গীতা১৩/১৪ এবং শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৩/১৬ মন্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে-
সর্বতঃ পাণিপাদং তৎ সর্বতোহক্ষিশিরোমুখম।
সর্বতঃ শ্রুতিমল্লোকে সর্বমাবৃত্য তিষ্ঠতি ।। ১৪ ।
-(গীতা১৩/১৪)
অনুবাদঃ সর্বত্রই তাঁর (ঈশ্বর) হস্ত, পদ, চক্ষু, মস্তক ও মুখ বর্তমান এবং তিনি সর্বত্রই কর্ণযুক্ত। এভাবেই জগতের সব কিছুতে পরিব্যাপ্ত হয়ে তিনি বিরাজমান।
বেদে বর্ণিত ঈশ্বর সাকার।তাঁর দেহ বা শরীর আছে।তাঁর শক্তি অনন্ত।অর্থববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদ অনুযায়ী, সে ঈশ্বরকে শ্রীকৃষ্ণ বলা হয়।
“একো বশী সর্বগঃ কৃষ্ণ ঈড্যঃ”
– গোপালতাপনী উপনিষদ ১/২১(অথর্ববেদ)
অনুবাদঃ সেই একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই পরম পুরুষোত্তম ভগবান,তিনিই আরাধ্য।
পরমেশ্বররুপে শ্রীকৃষ্ণ নিত্যকাল চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবনে নিত্য বিরাজমান।এছাড়াও ব্রহ্মসংহিতা সহ সমগ্র সনাতনী শাস্ত্রে একই কথা বর্নিত আছে।
তমেকং গোবিন্দং সচ্চিদানন্দ বিগ্রহং পঞ্চপদং বৃন্দাবনসুরভূরুহতলাসীনং। সততং সমরুদগণোহহং পরময়া স্তুত্যা তোষয়ামি।।
-(গোপালতাপনী উপনিষদঃ পূর্ব ২/৩৫)
অনুবাদঃ “যিনি গোলক বৃন্দাবনের কল্পতরুমূলে সমাসীন আছেন,সতত আমি মরুদগনের সহিত পরম স্তুতি দ্বারা পঞ্চপদাত্মক সেই গোবিন্দদেবের(শ্রীকৃষ্ণের) সন্তোষ বিধান করি।”
গোলোক এব নিবসত্যখিলাত্মভূতো
গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।।৩৭।।
-(ব্রহ্মসংহিতা৫/৩৭)
অনুবাদঃ গোলকধামে( চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ লোক) অখিলাত্মভূত শ্রীগোবিন্দ(শ্রীকৃষ্ণ) নিত্য অবস্থান করেন, সেই আদিপুরুষকে আমি ভজনা করি।।৩৭।।
একই কথা কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় কঠোপনিষদেও বর্ণনা করা হয়েছে,সেখানে বলা হয়েছে শ্রীবিষ্ণু(যিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ) তিনি নিত্যকাল বৈকুন্ঠে (চিন্ময় জগতের গোলকের পরবর্তী লোক ) অবস্থান করছেন তথাপি তিনি জড় জগতের সর্বত্র অবস্থিত।
আসীনো দূরং ব্রজতি শয়ানো যাতি সর্বতঃ।
-(কঠোপনিষদ ১/২/২১)
অনুবাদ:- পরমেশ্বর ভগবান বিষ্ণু পরব্যোমে অবস্থিত হয়েও সর্বত্র অবস্থান করেন, অনন্ত শয্যায় শয়ন করেও সর্বত্র বিচরণ করেন।
অথাৎ পরমেশ্বররুপে শ্রীকৃষ্ণ যদিও নিত্যকাল চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবনে নিত্য বিরাজমান,তথাপি তিনি তার অচিন্তনীয় চিন্ময় শক্তির প্রভাবে এ ব্রহ্মান্ডের সবর্ত্র বিদ্যমান।অথাৎ তার মস্তক চক্ষু,হস্ত,পদ সর্বত্র বিরাজমান।তাই গীতা ১৩/১৪ অনুসারে ঈশ্বরের হস্ত,পদ,মস্তক সর্বত্র বিরাজমান।আমরা গীতা ১১/১৬ নং শ্লোকে অর্জুনের উক্তির মাধ্যমে সে সত্যের সত্যতা খুঁজে পাই।অর্জুন ঈশ্বররুপে শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বময়রুপ দর্শন করে বললেন-
অনেকবাহূদরবক্ত্রনেত্রং
পশ্যামি ত্বাং সর্বতোহনন্তরূপম্।
নান্তং ন মধ্যং ন পুনস্তবাদিং
পশ্যামি বিশ্বেশ্বর বিশ্বরূপ ।। ১৬।।
-(গীতা ১১/১৬)
অনুবাদঃ হে বিশ্বেশ্বর(সমস্ত বিশ্বের ঈশ্বর), হে বিশ্বরূপ, তোমার সর্বত্র ব্যাপ্ত অনন্ত রূপে অনেক বাহু, উদর, মুখ এবং নেত্রসমূহ দেখছি। আমি তোমার আদি, মধ্য ও অন্ত কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।
এছাড়াও গীতা ১৫/১৫ শ্লোকে,পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বর্ণনা করেন, আমি পরমাত্মারুপে প্রতিটি জীবের হৃদয়ে পরমাত্মারুপে অবস্থান করি (সর্বস্য চাহং হৃদি সন্নিবিষ্টো)।
ঈশ্বরের সর্বব্যাপ্ততা বিষয়ে গীতা ১৩/১৪ শ্লোকের তাৎপর্যে ইসকন প্রতিষ্ঠাতা আচার্য জগৎগুরু শ্রীল প্রভুপাদ বর্ণনা করেন-
“সূর্য যেমন অনন্ত কিরণ বিকিরণ করে বিরাজমান, সেভাবে পরমাত্মা বা পরমেশ্বর ভগবানও বিরাজমান। তিনি তাঁর সর্বব্যাপ্ত রূপে বিরাজমান এবং আদি কবি ব্রহ্মা থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র পিপীলিকা পর্যন্ত সমস্ত জীবই তাঁকে আশ্রয় করে বিরাজমান। তাঁর সেই সর্বব্যাপী রূপের মধ্যে অসংখ্য মস্তক, পদ, হস্ত, চক্ষু রয়েছে।তাই পরমাত্মা সর্বব্যাপ্ত। “
হরে কৃষ্ণ। প্রনাম।