বিষ্ণু সংহিতা,অত্রিসংহিতায় কি আদৌ একাদশীতে সধবা নারীদের উপবাস পালনে নিষেধ করা হয়েছে?

20250410_105527

একশ্রেণীর নামধারী পুরোহিত তারা তো একাদশী ব্রত উপবাস পালন করে না,কিন্তু যারা একাদশী পালন করে তাদের মধ্যে যারা সধবা তাদের একাদশী পালন করতে বাঁধা প্রদান করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষ্ণুসংহিতা(বিষ্ণুস্মৃতি) এবং অত্রিসংহিতা(অত্রিস্মৃতি) থেকে প্রমান দেখাচ্ছে।

“পত্যৌ জীবতি যা যোষিদুপবাসব্রতং চরেৎ
আয়ুঃ সা হরতে ভর্ত্তুর্নরকঞ্চৈব গচ্ছতি।।”

( বিষ্ণু সংহিতা ২৫/১৬)
অনুবাদঃ যে স্ত্রী স্বামী জীবিত থাকতে উপবাস ব্রতের আচরন করে, সে স্বামীর আয়ু হরণ ও নরক গমন করে। তাই স্বামী জীবিত থাকতে উপবাস বাঞ্ছনীয় নয়।

জীবদ্ভর্ত্তরি যা নারী উপোষ্য ব্রতচারিণী
আয়ুষ্যং হরতে ভর্ত্তুঃ সা নারী নরকং ব্রজেৎ।।

(অত্রিসংহিতা ১৩৬নং শ্লোক।)

অনুবাদঃ যে নারী স্বামী জীবিত থাকিতে উপবাস করিয়া ব্রত করে,সে নারী স্বামীর আয়ু হরণ করে ও নরকে গমন করেন।

পাঠকগণ কৃপা করে উপরোক্ত বিষ্ণু সংহিতা ২৫/১৬,এবং অত্রিসংহিতা ১৩৬নং শ্লোক পর্যবেক্ষণ করে দেখুন উক্ত শ্লোক দুইটিতে কোথাও স্পষ্ট করে একাদশীতে উপবাস পালনে নিষেধ করা হয় নি,বরং উপবাস মাত্রেই সধবাদের পালনে নিষেধ করা হয়েছে

অথচ আমরা দেখি এই সমস্ত পুরোহিতরা সনাতনী সধবাদেরকে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার সময় লক্ষ্মীপূজার উপবাস, দুর্গা পূজার অষ্টমী দিনে দূর্গাষ্টমী উপবাস,শিব চতুর্দশী সময় শিব রাত্রীর উপবাস, সন্তোষী মাতার পূজার সময় সন্তোষীর উপবাস,কালীর পূজার সময় কালীর উপবাস,লোকনাথ বাবার পূজার সময় লোকনাথ উপবাস,কার্তিক পূজার সময় কার্তিকের উপবাস,সূর্য পূজার সময় সূর্যের উপবাস,অশ্বিনীকুমারের ব্রত অন্ন রান্নার সময় উপবাসের বিধান দেয়। আর কোন সধবা যদি উপবাস ছাড়া এসমস্ত দেবদেবীর পূজা করতে চাই,তাদের নামে কোন সংকল্প করা হয় না।যদি সধবা নারীরা এসমস্ত দেবদেবীর পূজার সময় উপবাস পালন করতে পারে,তাহলে একাদশী উপবাস পালন করার সময় তাদের কেন এ নিষেধাজ্ঞা? আমরা বুঝতে পারি এসবের মূলে আছে বৈষ্ণবদের প্রতি ঘৃনা,কারন বৈষ্ণবরা বিশেষভাবে একাদশী ব্রত পালন করেন।আর একাদশী পালনে জীবের ভগবান শ্রীবিষ্ণুতে প্রেমভক্তি লাভ হয়, তাই এসমস্ত নামধারী পুরোহিতগণ তা সহ্য করতে পারে না।

পদ্মপুরাণে স্পষ্টভাবে ৮-৮০ বছর বয়সী সকল নারী পুরুষের জন্য একাদশীতে উপবাস পালনকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ঈশ্বরের প্রীতির জন্য উপবাস পালন করা হয় তাহলে সেখানে কিভাবে পাপ হবে,এটির তো কোন যুক্তি থাকতে পারে না।আর তাছাড়া বেদ শাস্ত্রে নারী, পুরুষ, সধবা,বিধবা সহ সকল মানব জাতিকে ঈশ্বরের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য উপবাস পালন করার নির্দেশ করা হয়েছে । এ বিষয়ে নিমোক্ত লিংকে পাঠ করুন।

বেদে কি একাদশী উপবাসের কথা বলা হয়েছে?

বেদে কি একাদশী উপবাসের কথা বলা হয়েছে?

এছাড়াও মহাভারত,শান্তিপর্ব,৩৬ অধ্যায়ে মনুজী ভগবদ্ধামে প্রত্যাবর্তন করার প্রথম শর্ত হিসেবে নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে  মানব জীবনের পবিত্রতা লাভের জন্য ইষ্টমন্ত্র জপ, হোম (যজ্ঞ) ইত্যাদির পাশাপাশি উপবাস পালন করার উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন।

অনাদেশে জপো হোম উপবাসস্তথৈব চ।

আত্মজ্ঞানং পুণ্যনদ্যো যত্র প্রাযশ্চ তৎপরাঃ ॥৬॥ অনাদিষ্টং তথৈতানি পুণ্যানি ধবণীভৃতঃ।

সুবর্ণপ্রাশনমপি বত্নাদিস্নানমেব চ ॥৭॥ দেবস্থানাভিগমনমাজ্যপ্রাশনমেব চ।

এতানি মেধ্যং পুরুষং কুর্ব্বন্ত্যাশু ন সংশয়ঃ ॥৮॥

-( মহাভারতঃ শান্তিপর্ব ৩৬/৬-৮)

অনুবাদঃ যে ক্ষেত্রে বিশেষভাবে পবিত্রতা লাভের কারণ উক্ত না থাকে, সেই ক্ষেত্রে যে দেশে পবিত্র নদী সকল প্রবাহিত হইতে থাকে এবং অধিক সংখ্যকই ধৰ্ম্মপরায়ণ লোক বাস করে, সেই দেশে ইষ্টমন্ত্র জপ, হোম, উপবাস, ব্রহ্মচিন্তা ও বিশেষভাবে অনুক্ত বিষ্ণুপূজা প্রভৃতি পুণ্য কার্য্য এবং পুণ্য পর্ব্বতে গমন, স্বর্ণস্পৃষ্ট জল পান, রত্ন ও সর্ব্বৌষধিযুক্ত জলে স্নান, দেবতাযতনে গমন ও ঘৃত ভোজন-এই সকল কৰ্ম্ম মানুষকে পবিত্র করে, এবিষযে কোন সন্দেহ নাই ॥৬-৮

সুতারাং মহাভারত এবং বেদ শাস্ত্রে মানব জীবনের পবিত্রতা লাভের জন্য, ঈশ্বরের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য সকল মানব জাতিকে উপবাস পালন করার কথা বলা হয়েছে।বেদ এবং মহাভারত শাস্ত্রে কোন ভেদাভেদ ব্যতীত সধবা, বিধবা সহ সকল মানবজাতিকে ঈশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য, জীবনের পবিত্রতা লাভের জন্য উপবাস পালন করার কথা বলা হয়েছে।আর ভক্তরা বেদ এবং  মহাভারতের বর্ণনা অনুযায়ী, একাদশী তিথিতে পরমেশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য এবং জীবনের পবিত্রতা লাভের জন্য  উপবাস পালন করেন।

এছাড়াও শ্রীমদ্ভাগবত, পদ্মপুরাণসহ ১৪ টি শাস্ত্র প্রমানে সধবাদের একাদশী ব্রত পালন করতে উপদেশ করা হয়েছে। সুতারাং এতগুলি শাস্ত্রে একযোগে ভূল তথ্য থাকতে কখনো পারে না।

তাই আমাদের সিদ্ধান্ত হল সর্বোচ্চ শাস্ত্র প্রমান বেদ, মহাভারত এবং বিবিধ পুরাণ শাস্ত্রে কোন ভেদাভেদ ব্যতীত সধবা, বিধবা সহ সকল মানবজাতিকে ঈশ্বরের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য, জীবনের পবিত্রতা লাভের জন্য উপবাস পালন করার কথা বলা হয়েছে,আর সে স্থানে  বিষ্ণুসংহিতা (বিষ্ণুস্মৃতি) এবং অত্রিসংহিতায় (অত্রিস্মৃতি) সধবাদের উপবাস পালন করতে বাঁধা প্রদান হয়েছে,ভয় দেখানো হয়েছে।তাই সহজে বলা যায়, বিষ্ণুসংহিতা (বিষ্ণুস্মৃতি) এবং অত্রিসংহিতা(অত্রিস্মৃতি)  নামধারী পুরোহিত দ্বারা কলুষিত হয়েছে বা ভেজাল ডুকানো হয়েছে।তাই এসমস্ত স্মৃতিগুলি পাঠকালে পাঠকদের এসমস্ত বিষয় সম্পর্কে জানা থাকা আবশ্যক।

এখন আমরা নিমোক্ত শাস্ত্র প্রমানে সধবা নারীদের যে একাদশীতে উপবাস পালন করতে উপদেশ করা হয়েছে, এ বিষয়ে পাঠ করব-

১)ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রণাঞ্চৈব যোষিতাম্
মোক্ষদং কূর্ব্বতাং ভক্ত্যা বিষ্ণো:প্রিয়তরং দ্বিজাঃ।।
[ বৃহন্নারদীয় পুরাণ, অধ্যায়-২১ শ্লোক-২ ]

বঙ্গানুবাদঃ ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়, বৈশ্য,শুদ্র এবং বিবাহিত স্ত্রীলোক – ইহাদিগের মধ্যে যে কোন ব্যক্তি হউক, ভক্তি পূর্ব্বক একাদশী ব্রত পালন করে মুক্তি লাভ করতে পারে।

(২)পতিসহিতা যা যোষিৎ করোতি হরিবাসরম্ ।
সুপুত্ৰা স্বামিসুভগা যাতি প্রেত্য হরের্গৃহম॥ ৭৬
যো যচ্ছতি হরেরগ্রে প্রদীপং ভক্তিভাবতঃ।
হরের্দিনে দ্বিজশ্রেষ্ঠ পুণ্যসঙ্গ্যা ন বিদ্যতে ॥৭৭
যাঙ্গনা ভর্ত্তৃসহিতা কুরুতে জাগরং হরেঃ।
হরের্নিকেতনে তিষ্ঠেচ্চিরং পত্যা সহ দ্বিজ ॥৭৮

[ পদ্মপুরাণ, স্বর্গখন্ড, অধ্যায় ৪৪, শ্লোক- ৭৬-৭৮ ]

বঙ্গানুবাদঃ যে স্ত্রী পতি সহ একাদশীব্রত করে, সে সুপুত্রা স্বামি-সুভাগা হয়, মরণান্তে হরিগৃহ বৈকুন্ঠে যায়। দ্বিজ শ্রেষ্ঠ! একাদশীতে ভক্তিভাবে যে জন হরির অগ্রে প্রদীপ দান করে, তাহার পুণ্যের সংখ্যা নাই অর্থাৎ অগণিত পুণ্য লাভ করে । আর যে স্ত্রী স্বামীর সহিত একাদশীতে রাত্রি জাগরণ করে, সে চিত্রকাল পতি সহ হরির নিকেতনে বাস করে।

