শিব কে? মহাদেব শিবের আবির্ভাব সম্পর্কে আলোচনা করুন।

শিবঃ শিব হলেন চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক গোলক বৃন্দাবনে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাম পার্শ্ব থেকে আবির্ভূত এক মহান দেবতা অথাৎ মহাদেব।পুনরায় ভগবান মহাবিষ্ণু থেকে যখন এই ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি হয় তখন ব্রহ্মার ভ্রুযুগল থেকে আবির্ভূত হন।পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞা অনুসারে তিনি জড় জগতের সমস্ত জীবের মঙ্গল বিধান করে অমঙ্গল বা অশুভকে বিনাশ করেন,তাই তাঁর নাম শিব। শিব পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞা অনুসারে জড় জগতে সদা বিরাজমান তমোগুণের অধিষ্ঠাত্রী দেবতারুপে তাঁর কার্য সম্পাদন করেন।শিব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞা অনুসারে, জড় জগতে ভোগবিলাসে প্রমত্ত জীবকে শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মে শরণাগত হওয়ার শিক্ষা প্রদান করেন এবং তিনি নিজেও সর্বদা সে শিক্ষা অনুসারে পঞ্চমুখে হরিনাম কীর্তন করেন এবং শ্রীবিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীরামচন্দ্রের ধ্যানে মগ্ন থাকেন,তাই তাঁকে সনাতনী শাস্ত্রে পরম বৈষ্ণব নামে শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। ১/ চিন্ময় জগতের গোলক ধামে মহাদেব শিবের আবির্ভাবঃ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান শাস্ত্রের ব্রহ্মখন্ডের ৩য় অধ্যায়ে মহাদেব শিবের আবির্ভাবের কথা সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে।কিন্তু এর পূর্বের ব্রহ্মখন্ডের ২য় এবং ৩য় অধ্যায়ের ১-২২ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে- “চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক হল গোলক বৃন্দাবন ধাম। তার পরিধি তিনকোটি যোজন।সে গোলক বৃন্দাবনের নিম্নে দক্ষিন দিকে পঞ্চাশ কোটি যোজন দূরে বৈকুন্ঠলোক। সে বৈকুন্ঠের বিস্তার ১ কোটি যোজন। বৈকুন্ঠের নিম্নদিকে বামে শিবলোক অবস্থিত।এ গোলক বৃন্দাবন, বৈকুন্ঠ এবং শিবলোককে একত্রে চিন্ময় জগৎ বলা হয়।যাহোক চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক গোলক বৃন্দাবনের রত্নসিংহাসনে প্রবিষ্ট আছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তিনি দ্বিভুজ, মুরলীধর এবং শ্যামসুন্দর(গায়ের রং শ্যামবর্ণ)।তার মস্তকে উজ্জ্বল মুকুট, গলায় বনমালা,রত্ন অলংকারে শোভিত। সেই পরম প্রভু পরমব্রহ্ম,পরমাত্মা, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দক্ষিণ অঙ্গ থেকে আবির্ভূত হন চতুর্ভুজ নারায়ন।এরপর শ্রীকৃষ্ণের বাম অঙ্গ থেকে আবির্ভূত হন শিব। এরপর ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান শাস্ত্রের ব্রহ্মখন্ডের ৩/১৮-২২ শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে পরমাত্মা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাম পার্শ্ব থেকে আবির্ভূত হন মহাদেব শিব।তিনি পঞ্চমুখধারী,জপমালায় সর্বদা হরিনামকীর্তনকারী পরম বৈষ্ণব। আবির্বভূব তৎপশ্চাদাত্মনো বামপার্শ্বতঃ। শুদ্ধস্ফটিকসঙ্কাশঃ পঞ্চবক্রো দিগম্বরঃ ॥ ১৮।। তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভজটাভারধরো বরঃ। ঈষদ্ধাস্য প্রসন্নাস্যন্ত্রিনেত্রশ্চন্দ্রশেখরঃ ॥ ১৯।। ত্রিশূলপট্রিশধরো জপমালাকরঃ পরঃ। জ্ঞানানন্দো মহাজ্ঞানী মহাজ্ঞানপ্রদঃ পরঃ ॥ ২০।। চন্দ্রবৃন্দপ্রভমুষ্টমুখদৃষ্টা মনোহরঃ। বৈষ্ণবানাঞ্চ প্রবরঃ প্রজ্জ্বলন্ ব্রহ্মতেজসা ॥ ২১।। শ্রীকৃষ্ণপুরতঃ স্থিত্বা তুষ্টব তৎ পুটাঞ্জলিঃ। পুলকাঙ্কিতসর্ব্বাঙ্গং সাশ্রুনেত্রঃ সগদগদঃ ॥ ২২।। -(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানঃ ব্রহ্মখন্ড ৩/১৮-২২) অনুবাদঃ পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণের বাম পার্শ্ব হতে শুদ্ধ স্ফটিকের ন্যায় শুক্লবর্ণ, পঞ্চবদন, দিগম্বর শিব আবির্ভূত হলেন। তাঁর কান্তি তপ্তকাঞ্চনতুল্য উজ্জ্বল,মস্তকে জটাভার। সুপ্রসন্ন বদনকমলে ঈষৎ হাস্য, প্রত্যেক বদনে তিন তিন নয়ন, ললাটদেশে চন্দ্র বিরাজমান।তিনি যোগিগণের গুরুর গুরু, সর্ব্ব- সিদ্ধেশ্বর সিদ্ধপুরুষ, করকমলনিকরে ত্রিশূল, পট্টিশ ও জপমালা ধারণ করিতেছেন। তিনি মৃত্যুস্বরূপ, এবং মহাজ্ঞানী। তিনি জ্ঞানে সদা আনন্দময় মহাজ্ঞানী এবং মহাজ্ঞানদাতা । তাঁর মনোহর রূপ পূর্ণচন্দ্রকেও নিন্দা করে । তিনি সুখদৃশ্য, বৈষ্ণবগণের শ্রেষ্ঠ এবং ব্রহ্মতেজে প্রজ্বলিত। তিনি (শ্রীকৃষ্ণ থেকে আবির্ভূত হয়ে) শ্রীকৃষ্ণপ্রেমহেতু পুলকাঙ্কিতগাত্র ও সাশ্রুনেত্র হয়ে কৃতাঞ্জলিপুটে গদগদস্বরে সম্মুখে অবস্থানপূর্ব্বক শ্রীকৃষ্ণকে স্তব করতে আরম্ভ করলেন। হরে কৃষ্ণ। প্রনাম।।
দুর্গা দেবী কে? দুর্গা দেবীর আবির্ভাব সম্পর্কে আলোচনা করুন।

দুর্গা দেবী- দেবী দুর্গা হলেন চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক গোলক বৃন্দাবনে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বুদ্ধি থেকে আবির্ভূত এক মহান দেবী।তিনি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞা অনুসারে জড় জগৎরুপী দুর্গের দেখাশুনা করেন,তাই এ মহান দেবীর নাম দুর্গা।দুর্গা দেবী জড় জগতে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের বহিঃরঙ্গা শক্তিরুপে কার্য সম্পাদন করেন,কিন্তু চিন্ময় জগতে তিনি শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গা শক্তিরুপে কার্য সম্পাদন করেন। দেবী দুর্গার আবির্ভাবঃ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান শাস্ত্রের ব্রহ্মখন্ডের ৩য় অধ্যায়ে জগৎ পুজিতা দুর্গা দেবীর আবির্ভাবের কথা সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে।কিন্তু এর পূর্বের ব্রহ্মখন্ডের ২য় এবং ৩য় অধ্যায়ের ১-৬৮ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে- “চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক হল গোলক বৃন্দাবন ধাম। তার পরিধি তিনকোটি যোজন।সে গোলক বৃন্দাবনের নিম্নে দক্ষিন দিকে পঞ্চাশ কোটি যোজন দূরে বৈকুন্ঠলোক। সে বৈকুন্ঠের বিস্তার ১ কোটি যোজন। বৈকুন্ঠের নিম্নদিকে বামে শিবলোক অবস্থিত।এ গোলক বৃন্দাবন, বৈকুন্ঠ এবং শিবলোককে একত্রে চিন্ময় জগৎ বলা হয়।যাহোক চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক গোলক বৃন্দাবনের রত্নসিংহাসনে প্রবিষ্ট আছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তিনি দ্বিভুজ, মুরলীধর এবং শ্যামসুন্দর(গায়ের রং শ্যামবর্ণ)।তার মস্তকে উজ্জ্বল মুকুট, গলায় বনমালা,রত্ন অলংকারে শোভিত। সেই পরম প্রভু পরমব্রহ্ম,পরমাত্মা, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দক্ষিণ অঙ্গ থেকে আবির্ভূত হন চতুর্ভুজ নারায়ন।এরপর শ্রীকৃষ্ণের বাম অঙ্গ থেকে আবির্ভূত হন শিব।এরপর শ্রীকৃষ্ণের নাভিপদ্ম থেকে আবির্ভূত হন ব্রহ্মার।এরপর শ্রীকৃষ্ণের বক্ষ থেকে আবির্ভূত হন মুর্তিমান ধর্মের।এরপর শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকে আবির্ভূত হন স্বরস্বতী দেবীর।এরপর শ্রীকৃষ্ণের মন থেকে আবির্ভূত হন লক্ষ্মী দেবীর।” এরপর ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান শাস্ত্রের ব্রহ্মখন্ডের ৩/৬৯-৭৩ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বুদ্ধি থেকে আবির্ভূত হন জগৎ পূজিতা মাতা ভগবতী দুর্গা।সে দুর্গা মাতা শতভুজা,ভয়ংঙ্করী এবং দুর্গতি নাশিনী। আর্বিবভূব তৎপশ্চাদবুদ্ধেশ্চ পরমাত্মন। সর্ব্বাধিষ্ঠাতৃদেবী সা মূলপ্রকৃতিরীশ্বরী।। নিন্দ্রাতৃষ্ণাক্ষুৎপিপাাসাদয়াশ্রদ্ধাক্ষমাদিকাঃ। তাসাঞ্চ সর্ব্বশক্তীনামীশাধিষ্টাতৃদেবতা।। ভয়ঙ্করী শতভুজা দুর্গা দুর্গার্ত্তিনাশিনী। আত্মনঃ শক্তিরুপ সা জগতাং জননীপরা।। ত্রিশূলশক্তিশাঙ্গঞ্চ ধনুঃখড়গশরাণি চ। শঙ্খচক্রগদাপদ্মমক্ষমালাকমন্ডলু।। বজ্রমঙ্কুশপাশঞ্চ ভূষন্ডীদন্ডতোমরম। নারায়ণাস্ত্রং ব্রহ্মাস্ত্রং রৌদ্রং পাশুপতং তথা।। -(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানঃ ব্রহ্মখন্ড ৩/৬৯-৭৩) অনুবাদঃ পরমাত্মা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বুদ্ধি থেকে আর্বিভূত হন দেবী দুর্গা।তিনি সর্ব অধিষ্ঠাত্রী দেবী,আবার তিনিই আদি প্রকৃতি ঈশ্বরী।তিনি জগতের মধ্যে নিদ্রা,তৃষ্ণা,ক্ষুধা,দয়া,শ্রদ্ধা আদি যত বিষয় রয়েছে তার শক্তিদেবী হিসেবে তিনি অধিষ্ঠাত্রী দেবতা।তিনি ভয়ঙ্করী, শতভুজা,দুর্গতি বিনাশকারীনি তাই তিনি দেবী দুর্গা।তিনি পরমাত্মার শক্তিরুপা,আবার তিনিই সমস্ত জগতের জননী। তিনি ত্রিশূল,শাঙ্গ,ধনু,খড়গ,শর,শঙ্খ,চক্র,গদা,পদ্ম, অক্ষমালা এবং কমুন্ডলশোভিতা।তিনি বজ্র,অঙ্কুশ,পাশা,দন্ড,নারায়ন অস্ত্র,ব্রহ্মাস্ত্র,এবং রুদ্রের পাশুপত অস্ত্র শোভিত। হরে কৃষ্ণ।জয় মা দূর্গা। প্রনাম।
শ্রীকৃষ্ণ অন্যের স্ত্রীর সাথে রাসনৃত্য করেছিলেন।শ্রীকৃষ্ণ যদি পরমেশ্বর হন,তাহলে তিনি কিভাবে এই অনৈতিক কাজটি করতে পারলেন?

এই জগতের একজনই স্রষ্টা,তার নাম শ্রীকৃষ্ণ।তিনিই বিষ্ণু রাম,বলরাম,নৃসিংহ আদি বহুরুপে নিজেকে প্রকাশ করেন। ভগবদ্গীতা ১০/৮ শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন,”আমিই সমস্ত জগতের স্রষ্টা। সব কিছু আমার থেকে সৃষ্টি হয়েছে”(“অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে।”)। অথর্ববেদের অন্তর্গত গোপালতাপনী উপনিষদ১/২১ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে( “একো বশী সর্বগঃ কৃষ্ণ ঈড্যঃ”)সেই একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর ভগবান,তিনিই আরাধ্য।কৃষ্ণ যজুর্বেদের অন্তর্গত নারায়ন উপনিষদ ৪ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে “ব্রহ্মন্যো দেবকীপুত্রঃ”দেবকীপুত্র শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর ভগবান। শ্রীমদ্ভাগবতের ১/৩/২৮ শ্লোকে বলা হয়েছে,”কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং”শ্রীকৃষ্ণ হলেন স্বয়ং পরমেশ্বর। এছাড়াও মহাভারত শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলা হয়েছে, স্বয়ং চতুর্ভুজ বিষ্ণু বলা হয়েছে (“অনুগ্রহার্থং লোকানাং বিষ্ণুলোক নমস্কৃতঃ।বসুদেবাত্তু দেবক্যাং প্রাদুর্ভূতো মহাযশাঃ।।”-“ত্রিজগতের পূজনীয় মহাযশস্বী স্বয়ং বিষ্ণু লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য বসুদেব-দেবকীতে আবির্ভূত হইয়া ছিলেন৷” -মহাভারত আদিপর্ব, ৫৮/১৩৮)। সুতারাং বেদ বা শ্রুতি,স্মৃতি,অষ্টাদশ পুরান,মহাভারত ইত্যাদি অসংখ্য সনাতনী শাস্ত্র থেকে আমরা জানতে পারি, কৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান। আমার, আপনার সকলের সৃষ্টিকর্তা হলেন শ্রীকৃষ্ণ। তাই তিনি বৃন্দাবনের গোপীদেরও সৃষ্টির্কতা।তার কাছে স্ত্রী ও পুরুষ কোন বিভেদ নাই।কারন তিনি সকলের প্রভু।যে যে ভাব নিয়ে ভক্ত শ্রীকৃষ্ণের শরনাগত হতে চাই, শ্রীকৃষ্ণ তাকে সেভাবে কৃপা করেন( গীতা ৪/১১)।বৃন্দাবনের গোপীরা শ্রীকৃষ্ণকে শুধুই ভালোবাসতে চেয়েছিল,তার বিনিময়ে তারা আর কিছুই তার কাছে চান নি।তাই শ্রীকৃষ্ণ তাদের ভালোবাসাকে স্বীকার করেছিলেন। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা অনুসারে,যদিও ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অসংখ্য বৃন্দাবনের গৃহ বধুদের সাথে নৃত্য করেছিলেন, তথাপি তিনি সম্পূর্নরুপে কাম বা যৌন কামনা বাসনা থেকে মুক্ত( গীতা৭/১২)।কারন শ্রীকৃষ্ণ হলেন সমগ্র জগতের স্রষ্টা,পরম ঈশ্বর,পরম প্রভু, পরমেশ্বর ভগবান। ভগবদ্গীতা ৩/৩৭ শ্লোক অনুসারে কাম বা যৌন কামনা বাসনা শুরু হয় রজোগুন থেকে (” কাম এষ ক্রোধ এষ রজোগুন সমুদ্ভব “)।এ রজোগুন থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মুক্ত।এমনকি জড় জগতের সত্ত্ব ও তমগুনও ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে স্পর্শ করতে পারে না (গীতা ৭/১২)। শ্রীমদ্ভাগবত পুরান শাস্ত্রের দশম স্কন্দের বর্ননা থেকে আমরা জানতে পারি, কৃষ্ণ বৃন্দাবনের অসংখ্য ব্রজবধুদের জোর করে ঘর থেকে তুলে আনেন নি। তারা স্বইচ্ছায় কৃষ্ণের বংশীধ্বনিতে তার কাছে ছুটে এসেছিলেন। শ্রীমদ্ভাগবত ১০/২৯/১৭-২৬ নং শ্লোক অনুযায়ীঃ কৃষ্ণ গোপীদের বললেন,” হে গোপীগন,তোমরা বৃন্দাবনে চলে যাও।কেন তোমরা এখানে এসেছ?তোমাদের সংসার আছে,স্বামী আছে,সন্তান আছে।তারা তোমাদের অপেক্ষায় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হবেন।তোমাদের দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকতে দেখে লোকেরা তোমাদের নিন্দা করবে।এ ধরনের কার্য নারী জাতির জন্য উচিত নয়। বাড়িতে ফিরে যাও তোমরা।” শ্রীমদ্ভাগবত ১০/২৯/৩১- ৪১ নং শ্লোক অনুযায়ীঃ গোপীরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন,”হে প্রভু নারী জাতিরুপে আপনি যে উপদেশ আমাদের দিয়েছেন তা আমরা মান্য করি।কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আপনার প্রতি এই ধরনের সেবা করা উচিত।কারন আপনি সকল প্রাণীর পরম বন্ধুস্বরুপ,আপনি তাদের আত্মীয়,পতি এবং আত্মা।আপনি আমাদের স্রষ্টা।আপনি আমাদের স্বামী। হে প্রভু,এ জগতে মিথ্যা স্বামীর আমরা দাসত্ব করছি,যে কিছুকাল পরে মারা যাবে।প্রকৃত স্বামী আপনি।আপনি ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করেছেন,ব্রজভূমিকে পালন করছেন,আপনি ঈশ্বর।আপনার জন্য যদি আমাদের কলঙ্ক হয়,সেটি আমাদের পরম সৌভাগ্য।কৃপা করে ফিরিয়ে দিও না।কৃপা করে আপনি আমাদের আপনার চরনে স্থান দিবেন।” শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩৩/৩ শ্লোক অনুযায়ীঃ “ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পরমপ্রভুরুপে অসংখ্য সৌভাগ্যবতী ব্রজনারীদের মনোবিলাষ পূর্ন করার জন্য পূর্নিমার পূর্ণ আলোতে অসংখ্য কৃষ্ণ রুপে প্রতি দুইজন গোপীর মাঝে একজন কৃষ্ণরুপে তাদের হাত ধরে তাদের সাথে নৃত্য করেছিলেন।প্রত্যোকে ভেবেছিল কৃষ্ণ শুধু আমার সাথে রয়েছেন।আহা! আমি কত সৌভাগ্যবান।” কৃষ্ণ যদি ভগবান না হতেন, তাহলে তার পক্ষে কিভাবে এক কৃষ্ণ থেকে অসংখ্য কৃষ্ণে পরিনত হওয়া কিভাবে সম্ভব হত? সুতারাং কৃষ্ণ পরমেশ্বর ভগবান,তাই তার পক্ষে সবকিছু সম্ভব, যা আমরা চিন্তাও করতে পারি না। বৃন্দাবনের গোপীরা কৃষ্ণকে শুধু ভালোবাসতে চেয়েছিল। কৃষ্ণ তাদের সে আশা পূর্ণ করেছিলেন।কারন কৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান।তার কাছে স্ত্রী ও পুরুষ কোন বিভেদ নেই।যে তার শরনাগত তিনি তার প্রতি কৃপাপরায়ন( গীতা ৯/৩২)। শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩৩/৩৭-৩৮ নং শ্লোক অনুযায়ীঃ “রাসনৃত্য সমাপ্ত হলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোপীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন গৃহে ফিরে যাওয়ার জন্য।শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে গোপীগন গৃহে ফিরে গিয়েছিলেন।কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের মায়াশক্তির দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে গোপগন ভেবেছিল তাদের পত্নীরা তাদের পাশে আছে।তাই তারা তাদের স্ত্রীদের প্রতি কোনরুপ অসূয়া( হিংসা) প্রকাশ করেন নি।” হরে কৃষ্ণ।প্রনাম।
শ্রীকৃষ্ণ গোপীদের বস্ত্রহরন করেছিলেন।শ্রীকৃষ্ণ যদি ঈশ্বর হন তাহলে তিনি কিভাবে এই অনৈতিক কাজটি করতে পারলেন?

আমাদের সনাতনী শাস্ত্র বিশেষ করে বেদ,মহাভারত, শ্রীমদভগবদগীতা, অষ্টাদশ পুরান, পঞ্চরাত্র ইত্যাদি শাস্ত্র অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ হলেন সকলের প্রভু,পরম ঈশ্বর ভগবান। অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে। ইতি মত্বা ভজন্তে মাং বুধা ভাব-সমন্বিতাঃ॥ -(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১০/৮,ভগবান শ্রীকৃষ্ণ) অনুবাদঃ আমিই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, সবকিছু আমার থেকে সৃষ্টি হয়। জ্ঞানী ব্যক্তিরা এই তত্ত্ব জেনে শুদ্ধ ভক্তি সহকারে আমার ভজনা করেন। এতে চাংশ কলা পুংস কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ং। ইন্দ্রারিব্যাকুলং লোকং মৃড়য়ন্তি যুগে যুগে।। –(শ্রীমদ্ভাগবত পুরান ১/৩/২৮) অনুবাদঃ পূর্বোল্লেখিত সমস্ত অবতারেরা পুরুষাবতারের অংশ বা অংশের অংশ।কিন্তু শ্রীকৃষ্ণই স্বয়ং ভগবান।ইন্দ্রের শত্রুদের দ্বারা যখন পৃথিবী ভারাক্রান্ত হয়, তখন তিনি যুগে যুগে অবতীর্ণ হন। ভগবদ্গীতা ৩/৩৭ শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বর্ননা করেন কাম বা যৌন কামনা বাসনা শুরু হয় রজোগুন থেকে (” কাম এষ ক্রোধ এষ রজোগুন সমুদ্ভব “)।ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবদ্গীতা ৭/১২ শ্লোকে আরো বর্ননা করেন, যদিও রজোগুন( কামের উদ্ভব) আমার থেকে সৃষ্টি, কিন্তু রজগুন ( কাম)আমাতে অবস্থিত নয়(” যে চৈব সাত্ত্বিকা ভাবা রাজসাস্তামসাশ্চ যে।মত্ত এবৈতি তান বিদ্ধি ন ত্বহং তেষু তে ময়ি।।”)। গোপীরা কৃষ্ণের ভক্ত।তারা সকলে সর্বোচ্চ লোক গোলক বৃন্দাবন ধাম থেকে এ জগতে জীবকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আবির্ভুত হয়েছেন।কৃষ্ণ যেহেতু এই জগতের সকল জীবের স্রষ্টা,তাই তার কাছে মেয়ে ছেলে কোন বিভেদ নেই।তাই তিনি স্বয়ং নিজে অথবা বিভিন্ন অবতাররুপ পরিগ্রহ করে যেকোন পরিস্থিতিতে যেকোন স্থানে আবির্ভুত হয়ে জগতের জীবকে শিক্ষা প্রদান করেন। শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্দের তথ্য অনুসারে ভগবান কৃষ্ণ যখন বৃন্দাবনের গোপীদের বস্ত্র হরন করেছিলেন তখন তার বয়স মাত্র ৬ বছর(কারন কৃষ্ণ ৭ বছর বয়সে গোবর্ধন পর্বত তার কনিষ্ঠ আঙ্গুলে ধারন করেছিলেন, তাই কৃষ্ণ কতৃর্ক গোপীদের বস্ত্রহরন তার পূর্বের ঘটনা)। স্বাভাবিকভাবে ৬ বছর বয়সে কোন ছেলের যৌন কামনা থাকে না। তাই কৃষ্ণ কতৃর্ক গোপীদের বস্ত্রহরন কখনো রজোগুন থেকে জাত যৌন কামনা নয়।বরং পরমেশ্বর ভগবান রুপে জগৎবাসীকে গোপীদের মাধ্যমে বিবস্ত্র অবস্থায় জলে স্নান না করার একটি অসাধারন শিক্ষা। কারন জলের দেবতা বরুন দেব। তিনি সর্বদা জলে অবস্থান করেন।আর জলের উদ্ধদিকে রয়েছেন স্বর্গের অন্যান্য দেবতারা,যারা প্রতিনিয়ত আমাদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষন করছেন। তাই জলে হোক বা স্থলে হোক কখনো উল্লঙ্গ অবস্থায় থাকা উচিত নয়,তাতে দেবতাদের চরনে অপরাধ হয়।বৃন্দাবনের গোপীরা যেহেতু কাত্যয়নী ব্রত উৎযাপন কালে উল্লঙ্গ হয়ে স্নান করছিলেন,তাই কৃষ্ণ তাদের বস্ত্র চুরি করে তাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, বিবস্ত্র অবস্থায় তোমাদের জলে স্নান করা দেবতাদের চরনে অপরাধ হয়েছে।তাই কৃষ্ণ তাদের উপদেশ দিয়েছিলেন দুই হাত জোড় করে উদ্ধদিকে প্রণতি নিবেদন করে দেবতাদের কাছ থেকে ক্ষমা ভিক্ষা প্রার্থনা করার জন্য । তাই শ্রীমদ্ভাগবত পুরান শাস্ত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্নানরতা বিবস্ত্রা বৃন্দাবনের গোপীদের উদ্দেশ্য বললেন…. যয়ুম বিবস্ত্রা যদপো দৃঢ়ব্রতা ব্যগাহতৈতত্তদু দেবহেলনম। বদ্ধাঞ্জলিং মূধ্ন্যপনুত্তয়েহংহসং কৃত্বা নমমোহধোবসনং প্রগৃহ্যতাম।। -(শ্রীমদ্ভাগবত পুরান ১০/২২/১৯,ভগবান শ্রীকৃষ্ণ) অনুবাদঃ তোমরা কুমারীগন ব্রতপালন কালে নগ্ন হয়ে স্নান করেছ এবং সেটি নিঃসন্দেহে দেবতাদের প্রতি অপরাধ।তোমাদের পাপের প্রতিকারের জন্য তোমাদের মস্তকের উপরে হাত জোড় করে তোমাদের প্রনাম করা উচিত।তারপর তোমরা তোমাদের অধোবসন ফিরিয়ে নাও। এরপরও আবার কেউ প্রশ্ন করতে পারে, কৃষ্ণ যদি ঈশ্বর হন,তাহলে তার তো ক্ষমতা ছিল স্নানরতা অবস্থায় গোপীদের শিক্ষা না দিয়ে পরে তা তাদের বুঝিয়ে বলার।এর উত্তরে শ্রীমদ্ভাগতের বর্ণনা করা হয়েছে , বৃন্দাবনের গোপীগণ পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণকে পতিরুপে পাওয়ার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহান ভক্ত কাত্যয়নীর দেবীর(দুর্গা) পূজা করেছিলেন। কাত্যায়নী মহামায়ে মহাযোগিন্যধীশ্বরী। নন্দগোপসূতং দেবী পতিং মে কুরুতে নমঃ। ইতি মন্ত্রং জপন্ত্যস্ত্যঃ পূজাং চত্রুুঃ কুমারিকাঃ।। -(শ্রীমদ্ভাগবতঃ ১০/২২/৪) অনুবাদ – হে কাত্যায়নী, মহামায়া, মহাযোগীগণের অধীশ্বরী, আমি আপনার শ্রীচরণকমলে প্রণতি নিবেদন করি। এবং এ প্রার্থনা করি যে,নন্দগোপসূতকে (শ্ৰীকৃষ্ণ)-যেন আমি পতি রূপে ( স্বামী) লাভ করতে পারি, এই বর প্রদান করুন। এই মন্ত্র জপ করতে করতে কুমারী কন্যাগন প্রত্যেকে তাঁর( কাত্যায়নীর দেবী) পূজা করেছিলেন। পরমাত্মা ও পরমপ্রভুরুপে শ্রীকৃষ্ণ সকল জীবের সৎ আশা পূর্ণ করেন। শ্রীমদ্ভাগতের বর্ণনা অনুযায়ী, বৃন্দাবনের গোপীগণ যেহেতু পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণকে তাদের পতিরুপে পাওয়ার জন্য গভীর আশা পোষণ করেছিলেন,তাই শ্রীকৃষ্ণ যমুনায় স্নানরতা অবস্থায় গোপীদের আদর্শ পতিরুপে শাসন করেছিলেন,যাতে করে তারা দেবতাদের কৃপা গ্রহণের পরিবর্তে তাদের অভিশাপের পাত্র না হন। হরে কৃষ্ণ। প্রনাম।
শ্রীবিষ্ণু কে? শ্রীবিষ্ণুর আবির্ভাব সম্পর্কে আলোচনা করুন।

শ্রীবিষ্ণুঃ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে শ্রীবিষ্ণু হলেন স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।তিনি জড় জগতের বিপরীতে চিন্ময় জগত শ্রীবৈকুন্ঠ ধামে নিত্য বিরাজমান।শ্রীবিষ্ণু এবং শ্রীকৃষ্ণ হলেন অভিন্ন এক পরমাত্মা। শ্রীকৃষ্ণ তাঁর অপ্রাকৃত লীলাকে বর্ধন করতে ইচ্ছা করলে চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক গোলক বৃন্দাবনে তিনি শ্রীবিষ্ণু রুপে আবির্ভূত হন।।তাই শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে শ্রীবিষ্ণু বলা হয়েছে, আবার শ্রীবিষ্ণুকে শ্রীকৃষ্ণ বলা হয়েছে। শ্রীবিষ্ণুর আবির্ভাবঃ সনাতনী শাস্ত্র সমন্ধে পূর্ণাঙ্গ ধারনা না থাকার ফলে আমাদের সমাজে কিছু ব্যক্তি মনে করেন শ্রীবিষ্ণু থেকে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। শ্রীকৃষ্ণ হলেন বসুদেব এবং দেবকীর সন্তান।শ্রীবিষ্ণু শ্রীকৃষ্ণরুপে দ্বাপরযুগে অবতীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু আমাদের সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে এ ধরনের ধারনা সঠিক নয়।তার কারন হিসেবে সনাতনী শাস্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে, শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবানরুপে চিন্ময়জগত গোলক বৃন্দাবনে নিত্য বিরাজমান। তাঁর থেকে আবির্ভূত হন বিষ্ণু। যদিও তিনি তার নিত্যধাম গোলক বৃন্দাবনে নিত্য বিরাজমান,তথাপি প্রতিটি ব্রহ্মান্ডে ব্রহ্মার প্রতি কল্পে বা প্রতি দিনে ১ বার অথাৎ মনুষ্যজীবের ১ হাজার চতুর্যুগের মধ্যে একবার অষ্টাবিংশ চতুর্যুগ দ্বাপরের শেষভাগে আবির্ভূত হন। পূর্ন ভগবান কৃষ্ণ ব্রজেন্দ্রকুমার। গোলোকে ব্রজের সহ নিত্য বিহার।। ব্রহ্মার এক দিনে তিহোঁ অবতার। অবতীর্ণ হঞা করেন প্রকট বিহার। সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি চারিযুগ জানি। সেই চারিযুগ দিব্য একযুগ মানি।। একাত্তর চতুর্যুগে এক মন্বন্তর। চৌদ্ধ মন্বন্তর ব্রহ্মার দিবস ভিতর।। ” বৈবস্বত” – নাম এই সপ্তম মন্বন্তর। সাতাইশ চতুর্যুগ তাহার ভিতর।। অষ্টাবিংশ চতুর্যুগে দ্বাপরের শেষে। ব্রজের সহিতে হয় কৃষ্ণের প্রকাশে।। -(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতঃ আদি.৩/৫-১০) অনুবাদঃ ব্রজরাজের পুত্র শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান। তিনি ব্রজধাম সহ তার নিত্য আলয় গোলক বৃন্দাবনে নিত্য লীলাবিলাস করছেন।ব্রহ্মার একদিনে একবার তিনি তার অপ্রাকৃত লীলা প্রকট করার জন্য এই জড়জগতে অবতীর্ণ হন। আমরা জানি যে সত্য, ত্রেতা,দ্বাপর ও কলি এই চারটি যুগ রয়েছে। এই চারটি যুগকে একত্রে এক দিব্যযুগ বলা হয়। একাত্তরটি দিব্যযুগে এক মন্বন্তর হয়। ব্রহ্মার এক দিনে চৌদ্ধটি মন্বন্তর রয়েছে। বর্তমান সপ্তম মন্বন্তরে মনু হচ্ছেন বৈবস্বত।তার আয়ুষ্কালের সাতাশ দিব্যযুগ গত হয়েছে। অষ্টাবিংশতি দিব্য যুগের দ্বাপর যুগের শেষভাগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার নিত্য ব্রজধামের সমস্ত উপকরণসহ এই জড় জগতে আবির্ভূত হন। শ্রীকৃষ্ণ থেকে যে গোলক বৃন্দাবনে শ্রীবিষ্ণুর আবির্ভাব হয়েছে এ বিষয়ে শ্রীমদ্ভাগবত, স্কন্ধ পুরাণ, পদ্ম পুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ সহ অসংখ্য পুরাণ, ব্রহ্মসংহিতা ইত্যাদি সনাতনী শাস্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে। দৃষ্টা শূন্যময়ং বিশ্বমলোকঞ্চ ভয়ঙ্করম্। নির্জন্তু নির্জ্জলং ঘোরং নির্ব্বাতং তমসাবৃতম্ ॥১ বৃক্ষ শৈলসমুদ্রাদিবিহীনং বিকৃতাকৃতম্। নির্মূর্ত্তিকঞ্চ নির্ব্বাতং নিঃশস্যং নিস্তৃণং দ্বিজ ॥২ আলোক্য মনসা সর্ব্বমেক এবাসহায়বান্। স্বেচ্ছয়া স্রষ্টুমারেভে সৃষ্টিং স্বেচ্ছাময়ঃ প্রভুঃ ॥৩ আবির্ব্বভূবঃ সর্ব্বাদৌ পুংসো দক্ষিণপার্শ্বতঃ। ভবকারণরূপাশ্চ মূর্তিমন্তস্ত্রয়ো গুণাঃ ।। ৪ ততো মহানঙ্কার পঞ্চতন্মাত্রমেব চ। রূপরসগন্ধস্পর্শশব্দশ্চৈবতিসংজ্ঞকম্ ॥ ৫ আবির্ব্বভূত তৎপশ্চাৎ স্বয়ং নারায়ণঃ প্রভুঃ। শ্যামো যুবা পীতবাসা বনমালী চতুর্ভুজঃ ॥ ৬ শঙ্খচক্রগদাপদ্মধরঃ স্মেরমুখাম্বুজঃ। রত্নভূষণভূষাটঃ শাঙ্গী কৌস্তুভভূষণঃ ॥ ৭ শ্রীবৎসবক্ষাঃ শ্রীবাসঃ শ্রীনিধিঃ শ্রীবিভাবনঃ। শারদেন্দুপ্রভামুষ্টমুখেন্দুঃ সুমনোহরঃ ॥ ৮ কামদেব প্রভা মুষ্টরূপলাবণ্যসুন্দরঃ। শ্রীকৃষ্ণপুরতঃ স্থিত্বা তুষ্টাব তং পুটাঞ্জলিঃ ॥ ৯ -(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণঃ ব্রহ্মখন্ড৩/১-৯) অনুবাদঃ হে দ্বিজবর। এরপর সেই স্বেচ্ছাময় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সমগ্র বিশ্বকে প্রাণিশূন্য, জলহীন, নির্ব্বাত ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন, বৃক্ষ, শৈল, সমূদ্রাদিবিহীন শস্য-তৃণ বিবর্জিত ভয়ঙ্কর শূণ্যময় অবলোকন করে মানসিক আলোচনা পূর্ব্বক স্বেচ্ছাক্রমে সৃষ্টি করতে আরম্ভ করলেন। তৎক্ষণাৎ তাঁর দক্ষিণপাশ্ব থেকে সৃষ্টির কারণরূপ মূর্ত্তিমান গুণত্রয় সর্ব্বাগ্রে আবির্ভূত হল। পরে সেই গুণত্রয় হতে মহান্ (মহৎ)ও মহান্ হতে অহঙ্কার এবং অহঙ্কার হতে রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ও শব্দ এই পঞ্চতন্মাত্রের উৎপত্তি হয়। তারপর পুনরায় তাঁর(শ্রীকৃষ্ণ)থেকে শ্যামকলেবর, যুব’, পীতবসন ও বনমাল্যধারী চতুর্ভুজ প্রভু স্বয়ং নারায়ণ আবির্ভূত হন। তাঁর মুখকমলে হাস্য এবং হস্তচতুষ্টয়ে শঙ্খ, চক্র, গদা এবং পদ্ম বিরাজ করছে। তিনি রত্নভূষণ ও হার কৌস্তভমণিদ্বারা বিভূষিত এবং শৃঙ্গময় চাপবিশিষ্ট। তাঁর মনোহর মুখকান্তি শরচ্চন্দসদৃশ প্রভাবিশিষ্ট এবং বক্ষঃস্থল শ্রীবৎসচিহ্নে সুশোভিত। সেই শ্রীনিবাসের সুন্দর রূপলাবণ্য কামদেবের তুল্য। তখন তিনি শ্রীকৃষ্ণের সম্মুখীন হইয়া কৃতাঞ্জলিপুটে স্তব করতে আরম্ভ করলেন।” শ্রীশুক উবাচ ইত্যুদ্ধবেনাত্যনুরক্তচেতসা পৃষ্টো জগৎক্রীড়নকঃ স্বশক্তিভিঃ।। গৃহীতমূর্তিত্রয় ঈশ্বরেশ্বরো জগাদ সপ্রেমমনোহরস্মিতঃ ।। ৭ – (শ্রীমদ্ভাগবতঃ১১/২৯/৭) অনুবাদঃ শ্রীশুকদেব বললেন- হে পরীক্ষিৎ! ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মাদি ঈশ্বরদেরও ঈশ্বর। তিনিই সত্ত্ব, রজ আদি গুণসকল দ্বারা ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং রুদ্রের রূপ ধারণ করে জগতের সৃষ্টি স্থিতি আদি ক্রীড়ায় যুক্ত থাকেন। যখন উদ্ধব সানুরাগ চিত্তে তাঁকে এই প্রশ্ন করলেন তখন তিনি অধরে মৃদুমন্দ হাস্য ধারণ করে বলতে শুরু করলেন ।। অহং সর্ব্বস্য প্রভবো মত্তো দেবাঃ সবাসবাঃ। আদিত্যা বসবো রুদ্রাঃ সাধ্যা বিশ্বে মরুদগণাঃ।৬২ ব্রহ্মা রুদ্রশ বিষ্ণুশ্চ সনকাদ্যা মহর্ষয়ঃ। ইন্দ্রিয়াণি মনো বুদ্ধিস্তথা সত্ত্বং রজস্তময়ঃ।। ৬৩ কামঃ ক্রোধ, লোভশ্চ মোহোহঙ্কার এব চ। এতেৎ সর্ব্বোমশেষেণ মতো গোপ্যঃ প্রবর্ত্ততে।। ৬৪ -(শ্রীস্কন্দপুরাণ, প্রভাসখন্ড-দ্বারকামাহাত্ম্যম, ১২।৬২-৬৪) অনুবাদঃ নন্দনন্দন শ্রীকৃষ্ণ গোপীদের বললেন, “আমি সকলের প্রভু; আমার থেকেই সকলের উৎপত্তি। হে গোপিকাগণ! ইন্দ্র, আদিত্য, বসু, রুদ্রগণ, সাধ্যা, বিশ্বদেবগণ, মরুদগণ, ব্রহ্মা, রুদ্র (শিব), #বিষ্ণু প্রভৃতি দেবতা ও সনকাদি মহর্ষিগণ এবং ইন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধি, সত্ত্ব, রজঃ, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, অহঙ্কার- এ সমস্তই আমার থেকে প্রবর্তিত হয়।” শ্রীবৃহস্পতি উবাচ ঈক্ষাঞ্চক্রে যদা কৃষ্ণো মায়াপুরুষক্বপধ্বক্। ব্রহ্মা বিষ্ণুঃ শিবশ্চাপি রজঃসত্ত্বতমোগুণৈঃ।।২১ পুরুষান্ত্রয় উত্তস্থরধিকারাৎস্তদাদিশৎ। উৎপত্তৌ পালনে চৈব সংহারে প্রক্রমেণ তাম্।। ২২ -(স্কন্ধপুরাণ, বিষ্ণু খন্ড, শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম্; ৩য় অধ্যায়; শ্লোক ২১-২২) অনুবাদঃ শ্রীবৃহস্পতি বলিলেন – মায়াপুরুষরূপী কৃষ্ণ যখন দৃষ্টিনিক্ষেপ করিলেন,তৎকালে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব সমুদ্ভূত হন। কৃষ্ণ সেই পুরুষত্রয়কে যথাক্রমে রজঃ সত্ত্ব ও তমোগুণাশ্রিত দেখিয়া তাঁহাদিগের স্ব স্ব অধিকার নির্দেশ করেন। তিনি সৃষ্টি, স্থিতি ও সংহার যথাক্রমে এই কার্য্যত্রয়ে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবকে নিয়োজিত করিলেন। ব্রহ্মবিষ্ণুমহেশাদ্যাঃ সর্ব্বদৈবতসঞ্চয়াঃ। যস্যাংশভূতা দেবস্য ত্বয়ি তস্মিন্মনোহস্তু মে।। – (পদ্মপুরাণ, ক্রিয়াযোগসার, ১৭।৩০) অনুবাদঃ ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্রাদি সমস্ত দেবতারা যাঁর অংশভূত, সেই তোমাতে (শ্রীকৃষ্ণতে) আমার মন নিবিষ্ট হউক। প্রহ্লাদ উবাচ- নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণহিতায় চ। জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ ।।৬৫ ৷৷৷ ব্রহ্মত্বে সৃজতে বিশ্বং স্থিতৌ পালয়তে পুনঃ। রুদ্ররূপায় কল্পান্তে নমস্তুভ্যং ত্রিমূর্তয়ে।। ৬৬ ৷৷ -(বিষ্ণুপুরাণ, ১ম অংশ, অধ্যায়-১৯; শ্লোক-৬৫-৬৬) অনুবাদঃ শ্রীপ্রহ্লাদ বলতে লাগলেন, গো, ব্রাহ্মণ হিতকারী ব্রহ্মণ্যদেব ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নমস্কার। জগৎহিতকারী শ্রীগোবিন্দকে বারবার নমস্কার। আপনি ব্রহ্মারূপে বিশ্বরচনা করেন, আবার তার স্থিতি হলে বিষ্ণুরূপে পালন করেন এবং অন্তকালে রুদ্ররূপে সংহার করেন এরূপ ত্রিমূর্তিধারী আপনাকে নমস্কার।। যস্যৈকনিশ্বাসিতকালমথাবলম্ব্য জীবন্তি লোমবিলোজা জগাদগুনাথাঃ। বিষ্ণুর্মহান্ স ইহ যস্য কলাবিশেষো। গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।। -(ব্রহ্মসংহিতাঃ৫/৪৮) অনুবাদঃ মহাবিষ্ণু, যাঁর মধ্যে অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ড প্রবেশ করছে এবং কেবল মাত্র যাঁর শ্বাস প্রশ্বাসের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেগুলি আবার তাঁর মধ্য থেকে প্রকাশিত হচ্ছে, তিনিও হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণের অংশ প্রকাশ। এষ বোহভিহিতো মার্গো গয়া বৈ মুনিসত্তমাঃ। তং দৃষ্টা সর্ব্বশো দেবং দৃষ্টাঃ স্যুঃ সুরসত্তমাঃ ॥৫১৷৷ মহাবরাহং তং দেবং সর্ব্বলোকপিতামহম্। অহং চৈব নমস্যামি নিত্যমেব জগৎপতিম্ ।।৫২।। তত্র চ ত্রিতয়ং দৃষ্টং ভবিষ্যতি ন সংশয়ঃ । সমস্তা হি বয়ং দেবান্তস্য দেহে বসামহে ॥৫৩ -(মহাভারতঃ অনুশাসন পর্ব, অধ্যায়-১২৫; শ্লোক- ৫১-৫৩) অনুবাদঃ মুনিশ্রেষ্ঠগণ! এই আমি আপনাদের নিকটে উৎকৃষ্ট পথ বলিলাম। সেই বাসুদেবকে সর্বপ্রকারে দর্শন করিলে সমস্ত দেবশ্রেষ্ঠগণকেই দেখা হয়।মহাবরাহরূপধারী, সমস্ত লোকের পিতামহ ও জগদীশ্বর সেই বাসুদেবকে আমিও সর্বদাই নমস্কার করি ।সেই বাসুদেবকে দর্শন করিলে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব এই তিনজনকেই দেখা হইবে, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। কারণ, আমরা সমস্ত দেবতারাই তাঁহার শরীরে বাস করিয়া থাকি। হরে কৃষ্ণ। প্রনাম স্বধর্মম: Connect to the inner self.
বেদে কি লক্ষ্মীপতি বিষ্ণুর কথা বর্ণনা করা হয়েছে?

বেদে বর্ণনায় লক্ষ্মীপতি শ্রীবিষ্ণুঃ শাস্ত্রজ্ঞানহীন কিছু ব্যক্তি আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে, অষ্টাদশ পুরান,রামায়ন, মহাভারত আদি শাস্ত্রে বর্ণিত লক্ষ্মীপতি চতুর্ভুজ নারায়ন নাকি বেদে উক্ত নারায়ন বা বিষ্ণু নন।তাদের মতে নারায়ন বা বিষ্ণু নাকি ঈশ্বরের গুনবাচক নাম মাত্র। অথচ আমরা ঋগ্বেদের নারায়ন সুক্ত এবং বিষ্ণু সুক্তে দেখতে পায় শ্রীবিষ্ণুর মহিমা বর্ণনা করার পর একই বেদের শ্রীসুক্তে লক্ষ্মী দেবীকে বিষ্ণুপত্নি বলা হয়েছে। এভাবেই বেদ আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে যে,বেদে বর্ণিত লক্ষ্মীপতি শ্রীবিষ্ণু হলেন অষ্টাদশ পুরান, রামায়ন, মহাভারত,গীতা আদি শাস্ত্রে বর্নিত চতুর্ভুজ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবিষ্ণু।নিম্নে সে বিষয়ে আলোচনা করা হল… প্রতদ্বিষ্ণুঃ স্তবতে বীর্যেণ মৃগো ন ভীমঃ কুচরো গিরিষ্ঠাঃ।যস্যোরুষু ত্রিষু বিক্রমণেষ্বধিক্ষিয়ন্তি ভুবনানি বিশ্বা।। –-ঋগ্বেদঃবিষ্ণুসূক্ত- ১/১৫৪/৩ অনুবাদঃ যেহেতু বিষ্ণুর তিন পদক্ষেপে সমস্তভুবন অবস্থান করে, অতএব ভয়ঙ্কর, হিংস্র, গিরিশায়ী অরণ্য জন্তুর ন্যায় বিষ্ণুর বিক্রম লোকে প্রশংসা করে।( ভগবান বিষ্ণুর বামন অবতারের কথা বর্নিত হয়েছে) ওঁ তদবিষ্ণো পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ। দিবীব চক্ষুরাততম।। –(ঋগ্বেদঃবিষ্ণুসূক্ত ১/১৫৪/১১) অনুবাদঃ দুঃলোকে অবস্থিত বিষ্ণুর পরমপদ (চরনকমল)দেবতাগন সর্বক্ষণ ধ্যান বা দর্শন (পশ্যন্তি) করেন। ওঁ তদ্বিপ্রাসো বিপন্যবো জাগৃবং সঃ সমিন্ধতে। বিষ্ণোর্যৎ পরমং পদম।। –ঋগ্বেদঃবিষ্ণুসূক্ত- ১/ ১৫৪/১২ ঋগ্বেদের শ্রীসুক্তে লক্ষ্মীদেবীর মহিমা বর্ণনা করে লক্ষ্মীদেবীকে বিষ্ণুপত্মি বলা হয়েছে… বিষ্ণুপত্নীং ক্ষমাং দেবীং মাধবীং মাধবপ্রিয়াম্। লক্ষ্মীং প্রিয়সখীং দেবীং নমাম্যচ্যুতবল্লভাম্।। মহালক্ষ্মীং চ বিদ্মহে বিষ্ণুপত্নী চ ধীমহি। তন্নো লক্ষ্মীঃ প্রচোদয়াৎ।। -(ঋগ্বেদঃসংহিতাঃ আশ্বলায়ন শাখা ৫. ৮৯. ৮-৯) অনুবাদঃ হে ক্ষমারূপিনী, মহাদেবী, মাধবী,মাধবপ্রিয়া লক্ষ্মী! তুমি অচ্যুত নারায়ণের প্রিয়সখী অচ্যুতবল্লভা, তোমায় নমস্কার করি।আমরা মহালক্ষ্মীকে জানতে, বিষ্ণুপত্নীকে ধ্যান করি, সেই মহালক্ষ্মী যেন আমাদের শুভ কার্যে প্রেরণ করেন। হরে কৃষ্ণ। প্রনাম।
বেদে কি লক্ষ্মী দেবীর কথা বর্ননা করা হয়েছে?

বেদের বর্ণনায় লক্ষ্মী দেবীঃ শাস্ত্রজ্ঞানহীন কিছু ব্যক্তি বেদ অধ্যয়ন না করে জনসমাজে প্রচার করছে যে,বেদে নাকি লক্ষ্মী দেবীর কোন কথা লেখা নাই।আবার আর এক ধরনের শাস্ত্রজ্ঞানহীন অন্ধ আছে, যারা প্রচার করছে যে,বেদে বর্ণিত লক্ষ্মী নাকি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবিষ্ণুর নিত্য পত্নি নন,লক্ষ্মী ঈশ্বরের একটি নাম মাত্র। তাই তারা অষ্টাদশ পুরান, মহাভারত,রামায়ন উক্ত লক্ষ্মী দেবীকে মানবে না।অথচ আমরা বেদের বহু বহু মন্ত্রে লক্ষ্মী দেবীর পরিচয় পায়, সেই সাথে লক্ষ্মী যে বিষ্ণুর নিত্য পত্নি তারও উল্লেখ পায়।।নিম্নে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হল…. ঋগ্বেদের আশ্বলায়ন শাখার শ্রীসুক্তে লক্ষ্মীদেবীর মহিমা বর্ণনা করে লক্ষ্মীদেবীকে বিষ্ণুপত্মি বলা হয়েছে… ওঁ হিরণ্যবর্ণাং হরিণীং সুবর্ণরজতস্রজাম্ । চন্দ্রাং হিরণ্ময়ীং লক্ষ্মীং জাতবেদো ম আবহ ॥ তাং ম আবহ জাতবেদো লক্ষ্মীমনপগামিনীম্ । যস্যাং হিরণ্যং বিন্দেয়ং গামশ্বং পুরুষানহম্ ॥ অশ্বপূর্বাং রথমধ্যাং হস্তিনাদপ্রবোধিনীম্ । শ্রিয়ং দেবীমুপহ্বয়ে শ্রীর্মাদেবীর্জুষতাম্ ॥ কাং সোস্মিতাং হিরণ্যপ্রাকারামার্দ্রাং জ্বলন্তীং তৃপ্তাং তর্পয়ন্তীম্ । পদ্মে স্থিতাং পদ্মবর্ণাং তামিহোপহ্বয়ে শ্রিয়ম্॥ চন্দ্রাং প্রভাসাং যশসা জ্বলন্তীং শ্রিয়ং লোকে দেবজুষ্টামুদারাম্ । তাং পদ্মিনীমীং শরণমহং প্রপদ্যেঽলক্ষ্মীর্মে নশ্যতাং ত্বাং বৃণোমি॥ ঋগ্বেদ সংহিতাঃ আশ্বলায়ন শাখা- মন্ডল ৫.সুক্ত ৮৮.মন্ত্র ১-৫ অনুবাদঃ হে জাতবেদ অগ্নিদেব! সুবর্ণবর্ণা, হরিণীর মত চঞ্চল, স্বর্ণ এবং রোপ্যের বিবিধ মালায় বিভূষিতা, পূর্ণিমার চন্দ্রের মত প্রকাশমানা, হিরণ্ময়ী লক্ষ্মীকে আমার জন্য আহ্বান করুন। হে জাতবেদ অগ্নিদেব! নিম্নগমনরোধকারী সেই লক্ষ্মীকে আমার জন্য আহ্বান করুন। যিনি আহূতা হলে আমি স্বর্ণ, গো, অশ্ব, পুত্র মিত্রাদি প্রাপ্ত হব। অশ্ব যাঁর পুরােভাগে, রথাসীনা হস্তীর বৃংহণ নাদ দ্বারা যিনি প্রকৃষ্টরূপে জ্ঞাপিকা; সেই শ্রীদেবীকে আমার নিকট আহ্বান করুন, তিনিই আমাকে কৃপা অনুগ্রহ করবেন। ব্রহ্মরূপা, স্মিতহাস্যকারিনী, সুবর্ণাদির দ্বারা পরিবেশিষ্টা, আর্দ্রা, প্ৰকাশমানা, প্রসন্নবদনা, ভক্তের মনােবাঞ্ছাপূর্ণকারিণী, পদ্মাসীনা, পদ্মবর্ণা সেই শ্রীদেবীকে আহ্বান করি। চন্দ্রের ন্যায় প্রভাসম প্রকাশমানা, নিজ যশে প্রজ্জ্বলিত, জগতের শ্রীস্বরূপা, ইন্দ্রাদিদেবসেবিতা, পদ্মিনীর শরণ গ্রহণ করছি। হে শ্রীদেবি! আমার দুর্ভাগ্যসূচক অলক্ষ্মী বিনষ্ট হােক, আমি তোমার শরণ নিলাম। বিষ্ণুপত্নীং ক্ষমাং দেবীং মাধবীং মাধবপ্রিয়াম্। লক্ষ্মীং প্রিয়সখীং দেবীং নমাম্যচ্যুতবল্লভাম্।। মহালক্ষ্মীং চ বিদ্মহে বিষ্ণুপত্নী চ ধীমহি। তন্নো লক্ষ্মীঃ প্রচোদয়াৎ।। -(ঋগ্বেদঃসংহিতাঃ আশ্বলায়ন শাখা ৫. ৮৯. ৮-৯) অনুবাদঃ হে ক্ষমারূপিনী, মহাদেবী, মাধবী,মাধবপ্রিয়া লক্ষ্মী! তুমি অচ্যুত নারায়ণের প্রিয়সখী অচ্যুতবল্লভা, তোমায় নমস্কার করি।আমরা মহালক্ষ্মীকে জানতে বিষ্ণুপত্নীকে ধ্যান করি, সেই মহালক্ষ্মী যেন আমাদের শুভ কার্যে প্রেরণ করেন। হরে কৃষ্ণ।জয় লক্ষ্মী নারায়ন। স্বধর্মম্ : Connect to the inner self.
লক্ষ্মীদেবী কে? লক্ষ্মী দেবীর আবির্ভাব সম্পর্কে আলোচনা করুন।

লক্ষ্মী দেবীঃ সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে, লক্ষ্মীদেবী হলেন পরমাত্মা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রকাশ ভগবান শ্রীবিষ্ণুর (নারায়ন) নিত্য পত্মী।এই লক্ষ্মী শ্রীমতি রাধারাণীর বাম অংশ থেকে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ্ঞায় নারায়নের প্রিয়তমা পত্নি রুপে বৈকুন্ঠে মহালক্ষ্মীরুপে ভগবান বিষ্ণুর প্রেমময়ী সেবায় সর্বদা যুক্ত থাকেন।পুনরায় সে মহালক্ষ্মী জড় জগতের মহা মনোরম স্বর্গলোকে (ইন্দ্রলোক)স্বর্গলক্ষ্মী, মত্যলোকের (পৃথিবী) গৃহে গৃহে গৃহলক্ষ্মী রুপে পূজিত হন। যেখানে যেখানে নারায়ন (বিষ্ণু)থাকেন সেখানে সেখানে সর্বদা লক্ষ্মীদেবী অবস্থিত থাকেন।যেখানে নারায়ন নেই সেখানে কখনো লক্ষ্মীদেবী থাকতে পারে না।নারায়ন ভিন্ন লক্ষ্মীদেবীকে কখনো আলাদাভাবে পূজা করা উচিত নয়।তাই প্রত্যোক সনাতনীর পরম কর্তব্য প্রতিদিন গৃহে শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ অথবা শ্রীশ্রী লক্ষ্মী নারায়নের যুগপৎ চিত্রপটে পুষ্প,চন্দন, তুলসী,নৈবেদ্য,ধূপ,দীপ ইত্যাদি সহকারে পূজা করা।অথবা সদাচারী ব্রাহ্মণ দ্বারা যুগপৎ লক্ষ্মী নারায়নের চিত্রপটে ঘট স্থাপন পূর্বক পূজা করা।তুলসী পত্র শ্রীবিষ্ণুর চরণ এবং নৈবেদ্যে বা ভোগসামগ্রীতে নিবেদন করা যাবে। কিন্তু কখনো লক্ষ্মীদেবীর চরণে প্রদান করা যাবে না।নিম্নে সনাতনী বিভিন্ন শাস্ত্রের আলোকে নারায়ন পত্মী লক্ষ্মীদেবীর আবির্ভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হল। রাধাবামাংশভাগেন মহালক্ষ্মীবর্ভূব সা। চতুর্ভূজস্য সা পত্নী দেবী বৈকুন্ঠবাসিনী। তদংশো রাজলক্ষ্মীশ্চ রাজসম্পৎপ্রদায়িনী। তদংশো মত্ত্যলক্ষ্মীশ্চ গৃহহিণাঞ্চ গৃহে গৃহে।। -(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণঃ প্রকৃতিখন্ড,৪৮/৪৪-৪৫) অনুবাদঃ ত্রিলোক প্রসিদ্ধ মহালক্ষ্মী দেবী শ্রীরাধার বাম ভাগ হতে উৎপন্ন হন এবং তিনি চতুর্ভুজ বিষ্ণুর পত্নী।তিনি সর্বদা বৈকুন্ঠে অবস্থান করেন(বৈকুন্ঠবাসিনী)। মহা লক্ষ্মীর অংশস্বরূপিনী রাজলক্ষ্মী রাজগণের সম্পদ বৃদ্ধি করেন। রাজলক্ষ্মীর অংশ স্বরুপিনী মর্ত্যলক্ষ্মী। তিনি মনুষ্যের গৃহে বাস করেন। কদাচিৎ তয়া সার্দ্ধ স্থুতস্য মুনিসত্তম কৃষ্ণস্য। বামভাগাৎ জাতে নারায়ণঃ স্বয়ম্।। ১২।। রাধিকায়াশ্চ বামাংগান্মহালক্ষ্মীভূব হ। ততঃ কৃষ্ণে মহালক্ষ্মীং দত্ত্বা নারায়ণায় চ।।১৩।। বৈকুন্ঠ স্থাপিয়ামাস শশ্বতপালনকর্মণি।।১৪।। -( নারদীয় পুরাণঃ পূর্বভাগ ৩/৮৩/১২-১৪) অনুবাদঃ হে মুনিসত্তম,কোন এক সময় শ্রীমতি রাধারাণীর সাথে পরমাত্মা কৃষ্ণ অবস্থান কালে তার বামঙ্গ থেকে নারায়ণের ( বিষ্ণু) জাত হয়েছিল।আর শ্রীমতি রাধিকার বামাঙ্গ থেকে মহা লক্ষ্মীর আবির্ভাব হয়।শ্রীকৃষ্ণ তখন মহালক্ষীকে নারায়ণের নিকট প্রদান করলেন। এবং বৈকুন্ঠে স্থিতি প্রদান করে নিত্য পালনকার্যে নিযুক্ত করলেন। রাধাবামাংশসম্ভূতা মহালক্ষ্মীঃ প্রকীর্তা। ঐশ্বর্য্যাধিষ্ঠাত্রী দেবীশ্বরস্যেব হি নারদ।।৬০।। তদংশো সিন্ধুকন্যা চ ক্ষীরোধমথনোদ্ভবাঃ।।৬১।। তদংশো স্বর্গলক্ষ্মীশ্চ শত্রুাদীনাং গৃহে গৃহে। বয়ং দেবী মহালক্ষ্মীঃ পত্নী বৈকুন্ঠশায়িনঃ।।৬২ –(নারদ পঞ্চরাত্রঃ ২ য় রাত্র,অধ্যায় ৩,শ্লোক ৬০-৬২) অনুরোধঃ রাধার বামাংশ সম্ভুতা নারী মহালক্ষ্মী নাম গ্রহণ করেন। হে নারদ! তিনি ঈশ্বরীদেবী রাধিকার ন্যায় ঐশ্বর্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হন। তাঁর অংশ সম্ভুতা কন্যা ক্ষীরোদ সাগর মন্থন থেকে জাত লক্ষ্মী নাম গ্রহণ পূর্বক ক্ষীরোদশায়ী বিষ্ণুর পত্নী হয়েছেন। তার অংশসম্ভূতা স্বর্গলক্ষ্মী হয়েছেন,তিনি শত্রু আদির (অসুরদের গৃহে অলক্ষ্মীরুপে) গৃহে গৃহে অবস্থান করেন ।এবং স্বয়ং মহালক্ষ্মী নাম গ্রহণ পূর্বক বৈকুণ্ঠশায়ী নারায়ণের পত্নী হয়েছেন। দেবী কৃষ্ণময়ী প্রোক্তা রাধিকা পরদেবতা। সর্বলক্ষ্মীস্বরুপা সা কৃষ্ণহ্লোদস্বরুপিনী।। -(পদ্মপুরাণঃ পাতালখন্ড ৫০/৫৩,গৌতমীয় তন্ত্র) অনুবাদঃ দেবী রাধিকা কৃষ্ণময়ী।তাই তিনি পরদেবতা নামে কথিতা হন।তিনি সর্বলক্ষ্মীরুপিনী এবং কৃষ্ণের হ্লাদিনী স্বরুপ। হরে কৃষ্ণ।প্রনাম। প্রচারে- স্বধর্মম্।
সরস্বতী দেবী কে? সরস্বতীর দেবীর আবির্ভাব সম্পর্কে আলোচনা করুন।

সরস্বতী দেবীঃ সরস্বতী দেবী হলেন বিষ্ণুপত্নি।তাঁকে বিদ্যা ও বুদ্ধির দেবী বলা হয়।তিনি চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবনে পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণ থেকে আবির্ভূত হয়েছিলেন।তাঁর চারটি হস্ত।চারহস্তের মধ্যে দুই হস্তে মাতা সরস্বতী বীণাবাদনে রত,আর এক হস্তে পুস্তক শোভমান এবং অন্য হস্তে জপমালা। মাতা সরস্বতীর আবির্ভাবঃ বেদ, পুরাণ,মহাভারত, রামায়ন সহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে অম্বি বা মাতা,নদী,এবং দেবীরুপে মাতা সরস্বতীর মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে। শ্রীমদ্ভাগবতে সরস্বতী মাতাকে প্রণতি নিবেদন করে বক্তা শ্রীল সূত গৌস্বামী শৌনকাদি ঋষিদের প্রশ্নের উত্তররুপ শ্রীমদ্ভাগবতের জ্ঞান প্রদান শুরু করেন… নারায়ণং নমস্কৃত্য নরং চৈব নরোত্তমম্। দেবীং সরস্বতীং ব্যাসং ততো জয়মুদীরয়েৎ ।। ৪ ৷৷ -(শ্রীমদ্ভাগবত ১/২/৪) অনুবাদঃ সংসার-বিজয়ী গ্রন্থ শ্রীমদ্ভাগবত উচ্চারণ করার পূর্বে পরমেশ্বর ভগবান নারায়ণ, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ নর-নারায়ণ ঋষি নামক ভগবৎ-অবতার, বিদ্যাদেবী সরস্বতী এবং ব্যাসদেবকে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে বিদ্যা ও বুদ্ধির অধিষ্ঠাত্রী দেবী মাতা সরস্বতীর চিন্ময় জগত এবং জড় জগত এই দুই স্থানে আবির্ভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। চিন্ময় জগতে মাতা সরস্বতী পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণ থেকে আবির্ভূত হন।এবং জড় জগতে নদীরুপে, ব্রহ্মার পত্মিরুপে (প্রকৃত সরস্বতীর অংশ প্রকাশ)আবির্ভূত হয়েছিলেন ।নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হল… ১/চিন্ময় জগতে মাতা সরস্বতীর আবির্ভাবঃ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ শাস্ত্র অনুসারে চিন্ময় জগত গোলক বৃন্দাবন ধামে পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকে মাতা সরস্বতী আবির্ভূত হন। আবির্ব্বভূব তৎপশ্চান্মুখতঃ পরমাত্মনঃ। একা দেবী শুক্লবর্ণা বাণী পুস্তকধারিণী ॥ ৫৩ কোটিপূর্ণেন্দুশোভাঢ্যা শরৎপঞ্চজলোচনা। বহ্নিশুদ্ধাংশুকাধানা রত্বভূষণভূষিতা ॥ ৫৪ সম্মিতা সুদতী শ্যামা সুন্দরীনাঞ্চ সুন্দরী। স্রষ্ট্রী শ্রুতীনাং শাস্ত্রাণাং বিদুষাম জননী পরা ॥৫০ বাগধিষ্ঠাতৃদেবী সা কবীনামিষ্টদেবতা। শুদ্ধসত্ত্বস্বরূপা চ শান্তরূপা সরস্বতী ॥ ৫৬ গোবিন্দপুরতঃ স্থিত্বা জগৌ প্রথমতঃ সুখম। তন্নামগুণকীর্ত্তিশ্চ বীণয়া সা ননর্ত্ত চ॥ ৫৭ -(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণঃ ব্রহ্মখন্ড,৩/৫৩-৫৮) অনুবাদঃ তারপর পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণের মুখ হতে বীণাপুস্তকধারিণী শুক্লবর্ণা এক দেবী অবির্ভূত হন। তাঁর সৌন্দর্য্য কোটিপূর্ণচন্দ্রের সদৃশ, এবং চক্ষুদ্বয় শরৎকালীন পদ্মপুষ্প তুল্য। তিনি রত্বভূষণে ভূষিতা। তাঁর পরিধান অগ্নির ন্যায় বিশুদ্ধ, তিনি সুন্দরীদিগের মধ্যে অতিশয় সুন্দরী ও ঈষৎ হাস্য- বিশিষ্টা। তাঁর দন্তপক্তি অতি সুন্দর এবং অঙ্গসকল গ্রীষ্মে সুখশীতল ও শীতসময়ে সুখোঞ্চ। তিনি শ্রুতি(বেদ) ও অন্যান্য শাস্ত্র এবং জ্ঞানীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। সেই শান্তরূপা শুদ্ধসত্ত্ব-স্বরূপা জগদ্ধাত্রী দেবতাই কবিদিগের ইষ্টদেবতা এবং যিনি সরস্বতী নামে প্রসিদ্ধ। সেই সরস্বতী দেবী প্রথমেই গোবিন্দের(শ্রীকৃষ্ণ) সম্মুখবর্তিনী হয়ে বীণাবাদনপূর্ব্বক সুখে তাঁর নাম, গুণ ও কীর্তি গান করতে লাগলেন। হরে কৃষ্ণ।জয় মা স্বরস্বতী স্বধর্মম্ : Connect to the inner self.
