কেন ” হরে কৃষ্ণ..” নামকে মহামন্ত্র বলা হয়?

20240916_170452

সংস্কৃত অভিধান যাস্ক নিরুক্ত ৭/১২ অনুযায়ী,” মন্ত্র মননাৎ” অথাৎ ” মননে মন্ত্র হয়।” বেদের চারটি বিভাগ – সংহিতা (ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বদে এবং অথর্ববেদ ), ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ। বেদের এ চারটি বিভাগের যে সমস্ত বিষয় বস্তুর আলোচনায় ঋষি রয়েছে, ছন্দ রয়েছে তাকে মন্ত্র বলা হয়। কেননা এ সমস্ত জ্ঞান ঋষিগণ মনন বা গভীর চিন্তার মাধ্যমে সরাসরি ঈশ্বর বা দেবতা কতৃর্ক প্রাপ্ত হয়েছিলেন।

মুক্তিকোপনিষদ ১/৫২ অনুযায়ী মুক্তিকোপনিষদ হল শুক্ল-যজুর্বেদের অন্তর্গত। শুক্ল যজুর্বেদীয় মুক্তিকোপনিষদ ১/২৭-৩৬ অনুযায়ী ঈশ, কেন, কঠ, রামতাপনী, গোপালতাপনী, কলির্সন্তরণ উপনিষদ ইত্যাদি ১০৮ টি উপনিষদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্তিকোপনিষদ ১/৫৩ অনুসারে কলির্সন্তরণ উপনিষদ হল কৃষ্ণ যজুর্বেদের অন্তর্গত।

“নারদঃ পুনঃ পপ্রচ্ছ তন্নাম কিমিতি।সহোবাচ হিরণ্যগর্ভঃ। হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।। ইতি ষোড়শকং নাম্নাং কলিকল্মষনাশনম। নাতঃ পরতরোপায় সর্ববেদেষু দৃশ্যতে ষোড়শকলাবৃতস্য জীবস্যাবরনবিনাশনম। ততঃ প্রকাশতে পরং ব্রহ্ম মেঘাপায়ে রবিরশ্মিমন্ডলীবেতি।।”২।।
[ কলির্সন্তরণ উপনিষদ, মন্ত্র ২ (কৃষ্ণ যজুর্বেদ) ]

অনুবাদ:
তখন নারদজী পুনঃ প্রশ্ন করলেন সেই নাম কি? তখন হিরন্যগর্ভ ব্রহ্মা বললেন,‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে। হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।’ এই প্রকার ষোড়শ নাম কলিযুগে সমস্ত পাপ নাশ করে।সমস্ত বেদ শাস্ত্রে এর থেকে শ্রেষ্ঠ কোনো উপায় নেই। এই মন্ত্র উচ্চারণে জীবের ষোড়শকলা যুক্ত আবরন বিনষ্ঠ হয়। বৃষ্টির পর যেমন মেঘ কেটে গিয়ে সূর্যরশ্মি প্রকাশিত হয় তেমনই জীব পরমব্রহ্মকে জানতে পারে।

 

Shuvo 20240802 033043 Svadharmam

 

উপরোক্ত আলোচনায়, মুক্তিকোপনিষদ ১/৫৩ অনুসারে কলির্সন্তরণ উপনিষদ হল কৃষ্ণ যজুর্বেদের অন্তর্গত। কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় কলির্সন্তরণ উপনিষদ ২নং মন্ত্র অনুসারে “হরে কৃষ্ণ…. ” মহানাম প্রাপ্ত প্রথম ঋষি হলেন নারদ মুনি, এবং এ মহানামের ছন্দ হল অনুষ্টপ ছন্দতাই এই কৃষ্ণ-যজুর্বেদীয় কলির্সন্তরণ উপনিষদ ২ নং মন্ত্রে উল্লেখিত ১৬ নাম ৩২ অক্ষর সমন্বিত হরে কৃষ্ণ মহানামকে মন্ত্র বলা হয়।

সেই সাথে কলির্সন্তরণ উপনিষদ, মন্ত্র-২ বর্ণিত আছে, “হরে কৃষ্ণ..” নাম অপেক্ষা কলিযুগে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তির শ্রেষ্ঠ পথ হিসেবে অন্য কোন পথ সমগ্র বেদে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই কৃষ্ণ যজুর্বেদের কলির্সন্তরণ উপনিষদ উক্ত “হরে কৃষ্ণ… ” মন্ত্রকে মহামন্ত্র বলা হয় (“নাতঃ পরতরোপায় সর্ব বেদেষু দৃশ্যতে।।”)।

উল্লেখ্য পদ্মপুরাণ, স্বর্গখন্ড ২৪/৬, অনন্ত সংহিতা ৪/১০-১১, ব্রহ্মযামল ৪/১৯-২৩ প্রভৃতি সনাতনী শাস্ত্রে হরে কৃষ্ণ মহানামকে মহামন্ত্র বলা হয়েছে।

সংকলনে: শ্রীপাদ সদগুণ মাধব দাস

[ বি:দ্র: স্বধর্মম্-এর অনুমোদন ব্যাতীত এই গবেষণামূলক লেখার কোনো অংশ পুনরুৎপাদন, ব্যবহার, কপি পেস্ট নিষিদ্ধ। স্বধর্মম্-এর সৌজন্যে শেয়ার করার জন্য উন্মুক্ত। ]

নিবেদক-
° স্বধর্মম্: প্রশ্ন করুন | উত্তর পাবেন °

Madhura Gaurakiśora Dās

Writer & Admin

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments