কর্ম বড় নাকি ধর্ম

কর্ম বড় নাকি ধর্ম এটা বোঝার পূর্বে কর্মের সংজ্ঞা জানাটা খুব জরুরি। শ্রীবিষ্ণুপুরাণে বর্ণিত রয়েছে- “কর্ম তাকেই বলা হয়, যা বন্ধনের কারণ না হয় এবং বিদ্যাও তাকেই বলা যায় যা মুক্তির সাধন হয়। এসব ছাড়া অন্য কর্ম তো পরিশ্রমরূপ এবং অন্য বিদ্যা কলাকৌশলমাত্র।” – (শ্রীবিষ্ণুপুরাণ: ১/১৯/৪১) (দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর প্রতি প্রহ্লাদ মহারাজ) আমরা জানি যেসমস্ত কর্ম কৃষ্ণকেন্দ্রিক নয় তা বন্ধনের কারণ আর যে কর্ম কৃষ্ণের প্রীতি বিধানে যুক্ত তা মুক্তিদায়ক। যেমন ভগবদগীতায় ভগবান বলেন- “বিষ্ণুর প্রীতি সম্পাদন করার জন্য কর্ম করা উচিত; তা না হলে কর্মই এই জড় জগতে বন্ধনের কারণ। তাই, হে কৌন্তেয়! ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের জন্যই কেবল তুমি তোমার কর্তব্যকর্ম অনুষ্ঠান কর এবং এভাবেই তুমি সর্বদাই বন্ধন থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।” – (ভ:গী: ৩/৯) বিষ্ণুপুরাণোক্ত প্রহ্লাদ মহারাজের বাণী ও ভগবদগীতার বাণী থেকে সহজেই বুঝতে পারা যায় যদি কর্মের উদ্দেশ্য বা কেন্দ্র কৃষ্ণ না হন তবে তা মুক্তিদায়ক হয়না, ফলস্বরূপ সেই কর্ম কেবলই কলাকৌশল মাত্র অথবা কেবলই পরিশ্রম। তাই আমাদের কৃষ্ণের সন্তুষ্টির জন্য কর্ম সম্পাদন করা কর্তব্য। কর্মের এই অতি সুন্দর ব্যবস্থাপনাকে বলা হয় কৃষ্ণভাবনা। এভাবেই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কেন্দ্র করে জীবন পরিচালনা করা উচিত। “পৃথিবীতে ধর্ম নামে যাহা কিছু চলে ভাগবত কহে তাহা পরিপূর্ণ ছলে” অতএব, প্রকৃত ধর্ম হচ্ছে কৃষ্ণের সন্তুষ্টি বিধানে কৃত কর্ম এবং কর্মের সংজ্ঞা এবং উদ্দেশ্যও হচ্ছে সেটি। ধর্ম বড় নাকি কর্ম বড় বিষয়টি এমন নয়। আসলে কর্মের উদ্দেশ্যে এবং কর্ম কর্তার মনোবৃত্তির উপর নির্ভর করে তা প্রতিষ্ঠিত হয়। মোটকথা হচ্ছে কর্মকে যদি ধর্মে রূপান্তরিত করা যায় তবে তা মহান অন্যথায় সেইসব কর্ম গাধার খাটুনি ছাড়া কিছুই না।। ধন্যবাদ।। ।। হরেকৃষ্ণ ।।
একাদশী Vs রোজা

একাদশী Vs রোজা আমরা বিশেষ করে বাংলাদেশী হিন্দুরা একাদশী ব্রত পালনকালে যখন সংখ্যাগুরু মুসলমান সিনিয়র-জুনিয়র, বন্ধুবান্ধবদের কাছে থেকে একাদশী নিয়ে এক ধরনের ব্যাঙ্গাত্মক বাক্য ব্যবহার করতে শুনি। তাদের এই বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের দ্বারা অনেক হিন্দুরা লজ্জায় পড়ে যান। আজকের এই লিখাটি ঐ সমস্ত বিভ্রান্তি দূর করতে একটু হলেও সাহায্য করবে। জনৈকঃ “তোমরা তো খেয়ে দেয়ে একাদশী উপবাস থাকো। আমাদের রোজা দেখছো একদম কিছু না খেয়ে সারাদিন পার করতে হয়। খেয়ে দেয়ে উপবাস এটা হইলো কিছু” পি. চৈতন্যচন্দ্র দাসঃ আপনার এবং আপনাদের সংস্কৃতিকে সম্মান জানিয়ে বলছি শুনুন, একাদশী ব্রত ও রোজাকে কোনো মতেই কম্পেয়ার করা যায় না। যারা মিলাতে চায় তারা আসলেই বোকা। তাই প্রথমত বলতে চাই আমরা হিন্দুরা বেদের নির্দেশিত ধর্ম পালন করি যা পরম সত্য। আধুনিক বিজ্ঞান ক্রমেই সেই সত্যের কাছে পৌঁছাচ্ছে মাত্র। একাদশী কেবল এক ব্রতের নাম নয়। এটি এক মহাজাগতিক বিষয়। এটি কেবল একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী কিংবা সম্প্রদায় বিশেষের বর্ষ ক্যালেন্ডারের মতো নয় যে, বছরের কোনো এক মাসেই কেবল পালিত হবে। একাদশী মূলত কি? একাদশী একটি তিথি, যা প্রত্যেক মাসে দুইবার করে আবর্তিত হয়। আমরা প্রত্যেকেই জানি, ০১ দিন = ০৮ প্রহর ০১ সপ্তাহ = ০৭ দিন ০১ মাস = ০২ পক্ষ ০১ পক্ষ = ১৫ দিন/তিথি উক্ত দুটি পক্ষের নাম হল- শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষ। ০১টি পক্ষে যে ১৫টি তিথি থাকে তার ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন- ০১. প্রতিপদ, ০২. দ্বিতীয়া, ০৩. তৃতীয়া, ০৪. চতুর্থী, ০৫. পঞ্চমী, ০৬. ষষ্ঠী, ০৭. সপ্তমী, ০৮. অষ্টমী, ০৯. নবমী, ১০. দশমী, ১১. একাদশী, ১২. দ্বাদশী, ১৩. ত্রয়োদশী, ১৪. চতুর্দশী, ১৫.পূর্ণিমা/অমাবস্যা (শুক্লপক্ষ/কৃষ্ণপক্ষ) এখন দেখেন তো এই পৃথিবীতে পূর্ণিমা ঘটে কি না? অমাবস্যা হয় কি না? পূর্ণিমা/অমাবস্যার সাথে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা সম্পর্কিত কি না? জনৈকঃ হ্যাঁ। পি. চৈতন্যচন্দ্র দাসঃ হুম, এর সবই বাস্তব এবং বিজ্ঞানসম্মত। এমন তো নয় যে পূর্ণিমার চাঁদ কেবল হিন্দুদের আলোকিত করে, আর অমাবস্যার অন্ধকার কেবল মুসলমান, খ্রিস্টান, ইহুদি ইত্যাদিদের অন্ধকারাচ্ছন্ন রাখে! তাহলে একাদশী তিথিও তো সবার জন্যই প্রযোজ্য ঠিক যেমনটা পূর্ণিমা থেকে অমাবস্যা সবার জন্য সমানভাবে আবর্তিত হয়। অতএব, একাদশী তিথি সবার জন্য প্রযোজ্য এটা চাক্ষুষ প্রমাণিত বিজ্ঞান। এটি তেমন কোনো রকেট সাইন্স নয় যে বুঝতে অসুবিধা হবে। জনৈকঃ ……………….. পি. চৈতন্যচন্দ্র দাসঃ এবার আসুন, অন্যান্য এতোগুলো তিথি থাকলেও প্রত্যেক মাসে আসা নিয়মিত দুটি একাদশী তিথি’তেই কেন আমাদের ব্রত পালন করা আবশ্যক এই বিষয়ে কিছু জানা যাক। বৈদিক শাস্ত্রে একাদশী ব্রত উৎপত্তি বিষয়ে পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, বরাহপুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও বৈষ্ণবস্মৃতিরাজ শ্রীহরিভক্তিবিলাস আদি গ্রন্থে বর্ণিত আছে। একাদশীর আবির্ভাবঃ পদ্মপুরাণে একাদশী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে একসময়- “জৈমিনি ঋষি তাঁর গুরুদেব মহর্ষি ব্যাসদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে গুরুদেব! একাদশী কি? একাদশীতে কেন উপবাস করতে হয়? একাদশী ব্রত করলে কি লাভ? একাদশী ব্রত না করলে কি ক্ষতি? এ সব বিষয়ে আপনি দয়া করে বলুন। মহর্ষি ব্যাসদেব তখন বলতে লাগলেন-সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান এই জড় সংসারে স্থাবর জঙ্গম সৃষ্টি করলেন। মর্ত্যলোকবাসী মানুষদের শাসনের জন্য একটি পাপপুরুষ নির্মাণ করলেন। সেই পাপপুরুষের অঙ্গগুলি বিভিন্ন পাপ দিয়েই নির্মিত হল। পাপপুরুষের মাথাটি ব্রহ্মহত্যা পাপ দিয়ে, চক্ষুদুটি মদ্যপান, মুখ স্বর্ণ অপহরণ, দুই কর্ণ-গুরুপত্নী গমন, দুই নাসিকা-স্ত্রীহত্যা, দুই বাহু-গোহত্যা পাপ, গ্রীবা-ধন অপহরণ, গলদেশ-ভ্রুণহত্যা, বক্ষ-পরস্ত্রী-গমন, উদর-আত্মীয়স্বজন বধ, নাভি-শরণাগত বধ, কোমর-আত্মশ্লাঘা, দুই উরু-গুরুনিন্দা, শিশ্ন-কন্যা বিক্রি, মলদ্বার-গুপ্তকথা প্রকাশ পাপ, দুই পা- পিতৃহত্যা, শরীরের রোম-সমস্ত উপপাতক। এভাবে বিভিন্ন সমস্ত পাপ দ্বারা ভয়ঙ্কর পাপপুরুষ নির্মিত হল। পাপপুরুষের ভয়ঙ্কর রূপ দর্শন করে ভগবান শ্রীবিষ্ণু মর্ত্যের মানব জাতির দুঃখমোচন করবার কথা চিন্তা করতে লাগলেন। একদিন গরুড়ের পিঠে চড়ে ভগবান চললেন যমরাজের মন্দিরে। ভগবানকে যমরাজ উপযুক্ত স্বর্ণ সিংহাসনে বসিয়ে পাদ্য অর্ঘ্য দিয়ে যথাবিধি তাঁর পূজা করলেন। যমরাজের সঙ্গে কথোপকথনকালে ভগবান শুনতে পেলেন দক্ষিণ দিক থেকে অসংখ্য জিবের আর্তক্রন্দন ধ্বনি। প্রশ্ন করলেন-এ আর্তক্রন্দন কেন? যমরাজ বললেন, হে প্রভু, মর্ত্যের পাপী মানুষেরা নিজ কর্মদোষে নরকযাতনা ভোগ করছে। সেই যাতনার আর্ত চীৎকার শোনা যাচ্ছে। যন্ত্রণাকাতর পাপাচারী জীবদের দর্শন করে করুণাময় ভগবান চিন্তা করলেন-আমিই সমস্ত প্রজা সৃষ্টি করেছি, আমার সামনেই ওরা কর্মদোষে দুষ্ট হয়ে নরক যাতনা ভোগ করছে, এখন আমিই এদের সদগতির ব্যবস্থা করব। ভগবান শ্রীহরি সেই পাপাচারীদের সামনে একাদশী তিথি রূপে এক দেবীমুর্তিতে প্রকাশিত হলেন। সেই পাপীদেরকে একাদশী ব্রত আচরণ করালেন। একাদশী ব্রতের ফলে তারা সর্বপাপ মুক্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ বৈকুন্ঠ ধামে গমন করল। শ্রীব্যাসদেব বললেন, হে জৈমিনি! শ্রীহরির প্রকাশ এই একাদশী সমস্ত সুকর্মের মধ্যে শ্রেষ্ট এবং সমস্ত ব্রতের মধ্যে উত্তম ব্রত। কিছুদিন পরে ভগবানের সৃষ্ট পাপপুরুষ এসে শ্রীহরির কাছে করজোড়ে কাতর প্রার্থনা জানাতে লাগল-হে ভগবান! আমি আপনার প্রজা! আমাকে যারা আশ্রয় করে থাকে, তাদের কর্ম অনুযায়ী তাদের দুঃখ দান করাই আমার কাজ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি একাদশীর প্রভাবে আমি কিছুই করতে পারছি না, বরং ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছি। কেননা একাদশী ব্রতের ফলে প্রায় সব পাপাচারীরা বৈকুন্ঠের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে। হে ভগবান, এখন আমার কি হবে? আমি কাকে আশ্রয় করে থাকব? সবাই যদি বৈকুন্ঠে চলে যায়, তবে এই মর্ত্য জগতের কি হবে? আপনি বা কার সঙ্গে এই মর্ত্যে ক্রীড়া করবেন? পাপপুরুষ প্রার্থনা করতে লাগল- হে ভগবান, যদি আপনার এই সৃষ্ট বিশ্বে ক্রীড়া করবার ইচ্ছা থাকে তবে, আমার দুঃখ দূর করুন। একাদশী তিথির ভয় থেকে আমাকে রক্ষা করুন। হে কৈটভনাশন, আমি একমাত্র একাদশীর ভয়ে ভীত হয়ে পলায়ন করছি। মানুষ, পশুপাখী, কীট-পতঙ্গ, জল-স্থল, বন-প্রান্তর, পর্বত- সমুদ্র, বৃক্ষ, নদী, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল সর্বত্রই আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু একাদশীর প্রভাবে কোথাও নির্ভয় স্থান পাচ্ছি না দেখে আজ আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। হে ভগবান, এখন দেখছি, আপনার সৃষ্ট অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ডের মধ্যে একাদশীই প্রাধান্য লাভ করেছে, সেইজন্য আমি কোথাও আশ্রয় পেতে পারছি না। আপনি কৃপা করে আমাকে একটি নির্ভয় স্থান প্রদান করুন। পাপপুরুষের প্রার্থনা শুনে ভগবান শ্রীহরি বলতে লাগলেন- হে পাপপুরুষ! তুমি দুঃখ করো না। যখন একাদশী তিথি এই ত্রিভুবনকে পবিত্র করতে আবির্ভুত হবে, তখন তুমি অন্ন ও রবিশস্য মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করবে। তা হলে আমার মূর্তি একাদশী তোমাকে বধ করতে পারবে না।” সবমিলিয়ে ছাব্বিশটি একাদশী রয়েছে। সাধারণত বার মাসে চব্বিশটি একাদশী। এইগুলি হচ্ছে- ১. উৎপন্না একাদশী ২. মোক্ষদা একাদশী ৩. সফলা একাদশী ৪. পুত্রদা একাদশী ৫. ষটতিলা একাদশী ৬. জয় একাদশী ৭. বিজয়া একাদশী ৮. আমলকী একাদশী ৯. পাপমোচনী একাদশী ১০. কামদা একাদশী ১১. বরুথিনী একাদশী ১২. মোহিনী একাদশী ১৩. অপরা একাদশী ১৪. নির্জলা একাদশী ১৫. যোগিনী একাদশী ১৬. শয়ন একাদশী ১৭. কামিকা একাদশী ১৯. অন্নদা একাদশী ১৮. পবিত্রা একাদশী ২০. পরিবর্তিনী বা পার্শ্ব একাদশী ২১. ইন্দিরা একাদশী ২২. পাশাঙ্কুশা একাদশী ২৩. রমা একাদশী ২৪. উত্থান একাদশী কিন্তু যে বৎসর পুরুষোত্তমাস, অধিমাস বা অনেকের মতে মলমাস থাকে, সেই বৎসর ২৫. পদ্মিনী ও ২৬. পরমা এই নামে আরও দুটি একাদশীর আবির্ভাব হয়। পি. চৈতন্যচন্দ্র দাসঃ আসলে এতসব আপনার মাথার উপর দিয়ে যাবে। তবুও আপনার অল্পবিদ্যাকে নাড়া দেওয়া প্রয়োজন তাই বলছি, শুনুন। জনৈকঃ ………………………. পি. চৈতন্যচন্দ্র দাসঃ
ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের ইতিহাস মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা কি সফল হবে?

ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের জয় হউক!ভক্ত শিরোমণি বজ্রংবলী হনুমানের জয় হউক! জগদ্গুরু শ্রীল প্রভুপাদের জয় হউক। বিষ্ণুবিদ্বেষী অসুরদের ভগবানের দিব্যনাম শ্রবণ কীর্তনের প্রতি স্বভাবতই অনিহা কাজ করে, এমনকি আমরা বৈদিক শাস্ত্রাদি সহ বর্তমান কলিযুগে স্বচক্ষেই দেখতে পাই অসুরেরা ভগবানের দিব্যনাম গ্রহণকারী ভক্তদের কিভাবে বাঁধা প্রদান করে, শারিরীক মানসিক অত্যাচার নিপীড়ন করে। কিন্তু ভগবান যেমন সনাতন-চিরন্তন, তাঁর সাথে সম্পৃক্ত সবকিছুই তেমনি সনাতন। যেমন ধরুন রাক্ষসের দল শ্রীরাম নামের ধ্বনি কোনোভাবেই সহ্য না করতে পেরে তাঁর বিরোধিতা করতো কিন্তু অবশেষে তাদের উদ্দেশ্য সফল হতো না। এভাবে আজকালও সেইসকল অসুরেরা যারা “জয় শ্রীরাম” ধ্বনি নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারা উৎসন্নে যাবে। তাদের সকল প্রয়াস অচিরেই ব্যর্থতায় পরিপূর্ণ হবে। শুধু পরমেশ্বর ভগবান রামচন্দ্রের ভক্তদের উচিত দৃঢ়নিষ্ঠভাবে যেকোনো অবস্থাতেই হাল ধরে রাখা। এ প্রসঙ্গে বাল্মিকী রামায়ণ বালকাণ্ড দ্বিতীয় স্বর্গ ষড়ত্রিংশতি শ্লোকে প্রমাণ নিম্নরূপ 👇 যাবৎ স্থাস্যন্তি গিরয়ঃ সরিতশ্চ মহীতলে। তাবদ্ রামায়ণকথা লোকেষু প্রচরিষ্যতি।। “যতকাল এই পৃথিবীতে পর্বতসমূহ ও নদীসমূহ থাকবে ততকাল এই সংসারে (পৃথিবীতে) রামায়ণ কথা প্রচারিত থাকবে।” ❤️ জয় শ্রীরাম ❤️ আমাদের সাথেই থাকুন 👇 www.svadharmam.com
কোন দিকে মাথা রেখে ঘুমানো উচিত?

অনেকেই প্রশ্ন করেন দৈনন্দিন জীবনে প্রায়োগিক কিছু কি বৈদিক শাস্ত্রে আছে। কোন দিকে মাথা রেখে ঘুমানো উচিত ও কেন ঘুমানো উচিত? তাদের জন্য বিষ্ণুপুরাণ বর্ণনা দিচ্ছেন- “হে নৃপ! শোবার সময় সর্বদা দক্ষিণ বা পূর্ব দিকে মাথা করে শোবে। এর বিপরীত দিকে মাথা করলে রোগের উৎপত্তি হয়৷৷” (শ্রীবিষ্ণুপুরাণ: ৩/১১/১১৩) এখানে এটি কোনো এক তথাকথিত ধর্মের গতানুগতিক নিয়মের মতো বলা হয়নি, ঐদিকে মাথা দেওয়া যাবে না পাপ হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। ভাবা যায়! এটি কমপক্ষে পাঁচ হাজার বছর পূর্বের একটি বৈদিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। আজকের আধুনিক বিজ্ঞানও বলছে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ উত্তর মেরুর দিকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ, উত্তর মেরুর দিকে অনবরত একটা চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই আমরা যখন উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছি তখন দীর্ঘক্ষণ উত্তর দিকে মাথা সমান্তরালভাবে থাকায় আমাদের শরীরেও সেই চাপ প্রভাব বিস্তার করে। এতে উচ্চরক্তচাপের মতো রোগব্যাধি দেখা দেয়। একবার ভেবে দেখুন এই একই কথা আমাদের বৈদিক শাস্ত্রে বহু পূর্ব হতেই নির্দেশিত রয়েছে। কিন্তু আমরা এসবের অনেক কিছুই কুসংস্কার ভেবে পালন করছি না। অতএব, আসুন লোকের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে স্বধর্মের আচরণবিধি অনুসরণ করি। ভূপৃষ্ঠ সরে যাওয়া নিয়ে আর্টিকেলটি পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন https://www.bigganchinta.com/physics/earth-magnetic-point সম্পাদনায়: প্রবীর চৈতন্য চন্দ্র দাস। [লেখার স্বত্ব স্বধর্মম্ কর্তৃক সংরক্ষিত। কেবল স্বধর্মম্ এর স্বত্ব উল্লেখ পূর্বক হুবহু কপি ও লিংক শেয়ারের জন্য অনুমোদিত।]
পরমাত্মার ইচ্ছা ছাড়া কোনো কিছু ঘটে না, তাহলে আমাদের পাপকর্মের জন্য পরমাত্মাই দায়ী?

বৈদিক শাস্ত্রে বর্ণিত রয়েছে- “দুটি পাখি (জীবাত্মা ও পরমাত্মা) একই গাছে বসে আছে, কিন্তু যে পাখিটি (জীবাত্মা) ফল আহারে রত সে গাছের ফলের ভোক্তারূপে সর্বদাই শোক, আশঙ্কা ও উদ্বেগের দ্বারা মুহ্যমান। কিন্তু যদি সে একবার তার নিত্যকালের বন্ধু অপর পাখিটির (পরমাত্মার) দিকে ফিরে তাকায়, তবে তৎক্ষণাৎ তার সমস্ত শোকের অবসান হয়, কারণ তার বন্ধু হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান এবং তিনি সমগ্র ঐশ্বর্যের দ্বারা মহিমান্বিত।” [শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৪।৭ ; মুণ্ডক উপনিষদ ৩।১।১,২] অতএব, বোঝাই যাচ্ছে যিঁনি পরম ব্রহ্ম-পরমাত্মা-পরমেশ্বর ভগবান, তিঁনি আপনার আমার সমস্ত জীবাত্মার ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্যবোধে কখনোই হস্তক্ষেপ করেন না। ভগবদ্গীতায়ও (১৮/৬৩, ৭৩) আমরা দেখতে পাই- পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে গীতার জ্ঞান প্রদানের পর বলছেন, “….যথেচ্ছসি তথা কুরু” “এভাবেই আমি তোমাকে গুহ্য থেকে গুহ্যতর জ্ঞান বর্ণনা করলাম। তুমি তা সম্পূর্ণরূপে বিচার করে যা ইচ্ছা হয় তাই কর।” অর্জুন বুদ্ধিমান তাই তিনি বললেন- “…করিষ্যে বচনম্ তব” “আমার সমস্ত সন্দেহ দূর হয়েছে এবং যথাজ্ঞানে অবস্থিত হয়েছি। এখন আমি তোমার আদেশ পালন করব।” এখানে স্পষ্টতই বোঝা যায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জীবকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। তাই এই স্বাধীনতার সদ্ব্যবহার করে আমাদের জড় জগতের কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া উচিত। নইলে আপনার আমার দুস্কর্মের ফল আমাদেরই ভোগ করতে হবে। ভগবানকে দোষারোপ করা নাস্তিকদের কাজ! ।।হরে কৃষ্ণ।। সম্পাদনায়: প্রবীর চৈতন্য চন্দ্র দাস।
অর্থ, ধন-সম্পদ কি আমাদের প্রকৃতপক্ষে সুখী করতে পারে?

এবিষয়ে বৈদিক শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত এই যে, জাগতিক কোনো বস্তুই (অর্থসম্পদ) জীবকে প্রকৃতপ্রকৃতপক্ষে সুখী করতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত জীবগণ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্তিপূর্ণ সেবায় নিযুক্ত না হচ্ছে। জড় জগতে সমস্ত বদ্ধ জীবগণ তাদের স্বরূপে সবাই চিন্ময় আত্মা। আর আত্মা হচ্ছেন পরমাত্মার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নিত্য অবিচ্ছেদ্য অংশসদৃশ। “মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ” এই জড় জগতে বদ্ধ জীবসমূহ আমার সনাতন বিভিন্নাংশ। (ভ:গী: ১৫/৭) “জীবের স্বরূপ হয় কৃষ্ণের নিত্যদাস” (চৈ:চ: মধ্য:/২০/১০৮) পরমাত্মা সচ্চিদানন্দময় (সৎ, চিৎ, আনন্দ), পরমাত্মার অংশ হওয়ায় আত্মাও হলেন সচ্চিদানন্দময়। যেহেতু প্রকৃত সত্ত্বায় জীবের সুখ-শান্তি আনন্দময় বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেহেতু জড় জগতের সমস্ত জীবই বিশেষ করে মনুষ্য সমাজের লোকেরা কেউ-ই দুঃখ পেতে ইচ্ছুক নয়। তবুও পরম সত্য পরমেশ্বর ভগবান সম্বন্ধে কোনোরূপ জ্ঞান না থাকায় অবিদ্যার বশবর্তী হয়ে প্রত্যকেই সুখ-শান্তি-আনন্দের সন্ধানে এদিকসেদিক দৌড়াচ্ছে। তাই ভবিষ্যপুরাণ দৃঢ়ভাবে বর্ণনা করছেন- “ধন দ্বারাও সুখ প্রাপ্তি ঘটে না। প্রথমে অর্থ উপার্জনে কষ্ট হয় তৎপরে তা রক্ষা করতে কষ্ট হয়। অতএব অর্থ উপার্জন ও ব্যয় উভয় ক্ষেত্রেই কষ্ট হয়। অর্থের দ্বারা এই সংসারে সুখ বস্তুতঃ লাভ করা যায় না।।৯৫।। অর্থবান্ লোকের চোরের থেকে, জলের থেকে, অগ্নি থেকে, নিজ আত্মীয়দের থেকে এবং রাজার থেকে নিত্য মৃত্যুতুল্য ভয় হয়। আকাশে গমন করলে পক্ষিগণের দ্বারা ভূমিতে গমন করলে শ্বাপদ প্রাণীদের দ্বারা, জলে গমন করলে মৎস্যের দ্বারা নিজ মাংস ভক্ষিত হবে এরূপ ভয় অর্থবান্ লোকের থাকে। এর তাৎপর্য হল বিত্তবান্ লোককে সমস্ত জগৎ ভক্ষণ করে”।।৯৬-৯৭।। (ভবিষ্যপুরাণ: উত্তর-পর্ব/৩/৯৫-৯৭) সম্পাদনায়: প্রবীর চৈতন্য চন্দ্র দাস। [লেখার স্বত্ব স্বধর্মম্ কর্তৃক সংরক্ষিত। কেবল স্বধর্মম্ এর স্বত্ব উল্লেখ পূর্বক হুবহু কপি ও লিংক শেয়ারের জন্য অনুমোদিত।]
পুত্র লাভের উপায় সম্বন্ধে বৈদিক শাস্ত্র কি বলে?

