ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

448799885_2502931756537158_2049554223633710221_n

হিন্দুদের ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনা সমূহ বিশ্লেষণ করে প্রধান কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কারণ পরিলক্ষিত হয়ঃ

  • বৈদিক শিক্ষার অভাব।
  • ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (গুরুকুল) অভাব।
  • বেদোক্ত বিভিন্ন দর্শনের মর্মার্থ না বোঝা।
  • প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি চর্চার অভাব
  • অত্যধিক ইন্দ্রিয়তৃপ্তি পরায়ণ হওয়া।
  • পারিবারিক, সামাজিক ধর্মীয় কুসংস্কার।
  • বিধর্মীদের সাথে অত্যধিক মেলামেশা।
  • বিধর্মীদের মিথ্যা তথ্যে বিশ্বাস স্থাপন।
  • লোভ, কিংবা বিভিন্ন কামনার বশবর্তী হয়ে বিভিন্নরকম রিলেশনশিপে জড়ানো।

উক্ত কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় হিন্দু সমাজে যেমন ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিষ্ঠান তো নাই বললেই চলে এজন্য ধর্মীয় শিক্ষার অভাব রয়েছে তেমনিভাবে একটা অপসংস্কৃতির প্রচারও রয়েছে, যে ধর্মকর্ম এসব বুড়ো বয়সের কার্যক্রম। মুরব্বিদের বলতে শোনা যায়- এখন সময় হয়নি, সময় এলে ধর্ম করবে এখন না। কিন্তু কেউ তাদের বলে না “সময় গেলে সাধন হবে না” অপরপক্ষে কোনো সাধু ব্যক্তি যদি সেই সম্পর্কে পারমার্থিক জ্ঞান দিতে আসে তখন বরং তাকে একপ্রকার অপদস্তই হতে হয়।

সমাজে বা পরিবারে আরেক প্রকার লোক মনগড়াভাবে শাস্ত্রের বিষয়বস্তুকে পালন করেন, এবং প্রকৃতই ধর্ম সম্পর্কে জানতে উৎসুক কোনো কোনো ব্যক্তির মনে, তার মনোধর্ম জল্পনা কল্পনার কুসংস্কারাচ্ছন্ন আচরণ দ্বারা বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে ফেলেন। ফলে অনিসন্ধিৎসু ব্যক্তি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তারপর এই সমস্ত সামাজিক পারিবারিক কুসংস্কার দেখতে দেখতে নিজের ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বাস হারাতে থাকে এবং ধীরে ধীরে অন্য ধর্মের লোকেদের সাথে কালচার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে। এভাবেই ধর্মান্তরের সূত্রপাত ঘটে।
বিধর্মীদের সাথে অত্যধিক মেলামেশার ফলে তাদের সংস্কৃতি সুক্ষ্মভাবে প্রভাবিত করে ফেলে এবং যারা নিজেদের ধর্মীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি সম্পর্কে অনভিজ্ঞ তারা বিধর্মীদের অপব্যাখ্যার দ্বারা সহজেই প্রভাবিত হয়ে পড়ে।

অন্য একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেমন- বেদ শাস্ত্রে ঈশ্বর উপলব্ধির বিভিন্ন পন্থা বর্ণিত হয়েছে, বিভিন্ন দার্শনিক বিশ্লেষণও রয়েছে। এই সমস্ত বেদমার্গের কিছু লোক একে অপরকে ভুল প্রমাণ করতে ব্যস্ত। শাস্ত্রকে নিগূঢ়ভাবে উপলব্ধি না করার ফলে একে অন্যের দার্শনিকতা খন্ডন করতেই ব্যস্ত। তারা জানেন না চেতনার উপর ভিত্তি করেই অনুধাবন, উপলব্ধির স্তর বিন্যস্ত হয়ে থাকে। যার চেতনা যত উন্নত, তার শাস্ত্র সম্পর্কে অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি তত উন্নত। কিন্তু, অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী এসব লোকেদের বিবাদ দেখে সাধারণ হিন্দুরা বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং ধর্মান্তরের পথে পা বাড়ায়।

মানুষ অত্যধিক ইন্দ্রিয়তৃপ্তি পরায়ণ হওয়ার ফলে মনে জাগতিক কিংবা পারলৌকিক ভোগ বাসনা জন্মে। বিভিন্নরকম লোভ লালসা রিলেশনশিপ, বিধর্মীদের তথাকথিত প্রেম ভালোবাসার ফাঁদে পড়ে সেই ভালোবাসার টানে বাকিসব কিছুকেই ভুলে যায়, সেই ভালোবাসা প্রাপ্তির জন্য নিজের ধর্মকেও জলাঞ্জলি দিতে পিছপা হয়না।

এইসমস্ত ধর্মান্তরের কারণ বিশ্লেষণ করে কিছু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারেঃ

  • বৈদিক শাস্ত্র ভগবদ্গীতা ভাগবতাদি শাস্ত্রসমূহ অধ্যয়নের দিকে মনোযোগী হওয়া।
  • পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ধর্মীয় বিশুদ্ধ শিক্ষা-সংস্কৃতির সুস্থ চর্চা করতে হবে।
  • ধর্মীয় আচার স্থলে অপসংস্কৃতি চর্চাকে বন্ধ করতে হবে।
  • ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন থাকা, যেমন- ধর্মীয় শিক্ষা তার কাছে থেকে গ্রহণ করা উচিত যে তা সঠিকভাবে পালন করে।
  • বিধর্মীদের অপব্যাখ্যা ও মিথ্যা তথ্যে বিশ্বাস না করা। যাচাই-বাছাই করা।
  • বিশেষকরে কমবয়সী ছেলেমেয়েদের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বিধর্মীদের সাথে ধর্মীয় বিষয়ে সতর্ক অবস্থান বজায় রাখা।
  • কাউকে ধর্মান্তরিত হতে দেখলে নিজ ধর্মীয় বৈদিক উন্নত জ্ঞানের সন্ধানে দিতে হবে,
  • তত্ত্বদ্রষ্টা অর্থাৎ, যারা বৈদিক জ্ঞান সম্পর্কে জানেন ও নিজের জীবনে পালন করেন সেই সমস্ত ব্যক্তিদের কাছে থেকে জ্ঞান আহরণ করতে হবে।

সর্বোপরি নিজে সচেতন হই অন্যকে সচেতন করি।।

নিবেদক-
° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

Avatar of Ankon Nath

Ankon Nath

Writer & Admin

2 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments