কার্তিক মাসে আমিষ আহার বর্জন করতে হয় কেন?

Svadharmam Q&A

কার্তিক মাসে আমিষ আহার বর্জন করতে হয় কেন? এ সম্পর্কে মহাভারতে ভীষ্মদেব যুধিষ্ঠিরকে বলছেন- চতুয়ো বাষিকান্মাসান যাে মাংসং পরিবজ্জয়েৎ। চত্বারি ভদ্রাণ্যাপ্নোতি কীর্তিমায়ুর্যশাে বলম॥ [ মহাভারত অনুশাসন পর্ব, অধ্যায় ১০০, শ্লোক-৯৩ ] বঙ্গানুবাদ: যিনি বর্ষার চার মাস অর্থাৎ শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক মাসে মাংস বর্জন করেন, তিনি কীর্তি, আয়ু,যশ ও বল এই চারি প্রকার মঙ্গল লাভ করিয়া থাকেন। এ সম্পর্কে মহাভারতে ভীষ্মদেব যুধিষ্ঠিরকে আরো বলছেন- অথবা মাসমেকং বৈ সর্বমাংসান্যভক্ষয়ন। অতীত্য সর্বদুঃখানি সুখং জীবেন্নিরাময়ঃ ॥ বর্জ্জয়ন্তি হি মাংসানি মাসশঃ পক্ষশােহপি বা। তেষাং হিংসানিবৃত্তানাং ব্ৰহ্মলােকো বিধীয়তে ॥ [ মহাভারত অনুশাসন পর্ব, অধ্যায় ১০০, শ্লোক-৯৪,৯৫ ] বঙ্গানুবাদ: যে সমস্ত মানুষ কার্তিক, মাঘ ও বৈশাখের এক মাস সমস্ত মাংস পরিত্যাগ করেন, তারা সকল দুঃখ অতিক্রমপূৰ্ব্বক নিরাময় হয়ে সুখে জীবনযাপন করেন। আর যারা প্রতিটি মাসে ও প্রতিটি পক্ষে মাংস বর্জন করে চলেন, হিংসা হতে নিবৃত্ত সেই সজ্জনদের জন্য ব্ৰহ্মলােক নির্দিষ্ট থাকে। এ সম্পর্কে স্কন্দপুরাণে উল্লেখ রয়েছে- কার্ত্তিকে বর্জ্জয়েন্মাংসং সন্ধানঞ্চ বিশেষতঃ। রাক্ষসীং যোনীমাপ্নোতি সকৃন্মাংসস্য ভক্ষণাৎ।। [ স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখন্ডম-কার্ত্তিকমাসমাহাত্ম্যম, ২।১৮] বঙ্গানুবাদ: অন্য কিছু বর্জন করো বা না করো, কার্তিক মাসে বিশেষভাবে মাংস (আমিষ) ও মদ্য (মাদক) পরিহার করবে। কার্ত্তিকমাসে একবার মাত্র মাংস ভোজন করলে রাক্ষসযোনী প্রাপ্তি ঘটে। তাই যাদের এখনো নিয়মিত ভগবানের প্রসাদ পাওয়ার সৌভাগ্য হয় নি, তাদের বিশেষ ভাবে অবশ্যই কার্তিক মাসে আমিষ বর্জন করা উচিত। ।।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

ভজ-গোবিন্দম্ (~শ্রীপাদ আদি শঙ্করাচার্য )

20241002 212156 Svadharmam

ভজ-গোবিন্দম্ ( সম্পূর্ণ ) ভজ গোবিন্দং ভজ গোবিন্দং গোবিন্দং ভজ মূঢমতে । সম্প্রাপ্তে সন্নিহিতে কালে নহি নহি রক্ষতি ডুকৃঙ্করণে ॥ ১॥ অর্থ- গোবিন্দের ভজনা করো , গোবিন্দের ভজনা করো, হে মূঢ়মতি ! গোবিন্দের ভজনা করো । মৃত্যুর সমীপ সন্নিকটে ‘ডুকৃঙ্ করণে’ আবৃত্তি তোমায় রক্ষা করতে পারবে না । ( জগৎ গুরু ভগবান আদি শঙ্করাচার্য যখন দেখলেন, অতীব বৃদ্ধ এক ব্রাহ্মণ মৃত্যু কালীন অবস্থায় বসেও, ব্যাকরণের জন্য ‘ডুকৃঙ্ করণে’ নামক একটি ধাতু বারবার আবৃত্তি করে যাচ্ছেন তখন এর অসারতা উপদেশ করে আচার্য তাকে গোবিন্দের ভজনা করতে বলেন । ) মূঢ় জহীহি ধনাগমতৃষ্ণাং কুরু সদ্বুদ্ধিং মনসি বিতৃষ্ণাম্। যল্লভসে নিজকর্মোপাত্তং বিত্তং তেন বিনোদয় চিত্তম্॥ ২॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ- হে মূঢ়জন! কেবলমাত্র অর্থ উপার্জনের তৃষ্ণা পরিত্যাগ করো । এই ধরনের চিন্তা তোমার মনকে কেবলমাত্র জাগতিক করে দেবে, সুতারং মনে এর জন্য বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করো । তোমার উত্তম কর্ম্মের দ্বারা উপার্জিত যে অর্থ, তোমাকে স্বচ্ছল রাখে তার দ্বারাই তোমার মনকে খুশী রাখো। ওহে মূর্খ! নিরন্তর, এই জাগতিক মৃত্যু-গ্রাস থেকে রক্ষাকারী গোবিন্দের ভজনা করো । নারীস্তনভরনাভিদেশং দৃষ্ট্বা মা গা মোহাবেশম্ । এতন্মাংসবসাদিবিকারং মনসি বিচিন্তয় বারং বারম্ ॥ ৩॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ- নারীদের স্তনমন্ডল ও নাভিদেশ মোহের আবেশে দেখে অভিভূত হয়ো না, এসব নিছক মাংস আর মেদ এর বিকার মাত্র। বারবার মনে এই বিচার করো। হে মূঢ়জন! গোবিন্দের ভজনা করো, গোবিন্দের ভজনা করো, সকল মোহ মুক্তির মূল গোবিন্দের ভজনা করো। নলিনীদলগতজলমতিতরলং তদ্বজ্জীবিতমতিশয় চপলম্ । বিদ্ধি ব্যাধ্যভিমানগ্রস্তং লোকং শোকহতং চ সমস্তম্ ॥ ৪॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – জলবিন্দু যেমন পদ্মপত্রের উপর ক্ষণিক সময়ও স্থীর থাকে না, ক্ষণস্থায়ী হয়, তেমনি এই জীবনও অতিশয় চঞ্চল এবং ক্ষণস্থায়ী , অনিশ্চিত । সবসময় জানবে, এই ব্যাধি ও অহংকারগ্রস্থ সমস্ত জগৎ সংসার কেবল এক শোকালয় মাত্র। সুতরাং হে মূঢ়মতি গোবিন্দের ভজনা করো । যাবদ্বিত্তোপার্জনসক্ত-স্তাবন্নিজপরিবারো রক্তঃ । পশ্চাজ্জীবতি জর্জরদেহে বার্তাং কোঽপি ন পৃচ্ছতি গেহে ॥ ৫॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ- ওহে, যতদিন তুমি অর্থ উপার্জন করে যাবে , ততদিন তোমার পরিবার পরিজন তোমার সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখবে ।  (ভালোবাসবে, মিথ্যা প্রশংসা করবে )। পরে যখন জর্জর দেহ নিয়ে বৃদ্ধ হবে তখন গৃহে তোমার সঙ্গে কেউ ভালো করে দুটো কথা অব্দি বলবে না। অতএব, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো । যাবৎপবনো নিবসতি দেহে তাবৎপৃচ্ছতি কুশলং গেহে । গতবতি বায়ৌ দেহাপায়ে ভার্যা বিভ্যতি তস্মিন্কায়ে ॥ ৬॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ-  যতক্ষণ দেহে প্রাণ বায়ুর নিবাস থাকে, ততক্ষণ-ই সবাই তার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে থাকে । প্রাণ বায়ু ত্যাগ হলে, শরীর ত্যাগ করলে ,  লোক তো দূর নিজের স্ত্রীও শবকে ভয় করে দূরে সরে থাকে । (মৃতে ভৌতিক ভয় – [ অথচ একসময় কতই না প্রিয় ছিল ]) সুতরাং, হে মূঢ়মতি (মূর্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো। কারণ মৃত্যুর সন্নিকটে তোমায় আর কেউ ই রক্ষা করতে সক্ষম নয়। (যারা উপর উপর তোমার শরীরের কুশল জিজ্ঞাসা করেছিল তাদের সাথে ঐ শরীর অব্দি ই সম্পর্ক , অথচ তাদের মোহের জন্য তুমি ঈশ্বরের সাধন ভজনের সময় পাচ্ছো না, কী ভয়ানক মোহ তোমায় গিলে রেখেছে ) । বালস্তাবৎ ক্রীড়াসক্তঃ তরুণস্তাবত্তরুণীসক্তঃ । বৃদ্ধস্তাবচ্চিন্তাসক্তঃ পরমে ব্রহ্মণি কোঽপি ন সক্তঃ ॥ ৭॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – বাল্যকাল যায় বালকদের খেলাধুলায় মত্ত থেকে, তারুণ্য যায় তরুণ-তরুণীর প্রতি আকর্ষণ, আসক্তিতে। বার্ধক্যে বৃদ্ধ মগ্ন থাকে নানারকম চিন্তা ভাবনায় । কিন্তু হায়! পরব্রহ্মে কারোর কোনো মন নেই । অতএব, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো । মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবেনা । কা তে কান্তা কস্তে পুত্রঃ সংসারোঽয়মতীব বিচিত্রঃ । কস্য ত্বং কঃ কুত আয়াত-স্তত্ত্বং চিন্তয় তদিহ ভ্রাতঃ ॥ ৮॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – কে তোমার স্ত্রী? কে-ই বা তোমার পুত্র? ওহে! এই সংসার অত্যন্ত বিচিত্র । তুমি-ই বা কে, কার ? কোথা থেকে এসেছ ? হে ভ্রাতা, এই তত্ত্ব বারবার চিন্তন ও বিচার করে দেখো। হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো, মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না । সৎসঙ্গত্বে নিস্সঙ্গত্বং নিস্সঙ্গত্বে নির্মোহত্বম্ । নির্মোহত্বে নিশ্চলতত্ত্বং নিশ্চলতত্ত্বে জীবন্মুক্তিঃ ॥ ৯॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – সৎসঙ্গ হতে নিঃসঙ্গত্ব প্রাপ্ত হয়, নিঃসঙ্গ হলে নির্মোহত্ত (মোহ বিহীন অবস্থা ) প্রাপ্ত হয়। নির্মোহ হলে নিশ্চলতত্ব (নিশ্চল অবস্থা ) প্রাপ্ত হয় । নিশ্চল হলে জীবন মুক্তি হয় ( জীবিত অবস্থায় মুক্ত ) । অতএব, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো, মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না । বয়সি গতে কঃ কামবিকারঃ শুষ্কে নীরে কঃ কাসারঃ । ক্ষীণে বিত্তে কঃ পরিবারঃ জ্ঞাতে তত্ত্বে কঃ সংসারঃ ॥ ১০॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – যৌবন কাল গত হয়ে বার্ধক্য প্রাপ্ত হলে আর কিসের কামানুরাগ? জল শুকিয়ে গেলে সরোবর আর সরোবর কোথায় ? ধনাভাব হলে স্বজন, পরিজন, পরিবার কোথায় যায়? ওহে, তেমনি তত্ত্ব জ্ঞান যখন হয় তখন কোথায় এই সংসার? কিছুই আর থাকে না । সুতরাং, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো, মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না। মা কুরু ধনজযৌবনগর্বং হরতি নিমেষাৎকালঃ সর্বম্ । মায়াময়মিদমখিলং বুধ্বা ব্রহ্মপদং ত্বং প্রবিশ বিদিত্বা ॥ ১১॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – ধন – জন – যৌবনের গর্ব কখনো করো না, সর্বগ্রাসী কাল এসকল কিছুই এক নিমিশে হরণ করে নেয়। এই অখিল ব্ৰহ্মাণ্ড বিশ্ব চরাচর সমস্তই মায়াময়, সুতরাং এই অনিত্য সংসারের প্রতি মায়া পরিত্যাগ করে শীঘ্রই জ্ঞানার্জন করে সত্য স্বরূপ ব্রহ্মপদে প্রবেশ করো। হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো, মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না। দিনয়ামিন্যৌ সায়ং প্রাতঃ শিশিরবসন্তৌ পুনরায়াতঃ । কালঃ ক্রীডতি গচ্ছত্যায়ু-স্তদপি ন মুঞ্চত্যাশাবায়ুঃ ॥ ১২॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – দিন-রাত্রি, সায়ং সন্ধ্যা ও প্রভাত, শীত-বসন্ত,  পুনঃ পুনঃ নিরন্তর আসাযাওয়া করে। (এইরূপে ) কাল এর গতি ক্রিয়া করে চলতে থাকে । আর ক্রমে (জীবের) আয়ু ক্ষয় হয়। কিন্তু তারপরও অভাগা জীব আশাবায়ুর পরিত্যাগ করতে পারে না । অতএব, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো । মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না। কা তে কান্তা ধনগতচিন্তা বাতুল কিং তব নাস্তি নিয়ন্তা । ত্রিজগতি সজ্জনসঙ্গতিরেকা ভবতি ভবার্ণবতরণে নৌকা ॥ ১৩॥ ভজ গোবিন্দং……………. অর্থ – ওহে পাগল! কেনো ধন সম্পত্তির চিন্তায় শোকাকুল হচ্ছো? তোমার কী কোনো পথপ্রদর্শক বা নিয়ন্তা নেই? তোমাকে এই ত্রি-জাগতিক সংসার শোক সাগর হতে কেবলমাত্র একটি জিনিস ই রক্ষা করতে পারে তা হলো যত শীঘ্র সম্ভব সৎসঙ্গের (সজ্জন, জ্ঞানী গুণী সাধুদের সঙ্গ ) নৌকায় চড়ে বসা । সুতরাং, হে মূঢ়মতি (মূৰ্খ), সকল মোহ বিনাশকারী গোবিন্দের ভজনা করো । মৃত্যুর সন্নিকটে আর কিছুই তোমায় রক্ষা করতে পারবে না । জটিলো মুণ্ডী লুঞ্ছিতকেশঃ কাষায়াম্বরবহুকৃতবেষঃ । পশ্যন্নপি চ ন পশ্যতি মূঢো হ্যুদরনিমিত্তং বহুকৃতবেষঃ ॥

দেবী দুর্গাকে কেন বৈষ্ণবী, বিষ্ণুমায়া, নারায়ণী নামে ডাকা হয়?

20241002 121312 Svadharmam

দেবী দুর্গাকে কেন বৈষ্ণবী, বিষ্ণুমায়া, নারায়ণী নামে ডাকা হয়? শ্রী শ্রী চন্ডীতে দেবীর স্তুতিকালে ক্ষণে ক্ষণে দেবীকে বৈষ্ণবী, বিষ্ণুমায়া, নারায়ণী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়েছে। যেমন: শঙ্খ-চক্র-গদা-শার্ঙ্গ-গৃহীত-পরম-আয়ুধে। প্রসীদ বৈষ্ণবী-রূপে নারায়ণি নমঃ অস্তু তে।। ( শ্রী চন্ডী, ১১।১৬ -মার্কেন্ড পুরাণস্থ ) অনুবাদ: হে শঙ্খ চক্র গদা শার্ঙ্গাদি শ্রেষ্ঠ আয়ুধ-ধারিণি, তুমি বৈষ্ণবী রূপে বিখ্যাত, হে নারায়ণী, তোমাকে নমস্কার। . শ্রীমদ্ভাগবতে উল্লেখ রয়েছে – নামধেয়ানি কুর্বন্তি স্থানানি চ নরা ভুবি। দুর্গেতি ভদ্রকালীতি বিজয়া বৈষ্ণবীতি চ ৷। কুমুদা চণ্ডিকা কৃষ্ণা মাধবী কন্যকেতি চ। মায়া নারায়ণীশানী শারদেত্যম্বিকেতি চ।। ( শ্রীমদ্ভাগবত ১০।২।১১,১২ ) অনুবাদ: ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মায়াদেবীকে এই বলে আশীর্বাদ করেছিলেন– পৃথিবীতে মানুষেরা বিভিন্ন স্থানে তোমার দুর্গা, ভদ্রকালী, বিজয়া, বৈষ্ণবী, কুমুদা, চণ্ডিকা, কৃষ্ণা, মাধবী, কন্যকা, মায়া, নারায়ণী, ঈশানী, শারদা, অম্বিকা প্রভৃতি নামকরণ করবে। . দেবীকে কেন এ সকল বৈষ্ণবীয় সম্বোধনে সম্বোধিত করা হয় তার ব্যাখা দেবী স্বয়ং-ই দিয়েছেন- বিষ্ণুভক্তিরহং তেন বিষ্ণুমায়া চ বৈষ্ণবী। নারায়ণস্য মায়াহং তেন নারায়ণী স্মৃতা।। ( শ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, কৃষ্ণজন্মখন্ড, ১২৯।৯৩ ) অনুবাদ: দেবী বললেন, ” আমি বিষ্ণুভক্তা, তাই আমাকে ‘বিষ্ণুমায়া’ ও ‘বৈষ্ণবী’ নামে ডাকা হয়। আমি নারায়ণের মায়া, তাই আমাকে ‘নারায়ণী‘ বলা হয়। . ।।। হরে কৃষ্ণ ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

সনাতন ধর্মে কি হাঁস-মুরগী পালন করা নিষিদ্ধ ?

Svadharmam Q&A

সনাতন ধর্মে কি হাঁস-মুরগী পালন করা নিষিদ্ধ ? এ সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে – যে ত্বিহ বা অনাগসোঽ রণ্যে গ্রামে বা বৈশ্রম্ভকৈরুপসৃতানুপবিশ্রস্তয্য জিজীবিষ্ণুন্ শূলসূত্রাদিযূপপ্রোতান্ ক্রীড়নকতয়া যাতয়ন্তি তেহপি চ প্রেত্য যমযাতনাসু শূলাদিষু প্রোতাত্মানঃ ক্ষুত্ত্ব ভ্যাংচাভিহতাঃ কঙ্কবটাদিভিশ্চেতস্ততস্তিগ্মতুণ্ডৈরাহন্যমানা আত্মশমলং স্মরস্তি।। [ শ্রীমদ্ভাগবতম ৫।২৬। ৩২ ] অনুবাদ: যে সমস্ত মানুষ ইহলোকে গ্রামে বা অরণ্যে জীবন রক্ষার্থে আগত পশু-পাখিদের আশ্রয় দান পূর্বক বিশ্বাস জন্মিয়ে শূল অথবা সূত্রের দ্বারা তাদের বিদ্ধ করে এবং তারপর ক্রীড়নকের মতো ক্রীড়া করে প্রবল যন্ত্রণা দেয়, তারা মৃত্যুর পর যমদূতদের দ্বারা শূলপ্রোত নামক নরকে নীত হয় এবং তাদের শরীর তীক্ষ্ণ শূল ইত্যাদির দ্বারা বিদ্ধ করা হয়। সেখানে তারা ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় পীড়িত হয়, এবং চতুর্দিক থেকে বক, শকুন প্রভৃতি তীক্ষ্ণ-চঞ্চু পক্ষী এসে তাদের দেহ ছিন্নভিন্ন করতে থাকে। এইভাবে যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে তারা তখন তাদের পূর্বকৃত পাপকর্মের কথা স্মরণ করতে থাকে। . অর্থাৎ জীবন রক্ষার্থে আগত পশু-পাখিদের (হাঁস, মুরগী, ছাগল ইত্যাদিকে..) আশ্রয় দান করে বিশ্বাস জন্মিয়ে হত্যা করে, তাদের মৃত্যুর পর যমদূত তাদের শূলপ্রোত নামক নরকে নিক্ষেপ করে। ।।হরে কৃষ্ণ।। . [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের সর্বোত্তম ‘হরে কৃষ্ণ’ নাম

20240927 153537 Svadharmam

মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের সর্বোত্তম °হরে কৃষ্ণ° নাম শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর রচিত ‘শ্রীকৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম’ হতে আমরা প্রায় সকলেই জানি, ভ্রাতা বলরাম শ্রীকৃষ্ণকে ‘হরে কৃষ্ণ’ নামে ডাকতেন। হরে কৃষ্ণ নাম রাখে প্রিয় বলরাম। ললিতা রাখিল নাম দূর্ব্বাদল শ্যাম। শ্রীকৃষ্ণের এ ‘হরে কৃষ্ণ’ নাম সমগ্র জগতে অতি সমাদৃত। মহাভারতে বহুবার এ নামে শ্রীকৃষ্ণকে স্তব স্তুতি করা হয়েছে। ভগবানের এ দিব্য নাম উচ্চারণে কলিকালে জীব মাত্রেরই উদ্ধার হয়। তাই কলিকালের তারকব্রহ্ম মহামন্ত্রও শুরু হয়েছে ‘হরে কৃষ্ণ’ নামোচ্চারণে। হরে কৃষ্ণ নাম মাহাত্ম্য পদ্মপুরাণাদি নানাবিধ শাস্ত্রে আছে, এগুলো আমরা পরবর্তী পর্বগুলোতে দেখবো। অনেকের ধারণা, ‘হরে কৃষ্ণ’ নামটি বৈষ্ণব কবিদের কল্পিত নাম, শাস্ত্রে উল্লেখ নেই। তাদের এ ধরনের ভ্রান্তির বিপরীতে আজ আমরা মহাভারত হতে দিব্য ‘হরে কৃষ্ণ’ নামের উল্লেখ আছে এমন কয়েকটি প্রমাণ নিবেদন করবো। মহাভারতের দ্রোণ-মহাপর্বে শ্রীকৃষ্ণকে নানাভাবে স্তব স্তুতি করা হয়েছে। সেখানে শ্রীকৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্রে তাকে ‘হরে কৃষ্ণ’ নামে সম্বোধন করা হয়েছে। নমস্তে দেবদেবেশ সনাতন বিশাতন। বিষ্ণো জিষ্ণো ‘হরে কৃষ্ণ’ বৈকুন্ঠ পুরুষোত্তম।। ( মহাভারত, দ্রোণপর্ব ৭৩।১৮ ) বঙ্গানুবাদ: “হে বিষ্ণু! হে জিষ্ণু! হে ‘হরে কৃষ্ণ’! হে বৈকুন্ঠ! হে পুরুষোত্তম! তুমি দেবদেবেশ অর্থাৎ দেবতাদের দেবতা শিবেরও ঈশ্বর, তুমিই সনাতন, তুমিই বিশাতন, তোমাকে নমস্কার।” . মহাভারতের খিলপর্বে পৌন্ড্রক যুদ্ধকালে ভগবানের ‘হরে কৃষ্ণ’ নামোচ্চারণ করে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন, সে যুদ্ধে ভগবান স্বয়ং তাকে সাযুজ্য মুক্তি প্রদান করেন। যদি শক্তো ‘হরে কৃষ্ণ’ দারয়েদং মহাস্পদম্ । ইত্যুক্ত্বা তচ্ছতগুণং ভ্রামযিত্বা মহাবলঃ।। ( মহাভারত, খিলপর্ব্ব-হরিবংশ, ভবিষ্যপর্ব, ১০১।১৫ ) বঙ্গানুবাদ: যদি শক্তি থাকে তবে, হে হরে কৃষ্ণ! এই মহাস্পদ অস্ত্র ছিন্ন করো।’ এ বলে পন্ড্রক মহাবলশালী অস্ত্রটি শতবার ঘুরিয়ে নিক্ষেপ করলেন। . মহাভারতের খিলপর্ব হরিবংশে ঘন্টাকর্ণ নামের এক পিশাচের উপাখ্যান আছে। জীবনের শুরুতে সে মুক্তি লাভের আকাঙ্ক্ষায় শিবের তপস্যা করেছিলেন। কিন্তু শিব উপস্থিত হয়ে তাকে বলেন, ‘মুক্তিদাতা কেবল মুকুন্দ। আমি তোমাকে মুক্তি দিতে পারবো না। অন্য যা কিছু চাও আমি তোমাকে দিবো, কিন্তু মুক্তি পেতে হলে তোমাকে মুকুন্দের নাম জপ করে তপস্যা করতে হবে হবে।’ তখন থেকে ঘন্টাকর্ণ সদা সর্বদা শ্রীকৃষ্ণের নামোচ্চারণ ও লীলামহিমা স্মরণ করে তপস্যা করতে থাকেন। তার দৃঢ়ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ উপস্থিত হলে তিনি ‘হরে কৃষ্ণ’ নামোচ্চারণে তাঁর সম্মুখে আনন্দে উদ্দাম নিত্য করেছিলেন। নমো নমো ‘হরে কৃষ্ণ’ যাদবেশ্বর কেশব । প্রত্যক্ষং চ হরেস্তত্র ননর্ত বিবিধং নৃপ ।। ( মহাভারত,হরিবংশ, ভবিষ্যপর্ব ৮২।৪৩ ) বঙ্গানুবাদ: “হে ‘হরে কৃষ্ণ’, হে যাদবেশ্বর, হে কেশব! আমি আপনাকে বারংবার প্রণাম জানাই।” হে রাজন! এ বলে বলে ঘন্টাকর্ণ ভগবান শ্রীহরির সম্মুখে বিবিধ নৃত্য করতে থাকলেন। . এভাবে মহাভারতের অসংখ্য স্থানে ভগবানের দিব্য ‘হরে কৃষ্ণ’ নামের উল্লেখ আছে, যা উচ্চারণে মানব জীবন সফল হয়, জন্ম সফল হয়, সকল উদ্দেশ্য সাধিত হয়, অন্তিমে শ্রীহরি প্রাপ্তি ঘটে। তাই মৃত্যুশয্যায় ভীষ্মদেব যুধিষ্ঠিরকে বৈষ্ণবধর্ম সম্পর্কিত জ্ঞান দানের পর উপদেশ দিয়েছিলেন, তিনি যেন সর্বোত্তম নাম- কৃষ্ণ নাম জপ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করেন। ভীষ্ম উবাচ- এতত্তে কথিতং রাজন্ ! বিষ্ণুতত্ত্বমনুত্তমম্ । ভজস্বৈনং বিশালাক্ষং জপন্‌ কৃষ্ণেতি সত্তম !।। ( মহাভারত, শান্তিপর্ব ২০৪।৭৭ ) বঙ্গানুবাদ: ভীষ্ম বলিলেন—’সাধুশ্রেষ্ঠ রাজা ! এই আমি তোমার নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ বিষ্ণুতত্ত্ব বলিলাম। তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ নাম- কৃষ্ণ নাম জপ করিতে থাকিয়া এই বিশালনয়ন কৃষ্ণের সেবা কর। . মহাভারতের ভীষ্মপর্বে শ্রীমদ্ভগবদগীতাতেও ভগবানের নাম কীর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- সততং কীর্তয়ন্তো মাং যতন্তশ্চ দৃঢ়ব্রতাঃ। নমস্যন্তশ্চ মাং ভক্ত্যা নিত্যযুক্তা উপাসতে।। ( মহাভারত, ভীষ্মপর্ব, ৩৩।১৪; শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৯।১৪ ) বঙ্গানুবাদ: যারা দৃঢ়ব্রতী ও যত্নশীল মহাত্মারা সর্বদা আমার কীর্তন করে এবং আমাকে প্রণাম করে নিরন্তর যুক্ত হয়ে ভক্তি সহকারে আমার(শ্রীকৃষ্ণের) উপাসনা করে। শাস্ত্রীয় রেফারেন্সগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে গীতাপ্রেস গোরক্ষপুর প্রকাশনী, বিশ্ববাণী প্রকাশনী ও নবভারত পাবলিশার্স এডিশান হতে। BORI CRITICAL EDITION এও একই শ্লোকগুলো বিদ্যমান। অন্যান্য এডিশানগুলোতে অধ্যায়ভেদে বিদ্যমান। সকল কৃতিত্ব মহাভারতের রচয়িতা শ্রীব্রহ্ম-মাধ্ব-গৌড়ীয় সম্প্রদায়ের পরমারাধ্য আচার্য্য শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস ও তার অনুগামী আচার্যবর্গের। হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °  

