মায়াবাদী কারা?

20250615 114943 Svadharmam

❝শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর মন্তব্য করেছেন, “মায়াবাদী সন্ন্যাসীরা মনে করে যে, শারীরক-ভাষ্য নামক শ্রীপাদ শঙ্করাচার্যকৃত বেদান্তসূত্রের ব্যাখ্যা, যা অদ্বৈতবাদ রূপে প্রতিষ্ঠিত, তা হচ্ছে বেদান্তসূত্রের যথার্থ ভাষ্য। এভাবেই তারা বেদান্তসূত্র, উপনিষদ ও অন্য সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র তাদের নির্বিশেষ মতের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করে। একজন প্রখ্যাত মায়াবাদী সন্ন্যাসী সদানন্দ যোগীন্দ্র বেদান্তসার নামক গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং তাতে তিনি লিখেছেন, বেদান্তো নাম উপনিষৎ-প্রমাণম্, তদুপকারীণি শারীরক-সূত্রাদীনি চ। সদানন্দ যোগীন্দ্রের মতে শঙ্করাচার্যকৃত উপনিষদ ও বেদান্তের শারীরক-ভাষ্য হচ্ছে বৈদিক প্রমাণের একমাত্র উৎস। কিন্তু আসলে বেদান্ত বলতে সমস্ত বৈদিক জ্ঞানের সারমর্মকে বোঝায় এবং শঙ্করাচার্যের শারীরক-ভাষ্য ছাড়া বেদান্তের মধ্যে আর কিছু নেই তা ঠিক নয়। বৈষ্ণব আচার্যদের রচিত আরও অনেক বেদান্ত ভাষ্য রয়েছে এবং তাঁরা কেউই শঙ্করাচার্যকে অনুসরণ করেননি, অথবা তাঁর কল্পনাপ্রসূত ভাষ্যকে স্বীকার করেননি। তাঁদের ভাষ্যসমূহ দ্বৈতবাদের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। শঙ্করাচার্য এবং তাঁর অনুগামী অদ্বৈতবাদীরা প্রতিপন্ন করতে চায় যে, ভগবান ও জীব এক এবং পরমেশ্বর ভগবানের আরাধনা করার পরিবর্তে তারা নিজেরাই ভগবান হতে চায়। তারা অন্যদের কাছে ভগবানের মতো পূজিত হতে চায়। এই ধরনের মানুষেরা শুদ্ধাদ্বৈত, শুদ্ধ-দ্বৈত, বিশিষ্টাদ্বৈত, দ্বৈতাদ্বৈত ও অচিন্ত্য-ভেদাভেদ-বৈষ্ণব আচার্যদের এই সমস্ত দর্শন স্বীকার করে না। মায়াবাদীরা এই সমস্ত দর্শন আলোচনা করে না, কেন না তাদের বদ্ধমূল ধারণা যে, তাদের কেবলাদ্বৈতবাদ হচ্ছে একমাত্র দর্শন। এই দর্শনকে তারা বেদান্তসূত্রের বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত বলে মনে করে তারা বিশ্বাস করে যে, শ্রীকৃষ্ণের দেহ জড় উপাদান দ্বারা গঠিত এবং কৃষ্ণভক্তি হচ্ছে কেবল ভাবপ্রবণতা মাত্র। তাদের বলা হয় মায়াবাদী, কারণ তাদের মতে শ্রীকৃষ্ণের দেহ মায়ার দ্বারা রচিত এবং তাঁর প্রতি ভক্তের যে ভক্তিমূলক সেবা তাও মায়া। তারা মনে করে যে, এই প্রকার ভগবদ্ভক্তিও সকাম কর্মেরই (কর্মকাণ্ডের) একটি অঙ্গ। তাদের দৃষ্টিতে ভক্তিই হচ্ছে মনোধর্ম-প্রসূত জল্পনা-কল্পনা অথবা ধ্যান। এটিই হচ্ছে মায়াবাদী দর্শন ও বৈষ্ণব দর্শনের মধ্যে পার্থক্য।❞ (শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত: আদি/০৭/১০১ ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য)

মানুষের খাদ্য কি? মানুষ কি শাকাহারি-মাংসাশী নাকি সর্বভুক?

20250614 235335 Svadharmam

এর উত্তরে এক কথায় বলতে হয় মানুষ শাকাহারী নিরামিষভোজী প্রাণী। শাক-সবজি, ফল-মূল এবং দুধ-দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি হলো মানুষের আদর্শ খাদ্য। অবশ্যই পশুহিংসা (পশুহত্যা) করে সেই পশুর মাংস আহার করা অন্তত সভ্য মানুষের কাম্য নয়। পশুহত্যা করে পশুমাংস আহারকে নিন্দা জানিয়ে বৈদিক অনুশাসন শাস্ত্র বর্ণনা করছে- स्वमांसं परमांसेन यो वर्द्धयितुमिच्छति। अनभ्यर्च्य पितॄन् देवान् ततोऽन्यो नास्त्यपुण्यकृत् ॥ স্বমাংসং পরমাংসেন যো বর্দ্ধয়িতুমিচ্ছতি। অনভ্যর্চ্য পিতৃন্ দেবান্ ততো’ন্যো নাস্ত্যপুণ্যকৃৎ ॥ যে ব্যক্তি পরকীয় মাংস দ্বারা __ আপনার মাংস বর্ধন করিতে ইচ্ছা করে, তাহা হইতে পাপকারী আর জগতে কেহই নাই। (মনুসংহিতা: ৫/৫২) मांसभक्षयिताम् उत्र यस्य मांसम् इह अद्म्यहम्। एतन्मांसस्य मांसत्वं प्रवदन्ति मनीषिणः ॥ মাংসভক্ষয়িতামুত্র যস্য মাংসমিহাদ্ম্যহম্। এতন্মাংসস্য মাংসত্বং প্রবদন্তি মনীষিণঃ ॥ ইহলোকে আমি যাহার মাংস ভোজন করিতেছি, পরলোকে সে আমাকে ভক্ষণ করিবে। পণ্ডিতেরা মাংস শব্দের অর্থ (‘মাং’ আমায়, ‘সঃ’ সে ভোজন করিবে) এইরূপ প্রতিপন্ন করিয়াছেন। (মনুসংহিতা: ৫/৫৫) প্রকৃতির ৮৪ লক্ষ প্রজাতির জীব যোনি রয়েছে৷ এই সমস্ত জীবগণ স্ব স্ব প্রকৃতিতে নির্ধারিত খাদ্যই গ্রহণ করেন। তারা কেউই প্রকৃতির আইন অমান্য করে নির্ধারিত খাদ্য ব্যতিরেকে ভিন্ন খাদ্য গ্রহণ করেন না। যেমন- মাংসাশী প্রাণী বাঘ বা’ সিংহ যতই ক্ষুধার্ত থাকুক না কেন, সে কখনোই জঙ্গলের ফলমূল খেতে যাবে না। কিংবা শাকাহারী প্রাণী হরিণ, হাতি, ঘোড়া, খরগোশ, জিরাফ এরাও কখনো ক্ষুধার্ত থাকলে মাংস খায়না। প্রকৃতপক্ষে মানুষ ব্যতীত অন্য সকল জীব প্রকৃতির আইন বাধ্য হয়েই মেনে নেয়। আরেকটু বুঝিয়ে বললে- তাদের চেতনা সেই নির্ধারিত খাদ্যবস্তু ব্যতীত অন্য খাদ্যের কথা চিন্তাই করতে পারে না। ঠিক যেমন বর্তমান রোবটিক্স সিস্টেমের মতো, যেমনটি প্রোগ্রামিং করে দিবেন সেই অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করবে। তো এই ৮৪ লাখ জীব প্রজাতির মধ্যে কেবল মনুষ্য প্রজাতিতে কিঞ্চিৎ স্বতন্ত্রতা (স্বাধীনতা) রয়েছে সেই স্বাধীনতার ব্যবহার করে সে প্রকৃতির আইন মানতেও পারে অথবা ভাঙতেও পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রাষ্ট্র প্রণীত আইন কেউ মানছে আবার কেউ ভাঙছে। যিনি মানছেন তিনি রাষ্ট্রের সুনাগরিক আর যিনি ভঙ্গ করছেন রাষ্ট্র তাকে শাস্তি দিচ্ছে। ঠিক তেমনি পরমেশ্বর ভগবান কর্তৃক প্রণীত এই প্রকৃতি আইন (বৈদিক ধর্ম) যিঁনি মানছেন তিঁনি ভক্ত, অন্যদিকে যিনি অবজ্ঞা করছেন! তিনি কি পার পেয়ে যাচ্ছেন ভাবছেন!?না। একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে- ❝পাগলে কি না বলে; আর ছাগলে কি না খায়?❞ বর্তমান সমাজের মানুষের অবস্থাও ঠিক তেমনি। যা খাওয়া উচিত নয় তাই আইন অমান্যপূর্বক ভক্ষণ করছে। এদের মধ্যে অনেকে আবার ব্যঙ্গাত্মকভাবে বলে থাকেন শাকাহারী ভোজনে শক্তি থাকে না, প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি না থাকায় শরীর রোগা হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে এটা তাদের অজ্ঞানতা, নইলে এতো বড় শাকাহারী “প্রাণী” হাতি তাদের দৃষ্টির অগোচরে রয়ে গেলো কিভাবে আমার বোধগম্য নহে! না-কি অজ্ঞানতা এভাবেই অন্ধ করে রাখে? এদের আরেকটি অতিজ্ঞানী দল আবার বৈজ্ঞানিক যুক্তিতর্ক দ্বারা বোঝাতে চান যেহেতু শাকসবজি উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে, তাই খাওয়ার জন্য যেহেতু প্রাণের হত্যা হবেই, সেহেতু পশুহত্যা করে মাংস খেলে অসুবিধা কোথায়! তাদের জন্য বেদান্তসূত্রের অকৃত্রিম ভাষ্য শ্রীমদ্ভাগবত (১/১৩/৪৭) পূর্ব হতেই বর্ণনা করেছেন, যেখানে- अहस्तानि सहस्तानामपदानि चतुष्पदाम् । फल्गूनि तत्र महतां जीवो जीवस्य जीवनम् ॥ ❝जीवो जीवस्य जीवनम्__জীবো জীবস্য জীবনম্❞ অংশটি তাৎপর্যপূর্ণ অর্থাৎ, এক জীব অন্য জীবের খাদ্য। তাই, যদি খাদ্যের নির্ভরশীলতার কথা চিন্তা করি, তবে কি মানুষ খাদ্য হিসেবে মানুষের মাংস খায়? অবশ্যই না। সর্ব-উপরিউক্ত মনুসংহিতার উদ্ধৃতি আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে খাদ্য গ্রহণের জন্য পশুহত্যা কতটা গর্হিত এবং গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই যাদের হৃদয়ে মনুষ্যত্ববোধ আছে, যারা সভ্য তারা কখনও পশুমাংস আহার করে নিজেদের ইন্দ্রিয় (জিহ্বা) তৃপ্তির জন্য নিরীহ পশুদের হত্যা করেন না। তাহলে মানুষের খাদ্য কি? প্রথমেই বলা বাহুল্য পবিত্র বেদে বলা হয়েছে “সর্বং খলিদং ব্রহ্ম” সবকিছুতেই প্রাণের অস্তিত্ব বিদ্যমান [ছান্দোগ্য উপনিষদ- ৩/১৪/১]। তাই ৮৪ লক্ষ প্রকার জীবের, প্রত্যেকেরই চেতনানুসারে তার বেদনার অনুভূতি হয়ে থাকে। যে জীব যতবেশি উন্নত চেতনা সম্পন্ন সেই জীবকে ততই উন্নত মানা হয় এবং তার অনুভূতিও ততই প্রখর। যেমন- মানুষ। এভাবেই চেতনানুসারে জীবের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে। বৈদিক শাস্ত্রের বর্ণনায় চেতনানুসারে সেই বিন্যাস তালিকায় মানুষের পরেই গোরুর স্থান, এভাবে সর্বনিম্ন চেতনাসম্পন্ন জীব হচ্ছে উদ্ভিদ-বৃক্ষ আদি। উদ্ভিদ যেহেতু নিম্ন চেতনাসম্পন্ন জীব তাই উদ্ভিদের অনুভূতিও অতি সামান্য। তাই বলে উদ্ভিজ্জ খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করলেও সম্পূর্ণভাবে প্রাণীহত্যা জনিত অপরাধ থেকে মুক্ত থাকা যায় না, যতটা বেদনা সেই উদ্ভিদ মৃত্যুর সময়ে প্রাপ্ত হয়েছে ঠিক ততটাই বেদনা (দুঃখ) সেই উদ্ভিদকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণকারীকে পেতে হবে। নিউটনের তৃতীয় সূত্রের সংজ্ঞা আমাদের কি শেখাচ্ছে? ❝প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ❝Every action, there is an equal and opposite reaction.❞ এটি মূলত বৈদিক শাস্ত্রের ❝কর্মফল❞ তত্ত্বকে নির্দেশ করে অর্থাৎ, যেমন কর্ম তেমন ফল। যখন কোনো প্রাণী যখন শরীরের কোনো অংশে ব্যাথা অনুভব করে তখন সেই ব্যাথা সম্পূর্ণ শরীরে বিস্তৃত হয়ে থাকে। ব্যাথার পরিমাণ কম হলে তা শরীরের সর্বত্র পৌঁছানোর পূর্বেই প্রশমিত হয়ে যায়। কিন্তু মৃত্যুর মতো যন্ত্রণা সম্পূর্ণ শরীরে বিস্তৃত হয়। তাই যখন খাদ্যের জন্য কোনো প্রাণীকে হত্যা করা হলো তখন সেই প্রাণী যে যন্ত্রণা অনুভব করে সেই যন্ত্রণা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আর আপনি যখন সেই শরীরের অংশ (মাংস) খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করছেন তার মানে আপনি খাদ্যের সহিত সেই যন্ত্রণাকেও গ্রহণ করছেন। অপরপক্ষে উদ্ভিজ্জ খাদ্য গ্রহণ করতে গেলে সবসময় আপনাকে সেই উদ্ভিদকে হত্যা করতে হয়না। যেমন ঢেড়স গাছ থেকে ঢেড়স পাড়লে গাছ মরে যায়না। লাউগাছ থেকে লাউ পাড়লে গাছ মরে যায় না, এভাবে অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যাবে। যদি ধরেও নিই উদ্ভিদ জাতীয় খাদ্য খেলে উদ্ভিদের হত্যা হয়, তবুও আপনি কিভাবে ভাবতে পারেন সবধরনের হত্যার শাস্তি একরকম হবে? মূলা চুরি করলে কি আপনি ফাসি দিয়ে দিবেন নাকি! মানুষ হত্যা আর একটি মুরগী হত্যা যদি সমান অপরাধ না হয়, তাহলে কোন যুক্তিতে পশুহত্যা আর উদ্ভিদ হত্যা সমান অপরাধের হবে? পরমেশ্বর ভগবান যিঁনি সকল জীবের আশ্রয়দাতা, যাঁকে পরম করুণাময় বলে সম্বোধিত করা হয় তিঁনি নিশ্চই নিষ্ঠুর নন। তাই তিঁনি পবিত্র বেদের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন কোন পদ্ধতিতে সেই সমস্ত উদ্ভিজ্জ আহার গ্রহণ করলেও উদ্ভিদ হত্যাজনিত অপরাধ আমাদের স্পর্শ করবে না। पत्रं पुष्पं फलं तोयं यो मे भक्त्या प्रयच्छति। तदहं भक्त्युपहृतम् अश्नामि प्रयतात्मनः॥ যে বিশুদ্ধচিত্ত নিষ্কাম ভক্ত ভক্তি সহকারে আমাকে পত্র, পুষ্প, ফল ও জল অর্পন করেন, আমি তাঁর সেই ভক্তিপ্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহণ করি। (ভ:গী: ৯/২৬) এভাবে ভগবানের প্রতি শরণাগত থেকে উদ্ভিজ্জ খাদ্যদ্রব্যকে ভগবানের নিকট নিবেদন করার পর তার আশির্বাদ (প্রসাদ) রূপে গ্রহণ করতে হয়, এটাই খাদ্য গ্রহণের পদ্ধতি। আমরা জীবন ধারণের জন্য যা কিছু ব্যবহার করে থাকি তা প্রথমে ভগবানকে নিবেদন করলে সেই বস্তুর ভোগজনিত অপরাধ থেকে ভগবান আমাদের মুক্ত রাখেন। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদেরকে সেই অভয় অবশ্যই দান করেছেন- सर्वधर्मान् परित्यज्य मामेकं शरणं व्रज। अहं त्वां सर्वपापेभ्यो मोक्षयिष्यामि मा शुचः সর্ব প্রকার ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল আমার শরণাগত হও। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করবো শোক করো না। (ভ:গী: ১৮/৬৬) অতএব, পরিশেষে বলতে

ব্রহ্মা’জির ১ দিনে পৃথিবীর কতদিন হয়?

