শ্রীকৃষ্ণ তো নিজে ঈশ্বর তাহলে গীতা ১৮/৬১-৬২ নং শ্লোক অনুযায়ী তিনি কেন অর্জুনকে ঈশ্বরের শরনাগত হতে বললেন ?

20250603_135651

শ্রীকৃষ্ণ যে পরমেশ্বর ভগবান এ কথাটি স্পষ্টভাবে বেদ,অষ্টাদশ পুরান,মহাভারত ইত্যাদি শাস্ত্রে বর্ণিত আছে।মহাভারত শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে বিষ্ণু বলা হয়েছে(“অনুগ্রহার্থং লোকানাং বিষ্ণুলোক নমস্কৃতঃ।বসুদেবাত্তু দেবক্যাং প্রাদুর্ভূতো মহাযশাঃ।।” “ত্রিজগতের পূজনীয় মহাযশস্বী স্বয়ং বিষ্ণু লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য বসুদেব-দেবকীতে আবির্ভূত হইয়া ছিলেন৷” -মহাভারতঃ আদিপর্ব, ৫৮/১৩৮)।

শ্রীকৃষ্ণ যে পরমেশ্বর ভগবান,স্বয়ং এ কথাটি শ্রীকৃষ্ণ নিজের মুখে সরাসরি ভগবদ্গীতা ৪/৬,৭/৭,৭/২৫,৭/১৯,৭/২৫,৯/৪,৯/১০,
৯/১৭,৯/১১,৯/১৭,১০/২,১৫/১৫ ইত্যাদি বহু শ্লোকের মতোই গীতা ১০/৮ নং শ্লোকে অর্জুনকে বর্ণনা করেন।

অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে
ইতি মত্বা ভজন্তে মাং বুধা ভাবসমন্বিতাঃ।।৮॥

-(গীতা ১০/৮ঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ)

অনুবাদঃ আমি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা,সবকিছু আমার থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এরুপ জেনে জ্ঞানীগণ শুদ্ধভক্তি সহকারে আমার ভজনা করেন।

অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ থেকে তা শ্রবণ করে কোনরুপ প্রশ্ন জিজ্ঞেস না করে গীতা ১০/১২-১৩ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণকে পরমব্রহ্ম অথাৎ পরমেশ্বর ভগবান বলে সম্বোধন করেন,এবং বলেন যে আমি যেরুপে তোমাকে পরমব্রহ্ম রুপে সম্বোধন করছি সেরুপে নারদ,অসিত,দেবল এবং ব্যাসদেব আদি ঋষিরা পরমব্রহ্ম রুপে জানে।অথাৎ অর্জুন এসমস্ত ঋষিদের থেকে শ্রবণ করেছিলেন যে, শ্রীকৃষ্ণ কোন সাধারন মানুষ নন,তিনি হলেন পরমেশ্বর ভগবান, পরমব্রহ্ম স্বয়ং।

পরং ব্রহ্ম পরং ধাম পবিত্রং পরমং ভবান্।পুরুষং শাশ্বতং দিব্যমাদিদেবমজং বিভুম্।।আহুস্ত্বামৃষয়ঃ সর্বে দেবর্ষিনারদস্তথা।অসিতো দেবলো ব্যাসঃ স্বয়ং চৈব ব্রবীষি মে।।”

( গীতা ১০/১২-১৩ঃ অর্জুন)

অনুবাদঃ অর্জুন বললেন-  তুমি (শ্রীকৃষ্ণ) পরম ব্রহ্ম, পরম ধাম, পরম পবিত্র ও পরম পুরুষ। তুমি নিত্য, দিব্য, আদি দেব, অজ ও বিভু। দেবর্ষি নারদ, অসিত, দেবল, ব্যাস আদি ঋষিরা তোমাকে সেভাবেই বর্ণনা করেছেন এবং তুমি নিজেও এখন আমাতে তা বলছ।

এইভাবে সমগ্র গীতা শাস্ত্রের শিক্ষা অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমেশ্বর ভগবান।এছাড়াও শ্রীকৃষ্ণ যে নিজে ঈশ্বর, স্বয়ং পরমেশ্বর বিষ্ণু, সে বিষ্ণু রুপটি অর্জুনের অনুরোধে গীতা ১১/৪৬,৪৯,৫০ নং শ্লোক অনুযায়ী অর্জুনকে প্রদর্শন করান।এর পূর্বে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে গীতা ১১/৫-৩৬ নং শ্লোক অনুযায়ী বেদে বর্ণিত ঈশ্বরের বিরাট বা বিশ্বরুপ প্রদর্শন করান।

এখন প্রশ্ন হল শ্রীকৃষ্ণ তো পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং তাহলে তিনি কেন তার চরনে শরনাগত হতে না বলে গীতা ১৮/৬১-৬২ নং শ্লোক অনুযায়ী ঈশ্বরের শরনাগত হতে বলেছেন (“ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্ঠতি ।ভ্রাময়ন্ সর্বভূতানি যন্ত্রারূঢ়ানি মায়য়া ॥৬১॥
তমেব শরণং গচ্ছ সর্বভাবেন ভারত ।তৎপ্রসাদাৎ পরাং শান্তিং স্থানং প্রাপ্স্যসি শাশ্বতম্ ॥”৬২॥)?এর কারন কি? কেন তিনি এইভাবে কথা বলছেন?

এর উত্তর হল,ধরুন আপনি একটি কোম্পানির সর্বোচ্চ উর্ধতন কর্মকর্তা । এক কর্মীকে দিক নির্দেশনা দেওয়ার সময় তাকে বলছেন যে, আপনার উচিত সর্বোচ্চ উর্ধতন কর্মকর্তাদের অনুসরণ করা।

এবার আমার প্রশ্ন হল আপনার প্রতি, আপনি কাকে অনুসরণ করতে বললেন?? এখানে কি পরোক্ষভাবে আপনাকেই অনুসরণের কথা আপনি আপনার অধঃতন কর্মকর্তাকে নির্দেশ করেন নি??

এমনকি ভগবদ্গীতা শাস্ত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে প্রত্যক্ষভাবে বা সরাসরি তার চরনে শরনাগত হতে বলেছেন।

সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ ॥৬৬॥

– গীতা ১৮/৬৬ঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

অনুবাদঃ সমস্ত ধর্ম ( মনুষ্যসৃষ্ট ধর্ম) পরিত্যাগ করে কেবল আমার শরনাগত হও।আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব।দুঃচিন্তা কর না

এভাবেই কৃষ্ণ ভগবদ্গীতা শাস্ত্রে কখনো প্রত্যক্ষ ভাবে কখনো পরোক্ষভাবে তাঁরই কথা বলেছেন। তাঁরই চরনে শরনাগত হওয়ার কথা বলছেন।

হরে কৃষ্ণ। প্রণাম

Sadgun Madhav Dash

Writer & Admin

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments