সাম্প্রতিক বন্যা এবং সংখ্যালঘু নির্যাতিত দরিদ্র পরিবারের আর্থিক সহায়তার জন্য দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে অনুদান পাঠানোর মাধ্যম

image 2024 08 25 014414931 Svadharmam

‘স্বধর্মম্ ফাউন্ডেশন’ বিভাগে আপনাকে স্বাগতম। সাম্প্রতিক বন্যা এবং সংখ্যালঘু নির্যাতিত দরিদ্র পরিবারের আর্থিক সহায়তার জন্য দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে অনুদান পাঠানোর মাধ্যম: বিকাশ/নগদ– 01970018651 (personal) ব্যাংক একাউন্ট : Account number: 2303481712001 Name : Ovi Chowdhury Branch : Agrabad, Chittagong Bank: City Bank Routing number – 225150135 Swift code – CIBLBDDH ভিসা কার্ড: Visa card no: 4105201020578787 Name: Ovi Chowdhury India থেকে পাঠানোর উপায়: Phone Pay/ Gpay : 7029412654 (After send from india pls confirm me in Whatsapp: +88 01714975347)

প্রভুপাদ’ — উপাধির অর্থ ও ব্যবহার

image_2024-04-29_132617242

‘প্রভুপাদ’ — উপাধির অর্থ ও ব্যবহার ~ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ভারত সরকার শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর প্রভুপাদের ১৫০তম আবির্ভাব বর্ষপূর্তি উদযাপন করেছে। তাঁর জন্য সম্মাননা সূচক “প্রভুপাদ” সম্বলিত একটি ডাকটিকিটও উন্মোচন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর প্রভুপাদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন এবং সম্মিলিত বৈষ্ণব দর্শক শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। যখন আমরা “প্রভুপাদ” উপাধিটি শ্রবণ করি, কিছু স্বাভাবিক প্রশ্নের উদয় হয়: প্রভুপাদ শব্দটির অর্থ কী? গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ে সর্বপ্রথম কে প্রভুপাদ উপাধি লাভ করেন? কে এই উপাধি প্রাপ্ত হতে পারেন? এই ছোট আলোচনাটি এইসব প্রশ্নের উত্তর প্রদানের জন্য প্রণীত। গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের বহু গুরু/আচার্যকে “প্রভুপাদ” আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই শব্দটি প্রভু + পাদ দুটি শব্দের সমাস। ইংরেজিতে কখনো কখনো একে অনুবাদ করা হয় — “যে গুরুদেবের শ্রীপাদপদ্মে অন্য গুরুবর্গ আশ্রয় লাভ করেন।” সংস্কৃতে “প্রভু-পাদ” শব্দটি নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। একটি উপায় হলো এই সমাসের মাধ্যমে — প্রভবঃ পাদে যস্য — “যার পদদ্বয়ে বহু প্রভুর আবাস।” এই বিশ্লেষণটি উপর্যুক্ত ইংরেজি অনুবাদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ব্যাকরণগতভাবে এটি “ব্যাধিকরণ-বহুব্রীহি-সমাস” হিসেবে পরিচিত। প্রভুপাদ শব্দের অন্য একটি ব্যাখ্যা হতে পারে — প্রভোঃ (শ্রীকৃষ্ণ) পাদ্ব ইব পাদৌ যস্য — “ যার পদদ্বয় প্রভু (শ্রীকৃষ্ণের) পদদ্বয়ের সমতুল্য।” এটি ব্যাকরণগতভাবে “উত্তরপদলোপি-বহুব্রীহি-সমাস” এবং — “সপ্তম্য উপমান পূর্বপদস্যোত্তরপদ লোপশ্চ বক্তব্যঃ” (অষ্টাধ্যায়ী ২।২।২৪) বার্ত্তিকা অনুসারে রচিত। এই বিশ্লেষণ অনুসারে শ্রীগুরু-পাদ-পদ্ম শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মের ন্যায়। শ্রীকৃষ্ণের চরণকে শাস্ত্রে বহু স্থানে পদ্মের সাথে তুলনা করা হয়েছে। তেমনি, শ্রীগুরুদেবের চরণও পদ্মের সাথে তুলনীয়। কেন?! “শ্রীগুরু-চরণ-পদ্ম” প্রবন্ধে শ্রীশ্রীমৎ গৌর গোবিন্দ স্বামী মহারাজ অত্যন্ত মধুর উপলব্ধি প্রদান করেছেন। এর সারকথা তুলে ধরা হলো— পদ্ম জলে জন্ম নিয়েও জলের স্পর্শ থেকে মুক্ত থাকে। উপরন্তু পদ্ম-মধু হিসেবে পরিচিত পদ্মের মধু অত্যন্ত মিষ্টি। এই মধু প্রাপ্ত হওয়ার জন্য মৌমাছিকে কাঁটার সাথে সংগ্রাম করতে হয় না, যেখানে (গোলাপ প্রভৃতি) বহু অন্য ফুলের মধু সংগ্রহ করতে হয় কাঁটার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনার মধ্যে। পরিশেষে, পদ্মফুল রাতে বন্ধ হয়ে যায় এবং মৌমাছির জন্য এক আরামপ্রদ বিশ্রামস্থলে পরিণত হয়, যেখানে অন্য ফুলগুলো ঐ মৌমাছির জন্য বিশ্রামস্থল নয়। তেমনি, শ্রীগুরুদেবের চরণপদ্ম এই জড়জগতে প্রকাশিত হয় কিন্তু এর দ্বারা স্পৃষ্ট হয়ে না। চরণদ্বয় ভক্তিরসের মিষ্টতা প্রদান করে এবং তা জগতে আর কোথাও লাভ করা যায় না। জীব এক পরিভ্রমণরত মৌমাছির মতো এবং এই জগতের নানা দুঃখপূর্ণ স্থানে আনন্দ অনুসন্ধানের জন্য সংগ্রামরত। এখন সেই একই জীব শ্রীগুরুদেবের চরণপদ্মে অপরিমেয় আনন্দ আস্বাদন করতে পারে। তদুপরি, এই চরণদ্বয় জীবের জড় অস্তিত্বের অন্ধকারময় সময়ে জীবের স্থায়ী আবাসস্থলে পরিণত হয়, যখন তার আর কোনো আশ্রয় থাকে না। এই জন্য শ্রীগুরুর চরণদ্বয়কে পদ্মের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অতএব, প্রভুপাদ শব্দের দুটি প্রধান বিশ্লেষণ — প্রভবঃ পাদে যস্য — “যার পদদ্বয়ে বহু প্রভুর আবাস।” প্রভোঃ (শ্রীকৃষ্ণ) পাদ্ব ইব পাদৌ যস্য — “ যার পদদ্বয় প্রভু (শ্রীকৃষ্ণের) পদদ্বয়ের সমতুল্য।” ————– গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ে এই উপাধি সর্বপ্রথম শ্রীল রূপ গোস্বামী কর্তৃক তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শ্রীল সনাতন গোস্বামীকে প্রদান করা হয়েছে। লঘু-ভাগবতামৃতে (১।৫) তিনি লিখেছেন, শ্রীমৎ-প্রভুপদাম্ভোজৈঃ শ্রীমদ্ভাগবতামৃতম্। যদ্ ব্যতানি তদ্ এবেদম্ সংক্ষেপণ নিষেব্যতে ॥ অনুবাদ: “শ্রীমৎ প্রভুপাদ কর্তৃক যা কিছু বৃহদ্ভাগবতামৃতে প্রকাশিত হয়েছে, সে সবই এই লঘু-ভাডবতামৃতে আমার কর্তৃক আস্বাদন হয়েছে।” শ্রীল রূপ গোস্বামী ভক্তিরসামৃতসিন্ধুতে (১।৩।৩৫) শ্রীল সনাতন গোস্বামীর একটি শ্লোক উদ্ধৃতি দিয়েছেন এই বলে— “শ্রীমৎ-প্রভুপাদানাম্”— “এই শ্লোকটি শ্রীমৎ প্রভুপাদের।” উভয় উদাহরণে তিনি তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শ্রীল সনাতন গোস্বামীকে নির্দেশ করেছেন। অতএব, এই উপাধির প্রকৃত ধারক হলেন শ্রীল সনাতন গোস্বামী। পরবর্তীতে এই সম্প্রদায়ের বহু আচার্যকে এই একই উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। ————– কে এই উপাধি লাভ করতে পারে এই বিষয়ে, যেকোনো ব্যক্তিত্বের চরিত্রে প্রভুপাদ শব্দের উপর্যুক্ত অর্থের একটি (বা উভয়) লক্ষণ প্রদর্শিত হলেই তাঁর অনুসারী/শিষ্যগণের দ্বারা “প্রভুপাদ” উপাধিতে ভূষিত হতে পারেন। যাইহোক, কিছু সংগঠন এই উপাধির ব্যবহার কেবল কিছু নির্দিষ্ট আচার্যের জন্য সীমাবদ্ধ করে। এটি স্পষ্টভাবে লক্ষ করতে হবে যে এই উপাধি কোনো নির্দিষ্ট সংগঠন দ্বারা উদ্ভাবিত হয়নি, এবং সেজন্য কোনো সংগঠনের এর উপর স্বতন্ত্র স্বত্ব থাকতে পারে না। এটি একটি সংগঠন-মুক্ত উপাধি, যা মূলত শ্রীল সনাতন গোস্বামীর। অন্য সকল আচার্য এই উপাধির এক বা উভয় অর্থ পূর্ণ করে এই উপাধি প্রাপ্ত হতে পারেন। সমস্ত বৈষ্ণব এবং সংগঠনের প্রতি সম্মানই বৈষ্ণবজগতে সম্প্রীতি অর্জনের চাবিকাঠির। ————– – শ্রীমান হরি পার্ষদ প্রভু কর্তৃক প্রবন্ধ ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ অনুবাদ: মধুর গৌরকিশোর দাস