Svadharmam Q&A

আপনি কি দিবারাত্রির তত্ত্ববেতা হতে চান? ❝सहस्रयुगपर्यन्तमहर्यद्ब्रह्मणो विदुः। रात्रिं युगसहस्रान्तां तेऽहोरात्रविदो जनाः॥ সহস্রযুগপর্যন্তমহর্যদ্ ব্রহ্মণো বিদুঃ। রাত্রিং যুগসহস্রান্তাং তে’হোরাত্রবিদো জনাঃ॥ By human calculation, a thousand ages taken together form the duration of Brahmä’s one day. And such also is the duration of his night. মনুষ্য মানের সহস্র চতুর্যুগে ব্রহ্মার একদিন হয় এবং সহস্র চতুর্যুগে তাঁর এক রাত্রি হয়। এভাবেই যাঁরা জানেন, তাঁরা দিবা-রাত্রির তত্ত্ববেত্তা।❞ (ভ:গী: ৮/১৭) সৌর বর্ষের হিসাবে পৃথিবীতে ০৪ টি যুগ (চতুর্যুগ: সত্য+ত্রেতা+দ্বাপর+কলি) চক্রাকারে আবর্তিত হয়। এই চতুর্যুগের এক সমষ্টিকে বলা হয় এক দিব্যযুগ। এক দিব্যযুগ এক হাজার বার চক্রাকারে আবর্তিত হলে ব্রহ্মাজির এক দিবস হয়, অনুরূপ এক হাজার দিব্যযুগে হয় এক রাত্রি। ব্রহ্মাজির দিবারাত্রির এই সংযুক্তিতে মোট দুই হাজার দিব্যযুগ আবর্তিত হয়; এই দুই হাজার দিব্য যুগের সমষ্টিকে বলা হয় এক কল্প অর্থাৎ, ব্রহ্মাজির এক দিন। এভাবে ৩০ দিনে মাস; ১২ মাসে অর্থাৎ ৩৬০ দিনে বছর এবং ব্রহ্মাজির ১০০ বছরে আয়ুষ্কাল পূর্ণ হয়। বিষ্ণুপুরাণ (০১/০৩/১১-১৩) অনুযায়ী ঊষা ও সন্ধ্যা সহ মোট যুগের সময়সীমা: ১) কৃত/সত্যযুগ ৪,৮০০ দিব্যবর্ষ = ১৭,২৮,০০০ সৌরবর্ষ ২) ত্রেতাযুগ ৩,৬০০ দিব্যবর্ষ = ১২,৯৬,০০০ সৌরবর্ষ ৩) দ্বাপর যুগ ২,৪০০ দিব্য বর্ষ = ৮৬৪,০০০ সৌরবর্ষ ৪) কলিযুগ ১,২০০ দিব্যবর্ষ = ৪৩২,০০০ সৌরবর্ষ _________________________________________ সর্বমোট = ৪,৩২০,০০০ সৌরবর্ষ ০১ চতুর্যুগ = ০১ দিব্যযুগ বা’ ০১ দিব্যযুগ = ৪,৩২০,০০০ সৌর বর্ষ। ২,০০০ দিব্যযুগ = ০১ দিন (দিবারাত্রি) বা ০১ কল্প ∴ ০১ কল্প = ২,০০০ দিব্যযুগ বা’ ২,০০০×৪৩,২০,০০০ = ৮,৬৪০,০০০,০০০ সৌরবর্ষ। তার মানে ব্রহ্মাজির ০১ দিনে পৃথিবীর হিসাবে দাঁড়ায় ৮,৬৪০,০০০,০০০ সৌরবর্ষ। ✍️ প্রবীর চৈতন্য চন্দ্র দাস © স্বধর্মম্ ™️

ব্রহ্মা’জির আয়ুষ্কাল কত?

Svadharmam Q&A

ব্রহ্মা’জির আয়ুষ্কাল: [৩০ দিনে মাস; ১২ মাসে বা’ ৩৬০ দিনে ০১ বর্ষ; এভাবে মোট আয়ু ১০০ বর্ষ বা’ পর। ব্রহ্মার আয়ুষ্কাল দুইভাগে বিভক্ত এই ভাগকে বলা হয় পরার্ধ] সৌর বর্ষের হিসাবে পৃথিবীতে ০৪ টি যুগ (চতুর্যুগ: সত্য+ত্রেতা+দ্বাপর+কলি) চক্রাকারে আবর্তিত হয়। এই চতুর্যুগের এক সমষ্টিকে বলা হয় এক দিব্যযুগ। এক দিব্যযুগ এক হাজার বার চক্রাকারে আবর্তিত হলে ব্রহ্মাজির এক দিবস হয়, অনুরূপ এক হাজার দিব্যযুগে হয় এক রাত্রি। ব্রহ্মাজির দিবারাত্রির এই সংযুক্তিতে মোট দুই হাজার দিব্যযুগ আবর্তিত হয়; এই দুই হাজার দিব্য যুগের সমষ্টিকে বলা হয় এক কল্প অর্থাৎ, ব্রহ্মাজির এক দিন। এভাবে ৩০ দিনে মাস; ১২ মাসে অর্থাৎ ৩৬০ দিনে বছর এবং ব্রহ্মাজির ১০০ বছরে আয়ুষ্কাল পূর্ণ হয়।  বিষ্ণুপুরাণ (০১/০৩/১১-১৩) অনুযায়ী ঊষা ও সন্ধ্যা সহ মোট যুগের সময়সীমা: ১) কৃত/সত্যযুগ ৪,৮০০ দিব্যবর্ষ = ১৭,২৮,০০০ সৌরবর্ষ ২) ত্রেতাযুগ ৩,৬০০ দিব্যবর্ষ = ১২,৯৬,০০০ সৌরবর্ষ ৩) দ্বাপর যুগ ২,৪০০ দিব্য বর্ষ = ৮৬৪,০০০ সৌরবর্ষ ৪) কলিযুগ ১,২০০ দিব্যবর্ষ = ৪৩২,০০০ সৌরবর্ষ ___________________________________________ সর্বমোট = ৪,৩২০,০০০ বছর গণনা: ০১ চতুর্যুগ = ০১ দিব্যযুগ বা’ ০১ দিব্যযুগ = ৪,৩২০,০০০ সৌর বর্ষ। ২,০০০ দিব্যযুগ = ০১ দিন (দিবারাত্রি) বা ০১ কল্প ∴ ০১ কল্প = ২,০০০ দিব্যযুগ বা’ ২,০০০×৪৩,২০,০০০ = ৮,৬৪০,০০০,০০০ সৌরবর্ষ। ৩৬০ দিন বা কল্প = ব্রহ্মার ০১ বর্ষ বা’ ৩৬০×৮,৬৪০,০০০,০০০= ৩,১১০,৪০০,০০০,০০০ সৌরবর্ষ। ১০০ বর্ষে আয়ু পূর্ণ হয় বা’ ১০০×৩,১১০,৪০০,০০০,০০০= ৩১১,০৪০,০০০,০০০,০০০ সৌরবর্ষ অতএব, ব্রহ্মার মোট আয়ু পৃথিবীর হিসাবে ৩১১,০৪০,০০০,০০০,০০০ সৌরবর্ষ বা ৩১১ ট্রিলিয়ন ৪০ বিলিয়ন বছর।    তথ্যসূত্র: ১) বিষ্ণুপুরাণ: ১/৩/১১-১৩ दिव्यैवर्षसहस्रैस्तु कृतत्रेतादिसंज्ञितम्। चतुर्युगं द्वादशभिस्तद्विभागं निबोध मे।।११।। चत्वारि त्रिणि द्वै चैकं कृतादिषु यथाक्रमम्। दिव्याब्दानां सहस्राणि युगेष्वाहुः पुराविदः।।१२।। तत् प्रमाणैः शतैः सन्ध्या पूर्वा तत्राभिषीयते। सन्ध्यांशश्चैव तत्तुल्यो युगस्यानन्तरो हि सः।।१३।। দিব্যৈবর্ষসহস্রৈস্তু কৃতত্রেতাদিসংজ্ঞিতম্। চতুর্যুগং দ্বাদশভিস্তদ্বিভাগং নিবোধ মে ।।১১৷৷ চত্বারি ত্রীণি দ্বৈ চৈকং কৃতাদিষু যথাক্রমম্। দিব্যাব্দানাং সহস্রাণি যুগেস্বাহুঃ পুরাবিদঃ ।।১২।। তৎ প্রমাণৈঃ শতৈঃ সন্ধ্যা পূর্বা তত্রাভিষীয়তে। সন্ধ্যাংশশ্চৈব তত্ত্বল্যো যুগস্যানন্তরো হি সঃ ।।১৩। দেবতাদের বারো হাজার বর্ষে সত্য যুগ, ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ ও কলিযুগ নামে চারযুগ হয়। তাদের পৃথক পৃথক পরিমাণও আমি তোমাকে শোনাচ্ছি।। ১১। পুরাতত্ত্ব জ্ঞাতাগণ সত্যযুগাদির পরিমাণ ক্রমশ চার, তিন, দুই ও এক হাজার দিব্য বর্ষ বলে থাকেন।। ১২। প্রত্যেক যুগের আগে সম পরিমাণের শত বর্ষের সন্ধ্যা থাকে এবং যুগের পরেও সেই পরিমাণের সন্ধ্যাংশ হয় (অর্থাৎ সত্যযুগ আদির পূর্বে ক্রমশ চার, তিন, দুই ও একশত দিব্য বর্ষের সন্ধ্যা এবং তত বর্ষেরই সন্ধ্যাংশ হয়ে থাকে)। ১৩।।  ২) শ্রীবিষ্ণুপুরাণ: ১/৩/৫ निजेन तस्य मानेन आयुर्वर्षशतं स्मृतम्। तत्पराख्यं तदर्धं च परार्धमभिधीयते॥ নিজেন তস্য মানেন আয়ুর্বর্ষশতং স্মৃতম্। তৎ পরাখ্যং তদর্দ্ধং চ পরার্দ্ধমভিধীয়তে।। বলা হয় তাঁর নিজের পরিমাণে তাঁর আয়ু শত বর্ষের হয়। সেই শত বর্ষকে বলা হয় ‘পর’, তার অর্ধেককে বলা হয় ‘পরার্ধ’।। ৩) ভগবদ্গীতা: ৮/১৭ सहस्रयुगपर्यन्तमहर्यद्ब्रह्मणो विदुः। रात्रिं युगसहस्रान्तां तेऽहोरात्रविदो जनाः॥ সহস্রযুগপর্যন্তমহর্যদ্ ব্রহ্মণো বিদুঃ। রাত্রিং যুগসহস্রান্তাং তে’হোরাত্রবিদো জনাঃ॥ By human calculation, a thousand ages taken together form the duration of Brahmä’s one day. And such also is the duration of his night. মনুষ্য মানের সহস্র চতুর্যুগে ব্রহ্মার একদিন হয় এবং সহস্র চতুর্যুগে তাঁর এক রাত্রি হয়। এভাবেই যাঁরা জানেন, তাঁরা দিবা-রাত্রির তত্ত্ববেত্তা। ✍️ প্রবীর চৈতন্য চন্দ্র দাস © স্বধর্মম্ ™️

অন্ন কত প্রকার?

Svadharmam Q&A

ভগবদগীতা: ১৫/১৪ अहं वैश्वानरो भूत्वा प्राणिनां देहमाश्रितः। प्राणापानसमायुक्तः पचाम्यन्नं चतुर्विधम्॥ অহং বৈশ্বানরো ভূত্বা প্রাণিনাং দেহমাশ্রিতঃ। প্রাণাপানসমায়ুক্তঃ পচামি (পচাম্যন্নং) অন্নম্ চতুর্বিধম্॥ উক্ত শ্লোকে ❝অন্নম্ চতুর্বিধম্❞ অর্থাৎ, চার প্রকার অন্নের কথা বলা হয়েছে। সংস্কৃতে অন্ন শব্দের অর্থ খাদ্য। যথা- চর্ব্য, চোষ্য, লেহ্য ও পেয়। ১) চর্ব্য- চিবিয়ে খেতে হয় এমন, ২) চোষ্য- যা চুষে খেতে হয়, ৩) লেহ্য- যা চেটে খেতে হয় এবং ৪) পেয়- পান করে খেতে হয়

বেদ-বেদান্তে পারদর্শী হয়েও কেন শ্রীকৃষ্ণকে পরম ব্রহ্ম, পরম পুরুষোত্তম পরমেশ্বর ভগবান রূপে জানতে পারা যায় না?

20250609 203415 Svadharmam

এই প্রসঙ্গে যামুনাচার্য তার স্তোত্ররত্ন-১২ তে খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন- “হে ভগবান! মহামুনি ব্যাসদেব, নারদ আদি ভক্তেরা তোমাকে পরমেশ্বর ভগবান বলে জানেন। বিভিন্ন বৈদিক শাস্ত্র উপলব্ধির মাধ্যমে তোমার গুণ, রূপ, লীলা আদি সম্বন্ধে অবগত হওয়া যায় এবং জানতে পারা যায় যে, তুমিই পরমেশ্বর ভগবান। কিন্তু রজ ও তমোগুণের দ্বারা আচ্ছাদিত অভক্ত অসুরেরা কখনই তোমাকে জানতে পারে না, কারণ তোমার তত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করতে তারা সম্পূর্ণ অসমর্থ। এই ধরনের অভক্তেরা বেদান্ত, উপনিষদ আদি বৈদিক শাস্ত্রে অত্যন্ত পারদর্শী হতে পারে, কিন্তু তাদের পক্ষে পুরুষোত্তম ভগবানকে জানতে পারা সম্ভব নয়।” (যামুনাচার্য- স্তোত্ররত্ব: ১২) এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, ঐসমস্ত ব্যক্তিদের বেদ-বেদান্তের বিষয়াদি তোতাপাখির মতো মুখস্থ-ঠোঁটস্থ-পকেটস্থ থাকলেও, কেবলমাত্র তাদের চেতনা তম কিংবা রজগুণ দ্বারা আবৃত থাকায়, তারা পরমেশ্বর ভগবানের এজগতে প্রকাশিত লীলা সমূহ বুঝতে না পেরে ভগবানকে তাদেরই মতো একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে। তাদেরকে উদ্দেশ্য করে ভগবান বলেন- “বুদ্ধিহীন মানুষেরা, যারা আমাকে জানে না, মনে করে যে, আমি পূর্বে অব্যক্ত নির্বিশেষ ছিলাম, এখন ব্যক্তিত্ব পরিগ্রহ করেছি। তাদের অজ্ঞতার ফলে তারা আমার অব্যয় ও সর্বোত্তম পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত নয়।” (ভ:গী: ৭/২৪) “আমি যখন মনুষ্যরূপে অবতীর্ণ হই, তখন মূর্খেরা আমাকে অবজ্ঞা করে। তারা আমার পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত নয় এবং তারা আমাকে সর্বভূতের মহেশ্বর বলে জানে না।” (ভ:গী: ৯/১১) এখানে দেখা গেলো ঐসকল ব্যক্তিদের অসুর, বুদ্ধিহীন, মূর্খ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এমনকি যারা তম রজ গুণ দ্বারা প্রভাবিত নয় কিন্তু সত্ত্বগুনে স্থিত, সেইসব ব্যক্তিরাও অনেকক্ষেত্রে ভগবানের লীলা সমূহ দর্শন করে বিভ্রান্তিতে পড়ে ভগবানকে বুঝতে পারেন না, জানতে পারেন না। যেমন- পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলাতে আমরা দেখতে পাই ইন্দ্র এবং ব্রহ্মাজিও সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। একথা ভগবান নিজেও স্বীকার করে বলেছেন- “দেবতারা বা মহর্ষিরাও আমার উৎপত্তি অবগত হতে পারেন না, কেন না, সর্বতোভাবে আমিই দেবতা ও মহর্ষিদের আদি কারণ।” (ভ:গী: ১০/২) জড় কলুষমুক্ত না হলে পদ্মপলাশলোচন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জানতে পারা যায় না। তাহলে কিভাবে জানা যায় দর্শন করা যায়? “অনন্য ভক্তির দ্বারাই কিন্তু এই প্রকার আমাকে তত্ত্বত জানতে, প্রত্যক্ষ করতে এবং আমার চিন্ময় ধামে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়।” (ভ:গী: ১১/৫৪) শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান, পরব্রহ্ম হিসেবে তারাই জানেন যাদের হৃদয় নির্মল, যাদের তাঁর প্রতি অন্যন্য শ্রদ্ধা ভক্তি রয়েছে৷ তাদের কাছেই তিঁনি তার স্বরূপ প্রকাশ করেন। ঠিক যেমন করে সূর্য উদিত হলেই দর্শন করা যায়। তেমনিভাবেই পরমেশ্বর ভগবান তার ভক্তদের কাছে নিজেকে প্রকাশ করেন। আবার মাঝেমাঝে মেঘের আবরণ আমাদের সূর্যকে দেখতে দেয়না, একইভাবে পরমেশ্বর ভগবানের গোবিন্দম্ আদি রূপও তাঁর যোগমায়া শক্তি দ্বারা আবৃত থাকার ফলে আমরা দর্শন করতে পারিনা। আমাদের চেতনা মায়ার এই আবরণ থেকে মুক্ত হলেই পরমেশ্বর ভগবান তাঁর আদি স্বরূপের দর্শন প্রদান করেন। সেই রূপ দর্শন করে অর্জুন নিজেও সাক্ষ্য ঘোষণা করেছেন- “তুমি পরম ব্রহ্ম একমাত্র জ্ঞাতব্য” (ভ:গী: ১১/১৮)। ✍️ প্রবীর চৈতন্য চন্দ্র দাস

যদি সবকিছুরই স্রষ্টা থাকে, তাহলে সৃষ্টিকর্তার স্রষ্টা কে?

20250605 232649 Svadharmam

অভিমত: প্রকৃতপক্ষে এখানে কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই! তাই সৃষ্টিকর্তার স্রষ্টা কে? এই প্রশ্নটিই অবান্তর। সাধারণত আমরা কোনোকিছু সম্পূর্ণরূপে নতুনভাবে তৈরি করাকেই সৃষ্টি বলি, আর যে সৃষ্টি করলো তাকে সৃষ্টিকর্তা বলি। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বুঝতে পারা যায়, আসলে কোনোকিছুই সৃষ্টি হচ্ছে না, সমস্ত উপাদান ইতিমধ্যেই এখানে রয়েছে। শুধুমাত্র রূপ পরিবর্তন হওয়ার দরুন আমরা ভাবছি সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে বোঝা যায় প্রত্যেক কিছুরই সৃষ্টিকর্তা রয়েছে। এই যুক্তিতে গেলে প্রশ্নের পর প্রশ্নই উত্থাপিত হবে। কখনও কোনোরূপ সমাধানে পৌছানো যাবে না। যেমন- সৃষ্টিকর্তার স্রষ্টা কে, যদি অন্য স্রষ্টা থাকে, তাহলে আবার তার স্রষ্টা কে? এভাবে প্রশ্ন চলমান থেকেই যাবে। এই পর্বে আমরা ব্যাখ্যা করবো কেন সৃষ্টিকর্তার কোনো স্রষ্টা নেই এবং কেনইবা সৃষ্টিকর্তার কোনো স্রষ্টার প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ- বৈদিক শাস্ত্রে বলা হয়েছে- ❝सर्वं खल्विदं ब्रह्म__”সর্বং খ্বলিদং ব্রহ্ম__সমস্ত জগৎ ব্রহ্ম ছাড়া কিছুই নয়।❞ (Everything indeed is Brahman.) [ছান্দোগ্য উপনিষদ- ৩/১৪/১] এই ব্রহ্মকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলা হয়- ❝यतो वा इमानि भूतानि जायन्ते, येन जातानि जीवन्ति, यत् प्रयन्त्यभिसंविशन्ति, तद् विजिज्ञासस्व, तद् ब्रह्मेति। __যতো বা ইমানি ভূতানি জায়ন্তে যেন জাতানি জীবন্তি যৎ প্রয়ন্ত্যভিসংবিশন্তি। তদ্বিজিজ্ঞাসস্ব তদ ব্রহ্মেতি।__যাঁহা হইতে এই সকল প্রাণী উৎপন্ন হয়, উৎপন্ন হইয়া যদ্দারা জীবিত থাকে, প্রলয়ে যাতে প্রবেশ করে, তাকে জানো, তিনিই ব্রহ্ম।❞ [তৈত্তীরিয় উপনিষদ: ৩/১/১] এই ব্রহ্ম সর্বব্যাপী একক সত্তা, অবিদ্যা পরবশত দেহাত্মবুদ্ধির স্তরে থেকে জীব নিজেকে ও জগতকে এঁর থেকে কেবল স্বতন্ত্র বলে মনে করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, ❝एकमेवाद्वितीयम्__একমেবাদ্বিতীয়ম্❞__ তিঁনি এক এবং অদ্বিতীয়। [ছান্দোগ্য উপনিষদ– ৬/২/১]এ এই মহাবাক্য সেই পরব্রহ্মকে নির্দেশ করে এবং এটি এও বোঝায় যে তিঁনি ভিন্ন কিছুই অবশিষ্ট নেই। সবকিছুই তাঁর অংশসদৃশ, সেই অর্থেই তিঁনি এক এবং অদ্বিতীয়। এখানে, ঐখানে, সবখানেই, তিঁনি ব্যতীত আর কিছুই নেই। অর্থাৎ, তিঁনি এক এবং তিঁনি ভিন্ন দ্বিতীয় কিছুই নেই। এজন্যই তাঁর এই উপযুক্ত উপাধি “এক এবং অদ্বিতীয়”। সেই এক, অদ্বিতীয় পরম পুরুষ হচ্ছেন বাসুদেব। ❝वासुदेवः सर्वमिति__বাসুদেবঃ সর্বম্ ইতি❞ [ভ:গী- ৭/১৯] বাসুদেব (কৃষ্ণ) তিঁনিই সবকিছু। আমরা যারা অবিদ্যায় আচ্ছন্ন হয়ে এই পরম সত্যকে উপলব্ধি করছি না কিংবা বিদ্যার অনুশীলনে যারা রত, উভয়ই তাঁর অংশ। ❝ममैवांशो__মামৈবাংশ__আমার অংশ❞ [ভ:গী- ১৫/৭] প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা: পরমেশ্বর ভগবান অচিন্ত্য শক্তির অধিকারী, তাই এখানে উদাহরণস্বরূপ বলা যায় একটি শরীরে বিভিন্ন প্রকারের শক্তি পরিলক্ষিত হয়, যেমন- দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি, ঘ্রাণশক্তি, বাকশক্তি ইত্যাদি। এই সমস্ত শক্তিই একটি শরীরের সাথে সংযুক্ত। শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। বিচ্ছিন্ন হওয়া মানে অস্তিত্ব হারিয়ে যাওয়া। আবার এই সমস্ত শক্তি সমূহ ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিও নয় কিন্তু এই ভিন্ন ভিন্ন শক্তির ভিন্ন ভিন্ন কার্য বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এক শক্তি অন্য শক্তির কাজ করে না। যেমন আপনি দৃষ্টিশক্তি দিয়ে শ্রবণ করতে পারবেন না, শ্রবণ শক্তি দিয়ে ঘ্রাণ নিতে পারবেন না। সেই শক্তি সমূহের ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় থাকলেও তারা একক কেন্দ্রীয় সত্তা শরীরের সাথে যুক্ত থেকেই শরীরের তুষ্টিতে নিয়োজিত। শক্তিমান থেকে শক্তিকে আলাদা করা যায় না আবার শক্তি কখনো শক্তিমান হয়ে যায় না। ঠিক তেমনিভাবেই পরমেশ্বর ভগবান পরম সত্ত্বা যাঁকে পরব্রহ্ম বলা হচ্ছে তাঁর অচিন্ত্য শক্তি রয়েছে- হ্লাদিনী শক্তি, বহিরঙ্গা মায়া শক্তি, অন্তরঙ্গা যোগমায়া শক্তি, তটস্থা শক্তি ইত্যাদি। সেইসব শক্তি সমূহের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও কার্য রয়েছে। সেই শক্তি সমূহ ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় বহন করলেও প্রকৃত অর্থে কেন্দ্রীয় সত্ত্বা পরম ব্রহ্মের অংশসদৃশ, আলাদা নয়। তাই সেই শক্তি সমূহ কখনোই নিজে পরম সত্ত্বাও নয়। পরম সত্ত্বা পরম ব্রহ্মের থেকে নির্গত শক্তি মাত্র। তার থেকেই সবকিছু প্রবাহিত হয়ে বহমান রয়েছে। তাই তিঁনি বলেন- ❝अहं सर्वस्य प्रभवो__অহং সর্বস্য প্রভবো__আমিই জড় ও চেতন সমস্ত কিছুর উৎস❞ [ভ:গী: ১০/৮] এক কথায় আমি, আপনি, জগৎ, কাল সবকিছুই তাঁর অচিন্ত্য শক্তির স্বপ্রকাশ। অতএব তাই শাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে- ❝सः अहम्__সোহং❞__পরমেশ্বরের সাথে আমি সম্বন্ধযুক্ত।  [ঈশোপনিষদ: ১৬] ❝अहम् ब्रह्मास्मि__অহম্ ব্রহ্মাস্মি__আমি ব্রহ্মবস্তু হই❞ [বৃহদারণ্যক উপনিষদ: ১/৪/১০ ] ❝तत्त्वमसि__তত্ত্বমসি❞__তুমিও সেই। [ছান্দোগ্য উপনিষদ: ৬/৮/৭] শ্রীল প্রভুপাদ উদাহরণ দিচ্ছেন- ❝যেমন, একটি বৃক্ষ হচ্ছে একটি পূর্ণ সত্তা, কিন্তু তার শাখা-প্রশাখা এবং পাতাগুলি হচ্ছে সেই বৃক্ষের বিভিন্ন অংশ। বৃক্ষের পাতা এবং শাখা-প্রশাখাগুলিও বৃক্ষ; কিন্তু পূর্ণ বৃক্ষটি পাতা নয় অথবা শাখা-প্রশাখা নয়; বেদে বলা হয়েছে, ‘সর্বং খ্বলিদং ব্রহ্ম’- অর্থাৎ, সমস্ত জগৎ ব্রহ্ম ছাড়া আর কিছুই নয়। এই উক্তিটির অর্থ হচ্ছে যেহেতু সব কিছুই পরম ব্রহ্ম থেকে প্রকাশিত হয়েছে, তাই সবই ব্রহ্ম। তেমনই, দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হাত-পাগুলিকে দেহ বলা হয়, কিন্তু পূর্ণ দেহটি হাত অথবা পা নয়।❞ [ভা: ১/৫/২০ ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য] প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা: আসলে সেই পরম সত্তার ক্ষেত্রে সম্বোধিত শব্দ “সৃষ্টিকর্তা” শব্দটিই বেমানান। আপনারা যাঁকে সৃষ্টিকর্তা বলে জানেন, তাঁকে বেদে বলা হয়েছে কৃষ্ণ অর্থাৎ সর্বাকর্ষক, তিনি সমস্ত আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তিঁন বিষ্ণু অর্থাৎ তিঁনি সর্বব্যাপী, সবকিছুই তাঁর অংশ। প্রকৃতপক্ষে তিঁনি ব্যতীত ভিন্ন কিছুই এজগতে নেই। যেহেতু বদ্ধজীবের চেতনা জড়জগতের ত্রিগুণের (সত্ত্ব রজ তম) বিভিন্ন মাত্রার জড় কলুষের দ্বারা আবৃত থাকার কারণে তাদের নিকট এজগতে দৃশ্যমান বস্তু মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা, ঘরবাড়ি, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত, ইট-পাথর ইত্যাদি হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। বস্তুতপক্ষে সবই পরম-সত্তার স্বরূপ। তিঁনিই সর্বত্র বিস্তৃত; সবকিছু তাঁরই অংশসদৃশ। অজ্ঞানতার কারণে সেসবকিছুকে আমরা পরমেশ্বর থেকে আলাদা ভাবছি বা দেখছি আসলে সবই সেই পরম তত্ত্বের সাথে সংযুক্ত, পরম ঈশ্বর থেকে কখনোই তা বিচ্ছিন্ন নয়। এজগতে বা চিন্ময় জগতে, দৃশ্যমান কিংবা অদৃশ্য কোনোকিছুই প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণ থেকে স্বতন্ত্র নয়। স্বতন্ত্রতা আমাদের ভাবনায়, চেতনায়। আর এজন্য আমরা ভাবছি তিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা হলে তার সৃষ্টিকর্তা কে? অতএব, যেহেতু দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সবকিছুই পরমেশ্বর পরব্রহ্মের সাথে সম্বন্ধযুক্ত ও সংযুক্ত সেহেতু উপরিউক্ত দর্শন অনুযায়ী এখানে সৃষ্টিকর্তার স্রষ্টার প্রয়োজনীয়তাও নেই এবং রয়েছেন কিনা এই প্রশ্নটাই এক অজ্ঞানতার পরিচয় বহন করে। আশা করছি পরবর্তী পোস্টে সেই পরম সত্ত্বার স্বরূপ ও তাঁর বিস্তৃতি আলোচিত হলে বিষয়টি আরো পরিস্কার হবে। ✍️ প্রবীর চৈতন্য চন্দ্র দাস

সনাতন ধর্মে নারী সম্মান~সমাদৃত নাকি অবহেলিত?

431876215 2430762553754079 1116997689555610999 n Svadharmam

বিধর্মীদের প্রপাগাণ্ডার ফাঁদে না পড়ে নিজ বৈদিক শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জেনে রাখুন। অনেকে বলে থাকেন আমাদের ধর্ম দিয়েছে নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান ইত্যাদি, ইত্যাদি অথচ, ঐ সমাজ সংস্কৃতির দিকে তাকালে দেখি বাস্তবতা ভিন্ন। আজ ভিন্ন যবন-ম্লেচ্ছ-অনার্য সংস্কৃতি চর্চায় আমাদের বৈদিক সমাজের অধঃযাত্রায় হারিয়েছে নারীর মর্যাদা। তাই সকলের সচেতনতায় ফিরে আসুক সেই সনাতন ঐতিহ্য। বৈদিক সমাজে নারীর অবস্থান সমাদৃত নাকি অবহেলিত এটা বুঝতে গেলে আমার বেদাদি শাস্ত্রের বর্ণনার দিকে তাকিয়ে দেখি নারীর অধিকার সর্বগ্রগণ্য। ♦Ladies First এটা তো বৈদিক শিক্ষা, শুনে থাকবেন নামগুলো- প্রথমেই নারীশক্তি: লক্ষ্মীনারায়ণ, রাধামাধব, রাধাকৃষ্ণ, সীতারাম ইত্যাদি। একনজরে সংক্ষিপ্তভাবে বৈদিক শাস্ত্রের কিছু উদ্ধৃতি: “বাহনে বা যানে আরোহী ব্যক্তির পক্ষে বয়স্ক ব্যক্তি, ক্লান্ত ব্যক্তি, ভারবাহী ব্যক্তি, বর, রাজা, স্নাতক এবং স্ত্রীলোকদের পথ ছেড়ে দেয়া কর্তব্য।” (মনুসংহিতা ২/১৩৮) “একজন পিতা, ভাই, পতি বা দেবর তাদের কন্যা, বোন, স্ত্রী বা ভ্রাতৃবধুকে মৃদুবাক্য, ভদ্র ব্যবহার ও উপহারাদি দ্বারা খুশি ও সন্তুষ্ট রাখবেন। যারা যথার্থ কল্যাণ ও উন্নতি চান, তারা নিশ্চিত করবেন যে, তাদের পরিবারের নারীরা যাতে সর্বদা খুশী থাকেন এবং কখনো দুর্দশা ভোগ না করেন”। (মনুসংহিতা ৩/৫৫) “যে বংশে স্ত্রীলোকেরা বস্ত্রালঙ্কারাদির দ্বারা সমাদৃত হন, সেখানে দেবতারা প্রসন্ন থাকেন। আর যে বংশে স্ত্রীলোকদের সমাদর নেই সেখানে সমস্ত ক্রিয়া (প্রার্থনা, উপাসনাদি) নিষ্ফল।” (মনুসংহিতা ৩/৫৬) “যে বংশে ভগিনী ও গৃহস্থের স্ত্রী (নারীকূল) পুরুষদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখিনী হয়, সেই বংশ অতি শীঘ্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আর যে বংশে স্ত্রীলোকেরা সন্তুষ্ট থাকে, সেই বংশ নিশ্চিতভাবেই শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে”। (মনুসংহিতা ৩/৫৭) “যে বংশকে উদ্দেশ্য করে ভগিনী, পত্নী, পুত্রবধূ প্রভৃতি স্ত্রীলোকেরা অনাদৃত, অপমানিত বা বৈষম্যের শিকার হয়ে অভিশাপ দেন, সেই বংশ বিষপান করা ব্যক্তি ন্যায় ধন-পশু প্রভৃতির সাথে সর্বতোভাবে বিনাশপ্রাপ্ত হয়।” (মনুসংহিতা ৩/৫৮) “যারা ঐশ্বর্য কামনা করে, তারা স্ত্রীলোকদের সম্মান প্রদর্শন দ্বারা খুশী রাখবে এবং উত্তম অলংকার, পোশাক ও খাদ্যদ্বারা প্রীত রাখবে। স্ত্রীজাতিকে সর্বদা পবিত্র হিসেবে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করবে।” (মনুসংহিতা ৩/৫৯) “যে স্বামী তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখে না, সে তার সমগ্র পরিবারের জন্য দুর্দশা বয়ে আনে। আর যদি স্ত্রী পরিবারের প্রতি সুখী থাকেন, তবে সমগ্র পরিবার শোভাময় হয়ে থাকে।” (মনুসংহিতা ৩/৬২) “নববিবাহিতা বধূ, কন্যা এবং গর্ভবতী মহিলাদের অতিথি ভোজনের পূর্বেই ভোজন প্রদান করতে হবে।” (মনুসংহিতা ৩/১১৪) “নারী অপহরণকারীদের মৃত্যুদণ্ড হবে।” (মনুসংহিতা ৮/৩২৩) “যদি কোন নারীকে সুরক্ষা দেবার জন্য পুত্র বা কোন পুরুষ পরিবারে না থাকে, অথবা যদি সে বিধবা হয়ে থাকে, যে অসুস্থ অথবা যার স্বামী বিদেশে গেছে, তাহলে রাজা তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। যদি তার সম্পত্তি তার কোন বন্ধু বা আত্মীয় হরণ করে, তাহলে রাজা দোষীদের কঠোর শাস্তি দেবেন এবং সম্পত্তি ঐ নারীকে ফেরত দেবেন।” (মনুসংহিতা ৮/২৮-২৯) “যদি কেউ মা, স্ত্রী বা কন্যার নামে মিথ্যা দোষারোপ করে তবে তাকে শাস্তি দিতে হবে।” (মনুসংহিতা ৮/২৭৫) “যারা নারীদের ধর্ষণ করে বা উত্যক্ত করে বা তাদের ব্যাভিচারে প্ররোচিত করে তাদের এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে তা অন্যদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে এবং কেউ তা করতে আর সাহস না পায়।” (মনুসংহিতা ৮/৩৫২) “যদি কেউ কোন ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া মা, বাবা, স্ত্রী বা সন্তান ত্যাগ করে, তাকে কঠিন দণ্ড দিতে হবে।” (মনুসংহিতা ৮/৩৮৯) “যে স্ত্রী দুঃশীলতা হেতু নিজে আত্মরক্ষায় যত্নবতী না হয়, তাকে পুরুষগণ ঘরে আটকে রাখলেও সে ‘অরক্ষিতা’ থাকে। কিন্তু যারা সর্বদা আপনা- আপনি আত্মরক্ষায় তৎপর, তাদের কেউ রক্ষা না করলেও তারা ‘সুরক্ষিতা’ হয়ে থাকে। তাই স্ত্রীলোকদের আটকে রাখা নিষ্ফল। স্ত্রীজাতির নিরাপত্তা প্রধানত তাদের নিজস্ব সামর্থ্য ও মনোভাবের উপর নির্ভরশীল।” (মনুসংহিতা ৯/১২) “স্ত্রী লোকেরা সন্তানাদি প্রসব ও পালন করে থাকে। তারা নতুন প্রজন্ম বা উত্তরসুরির জন্ম দেয়। তারা গৃহের দীপ্তি বা প্রকাশস্বরূপ। তারা সৌভাগ্য ও আশীর্বাদ বয়ে আনে। তারাই গৃহের শ্রী।” (মনুসংহিতা ৯/২৬) “প্রজন্ম থেকে প্রজন্মোন্তরে স্ত্রীরাই সকল সুখের মূল। কারণ, সন্তান উৎপাদন, ধর্ম পালন, পরিবারের পরিচর্যা, দাম্পত্য শান্তি এসব কাজ নারীদের দ্বারাই নিষ্পন্ন হয়ে থাকে।” (মনুসংহিতা ৯/২৮) “নারী ও পুরুষ একে ভিন্ন অপরে অসম্পূর্ণ। এজন্য বেদে বলা হয়েছে ধর্মকর্ম পত্নীর সাথে মিলিতভাবে কর্তব্য”। (মনুসংহিতা ৯/৯৬) “পতি ও পত্নী মৃত্যু পর্যন্ত একসাথে থাকবেন। তারা অন্য কোন জীবনসঙ্গী গ্রহণ করবেন না বা ব্যাভিচার করবেন না। এই হলো নারী-পুরুষের পরম ধর্ম।” (মনুসংহিতা ৯/১০১) “যারা নারী, শিশু ও গুণবান পণ্ডিতদের হত্যা করে, তাদের কঠিনতম শাস্তি দিতে হবে।” (মনুসংহিতা ৯/২৩২) “আমার পূত্র শত্রুর নাশকারী এবং নিশ্চয়রূপে আমার কন্যা বিশিষ্টরূপে তেজস্বিনী।” (ঋগবেদ: ১০।১৫৯।৩) “যেমন যশ এই কন্যার মধ্যে এবং যেমন যশ সম্যকভৃত রথের মধ্যে, ঐরূপ যশ আমার প্রাপ্ত হোক।” (ঋগবেদ: ৯।৬৭।১০) “হে বধূ! শ্বশুরের প্রতি, পতির প্রতি, গৃহের প্রতি এবং এই সব প্রজাদের প্রতি সুখদায়িনী হও, ইহাদের পুষ্টির জন্য মঙ্গল দায়িনী হও। (অথর্ববেদ: ১৪।২।২৬) হে বধু! কল্যাণময়ী, গৃহের শোভাবর্দ্ধনকারী, পতি সেবা পরায়ণা, শ্বশুরের শক্তিদায়িনী, শাশুড়ি আনন্দ দায়িনী, গৃহকার্যে নিপুণা হও। (অথর্ববেদ: ১৪।২।২৭) “হে বধূ! যেমন বলবান সমুদ্র নদী সমূহের উপর সাম্রাজ্য স্থাপন করিয়াছে, তুমিও তেমন পতিগৃহে গিয়া সম্রাজ্ঞী হইয়া থাকো। (অথর্ববেদ: ১৪।১।৪০) সবাইকে নারী দিবসে কৃষ্ণপ্রীতি ও শুভকামনা, হরেকৃষ্ণ।

কর্ম বড় নাকি ধর্ম

20241123 115240 Svadharmam

কর্ম বড় নাকি ধর্ম এটা বোঝার পূর্বে কর্মের সংজ্ঞা জানাটা খুব জরুরি। শ্রীবিষ্ণুপুরাণে বর্ণিত রয়েছে- “কর্ম তাকেই বলা হয়, যা বন্ধনের কারণ না হয় এবং বিদ্যাও তাকেই বলা যায় যা মুক্তির সাধন হয়। এসব ছাড়া অন্য কর্ম তো পরিশ্রমরূপ এবং অন্য বিদ্যা কলাকৌশলমাত্র।” – (শ্রীবিষ্ণুপুরাণ: ১/১৯/৪১) (দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর প্রতি প্রহ্লাদ মহারাজ) আমরা জানি যেসমস্ত কর্ম কৃষ্ণকেন্দ্রিক নয় তা বন্ধনের কারণ আর যে কর্ম কৃষ্ণের প্রীতি বিধানে যুক্ত তা মুক্তিদায়ক। যেমন ভগবদগীতায় ভগবান বলেন- “বিষ্ণুর প্রীতি সম্পাদন করার জন্য কর্ম করা উচিত; তা না হলে কর্মই এই জড় জগতে বন্ধনের কারণ। তাই, হে কৌন্তেয়! ভগবানের সন্তুষ্টি বিধানের জন্যই কেবল তুমি তোমার কর্তব্যকর্ম অনুষ্ঠান কর এবং এভাবেই তুমি সর্বদাই বন্ধন থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।” – (ভ:গী: ৩/৯) বিষ্ণুপুরাণোক্ত প্রহ্লাদ মহারাজের বাণী ও ভগবদগীতার বাণী থেকে সহজেই বুঝতে পারা যায় যদি কর্মের উদ্দেশ্য বা কেন্দ্র কৃষ্ণ না হন তবে তা মুক্তিদায়ক হয়না, ফলস্বরূপ সেই কর্ম কেবলই কলাকৌশল মাত্র অথবা কেবলই পরিশ্রম। তাই আমাদের কৃষ্ণের সন্তুষ্টির জন্য কর্ম সম্পাদন করা কর্তব্য। কর্মের এই অতি সুন্দর ব্যবস্থাপনাকে বলা হয় কৃষ্ণভাবনা। এভাবেই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কেন্দ্র করে জীবন পরিচালনা করা উচিত। “পৃথিবীতে ধর্ম নামে যাহা কিছু চলে ভাগবত কহে তাহা পরিপূর্ণ ছলে” অতএব, প্রকৃত ধর্ম হচ্ছে কৃষ্ণের সন্তুষ্টি বিধানে কৃত কর্ম এবং কর্মের সংজ্ঞা এবং উদ্দেশ্যও হচ্ছে সেটি। ধর্ম বড় নাকি কর্ম বড় বিষয়টি এমন নয়। আসলে কর্মের উদ্দেশ্যে এবং কর্ম কর্তার মনোবৃত্তির উপর নির্ভর করে তা প্রতিষ্ঠিত হয়। মোটকথা হচ্ছে কর্মকে যদি ধর্মে রূপান্তরিত করা যায় তবে তা মহান অন্যথায় সেইসব কর্ম গাধার খাটুনি ছাড়া কিছুই না।। ধন্যবাদ।। ।। হরেকৃষ্ণ ।।

একাদশী Vs রোজা

unnamed Svadharmam

একাদশী Vs রোজা আমরা বিশেষ করে বাংলাদেশী হিন্দুরা একাদশী ব্রত পালনকালে যখন সংখ্যাগুরু মুসলমান সিনিয়র-জুনিয়র, বন্ধুবান্ধবদের কাছে থেকে একাদশী নিয়ে এক ধরনের ব্যাঙ্গাত্মক বাক্য ব্যবহার করতে শুনি। তাদের এই বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের দ্বারা অনেক হিন্দুরা লজ্জায় পড়ে যান। আজকের এই লিখাটি ঐ সমস্ত বিভ্রান্তি দূর করতে একটু হলেও সাহায্য করবে। জনৈকঃ “তোমরা তো খেয়ে দেয়ে একাদশী উপবাস থাকো। আমাদের রোজা দেখছো একদম কিছু না খেয়ে সারাদিন পার করতে হয়। খেয়ে দেয়ে উপবাস এটা হইলো কিছু” পি. চৈতন্যচন্দ্র দাসঃ আপনার এবং আপনাদের সংস্কৃতিকে সম্মান জানিয়ে বলছি শুনুন, একাদশী ব্রত ও রোজাকে কোনো মতেই কম্পেয়ার করা যায় না। যারা মিলাতে চায় তারা আসলেই বোকা। তাই প্রথমত বলতে চাই আমরা হিন্দুরা বেদের নির্দেশিত ধর্ম পালন করি যা পরম সত্য। আধুনিক বিজ্ঞান ক্রমেই সেই সত্যের কাছে পৌঁছাচ্ছে মাত্র। একাদশী কেবল এক ব্রতের নাম নয়। এটি এক মহাজাগতিক বিষয়। এটি কেবল একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী কিংবা সম্প্রদায় বিশেষের বর্ষ ক্যালেন্ডারের মতো নয় যে, বছরের কোনো এক মাসেই কেবল পালিত হবে। একাদশী মূলত কি? একাদশী একটি তিথি, যা প্রত্যেক মাসে দুইবার করে আবর্তিত হয়। আমরা প্রত্যেকেই জানি, ০১ দিন = ০৮ প্রহর ০১ সপ্তাহ = ০৭ দিন ০১ মাস = ০২ পক্ষ ০১ পক্ষ = ১৫ দিন/তিথি উক্ত দুটি পক্ষের নাম হল- শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষ। ০১টি পক্ষে যে ১৫টি তিথি থাকে তার ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন- ০১. প্রতিপদ, ০২. দ্বিতীয়া, ০৩. তৃতীয়া, ০৪. চতুর্থী, ০৫. পঞ্চমী, ০৬. ষষ্ঠী, ০৭. সপ্তমী, ০৮. অষ্টমী, ০৯. নবমী, ১০. দশমী, ১১. একাদশী, ১২. দ্বাদশী, ১৩. ত্রয়োদশী, ১৪. চতুর্দশী, ১৫.পূর্ণিমা/অমাবস্যা (শুক্লপক্ষ/কৃষ্ণপক্ষ) এখন দেখেন তো এই পৃথিবীতে পূর্ণিমা ঘটে কি না? অমাবস্যা হয় কি না? পূর্ণিমা/অমাবস্যার সাথে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা সম্পর্কিত কি না? জনৈকঃ হ্যাঁ। পি. চৈতন্যচন্দ্র দাসঃ হুম, এর সবই বাস্তব এবং বিজ্ঞানসম্মত। এমন তো নয় যে পূর্ণিমার চাঁদ কেবল হিন্দুদের আলোকিত করে, আর অমাবস্যার অন্ধকার কেবল মুসলমান, খ্রিস্টান, ইহুদি ইত্যাদিদের অন্ধকারাচ্ছন্ন রাখে! তাহলে একাদশী তিথিও তো সবার জন্যই প্রযোজ্য ঠিক যেমনটা পূর্ণিমা থেকে অমাবস্যা সবার জন্য সমানভাবে আবর্তিত হয়। অতএব, একাদশী তিথি সবার জন্য প্রযোজ্য এটা চাক্ষুষ প্রমাণিত বিজ্ঞান। এটি তেমন কোনো রকেট সাইন্স নয় যে বুঝতে অসুবিধা হবে। জনৈকঃ ……………….. পি. চৈতন্যচন্দ্র দাসঃ এবার আসুন, অন্যান্য এতোগুলো তিথি থাকলেও প্রত্যেক মাসে আসা নিয়মিত দুটি একাদশী তিথি’তেই কেন আমাদের ব্রত পালন করা আবশ্যক এই বিষয়ে কিছু জানা যাক। বৈদিক শাস্ত্রে একাদশী ব্রত উৎপত্তি বিষয়ে পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, বরাহপুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও বৈষ্ণবস্মৃতিরাজ শ্রীহরিভক্তিবিলাস আদি গ্রন্থে বর্ণিত আছে। একাদশীর আবির্ভাবঃ পদ্মপুরাণে একাদশী প্রসঙ্গে বলা হয়েছে একসময়- “জৈমিনি ঋষি তাঁর গুরুদেব মহর্ষি ব্যাসদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে গুরুদেব! একাদশী কি? একাদশীতে কেন উপবাস করতে হয়? একাদশী ব্রত করলে কি লাভ? একাদশী ব্রত না করলে কি ক্ষতি? এ সব বিষয়ে আপনি দয়া করে বলুন। মহর্ষি ব্যাসদেব তখন বলতে লাগলেন-সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান এই জড় সংসারে স্থাবর জঙ্গম সৃষ্টি করলেন। মর্ত্যলোকবাসী মানুষদের শাসনের জন্য একটি পাপপুরুষ নির্মাণ করলেন। সেই পাপপুরুষের অঙ্গগুলি বিভিন্ন পাপ দিয়েই নির্মিত হল। পাপপুরুষের মাথাটি ব্রহ্মহত্যা পাপ দিয়ে, চক্ষুদুটি মদ্যপান, মুখ স্বর্ণ অপহরণ, দুই কর্ণ-গুরুপত্নী গমন, দুই নাসিকা-স্ত্রীহত্যা, দুই বাহু-গোহত্যা পাপ, গ্রীবা-ধন অপহরণ, গলদেশ-ভ্রুণহত্যা, বক্ষ-পরস্ত্রী-গমন, উদর-আত্মীয়স্বজন বধ, নাভি-শরণাগত বধ, কোমর-আত্মশ্লাঘা, দুই উরু-গুরুনিন্দা, শিশ্ন-কন্যা বিক্রি, মলদ্বার-গুপ্তকথা প্রকাশ পাপ, দুই পা- পিতৃহত্যা, শরীরের রোম-সমস্ত উপপাতক। এভাবে বিভিন্ন সমস্ত পাপ দ্বারা ভয়ঙ্কর পাপপুরুষ নির্মিত হল। পাপপুরুষের ভয়ঙ্কর রূপ দর্শন করে ভগবান শ্রীবিষ্ণু মর্ত্যের মানব জাতির দুঃখমোচন করবার কথা চিন্তা করতে লাগলেন। একদিন গরুড়ের পিঠে চড়ে ভগবান চললেন যমরাজের মন্দিরে। ভগবানকে যমরাজ উপযুক্ত স্বর্ণ সিংহাসনে বসিয়ে পাদ্য অর্ঘ্য দিয়ে যথাবিধি তাঁর পূজা করলেন। যমরাজের সঙ্গে কথোপকথনকালে ভগবান শুনতে পেলেন দক্ষিণ দিক থেকে অসংখ্য জিবের আর্তক্রন্দন ধ্বনি। প্রশ্ন করলেন-এ আর্তক্রন্দন কেন? যমরাজ বললেন, হে প্রভু, মর্ত্যের পাপী মানুষেরা নিজ কর্মদোষে নরকযাতনা ভোগ করছে। সেই যাতনার আর্ত চীৎকার শোনা যাচ্ছে। যন্ত্রণাকাতর পাপাচারী জীবদের দর্শন করে করুণাময় ভগবান চিন্তা করলেন-আমিই সমস্ত প্রজা সৃষ্টি করেছি, আমার সামনেই ওরা কর্মদোষে দুষ্ট হয়ে নরক যাতনা ভোগ করছে, এখন আমিই এদের সদগতির ব্যবস্থা করব। ভগবান শ্রীহরি সেই পাপাচারীদের সামনে একাদশী তিথি রূপে এক দেবীমুর্তিতে প্রকাশিত হলেন। সেই পাপীদেরকে একাদশী ব্রত আচরণ করালেন। একাদশী ব্রতের ফলে তারা সর্বপাপ মুক্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ বৈকুন্ঠ ধামে গমন করল। শ্রীব্যাসদেব বললেন, হে জৈমিনি! শ্রীহরির প্রকাশ এই একাদশী সমস্ত সুকর্মের মধ্যে শ্রেষ্ট এবং সমস্ত ব্রতের মধ্যে উত্তম ব্রত। কিছুদিন পরে ভগবানের সৃষ্ট পাপপুরুষ এসে শ্রীহরির কাছে করজোড়ে কাতর প্রার্থনা জানাতে লাগল-হে ভগবান! আমি আপনার প্রজা! আমাকে যারা আশ্রয় করে থাকে, তাদের কর্ম অনুযায়ী তাদের দুঃখ দান করাই আমার কাজ ছিল। কিন্তু সম্প্রতি একাদশীর প্রভাবে আমি কিছুই করতে পারছি না, বরং ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছি। কেননা একাদশী ব্রতের ফলে প্রায় সব পাপাচারীরা বৈকুন্ঠের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে। হে ভগবান, এখন আমার কি হবে? আমি কাকে আশ্রয় করে থাকব? সবাই যদি বৈকুন্ঠে চলে যায়, তবে এই মর্ত্য জগতের কি হবে? আপনি বা কার সঙ্গে এই মর্ত্যে ক্রীড়া করবেন? পাপপুরুষ প্রার্থনা করতে লাগল- হে ভগবান, যদি আপনার এই সৃষ্ট বিশ্বে ক্রীড়া করবার ইচ্ছা থাকে তবে, আমার দুঃখ দূর করুন। একাদশী তিথির ভয় থেকে আমাকে রক্ষা করুন। হে কৈটভনাশন, আমি একমাত্র একাদশীর ভয়ে ভীত হয়ে পলায়ন করছি। মানুষ, পশুপাখী, কীট-পতঙ্গ, জল-স্থল, বন-প্রান্তর, পর্বত- সমুদ্র, বৃক্ষ, নদী, স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল সর্বত্রই আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু একাদশীর প্রভাবে কোথাও নির্ভয় স্থান পাচ্ছি না দেখে আজ আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। হে ভগবান, এখন দেখছি, আপনার সৃষ্ট অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ডের মধ্যে একাদশীই প্রাধান্য লাভ করেছে, সেইজন্য আমি কোথাও আশ্রয় পেতে পারছি না। আপনি কৃপা করে আমাকে একটি নির্ভয় স্থান প্রদান করুন। পাপপুরুষের প্রার্থনা শুনে ভগবান শ্রীহরি বলতে লাগলেন- হে পাপপুরুষ! তুমি দুঃখ করো না। যখন একাদশী তিথি এই ত্রিভুবনকে পবিত্র করতে আবির্ভুত হবে, তখন তুমি অন্ন ও রবিশস্য মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করবে। তা হলে আমার মূর্তি একাদশী তোমাকে বধ করতে পারবে না।” সবমিলিয়ে ছাব্বিশটি একাদশী রয়েছে। সাধারণত বার মাসে চব্বিশটি একাদশী। এইগুলি হচ্ছে- ১. উৎপন্না একাদশী ২. মোক্ষদা একাদশী ৩. সফলা একাদশী ৪. পুত্রদা একাদশী ৫. ষটতিলা একাদশী ৬. জয় একাদশী ৭. বিজয়া একাদশী ৮. আমলকী একাদশী ৯. পাপমোচনী একাদশী ১০. কামদা একাদশী ১১. বরুথিনী একাদশী ১২. মোহিনী একাদশী ১৩. অপরা একাদশী ১৪. নির্জলা একাদশী ১৫. যোগিনী একাদশী ১৬. শয়ন একাদশী ১৭. কামিকা একাদশী ১৯. অন্নদা একাদশী ১৮. পবিত্রা একাদশী ২০. পরিবর্তিনী বা পার্শ্ব একাদশী ২১. ইন্দিরা একাদশী ২২. পাশাঙ্কুশা একাদশী ২৩. রমা একাদশী ২৪. উত্থান একাদশী কিন্তু যে বৎসর পুরুষোত্তমাস, অধিমাস বা অনেকের মতে মলমাস থাকে, সেই বৎসর ২৫. পদ্মিনী ও ২৬. পরমা এই নামে আরও দুটি একাদশীর আবির্ভাব হয়। পি. চৈতন্যচন্দ্র দাসঃ আসলে এতসব আপনার মাথার উপর দিয়ে যাবে। তবুও আপনার অল্পবিদ্যাকে নাড়া দেওয়া প্রয়োজন তাই বলছি, শুনুন। জনৈকঃ ………………………. পি. চৈতন্যচন্দ্র দাসঃ