৩)যা নারী স্বামীসহিতা কুর্য্যাচ্চ হরিবাসরম।
সুপুত্রা ভর্ত্তসুভগা ভবেৎ সা প্রতিজন্মানি।।

[ পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মখন্ড, ৫।১৯ ]

বঙ্গানুবাদঃ যে নারী স্বামীর সাথে একাদশীব্রত করে, সে জন্মে জন্মে সপুত্রা ও স্বামীসুভগা হয়।

(৪)যে নারী ভর্ত্তৃসহিতারোত্যেকাদশীব্রতম্।

সুপ্ৰজা স্বামিসুভগা সা ভবেৎ প্রতিজন্মনি।
স্বামিনা সহ যা নারী কুরুতে জাগরং হরেঃ।
সা তিষ্ঠেদ্বিষ্ণুভবনে চিরং ভর্ত্রা সহ দ্বিজ ।।

[ পদ্মপুরাণ, ত্রিয়াযোগসারঃ অধ্যায়-২২ শ্লোক- ১০৫ ]

বঙ্গানুবাদঃ যে নারী স্বামীর সাথে একাদশীব্রত করে, সে জন্মে জন্মে সুপুত্রা ও স্বামীসুভগা হয়। আর যে নারী স্বামীর সঙ্গে জাগরানুষ্ঠান করে, সে স্বামীর সাথে সুচিরকাল বৈকুন্ঠধামে অবস্থান করে।”

৫)দুর্ভাগা যা করোত্যেনাং সা স্ত্রী সৌভাগ্যমাপ্নুয়াৎ।
লোকানাঞ্চৈব সর্ব্বোষাং ভুক্তিমুক্তিপ্রদায়িনী।।

[ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ৪৮।৪ ]

বঙ্গানুবাদঃ কোন দুর্ভাগা স্ত্রী যদি একাদশী ব্রত আচরণ করেন, তিনি সৌভাগ্য লাভ করেন। এই একাদশী ব্রত সর্বলোকের ভুক্তিমুক্তিপ্রদায়িনী, সর্ব্বপাপহারিণী ও গর্ভবাসনিবারিণী।”

(৬)সপুত্রশ্চ সভাৰ্য্যশ্চ স্বজনৈৰ্ভক্তিসংযুতঃ।
একাদশ্যামুপবসেৎ পক্ষয়োরভয়োরপি ॥

[ বিষ্ণুধর্মোত্তর, হ.ভ.বি., ১২।৪৭ ]

বঙ্গানুবাদঃ পুত্র, ভার্যা (পত্নী) ও স্বজনবর্গের সহিত ভক্তিযুক্ত হয়ে উভয়পক্ষের একাদশীতে উপবাস কর্তব্য।

৭)আরিরাধয়িষুঃ কৃষ্ণং মহিষ্যা তুল্যশীলয়া
যুক্তঃ সংবৎসরং বীরো দধার দ্বাদশীব্রতম্ ॥

[ শ্রীমদ্ভাগবতম ৯।৪।২৯ ]

অনুবাদঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করার জন্য অম্বরীষ মহারাজ তারই মতো গুণবতী স্ত্রী সহ এক বৎসর কাল যাবৎ একাদশী এবং দ্বাদশীব্রত পালন করেছিলেন।

দেবশর্ম্মার শিষ্য চন্দ্রের পত্নী গুণবতী আজীবন অর্থাৎ বিবাহের পূর্বে ও পরে সর্বদাই একাদশীব্রত ও কার্তিকমাস ব্রত করেছিলেন। যার পুণ্যপ্রভাবে তিনি মৃত্যুর পর বিষ্ণুলোকে গমন করেন এবং পরজন্মে সত্যভামা হয়ে কৃষ্ণপত্নী হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন।

(৮)ব্রতদ্বয়ং তয়া সম্যগাজন্মমরণানৎ কৃতম।
একাদশীব্রতং সম্যক সেবনং কার্ত্তিককস্য চ।।

[স্কন্দপুরাণ, বিষ্ণুখন্ড, কার্ত্তিকমাসমাহাত্ম্যম১৩।১২ ]

বঙ্গানুবাদঃ শ্রীকৃষ্ণ সত্যভামাকে বললেন, ‘চন্দ্রের পত্নী গুণবতী জন্ম হইতে মরণ পর্য্যন্ত একাদশী ব্রত ও কার্ত্তিক মাস ব্রত – এ দুই ব্রত সম্যকরূপে আচরণ করেছিলেন।”

(৯)শ্রীনারদ উবাচ।
ইতি রাধামুখাচ্ছুত্বা যজ্ঞসীতাশ্চ গোপিকাঃ।
একাদশীব্রত চক্রবিধিবৎ কৃষ্ণলালসাঃ।।২৩
একাদশীদিনেনাপি প্রসন্নঃ শ্রীহরিঃ স্বয়ম।
মার্গশীর্ষে পূর্ণিমায়াং রাসং তাতিশ্চকার হ।।২৪

[ গর্গসংহিতা, মাধুর্য্যখন্ড, অধ্যায় ৯, শ্লোক ২৩-২৪, নারদ উক্তি ]

বঙ্গানুবাদঃ নারদ বলিলেন,”যজ্ঞসীতা গোপীগণ রাধার মুখে একাদশী মাহাত্ম্য শুণে কৃষ্ণপ্রাপ্তির জন্য যথাবিধি একাদশী ব্রত করেন ; তাঁদের একাদশী ব্রত ফলে স্বয়ং গোপবালক হরি প্রসন্ন হয়ে অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমায় তাঁহাদের সহিত রাসনৃত্য করেছিলেন।”

(১০)শ্রীকৃষ্ণ উবাচ।
শৃণু রাজন যথা বৃত্তং দৃষ্টং তৎকথয়ামি তে ।
মর্ত্যলােকে পুরা হাসীদব্ৰাহ্মণ্যেকা চ ভারত
ব্রতচৰ্য্যারুতা নিত্যং দেবপূজারতা সদা। ২৩
মাসোপবাসনিরতা মম ভক্তা চ সৰ্ব্বদা।
কৃষ্ণোপবাসসংযুক্তা মম পূজাপরায়ণ।। ২৪

[ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ৪২। ২২-২৪ ]

বঙ্গানুবাদঃ “শ্রীকৃষ্ণ কহিলেন,–রাজন! শ্রবণ করুন, বৃত্তান্ত বলিতেছি- হে পার্থিব যুধিষ্ঠির! পুরাকালে মর্ত্যলোকে ব্রতচর্য্যানিরতা, নিত্য দেবপূজা পরায়ণ এক ব্রাহ্মণী ছিলেন। তিনি আমার নিত্যভক্তা, মাসােপবাসে নিয়তা, কৃষ্ণপ্রীত্যৰ্থ উপবাস পরায়ণা এবং মদীয় পূজায় একান্ত অনুরক্তা।”

(১১)দেবীনামুপদেশেন ষটতিলায়া ব্রতং কৃতম্ ।
মানুষ্যা সত্যব্রতয়া ভুক্তিমুক্তিফলপ্রদম।
রূপকান্তিসমাযুক্তা ক্ষণেন সমবাপ সা॥ ৪৬
ধনং ধান্যঞ্চ বস্ত্রাদি সুবর্ণং রৌপ্যমেব চ।
ভবনং সর্বসম্পন্ং ষটতিলায়াঃ প্রভাবতঃ ॥৪৭

[ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, ৪২। ৪৫-৪৭ ]

বঙ্গানুবাদঃ দেবপত্নীগণের উপদেশে তাপসী মানুষী ভুক্তিমুক্তিফলপ্ৰদ ষটতিলা একাদশী ব্ৰত সম্পাদন করিলেন। তাহাতে সেই তাপসী ক্ষণমধ্যে রূপলাবণ্যবতী হইয়া ধন, ধান্য, বস্ত্র, সুবর্ণ ও রৌপ্য প্রাপ্ত হইলেন। ষটতিলা একাদশী ব্রতের প্রভাবে তাপসীর ভবন সর্বসম্পন্ন হইল।

(১২)সাপ্যৈবং মঞ্জুঘোষা চ কৃত্বৈতদব্রতমুত্তমম্।
পিশাচত্বাদ্বিনির্ম্মুক্তা পাপমোচনিকাব্রতাৎ।
দিব্যরূপধরা সা বৈ গতা নাকে বরাপ্সরাঃ।।

[ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, অধ্যায়-৪৬।৪৬ ]

বঙ্গানুবাদঃ “অপ্সরা মঞ্জুঘোষাও উক্ত উত্তম একাদশী ব্রত অনুষ্ঠান পালনে পিশাচত্ব হইতে মুক্ত হইল। পাপমোচনী একাদশী ব্রতের প্রভাবে সে দিব্যরূপ ধারনপূর্ব্বক স্বর্গে গমন করিলো।”

(১৩)ব্রাহ্মণ্যৈ দেবপত্নীভিদত্তমেকাদশীব্রতম্।
তেন লেভে স্বৰ্গসৌখ্যং ধনধান্তঞ্চ মানুষী।।

[ গর্গসংহিতা, মাধুর্য্যখন্ড, অধ্যায় ৯, শ্লোক-৭, রাধা উক্তি ]

বঙ্গানুবাদ:”শ্রীমতি রাধিকা গোপীকাদের বললেন, “একদা দেবপত্নীগণ কোন এক ব্রাহ্মণীকে এই একাদশীব্রতের উপদেশ করেন, ঐ ব্রাহ্মণী মানুষী হয়েও এ একাদশী ব্রত পালন দ্বারা ধনধান্য ও স্বর্গসুখ লাভ করে ছিলেন।”

(১৪)একাদশ্যাং ভোজনাচ্চ নান্যৎ পাপতরং পরম্ । যানি কানি চ পাপানি ব্রহ্মহত্যাদিকানি চ । অন্নমাশ্রিত্য তান্যেষ তিষ্ঠন্তি হরিবাসরে | সর্ব্বে বর্ণাশ্রমা যাশ্চ স্ত্রিয়শ্চ একাদশীপরাঃ। প্রাপ্নবস্তি গতিং দিব্যামন্যথা পাপমাপুয়ুঃ ॥ সধবানান্তু নারীণাং রাত্রৌ পেয়ং জলং মতম্ ॥ একাদশ্যাং ন ভুঞ্জীত পক্ষয়োরুভয়োরপি | যনস্থ তিধর্ম্মোহয়ং শুদ্ধমেব সদা গৃহী ॥

[বৃহদ্ধর্মপুরাণ, উত্তরখণ্ড, দশম অধ্যায়, ৩৭]

বঙ্গানুবাদঃ একাদশীতে ভোজন অপেক্ষা পাপকার্য আর নাই কারণ, ব্রহ্মহত্যা প্রভৃতি সমস্ত পাপ একাদশী দিনে অন্নাদি রবিশস্য আশ্রয় করিয়া থাকে। ব্রাহ্মণাদি চারি বর্ণ, ব্রহ্মচারী প্রভৃতি চারি আশ্রমী ও সকল স্ত্রীলোক একাদশী ব্রত পরায়ণ হইলে দিব্যগতি লাভ করে, একাদশী ব্রত না করিলে পাপভাগী হয়। সধবা নারীরা একাদশী উপবাস করিয়া রাত্রিকালে জলমাত্র পান করিবে। গৃহস্থ ব্যক্তি একাদশীতে উপবাস করিয়া দেবকীনন্দন কৃষ্ণকে ধূপ-দীপাদি দ্বারা পূজা করিবে।

হরে কৃষ্ণ || প্রনাম

Sadgun Madhav Dash

Writer & Admin

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments