‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্রের অর্থ -শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরকৃত
‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্রের অর্থ -শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরকৃত হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্রের গূঢ় তত্ত্ব। মহামন্ত্রের অষ্টশ্লোকে সম্মন্ধ, অভিধেয়, প্রয়োজন তত্ত্ব।। হরেকৃষ্ণ ষোলনাম অষ্টযুগ হয়। অষ্টযুগ অর্থে অষ্টশ্লোক প্রভু কয়।। আদি হরেকৃষ্ণ অর্থে অবিদ্যাদমন। শ্রদ্ধার সহিত কৃষ্ণনামসংকীর্তন।। -[হরে কৃষ্ণ] আর হরেকৃষ্ণ নাম কৃষ্ণ সর্বশক্তি। সাধুসঙ্গে নামাশ্রয়ে ভজনানুরক্তি।। সেইত ভজনক্রমে সর্ব্বনর্থনাশ। অনর্থাপগমে নামে নিষ্ঠার বিকাশ।। – [হরে কৃষ্ণ] তৃতীয়ে বিশুদ্ধতক্ত চরিত্রের সহ। কৃষ্ণ কৃষ্ণ নামে নিষ্ঠা করে অহরহ।। -[কৃষ্ণ কৃষ্ণ] চতুর্থেতে অহৈতুকী ভক্তি উদ্দীপন। রুচি সহ হরে হরে নামসংকীর্তন।। -[হরে হরে] পঞ্চমেতে শুদ্ধ দাস্য রুচির সহিত। হরেরাম সংকীর্তন স্মরণবিহিত।। -[হরে রাম] ষষ্ঠে ভাবাঙ্কুরে হরে রামেতি কীর্তন। সংসারে অরুচি কৃষ্ণে রুচি সমর্পণ।। -[হরে রাম] সপ্তমে মধুরাসক্তি রাধাপদাশ্রয়। বিপ্রলম্ভে রামরাম নামের উদয়।। -[রাম রাম] অষ্টমে ব্রজেতে অষ্টকাল গোপীভাব। রাধাকৃষ্ণ প্রেম সেবা প্রয়োজন লাভ।। -[হরে হরে] -শ্রীভজন রহস্যম্। শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর
‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্রের অর্থ -শ্রীল গোপালগুরু গোস্বামী প্রভুপাদ কৃত।
‘হরে কৃষ্ণ’ মহামন্ত্রের অর্থ -শ্রীল গোপালগুরু গোস্বামী প্রভুপাদ কৃত। বক্রেশ্বর পণ্ডিতের শিষ্য এবং ধ্যানানন্দ গোস্বামীর গুরুদেব গোপালগুরু গোস্বামী পাঁচশো বছর পূর্বে জগন্নাথ পুরীতে থাকতেন এবং নিয়মিত মহাপ্রভুর সঙ্গ করতেন। তাঁর প্রদত্ত মহামন্ত্রের অর্থ শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর তার ভজনরহস্য গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং পয়ার ছন্দে তার অর্থ ব্যাখা করেছেন। শ্রীল গোপালগুরু গোস্বামী প্রভুপাদ কৃত অর্থ: বিজ্ঞাপ্য ভগবত্তত্ত্বং চিদ্ঘনানন্দবিগ্রহম্। হরত্যবিদ্যাং তৎকার্যমতো হরিরিতি স্মৃতঃ হরতি শ্রীকৃষ্ণমনঃ কৃষ্ণাহ্লাদস্বরূপিণী। অতো হরেত্যনেনৈব শ্রীরাধা পরিকীর্তিতা।। অনুবাদ: ভগবত্তত্ত্ব অর্থাৎ শ্রীভগবান্ চিদ্ঘনানন্দবিগ্রহ জানিতে হইবে। তিনি অবিদ্যা হরণ করেন বলিয়া ‘হরি’-নামে স্মরণীয়। শ্রীকৃষ্ণাহ্লাদ-স্বরূপিণী শ্রীরাধা শ্রীকৃষ্ণমন হরণ করেন বলিয়া ‘হরা’ নামে পরিকীর্তিতা। . আনন্দৈকসুখস্বামী শ্যামঃ কমললোচনঃ। গোকুলানন্দনো নন্দনন্দনঃ কৃষ্ণ ঈর্যতে॥ অনুবাদ: আনন্দৈক-সুখস্বামী অর্থাৎ (শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তি) আনন্দস্বরূপা শ্রীমতী রাধিকার একমাত্র সুখস্বরূপ স্বামী কমললোচন শ্যাম গোকুলের আনন্দজনক নন্দনন্দন ‘কৃষ্ণ’-সংজ্ঞায় সংজ্ঞিত। . বৈদগ্ধ্য-সারসর্বস্বং মূর্তিলীলাধিদৈবতম্। রাধিকাং রময়ন্নিত্যং রাম ইত্যভিধীয়তে॥ অনুবাদ: শ্রীকৃষ্ণ বৈদগ্ধ্যসার-সর্বস্ব এবং মূর্ত-লীলার অধিদেবতা। শ্রীরাধিকার নিত্য রমন অর্থাৎ প্রীতিবর্ধনের জন্য তিনি ‘রাম’- নামে অভিহিত। . শ্রীল গোপালগুরু গোস্বামীকৃত নামার্থের শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর কৃত ভাষ্য (‘ভজনরহস্য’ গ্রন্থে) চিদ্ঘন আনন্দরূপ শ্রীভগবান্। নামরূপে অবতার এইত’ প্ৰমাণ।। অবিদ্যাহরণ কার্য হৈতে নাম হরি। অতএব হরে কৃষ্ণ নামে যায় তরি’॥ কৃষ্ণাহ্লাদস্বরূপিণী শ্রীরাধা আমার। কৃষ্ণমন হরে তাই হরা নাম তাঁর॥ রাধাকৃষ্ণ-শব্দে শ্রীসচ্চিদানন্দ রূপ। হরে কৃষ্ণ শব্দে রাধাকৃষ্ণের স্বরূপ॥ আনন্দ-স্বরূপ-রাধা তাঁর নিত্য স্বামী। কমললোচন শ্যাম রাধানন্দকামী॥ গোকুল-আনন্দ নন্দনন্দন শ্ৰীকৃষ্ণ। রাধাসঙ্গে সুখাস্বাদে সর্বদা সতৃষ্ণ॥ বৈদগ্ধ্য-সার-সর্বস্ব মূর্ত-লীলেশ্বর। শ্রীরাধারমণ রাম নাম অতঃপর॥ হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র শ্রীযুগল-নাম। যুগল লীলার চিন্তা কর অবিরাম॥ ।।হরে কৃষ্ণ।। স্বধর্মম্
ছাগল-মহিষ বলি নয়! কালীসাধক রামপ্রসাদ ৬ রিপুকে বলি দিতে বলেছেন !!
ছাগল-মহিষ বলি নয়! কালীসাধক রামপ্রসাদ ৬ রিপুকে বলি দিতে বলেছেন !! হিন্দু সমাজের অন্যতম সংস্কারক কালীসাধক রামপ্রসাদ সেন পশুবলি কুপ্রথা বিরুদ্ধে ছিলেন সরব। ধর্মের মিথ্যা দোহাই দিয়ে পশুহত্যা করে মন্দিরকে কসাইখানায় পরিনত করাকে নিন্দার দৃষ্টিতে দেখতেন শুদ্ধ সরল হৃদয় মাতৃসাধক রামপ্রসাদ সেন। নিজের ভিতরে থাকা কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য নামক ষড় রিপুরূপী অসুরকে বলি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মায়ের আশীর্বাদপুষ্ট এ কালীসাধক, রচনা করেন কালবিজয়ী একাধিক রামপ্রসাদী শ্যামাসঙ্গীত। “মেষ ছাগল মহিষাদি, কাজ কী রে তোর বলিদানে । তুমি জয় কালী জয় কালী বলে, বলি দেও ষড় রিপুগণে ॥ তুমি জয় কালী বলি দেও করতালি, মন রাখো সেই শ্রীচরণে ॥” তামসিক পুজারীরা কামনা বাসনা চরিতার্থে অবলা জীবের রক্ত কালীর নিকট মানত করে। কালীসাধক রামপ্রসাদ তাদের সর্তক করে বলেছেন অবলা জীবের জীবন নিয়ে মা কালীর সাথে ঘুষের ব্যবসা চলবে না। কারণ, মা কখনো সন্তানের রক্ত চান না। “মেষ-মহিষ আর ছাগলছানা। জানিস মুক্তকেশী কালী আমার। কারো কাছে ঘুষ খাবেনা।।” যুগে যুগে হিন্দু সমাজে মহান কিছু সমাজ সংস্কারকের মুহুর্মুহু প্রচেষ্টায় হিন্দু সমাজ হতে যেরূপে সতীদাহ কিংবা নরবলির মতো কুপ্রথার বিলুপ্তি ঘটেছে, ঠিক তেমনিভাবে বর্তমানে জাগ্রত সচেতন হিন্দু সমাজের অবারিত প্রচেষ্টায় তামসিক পূজা বহুলাংশে কমে গেছে, ধীরে ধীরে পূজায় পশুবলি, মদ-মাদক সেবন কিংবা ডিজে বাজানোর মতো কুপ্রথা অনেক কমেছে। আশা করা যায়, অতি অল্প সময়ের মধ্যে এ সমস্ত কুপ্রথা থেকে সনাতনী সমাজ মুক্ত হবে, সমুন্নত হবে সাত্ত্বিক চেতনা। ।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
বৈদিক শাস্ত্রে কোথায় শ্রীমতি রাধারাণীর উল্লেখ রয়েছে?
বৈদিক শাস্ত্রে কোথায় শ্রীমতি রাধারাণীর উল্লেখ রয়েছে? বেদ সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। বেদ বা শ্রুতি শাস্ত্র প্রধানত চার প্রকার- ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ববেদ। প্রত্যেক বেদ-এর চারটি করে অংশ থাকে। যথা- সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ। সনাতন শাস্ত্রে শ্রীমতি রাধারাণীকে ‘বৃষভানুনন্দিনী’, ‘বার্ষভানবী’ ‘গান্ধর্ব্বী’ ইত্যাদি নামে সম্বোধন করা হয়েছে। শ্রুতি বা বেদ শাস্ত্রে বিশেষ করে ঋগ্বেদ, সামবেদ এবং অথর্ববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদে শ্রীমতি রাধারাণীর বহু উল্লেখ দেখা যায়। এছাড়াও নারদীয় মহাপুরাণ, পদ্ম মহাপুরাণ, শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত মহাপুরাণ, বরাহপুরাণ, স্কন্দ পুরাণ, মৎস্য পুরাণ, ব্রহ্মান্ড পুরাণ, গর্গ-সংহিতা, সনৎকুমার সংহিতা ও নারদ-পঞ্চরাত্র ইত্যাদি শাস্ত্রেও বিশেষভাবে শ্রীমতি রাধারাণীর মহিমা বর্ণিত রয়েছে। শ্রুতি বা বেদ শাস্ত্রে শ্রীমতি রাধারাণী – স্তোত্রং রাধানাং পতে গির্বাহো বীর যস্য তে। বিভূতিরস্তু সূনৃতা ॥ [ ঋগ্বেদ সংহিতা ১।৩০।৫; সামবেদ সংহিতা, উত্তরার্চিক ১৬।৩।৮ ; সামবেদ-১৬০০ ] বঙ্গানুবাদ: হে রাধাপতি (ঐশ্বর্যের পতি), হে বীর! প্রশস্তি দ্বারা স্তুত, যে তোমার স্তুতি করে সে সমৃদ্ধি ও আনন্দ লাভ করে। অর্থাৎ তাঁর সত্য রূপা প্রিয় সমৃদ্ধি লাভ হয়। ইদং হ্যন্বোজসা সুতং রাধানাং পতে। পিবা ত্বাস্য গিৰ্বণঃ ॥ [ ঋগ্বেদ সংহিতা ৩।৫১।১০; সামবেদ সংহিতা, উত্তরার্চিক ২।৩।১ ; সামবেদ-৭৩৭ ] বঙ্গানুবাদ: হে রাধাপতি (ঐশ্বর্যের পতি), হে স্তুতিপ্রিয়! তেজ দ্বারা সম্পন্ন এই মধুর সোমরস তোমার পানের জন্য। তুমি এসে পান কর। তস্য মধ্যে হি শ্রেষ্ঠা গান্ধর্ব্বীত্যুবাচ। তং হি বৈ তাভিরেরং বিচার্য্য।। [ অথর্ববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদ, উত্তরবিভাগ, মন্ত্র ৯ ] বঙ্গানুবাদ: গোপীদিগের মধ্যে গান্ধর্ব্বী ( রাধারাণীর একটি নাম) নামে এক প্রধানা গোপী তাঁদের সাথে বিচার করে জিজ্ঞাসা করলেন। দ্বে পার্শ্বে চন্দ্রাবলী রাধিকা চেতি যস্যাংশেন লক্ষ্মীদুর্গাদিকা শক্তিরিতি। [ অথর্ববেদ, পুরুষবোধিনী উপনিষদ, ১ম প্রপাঠক ] বঙ্গানুবাদ: “তাঁর(শ্রীকৃষ্ণের) দুই পাশে চন্দ্রাবলী ও রাধিকা। এই রাধিকা হলেন কৃষ্ণের স্বরূপশক্তি যার অংশে লক্ষ্মী দুর্গাদি শক্তি।” এ শ্রুতি মন্ত্রে লক্ষ্মী,দূর্গা প্রাকৃত দেবী নন। ইনারা চিন্ময়ধামস্থিত মহালক্ষ্মী, মহাদূর্গাদি দেবী। তস্যাদ্যা প্রকৃতী রাধিকা নিত্যা নির্গুণা সর্বালঙ্কারশোভিতা প্রসন্নাশেষলাবণ্যসুন্দরী । অস্মদাদীনাং জন্ম তদধীনং অস্যাংশাদ বহুবো বিষ্ণুরুদ্রাদয়ো ভবন্তি । [ অথর্ববেদ, পুরুষবোধিনী শ্রুতি, ৩য় প্রপাঠক ] বঙ্গানুবাদ: সেই পরমপুরুষের আদ্যা প্রকৃতি রাধিকা। তিনিও শ্রীকৃষ্ণের নিত্যা অর্থাৎ কেবল দ্বাপরে কুব্জাদির ন্যায় কৃষ্ণ লীলা সঙ্গিনী নন। শ্রীকৃ্ষ্ণের ন্যায় তিনিও নির্গুণা অর্থাৎ গুণাতীত। সর্ব অলঙ্কারে সুশোভিতা, প্রসন্না অশেষলাবণ্যবতী আমাদের সকলের আদি, তাঁর অংশে কোটি বিষ্ণুরুদ্রাদির জন্ম হয়। . পুরাণ শাস্ত্রে শ্রীমতি রাধারাণী: অথর্ববেদীয় ছান্দোগ্য উপনিষদ-৭।১।২ মন্ত্রে, পুরাণ ও ইতিহাস শাস্ত্রকে পঞ্চম বেদ বলা হয়েছে, “ইতিহাসপুরাণং পঞ্চমং বেদানাং”। দেবী কৃষ্ণময়ী প্রোক্তা রাধিকা পরদেবতা। সর্বলক্ষ্মীস্বরূপা সা কৃষ্ণাহ্লাদস্বরূপিণী।। [ পদ্মপুরাণ, পাতালখন্ড, ৫০।৫৩ ] বঙ্গানুবাদ: দেবী রাধিকা কৃষ্ণময়ী। তাই তিনি পরদেবতা রূপে কথিতা হন। তিনি সর্বলক্ষ্মীরূপিণী এবং কৃষ্ণের হ্লাদিনী স্বরূপা। . পদ্মপুরাণে আরো উল্লেখ রয়েছে – কথিতুং তৎফলং পুণ্যং ন শক্নোত্যপি নারদ । কোটিজন্মাৰ্জ্জিতং পাপং ব্রহ্মহত্যাদিকং মহৎ। কুৰ্ব্বন্তি যে সকৃদ্ভক্ত্যা তেষাং নশ্যতি তৎক্ষনাৎ।। [ পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মখণ্ড ৭।৭] বঙ্গানুবাদ: যে সকল মানুষ ভক্তিভরে একবার মাত্র এই মহাপবিত্র শ্রীরাধাষ্টমী ব্রত পালন করে থাকেন, সেই সকল মানুষের কোটি জন্মের ব্রহ্মহত্যাদি সমস্ত মহাপাপ তৎক্ষনাৎ বিনাশ হয়ে যায়। . পদ্মপুরাণে আরো উল্লেখ হয়েছে – বামপার্শ্বে স্থিতাং তস্য রাধিকাঞ্চ স্মরেত্ততঃ। নীলচোলকসংবীতাং তপ্তহেমসমপ্রভাম্।। পট্টাঞ্চলেনাবৃতার্দ্ধ-সুস্মেরাননপঙ্কজাম্। কান্তবক্তে ন্যস্তনেত্রাং চকোরীর চলেক্ষণাম।। [ পদ্মপুরাণ, পাতালখন্ড, অধ্যায় ৫০, শ্লোক ৪৪,৪৫ ] বঙ্গানুবাদ: ভক্ত স্মরণ করবে- পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের বামভাগে রাধিকা বিরাজমান রয়েছেন, তাঁর পরিধান-নীলবসন, উত্তপ্ত স্বর্ণের ন্যায় তাঁর দেহপ্রভা; তাঁর ঈষৎ হাসিযুক্ত মুখপদ্ম আঁচলে অর্ধাবৃত। চকোরী পাখি যেমন চন্দ্রের অমৃত কিরণ পান করেন, তেমনি শ্রীমতি রাধিকা তার চঞ্চল নেত্রযুগল দ্বারা নিজ কান্ত(স্বামী) কৃষ্ণের মুখচন্দ্রের দিকে তাকিয়ে তার রূপমাধুর্য্যসুধা আস্বাদন করছেন। . পদ্মপুরাণে আরও বলা হয়েছে- ততঃ সারিশুকানাঞ্চ শ্রুত্বা বাগাহবং মিথঃ। নির্গচ্ছতস্ততঃ স্থানাদগন্তুকামৌ গৃহং প্রতি ॥ কৃষ্ণঃ কান্তামনুজ্ঞাপ্য গবামভিমুখং ব্রজেৎ। সা তু সূর্যাগৃহৎ গচ্ছেৎ সখীমণ্ডলসংযুতা ॥ [ পদ্মপুরাণ, পাতালখন্ড, অধ্যায় ৫২, শ্লোক ৭৬,৭৭ ] বঙ্গানুবাদ: রাধার ভ্রূভঙ্গী দর্শন ও কৃষ্ণের প্রতি তিরস্কার বাক্য শ্রবণ করার নিমিত্ত শুক-সারিকা- পক্ষিগণ সেখানে উপস্থিত হয়ে নিজেরাই আবার বাগ্যুদ্ধ বাধিয়ে দিলো। রাধা- কৃষ্ণ তাদের বাগযুদ্ধ শ্রবণ করে গৃহগমনাভিলাষে সেখান হতে বহির্গত হন। কৃষ্ণ তার কান্তা(পত্নী) শ্রীমতি রাধিকার অনুমতি নিয়ে গাভীবৃন্দের অভিমুখে গমন করেন। শ্রীমতি রাধা সখীগণসমভিব্যাহারে সূর্য্য পূজা করার জন্য সূর্য্য-গৃহে গমন করেন। . নারদীয় মহাপুরাণে উল্লেখ রয়েছে – কদাচিৎ তয়া সার্দ্ধ স্থিতস্য মুনিসত্তম কৃষ্ণস্য। বামভাগাৎ জাতো নারায়ণঃ স্বয়ম্।। রাধিকায়াশ্চ বামাংগান্মহালক্ষ্মীভূব হ। ততঃ কৃষ্ণো মহালক্ষ্মীং দত্ত্বা নারায়ণায় চ।। বৈকুন্ঠ স্থাপযামাস শশ্বত্পালনকর্মণি।। [ নারদীয় মহাপুরাণ, পূর্বভাগ, ৩।৮৩।১২-১৪ ] বঙ্গানুবাদ: হে মুনিসত্তম, কোনো এক সময় অর্ধাঙ্গিনী রাধা সহিত অবস্থানকালে কৃষ্ণের বামাঙ্গ থেকে নারায়ণ জাত হলো আর শ্রীমতি রাধিকার বামাঙ্গ হতে মহালক্ষ্মীর আবির্ভাব হলো। কৃষ্ণ তখন মহালক্ষ্মী নারায়ণকে প্রদান করলেন এবং বৈকুণ্ঠে স্থিতি প্রদান করে নিত্য পালনকার্যে নিযুক্ত করলেন। . স্কন্দপুরাণে উল্লেখ রয়েছে – বৃষভানুসুতাকান্তবিহারে কীর্ত্তনশ্রিয়া। সাক্ষাদিব সমাবৃত্তে সর্ব্বেহনন্যদৃশোহভবন।। [ স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখন্ড, শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্ম্যম, অধ্যায় ২ ৩১ ] বঙ্গানুবাদ: বৃষভানুর কণ্যা শ্রীমতি রাধিকার কান্ত(পতি) সাক্ষাৎ কৃষ্ণের বিহারভূমি কীর্ত্তনসমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ হলো এবং সকলেই যেন অনন্য নয়ন হয়ে সেই উৎসব দর্শন করিতে লাগিলেন। শিব পুরাণে বলা হয়েছে- কালবতীসুতা রাধা সাক্ষাদগোলোকবাসিনী। গুপ্তস্নেহানিবদ্ধা সা কৃষ্ণপত্নী ভবিষ্যতি।। [ শিব মহাপুরাণ, রুদ্রসংহিতা, পার্বতীখন্ড, অধ্যায় ২ শ্লোক ৪০; সনদকুমার উক্তি] বঙ্গানুবাদ: সাক্ষাৎ গোলকনিবাসিনী রাধা কলাবতীর কণ্যা হয়ে শ্রীকৃষ্ণের সহিত গোপণে স্নেহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ভবিষ্যতে কৃষ্ণপত্নী হবেন। . ব্রহ্মবৈবর্ত মহাপুরাণে উল্লেখ রয়েছে – স্বয়ং রাধা কৃষ্ণপত্নী কৃষ্ণবক্ষঃস্থলস্থিতা । প্রাণাধিষ্ঠাতৃদেবী চ তস্যৈব পরমাত্মনঃ।। [ ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, অধ্যায় ৪৮, শ্লোক ৪৭ ] বঙ্গানুবাদ: শ্রীমতী রাধিকা স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের পত্নীরূপে অবস্থিতা। নিরন্তর তিনি পরমব্রহ্ম কৃষ্ণের বক্ষঃস্থলে স্থিতি করেন, ফলতঃ সেই রাধা পরাৎপর কৃষ্ণের প্রাণাধিষ্ঠাত্রী দেবীরূপে নির্দিষ্টা আছেন। . ব্রহ্মবৈবর্ত মহাপুরাণে আরো উল্লেখ রয়েছে – তদা ব্রহ্মা তয়োর্মধ্যে প্রজ্বাল্য চ হুতাশনম্ । হরিং সংস্মৃত্য হবনং চকার বিধিনা বিধিঃ ॥উত্থায় শয়নাৎ কৃষ্ণ উবাস বহ্নিসন্নিধৌ । ব্ৰহ্মণোক্তেন বিধিনা চকার হবনং স্বয়ম্ ॥প্রণম্য চ হরিং রাধাং দেবানাং জনকঃ স্বয়ম্। [ ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কৃষ্ণজন্মখণ্ড ১৫।১২৪-১২৬ ] বঙ্গানুবাদ: ব্রহ্মা ভক্তিপূর্ব্বক রাধাকৃষ্ণকে প্রণাম করলেন এবং তাঁদের মধ্যে অগ্নি প্রজ্বলিত করে শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করে বিবিধক্রমে হোম করতে লাগলেন । তখন কৃষ্ণ শয্যা হতে উত্থান করে অগ্নি সমীপে উপবেশনপূর্ব্বক ব্রহ্মোক্ত বিধিক্রমে স্বয়ং হোম করতে আরম্ভ করলেন। এরপর বেদকর্ত্তা ব্রহ্মা শ্রীকৃষ্ণ ও রাধিকাকে প্রণাম করলেন। . ব্রহ্মবৈবর্ত মহাপুরাণে আরো উল্লেখ রয়েছে – মূঢ়া রায়াণপত্নী ত্বাং বক্ষ্যন্তি জগতীতলে’ [ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কৃষ্ণজন্মখন্ড, অধ্যায় ৩, শ্লোক ১০৩ ] বঙ্গানুবাদ: ভূতলে যারা মূঢ় (মূর্খ), তারাই শ্রীমতি রাধিকাকে রায়াণ(আয়ান) এর পত্নী বলে মনে করে। . ব্রহ্মাণ্ড পুরাণে উল্লেখ রয়েছে – রাধাকৃষ্ণেতি দ্বেনাম সুস্মৃতোগোপ নন্দিনী। মহাপাপোপ পাপৌঘ কোটিশো যাস্তি সংক্ষয়ং। মৎসাযুজ্য পদমিতো মোদতে দেববৎ সদা।। [ ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ, উত্তরখণ্ড, রাধাহৃদয় ১৩।৭৪ ] বঙ্গানুবাদ: শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে গোপনন্দিনী রাধে, রাধা-কৃষ্ণ এই দুুই নাম যে ব্যাক্তি স্মরণ করেন,মহাপাপ ও উপপাপ প্রভৃতি কোটিপাপ তাঁর বিনষ্ট হবে। মৃত্যুর পর ইহলোক ত্যাগ করে তিনি আমার ধাম (চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবন ধাম) প্রাপ্ত হয়ে দেবতার মতো পরমানন্দে দিন যাপন করবেন। শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে উল্লেখ রয়েছে – অনয়ারাধিতো নূনং ভগবান হরিরীশ্বরঃ। যন্ নো বিহায় গোবিন্দঃ প্রীতো যামনয়দ্রহঃ।। [ শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ ১০।৩০।২৮] বঙ্গানুবাদ: এই বিশেষ গোপী নিশ্চয়ই
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু যে “স্বয়ং শ্রীহরি” শাস্ত্রে কোথায় বলা হয়েছে?
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু যে স্বয়ং শ্রীহরি, তার ৩২ টি প্রামাণিক শাস্ত্রীয় প্রমাণ: কি পন্ডিত, কি তপস্বী, কিবা গৃহী, যতি। চৈতন্য-বিমুখ যেই, তার নাই গতি।। [ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, আদিলীলা ১২।৭২ ] কৃষ্ণভক্তিবিহীনানাং পাপ্মনা গ্রসিতাত্মনাম্ ॥ ৬০ ॥ কলৌ নষ্ট দৃশাং নৈব জনানাং কুত্রচিদ্ গতিঃ । ইতি মত্বা কৃপাসিন্ধুরংশেন কৃপযা হরিঃ ॥ ৬১ ॥ প্রচ্ছন্নো ভক্তরূপেণ কলাববতরিষ্যতি । ভুবং প্রাপ্তে তু গোবিন্দশ্চৈতন্যাখ্যো ভবিষ্যতি ॥ ৬২ ॥ তস্য কর্মাণি মনুজাঃ কীর্তযিষ্যন্তি কেচন । বহির্মুখা নমংস্যন্তে প্রচ্ছন্নং পরমেশ্বরম্ ॥ ৬৩।। গৌরাঙ্গো নাদগম্ভীরঃ স্বনামামৃতলালসঃ । দয়ালুঃ কীর্তনগ্রাহী ভবিষ্যতি সচীসুতঃ ॥ ৬৪ ॥ [ কৃষ্ণযামল তন্ত্র, অধ্যায় ২৮, শ্লোক ৬০-৬৪] অনুবাদ: কলিযুগ কৃষ্ণভক্তিবিহীন এবং লোকেদের পাপ দ্বারা গ্রস্থ, তাই কলিহত জীবের দুর্গতির কথা চিন্তা করে কৃপাসিন্ধু ভগবান স্বয়ং অবতীর্ণ হয়ে ভক্তরূপে নিজেকে প্রচ্ছন্নভাবে লীলা করবেন। পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে তিনি ‘চৈতন্য’ নামে বিখ্যাত হবেন এবং তাঁর কর্মাদি বিভিন্ন লোকেরা কীর্তন করবে। বহির্মুখ লোকেরাও সে প্রচ্ছন্ন পরমেশ্বরকে নমস্কার করবে। সে ভগবান ‘গৌরাঙ্গ‘ নিজ নামের অমৃত আস্বাদনের লালসায় সংকীর্তন ধর্ম প্রচারের জন্য ভবিষ্যতে শচীমাতার পুত্ররূপে আবির্ভূত হবেন। কৃষ্ণ নাহি মানে, তাতে দৈত্য করি মানি । চৈতন্য না মানিলে তৈছে দৈত্য তারে জানি।। [ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত, আদিলীলা, ৮।৯ ] শ্লোকার্থ: যদি কেউ শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলে না মানে, তবে সে একটি দৈত্য। তেমনই, যে শ্রীচৈতন্যদেবকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলে মানতে না চায়, তাকেও একটি দৈত্য বলেই জানতে হবে। ৩২ টি প্রামাণিক শাস্ত্রীয় প্রমাণ: প্রমাণ-(১) দিবিজা ভুবি জায়ধ্বং জায়ধ্বং ভক্তরূপিণঃ। কলৌ সঙ্কীর্তনারম্ভে ভবিষ্যামি শচীসুতঃ।। কৃতে জপৈ মংম প্রীতি স্ত্রেতায়াং হোম-কর্মভিঃ । দ্বাপরে পরিচর্য্যাভিঃ কলৌ সংকীর্ত্তনৈরপি ॥ ২৬॥ [ বায়ুপুরাণ,শেষখন্ড ১৪।২৮ ] [বারানশি চুম্বিকা এডিশান] অনুবাদ: হে দেবগণ, তোমরা সকলে ভক্তরূপ ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে হরিনাম সঙ্কীর্তন আরম্ভ করো। তোমাদের সঙ্কীর্তনে আমি শচীগর্ভ হতে জন্মগ্রহণ করবো। সত্যযুগে জপ-ধ্যান, ত্রেতাযুগে হোম, দ্বাপর যুগে পূজাদি এবং কলিযুগে সংকীর্তনের দ্বারাই আমি প্রীত হই। . প্রমাণ-(২) তদাপ্যহং ভবিষ্যামি গঙ্গাদ্বারে কলের্ধুরি।। [ বায়ুপুরাণ ২৩।৫১] [নবভারত] অনুবাদ: তখন কলির প্রথমে আমি (ভগবান) গঙ্গাধারে আবির্ভূত হইব। . প্রমাণ-(৩) মহেন্দ্র তব যা পত্নী শচী নাম্না মহোত্তমা। দদৌ তস্যৈ বরং বিষ্ণুভবিতাস্মি সুতঃ কলৌ।। তদাজ্ঞয়া চ সা দেবীং পুরীং শান্তিময়ীং শুভাম্। গৌড়দেশে চ গঙ্গায়া কূলে লোকনিবাসিনীম্।। [ ভবিষ্যপুরাণ, দ্বিতীয়খণ্ড, ১৭।৬০,৬১ ] অনুবাদ: জীব বললেন- হে মহেন্দ্র, ভগবান বিষ্ণু আপনাকে বর দান স্বরূপ উত্তম শচী দিয়েছিলেন, আপনার আদেশে তিনি গৌড়দেশে গঙ্গাতীরে জন্ম লাভ করবে এবং আমি পুত্ররূপে কলিযুগে তোমার কাছে আবির্ভূত হব। . প্রমাণ-(৪) ভবিষ্যামি শচীপুত্রঃ কলৌ সংকীর্ত্তনাগমে। হরিনাম প্রদানেন লোকান্ সংতারয়াম্যহম।। [ ব্রহ্মযামলঃ তন্ত্র, ১।২১ ] অনুবাদ: কলিতে সংকীর্তন যজ্ঞের প্রারম্ভে শচীপুত্র রূপে আবির্ভূত হইয়া আমি হরিনাম প্রদান করত জনসমূহকে নিস্তার করিয়া থাকি। . প্রমাণ-(৫) অহমেব দ্বিজশ্রেষ্ঠ নিত্যং প্রচ্ছন্নবিগ্রহঃ। ভগবদ্ভক্তরূপেণ লোকান্ রক্ষামি সর্ব্বদা।।৩৫। [ বৃহন্নারদীয়পুরাণ ৫।৩৫ ] অনুবাদ: ভগবান বলিলেন,”হে দ্বিজশ্রেষ্ঠ! আমিই ভগবানের ভক্তরূপে (ভক্তাবতার শ্রীচৈতন্য) দেহ গোপনপূর্ব্বক সর্ব্বদাই লোকসমূহের রক্ষা করি।” . প্রমাণ-(৬) কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাকৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্রপার্ষদম্। যজ্ঞৈঃ সংকীৰ্তনপ্রায়ৈজন্তি হি সুমেধসঃ ৷৷ [ শ্রীমদ্ভাগবত ১১।৫।৩২ ] অনুবাদ: যে পরমেশ্বর ভগবান ‘কৃষ’ ও ‘ণ’ শব্দাংশ দুটি নিরন্তর উচ্চারণ করেন, কলিযুগের বুদ্ধিমান মানুষেরা তাঁর উপাসনার নিমিত্ত সমবেতভাবে নাম-সংকীর্তন করে থাকেন। যদিও তাঁর গাত্রবর্ণ অ-কৃষ্ণ, তবুও তিনি স্বয়ং কৃষ্ণ। তিনি সর্বদা তাঁর পার্ষদ, সেবক, সংকীর্তনরূপ অস্ত্র ও ঘনিষ্ঠ সহচর পরিবৃত থাকেন। . প্রমাণ-(৭) উর্দ্ধাম্নায় তন্ত্রে গৌর মন্ত্র ও গৌর উপাসনা বিধি বর্ণিত আছে- শ্রী নারদ উবাচ। কৃষ্ণরূপেন ভগবান্ কলৌ পাপপ্রণাশকৃৎ। গৌররূপেন ভগবান্ ভাবিতঃ পূজিতস্তথা।। ওঁ গৌরায় নম ইত্যেষ মন্ত্রো লোকেষু পূজিতঃ। [ উর্দ্ধাম্নায় সংহিতা, ৩য় অধ্যায় ] অনুবাদ: শ্রী নারদ বললেন! শ্রীকৃষ্ণ নামের দ্বারা ভগবান পাপ সমূহ নাশ করেন, ও গৌর রূপে ভগবান পূজিত হন। ‘ওঁ গৌরায় নমঃ’– এই মন্ত্র দ্বারা তিনি সর্বলোক দ্বারা পূজিত হন। . প্রমাণ-(৮) পূণ্য ক্ষেত্রে নবদ্বীপে ভবিষ্যামি শচীসূতঃ। [ কৃষ্ণযামল তন্ত্র, ২৮।৬২,৬৩,৬৪,৬৫,৬৬ ] অনুবাদ: পূন্যক্ষেত্রে নবদ্বীপে আমি শচীদেবীর পুত্ররূপে আবির্ভূত হব। . প্রমাণ-(৯) শ্যামঞ্চ গৌরং বিদিতং দ্বিধা মহস্তবৈ সাক্ষাৎ পুরুষোত্তমোত্তম৷ গোলকধামাধিপতিং পরেশং পরাৎপরং ত্বাং শরণং ব্রজাম্যহম্।। [ গর্গসংহিতা,গোলকখণ্ড ১৬।২৭ ] অনুবাদ: হে সাক্ষাৎ পুরুষোত্তম! শ্যাম ও গৌর তোমার দ্বিবিধ তেজ, তুমি গোলোকধামপতি পরেশ পরাৎপর; আমি তোমার শরণ লইলাম। . প্রমাণ-(১০) গঙ্গায়া দক্ষিণেভাগে নবদ্বীপে মনোরমে। কলিপাপ বিনাশায় শচীগর্ভে সনাতনি।। জনিষ্যতি প্রিয়ে! মিশ্রপুরন্দরগৃহে স্বয়ম্। ফাল্গুনে পৌণমাস্যাঞ্চনিশায়াংগৌরবিগ্রহঃ।। [ বিশ্বসার তন্ত্র, উত্তরাখন্ড, ১১ পটল ] অনুবাদ: দেব দেবী পার্ব্বতীকে বলেছেন- হে প্রিয়ে! কলিকলুষ বিনাশের নিমিত্ত গঙ্গা দক্ষিণ তীরবর্ত্তী অতি মনোরম নবদ্বীপ গ্রামে ফাল্গুনী পূর্ণিমা নিশিতে মিশ্র পুরন্দর গৃহে শচীদেবীর গর্ভে স্বয়ং ভগবান গৌররূপে অবতীর্ণ হবেন। . (প্রমাণ-১১) সতত পরম দেবো, শ্রী শচীদেবী নন্দন,দ্বিনেত্র দ্বিভুজ গৌর, তপ্ত জাম্বুনদ প্রভা।। [ সতাভাতাতন্ত্র, ৫।৪১ ] অনুবাদ: তখন সেই পরম দেব, যিনি শচীদেবীর পুত্র, যার দুই চক্ষু, দুই হাত, যার প্রভা তপ্ত জাম্বুনদের ন্যায়। . শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিলো ‘বিশ্বম্ভর’। তাঁর মাতার নাম শচীদেবী, তাই তাকে ‘শচীসূত’ নামেও ডাকা হয়। তাঁর গাত্রবর্ণ তপ্ত স্বর্ণের ন্যায় গৌরবর্ণ হওয়ায় তাঁকে ‘গৌর’, ‘হেমাঙ্গ’, ‘গৌরাঙ্গ’ ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। প্রমাণ-(১২) বিশ্বম্ভর বিশ্বেন মা ভরসা পাহি স্বাহা। [ অথর্ববেদ, ২য় কাণ্ড, ৩য় অনুবাক, ৬ সূক্ত, ৫ মন্ত্ৰ ] অনুবাদ: হে বিশ্বম্ভর,সকল পোষণ শক্তির দ্বারা আমাকে মৃত্যু থেকে রক্ষা কর। স্বাহা মন্ত্রে তোমাকে আহুতি দিচ্ছি। . প্রমাণ-(১৩-১৫) ঋগ্বেদ সংহিতা,(১।১৬।৫), (৮।৪।৩), (৪।৫৮।২)- এই সকল মন্ত্রে স্পষ্ট ভাবে পরমব্রহ্মের “গৌর” নাম রয়েছে। . প্রমাণ-(১৬) চৈতন্যরূপশ্চৈতন্যশ্চেতনাগুণবর্জ্জিতঃ। অদ্বৈতাচারনিপুণোহদ্বৈতঃ পরমনায়কঃ।। [ নারদপঞ্চরাত্র,চতুর্থরাত্র, ৮।১৫৪ ] অনুবাদ: চৈতন্যরূপ, চৈতন্য, চেতনাগুণবর্জ্জিত, অদ্বৈতাচারনিপুণ, অদ্বৈত, পরমনায়ক। . প্রমাণ-(১৭) মহাপ্রলয়কারী চ শচীসূতজয়প্রদঃ।। [ নারদপঞ্চরাত্র,চতুর্থরাত্র, ৮।১৫৪ ] অনুবাদ: মহাপ্রলয়কারী, শচীসূত, জয়প্রদ। . প্রমাণ-(১৮) শচীসুতঃ জয়প্রদঃ।। [ গৌতমীয় তন্ত্র,গোপালসহস্রনাম স্ত্রোত্র ] অনুবাদ: শচীপুত্র জয় যুক্ত হোন। . প্রমাণ-(১৯) নমো ভুম্যাদিরূপায় নমশ্চৈতন্যরূপিণে।৫৯। [ বৃহন্নারদীয়পুরাণ ৪।৫৯ ] অনুবাদ: পৃথিবী প্রভৃতি সমস্ত তোমার রূপ, তুমি চৈতন্য স্বরূপ, তোমাকে নমস্কার। . পদ্মপুরাণের উত্তরখন্ডে শ্রীহরিকে ‘চৈতন্য’, ‘বিশ্বম্ভর’ ইত্যাদি নামে সম্বোধন করা হয়েছে যা চৈতন্য মহাপ্রভুকেই নির্দেশ করে। যথা- প্রমাণ-(২০) পুরাণপুরুষঃ প্রত্যকচৈতন্যঃ পুরুষোত্তমঃ।। [ পদ্মপুরাণ,উত্তরখণ্ড ৭১।১৩১] অনুবাদ: পুরাণপুরুষ, প্রত্যকচৈতন্য, পুরুষোত্তম। . প্রমাণ-(২১) বিশ্বম্ভরস্তীর্থপাদঃ পুণ্যশ্রবণকীৰ্ত্তনঃ। [ পদ্মপুরাণ,উত্তরখণ্ড ৭১।১৫৬ ] অনুবাদ: বিশ্বম্ভর, তীর্থপাদ, পুণ্যশ্রবণকীৰ্ত্তন। . প্রমাণ-(২২) মহাভারত-উক্ত প্রমাণ- (ইতিহাস) আনুশাসনিক-পৰ্বনি (৬নং)দানধর্মে-ভীষ্ম-যুধিষ্ঠির সংবাদে বিষ্ণুসহস্রনাম প্রসঙ্গে- সুবর্ণবর্ণো হেমাঙ্গো বরাঙ্গশ্চন্দনাঙ্গদী। ৯২।। সন্ন্যাসকৃচ্ছমঃ শান্তো নিষ্ঠাশান্তি-পরায়ণঃ।।৭৫।। [ মহাভারত, অনুশাসন পর্ব, দানধর্ম, অধ্যায় ১৪৯।৯২,৭৫ ] অনুবাদ : হরিনাম প্রচার উপলক্ষে “কৃষ্ণ” এই উত্তম বর্ণদ্বয় সর্বদা বর্ণন করেন বলিয়া তাঁহার একটি নাম সুবর্ণবর্ণ; তাঁহার অঙ্গ স্বর্ণের ন্যায় উজ্জ্বল বলিয়া তাঁহার একটি নাম হেমাঙ্গ; সাধারণ লোক অপেক্ষা তাঁহার অঙ্গ শ্রেষ্ঠ বলিয়া তাঁহার একটি নাম বরাঙ্গ; চন্দনের অঙ্গদ (কেয়ূর) পরিধান করেন বলিয়া তাঁহার নাম চন্দনাঙ্গদী; সন্ন্যাসগ্রহণ করেন বলিয়া তাঁহার নাম সন্ন্যাসকৃৎ; ভগবন্নিষ্ঠ-বুদ্ধি বলিয়া তাঁহার নাম শম; অচঞ্চল-চিত্ত বলিয়া তাঁহার নাম শান্ত; কৃষ্ণভক্তিতে নিষ্ঠা ও নিবৃত্তিপরায়ণ বলিয়া তাঁহার নাম নিষ্ঠাশান্তি-পরায়ণ। এই সকল নামে অভিহিত হওয়ায় কলিতে গৌরাঙ্গাবতার সূচিত হইয়াছে। . প্রমাণ-(২৩) স হোবাচ । রহস্যং তে বদিষ্যামি – জাহ্নবীতীরে নবদ্বীপে গোলোকাথ্যে ধাম্নি গোবিন্দো দ্বিভুজো গৌরঃ সর্বাত্মা মহাপুরুষো মহাত্মা মহাযোগী
মহাবৈকুন্ঠেশ্বরী ‘মহালক্ষ্মী’ বৃন্দাবনেশ্বরী শ্রীরাধিকার বৈভব প্রকাশ
মহাবৈকুন্ঠেশ্বরী ‘মহালক্ষ্মী’ বৃন্দাবনেশ্বরী শ্রীরাধিকার বৈভব প্রকাশ (২১ টি শাস্ত্র প্রমাণ) নারায়ণাবতার ব্যাসদেব বলেন-“পুরুষোপ্রকৃতি চ আদ্যৌ রাধাবৃন্দাবনেশ্বর অর্থাৎ, রাধা ও বৃন্দাবনেশ্বর কৃষ্ণই আদ্যা প্রকৃতি ও আদিপুরুষ।“-( পদ্মপুরাণ,পাতালখণ্ড ৪৬।৪৭ ) শ্রুতিবাক্যে এ পরমাপ্রকৃতির বর্ণনা করা হয়েছে এরূপে- “তস্যাদ্যা প্রকৃতী রাধিকা নিত্যা নির্গুণা সর্বালঙ্কারশোভিতা প্রসন্নাশেষলাবণ্যসুন্দরী। অস্মদাদীনাং জন্ম তদধীনং অস্যাংশাদ বহুবো বিষ্ণুরুদ্রাদয়ো ভবন্তি। অর্থাৎ, সেই পরমপুরুষের আদ্যা প্রকৃতি রাধিকা। তিনিও শ্রীকৃষ্ণের নিত্যা অর্থাৎ কেবল দ্বাপরে কুব্জাদির ন্যায় কৃষ্ণ লীলা সঙ্গিনী নন। শ্রীকৃষ্ণের ন্যায় তিনিও নির্গুণা অর্থাৎ গুণাতীত। সর্ব অলঙ্কারে সুশোভিতা, প্রসন্না অশেষলাবণ্যবতী আমাদের সকলের আদি, তাঁর অংশে কোটি বিষ্ণুরুদ্রাদির জন্ম হয়।“-( অথর্ববেদ, পুরুষবোধিনী শ্রুতি, ৩য় প্রপাঠক ) পরমপুরুষের ন্যায় এ পরাপ্রকৃতি রাধিকা গুণাতীত হওয়া সত্ত্বেও অনন্ত সুগুণের আকর, সে অনুসারে তাঁর অনন্ত নাম। বহুবিধ শাস্ত্রে তাঁর ষোড়শনাম, শতনাম, সহস্রনাম বর্ণনা করেছেন ব্রহ্মা-নারদ-ব্যাসাদি ভাগতবগণ। ললিতা, পদ্মা, মহালক্ষ্মী, দূর্গা, সরস্বতী, লীলা, নীলা সবই রাধিকার নাম। এ আদিপুরুষ মাধুর্যমণ্ডিত কৃষ্ণ যখন আপন ঐশ্বর্যস্বরূপ বিলাসবিগ্রহ চতুর্ভুজ পরমব্যোম নারায়ণ রূপ ধারণ করেন, তখন তাঁর সেবা অভিলাষে শ্রীমতি রাধিকাও বিলাসবিগ্রহ ঐশ্বর্যমন্ডিতা চতুর্ভুজ নারী রূপ প্রকাশ করেন এবং নিজের ‘মহালক্ষ্মী’ ‘শ্রী’ ‘পদ্মা’ ‘ইন্দিরা’ প্রভৃতি নামে এর নামকরণ করেন। অতঃপর অনাদিআদি শ্রীকৃ্ষ্ণ সেই নারায়ণ-লক্ষ্মীকে মহা বৈকুণ্ঠে স্থাপন করেন। নারদ নারায়ণের শক্ত্যাবেশ অবতার। নারদীয় মহাপুরাণে উল্লেখ আছে- (১) কদাচিৎ তয়া সার্দ্ধ স্থিতস্য মুনিসত্তম কৃষ্ণস্য। বামভাগাৎ জাতো নারায়ণঃ স্বয়ম্।।১২।। রাধিকায়াশ্চ বামাংগান্মহালক্ষ্মীভূব হ। ততঃ কৃষ্ণো মহালক্ষ্মীং দত্ত্বা নারায়ণায় চ।। বৈকুন্ঠ স্থাপযামাস শশ্বত্পালনকর্মণি।। ১৪।। ( নারদীয় মহাপুরাণ, পূর্বভাগ, ৩।৮৩।১২-১৪ ) অনুবাদ: হে মুনিসত্তম, কোনো এক সময় অর্ধাঙ্গিনী রাধা সহিত অবস্থানকালে কৃষ্ণের বামাঙ্গ থেকে নারায়ণ জাত হলো আর শ্রীমতি রাধিকার বামাঙ্গ হতে মহালক্ষ্মীর আবির্ভাব হলো। কৃষ্ণ তখন মহালক্ষ্মী নারায়ণকে প্রদান করলেন এবং বৈকুণ্ঠে স্থিতি প্রদান করে নিত্য পালনকার্যে নিযুক্ত করলেন। আবার, . ‘নারদপঞ্চরাত্র’তে স্বয়ং মহাদেবও নারদের নিকট ব্যাখা করেছেন, কিভাবে শ্রীমতি রাধিকা হতে সমস্ত লক্ষ্মীতত্ত্বের প্রকাশ হয়েছে। (২) রাধাবামাংশসম্ভূতা মহালক্ষ্মীঃ প্রকীৰ্ত্তিতা । ঐশ্বর্য্যাধিষ্ঠাত্রী দেবীশ্বরস্যেব হি নারদ।।৬০।। তদংশা সিন্ধুকন্যা চ ক্ষীরোদমথনোদ্ভবা। মর্ত্যলক্ষ্মীশ্চ সা দেবী পত্নী ক্ষীরোদশায়িনঃ।।৬১।। তদংশা স্বৰ্গলক্ষ্মীশ্চ শক্রাদীনাং গৃহে গৃহে। স্বয়ং দেবী মহালক্ষ্মীঃ পত্নী বৈকুণ্ঠশায়িনঃ।। ৬২।। ( নারদপঞ্চরাত্র, ২য় রাত্র, অধ্যায় ৩, শ্লোক ৬০-৬২ ) অনুবাদ: রাধার বামাংশসম্ভূতা নারী মহালক্ষ্মী নাম গ্রহণ করেন, হে নারদ! তিনি ঈশ্বরীদেবী রাধিকার ন্যায় ঐশ্বর্য্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হন। তাঁর অংশসম্ভূত কন্যা ক্ষীরোদ মথনোদ্ভূত হইয়া ‘লক্ষ্মী’ নাম গ্রহণ পূৰ্ব্বক ক্ষীরোদশায়ী বিষ্ণুর পত্নী হইয়াছেন। তাঁহার অংশসম্ভূতা হইয়া শক্রাদির গৃহে গৃহে অবস্থিতি করিয়া স্বৰ্গলক্ষ্মী হইয়াছেন এবং স্বয়ং মহালক্ষ্মী নাম গ্রহণ পূর্ব্বক বৈকুণ্ঠশায়ী নারায়ণের পত্নী হইয়াছেন। . পদ্মপুরাণের উল্লেখ আছে, একবার নারদ ভেবেছিলেন ব্রজে যেহেতু বিষ্ণু আছেন, তাহলে লক্ষ্মীও নিশ্চয় এখানে অবতীর্ণ হয়েছেন। তাই তিনি ব্রজে লক্ষ্মীর সন্ধান করতে করতে বৃষভানুর ঘরে উপস্থিত হলেন। তথায় তিনি বালিকা রাধিকাকে দর্শন করে ভেবেছিলেন, ইনি বুঝি বিষ্ণুপত্নী ভগবতী লক্ষ্মী। কিন্তু শ্রীমতি রাধিকা যখন তাকে তাঁর নিত্য কিশোরী রূপের দর্শন করালেন, তখন নারদ উপলব্ধি করতে পারলেন, শ্রীমতি রাধিকার রূপ-গুণ-ঐশ্বর্য লক্ষ্মীর চেয়েও অধিক। (৩) লক্ষ্মীঃ সরস্বতী কান্তিবিদ্যাদ্যাশ্চ বরস্ত্রীয়ঃ। ছায়ামপি স্পৃশত্যশ্চ কদাচিন্নৈব দৃশ্যতে ॥ ৪২।। বিষ্ণোর্যন্মোহনং রূপং হরো যেন বিমোহিতঃ। ময়া দৃষ্টঞ্চ তদপি কুতো হস্যাঃ সদৃশ ভবেৎ।। ৪৩।। ততোহস্যাস্তত্ত্বমাজ্ঞাতুং ন মে শক্তিঃ কথঞ্চন। অন্যে চাপি ন জানন্তি প্ৰায়েণৈনাং হরেঃ প্রিয়াম।।৪৪।। ( পদ্মপুরাণ, পাতালখন্ড, ৩৪।৪২-৪৪ ) অনুবাদ: নারদ নিশ্চয় করলেন, “লক্ষ্মী, সরস্বতী, কান্তি ও বিদ্যা প্রভৃতি বরস্ত্রীগণ কখনো শ্রীমতি রাধিকার ছায়াও স্পর্শ করিতে পারেন না। বিষ্ণু লক্ষ্মীর যে মোহনরূপে মুগ্ধ হইয়াছেন, মহাদেব পার্বতীর যে রূপে বিমোহিত হইয়াছেন আমি ঐ সকল রূপ দেখিয়াছি, তাঁহারাও তো রাধিকার রূপের সদৃশ নহে। অতএব ইহার তত্ত্ব জানিতে আমার শক্তি নাই, অপর কেহও এই হরিপ্রিয়াকে রাধিকাকে জানেন না।। এছাড়াও উক্ত পদ্মপুরাণেই উল্লেখ হয়েছে- (৪) দেবী কৃষ্ণময়ী প্রোক্তা রাধিকা পরদেবতা। সর্বলক্ষ্মীস্বরূপা সা কৃষ্ণাহ্লাদস্বরূপিণী।। ( পদ্মপুরাণ, পাতালখন্ড, ৫০।৫৩; গৌতমীয় তন্ত্র ) অনুবাদ: দেবী রাধিকা কৃষ্ণময়ী। তাই তিনি পরদেবতা রূপে কথিতা হন। তিনি সর্বলক্ষ্মীরূপিণী এবং কৃষ্ণের হ্লাদিনী স্বরূপা। এ শ্লোকটি বলদেব বিদ্যাভূষণপাদ ‘প্রমেয় রত্নাবলী’ গ্রন্থে গৌতমীয় তন্ত্র হতে উদ্ধৃত করেছেন৷ এ শ্লোকে শ্রীমতি রাধিকাকে ‘সর্ব্বলক্ষ্মীস্বরূপা’ বলা হয়েছে, যার অর্থ – সমস্ত লক্ষ্মীই শ্রীরাধিকার অংশভূতা, তিনিই একমাত্র অংশিনী। যেহেতু চিৎধামে মহালক্ষ্মী,মহাদূর্গাদি দেবী এবং নারায়ণ,সদাশিবাদি দেব শ্রীরাধা-বৃন্দাবনেশ্বরেরই প্রকাশ, তাই পদ্মপুরাণে পরবর্তী শ্লোকসমূহে বলা হয়েছে- রাধাই মহালক্ষ্মী, কৃষ্ণ নারায়ণ। রাধা দূর্গা, কৃষ্ণ রুদ্র। রাধা শচী, কৃষ্ণ ইন্দ্র ইত্যাদি- এই ব্যাখান। রুদ্র-সম্প্রদায় সদাশিব হতে আগত। একবার শিব স্ত্রী পার্বতীকে লক্ষ্মীর উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিলো তার বর্ণনা করেছেন। সেই শিব-পার্বতী সম্বাদ শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে পুনরায় নারায়ণ নারদজীকে বর্ণনা করেছিলেন। যথা- (৫) রাধাবামাংশভাগেন মহালক্ষ্মীর্বভূব সা। চতুর্ভূজস্য সা পত্নী দেবী বৈকুন্ঠবাসিনী।। তদংশা রাজলক্ষ্মীশ্চ রাজসম্পৎপ্রদায়িনী। তদংশা মর্ত্ত্যলক্ষ্মীশ্চ গৃহিণাঞ্চ গৃহে গৃহে।। শস্যাধিষ্ঠাতৃদেবী চ সা এব গৃহদেবতা। স্বয়ং রাধা কৃষ্ণপত্নী কৃষ্ণবক্ষঃস্থলস্থিতো।। ( শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, ৪৮।৪৪-৪৬ ) অনুবাদ: ত্রিলোকপ্রসিদ্ধ মহালক্ষ্মী দেবী শ্রীরাধার বামভাগ হইতে উৎপন্না হন এবং তিনি চতুর্ভুজ নারায়ণের প্রিয়তমা ; বৈকুণ্ঠে তাঁহার বাস। মহালক্ষ্মীর অংশ স্বরূপিণী রাজলক্ষ্মী, রাজগণের সম্পদবৃদ্ধি করেন। রাজলক্ষ্মীর অংশ- স্বরূপিণী মৰ্ত্তলক্ষ্মী, প্রতি মনুষ্যের গৃহে বাস করেন। স্বয়ং শ্রীরাধিকা শ্রীকৃষ্ণের বক্ষঃস্থলে নিরন্তর অবস্থান করেন এবং তিনি পরমাত্মা শ্রীকৃষ্ণের প্রাণ সকলের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। কুমার সম্প্রদায় (নিম্বার্ক সম্প্রদায়) এ বহুল চর্চিত শাস্ত্র ‘সনৎকুমার সংহিতা’। উক্ত সংহিতায় উল্লেখ আছে- (৬) শ্রীভূলীলা যোগমায়া চিন্ত্যাচিন্ত্যা তথৈব চ । মোহিনী কৌশলীত্যষ্টৌবহিরঙ্গাশ্চ শক্তয়ঃ ।। ২৯৫।। লীলা প্রেমস্বরূপা চ স্থাপত্যাকর্ষিণী তথা । সংযোগিনী বিয়োগিন্য আহ্লাদিনীত্যন্তরঙ্গিকা।।২৯৬।। ব্রজে শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রস্য সন্তি ষোড়শ শক্তয়ঃ । পোষিকামধুরস্যৈব তস্যৈতা বৈ সনাতনাঃ ।। ২৯৭।। হ্লাদিনী যা মহাশক্তিঃ সর্বশক্তি বরীয়সী । তৎ সারভাবরূপা শ্রীরাধিকা পরিকীর্তিতা ॥ ২৯৮।। ( সনৎকুমার সংহিতা, শ্লোক ২৯৫-২৯৮) অনুবাদ: শ্রী(মহালক্ষ্মী), ভূ, লীলা(নীলা), যোগমায়া, চিন্ত্যা, অচিন্ত্যা, মোহিনী, কৌশলী- এই অষ্টশক্তি শ্রীকৃষ্ণেত বহিরঙ্গা শক্তি। অপরদিকে লীলা প্রেমস্বরূপা, স্থাপনী, আকর্ষণী, সংযোগিনী, বিয়োগিনী ও আহ্লাদিনী – এই অষ্টশক্তি শ্রীকৃষ্ণের অন্তরঙ্গা শক্তি। ব্রজে শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রের এ ষোড়শ সনাতনী শক্তি বিরাজ করেন যাদের দ্বারা তিনি মাধুর্য্য পোষণ করেন। সমস্ত শক্তির মধ্যে মহাশক্তি হ্লাদিনীশক্তি সর্বশ্রেষ্ঠা। এর সারভাবরূপ শ্রীমতি রাধিকা নামে পরিকৃষ্টরূপে কীর্তিত হন। (৭,৮) দ্বাপরযুগে বৃন্দাবনেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং আবির্ভূত হলে তাঁর শক্তিসমূহ ধরিত্রীতে অবতীর্ণ হন৷ রাধিকা বৃষভানুনন্দিনীরূপে, মহালক্ষ্মী রুক্মিনী রূপে এবং সত্যভামাদি অন্যান্য লক্ষ্মীসমূহও দ্বারকায় কৃষ্ণমহিষীরূপে আবির্ভূত হন। স্কন্দপুরাণের বিষ্ণুখন্ডের শ্রীমদ্ভাগবতমমাহাত্ম্যের ২য় অধ্যায়ে রুক্মিনী আদি কৃষ্ণপত্নীগণের রাধাদাস্য অঙ্গিকারের বর্ণনা আছে৷ এছাড়া গর্গসংহিতার দ্বারকখন্ডের ১৬-১৮ নং অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিনীকে শ্রীমতি রাধিকার শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করেন এবং রুক্মিনী তা উপলব্ধি হয়ে রাধিকার আনুগত্য স্বীকার করেন। মধ্ব সম্প্রদায় হতে আগত গৌড়ীয়াচার্য্য শ্রীবলদেব বিদ্যাভূষণপাদ আপন ‘প্রমেয় রত্নাবলি’ গ্রন্থে অথর্ব্বেদীয় পুরুষবোধিনী শ্রুতি হতে একটি মন্ত্র উল্লেখ করেছেন। (৯) দ্বে পার্শ্বে চন্দ্রাবলী রাধিকা চেতি যস্যাংশেন লক্ষ্মীদুর্গাদিকা শক্তিরিতি। ( অথর্ববেদ, পুরুষবোধিনী উপনিষদ, ১ম প্রপাঠক ) অনুবাদ: তাঁর(শ্রীকৃষ্ণের) দুই পাশে চন্দ্রাবলী ও রাধিকা। এই রাধিকা হলেন কৃষ্ণের স্বরূপশক্তি যার অংশে লক্ষ্মী দুর্গাদি শক্তি। এ শ্রুতি মন্ত্রে লক্ষ্মী,দূর্গা প্রাকৃত দেবী নন। ইনারা চিন্ময়ধামস্থিত মহালক্ষ্মী,মহাদূর্গাদি দেবী। ব্রহ্ম-গৌড়ীয় আচার্য্য শ্রীল কৃষ্ণদাস ‘শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত’ গ্রন্থে এভাবে ব্যাখা করেছেন- (১০) কৃষ্ণকান্তাগণ দেখি ত্রিবিধ প্রকার । এক লক্ষ্মীগণ, পুরে মহিষীগণ আর।। ৭৪। । লক্ষ্মীগণ তাঁর বৈভব-বিলাসাংশরূপ। মহিষীগণ বৈভব-প্রকাশস্বরূপ।। ৭৮।। ‘সর্বলক্ষ্মী’ শব্দ পূর্বে করিয়াছি ব্যাখ্যান। সর্বলক্ষ্মীগণের তিহোঁ
কার্তিক মাসে আমিষ আহার বর্জন করতে হয় কেন?
কার্তিক মাসে আমিষ আহার বর্জন করতে হয় কেন? এ সম্পর্কে মহাভারতে ভীষ্মদেব যুধিষ্ঠিরকে বলছেন- চতুয়ো বাষিকান্মাসান যাে মাংসং পরিবজ্জয়েৎ। চত্বারি ভদ্রাণ্যাপ্নোতি কীর্তিমায়ুর্যশাে বলম॥ [ মহাভারত অনুশাসন পর্ব, অধ্যায় ১০০, শ্লোক-৯৩ ] বঙ্গানুবাদ: যিনি বর্ষার চার মাস অর্থাৎ শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক মাসে মাংস বর্জন করেন, তিনি কীর্তি, আয়ু,যশ ও বল এই চারি প্রকার মঙ্গল লাভ করিয়া থাকেন। এ সম্পর্কে মহাভারতে ভীষ্মদেব যুধিষ্ঠিরকে আরো বলছেন- অথবা মাসমেকং বৈ সর্বমাংসান্যভক্ষয়ন। অতীত্য সর্বদুঃখানি সুখং জীবেন্নিরাময়ঃ ॥ বর্জ্জয়ন্তি হি মাংসানি মাসশঃ পক্ষশােহপি বা। তেষাং হিংসানিবৃত্তানাং ব্ৰহ্মলােকো বিধীয়তে ॥ [ মহাভারত অনুশাসন পর্ব, অধ্যায় ১০০, শ্লোক-৯৪,৯৫ ] বঙ্গানুবাদ: যে সমস্ত মানুষ কার্তিক, মাঘ ও বৈশাখের এক মাস সমস্ত মাংস পরিত্যাগ করেন, তারা সকল দুঃখ অতিক্রমপূৰ্ব্বক নিরাময় হয়ে সুখে জীবনযাপন করেন। আর যারা প্রতিটি মাসে ও প্রতিটি পক্ষে মাংস বর্জন করে চলেন, হিংসা হতে নিবৃত্ত সেই সজ্জনদের জন্য ব্ৰহ্মলােক নির্দিষ্ট থাকে। এ সম্পর্কে স্কন্দপুরাণে উল্লেখ রয়েছে- কার্ত্তিকে বর্জ্জয়েন্মাংসং সন্ধানঞ্চ বিশেষতঃ। রাক্ষসীং যোনীমাপ্নোতি সকৃন্মাংসস্য ভক্ষণাৎ।। [ স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখন্ডম-কার্ত্তিকমাসমাহাত্ম্যম, ২।১৮] বঙ্গানুবাদ: অন্য কিছু বর্জন করো বা না করো, কার্তিক মাসে বিশেষভাবে মাংস (আমিষ) ও মদ্য (মাদক) পরিহার করবে। কার্ত্তিকমাসে একবার মাত্র মাংস ভোজন করলে রাক্ষসযোনী প্রাপ্তি ঘটে। তাই যাদের এখনো নিয়মিত ভগবানের প্রসাদ পাওয়ার সৌভাগ্য হয় নি, তাদের বিশেষ ভাবে অবশ্যই কার্তিক মাসে আমিষ বর্জন করা উচিত। ।।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
ভজ-গোবিন্দম্ (~শ্রীপাদ আদি শঙ্করাচার্য )
ভজ-গোবিন্দম্ ( সম্পূর্ণ ) ভজ গোবিন্দং ভজ গোবিন্দং গোবিন্দং ভজ মূঢমতে । সম্প্রাপ্তে সন্নিহিতে কালে নহি নহি রক্ষতি ডুকৃঙ্করণে ॥ ১॥ অর্থ- গোবিন্দের ভজনা করো , গোবিন্দের ভজনা করো, হে মূঢ়মতি ! গোবিন্দের ভজনা করো । মৃত্যুর সমীপ সন্নিকটে ‘ডুকৃঙ্ করণে’ আবৃত্তি তোমায় রক্ষা করতে পারবে না । ( জগৎ গুরু ভগবান আদি শঙ্করাচার্য যখন দেখলেন, অতীব বৃদ্ধ এক ব্রাহ্মণ মৃত্যু কালীন অবস্থায় বসেও, ব্যাকরণের জন্য ‘ডুকৃঙ্ করণে’ নামক একটি ধাতু বারবার আবৃত্তি করে যাচ্ছেন তখন এর অসারতা উপদেশ করে আচার্য তাকে গোবিন্দের ভজনা করতে বলেন । ) মূঢ় জহীহি ধনাগমতৃষ্ণাং কুরু সদ্বুদ্ধিং মনসি বিতৃষ্ণাম্। যল্লভসে নিজকর্মোপাত্তং বিত্তং তেন বিনোদয় চিত্তম্॥ ২॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ- হে মূঢ়জন! কেবলমাত্র অর্থ উপার্জনের তৃষ্ণা পরিত্যাগ করো । এই ধরনের চিন্তা তোমার মনকে কেবলমাত্র জাগতিক করে দেবে, সুতারং মনে এর জন্য বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করো । তোমার উত্তম কর্ম্মের দ্বারা উপার্জিত যে অর্থ, তোমাকে স্বচ্ছল রাখে তার দ্বারাই তোমার মনকে খুশী রাখো। ওহে মূর্খ! নিরন্তর, এই জাগতিক মৃত্যু-গ্রাস থেকে রক্ষাকারী গোবিন্দের ভজনা করো । নারীস্তনভরনাভিদেশং দৃষ্ট্বা মা গা মোহাবেশম্ । এতন্মাংসবসাদিবিকারং মনসি বিচিন্তয় বারং বারম্ ॥ ৩॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ- নারীদের স্তনমন্ডল ও নাভিদেশ মোহের আবেশে দেখে অভিভূত হয়ো না, এসব নিছক মাংস আর মেদ এর বিকার মাত্র। বারবার মনে এই বিচার করো। হে মূঢ়জন! গোবিন্দের ভজনা করো, গোবিন্দের ভজনা করো, সকল মোহ মুক্তির মূল গোবিন্দের ভজনা করো। নলিনীদলগতজলমতিতরলং তদ্বজ্জীবিতমতিশয় চপলম্ । বিদ্ধি ব্যাধ্যভিমানগ্রস্তং লোকং শোকহতং চ সমস্তম্ ॥ ৪॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – জলবিন্দু যেমন পদ্মপত্রের উপর ক্ষণিক সময়ও স্থীর থাকে না, ক্ষণস্থায়ী হয়, তেমনি এই জীবনও অতিশয় চঞ্চল এবং ক্ষণস্থায়ী , অনিশ্চিত । সবসময় জানবে, এই ব্যাধি ও অহংকারগ্রস্থ সমস্ত জগৎ সংসার কেবল এক শোকালয় মাত্র। সুতরাং হে মূঢ়মতি গোবিন্দের ভজনা করো । যাবদ্বিত্তোপার্জনসক্ত-স্তাবন্নিজপরিবারো রক্তঃ । পশ্চাজ্জীবতি জর্জরদেহে বার্তাং কোঽপি ন পৃচ্ছতি গেহে ॥ ৫॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ- ওহে, যতদিন তুমি অর্থ উপার্জন করে যাবে , ততদিন তোমার পরিবার পরিজন তোমার সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখবে । (ভালোবাসবে, মিথ্যা প্রশংসা করবে )। পরে যখন জর্জর দেহ নিয়ে বৃদ্ধ হবে তখন গৃহে তোমার সঙ্গে কেউ ভালো করে দুটো কথা অব্দি বলবে না। অতএব, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো । যাবৎপবনো নিবসতি দেহে তাবৎপৃচ্ছতি কুশলং গেহে । গতবতি বায়ৌ দেহাপায়ে ভার্যা বিভ্যতি তস্মিন্কায়ে ॥ ৬॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ- যতক্ষণ দেহে প্রাণ বায়ুর নিবাস থাকে, ততক্ষণ-ই সবাই তার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে থাকে । প্রাণ বায়ু ত্যাগ হলে, শরীর ত্যাগ করলে , লোক তো দূর নিজের স্ত্রীও শবকে ভয় করে দূরে সরে থাকে । (মৃতে ভৌতিক ভয় – [ অথচ একসময় কতই না প্রিয় ছিল ]) সুতরাং, হে মূঢ়মতি (মূর্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো। কারণ মৃত্যুর সন্নিকটে তোমায় আর কেউ ই রক্ষা করতে সক্ষম নয়। (যারা উপর উপর তোমার শরীরের কুশল জিজ্ঞাসা করেছিল তাদের সাথে ঐ শরীর অব্দি ই সম্পর্ক , অথচ তাদের মোহের জন্য তুমি ঈশ্বরের সাধন ভজনের সময় পাচ্ছো না, কী ভয়ানক মোহ তোমায় গিলে রেখেছে ) । বালস্তাবৎ ক্রীড়াসক্তঃ তরুণস্তাবত্তরুণীসক্তঃ । বৃদ্ধস্তাবচ্চিন্তাসক্তঃ পরমে ব্রহ্মণি কোঽপি ন সক্তঃ ॥ ৭॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – বাল্যকাল যায় বালকদের খেলাধুলায় মত্ত থেকে, তারুণ্য যায় তরুণ-তরুণীর প্রতি আকর্ষণ, আসক্তিতে। বার্ধক্যে বৃদ্ধ মগ্ন থাকে নানারকম চিন্তা ভাবনায় । কিন্তু হায়! পরব্রহ্মে কারোর কোনো মন নেই । অতএব, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো । মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবেনা । কা তে কান্তা কস্তে পুত্রঃ সংসারোঽয়মতীব বিচিত্রঃ । কস্য ত্বং কঃ কুত আয়াত-স্তত্ত্বং চিন্তয় তদিহ ভ্রাতঃ ॥ ৮॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – কে তোমার স্ত্রী? কে-ই বা তোমার পুত্র? ওহে! এই সংসার অত্যন্ত বিচিত্র । তুমি-ই বা কে, কার ? কোথা থেকে এসেছ ? হে ভ্রাতা, এই তত্ত্ব বারবার চিন্তন ও বিচার করে দেখো। হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো, মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না । সৎসঙ্গত্বে নিস্সঙ্গত্বং নিস্সঙ্গত্বে নির্মোহত্বম্ । নির্মোহত্বে নিশ্চলতত্ত্বং নিশ্চলতত্ত্বে জীবন্মুক্তিঃ ॥ ৯॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – সৎসঙ্গ হতে নিঃসঙ্গত্ব প্রাপ্ত হয়, নিঃসঙ্গ হলে নির্মোহত্ত (মোহ বিহীন অবস্থা ) প্রাপ্ত হয়। নির্মোহ হলে নিশ্চলতত্ব (নিশ্চল অবস্থা ) প্রাপ্ত হয় । নিশ্চল হলে জীবন মুক্তি হয় ( জীবিত অবস্থায় মুক্ত ) । অতএব, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো, মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না । বয়সি গতে কঃ কামবিকারঃ শুষ্কে নীরে কঃ কাসারঃ । ক্ষীণে বিত্তে কঃ পরিবারঃ জ্ঞাতে তত্ত্বে কঃ সংসারঃ ॥ ১০॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – যৌবন কাল গত হয়ে বার্ধক্য প্রাপ্ত হলে আর কিসের কামানুরাগ? জল শুকিয়ে গেলে সরোবর আর সরোবর কোথায় ? ধনাভাব হলে স্বজন, পরিজন, পরিবার কোথায় যায়? ওহে, তেমনি তত্ত্ব জ্ঞান যখন হয় তখন কোথায় এই সংসার? কিছুই আর থাকে না । সুতরাং, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো, মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না। মা কুরু ধনজযৌবনগর্বং হরতি নিমেষাৎকালঃ সর্বম্ । মায়াময়মিদমখিলং বুধ্বা ব্রহ্মপদং ত্বং প্রবিশ বিদিত্বা ॥ ১১॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – ধন – জন – যৌবনের গর্ব কখনো করো না, সর্বগ্রাসী কাল এসকল কিছুই এক নিমিশে হরণ করে নেয়। এই অখিল ব্ৰহ্মাণ্ড বিশ্ব চরাচর সমস্তই মায়াময়, সুতরাং এই অনিত্য সংসারের প্রতি মায়া পরিত্যাগ করে শীঘ্রই জ্ঞানার্জন করে সত্য স্বরূপ ব্রহ্মপদে প্রবেশ করো। হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো, মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না। দিনয়ামিন্যৌ সায়ং প্রাতঃ শিশিরবসন্তৌ পুনরায়াতঃ । কালঃ ক্রীডতি গচ্ছত্যায়ু-স্তদপি ন মুঞ্চত্যাশাবায়ুঃ ॥ ১২॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – দিন-রাত্রি, সায়ং সন্ধ্যা ও প্রভাত, শীত-বসন্ত, পুনঃ পুনঃ নিরন্তর আসাযাওয়া করে। (এইরূপে ) কাল এর গতি ক্রিয়া করে চলতে থাকে । আর ক্রমে (জীবের) আয়ু ক্ষয় হয়। কিন্তু তারপরও অভাগা জীব আশাবায়ুর পরিত্যাগ করতে পারে না । অতএব, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো । মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না। কা তে কান্তা ধনগতচিন্তা বাতুল কিং তব নাস্তি নিয়ন্তা । ত্রিজগতি সজ্জনসঙ্গতিরেকা ভবতি ভবার্ণবতরণে নৌকা ॥ ১৩॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – ওহে পাগল! কেনো ধন সম্পত্তির চিন্তায় শোকাকুল হচ্ছো? তোমার কী কোনো পথপ্রদর্শক বা নিয়ন্তা নেই? তোমাকে এই ত্রি-জাগতিক সংসার শোক সাগর হতে কেবলমাত্র একটি জিনিস ই রক্ষা করতে পারে তা হলো যত শীঘ্র সম্ভব সৎসঙ্গের (সজ্জন, জ্ঞানী গুণী সাধুদের সঙ্গ ) নৌকায় চড়ে বসা । সুতরাং, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো । মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না । জটিলো মুণ্ডী লুঞ্ছিতকেশঃ কাষায়াম্বরবহুকৃতবেষঃ । পশ্যন্নপি চ ন পশ্যতি মূঢো হ্যুদরনিমিত্তং বহুকৃতবেষঃ ॥
দেবী দুর্গাকে কেন বৈষ্ণবী, বিষ্ণুমায়া, নারায়ণী নামে ডাকা হয়?
দেবী দুর্গাকে কেন বৈষ্ণবী, বিষ্ণুমায়া, নারায়ণী নামে ডাকা হয়? শ্রী শ্রী চন্ডীতে দেবীর স্তুতিকালে ক্ষণে ক্ষণে দেবীকে বৈষ্ণবী, বিষ্ণুমায়া, নারায়ণী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়েছে। যেমন: শঙ্খ-চক্র-গদা-শার্ঙ্গ-গৃহীত-পরম-আয়ুধে। প্রসীদ বৈষ্ণবী-রূপে নারায়ণি নমঃ অস্তু তে।। ( শ্রী চন্ডী, ১১।১৬ -মার্কেন্ড পুরাণস্থ ) অনুবাদ: হে শঙ্খ চক্র গদা শার্ঙ্গাদি শ্রেষ্ঠ আয়ুধ-ধারিণি, তুমি বৈষ্ণবী রূপে বিখ্যাত, হে নারায়ণী, তোমাকে নমস্কার। . শ্রীমদ্ভাগবতে উল্লেখ রয়েছে – নামধেয়ানি কুর্বন্তি স্থানানি চ নরা ভুবি। দুর্গেতি ভদ্রকালীতি বিজয়া বৈষ্ণবীতি চ ৷। কুমুদা চণ্ডিকা কৃষ্ণা মাধবী কন্যকেতি চ। মায়া নারায়ণীশানী শারদেত্যম্বিকেতি চ।। ( শ্রীমদ্ভাগবত ১০।২।১১,১২ ) অনুবাদ: ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মায়াদেবীকে এই বলে আশীর্বাদ করেছিলেন– পৃথিবীতে মানুষেরা বিভিন্ন স্থানে তোমার দুর্গা, ভদ্রকালী, বিজয়া, বৈষ্ণবী, কুমুদা, চণ্ডিকা, কৃষ্ণা, মাধবী, কন্যকা, মায়া, নারায়ণী, ঈশানী, শারদা, অম্বিকা প্রভৃতি নামকরণ করবে। . দেবীকে কেন এ সকল বৈষ্ণবীয় সম্বোধনে সম্বোধিত করা হয় তার ব্যাখা দেবী স্বয়ং-ই দিয়েছেন- বিষ্ণুভক্তিরহং তেন বিষ্ণুমায়া চ বৈষ্ণবী। নারায়ণস্য মায়াহং তেন নারায়ণী স্মৃতা।। ( শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কৃষ্ণজন্মখন্ড, ১২৯।৯৩ ) অনুবাদ: দেবী বললেন, ” আমি বিষ্ণুভক্তা, তাই আমাকে ‘বিষ্ণুমায়া’ ও ‘বৈষ্ণবী’ নামে ডাকা হয়। আমি নারায়ণের মায়া, তাই আমাকে ‘নারায়ণী‘ বলা হয়। . ।।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °
সনাতন ধর্মে কি হাঁস-মুরগী পালন করা নিষিদ্ধ ?
সনাতন ধর্মে কি হাঁস-মুরগী পালন করা নিষিদ্ধ ? এ সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে – যে ত্বিহ বা অনাগসোঽ রণ্যে গ্রামে বা বৈশ্রম্ভকৈরুপসৃতানুপবিশ্রস্তয্য জিজীবিষ্ণুন্ শূলসূত্রাদিযূপপ্রোতান্ ক্রীড়নকতয়া যাতয়ন্তি তেহপি চ প্রেত্য যমযাতনাসু শূলাদিষু প্রোতাত্মানঃ ক্ষুত্ত্ব ভ্যাংচাভিহতাঃ কঙ্কবটাদিভিশ্চেতস্ততস্তিগ্মতুণ্ডৈরাহন্যমানা আত্মশমলং স্মরস্তি।। [ শ্রীমদ্ভাগবতম ৫।২৬। ৩২ ] অনুবাদ: যে সমস্ত মানুষ ইহলোকে গ্রামে বা অরণ্যে জীবন রক্ষার্থে আগত পশু-পাখিদের আশ্রয় দান পূর্বক বিশ্বাস জন্মিয়ে শূল অথবা সূত্রের দ্বারা তাদের বিদ্ধ করে এবং তারপর ক্রীড়নকের মতো ক্রীড়া করে প্রবল যন্ত্রণা দেয়, তারা মৃত্যুর পর যমদূতদের দ্বারা শূলপ্রোত নামক নরকে নীত হয় এবং তাদের শরীর তীক্ষ্ণ শূল ইত্যাদির দ্বারা বিদ্ধ করা হয়। সেখানে তারা ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় পীড়িত হয়, এবং চতুর্দিক থেকে বক, শকুন প্রভৃতি তীক্ষ্ণ-চঞ্চু পক্ষী এসে তাদের দেহ ছিন্নভিন্ন করতে থাকে। এইভাবে যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে তারা তখন তাদের পূর্বকৃত পাপকর্মের কথা স্মরণ করতে থাকে। . অর্থাৎ জীবন রক্ষার্থে আগত পশু-পাখিদের (হাঁস, মুরগী, ছাগল ইত্যাদিকে..) আশ্রয় দান করে বিশ্বাস জন্মিয়ে হত্যা করে, তাদের মৃত্যুর পর যমদূত তাদের শূলপ্রোত নামক নরকে নিক্ষেপ করে। ।।হরে কৃষ্ণ।। . [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °