ঈশ্বরের তো জন্ম নাই,শ্রীকৃষ্ণ যদি ঈশ্বর হন তাহলে তাঁর জন্ম হয়েছে,তবে তিনি কিভাবে ঈশ্বর হবেন?

অনেক সময় সনাতনী শাস্ত্র সম্পর্কে অনভিজ্ঞ বিধর্মীরা সনাতনীদের প্রশ্ন করেন,সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর তো জন্মহীন, অথাৎ তিনি জন্মগ্রহণ করেন না। তাহলে শ্রীকৃষ্ণ তো জন্মগ্রহণ করেছেন, তার তো পিতা মাতা আছে, তাহলে তিনি কিভাবে ঈশ্বর হবেন? এর উত্তর হল, সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে, ঈশ্বর জন্মহীন এ তথ্যটি শতভাগ সঠিক।সেসাথে সনাতনী শাস্ত্রে এও বলা হয়েছে, ঈশ্বর হলেন সাকার।তিনি তার স্বইচ্ছার প্রভাবে দুষ্টের দমন, সন্তের রক্ষা এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য বিভিন্ন অবতার রুপে যুগে যুগে আবির্ভূত হন।সনাতনী শাস্ত্রে ঈশ্বরের এই প্রকার আবির্ভাবকে দিব্য জন্ম বলা হয়(গীতা৪/৮)।অথাৎ কোন বিশেষ ব্যক্তি বা বস্তু থেকে পরমেশ্বর ভগবান তার স্বইচ্ছার প্রভাবে আত্মপ্রকাশ করেন বিধায় পরমেশ্বর ভগবানের  আবির্ভাবকে দিব্য জন্মও বলা হয়।এ সম্পর্কে আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদে বলা হয়েছে… ১/ “অজায়মানো বহুধা বিজায়তে“ -সেই পরমেশ্বর যদিও জন্মরহিত তথাপিও তিনি বহুরুপে জন্মগ্রহণ করেন। –শুক্ল যজুর্বেদ ৩১/১৯,তৈত্তিরীয় আরন্যক ৩/১৩/১ ২/“তদৈক্ষত বহুস্যাং প্রজায়েয়তি“ -পরমেশ্বর বহু রুপে নিজেকে বিস্তার করেন। -ছান্দোগ্য উপনিষদ ৬/২/৩(সামবেদ) ৩/“একো বশী সর্বভূতান্তরাত্মা একং রূপং বহুধা যঃ করোতি।”– একক বশকর্তা, সর্ব জীবের অন্তরাত্মা, সেই পরমেশ্বর এক তথাপি তিনি বহু রূপ ধারন করেন। -কঠোপনিষৎ- ২/২/১২( কৃষ্ণ যজুর্বেদ) ৪/“রুপং রুপং প্রতিরুপো বভূব তদস্য রুপং প্রতিচক্ষণায়।ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরুপ ঈয়তে যুক্তা হ্যস্য হরয়ঃ শতা দশ।।” অনুবাদঃ ঈশ্বর বিভিন্ন রুপ ধারন করেন। এবং সে রুপ ধারন করে তিনি পৃথকভাবে প্রকাশিত হন।তিনি তার অন্তারঙ্গা শক্তি দ্বারা বিবিধ রুপ ধারন করে যজমানগণের নিকট উপস্থিত হন।কারন তার রথ সহস্র অশ্ব সংযুক্ত(অনন্ত শক্তি), অথাৎ তিনি অসীম ক্ষমতার অধিকারী। – ঋগ্বেদ ৬/৪৭/১৮ একই কথা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবদগীতার ৪/৬,৭,৮ নং শ্লোকে বর্ণনা করেন.. “অজোহপি সন্নব্যায়িত্মা ভূতানামীশ্বরোহপি সন। প্রকৃতিং স্বামহধিষ্ঠায় সম্ভবাম্যাত্মমায়য়া।। যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানি ভবতি ভারত।অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম।।পরিত্রানায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম।ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।জন্ম কর্ম চ মে দিব্যমেবং যো বেত্তি তত্ত্বতঃ।ত্যক্ত্বা দেহং পুনর্জন্ম নৈতি মামেতি সোহর্জুন।।” অনুবাদঃ হে অর্জুন, যদিও আমি সমস্ত জীবের ঈশ্বর,যদিও আমার জন্ম নেই ( অজ)এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় ।তবুও আমি আমার অন্তরঙ্গ শক্তিকে আশ্রয় করে অবতীর্ণ হই।যখনই জগতে ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের পরিমান বেড়ে যায়,তখনই সাধুদের (ভক্ত) রক্ষা ও দুষ্কৃতিকারীদের বিনাশ এবং ধর্ম সংস্থাপন হেতু যুগে যুগে অবতীর্ন হই।হে অর্জুন! ‍যিনি আমার এই প্রকার দিব্য জন্ম ও কর্ম যথাযথভাবে জানেন, তাঁকে আর দেহত্যাগ করার পর পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে হয় না, তিনি আমার নিত্য ধাম ( চিন্ময় জগৎ) লাভ করেন। -গীতা ৪/৬,৭,৮ শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩/৯-১০ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে , “দ্বাপরযুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন ইচ্ছা করলেন তখন তিনি দেবকীর গর্ভ থেকে চতুর্ভুজ এক অদ্ভুত শিশু রুপে আবির্ভুত হলেন।”  “তমদ্ভুতং বালকমম্বুজেক্ষণং চতুর্ভুজং শঙ্খগদাদ্যুদায়ুধম্। শ্রীবৎসলক্ষ্মং গলশোভিকৌস্তুভং পীতাম্বরং সান্দ্রপয়োদসৌভগম্।। মহাহর্বৈদূর্যকিরীটকুন্ডল ত্বিষা পরিষ্বক্তসহসস্রকুন্তলম। উদ্দামকাঞ্চ্যঙ্গণাদদিভির্বিরোচনমানং বসুদেব ঐক্ষত।।” অনুবাদঃ বসুদেব তখন দেখলেন যে,সেই নবজাত শিশুটির নয়নযুগল পদ্মের মতো।তার চার হাতে শঙ্খ,চক্র,গদা এবং পদ্ম।তার বক্ষে শ্রীবৎস চিহ্ন এবং গলদেশে কৌস্তুভ মনি বিরাজমান।তাঁর পরণে পীত বসন,তাঁর অঙ্গকান্তি নিবিড় মেঘের মতো শ্যামল,তারঁ কেশদাম উজ্বল এবং তাঁর মুকুট ও কর্নকুন্ডল বৈদূর্য – মনিচ্ছটায় অস্বাভাবিকভাবে উজ্বল। সেই শিশুটি অত্যন্ত দীপ্তিশালী মেখলা,কেয়ূর,বলয় প্রভৃতি অলঙ্কারে শোভিত। – শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩/৯-১০ এরপর শ্রীমদ্ভাগবতঃ১০/৩/৪৬ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী, পুনরায় দেবকীর প্রার্থনায় ভগবান দ্বিভুজ আদিরুপ ধারন করেন। আবার শ্রীমদ্ভাগবত ৭/৮/১৫-৩৫ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে, “সত্যযুগে বিষ্ণুরুপে শ্রীকৃষ্ণ যখন ইচ্ছা করেন তার ভক্ত প্রহ্লাদের বাণীকে সত্য করা প্রয়োজন, তখন এক স্ফটিক স্তম্ভ থেকে নৃসিংহ অবতার রুপে আবির্ভুত হয়ে হিরন্যকশিপুকে হত্যা করলেন।” যার বর্ণনা এমনকি বেদে পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণকে সনাতনী শাস্ত্রে পরমেশ্বর,পরমাত্মা, পরমব্রহ্ম,ভগবান বলা হয়েছে, কেননা শ্রীকৃষ্ণ নিজে নিজে সৃষ্টি হয়েছেন। তিনিই বিষ্ণুরুপ ধারন করেন।আবার তিনিই নৃসিংহ,শ্রীরাম, বলরাম,বামন,পরশুরাম ইত্যাদি বিভিন্ন রুপে যুগে যুগে আবির্ভূত হন। সুতরাং দেবকী মাতা এবং বসুদেব হল শ্রীকৃষ্ণের ইচ্ছানুসারে নির্বাচিত পিতামাতা।শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৩/৩৬-৪৩ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুসারে, “যারা শ্রীকৃষ্ণকে ( যিনি স্বয়ং বিষ্ণু) পুত্ররুপে লাভ করার জন্য ১২ হাজার বছর তপস্যা করেছিলেন।তাদের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান তাদের বর প্রদান করেছিলেন যে,তারা দ্বাপর যুগে তাদের সন্তানরুপে তাকে প্রাপ্ত হবেন।”  পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনায় বেদ এবং গীতা শাস্ত্রের শিক্ষা অনুযায়ী, শ্রীকৃষ্ণ যদিও অজ বা জন্মহীন, তথাপি তিনি দুষ্টের দমন, সন্তের রক্ষা এবং ধর্ম সংস্থাপন করবার জন্য যুগেযুগে বিভিন্ন রুপে বা অবতাররুপে জন্মগ্রহণ করেন বা আবির্ভুত হন,যার বর্ননা প্রতিটি সনাতন শাস্ত্রে বর্ণিত আছে। হরে কৃষ্ণ।প্রনাম।

বেদে কি একাদশী উপবাসের কথা বলা হয়েছে?

বেদ চার প্রকার -ঋগ্,সাম , যজু (শুক্ল,কৃষ্ণ)এবং অথর্ব।আবার প্রতিটি বেদের চারটি ভাগ – সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ। বেদের এ চারটি বিভাগকে একত্রে বেদ বা শ্রুতি বলা হয়। সংহিতা চার প্রকার -ঋগ্বেদ সংহিতা, সামবেদ সংহিতা, যজুর্বেদ সংহিতা এবং অথর্ববেদ সংহিতা। সংহিতার পর বেদের আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো ব্রাহ্মণ এবং আরণ্যক। বেদের সর্বশেষ বিভাগ হলো উপনিষদ।তাই উপনিষদকে বেদান্তও বলা হয়। অনেকে প্রশ্ন করেন বেদে কি একাদশীতে উপবাসের কথা বলা হয়েছে?এর উত্তর হল শুক্ল যজুর্বেদীয় বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৪/৪/২২ নং মন্ত্রে সমগ্র মানব জাতিকে ঈশ্বরের প্রীতির জন্য অনশন বা উপবাস পালন  করার কথা বলা হয়েছে। তমেতং বেদান বচনেন ব্রাহ্মণা বিবিদিষন্তি যজ্ঞেন দানেন তপসাংনাশকেনৈতমেব বিদিত্বা মুনির্ভবতি।   -[বৃহদারণ্যক ঊপনিষদ ৪/৪/২২(শুক্ল যজুর্বেদ) ] বঙ্গানুবাদ: বেদবচন, যজ্ঞ, দান, তপস্যা ও অনশন(উপবাস ব্রত) দ্বারা ব্রহ্মবিদগণ পরমেশ্বরকে জানিতে চাহেন। ইহাকে জানিয়াই মানুষ মুনি হয়। এছাড়াও  কৃষ্ণযজুর্বেদ সংহিতা ১/৬/৭ স্পষ্টভাবে উপবাসের বিধান প্রদত্ত হয়েছে। যদনাশ্বানুপবসেৎ ক্ষোধুকঃ স্যাদ্যষ্বীয়াদ্রদ্রোহস্য পশূনভি মন্যেত। অপোহশ্মাতি। তন্নেবাশিতং নেবানশিতং ন ক্ষোধুকো ভবাতি নাস্র রুদ্রঃ পশূনভি মন্যতে। বজ্ৰো বৈ যজ্ঞঃ ক্ষুৎ খলু বৈ মনুষ্যস্য ভ্রাতৃব্যো যদনাশ্বানুপবসতি বজ্রেণৈব সাক্ষাৎক্ষুধং ভ্রাতৃব্যং হন্তি ॥                   -[কৃষ্ণযজুর্বেদ, ১/৬/৭] বঙ্গানুবাদঃ উপবাসে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষুধাগ্নি জীবের ক্ষতি সাধন করে । যদি ক্ষুধা অসহনীয় হয় তবে জলপান করবে। জলপানে ভোজন হয়, আবার হয়না। যজ্ঞ বজ্রসদৃশ, ক্ষুধা মানুষের শত্রু। না খেয়ে উপবাস করলে যজ্ঞরূপ বজ্র তার ক্ষুধারূপ শত্রুকে বিনাশ করে। সুতারাং ভক্তগণ বেদের বিধান অনুযায়ী একাদশী তিথিতে পরমেশ্বর ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য উপবাস পালন করেন,যা বিশেষভাবে ছান্দোগ্য উপনিষদ ৭/১/২ অনুযায়ী পঞ্চমবেদরুপ পুরাণ শাস্ত্র, এবং স্মৃতি শাস্ত্র,পঞ্চরাত্র শাস্ত্রে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। পরিশেষে বেদে যাকে নিষেধ করা হয়েছে, (যেমন গোমাংস আহার করা পাপ),তা যদি পুরাণ শাস্ত্র সহ অন্যান্য শাস্ত্রে অনুমতি প্রদান করা হয় তবে তা ব্যাসস্মৃতি অনুযায়ী  অধর্ম।সুতারাং ঈশ্বরের সন্তুষ্টি বিধানের নিমিত্তে উপবাস পালন করার কথা বেদে  উপদেশ করা হয়েছে। আর পুরাণ শাস্ত্রে আরো স্পষ্ট ভাবে একাদশী নামক শুভ তিথিতে উপবাস পালনের জন্য মানবজাতিকে উপদেশ প্রদান করা হয়েছে। এইভাবে একাদশী তিথিতে উপবাস ব্রত পালন করা একটি বেদবিহীত কর্ম। হরে কৃষ্ণ || প্রনাম  