আমাদের “বৈদিক সনাতন ধর্ম” যে অত্যন্ত প্রামাণিক তা আর বলার অপেক্ষা থাকে না। এমন কোনো বিষয়ে মুনি-ঋষিদের দিকনির্দেশনা ও আলোচনা খুঁজে পাবেন না যা বিজ্ঞানসম্মত নয় কিংবা যৌক্তিক নয়। বর্তমান বিশ্বের আধুনিক বিজ্ঞান যা নিয়ে গবেষণা করছে সুষ্ঠু ফলাফল পাওয়ার আশায়। সেসকল বিষয়ে এক ধাপ এগিয়ে আমাদের বৈদিক মুনি-ঋষিদের সুস্পষ্ট অভিমত ও সিদ্ধান্ত শাস্ত্রে পূর্ব হতেই দেওয়া আছে। এমনকি বৈদিক শাস্ত্রে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা নিয়ে গবেষণা করার শক্তিও বর্তমান বিজ্ঞানীদের নেই, অথচ সেইসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বর্ণিত রয়েছে শাস্ত্রে। শুধুমাত্র তা দৃষ্টিগোচর না থাকায় নিজ ধর্ম সম্পর্কে হীনমন্যতায় ভোগেন জিজ্ঞাসুরা। বর্তমান আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও সন্তান উৎপাদন প্রসঙ্গে গর্ভের সন্তান পুত্র না-কি কন্যা হবে এবিষয়ে ক্রোমোজম নামক Dioxyribo Nuclic Acid; DNA ’র প্রভাব বর্ণনা করেন। তো অনেককেই দেখা যায় পুত্র প্রাপ্তির উপায় হিসেবে শাস্ত্রের দিকনির্দেশনা জানতে চান। এবিষয়ে শুধুমাত্র মনুসংহিতা ৩য় অধ্যায়ের ৪৬-৪৯ তম শ্লোকে যেসকল বিধিনিষেধ বর্ণিত হয়েছে তা হুবহু তুলে ধরা হলো- “স্ত্রীলোকের ঋতু ষোড়শ রাত্রি স্বাভাবিক জানিবে। তন্মধ্যে শোণিতস্রাবযুক্ত চারি রাত্রি অতিনিন্দিত হয়।।৪৬।। তন্মধ্যে প্রথম চারি রাত্রি ও একাদশ এবং ত্রয়োদশ রাত্রি এই ছয় রাত্রি ঋতুমতী স্ত্রীগমন নিষিদ্ধ, তদ্ব্যতীত অপর দশ রাত্রিতে গমন প্রশস্ত জানিবে।। ৪৭।। এই পূর্ব্বোক্ত দশ রাত্রির মধ্যে ছয়, আট, দশ প্রভৃতি যুগ্ম দিনে স্ত্রীতে গমন করিলে পুত্র জন্মে, এবং পাঁচ, সাত প্রভৃতি অযুগ্ম দিনে গমন করিলে কন্যা জন্মে। অতএব পুত্রপ্রার্থী ব্যক্তি ঋতুকালে যুগ্ম দিনে স্ত্রীগমন করিবে।।৪৮।। পুরুষের বীর্য্যাধিক্য হইলে অযুগ্ম রাত্রিতেও পুত্র জন্মে, স্ত্রীর বীর্যাধিক্য হইলে যুগ্ম রাত্রিতেও কন্যা হয়। যদি উভয়ের বীর্য্যের সাম্য থাকে, তাহা হইলে ক্লীব অথবা জমজ পুত্র-কন্যা হয়। যদি উভয়েরই বীর্য্য অসার বা অল্প হয়, তাহা হইলে গর্ভ হয় না”।।৪৯।। সম্পাদনায়: প্রবীর চৈতন্য চন্দ্র দাস। লেখার স্বত্ব স্বধর্মম্ কর্তৃক সংরক্ষিত। কেবল স্বধর্মম্ এর স্বত্ব উল্লেখ পূর্বক হুবহু কপি ও লিংক শেয়ারের জন্য অনুমোদিত।
পরম ঈশ্বরের সচ্চিদানন্দ স্বরূপকে জানতে না পারলে কেবল দুঃখই লাভ হয়!

পরম তত্ত্ব পরমেশ্বর ভগবানের অত্যন্ত মনোহর বিশেষ রূপ (দ্বিভুজ শ্যাম সুন্দর মুরলীধর) রয়েছে। কিন্তু তা সত্বেও তিঁনি সমস্ত জগতে বিস্তৃত হতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে সমস্ত কিছুই পরমেশ্বর ভগবানের অনন্ত শক্তির বিভিন্ন প্রকাশ মাত্র। তবুও তিঁনি সবকিছু থেকেই স্বতন্ত্র থাকতে পারেন। অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা পরমেশ্বর ভগবানের সেই সমস্ত শক্তিসমূহের ভিন্ন ভিন্ন বহিঃপ্রকাশকে বুঝতে না পারার কারনে কেউ তাঁকে শুধু নিরাকার মনে করেন কেউবা শুধু সাকার। এই দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য ভগবদগীতা: ০৭/০৭ নং শ্লোকের ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্যটি একটি সহজ সমাধান। নিম্নে প্রদত্ত হলো- “পরমতত্ত্ব সবিশেষ না নির্বিশেষ এই সম্বন্ধে বহু আলোচিত মতবিভেদ আছে। ভগবদ্গীতাতে বলা হয়েছে যে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন পরমতত্ত্ব এবং প্রতি পদক্ষেপেই আমরা সেই সত্যের প্রমাণ পাই। বিশেষ করে এই শ্লোকটিতে পরমতত্ত্ব যে সবিশেষ পুরুষ, তা জোর দিয়ে বলা হয়েছে। পরমেশ্বর ভগবানের সবিশেষত্ব সম্বন্ধে ব্রহ্মসংহিতাতে (৫/১) ও বলা হয়েছে- ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ। অর্থাৎ, পরমতত্ত্ব পরম পুরুষ ভগবান হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ, তিনিই হচ্ছেন সমস্ত আনন্দের উৎস, তিনিই হচ্ছেন আদিপুরুষ গোবিন্দ এবং তাঁর শ্রীবিগ্রহ হচ্ছেন সৎ, চিৎ ও আনন্দময়। ব্রহ্মার মতো মহাজনদের কাছ থেকে যখন আমরা নিঃসন্দেহে জানতে পারি যে, পরমতত্ত্ব হচ্ছেন পরম পুরুষ এবং তিনি হচ্ছেন সর্ব কারণের পরম কারণ, তখন আর তাঁর সম্বন্ধে কোন সন্দেহ থাকে না। নির্বিশেষবাদীরা অবশ্য বৈদিক ভাষ্য মতে শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের (৩/১০) এই শ্লোকটির উল্লেখ করে তর্ক করে- ততো যদুত্তরতরং তদরূপমনাময়ম্ । য এতদ্বিদুরমৃতান্তে ভবন্ত্যথেতরে দুঃখমেবাপিযন্তি। “এই জড় জগতে ব্রহ্মা হচ্ছেন প্রথম জীব। সুর, অসুর ও মানুষের মধ্যে তিনিই হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ। কিন্তু ব্রহ্মারও ঊর্ধ্বে এক অপ্রাকৃত তত্ত্ব বর্তমান, যাঁর কোন জড় আকৃতি নেই এবং যিনি সব রকমের জড় কলুষ থেকে মুক্ত। তাঁকে যে জানতে পারেন, তিনি এই জড় বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে অপ্রাকৃত জগতে প্রবেশ করতে পারেন। আর যারা তাঁকে জানতে পারে না, তারা এই জড় জগতে নানা রকম দুঃখকষ্ট ভোগ করে।” নির্বিশেষবাদীরা এই শ্লোকের অরূপম্ শব্দটির উপরে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। কিন্তু এই অরূপম্ শব্দটির অর্থ নির্বিশেষ নয়। এর দ্বারা ভগবানের সচ্চিদানন্দময় অপ্রাকৃত রূপকে নির্দেশ করা হয়েছে, যা ব্রহ্মসংহিতার উপরে উদ্ধৃত অংশে ব্যক্ত হয়েছে। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের অন্যান্য শ্লোকেও (৩/৮-৯) সেই কথার সত্যতা প্রমাণ করে বলা হয়েছে- বেদাহমেতং পুরুষং মহান্তমাদিত্যবর্ণং তমসঃ পরস্তাৎ। তমেব বিদিত্বাহতি মৃত্যুমেতি নান্যঃ পন্থা বিদ্যতেহয়নায়। যস্মাৎ পরং নাপরমন্তি কিঞ্চিদ যস্মান্নাণীয়ো ন জ্যায়োহস্তি কিঞ্চিৎ। বৃক্ষ ইব স্তব্ধো দিবি তিষ্ঠত্যেকঃ তেনেদং পূর্ণং পুরুষেণ সর্বম্ ॥ “আমি সেই পরমেশ্বরকে জানি, যিনি সর্বতোভাবে সংসারের সকল অজ্ঞানতার অন্ধকারের অতীত। যিনি তাঁকে জানেন, তিনিই কেবল জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে পারেন। এই পরম পুরুষের জ্ঞান ব্যতীত আর কোন উপায়েই মুক্তি লাভ করা যায় না। “এই পরম পুরুষের অতীত আর কোন সত্য নেই, কেন না তিনি হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি ক্ষুদ্রতম থেকে ক্ষুদ্রতর এবং তিনি মহত্তম থেকেও মহত্তর। একটি গাছের মতো মৌনভাবে অধিষ্ঠিত রয়েছেন এবং তিনি সমস্ত পরব্যোমকে আলোকে উদ্ভাসিত করে রেখেছেন। একটি গাছ যেমন তার শিকড় বিস্তার করে, তিনিও তেমনই তাঁর বিভিন্ন শক্তিকে বিস্তৃত করেছেন।” এই সমস্ত শ্লোক থেকে আমরা অনায়াসে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, পরমেশ্বর ভগবানই হচ্ছেন পরমতত্ত্ব, যিনি তাঁর জড় ও চিন্ময় অনন্ত শক্তির প্রভাবে সর্বব্যাপ্ত।” ।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন ° www.svadharmam.com
নিরাকারবাদীরা পরম ব্রহ্মের সচ্চিদানন্দ স্বরূপকে জানতে পারে না কেন?

🔴👉 নির্বিশেষবাদীরা (নিরাকারবাদী) বেদ-বেদান্তে পারদর্শী হয়েও ভগবানের স্বরূপ উপলব্ধি করতে না পারায় (কেবল নিরাকার মনে করায়) অন্তিমে মূ*র্খ হিসেবেই পরিগনিত হয়! ⚠️🔴 এই প্রসঙ্গে শ্রীল প্রভুপাদ তার ভগবদগীতার বিজ্ঞান যোগের ২৪ নং শ্লোকের ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্যে নিরাকারবাদীদের অবস্থা সম্পর্কে যা আলোকপাত করেছেন সেটার অংশবিশেষ নিম্নে তুলে ধরা হলো। 👇 [{ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর স্বরূপে অর্জুনের সঙ্গে এখানে কথা বলছেন, অথচ নির্বিশেষবাদীরা এতই মূর্খ যে, অন্তিমে ভগবানের কোন রূপ নেই বলে তারা তর্ক করে। শ্রীরামানুজাচার্যের পরম্পরায় মহিমাময় ভগবদ্ভক্ত শ্রীযামুনাচার্য এই সম্পর্কে একটি অতি সমীচীন শ্লোক রচনা করেছেন। তিনি বলেছেন- “ত্বাং শীলরূপচরিতৈঃ পরমপ্রকৃষ্টৈঃ সত্ত্বেন সাত্ত্বিকতয়া প্রবলৈশ শাস্ত্রৈঃ। প্রখ্যাতদৈব পরমার্থবিদাং মতৈশ্চ নৈবাসুরপ্রকৃতয়ঃ প্রভবন্তি বোদ্ধুম্ ॥” “হে ভগবান! মহামুনি ব্যাসদেব, নারদ আদি ভক্তেরা তোমাকে পরমেশ্বর ভগবান বলে জানেন। বিভিন্ন বৈদিক শাস্ত্র উপলব্ধির মাধ্যমে তোমার গুণ, রূপ, লীলা আদি সম্বন্ধে অবগত হওয়া যায় এবং জানতে পারা যায় যে, তুমিই পরমেশ্বর ভগবান। কিন্তু রজ ও তমোগুণের দ্বারা আচ্ছাদিত অভক্ত অসুরেরা কখনই তোমাকে জানতে পারে না, কারণ তোমার তত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করতে তারা সম্পূর্ণ অসমর্থ। এই ধরনের অভক্তেরা বেদান্ত, উপনিষদ আদি বৈদিক শাস্ত্রে অত্যন্ত পারদর্শী হতে পারে, কিন্তু তাদের পক্ষে পুরুষোত্তম ভগবানকে জানতে পারা সম্ভব নয়।” (স্তোত্ররত্ন: ১২)] ব্রহ্মসংহিতাতে বলা হয়েছে যে, কেবল বেদান্ত শাস্ত্র অধ্যয়ন করার মাধ্যমে পরমেশ্বর ভগবানকে জানতে পারা যায় না। ভগবানের কৃপার ফলেই কেবল তিনি যে পরম পুরুষোত্তম, সেই সম্বন্ধে অবগত হওয়া যায়।} {যে সমস্ত অভক্ত বেদান্ত ও বৈদিক শাস্ত্র সম্বন্ধে তাদের কল্পনাপ্রসূত মতবাদ পোষণ করে এবং যাদের অন্তরে কৃষ্ণভাবনামৃতের লেশমাত্র নেই, তারাও অল্প-বুদ্ধিসম্পন্ন এবং তাদের পক্ষে ভগবানের সবিশেষ রূপ অবগত হওয়া অসম্ভব। যারা মনে করে যে, পরমেশ্বর ভগবান নিরাকার, তাদের অবুদ্ধয়ঃ (ভ:গী: ৭/২৪) বলা হয়েছে অর্থাৎ এরা পরম-তত্ত্বের পরম রূপকে জানে না। শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে যে, অদ্বয়-জ্ঞানের সূচনা হয় নির্বিশেষ ব্রহ্ম থেকে, তারপর তা পরমাত্মার স্তরে উন্নীত হয়, কিন্তু পরম-তত্ত্বের শেষ কথা হচ্ছে পরম পুরুষোত্তম ভগবান।} {নির্বিশেষবাদীরা তাই পরমতত্ত্ব সম্পর্কে অবগত না হয়ে মনে করে যে, শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন দেবকী ও বসুদেবের সন্তান মাত্র, অথবা একজন রাজকুমার, অথবা একজন অত্যন্ত শক্তিশালী জীব মাত্র। ভগবদ্গীতায় (৯/১১) ভগবান এই ভ্রান্ত ধারণার নিন্দা করে বলেছেন, “অবজানন্তি মাং মূঢ়া মানুষীং তনুমাশ্রিতম্…।” অনুবাদ: “অত্যন্ত মুঢ় লোকগুলিই কেবল আমাকে একজন সাধারণ মানুষ বলে মনে করে আমাকে অবজ্ঞা করে।” প্রকৃতপক্ষে, ভক্তি সহকারে ভগবানের সেবা করে কৃষ্ণভাবনা অর্জন না করলে এখনই শ্রীকৃষ্ণকে উপলব্ধি করতে পারা যায় না। শ্রীমদ্ভাগবতে (১০/১৪/২৯) এই কথা প্রতিপন্ন করে বলা হয়েছে- “অথাপি তে দেব পদাম্বুজদ্বয় প্রসাদলেশানুগৃহীত এব হি। জানাতি তত্ত্বং ভগবন্মহিম্নো ন চান্য একোহপি চিরং বিচিন্বন।।” অনুবাদ: “হে ভগবান! আপনার শ্রীচরণ-কমলের কণামাত্রও কৃপা যে লাভ করতে পারে, সে আপনার মহান পুরুষত্বের উপলব্ধি অর্জন করতে পারে। কিন্তু যারা পরম পুরুষোত্তম ভগবানকে উপলব্ধির উদ্দেশ্যে কেবলই জল্পনা-কল্পনা করে, তারা বহু বছর ধরে বেদ অধ্যয়ন করতে থাকলেও আপনাকে জানতে সক্ষম হয় না।” কেবলমাত্র জল্পনা-কল্পনা আর বৈদিক শাস্ত্রের আলোচনার মাধ্যমে পরম পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের নাম-রূপ-লীলা আদি জানতে পারা যায় না। তাঁকে জানতে হলে অবশ্যই ভক্তিযোগের পন্থা অবলম্বন করতে হয়। কেউ যখন “হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে” -এই মহামন্ত্র কীর্তন করার মাধ্যমে ভক্তিযোগ অনুশীলন শুরু করে সম্পূর্ণভাবে কৃষ্ণভাবনামৃতে মগ্ন হয়, তখনই কেবল পরম পুরুষোত্তম ভগবানকে জানা যায়।}] উপস্থাপনায়: প্রবীর চৈতন্য চন্দ্র দাস [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
হিন্দুরা কেন গরুকে এতো সম্মান করে, কেন হিন্দুরা গোহত্যা করে না?!?

হিন্দুরা কেন গরুকে মা বলে? গরুর দুধ খেলেও, মাংস কেন খাও না? গরুর চামড়ার তৈরি পণ্য কেন ব্যবহার করেন? শাস্ত্রে কোথায় গোহত্যা নিষিদ্ধ? বিধর্মীদের দ্বারা কথিত এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হন না এমন কোনো হিন্দু মানুষ খুজে পাওয়া দুষ্কর। কেউ আবার এসব প্রশ্নের যথার্থ উত্তর না জানার ফলে হীনমন্যতায় ভুগেন ও স্বধর্মের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন। এভাবে ধীরে ধীরে কারও মানসিকতা ধর্মান্তরের দিকে এগোতে থাকে। কারণ বিধর্মীদের এমন সামান্য কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারায় বিধর্মীরা এই সুযোগে তাদের ধর্মের গুন গেয়ে বৈদিক ধর্ম সম্পর্কে অপব্যাখ্যা করে মগজ ধোলাই করে ধর্মান্তরিত করতে থাকে। তাই এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে, নিজ বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে ও নিন্দুকদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে পড়ুন . প্রশ্ন- হিন্দুরা কেন গরুকে মা বলে? গাভীকে কেন মা’’ ডাকা হয়; যেহেতু বিধর্মীরা সম্পূর্ণভাবে তমগুনাচ্ছন্ন হওয়ার ফলে এই দৃষ্টিভঙ্গির যথার্থতা বিশ্লেষণে সক্ষম নয়, তাই আদিযুগ থেকেই তাদের এমন প্রশ্ন ছিলো। চৈতন্য চরিতামৃত আদিলীলা/১৭/১৫৩ নং শ্লোকে মুসলমান চাঁদকাজির সাথে বিতর্কের মধ্যে উক্ত প্রশ্নের খুব সুন্দর যৌক্তিক উত্তর দেখা যায়। মহাপ্রভু তাকে বলেছেন- প্রভু কহে, গোদুগ্ধ খাও, গাভী তোমার মাতা। বৃষ অন্ন উপজায়, তাতে তেঁহো পিতা ॥১৫৩৷৷ সরলার্থ: মহাপ্রভু বললেন, “আপনি গরুর দুধ খান; সেই সূত্রে গাভী হচ্ছে আপনার মাতা। আর বৃষ (ষাড়) অন্ন উৎপাদন করে, যা খেয়ে আপনি জীবন ধারণ করেন; সেই সূত্রে সে আপনার পিতা। তাই গরু গাভী কিংবা ষাড়, বৈদিক সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বলা বাহুল্য কেবল (গোমাতা) গরুকেই মা ডাকা হয় বিষয়টি এমন নয়। পবিত্র “বেদ’’ আমাদেরকে মনুষ্যত্বের অধিকারী ও বিবেকবান হতে শেখায় তাই বেদ শাস্ত্রে ০৭ (সাত) ধরণের মায়ের উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। চাণক্য পণ্ডিত বলেন- “আদৌ-মাতা গুরুঃ পত্নী ব্রাহ্মণী রাজ-পত্নীকা।ধেনর ধাত্রী তথা পৃথ্বী সপ্তেতা মাতর স্মৃতা ॥” ১) জন্মদাত্রী ২) ধাত্রী ৩) ধরিত্রী ৪) গোমাতা ৫) বেদমাতা ৬) ব্রাহ্মণ পত্নী ৭) রাজমাতা তার মধ্যে গাভী বা গোমাতা অন্যতম। গরুকে মা’’ বলা হয়, বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে দেখা যায়- জন্মের পর থেকে আমরা মায়ের দুধ খাই ২-৩ বছর পর্যন্ত অতঃপর, আমাদের পুষ্টি নির্ভর করে গাভীর দুধের উপর। গরুর দুধের চেয়ে উৎকৃষ্ট দুধ আর নেই। বুদ্ধিমান মানুষ মাত্রই তা জানেন। যেহেতু, মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে গরুর দুধই আমাদের পুষ্টি যোগায় সেহেতু, এমন উপকারী গাভীকে মায়ের সম্মান প্রদর্শন করার বিষয়টি বৈদিক শাস্ত্রে দেখতে পাওয়া আশ্চর্যজনক কিছু নয়! বরং বিবেকবান ব্যক্তি মাত্রই গাভীকে মায়ের সম্মান প্রদর্শন করেন। প্রশ্ন- গরুর দুধ খেলেও, মাংস কেন খাও না? যেকেউ’ই মায়ের দুধ পান করে বড় হয়, কিন্তু তাই বলে কি সে মায়ের মাংস ভক্ষন করে?!? না, কখনই করে না। তো কিভাবে যাঁকে মা’’ বলে সম্মান প্রদর্শন করা হয় তাকে হত্যা করে তার মাংস ভক্ষণ করে কেউ? এটা পাশবিক ও বর্বরতা ছাড়া কিছুই হতে পারে না। এখন ভাবতে পারেন তাহলে ষাড় গরু হত্যা/ভক্ষণ করা যেতে পারে? এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু চাঁদকাজীকে আরও কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলেন– পিতা – মাতা মারি’ খাও এবা কোন্ ধর্ম। কোন্ বলে কর তুমি এমত বিকর্ম ॥১৫৪॥ সরলার্থ: যেহেতু বৃষ ও গাভী আপনার পিতা ও মাতা, তা হলে তাদের হত্যা করে তাদের মাংস খান কি করে? এটি কোন ধর্ম? কার বলে আপনি এই পাপকর্ম করছেন? (চৈতন্য চরিতামৃত: আদিলীলা/১৭/১৫৪) পূর্বোক্ত চৈতন্য চরিতামৃত বর্ণনায় আমরা দেখতে পেয়েছি বৃষকে কেন পিতার সাথে তুলনা করা হয়েছে। তো একটু গভীর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখুন বৈদিক সভ্যতায় জমি চাষাবাদের জন্য বৃষ (ষাড়) ব্যবহৃত হয়। গাভী যেমন মায়ের পরিপূরক হিসেবে আমাদের দুধ প্রদান করেন এবং তেমনিভাবে পরিবারে পিতা যেমন কঠোর পরিশ্রম করে খাদ্যের যোগান দেন সেভাবে একটি ষাড় জমি চাষবাসের দ্বারা খাদ্য উৎপাদনে সহযোগিতা করে, তাই বৃষকে পিতা বলা হয়। বেদে গোহত্যা ষাড় হউক বা গাভী অর্থাৎ, গরুকে হত্যা করা কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। যদি কোনো সংস্কৃতি এমন উপকারী প্রাণীকে হত্যা করে তার মাংস ভক্ষণ করতে শিখায়, সেটা কোনো সভ্য সংস্কৃতি হতেই পারে না। অতএব, বৈদিক শাস্ত্র আমাদের উপকারীর উপকার শিকার করতে শিখায়। যে গরু/গাভী আমাদের এহেন উপকার করে তাকে আমরা হত্যা করতে পারিনা। এজন্যই বৈদিক সংস্কৃতি, শিক্ষা মহান! প্রশ্ন- গরুর চামড়ার তৈরি পণ্য কেন ব্যবহার করেন? সোজা উত্তর- যারা ধর্ম জানেন, সাধুরা গরুর চামড়ার তৈরি পণ্য ব্যবহার করেন না। কোনো ব্যক্তি যদি করে থাকে তবে সেটা তার ব্যাক্তিগত অজ্ঞতার কারণে, বিশেষ কোনো পরিস্থিতির কারণে কিংবা নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য ব্যবহার করেন। তবে শাস্ত্রে গো থেকে প্রাপ্ত সমস্ত কিছুকেই পরম পবিত্র ঘোষণা করা হয়েছে। তেমনি গো চর্মকেও পবিত্র বলা হয়েছে। মৃদঙ্গে তা ব্যবহৃত হয়, যে মৃদঙ্গ ভগবদ্কীর্তনে ভগবানের প্রীতি বিধানে বাদিত হয়। এক্ষেত্রে, বোঝার বিষয় হচ্ছে- চামড়া সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গোহত্যা করা হয়না, কিংবা কারও ব্যক্তিগত ইন্দ্রিয় উপভোগের জন্য তা করা হয়না। প্রাকৃতিকভাবেই মৃত গরুর চর্ম মৃদঙ্গে ব্যবহৃত হয়। সুক্ষ্ম বিষয়টি হচ্ছে, সেই গরু যাঁর শরীরের চর্ম ভগবানের প্রীতি বিধানার্থে ব্যবহৃত মৃদঙ্গে যুক্ত হয়, সেটা তার জন্য পরম সৌভাগ্যজনক। প্রশ্ন- শাস্ত্রে কোথায় গোহত্যা নিষিদ্ধ? বেদ শাস্ত্রে গোহত্যা বিষয়ে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং গোহত্যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বটে। পাশাপাশি বৈদিক শাস্ত্রে যেকোনো পশুকে নির্বিচারে হত্যা কিংবা তার মাংস ভক্ষণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। নিম্নরূপ- গোমাতাকে কোন কারণে হত্যা করা যাবে না, তাদের জল, সবুজ তৃণ দিয়ে সমৃদ্ধ করতে হবে। (ঋগ্বেদ: ১/১৬৪/৪০) “যিনি রুদ্রগণের মাতা, বসুগণের দুহিতা, আদিত্যের ভগিনী, অমৃতের আবাস্থল, হে জলগণ! সেই নির্দোষ অদিতি গো’দেবীকে (গাভী) হিংসা (হত্যা) করিও না।” (ঋগ্বেদ: ৮/১০১/১৫) “হে অঘ্না (বধের অযোগ্য) গাভী! তুমি সর্বদা তৃণ ভক্ষণ পূর্বক বিচরণ করতে থাকো এবং শুদ্ধ জল পান করতে থাকো।” (অথর্ববেদ: ৭/৭৩/১১) “গাভীর মাংস ভক্ষণ অনুচিত” (অথর্ববেদ: ৯/৮/৯) “গাভী অবধ্য অর্থাৎ, হত্যার অযোগ্য” (অথর্ববেদ: ৬/৭০/১,২) “গাভীর অপর নাম অঘ্ন্যা, এরা অবধ্য অর্থাৎ হত্যার অযোগ্য। যে এই সকল গাভী ও বৃষকে হত্যা করে সে মহাপাপ করে।” (মহাভারত: শান্তিপর্ব/২৬২/৪৭) “যে মানুষ শাস্ত্রীয় নিষেধ অগ্রাহ্য করিয়া মাংস বিক্রয়ের জন্য গো’বধ করে কিংবা গো-মাংস ভক্ষণ করে অথবা যাহারা মাংসার্থী হইয়া গো’বধের জন্য গো’ঘাতককে অনুমতি করে; তাহাদের মধ্যে ঘাতক, খাদক ও অনুমতিদাতা সেই গরুর যতগুলি লোম থাকে, তত বৎসর নরকে নিমগ্ন থাকে॥” (মহাভারত: অনুশাসন পর্ব/৫৯/৬৫,৬৬) “গাভী ও ষাঁড় কদাপি ভক্ষণযোগ্য নয়।” (শতপথ ব্রাহ্মণ: ৩/১/২/২১) অথর্ববেদ ২য় কান্ড ২৬ নং সূক্তে গো তথা পশুদিগকে রক্ষার বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে এবং অথর্ববেদ: ৭ম কাণ্ড ৭৫ নং সূক্তে গাভীকে যত্ন করে পালন ও যেন কোনোভাবে কারো আক্রমনের শিকার যেন না হয় তার বর্ণনা দেখা যায়। এছাড়াও বৈদিক শাস্ত্রসমূহের অজস্র জায়গায় গোহত্যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে ও নিষেধাজ্ঞার যথার্থ কারণও বর্ণিত রয়েছে। এইতো সেদিন ৫’’শ বছর পূর্বে বেদ শাস্ত্রের অগাধ ও অপ্রতিরোধ্য পাণ্ডিত্যের অধিকারী শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নবাব চাঁদকাজীর সাথে বিতর্ককালে বলেছেন- “গো-অঙ্গে যতলোম, তত সহস্র বৎসর। গোবধী রৌরব মধ্যে পচে নিরন্তর।।” – (চৈ:চ: আদি: ১৭/১৬৬) সরলার্থ: “যে ব্যক্তি গো/গরু হত্যা করে, তাদের সকলকেই সেই নিহত গরুর লোম পরিমিত বৎসরকাল রৌরব নরকে নিমগ্ন থাকতে