বেদে কি সরস্বতী দেবীর কথা বর্ণনা করা হয়েছে?

বেদ শাস্ত্রে সরস্বতী দেবীঃ আমাদের সমাজে কিছু শাস্ত্রজ্ঞানহীন মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে যে, পুরান শাস্ত্রে সরস্বতী দেবীর বর্ননা আছে,কিন্তু বেদে নাকি সরস্বতী দেবীর কোন কথা লেখা নাই।তাই তারা সরস্বতী দেবীকে পূজা করে না,তাকে মান্য করে না।আবার আর এক দল মনে করেন,বেদে সরস্বতীর কথা আছে, তবে তিনি ব্যক্তি নন,সেটি শুধু ঈশ্বরের গুনবাচক নাম মাত্র।তাদের কথা গুলি শুনলে আমাদের হাসি পায়।এভাবে তারা সনাতনী সমাজে সনাতনী শাস্ত্রোক্ত দেবদেবীদের নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে,যা একপ্রকার আসুরিক কার্যকলাপ,যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। অষ্টাদশ পুরাণ শাস্ত্রে শুধু সরস্বতী দেবীব নাম উল্লেখ আছে এমনটি নয়,বরং রামায়ণ, মহাভারত, পঞ্চরাত্র ইত্যাদি সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে বিস্তৃত অথবা সংক্ষিপ্ত পরিসরে সরস্বতী দেবীর কথা আলোচনা করা হয়েছে। সনাতনী অন্যান্য শাস্ত্রের মতো বেদ শাস্ত্রে সরস্বতী দেবীকে তিনভাবে বন্দনা করা হয়েছে। যথা-১/অম্বি বা মাতারুপে ২/ নদীরুপে ৩/ দেবীরুপে। ১/অম্বি বা মাতারুপেঃ বেদমন্ত্রে সরস্বতীকে দেবীকে অম্বি বা মা বলা হয়েছে। মা শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ শব্দে ব্যবহৃত হয়,আর বাবা শব্দটি পুঃলিঙ্গ শব্দে ব্যবহৃত হয়। সুতারাং মা মানে তিনি একজন ব্যক্তি,তিনি কোন দেহশূন্য কোন কিছু নন। ২/ নদীরুপেঃ এছাড়াও বেদে নদীরুপেও সরস্বতী দেবীকে প্রনাম জানানো হয়েছে।কেননা ভগবান বিষ্ণুর নিত্য পত্নী সরস্বতী জড় জগতকে পবিত্র করার জন্য নদীরুপে আবির্ভুত হয়েছিলেন।এ পৃথিবীতে সরস্বতী নদী সত্য,ত্রেতা এবং দ্বাপরযুগে বিদ্যমান ছিলেন।কিন্তু এ নদী এখন দৃশ্যমান নয়। ৩/ দেবীরুপেঃ দেব মানে পুরুষলিঙ্গ শব্দ বাচক,আর দেবী মানে স্ত্রীলিঙ্গ শব্দবাচক।আর দেব এবং দেবী উভয়কে দেবতা বলা হয়।সুতারাং দেবী মানে একজন ব্যক্তি,একজন স্ত্রীজাতি,একজন দেবতা।সরস্বতী দেবীরুপে চিন্ময় জগতের বৈকুন্ঠ ধামে পরমেশ্বর ভগবান নারায়নের ঐকান্তিক সেবায় তিনি সর্বদা যুক্ত। নিমোক্ত ঋগ্বেদ মন্ত্রে সরস্বতীকে মাতৃজাতিরুপে, দেবীরুপে অথাৎ সরস্বতী নামে একজন ব্যক্তিকে প্রনাম জানানো হয়েছে- অম্বিতমে নদীতমে দেবীতমে সরস্বতী। অপ্রশস্তা ইব স্মাসি প্রশস্তিমল্ব নস্কৃধি॥ -(ঋগ্বেদ ২/৪১/১৬) অনুবাদঃ মাতৃগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, নদীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, দেবীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হে সরস্বতী! আমরা অসমৃদ্ধের ন্যায় রয়েছি, আমাদের সমৃদ্ধশালী করুন। উপরোক্ত বেদ বা শ্রুতি প্রমান ছাড়াও আরো কিছু কিছু ঋগ্বেদের মন্ত্রে বিদ্যা এবং বুদ্ধির দেবীরুপে সরস্বতী দেবীর মহিমা গুনকীর্তন করা হয়েছে । বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যায় অধ্যায়নরত প্রতিটি সনাতন বিদ্যার্থীরা এই সরস্বতী পূজা সাড়ম্বরে করে থাকেন। বৈদিক ঋষিরা বিভিন্ন ধ্যান মন্ত্রে তার বন্দনা করেছেন।বিভিন্ন যজ্ঞ অনুষ্ঠানে দেবী সরস্বতীর নাম উল্লেখ পূর্বক আহুতি প্রদান করেছেন। চোদয়িত্রী সূনৃতানাং চেতন্তী সুমতীনাং। যজ্ঞং দধে সরস্বতী॥ মহো অর্নঃ সরস্বতী প্রচেতয়তি কেতুনা। ধিয়ো বিশ্বা বিরাজতি॥ – (ঋগ্বেদ১/৩/১১-১২) অনুবাদঃ সত্য ও প্রিয়বাণীর (মঙ্গলজনক বা মানব হিতকর কথা) প্রেরণাদাত্রী এবং সৎবুদ্ধির চেতনাদাত্রী মাতা সরস্বতী শুভকর্মকে ধারণ করে আছেন।জ্ঞানদাত্রী মাতা সরস্বতী প্রজ্ঞাশক্তি দ্বারা মহান জ্ঞান সমুদ্রকে প্রকাশ করেন এবং ধারণাবতী বুদ্ধি সমূহকে দীপ্তি দান করেন। শংনো দেবা বিশ্বদেবা ভবন্তু শং সরস্বতী সহধীভিরস্তু। -(ঋগ্বেদ ৭/৩৫/১১) অনুবাদঃ জ্ঞান জ্যোতির রক্ষক বিদ্ধানেরা আমাদের কল্যাণ বিধান করুন। বিদ্যাদেবী সরস্বতী নানা প্রকারে বুদ্ধির সাথে কল্যাণদায়িনী হোক। পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনায় বেদ বা শ্রুতি প্রমানের আলোকে আমরা বুঝতে পারি,অপপ্রচারকারীরা যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে তা সঠিক নয়,এককথায় যা ভ্রান্ত ও আসুরিক। বরং বেদের বর্ণনায় সরস্বতী একজন ব্যক্তি, অথাৎ তিনি একজন দেবী ( দেবতা),,তিনি সমগ্র জীবের অম্বি বা মাতা,আবার একই সাথে সরস্বতী একটি পবিত্র নদী। হরে কৃষ্ণ।জয় মা স্বরস্বতী। প্রচারে- স্বধর্মম্ : Connect to the inner self.