বেদ কি?বেদ সম্পর্কে আলোচনা করুন।

20250608 120141 Svadharmam

বেদ বা শ্রুতিঃ বেদ শব্দের অর্থ হল জ্ঞান। যে শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবানের নির্দেশ অথবা উপদেশ আলোচনা করা হয়েছে তাকে বেদ বলা হয়। বেদকে শ্রুতিও বলা হয়,অথাৎ বেদের আর একটি নাম হল শ্রুতি।বেদ সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ।বেদের জ্ঞান গুরু থেকে শিষ্য শ্রবণ বা শ্রৌত পন্থায় প্রবাহমান, তাই বেদকে শ্রুতি বলা হয়।বেদ বা শ্রুতি চারপ্রকার –ঋগ্,যর্জু, সাম,অর্থব।প্রতিটি বেদ বা শ্রুতি আবার চারপ্রকার-সংহিতা ( উপাসনা কান্ড), ব্রাহ্মণ( কর্মকান্ড),আরন্যক এবং উপনিষদ(জ্ঞানকান্ড)। অথাৎ প্রতিটি বেদ বা শ্রুতি শাস্ত্রের প্রথম ভাগ হল সংহিতা।দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ভাগ হল বহুবিধ ব্রাহ্মণ ও আরন্যক ।এরপর চতুর্থ বা শেষভাগ হল উপনিষদ।উপনিষদ যেহেতু প্রতিটি বেদের সর্বশেষ ভাগ তাই উপনিষদকে বেদান্ত বা বেদ শাস্ত্রের অন্তভাগও বলা হয়। ১/ঋগ্বেদঃ ঋগ্ শব্দের অর্থ হল স্তুতি।বেদের যে বিভাগে পরমেশ্বর ভগবানের উদ্দেশ্য স্তুতি বা প্রশংসা করা হয়েছে তাকে ঋগ্বেদ বলে। ২/ যজুর্বেদঃ যজুঃ’ মানে যজ্ঞের মন্ত্র। প্রাচীনকালের ঋষিরা মন্ত্র উচ্চারণ বা আবৃত্তি করে ধর্মানুষ্ঠান বা যজ্ঞ করতেন।যজুর্বেদ দুটি ভাগে বিভক্ত।যথা- ১. কৃষ্ণ যজুর্বেদ ২. শুক্ল যজুর্বেদ । ৩/ সামবেদঃ সাম’ শব্দের অর্থ হল গান।যজ্ঞ করার সময় যে মন্ত্র সমূহ গান করে গাওয়া হত,তার একত্রিত সংকলনকে সামবেদ বলা হয়। ৪/অথর্ববেদঃ অথর্ববেদ’ শব্দটি সংস্কৃত অথর্বণ (দৈনন্দিন জীবনযাত্রার প্রণালী) ও বেদ (জ্ঞান) শব্দ দুইটির সমষ্টি। যে শাস্ত্রে জাগতিক এবং আধ্যত্মিকভাবে যুগপৎ জীবনাচরন করা যায় তার শিক্ষা প্রদান করে তাকে অথর্ববেদ বলা হয়। ক. সংহিতাঃ আক্ষরিক অর্থে সংহিতা শব্দের অর্থ হল একত্রিত বা মিলিত বা যুক্ত”। নির্দিষ্ট পদ্ধতি ও নিয়ম অনুসারে বেদের একত্রিত গ্রন্থ বা মন্ত্র-সংকলনকে সংহিতা বলা হয়।ঋগ্,যর্জু, সাম,অর্থব এই চারিবেদের প্রথম ভাগ হল সংহিতা।আবার সংহিতা বিভাগের প্রথম ভাগ হল ঋগ্বেদ সংহিতা।ঋগ্বেদ সংহিতায় রয়েছে ১০ টি মন্ডল, ১০২৮ টি সুক্ত এবং ১০৫৫২ টি মন্ত্র। ঋগ্বেদ সংহিতা পদ্যে রচিত।এছাড়াও পতঞ্জলির মহাভাষ্য অনুসারে ২১ টির মতো ঋগ্বেদ সংহিতার শাখা আছে।তাদের মধ্যে অনেকগুলি শাখা এখন বিলুপ্ত।বর্তমানে ঋগ্বেদ সংহিতার শাকাল এবং আশ্বলায়নসহ কিছু শাখা বিদ্যমান।ঋগ্বেদ সংহিতার ঋষিরা হলেন মধুছন্দা ঋষি,জেতৃ ঋষি,মেধাতিথি ঋষি, শুনঃশেপ ঋষি প্রমুখ। সংহিতা বিভাগের দ্বিতীয় ভাগ হল যজুর্বেদ সংহিতা। কৃষ্ণ যজুর্বেদ সংহিতায় ৭টি কাণ্ড ও ২১৮৪টি মন্ত্র রয়েছে। আর শুক্ল যজুর্বেদ সংহিতায় রয়েছে ৪০টি অধ্যায় এবং ১৯১৫টি মন্ত্র।যজুর্বেদ সংহিতা গদ্য ও পদ্য উভয় রীতিই ব্যবহার করা হয়েছে। সংহিতা বিভাগের তৃতীয় ভাগ হল সামবেদ সংহিতা। সাম’ শব্দের অর্থ হল গান।সামবেদ-সংহিতার মন্ত্রসংখ্যা ১৮১০টি। সামবেদ সংহিতা পদ্যে রচিত।সামবেদ সংহিতার দুইটি ভাগ- পূর্বার্চিক, উত্তরার্চিক।পূর্বার্চিকে অধ্যায়, খণ্ড ও মন্ত্র ক্রমে এবং উত্তরার্চিকে অধ্যায়, খণ্ড, সুক্ত ও মন্ত্র ক্রমে বিভক্ত। সংহিতা বিভাগের চতুর্থ ভাগ হল অথর্ববেদ সংহিতা।অথর্ববেদ সংহিতায় রয়েছে ২০ টি কাণ্ড, ৭৩১টি সুক্ত এবং ৬০০০ টি মন্ত্র । অথর্ববেদ সংহিতা গদ্যে রচিত। খ.ব্রাহ্মণঃ পরমব্রহ্মের প্রীতি বিধানের নিমিত্তে বেদের যে বিভাগে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, উপাচার এবং এদের বিনিয়োগ সম্পর্কে যে গ্রন্থসমূহে ব্যাখ্যা করা হয়েছে তাকে ব্রাহ্মণ বলা হয়। প্রতিটি বেদের রয়েছে আছে, নিদির্ষ্ট কিছু কিছু ব্রাহ্মণ,আরন্যক এবং উপনিষদ।সে অনুসারে চারটি বেদের রয়েছে নিদির্ষ্ট কিছু ব্রাহ্মণ শাস্ত্র ।যেমন ঋগ্বেদীয় ব্রাহ্মণ হল ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ও কৌষীতকী ব্রাহ্মণ।কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় ব্রাহ্মণ হল তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ, শুক্ল যজুর্বেদীয় ব্রাহ্মণ হল শতপথ ব্রাহ্মণ।সামবেদীয় ব্রাহ্মণ হল ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণ ও তাণ্ড্য ব্রাহ্মণ, অথর্ববেদীয় ব্রাহ্মণ হল গোপথ ব্রাহ্মণ। গ. আরণ্যকঃ অরণ্য অর্থাৎ নির্জন বনে একান্তভাবে অবস্থান করে যজ্ঞের রহস্য বর্ণনাকারী যে বিদ্যার পঠন-পাঠন, তার একত্রিত কিছু গ্রন্থসমূহকে আরণ্যক বলে ।আরন্যক হল বেদের তৃতীয় বিভাগ।ঋগ্বেদীয় ঐতরেয় ব্রাহ্মণের আরণ্যক হল ঐতরেয় আরণ্যক, শুক্ল যজুর্বেদীয় শতপথ ব্রাহ্মণের আরণ্যক হল বৃহদারন্যাক আরণ্যক,কৃষ্ণ যজুৰ্ব্বেদীয় তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণের আরণ্যক হল তৈত্তিরীয় আরণ্যক। ঘ.উপনিষদঃ “উপ” উপসর্গের অর্থ হল নিকটে গমন করা ,”নি” উপসর্গের অর্থ হল নিশ্চয়ের সঙ্গে,”সদ” ধাতুর অর্থ হল অনর্থের বিনাশ। সুতারাং উপনিষদ শব্দের অর্থ হল পরমতত্ত্ব পরমেশ্বর ভগবান সমন্ধে জ্ঞান, যা শিষ্য গুরুর নিকট নিশ্চিতভাবে লাভ করে জাগতিক জীবনের সমস্ত অনর্থ থেকে মুক্তি লাভ করে। উপনিষদ হল বেদের সর্বশেষ বিভাগ। মুক্তিকোপনিষদে ১/২৭-৩৬ নং মন্ত্রে ঈশোপনিষদ, কেন উপনিষদ, কঠোপনিষদ,ছান্দোগ্য উপনিষদ,ঐতরেয় উপনিষদ,তৈত্তিরীয় উপনিষদ,মুন্ডক উপনিষদ,মান্ডূক্যোপনিষদ,বৃহদারন্যক উপনিষদ,প্রশ্নোপনিষদ,গোপালতাপনী উপনিষদ,কৃষ্ণ উপনিষদ,কলির্সন্তরন উপনিষদ ইত্যাদি ১০৮ টি উপনিষদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্তিকোপনিষদ ১/৫১-৫৫ নং মন্ত্র অনুসারে ১০৮ টি উপনিষদকে চারটি বেদ অনুসারে বিভক্ত করা হয়েছে।মুক্তিকোপনিষদ ১/৫১-৫৫ নং মন্ত্র অনুসারে ১০টি ঋগ্বেদের উপনিষদ, শুক্ল-যজুর্বেদের ১৯টি উপনিষদ, কৃষ্ণ-যজুর্বেদের ৩২টি উপনিষদ, সামবেদের ১৬ টি উপনিষদ এবং অথর্ববেদের ৩১ টি উপনিষদ। মুক্তিকোপনিষদ ১/৫১ নং মন্ত্র অনুসারে ঐতরেয় উপনিষদ হল ঋগ্বেদের অন্তর্গত। মুক্তিকোপনিষদ ১/৫২ নং মন্ত্র অনুসারে ঈশোপনিষদ, বৃহদারন্যক উপনিষদ এবং মুক্তিকোপনিষদ শুক্ল যজুর্বেদের অন্তর্গত। মুক্তিকোপনিষদ ১/৫৩ নং মন্ত্র অনুসারে শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ,কলির্সন্তরন উপনিষদ, কঠোপনিষদ,তৈত্তিরীয় উপনিষদ এবং নারায়ন উপনিষদ হল কৃষ্ণ যজুর্বেদের অন্তর্গত। মুক্তিকোপনিষদ ১/৫৪ নং মন্ত্র অনুসারে কেন উপনিষদ,ছান্দোগ্য উপনিষদ সামবেদের অন্তর্গত। মুক্তিকোপনিষদ ১/৫৫ নং মন্ত্র অনুসারে প্রশ্নোপনিষদ,মুন্ডকোপনিষদ,মান্ডূক্য উপনিষদ গোপালতাপনী উপনিষদ এবং কৃষ্ণোপনিষদ হল অর্থববেদের অন্তর্গত। হরে কৃষ্ণ।প্রনাম   

শাস্ত্র কি? সনাতনী শাস্ত্রসমূহ কি কি?

