অবতার কি? অবতার কত প্রকার ও কি কি?

FB_IMG_1750247201837

 অবতারঃ

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চিন্ময় জগত গোলক বৃন্দাবনে নিত্য বিরাজমান (গোপালতাপনী উপনিষদঃ পূর্ব ২/৩৫)।তিনি যখন বিভিন্ন রুপ ধারন করে অথবা বিভিন্ন ব্যক্তির মাঝে তাঁর শক্তি প্রকট পূর্বক দুষ্টের দমন, শিষ্ঠের পালন এবং ধর্মের সংস্থাপনের জন্য যুগে যুগে অবতরণ করেন তখন তাঁকে অবতার বলা হয়। এ বিষয়ে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শাস্ত্রে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন-

 অজোহপি সন্নব্যয়াত্মা ভূতানামীশ্বরোহপি সন্ ।
প্রকৃতিং স্বামধিষ্ঠায় সম্ভবাম্যাত্মমায়য়া ।।৬।।
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত ।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্ ।।৭।।
পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।৮।।

– (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ৪.৬-৮)
অনুবাদঃ যদিও আমি জন্মরহিত(জন্ম নাই) এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং যদিও আমি সর্বভূতের (সমস্ত জীবের) ঈশ্বর, তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আমি আমার আদি চিন্ময় রূপে অবতীর্ণ হই।হে ভারত! যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখন আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই।সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য এবং দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।

অবতারের শ্রেণীবিভাগঃ

শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত,মধ্য.২০/২৪৫-২৪৬ শ্লোক অনুযায়ী, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সনাতন গোস্বামীকে ৬ প্রকার অবতার সম্পর্কে ধারনা প্রদান করেন।

 অবতার হয় কৃষ্ণের ষড়বিধ প্রকার ।
পুরুষাবতার এক, লীলাবতার আর ৷ ২৪৫ ॥
গুণাবতার, আর মন্বন্তরাবতার ।
যুগাবতার, আর শক্ত্যাবেশাবতার ॥ ২৪৬ ॥

– (শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত,মধ্য.২০/২৪৫-২৪৬)

অনুবাদঃ শ্রীকৃষ্ণের ছয় প্রকার অবতার রয়েছে। তাঁরা হচ্ছেন পুরুষাবতার, লীলাবতার, গুণাবতার, মন্বন্তরাবতার, যুগাবতার এবং শক্ত্যাবেশাবতার।

১/পুরুষাবতারঃ

প্রথম পুরুষোবতার কারণোদকশায়ী বিষ্ণু (মহা বিষ্ণু), দ্বিতীয় পুরুষোবতার গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু, তৃতীয় পুরুষোবতার ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু-এই তিন বিষ্ণুকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুরুষাবতার বলা হয়। প্রথম পুরুষোবতার কারনোদকশায়ী বিষ্ণু সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবত ২/৫/২২-৩৫ এবং ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৮ শ্লোক সহ ইত্যাদি বিভিন্ন শাস্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে। সেসমস্ত শাস্ত্রের বর্ণনা অনুযায়ী কারণোদকশায়ী বিষ্ণুরুপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কারন সমুদ্রে শায়িত থাকেন,তার থেকে অগিত ব্রহ্মান্ড প্রকাশ হয়।

দ্বিতীয় পুরুষোবতার গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবত ১/৩/২-২৭ এবং শ্রীমদ্ভাগবত ২/৫/৩৫-৪২ শ্লোকে বিস্তৃত বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে ।সেখানে বলা হয়েছে, ব্রহ্মান্ড যখন প্রকাশ হয় তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি স্বয়ং কারণোদকশায়ী বিষ্ণু তিনি ব্রহ্মান্ডের গর্ভ সমুদ্রে গভোদর্কশায়ী বিষ্ণুরুপে প্রবিষ্ট হন। সে গভোদর্কশায়ী বিষ্ণুর অসংখ্য হস্ত,পদ,মুখ,মস্তক,কর্ণ,চক্ষু এবং নাসিকা রয়েছে।তাঁর নাভীপদ্ম থেকে জন্ম হয় ব্রহ্মার।এরপর ব্রহ্মা ভগবান শ্রীবিষ্ণুর আজ্ঞা অনুসারে মনুষ্য, পশু,দেবতা ইত্যাদি জীব সৃষ্টি করে।

তৃতীয় পুরুষোবতার ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৫/১৫ শ্লোকে।ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি স্বয়ং গভোদর্কশায়ী বিষ্ণু তিনি ব্রহ্মা কতৃর্ক সৃষ্ট সমস্ত জীবের হৃদয়ে ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু পরমাত্মারুপে (পরম আত্মা অথবা জীবাত্মার আত্মারুপে) প্রবিষ্ট হন।

২/গুণাবতারঃ

শ্রীমদ্ভাগবত ১/২/২৩ শ্লোকে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের তিন গুণাবতার -ব্রহ্মা,বিষ্ণু,শিব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।সেখানে বলা হয়েছে,
এই জড় জগত সত্ত্ব,রজ এবং তম- এই ত্রিগুণ দ্বারা পরিচালিত হয়।এ তিনটি গুণের অধিষ্ঠাতা হলে- সত্ত্বগুণ বিষ্ণু,রজোগুণ ব্রহ্মা,তমোগুণ শিব।

৩/লীলাবতারঃ

শ্রীমদ্ভাগবত ১/৩/৫ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী, দুষ্টের দমন, সাধুর রক্ষা এবং ধর্ম সংস্থাপন হেতু পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি স্বয়ং গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু তিনি মৎস্য,কূর্ম,বরাহ,রাম,বামন,নৃসিংহ ইত্যাদি বিভিন্ন লীলাবতার রুপ ধারন করেন। এছাড়াও লীলাবতার সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে শ্রীমদ্ভাগবত ১/৩/১৫-২৩, ২৫ শ্লোকে।

৪/ মন্বন্তর অবতারঃ

শ্রীমদ্ভাগবতে ৮/১, ৫, ১৩ অধ্যায়ে চৌদ্দজন মন্বন্তরাবতারের বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁরা হলেন-(১) যজ্ঞ, (২) বিভু, (৩) সত্যসেন, (৪) হরি, (৫) বৈকুণ্ঠ, (৬) অজিত, (৭) বামন, (৮) সার্বভৌম, (৯) ঋষভ, (১০) বিষ্বকসেন, (১১) ধর্মসেতু, (১২) সুধামা, (১৩) যোগেশ্বর এবং (১৪) বৃহদ্ভানু।

ব্রহ্মার একদিনে(মনুষ্য জীবের ১ হাজার চতুর্যুগ) বা এক কল্পে চৌদ্ধজন মনুর প্রকাশ হয়।প্রথম মনু- স্বায়ম্ভুব(ব্রহ্মার পুত্র),এরপর যথাক্রমে-স্বারোচিষ(অগ্নিদেবের পুত্র),উত্তম,তামস,রৈরত,চাক্ষুষ,
বৈবস্বত(সূর্যদেবের পুত্র),সার্বণি,রুদ্র,সাবর্ণি,ধর্ম সাবর্ণি,দেব সাবর্ণি এবং ইন্দ্র সাবর্ণি।বর্তমান সময়কে বৈবস্বত মন্বন্তর বলা হয়। প্রতি মনুর শাসন কালকে মন্বন্তর বলা হয়।

৫/ যুগাবতারঃ

শ্রীমদ্ভাগবতে ১০/৮/১৩ বর্ণনা অনুযায়ী,
সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর, কলি এই চার যুগ।প্রতি যুগে ভগবান কৃষ্ণচন্দ্র যুগানুসারে বিভিন্ন বর্ণে আবির্ভূত হন। সত্যযুগে ভগবান ব্রজেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ শুক্লবর্ণ, ত্রেতাযুগে রক্তবর্ণ, দ্বাপরযুগে কৃষ্ণবর্ণ, কলিযুগে তিনি পীতবর্ণরুপ (শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু) ধারণ করেন ।
নন্দমহারাজের গৃহে জ্যোতিষী গর্গমুনি কৃষ্ণের কোষ্ঠী বিচারের সময় এই তথ্য প্রকাশ করেন।

৬/শক্ত্যাবেশ অবতারঃ

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন কোন বিশেষ ব্যক্তির উপর তাঁর শক্তি প্রকাশ করে কার্য সিদ্ধি করেন তখন সে ধরনের মহান ব্যক্তিদের শক্ত্যাবেশ অবতার বলা হয়।যেমন-নারদ মুনি,শ্রীল ব্যাসদেব,পৃথু মহারাজ প্রমুখ।

 হরে কৃষ্ণ। প্রনাম।

সদগুণ মাধব দাস।
প্রচারে-©️ স্বধর্মম্ : Connect to the inner self
And, ° স্বধর্মম্ : প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন।

Sadgun Madhav Dash

Writer & Admin

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments