শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যমহাপ্রভু রচিত শিবাষ্টকম্

SAVE 20241008 224009 Svadharmam

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যমহাপ্রভু রচিত শিবাষ্টকম্ নমো নমস্তে ত্রিদশেশ্বরায় ভূতাদিনাথায় মূড়ায় নিত্যম্। গঙ্গাতরঙ্গোত্থিতবালচন্দ্রচূড়ায় গৌরীনয়নোৎবায়।।১।। অনুবাদ হে ত্রিদশেশ্বর, হে ভূতবর্গাদির আদিনাথ, হে মূঢ়, তোমাকে আমি নিত্য প্রণাম করি। গঙ্গাতরঙ্গোত্থিত তরুণ চন্দ্র তোমার শিরোভূষণ, তুমি গৌরীর নেত্রানন্দদায়ী, তোমার চরণে নমস্কার। . সুতপ্তচামীকরচন্দ্রনীলপদ্ম প্রবালাম্বুদকান্তিবস্ত্রৈঃ। সুনৃত্যরঙ্গেষ্টবরপ্রদায় কৈবল্যনাথায় বৃষধ্বজায়।। ২।। অনুবাদ গলিত স্বর্ণ, চন্দ্র, নীল পদ্ম, প্রবাল ও মেঘশ্যামল বসনাদি ধারণ করে যিনি সুন্দর নৃত্যভঙ্গীসহকারে ভক্তগণের ইষ্টবর প্রদান করেন, সেই কৈবল্যনাথ, বৃষধ্বজ শিবকে প্রণাম করি। . সুধাংশুসূর্যাগ্নিবিলোচনেন তমোভিদে তে জগতঃ শিবায়। সহস্র শুভ্রাংশুসহস্ররশ্মি-সহস্রসংজিত্ত্বরতেজসে’স্তু।। ৩।। অনুবাদ যিনি চন্দ্রসূর্যাগ্নিরূপ ত্রিলোচন দ্বারা জগতের সকল অন্ধকার নাশ করেন, সহস্রচন্দ্রমা ও সহস্রসূর্যবিজয়ী তেজোমালাধারণকারী সেই শিবের চরণে নমস্কার। . নাগেশরত্নোজ্জ্বলবিগ্রহায় শার্দুলচৰ্ম্মাংশুকদিব্যতেজসে। সহস্রপত্রোপরি সংস্থিতায় বরাঙ্গদমুক্তভুজদ্বয়ায়।। ৪।। অনুবাদ যাঁর দিব্য বিগ্রহ নাগেশ অনন্তের রত্নপ্রভায় উজ্জ্বল, যিনি ব্যাঘ্রচর্মাম্বরধারী, দিব্যতেজোময়, যিনি সহস্রদল পদ্মের উপর বিরাজমান, যাঁর ভুজদ্বয় উত্তম অঙ্গদে ভূষিত, সেই শিবকে নমস্কার। . সুন্‌পুরারঞ্জিতপাদপদ্মক্ষরৎসুধাভৃত্যসুখপ্রদায়। বিচিত্ররত্নৌঘবিভূষিতায় প্রেমানমেবাদ্য হরৌ বিধেহি।। ৫।। অনুবাদ যিনি সুন্দর নূপুররঞ্জিত পাদপদ্ম থেকে ক্ষরিত সুধা দ্বারা তদীয় ভৃত্যগণ মহাসুখ প্রদান করেন, বিচিত্র রত্নমালায় যিনি বিভূষিত, সেই শিবকে নমস্কার। হে মহেশ্বর, অদ্য আমাকে শ্রীহরির প্রতি অনুপম প্রেম দান করো। . শ্রীরাম গোবিন্দ মুকুন্দ শৌরে শ্রীকৃষ্ণ নারায়ণ বাসুদেব। ইত্যাদিনামামৃতপানমত্ত-ভূঙ্গাধিপায়খিলদুঃখহন্ত্রে।। ৬।। অনুবাদ তুমি শ্রীরাম, গোবিন্দ, মুকুন্দ, শৌরে, শ্রীকৃষ্ণ, নারায়ণ, বাসুদেব প্রভৃতি নামামৃত পানে মত্ত ভূঙ্গরাজ, তুমি নিখিল-দুঃখনাশন, তোমাকে প্রণাম করি। . শ্রীনারদাদ্যৈঃ সততং সুগোপ্যজিজ্ঞাসিতায়াশু বরপ্রদায়।তেভ্যো হরের্ভক্তিসুখপ্রদায় শিবায় সর্ব্বগুরবে নমো নমঃ।।৭।। অনুবাদ শ্রীনারদাদি মহর্ষিগণ সর্বদাই বিভিন্ন সুগোপ্য বিষয় সম্বন্ধে তোমাকে পরিপ্রশ্ন করেন- তুমি আশুবরপ্রদ, তুমি তাঁদের (মহর্ষিদের) হরিভক্তি ও পরম আনন্দ প্রদান করো। হে সর্বগুরু শিব, তোমাকে পুনঃপুন: নমস্কার করি। . শ্রীগৌরীনেত্রোৎসবমঙ্গলায় তৎপ্রাণনাথায় রসপ্রদায়। সদাসমুৎকণ্ঠগোবিন্দলীলাগানপ্রবীণায় নমো’স্তু তুভ্যম্ ।। ৮৷৷ অনুবাদ তুমি শ্রীগৌরীর নেত্রোৎসবমঙ্গলপ্রদ, তুমি হিমাদ্রিনন্দিনীর প্রাণনাথ ও রসপ্রদাতা। সর্বদা সমুৎকণ্ঠিতচিত্তে গোবিন্দলীলাগানে তুমি প্রবীণ, তোমাকে নমস্কার করি। ————————————————- অথ শ্রুতিফল:।। এতৎ শিবস্যাষ্টকমদ্ভুতং মহৎ শৃণ্বন্ হরিপ্রেম লভেত শীঘ্রম্। জ্ঞানঞ্চ বিজ্ঞানমপূর্ব্ববৈভবং যো ভাবপূর্ণ: পরমং সমাদরম্।। অনুবাদ এই মহৎ ও অদ্ভুত শিবাষ্টক শ্রবণ করলে শীঘ্রই হরিপ্রেম লাভ করা যায়। যিনি ভাবপূর্ণচিত্তে এই মঙ্গলময় শ্লোকাবলী শ্রবণ করেন, তিনি জ্ঞান, বিজ্ঞান ও অপূর্ব বৈভব লাভ করেন। অনুবাদক- শ্রীপাদ অর্জুনসখা দাস ।। হরে কৃষ্ণ।। ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

আমাদের শাস্ত্র কি হস্তরেখায় ভবিষ্যৎ বিচার (Palmistry) কে সমর্থন করে?

Svadharmam Q&A

আমাদের শাস্ত্র কি হস্তরেখায় ভবিষ্যৎ বিচার (Palmistry) কে সমর্থন করে? সনাতন ধর্ম হস্তরেখা সমর্থন করে, কেননা হস্তরেখা আমাদের আগের জীবনের কর্মফল প্রদর্শন করে। এমন নয় রেখা আছে বলে সেটা হবে, বরং এটা হবে সেটা বোঝাতে হাতের রেখার বিভিন্নতা। কিন্তু হস্তরেখা সঠিকভাবে বিচার করতে পারে এমন বিশারদ পাওয়া দুষ্কর বর্তমান সময়ে। পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে কেউ যদি নিয়মিত হাতে তালি দিয়ে হরিনাম কীর্তন করে, তবে তার হাতের রেখায় লিপিকৃত দুর্ভাগ্য দূরীভূত হয়। প্রশ্ন তাহলে যাদের হাত নেই তাদের কি সৌভাগ্য নেই? সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য হাতের ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে পূর্ব জীবনের কর্মের ওপর। হাতের রেখা হলো ডায়েরির মতো, যেখানে আগের জীবনের কর্মফল লেখা থাকে। হাত না থাকলেও কর্ম ও কর্মফল রয়েছে, তাই সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য হাতের ওপর নির্ভর করে না। হাতের রেখা কেবল এই বিষয়ে জানার একটি অস্পষ্ট মাধ্যম। ।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

কৃষ্ণভক্তিকে বেদে দূর্লভ বলা হয়েছে কেন?

FB IMG 17281383480564250 Svadharmam

কৃষ্ণভক্তিকে বেদে দূর্লভ বলা হয়েছে কেন? এ সম্পর্কে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলেছেন- ত্রৈগুণ্যবিষয়া বেদা নিস্ত্রৈগুণ্যো ভবার্জুন । নির্দ্বন্দ্বো নিত্যসত্ত্বস্থো নির্যোগক্ষেম আত্মবান্ ॥ [ শ্রীমদ্ভগবদগীতা ২।৪৫ ] বঙ্গানুবাদ: বেদে প্রধানত জড়া প্রকৃতির তিনটি গুণ সম্বন্ধেই আলোচনা করা হয়েছে। হে অর্জুন ! তুমি সেই গুণগুলিকে অতিক্রম করে নির্গুণস্তরে অধিষ্ঠিত হও। সমস্ত দন্দ্ব থেকে মুক্ত হও এবং লাভ-ক্ষতি ও আত্মরক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে অধ্যাত্ম চেতনায় অধিষ্ঠিত হও। শ্রীমদ্ভাগবত (১১।৩।৪৪)-এ বলা হয়েছে, “পরোক্ষবাদ বেদোঽয়ং, অর্থাৎ পরোক্ষবাদ ( একপ্রকারে স্থিত বস্তুর যথার্থতত্ত্ব গোপন করার জন্য অন্য প্রকারে তার বর্ণন ) বেদের একটি স্বভাব।  পিতা যেমন পুত্রের রোগনিবারণের জন্য কুসুমিতবাক্যে  মধুরদ্রব্যের আশা দেখিয়ে পরে বঞ্চণাপূর্ব্বক পুত্রের মঙ্গল-কামনায় মঙ্গলকর ঔষধাদি দান করেন, কুপথের প্রলোভন দিয়ে পুত্রকে ঔষধ গ্রহণে কৌতূহলাক্রান্ত করেন, তেমনই কর্মকাণ্ডে ফলের আশা ভরসায় উৎসাহিত করে বেদসমূহ ইন্দ্রিয় পরায়ণ অদূরদর্শী কর্মীকে কর্মকাণ্ডের লোভ দেখিয়ে কর্মফল ভোগ থেকে অবসর দেন। তাহলে প্রকৃতির সমস্ত গুণকে কিভাবে অতিক্রম করা যায়? এ সম্পর্কে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- মা চ যোঽব্যভিচারেণ ভক্তিযোগেন সেবতে। স গুণান্ সমতীত্যৈতান্ ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে ॥ [ শ্রীমদ্ভগবদগীতা ১৪।২৬ ] বঙ্গানুবাদ: যিনি ঐকান্তিক ভক্তিযোগ সহকারে আমার সেবা করেন, তিনি প্রকৃতির সমস্ত গুণকে অতিক্রম করে ব্রহ্মভূত স্তরে উন্নীত হন। অর্থাৎ, কেউ যদি ঐকান্তিক ভক্তিযোগের মাধ্যমে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করেন, তাহলে তিনি প্রকৃতির সমস্ত গুণকে অতিক্রম করতে পারেন । ।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

দামোদর মাসে আমলকী ফল নিবেদনের মাহাত্ম্য

20241003 193646 Svadharmam

দামোদর মাসে আমলকী ফল নিবেদনের মাধ্যমে অশেষ সুফল লাভ করুন! পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন করুণাসাগর। সাধু ও শাস্ত্র সিদ্ধান্ত আমাদের জানিয়েছেন, আমরা ভগবানের কৃপা পেতে যত না উৎসুক, ভগবান আমাদের কৃপা করতে সহস্রগুণ বেশি উৎসুক। তবে, ভগবান ভক্তদের যশস্বী করতে চান বলেই কিছু নিয়মাদি দিয়েছেন,আবার অল্পের জন্য বিশাল প্রতিদানের কথা দিয়েছেন, যাতে আমরা সহজেই সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভগবানের প্রিয় হতে পারি। তাছাড়া কৃপা মানেই হলো, ‘নির্দিষ্ট কৃত্য করার ফলে যা লাভ হয়।’ দামোদর মাস এমনই একটি সুযোগ, যার মাধ্যমে আমরা যেকোনো ভক্তিমূলক সেবায় সহস্র গুণে বেশী কৃপা লাভ করতে পারি। দামোদর মাসে দীপদান, তুলসীকাষ্ঠের প্রদীপ নিবেদনের পাশাপাশি আরেকটি সুযোগ হলো ভগবানের সেবায় আমলকী নিয়োজন। অতি ক্ষুদ্র, মধুরতাবিহীন এই ফলটিকেই বৈদিক শাস্ত্রে বিশদ ভাবে মহিমান্বিত করা হয়েছে। পুরাণে বলা হয়েছে, কোনো এক কল্পে দেবী লক্ষ্মী ও পার্বতী একত্রে হরিকথা আলোচনার সময় ভক্তিপূর্ণ অশ্রু বিসর্জন করায় সেই প্রেমাশ্রু থেকে আমলকীর উৎপত্তি। এর পরবর্তী কোনো কল্পে জড়জগতে আদিবৃক্ষরূপে আমলকীর আবির্ভাব। আমলকী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এত প্রিয় যে বলা হয়েছে, আমলকী বৃক্ষের তলে বসে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা, জপ প্রভৃতি করলে প্রতি ক্ষণে মহাযজ্ঞের ফল লাভ হয়। (স্কন্দপুরাণ) উক্ত পুরাণে আরো বর্ণিত হয়েছে, ভগবানের চরণে নিবেদিত আমলকী ফল আর তুলসীপত্র গ্রহণ করা হলে কোটি কোটি তীর্থদর্শনের ফল লাভ হয়। এছাড়া তুলসীপত্রের পর অন্য পত্র সমূহের মধ্যে আমলকীর পত্রও ভগবানের প্রিয়। তুলসী যেমন ভগবানের সবকিছুর মধ্যে সবথেকে বেশী প্রিয় ফলের মধ্যে আমলকীও তেমনি প্রিয়। তুলসীর ন্যায় তাই ভগবানের চরণে আমলকীফল, ভোগে আমলকী আবার এমনকি আমলকী ফল দিয়ে মালা গেঁথে দিলেও কৃষ্ণ সেবকের প্রতি কোটিগুণ সন্তুষ্ট হন। প্রত্যহ কৃষ্ণের প্রসাদী আমলকী ও তুলসী ভক্ষণের মাধ্যমে নিখিল পাতক ও দুর্ভাগ্য দূর হয়, জীব ভগবানের ন্যায় নির্মল হয়ে নিজ প্রকৃত শুদ্ধসত্ত্বময় স্বরূপ লাভ করে,পরিশেষে বিশুদ্ধ ভগবদ্ভক্তি লাভ করে থাকে। এই দামোদর মাসে ভগবানের ইচ্ছায় প্রতি বছর আমলকীফল পরিপুষ্ট হয়। তাই ভগবৎপ্রদত্ত এই সুযোগ গ্রহণ করুন, তুলসীকাষ্ঠের প্রদীপ, তুলসী মঞ্জরীর সাথে সাথে আমলকী ফল ভগবানের সেবায় প্রদান করে পরম ভক্তিসহকারে তা গ্রহণ করে কৃতার্থ হোন। হরেকৃষ্ণ! ।।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °  

দামোদর মাসে ব্রত পালনের বিধিসমূহ

20241003 184815 Svadharmam

দামোদর মাসে ব্রত পালনের বিধিসমূহ! দামোদর মাসের মাহাত্ম্য- ১. যে কোনও দেশে কার্তিকে স্নান ও দান বিশেষতঃ পূজাতে তা অগ্নিহোত্র সমফল। ২. কুরুক্ষেত্রে কোটিগুণ ফল, গঙ্গায়ও তৎসম ফল, তার থকে অধিক পুস্করে, হে ভার্গব! দ্বারকায়ও অধিক। কার্তিক মাসে স্নানও শ্রীভগবৎপূজন শ্রীকৃষ্ণসালোক্যপ্রদ। ৩. হে মুনিগণ! মথুরা ব্যতীত, অন্যপুরী সকল তার সমান, যেহেতু মথুরা-মণ্ডলেই শ্রীহরির দামোদর লীলা প্রকট হয়েছিল। ৪. অতএব কার্তিকে মথুরায় শ্রীগোবিন্দের প্রীতিবর্দ্ধন, কার্তিকে মথুরাতেই চরম ফল প্রাপ্তি হয়। ৫. যেমন মাঘে প্রয়াগতীর্থ, বৈশাখে জাহ্নবী, কার্তিকে মথুরা সেবা তা থেকে উৎকর্ষ আর নাই। ৬. কার্তিকে মথুরাতে মানবগণ স্নান করে দামোদরের পূজা করলে তারা কৃষ্ণসারূপ্য প্রাপ্ত জানবেন, এ বিষয়ে বিচার কর্তব্য নয়। ৭. হে বিপ্র! এই জগতে মানবগণের পক্ষে মথুরাতে কার্তিক মাস দুর্লভ। যেখানে পূজিত হয়ে দামোদর নিজরূপ ভক্তগণকে প্রদান করেন। ৮. শ্রীহরি অর্চিত হয়ে অন্যত্র সেবিত ভক্তগণকে ভুক্তি মুক্তি দান করেন, এই শ্রীহরি কিন্ত ভক্তি দান করেন না, যেহেতু শ্রীহরির বশ্যকারী। ৯. কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে একবারও শ্রীদামোদরের পূজা থেকে সেই ভক্তি কিন্তু অনায়াসে মানবগণ শ্রীহরি হতে লাভ করে। ১০. শ্রীদামোদরদেব কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে মন্ত্র-দ্রব-বিহীন পূজাকেও স্বীকার করেন। ১১. যে পাপের মরণান্তেই বিনিষ্কৃতি হয় তার শুদ্ধির জন্য কার্তিক মাসে মথুরাপুরীতে হরিপূজাই সুনিশ্চয়, এই প্রায়শ্চিত্ত শাস্ত্রে উক্ত হয়েছেন। ১২. বালক ধ্রুব কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে শ্রীদামোদরের পূজা ও ধ্যান দ্বারা যোগিগণ দুর্লভ শ্রীভগবানকে শীঘ্র দর্শন প্রাপ্ত হয়েছিলেন। পৃথিবীতে মথুরা সুলভা, সেই রকম প্রতিবছর কার্তিক মাস সুলভ, তথাপি এই জগতে মূঢ় মানবগণ ভবসমুদ্রে জন্ম-মৃত্যু প্রবাহে ভাসছে। ১৩. যজ্ঞসমূহের কি প্রয়োজন, তপস্যার কি প্রয়োজন, অন্য তীর্থসমূহের সেবাতে কি প্রয়োজন? যদি কার্তিকে মথুরা-মণ্ডলে শ্রীরাধিকা প্রিয় শ্রীদামোদরের অর্চিত হন। ১৪. সকল পবিত্র তীর্থ, নদ-নদী, সরোবর কার্তিক মাসে এই মথুরা-মণ্ডলে সকলেই বাস করেন। ১৫. কার্তিকে কেশবদেবের জন্মস্থানে যে মানবগণ একবার প্রবিষ্ট হয়, তারা পরম অব্যয় শ্রীকৃষ্ণকে প্রাপ্ত হন। ১৬. কার্তিক মাসে মথুরাতে হরিপূজাকের উপহার উদ্দেশ্যে হরিপূজা দ্বারা দুর্লভ পদ প্রাপ্ত হওয়া যায়, তখন ভক্তিমান হয়ে পূজা করলে যে কি ফল, তার আর কি বলব। কার্তিক মাসে ব্রত পালনের বর্জনীয় দ্রব্যসমূহ…!!! পদ্মপুরাণে ব্রহ্ম-নারদ সংবাদে বলা হচ্ছে- ১. কার্তিক মাসে রাজমাষ (বরবটি) ও শিমসমূহ ভক্ষণ করলে, হে মুনিবর কল্পকাল (১ হাজার চতুর্যুগ) নরকাবাসী হয়। ২. কার্তিক মাসে যে ব্যক্তি কলমী শাক, পটল, বেগুন, আচার (চাটনি) ত্যাগ না করে, তাকে কল্পকাল (১ হাজার চতুর্যুগ) নরকবাসী হতে হয়। ৩. ধর্মাত্মা ব্যক্তি কার্তিক মাসে মৎস্য ও মাংস ভক্ষণ করবেন না। ৪. পরান্ন, পরশয্যা, পরধন, পরস্ত্রী-কার্তিককে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি বিশেষভাবে বর্জন করবেন। ৫. কার্তিক মাসে তৈল মর্দন, শয্যা, পরান্ন ও কাসার পাত্রে ভোজন ত্যাগ করলে পরিপূর্ণ ব্রতী হওয়া যায়। ৬. কার্তিক মাস উপস্থিত হলে পরান্ন দর্শন করে যে মানব বর্জন করে, প্রতিদিন কৃচ্ছব্রতের ফল প্রাপ্ত হন। পদ্মপুরাণে শ্রীরুক্মাঙ্গদ-মোহিনী-সংবাদে বলা হচ্ছে- ৭. কার্তিকে তৈল, মধু, কাসার পাত্র ও পঁচা বাসি অম্ল দ্রব্য, আচার ইত্যাদি বর্জন করবে। ৮. হে সুভ্রু! মৎস্য, কচ্ছপ মাংস ঔষধ হিসেবেও অন্য মাংস ভক্ষণ করবে না। কার্তিকে মাংস ভক্ষণে চণ্ডাল হয়। কার্তিক-কৃত্য-বিধি- ১. আশ্বিন মাসের যে শুক্লা একাদশী হবে বা পূর্ণিমাতে, নিরলসভাবে কার্তিক মাসের ব্রতসমূহ ঐ দিন হতে আরম্ভ করবে। ২. নিত্য শ্রীভগবানকে জাগরণ করাবার জন্য রাত্রির শেষ প্রহরে উঠে শুচি হয়ে শ্রীভগবানকে জাগিয়ে অনন্তর স্তোত্র পাঠসহ প্রভুর আরতি করবে। ৩. বৈষ্ণববৃন্দসহ আনন্দে বৈষ্ণবধর্মসমূহ শ্রবণ করে গীতবাদ্যাদিসহ প্রাতঃকালে প্রভু দামোদরদেবকে আরতি করবে। ৪. নদী আদি জলাশয়ে গিয়ে আচমনপূর্বক সংকল্প করবে। প্রভুকে প্রার্থনা জানিয়ে পরে তাঁকে যথাবিধি অর্ঘ্যদান করবে। ৫. সংকল্পমন্ত্র- হে জনার্দন! হে দেবেশ! হে দামোদর! শ্রীরাধিকাসহ আপনার প্রীতির জন্য কার্তিকে আমি প্রাতঃস্নান করব। ৬. প্রার্থনা মন্ত্র- হে দেবেশ! তোমার ধ্যানসহ এই জলে আমি স্নান করতে উদ্যত, হে দামোদর! তোমার প্রসাদে আমার পাপ বিনাশ যাক। ৭. অর্ঘ্যমন্ত্র-আমি কার্তিক মাসে বিধিবৎ স্নানকারী, হে দামোদর! হে দনুজেন্দ্রনিসূদন আমার প্রদত্ত অর্ঘ্য গ্রহণ কর। ৮. নিজদেহকে তিলকদ্বারা লেপন করে শ্রীকৃষ্ণ নারায়াণাদি নাম উচ্চারণ পূর্বক স্নান করে নিজ বিধিমতে সন্ধ্যা উপাসনা করে গৃহে আগমন করবে। ৯. দেবমন্দির অগ্রে মার্জনা করে স্বস্তিকমণ্ডল রচনা করে প্রভুকে তুলসী, মালতী, পদ্ম, অগস্ত (বক) পষ্পাদি দ্বারা অর্চনা করবে। ১০. নিত্য বৈষ্ণব সঙ্গে ভগবৎ কথা সেবন, অহোরাত্র ঘৃত, দীপ বা তিল দ্বারা অর্চন করবে। ১১. কার্তিক মাসে বিশেষ বিশেষ নৈবেদ্য অর্পন করবে, সেই রকম অষ্টোত্তর শত প্রণাম, যথাশক্তি একবার আহারাদি ব্রত আচরণ করবেন। পদ্মপুরাণে কার্তিক মাস প্রসঙ্গে- ১২. প্রাতঃকালে উত্থান শৌচাদি করে পবিত্র জলাশয়ে গিয়ে বিধিবৎ স্নান, অতপর দামোদর অর্চন কর্তব্য। ১৩. কার্তিক ব্রতধারী মৌন অবলম্বনে ভোজন, ঘৃত দ্বারা বা তিল তৈল দ্বারা দীপাদান কর্তব্য। ১৪. বৈষ্ণববৃন্দসহ কৃষ্ণকথা আলাপ দ্বারা দিন যাপন, কার্তিক মাসে ব্রত সংকল্প পালন। ১৫. আশ্বিনে শুক্লপক্ষের হরিবাসরে আরম্ভ, অথবা পৌর্ণমাসি হতে অথবা তুলারাশি আগমে সংক্রান্তিতে আরম্ভ। ১৬. শ্রীবিষ্ণুর নিকট অখণ্ড দীপদান, দেবালয়ে, তুলসীতে, আকাশে উত্তম দীপ দান করবেন। ১৭. হে ভাবিনি! কার্তিকমাসে কার্তিকব্রত গৃহে করবে না, বিশেষতঃ তীর্থে কার্তিকব্রত সর্বপ্রযত্নে করবে। শ্রীরাধাদামোদর-পূজাবিধি- ১. শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তমা, পোপিকাগণ মধ্যে শ্রেষ্ঠা, কার্তিকে শ্রীদামোদর নিকটে শ্রীরাধিকার পূজা করা উচিত। ২. ব্রজবাসী ব্রাহ্মণ এবং তৎপত্নীকে বস্ত্র, অলঙ্কার ও ভোজনাদি দান দ্বারা পূজা করা কর্তব্য। ৩. হে বিপ্রগণ! কার্তিকে শ্রীরাধিকার সন্তোষের জন্য যিনি শ্রীরাধিকা প্রতিমাকে পূজা করে তার প্রতি শ্রীমান্ দামোদর হরি তুষ্ট হন। ৪. কার্তিকে প্রতিদিন ‘দামোদরাষ্টকম্’ নামক স্তোত্র (সত্যব্রত মুনি কথিত) পাঠ করবে, তা দামোদরের অর্চন স্বরূপ ও শ্রীদামোদরের আকর্ষণকারী। দীপদান’ এবং ‘আকাশ দীপ’ এর মহিমা! স্কন্দপুরাণে পূর্বকালে দ্রাবিড়দেশে বুদ্ধ নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিল খুবই দুষ্টা প্রকৃতির এবং দুরাচার সম্পন্না। ঐ স্ত্রীর সংসর্গে থাকার ফলে ব্রাহ্মণের আয়ু ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হলেন। পতির মৃত্যুর পরেও ঐ স্ত্রীলোকটি আরও বিশেষভাবে ব্যভিচারে লিপ্ত হলো। এমনকি লোকনিন্দার ভয় না করে সে নির্লজ্জের মতো ব্যবহার করতে লাগল। তার কোনো পুত্র বা ভাই ছিল না। সে সর্বদাই ভিক্ষার অন্ন ভোজন করত। নিজের হাতে প্রস্তুত না করে সর্বদাই ভিক্ষার অন্ন ভোজন করত। নিজের হাতে প্রস্তুত না করে সর্বদাই পরের বাড়ি থেকে ভিক্ষা করে বাসি অন্ন খেত এবং অনেক সময় অপরের বাড়িতে রান্না করতে যেত। তীর্থযাত্রা আদি থেকে সর্বদাই দুরে থাকত। সে কখনও কোনো ভালো কথায় কর্ণপাত করত না। একদিন এক বিদ্ধান তীর্থযাত্রী ব্রাহ্মণ তার গৃহে আগমন করল। যার নাম ছিল কুৎস। তাকে (ঐ স্ত্রীকে) ব্যভিচারে আসক্ত দেখে সেই ব্রহ্মর্ষি কুৎস বললেন- ওরে মুর্খ নারী! মনোযোগে সহকারে আমার কথা শ্রবণ কর। পৃথ্বি আদি পঞ্চভূত দ্বারা তৈরী এই রক্তমাংসের শরীর, যা কেবল দুঃখেরই কারণ, তুই তাকে যত্ন করছিস? এই দেহ জলের বুদবুদের মতো, একদিন যা অবশ্যই বিনষ্ট হবে। এই অনিত্য শরীরকে যদি তুই নিজ বলে মানিস্ তাহলে নিজের বিচার পূর্বক এই মোহ পরিত্যাগ কর। ভগবান বিষ্ণুকে স্মরণ কর এবং তাঁর লীলাকাহিনী শ্রবণ কর। এখন কার্তিক মাস আগত হবে, তখন ভগবান দামোদরের প্রীতি বিধানের জন্য, স্নান, দান আদি কর্ম করে গৃহে বা মন্দিরে বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে দীপ নিবেদন করে শ্রীবিষ্ণুকে পরিক্রমা করবে

একাদশীতে শ্রাদ্ধ নিষেধ কেন?

20240927 172745 Svadharmam

একাদশীতে শ্রাদ্ধ নিষেধ কেন? এ বিষয়ে পদ্মপুরাণে স্বয়ং মহাদেব পার্বতীকে বলেছেন- একাদশ্যপবাসস্ত কর্তব্যো নাত্র সংশয়ঃ। একাদশ্যাঞ্চ প্রাপ্তায়াং মাতাপিত্রোমৃতেহহনি।। ১৩।। দ্বাদশ্যান্ত প্রদাতব্যং নোপবাসদিনে ক্বচিৎ। গর্হিতান্নং নবাশ্বন্তি পিতরশ্চ দিবৌকসঃ।।১৪।। [ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ২৩৪। ১৩-১৪ ] বঙ্গানুবাদ: একাদশীতে উপবাস অবশ্য কর্তব্য, এ বিষয়ে সংশয় নেই একাদশীর দিনে পিতা-মাতার মৃততিথি উপস্থিত হলে দ্বাদশীতে তাদের শ্রাদ্ধ করবে, কদাচিৎ উপবাসদিনে করবে না। কেননা, একাদশীতে অন্ন গ্রহণ নিন্দনীয়, দেব ও পিতৃগণ নিন্দাতান্ন ভোজন করেন না। এজন্যই একাদশীতে শ্রাদ্ধ নিষিদ্ধ। ।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

ফলের আশা ত্যাগ করতে বলা হয়েছে, তাহলে বিভিন্ন ব্রতে কেন ফলের উল্লেখ থাকে?

আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি যে, পরমেশ্বর ভগবানের প্রতি শুদ্ধ ভক্তি অনুশীলনের ফলে আপনা থেকেই শুদ্ধ জ্ঞানের উদয় হয় এবং জড় বিষয়ের প্রতি আসক্তি রহিত হয়। কিন্তু বহু লোক আছে, যারা মনে করে যে সমস্ত কার্যকলাপেরই একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে জড়-জাগতিক বিষয় লাভ; এমন কি ধর্ম অনুশীলনের উদ্দেশ্যও তাই। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই জনসাধারণ জাগতিক লাভের আশাতেই কেবল ধর্ম অনুষ্ঠান করে। এমন কি বৈদিক শাস্ত্রেও, সব রকমের ধর্ম আচরণের সঙ্গে জড়-জাগতিক লাভের প্রলোভনও জুড়ে দেওয়া হয়েছে, এবং অধিকাংশ মানুষই ধর্ম আচরণের মাধ্যমে এই সমস্ত লাভের প্রতি অথবা প্রলোভনগুলির প্রতি আসক্ত। তথাকথিত ধর্মপরায়ণ মানুষদের কেন এই ধরনের জড় বিষয় লাভের প্রলোভন দেখানো হয়েছে? কেন না, জড় বিষয় লাভের ফলে তাদের ইন্দ্রিয়-সুখ উপভোগের বাসনা পূর্ণ হয়। এই ধরনের তথাকথিত ধর্ম অনুশীলনের ফলে বিষয় লাভ হয়, এবং বিষয় লাভের ফলে জড় কামনা-বাসনা চরিতার্থ করা যায়। ইন্দ্রিয়-সুখভোগই হচ্ছে সকাম কর্মীদের সমস্ত কর্মের উদ্দেশ্য। কিন্তু শ্রীল সূত গোস্বামীর মতে, শ্রীমদ্ভাগবতের সিদ্ধান্ত অনুসারে এই শ্লোকে তা বাতিল করা হয়েছে।   কেবল জড় বিষয় লাভের উদ্দেশ্যে কখনই কোন রকম ধর্ম-আচরণ করা উচিত নয়। কিন্তু যারা জড়সুখের প্রতি অন্ধ, তাদের ধর্মের পথে স্থির রাখার জন্য এই প্রলোভন দেখানো হয়েছে। কেননা ধর্মের পথে স্থির থাকলে একসময় তাদের মঙ্গল হবে, ফলের আশা দূর হবে। কিন্তু যাদের ইতোমধ্যেই ফলের আশা দূর হয়েছে, এইসব প্রলোভন তাদের জন্য নয়। তারা শুদ্ধভক্তিতে শ্রীকৃষ্ণের সন্তুষ্টির জন্য ব্রতসমূহ পালন করেন।   শ্রীমদ্ভাগবতের ১.২.১১ শ্লোকের ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য হতে সংকলিত। © স্বধর্মম্

ধর্মীয় বিধি-নিষেধ কেন মানতে হবে?

Svadharmam Q&A

ধর্মীয় বিধি-নিষেধ কেন মানতে হবে? কখনও কখনও দাবি করা হয় যে, বড় বড় দার্শনিকদের নির্বিশেষ জল্পনা-কল্পনাগুলি হচ্ছে, ধর্মীয় বিধি-নিষেধের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত উন্নত জ্ঞান লাভের পন্থা। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে ধর্মীয় বিধি-নিষেধগুলি উন্নত পারমার্থিক জ্ঞান লাভের জন্যই। ধর্মীয় বিধি- নিষেধগুলি অনুশীলন করার ফলে, সর্ব কারণের পরম কারণ পরমেশ্বর ভগবান বাসুদেবকে জানার চরম স্তরে উন্নীত হওয়া যায়। ভগবদ্গীতায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ধর্মনীতির বাধ্যবাধকতা রহিত জ্ঞানীরা বহু জন্ম-জন্মান্তরে মনোধর্মপ্রসূত জ্ঞানের চর্চা করতে করতে অবশেষে বাসুদেবকে সর্ব কারণের পরম কারণরূপে জানতে পারেন। জীবনের এই পরম উদ্দেশ্যে উপনীত হওয়ার ফলে উন্নত তত্ত্বজ্ঞান-সম্পন্ন জ্ঞানী বা দার্শনিক পরমেশ্বর ভগবানের শরণাগত হন। ধর্মীয় বিধি-বিধানগুলি অনুশীলনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে জড় জগতের কলুষিত প্রভাব থেকে মনকে নির্মল করা এবং এই কলিযুগের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ভগবানের নাম সমন্বিত হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র— হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥ কীর্তন করার ফলে, অনায়াসে মনকে সমস্ত কলুষ থেকে মুক্ত করা যায়। ~ কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ( শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, আদি ৬।১৫) . [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

সনাতন ধর্মে হস্তমৈথুন কি বৈধ?

20240927 001734 Svadharmam

শাস্ত্রে বিবাহ ব্যতীত, যেকোনো উপায়ে মৈথুন কেই অবৈধ বলেছে। মৈথুন এর মুখ্য উদ্দেশ্য প্রজা অর্থাৎ বংশ বৃদ্ধি। এবং সেটা শাস্ত্র বিধি মোতাবেক স্ত্রী গ্রহন করে তার সাথেই বৈধ সম্পর্ক করার নির্দেশ রয়েছে। এখন আসি হস্তমৈথুনের বিষয়ে। শাস্ত্র অনুসারে ইচ্ছে বশত রেতঃপাত (বীর্যপাত) করে তা নষ্ট করতে নিষেধ করেছে। কৃত্রিম উপায়ে যৌন সঙ্গম,যৌন কথা অলোচনা, যৌন চিন্তা  ইত্যাদিকেও শাস্ত্রে অবৈধ বলা হয়েছে। এইভাবে যৌন জীবন যাপন করার ফলে মানুষ মায়াবদ্ধ হয়। ইচ্ছাকৃত বীর্যস্খলন প্রক্রিয়া  এবং হস্তমৈথুন কাউকে প্রকৃত আনন্দ দান করেনা অথবা এর কোনো ভালো ফলও নাই। সুশ্রূত সংহিতাতে বলা হয়েছে – রসাদ রক্তং ততো মাংসং মাংসন্মেদঃ প্রজায়তে। মেদস্ অস্তি ততোমজ্জা মজ্জা শুক্রাস্য সম্ভবঃ।। [ সুশ্রূত সংহিতা ১৪।১০ ] বঙ্গানুবাদ: খাবার থেকে রস,রস থেকে রক্ত, রক্ত থেকে মাংস, মাংস  থেকে মেদ,মেদ থেকে অস্তি,অস্তি থেকে মজ্জা, এবং মজ্জা শুক্রে পরিণত হয়। এখানে বুঝতেই পারি বীর্য দেহের কত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী ৪০-৬০ ফোঁটা ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী ৮০ ফোঁটা রক্ত থেকে এক ফোঁটা বীর্য তৈরি হয়। বীর্য ধারন করলে, দৃঢ়নিষ্ঠ,আশাবাদ,আত্মবিশ্বাস, ইচ্ছে শক্তি, স্থৈর্য, তীক্ষ্ণ স্মৃতি শক্তি, সুস্বাস্থ্যে এইসব বৃদ্ধিপায়। মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে- এক শয়তী সর্বত্র ন রেতঃ স্কন্দয়েৎ ক্বচিৎ। কামাদ্ধি স্কন্দয়ন রেতো হিনস্তি ব্রতমাত্মনঃ।। [ মনুস্মৃতি ২।১৮০ ] বঙ্গানুবাদ: অবিবাহিত পুরুষ(শিক্ষার্থী)একাকী শয়ন করবে, ইচ্ছাপূর্বক কখনো রেতঃপাত(বীর্য পাত) করবে না, কারন স্বেচ্ছায় শুক্রস্খলন করলে নিজের ব্রহ্মচর্য ব্রত নষ্ট হয়ে যায়। বিষ্ণু পুরাণে বলা হয়েছে – পরদারান্ন গচ্ছেচ্চ মনসাপি কথঞ্চন । কিমু বাচাঙ্গিবন্ধোঽপি নাস্তি তেষু ব্যবায়িনাম্ ৷৷ [ বিষ্ণুপুরাণ ৩।১১।১২৫ ] বঙ্গানুবাদ: পরস্ত্রীর সঙ্গে তো বাক্যেই নয়, মনে মনেও (অবৈধ যৌন) সঙ্গের অভিলাষ করবে না, কারণ তাতে মৈথুনকারীর অস্থিবন্ধনও হয় না (অর্থাৎ তাকে পরের জন্মে অস্থি-শূন্য কীট জন্ম নিতে হয়)। যেহেতু হস্তমৈথুন কাউকে মনে মনে চিন্তা করে করা হয়, তাই হস্তমৈথুন করলে পরের জন্মে অস্তিশূন্য তথা কৃমি-কীট হয়ে জন্ম গ্রহণ করতে হবে, এই বিষয়ে সন্দেহ নেই। এছাড়াও বিষ্ণুপুরাণে আরো বলা হয়েছে- [ বিষ্ণুপুরান ২।৬।২৫ ] যে সকল অবিবাহিত পুরুষ স্বেচ্ছায় নিদ্রাকালে বীর্য্যপাত করেন, তাহারা শ্বভোজন নরকে পতিত হয়ে কুকুরের বিষ্ঠা আহার করতে হয়। এই সম্পর্কে মনুস্মৃতিতে আরো বলা হয়েছে- স্বপ্নে সিক্ত্বা ব্রহ্মচারী দ্বিজঃ শুক্রমকামতঃ। স্নাত্বার্কমর্চয়িত্বা ত্রিঃ পুনর্মামিত্যৃচং জপেৎ।। [ মনুস্মৃতি ২।১৮১ ] বঙ্গানুবাদ: ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, ব্রহ্মচারী অনিচ্ছায়বশত স্বপ্নাবস্থায় রেতঃস্খলন করে, তাহলে সে স্নান করে গন্ধ পুস্পাদির দ্বারা সূর্য দেবকে অর্চন করে, ‘পুর্নমার্মৈতু ইন্দ্রিয়ম’ অর্থাৎ, আমার বীর্য পুনরায় আমাতে ফিরে আসুক’ এই মন্ত্র তিনার জপ করবে। সবচেয়ে বড় প্রায়শ্চিত্ত হলো, নিজের অনুশোচনা ও সেইকাজটি আর না করার সংকল্প রাখা। যেহেতু হস্তমৈথুন একটি স্বেচ্ছাকৃত বীর্যস্খলন পদ্ধতি বা কাজ, সেহেতু একেবারে প্রাথমিক পর্যায়েই এটি বন্ধ করা উচিৎ। ঐকান্তিক হওয়া এবং নিজের চিন্তা, অনুভব, ও ইচ্ছে কে সংযত করা। শ্রীল সৎস্বরূপ দাস গোস্বামী মহারাজ, ভক্তি পথে বিঘ্নসমূহ গ্রন্থে লিখেছেন -“আধ্যাত্মিক জীবন অত্যন্ত পবিত্র, কিন্তু যে হস্তমৈথুন করে তার অপরাধ প্রবনতা, হিংসা,লোভ ইত্যাদি দোষ বৃদ্ধিপায়। উপরের আলোচনা ও শাস্ত্রীয়  বিধান মেনে আমাদের ইন্দ্রিয়কে সংযম করতে বদ্ধ পরিকর হতে হবে। বীর্যই পুরুষের শক্তি। ।। হরে কৃষ্ণ ।। সংকলনে: সখা সুদামা দাস [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

আমি কোনো কোনো বিশেষ দিনে নিরামিষ খাই। শাস্ত্রে এই বিষয়ে কি বলা হয়েছে?

হরে কৃষ্ণ প্রিয় গ্রুপ-মেম্বার আপনাকে কৃষ্ণপ্রীতি ও শুভেচ্ছা। আপনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান কারণ আপনার মধ্যে এই বিষয়ে জানার ইচ্ছা জাগ্রত হয়েছে, কারণ শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে, সুমেধস বা প্রকৃত বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের‌ই শাস্ত্রের নিগূঢ় তাৎপর্য উপলব্ধি করার ইচ্ছা জাগ্রত হয়।   মূলত আমাদের শাস্ত্রে বারংবার আমিষাহার (অর্থাৎ প্রাণীহত্যার) নিন্দা করা হয়েছে। মানুষকে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে, তাঁরা যেন আমিষাহার না করে, এমনকি যদি সারা বছর পরিত্যাগ সম্ভব নাও হয়, তবুও, একাদশী প্রভৃতি পুণ্যতিথিতে, বৈশাখ, দামোদর (কার্তিক), মাঘ প্রভৃতি মাসে এবং বিভিন্ন দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত বারে, এমনকি কোনো গুরু বৈষ্ণবের জন্মদিবসে, জন্মতিথিতে, জন্মবারে প্রাণিহত্যা পরিত্যাগ করতে বলা হয়েছে।   প্রিয় সদস্য, লক্ষ্য করে দেখবেন আমাদের কোনো ধর্মীয় কাজে আমিষাহার করা চলে না। করণ এই সময়টাতে আমাদের মন সত্ত্বগুণে যুক্ত রাখা দরকার হয়। কিন্তু অন্য প্রাণীর রুধিররঞ্জিত আহার আমাদের তমোগুণে পরিচালিত করে, যা সত্ত্বগুণের নিকৃষ্টতম বিপরীত প্রতিফলন।   তাই, বিভিন্ন ধর্মীয় তিথি, বারে আমিষাহার ত্যাগ করা হয় এবং কোনো কোনো গুরুর অনুসারীরা কেউ স্বেচ্ছায় কেউ বাধ্য হয়ে এ দিনগুলোয় আমিষাহার ত্যাগ করে, তবে এর উদ্দেশ্য সেই গুরুকে সম্মান প্রদর্শন।   কিন্তু পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন, যজ্ঞাশিষ্টাশিনোসন্তঃ মুচ্যন্তে সর্বকিল্বিষৈঃ। কেউ যখন যজ্ঞে বিষ্ণুর আরাধনা করে সেখানে নিবেদিত খাদ্য গ্রহণ করে, তবে সে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়। বেদপ্রমাণে যজ্ঞো বৈ বিষ্ণু, যজ্ঞ মানেই বিষ্ণু। এটিই আমাদের কর্তব্য হ‌ওয়া উচিত, ভগবান আদিবিষ্ণু শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে সাত্ত্বিক আহার্য উৎসর্গ করে তা মহাপ্রসাদ রূপে গ্রহণ করা উচিত।   হরেকৃষ্ণ, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।