শাস্ত্র অনুসারে আমিষ খাদ্যের সংজ্ঞা – কোন কোন খাদ্য আমিষ এবং বর্জনীয়!!

Svadharmam Q&A

শাস্ত্র অনুসারে আমিষ খাদ্যের সংজ্ঞা – কোন কোন খাদ্য আমিষ এবং বর্জনীয়!! পদ্মপুরাণ এসম্পর্কে বলা হয়েছে- জম্বীরমামিষং চূর্ণমন্নং পৰ্য্যুষিতং দ্বিজ । ধান্যে মসূরিকা প্রোক্তা গবাং দুগ্ধমনামিষম।। লবণং ভূমিজং বিপ্র প্রাণ্যঙ্গমামিষং খলু। দ্বিজক্রীতা রসাঃ সর্ব্বে জলং চাল্পসরঃস্থিতম।। [ পদ্মপুরাণ, স্বর্গখন্ডম, অধ্যায় ৪৭, শ্লোক ১৮-১৯ ] অনুবাদ: জম্বীর, বাসি অন্ন এবং শস্যের মধ্যে মসূর ডাল আমিষ বলে নির্দেশিত। গরুর দুগ্ধ কিন্তু আমিষ নয়। ভূমিজ লবণ ও প্রাণির অঙ্গ অর্থাৎ মাছ-মাংস-ডিমকে আমিষ বলে জানবে । দ্বিজক্রীত সৰ্ব্ববিধ রস এবং অল্প সরোবরস্থিত জলও আমিষ। ( উল্লেখ্য, শাস্ত্রের সংজ্ঞানুসারে সংস্কৃত শব্দ ‘আমিষ’  ও ইংরেজিতে ‘প্রোটিন’ শব্দ একই অর্থ বহন করে না। ইংরেজি ‘প্রোটিন’ শব্দের শুদ্ধ আভিধানিক বাংলা প্রতিশব্দ হলো ‘দেহসার’ যা একটি পুষ্টি উপাদান বিশেষকে নির্দেশ করে। অপরদিকে সাধারণ অর্থে সংস্কৃতে ‘আমিষ’ শব্দ দ্বারা বর্জনীয়/পাপ-আহারকে বুঝানো হয়।) ।।হরে কৃষ্ণ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

গীতায় কি ভগবান নিরামিষ খেতে বলেছেন?

Svadharmam Q&A

গীতায় কি ভগবান নিরামিষ খেতে বলেছেন? গীতার কোথাও নিরামিষ খাদ্য গ্রহনের কথা বলা নেই। কেননা আমিষ ও নিরামিষ খাবার উভয়ের মাধ্যমেই জীবহত্যা হয় এবং জীবহত্যা মহাপাপ। তবে আমাদের জীবন ধারনের জন্য খাদ্য গ্রহন করা আবশ্যক। সে কথাই বেদে বলা হয়েছে- ”জীবস্য জীবস্মৃতম’‘। অর্থাৎ জীবন ধারনের জন্য এক জীব অন্য জীবকে আহার করবে খাদ্যরূপে। আবার বেদেই বলা হয়েছে- ”মাং হিংস্যাত্ সর্বানি ভূতানি” অর্থাৎ কাউকে হত্যা করা উচিত নয়। বেদের উভয় বাক্যই আপাত দৃষ্টিতে স্ববিরোধী ও একে অপরের জন্য সাংঘর্ষিক। কিন্তু গীতায় এ সমস্যার সমাধান দিয়েছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতার ৩/১৩ বলেছেন– ‘যজ্ঞাশিষ্টাশিনঃ সন্তো মুচ্যন্তে সর্বকিল্বিষৈঃ, ভুঞ্জতে তে ত্বঘং পাপা যে পচন্ত্যাত্মকারণাত্’।। বঙ্গানুবাদ: ভগবদ্ভক্তেরা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন, কারন তায়া যজ্ঞাবশিষ্ট অন্নাদি গ্রহন করেন। যারা কেবল স্বার্থপর হয়ে নিজেদের ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তির জন্য অন্নাদি পাক করে তারা কেবল পাপই ভোজন করে। যে সমস্ত লোকেরা তাদের আত্ম তৃপ্তির জন্য নানা প্রকার উপাদেয় খাদ্য খায়, শাস্ত্রে তাদের চোর বলে গণ্য করা হয়েছে,”যো ভুঙক্তে স্তেন এব সঃ”। সামবেদের অন্তর্গত ছান্দোগ্য উপনিষদ ৭।২৬।২ মন্ত্রে  আরো বলা হয়েছে- ‘আহারশুদ্ধৌ সত্ত্বশুদ্ধিঃ, সত্ত্বশুদ্ধৌ ধ্রূবা স্মৃতিঃ স্মৃতিলম্ভে সর্বগ্রন্থীনাং ব্রিপমোক্ষঃ’।। বঙ্গানুবাদ: যজ্ঞ অনুষ্ঠান করার ফলে খাদ্যসামগ্রী শুদ্ধ হয় এবং তা আহার করার ফলে জীবের সত্তা শুদ্ধ হয়। সত্তা শুদ্ধ হবার ফলে স্মৃতি শুদ্ধ হয় এবং তখন সে মোক্ষ লাভের পথ খুজে পায়’। অর্থাৎ আমরা যদি পাপ করতে না চাই, আমরা যদি চোর হতে না চাই তবে আমাদের ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করে খাদ্যদ্রব্য গ্রহন করতে হবে। ভগবানকে কোন বস্তু নিবেদন বা অর্পণ করলে ঐ জীব হত্যার পাপ দুর হয় ভগবান সমস্ত পাপ হরণ করে নেন। এভাবে আমরা সমস্ত পাপ হতে মুক্ত হতে পারব। কিন্তু প্রশ্ন থাকে আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কোন খাদ্য অর্পন করবো এবং কিভাবে অর্পন করবো। গীতার ৯/২৬ শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি। তদহং ভক্ত্যুপহ্বতমশ্নামি প্রযতাত্মনঃ’॥ বঙ্গানুবাদ: যে বিশুদ্ধচিত্ত নিষ্কাম ভক্ত ভক্তি সহকারে আমাকে পত্র, পুষ্প ফল জল অর্পণ করেন, আমি তাঁর সেই ভক্তিপ্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহণ করি’। যদি কেউ মনে করে মাছ মাংস ডিম আদি যোকোন দ্রব্য ভগবানকে নিবেদন বা অর্পণ করা যেতে পারে, তা হবে সম্পুর্ন ভুল। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় এই ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা নিষেধ করেছেন উক্ত ৯/২৬ নং শ্লোক দ্বারা। আহার বা খাদ্য দ্রব্য ত্রিগুণাত্মিকা যেমন, রজগুণের আহার অতি তেলমশলা যুক্ত। তমোগুণের হল পঁচা বাসীদুর্গন্ধযুক্ত খাবার, অমেধ্য দ্রব্য অর্থাৎ মাছ,মাংস,ডিম ইত্যাদি। সত্বগুণের হল নিরামিষ, শাকসবজি, ফলমুল, শস্যাদি, দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার ইত্যাদি এই ত্রিগুণাত্মিকা খাদ্যের উর্ধ্বে হল গুনাতীত আহার। আর গুনাতীত আহার হল ভগবানে নিবেদিত ভোগ, যা ভগবানের শুদ্বভক্তের প্রিয় ”মহাপ্রসাদ”। এইজন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন , ”হে অর্জুন তুমি এই ত্রিগুনের উর্ধ্বে উঠো, গুনাতীত হও”। এবার বিচার করুন আপনি কি আহার করবেন ? নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