20250607 182235 Svadharmam

শাস্ত্রঃ ভগবানের শক্ত্যাবেশ অবতার শ্রীল কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের শিষ্য জৈমিনী তার পূর্ব-মিমাংসাতে বলেন, “যে গ্রন্থে অনুশাসন, উপদেশ, আদেশ এবং নিষেধ ইত্যাদি আলোচনা করা হয় তাকে শাস্ত্র বলা হয়।” সুতরাং শাস্ত্র মানে সে সমস্ত সনাতনী ধর্ম গ্রন্থ যেখানে পরমেশ্বর, তার সৃষ্টি, তার উপদেশ, তার নিষেধ ইত্যাাদি সুস্পষ্টভাবে বর্ননা করা হয়েছে। সনাতনী শাস্ত্র সমূহঃ জীবের ধর্ম সনাতন ধর্মে বিভিন্ন প্রকারের শাস্ত্র রয়েছে।যথা- ১.বেদ বা শ্রুতি ২.স্মৃতি, ৩.পুরাণ ৪. ইতিহাস(মহাভারত, রামায়ণ,শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা) ৫.পঞ্চরাত্র ৬. সংহিতা ৭.তন্ত্র। ১/বেদ বা শ্রুতি শাস্ত্রঃ বেদ শব্দের অর্থ হল জ্ঞান। যে শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবানের নির্দেশ বা উপদেশ আলোচনা করা হয়েছে তাকে বেদ বলা হয়। বেদকে শ্রুতিও বলা হয়। বেদের জ্ঞান গুরু থেকে শিষ্য শ্রবণ বা শ্রৌত পন্থায় প্রবাহমান, তাই বেদকে শ্রুতিও বলা হয়। প্রধানত বেদ চার প্রকার -ঋগ্,যর্জু(শুক্ল,কৃষ্ণ),সাম, অথর্ব।পুনরায় প্রতিটি বেদ চারভাগে বিভক্ত-সংহিতা, ব্রাহ্মণ,আরন্যক এবং উপনিষদ।সংহিতা চারভাগে বিভক্ত -ঋগ্বেদ সংহিতা,যর্জুবেদ সংহিতা,সামবেদ সংহিতা এবং অর্থববেদ সংহিতা।যজুর্বেদ সংহিতা আবার দুইপ্রকার-শুক্ল যজুর্বেদ এবং কৃষ্ণ যজুর্বেদ। শ্রুতি শাস্ত্রের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে বহুবিধ ব্রাহ্মণ ও আরন্যক শাস্ত্র রয়েছে।এরপর চতুর্থ পর্যায়ে শ্রুতি শাস্ত্র হল উপনিষদসমূহ।উপনিষদকে বেদান্ত বলা হয় কারন উপনিষদ হল সমগ্র বেদ শাস্ত্রের অন্ত বা শেষ ভাগ। প্রতিটি বেদের নিদির্ষ্ট কিছু কিছু ব্রাহ্মণ,আরন্যক এবং উপনিষদ রয়েছে।যেমন ঋগ্বেদের ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ও কৌষীতকী ব্রাহ্মণ,কৃষ্ণ যজুর্বেদের তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ,শুক্ল যজুর্বেদের শতপথ ব্রাহ্মণ,সামবেদের ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণ ও তাণ্ড্য ব্রাহ্মণ,অথর্ববেদের গোপথ ব্রাহ্মণ। এরপর ঋগ্বেদীয় ঐতরেয় ব্রাহ্মণের সাথে আছে ঐতরেয় আরণ্যক, কৃষ্ণ যজুৰ্ব্বেদীয় তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণের সাথে আছে তৈত্তিরীয় আরণ্যক, শুক্ল যজুর্বেদীয় শতপথ ব্রাহ্মণের সাথে যুক্ত আছে বৃহদারন্যাক আরণ্যক ইত্যাদি। মুক্তিকোপনিষদে ঈশ,কেন,কঠ,মুন্ডক,মান্ডূক্য, গোপালতাপনী,কলির্সন্তরন ইত্যাদি ১০৮ টি উপনিষদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্তিকোপনিষদ অনুসারে ১০৮টি উপনিষদকে চারটি বেদ অনুসারে বিভক্ত করা হয়েছে। ঋকবেদীয় উপনিষদ হল ঐতরেয় উপনিষদ, কৃষ্ণ উপনিষদ ইত্যাদি।সামবেদীয় উপনিষদ হল ছান্দোগ্য উপনিষদ, কেন উপনিষদ ইত্যাদি। শুক্ল যজুর্বেদীয় উপনিষদ হল ঈশোপনিষদ, বৃহদারন্যক উপনিষদ ইত্যাদি। কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় উপনিষদের হল কঠোপনিষদ , তৈত্তিরীয় উপনিষদ,কলির্সন্তরন উপনিষদ ইত্যাদি।অথর্ববেদীয় উপনিষদ হল মুন্ডক উপনিষদ,প্রশ্নোপনিষদ, মান্ডূক্যোপনিষদ,গোপালতাপনী উপনিষদ ইত্যাদি। ২/ স্মৃতি শাস্ত্রঃ মুনি ও ঋষিদের দ্বারা রচিত বেদানুকুল শাস্ত্রকে স্মৃতি শাস্ত্র বলা হয়। স্মৃতি মানে স্মরন করা।স্মৃতি শাস্ত্রকে সংহিতাও বলা হয়। যেমন – মনুস্মৃতি বা মনুসংহিতা,যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি,পরাশর স্মৃতি, ব্যাস স্মৃতি ইত্যাদি।  ৩/পুরাণ শাস্ত্রঃ পুরাণ মানে পুরাতন ইতিহাস। যে শাস্ত্রে পরমেশ্বর এবং তার সৃষ্টি, তার উপদেশ,তার নিষেধ, তার বিভিন্ন অবতারদের অপ্রাকৃত লীলাবিলাসের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে তাকে পুরাণ বলে।সৃষ্টির শুরু থেকে গুরু ও শিষ্য পরম্পরার ধারায় পুরাণ শাস্ত্রের জ্ঞান প্রবাহিত। মৎস্য পুরাণ অনুসারে সৃষ্টির সূচনা লগ্নে ব্রহ্মার মুখ থেকে পুরাণ শাস্ত্রের সৃষ্টির হয়। পুরানং সর্বশাস্ত্রানাং প্রথমং ব্রহ্মণা স্মৃতম। অনন্তরঞ্চ বক্ত্রেভ্যো বেদান্তস্য বিনির্গর্তা।। পুরানমেকমেবাসীৎ তদা কল্পান্তরেহনঘ। ত্রিবর্গসধং পুন্যাং শতকোটি প্রবিস্তবম।। চতুর্লক্ষ প্রমানেন দ্বাপরে দ্বাপরে সদা। তথাষ্টাদধা তৃত্বা ভূলোকে অস্মিন প্রকাশ্যতে।। – (মৎস্য পুরানঃ৫৩/৩,৪,৯,১০) অনুবাদঃ সমস্ত শাস্ত্রের মধ্যে পুরাণই প্রথম বলিয়া ব্রহ্মা কতৃর্ক স্মৃত হইয়াছে।অনন্তর তাহার মুখগুলি (বক্ত্রেভ্যো) হইতে বেদসকল(বেদান্তস্য) নির্গত হয়।  হে অনঘ! কল্পান্তরে মাত্র একখানি পুরান ছিল।ঐ পুরান ত্রিবর্গের সাধন ও শতকোটি শ্লোকে পরিপূর্ণ। প্রতি দ্বাপরে চতুর্লক্ষ( ৪ লক্ষ) শ্লোক সম্বলিত পুরান অষ্টাদশ ভাগে বিভক্ত করিয়া এই ভুলোকে আমি প্রকাশ করি। শ্রীমদ্ভাগবত পুরান ১২/১৩/ ৪-৯ নং শ্লোক অনুযায়ী প্রধান পুরানসমূহ অষ্টাদশ ভাগে বিভক্ত।সেগুলি হল-ব্রহ্ম,পদ্ম, বিষ্ণু,শিব,নারদ,মার্কেন্ডেয়,অগ্নি,ভাগবত,ভবিষ্য, ব্রহ্মবৈবর্ত,লিঙ্গ, বরাহ,স্কন্দ,বামন,,কূর্ম,মৎস্য,গরুড় এবং ব্রহ্মান্ড।এছাড়াও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান শাস্ত্রের শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ড,১৩৩/২১,২২ নং শ্লোকে অষ্টাদশ পুরানের সাথে অষ্টাদশ উপপুরানের কথাও বর্ণনা করা হয়েছে(“এবঞ্চোপপুরাণামাষ্টাদশ প্রকীর্ত্তিতা।”)।এসমস্ত উপপুরান সমূহও পরমেশ্বরের আদেশে শ্রীল ব্যাসদেব রচনা করেন। ৪/ইতিহাস শাস্ত্রঃ বিভিন্ন যুগে সংঘটিত ভগবান এবং মহান ব্যাক্তিদের সাথে সম্পর্কিত ঘটনা প্রবাহের ঐতিহাসিক গ্রন্থকে ইতিহাস শাস্ত্র বলে।সনাতনী শাস্ত্রে রামায়ন এবং মহাভারত এ দুটি মহান ইতিহাস শাস্ত্র রয়েছে। এছাড়াও শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ইতিহাস শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত কেননা শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা হল ভীষ্ম পর্বের অন্তর্গত। ক. রামায়ণ- রামায়ণ শাস্ত্র হল ভগবান বিষ্ণুর অবতার মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্রের অপ্রাকৃত লীলার বর্ণনা,যা ত্রেতা যুগে ব্রহ্মার নির্দেশে শ্রীবাল্মিকী মুনি রচনা করেন।  খ.মহাভারত- মহাভারত শাস্ত্র হল পঞ্চপান্ডবদের অসহনীয় বিপদ থেকে উদ্ধারকল্পে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি স্বয়ং বিষ্ণু তার অচিন্তনীয় কৃপার সুমহান বর্ণনা। দ্বাপরযুগের শেষের দিকে ভগবানের শক্ত্যাবেশ অবতার শ্রীল ব্যাসদেব এই মহাভারত শাস্ত্র রচনা করেন। এই মহাভারত শাস্ত্রের সাথে যুক্ত আছে সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রের সারশাস্ত্র শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা। গ. শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা হল মহাভারতের ভীষ্মপর্বের অন্তর্গত ২৫-৪২ তম অধ্যায়।শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যদিও মহাভারতের অংশ তথাপি এ গ্রন্থকে সনাতনী শাস্ত্রে পৃথক গ্রন্থের মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শব্দের অর্থ হল শ্রীমৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কতৃর্ক গীত বা কথিত। বেদ যেমন পরমেশ্বর ভগবানের সরাসরি নির্দেশ ঠিক তেমনই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা হল সরাসরি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী।তাই বেদ এবং গীতা সম্পূর্ণ অভিন্ন এক পরমেশ্বরের জ্ঞান। স্কন্দপুরান শাস্ত্রের অবন্তীখন্ডের, গীতা মাহাত্ম্যে শ্রীল ব্যাসদেব গীতা শাস্ত্রকে সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রের সাররুপে বর্ণনা করেছেন- গীতা সুগীতা কর্তব্যা কিমন্যৈঃ শাস্ত্রবিস্তরৈঃ। যা স্বয়ং পদ্মনাভস্য মুখপদ্মাদ্বিনিঃসৃতা।। সর্বশাস্ত্রময়ী গীতা সর্বদেবময়ী যতঃ। সর্বধর্মময়ী যস্মাত্তস্মাদেতাং সমভ্যসেৎ।।   –(স্কন্দপুরানঃ অবন্তীখন্ড, গীতা মাহাত্ম্যঃ ১,২) অনুবাদঃ গীতা স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখপদ্ম থেকে নিঃসৃত হয়েছে।তাই অন্যান্য বহু রকমের শাস্ত্র অধ্যয়ন করার আর কিবা প্রয়োজন? সুতারাং সকলের কর্তব্য উত্তমরুপে এই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা অধ্যায়ন করার অভ্যাস করা। কেননা শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা হল সর্বশাস্ত্রময়ী, সর্বদেবময়ী ও সর্বধর্মময়ী। যদিও দ্বাপরযুগে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে ভগবদ্গীতার জ্ঞান উপদেশ করেন, তথাপিও গীতার জ্ঞান বহু পুরাতন।গীতা ৪/১ নং শ্লোক অনুযায়ী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রথম গীতার জ্ঞান প্রদান করেন সূর্যদেব বা বিবস্বানকে।এরপর বিবস্বান মানব জাতির পিতা মনুকে তা দান করেন, এবং মনু রঘুবংশের জনক ইক্ষ্বাকুকে তা দান করেন।কিন্তু পরবর্তীতে এভাবে পরম্পরা ধারায় সে জ্ঞান বন্ধ হয়ে যাওয়াতে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পুনরায় অর্জুনকে একই গীতার জ্ঞান দান করেন।মহাভারত,শান্তিপর্ব ৩৪৮/৫১-৫২ শ্লোক অনুসারে, সূর্যদেব ত্রেতাযুগের শুরুতে অথাৎ ২০ লক্ষ ৫ হাজার বছর পূর্বে মনুকে গীতার জ্ঞান দান করেন।(বিস্তারিত – শ্রীল প্রভুপাদকৃত ভগবদগীতা যথাযথ এর গীতা ৪/১ শ্লোকের তাৎপর্য) ৫,৬/ পঞ্চরাত্র এবং সংহিতা শাস্ত্রঃ সনাতন ধর্মে পঞ্চরাত্র এবং সংহিতা শাস্ত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসমস্ত শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবানের গুনমহিমা অসাধারণভাবে বর্ণিত আছে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ শাস্ত্রের শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ডে পাঁচটি পঞ্চরাত্র শাস্ত্র এবং পাঁচটি সংহিতা শাস্ত্রের কথা আলোচনা করা হয়েছে। পঞ্চরাত্র শাস্ত্রসমূহ হল -বশিষ্ট পঞ্চরাত্র ,নারদ পঞ্চরাত্র ,কপিল পঞ্চরাত্র,গৌতম পঞ্চরাত্র এবং সনৎকুমার পঞ্চরাত্র।পাচঁটি সংহিতা শাস্ত্র হল -ব্রহ্মসংহিতা,শিবসংহিতা, প্রহ্লাদসংহিতা,গৌতমসংহিতা, এবং সনৎকুমার সংহিতা। পঞ্চকং পঞ্চরাত্রাণাং কৃষ্ণমাহাত্ম্যপূর্ব্বকম্। বশিষ্টং নারদীয়ঞ্চ কপিলং গৌতমীয়কম্।।২৩।। পরং সনৎকুমারীয়ৎ পঞ্চরাত্রঞ্চ পঞ্চকম্। পঞ্চমী সংহিতান্যঞ্চ কৃষ্ণভক্তিসমন্বিতা।।২৪।। ব্রহ্মণশ্চ শিবস্যাপি প্রহ্লাদস্য তথৈব চ। গৌতমস্য কুমারস্য সংহিতাঃ পরিকীত্তির্তা।।” ২৫।।     -ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানঃ শ্রীকৃষ্ণ জন্মখন্ড,১৩৩/২৩-২৫ অনুবাদঃ শ্রীকৃষ্ণ মাহাত্ম্যপূ্র্ণ পাঁচটি পঞ্চরাত্র-বশিষ্ট,নারদ,কপিল,গৌতম এবং সনৎকুমার কতৃর্ক।ব্রহ্ম,শিব,প্রহ্লাদ,গৌতম এবং সনৎকুমার কর্তৃক কৃষ্ণভক্তি সমন্বিত পাঁচটি সংহিতা পরিকীর্তিত হয়েছে। ৭/ তন্ত্র শাস্ত্রঃ সনাতন শাস্ত্রে কিছু কিছু তন্ত্র শাস্ত্র পরিলক্ষিত হয়।যেমন বৈষ্ণবীয় তন্ত্রসার,মহানির্বাণ তন্ত্র ইত্যাদি।  হরে কৃষ্ণ। প্রনাম। 

গীতা এবং শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ অনুসারে ঈশ্বরের মস্তক, চক্ষু,হস্ত,পদ,কর্ণ সর্বত্রই বিদ্যমান।কিভাবে তা সম্ভব?

FB IMG 1748952259614 Svadharmam

গীতা১৩/১৪ এবং শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৩/১৬ মন্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে- সর্বতঃ পাণিপাদং তৎ সর্বতোহক্ষিশিরোমুখম। সর্বতঃ শ্রুতিমল্লোকে সর্বমাবৃত্য তিষ্ঠতি ।। ১৪ । -(গীতা১৩/১৪) অনুবাদঃ সর্বত্রই তাঁর (ঈশ্বর) হস্ত, পদ, চক্ষু, মস্তক ও মুখ বর্তমান এবং তিনি সর্বত্রই কর্ণযুক্ত। এভাবেই জগতের সব কিছুতে পরিব্যাপ্ত হয়ে তিনি বিরাজমান। বেদে বর্ণিত ঈশ্বর সাকার।তাঁর দেহ বা শরীর আছে।তাঁর শক্তি অনন্ত।অর্থববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদ অনুযায়ী, সে ঈশ্বরকে শ্রীকৃষ্ণ বলা হয়।              “একো বশী সর্বগঃ কৃষ্ণ ঈড্যঃ”     – গোপালতাপনী উপনিষদ  ১/২১(অথর্ববেদ) অনুবাদঃ সেই একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই  পরম পুরুষোত্তম ভগবান,তিনিই আরাধ্য। পরমেশ্বররুপে শ্রীকৃষ্ণ নিত্যকাল চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবনে নিত্য বিরাজমান।এছাড়াও ব্রহ্মসংহিতা সহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে একই কথা বর্নিত আছে। তমেকং গোবিন্দং সচ্চিদানন্দ বিগ্রহং পঞ্চপদং বৃন্দাবনসুরভূরুহতলাসীনং। সততং সমরুদগণোহহং পরময়া স্তুত্যা তোষয়ামি।।       -(গোপালতাপনী উপনিষদঃ পূর্ব ২/৩৫) অনুবাদঃ “যিনি গোলক বৃন্দাবনের কল্পতরুমূলে সমাসীন আছেন,সতত আমি মরুদগনের সহিত পরম স্তুতি দ্বারা পঞ্চপদাত্মক সেই গোবিন্দদেবের(শ্রীকৃষ্ণের) সন্তোষ বিধান করি।”            গোলোক এব নিবসত্যখিলাত্মভূতো গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।।৩৭।। -(ব্রহ্মসংহিতা৫/৩৭) অনুবাদঃ  গোলকধামে( চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক) অখিলাত্মভূত শ্রীগোবিন্দ(শ্রীকৃষ্ণ) নিত্য অবস্থান করেন, সেই আদিপুরুষকে আমি ভজনা করি।।৩৭।। একই কথা কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় কঠোপনিষদেও বর্ণনা করা হয়েছে,সেখানে বলা হয়েছে  শ্রীবিষ্ণু(যিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ) তিনি নিত্যকাল বৈকুন্ঠে (চিন্ময় জগতের গোলকের পরবর্তী লোক ) অবস্থান করছেন তথাপি তিনি জড় জগতের সর্বত্র অবস্থিত। আসীনো দূরং ব্রজতি শয়ানো যাতি সর্বতঃ।                  -(কঠোপনিষদ ১/২/২১) অনুবাদ:- পরমেশ্বর ভগবান বিষ্ণু পরব্যোমে অবস্থিত হয়েও সর্বত্র অবস্থান করেন, অনন্ত শয্যায় শয়ন করেও সর্বত্র বিচরণ করেন। অথাৎ পরমেশ্বররুপে শ্রীকৃষ্ণ যদিও নিত্যকাল চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবনে নিত্য বিরাজমান,তথাপি তিনি তার অচিন্তনীয় চিন্ময় শক্তির প্রভাবে এ ব্রহ্মান্ডের সবর্ত্র বিদ্যমান।অথাৎ তার মস্তক  চক্ষু,হস্ত,পদ সর্বত্র বিরাজমান।তাই গীতা ১৩/১৪ অনুসারে ঈশ্বরের হস্ত,পদ,মস্তক সর্বত্র বিরাজমান।আমরা গীতা ১১/১৬ নং শ্লোকে অর্জুনের উক্তির মাধ্যমে সে সত্যের সত্যতা খুঁজে পাই।অর্জুন ঈশ্বররুপে শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বময়রুপ দর্শন করে বললেন- অনেকবাহূদরবক্ত্রনেত্রং পশ্যামি ত্বাং সর্বতোহনন্তরূপম্। নান্তং ন মধ্যং ন পুনস্তবাদিং পশ্যামি বিশ্বেশ্বর বিশ্বরূপ ।। ১৬।। -(গীতা ১১/১৬) অনুবাদঃ হে বিশ্বেশ্বর(সমস্ত বিশ্বের ঈশ্বর), হে বিশ্বরূপ, তোমার সর্বত্র ব্যাপ্ত অনন্ত রূপে অনেক বাহু, উদর, মুখ এবং নেত্রসমূহ দেখছি। আমি তোমার আদি, মধ্য ও অন্ত কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। এছাড়াও গীতা ১৫/১৫ শ্লোকে,পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বর্ণনা করেন, আমি পরমাত্মারুপে প্রতিটি জীবের হৃদয়ে পরমাত্মারুপে অবস্থান করি (সর্বস্য চাহং হৃদি সন্নিবিষ্টো)। ঈশ্বরের সর্বব্যাপ্ততা বিষয়ে  গীতা ১৩/১৪ শ্লোকের তাৎপর্যে ইসকন প্রতিষ্ঠাতা আচার্য জগৎগুরু শ্রীল প্রভুপাদ বর্ণনা করেন- “সূর্য যেমন অনন্ত কিরণ বিকিরণ করে বিরাজমান, সেভাবে পরমাত্মা বা পরমেশ্বর ভগবানও বিরাজমান। তিনি তাঁর সর্বব্যাপ্ত রূপে বিরাজমান এবং আদি কবি ব্রহ্মা থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র পিপীলিকা পর্যন্ত সমস্ত জীবই তাঁকে আশ্রয় করে বিরাজমান। তাঁর সেই সর্বব্যাপী রূপের মধ্যে অসংখ্য মস্তক, পদ, হস্ত, চক্ষু রয়েছে।তাই পরমাত্মা সর্বব্যাপ্ত। “                        হরে কৃষ্ণ। প্রনাম।

সৃষ্টির মূলে একজন যে সৃষ্টিকর্তা আছেন তাঁকে আমি কিভাবে বুঝতে পারব?

20250603 150141 Svadharmam

সৃষ্টির মূলে একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বঃ যখন আমরা বহুতল বিশিষ্ট সুসজ্জিত অট্টালিকা দেখি তখন আমরা চিন্তা করি না যে এই অট্টালিকাটি এমনি এমনি তৈরী হয়ে গেল বা বৃহৎ একটা বিষ্ফোরণ থেকে সৃষ্টি হয়েছে।বরং আমরা চিন্তা করি এই অট্টালিকাটি তৈরী করেছে একদল শ্রমিক। ঠিক তেমনই এই সুন্দর বিশ্বব্রহ্মান্ড  এমনি এমনি তৈরী হয় নি,হতে পারে না।যেখানে সূর্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে আলো বিতরন করছে,চন্দ্র শুক্লপক্ষে তার কিরন বিতরন করছে,ঋতুচক্রের পালাবদল হচ্ছে,সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর মতো আরো অনেক ভারী ভারী  গ্রহ শূণ্যে প্রদক্ষিণ করছে ইত্যাদি। সুতারাং এ বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টির মূলে রয়েছে একজন  ব্যক্তি, যার সুদক্ষ তত্ত্বাবধানে এ বিশ্বের সবকিছু নিখুঁত ভাবে সাধিত হচ্ছে।সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে সে নিখুঁত কারিগর বা সৃষ্টিকর্তাকে ঈশ্বর, পরমেশ্বর, ভগবান, পরমাত্মা, পরমব্রহ্ম বলা হয়।  বদন্তি তত্তত্ত্ববিদস্তত্ত্বং যজজ্ঞানমদ্বয়ম। ব্রহ্মেতি পরমাত্মেতি ভগবানিতি শব্দতে।। -(শ্রীমদ্ভাগবত ১/২/১১) অনুবাদঃ যা অদ্বয় জ্ঞান,অথাৎ এক এবং অদ্বিতীয় বাস্তব বস্তু,জ্ঞানীগণ তাকেই পরমার্থ বলেন।সেই তত্ত্ববস্তু ব্রহ্ম, পরমাত্মা ও ভগবান – এই ত্রিবিধ সংজ্ঞায় সংজ্ঞিত বা কথিত হয়।                              হরে কৃষ্ণ। প্রনাম

শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যোগস্থ হয়ে নাকি একাগ্রতার সাথে পরমেশ্বর ভগবান রুপে গীতার জ্ঞান দান করেছিলেন?

FB IMG 1748786250646 Svadharmam

আজকাল কিছু মূর্খ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করছে, কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গণে শ্রীকৃষ্ণ নাকি যোগস্থ হয়ে গীতার জ্ঞান প্রদান করেছেন।এর স্বপক্ষে তারা মহাভারত,আশ্বমেধিক পর্ব-১৭/ ১৩ নং শ্লোকটি উপস্থাপন করেন,যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন- পরং হি ব্রহ্ম কথিতং যোগযুক্তেনতন্ময়া। ইতিহাসং তু বক্ষ্যামি তস্মিন্নর্থে পুরাতনম।। -(মহাভারত,আশ্বমেধিক পর্ব-১৭/ ১৩) অনুবাদঃ তৎকালে আমি যোগযুক্ত হইয়া(একাগ্রচিত্ত হইয়া) পরব্রহ্মের বিষয় বলিয়া ছিলাম, এখন সেই বিষয়ে প্রাচীন বৃত্তান্ত বলিতেছি॥১৩॥ (অনুবাদঃ বিশ্ববাণী প্রকাশনী,শ্রীহরিসিদ্ধান্ত বাগীশ অনুবাদকৃত,টীকা-ভারতকৌমুদী) বিশ্বভারতী প্রকাশনী কতৃর্ক প্রকাশিত মহাভারতে ভারত কৌমুদী টীকা উল্লেখ করা হয়,সেখানে যোগযুক্ত শব্দের অর্থ করা হয়েছে, “যোগযুক্তেন ঐক্যাগ্রসমন্বিতে”- “যোগযুক্ত শব্দে একাগ্রতার সহিত”। সুতরাং যোগযুক্ত শব্দের অর্থ যোগস্থ হয়ে নয় বরং একাগ্রতার সাথে। মহাভারতের সর্বাধিক জনপ্রিয় টীকা ভারত কৌমুদী যোগযুক্ত শব্দের অর্থ করেছেন “একাগ্রতার সাথে”। অথচ যারা তাদের মূর্খতাকে আশ্রয় করে শ্রীকৃষ্ণকে বেদ/শ্রুতি,পুরাণ, মহাভারত, পঞ্চরাত্র ইত্যাদি শাস্ত্র অনুসারে পরমেশ্বর ভগবান রুপে গ্রহণ করতে চাই না,তারা শ্রীকৃষ্ণকে সাধারণ মানুষরুপে জনসমাজে পরিচয় করানোর জন্য যোগযুক্ত শব্দের অর্থ  করছেন- যোগস্থ হয়ে। এখন আমরা মহাভারত,ভগবদ্গীতা শাস্ত্রের মাধ্যমে প্রমান করব শ্রীকৃষ্ণ যোগস্থ হয়ে ভগবদগীতা জ্ঞান প্রদান করেন নি,বরং একাগ্রতার সাথে পরমেশ্বর ভগবানরুপে ভগবদগীতার জ্ঞান দান করেন।  প্রথম দাবীঃ বেদসহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে ঈশ্বরকে পরমেশ্বর,ভগবান,পরমব্রহ্ম,পরমাত্মা রুপে সম্বোধন করা হয়েছে। তাই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় অর্জুনের প্রতি শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশকে শ্রীভগবান উবাচ বলা হয়েছে(গীতা ২/২,২/৫৫,২/৩ ইত্যাদি) । অথাৎ শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর বলা হয়েছে।এ বিষয় নিমোক্ত লিংকটি দর্শনীয় – https://svadharmam.com/why-is-the-word-bhagaban-a-logical-synonym-of-godhead/ গীতার মতোই মহাভারত শাস্ত্রেও প্রতিটি পর্বের প্রতিটি অধ্যায়ে বার বার বলা হয়েছে শ্রীকৃষ্ণ হলেন স্বয়ং বিষ্ণু, তিনি হলেন পরমেশ্বর ভগবান।  অনুগ্রহার্থং লোকানাং বিষ্ণু লোক নমস্কৃতঃ। বসুদেবাত্তু দেবক্যাং প্রাদুর্ভূতো মহাযশাঃ।। -(মহাভারত আদিপর্ব, ৫৮/১৩৮) অনুবাদঃ ত্রিজগতের পূজনীয় মহাযশস্বী স্বয়ং বিষ্ণু লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য বসুদেব-দেবকীতে আবির্ভূত হইয়াছিলেন৷ এছাড়াও মহাভারত শাস্ত্রের ভীষ্মপর্বের ৩৪ তম অধ্যায়ের ৮ নং শ্লোকে অথাৎ গীতা ১০/৮ নং শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন নিজেকে সমগ্র জগতের সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বররুপে দাবী করেন(“অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে।”), তখন অর্জুন কোনরুপ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা না করে মহাভারত, ভীষ্মপর্ব ৩৪/১২-১৩ নং শ্লোকে অথাৎ গীতা ১০/১২-১৩ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণকে পরমব্রহ্ম অথাৎ পরমেশ্বর ভগবান বলে সম্বোধন করে বলেন যে, তুমি যে নিজেকে পরমব্রহ্ম অথাৎ পরমেশ্বর ভগবান বলে আমাকে শিক্ষা প্রদান করছ তা সত্য,কেননা ব্যাসদেব, নারদ, অসিত,দেবল ইত্যাদি মহান মহান ঋষিগন তোমাকে পরমব্রহ্ম অথাৎ পরমেশ্বর ভগবানরুপে জানে। অর্জুন উবাচ- পরং ব্রহ্ম পরং ধাম পবিত্রং পরমং ভবান্। পুরুষং শাশ্বতং দিব্যমাদিদেবমজং বিভুম্ ॥ আহুস্তামৃষয়ঃ সর্বে দেবর্ষির্নারদস্তথা । অসিতো দেবলো ব্যাসঃ স্বয়ং চৈব ব্রবীষি মে ॥” -(গীতা ১০/১২-১৩) অনুবাদঃ অর্জুন বললেন- তুমি ( হে কৃষ্ণ) পরম ব্রহ্ম ( ঈশ্বর) , পরম ধাম( পরম আশ্রয়), পরম পবিত্র ও পরম পুরুষ৷ তুমি নিত্য, দিব্য, আদি দেব, অজ ও বিভু। দেবর্ষি নারদ, অসিত, দেবল, ব্যাস আদি ঋষিরা তোমাকে সেভাবেই বর্ণনা করেছেন এবং তুমি নিজেও এখন আমাকে তা বলছ। উপরোক্ত গীতাঃ ১০/১২-১৩ নং বিশ্লেষণ এই যে,সাধারণ মানুষের পক্ষে পরমেশ্বর ভগবানের পরিচিতি দানে শতভাগ ত্রুটি থাকবে এটি সত্য, কিন্তু দেবতাদের মধ্যে যিনি ঋষি সেই দেবর্ষি নারদ, যিনি তার স্বইচ্ছায় স্বর্গলোক,ব্রহ্মলোক সহ এই চৌদ্দ ভূবন বিশিষ্ট জড় ব্রহ্মান্ডে সর্বত্র বিচরণ করেন,এমনকি যিনি চিন্ময় জগতের বৈকুন্ঠ এবং গোলকে পরিভ্রমণ করে পরমেশ্বর ভগবানের প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত থাকেন, তিনিও উপদেশ করেন, শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমব্রহ্ম অথাৎ পরমেশ্বর ভগবান। পুনরায় বেদ,পুরাণ,মহাভারত, পঞ্চরাত্র শাস্ত্র যিনি লিপিবদ্ধ করছেন, সেই শ্রীল ব্যাসদেবেব শিক্ষায় শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমব্রহ্ম অথাৎ পরমেশ্বর ভগবান।এছাড়াও অসিত, দেবল ইত্যাদি ঋষিরা, যারা ধ্যানস্থ অবস্থায় পরমেশ্বরের স্বরুপ দেখতে পান,সেই সমস্ত ঋষিদের বর্ণনায় শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান। এছাড়াও গীতা ১১/৫-৪৫ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত জগৎ জুড়ে ব্যাপ্তিমান তার বিশ্বরুপ বা বিরাটরুপ প্রদর্শন করেন। এবং সেইসাথে গীতা ১১/৪৬ নং শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী অর্জুনের প্রার্থনায় পরমেশ্বর ভগবান রুপে শ্রীকৃষ্ণ গীতা ১১/৪৭-৫০ নং শ্লোক অনুযায়ী তার চতুর্ভূজ বিষ্ণু রুপ প্রদর্শন করেন। এইভাবে সমগ্র মহাভারত শাস্ত্র এবং মহাভারতের অংশরুপে ভগবদগীতা শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলা হয়েছে। আমরা দেখি অনেক ভূয়পোড় যোগী তাঁর শিষ্য হাজার খানেক হলে, আর কিছু যোগসিদ্ধি অথবা যাদু প্রদর্শন করার ক্ষমতা থাকলে সেগুলি দিয়ে তাঁর অজ্ঞানতার প্রভাবে নিজেকে তিনি ঈশ্বর বলে শিষ্যদের শিক্ষা দেন।শ্রীকৃষ্ণ কিন্তু সেরকম ভূয়পোড় যোগী বা ঈশ্বর নন।শ্রীকৃষ্ণ গীতা শাস্ত্রে যা বলেছেন তা তিনি অর্জুনকে প্রদর্শন করেছেন।তিনি তার বিশ্বরুপ বা বিরাটরুপ প্রদর্শন করেন।এবং গীতা তার চতুর্ভূজ বিষ্ণু রুপ প্রদর্শন করেন। দ্বিতীয় দাবীঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মহাভারত,আশ্বমেধিক পর্ব-১৭/ ১৩ শ্লোকে বর্ণনা করেন, তিনি কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গণে একাগ্রতা সহকারে (যোগযুক্ত) ঈশ্বর বিষয়ক আলোচনা করেছিলেন(“পরং হি ব্রহ্ম কথিতং যোগযুক্তেনতন্ময়া।ইতিহাসং তু বক্ষ্যামি তস্মিন্নর্থে পুরাতনম।।”) এরপর অর্জুনের অনুরোধে সেই অষ্টাদশ অধ্যায়রুপী ভগবদগীতার হুবহু জ্ঞান প্রদান করার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আশ্বমেধিক পর্ব, ১৭/১৪ থেকে ৬৬ অধ্যায়, অথাৎ মোট ৫৩ টি অধ্যায়ে এক প্রাচীন ইতিহাস আলোচনা করেন,যাকে মহাভারতে অনুগীতা বলা হয়। মহাভারতের আশ্বমেধিক পর্ব ৬৬ অধ্যায়ের অনুগীতার আলোচনা সমাপ্ত হলে, ৬৭ তম অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে,মহাভারতের উপদেশরুপ ইতিহাস অনুগীতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে অর্জুন শ্রবণ করার করার পর অজুর্নের মনে কোন সন্দেহ ছিল না যে কৃষ্ণ পরমেশ্বর ভগবান নন।অথবা মূর্খদের মতো অর্জুন বলেন নি, শ্রীকৃষ্ণ একজন যোগী, তিনি যোগস্থ হয়ে গীতার জ্ঞান আমাকে প্রদান করছেন,কিন্তু তিনি ঈশ্বর নন।বরং অর্জুনের ভাষায় শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমাত্মা পরমেশ্বর ভগবান,তিনিই ছিলেন পান্ডবদের বিজয়ের মূল কারন।অর্জুন বললেন- ত্বংপ্রসাদাজ্জয়ঃ প্রাপ্তো রাজ্ঞা বৃষ্ণিকুলোদ্বহ।। নিহতাঃ শত্রবশ্চাপি প্রাপ্তং রাজ্যমকণ্টকম্ ॥৬৷৷ নাথবন্তশ্চ ভবতা পান্ডবা মধুসূদন! ভবন্তং প্লবমাসাদ্য তীর্ণাঃ স্ম কুরুসাগরম্ ॥৭॥ বিশ্বকৰ্ম্মন্! নমস্তেহস্তু বিশ্বাত্মন্! বিশ্বসত্তম।। তথা স্বামভিজানামি যথা চাহং ভবান্ মতঃ ॥৮॥ ত্বত্তেজঃসম্ভবো নিত্যং হুতাশো মধুসূদন।। রতিঃ ক্রীড়াময়ী তুভ্যং মায়া তে রোদসী বিভো! ॥৯৷৷ ত্বয়ি সর্বমিদং বিশ্বং যদিদং স্থাণু জঙ্গমম্। ত্বং হি সর্বং বিকুরুষে ভূতগ্রামং চতুর্বিধম্ ॥১০॥ পৃথিবীং চান্তরিক্ষঞ্চ দ্যাঞ্চৈব মধুসুদন।। হসিতং তেহমলা জ্যোৎস্না ঋতবশ্চেন্দ্রিয়াণি তে ॥১১৷ -(মহাভারত,আশ্বমেধিক পর্ব,৬৭/৬-১১) অনুবাদঃ হে বৃষ্ণিবংশশ্রেষ্ঠ। রাজা যুধিষ্ঠির তোমারই অনুগ্রহে জয়লাভ করিয়াছেন, শত্রুগণকে সংহার করিয়াছেন এবং নিষ্কণ্টক রাজ্য পাইয়াছেন। হে মধুসূদন, একমাত্র তুমিই পাণ্ডবগণের প্রভু এবং পাণ্ডবেরা তোমাকেই নৌকারূপে পাইয়া কৌরবসমুদ্র পার হইয়াছেন। হে বিশ্বকৰ্ম্মন,হে সমগ্র বিশ্বের পরমাত্মা(বিশ্বাত্মন), হে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ, হে প্রভু মধুসুদন,তোমাকে নমস্কার। আমি মনে মনে তোমাকে যেরূপ ধারণা করি, কার্য্য দ্বারাও তোমাকে সেইরূপই জানিতেছি। অগ্নি সর্ব্বদাই তোমার তেজ হইতে উৎপন্ন হয় এবং রতি তোমারই ক্রীড়াস্বরূপা, আর স্বর্গ ও মর্ত্য তোমারই মায়া।হে দেবকীনন্দন, তুমি সন্তুষ্ট হইয়া আমাকে যা যা কিছু বলিতেছ সে সমস্তই ‘আমি করিব, এবিষয়ে আমার কোন বিবেচনা নাই। সুতরাং অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ থেকে অষ্টাদশ অধ্যায়রুপী ভগবদগীতার হুবহু জ্ঞান আশ্বমেধিক পর্ব, ১৭/১৪ থেকে ৬৬ অধ্যায়, অথাৎ মোট ৫৩ টি অধ্যায়ে এক প্রাচীন ইতিহাসের মাধ্যমে শ্রবণ করার পর মহাভারত,আশ্বমেধিক পর্ব,৬৭/৬-১১ শ্লোকে তিনি যদি শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবানরুপে সম্বোধন করেন,তাহলে এসমস্ত মূর্খরা কি অর্জুন থেকেও বড় পন্ডিত হয়ে গেছে?সুতারাং আমাদের উচিত মূর্খদের অপপ্রচারে কর্ণপাত না করে আদৌ তাদের প্রচার সত্য কিনা তা জানার জন্য মহাভারত পাঠ করা। এইভাবে মহাভারত এবং মহাভারতের অংশরুপে ভগবদগীতা শাস্ত্র অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ কখনো কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে যোগস্থ হয়ে অর্জুনকে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার জ্ঞান প্রদান করেন নি,বরং একাগ্রতার সাথে পরমেশ্বর ভগবানরুপে

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর, শ্রীকৃষ্ণ কি আদৌ গীতার জ্ঞান ভূূলে গিয়েছিলেন?

20250602 090849 Svadharmam

মহাভারত শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে শ্রীবিষ্ণু বলা হয়েছে,পরমেশ্বর ভগবান বলা হয়েছে। অনুগ্রহার্থং লোকানাং বিষ্ণু লোক নমস্কৃতঃ। বসুদেবাত্তু দেবক্যাং প্রাদুর্ভূতো মহাযশাঃ।। -(মহাভারত আদিপর্ব, ৫৮/১৩৮) অনুবাদঃ – ত্রিজগতের পূজনীয় মহাযশস্বী স্বয়ং বিষ্ণু লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য বসুদেব-দেবকীতে আবির্ভূত হইয়া ছিলেন৷ এছাড়াও মহাভারত শাস্ত্রের ভীষ্মপর্বের ৩৪ তম অধ্যায়ের ৮ নং শ্লোকে অথাৎ গীতা ১০/৮ নং শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন নিজেকে সমগ্র জগতের সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বররুপে দাবী করেন,তখন অর্জুন কোনরুপ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা না করে মহাভারত, ভীষ্মপর্ব ৩৪/১২-১৩ নং শ্লোকে অথাৎ গীতা ১০/১২-১৩ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণকে পরমব্রহ্ম বা পরমেশ্বর ভগবান বলে সম্বোধন করেন – অর্জুন উবাচ- পরং ব্রহ্ম পরং ধাম পবিত্রং পরমং ভবান্ । পুরুষং শাশ্বতং দিব্যমাদিদেবমজং বিভুম্ ॥ আহুস্তামৃষয়ঃ সর্বে দেবর্ষির্নারদস্তথা । অসিতো দেবলো ব্যাসঃ স্বয়ং চৈব ব্রবীষি মে ॥”                 -(গীতাঃ ১০/১২-১৩ঃঅর্জুন) অনুবাদঃ অর্জুন বললেন- তুমি ( শ্রীকৃষ্ণ) পরম ব্রহ্ম( ঈশ্বর) , পরম ধাম( পরম আশ্রয়), পরম পবিত্র ও পরম পুরুষ৷ তুমি নিত্য, দিব্য, আদি দেব, অজ ও বিভু। দেবর্ষি নারদ, অসিত, দেবল, ব্যাস আদি ঋষিরা তোমাকে সেভাবেই বর্ণনা করছে এবং তুমি নিজেও এখন আমাকে তা বলছ। এইভাবে সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলা হয়েছে,বিষ্ণু বলা হয়েছে। কিন্তু তারপরও শাস্ত্র জ্ঞানহীন কিছু মূর্খ আমাদের সমাজে রয়েছে,যারা সনাতনী শাস্ত্রে উল্লেখিত শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান রুপে গ্রহণ করতে  অস্বীকার করে।শুধু তাই নয় তারা জনসমাজে অপপ্রচার করছে যে,মহাভারতের আশ্বমেধিক পর্বে অজুর্ন যখন দ্বিতীয় বার কৃষ্ণকে গীতার জ্ঞান দান করতে অনুরোধ করেন ,তখন কৃষ্ণ বলছেন আমি গীতার জ্ঞান ভুলে গিয়েছি। তাই এই সমস্ত  মূর্খেরা  সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, কৃষ্ণ পরমেশ্বর  ভগবান নন,তিনি একজন মানুষ,তাই তিনি ভুলে যাওয়ার কথা বলছেন। অথচ তারা একবারও চিন্তা করে দেখে না,কৃৃষ্ণ কিভাবে গীতার জ্ঞান ভূলে যাবেন,তিনি নিজে গীতা ৪/১ -৩ নং শ্লোকে বর্ণনা করছেন- শ্রীভগবানুবাচ– ইমং বিবস্বতে যোগং প্রোক্তবানহমব্যয়ম্।বিবস্বান্মনবে প্রাহ মনুরিক্ষাকবেহব্রবীৎ ।।এবং পরম্পরাপ্রাপ্তমিমং রাজর্ষয়ো বিদুঃ।স কালেনেহ মহতা যোগো নষ্টঃ পরন্তপ ৷৷ ২৷৷স এবায়ং ময়া তেহদ্য যোগঃ প্রোক্তঃ পুরাতনঃ।ভক্তোহসি মে সখা চেতি রহস্যং হোতদুত্তমম্ ।। ৩ ।। -(গীতা ৪/১ -৩) অনুবাদঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন,আমি পূর্বে সূর্যদেব বিবস্বানকে এই অব্যয় জ্ঞানযোগ / গীতার জ্ঞান  বলেছিলাম। বিবস্বান তা মানবজাতির জনক মনুকে বলেছিলেন এবং মনু তা ইক্ষাকুকে বলেছিলেন।হে পরন্তপ, এভাবেই পরম্পরাক্রমে প্রাপ্ত এই পরম বিজ্ঞান রাজর্ষিরা লাভ করেছিলেন। কিন্তু কালের প্রভাবে পরম্পরা ছিন্ন হয়েছিল এবং তাই সেই যোগ নষ্টপ্রায় হয়েছে।সেই সনাতন যোগ(গীতার জ্ঞান) আজ আমি তোমাকে বললাম, কারণ তুমি আমার ভক্ত ও সখা এবং তাই তুমি এই বিজ্ঞানের অতি গূঢ় রহস্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে। তখন অর্জুন গীতা ৪/৪ শ্লোকে আমাদের হয়ে(যারা শ্রীকৃষ্ণের পরমেশ্বরত্ব সম্পর্কে অজ্ঞাত) শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞেস করলেন- অর্জুন উবাচ- অপরং ভবতো জন্ম পরং জন্ম বিবস্বতঃ। কথমেতদ বিজানীয়াং ত্বমাদৌ প্রোক্তবানিতি ।। -(গীতা ৪/৪) অনুবাদঃ অর্জুন বললেন,সূর্যদেব বিবস্বানের জন্ম হয়েছিল তোমার অনেক পূর্বে। তুমি যে আদিকালে তাঁকে এই জ্ঞান উপদেশ করেছিলে, তা আমি কেমন করে বুঝব? এর উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ গীতা ৪/৫-৮ শ্লোকে বললেন, শ্রীভগবানুবাচ- বহুনি মে ব্যতীতানি জন্মানি তব চার্জুন।তান্যহং বেদ সর্বাণি ন ত্বং বেথ পরন্তপ ।। ৫।।অজোহপি সন্নব্যয়াত্মা ভূতানামীশ্বরোহপি সন্।প্রকৃতিং স্বামধিষ্ঠায় সম্ভবাম্যাক্সমায়য়া ।। ৬।।যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্।। ৭।॥পরিত্রাণায় সাশূন্যা বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম।ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে ।। ৮।। -(গীতা ৪/৫-৮) অনুবাদঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন,হে পরন্তপ অর্জুন! আমার ও তোমার বহু জন্ম অতিবাহিত হয়েছে। আমি সেই সমস্ত জন্মের কথা স্মরণ করতে পারি, কিন্তু তুমি পার না।যদিও আমি জন্মরহিত, আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং যদিও আমি সর্বভূতের ঈশ্বর, তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আমি আমার আদি চিন্ময় রূপে যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।হে ভারত, যখনই ধর্মের গ্লানি হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখন আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই।সাধুদের পরিত্রাণ এবং দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই। আমরা গীতা ৪/১-৮ নং শ্লোক থেকে স্পষ্ট  দেখতে পাই,অর্জুনকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে গীতার জ্ঞান প্রদান করছেন, শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ অনুসারে তা বহু পূর্বে সূর্যদেব বিবস্বানকে প্রথমে তিনি তা দান করেন।সূর্যদেব বিবস্বান তা মনুকে  দান করেন,মনু তা ইক্ষাকুকে দান করেন।এইভাবে এই জ্ঞান গুরু শিষ্য পরম্পরায় প্রবাহিত হতে থাকে।কিন্তু কালের প্রভাবে এই জ্ঞান নষ্ট হলে শ্রীকৃষ্ণ পুনরায় তা অর্জুনকে দান করেন। (মহাভারত,শান্তিপর্ব ৩৪৮/৫১-৫২ শ্লোক অনুসারে, সূর্যদেব ত্রেতাযুগের শুরুতে অথাৎ ২০ লক্ষ ৫ হাজার বছর পূর্বে মনুকে গীতার জ্ঞান দান করেন।) তখন অর্জুন আমাদের হয়ে প্রশ্ন করছেন,সূর্যদেব বিবস্বানের জন্ম হয়েছিল তোমার অনেক পূর্বে। তুমি যে আদিকালে তাঁকে এই জ্ঞান উপদেশ করেছিলে, তা আমি কেমন করে বুঝব?তখন শ্রীকৃষ্ণ গীতা ৪/৫-৮ শ্লোকে বলছিলেন,তোমার ও আমার এই জগতে বহুবার জন্ম হয়েছে।সে সকল জন্মের কথা তোমার মনে নেই,কিন্তু আমার সবকিছু মনে আছে।কারন আমি সমস্ত জীবের ঈশ্বর  (ভূতানামীশ্বরোহপি সন),ঈশ্বররুপে আমি অজ অথাৎ আমার জন্ম নাই (অজোহপি),তবুও আমি  যুগে যুগে দুষ্টের দমন,শিষ্টের পালন এবং ধর্মসংস্থাপন করার জন্য  অবতীর্ণ হই(সম্ভবামি যুগে যুগে)।  এখন সেসমস্ত মূর্খদের উদ্দেশ্য আমাদের প্রশ্ন, গীতা ৪/১ শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন,আমি পূর্বে সূর্যদেবকে এই গীতার জ্ঞান দান করছি।গীতা৪/৫-৮ শ্লোক অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ কৃষ্ণ এই পৃথিবীতে দুষ্টের দমন, সন্তের রক্ষা এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য বহুবার বিভিন্ন অবতাররুপে আবির্ভূত হয়েছেন।সেসমস্ত আবির্ভাব বা দিব্য জন্মের কথা সবই কৃষ্ণের মনে আছে। অথচ অর্জুনের বর্তমান জীবনে কিছুদিন পূর্বে কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে ভগবদগীতার জ্ঞান ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অজুর্নকে দান করলেন, সে জ্ঞানের একটা লাইনও কৃষ্ণের মনে নাই,এ ধরনের কথা বলার পেছনে কি কারন হতে পারে? এ সমস্ত মূর্খরা এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না।অথচ  যেকোন জ্ঞানবান ব্যক্তি বুঝতে পারবে পরমেশ্বর ভগবানরুপে শ্রীকৃষ্ণ যে এ ধরনের কথা বলছেন তাঁর পেছনে কোন হেতু বা কারন আছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যদি গীতার জ্ঞান ভুলে যাবেন, তাহলে সে একই কৃষ্ণের পক্ষে অজুর্নকে বহু প্রাচীন ইতিহাসের মাধ্যমে হুবহু ভগবদ্গীতা ১৮ টি অধ্যায়ের মতো মহাভারতের আশ্বমেধিক পর্ব,  ১৭- ৬৬ অধ্যায় অথাৎ  ৫০ টি অধ্যায়ে অনুগীতা দান করা কিভাবে সম্ভব হল?বস্তুত পক্ষে পরমাত্মা কৃষ্ণের উদ্দেশ্য ছিল জড় জগতে পুনরায় সিদ্ধ  ব্রাহ্মণ এবং মহর্ষি কশ্যপ,ব্রাহ্মণ এবং ব্রাহ্মণী, গুরু এবং শিষ্যের তত্ত্ব জ্ঞান আলোচনার মাধ্যমে  গীতার জ্ঞান প্রদান  করা,যাকে মহাভারতে অনুগীতা বলা হয়েছে। মূল ঘটনাঃ মহাভারতের ১৪ তম আশ্বমেধিক পর্বের ১৭তম অধ্যায়ে অর্জুনের প্রশ্ন ছিল, হে কৃষ্ণ! তুমি যে যুদ্ধক্ষেত্রে গীতার জ্ঞান আমাকে দান করেছ তা আমি এখন ভুলে গেছি, সে জ্ঞান পুনরায় আমাকে দান কর। বিদিতং মে মহাবাহো! সংগ্রামে সমুপস্থিতে। মাহাত্ম্যং দেবকীপুত্র! তচ্চ তে রূপমৈশ্বরম্ ॥৫॥ যত্তু তদ্‌ভবতা প্রোক্তং পুরা কেশব! সৌহৃদাৎ। তৎসর্ব্বং পুরুষব্যাঘ্র! নষ্টং মে ব্যগ্রচেতসঃ ॥৬॥ মম কৌতূহলং স্বস্তি তেষর্থেষু পুনঃ পুনঃ। ভবাংস্তু দ্বারকাং গন্তা নচিরাদিব মাধব! ॥৭॥   -(মহাভারত,অশ্বমেধিক  পর্ব  ১৭/৫-৭) অনুবাদঃ মহাবাহু দেবকীপুত্র! যুদ্ধ উপস্থিত হইলে আপনার মাহাত্ম্য আমি জানিয়াছি। তদানীন্তন আপনার সেইরূপ-ঈশ্বরেরই রূপ ॥৫পুরুষশ্রেষ্ঠ কেশব! তুমি সৌহাদ্যবশতঃ পূর্ব্বে যে সকল কথা বলেছিলে, আমি যুদ্ধে আসক্তচিত্ত হওয়ায় সে সমস্তই আমার লুপ্ত হয়ে গিয়াছে(ভূলে গিয়েছি)। হে মাধব,সেই সকল বিষয় পুনরায় শ্রবণ করার জন্য আবার আমার কৌতুহল হচ্ছে,কেননা তুমি খুব শীঘ্রই দ্বারকায় গমন করবে। কৃষ্ণ

শ্রীকৃষ্ণ তো নিজে ঈশ্বর তাহলে গীতা ১৮/৬১-৬২ নং শ্লোক অনুযায়ী তিনি কেন অর্জুনকে ঈশ্বরের শরনাগত হতে বললেন ?

20250603 135651 Svadharmam

শ্রীকৃষ্ণ যে পরমেশ্বর ভগবান এ কথাটি স্পষ্টভাবে বেদ,অষ্টাদশ পুরান,মহাভারত ইত্যাদি শাস্ত্রে বর্ণিত আছে।মহাভারত শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে বিষ্ণু বলা হয়েছে(“অনুগ্রহার্থং লোকানাং বিষ্ণুলোক নমস্কৃতঃ।বসুদেবাত্তু দেবক্যাং প্রাদুর্ভূতো মহাযশাঃ।।” “ত্রিজগতের পূজনীয় মহাযশস্বী স্বয়ং বিষ্ণু লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য বসুদেব-দেবকীতে আবির্ভূত হইয়া ছিলেন৷” -মহাভারতঃ আদিপর্ব, ৫৮/১৩৮)। শ্রীকৃষ্ণ যে পরমেশ্বর ভগবান,স্বয়ং এ কথাটি শ্রীকৃষ্ণ নিজের মুখে সরাসরি ভগবদ্গীতা ৪/৬,৭/৭,৭/২৫,৭/১৯,৭/২৫,৯/৪,৯/১০, ৯/১৭,৯/১১,৯/১৭,১০/২,১৫/১৫ ইত্যাদি বহু শ্লোকের মতোই গীতা ১০/৮ নং শ্লোকে অর্জুনকে বর্ণনা করেন। অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে । ইতি মত্বা ভজন্তে মাং বুধা ভাবসমন্বিতাঃ।।৮॥ -(গীতা ১০/৮ঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ) অনুবাদঃ আমি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা,সবকিছু আমার থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এরুপ জেনে জ্ঞানীগণ শুদ্ধভক্তি সহকারে আমার ভজনা করেন। অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকে তা শ্রবণ করে কোনরুপ প্রশ্ন জিজ্ঞেস না করে গীতা ১০/১২-১৩ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণকে পরমব্রহ্ম অথাৎ পরমেশ্বর ভগবান বলে সম্বোধন করেন,এবং বলেন যে আমি যেরুপে তোমাকে পরমব্রহ্ম রুপে সম্বোধন করছি সেরুপে নারদ,অসিত,দেবল এবং ব্যাসদেব আদি ঋষিরা পরমব্রহ্ম রুপে জানে।অথাৎ অর্জুন এসমস্ত ঋষিদের থেকে শ্রবণ করেছিলেন যে, শ্রীকৃষ্ণ কোন সাধারন মানুষ নন,তিনি হলেন পরমেশ্বর ভগবান, পরমব্রহ্ম স্বয়ং। “পরং ব্রহ্ম পরং ধাম পবিত্রং পরমং ভবান্।পুরুষং শাশ্বতং দিব্যমাদিদেবমজং বিভুম্।।আহুস্ত্বামৃষয়ঃ সর্বে দেবর্ষিনারদস্তথা।অসিতো দেবলো ব্যাসঃ স্বয়ং চৈব ব্রবীষি মে।।” –( গীতা ১০/১২-১৩ঃ অর্জুন) অনুবাদঃ অর্জুন বললেন-  তুমি (শ্রীকৃষ্ণ) পরম ব্রহ্ম, পরম ধাম, পরম পবিত্র ও পরম পুরুষ। তুমি নিত্য, দিব্য, আদি দেব, অজ ও বিভু। দেবর্ষি নারদ, অসিত, দেবল, ব্যাস আদি ঋষিরা তোমাকে সেভাবেই বর্ণনা করেছেন এবং তুমি নিজেও এখন আমাতে তা বলছ। এইভাবে সমগ্র গীতা শাস্ত্রের শিক্ষা অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান।এছাড়াও শ্রীকৃষ্ণ যে নিজে ঈশ্বর, স্বয়ং পরমেশ্বর বিষ্ণু, সে বিষ্ণু রুপটি অর্জুনের অনুরোধে গীতা ১১/৪৬,৪৯,৫০ নং শ্লোক অনুযায়ী অর্জুনকে প্রদর্শন করান।এর পূর্বে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে গীতা ১১/৫-৩৬ নং শ্লোক অনুযায়ী বেদে বর্ণিত ঈশ্বরের বিরাট বা বিশ্বরুপ প্রদর্শন করান। এখন প্রশ্ন হল শ্রীকৃষ্ণ তো পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং তাহলে তিনি কেন তার চরনে শরনাগত হতে না বলে গীতা ১৮/৬১-৬২ নং শ্লোক অনুযায়ী ঈশ্বরের শরনাগত হতে বলেছেন (“ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্ঠতি ।ভ্রাময়ন্ সর্বভূতানি যন্ত্রারূঢ়ানি মায়য়া ॥৬১॥ তমেব শরণং গচ্ছ সর্বভাবেন ভারত ।তৎপ্রসাদাৎ পরাং শান্তিং স্থানং প্রাপ্স্যসি শাশ্বতম্ ॥”৬২॥)?এর কারন কি? কেন তিনি এইভাবে কথা বলছেন? এর উত্তর হল,ধরুন আপনি একটি কোম্পানির সর্বোচ্চ উর্ধতন কর্মকর্তা । এক কর্মীকে দিক নির্দেশনা দেওয়ার সময় তাকে বলছেন যে, আপনার উচিত সর্বোচ্চ উর্ধতন কর্মকর্তাদের অনুসরণ করা। এবার আমার প্রশ্ন হল আপনার প্রতি, আপনি কাকে অনুসরণ করতে বললেন?? এখানে কি পরোক্ষভাবে আপনাকেই অনুসরণের কথা আপনি আপনার অধঃতন কর্মকর্তাকে নির্দেশ করেন নি?? এমনকি ভগবদ্গীতা শাস্ত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে প্রত্যক্ষভাবে বা সরাসরি তার চরনে শরনাগত হতে বলেছেন। সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ । অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ ॥৬৬॥ – গীতা ১৮/৬৬ঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অনুবাদঃ সমস্ত ধর্ম ( মনুষ্যসৃষ্ট ধর্ম) পরিত্যাগ করে কেবল আমার শরনাগত হও।আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব।দুঃচিন্তা কর না। এভাবেই কৃষ্ণ ভগবদ্গীতা শাস্ত্রে কখনো প্রত্যক্ষ ভাবে কখনো পরোক্ষভাবে তাঁরই কথা বলেছেন। তাঁরই চরনে শরনাগত হওয়ার কথা বলছেন। হরে কৃষ্ণ। প্রণাম

বৈষ্ণবগণ কি বেদবিহিত ধর্ম পালন করেন না?

476343907 651538754109881 6879560205467243304 n Svadharmam

‘বৈষ্ণব’ হচ্ছেন তাঁরাই, যারা শ্রীবিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত। বেদে শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীবিষ্ণুকে পরমেশ্বর বলা হয়েছে এবং তার সেবা করাকেই ধর্ম বলে নির্দেশ করা হয়েছে। একইসাথে বেদশাস্ত্রে সমগ্র মানবজাতিকেই বিষ্ণুভক্ত বা বৈষ্ণব হওয়ার জন্য উপদেশ প্রদান করা হয়েছে— “বৈষ্ণবমসি বিষ্ণবে ত্বা॥”: -(শুক্লযজুর্বেদ ৫।২১) অনুবাদঃ বৈষ্ণব হও, বিষ্ণুর প্রীতির জন্য তোমাকে নিযুক্ত করছি।” (শুক্লযজুর্বেদ ৫।২১)। সুতরাং যারা বৈষ্ণব, তাঁরা শ্রীবিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণের সেবক, তাই তাঁরা শতভাগ বেদ মান্য করেন এবং বেদবিহিত ধর্ম পালন করেন। এখন প্রথমে আমরা বেদ সম্পর্কে আলোচনা করব। বেদ আমাদের মূল ধর্মগ্রন্থ। বেদ শব্দের অর্থ হল জ্ঞান। যে শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবানের মহিমাগাথা আলোচনা করা হয়েছে, জীবের সুখ এবং শান্তির পথ নির্দেশ রয়েছে তাঁকে বেদ বলা হয়। বেদের অপর নাম শ্রুতি। বেদ চার ভাগে বিভক্ত— ঋগ্বেদ, যর্জুবেদ (শুক্ল ও কৃষ্ণ), সামবেদ এবং অথর্ববেদ। প্রতিটি বেদেরইচারটি অংশ রয়েছে— সংহিতাভাগ, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ। সামবেদীয় ছান্দোগ্য উপনিষদে (৭।১।২) মহাভারত ও রামায়ণ নামক ইতিহাস এবং অষ্টাদশ পুরাণশাস্ত্রকে পঞ্চম বেদ হিসেবে সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়েছে— “সহোবাচর্গ্বেদং ভগবোধ্যেমি যজুর্বেদং সামবেদমাথর্বণং চতুর্থমিতিহাসপুরাণং পঞ্চমং বেদানাং“ অনুবাদঃনারদ বললেন, “হে ভগবান, আমি অবগত আছি, ঋক্ ,সাম, যজুঃ ও অর্থব— চারটি বেদ। আর বেদের পঞ্চমটি হল অষ্টাদশ পুরাণ এবং ইতিহাস (মহাভারত ও রামায়ণ)।” এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট করা হয়েছে অমলপুরাণ শ্রীমদ্ভাগবত শাস্ত্রে (৩।১২।৩৯)। সেখানে বলা হয়েছে- পুরাণসমূহই পঞ্চম বেদ “পুরাণাণি পঞ্চমং বেদম্‌।” আজকাল কিছু ব্যক্তি অল্পবিদ্যার ফলে নিজেরা তত্ত্ব সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হয়ে অন্যদেরও বিভ্রান্ত করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরল সনাতনীর মাঝে প্রচার করছে বৈষ্ণবগণ নাকি বেদবিহিত ধর্ম পালন করেন না। এইভাবে তাঁরা সনাতনীদের বোঝাতে চাচ্ছে বৈষ্ণবগণ বেদ মানে না বা বেদের ধর্ম পালন করে না। তাই তাঁরা সনাতনী নন। অথচ বৈষ্ণবগণ বেদের প্রকৃত অনুসারী। বেদ অখিল শাস্ত্রের মূল এবং তাই বৈষ্ণবগণ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর “বেদ না মানিলে হয় তো নাস্তিক “— এই বাক্যের দৃঢ় অনুসারী।উদাহরণস্বরূপ ব্রহ্ম-মাধ্ব-গৌড়ীয় বৈষ্ণব পরম্পরাগত আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন) এর ভক্তদের দেখা যাক। বৈষ্ণব হিসেবে প্রতিটি ইস্‌কন ভক্ত প্রতিদিন ভোর চারটায় ব্রাহ্মমুহূর্তে শয্যা ত্যাগ করার পর রাত্র ১০টায় শয়ন করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বেদবিহিত ধর্ম আচরণ করেন। বেদ নিষেধ করে এমন কোন কর্ম বৈষ্ণবগণ বা ইস্‌কন ভক্তগণ পালন করেন না। ইস্‌কনের বৈষ্ণবগণ প্রতিদিন ভোর চারটায় শয্যা ত্যাগ করে স্নান করে— প্রথমে দ্বাদশ অঙ্গে তিলক ধারণ করেন, যা বেদবিহিত। এরপর গুরুদেব এবং পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীবিষ্ণুর উদ্দেশ্য প্রণতি নিবেদন করে বিনীত প্রার্থনা এবং স্তবস্তুতি পাঠ করেন, যা বেদে নির্দেশিত। এরপর প্রতিটি ইস্‌কন ভক্ত বেদোক্ত হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন এবং জপ করেন। এরপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতার শ্রীনৃসিংহদেবের উদ্দেশ্যে পূজা এবং স্তব পাঠ করা হয়, যা বেদবিহিত। এছাড়াও গায়ত্রী সংস্কারপ্রাপ্ত ভক্তগণ গায়ত্রী মন্ত্র এবং প্রণব জপ করেন, যা বেদ বিহিত। এরপর তুলসীবৃক্ষের আরাধনা করা হয়, এটিই বেদবিহিত। ভক্তগণ প্রতিদিন শ্রীমদ্ভাগবত, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, ঈশোপনিষদ প্রভৃতি বৈদিক শাস্ত্র পাঠ করেন, যা বেদবিহিত। এরপর বৈষ্ণবগণ বেদের বর্ণিত পদ্ধতিতে নিরামিষ খাদ্যসামগ্রী দ্বারা যজ্ঞরূপী বিষ্ণু বা কৃষ্ণের আরাধনাপূর্বক সেই নিবেদিত আহার্য প্রসাদরূ পে গ্রহণ করেন। এছাড়াও ইস্‌কন বৈষ্ণবগণের দশবিধ সংস্কার অনুষ্ঠানে অগ্নিহোত্র যজ্ঞাদি অনুষ্ঠিত হয়, যা নিঃসন্দেহে বেদবিহিত কেননা সেসব যজ্ঞে বেদমন্ত্র পাঠ করা হয়। এছাড়াও প্রতিটি বৈষ্ণবগণ প্রতি মাসে দুইটি একাদশী ব্রত পালন করেন, যা বেদে নির্দেশিত হয়েছে। এখন আমরা উপর্যুক্ত আলোচ্য বিষয়ের সংক্ষিপ্ত বেদপ্রমাণ তুলে ধরবো – ১। দ্বাদশ অঙ্গে তিলক ধারণঃ সামবেদীয় বাসুদেব উপনিষদে গোপীচন্দন দ্বারা উদ্ধপুণ্ড্র তিলক ধারনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে – ওঁ নমস্কৃত্য ভগবান্নারদঃ সর্ব্বেশ্বরং বাসুদেবং পপ্রচ্ছ অধীহি ভগবন্নূপূণ্ড্র বিধিং দ্রব্যমন্ত্রস্নানাদিসহিতং মে ব্রিহীতি। তংহোবাচ ভগবান বাসুদেবো বৈকুন্ঠস্থানাদুৎপন্নং মম প্রীতিকরং মদ্ভক্তৈর্ব্রহ্মাদিভিধারিতং বিষ্ণুচন্দনং মমঙ্গে প্রতিনিমালিপ্তং গোপীভিঃ প্রক্ষালনাদে গোপীচন্দনমাখ্যাতং মদঙ্গলেপনং পুণ্যাং চক্রতীর্থান্তস্থিতং চক্রসমাযুক্তং পীতবর্ণং মুক্তিসাধনং ভবতি॥ অথ গোপীচন্দনং নমস্কৃত্বোদ্ধৃত্য। গোপীচন্দন পাপঘ্ন বিষ্ণুদেহসমুদ্ভব॥ অনুবাদ: শ্রীনারদ সর্বেশ্বর ভগবান বাসুদেবকে প্রণাম নিবেদন করে জিজ্ঞাসা করলেন, হে ভগবান, আপনি আমাকে দ্রব্য, মন্ত্র ও স্নানাদির সহিত উর্দ্ধপুণ্ড্রর তিলক ধারণ বিধি সম্বন্ধে উপদেশ প্রদান করুন।ভগবান বাসুদেব তখন বললেন, বিষ্ণুচন্দন নামক দ্রব্য বৈকুণ্ঠস্থান হতে উৎপন্ন হয়েছে, তাই তা আমার অতিশয় প্রিয়। ব্রহ্মা প্রভৃতি আমার ভক্তগণ তা ধারণ করেন। গোপরমণীগণ তা আমার শরীরে লেপন করতেন, এইজন্য তা গোপীচন্দন নামে বিখ্যাত। এ গোপীচন্দন আমার পবিত্র অঙ্গলেপন, তা চক্রতীর্থে অবস্থিত, চক্রচিহ্নযুক্ত এবং পীতবর্ণ, তাই তা মুক্তির সাধন। অতএব গোপীচন্দনকে নমস্কার করে উত্তোলন করবে, কেননা গোপীচন্দন পাপবিনাশকারী এবং বিষ্ণুর দেহ থেকে উদ্ভুত। উল্লেখ্য, মুক্তিকোপনিষদের ১।২৭-৩৬ মন্ত্রসমূহে ১০৮টি উপনিষদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে ১।৩২ মন্ত্র অনুসারে বাসুদেব উপনিষদ হচ্ছে ৫৬ তম উপনিষদ এবং ১।৫৪ মন্ত্র অনুসারে বাসুদেব উপনিষদ সামবেদের অন্তর্গত। ২। পরমেশ্বর ভগবানরূপে শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীবিষ্ণুর আরাধনাঃ শ্রীকৃষ্ণের প্রকাশ শ্রীবিষ্ণু। শ্রীবিষ্ণু এবং শ্রীকৃষ্ণ একই পরমেশ্বর ভগবান। সমগ্র বেদে শ্রীকৃষ্ণকে বিষ্ণু, কৃষ্ণ,গোপাল, দেবকীপুত্র ইত্যাদি নামে সম্বোধন করা হয়েছে। ঋগ্বেদীয় পুরুষসুক্তের বর্ণনা অনুসারে বিষ্ণু সমগ্র জগতে ব্যাপৃত। পুরুষসূক্তে বিষ্ণুর বিরাটরূপ বা বিশ্বরূপের বর্ণনা করা হয়েছে যা শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে দর্শন প্রদান করেছিলেন (গীতা ১১।৫-৪৪)। পরে অর্জুনের প্রার্থনায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে চতুর্ভূজ বিষ্ণুরূপ প্রদর্শন করেছিলেন (গীতা ১১।৪৬-৫০)। বৈষ্ণবগণ বেদোক্ত পরমাত্মা পরমেশ্বর ভগবানরুপে শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীবিষ্ণুর আরাধনা করেন। ঋগ্বেদপ্রমাণে শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীবিষ্ণু হলেন পরমেশ্বর ভগবান – “কালিকো নাম সৰ্পো নবনাগসহস্রবলঃ। যমুনহ্রদে হ সো জাতো অসৌ নারায়ণবাহনঃ॥ যদি কালিকদূতস্য যদি কাঃকালিকাদ্ ভয়ম্। জন্মভূমিং পরিক্রান্তো নির্বিষো যাতি কালিকঃ॥” ~ (ঋগ্বেদ, আশ্বলায়ন শাখা, ০৭।৫৬।৪-৫) অনুবাদ: “যমুনার হ্রদে আগত সহস্র হস্তির ন্যায় বলশালী সেই কালিক নামক সর্প নারায়ণের বাহন (নারায়ণ বা কৃষ্ণ, তিনি তাঁর চরণযুগল স্থাপন করে কালিয় সর্পের উপর নৃত্য করেছিল, তাই কালিয় সর্পকে এখানে নারায়ণের বাহন বলা হয়েছে)।কালিক সর্প কাঃকালিক যার দূত, তাঁর দ্বারা ভীত হয়েছিল। জন্মভূমি ত্যাগ করে সে নির্বিষ হয়েছিল।(গরুড়কে এখানে কাঃকালিক বলা হয়েছে, গরুড়ের ভয়ে কালিয় যমুনা নদী সংলগ্ন একটি হ্রদে আশ্রয় নিয়েছিল। পরবর্তীতে যমুনার হ্রদে বসবাসকারী কালিয় কৃষ্ণের পাদস্পর্শে বিষহীন হয়েছিল) এছাড়াও বিভিন্ন উপনিষদে বর্ণিত হয়েছে, “ব্রহ্মন্যো দেবকীপুত্রঃ” (কৃষ্ণযজুর্বেদোক্ত নারায়ণ উপনিষদ, মন্ত্র ৪) অনুবাদঃ দেবকীপুত্র শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর ভগবান। “নারায়ণায় বিদ্মহে বাসুদেবায় ধীমহি। তন্নো বিষ্ণুঃ প্রচোদয়াৎ॥ (তৈত্তিরীয় আরণ্যক, ১০।১; নারায়ণ উপনিষদ: ১০।১।২৯) অনুবাদ: “আমরা নারায়ণকে জানব। তাই বসুদেবতনয় বাসুদেবের ধ্যান করি। সেই ধ্যানে তিনি আমাদের প্রেরণ করুন।” “যো ব্রহ্মানং বিদধাতি পূর্বং যো বৈ বেদাংশ্চ স্ম কৃষ্ণঃ” (অথর্ববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদ ১।২৪) অনুবাদ: ব্রহ্মা যিনি পূর্বকালে বৈদিক জ্ঞান প্রদান করেন, তিনি সেই জ্ঞান সৃষ্টির আদিতে শ্রীকৃষ্ণের থেকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। “একো বশী সর্বগঃ কৃষ্ণ ঈড্যঃ” (গোপালতাপনী উপনিষদ ১।২১) অনুবাদ: সেই একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই পরম পুরুষোত্তম ভগবান,তিনিই আরাধ্য। সচ্চিদানন্দরূপায় কৃষ্ণায়াক্লিষ্টকারিনে। নমো বেদান্তবেদ্যায় গুরুবে বুদ্ধিসাক্ষিনে॥ (গোপালতাপনী উপনিষদ ১।১) অনুবাদ: আমি শ্রী কৃষ্ণের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম জ্ঞাপন করছি যার আপ্রাকৃত রূপ সৎ,চিৎ ও আনন্দময়। তাকে জানার অর্থ সমগ্র বেদকে জানা। তদ্ধৈতদ্ ঘোর আঙ্গিরসঃ কৃষ্ণায় দেবকীপুত্ৰায়োক্ত্বোবাচাপিপাস এব স বভূব সোঽস্তবেলায়ামেতত্রয়ং প্রতিপদ্যেতাক্ষিতমস্যচ্যুতমসি প্রাণসংশিতমসীতি তত্রৈতে দ্বে ঋচৌ ভবতঃ॥ আদিৎ প্রত্নস্য রেতসঃ উদ্বয়ং তমসম্পরি জ্যোতিঃ পশ্যন্ত উত্তরং স্বঃ পশ্যন্ত উত্তরং দেবং দেবত্রা সূর্যমগন্ম জ্যোতিরুত্তমমিতি জ্যোতিরুত্তমমিতি॥ ~ (ছান্দোগ্য উপনিষদ ৩।১৭।৬-৭) অনুবাদ: আঙ্গিরস ঘোর পূর্বোক্ত এই যজ্ঞবিজ্ঞান দেবকীপুত্র কৃষ্ণকে উপদেশ দিয়ে