস্তে ধারনপূর্বক অন্তঃপুরে প্রবেশ করেন।নৃপতি যথাবিধানে তার অর্চনা করে রাত্রি যাপন করলেন।প্রভাত হলে রাজা নারদ মুনিকে সঙ্গে নিয়ে নীলগিরি দর্শনে গমন করেন।পথে চলতে চলতে নারদ মুনি পুরুষোত্তমক্ষেত্র নীলগিরিতে শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞায় শিবের তপস্যা করার বিষয়ে এক পুরাতন ইতিহাস শুনান ( পূর্ব কল্পের দ্বাপর যুগের)।দ্বিতীয় দিবসে রাজা কপোতেশ্বর মহাদেবের মন্দিরে উপনীত হন। ত্রয়োদশ অধ্যায়, ১-৩১ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ মুনিগণ কপোতস্থলী সম্পর্কে প্রশ্ন করলে জৈমিনি এক পুরাতন ইতিহাস বর্ণনা করেন। চতুর্দশ অধ্যায়, ১-৪৯ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ মুনিগণ জিজ্ঞাসা করলেন,হে মহামুনি জৈমিনি, ইন্দ্রদ্যুম্ন ও নারদ ঋষি রথে আরোহন করে কোথায় গমন করলেন? উত্তরে জৈমিনি বললেন,তারা সেই পুরোহিত বিদ্যাপতির সাথে ক্ষেত্রধাম সীমায় নীলকন্ঠের নিকটবর্তীস্থলে উপস্থিত হলেন।নারদ মুনি বললেন,হে ভূপ, আপনি বিষন্ন হবেন না,যার নিমিত্তে আপনার এই যাত্রা করা হয়েছে, তিনি অন্তর্ধান প্রাপ্ত হয়েছেন।এই বিদ্যাপতি বিপ্র যেদিন তাঁকে দর্শন করে়ছিলেন, তারপর দিন সন্ধ্যার সময়ে তিনি স্বর্ন বালুকাদ্বারা আবৃত হয়ে পাতাল লোকে গমন করেন।এখন আর মর্ত্যলোকে তার দর্শন দুর্লভ। জৈমিনি বললেন,হে দ্বিজগণ, নরপতি সেই বজ্রাঘাত সদৃশ ঘোরতোর বাক্য শ্রবণ করে ভূমি তলে পতিত হলেন।এরপর রাজাকে এরুপ দর্শন করে পুরোহিতগণ ও সকল আত্মীয় বন্ধুগণ হাহাকার করতে লাগলেন এবং সুবসসিত জল পুনঃ পুনঃ মুখে ছিটিয়ে দিলেন।কিছুসময় পর রাজার চেতনা ফিরে এল।এরপর রাজা নারদমুনির চরনে নিপতিত হয়ে বিলাপ করতে করতে বলতে লাগলেন, হে মুনে, আমি কি জন্মান্তরে ঘোরতর পাপ করেছিলাম,যার ফলে আমাকে এরুপ দুঃখ ভোগ করতে হচ্ছে? আহা! বিদ্যাপতির কি ভাগ্য, তিনি নীলমাধবকে দর্শন করলেন।হে মুনিবর, আপনি এসমস্ত কিছু জেনেও যাত্রার সময় কেন আমাকে এসব জানান নি?আমি যদি হরিদর্শন থেকে বঞ্চিত হই,তাহলে আমি আর প্রাণ ধারন করব না।আমি যখন তা প্রতিজ্ঞা করলাম তখন প্রজা সকলের জীবনের সম্ভাবনা কি? হে মুনে, আপনি সর্বদা শুভাশুভ জ্ঞান প্রদান করেন,তাই অনুগ্রহ করে আমার এই পুত্রকে নিয়ে রাজ্য অভিষিক্ত করুন।এই সন্তানটি রাজ্য প্রতিপালন করলে আর প্রজারা শোকগ্রস্থ হবে না।প্রজাসকল আমার অনুমতিক্রমে রাজ্যে গমন করুন।আমি নীলমাধবকে চিন্তা করতে করতে এই ক্ষেত্রে আয়ু শেষ করব। এই কথা বলতে বলতে ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজা নারদ মুনির পায়ে পড়ে বিলাপ করলে নারদমুনি রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতে লাগলেন,হে রাজন,চর্মচক্ষু দ্বারা শরীরধারী গদাধরকে ( বিষ্ণু) দর্শন করা মানুষের শতজন্মাজ্জিত শ্রেয় বলে জানবে।এই হরির লীলা কেউ বুঝতে সমর্থ নয়।তুমি ভাগ্যধরগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।হে ইন্দ্রদ্যুম্ন, সে হরিমূর্তির চাররুপ।ঐই সকল মুর্তিরই তোমার প্রতি অনুগ্রহবুদ্ধি আছে,ব্রহ্মা আমাকে এ কথা বলেন।তিনি বলেন,তুমি শীঘ্রই ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজার নিকট গমন কর,তিনি নীলমাধবকে দর্শনাভিলাষী হয়ে নীলপর্বতে গমন করতে উদযোগী হয়েছেন।কিন্তু এই নীলমাধব যমের প্রার্থনাক্রমে যে অন্তর্হিত হয়েছেন,তাতে তিনি যেন শোক না করেন।সুতারাং এই বার্তা রাজাকে বলবে,তাকে প্রসন্ন করতে আমি মাধবকে ( জগন্নাথ)শ্বেতদ্বীপ হতে আনায়ন করব।সেই ইন্দ্রদ্যু্ম্ন এখন পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞ দ্বারা বিষ্ণুকে পূজা করে অবস্থান করুন।তার ফলে সেই দারুময় মুর্তি বিষ্ণুকে ঐ চর্মচক্ষু দ্বারাই দেখতে পাবেন।এবং বিষ্ণুর সেই অবতার এই ইন্দ্রদ্যুম্ন দ্বারাই সর্বজন বিদিত হবে এবং স্বয়ং আমিই সেই দারুমুর্তিচতুষ্ঠয়ের প্রতিষ্ঠা করব।পূর্বকালে ভগবান মনিময়মুর্তিধারী হরি চারিমুর্তিতে বিরাজিত ছিলেন,ভবিষ্যতে ভগবান দিব্যদারুময় শরীরে চতুর্মুর্তিতে অবতীর্ণ হবেন।অতএব হে রাজন, তুমি দুঃখিত হইও না।তোমার ইচ্ছা অবশ্যই সফল হবে,তাতে সন্দেহ নাই। জৈমিনি বললেন,হে দ্বিজগন নারদ ঋষি পুনরায় রাজার বিশ্বাস উৎপাদনের জন্য পুনরায় বললেন,হে রাজন,শঙ্খাকৃতি ক্ষেত্রধামের দুর্গম অগ্রভাগে সেই দুষ্প্রাপ্য নীলকন্ঠ শিব যেস্থানে অবস্থান করছেন,আমরা অশ্বমেধ যজ্ঞের সেই মনোরম সমতল স্থলীতে গমন করব।এবং সেস্থলে অশ্বমেধ যজ্ঞের জন্য সহস্র বর্ষ পর্যন্ত নরসিংহ মুর্তি নির্মানপূর্বক তার দর্শন দ্বারা জন্মকে কৃতার্থ করব।ভগবান পুরুষোত্তমের মুর্তি অদর্শন দ্বারা তোমার যে যাতনা আছে, তা এই নিত্য বন্দনীয় ও পূজনীয় নরসিংহ মুর্তি ভজনা করে ত্যাগ কর।প্রথমে নৃসিংহ প্রতিষ্ঠা করলে সকল বিঘ্ন বিনষ্ট হয়ে ফলবৃদ্ধি হতে থাকবে।অতএব এ বিষয়ে বিলম্ব করা উচিত নয়,তা পিতামহ বলে গিয়েছেন।এখন এস,আমরা সেই অশ্বমেধ যজ্ঞ যথাশাস্ত্র মতে সম্পাদন করি।চলবে… জয় জগন্নাথ। হরে কৃষ্ণ। প্রণাম ©️ স্বধর্মম্

কিভাবে পুরীধামে জগন্নাথ প্রকটিত হয়েছিল ?( ৩য় পর্ব)

FB IMG 1750864246335 Svadharmam

পুরীধামে পরমেশ্বর ভগবান জগন্নাথের প্রকাশঃ ২য় পর্বের পর- স্কন্দ পুরাণ,বিষ্ণুক্ষেত্র, পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য, নবম অধ্যায়ের ১-৬৮ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ “জৈমিনি বললেন,সন্ধ্যা কালে বিদ্যাপতি ইন্দ্রদ্যুম্নের প্রাসাদে গমন করেন।হে দ্বিজগন,বিদ্যাপতির এরুপ আগমন সংবাদ রাজার কাছে পৌঁছানো হল।ইন্দ্রদ্যুম্ন বিদ্যাপতির আগমন বার্তা শ্রবন করে পরম আনন্দিত হয়ে বিদ্যাপতির প্রতিক্ষা করতে লাগলেন।এ সময়ে বিদ্যাপতি নীলমাধবের পরম রমনীয় মাল্য(মালা) হস্তে ধারন পূর্বক রাজার সম্মুখে গমন করেন।বিদ্যাপতি এ মাল্য রাজাকে প্রদান করে বলতে লাগলেন, ক্ষেত্র পুরুষোত্তমে অবস্থিত সাক্ষাৎ মুক্তিদাতা এই মাল্যদানচ্ছলে আপনাকে নিজস্বরুপ দেখবার নিমিত্ত আজ্ঞা করেছেন।এই বলে ব্রাহ্মণ ভূপতির গলায় সেই মালা পরিয়ে দিলেন।এরপর সে মালা ইন্দ্রদ্যুম্ন প্রাপ্ত হয়ে প্রভু জগন্নাথের উদ্দেশ্যে স্তব করতে লাগলেন।এরপর রাজা বিদ্যাপতিকে সন্মানপূর্বক পূজা করে,তার কুশল জিজ্ঞাসা করে পুরুষোত্তম ক্ষেত্র সমন্ধে জিজ্ঞাসা করেন।বিদ্যাপতি রাজার সে প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন।” দশম অধ্যায় ১-১১৮ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ “ইন্দ্রদ্যুম্নের প্রশ্নের উত্তরে বিদ্যাপতি পুরুষোত্তম ধামের মহিমা বর্ণনা করেন।সে সময় দেবর্ষি নারদের আগমন হয় এবং নারদ মুনি রাজাকে ভক্তিযোগের মহিমা বর্ণনা করেন।” একাদশ অধ্যায় ১-১৪৪ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ “ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজা নারদ মুনির কাছে উৎকলদেশের নীল মাধব দর্শনের তীব্র আকাঙ্খার কথা জানালে নারদ মুনি বলেন, শীঘ্রই প্রভু জগন্নাথদেব চতুর্রুপে আবির্ভূত হবেন।পরে নারদমুনিকে পদক্ষিণ করে রাজা উৎকল অভিমুখে যাত্রা করেন।উৎকলে পৌঁছে ইন্দ্রদ্যুম্ন উৎকলের( বর্তমান উড়িষ্যা) অধিপতির সাথে সাক্ষাৎ করেন।উৎকল অধিপতির কাছে নীলাচলশিখরবাসী জগন্নাথ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে উৎকল অধিপতি জানান যে,নীলপর্বত দক্ষিণ সমুদ্রের তীরভাগে অবস্থিত এবং বন আবৃত,সেখানে লোকের গমনের শক্তি নাই।সম্প্রতি সেই পর্বতটি বালুকারাশি দ্বারা আচ্ছাদিত হয়েছে। এরপর নারদের দিকে তাকিয়ে ব্যাকুলভাবে বললেন,হে মুনি এ কি ঘটনা হল,হায়! হায়! যে নিমিত্তে এখানে আসলাম তাও আজ বিফল হল।এরপর নারদ মুনি বললেন,হে রাজন,বিস্মিত হচ্ছেন কেন? তুমি ভাগ্যবান পুরুষ ও বিষ্ণুভক্তিপরায়ন।অতএব বৈষ্ণবগণের বাঞ্ছা কদাপি বিফল হবার নয়।যিনি পার্থিব শরীর ধারন করেছিলেন, সেই জগতের কারন নারায়ণকে তুমি অবশ্যই দেখতে পাবে।তিনি তোমাকে কৃপা করার জন্য পুনরায় অবতীর্ণ হবেন।তুমি অবশ্যই চর্ম চক্ষু দ্বারা ক্ষেত্রধামে বৈকুন্ঠনাথকে দেখতে পাবে।হে নৃপ, পিতামহ ব্রহ্মা তোমার এই কার্য্যে আমাকে নিযুক্ত করেছেন।অতত্রব সেই ক্ষেত্রমধ্যে গমন করে তোমাকে সকল বিষয় বলব। সম্প্রতি রাত্রি তৃতীয় প্রহর হয়েছে।এইক্ষণে সকল ব্যক্তিকে স্ব স্ব গৃহে গমনার্থে অনুমতি প্রদান কর।এবং তুমিও অন্তপুরে গিয়ে নিদ্রিত হও।” চলবে… জয় জগন্নাথ। হরে কৃষ্ণ। প্রণাম প্রচারে- ©️ স্বধর্মম্ : Connect to the inner self পোস্টার নির্মাণ -শ্রীবিকাশ চন্দ্র দাস প্রভু।