পুরীধামে পরমেশ্বর ভগবান জগন্নাথের প্রকাশঃ
৪র্থ পর্বের পর –
স্কন্দ পুরাণ,বিষ্ণুক্ষেত্র, পুরুষোত্তমক্ষেত্র মাহাত্ম্য, পঞ্চদশ অধ্যায়ের ১-৫১ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ীঃ
“জৈমিনি বললেন, যে দ্বিজগণ। এরপর তারা সেই নীলকন্ঠের নিকট গমন করলেন এবং মহাদেব ও দুর্গাকে পূজা ও প্রণিপাত করে রাজপথ পরিত্যাগপূর্বক অনুচরগণের সাথে নীলপর্বতের উপরে আরোহন করার নিমিত্তে পায়ে হেঁটে গমন করতে লাগলেন। সেই পথ অতি দুর্গম ও ভয়ানক। রাজা বহু কষ্ট করেও সে স্থানে যেতে সমর্থ হলেন না। তখন নারদ ঋষি তাদের সঙ্গে নিয়ে দিব্য গতি দ্বারা সেই গিরির শিরোদেশে গমন করলেন। সেই স্থানে একটি বৃক্ষের নিচে ভগবান নৃসিংহ মূর্তি ধারণ করে অবস্থান করছেন। শিব কখনো ক্ষণকালের জন্যও এই ক্ষেত্র দ্বারা পরিত্যাগ করেন না। মহাত্মা নারদ এই বলে ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজাকে ক্ষেত্রধাম দেখালেন।
ষোড়শ অধ্যায়ঃ ১-৫৩ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী, নারদ ঋষি বললেন, এস রাজন তুমি নরসিংহদেবের সম্মুখে অশ্বমেধ যজ্ঞ কর। আমি এই স্থানে ৫ দিন থাকব। এরপর ইন্দ্রদ্যুম্ন নৃসিংহদেবকে পদক্ষিণ পূর্বক ভূমিপতিত মস্তকে প্রণাম করলেন।
সপ্তদশ অধ্যায়ঃ ১-৮৩ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী,মুনিগণ প্রশ্ন করলেন,হে মুনে এ ক্ষেত্র ইন্দ্রদ্যুম্ন তারপর কি করলেন। জৈমিনি বললেন, হে বিপ্রগণ সেই নৃপবর প্রথমে ইন্দ্রাদি দেবগনকে নিমন্ত্রণ করলেন । এরপর বৈষ্ণবগণকে নিমন্ত্রণ করলেন। এরপর জগদীশ্বরের প্রসন্নতা জন্য ব্রহ্মা নির্দেশক্রমে একশত একটি অশ্বমেধ যজ্ঞ সমাপন করল। যজ্ঞ সমাপনের সপ্তম দিনে রাত্রি শেষ প্রহরে নরপতি স্বপ্নে বিষ্ণু মূর্তি প্রত্যক্ষ করলেন। এরপর স্বপ্নবৃত্তান্ত রাজা নারদকে খুলে বললেন ।নারদ তা শ্রবণ করে বললেন হে নৃপ! এই অবধি তোমার সেই শোক বিদূরিত হল যখন অরুণোদয় কালে ভগবানকে দর্শন পেয়েছ। তখন সেই সময়ের ১০ দিনের মধ্যেই ফল দান করবে।
অষ্টাদশ অধ্যায়ঃ ১-৪৫ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী, হে দ্বিজগণ সেই যজ্ঞে অসংখ্য লোকের সমাবেশ হয়েছিল। দক্ষিণ সাগরের তটে বিশ্বেশ্বর শিবের সমীপে অবভৃতস্নানের নিমিত্তে যে সকল সেবক নিযুক্ত হয়েছিল, তারা কৃতাঞ্জলিপুটে রাজার কাছে উপস্থিত হয়ে নিবেদন করলেন, হে দেব! মহাসমুদ্রের তটভূমিতে একটি মহা বৃক্ষ দেখা গিয়েছে। তার অগ্রভাগ সমুদ্র মধ্যে প্রবিষ্ট ও মূল দেশ জল কল্লোলে প্লাবিত হয়ে ভাসতে ভাসতে আমাদের স্নানসমীপে উপস্থিত হয়েছে। তার সর্ব অবয়ব রক্তবর্ণ শঙ্খ, চক্র চিহ্নে চিহ্নিত। আমরা এ বিষয়কে এক অতি অদ্ভুত দর্শন বলে বিবেচনা করি। এই বৃক্ষ- সক্রিয় সুগন্ধ দ্বারা আমোদিত। দেব বৃক্ষ বলে লক্ষ্য হচ্ছে অথবা কোন দেবতা নিশ্চয়ই তরুরূপ ধারণ করে সমাগত হয়েছে। নরপতি নিযুক্ত ভৃত্যগণের এরূপ বাক্য শ্রবণ করে নারদকে জিজ্ঞাসা করলেন, এরা যাকে তরুশ্রেষ্ঠ বলে বর্ণনা করল তার দর্শনের কারণ কি ? নারদ হাসতে হাসতে নৃপবরকে বললেন, আপনি এই ক্ষণে পূর্ণাহুতি শেষ করুন, যাতে এই যজ্ঞ সফল হয়। আপনার সৌভাগ্য উপস্থিত হয়েছে। আপনি ইতিমধ্যে স্বপ্ন অবস্থায় যে শ্বেতদ্বীপবাসী অব্যয় বিশ্বমূর্তি বিষ্ণুকে দর্শন করেছিলেন তারই অঙ্গসমুদ্ভূত লোম স্থলিত হয়ে তরুরুপ ধারণ করেছে। হে নৃপ! আপনি সবিৎপতির তটসমীপে অবভৃতস্নান সমাপনান্তে মহতী বেদী নির্মাণ করে তার উপরিভাগে ঐই তরুরুপী যজ্ঞেশ্বরকে সুসমৃদ্ধ উৎসব সহকারী স্থাপন করুন। সেই সময় নারদ ও রাজা এরূপ পরস্পর বাক্যালাপ করতে করতে অত্যন্ত আনন্ আনন্দিত হয় সে তরুরূপী ভগবানের নিকট গমন করলেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে সে তরুরুপী ব্রহ্ম দর্শন করে ইন্দ্রদ্যুম্ন আনন্দসাগরে নিমগ্ন হলেন।সে সময় শঙ্খ ইত্যাদি বাদ্য বাজতে লাগল, গায়কেরা হরিনাম করতে লাগল, বন্দিগণ বন্দনা করতে লাগলেন, ব্রাহ্মণগঞ্জ স্তব করতে লাগলে।এরপর তারা ইন্দ্রদ্যুম্নের অনুমতিক্রমে বৃক্ষটিকে সুগন্ধাদি দ্বারা অলংকিত করে স্থাপন করলেন। এরপর নরপতি নারদের উপদেশে তাকে পূজা করলেন।
রাজা মনিবর কে জিজ্ঞাসা করলেন এই সময়ে বিষ্ণুর প্রতিমা কি প্রকারের নির্মিত হবে, কোন ব্যক্তি বা তা গঠনকার্যে সম্পন্ন করবেন, কোন ব্যক্তি দ্বারা কি প্রকারে প্রতিমা নির্মিত হলে ভগবানের সন্তোষ হবে? নারদ ও রাজা এরূপ আলোচনা করছেন এমন সময় অন্তরীক্ষ হতে অশরীরী বাণী শ্রবণ করে সকলেই বিস্ময়াপন্ন হল। এরূপ আকাশ বাণী হলো যে, সেই অপৌরুষেয় ভগবান স্বয়ংই স্বীয় প্রতিমূর্তির বিষয় বিচার করত আবরনতে গুপ্ত মহাবেদীতে অবতীর্ণ হলেন।তোমরা পঞ্চদশ দিবস পর্যন্ত বেদীগৃহ উত্তমরুপে আচ্ছাদিত করে রেখ। এই যে সশস্ত্র বৃদ্ধ পুরুষ উপস্থিত দেখিতেছ, উহাকে এই গৃহের মধ্যে প্রবেশিত করে যত্নপূর্বক দরজা বন্ধ করবে, যতক্ষণ এই কার্য শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার বাহিরে নানাবিধ বাদ্য বাজাতে থাক। অতএব কখনো ঘটনা গৃহের ভিতর প্রবেশ করবে না এবং ঘটনার ক্রিয়া দেখবে না। যদি এই কার্যে নিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেহ তা দর্শন করেন তাহলে কি রাজা, কি রাষ্ট্র সকলেরই মহাভয় উপস্থিত হবে। অতএব যতক্ষণ এই প্রতিমূর্তি নির্মাণ না হবে ততকাল কোনক্রমে তা পর্যবেক্ষণ করবে না। হে নরপতি, স্বয়ং সনাতনদেবই তোমাকে যে যে কর্তব্য উপদেশ করবে তুমি সর্বপ্রযত্ন, সর্বলোকসুখকর সেই কার্য সম্পাদন করবে।
নারদ প্রভৃতি তা শ্রবণ করে স্বয়ং বিষ্ণু যা উপদেশ করেছিলেন, তা করতে ইচ্ছা করেছিলেন। এমন সময় সেই বৃদ্ধ পুরুষরূপধারী সূত্রধর তথায় উপস্থিত হয়ে নরপতিকে বললেন, হে রাজন, আপনি স্বপ্নযোগে যে সকল মূর্তি দর্শন করেছিলেন, দিব্যরুপ দারু দ্বারা আমি তাই প্রস্তুত করে দিব।
জয় জগন্নাথ। হরে কৃষ্ণ। প্রণাম
©️ স্বধর্মম্ : Connect to the inner self