তপঃ
ধর্মের চারটি স্তম্ভের মধ্যে ‘তপ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। পরমেশ্বর ভগবানকে চিন্তা, সেবা এবং সর্বোপরি এ দুঃখময় জন্ম-মৃত্যুর শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে চিন্ময় ভগবদ্ধামে ফিরে যাওয়ার প্রয়াসে শাস্ত্রীয় বিধি-বিধানগুলি গুরুত্ব সহকারে পালন করাকে ‘তপ’ বা তপস্যা বলে।
তপস্যার জন্য প্রয়োজন শরীর, বাক( মুখ) এবং মন। এ তিনটির সমন্বয়ে তপস্যা পরিচালিত হয়। তাই, তপস্যাকে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-কায়িক,বাচিক এবং মানসিক।
देवद्विजगुरुप्राज्ञपूजनं शौचमार्जवम् ।
ब्रह्मचर्यमहिंसा च शारीरं तप उच्यते ॥
अनुद्वेगकरं वाक्यं सत्यं प्रियहितं च यत् ।
स्वाध्यायाभ्यसनं चैव वाङ्मयं तप उच्यते ॥
मन:प्रसाद: सौम्यत्वं मौनमात्मविनिग्रह: ।
भावसंशुद्धिरित्येतत्तपो मानसमुच्यते ॥
দেবদ্বিজগুরুপ্রাজ্ঞপূজনং শৌচমার্জবম্।
ব্রহ্মচর্যমহিংসা চ শারীরং তপ উচ্যতে।।
অনুদ্বেগকরং বাক্যং সত্যং প্রিয়হিতং চ যৎ।
স্বাধ্যায়াভ্যসনং চৈব বাঙ্ময়ং তপ উচ্যতে।।
মনঃপ্রসাদঃ সৌম্যত্বং মৌনমাত্মবিনিগ্রহঃ।
ভাবসংশুদ্ধিরিত্যেতৎ তপো মানসমুচ্যতে।।
– (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৭/১৪-১৬)
অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান, ব্রাহ্মণ, গুরু ও প্রাজ্ঞগণের পূজা এবং শৌচ, সরলতা, ব্রহ্মচর্য ও অহিংসা – এগুলিকে কায়িক তপস্যা বলা হয়।অনুদ্বেগকর, সত্য, প্রিয় অথচ হিতকর বাক্য এবং বৈদিক শাস্ত্র পাঠ করাকে বাচিক তপস্যা বলা হয়।চিত্তের প্রসন্নতা, সরলতা, মৌন, আত্মনিগ্রহ ও ব্যবহারে নিষ্কপটতা – এগুলিকে মানসিক তপস্যা বলা হয়।
যদিও বৈদিক শাস্ত্র পাঠ করাকে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বাচিক তপস্যা বলছেন। কিন্তু সনাতনী বেদ, অষ্টাদশ পুরাণ, মহাভারত এবং রামায়ণ আদি শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবানের নাম জপ ও কীর্তন করাকেও বাচিক তপস্যা বলা হয়েছে।
কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় কলির্সন্তরণ উপনিষদে সরাসরি কলিযুগের যুগধর্ম ও মুক্তির পথ হিসেবে হরে কৃষ্ণ মন্ত্রটি নির্দিষ্ট হয়েছে। এই মন্ত্রটি জপ ও কীর্তন করার প্রভাবে জীব সহজে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে চিন্ময় ভগবদ্ধামে ফিরে যেতে পারে।
नारदः पुनः पप्रच्छ तन्नाम किमिति ।
स होवाच हिरण्यगर्भः ।
हरे कृष्ण हरे कृष्ण कृष्ण कृष्ण हरे हरे ।
हरे राम हरे राम राम राम हरे हरे ॥
इति षोडशकं नाम्नां कलिकल्मषनाशनम् ।
नातः परतरोपायः सर्ववेदेषु दृश्यते ॥
षोडशकलावृतस्य जीवस्यावरणविनाशनम् ।
ततः प्रकाशते परं ब्रह्म मेघापाये रविरश्मिमण्डलीवेति ॥
নারদঃ পুনঃ পপ্রচ্ছ তন্নাম কিমিতি।
সহোবাচ হিরণ্যগর্ভঃ।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
ইতি ষোড়শকং নাম্নাং কলিকল্মষনাশনম।
নাতঃ পরতরোপায় সর্ববেদেষু দৃশ্যতে।।
ষোড়শকলাবৃতস্য জীবস্যাবরনবিনাশনম।
ততঃ প্রকাশতে পরং ব্রহ্ম মেঘাপায়ে রবিরশ্মিমন্ডলীবেতি।।
– কলির্সন্তরন উপনিষদ ২ ( কৃষ্ণ যজুর্বেদ)
অনুবাদঃ তখন নারদজী পুনঃ প্রশ্ন করলেন সেই নাম কি?তখন হিরন্যগর্ভ ব্রহ্মা বললেন,হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।এই প্রকার ষোড়শ নাম কলিযুগে সমস্ত পাপ নাশ করে।সমগ্র বেদ শাস্ত্রে এর থেকে শ্রেষ্ঠ কোনো উপায় নেই।এই মন্ত্র উচ্চারণে জীবের ষোড়শকলা যুক্ত আবরন বিনষ্ঠ হয়।বৃষ্টির পর যেমন মেঘ কেটে গিয়ে সূর্যরশ্মি প্রকাশিত হয় তেমনই জীব পরমব্রহ্মকে জানতে পারে।
এছাড়াও অন্যান্য বহুবিধ সনাতনী শাস্ত্রে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ ও কীর্তন করাকে কলিযুগের যুগধর্ম বলা হয়েছে।
कृते यद्ध्यायतो विष्णुं त्रेतायां यजतो मखै: ।
द्वापरे परिचर्यायां कलौ तद्धरिकीर्तनात् ॥
কৃতে যদধ্যায়তো বিষ্ণুং ত্রেতায়াং যজতো মখৈঃ।
দ্বাপরে পরিচর্যায়াং কলৌ তদ্ধরিকীর্তানাৎ।।
– শ্রীমদ্ভাগবত ১২/৩/৫২
যুগধর্ম ও মুক্তির পথ হিসেবে সত্যযুগে শ্রীবিষ্ণুর ধ্যান,ত্রেতাতে যজ্ঞ,দ্বাপরে অর্চন,এবং কলিযুগে হরিনাম সংকীর্তন নিধার্রিত হয়েছে।
कलेर्दोषनिधे राजन्नस्ति ह्येको महान् गुण: ।
कीर्तनादेव कृष्णस्य मुक्तसङ्ग: परं व्रजेत् ॥
কলে দোষ নিধে রাজন অস্তি এক মহান গুন।
কীর্তনাৎ এব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গ পরং ব্রজেৎ।।
– (শ্রীমদ্ভাগবত ১২/৩/৫১)
কলিযুগ পাপের সমুদ্র। কিন্তু তার এক মহান গুন আছে। সেটি হচ্ছে, শ্রীকৃষ্ণের নামকীর্তন। যদি কেউ তা করে তাহলে অনায়াসে এই জড় জগৎ থেকে মুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের ধামে প্রবেশ করতে পারে।
हरे कृष्ण हरे कृष्ण कृष्ण कृष्ण हरे हरे ।
हरे राम हरे राम राम राम हरे हरे ॥
इति षोडशकं नाम्नां कलिकल्मषनाशनम् ।
नातः परतरोपायः सर्ववेदेषु दृश्यते ॥
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
ইতি ষোড়শকং নাম্নাং কলির্কল্মষ নাশনং।
নাতঃ পরতরোপায় সর্ব বেদেষু দৃষ্টতে।।
– (ব্রহ্মান্ড পুরাণ: রাধাহৃদয় ৬/৫৫-৫৬)
অনুবাদঃ ষোলটি নাম সমন্বিত হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কলির সমস্ত পাপ বিনষ্ট করে।এর থেকে শ্রেষ্ঠ পথ বেদে আর কোথাও দেখা যাবে না।
🔗 মহামন্ত্র সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানুন: https://svadharmam.com/hare-krishna-mahamantra-in-the-vedas/
হরে কৃষ্ণ।প্রনাম
©️ স্বধর্মম্ ™️