শ্রীমতি রাধারানীর নাম শাস্ত্রে কোথায় উল্লেখ রয়েছে?

Svadharmam Q&A

যে সকল শাস্ত্রে শ্রীমতি রাধা রানীর নানান লীলা প্রত্যক্ষভাবে উল্লেখ আছে- ১)পুরুষবোধিনী ঊপনিষদ ২)গর্গসংহিতা( গোলকখন্ড ১৬ অধ্যায়, দ্বারকাখন্ড ১৮ অধ্যায় প্রভৃতি) ৩)সনদকুমার সংহিতা (৩০২-৩০৩, ৭২, ৭৪) ৪)নারদপঞ্চরাত্রম(২য়,৩য় ও ৫ম অধ্যায় জুড়ে) ৫)বৃহত-গৌতম তন্ত্র ৬)ঊর্ধ্বামনায় তন্ত্র ৭)পদ্মপুরাণ (ভূমিখন্ডের ৭ম ও ২০তম অধ্যায়, পাতালখন্ডের বহু অধ্যায় যেমন-৩৯-৪৫,৭১ অধ্যায় জুড়ে, ব্রহ্মখন্ডের বিস্তৃত অংশজুড়ে যেমন -৭-৯ম অধ্যায়, স্বর্গখন্ডম ৪৬ অধ্যায় প্রভৃতি ) ৮)দেবীভাগবতম (সমস্ত ৯ম স্কন্ধ জুড়ে), ৯) ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ( প্রকৃতিখন্ড ও শ্রীকৃষ্ণজন্মখন্ড জুড়ে) ১০)ব্রহ্মান্ডপুরাণ( সমগ্র উত্তরখন্ড জুড়ে, উপদগত পর্ব ৪২,৪৩ অধ্যায়) ১১)নারদপুরাণ ( ৩য় খন্ড ৮৯ অধ্যায় সহ অনেক স্থানে) ১২)শিবপুরাণ(রুদ্রসংহিতার ৩০,৩১ অধ্যায়) ১৩)মৎস্য পুরাণ(১৩ অধ্যায়) ১৪)স্কন্দ পুরাণ(বিষ্ণুখন্ডের শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্মের ১/২২ ও ২/১১-১৩,১৯, বাসুদেব মাহাত্ম্যের ১৬,১৭ প্রভৃতি অধ্যায়, প্রভাসখন্ডের দ্বারকামাহাত্ম্যম ১২ অধ্যায় প্রভৃতি) ১৫)শংকরাচার্যের জগন্নাথ-অষ্টকম(৬ নং শ্লোক) ১৬)শংকরাচার্যের যমুনা-অষ্টকম ১৭)রাধাতন্ত্র ১৮)রাধাপোনিষদ ১৯) মায়াতন্ত্র ২য় পটল ২০) নীলতন্ত্র (২২/৯-১১) ২১)মুক্তমালা তন্ত্র ২২) গোপালতাপনী ঊপনিষদ( আদি ও উত্তরে গান্ধর্বীদেবী হলেন শ্রীরাধিকা) ২৩) চৈতন্যচরিতামৃত( সমস্ত জুড়ে বিবিধ স্থানে) ২৪) চৈতন্য ভাগবত ২৫) বায়ুপুরাণ ১০৪/৫২ ২৬) বরাহপুরাণ (১৬৪/৩৩,৩৪) ২৭) সৌভাগ্য লক্ষ্মী তন্ত্র ( ১৩ অধ্যায়) ২৮) শংকরাচার্যের অচ্যুত অষ্টকম( ৪ নং শ্লোক) ২৯) নির্বাণতন্ত্র (৫ম অধ্যায়) ৩০) শংকরাচার্যের নারায়ন গীতি-স্ত্রোত (১০ নং শ্লোক) প্রভৃতি….. ★যে সকল শাস্ত্রে পরোক্ষভাবে শ্রীরাধিকার উল্লেখ আছে- ১) মহাভারত( বিশেষ এক গোপীকার উল্লেখ যিনি শ্রীকৃষ্ণ এর প্রাণস্বরূপা) ২) গীতা ( ৭ম ও ৯ম অধ্যায়, গীতায় বর্ণিত উতকৃষ্ট প্রকৃতিই শ্রীরাধিকা- পদ্মপুরাণ, দেবীভাগবতম, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ,নারদপঞ্চরাত্রমে উল্লেখিত) ৩) শ্রীমদ্ভাগবতম(১০ম স্কন্ধের ৩০ ও ৪৭ অধ্যায় সহ সমস্ত ভাগবতমের অসংখ্য স্থানে) ৪) ব্রহ্মসংহিতা(৫ম অধ্যায়) ৫)বিষ্ণুপুরাণ (৫/১৩/৩২-৩৮) ৬)গোপালতাপনী উপনিষদ ৭)হরিবংশ( বিশেষ এক গোপীকার উল্লেখ) প্রভৃতি…. হরে কৃষ্ণ [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত। ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

শ্রাদ্ধে বিষ্ণুপ্রসাদই নিবেদন কর্তব্য, আমিষ নয়‼️‼️ শ্রাদ্ধে জীবহিংসায় নরকবাস‼️

Svadharmam Q&A

শ্রাদ্ধে বিষ্ণুপ্রসাদই নিবেদন কর্তব্য, আমিষ নয়‼️‼️ শ্রাদ্ধে জীবহিংসায় নরকবাস‼️ যো ন দদ্যাদ্ধরের্ভুক্তং পিতৃণাং শ্রাদ্ধকৰ্ম্মণি । অশ্নন্মুন্তি পিতরস্ত্স্য বিত্ৰং সততং দ্বিজাঃ ॥ [পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ২৫৫।৯৭] অনুবাদঃ “হে দ্বিজগণ ! যে ব্যক্তি পিতৃগণের শ্রাদ্ধকৰ্ম্মে হরির ভুক্ত বস্তু (বিষ্ণুপ্রসাদ) দান না করে, তাহার পিতৃ-গণ সতত বিষ্ঠা-মূত্র ভক্ষণ করিয়া থাকেন।” ন দতাতীহ যে বিপ্ৰঃ পিতৃণাং শ্রাদ্ধকৰ্ম্মণি । অদ্ভুক্তমম্লং তীর্থ তৎসবং নিষ্ফলং ভবেৎ। কল্পকোটিসহস্রাণি কল্পকোটিশভানি চ । পতস্তি পিতরস্তষশ্য নরকে পুয়শোণিতে ॥ নিবেদিতং তব বিভো যো জুহৌতি দদদ্গতি বা দেবতানাং পিতৃণাঞ্চ তৃপ্তিরানস্ত্যমতে ॥ [ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ২৫৫।৬৬-৬৮ ] অনুবাদ: “যে বিপ্র শ্রাদ্ধকৰ্ম্মে তোমার ভুক্তান্ন (বিষ্ণুপ্রসাদ) বা তীর্থভুত জল প্রদান না করে, তাহার কৃত সেই সৰ্ব্ব কৰ্ম্মই নিষ্ফল হইয়া থাকে। কল্পকোটিসহস্র— কল্পকোটিশত কাল তাহার পিতৃগণ পুঁজ শোণিত নরকে নিমগ্ন হয় ৷ হে বিভো! অগ্রে তোমাকে(বিষ্ণুকে) নিবেদন করিয়া পরে যে ব্যক্তি তাহা হোম বা দান করে, দেব ও পিতৃগণের তাহাতে অনন্ত তৃপ্তি হইয়া থাকে।।” ত্বৎপাদসলিলং সেব্যং পিতৃণাঞ্চ দিবৌকসাম। সর্ব্বেষাং ভূসুরাণাঞ্চ মুক্তিদং কল্মষাপহম্ ॥ ত্বদভুক্তোঽচ্ছিষ্টশেষং বৈ পিতৃণাঞ্চ দিবৌকসাম্। ভুসুরাণাঞ্চ সেব্যং স্যাম্নান্যেষান্ত কদাচন ॥ [পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ২৫৫।৬১-৬২ ] অনুবাদ: “তোমার পাদোদক (ভগবান বিষ্ণুর চরণামৃত)-ই পিতৃগণ, দেবগণ ও সমস্ত ব্রাহ্মণের সেব্য, মুক্তিপ্রদ এবং পাপাপহ। তোমার ভুক্তোচ্ছিষ্ট শেষ (বিষ্ণুপ্রসাদ)-ই পিতৃগণ, দেবগণ ও সমস্ত ব্রাহ্মণের সেব্য, অন্যের উচ্ছিষ্ট কদাচ সেব্য নহে।” বিষ্ণোর্নিবেদিতং নিত্যংদেবেভ্যো জুহুয়াদ্ধবিঃ পিতৃভ্যশ্চৈব তদ্দদ্যাৎসর্ব্বমানন্ত্যমশ্নুতে ॥ [পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ২৫৫।৯৬ ] অনুবাদ: “বিষ্ণুকে অগ্রে হবি নিবেদন করিয়া পরে তাহাই (বিষ্ণুপ্রসাদ দ্বারাই) নিত্য দেবগণকে হোম করিবে । পিতৃগণকেও উহা দান করিবে। এইরূপ করিলে উক্ত সৰ্ব্বকৰ্ম্ম অনস্ত ফলপ্রদ হইয়া থাকে।” শ্রী শিব উবাচঃ হরের্ভুক্তাবশেষেণ বলিস্তেভ্যো বিনিক্ষিপেৎ। হোমঞ্চৈব প্ৰকুব্বীত তচ্ছেষেণৈব বৈষ্ণবঃ । হরের্নিবেদিতং সম্যগদেবেভ্যো জুহুয়াদ্ধবিঃ॥ পিতৃভ্যশ্চাপি তদ্দদ্যাৎ সর্ব্বমান্নত্যমাপ্নুয়াৎ। প্রাণিনাং পীড়নং যত্তদ্বিদুষাং নিরয়ায় বৈ ॥ অদত্তঞ্চৈব যৎকিঞ্চিৎ পরস্বং গৃহ্যতে নরৈঃ । স্তেয়ং তদ্বিদ্ধি গিরিজে নরকসৈব কারণম্ ॥ [ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ২৫৩। ১০৭-১০৯ ] অনুবাদ: ভগবান শিব বললেন, “হরির ভুক্তাবশেষ (কৃষ্ণপ্রসাদ) দ্বারা দেবতাদের বলিপ্রদান(উপহার প্রদান) করবে, ভুক্তাবশিষ্ট(কৃষ্ণপ্রসাদ) হবি দ্বারা দেবতাদের হোম করবে । হরিকে সম্যক্‌রূপে নিবেদন করে পরে দেবগণকে হবি হোম করবে। পিতৃগণকেও তা-ই প্রদান করবে। এইরূপে কৃতকাৰ্য্য সমস্তই অনন্ত ফলপ্রদ হয়ে থাকে। প্রাণিগণের পীড়নকে বিজ্ঞগণ নরকভোগের কারণ হিসেবে ব্যাখা করে থাকেন। মনুষ্য নিজের জীবনে অন্যজীব কর্তৃক যে নিষ্ঠুর ব্যবহার আশা করে না, সে নিষ্ঠুর আচরণ যদি সে অন্য জীবের উপর করে,তবে হে গিরিজে! সে মনুষ্য অবশ্যই নরকভোগী হবে।” ন দদ্যাদামিষং শ্রাদ্ধে ন চাদ্যাদ ধর্মতত্ত্ববিৎ । মুন্যন্নৈঃ স্যাৎ পরা প্রীতির্যথা ন পশুহিংসয়া ॥ নৈতাদৃশঃ পরো ধর্মো নৃণাং সদ্ধর্মমিচ্ছতাম্ । ন্যাসো দণ্ডস্য ভূতেষু মনোবাক্কায়জস্য যঃ ॥ [ শ্রীমদ্ভাগবতম ৭/১৫/৭-৮ ] বঙ্গানুবাদ: ধর্মতত্ত্বজ্ঞ ব্যক্তি শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে কখনও মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি আমিষ নিবেদন করবেন না, এবং তিনি যদি ক্ষত্রিয়ও হন, তা হলেও স্বয়ং আমিষ আহার করবেন না। যখন ঘি দিয়ে তৈরি উপযুক্ত খাদ্য সাধুদের নিবেদন করা হয়, তখন পিতৃপুরুষ এবং ভগবান অত্যন্ত প্রসন্ন হন। যজ্ঞের নামে পশুহিংসা করা হলে তাঁরা কখনও প্রসন্ন হন না। যাঁরা শ্রেষ্ঠ ধর্মের মাধ্যমে উন্নতি সাধন করতে চান, তাঁদের অন্য সমস্ত জীবদের প্রতি কায়, মন, এবং বাক্যের দ্বারা হিংসা না করতে উপদেশ দেওয়া হয়েছে। তার থেকে শ্রেষ্ঠ ধর্ম আর নেই। অন্যতম প্রধান স্মৃতিশাস্ত্র ‘কাত্যায়ন স্মৃতিতে’ নিরামিষ দিয়ে অর্থাৎ বিনা আমিষে পিতৃ শ্রাদ্ধ করার নির্দেশ আছে! মহাভারতের অনুশাসন ও আশ্বমেধিক পর্বেও উল্লেখ আছে, পিতৃপুরুষগণ অন্ন দ্বারাই সন্তুষ্ট হন। পদ্মপুরাণের পাতালখন্ডের ৭২ নং অধ্যায়ে উল্লেখ আছে, রামচন্দ্র কর্তৃক মাতা কৌশল্যার শ্রাদ্ধে নিরামিষ দ্রব্যই নিবেদন করা হয়েছিলো, আমিষ নয়। শ্রাদ্ধে জীবহিংসা যেহেতু নরকবাসের কারণ, তাই কলিকালে পিতৃশ্রাদ্ধে মাংস নিবেদন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে শাস্ত্রসমূহ- দেবরেণ সুতোৎপত্তির্মধুপর্কে পশোর্বধঃ। মাংসদানং তথা শ্রাদ্ধে বানপ্রস্থাশ্রমস্তথা।। ১৪ দত্তাক্ষতায়াঃ কণ্যায়াঃ পুনর্দানং পরস্য চ। দীর্ঘকালং ব্রহ্মচর্য্যং নরমেধাশ্বমেধকৌ।। ১৫ মহাপ্রস্থানগমনং গোমেধঞ্চ তথা যথম। ইমান ধর্ম্মান কলিযুগে বর্জ্জ্যানাহুর্মনীষিণঃ।। ১৬ [ বৃহন্নারদীয় পুরাণ, অধ্যায় ২২, শ্লোক ১৪-১৬ ] বঙ্গানুবাদ: কলিযুগে দেবরের দ্বারা পুত্রোৎপাদন, মধুপর্কের জন্য_পশুবধ, শ্রাদ্ধে মাংসদান, বানপ্রস্থাশ্রম, দত্তা অক্ষতযোনী বিধবা কণ্যার পুনরায় অন্যকে প্রদান, দীর্ঘকাল ব্রহ্মচর্য্য, নরমেধ, অশ্বমেধ, গোমেধ ও মহাপ্রস্থান- এই সকল ধর্ম্মকে বর্জন করতে বলেছেন ঋষিগণ। অশ্বমেধৎ গবাংলম্ভং সন্ন্যাসং পলপৈতৃকং । দেবরেণ সুতোৎপত্তিং কলৌ পঞ্চ বিবৰ্জ্জয়ে ॥ ১০৯ [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কৃষ্ণজন্মখন্ড, ১১৫।১০৯ ] বঙ্গানুবাদ: কলিতে অশ্বমেধ, গোমেধ, কর্মসন্ন্যাস, পলপৈতৃক—অর্থাৎ পিতৃলোকের উদ্দেশে মাংসাষ্টকা শ্রাদ্ধ ও নিয়োগ এই পাচ নিষিদ্ধ।   [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত। ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রকটকালীন লীলা চক্র

20240824 175913 Svadharmam

গোকুল লীলা ১) জন্ম থেকে ৬ দিনে পুতনা বধ ২) ৩ মাসে শকটাসুরকে বধ ৩)  থেকে ১০০ দিনে নামকরণ অনুষ্ঠান ৪) ১ বছর সমাপ্তিতে তৃণাবর্তাসুর বধ ৫) ৩ বছর ২ মাসে দামোদর-লীলা এবং যমলার্জুন বৃক্ষের মুক্তি ৩ বছর ৩ মাসে বৃন্দাবনে আগমন বৃন্দাবন লীলা ৬) ৩ বছর ৪ মাসে গো-বাছুর পালন এবং বৎসাসুর বধ। ৭) ৪ বছর ৪ মাসে অঘাসুর বধ ও শ্রী ব্রহ্মা বিমোহন লীলা ৫ বছর ২ মাসে গাভী পালনের দায়িত্বভার অর্পন ৮) ৬ বছর ৯ মাসে কালিয় বধ এবং গোপীদের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ ৯) ৭ বছর ২ মাসে গোবর্ধন-লীলা ৮ বছরে বরুণের আবাস থেকে নন্দ মহারাজের উদ্ধার ৯ বছরে অম্বিকা-বন ভ্রমণ,শঙ্খচূড় বধ, হোলি-লীলা ১০) ১০-১১তম বছরে দানকেলী, গোপীদের সাথে লীলা, কেশী বধ ও অক্রুরের আগমন মথুরা লীলা ১১) ১১ বছর ১ মাসে মথুরায় গিয়ে কংসকে বধ ১১ বছর ৫ মাস উপনয়ন-সংস্কার ১২) ১১ বছর ৭ মাসে গুরুকুলে গিয়ে ৬৪ দিনে ৬৪ কলা রপ্ত (উজ্জয়িনী) ১৩) ১৪ বছর ২ মাসে কুজার সাথে সাক্ষাৎ ১৪) ১৫-৩২ বছরে মথুরায় জরাসন্ধ কর্তৃক ১৮বার আক্রমণ দ্বারকা লীলা ১৫) ৩২ বছরে দ্বারকা প্রতিষ্ঠা ও রুক্মিণীর সাথে বিবাহ ১৬) ৩৩ বছরে প্রদ্যুম্নের জন্ম ১৭) ৩৪-৪০ বছরে ভৌমাসুর (নরকাসুর) বধ ও তাঁর বন্দী রাণীদের বিবাহ ১৮) ৪৫ বছর কুরুক্ষেত্রে ব্রজবাসিদের সাথে সাক্ষাৎ ১৯) ৫১ বছর ১৮ বছর পর প্রদ্যুম্নের দ্বারকায় আগমন ২০) ৫২ বছর শ্রী বলদেবের ব্রজে আগমন ২১) ৫৩ বছর অনিরুদ্ধের জন্ম ২২) ৭২ বছরে রাজসূয় যজ্ঞ এবং শিশুপাল বধ ইন্দ্রপ্রন্থ হস্তিনাপুর লীলা ২৩) ৭৩ বছর কৌরব কর্তৃক দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণে কৃষ্ণ কর্তৃক বজ্রদান ২৪) ৮৬ বছর বনবাস থেকে কৃষ্ণসহ পাণ্ডবদের আগমন ২৫) ৮৭ বছর কৌরব ও পাণ্ডবদের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা ও শান্তির বার্তা নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ কৌরবসভায় গমন ২৬) ৮৯ বছর শান্তি আলোচনা ব্যর্থ এবং ‘মহাভারত’ যুদ্ধ সংঘটিত ২৭) ৯০-১২৪ বছর দ্বারকায় বাস ২৮) ১২৫ বছর শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধান লীলা তথ্যসূত্র: ©চৈতন্য সন্দেশ ©অমৃতের সন্ধানে

ক্ষৌরকর্ম কখন ও কী কী বারে করা উচিত!

20240824 165825 Svadharmam

ক্ষৌরকর্ম কী? চুল কাটা, দাঁড়ি কাটা, নখ কাটা ইত্যাদিকে বলা হয় ক্ষৌরকর্ম। কিন্তু কখন করতে হবে, কী কী বারে করতে হবে, কোন্ মুখী হয়ে করতে হবে তা অনেকেই জানে না। তাই আজকে আমরা প্রথমেই জানতে পারবো যে, কোন্ কোন্ বারে ক্ষৌরকর্ম করলে কী ফল হয়। খনা নামক একজন বিদুষী নারী বলেছেন- রবৌ দুঃখং সুখং চন্দ্রে মৃত্যু মঙ্গলে বুধে বলম্, মানহানি গুরোবারে শুক্রে শুক্রক্ষয়ো ভবেৎ, শনৌ চ সর্বদোষ্যঃ স্যুঃ ক্ষৌরমত্র বিবর্জয়েৎ। অনুবাদ: রবিবারে ক্ষৌরকর্ম করলে দুঃখ লাভ হয়, সোমবারে সুখলাভ, মঙ্গলবারে আয়ুক্ষয়, বুধবারে বলবৃদ্ধি,বৃহস্পতিবারে মানহানি, শুক্রবারে শুক্রহানি, শনিবারে সকল প্রকার দোষ থাকায় অশুভ ফল লাভ হয়। অতএব সোমবার এবং বুধবার হচ্ছে ক্ষৌরকর্মের জন্য সবচেয়ে ভাল দিন। তাছাড়া শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন যে, একাদশী, দ্বাদশী বা কোন উপবাসের দিনে ক্ষৌরকর্ম করা উচিত নয়। লোকাচারে বলা হয়, বৃহস্পতিবারে ক্ষৌরকর্ম করলে গুরুর আয়ুক্ষয় হয়। তাই এই বারে ক্ষৌরকর্ম করলে তাকে গুরুদ্রোহী বলা হয়। শুক্রবারে ক্ষৌরকর্ম করলে শুক্রহানি/বীর্যহানি ঘটে। দেখা যায় আধুনিক যুগের লোকেরা বেশির ভাগ সময় শুক্রবারেই ক্ষৌরকর্ম করে। যার ফলে বিভিন্ন প্রকার শুক্রহানি তাদের হয়। আমরা দেখছি সারা পৃথিবীতে কীভাবে বেশ্যাবৃত্তি বেড়ে গেছে। মানুষ কীভাবে বিবাহের পূর্বে অবৈধ কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। কীভাবে নারীরা চরিত্রহীনা হয়ে যাচ্ছে। একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, ৩৫ ভাগ বিবাহিত পুরুষ/মহিলার সন্তান হয় না। কেন সন্তান হয় না? সেটা গবেষণা করে দেখা গেলো, সন্তান না হওয়ার পিছনে ৯০ ভাগ দায়ী হচ্ছে পুরুষেরা। কারণ পুরুষেরা বিবাহের পূর্বে এত বেশি বীর্যক্ষয় করে যেটার ফলে তাদের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এর বড় একটা কারণ হচ্ছে শুক্রবারে ক্ষৌরকর্ম করা। যেহেতু বেশিরভাগ পুরুষেরা শুক্রবারে ক্ষৌরকর্ম করে তাই এসব ঘটে। আবার, শনিবারে ক্ষৌরকর্ম করলে শনিদেবের কুদৃষ্টি পড়ে বসে বলে কথার প্রচলন আছে। তাই উপরের আলোচনা থেকে আমরা দেখি যে, দুইটি দিন আমাদের ক্ষৌরকর্মের জন্য বেশি উপযুক্ত; সোমবার ও বুধবার। কোন মুখী হয়ে ক্ষৌরকর্ম করা উচিত? প্রাচীসুখঃ সৌম্যমুখোহপি ভুতা কুর্য্যাবঃ ক্ষৌরমনুৎ কটস্থ। অনুবাদ: উত্তর বা পূর্ব মুখী হয়ে বসে ক্ষৌরকর্ম করা উচিত। হাটু গেঁড়ে উবু হয়ে বসে ক্ষৌরকর্ম করা উচিত নয়। জন্ম-মাসে ক্ষৌরকর্ম করার ফল কী? যো জন্মমাসে ক্ষৌরকর্ম যাত্রাং। কর্ণবেধং কুরুবে চ মোহাৎ নুনং স রোগং ধনপুষ্প নাশং। প্রাপ্নোতি মূঢ়ো বধ বন্ধনানি ॥ অনুবাদ: জন্মমাসে যে জন ক্ষৌরকর্ম, কর্ণবেধ বা যাত্রা করে নিশ্চয় সেই মূঢ় ব্যক্তির ধনরত্ন ও পুত্রনাশ হয়ে থাকে। তার রোগ লেগেই থাকে। কৃষ্ণভক্তদের এইসব নিয়ম পালন করার প্রয়োজন আছে কী? ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, কখনো কখনো কোনো কিছু নির্ধারণ করা নিয়ে অনেক বিবেকবান ব্যাক্তিও বিভ্রান্ত হয়ে যায়। তাই আমার কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয় সেই সম্বন্ধে শাস্ত্রে কী বলা আছে। শাস্ত্রে যেগুলো নিষেধ করা আছে। সেগুলো মেনে চলা উচিত। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বৈষ্ণবদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই ক্ষৌরকর্ম শুভদিন ছাড়া অন্য দিনেও করতে হয়। যেমন- পুজারীদের ক্ষেত্রে বা অন্য কোনো বৈষ্ণবীয় অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বৈষ্ণবেরা সোমবার ও বুধবার ছাড়া ক্ষৌরকর্ম করে থাকে। শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন, যারা প্রচারক তাদের অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। যাহাতে তাহার পরিচ্ছন্ন আচরণ ও শুচিতার দ্বারা মানুষ আকৃষ্ট হয়। ভক্তদের লম্বা দাড়ি ও গোফ প্রভুপাদ অনুমোদন করেননি। অনেক সময় দেখা যায়, বিভিন্ন কাজ কর্মের ব্যস্ততার কারণে বা উপবাস বা একাদশীর কারণে সোমবার ও বুধবার ক্ষৌরকর্ম করা যায়নি, সেইক্ষেত্রে কোন বারে ক্ষতি কম সেটা বেছে নিতে হবে। আমরা দেখেছি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারে বেশি সমস্যা। তাই অন্য বারগুলোতে ক্ষৌরকর্ম করা যেতে পারে শ্রীকৃষ্ণের সেবা ও প্রচার করার জন্য। সবচেয়ে ভালো সোমবার ও বুধবার। তথ্যসূত্র: ©চৈতন্য সন্দেশ। প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ শ্রীপাদ মূর্তিমান মাধব দাস প্রভু

মনসার পূজায় কি পশুবলি বৈধ !? “অপযুক্তি খন্ডন – ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ ও দেবীভাগবতম সমীক্ষা।”

20240814 210004 Svadharmam

মনসা দেবী সম্পর্কে সনাতন ধর্মের তিনটি প্রধান শাস্ত্র, যথা- মহাভারতের আদিপর্ব, শ্রীব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের প্রকৃতিখন্ড ও দেবীভাগবত উপপুরাণের ৯ম স্কন্ধে আলোকপাত করা হলেও এই তিন শাস্ত্রের কোথাও মনসা পূজায় পশুবলি ন্যূনতম উল্লেখ পাওয়া যায় না। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে কিছু অপপ্রচারক নিজেদের অন্ধবুদ্ধিতার পরিচয় দিয়ে হঠকারিতা করার নিমিত্তে এই সমস্ত শাস্ত্র হতে দাবি করেন মনসা পূজা নাকি পশুবলির বিধান আছে!! আসুন এ সমস্ত অপপ্রচারকগণের অপযুক্তিসমূহের খন্ডন দেখে নিই!! অপপ্রচারকগণের দাবিঃ শাস্ত্রের পূর্বাপর বাক্য গোপণ করে অপপ্রচারকগণ মূল শাস্ত্রের মাঝখান থেকে হুট করে যে সমস্ত শ্লোক তুলে এনে দাবী করে মনসা পূজায় পশুবলি প্রযোজ্য সে সমস্ত শ্লোক হলো- নত্বা ষোড়শোপচারং বলিঞ্চ তৎপ্রিয়ং তদা। প্রদদৌ পরিতুষ্টশ্চ ব্রহ্মাবিষ্ণুশিবাজ্ঞয়া।। [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ,প্রকৃতিখন্ড, ৪৬।১১৭; দেবীভাগবত ৯।৪৮।১১৪ ] অনুবাদঃ ব্রহ্মা বিষ্ণু ও শিবের আজ্ঞায় দেবেন্দ্র কর্তৃক মনসাদেবী ষোড়শোপচারে পূজিতা হইলে দেবরাজ তাহার প্রিয় বলি প্রদান করিলেন। পঞ্চম্যাং মনসাখ্যায়াং দেব্যৈ দদ্যাচ্চ যো বলিম্। ধনবান্ পুত্রবাংশ্চৈব কীর্তিমান্ স ভবেদ্ ধ্রুবম্।। [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ,প্রকৃতি খণ্ড,৪৬।৯ ; দেবীভাগবত ৯।৪৮।৯ ] অনুবাদঃ পঞ্চমী তিথিতে দেবী মনসাকে যে ব্যক্তি বলি প্রদান করে, সে ধনবান, কীর্তিমান এবং পুত্রবান হয়। অপযুক্তির খন্ডনঃ প্রথমত অপপ্রচারকগণের দাবীকৃত শ্লোক দুটিতে কেবল ‘বলি’ শব্দের উল্লেখ আছে, কিন্তু কোথাও ‘পশুবলি’ শব্দের উল্লেখ নেই। এ সমস্ত অন্ধবুদ্ধি সম্পন্ন অপপ্রচারকগণ ‘বলি’ শব্দটি দেখলেই ভেবে বসেন সেখানে ‘পশুবলি’-র কথা বলা হচ্ছে! কি হাস্যকর!! দাবীকৃত শ্লোক দুটিতে ‘বলি’ শব্দ দ্বারা আসলে পশুবলিকে নির্দেশ করা হয়েছে নাকি সাত্ত্বিকী বলি তথা বিষ্ণুপ্রসাদ নিবেদন করার কথা বলা হয়েছে তা নিয়ে নিম্নে ক্রমান্বয়ে আলোচনা করা হলো- বিশ্লেষণের সুবিধার্থে শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ ও দেবীভাগবত থেকে মনসা দেবী কি পরিচয় তা দেখে নেওয়া যাক- আত্মারামাচ সা দেবী বৈষ্ণবী সিদ্ধ যোগিনী। ত্রিযুগঞ্চ তপস্তপ্ত্বা কৃষ্ণস্য পরমাত্মনঃ ॥ [শ্রীব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ,প্রকৃতি খণ্ড, ৪৫/৪ ও দেবীভাগবত ৯/৪৭/৪] অনুবাদঃ মনসা দেবী আত্মারামা ও ‘বৈষ্ণবী’ নামে বিখ্যাত আছেন। তিনি যুগত্রয় পরমাত্মা কৃষ্ণের প্রীতিকামনায় তপস্যা করিয়া সিদ্ধযোগিনী হন। শুদ্ধসত্ত্বস্বরূপা ত্বং কোপহিংসাবিবর্জিতা। ন চ শপ্তো মুনিস্তেন ত্যক্তয়া চ ত্বয়া যতঃ ।। ত্বং ময়া পূজিতা সাধ্বি জননী চ যথাদিতিঃ । [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ,প্রকৃতি খণ্ড,৪৬।৩০ এবং দেবীভাগবত ৯।৪৮।৩০ ] অনুবাদঃ দেবরাজ ইন্দ্র স্তুতি করলেন, ” মনসা! তুমি শুদ্ধসত্ত্ব স্বরূপা ও হিংসা ক্রোধ বিবর্জিতা। যখন তুমি স্বীয় পতি জরৎকারু কর্তৃক পরিত্যক্ত হইয়াও সেই মুনিবকে শাপ প্রদান কর নাই, তখন তোমার ন্যায় শমগুণ সম্পন্না সাধ্বী আর কে আছে? হে দেবি ! আমার জননী অদিতির ন্যায় তুমি যে আমার পূজ্য হইয়াছ তাহার কিছুমাত্র সন্দেহ নাই।” এখানে স্পষ্টত মনসা দেবী একজন বৈষ্ণবী দেবী এবং তিনি শুদ্ধসত্ত্বস্বভাব এবং হিংসাবর্জিতা দেবী। একইভাবে শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের প্রকৃতিখন্ডের ১।৬৯, ৪৫।৯, ৪৫।১৫ ইত্যাদি শ্লোকে এবং দেবীভাগবতমের ৯।১।৭৪, ৯।৪৭।৯, ৯।৪৭।১৫ আদি শ্লোকেও মনসাদেবীকে বারংবার বৈষ্ণবীদেবী, বিষ্ণুভক্তা, বিষ্ণুপূজাপরায়না ইত্যাদি নামে স্তুতি করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই একজন শুদ্ধসত্ত্বস্বভাব হিংসাবর্জিতা বৈষ্ণবীদেবীর পূজায় রক্তরঞ্জিত পশুবলির কোন প্রকরণই থাকতে পারেনা। তাই আলোচিত শাস্ত্রে অর্থাৎ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে স্পষ্টভাবে বৈষ্ণবীদেবীর পূজা যে পশুবলি ব্যতীত হবে তা বলা আছে – উৎসর্গকৰ্ত্তা দাতা চ ছেত্তা পোষ্টা চ রক্ষকঃ। অগ্রপশ্চান্নিবদ্ধা চ সপ্তৈ তে বধভাগিনঃ ॥ যো যং হন্তি সতং হন্তি চেতি বেদোক্ত মেবচ। কুৰ্ব্বস্তি বৈষ্ণবী পূজাং বৈষ্ণবাস্তেন হেতুনা ॥ [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, ৬৫।১১,১২ ] অনুবাদঃ “উৎসর্গকর্তা, দাতা, ছেত্তা, পোষক, রক্ষক ও অগ্রপশ্চাৎ নিবন্ধা এই সপ্তজন পশুবলির বধভাগী বলিয়া নির্দিষ্ট আছে। বেদে নির্দিষ্ট আছে, যে যাহাকে বিনাশ করে সে তাহার হন্তা(হত্যাকারী) হয়। এইজন্য বৈষ্ণব মহাত্মারা বৈষ্ণবী দেবীর সাত্ত্বিকী পূজা করিয়া থাকেন।” এখন কেউ যদি এ শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করে বৈষ্ণবীদেবীর পূজায় পশু বলি দেয় তবে অবশ্যই ভীষণ পাপের ভাগী হতে হবে -একথাও উক্ত শাস্ত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে – “বলিদানেন.. হিংসাজন্যঞ্চ পাপঞ্চ লভতে নাত্রসংশয়ঃ॥” [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, ৬৫।১০ ] অনুবাদঃ পশুবলিতে হিংসার জন্য মানবগণের যে পাপসঞ্চার হয় তাহাতে আর সন্দেহ নাই ॥ উক্ত শাস্ত্রে তাই বৈষ্ণবীদেবীগণকে শুদ্ধসাত্ত্বিক রীতিতে পূজা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- “জীবহত্যা বিহীনায়া বরা পূজাচ বৈষ্ণবী ॥” [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, ৬৪।৪৭] অনুবাদঃ বৈষ্ণবীদেবীর পূজায় জীবহত্যা হয় না– তাই এটি শ্রেষ্ঠ পূজা। কিন্তু অপপ্রচারকগণ এ সমস্ত শ্লোক গোপন রাখে নিজেদের হীন স্বার্থসিদ্ধি তথা পশুবলির মৌসুমী ব্যবসা ও জিহ্বা লালসা মিটানোর লোভে মন্দিরের পবিত্র স্থানকে কসাইখানাতে পরিনত করেন। তাহলে এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, মনসা পূজায় ইন্দ্র কর্তৃক পূজা উপাচার সমেত যে ‘বলি’ দেওয়ার কথা শাস্ত্রে বলা হচ্ছে তা যদি ‘পশুবলি’ না হয়, তবে এখানে ‘বলি’ দ্বারা কি বুঝাচ্ছে? নারায়ণাবতার শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস প্রণীত পদ্মপুরাণ এর উত্তরখণ্ডের ২৫৩ নং অধ্যায়ে মনসা দেবীর গুরু ভগবান শ্রীশিব দেবতাদের উদ্দেশ্যে বিষ্ণুপ্রসাদ বা কৃষ্ণপ্রসাদকেই বলিরূপে নিবেদনের বিধান দিয়েছেন স্পষ্টভাবে এবং এও বলেছেন যারা উক্ত স্থানে পশুহিংসা করেন তারা নিশ্চিতরূপে নরকভাগী হয়- শ্রী শিব উবাচঃ হরের্ভুক্তাবশেষেণ বলিস্তেভ্যো বিনিক্ষিপেৎ। হোমঞ্চৈব প্ৰকুব্বীত তচ্ছেষেণৈব বৈষ্ণবঃ । হরের্নিবেদিতং সম্যগদেবেভ্যো জুহুয়াদ্ধবিঃ॥ পিতৃভ্যশ্চাপি তদ্দদ্যাৎ সর্ব্বমান্নত্যমাপ্নুয়াৎ। প্রাণিনাং পীড়নং যত্তদ্বিদুষাং নিরয়ায় বৈ ॥ অদত্তঞ্চৈব যৎকিঞ্চিৎ পরস্বং গৃহ্যতে নরৈঃ । স্তেয়ং তদ্বিদ্ধি গিরিজে নরকসৈব কারণম্ ॥ [ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ২৫৩। ১০৭-১০৯ ] অনুবাদঃ ভগবান শিব বললেন, “হরির ভুক্তাবশেষ (কৃষ্ণপ্রসাদ) দ্বারা দেবতাদের বলিপ্রদান করবে,  হরির ভুক্তাবশিষ্ট(কৃষ্ণপ্রসাদ) হবি দ্বারা দেবতাদের হোম করবে । হরিকে সম্যক্‌রূপে নিবেদন করে পরে দেবগণকে হবি হোম করবে। পিতৃগণকেও তা-ই প্রদান করবে। এইরূপে কৃতকাৰ্য্য সমস্তই অনন্ত ফলপ্রদ হয়ে থাকে। প্রাণিগণের পীড়নকে বিজ্ঞগণ নরকভোগের কারণ হিসেবে ব্যাখা করে থাকেন। মনুষ্য নিজের জীবনে অন্যজীব কর্তৃক যে নিষ্ঠুর ব্যবহার আশা করে না, সে নিষ্ঠুর আচরণ যদি সে অন্য জীবের উপর করে,তবে হে গিরিজে! সে মনুষ্য অবশ্যই নরকভোগী হবে।” শুধু মনসাদেবীর গুরু ভগবান শিবই নয়, মনসাদেবীর আরাধ্য পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণও যজ্ঞে পশুবলির নিন্দা করেছেন- শ্রীকৃষ্ণ উবাচ- তে মে মতমবিজ্ঞায় পরোক্ষং বিষয়াত্মকাঃ। হিংসায়াং যদি রাগঃ স্যাদ্‌যজ্ঞ এব ন চোদনা। হিংসাবিহারা হ্যালব্ধৈঃ পশুভিঃ স্বসুখেচ্ছয়া। যজন্তে দেবতা যজ্ঞৈঃ পিতৃভূতপতীন্‌খলাঃ৷৷ [শ্রীমদ্ভাগবতম, স্কন্ধ-১১ অধ্যায়-২১, শ্লোক ২৯-৩০ (গীতপ্রেস )] অনুবাদঃ “পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ বললেন- যদি পশু হিংসা এবং মাংসভক্ষণ কার্যে অনুরাগ হেতু তার ত্যাগ সম্ভব না হয় তাহলে যজ্ঞ সম্পাদনের মাধ্যমে সেটি গ্রহণ করো—এই বিধান কখনই উত্তম বলে স্বীকৃত হতে পারে না; তাকে কেবল স্বাভাবিক প্রবৃত্তির ভিন্ন রূপে স্বীকৃতি মাত্র বলা চলে। সন্ধ্যা বন্দনাদিসম অপূর্ব সুন্দর বিধি ওই সকল বিধির তুলনায় বহুলাংশে প্রকৃষ্ট। এইভাবে আমার অভিপ্রায় না জেনে বিষয়লোলুপ ব্যক্তিগণ পশুহিংসায় মত্ত হয়ে পড়ে। তারা কপটতা হেতু ইন্দ্রিয়তৃপ্তির অভিলাষে পশুহিংসা দ্বারা প্রাপ্ত মাংস দ্বারা যজ্ঞ সম্পাদন করে দেবতা, পিতৃপুরুষ ও ভূতপতি আদি যজনের অভিনয়-ক্রিয়া করে থাকে৷৷” এমনকি বেদও যজ্ঞে ছাগবলি,পশুবলিকে প্রশ্রয় দেয় না, বেদে বীজ দ্বারা যজ্ঞ করার নির্দেশ। মহাভারতের আদিপর্বে মনসাদেবীর উপাখ্যান পাওয়া যায়। সে মহাভারতের শান্তিমহাপর্বে যজ্ঞে ছাগবলি,পশুবলি যে বেদবিরুদ্ধ তার স্পষ্টত উল্লেখ আছে- ঋষয় উচুঃ বীজৈর্যজ্ঞেষু ষষ্টব্যমিতি বৈ বৈদিকী শ্ৰুতিঃ। অজসংজ্ঞানি বীজানি ছাগং নো হন্তমর্হথ।। নৈষ ধৰ্ম্মঃ সতাং দেবা যত্ৰ বধ্যেত বৈ পশুঃ । ইদং কৃতযুগং শ্রেষ্ঠং কথং বধ্যেত বৈ পশুঃ ॥ [ মহাভারত, শান্তিপর্ব, ৩২৩।৭-৮ ] অনুবাদঃ ঋষিগণ বলিলেন—‘বীজ দ্বারা যজ্ঞ করিবে’ ইহাই বেদে শুনা যায়। অতএব ‘অজ’ শব্দের অর্থ বীজ; সুতরাং আপনারা ছাগবধ করিতে পারেন না।। হে দেব! যজ্ঞে পশুবধ সজ্জনের ধর্ম্ম নহে। এটা

ভগবানের প্রসাদ ক্রয়-বিক্রয় করা কি শাস্ত্রীয়?!

screenshot_1

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, ভগবানের প্রসাদ ক্রয়-বিক্রয় করা কি শাস্ত্রীয়? মন্দিরে কেন প্রসাদ বিক্রি করে? প্রসাদকে কি আর্থিক মূল্যের মাপকাঠিতে মাপা যায়? শাস্ত্রে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আমরা যেন সর্বদা ভগবানের প্রসাদ গ্রহণ করি। ভগবানের প্রিয় ব্যঞ্জন সামগ্রি নিবেদন পূর্বক আমরা ভগবানের কৃপাপ্রসাদম লাভ করি। সলিলৈঃ শুচিভির্মাল্যৈর্বন্যৈর্মূলফলাদিভিঃ। শস্তাঙ্কুরাংশুকৈশ্চার্চেত্তুলস্যা প্রিয়য়া প্রভুম্। [ শ্রীমদ্ভাগবতম ৪.৮.৫৫ ] অনুবাদঃ শুদ্ধ জল,শুদ্ধ ফুলমালা, ফল,ফুল,এবং শাক সবজির দ্বারা,যা বনে পাওয়া যায়, অথবা নবীন দূর্বাঘাস,পুষ্পের কলি,এমনকি গাছের বাকল দিয়ে ভগবানের পূজা করা উচিৎ, আর যদি সম্ভব হয়,তাহলে তুলসীপত্র নিবেদন করা উচিৎ, যা পরমেশ্বর ভগবানের অত্যন্ত প্রিয়।। ভগবানের সেবাকে দু’ভাবে ব্যাখা করা যায় – Pre-paid ও Post-paid। Pre-paid সেবায় আমরা ভগবানের জন্য বাজার করে, রন্ধন করে, ব্রাহ্মণকে যথাযোগ্য দক্ষিণা প্রদানের মাধ্যমে ভগবানের ভোগসেবার পুণ্য লাভ করি। অর্থাৎ ভক্তরা আগে থেকে ভগবানের সেবার জন্য ডোনেশান করে এবং ভগবানের সেবার পর সে প্রসাদ ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়। অন্যদিকে, মহাপ্রসাদ ক্রয় post-paid সেবার মতো। অর্থাৎ ভগবানের সেবকগণই বাজার করে, রন্ধন করে, ভগবানকে ভোগ লাগাবেন। এতে যা খরচ হলো তা হিসেব করে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করবেন, ভক্তেরা তা ক্রয় করার মাধ্যমে ভগবানকে ভোগ লাগানোর পুণ্য অর্জন করবেন। এভাবে দিব্য বস্তু ক্রয় দ্বারাও পুণ্য লাভ করা যায়। অনেকেই আছেন, যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততায় মন্দির/প্রসাদী রেস্টুরেন্টগুলো থেকে প্রসাদ পেতে হয়। অনেকে আছেন পরিবারে ভক্তির অনুকূল পরিবেশ নেই, তাদেরও মন্দির/প্রসাদী রেস্টুরেন্টে নিয়মিত প্রসাদ পেতে হয়। অথবা মন্দিরে ভগবানের দর্শনের জন্য গেলেও অনেক সময় আমরা প্রসাদ ক্রয় করে পরিবারের জন্য নিয়ে আসি। বস্তুত সদাচার হলো মন্দিরে ভগবানের দর্শনের সময় ভগবানের জন্য কিছু না কিছু উপহার নিয়ে যাওয়া বা মন্দিরে দান করা এবং ভগবানের পক্ষ হতে প্রসাদ গ্রহণ করা। এটি হলো ভক্ত-ভগবনের প্রীতির আদান প্রদান। আবার প্রসাদী রেষ্টুরেন্টগুলোতে নির্দিষ্ট প্রণামী দিয়ে আমরা প্রসাদ সংগ্রহ করি, জে প্রণামী আবার পরের দিনে ভগবানের ভোগ প্রস্তুতে ব্যয় করা হয়। যদি আমরা শাস্ত্রের দিকে তাকাই , তবে আমরা পাই শ্রীস্কন্দপুরাণে স্পষ্টভাবে মহাপ্রসাদ ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমোদন আছে- বিক্রয়শ্চ ত্রুয়ো বাপি প্রশস্তস্তস্য ভো দ্বিজা। নির্ম্মাল্যং জগদীশস্য নাশিত্বাশ্নামি কিঞ্চন।। [স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখন্ডে-পুরুষোত্তমমাহাত্ম্যম, ৩৮।১৫] অনুবাদ: জৈনিমি ঋষি বললেন, “হে দ্বিজগণ! মহাপ্রসাদের ক্রয়-বিক্রয় প্রশস্ত জানিবেন। জগদীশ্বর জগন্নাথদেবের প্রসাদ ছাড়া কদাচিত অন্য কিছু ভোজন করিবে না।” শ্রীজগন্নাথপুরী ধাম, শ্রী তিরুপতি বালাজী মন্দির সহ প্রায় সমস্ত প্রসিদ্ধ মন্দিরে তাই মহাপ্রসাদ ক্রয়-বিক্রয় হয়। মন্দিরের নিত্যদিনের সেবাপূজা এবং ভক্তদের প্রসাদ সুনিশ্চিত করণের জন্য ভগবান তার প্রসাদ ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছেন। নিবেদক- ব্রজসখা দাস Join with us: ° স্বধর্মম্ : প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

ভারতবর্ষের প্রাচীন ও বিখ্যাত সব ‘ধাতব রথ’ (পর্ব -১)

image_2024-07-10_102818739

‘ধাতব রথ’ (পর্ব -১) পুরীর জগন্নাথদেবের রথ কাষ্ঠ নির্মিত হলেও সমগ্র ভারতভূমিতে বিখ্যাত অগণিত মন্দিরে ধাতু নির্মিত রথ সেই প্রাচীনকাল হতে চলে আসছে, যা অনেকেরই অজানা। এককালে এদেশের বহু স্থানে স্বর্ণের রথে ভগবানের রথযাত্রা হতো। কালক্রমে বিধর্মী শাসকেরা সে সব লুট করে নিয়ে যায়। আজও তিরুপতির ভেঙ্কটেশ্বরের স্বর্ণরথের দেখা মিলে। শুধু স্বর্ণই নয়, রূপা, পিতল, লোহা, কাঁসা, তামার তৈরি রথও ভারতের বিখ্যাত সব মন্দিরগুলোতে দেখা যায়। এককালে গোটা বঙ্গ অঞ্চলে বিখ্যাত ৬৪টি পিতলের রথ দেখা যেত, যা বিভিন্ন রাজবাড়ি কিংবা জমিদার বাড়ির রথযাত্রায় আজও দেখা যায়। বাল্মীকি রামায়ণে দেখা যায়, রামচন্দ্র রাবণবধের পর স্বর্ণনির্মিত পুষ্পরথে আরোহন করে ভ্রমণ করতেন। পদ্মপুরাণে জানা যায়, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের অন্তে দন্তবক্রকে বধ করার পর শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামকে স্বর্ণরথে চড়িয়ে বৃন্দাবনে নিয়ে এসেছিলেন ব্রজবাসীগণ। আজ আমরা আপনাদের সামনে ভারতভূমির প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ ১৪টি ‘ধাতব রথ’ এর পরিচয় তুলে ধরছি। ১) শ্রীরামপুরে মাহেশের লোহার রথ : পুরীর রথের পর ভারতের ২য় প্রাচীনতম ও বৃহৎ কোন রথের নাম করতে হলে সবার আগে আসবে “মাহেশের রথ” এর কথা। এটি বাংলার প্রাচীনতম রথযাত্রা উৎসব। ৭০০ বছরের এই উৎসব ১৩৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর শহরের মাহেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। রথযাত্রাকালে কাষ্ঠরথে বারংবার অগ্নিকান্ডের দুর্ঘটনা ঘটার সম্মুখীন হয়। সর্বশেষ ১৮৮৪ সালে রথযাত্রার দিন বল্লভপুরে গুন্ডিচাবাটিতে মাহেশের রথটি ভয়াবহ আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। তখন শ্রী রামকৃষ্ণের বিখ্যাত শিষ্য বলরাম বসুর পরিবারের কর্তা কৃষ্ণচন্দ্রবাবু বর্তমান লোহার রথটি তৈরি করিয়ে দেন। মার্টিন বার্ন কোম্পানি রথটি তৈরি করে। সেই সময়েই এর দাম পড়েছিল ২০ লক্ষ টাকা। ১৮৮৫ সাল থেকে ওই রথে টান শুরু হয়। পুরীর রথের সর্বোচ্চ উচ্চতা যেখানে ৩৪ ফুট, সেখানে মাহেশের লোহার রথটি ৫০ ফুট লম্বা। এ রথে ১২ টা লোহার চাকা, গায়ে কাঠের পাটাতন টিন দিয়ে মোড়া। এ রথটি ঐতিহ্যগত বাংলা নবরত্ন শৈলী, এতে ৯ টি চূড়া রয়েছে যদিও কিছু বছর পূর্বে চূড়া ছিল ১৩ টি। ২) তিরুপতি ভেঙ্কটেশ্বরের কনক ধাতুর স্বর্ণরথ : ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুমালাতে ভগবান ভেঙ্কটেশ্বর ৮৪ কেজি কনক ধাতু দিয়ে নির্মিত স্বর্ণরথে আরোহণ করে ভগক্তদের কৃপা করেন। কনক হলো বিশুদ্ধ সোনা, সবচেয়ে অধিক বিদ্যুৎ সুপরিবাহী পদার্থ হওয়ায় এর উজ্জ্বলতা ও চাকচিক্য চোখ ধাঁধালো। এটি ভারতের সবচেয়ে ব্যয়বহুল রথ। রথটির উচ্চতা ৩২ ফুট। সোনায় নির্মিত এ রথটি সমস্ত বিশ্বের নিকট ভারতের ধনৈশ্বর্য্যের প্রতীক। ৩) দক্ষিণেশ্বরে রানী রাসমনির রূপার রথ : ১৮৩৮ সালে জগন্নাথদেবের স্নান যাত্রার পুণ্য তিথিতে রাণী রাসমণি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীর মন্দির এবং রাণী রাসমণি এক লক্ষেরও বেশি টাকা খরচ করে রুপোর রথ বানিয়েছিলেন। তাঁর গৃহদেবতা রঘুবীরকে নিয়ে কলকাতার রাস্তায় শোভাযাত্রা বের করেছিলেন। রাণী রাসমণি প্রচলিত সেই রথযাত্রা আজও রথের দিনে দক্ষিণেশ্বরে মহাসমারোহে পালন করা হয়। রথে আরোহণ করার জগন্নাথ পুরো দক্ষিণেশ্বর প্রদক্ষিণ করেন। ৪) বীরভূমে বৈষ্ণবকবি জয়দেবের পিতলের রথ : স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল হওয়ায় ভারতে সুপ্রাচীনকাল থেকে পিতলের রথ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গীতগোবিন্দমের রচয়িতা বৈষ্ণব কবি জয়দেবের কেন্দুলীর পিতলের রথা ৭০০ বছরের প্রাচীন। এ রথটি শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবেরও আগের। ১২৯৬-৯৮ এর মাঝামাঝি সময়ে এখানে প্রথম রথ নির্মাণ করা হয়েছিল। ৫) চন্দননগরের লোহার রথ : চন্দননগর লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী যদুবেন্দ্র ঘোষ ১৭৭৬ সালে এই রথযাত্রা শুরু করেছিলেন। প্রায় আড়াইশো বছর ধরে সেই রীতি চলছে। চন্দননগরের বর্তমান রথটি ৬০ টন ওজনের লোহা দিয়ে নির্মিত। ৬) গোপীনাথের পিতলের রথ : পশ্চিম বর্ধমান জেলার উখরার জমিদার বাড়ির ১৭৯ বছরের পুরান ‘গোপীনাথ জিউর’ ২০ ফুট উঁচু পিতলের রথ। এটি উখড়ার পূর্বতন জমিদার লাল সিংহ হান্ডা পরিবারের প্রায় ১৭৭ বছরের প্রাচীন রথ। ৭) মুখার্জি পরিবারের তামা-পিতলের রথ : বীরনগরে নদিয়ার সিংহ দুয়ার মুখার্জি পরিবারের রথ ৭০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন! ধাতুর তৈরি রথে আরোহন করেন আরাধ্য দেবতা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা (Rath Yatra)। রথটি ৭০০ বছর আগে ঢাকা থেকে নদিয়ার ফুলিয়াতে আনা হয়। সেখানে ২০০ বছর অবস্থান করার পর নিয়ে যাওয়া হয় মুখার্জি পরিবারে। রথটি তৈরি তামা ও পিতল দিয়ে। রথের চাকাও তৈরি মিশ্রিত ধাতু দিয়ে। ৮) সিয়ারশোল রাজবাড়ির পিতলের রথ : ১০০ বছরের পুরাতন ত্রিতলবিশিষ্ট এই পিতলের রথটি নবরত্ন মন্দিরের আদলে তৈরি করানো হয়েছে বলেই জানা যায়। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় রথযাত্রার আকর্ষণ এ রথটি সারা বছর রাখা থাকে রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে। ৩০ ফুটের এই পিতলের রথের ওজন ৮-১০ টন। ৯) নসিপুর আখড়ার রূপার রথ : ১১৬৮ বঙ্গাব্দে স্বামী রামানুজ আচার্য্যের শিষ্য লক্ষণ দাস ও মনসরাম দাস ধর্ম প্রচারের জন্য মুর্শিদাবাদে এসে নসিপুরে এক আখড়া স্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে এখানে রথযাত্রার সূচনা করে। রাজস্থান থেকে কারিগর নিয়ে এসে রুপোর রথ তৈরি করান ভগবানদাস আচার্য্য। হাতির উপরে উপবিষ্ট মাহুত রথটিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। রথের বাহন হাতি ও হাতির উপরে উপবিষ্ট মাহুত সোনার জলে পালিশ রুপো দিয়ে তৈরি। সেই প্রথা মেনে আজও আয়োজিত হচ্ছে প্রায় ২৫৫ বছরের প্রাচীন নসিপুর আখড়ার রথযাত্রা। ১০) সীমলার প্রামাণিক বাড়ির কাঁসা-পিতলের রথ : উত্তর কলকাতার তারক প্রামাণিক রোডের প্রামাণিক বাড়ির পিতলের রথটি আনুমানিক ২৫০ বছরের পুরোনো৷ তারক প্রামাণিকের বাবা গুরুচরণ প্রামাণিকের আমলে হুগলির ব্যান্ডেলে পারিবারিক কাঁসা-পিতলের কারখানাতে তৈরি হয়েছিল ১৪ ফুট উচ্চতার পিতলের এই রথ, যার ওজন প্রায় ২২ টন৷ ১১) হেতমপুর রাজবাড়ির পিতলের রথ : রাজপরিবারের ইতিহাস বলছে, বাংলা ১২৫০ সালের আশপাশে হেতমপুরের রাজা রামরঞ্জন চক্রবর্তী ইংল্যাণ্ডের স্টুয়ার্ট কোম্পানিকে দিয়ে রথটি বানিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডে তৈরি হেতমপুর রাজবাড়ির পিতলের রথ দেখে মনে হয় যেন সোনার তৈরি। রথটি তৈরি হয়েছিল রাজপরিবারের গৌরাঙ্গ মন্দিরের গৌরাঙ্গ-নিত্যানন্দের জন্যই। প্রথা অনুযায়ী গৌরাঙ্গ নিত্যানন্দের বিগ্রহ তোলা হতো রথের দিন। বর্তমানে মন্দিরটির সেবাভার গ্রহণ করেছে গৌড়ীয় মঠ। ১২) বাঁকুরার রানি শিরোমণির পিতলের রথ : ইতিহাস বলে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে প্রাচীন রথ উৎসব প্রায় ৩৫০ বছরের বেশি প্রাচীন। ১৬৬৫ খ্রীঃ বিষ্ণুপুরের মল্লরাজা শহরের মাধবগঞ্জে রানি শিরোমণি দেবীর ইচ্ছা অনুযায়ী পাথরের পাঁচ চূড়া মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরের বিগ্রহ রাধা মদন গোপাল জিউ। এই মন্দিরের অনুকরণের তৈরি করা হয় পিতলের রথ। মল্লরাজাদের সময় থেকেই এই রথ উৎসবের সূচনা হয়। ১৩) লালগড় রাজবাড়ির লোহার রথ : ১৭১০ সালে লালগড়ের রাজবাড়িতে রথযাত্রার সূচনা হয়। রথযাত্রার দিনে ৮ চাকার লোহার তৈরি ২০ ফুট উঁচু রথে চড়েন লালগড় রাজপরিবারের কুলদেবতারা। ৩১৫ বছরের প্রাচীন এ রথযাত্রায় লালগড়ের বাবুপাড়ার মন্দির থেকে রাধামোহন ও শ্রীমতীর পাশাপাশি গোপীনাথ, গোবিন্দ, আরও দু’টি শ্রীমতী, সাক্ষীগোপাল, কৃষ্ণ-বলরাম, ধাম গৌরাঙ্গ ও জগন্নাথের বিগ্রহ নিয়ে আসা হয় রথতলায়। কেবলমাত্র এ দিনই রাধামোহন ও শ্রীমতীকে সোনার অলঙ্কারে সাজানো হয়। রথযাত্রার দিন বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে, অমৃতযোগে রথের রশি টানা শুরু হয়। স্থানীয় হাটচালায় মাসির বাড়িতে পৌঁছে যাত্রা শেষ হয়। ১৪) বনকাঠির পিতলের রথ : বনকাঠির পিতলের রথটি মুখোপাধ্যায় পরিবারের গোপালেশ্বর মন্দিরের আদলে তৈরি করা হয় পিতলের রথ। ১৭৫৪ বঙ্গাব্দে গোপালেশ্বর মন্দির তৈরি হয় আর তার দুই – তিন বছরের পরেই পিতলের রথ তৈরি হয়। সময় লাগে ছয় থেকে আট মাস। বনকাটির পিতলের রথটি ১৫ ফুট উচ্চতার এবং

কৃষ্ণপত্নী রাধিকার সন্ধানে (পর্ব-২) : রাধারাণী, কৃষ্ণের মামী নাকি পত্নী?

received_10082430340065393651368679291815341-jpeg

In Search of Krishna’s Wife Radhika (Part-2): ‘Radharani, Krishna’s aunt or wife?’ গ্রাম্য সাহিত্য শ্রবণে যাদের আগ্রহ, তাদের কেউ কেউ ধারণা করে থাকেন- শ্রীমতি রাধিকা রায়ান(আয়ান) নামক এক গোপের পত্নী। আরেক পক্ষ দেখা যায়, শ্রীমতি রাধিকাকে কৃষ্ণের মামী বলে সম্বোধন করে ভগবান কৃষ্ণচরিতকে উপহাস করতে চান। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলো- যারা ভগবান প্রণীত শাস্ত্র না পড়ে গ্রাম্য রসালো সাহিত্যকে প্রামাণিক বলে গ্রহণ করেন, তারা যে প্রকৃত সত্য হতে বঞ্চিত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই শাস্ত্রে এরূপ ব্যক্তিদের ‘মূঢ়’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে। ‘মূঢ়া রায়াণপত্নী ত্বাং বক্ষ্যন্তি জগতীতলে’ [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কৃষ্ণজন্মখন্ড, অধ্যায় ৩, শ্লোক ১০৩ ] বঙ্গানুবাদ: ভূতলে যারা মূঢ় (মূর্খ), তারাই শ্রীমতি রাধিকাকে রায়াণ(আয়ান) এর পত্নী বলে মনে করে।   বাস্তবে রায়াণ বা অন্য কোন গোপের পক্ষে শ্রীমতি রাধিকাকে বিবাহ করা দূরে থাক, তাকে স্পর্শ বা দর্শন করাও সম্ভব নয়। শ্রীমতি রাধিকা নিত্যকৃষ্ণ পত্নী। রায়ান নামক গোপ যাকে বিবাহ করেছিলেন, তিনি হলেন রাধিকার অংশ ‘ছায়া-রাধা’। শাস্ত্রে উল্লেখ আছে- অতীতে দ্বাদশাব্দে তু দৃষ্টা তাং নবযৌবনাম ।। সার্দ্ধং রায়াণ বৈশ্যেন তৎসম্বন্ধং চকার সঃ। ছায়াৎ সংস্থাপ্য তদ্দেহে সান্তর্দ্ধানং চকার হ।। বভূব তস্য বৈশ্যস্য বিবাহশ্ছায়য়া সহ । [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, অধ্যায় ৪৯, শ্লোক ৩৭-৩৯ ] বঙ্গানুবাদ: শ্রীমতি রাধিকার আবির্ভাবের দ্বাদশবর্ষ অতীত হলে বৃষভানু স্বীয় কন্যা রাধিকাকে নবনৌবনা দেখে রায়াণ বৈশ্যের সাথে তাঁর বিবাহ সম্বন্ধ স্থির করলেন। সম্বন্ধ স্থির হলে শ্রীমতী স্বীয় দেহে ছায়া মাত্র সংস্থাপন করে অর্থাৎ তিনি ছায়া-রাধা প্রকট করে স্বয়ং অন্তর্হিতা হলেন । অতঃপর সেই ছায়ারূপিণী রাধিকার সাথে রায়াণের বিবাহ হলো।    বৃষভানু আঙ্গিনায় সংগঠিত এ বিবাহের সবিস্তার বর্ণনা ব্রহ্মান্ড মহাপুরাণের উত্তরখন্ডের (উত্তমাখন্ডে) রাধাহৃদয়াখ্যান ভাগে বর্ণিত হয়েছে, যা সংক্ষেপে নিম্নে বর্ণিত হলো- ৭ম মন্বন্তরের ২৮ তম দ্বাপর যুগে শ্রীমতি রাধারাণীর বয়স যখন ১২ বছর হয়, তখন রাজা বৃষভানু আয়ান নামক এক গোপের সাথে রাধিকার বিবাহ ঠিক করেন। কিন্তু শ্রীমতি রাধারাণীর সে বিবাহে মত ছিলো না, তাই তিনি সহস্র গোপীদের সাথে নিয়ে কূলদেবী কাত্যায়নীর ব্রতের ছল করে শ্রীহরির তপস্যা করতে থাকেন, যেন শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে লাভ করেন। কখনো দিনে ১ বেলা আহার করে, কখনী বা রাত্রিতে একাহার করে, কখনো বা ফল কিংবা দুগ্ধমাত্র গ্রহণ করে, কখনো বা কেবল জল বা পত্ররস গ্রহণ করে তিনি বহু দিবস কঠোর তপস্যা করতে লাগলেন৷ তাঁর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে স্বয়ং শ্রীহরি প্রকট হয়ে রাধিকার সম্মুখে আসলে শ্রীমতি রাধিকা কৃষ্ণকে পতিরূপে বর চান। কৃষ্ণ তখন তাকে বলেন, ‘আয়ান নামক গোপ প্রকৃতপক্ষে শ্রীকৃষ্ণেরই অংশাবতার যে কিনা পূর্বজন্মে অভিমুন্ন্য নামক যোগীরূপে নারায়ণের তপস্যা করে লক্ষ্মীকে পত্নীরূপে চেয়েছিলেন। তখন ভক্তবৎসল ভগবান তাকে বর দিয়েছিলেন, পরজন্মে লক্ষ্মী ঠিকই তার গৃহে বধূরূপে থাকবে, কিন্তু নপুংসকতা প্রাপ্তি হেতু সে লক্ষ্মীর সাথে কোনরূপ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে না।’ তাই শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে বললেন, তিনি যেন আয়ানকে বিবাহ করেন।  আয়ান যে শ্রীকৃষ্ণের অংশাবতার ছিলো, সে সম্পর্কে শাস্ত্রীয় প্রমাণ হলো- কৃষ্ণস্তু কলয়া যজ্ঞে জটিলায়াং প্রভাসতঃ । তিলকো দুর্ম্মদশ্চাপি আয়ানাবরজৌ সুতৌ ॥ [ ব্রহ্মান্ডপুরাণ, উত্তরভাগ, রাধাহৃদয়াখ্যান, অধ্যায় ০৮, শ্লোক ১১৮ ] বঙ্গানুবাদ: শ্রীকৃষ্ণ নিজের অংশকলাতে জটিলাগর্ভে জন্মগ্রহণ করেন, তাহার নাম আয়ান। আয়ানের জ্যৈষ্ঠ তিলক ও দুর্ম্ম নামে জটিলা অপর দুই পুত্র প্রসব করেন। সে যাই হোক, কৃষ্ণের কথা শুণে পূর্ণশক্তি রাধিকা বললেন, আয়ান শ্রীকৃষ্ণের অংশ হতে পারে, কিন্তু পূর্ণশক্তিমান কৃষ্ণ ব্যতীত অনয় কেউ তাকে বিবাহ করার যোগ্যতা রাখে না। তাই তিনি অন্য কাউকে বিবাহ করবেন না, প্রয়োজনে তিনি গলায় দড়ি দিবেন। তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এক উপায় করলেন, যেন শ্রীমতি রাধিকার ইচ্ছাও পূর্ণ হয় এবং অভিমুন্ন্য যোগীকে দেওয়া বরের মান রক্ষিত হয়। তিনি রাধিকাকে বর দিলেন-  শ্রীভগবানুবাচ— উপায়ন্তে প্রবক্ষ্যামি মানসোত্তাপনাশনং। তদুদ্বাহোৎসব প্রেক্ষা সিদ্ধার্থং মাতুলগৃহং।। মাত্রা গমিষ্যেঁ তদনু মাতুলাঙ্ক গতোস্ম্যহং।।৬৪।। আয়াস্যে ত্বৎ পিতুর্গেহং ক্রোড়গো মাতুলস্যহং। তং দ্রংশয়িত্বা দায়ানং পুং স্ত্বাৎ কৈতব মাতুলং।।৬৫।। [ ব্রহ্মান্ডপুরাণ, উত্তরভাগ, রাধাহৃদয়াখ্যান, অধ্যায় ১৩, শ্লোক ৬৪,৬৫ ] বঙ্গানুবাদ: ভগবান্ শ্রীরাধাকে এই কথা কহিলেন- হে রাধে! পূৰ্ব্ব বাক্য কদাচ মিথ্যা হইবে না। এক্ষণে তোমার মনের উত্তাপনাশনে যে উপায় আমি বলি তাহা তুমি শ্রবণ কর। আমার মাতুল আয়ান, তাহার বিবাহ মহোৎসব দেখিবার নিমিত্ত মাতা যশোদার সহিত আমি মাতুলগৃহে গমন করিব, তখন মাতার ক্রোড় হইতে মাতুলের অদ্ধগত হইব। হে রাধে! আমি বিবাহকালে তোমার পিতা বৃষভানুর ভবনে আগমন করিয়া মাতুল আয়ানের ক্রোড়স্থিত হয়ে আয়ানকে পুরুষত্ব হইতে নিবন্ধ করত নপুংসক করিব (এবং তোমাকে বিবাহ করিব)। শ্রীকৃষ্ণ হতে বরপ্রাপ্ত হয়ে রাধিকা পিতৃগৃহে ফিরে গেলেন। এরপর শ্রীমতি রাধিকার বয়স যখন ১৪ বছর হলো তখন ব্রজেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ নন্দগৃহে আবির্ভূত হন এবং একদা নন্দমহারাজের সাথে বৃন্দাবনে ভান্ডীরবনে গোচারণে গেলে সেখানে ব্রহ্মার পৌরহিত্যে সমস্ত দেবতার উপস্থিতিতে রাধাকৃষ্ণের গান্ধর্ব্ব বিবাহ সম্পন্ন হয় (পূর্ববর্তী লিখনিতে উক্ত গান্ধর্ব্ব বিবাহের বর্ণনা আছে, আগ্রহীগণ তা পড়ে নিবেন)। এরপর কোন এক সময় বৃষভানু মহারাজ বর্ষাণায় নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় নিজ কণ্যার বিবাহের আয়োজন করলেন এবং পূর্বপ্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ মাতা যশোদার সাথে আপন মামা আয়ানের বিবাহে উপস্থিত হলেন। সে মনোহর বিবাহ আয়োজনে শ্রীকৃষ্ণ হঠাৎ কন্দন আরম্ভ করে বিবাহে উপবেশনরত মামা আয়ানের ক্রোড়ে উঠে গেলেন৷ ছোট শিশু হওয়ায় কেউ তাকে বাঁধা দেয় নি। এরপর বালক শ্রীকৃষ্ণ নিয়তির বিধান অনুসারে আয়ানকে নপুংসত্ব দান করলেন।    ততস্তাংচারু সৰ্ব্বাঙ্গীং বৃষোদিৎ সুস্তমীক্ষ্য সঃ। ধাঙক্ষায়ৈব পুরোডাশ মধ্বরে মাধবো রুষা ॥ আয়ানাঙ্কগ কৃষ্ণস্ত পুংস্তাদপনয়ং স্তদা ॥ ৩৩ দ্বিতীয়ং প্রকৃতিং তস্মা দায়ানায়া দদৎ ক্ষণাৎ যস‍্যেঙ্গিতৈ লয়ং যান্তি ব্ৰহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরাঃ ॥  তস্যা ৰিৰিৎসিতং কৰ্ম্ম কোবা বারায়তুং ক্ষমঃ॥৩৪ প্রিয়ায়া লিপ্সিতং যত্তু বিধায়োরুক্রমস্তদা। প্রসারিত করো বাঢ় মুবাচ তদনন্তরম্ ॥ ৩৫ সত্যস্তে দদত্তামু দক্ষিণা রত্নসঞ্চয়ম্ । নাজ্ঞানীত্তস্য তদ্বৃত্তং কিঞ্চিদ্ৰাত্মা তদানে ॥ ৩৬ [ ব্রহ্মান্ডপুরাণ, উত্তরখন্ড, রাধাহৃদয়্যাখানভাগ, ১৫।৩৩-৩৬ ] বঙ্গানুবাদ: যজ্ঞীয় ঘৃত কাককে প্রদান করার ন‍্যায় বৃষভানু সর্বাঙ্গসুন্দরী মনোহারিণী কন‍্যা, আয়ানকে দান করিতে ইচ্ছুক হলেন। যেহেতু আয়ান রাধারাণীর অযোগ্য তাই আয়ান ক্রোড়স্থিত শ্রীকৃষ্ণ তার পুরুষার্থহরণ করলেন অর্থাৎ আয়ানকে নপুংসকত্ব প্রদান করিলেন । কৃষ্ণের স্পর্শ মাত্র আয়ান যে নপুংসত্ব প্রাপ্ত হলো, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, কারণ সে কৰ্ম্ম ভগবত সম্বন্ধে বিচিত্র নয়, যেহেতু যে শ্রীকৃষ্ণের ইঙ্গিত মাত্রে সৃষ্টি স্থিতি লয়কর্ত্তা ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরেরও লয় হয়, সে শ্রীকৃষ্ণের অকরণীয় কার্য্য জগতে কি আছে ? সেই অচিন্ত্য অব্যয় পরম পুরুষের বিবেচনা সিদ্ধবিধেয় কর্ম্ম নিবারণ করতে কে সমর্থ হয়?  উরুক্রম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বপ্রিয়া শ্রীমতী রাধিকার মনোভিলষিত যে প্রার্থনা তাহা সম্পূর্ণ করে আয়ানকে পশ্চাতে রেখে আপনার দক্ষিণহস্ত প্রসারিত করে কন‍্যারত্নের পাণিগ্রহণ পূর্বক ‘তদনন্তর বাঢ়ং ইতি’ প্রতিগ্রহ সূচক বাক্য বললেন।। হে মুনে! অঙ্গিরা! বৃষভানু রাজা কন্যাদান করে দক্ষিণা স্বরূপ বহু রত্ন সঞ্চর শ্রীকৃষ্ণ হস্তে প্রদান করলেন। শ্রীকৃষ্ণও স্বস্তি বলে তা নিলেন, কিন্তু এতোকিছু হওয়া সত্ত্বেও রাজা বৃষভানু কিঞ্চিৎ মাত্রও উপলব্ধি করিতে পারিলেন না যে আয়ানের পরিবর্তে শ্রীকৃষ্ণের সাথে রাধিকার বিধিবৎ বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে।  ব্যাখানঃ এখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, শ্রীকৃষ্ণ আয়ানকে নপুংসকত্ব দান করেন এবং বৃষভানু রাজা রাধিকাকে আয়ানের নিকট সম্প্রদান করতে গেলে শ্রীকৃষ্ণ দক্ষিণ হাত বাড়িয়ে রাধিকার হস্ত গ্রহণ

“হে মনুষ্য, তোমরা বৈষ্ণব হও”~বেদ

পবিত্র বেদে কোথায় আমাদের বৈষ্ণব হতে বলছে?! বৈষ্ণবমসি বিষ্ণবে ত্বা। – [শুক্ল যজুর্বেদ ৫।২১] -(হে মনুষ্য), তোমার পরিচয় তুমি বৈষ্ণব, বিষ্ণুর প্রীতির জন্য তোমাকে নিযুক্ত করছি।   বিষ্ণোনুকং বীর্যাণি প্র বোচং যঃ পার্থিবানি বিমমে রজাংসি যো অস্কভায়দুত্তরং সধস্থং বিচক্রমাণস্ত্রেধোরগায়ো বিষ্ণবে ত্বা ৷৷ – [শুক্ল যজুর্বেদ ৫।১৮] – যিনি পার্থিব পরমাণু জাত নির্মাণ করেছেন, সে বিশ্বব্যাপক ভগবান বিষ্ণুর মহিমা নিত্য কীর্তন করছি। অগ্নি, বায়ু ও সূর্যরূপে যিনি ভূমি, অন্তরিক্ষ ও দ্যুলোকে নিজ মাহাত্ম্য স্থাপন করেছেন, মাহাত্মাগণের দ্বারা যিনি গীত, যিনি উপরিতন অন্তরিক্ষলোক স্তম্ভিত করেছেন, (হে মনুষ্য) সে বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে তোমাকে নিযুক্ত করছি।   দিবো বা বিষ্ণ উত বা পৃথিব্যা মহো বা বিষ্ণ উরোরন্তরিক্ষাৎ। উভা হি হস্তা বসুনা পূণস্বা প্র যচ্ছ দক্ষিণাদোত সব্যাদ্বিষ্ণবে ত্বা ৷ – [শুক্ল যজুর্বেদ ৫।১৯] – হে বিষ্ণু, তুমি দ্যুলোক অথবা ভূলোক হতে, কিম্বা মহান বিস্তৃত অন্তরিক্ষলোক হতে তোমার উভয় হস্ত ধন-সম্পত্তি দ্বারা পূর্ণ কর এবং দক্ষিণ বা বাম হস্তে আমাদের দাও। হে মনুষ্য, সে সর্বব্যাপক ভগবান বিষ্ণুর প্রীতির জন্য তোমাকে নিযুক্ত করছি।    বৈষ্ণবমসি বৈষ্ণবা স্থ।।  – [শুক্লযজুর্বেদ ৫/২৫] ~ তোমরা বৈষ্ণব হও, তােমরা ভগবান বিষ্ণুর প্রীতিসাধক হও।

একাদশী সংক্রান্ত কিছু বিভ্রান্তির নিরসন

Untitled design 1 Svadharmam

একাদশী সংক্রান্ত কিছু বিভ্রান্তির নিরসন বেদে কোথায় উপবাস থাকতে বলেছে?! একাদশীতে কি কি খাওয়া যায়? কোন শাস্ত্রে অনুকল্প খাওয়ার বিধান আছে?! সধবা নারীরা কি একাদশী করতে পারবে?! কৃষ্ণপক্ষের একাদশী থাকবো নাকি শুক্লপক্ষের?! একাদশীর উপবাসে কি ওষুধ খাওয়া যায়?! একাদশীতে শ্রাদ্ধ নিষেধ কেন? ========================================== একাদশীতে অনুকল্প প্রসাদ পাওয়ার বিধান আমাদের বৈদিক শাস্ত্রসমূহের মধ্যে বিস্তারিত ভাবে রয়েছে। একাদশীতে উপবাস করার শাস্ত্রীয় বিধান হলো- যারা সারা দিনরাত ধরে নির্জলা উপবাস করার মতো শারীরিক সামর্থ রয়েছে, তারা নির্জলা উপবাস পালন করবেন। কিন্তু কলিহত জীব আমরা, আমাদের সকলের পক্ষে নির্জলা উপবাস করা সম্ভব হয় না। তাই ভগবান কৃপাবশত আমাদের জন্য একাদশীর দিনে অনুকল্প প্রসাদ গ্রহণের বিধান দিয়েছেন বৈদিক শাস্ত্র সমূহে। যারা নির্জলা উপবাস করতে অসমর্থ, শাস্ত্রে তাদের জল পান করে ব্রত করার বিধান দেওয়া হয়েছে, একে বলে সজলা ব্রত। যারা সজলা ব্রত করতেও অসমর্থ, তাদের জন্য ভগবান বিধান দিয়েছেন- কেউ চাইলে ভগবানকে ফল মূল কন্দ সরাসরি কিংবা রান্না করে ভগবানকে নিবেদন করে সে অনুকল্প প্রসাদ পেতে পারেন। একে বলে সফলা ব্রত। তবে কোন মতেই রবিশস্য ভোজন করা যাবে না একাদশীর ব্রতে। একাদশীর দিনে রবিশস্য ভোজন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এবার আসুন বৈদিক শাস্ত্র সমূহ হতে দেখে নিই উক্ত বিধির সপক্ষে প্রমাণসমূহ- ================================ বেদে কোথায় উপবাসের বিধান আছে?! ================================ যদনাশ্বানুপবসেৎ ক্ষোধুকঃ স্যাদ্যষ্বীয়াদ্রদ্রোহস্য পশূনভি মন্যেত। অপোহশ্মাতি। তন্নেবাশিতং নেবানশিতং ন ক্ষোধুকো ভবাতি নাস্র রুদ্রঃ পশূনভি মন্যতে। বজ্ৰো বৈ যজ্ঞঃ ক্ষুৎ খলু বৈ মনুষ্যস্য ভ্রাতৃব্যো যদনাশ্বানুপবসতি বজ্রেণৈব সাক্ষাৎক্ষুধং ভ্রাতৃব্যং হন্তি ॥ [কৃষ্ণযজুর্বেদ, ১/৬/৭] বঙ্গানুবাদ: উপবাসে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষুধাগ্নি জীবের ক্ষতি সাধন করে । যদি ক্ষুধা অসহনীয় হয় তবে জলপান করবে। জলপানে ভোজন হয়, আবার হয়না। যজ্ঞ বজ্রসদৃশ, ক্ষুধা মানুষের শত্রু। না খেয়ে উপবাস করলে যজ্ঞরূপ বজ্র তার ক্ষুধারূপ শত্রুকে বিনাশ করে। বেদে বলা হয়েছে, ঈশ্বরের প্রীতির জন্য অনশন(উপবাস) ব্রত করা সকলেরই কর্তব্য। তমেতং বেদান বচনেন ব্রাহ্মণা বিবিদিষন্তি যজ্ঞেন দানেন তপসাংনাশকেনৈতমেব বিদিত্বা মুনির্ভবতি। [বৃহদারণ্যক ঊপনিষদ ৪/৪/২২] বঙ্গানুবাদ: বেদবচন, যজ্ঞ, দান, তপস্যা ও অনশন(উপবাস ব্রত) দ্বারা ব্রহ্মবিদগণ পরমেশ্বরকে জানিতে চাহেন। ইহাকে জানিয়াই মানুষ মুনি হয়। =========================================== কত বছর বয়স থেকে একাদশী ব্রত পালন অবশ্যই করতে হবে?! =========================================== যো ন পূজয়তে দেবং রঘুনাথং রমাপতিম্। স তেন তাড্যতে দণ্ডৈর্যমস্যতি ভয়াবহৈঃ ।। ৬১ অষ্টমানদ্বৎসরাদূর্দ্ধমশীতির্ব্বৎসরো ভবেৎ। তাবদেকাদশী সর্বৈৰ্ম্মানুষৈঃ কারিতামুন। ॥ ৬২ [ পদ্মপুরাণ, পাতালখন্ড, ১৯। ৬১-৬২ (নবভারত) ] বঙ্গানুবাদ:  যে ব্যক্তি রমাপতি দেব রঘুনাথকে পূজা না করে, ভগবান রামচন্দ্রই তাহাকে অতি ভীষণ যমদণ্ডে তাড়িত করেন। ৮ম বর্ষের পর যতদিন পর্যন্ত ৮০ বর্ষ পূর্ণ না হয় ততকাল যে সকল মানবেরই একাদশী ব্রত কর্ত্তব্য তাহা শ্রীরামচন্দ্রই বিধান কারিয়াছেন। অতএব, মনুষ্যমাত্র ৮ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত অবশ্যই একাদশী পালনীয়। ===========================================  একাদশীতে অনুকল্প প্রসাদ পাওয়ার বিধান কোন শাস্ত্রে আছে?! =========================================== শ্রীব্রহ্মবৈবর্ত মহাপুরাণে দেবর্ষি নারদ বলেছেন- ন ভোক্তব্যং ন ভোক্তব্যং ন ভোক্তব্যঞ্চ নারদ। গৃহিভির্ব্রাহ্মনৈরন্নং সম্প্রাপ্তে হরিবাসরে ॥ ৮ গৃহী শৈবশ্চ শাক্তশ্চ ব্রাহ্মণো জ্ঞানদুর্ব্বলঃ। প্রয়াতি কালসূত্রঞ্চ ভুক্ত্বা চ হরিবাসরে ॥ ৯ কৃমিভিঃ শালমানৈশ্চ ভক্ষিতস্তত্র তিষ্ঠতি। বিণ্মূত্রভোজনং কৃত্বা যাবদিন্দ্ৰাশ্চতুৰ্দ্দশ ॥ ১০ জন্মাষ্টমীদিনে চৈব শ্রীরামনবমীদিনে। শিবরাত্রৌ চ যো ভুঙেক্ত সোঽপি দ্বিগুণপাতকীয়।। উপবাসাসমৰ্থশ্চ ফলমূলজলং পিবেৎ। নষ্টে শরীরে স ভবেদন্যথা চাত্মঘাতকঃ ॥ ১২ সকৃদ্ ভুঙেক্ত হবিষ্যান্নং বিষ্ণোনৈবেদ্যমেব চ। ন ভবেৎ প্রত্যবায়ী স চোপবাসফলং লভেৎ ॥১৩ [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, ব্রহ্মখন্ড, ২৭। ৮-১৩ ] বঙ্গানুবাদ: গৃহী, ব্রাহ্মণ, শৈব, শাক্ত অথবা বৈষ্ণব যাহা কেন হউন না একাদশীতে অন্নাহার করিলে, কালসূত্রে গমন করেন এবং সেই স্থানে শালবৃক্ষ প্রমাণ কৃমিগণকর্তৃক ভক্ষিত ও বিষ্টামূত্রভোজী হইয়া চতুর্দ্দশ ইন্দ্র পর্যন্ত যন্ত্রণা ভোগ করেন। একাদশী ছাড়াও জন্মাষ্টমী, শ্রীরামনবমী ও শিবরাত্রি দিবসে যিনি ভোজন করেন, তিনি ইহা অপেক্ষা দ্বিগুণত্তর পাতকী হন। কিন্তু উপবাস জন্য শরীর নষ্ট হইলে, আত্মহত্যার পাপ হয়, তাই (নির্জলা) উপবাসে অসমর্থ হইলে, ফলমূল ভোজন ও জল পান করিবেন। অথবা একবার বিষ্ণুর নিবেদিত হবিষ্যান্ন ভোজন করিবেন, তাহাতে কিছুমাত্র প্রত্যবায় নাই বরং উপবাসের ফল লাভ করিবেন। গর্গসংহিতাতে গর্গমুনি বলেছেন- অন্নান্ সর্ব্বান বৰ্জ্জয়িত্বা গৌধূমাদ্যাম্নৃপেশ্বর। একাদশ্যাং প্রকুর্ব্বীত ফলাহার মুদা নরঃ ॥ [ গর্গসংহিতা, অধ্যায় ৬১, শ্লোক- ৫০ ] বঙ্গানুবাদ: হে নৃপবর! গোধূমাদি( গম,আটা, ময়দা সহ অন্যান্য) সর্ববিধ অন্ন বর্জন করিয়া মানব একাদশীতে সানন্দে অন্ততঃ ফলাহার করিবে। মহাভারতে বিদূর ধৃতরাষ্ট্রকে বলেছেন– অষ্টৈতান্যব্ৰতঘ্নানি আপো মূলং ফলং পয়ঃ। হরির্ব্রাহ্মণকাম্যা চ গুরোর্বচনমৌষধম। [ মহাভারত, উদ্যোগপর্ব, ৩৯।৭০ ] বঙ্গানুবাদ: ফল, মূল, ক্ষীর, ঘৃত, ব্রাহ্মণ কামনা, গুরুর বচন ও ঔষধ এই আটটি ব্রত-নাশক নহে। এছাড়াও পদ্মপুরাণেও মাতা একাদশী শ্রীহরির নিকট প্রার্থনা করেছেন, কেউ যদি অনুকল্প প্রসাদ পেয়েও একাদশীর উপবাস করে তবে শ্রীহরি যেন তাকে বিত্ত, ধর্ম ও মোক্ষ দান করেন। রেফারেন্স: মামুপোষ্যন্তি যে ভক্ত্যা তব ভক্ত্যা জনার্দ্দন। সর্ব্বসিদ্ধির্ভবেত্তেষাং যদি তুষ্টোহসি মে প্রভো।। উপবাসঞ্চ নক্তঞ্চ একভক্তং করোতি চ। তন্য বিত্তঞ্চ ধৰ্ম্মঞ্চ মোক্ষং বৈ দেহি মাধব।। [ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ৩৮।১০০-১০১, একাদশীদেবী উক্তি ] বঙ্গানুবাদ: দেবী একাদশী শ্রীহরিকে বললেন, ‘ হে জনার্দ্দন! আপনি যদি আমার প্রতি তুষ্ট হইয়া থাকেন তবে আপনার প্রতি ভক্তি করিয়া যাহারা আমার এই একাদশীর দিনে উপবাস করিবে তাহাদের যেন সর্ব্বসিদ্ধি হয়। যে ব্যক্তি (নির্জলা) উপবাস, নক্তাশন বা একাহার করিবে, হে মাধব! তাহাকে আপনি বিত্ত,ধর্ম্ম ও মোক্ষ দান করিবেন। অতএব, একাদশী নির্জলা, সজলা ও সফলা যেকোন ভাবেই থাকা সম্ভব। ব্রতী তার সামর্থ অনুসারে নির্ণয় করবেন তিনি কি রূপে ব্রত পালন করবেন। তিনি চাইলে নির্জলাও করতে পারেন, আবার চাইলে ভগবানকে নিবেদিত (রবিশস্য বিহীন) অনুকল্প প্রসাদও পেতে পারেন। ========================================== একাদশীতে সবজি খাওয়ার বিধান শাস্ত্রে কোথায় আছে?! ========================================== প্রথমে বুঝতে হবে সবজি বলতে কি বুঝায়। আমরা সাধারণত সবজি হিসেবে যা খাই ( যেমনঃ লাউ, পটল, ঝিঙ্গা, ঢেড়স ইত্যাদি) এগুলো আসলে ফল। পুষ্প নিষেকের মাধ্যমে উদ্ভিদের ফল হয়। যে সকল ফলের সেলুলোজ আমরা সরাসরি হজম করতে পারি না, তাদেরকে আমরা রান্ন করে খাই, তাই এ জাতীয় ফলকে আমরা সবজি হিসেবে চিনি। এছাড়া বিভিন্ন রকম কন্দ ( যেমনঃ বাদাম, আলু, মিষ্টি আলু, গাজর, মূলা, কচু ইত্যাদি) -ও আমরা রান্না করে খাই, তাই এদেরও সবজি বলে। অর্থাৎ, উদ্ভিদের ফুল, ফল, পত্র, কন্দ যা আমরা রান্না করে খাই, তা সবজি হিসেবে পরিচিত। শাস্ত্রে আমাদের (রবিশস্য ভিন্ন) ফল, মূল, কন্দ সবই একাদশীর দিন গ্রহণের অনুমোদন দিয়েছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক- গর্গসংহিতা: অন্নান্ সর্ব্বান বৰ্জ্জয়িত্বা গৌধূমাদ্যাম্নৃপেশ্বর। একাদশ্যাং প্রকুর্ব্বীত ফলাহার মুদা নরঃ ॥ ৫০ অন্নং ভুঞ্জতি যো রাজন্নেকাদশ্যাং নরাধমঃ। ইহ লোকে স চান্ডালো মৃতঃ প্রাপ্নোতি দুর্গতিম্॥ ৫১ দধি দুগ্ধং তথা মিষ্টং কূটং কর্কটিকাং তথা। বাস্তূকং পদ্মমূলঞ্চ রসালং জানকীফলম্ ॥ ৫২ গঙ্গাফলং পত্রনিম্বুং দাড়িম্বঞ্চ বিশেষতঃ । শৃঙ্গাটকং নাগরঙ্গং সৈন্ধবং কদলীফলম্ ॥ ৫৩ আম্রাতকং চার্দ্রকঞ্চ তুলঞ্চ বদরীফলম্ । জম্বুফল্মামলকং পটোলং ত্রিকুশ তথা ॥ ৫৪ রতালুং শর্করাকন্দমিক্ষুদণ্ডঃ তথৈব চ। দ্রাক্ষাদীনি হি চন্যানি পবিত্রঞ্চ ফলং তথা ॥৫৫ একবারঞ্চ রাজেন্দ্র ভোক্তব্যং হরিবাসরে। তৃতীয়ে প্রহরেঽতীতে প্রস্থস্য চ পলস্য চ। ৫৬ [ গর্গসংহিতা, অধ্যায় ৬১, শ্লোক- ৫০-৫৬ ] বঙ্গানুবাদ: হে নৃপবর! গোধূমাদি অর্থাৎ গম, আটা, ময়দা ইত্যাদি সর্ববিধ অন্ন বর্জন করিয়া মানব একাদশীতে সানন্দে অন্ততঃ ফলাহার করিবে। হে রাজন!