বেদের বর্ণনায় ঈশ্বর হল সাকার। তার সুন্দর রুপ বা দেহ বা শরীর বা ইন্দ্রিয় বিদ্যমান।
“দিবো বা বিষ্ণো উত বা পৃথিব্যা মহো বা বিষ্ণু উরোরন্তরিক্ষাৎ।উভো হি হস্তা বসুনা পূনস্বা প্রযচ্ছ দক্ষিণাদোত সব্যাদ্বিষ্ণবে দ্বা।।”
-শুক্ল যজুর্বেদ ৫।১৯
অনুবাদ:- হে ঈশ্বর ( বিষ্ণু),আপনি দ্যুলোক হইতে কি ভূলোক হইতে কিংবা অনন্ত প্রসারী অন্তরিক্ষলোক হইতে পরমধন লইয়া উভয় হস্তকে পূর্ণ করুন। আর দক্ষিণ ও বাম হস্ত দ্বারা অবাধে অবিচারে সেই পরমধন প্রদান করুন,আপনাকে প্রাপ্তির নিমিত্তে উপাসনা করি।
উপরোক্ত শুক্ল যজুর্বেদের মন্ত্রের মতোই সমগ্র বেদে অসংখ্যবার পরমেশ্বর ভগবানের সাকার রুপের বর্ণনা করা হয়েছে। এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারে সে ঈশ্বর কি পুরুষ নাকি নারী,তিনি কি মানুষের মতোই রুপবিশিষ্ট?
উত্তর হল মহাভারত – শান্তিপর্ব – ২১৮/৯০, এবং গীতা১৩/১৮নং শ্লোক অনুযায়ী ঈশ্বর কখনো বিনাশহীন পুরুষ বা নারী কোনটি নয়, তিনি হলেন জ্ঞানস্বরুপ।বেদ শব্দের অর্থ হল জ্ঞান। বেদ শাস্ত্রে ঈশ্বর হলেন সাকার।আর বেদ শাস্ত্র অনুসারে সে ঈশ্বর হলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীবিষ্ণু। পরম ঈশ্বর রুপে শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীবিষ্ণু মূলত একজনই।শ্রীকৃষ্ণ জড় জগত সৃষ্টি এবং সৃষ্ট জীবদের পালনের জন্য শ্রীবিষ্ণুর রুপ ধারণ করেন। পরমেশ্বর ভগবানরুপে শ্রীকৃষ্ণ চিন্ময় জগতের গোলক বৃন্দাবনে নিত্য বিরাজমান। গীতা ১১/৫১ শ্লোক অনুসারে তিনি দেখতে ঠিক মানুষের মতো। গীতা ১১/৪৬-৪৭ শ্লোকের বর্ণনা অনুযায়ী পরমেশ্বর ভগবানরুপে শ্রীবিষ্ণু দেখতে মানুষের মতো কিন্তু তাঁর চারটি হস্ত।শ্রীকৃষ্ণ সমন্ধে আরো জানতে নিমোক্ত লিংকে পাঠ করুন-বেদে কি শ্রীকৃষ্ণের কথা বলা হয়েছে? বেদ অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ কি পরমেশ্বর ভগবান?
https://svadharmam.com/is-the-vedas-mentioned-sri-krishna-according-to-the-vedas-shri-krishna-is-godhead/
ঈশ্বর পুরুষ নাকি নারী এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট করা হয়েছে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা শাস্ত্রে।গীতা শাস্ত্র অনুসারে সে ঈশ্বর কখনো বিনাশশীল পুরুষ বা স্ত্রী কিছুই নয়।তিনি হলেন পরম পুরুষ অথাৎ অবিনাশশীল সচ্চিদানন্দ(চিন্ময়) পুরুষোত্তম।
ভগবদগীতা ১৩/২০ শ্লোক অনুসারে পুরুষ শব্দে জীবকে নির্দেশ করা হয়েছে। তাই ঈশ্বর সমস্ত জীবের ( পুরুষের) নিয়ন্ত্রক।তাই গীতা ১৩/২৩ শ্লোক এবং গীতা ১৫/১৮ শ্লোকে ঈশ্বরকে পরম পুরুষ বা পুরুষোত্তম রুপে বর্ননা করা হয়েছে।সেই ঈশ্বরের নামটি হল শ্রীকৃষ্ণ( গীতা ১৫/১৮)। ব্রহ্মসংহিতা ৫/১, অথর্ববেদীয় গোপালতাপনী উপনিষদ ১/১ এবং সমগ্র সনাতনী শাস্ত্র অনুসারে শ্রীকৃষ্ণের দেহ বা শরীর হল সচ্চিদানন্দ অথাৎ চিন্ময়(যা কখনো বিনাশহীন নয়)।
উপদ্রষ্টানুমন্তা চ ভর্তা ভোক্তা মহেশ্বরঃ।
পরমাত্মেতি চাপ্যুক্তো দেহেহস্মিন্ পুরুষঃ পরঃ।।
– গীতা ১৩/২৩ঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ
অনুবাদঃ এই শরীরে আর একজন পরম পুরুষ রয়েছেন,যিনি হচ্ছেন উপদ্রষ্টা, অনুমন্তা, ভর্তা, ভোক্তা, মহেশ্বর এবং তাকে পরমাত্মাও বলা হয়।
যো মামেবমসংমূঢ়ো জানাতি পুরুষোত্তমম্।
স সর্ববিদ্ ভজতি মাং সর্বভাবেন ভারত।।
-গীতা ১৫/১৮ঃভগবান শ্রীকৃষ্ণ
অনুবাদঃ হে ভারত! যিনি নিঃসন্দেহে আমাকে পুরুষোত্তম বলে জানেন, তিনি সর্বজ্ঞ এবং তিনি সর্বতোভাবে আমাকে ভজনা করেন।
অহং সর্ব্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্ব্বং প্রবর্ত্ততে।
ইতি মত্বা ভজন্তে মাং বুধা ভাবসমন্বিতাঃ।।
-গীতা ১০/৮ঃভগবান শ্রীকৃষ্ণ
অনুবাদ- আমি সমস্ত জগতের সৃষ্টির কারণ। আমার থেকে সমস্ত জগৎ সৃষ্টি হয়েছে। জ্ঞানীরা এরুপ জেনে আমার ভজনা করেন।
ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ। অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্বকারণকারণম্ ।।
-(ব্রহ্মসংহিতা ৫/১)
অনুবাদঃ শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর (পরম ঈশ্বর) এবং তাঁর দেহ বা শরীর সচ্চিদানন্দময় অথাৎ চিন্ময় ( সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ)। তিনি অনাদির আদিপুরুষ গোবিন্দ এবং তিনিই সর্ব কারণের কারণ।”
সচ্চিদানন্দরুপায় কৃষ্ণায়াক্লিষ্টকারিনে।
নমো বেদান্তবেদ্যায় গুরুবে বুদ্ধিসাক্ষিনে।।
– গোপালতাপনী উপনিষদ ১/১ (অথর্ববেদ)
অনুবাদঃ আমি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম জ্ঞাপন করছি, যার আপ্রাকৃত রূপ/দেহ /শরীর হল সচ্চিদানন্দময় (অথাৎ চিন্ময় /অবিনাশী সত্তা)। তাকে জানার অর্থ সমগ্র বেদকে জানা।
হরে কৃষ্ণ।প্রনাম