ভগবান শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর অপ্রকট লীলা

image_2024-04-29_132414277

***নিত্যানন্দ প্রভুর সেবিত ‘বাঁকারায়’ বিগ্রহ*** শ্রীশ্রী বাঁকারায়ের শ্রীমন্দির একচক্রাধাম বীরচন্দ্রপুর তথা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম সুপ্রাচীন মন্দির। এই মন্দিরে অধিষ্ঠিত শ্রীশ্রী বঙ্কিমবিহারী তথা প্রভু বাঁকারায়। বাঁকারায় শব্দটিকে ভাঙলে পাওয়া যায় ‘বাঁকা’ ও ‘রাই’। ‘বাঁকা’ শ্রীকৃষ্ণ-গোবিন্দের অপর নাম এবং ‘রাই” অর্থে শ্রীমতি রাধিকা । অর্থাৎ প্রভু বাঁকারায় হল শ্রীরাধা-গোবিন্দের মিলিত বিগ্রহ। ভগবান চৈতন্য মহাপ্রভু জগন্নাথ পুরীতে যাওয়ার পর, তিনি ভগবান নিত্যানন্দকে বাংলায় ফিরে গিয়ে ধর্মপ্রচার করার নির্দেশ দেন। এই সময়ে নিত্যানন্দ প্রভু একচক্রে ফিরে আসেন। ততক্ষণে তার বাবা-মা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। এরপর তিনি কদম্ব খান্ডিতে যমুনায় বাঁকে রায় দেবতার সন্ধান পান। তিনি এই দেবতাকে একটি মন্দিরে স্থাপন করেছিলেন। পরে, শ্রীমতি রাধারাণীর এক বিগ্রহ আবিষ্কৃত হয় ভদ্রাপুরে, বীরচন্দ্রপুরা এলাকায়, একটি নিম গাছের শিকড়ের নীচে, প্রায় ½ মাইল পশ্চিমে। শ্রীমতির সে বিগ্রহ বাঁকে রায়ের ডানদিকে স্থাপন করা হয়েছিল। এই কারণে, বাঁকে রায়ের রাধারাণী ভদ্রাপুরের ঠাকুরানি নামে পরিচিত। ***কিভাবে নিত্যানন্দ প্রভু ‘বাঁকারায়’কে প্রাপ্ত হলেন?*** পূর্বে ব্রজ পরিক্রমা করতে বৃন্দাবন যাত্রাপথে নিত্যানন্দ প্রভু কদম্বখাণ্ডিতে যমুনার ভেজা মাটিতে কৃষ্ণের বাঁকারায় বিগ্রহটি আবিষ্কার করেন। সে সময়, তিনি ভাবলেন যে তিনি বৃন্দাবন যাচ্ছেন কিন্তু এখন বৃন্দাবনই তাঁর কাছে এসেছে। তিনি হাসতে লাগলেন। মনে মনে তিনি স্থির করলেন যে তিনি এখন ব্রজেই যাবেন এবং ফিরে আসার পর তিনি একটি মহোৎসব করে শ্রীবিগ্রহকে স্থাপন করবেন। তারপর তিনি বাঁকারায়ের শ্রীবিগ্রহকে রেশমের কাপড়ে জড়িয়ে নিম গাছের একটি গর্তে লুকিয়ে রাখলেন এই ভেবে যে, ফেরার পথে তাঁকে তুলে নেবেন। যাই হোক, শ্রীকৃ্ষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর নির্দেশে ৩০ বছর পর নিত্যানন্দ প্রভু একচক্রাতে ফিরে আসেন। ফিরবার সময় একটি ভিন্ন পথ দিয়ে আসেন বলে বাঁকা রায়কে তুলে নিতে পারেননি৷ একচক্রায় ফিরে আসলে প্রথম রাতেই বাঁকারায় নিত্যানন্দ প্রভুর স্বপ্নে আবির্ভূত হয়ে তাঁকে বলেন যে,তিনি ক্ষুধার্ত এবং তিনি নিম গাছের গর্তে লুকিয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন৷ তিনি নিত্যানন্দকে বৃন্দাবন থেকে ফিরে আসার পর তাকে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিটি স্মরণ করিয়ে দেন। স্বপ্নে তখন নিতাই বাঁকারায়কে বলেন, যে তিনি এসে তাঁকে উদ্ধার করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি অন্য পথ দিয়ে ফিরে আসায় তা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বাঁকারায় তাঁকে জানালেন যে তিনি এখনও ঐ প্রতিশ্রুতি অনুসারে উত্তম নৈবেদ্য এবং জমকালো প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান চান। নিত্যানন্দ প্রভু তখন বাঁকারায়কে বলেছিলেন যে তিনি ক্লান্ত এবং ঠিক তখনই আসতে পারছেন না। তারপর তিনি বাঁকারায়কে কি কি চান তা স্থির করতে বলেন এবং তিনি তা পালন করতে প্রতিশুতি দেন। বাঁকারায় তখন নিত্যানন্দ প্রভুকে বললেন, “ঠিক আছে, আপনি যদি আমার কাছে আসতে না পারেন, তবে আমি আপনার কাছে আসব। আপনি আমাকে যে নিমগাছের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলেন, সকালে সেই একই নিম গাছের মধ্যেই আমি যমুনার নিচে ভেসে যাব। কদম্বখাণ্ডিতে যেখানে আপনি আমাকে প্রথমবার পেয়েছিলেন সেখানে গিয়ে আমাকে গাছের গর্ত থেকে বের করবেন এবং খুব আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যে আমাকে যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করুন।” পরদিন সকালে, নিত্যানন্দ প্রভু স্নান করার পরে, ঐ নিম গাছটি নদীর তীরে ভাসতে দেখেন। তিনি শ্রীবিগ্রহকে বের করে তাঁর শ্রীপাটে নিয়ে আসেন এবং তিনি নিজেই প্রতিদিন পূর্ণ ঐশ্বর্য সহকারে বাঁকারায়ের পূজা করতে থাকেন। শ্রীবিগ্রহের নিরেট স্বর্ণনির্মিত সেবা উপকরণ যথা সিংহাসন, ছত্র, বাঁশি, মুকুট, পাদুকা, পাদমূল, শিঙ্গা, থালা, গ্লাস, অলংকার এবং আরতি সামগ্রী। নিত্যানন্দ প্রভুর প্রকটলীলার শেষ অবধি তিনি বাঁকারায়ের সেবার্চনা করেছিলেন। *** নিত্যানন্দ প্রভুর অন্তর্ধান লীলা *** মহাপ্রভু তাঁর প্রকট লীলা শেষ করে টোটা গোপীনাথের শ্রীবিগ্রহে মধ্যে অন্তর্হিত হওয়ার পরপরই, নিত্যানন্দ প্রভু তাঁর প্রকটলীলা শেষ করেন। শ্রীবিগ্রহটি প্রতিষ্ঠা করে এই বিগ্রহের সেবা-পূজা করতে করতে একদা ঐ বিগ্রহে গৌরাঙ্গরূপী ষড়্‌ভুজ দর্শন করেছিলেন এবং ভক্তি আবেগ বিভোর হয়ে বাঁকারায়ের শ্রীমূর্তি আলিঙ্গন করে লীন হয়ে গেছেন। নিত্যানন্দ প্রভুর একচক্রা আগমন প্রসঙ্গে শ্রী বৃন্দাবন দাস ঠাকুর ‘শ্রীশ্রী নিত্যানন্দ বংশবিস্তার” গ্রন্থে বলেছেন- গৌরপ্রেমে গরগর না জানে দিবারাতি। শ্যামসুন্দরেহ কভু দেখে গৌর দ্যুতি।। কে বুঝিতে পারে নিত্যানন্দের প্রভাব। মন্দিরে প্রবেশ করি কৈলা তিরোভাব।। পরবর্তী সময়ে নিত্যানন্দ প্রভুর পুত্র বীরভদ্রপ্রভু বা বীরচন্দ্রপ্রভু একচক্রায় আসেন এবং তিনি বাঁকারায় শ্রীমূর্তির পাশে নিত্যানন্দ প্রভুর স্ত্রী জাহ্নবী মাতার মূর্তি স্থাপন করেন। তিনিও এই মন্দিরে সেবা- পূজাকালে অন্তর্দ্ধান হন। এ প্রসঙ্গে শ্রী বৃন্দাবন দাস ঠাকুর ‘শ্রীশ্রী নিত্যানন্দ বংশবিস্তার” গ্রন্থে বলেছেন- এই শ্রীমন্দিরে প্রভু বাঁকারায়, শ্রীমতি রাধিকা, জাহ্নবা মাতার শ্রীমূর্তি ছাড়াও নিত্যানন্দের পিতা হাড়াই পণ্ডিত সেবিত মুরলীধর বিগ্রহ ( যে বিগ্রহটি নিত্যানন্দ প্রভু তাঁর মাতা পদ্মাবতীকে দিয়েছিলেন), যোগমায়া, এবং আরও দুটি শ্রীমূর্তি বর্তমান রয়েছে। নিত্যানন্দ পরিবারের ১৩ তম প্রজন্ম ধরে এ বিগ্রহের উপাসনা চলছে। এ বিগ্রহ অর্ধ সহস্র বর্ষের প্রাচীন। – বিজয় দাস

শিব কেন বানর রূপে আবির্ভূত হয়েছেন?

image_2024-04-29_132106223

শিব অন্য কোন পশুর রূপ ধারণ না করে কেন বানর রূপেই আবির্ভূত হয়েছেন?! ========================== এর অন্যতম কারণ হলো বানরেরা শাকাহারী। পশুদের মধ্যে বানর প্রজাতি মনুষ্য জাতির সাথে প্রায় সদৃশ এবং ফল,মূল,কন্দ ভক্ষণ করে থাকে, যা শ্রীরামচন্দ্রের অতি প্রিয়। বাল্মিকী রামায়ণে রাম-লক্ষ্মণকে ‘ফলমূলাশনৌ দান্তৌ’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে, যার অর্থ ‘কেবল ফল-মূল ভক্ষণকারী দন্তধারী ব্যক্তি’ ফলমূলাশনৌ দান্তৌ তাপসৌ ব্রহ্মচারিণৌ৷ পুত্রৌ দশরথস্যাস্তাং ভ্রাতরৌ রামলক্ষ্মণৌ।। [ বাল্মিকী রামায়ণ, অরণ্যকাণ্ড, ১৯। ১৫] অনুবাদ: দশরথের পুত্রদ্বয় রাম ও লক্ষ্মণ পরস্পর ভ্রাতা, তারা ‘ফলমূলাশনৌ দান্তৌ’ অর্থাৎ তারা ফল-ফল আহারী তপস্বী ব্রহ্মচারী। শুধু বাল্মীকি রামায়ণই নয়, তুলসীদাসকৃত রাম-রক্ষা-স্তোত্রমের ১৮ নং শ্লোকেও রাম-লক্ষণকে ‘ফলমূলাশনৌ দন্তৌ’ শব্দে বর্ণন করা হয়েছে। শ্রীরামচন্দ্রের এক নাম ‘শাকপার্থিবঃ’। ‘পতঞ্জলী মহাভাষ্য’তে ‘শাকপার্থিব’ নামের অর্থ করা হয়েছে ‘শাকভোজী পার্থিবঃ’ অর্থাৎ ‘যে রাজার স্বভাবই হলো শাকসবজী ভোজন করা’। এছাড়াও ভট্টোজী দীক্ষিত প্রণীত ‘ব্যাকরণ-সিদ্ধান্ত-কৌমুদী’ এবং ‘পাণিনী অষ্টাধ্যায়ী’ ২।১।৬৯ নং সূত্রের বর্টীকায় কাত্যায়ন এ নামটি ব্যাখা করেছেন- ‘শাকপ্রিয় পার্থিব’- অর্থাৎ ‘যে রাজা শাকাহার প্রিয়।’ সংস্কৃতে ‘মাংস’ শব্দের অর্থ যেমন পশুমাংস হয়, তেমনি ফলের পুষ্ট অংশ তথা শাঁসকেও ‘মাংস’ বলা হয়। বাল্মীকি রামায়ণের (৫।৩৬।৪১) নং শ্লোকে ‘ন মাংসং রাঘবো ভুঙতে’ দ্বারা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘শ্রীরামচন্দ্র কখনো মাংসাহার করেন না’। ফলে রামায়ণের যে সকল শ্লোকে রাম মাংস সম্পর্কে বলেছেন (যেমন: ২।৫৬।২২ রাম লক্ষ্মণকে বলছেন ‘আনয়ম মাংসম’) সে সমস্ত শ্লোকে ‘মাংস’ শব্দ দ্বারা মুখ্য অর্থ গ্রহণ না করে গৌণ অর্থ গ্রহণ করতে হবে অর্থাৎ এ সমস্ত শ্লোক দ্বারা পশুমাংস না বুঝিয়ে ‘ফলের শাঁস’ বুঝতে হবে। তা না হলে রামচন্দ্রের অন্যান্য কথার সাথে সামঞ্জস্য রক্ষিত হয় না। বাল্মীকি রামায়ণের অজস্র স্থানে উল্লেখ আছে, রাম অযোধ্যাতে যেমন মাংসাহার করেন নি, বনেও মাংসাহার করতেন না। এমনকি রামায়ণে রামচন্দ্র নিজ মুখেই তিন বার বলেছেন, তিনি ফল-মূল-কন্দ ভক্ষণ করেই বনবাস করবেন। উল্লেখ্য, রাম কখনো নিজ বচন মিথ্যা হতে দেন না। যেমন- চতুর্দশ হি বর্ষাণি বৎস্যামি বিজনে বনে। কন্দমূলফলৈর্জীবন্ হিত্বা মুনিবদামিষম্ ।। [ বাল্মিকী রামায়ণ, অযোধ্যাকাণ্ড, ২০।২৯ ] অনুবাদ: রাম মাতা কৌশল্যাকে বললে, “মুনিগণ যেমন আমিষ আহার গ্রহণ না করে কন্দমূল ও ফলাহার করে, ঠিক সেরূপে আমি কন্দ-মূল-ফল দ্বারা জীবনধারণপূর্বক চৌদ্দ বৎসর জনহীন অরণ্যে বাস করব।” ফলানি মূলানি চ ভক্ষয়ন্ বনে গিরীংশ্চ পশ্যন্ সরিতঃ সরাংসি চ। বনং প্রবিশ্যৈব বিচিত্রপাদপং সুখী ভবিষয়ামি তবাস্তু নিবৃতিঃ ।। ৫৯ [ বাল্মিকী রামায়ণ, অযোধ্যাকাণ্ড, ৩৪।৫৯ ] অনুবাদ: রাম দশরথকে বললেন, ‘বনে প্রবেশ করে ফলমূল ভক্ষণ করব; বনের পর্বত, নদী, সরোবর এবং বিচিত্র সব বৃক্ষ দেখে সুখে থাকব। আপনার মনে শান্তি বিরাজ করুক।’ পিত্রা নিযুক্তা ভগবন্ প্রবেক্ষ্যামস্তপোবনম্। ধর্মমেবাচরিষ্যামস্তত্র মূলফলাশনাঃ।। [ বাল্মিকী রামায়ণ, অযোধ্যাকাণ্ড, ৫৪।১৬ ] অনুবাদ: রাম ভরদ্বাজ ঋষিকে বললেন, ‘ভগবন্ ! পিতা কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে আমরা তপোবনে প্রবেশ করব এবং সেখানে ফলমূলাহারী হয়ে ধর্মাচরণ করব।’ পুত্রৌ দশরথস্যাবাং ভ্রাতরৌ রামলক্ষ্মণৌ। প্রবিষ্টৌ সীতয়া সার্থং দুশ্চরং দণ্ডকাবনম্।। ফলমূলাশনৌ দান্তৌ তাপসৌ ব্রহ্মচারিণৌ। বসন্তৌ দণ্ডকারণ্যে কিমর্থমুপহিংসথ।। [ বাল্মিকী রামায়ণ, অরণ্যকাণ্ড, ২০।৭-৮] অনুবাদ: রামচন্দ্র খর কর্তৃক প্রেরিত রাক্ষসদের বললেন, ‘’সীতার সঙ্গে দুর্গম দণ্ডকবনে প্রবিষ্ট আমরা দুই ভাই- রাম-লক্ষ্মণ, রাজা দশরথের দুই পুত্র। দণ্ডকে বনবাসী ফলমূলাহারী সংযমী ব্রহ্মচারী তাপসদ্বয় আমাদের কেন তোমরা হিংসা করছ?’ এমনকি স্বয়ং হনুমানও ঘোষণা করেছেন, রাঘব রামচন্দ্র মাংসাহার করেন না। ন মাংসং রাঘবো ভুঙক্তে ন চৈব মধু সেবতে। বন্যং সুবিহিতং নিত্যং ভক্তমশ্নাতি পঞ্চমম্।। [ বাল্মীকি রামায়ণ, সুন্দরকান্ড ৩৬/৪১ ] অনুবাদ: ‘রাঘব মাংস ভক্ষণ করেন না ; মধু পানও করেন না। শ্রীরামচন্দ্র নিত্য চার প্রহর উপবাসে থেকে পঞ্চম প্রহরে শাস্ত্র বিহিত বন্য ফল-মূল ও নীবার অন্নাদি ভােজন করেন।’ অনেকে প্রশ্ন করেন, রামচন্দ্র যদি মাংস না খাবেন, তবে তিনি কেন মৃগয়া করতেন?! এর উত্তর হলো, রামচন্দ্র বালীর মতো অত্যাচারী পশুদের বধের জন্য মৃগয়া করতেন। আবার বাল্মীকি রামায়ণের অরণ্যকান্ডের ১০ম সর্গেও রামচন্দ্রের নিকট মুনি-ঋষিরা এসে অভিযোগ করেন, রাক্ষস অসুরেরা নানা পশুর আকার ধারণ করে মুনি ঋষীদের হত্যা করছে। তখন রামচন্দ্র সমস্ত দন্ডকারণ্যকে অসুরশূণ্য করার প্রতিজ্ঞা করেন এবং পশুরূপী অসুরদের বধ করেন। মারীচের মরো স্বর্ণহরিণ বধও তদ্রূপ দৃষ্টান্ত। ক্ষত্রিয়রা মৃগয়া করে মাংসাহার করেন না, তা রামচন্দ্র নিজ মুখেই বলেছেন- “রাজ্ঞাঞ্চ মৃগয়া ধর্ম্মে বিনা আমিষভোজনম্ ॥” [ পদ্মপুরাণ, পাতালখন্ড, অধ্যায় ৭০, শ্লোক ১৯৬, রাম উক্তি ] বঙ্গানুবাদ: শ্রীরাম বললেন, ‘ধর্মার্থে রাজা কর্তৃক মৃগয়ার বিধান থাকলেও আমিষভক্ষণের জন্য মৃগয়ার বিধান নেই।’ Raghava said, “Hunting without eating the flesh (of the animal killed) is the rule in the hunting done by a king.” তাই, অনুরাগী ভক্ত যারা হনুমানের উপাসক তারা কখনই মাংস, মাছ বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করেন না। হনুমানের কোন উপাসক যদি মাংস খান, তবে তিনি নিশ্চিতভাবে হনুমানের ক্রোধের সম্মুখীন হন।

প্রামাণিক শাস্ত্রসমূহে ভগবান নিত্যানন্দ প্রভু

image_2024-04-29_122042875

°প্রামাণিক শাস্ত্রসমূহে ভগবান নিত্যানন্দ প্রভু ° শ্রুতি, স্মৃতি, পুরাণ, পঞ্চরাত্র সমস্ত শাস্ত্রই শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু এবং শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর আবির্ভাবের ঘোষণা করেছে। মহাপ্রভু প্রচ্ছন্ন অবতার বলেই অনেক সময় অনেক পণ্ডিতেরা পর্যন্ত দেখেও বুঝতে পারে না। এই বিষয়ে সূর্যের উপস্থিতিতেও সূর্যালোক দর্শনে অক্ষম পেঁচকের দৃষ্টান্ত টেনেছেন। সেই সমস্ত শাস্ত্র থেকে এই আলোচনা আজ শ্রীনিত্যানন্দ ত্রয়োদশী উপলক্ষে স্বধর্মম্ এর ক্ষুদ্র নিবেদন। (১) শ্রুতি-প্রমাণ: বলা হয়েছে, ধর্মাধর্ম নির্ণয়ে শ্রুতিই প্রমাণ। নিতাই-গৌরের আনুগত্যেহেরিনাম করাই জীবের পরম ধর্ম। একাধিক উপনিষদে নিত্যানন্দ প্রভুর আবির্ভাবের ঘোষণা রয়েছে, যথা: স এব ভগবান্ যুগসন্ধিকালে শারদাভ্রসংনিকাশো রৌহিনেয়ো বাসুদেবঃ সর্বাণি গদাদ্যাযুধশাস্ত্রাণি ব্যাচক্ষাণো নৈকান্ রাজন্যমণ্ডলান্নিরাচিকীর্ষুঃ ভুভারমখিলং নিচখান ॥ ৫॥ স এব ভগবান্ যুগে তুরিয়েঽপি ব্রহ্মকুলে জায়মানঃ সর্ব উপনিষদঃ উদ্দিধীর্ষুঃ সর্বাণি ধর্মশাস্ত্রাণি বিস্তারযিষ্ণুঃ সর্বানপি জনান্ সন্তারযিষ্ণুঃ সর্বানপি বৈষ্ণবান্ ধর্মান্ বিজৃম্ভযন্ সর্বানপি পাষণ্ডান্ নিচখান ॥ ৬॥ [ অথর্ববেদ, কৃষ্ণোপনিষদ- ২।৫-৬, সঙ্কর্ষণোপনিষদ মন্ত্র: ৬] অনুবাদ: শরৎকালীন মেঘের মতো উজ্জ্বল শ্বেত দীপ্তিমান রোহিণীপুত্র বাসুদেব ভগবান বলরাম দ্বাপর যুগসন্ধিকালে আবির্ভূত হয়ে গদা প্রভৃতি অস্ত্রের দ্বারা আসুরিক রাজন্যবর্গকে উৎখাত করে অখিল ভূভার হরণ করেছিলেন। সেই ভগবান চতুর্থ যুগে (কলিকালে) বৈষ্ণবের আনন্দবিধান করতে ব্রাহ্মণকুলে আবির্ভূত হয়ে উপনিষদসমূহে বর্ণিত পরমসত্যকে প্রচার করে জগৎবাসীকে উদ্ধার করেন এবং পাষণ্ডীদের নির্মূল করেন। ব্যাখা: কৃষ্ণোপনিষদ ১০৮টি প্রধান উপনিষদের মধ্যে ৯৬নং উপনিষদ। বৈষ্ণবাচার্য শ্রীবল্লভ এ উপনিষদের টীকা রচনা করেছিলেন। এখানে বর্ণিত হয়েছে, চতুর্থ যুগ বা কলিযুগে জগতের দুর্দশা দেখে নবদ্বীপবাসী বৈষ্ণবগণ শোকসাগরে নিমজ্জিত ছিলেন। কিন্তু যখন নিতাই-গৌর আবির্ভূত হয়ে পাষণ্ডীদের হৃদয়স্থ পাপ নির্মূল করেন, তখন জগৎবাসী বৈষ্ণবগণ আনন্দসাগরে নিমজ্জিত হন। কলিসন্তরণোপনিষদে প্রজাপতি বলেছেন, হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র ব্যতীত আর কোনো শ্রেষ্ঠ উপায় ‘সর্ববেদেষু দৃশ্যতে’ – সমস্ত বেদে খেুঁজে পাওয়া যায় না, অর্থাৎ বেদ-উপনিষদের পরম সত্য হলো হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র, যা নিত্যানন্দ প্রভু প্রতি দ্বারে দ্বারে গিয়ে প্রচার করেছেন। (২) পাঞ্চরাত্রিক সংহিতা প্রমাণ (ক) অনন্ত সংহিতা যদা প্রাদুর্ভবিষ্যামি স্বয়ং লোক-হিতায় বৈ। তদৈব ত্বং মহাভাগ নিত্যং প্রাদুর্ভবিষ্যসি ॥ ৪৩॥ ত্বাং সংত্যজ্য ক্ষণমপি ন চ তিষ্ঠামি মানদ। কল্পান্তরে করিষ্যামি জ্যেষ্ঠং বৃন্দাবনে হ্যহম্ ॥ ৪৪॥ অস্মিন্ দ্বীপে মহাক্ষেত্রে যদাহং প্রার্থিতঃ সুরৈঃ। অবতীর্য্য দ্বিজবাসে হনিষ্যে কলিজং ভয়ম্ ॥ ৪৫॥ নিত্যানন্দো মহাকায়ো ভূত্বা মৎকীর্ত্তনে রতঃ। বিমূঢ়ান ভক্তিরহিতান মম ভক্তান্ করিষ্যসি ॥ ৪৬॥ [শ্রী অনন্তসংহিতা, ৩।৪৩-৪৬ ] অনুবাদ: শ্রীহরি বলিলেন, “হে অনন্ত, তুমি অত্যন্ত মহিমান্বিত! আমি যখনই জীবের মঙ্গলার্থে এই জগতে আবির্ভূত হব, তুমিও প্রতিবারে আমার সাথে আবির্ভূত হবে।হে মানদ, তোমাকে পরিত্যাগপূর্বক ক্ষণকালও আমার পক্ষে ক্ষণকালও থাকা সম্ভব নয়। এক কল্পে বৃন্দাবনে কুমি আমার জ্যেষ্ঠভ্রাতা হয়ে সেবাসুখ আস্বাদন করবে। আমি যে সময়ে দেবগণ-কর্তৃক প্রার্থিত হয়ে কলিভয় বিনাশ করতে মহাক্ষেত্র নবদ্বীপে ব্রাহ্মণপুরন্দর শ্রীজগন্নাথ মিশ্রের গৃহে অবতীর্ণ হব, তখন তুমি মহাকায় নিত্যানন্দরূপে আবির্ভূত হয়ে আমার কীর্তনে রত থেকে ভক্তি-রহিত মূঢ় লোকেদের আমার ভক্তে পরিণত করিবে।” ব্যাখা: শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা হলো অমানীনা মানদেন, যার মূর্তপ্রকাশ শ্রীনিত্যানন্দ রাম। তাই এখানে তাঁকে মানদ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সমস্ত তীর্থের আশ্রয়রূপে শ্রীনবদ্বীপ শাস্ত্রপ্রমাণে মহাক্ষেত্র। উদারতার মূর্তশরীর বলেই তিনি মহাকায়। ভজ গৌরহরি, বল কৃষ্ণ, ভজ কৃষ্ণ, কর কৃষ্ণ শিক্ষা প্রভৃতি কীর্তনে মগ্ন থেকে তিনি মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন শুধু তাঁদের উদ্ধার করার জন্য। (খ) ঈশ্বর সংহিতা অস্তি তে বিমলা ভক্তিঃ ময়ি যাদবনন্দন। প্রথমং শেষরূপো মে কৈঙ্কর্যমকরোদ্ভবান্। ততস্তু লক্ষ্মণো ভূত্বা মামারাধিতবানিহ॥ ইদানীমপি মাং যুষ্টং বলভদ্র ত্বমর্হসি। কলাবপি যুগে ভূয়ঃ কশ্চিদ্ভূত্বা দ্বিজোত্তম্॥ নানাবিধৈমার্গেজলৈরর্চনং মে করিষ্যসি। ইত্যুক্ত দেবদেবেন বলভদ্রঃ প্রহৃষ্টধীঃ॥ [ ঈশ্বরসংহিতা ২০/২৭৩-২৭৬ ] অনুবাদ: ভগবান শ্রীহরি বলরামকে বললেন, “ হে যাদবনন্দন, আমার প্রতি তোমার বিমলা ভক্তি বিদ্যমান। তুমি শেষ রূপ ধারণ করে প্রথমে আমার সেবা করেছিলে। শ্রীরামাবতারে লক্ষ্মণ হয়ে তুমি আমার সেবা করেছিলে। এখন দ্বাপরে বলভদ্ররূপে তুমি সুযোগ্যরূপে আমার সেবা করছো এবং ভবিষ্যতে কলিযুগে তুমি উত্তম ব্রাহ্মণকুলে আবির্ভূত হয়ে নানাবিধ উপায়ে, জলরূপে আমাকে অর্চন করবে।” একথা শ্রবণ করে দেবতাগণের আরাধ্য দেব বলভদ্র আনন্দিত হলেন। ব্যাখা: শ্লোকে ‘ভূয়ঃ কশ্চিদ্ভূত্বা দ্বিজোত্তম’ পদ দ্বারা নির্দেশিত হয়, কলিযুগে শ্রীবলরাম রাঢ়দেশে হাড়াই পণ্ডিতের পুত্ররূপে শাণ্ডিল্য ভক্তিসূত্র প্রণেতা শাণ্ডিল মুনির গোত্রে উত্তম ব্রাহ্মণকুলে আবির্ভূত হবেন। ‘নানাবিধৈমার্গ’ পদ দ্বারা নানা উপায়ে কলিযুগপাবনাবতারী শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর সেবা করেছেন। হরিনাম শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, পাদসেবন, অর্চন, বন্দন, দাস্য, সখ্য, আত্মনিবেদন -এই নববিধা ভক্তির প্রতিটি পন্থায় প্রত্যক্ষভাবে তিনি সেবা করেছেন। অহর্নিশ হরিনাম শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ সেবা, ভগবান শ্রীচৈতন্যের নিকট থাকাকালীন তাঁর প্রত্যক্ষ পাদসেবন, অর্চন ও বন্দন এবং অন্যকালে ‘শ্রীবাঁকারায়’ বিগ্রহে ভগবানের উক্ত সেবা করেছেন। তিনি সরাসরি ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভুর দাস রূপে তার আদেশ পালন করেছেন, সখা রূপে জগাই-মাধাই উদ্ধার, কাজি দলনাদি নানাবিধ লীলায় অংশ নিয়েছেন এবং গুরু-গৌরাঙ্গের চরণে সর্বদা আত্মনিবেদিত। এভাবে নববিধা ভক্তির প্রতিটি তিনি আচরণ করে ভগবান শ্রীহরির প্রীতিবিধান করেছেন। শ্লোকে ‘জলৈরর্চনং’ পদের ব্যাখা – বৃন্দাবন পরিক্রমায় যাত্রাপথে শ্রীকৃষ্ণ বঙ্কিমরায় শ্রীবিগ্রহস্বরূপে জলমধ্যে নিত্যানন্দপ্রভুর নিকট অর্চনসেবা লাভের বাসনা করেন। নিত্যানন্দ প্রভু জল হতে প্রাপ্ত বঙ্কিমরায় বা বাঁকারায়কে তাঁর সমগ্র প্রকটকাল যাবৎ পরম ভক্তিতে সেবা করে অর্চনের আদর্শ স্থাপন করেছেন। যেহেতু ভগবান শ্রীবলরাম সর্বদাই শ্রীকৃষ্ণের সেবায় নিযুক্ত থাকতে চান, তাই আদিনারায়ণ শ্রীকৃষ্ণ যখন তাঁকে কলিযুগে এইরূপ সেবার কথা ব্যক্ত করেন, তখন তিনি আনিন্দিত হবেন, এটিই স্বাভাবিক। সেবা অধিকার লাভ করে উল্লসিত হওয়ার শিক্ষা লাভের জন্য আমাদের এই দৃষ্টান্ত সর্বদা স্মরণ রাখা উচিত। (৩) যামল-তন্ত্র প্রমাণ: (ক) ততঃ স ভগবান্ কৃষ্ণঃ লোক নিস্তার হেতুনা। অনন্তমুক্তবান্দেবো জায়স্ব পৃথিবীতলে ॥ গোকুলে বলরামায় পাতু ত্বাং শৃণু পার্ব্বতী। নিত্যানন্দঃ সহি ভাবি লোকানাং হিতকাম্যয়া ॥ (শ্রীব্রহ্মযামল তন্ত্র, ২।১-২) অনুবাদ: শ্রীশিব বললেন, “হে পার্বতী, চিন্তামণি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ লোক নিস্তারের জন্য সবসময় উৎসুক। অনন্তদেব সকলকে মুক্তি জড়দুঃখ থেকে প্রদানকারী। তাই তাঁরা পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। (খ) নিত্যানন্দ কলারূপী বলরামঃ স এবঃ হি। পূর্ণঃ চৈতন্য এব স্যাৎ যঃ কৃষ্ণো গোকুলেংভবৎ ॥ তত্রৈব গৌরচন্দ্রস্থ্য ভক্তা এব ন সংশয়ঃ। নিত্যানন্দ-শচীপুতৌ স্বত্বা যে নিপতন্তি চ॥ [ শ্রীব্রহ্মযামল তন্ত্র, ২।৬ , ৪।৫] অনুবাদ: যিনি গোকুলে শ্রীবলরাম, সেই প্রভুই নিত্যানন্দরূপে জগতের পরম হিতকারী। গোকুলে যিনি পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, তিনি এখন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু। তিনি পরমপূর্ণ। আর নিত্যানন্দ প্রভু পূর্ণকলারূপী স্বয়ং বলরাম। শচীপুত্র শ্রীগৌরচন্দ্র ভক্তরূপ এবং নিত্যানন্দ প্রভু ভক্তস্বরূপ। এতে কোনো সন্দেহ নেই। মহাভারতে বর্ণিত হয়েছে, সমস্ত বৈদিক শাস্ত্রের আদ্যান্তে এ মধ্যে চ হরিঃ সর্বত্র গীয়তে, আদিতে, অন্তে এবং মধ্যে সর্বত্রই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শ্রীহরির মহিমা কীর্তন করা হয়েছে। উপরিউক্ত আলোচনা সেই শাস্ত্রবাণীকেই পুনঃপ্রমাণ করে। শ্রীমৎ নিত্যানন্দ প্রভুর কৃপায় সকলের শুভবোধোদয় হোক, সকলে নিত্য গৌরপ্রেমানন্দে মগ্ন হোক। ।।হরে কৃষ্ণ।। – বিজয় দাস – মধুর গৌরকিশোর দাস

ভগবান শিবের প্রসাদ কিভাবে গ্রহণ করতে হয়?

image_2024-04-29_121423790

ভগবান শিবের প্রসাদ কিভাবে গ্রহণ করতে হয়?! (শৈব শাস্ত্র ও সনাতনী শাস্ত্র সিদ্ধান্ত) ভগবান শিবের প্রসাদ ভোজনের একটা বিশেষ নিয়ম আছে। সরাসরি শিবের প্রসাদ খাওয়া যায় না। ভগবান শিবই শিবপুরাণ, স্কন্দপুরাণ, পদ্মপুরাণাদি শাস্ত্র এর কারণ ব্যাখা করেছেন এবং শিবের প্রসাদ পাওয়ার বিশেষ নিয়মও বর্ণনা করেছেন। মদ্যস্য মদ্যগন্ধস্য নৈবেদ্যস্য চ বর্জ্জনম। সামানং সর্ব্ববর্ণানাং ব্রাহ্মণানাং বিশেষতঃ।। [শিবপুরাণম, বায়বীয়সংহিতা, অধ্যায় ১১, শ্লোক ৮০] অনুবাদ: শিব পার্বতীকে বললেন, “মদ্যসেবন, মদ্য আঘ্রান এবং আমার উদ্দেশ্যে নিবেদিত নৈবেদ্য পরিত্যাগ সমস্ত বর্ণের লোকেরই কর্তব্য, বিশেষভাবে ব্রাহ্মণের জন্য তা অবশ্য কর্তব্য।” কেন এরূপ নিষেধাজ্ঞা? উত্তরে শিব বলছেন- “যেহেতু শিবলিঙ্গের নির্মাল্যে চণ্ডের অধিকার থাকে, তাই শিবের নৈবেদ্য সাধারণ ব্যক্তির খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু শিবদীক্ষাযুক্ত শিবভক্ত ব্যক্তির জন্য সকল শিবলিঙ্গের নৈবেদ্য শুভ এবং ‘মহাপ্রসাদ’।” [শিবপুরাণ, বিদ্যেশ্বর সংহিতা, অধ্যায় ২২] অগ্রাহ্যং শিব নিৰ্ম্মাল্যং পত্রঃ পুষ্পং ফলং জলং। দ্রব্যমন্নং ফলং তোয়ং শিবস্য ন স্পৃশেৎ কচিৎ। ন নয়েচ্ছিব নিৰ্ম্মালাং কূপে সর্বং বিনিঃক্ষিপেৎ।। – (কালিকাপুরাণ) অনুবাদ: শিবের নির্মাল্য, পত্র,পুষ্প,ফল,জল সর্বদা অগ্রাহ্য করবে, কদাচিৎ গ্রহণ করবে না। শিবের সমস্ত নির্মাল্য কূপের জলে বিশেষভাবে নিক্ষেপ করবে। লিঙ্গার্চন তন্ত্রে মহাদেবকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে- দুর্ল্লভং তব নিৰ্ম্মাল্যং ব্রহ্মাদীনাং রুপা- নিধে। তৎ কথং পরমেশান নিৰ্ম্মাল্যং তব দুষিতং ॥ “ অর্থাৎ, হে কৃপানিধে, তোমার নির্মাল্য ব্রহ্মাদির দুর্লভ। তবে, হে পরমেশ, তব নির্মাল্য দূষিত কেন?” মহাদেব উত্তর করিলেন যে তাঁহার কণ্ঠে বিষ আছে বলিয়া লোকে তাঁহার নির্মাল্য ভক্ষণ করে না। সাধারণ মানুষ শিবের প্রসাদ খেলে কি হবে?! ১) ভৃগুমুনির শিবকে অভিশাপ দিয়েছিলেন, কেউ শিবের প্রসাদ গ্রহণ করলে চন্ডাল হয়ে জন্মাতে হবে। (পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, অধ্যায় ২৫৫) এ উপাখ্যানিটি শিব স্বয়ং মাতা পার্বতীকে বলেছেন পদ্মপুরাণে। ২) পার্বতীকে কৃষ্ণপ্রসাদ না দিয়ে শিব একাই কৃ্ষ্ণপ্রসাদ গ্রহণ করেছিলেন। তাই পার্বতী মনঃকষ্টে শিবকে অভিশাপ দিয়েছিলেন, কেউ যদি শিবলিঙ্গের প্রসাদ গ্রহণ করে তবে সে ভারতভূমিতে সারমেয় (কুকুর) হয়ে জন্মাবে। (ব্রহ্মবৈবর্ত মহাপুরাণ, কৃষ্ণজন্মখন্ড, অধ্যায় ৩৭) ৩) যম বলেছেন, শিবের নির্মাল্য গ্রহণে ১০০ বছর নরকবাস, এরপর ক্রমান্বয়ে গাছ, কৃমি, মলমূত্রের পোকা হয়ে অবশেষে ১০০ বার কুকুরযোনীতে জন্মাতে হবে। (পদ্ম মহাপুরাণ, পাতালখন্ড, ৬৫।৫৩-৫৭) এ উপাখ্যানিটি শিব স্বয়ং মাতা পার্বতীকে বলেছেন পদ্মপুরাণে। ৪) চন্দ্রশর্মা নামক এক কট্টর শৈব কৃষ্ণপূজা না করে শিবের পূজা করায় তার পিতৃপুরুষগণ প্রেতযোনী প্রাপ্ত হয়েছিলো। তাই পিতৃপুরুষগণ উপস্থিত হয়ে চন্দ্রশর্মাকে বললেন, “কেউ অগ্রে শ্রীকৃষ্ণের পূজা না করে শিবকে পূজা করলে তবে সে পূজা বিফল হয় এবং পূজারী প্রেতযোনী প্রাপ্ত হন।” (স্কন্দপুরাণের প্রভাসখন্ডে-দ্বারকামাহাত্ম্যমের ২৩।১৫২) মূল কথা, শিব পরমবৈষ্ণব হওয়ায় তিনি কৃষ্ণপ্রসাদ ব্যতীত কিছুই গ্রহণ করেন না। কেউ যদি শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন না করে শিবকে কিছু ভোগ লাগায় তবে শিবজী তা স্বীকার করেন বটে কিন্তু তা ভক্ষণ করেন না। তিনি সেগুলো তার সেবক ভূত,পিশাচ, কাপালিদের দিয়ে দেন। তাই সে প্রসাদে চণ্ডদের অধিকার থাকে, কোন সাধারণ মনুষ্য তা খেলে চন্ডাল, কুকুর কিংবা প্রেতযোনী প্রাপ্ত হন। এরকম গতি সাধারণ মানুষ চান না। সাধারণ সনাতনীরা স্বর্গ কিংবা বৈকুন্ঠমুক্তির বাসনা করেন। যারা শিবমন্ত্রে দীক্ষিত তারা শিবের নৈবেদ্য ভক্ষণ করে শিবধামে চন্ডালরূপে শিবের পার্ষদ ও সেবক হয়ে থাকার সুযোগ পাবেন। তাহলে যারা শিবমন্ত্রে দীক্ষিত নন, তারা কিভাবে শিবলিঙ্গে নিবেদিত প্রসাদ পেতে পারেন?! শিবের প্রসাদ খাওয়া বিধান হলো- প্রথমে শ্রীকৃষ্ণ/বিষ্ণুকে পূজা করে নিবেদন করতে হবে, তখন তা হয় মহাপ্রসাদ। এরপর তা শিব ও পার্বতীকে নিবেদন করতে হয়। তখন তাকে বলে ‘মহা মহা প্রসাদ। এ নিয়ে শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে একটা উপাখ্যান স্মরণীয়- উপাখ্যানটি হলো, একবার জগতগুরু শিব মাতা পার্বতীকে না দিয়েই হরিপ্রসাদ গ্রহণ করেছিলেন। ফলে মাতা পার্বতী ক্রোধান্বিত হয়ে নিজের পতিকেই অভিশাপ দেন, যিনি শিবকে নিবেদিত কোন বস্তু আহার করবেন, তিনি ভারতে সারমেয় (কুকুর) হয়ে জন্মলাভ করবে। পরে ক্রোধ সংবরণ করে মাতা পার্বতী এ অভিশাপকে প্রশমিত করার জন্য বিধান দেন, ‘যদি সরাসরি শিবকে নিবেদন করে সে প্রসাদ গ্রহণ করবে সে ঠিকই ভারতে সারমেয় হয়ে জন্ম নিবে। কিন্তু যে প্রথমে শ্রীহরিকে নিবেদন করে সে কৃষ্ণপ্রসাদ শিবকে নিবেদন করে তা গ্রহণ করবে, সে আর পূর্বোক্ত অভিশাপের ভাগী হবেন না, বরং সে হরি ও হরের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হবে।’ [শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কৃষ্ণজন্মখন্ড, অধ্যায় ৩৭] শিবপুরাণেও শিবজী বলেছেন- “মুনীশ্বরগণ! শিবলিঙ্গের ওপর রাখা যে দ্রব্য সেগুলি অগ্রহণীয়। যে শিব-নৈবেদ্য, পত্র, পুষ্প, ফল, জল অগ্রহণীয়, সে সব দ্রব্য বিষ্ণুশালগ্রাম শিলার স্পর্শে এসে পবিত্র এবং গ্রহণযোগ্য হয়ে যায়।” [শিবপুরাণম, বিদ্যেশ্বর সংহিতা, অধ্যায় ২২, শ্লোক ২০] বরাহপুরাণে উক্ত হইয়াছে, অভক্ষ্যং শিবনির্মাল্যং পত্রং পুষ্পং ফলং জলং। শালগ্রাম শিলাযোগাৎ পাবনং তদ্ভবেৎ সদা ।। অর্থাৎ, “পত্র পুষ্প ফল জল প্রভৃতি শিব নিৰ্ম্মাল্য অভক্ষ্য। ভগবান বিষ্ণুর শালগ্রামশিলা- যোগে তাহা সদা পবিত্র হয়।” অর্থাৎ, ভগবান শিবকে ভোগ নিবেদনের নিয়ম হলো- প্রথমে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করতে হবে, এরপর সে কৃষ্ণপ্রসাদ ভগবান শ্রীশিবকে নিবেদন করতে হবে। অতঃপর সে প্রসাদ গ্রহণ করতে পারবেন। শ্রীজগন্নাথপুরী ধামেও এভাবে অগ্রে জগন্নাথদেবকে ভোগ নিবেদন করে সে কৃষ্ণপ্রসাদ শিব ও বিমলাদেবীকে নিবেদন করা হয়। “হরিপ্রসাদ আস্বাদন করে ‘পঞ্চমুখে রাম নাম গান ত্রিপুরারী” ।।হরে কৃষ্ণ।। ।।হর হর মহাদেব।।

শাস্ত্রে কেন বিষ্ণু ও শিবকে অভেদ বলা হয়েছে?!

image_2024-04-29_121235458

শাস্ত্রে কেন বিষ্ণু ও শিবকে অভেদ বলা হয়েছে?! শাস্ত্রে যেমন গুরুকে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর বলা হয়েছে, শাস্ত্রে যেমন অতিথিকে নারায়ণ বলা হয়েছে, শাস্ত্রে যেমন ব্রাহ্মণকে সাক্ষাৎ বিষ্ণু বলা হয়েছে, শাস্ত্রে যেমন সন্ন্যাসীকে নারায়ণতুল্য বলা হয়েছে, ………..ঠিক তেমনি শিবজী এ জড়জগতে ভগবান বিষ্ণুর প্রতিনিধি রূপে কার্যনির্বাপন করেন, তাই তাকে শ্রীহরির সাথে অভেদ বলা হয়েছে৷ অনেকটা এরকম, আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যদি প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে ভারতে আসেন, তবে তাকে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সমতুল্য মর্যাদা দেওয়া হয়। কারণ তিনি প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধিত্ব করছেন। শ্রীল জীবগোস্বামিপ্রভু প্রমুখ বৈষ্ণবাচার্য্যগণ লিখিয়াছেন- “শুদ্ধভক্তাঃ শ্রীগুরোঃ শ্রীশিবস্থ্য চ ভগবতা সহ অভেদদৃষ্টিং তং প্রিয়তমত্বেনৈব মন্যন্তে।” – ভক্তি সন্দর্ভ ২১৪। অর্থাৎ, “যেহেতু শ্রীগুরু ও শ্রীশিবের ভগবানের অতি প্রিয়তম স্বরূপ, তাই শুদ্ধভক্তগণ ভগবানের সাথে তাদের অভেদ দৃষ্টিতে জানেন।” স্কন্দপুরাণেও বলা হয়েছে- বাসুদেবস্য ভক্তস্য ন ভেদো বিদ্যতেহনয়োঃ। বাসুদেবস্য যে ভক্তাস্তেষাং বক্ষ্যামি লক্ষণম।। [স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখন্ড-পুরুষোত্তমমাহাত্ম্যম, ১০।৯৫] অনুবাদ: বাসুদেব ও তাঁর ভক্তের মধ্যে কিছুমাত্র ভেদ নেই। ভক্তের সেবা করলেই বাসুদেবের সেবা হয়। যথা বিষ্ণুস্তথাচায়ং নান্তরং বর্ত্ততে ক্বচিৎ। ইতি জ্ঞাত্বা তু ভো বৎস সর্ব্বদা পূজয়েদবুধঃ।। [পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ৬৮।১৯] বঙ্গানুবাদ: যেমন বিষ্ণু, তেমনই বৈষ্ণব, উভয়ের ভেদ কোথাও নেই। বৎস! ইহা বুঝিয়া বিজ্ঞগণ সর্বদা বৈষ্ণবের পূজা করিবেন। সমস্ত শাস্ত্রে ঘোষিত হয়েছে, শিবের তুল্য শ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব আর নেই: ‘ বৈষ্ণবানা যথা শম্ভু’ – শম্ভুই সর্বশ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব( শ্রীমদ্ভাগবতম ১২।১৩।১৬) ‘বৈষ্ণবানাং যথা রুদ্র’ – রুদ্রের সমান বৈষ্ণব নেই(স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখন্ড, বেঙ্কটাচলমাহাত্ম্যম ১৭।১৫) “শঙ্করের সমান কোনো বৈষ্ণব নেই” (ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, ব্রহ্মখন্ড ১১।১৬) ”বিষ্ণুই সর্বেশ্বর ও সর্ব দেবোত্তম। শিব হলেন আদিগুরু।”(নারদপঞ্চরাত্র ৪।৩।২১০)  সদাশিব স্বয়ং ‘রাধাকৃষ্ণ যুগল” মন্ত্রে দীক্ষিত। (পদ্মপুরাণ পাতালখন্ড অধ্যায় ৫১) কিন্তু একটা বিষয় কি জানেন তো, আজকাল পিডিএফ পড়ুয়া সাধারণ মানুষ শাস্ত্র সম্পূর্ণ না পড়ে মাঝখান থেকে একটা দুইটা বাক্য দেখেই লাফিয়ে উঠে। ওসব অতি পন্ডিত বাঁদরেরা তাই শাস্ত্রের প্রকৃত অর্থ না জেনে দোষারোপ করে। শাস্ত্র বিচার করার ক্রাইটেরিয়া জানতে হয়। কোন শাস্ত্রের মূল সিদ্ধান্ত কি তা বিচারের জন্য সবচেয়ে সহজ ক্রাইটেরিয়া হলো সে শাস্ত্রের শুরুর ও শেষের বাক্য পর্যালোচনা করে। বৃহন্নারদীয় পুরাণের একেবারে প্রথম শ্লোকগুলোতেই বলা হয়েছে শিবজী শ্রীকৃষ্ণের অংশমাত্র। দেখুন- “কমলার প্রীতিভাজন পরম প্রভু প্রভূত-করুণাসম্পন্ন বৃন্দাবনবিহারী পরমানন্দস্বরূপ শ্রীকৃষ্ণের বন্দনা করি। ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর প্রভৃতি যাঁর অংশ, ত্রিভুবনের সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়-কর্তা, সেই পরমবিশুদ্ধ চিৎস্বরূপ আদিদেব শ্রীকৃষ্ণের ভজনা করি।” [ বৃহন্নারদীয়পুরাণ,অধ্যায় ১, শ্লোক ১-২ ] অতএব, শ্রীকৃষ্ণ পূর্ণ, শিব তাঁর অংশ। অংশ কখনো পূর্ণ হয় না। ব্রহ্মসংহিতায় ব্রহ্মা বলেছেন, শ্রীকৃষ্ণের বিকার হলেন শিব। দুধ থেকে যেরূপ দই হয়, কিন্তু দই থেকে দুধ হয় না, ঠিক একইভাবে শ্রীকৃষ্ণ থেকে শিবের প্রকাশ, শিব হতে কৃষ্ণ হতে পারে না। শ্রীশিব যেহেতু পরম বৈষ্ণব, তাই বিষ্ণু-বৈষ্ণব অভেদ জ্ঞানে তাকে অভেদ বলা হয়েছে, ঠিক যেরূপে গুরুকে পরমব্রহ্ম বলা হয়, অতিথিকে নারায়ণ বলা হয় ইত্যাদি। ।।হরে কৃষ্ণ।। ।।হর হর শম্ভু।।

ভগবতধামের দ্বাররক্ষক শ্রীহনুমান

image_2024-04-29_120351216

সাকেত ধাম হলো রাজাধিরাজ ভগবান রামের ধাম। গোলোক ধামের নিচে এবং মহাবৈকুন্ঠ ধামের উপরে সাকেতধামের অবস্থান। ভগবান রামের উপাসনায়, হনুমানের কৃপা অত্যন্ত প্রয়োজন, কারণ তিনি হলেন সাকেত লোকের দ্বাররক্ষক হনুমান যদি প্রতিকূল হয়, তাহলে কোনো জীব ভগবান রামের অনুগ্রহ ও দয়া পেতে পারে না। অন্যত্র, একজন দারোয়ান শুধুমাত্র প্রভুর আদেশে একজন অতিথিকে তাদের প্রভুর বাড়িতে নিয়ে যায়, কিন্তু এখানে প্রভু রাম এবং ভৃত্য হনুমান এতটাই একমত যে একমাত্র হনুমানের আদেশই সর্বোত্তম। সুগ্রীব এবং বিভীষণের আশ্রয়-সন্ধানের পর্বগুলিতে, হনুমান ভগবান রামকে জিজ্ঞাসা না করেই তাদের প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিলেন। কারণ হল যে হনুমান তার প্রভুর সাথে এতটাই একতা অনুভব করেন যে তিনি এমন কোন কাজ করেন না যা ভগবান রামের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায়। ভগবান রামও হনুমানের ইচ্ছেকে শ্রদ্ধা করেন। ভগবানের অন্যান্য দ্বাররক্ষকগণ হনুমানের সমান বিবেচিত হয় না। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় দ্বাররক্ষকেরা কর্তাকে না জানিয়ে কাজ করে, অনেকক্ষেত্রে দ্বারপালেরা তাদের সংযমের অভাবের কারণে দর্শনার্থীদের খুব উত্তেজিত করে তোলে। এই বিষয়ে স্পষ্টতার জন্য, ভাগবত পুরাণের তৃতীয় স্কন্ধ থেকে জয় ও বিজয়ের (বিষ্ণুর দারোয়ান) উপাখ্যানটি উল্লেখ করা যায়। সনক, সনন্দন, সনাতন এবং সনৎকুমার – চার ভাই একবার ভগবান বিষ্ণুর আবাস বৈকুণ্ঠে তাঁকে দেখতে আসেন। অনায়াসে ছয়টি দরজা পেরিয়ে তারা সপ্তমটি অতিক্রম করছিলেন। তখন ভগবানের দুই প্রিয় দ্বারপাল- জয় এবং বিজয়ের দ্বারা লাঞ্চিত হন। সনক এবং তার ভাইয়েরা কখনও ভাবেননি ভগবানের ধামে প্রবেশের জন্য তাদের মতো সাধু সন্তদের কারো অনুমতির প্রয়োজন৷ পাঁচ বছরের ঋষিদের বিনা অনুমতিতে ভগবানের গৃহে প্রবেশ করতে দেখে জয় ও বিজয় তাদের প্রতি কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাদের উপহাস করে, জয় এবং বিজয় তাদের আঘাত করে এবং তাদের নিচে ফেলে দেয়। জয় ও বিজয়ের এই আচরণ ভগবান ও তাঁর ভক্ত উভয়ের বিরুদ্ধেই ছিল। তাদের এ আচরণে মুনিগণ ক্রোধের সমস্ত সীমা পার করেছিলেন এবং তারপর তারা বলেছিল “তোমরা সর্বজ্ঞ, পরম করুণাময়, এবং সর্বশক্তিমান ভগবান বিষ্ণুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হওয়ার যোগ্য নও। তোমাদের উপযুক্ত শাস্তি পাওয়াই সঙ্গত। এই সীমালঙ্ঘনের জন্য তোমরা ক্রোধ (ক্রোধ), কাম (কামনা) এবং লোভ (লোভ) তিনটিই দ্বারা পীড়িত হবে। অতএব, তোমরা তিনবার নিকৃষ্ট জগতে যাবে, “অর্থাৎ তুমি ক্রোধ দ্বারা চালিত দৈত্য হয়ে যাবে। প্রথম জন্ম (হিরণ্যকশিপু এবং হিরণ্যক), দ্বিতীয় জন্মে কামের দ্বারা চালিত রাক্ষস (রাবণ এবং কুম্ভকর্ণ), এবং তৃতীয় জন্মে লোভা দ্বারা চালিত অসুর-সদৃশ অমানুষ (শিশুপাল এবং দন্তবক্র)। এখানে, তিন জন্মের জন্য নিকৃষ্টতম পৃথিবীতে নির্বাসনের অভিশাপও উদ্দেশ্যমূলক। সনক এবং তার ভাইরা জয় এবং বিজয়কে তিনটি পাপী জন্মের জন্য অভিশাপ দিয়েছিলেন কারণ জয় এবং বিজয় তাদের তিনবার আঘাত করেছিলেন। ভগবানের অন্যান্য প্রিয় দ্বাররক্ষকেরা অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের ভগবানের দর্শনার্থীদের রামের দর্শনে অস্বীকৃতি জানাতে পারে, কিন্তু হনুমান এমনকি বিভীষণের মতো একজন ব্যক্তিকেও রামের নিকট নিয়ে আসেন। উল্লেখ্য, বিভীষণ রাবণের পদাঘাতে নির্বাসিত হয়ে প্রভু রামের পদ্মপদ্মের আশ্রয়ে এসেছিলেন। যখন রামের শরণাপন্ন সুগ্রীব বিভীষণের উপর নানারকম সন্দেহ করতে শুরু করেন, তখন হনুমান অত্যন্ত ব্যথিত হন।

মাতৃগর্ভে শিশুর ক্রমবিকাশ বর্ণনা করছে ভবিষ্যপুরাণ

image_2024-04-28_173610387

গর্ভস্থ শিশু সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রত্যেক পিতামাতারই আছে। গর্ভের শিশুটি কেমন আছে, কী করছে এখন?! এমনি হাজারো দুঃশ্চিন্তা প্রতিনিয়ত ঘিরে রাখে গর্ভস্থ শিশুর পিতামাকে। কত ডাক্তার, কত টেস্ট করানো লাগে শিশুর(গর্ভস্থ) সুরক্ষা বিধানের জন্য।কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে, গর্ভের শিশুর গর্ভে প্রবেশ থেকে শুরু করে, শিশুর(গর্ভে) শারীরিক গঠন, তার চেতনত্ব প্রাপ্তি, তার পুর্বকর্ম স্মরণ, পুনরায় বিস্মরণ, গর্ভের অসহ্য যাতনার এক ধারাহিক বর্ণণা দিচ্ছে ভবিষ্যপুরাণ। এই বর্ণনা এতটাই নিখুঁত ও বিজ্ঞানসম্মত যে তা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রগতিকেও হার মানাবে।কারণ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রায় ১৮০০ শতাব্দীর শেষ থেকে আজ পর্যন্ত যা নির্ণয় করতে পারেনি তার চেয়েও কয়েক ধাপ উন্নত বায়োলজিক্যাল ফ্যাক্ট পরিষ্কার করছে আমাদের কাছে পুরাণশাস্ত্র। তার কারণ, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নত যন্ত্র দ্বারা, পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা আজও কোন ব্যক্তির ক্ষুধা অথবা তৃষ্ণা লেগেছে কিনা তা জানা বা বুঝার উপায় নেই। কিন্তু ভবিষ্যপুরাণ হাজার হাজার বছর পূর্বেই গর্ভস্থ শিশুর কোন মাসে ক্ষুধা-তৃষ্ণা লাগবে তা, সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করছে ।আধুনিক বিজ্ঞান যেখানে স্থূল জড় বস্তুর(রক্ত, মাংস, বীর্য) গঠন-পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করে কালাতিপাত করছে ভবিষ্যপুরাণ সেখানে স্থূল জড়বস্তুর উর্দ্ধে সূক্ষ্ম জড়বস্তু(মন, বুদ্ধি, অহংকার) এবং তারও ঊর্দ্ধে চেতন বস্তুর(দেহী/আত্মা) উপস্থিতি, চেতনার বিকাশ সাধন নিয়ে গর্ভে থাকা শিশুর গর্ভে প্রবেশ থেকে শুরু করে ভূমিষ্ঠ হওয়া এবং তার মৃত্যু পর্যন্ত এক ধারাবাহিক যাত্রার বিবরণ দিচ্ছে। ভবিষ্যপুরাণ উত্তর পর্বের ৩য় অধ্যায়ের বর্ণনায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠির মহারাজের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বললেন— শুভ কর্মে প্রাণী দেবত্ব প্রাপ্ত হন এবং যে কর্ম শুভ তথা অশুভ মিশ্রিত তার দ্বারা সে মানুষবতা প্রাপ্ত হয় এবং পুরোপুরি অশুভ কর্মের দ্বারা তির্যক যোনি প্রাপ্ত হয়।।৬।। ঋতুকালে যিনি মুক্ত তিনি নির্দোষ যারা দ্বারা সংস্থিত তার বায়ুতে পৃষ্ঠ হয়ে স্ত্রী রক্তে একতা প্রাপ্ত হয়। শুক্র বিসর্গের সময় করণের দ্বারা যুক্ত জীব ভৃত্য নিজ কর্ম দ্বারা নিয়োজিত হয়ে যোনিতে প্রবেশ করে। সেই শুক্র এবং রক্ত একস্থ হয়ে একদিনে সে কলল হয়ে যায়। সে কলল ৫ (পাঁচ) রাত্রিতে বুদবুদাকার প্রাপ্ত হয়। সেই বুদবুদ সাত রাত্রে মাংস পেশী রূপে পরিণত হয়। পুনরায় দুই সপ্তাহে রক্ত মাংস দ্বারা দৃঢ়াঞ্চিত পেশী তৈরী হয়।। ৮-১১।। পঁচিশ ২৫ (পঁচিশ) রাত্রে বীজ অংকুরের ন্যায় পেশীর মাস মাত্র সময় পাঁচ খন্ডে বিভক্ত হয়। পুনরায় দুই মাসে গ্রীবা-শির -স্কন্ধ-পৃষ্ঠাংশ এবং উদর ক্রমান্বয়ে উৎপন্ন হয়। চার মাসে যথাক্রমে অংগুলি উৎপন্ন হয়।। ১২-১৪।। পাঁচমাসে মুখ -নাসিকা-কর্ণদ্বয় -দন্ত গুচ্ছ এবং নখ উৎপন্ন হয়। ছয়মাসে সছিদ্র কর্ণ, পায়ু, মেঢ্র, নাভি উৎপন্ন হয়।। ১৫-১৬।। এই শরীরে সন্ধি সকল সাতমাসে তৈরী হয়। অঙ্গ তথা প্রত্যঙ্গে সম্পূর্ণ তথা বেশ সমন্বিত অবয়ব পূর্ণ পুষ্ট আটমাসে উদরস্থ শিশু গঠিত হয, এবং পুনরায় পঞ্চাত্মক সমাযুক্ত হয়ে গর্ভে স্থিত থাকে, যা পূর্ণরূপে পরিপক্ক।। ১৭-১৮।। হে ভরতর্ষভ, মাতৃআহারের বীর্য দ্বারা ষড়বিধরস সংগ্রহ করে শিশু সংবর্ধিত হয়।। ১৯।। হে অরিন্দম, এই সব আমি তোমাকে যথাযথ বলে দেব। নাভি সূত্র বিনন্ধের দ্বারা সে দিনদিনে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। অনন্তর সেই জীবাত্মা স্মৃতি প্রাপ্ত হয় কারণ তার শরীর সাঙ্গ সম্পূর্ণ হয়। সেই সময় সে দুঃখ এবং সুখ জানতে থাকে এবং পুরাকৃত নিদ্রা স্বপ্নেরও জ্ঞান হয়।। ২০-২১।। সেই সময় তার জ্ঞান হয় কি যে, আমি মারা গিয়েছিলাম পুনরায় আমি জন্ম ধারণ করেছি এবং উৎপন্ন হয়েও পুনরায় আমি মৃত্যু প্রাপ্ত হব। আমি এই প্রকারে অনেক প্রকার সহস্র যোনি দেখেছি।। ২২।। এই বার আমি উৎপন্ন হয়েই সংস্কার প্রাপ্ত হয়ে উত্তম কল্যাণ মার্গে কার্য করব যাতে করে আমাকে পুনরায় গর্ভবাসের কষ্ট পেতে না হয়। এই প্রকার জীবত্মা গর্ভ স্থিত হয়ে ভগবদ্ ভাবনায় ভাবিত হয় যে, আমি এই ঘোর গর্ভ থেকে নির্গত হয়ে সংসারে বিশেষ নিবৃত্তিকারী চারবেদ অধ্যয়ন করব।। ২৩-২৪।। এই প্রকার মহান গর্ভ দুঃখে পরিপীড়িত জীব কর্ম বশে মোক্ষ প্রাপ্তির উপায় চিন্তা করে। যেমন কোনো গিরিবর দ্বারা আক্রান্ত প্রচন্ড দুঃখে আকুল হয় তেমন সেই দেহী জরায়ু চেষ্ঠিত দুঃখে স্থিত হয়।। ২৫- ২৬।। সাগরে পতিত জিন যেমন দুঃখে যথাকুল হয় তেমন গর্ভোদক সিক্ত অঙ্গ রূপী পুরুষ অত্যন্ত ব্যকুল হয়।। যেমন কোনো লৌহ কুম্ভে ন্যস্ত অগ্নি দ্বারা পক্ক হয় ঠিক তেমন গর্ভস্থিত জন্তু পীড়িতোদর হয়ে পক্ক হয়।।২৭- ২৮।। অগ্নিবর্ণের ন্যায় সূচের দ্বারা নিরন্তর বিভিন্ন হতে হতে যেরূপ দুঃখ হয় গর্ভস্থিত জীব তার থেকে ৮ গুণ দুঃখ প্রাপ্ত হয়। গর্ভাবাসের ন্যায় পরকষ্ট প্রদানকারী দ্বিতীয় কেউই নেই।। হে রাজন সেই গর্ভে নিবাস দেহধারি গণকে অত্যধিক দুঃখ প্রদান করে তা সুখের এবং সংকটময় ।। ২৯- ৩০।। এই প্রকারে প্রাণিগণ যে ভাবে গর্ভ দুঃখ অনুভব করে তা আমি বললাম। এই অনুভূতি চর এবং স্থির সকলের আত্মগর্ভ অনুসারে হয়। গর্ভনিবাসে যে দুঃখ হয়, তার থেকে কোটিগুন দুঃখ হয় জন্মলাভের পর। সেই সময় যোনিযন্ত্র থেকে তাকে বাইরে বার করতে সে প্রপীড়িত হয়। স্বর্ণকারের তন্ত্রী আকর্ষণের ন্যায় তার শরীর অত্যন্ত পীড়া অনুভব করে এবং জায়মান দেহী মূর্ছিত হয়ে পড়ে। সেই সময় শরের ন্যায় যে পীড়িত সে নির্গত হয়। এমন পীড়া হয়, যেমন তার শিরে পাপ রূপী মুদগরের দ্বারা তাড়ণ করা হয়।। ৩১-৩৩।। যখন সেই জীব গর্ভ থেকে নির্গত হয় সেই সময় প্রসব বায়ু থেকে তার মহাদুঃখ উৎপন্ন হয় এবং পরিত্রাণের জন্য সে বুদ্ধি প্রয়োগ করে। যন্ত্রেরদ্বারা যেমন তিল ও ইক্ষু রস নিঃসৃত হয় তেমন জীবাত্মার সেই শরীর এক প্রকার সার রহিত যোনি যন্ত্র দ্বারা প্রপীড়িত হয় ।। ৩৪-৩৫।। অহো, মোহের কি অদ্ভুত মাহাত্ম্য যে এই সমস্ত জগৎ থেকে নিজ প্রভাবে ব্যামো হিত করে রেখেছে। নিজ দোষে যে এই শরীরের, তা বুঝে, দেখেও এর থেকে বিরক্ত হয় না।। ৩৬।। এই প্রকারে এই শরীর স্বভাব দ্বারা নিশ্চয় অপবিত্র। এর সত্তর একমাত্র এবং কদলী সার সমান নিস্সার। গর্ভে স্থিত থাকার সময় যন্ত্রের স্মৃতি তার জন্মানো মাত্র যোনিযন্ত্রের পীড়নের দ্বারাই সে সব ভুলে যায়।। ৩৭-৩৮।। মোহ নামক বহিবায়ুর স্পর্শে একপ্রকার জ্বর উৎপন্ন হয়। সেই মহান জ্বরের দ্বারা মহামোহ উৎপন্ন হয়। যখন মহামোহ থেকে সহমূঢ়তা প্রাপ্ত হয তখন সেই সংমূঢ় স্মৃতি শীঘ্র ভ্রংশ হয়ে যায়। স্মৃতি যা গর্ভদশাতে ছিল তা ভ্রংশ হওয়ার ফলে জীব পূর্বজন্মে কৃত কর্মে বশীভূত হয়ে পুনঃ সেই জন্মেরতি উৎপন্ন করে।। এই লোক তো রাগানুরক্ত পুনরায় এই মুঢ়কে অকার্যে প্রবৃত করে। তার ফলে সে নিজেকে চিনতে পারে না এবং পরকেউ প্রাপ্ত হয় না।। ৩৯-৪২।। সে এমন মূঢ়, মোহান্ধ তথা বধির যে পরমশ্রের কথা শ্রবণ করেনা এবং নেত্র থেকেও কিছু দেখে না। বুদ্ধি থাকতেও বড় বড় বিদ্বান দ্বারা রুবড় বোধ্যমান হয়েও কিছু বোঝেনা। এই কারণে সে এই সংসারে রাগ এবং লোভের বশীভূত হয়ে ক্লেশ প্রাপ্ত হয়।। ৪৩-৪৫।।. গর্ভে যে স্মৃতি ছিল তার অভাব হলে মহর্ষি মহানুভব শাস্ত্র কথন করেছেন যা, সেই দুঃখ মথন করার জন্য এবং স্বর্গ প্রদানের জন্য ।। ৪৬।।   পোস্টটি নাতিদীর্ঘ করার লক্ষ্যে গর্ভের শিশুর মৃত্যু অবদি বর্ণনাটি এখানে দেওয়া হয়নি। পরিশেষে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, যাহারা পুরাণের অবৈজ্ঞানিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পঞ্চম বেদ পুরাণশাস্ত্রকে অস্বীকার করেন তাদের