ডিম কি নিরামিষ?

20240925 151711 Svadharmam

জীবরহিত হলেও এটি শাক-সবজীর মতো শুদ্ধ নয়, বরং ভয়ানক অশুদ্ধ। কারণ এই ডিম মহা অপবিত্র রজঃ (রক্ত) এবং বীর্য থেকে সৃষ্ট। মা-ভগিনীগণ রজস্বলা হলে তাদের স্পর্শ করা হয় না, দূর থেকে নমস্কারাদি করা হয়, কেননা তাদের ছুঁলে অপবিত্রতা হয়। রজস্বলা (মাসিক-ধর্মকালে) স্ত্রীলোকের জলাশয়ে স্নান করলে তাতে কীটাণুর জন্ম হয়। অন্ন, বস্ত্র ইত্যাদিকে স্পর্শ করলে তা অপবিত্র হয়ে যায়। কেননা রজস্বলা স্ত্রীলোকের শরীর থেকে টক্সিক নির্গত হয়, যা দূরীভূত হলে শরীর শুদ্ধ হয়ে যায়। এইরূপে যে রজঃকে অপবিত্র বলে মনে করা হয়, সেই রজঃ থেকেই ডিম তৈরি হয়, সুতরাং সেই ডিম যারা খায় তারা তো অপবিত্র হবেই। যে ব্যক্তি জীবরহিত ডিম খেতে আরম্ভ করে, সে পরে সজীব ডিমও খেতে থাকবে। তা ছাড়াও নির্জীব ডিমের সঙ্গে সজীব ডিমের যে ভেজাল নেই—তা কী করে বলা যাবে ? সুতরাং কোনভাবেই ডিম খাওয়া উচিত নয়, এটি পাপকার্য। শাস্ত্র অনুসারে আমিষ খাদ্যের সংজ্ঞা –কোন কোন খাদ্য আমিষ এবং বর্জনীয়!! পদ্মপুরাণ এসম্পর্কে বলা হয়েছে- জম্বীরমামিষং চূর্ণমন্নং পৰ্য্যুষিতং দ্বিজ । ধান্যে মসূরিকা প্রোক্তা গবাং দুগ্ধমনামিষম।। লবণং ভূমিজং বিপ্র প্রাণ্যঙ্গমামিষং খলু। দ্বিজক্রীতা রসাঃ সর্ব্বে জলং চাল্পসরঃস্থিতম।। [ পদ্মপুরাণ, স্বর্গখন্ডম, অধ্যায় ৪৭, শ্লোক ১৮-১৯ ] অনুবাদ: জম্বীর, বাসি অন্ন এবং শস্যের মধ্যে মসূর ডাল আমিষ বলে নির্দেশিত। গরুর দুগ্ধ কিন্তু আমিষ নয়। ভূমিজ লবণ ও প্রাণির অঙ্গ অর্থাৎ মাছ-মাংস-ডিমকে আমিষ বলে জানবে । দ্বিজক্রীত সৰ্ব্ববিধ রস এবং অল্প সরোবরস্থিত জলও আমিষ। ( উল্লেখ্য, শাস্ত্রের সংজ্ঞানুসারে সংস্কৃত শব্দ ‘আমিষ’  ও ইংরেজিতে ‘প্রোটিন’ শব্দ একই অর্থ বহন করে না। ইংরেজি ‘প্রোটিন’ শব্দের শুদ্ধ আভিধানিক বাংলা প্রতিশব্দ হলো ‘দেহসার’ যা একটি পুষ্টি উপাদান বিশেষকে নির্দেশ করে। অপরদিকে সাধারণ অর্থে সংস্কৃতে ‘আমিষ’ শব্দ দ্বারা বর্জনীয়/পাপ-আহারকে বুঝানো হয়। ) ডিম দুপ্রকারের—একটি থেকে বাচ্চা হয়, অন্যটিতে বাচ্চা জন্মায় না। মুরগী মোরগের সংসর্গে না গেলেও পরিণত বয়সে ডিম পাড়তে পারে। এর তুলনা নারীদের রজঃস্রাবের সঙ্গে করা যায়। নারীদের যেমন মাসিক ধর্ম হয়, মুরগীদের ক্ষেত্রে সেটি ডিমরূপে হয়। এই ডিম মুরগীর ভিতরের নোংরার ফল। আজকাল এই ডিমকেই ব্যবসায়িক স্বার্থে অহিংসক, নিরামিষ ইত্যাদি নামে প্রচার করে লোকেদের বিভ্রান্ত করা হয়, কিন্তু এটি আদৌ নিরামিষ নয়। শাক-সবজী উৎপন্ন হয় মাটি, জল-হাওয়া, সূর্য কিরণ আদি প্রাকৃতিক উপাদান থেকে, কিন্তু ডিম সেভাবে উৎপন্ন হয় না। দুই প্রকার ডিমই মুরগী থেকে উৎপন্ন হয়, এই দুইয়ের Chemical Composition এ কোনো পার্থক্য নেই। যদি পার্থক্য করতেই হয় তবে, এই ডিমকে eImmatur বা Still Born বলা যেতে পারে, কিন্তু নিরামিষ কখনোই নয়। এরূপ ডিম বেশি মাত্রায় পাওয়ার ও শীঘ্র অর্থ রোজগারের জন্য মুরগীর ওপর কীরূপ অত্যাচার করা হয়, কী নির্মম উপায়ে মুরগী-পালনকে অতিশয় লাভপ্রদ করার জন্য কীরূপ কষ্টদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ডিম পাড়ানো হয় এবং সেই ত্রাস সঞ্চারকারী পরিবেশ– যা ডিমের মাধ্যমে উদরে গিয়ে রক্তে মিশে যায়, তা এই প্রকার- মুরগী যে ডিম পাড়ে, তা স্বেচ্ছায় বা স্বাভাবিকভাবে নয়, তাকে হরমোন ও Egg Formulation ইঞ্জেকশান দেওয়া হয়। সেইজন্যই মুরগী ক্রমাগত ডিম পাড়তে থাকে। ডিম পাড়লেই সেটিকে ইন্‌কিউবেটারে রেখে দেওয়া হয় যাতে ২১ দিনের স্থানে ১৮ দিনেই তা থেকে ছানার উদ্‌গম হতে পারে। মুরগীর বাচ্চা যেইমাত্র ডিম ফুটে বার হয়, তখনই পুরুষ বাচ্চাগুলিকে পৃথক করা হয় এবং স্ত্রীবাচ্চাগুলিকে শীঘ্র বড়ো করার জন্য বিশেষ প্রকারের আহার দেওয়া হয় এবং তাদের চব্বিশ ঘণ্টা তীব্র আলোয় রেখে ভালোভাবে ঘুমোতেও দেওয়া হয় না, যাতে তারা সারাক্ষণ খেয়ে শীঘ্র রজঃস্রাব করে ডিম দেবার উপযুক্ত হয়। তারপর তাদের খোলামেলা জায়গার পরিবর্তে খাঁচায় বন্ধ করে রাখা হয়। খাঁচায় এতো মুরগী একসঙ্গে ভরে দেওয়া হয় যে তারা পাখাও নাড়তে পারে না। স্থানাভাবে সেগুলি নিজেদের মধ্যেই ঠোকাঠুকি করে, আঘাত প্রাপ্ত হয় ও ক্রুদ্ধ হয়। খাঁচায় সেগুলি কষ্টভোগ করতে থাকে। মুরগী তখন ডিম পাড়লে সেটি জাল দিয়ে বাইরে এসে পড়ে আলাদা হয়ে যায়। ডিমে ‘তা’ দেওয়া হল একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া থেকে মুরগীকে বঞ্চিত করা হয় যাতে সেটি আবার শীঘ্র ডিম পাড়তে পারে। সারাক্ষণ খাঁচায় বদ্ধ থাকায় তাদের চলা বন্ধ হয়ে যায়। সেই মুরগী যখন ডিম পাড়া বন্ধ করে, তখন তাকে কেটে ফেলা হয়। এইভাবে পাওয়া ডিম কীভাবে অহিংসক বা নিরামিষ হতে পারে ? গ্রন্থ ঋণ- ১) ‘গীতা দর্পণ’ – গীতাপ্রেস গোরক্ষপুর প্রকাশনি ২) ‘ আহার নিরামিষ না আমিষ ? সিদ্ধান্ত নিজেই নিন ‘ – গীতাপ্রেস গোরক্ষপুর প্রকাশনি ৩) পদ্মপুরাণ সৃষ্টিখন্ড [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

আমাবস্যায়, বর্ষাকালে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্য দীপ দান ও তিল যুক্ত জল দ্বারা তর্পনে কি হয়?

Svadharmam Q&A

আমাবস্যায়, বর্ষাকালে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্য দীপ দান ও তিল যুক্ত জল দ্বারা তর্পনে কি হয়? ————————————————- এ সম্পর্কে মহাভারতের অনুশাসন পর্বে বলা হয়েছে – কে গুণা নীলষণ্ডস্য প্রযুক্তস্য তপোধনাঃ।। বর্ষান্ত দীপদানেন তথৈব চ তিলোদকৈঃ ॥ পিতর উচুঃ। নীলষণ্ডস্থ্য লাঙ্গলং তোষমভ্যুদ্ধরেদ্যদি। যষ্টিং বর্ষসহস্রাণি পিতরস্তেন তর্পিতাঃ ॥ যস্ত শৃঙ্গগতং পঙ্কং কূলাদুষ্কৃত্য তিষ্ঠতি। পিতরস্তেন গচ্ছস্তি সোমলোকমসংশয়ম্ ॥ বর্ষাহু দীপদানেন শশিবচ্ছোভতে নরঃ। তমোরূপং ন তস্যাস্তি দীপকং যঃ প্রযচ্ছতি ॥ [ মহাভারত, অনুশাসন পর্ব, ১০৬।৭২-৭৬ ] বঙ্গানুবাদ: তপোধন ও মহাতেজা বৃদ্ধগার্গ্য পিতৃগণের বাক্য শুনিয়া পুলকিত হইয়া তাঁহাদিগকে এইরূপ বাক্য বলিলেন- ‘তপোধনগণ। নীলবৃষ দানে, বর্ষাকালে দীপ দানে এবং তিলযুক্ত জলদ্বারা তর্পণে কি কি ফল হয়?’ পিতৃগণ বলিলেন-‘নীলবৃষের লাঙ্গল যদি কোন জলাশয় হইতে জল উত্তোলন করে, তবে পিতৃগণ তাহাদ্বারা ষষ্টি সহস্র বৎসব যাবৎ তৃপ্তি লাভ করিয়া থাকেন। যে নীলবৃষ শৃঙ্গদ্বারা কোন জলাশয়ের তীর হইতে কর্দ্দম উত্তোলন করিয়া দাঁড়াইয়া থাকে; তবে তাহার সেই কার্য্যদ্বারা পিতৃগণ নিঃসংশয়ে চন্দ্রলোকে গমন করেন। মানুষ বর্ষাকালে দীপদানের ফলে চন্দ্রের ন্যায় শোভা পায়; আর যে লোক দীপ দান করে, তাহার মোহ থাকে না। এ সম্পর্কে মহাভারতে আরো বলা হয়েছে- অমাবস্যান্ত যে মর্ত্যাঃ প্রযচ্ছস্তি তিলোদকম্। পাত্রমৌচুম্বরং গৃহ্য মধুমিশ্রং তপোধন! ॥ কৃতং ভবতি তৈঃ শ্রাদ্ধং সরহস্যং যথার্থবৎ। হৃষ্টপুষ্টমনাস্তেষাং প্রজা ভবতি নিত্যদা ॥ কুলবংশস্য বৃদ্ধিস্ত পিণ্ডদস্য ফলং ভবেৎ। শ্রদ্দধানস্ত যঃ কুৰ্য্যাৎ পিতৃণামনৃণো ভবেৎ ॥ এবমেষ সমুদ্দিষ্টঃ শ্রাদ্ধকালক্রমস্তথা। বিধিঃ পাত্রং ফলঞ্চৈব যথাবদনুকীর্তিতম্ ॥ [ মহাভারত, অনুশাসন পর্ব, ১০৬।৭৭-৮০ ] বঙ্গানুবাদ: তপোধন। যে সকল মানুষ অমাবস্যা তিথিতে তাম্রময় পাত্র গ্রহণ করিয়া পিতৃগণের উদ্দেশে মধুমিশ্রিত তিলোদক দান করে, তাহাদের মন্ত্রসমন্বিত যথার্থ শ্রাদ্ধই করা হয়; আর তাহাদের সন্তানগণ সর্ব্বদাই হৃষ্টপুষ্ট চিত্ত হইয়া থাকে। সেই তিথিতে পিণ্ডদানকারীর বংশবৃদ্ধিরূপ ফল হয় এবং যে লোক শ্রদ্ধা- যুক্ত হইয়া শ্রাদ্ধ করে, সেই লোক পিতৃগণের নিকট অনৃণী হয়। তপোধন,এই আমি শ্রাদ্ধের কাল, পরিপাটী ও বিধি বলিলাম এবং শ্রাদ্ধের পাত্র ও ফল যথাযথভাবে কহিলাম’। ।। হরে কৃষ্ণ।। [ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত ] নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

কিভাবে ভগবানকে ভোগ নিবেদন করতে হয়?

20240916 004728 Svadharmam

বিগ্রহ অর্চনের খুঁটিনাটি বিষয় ইস্কন থেকে প্রকাশিত ‘পঞ্চরাত্র-প্রদীপ‘ নামক গ্রন্থে রয়েছে। আগ্রহী ভক্তরা সেখান থেকে সব জানবেন। এখানে ভোগ নিবেদনের সংক্ষিপ্ত নিয়ম সম্বন্ধে কিছু নির্দেশ দেওয়া হল। পূজারীকে অবশ্যই শুদ্ধভাবে জীবন যাপন করতে হবে। নিয়মিত সংখ্যানাম জপ করা, ইস্কনের চারটি নিয়ম (চা, পান, বিড়ি ইত্যাদি নেশা বর্জন; আমিষ বর্জন; অবৈধ যৌনসঙ্গ বর্জন এবং তাস জুয়া বর্জন) অবশ্যই মেনে চলতে হবে। গৃহস্থদের পক্ষে সাধারণতঃ গৌর-নিতাই বিগ্রহ বা আলেখ্যের সেবা করাই সুবিধাজনক। স্নান করে পবিত্র কাপড় পরে শুদ্ধভাবে ভোগ রান্না করতে হবে। ভোগ নিবেদনের সময় পুরুষদের খালি গায়ে নামাবলী পরে এবং পবিত্র ধুতি (মহিলাদের পক্ষে শাড়ি) পরে ভোগ নিবেদন করতে হবে। ১। নিবেদনের আগে বিগ্রহের সামনে খানিকটা স্থান কিংবা একটি ছোট চৌকি জল দিয়ে লেপে নিন। হাত ধুয়ে বিগ্রহের জন্য নির্ধারিত থালা-বাসন (সেগুলি অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবেন না) ধুয়ে পবিত্র কাপড় দিয়ে মুছে নিন। সুন্দর করে হাতার মাধ্যমে (সরাসরি হাত না দিয়ে) পৃথক পৃথক বাটিতে ভোগ সাজান। প্রতিটি বাটিতে তুলসী পাতা দিন। আচমন করে গুরুকে প্রণাম করুন। পবিত্র রুমালে ঢেকে ভোগ বিগ্রহের সামনে চৌকিতে বসান। পর্দা বা দরজা বন্ধ করুন। আপনার হাত ধুয়ে শ্রীবিগ্রহের হস্তমুখ প্রক্ষালন করুন এবং রুমাল সরান। ২। মহামন্ত্র জপ করে পঞ্চপাত্র থেকে ভোগের উপর সামান্য জল ছিটিয়ে ভোগ শুদ্ধ করুন। ৩। ভোগ বেদীর সামনে একটি কুশাসনে বসুন। ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে ৩ বার গুরুপ্রণাম মন্ত্রটি বলুন নমো ওম্ বিষ্ণুপাদায় কৃষ্ণপ্রেষ্ঠায় ভূতলে। শ্রীমতে (গুরুদেবের নাম) ইতি নামিনে ॥ এই মন্ত্র জপ করার সময় বিগ্রহ সেবায় গুরুদেবকে সাহায্য করার জন্য তাঁর অনুমতি প্রার্থনা করবেন। এবার মহাপ্রভুর কৃপা প্রার্থনা করে নিম্নোক্ত মন্ত্রটি ৩ বার বলুন- নমো মহাবদান্যায় কৃষ্ণপ্রেম প্রদায়তে। কৃষ্ণায় কৃষ্ণচৈতন্য নামে গৌরত্বিষে নমঃ ॥ অবশেষে ভক্তি সহকারে শ্রীকৃষ্ণ প্রণাম মন্ত্রটি ৩ বার বলুন- নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণ হিতায় চ। জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ ॥ ৪। মন্দিরের বাইরে এসে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। সেই সময়ে শ্রীবিগ্রহ ভোগ গ্রহণ করবেন। এই অবসরে আপনি গুরু গায়ত্রী এবং গৌরাঙ্গ গায়ত্রী (গুরুপ্রদত্ত ৩য় ও ৫ম গায়ত্রী) জপ করুন। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র বা কোনও বৈষ্ণব ভজনও গাইতে পারেন। ৫। তিনবার হাততালি বাজিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করুন। বিগ্রহের কাছে প্রার্থনা করুন যেন ভগবান এবং তাঁর পার্ষদেরা আপনার অপরাধ ক্ষমা করে পূর্ণরূপে প্রসন্ন হন। ঘণ্টা বাজিয়ে পুনরায় বিগ্রহের হস্তমুখ প্রক্ষালন করুন এবং ভোগ সরিয়ে সেই স্থানটি জল দিয়ে লেপে দিন। পর্দা খুলে বিগ্রহকে অন্ততপক্ষে ধূপ নিবেদন করুন। বাড়িতে অনেক সময় নিয়মিত ভোগ নিবেদন কঠিন হয়ে পড়ে। যথাসাধ্য চেষ্টা করুন যাতে তা নিয়মিত করা যায়। তবে জলখাবার, মধ্যাহ্ন ভোজ বা নৈশ ভোজ যা-ই আপনারা রান্না করছেন, তা অবশ্যই নিবেদন করে খাবেন। ভোগ নিবেদন হয়ে গেলেই সকলে প্রসাদ পেতে পারেন। তবে যিনি নিবেদন করছেন, তিনি যেন আরতি কিংবা ধূপ নিবেদন শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রসাদ না পান। নিবেদনের থালা থেকে সরাসরি প্রসাদ গ্রহণ নিষিদ্ধ। প্রসাদ এমনভাবে অন্য পাত্রে ঢালুন যাতে আমাদের ব্যবহার্য পাত্রের সঙ্গে না ঠেকে। নিবেদক- ° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °